জামায়াতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা কুখ্যাত মওদূদী ছিলো CIA এর এজেন্ট এবং চরম ইসলাম বিদ্বেষী মুরতাদ-মুনাফিক।


জামায়াতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা কুখ্যাত মওদূদী ছিলো CIA এর এজেন্ট এবং চরম ইসলাম বিদ্বেষী মুরতাদ-মুনাফিক।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অনেক আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রথমে ঈমান আনার কথা এবং পরে আমলের কথা বলেছেন। কেননা ঈমান শুদ্ধ না হলে আমলের মূল্য নেই। কাফির-মুশরিকরা তাই মুসলমান উনাদের ঈমানী চেতনায় বিভেদ তৈরির জন্য সদা সক্রিয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন- “তারা পূর্ব থেকেই বিভেদ সৃষ্টির সুযোগ সন্ধানে ছিল এবং তারা চাচ্ছিল আপনার কার্যসমূহ উলট-পালট করে দেয়ার জন্য।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৮)
এক্ষেত্রে ইসলামবিদ্বেষী কাফির-মুশরিকরা মূলত মুসলমানদের থেকেই এজেন্ট তৈরি করে। যারা মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ইসলামী আক্বীদার মধ্যে ফিতনা তৈরি করে। মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের চরম দুশমন, শয়তানের শিং এবং ব্রিটিশ দালাল ‘ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী’ এ ধারার বিশেষ উদাহরণ। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান ও মানের খিলাফসহ অসংখ্য কুফরী আক্বীদার বিস্তার করেছে সে।
এরপর পাক-ভারত উপামহাদেশের এ ধারার অগ্রগামী হয়েছে তথাকথিত ‘জামাতে ইসলামী’র প্রতিষ্ঠাতা মালানা মওদুদী। স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক, উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মুবারক শানের খিলাফ- মোদ্দাকথা ইসলামের সব অনুষঙ্গেই মিথ্যা, কুফরী ও জঘন্য সমালোচনার কুট জাল বিস্তার করেছে এই মওদুদী।
স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মুবারক শানের খিলাফ- মোদ্দাকথা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সব অনুষঙ্গেই মিথ্যা, কুফরী ও জঘন্য সমালোচনার জাল বিস্তার করেছে মালানা মওদুদী।

তার সেই অসংখ্য কুফরী আক্বীদার মধ্য হতে মাত্র কয়েকটি কুফরী আক্বীদা ক্ষুদ্র প্রমাণস্বরূপ নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

১) মহান আল্লাহ পাক উনার সম্পর্কে মওদুদীর কুফরী আক্বীদা: “যে ক্ষেত্রে নর-নারীর অবাধ মেলামেশা, সেক্ষেত্রে জেনার (ব্যভিচারের) কারণে (আল্লাহ পাকের আদেশকৃত) রজম শাস্তি প্রয়োগ করা নিঃসন্দেহে যুলুম।” (নাঊযুবিল্লাহ)
(তাফহীমাত, ২য় খ-, ২৮১ পৃষ্ঠা)

২) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে মওদুদীর কুফরী আক্বীদা: “মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানবিক দুর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না।” (নাঊযুবিল্লাহ) । (তরজমানুস্ সুন্নাহ, ৩য় খ-, ৩০৫ পৃষ্ঠা)

৩) হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে মওদুদীর কুফরী আক্বীদা: “নবীগণ মা’ছূম নন। প্রত্যক নবী গুনাহ করেছেন।” (নাঊযুবিল্লাহ) (তাফহীমাত, ২য় খ-, ৪৩ পৃষ্ঠা)

৪) হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে মওদুদীর কুফরী আক্বীদা: “ছাহাবাদিগকে সত্যের মাপকাঠি জানবে না।” (নাঊযুবিল্লাহ) (দস্তরে জামাতে ইসলামী, ৭ পৃষ্ঠা)

৫) হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে মওদুদীর কুফরী আক্বীদা: “ফেরেশতা প্রায় ঐ জিনিস- যাকে গ্রীক, ভারত ইত্যাদি দেশের মুশরিকরা দেবী-দেবতা স্থির করেছে।” (নাঊযুবিল্লাহ)
(তাজদীদ ও ইহইয়ায়ে দ্বীন, ১০ পৃষ্ঠা)

(৬) হযরত আদম আলাইহিস সালাম মানবিক দুর্বলতায় আক্রান্ত ছিলেন।" ( তাহফীমুল কুরআন উর্দু ,৩/১২৩)

(৭) হযরত নূহ আলাইহিস সালাম চিন্তা ধারার দিক থেকে দীনের চাহিদা থেকে সরে গিয়েছিলেন।"
( তাহফীমুল কুরআন ২/৩৪৪, ৩য় সংস্করন ,১৯৬৪ ইং )

(৮) নবী হওয়ার পূর্বে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম দ্বারা একটি কবীরা গুনাহ হয়েছিলো।" ( রাসায়েল ও মাসায়েল ১/৩১)

(৯) হযরত দাউদ আলাইহিসসালাম উনার কাজের মধ্যে নফস ও অভ্যন্তরীন কুপ্রবৃত্তির কিছুটা দখল ছিলো।"
( তাহফীমুল কুরআন উর্দু, ৪/৩২৭, সূরা রাদ এর তাফসীর , অক্টোবর ১৯৬৬, ১ম সংস্করণ )

(১০) হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম তৎকালীন যুগে ইসরাঈলী সোসাইটি দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে এক বিবাহীত যুবতীর উপর আসক্ত হয়ে তাকে বিবাহ করার জন্য তার স্বামীর নিকট তালাকের আবেদন করেছিলেন।"
( তাহফিমাত ২/৪২, ২য় সংস্করণ , নির্বাচিত রচনাবলী ২/৭৩ , আধুনিক প্রকাশনী ১ম প্রকাশ ১৯৯১ ইং )

(১১) সাহাবায়ে কিরাম অনেকে মনগড়া হাদীস বর্ননা করেছেন।" ( তরজুমানুল কুরআন ,৩৫ সংখ্যা)

(১২) হযরত আবু বকর সিদ্দিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু খিলাফতের দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ অযোগ্য ছিলেন।"
( তাজদীদ ও এহহীয়ায়ে দীন ২২ পৃ )

(১৩) হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার মাঝে স্বজন প্রীতীর বদগুন বিদ্যমান ছিলো।" ( খেলাফত ও মুলকিয়াত ৯৯ পৃ )

(১৪) হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু খেলাফত কালে এমন কিছু কাজ করেছেন যাকে অন্যায় বলা ছাড়া উপায় নাই !"
( খেলাফত এ মুলকিয়াত ১৪৬ পৃ)

(১৫) হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু স্বর্থবাদী , গনিমতের মাল আত্বসাৎকারী , মিথ্যা সাক্ষ্য গ্রহনকারী ও অত্যাচারী ছিলেন।" ( খেলাফত ও মুলকিয়াত ১৭৩ পৃ)

(১৬) কুরআন শরীফ হেদায়েতর জন্য যথেষ্ট কিন্তু নাজাত বা মুক্তির জন্য নয়।'" ( তাহফিমাত ১/৩১২)
(১৭) হাদীস শরীফ কিছু লোক থেকে কিছু লোক পর্যন্ত মুখে মুখে বর্নিত হয়েছে , এসব বড়জোর সঠিক বলে ধারনা করা যেতে পারে কিন্তু দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করার কোন অবকাশ নাই। " ( রাসায়েল ও মাসায়েল ৬৭ পৃ)
শুধু তাই নয়, স্বয়ং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে এই কাফেরটা কি বলেছে দেখুন ---
(১৮) "মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানবিক দুর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না। অথাৎ তিনি মানবিক দুর্বলতার বশিভুত হয়ে গুনাহ করেছিলেন। ( তরজমানুল কুরআন , ৮৫ সংখ্যা , ২৩০ পৃষ্ঠা , তরজমানুস সুন্নাহ ৩/৩০৫ )

(১৯) " মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রিসালতের দায়িত্ব পালনে ত্রুটি করেছেন , তাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে "
( তাহফীমুল কুরআন , সূরা নসরের তাফসীর)

উল্লেখ্য, সব হক্কানী-রব্বানী আলিম ও মুফতীগণ উনাদের ইজমা তথা ঐকমত্যে উপরোক্ত আক্বীদাধারী ব্যক্তি মুসলমান নয়; বরং মুরতাদ। আরো উল্লেখ্য যে, মওদুদীর মৃত্যুর পর শিয়া সম্প্রদায়ের একটি মুখপত্রে বলা হয়েছিল, “মরহুম (মওদুদী) তার ভিন্ন আঙ্গিকে শিয়া মতবাদ প্রচলনেও সহায়তা করেছে।”
(সাপ্তাহিক শিয়া, লাহোর, ১৯৭৯ ইং, ৫৭ সংখ্যা ৪০/৪১; খোমেনী ও মওদুদী দু’ভাই, পৃষ্ঠা ১২)

বিষাক্ত বীজ থেকে যেমন সুমিষ্ট ফল আশা করা যায় না, তেমনি ‘ইসলামী আন্দোলন’ ‘সৎ লোকের শাসন’ ‘ইক্বামাতে দ্বীন’ ইত্যাদি ইত্যাদি মিষ্টি মিষ্টি কথা বললেও মালানা মওদুদী নিজেই যে কত বিষাক্ত বীজ ছিলো তা তার উপরোক্ত কুফরী আক্বীদা থেকেই সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়। তার উপরোক্ত কুফরী আক্বীদাগুলো মুসলমানদের সাথে তার বিশ্বাসঘাতকতার (মুনাফিকীর) স্বরূপই উন্মোচন করে। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি বিশ্বাসঘাতকদের (মুনাফিকদের) সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক ফরমান, “মহান আল্লাহ পাক তিনি পছন্দ করেন না তাকে, যে বিশ্বাসঘাতক পাপী হয়।” (পবিত্র সূরা আন্ নিসা: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৮)

আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে অপছন্দ করেন তার পরিণাম কি ভয়াবহ হতে পারে তা কল্পনাতীত! দুনিয়াতেও তার লাঞ্ছনা-গঞ্জনার শেষ নেই। মওদুদীকে মানুষের কাছে লাঞ্ছিত করার জন্যই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত প্রকাশ পেয়েছে সাবেক সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি’র কর্মকর্তা ভ্যাসিলি মিত্রোখিনের সংগৃহীত নথি-তথ্যের ভিত্তিতে ব্রিটিশ অধ্যাপক ক্রিস্টোফার এন্ড্রু’র রচনায়।

“.....ইন্টারনেটে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ভ্যাসিলি নিকোতিচ মিত্রোখিন ১৯২২ সালে মধ্য রাশিয়ায় জন্মগ্রহণ করে। কাজাখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক মিত্রোখিন ইউক্রেনের মিলিটারি প্রসিকিউটর পদে যোগ দিয়েছিলো। সে ১৯৪৮ সালে তৎকালীন রুশ গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি’র ফরেন ইন্টিলিজেন্স অফিসার হিসেবে যোগদান করে। কয়েকটি অপারেশনে ব্যর্থতার পর তাকে কেজিবি’র নবগঠিত আর্কাইভ শাখার প্রধান পদে সরিয়ে নেয়া হয়। ১৯৭২ থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে তার তত্ত্বাবধানেই ‘কেজিবি আর্কাইভের’ সব গোপন নথিপত্র লুবিয়াংকের কার্যালয় থেকে ইয়াসেনেভোস্থ কেজিবি’র প্রধান কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। এই সময়ের ভিতর জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সে বিভিন্ন গোপন দলীলের কপি সংগ্রহ করে। ১৯৮৫ সালে অবসর নেয় মিত্রোখিন। আর ১৯৯২ সালে মিত্রোখিন ও তার পরিবারের সাথে ৬ ট্রাংক ভর্তি ২৫ হাজার পৃষ্ঠার নথিপত্র যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয়।

১৯৯৯ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয় ভ্যাসিলি মিত্রোখিন ও অধ্যাপক ক্রিস্টোফার এন্ড্রু’র লেখা ‘দ্য মিত্রোখিন আর্কাইভ’ ‘দ্য কেজিবি এন্ড ইউরোপ এন্ড দ্য ওয়েস্ট’। আর একই বছর নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত হয় ‘দ্য সোর্ড অব দ্য শিল্ড’ ‘দ্য মিত্রোখিন আর্কাইভ এন্ড দ্য সিক্রেট হিস্ট্রি অব কেজিবি’। এসব তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়ায় রাশিয়ার রোষানলে পড়ে মিত্রখিন। তাকে গোপনে বিষ প্রয়োগে হত্যা করে রাশিয়া। ২০০৪ সালের ২৩ জানুয়ারি মিত্রোখিন বিষক্রিয়ায় মারা যায়। মৃত্যুর দেড় বছরের মাথায় ‘মিত্রোখিন আর্কাইভ’-এর দ্বিতীয় খ- প্রকাশিত হওয়ার মাধ্যমে আবারো আলোচনায় ফিরে আসে সে। মিত্রোখিনের এসব তথ্যের ভিত্তিতে লেখা বই নিয়ে প্রথমে তোলপাড় শুরু হয় ভারতে। কেননা মিত্রোখিনের সংগ্রহ করা তথ্যমতে, ১৯৭০-এর দশকে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী সরকারকে ঘুষ দিয়ে হাতের মুঠোয় নিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন।
বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনেক আগেই রাশিয়ার নজরে পড়ে গিয়েছিলো ইন্দিরা গান্ধী। .....কেজিবি’র নথিপত্রের তথ্য উল্লেখ করে এন্ড্রু’র বই জানাচ্ছে, ১৯৭৩ সালের মধ্যে অন্তত ১০টি ভারতীয় সংবাদপত্র ও ১টি সংবাদ সংস্থাকে নিয়মিত অর্থ যুগিয়েছে তারা। শুধু ১৯৭২ সালেই ওই সংবাদপত্রগুলোতে কেজিবি’র ফরমায়েশ অনুযায়ী ৩ হাজার ৭৮৯টি প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে।

.....পাকিস্তানের রাজনীতিতে কেজিবি’র ভূমিকা নিয়ে আছে নানা তথ্য। ১৯৭৭ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে জেনারেল জিয়াউল হক্ব। মিত্রোখিনের তথ্য অনুযায়ী, এ সময় থেকেই কেজিবি তাদের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেয় ভুট্টোর ছেলে মুর্তাজাকে। “আফগান গোয়েন্দা সংস্থা ‘খাদ’-এর প্রধান মুহম্মদ নাজিবুল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠতা ছিল মুর্তাজার। ‘খাদ’-এর মাধ্যমেই মুর্তাজার সাথে যোগাযোগ করে কেজিবি।.... ১৯৮২ সালে নাজিবুল্লাহর সহায়তায় জিয়াকে হত্যার দুটি ষড়যন্ত্র করে মুর্তাজা। কিন্তু দুটিই ব্যর্থ হয় পাকী সন্ত্রাসীদের সোভিয়েত অস্ত্র ব্যবহারে অনভিজ্ঞতার কারণে। ....”
এরপর এন্ড্রু ও ভ্যাসিলি মিত্রোখিনের লেখা এবং ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত ‘দ্য মিত্রোখিন আর্কাইভ’ নামক ওই বইয়ের ভলিয়্যুম-২এ যে বোমা ফাটানো হয়েছে তাহলো- “ধর্মব্যবসায়ী দল জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মালানা আবুল আলা মওদুদী ছিলো সিআইএ’র এজেন্ট।”

তার এই কুকর্মের আরেকটি সাক্ষী সে সময়কার করাচীর ‘শিহাব’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক এবং জামাতের প্রাক্তন আমীর মালানা কাউসার নিয়াজী। সে জামাত ও মওদুদীর তীব্র সমালোচনা করে এই তথ্য ফাঁস করে দেয় যে, “জামাত আরবের দেশগুলোতে অবস্থিত বিভিন্ন বিদেশী তেল কোম্পানির কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ সাহায্য লাভ করে আসছে।”
(দৈনিক পূর্বদেশ, ২৩ ডিসেম্বর ১৯৬৯ ঈসায়ী)

“সত্যই মওদুদীর মৃত্যুর পর তখনকার দিনে (অর্থাৎ ১৯৭৯ ঈ. সালে) ব্যাংকে তার নামে নগদ অর্থ যা গচ্ছিত ছিলো তার পরিমাণ ছিলো ১০,৩৭০০০ (দশ লক্ষ সাইত্রিশ হাজার) টাকা।”
(খোমেনী ও মওদুদী দু’ভাই, পৃষ্ঠা ৪৮)

একই সময় মালানা গোলাম গাওস হাজারভী বলেছিল, “মওদুদী আমেরিকার স্বার্থে কাজ করছে। মওদুদী আমেরিকার এজেন্ট। তার মৃত্যু সেখানেই হবে যাদের স্বার্থে সে কাজ করছে।”
মহান আল্লাহ পাক উনার কি অপার মহিমা! তাই-ই হয়েছে। মিস্টার মওদুদী ১৯৭৯ সালে আমেরিকায় তার প্রভুদের কোলেই মৃত্যুবরণ করে।"

এই হলো জামাতের প্রতিষ্ঠাতা আবুল কালা মওদূদীর ইতিহাস। এখন যারা এই মওদূদী জামায়াতের মাধ্যমে ইসলাম কায়েম করতে চায় তারা কি প্রকৃতপক্ষে কি মিশন বাস্তবায়ন করতে চায় ?
তারা মূলত আমেরিকার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়। দেশটাকে ধ্বংসস্তুপ বানাতে চায়। তারা চায় সহজ সরল মানুষদের গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট করে জাহান্নামে পাঠাতে।

তাই সকলের জন্য ঈমানী দায়িত্ব হচ্ছে মওদূদী জামাতিদের প্রতিহত করা, তাদের সকল সংগঠন নিষিদ্ধ করা, সকল প্রতিষ্ঠান এবং স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা।
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে এই মওদূদী জামাত-শিবিরের ফেৎনা থেকে হিফাজত করুন। আমীন !!!
খলীফা হারুনুর রশীদের যামানায় মীলাদ শরীফ পাঠ করার জন্য এক ব্যক্তি ওলী আল্লাহ হিসাবে আখ্যায়িত হলেন

খলীফা হারুনুর রশীদের যামানায় মীলাদ শরীফ পাঠ করার জন্য এক ব্যক্তি ওলী আল্লাহ হিসাবে আখ্যায়িত হলেন

খায়রুল কুরুনে পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামপালনের দলীল দেখে নিন। খলীফা হারুনুর রশীদের যামানায় মীলাদ শরীফ পাঠ করার জন্য এক ব্যক্তি ওলী আল্লাহ হিসাবে আখ্যায়িত হলেন। সুবহানাল্লাহ।
আল্লামা সাইয়্যিদ আবু বকর মক্কী আদ দিময়াতী আশ শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১৩০২ হিজরী) উনার বিখ্যাত কিতাব “ইয়নাতুল ত্বলেবীনে” বর্ণনা করেন,
أنه كان في زمان أمير المؤمنين هارون الرشيد شاب في البصرة مسرف على نفسه وكان أهل البلد ينظرون إليه بعين التحقير لاجل أفعاله الخبيثة، غير أنه كان إذا قدم شهر ربيع الاول غسل ثيابه وتعطر وتجمل وعمل وليمة واستقرأ فيها مولد النبي ودام على هذا الحال زمانا طويلا، ثم لما مات سمع أهل البلد هاتفا يقول: احضروا يا أهل البصرة واشهدوا جنازة ولي من أولياء الله فإنه عزيز عندي، فحضر أهل البلد جنازته ودفنوه، فرأوه في المنام وهو يرفل في حلل سندس واستبرق، فقيل له بم نلت هذه الفضيلة ؟ قال بتعظيم مولد النبي
খলীফা হারুনুর রশীদের যামানায় (১৪৮-১৯৩ হিজরী) বসরাতে এক যুবক ছিলেন যার আমল ভালো ছিলো না। এবং দেশের মানুষও উনাকে ভালো জানতো না। তবে যখন পবিত্র রবিউল আউয়াল মাস আসতো তখন তিনি কাপড় ধুয়ে পরিষ্কার করেনভালো খাবার ব্যবস্থা করতেন এবং মীলাদ শরীফ পাঠ করতেন। অতপর যখন তিনি ইন্তেকাল করলেনতখন দেশের জনগণ একটি গায়েবী আওয়াজ শুনতে পেলেন: হে বসরার লোকজন! আসো একজনআল্লাহ পাকের ওলীর দাফন করো। তিনি আমার কাছে প্রিয়। শহরের মানুষ উনার জানাযা পড়লেন ও দাফন করলেন। এবং তারা উনাকে স্বপ্নে দেখলেন এবং উনার মর্যাদা দেখলেন। সে ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা হলো কিভাবে আপনি এ মর্যাদা অর্জন করলেনতিনি বলেন পবিত্র মীলাদ শরীফকে সম্মান করার কারনে। (ইয়নাতুল ত্বলেবীন ৩ খন্ড ৩৬৫ পৃষ্ঠা)

খলীফা হারুনুর রশীদের যামানা ছিলো খায়রুল কুরুনে। উপরোক্ত ঘটনায় বোঝা যায় সে সময় পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের রীতি ছিলো। তাই এক ব্যক্তি তার আমল কিছুটা মন্দ হলেও মীলাদ শরীফ পাঠকে আল্লাহ পাক তার মর্যাদার কারন হিসাবে প্রকাশ করলেন। এবং ওলী আল্লাহ হিসাবে গ্রহন করলেন। সুবহানাল্লাহ।
সূতরাং উপরোক্ত ঘটনা ও সময়কাল থেকে জ্ঞানী মাত্রই যা বোঝার বুঝে যাওয়ার কথা। ধন্যবাদ।
হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ( ২০ নং )
হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া
। হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন  হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয়  সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ            সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লিখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।          তদ্রুপ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেহিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার মাকছূদ বা উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। কেননা, প্রথমতঃ কিছু লোক কিল্লতে ইল্ম ও কিল্লতে ফাহ্মঅর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বক্তব্য ও লিখনীর মাধ্যমে পর্দা সম্পর্কে সমাজে নানাবিধ বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। যেমন কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় পর্দা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে যে, “....... মহিলারা মুখ বা চেহারা, হাত ও পা খোলা রেখে বাহিরে বের হতে পারবে।” (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক) পাশাপাশি কিছু বাতিল ফিরকাভূক্ত অখ্যাত নামধারী ইসলামী মাসিকেও অনুরূপ মন্তব্য করা হয়। এছাড়া অনেক নামধারী ওয়ায়িযও  এরূপ বলে থাকে।            অথচ তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপেই কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের খিলাফ। তারা মূলতঃ কুরআন শরীফের একখানা আয়াত শরীফের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা না বুঝার কারণেই এরূপ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পেশ করেছে।  খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা      মূলতঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে মহিলাদের খাছ পর্দা হলো-     ১. মহিলারা সর্বদাই ঘরে অবস্থান করবে। ২. ঘরে অবস্থানকালে হোক অথবা বাইরে হোক কোন অবস্থাতেই গায়রে মাহ্রামদের সাথে দেখা দিতে পারবেনা। ৩. প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে বোরকা, হাত মোজা, পা মোজা পরিধান করতঃ চেহারা ও সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে বের হবে। ৪. বোরকা কালো রংয়ের হওয়াই আফযল ও অধিক পর্দার কারণ। ৫. সর্বদা দৃষ্টিকে নিম্নগামী রাখবে। ৬. বিনা প্রয়োজনে গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলবে না। ৭. প্রয়োজনে গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে শক্ত স্বরে কথা বলবে, নরম সূরে কথা বলবে না। এটাই খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা। আর এটাই শরীয়তের নির্দেশ।  অতএব, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যে অনেকেই পর্দা তরক করে কবীরা গুনাহে গুনাহ্গার হবে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।     প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, কতিপয় নামধারী পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মাওলানারা প্রকাশ্যে বেগানা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, ইফতার করে, ঘরোয়া বৈঠক করে, মিটিং-মিছিল করে। আর এটাকে তারা ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থের দোহাই দিয়ে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)      মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ছূরা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে। যেমন, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায় উলামায়ে ছূআবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন-সুন্নাহর মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল।             বর্তমান যামানার উলামায়ে ছূতথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক। দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)   স্মর্তব্য যে, ঐ সকল দাজ্জালের চেলা নামক তথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মৌলভীদের প্রকাশ্যে বেপর্দা হওয়ার কারণে আজ সাধারণ লোক বিভ্রান্তিতে পড়ছে। সাধারণ লোক মনে করছে পর্দার কোন প্রয়োজন নেই। যদি থাকতোই তবে নামধারী মৌলভীরা বেপর্দা হয় কি করে?        উল্লিখিত উলামায়ে ছূদের বেপর্দা হওয়ার কারণে যে সাধারণ লোকেরা পর্দা সম্পর্কীয় বিষয়ে ঈমান-আমলের ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।     অতএব, সকলেই যেন পর্দা সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে পারে বা হিজাব তথা পর্দার ছহীহ্ আহকাম অবগত হতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ও নফ্সের তাড়নায় পর্দা সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং বেপর্দা হচ্ছে তারাও যেন বিভ্রান্তি ও বেপর্দা হতে হিদায়েত ও পর্দার ভিতর আসতে পারে, তাই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” “হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়া হলো।         আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে প্রদত্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেযামন্দি হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন) কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ,   ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে  পর্দা করা ফরযে আইন      ইসলামের ভিত্তি বা প্রধানতম ফরয হচ্ছে পাঁচটি (১) ঈমান বা আক্বীদা, (২) নামায, (৩) যাকাত, (৪) হজ্জ (৫) রমযানের রোযা। অতঃপর পুরুষদের জন্যে হালাল কামাই করা ফরয। আর মহিলাদের জন্যে হিজাব বা পর্দা করা ফরয। অর্থাৎ ফরযে আইন।       কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের বহু স্থানেই হিজাব বা পর্দার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, পাশাপাশি বেপর্দা হওয়ার কারণে কঠিন আযাব ও অসন্তুষ্টির কথাও বর্ণিত হয়েছে।      নিম্নে হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত উল্লিখিত বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর, শরাহ, ফিক্বাহ, ফতওয়া, ইতিহাস ও লুগাতের কিতাবসমূহ থেকে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হলো- (পূর্ব প্রকাশিতের পর) টি.ভি, ভি.ডি.ও, ভি.সি.আর, ভি.সি.পি, ভি.সি.ডি, যে কোন টি.ভি চ্যানেল, সিনেমা, ডিস ইত্যাদি যন্ত্রগুলো অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও বেপর্দা বিস্তারের মাধ্যম। তাই এগুলোর  প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান দেখা এবং এতে প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান করা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম        ছবি তোলা, ঘরে রাখা, অপরকে দেখানো এবং টি.ভি, ভি.ডি.ও, ভি.সি.আর, ভি.সি.পি, টি.ভি চ্যানেল, সিনেমা, ডিস ইত্যাদি অশ্লীলতা ও বেপর্দা বিস্তারের অন্যতম মাধ্যম। তাই এগুলোতে প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান দেখা, দেখানো এগুলোতে প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান করা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয। কারণ, এগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো ছবি, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও বেপর্দার বিস্তার করা।  অথচ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, [২৫৯২]
ان الذين يحبون ان تشيع الفاحشة فى الذين امنوا لهم عذاب اليم فى الدنيا والاخرة والله يعلم وانتم لاتعلمون. (سورة النور ১৯ اية)
অর্থঃ- যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারগণের মধ্যে ফাহিশা (ব্যভিচার, অশ্লীল, অশালীন, বেহায়াপনা, বেপর্দা) কাজ প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহকাল ও পরকালে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ পাক সবকিছু জানেন; কিন্তু তোমরা জাননা।” (সূরাতুন্ নূর ১৯নং আয়াত শরীফ) [২৫৯৩]
وتعاونوا على البر والتقوى ولاتعاونوا على الاثم والعدوان واتقوا الله ان الله شديد العقاب.
অর্থঃ- তোমরা সৎ কাজ এবং খোদাভীতির মধ্যে সাহায্য করো। পাপ কাজ এবং শত্রুতার মধ্যে সাহায্য করোনা। আল্লাহ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক শক্ত হিসাব গ্রহণকারী।” (সূরাতুল মায়িদা ২নং আয়াত শরীফ)  
টি.ভি চ্যানেল, ভি.সি.আর, ভি.সি.ডি-এর মাধ্যমে ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়ার ন্যায় শক্ত হারাম ও ফাহিশা কাজের বিস্তার ঘটছে। তাই এগুলোর প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান করা, দেখা, অপরকে দেখতে সাহায্য করা সম্পূর্ণ হারাম, নাজায়িয ও কুফরী।  যে সমস্ত কারণে এগুলো দেখা, দেখতে সাহায্য করা ও এতে প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান করা নাজায়িয সে কারণগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-         ১। টি.ভি, ভি.ডি.ও, ভি.সি.আর, ভি.সি.ডি, টি.ভি চ্যানেল, সিনেমা, ডিস ইত্যাদি যন্ত্রগুলোর মূল উদ্দেশ্যই হলো অশ্লীল, অশালীন ও ফাহিশামূলক ছবি বিস্তার করা।          আর শরীয়তে প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা, রাখা, এতে সাহায্য করা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম। চাই হাত দিয়ে তোলা হোক, ক্যামেরা দিয়ে হোক, ভি.ডি.ও-এর সাহায্যে হোক অথবা অন্য যে কোন মাধ্যমে হোক না কেন তা নাজায়িয ও হারাম। আর একে হালাল জানা কুফরী। যারা ছবিকে হালাল জানবে তারা কাফির হয়ে যাবে।       জানদার প্রাণির ছবি তোলা, আঁকা ও রাখা সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, [২৫৯৪]
ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.
অর্থঃ- নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ্ পাক কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ ৮৮০ পৃষ্ঠা) [২৫৯৫]
ان من اشد اهل النار يوم القيمة عذابا المصورون.
অর্থঃ নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন আযাব হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে।” (মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ ২০১ পৃষ্ঠা) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, [২৫৯৬]
عن ابى طلحة رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال لا تدخل الملئكة بيتا فيه كلب ولا صورة.
অর্থঃ- হযরত আবু ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ঐ ঘরে রহমতের ফেরেশ্তা প্রবেশ করেনা, যে ঘরে কুকুর বা প্রাণীর ছবি থাকে।” (নাসাঈ শরীফ ২য় জিঃ ২৯৯ পৃষ্ঠা) [২৫৯৭]
عن عائشة رضى الله تعالى عنها زوج النبى صلى الله عليه وسلم قالت دخل على رسول الله صلى الله عليه وسلم وقد سترت بقرام فيه تماثيل فلما راه تلون وجهه ثم هتكه بيده وقال ان اشد الناس عذابا يوم القيمة الذين يشبهون بخلق الله.
অর্থঃ- উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। আর আমি ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা পর্দা লাগিয়েছিলাম। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন  সেটা দেখলেন, তখন তাঁর চেহারা মুবারক রঙ্গীন হয়ে গেল এবং পর্দাখানা নিজ হাতে ছিড়ে ফেললেন আর বললেন, নিশ্চয়ই ক্বিয়ামত দিবসে ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে আল্লাহ্ পাক-এর সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছূরত তৈরী করে।” (নাসাঈ শরীফ ২য় জিঃ ৩০০ পৃষ্ঠা) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, [২৫৯৮]
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صور صورة عذبه الله حتى ينفخ فيها يعنى الروح وليس ينافخ فيها.
অর্থঃ- হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন প্রাণীর ছবি তৈরী করবে, আল্লাহ পাক তাকে ঐ ছবির মধ্যে প্রাণ না দেয়া পর্যন্ত শাস্তি দিবেন; কিন্তু সে সেটার মধ্যে প্রাণ দিতে সক্ষম হবে না।” (তিরমিযী শরীফ ১ম জিঃ ২৮ পৃষ্ঠা)          উপরোক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় ইমামমুজতাহিদ ও ফক্বীহগণ বিশ্ববিখ্যাত ফিক্বহ্ ও ফতওয়ার কিতাবে বলেছেন বা ফতওয়া দিয়েছেন, [২৫৯৯-২৬০১]
وان كان ورد فى حق عاص فيكون اشد عذابا من غيره من العصاة ويكون ذلك ذالا على المعصية المنكورة وفى الترضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد التحريم وهم من الكبائر سواء صنعه لما يمتهن او لغيره حرام بكل حال لان فيه مضاهاة لخلق الله وسواء كان فى ثوب او بساط او دينار او درهم او فلس او اناء او حائط.
অর্থঃ- যদিও অন্যান্য গুরুতর পাপের জন্য হাদীছ শরীফে কঠিন  শাস্তির কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণকারীর শাস্তি সর্বাপেক্ষা কঠিন হবে এবং কঠোর শাস্তিই পাপের নিকৃষ্টতা প্রমাণ করছে। তাওযীহ্কিতাবে উল্লেখ আছে যে, জীব-জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা নিষিদ্ধ,বরং কঠোর নিষিদ্ধ কাজ অর্থাৎ হারাম। এটা কবীরাহ্ গুণাহ। চাই এটাকে যতœ সম্মান প্রদর্শন করুক কিংবা অন্য যে কোন উদ্দেশ্যেই বানিয়ে থাকুক। কেননা এরূপ কাজে আল্লাহ পাক-এর সৃষ্টির অনুকরণ করা হয়। এটা বস্ত্রে, বিছানায়, মোহরে, মুদ্রায়, পয়সায়, পাত্রে ও প্রাচীর গাত্রে যে কোন স্থানে আঁকা বা নির্মাণ করা হারাম।” (উম্দাতুল ক্বারী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া ৩৭৮ পৃষ্ঠা, আয্ যাওয়াজির  ২য় জিঃ, ৩৩ পৃষ্ঠা) [২৬০২-২৬০৪]
قال اصحابنا وغيرهم من العلماء تصوير صورة للحيوان حرام شديد التحريم وهو من الكبائر لانه متوعد عليه بهذا الوعيد الشديد المذكور فى الاحاديث سواء صنعه فى ثوب او بساط او دينار او درهم.
অর্থঃ- আমাদের মাশায়িখগণ ও উলামাগণ বলেছেন যে, প্রাণির ছবি তৈরী করা হারাম, এমনকি গুরুতর হারাম। এটা কবীরাহ্ গুনাহ্। কেননা এরূপ কাজের জন্য বিশেষ ভীতিপ্রদ অবস্থা হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। এটা কাপড়ে, বিছানায়, মোহরে, টাকা-পয়সায় কিংবা যে কোন স্থানে আঁকা থাকুক না কেন তা সমান কথা।” (শরহে মিরকাত, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া ৩৭৯ পৃষ্ঠা, নাইলুল আওতার ২য় জিঃ, ১০৫ পৃষ্ঠা) [২৬০৫-২৬১৬]
ويكره ان يكون فوق راسه فى السقف او بين يديه او بحذائه تصاوير او صورة معلقة واشدها كراهة ان تكون امام المصلى ثم من فوق راسه ثم على يمينه ثم على شماله ثم خلفه.
অর্থঃ- নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে, নামাযীর মাথার উপর, ছাদের মধ্যে অথবা সামনে অথবা জুতোর মধ্যে অথবা ঝুলন্ত অবস্থায় প্রাণির ছবি থাকলে। নামায শক্ত মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে, প্রাণির ছবি নামাযীর সামনে, মাথার উপরে, ডানে, বাঁয়ে, পিছনে থাকলে।” (ফতহুল কদীর ১ম জিঃ ৩৬২ পৃষ্ঠা, আইনী শরহে হিদায়া ১ম জিঃ ৮০৭ পৃষ্ঠা, বাহ্রুর রায়িক ২য় জিঃ ২৭ পৃষ্ঠা, মাবছুত লিসসুরুখছীল ১ম জিঃ ২১১ পৃষ্ঠা, হিদায়া ১ম জিঃ ১৪২ পৃষ্ঠা, শরহে বিকায়া ১ম জিঃ ১২৮ পৃষ্ঠা, শরহে নিকায়া ১ম জিঃ ২১৭ পৃষ্ঠা, কিতাবুল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া ১ম জিঃ ২৭৮ পৃষ্ঠা, মারাকিউল ফালাহ ২৪০ পৃষ্ঠা, জামিউছ ছগীর ২৬ পৃষ্ঠা, মালাবুদ্দা মিন্হু ৬১ পৃষ্ঠা, আনোয়ারে মাহ্মূদ ৫৬ পৃষ্ঠা) [২৬১৭-২৬১৯] উর্দূ কম্পোজ করতে হবে  অর্থঃ- প্রাণীর ছবিযুক্ত স্থানে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রিমী এবং উক্ত নামায দোহ্রানো ওয়াজিব। কেননা আলমগীরী, ফতহুল কদীর কিতাবে মাকরূর বয়ানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নামাযের মধ্যে মাকরূহ্ তাহ্রীমী হলে নামায দোহ্রানো ওয়াজিব, আর মাকরূহ তান্জীহ্ হলে নামায দোহ্রানো মুস্তাহাব। (আহসানুল ফতওয়া ৩য় জিঃ পৃঃ ৪২৭, আলমগীরী, ফতহুল কদীর ইত্যাদি)    উপরোক্ত কুরআন-সুন্নাহর আলোচনা দ্বারা এটাই ছাবিত বা প্রমাণিত হলো যে ছবি তোলা, আঁকা, রাখা, দেখা  ইত্যাদি সমস্ত কিছুই হারাম ও নাজায়িয। যেহেতু ভি.ডি.ও, ভি.সি.ডি ও টিভির মূল বিষয়ই হচ্ছে ছবি সেহেতু সেগুলো দেখা, রাখা ইত্যাদি প্রত্যেকটাই নাজায়িয ও শক্ত হারামের অন্তর্ভুক্ত।  ২। ভি.ডি.ও, ভি.সি.পি ও টি.ভি ইত্যাদি মাধ্যমগুলোতে মহিলারাও এসে থাকে। আর তা সকল শ্রেণীর পুরুষরা দেখে থাকে। যার দ্বারা ব্যাপক বেপর্দা বিস্তার লাভ করে। অথচ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, [২৬২০]
وقرن فى بيوتكن ولاتبرجن تبرج الجاهلية الاولى. (سورة الاحزاب ৩৩ اية)
অর্থঃ- (হে মহিলাগণ) তোমরা তোমাদের ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থাক, জাহিলিয়াত যুগের মেয়েদের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেরিয়োনা।” (সূরা আহযাব ৩৩ নং আয়াত শরীফ) [২৬২১]
ويحفظن فروجهن. (سورة ৩১ اية)
অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ঈমানদার নারীদেরকে বলুন,) তারা যেন তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে।” (সূরাতুন্ নূর ৩১নং আয়াত শরীফ) [২৬২২]
وقل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم. (سورة النور ৩০ اية)
অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) মুমিনগণকে বলুন, তাঁরা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে।” (সূরাতুন্ নূর ৩০ নং আয়াত শরীফ) একজন মহিলার মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ পরপুরুষের দেখা হারাম। অথচ টি.ভি, ভি.সি.পি, সিনেমা ইত্যাদিতে তা অবাধে প্রদর্শণ হচ্ছে। তাই এগুলো দেখা, এতে প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান করা, দেখতে সাহায্য করা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম। ৩। অনুরূপ উক্ত মাধ্যমগুলোতে মহিলারাও বেগানা পুরুষদেরকে দেখে থাকে। অথচ মহিলাদের জন্যেও বেগানা পুরুষদেরকে দেখা হারাম ও নাজায়িয। আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন, [২৬২৩]
ويحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم. (سورة النور ৩০)
অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মুমিন পুরুষগণকে বলুন,) তারা যেন তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে। এতে তাদের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে।” (সূরাতুন্ নূর ৩০নং আয়াত শরীফ) [২৬২৪]
وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن. (سور النور ৩১ اية)
অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি ঈমানদার নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চক্ষুকে (পরপুরুষ থেকে) হিফাযত করে।” (সূরাতুন্ নূর ৩১নং আয়াত শরীফ) [২৬২৫-২৬৩৪]
عن ام سلمة انها كانت عند رسول الله صلى الله عليه وسلم وميمونة رضى الله عنهما اذ اقبل ابن ام مكتوم فدخل عليه (وذلك بعد ما امرنا بالحجاب) فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم احتجبا منه فقلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم اليس هو اعمى لايبصرنا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم افعمياوان انتما تبصرانه. (مسند احمد بن حنبل، الفتح الربانى، ابو داؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، التفسير المظهرى جص৪৯২)
অর্থঃ- হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। একদা তিনি এবং হযরত মাইমূনা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে বসা ছিলেন। এমনি সময় সেখানে উপস্থিত হলেন অন্ধ ছাহাবী হযরত ইবনু উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং তাঁর কাছে প্রবেশ করলেন। (এ ঘটনা আমাদের কাছে পর্দার বিধান নাযিলের পর) হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা দুজন তাঁর থেকে পর্দা কর। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি কি অন্ধ নন? তিনি তো আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন না। উত্তরে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরাও কি অন্ধ? তোমরাও কি তাঁকে দেখতে পাচ্ছো না?” (মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল, আল ফতর্হু রব্বানী, আবূ দাঊদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মাবুদ, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল্ আহওয়াযী, উরফুশ শাযী, আত্ তাফসীরুল্ মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯২ পৃষ্ঠা)      বেগানা মহিলার জন্যেও বেগানা পুরুষের দিকে দেখা হারাম। অথচ টি.ভি চ্যানেলের মধ্যে কিছু তথাকথিত নামধারী ব্যক্তি প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান করছে। আর তা নারী-পুরুষসহ সর্বশ্রেণীর লোক দেখে বেপর্দার গুণাহে গুণাহ্গার হচ্ছে। এসমস্ত কার্যকলাপ সবগুলোই হারাম, নাজায়িয।         অতএব, প্রমাণিত হলো, টি.ভি, ভি.ডি.ও, ভি.সি.আর, ভি.সি.পি, ভি.সি.ডি, টি.ভি চ্যানেল, সিনেমা, ডিস ইত্যাদি দেখা, দেখতে সাহায্য করা এবং এতে প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান করা সম্পূর্ণ হারাম, নাজায়িয ও কুফরী। কেননা, এগুলো বেহায়াপনা, অশ্লীলতা এবং বেপর্দা বিস্তারের একটি অন্যতম মাধ্যম। এটাই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসসম্মত সঠিক ও বিশুদ্ধ ফতওয়া।  কুরআন শরীফ এবং সুন্নাহ শরীফের দৃষ্টিতে খাছ পর্দা করার ফাযায়িল, ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা    আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন কুরআন শরীফে এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, রহমতুল্লিল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুন্নাহ শরীফে তথা হাদীছ শরীফে পুরুষ ও মহিলা সকলকে যার যার পর্দা রক্ষা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সাথে সাথে বেপর্দা হওয়ার শাস্তি, কুফলতা ও কঠিন পরিণতির কথাও ব্যক্ত করেছেন। যাতে মানুষেরা বেপর্দা হওয়ার খারাপ পরিণতির কথা চিন্তা-ফিকির করে এমন গর্হিত, অপছন্দনীয় ও অন্যায়মূলক কাজ থেকে ফিরে থাকতে পারে। অনুরূপভাবে আল্লাহ পাক এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যারা খাছ হিজাব বা পর্দা করে তাঁদেরকে ইহকালীন ও পরকালীন অসংখ্য অগণিত ফযায়িল, ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা ও জান্নাতের সুসংবাদের কথাও ব্যক্ত করেছেন। যাতে মুমিন ও মুসলমানগণ সেগুলো জেনে তার প্রতি উৎসাহী হয়ে ঠিকমত খাছ পর্দা করে এবং অন্যকেও পর্দার বিষয়ে আদেশ, উপদেশ ও নির্দেশ দেয়।  নিম্নে কুরআন শরীফ এবং সুন্নাহ শরীফের আলোকে হিজাব বা পর্দার ফাযায়িল, ফযীলত ও মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ১. সালামের মাধ্যমে অনুমতি নিয়ে কারো ঘরে প্রবেশ করা বান্দার জন্য মঙ্গলজনক। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন,  [২৬৩৫]
يايها الذين امنوا لاتدخلوا بيوتا غير بيوتكم حتى تساتانسوا وتسلموا على اهلها ذلكم خيرلكم لعلكم تذكرون.
অর্থঃ- হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য ঘরে প্রবেশ করোনা, যে পর্যন্ত অনুমতি না নাও এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম না করো। এটাই তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক, যদি তোমরা স্মরণ রাখ। (সূরা নূর/২৭)ঃ ২. অনুমতি চাওয়ার পর বাড়ীওয়ালা ফিরে যেতে বললে ফিরে যাওয়াই অন্তরের তাযকিয়া বা পবিত্রতার কারণঃ  যেমন, আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেছেন, [২৬২৫]
فان لم تجدوا فيها احدا فلا تدخلوها. حتى يؤذن لكم وان قيل لكم ارجعوا فارجعوا هو ازكر لكم والله بما تعملون عليم.
অর্থঃ- তোমরা যদি ঘরে কাউকে না পাও, তবে অনুমতি গ্রহণ না করা পর্যন্ত সেখানে প্রবেশ করোনা। যদি তোমাদেরকে বলা হয় ফিরে যাও, তবে ফিরে যাবে। এতে তোমাদের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে। তোমরা যা কর, আল্লাহ্ পাক তা ভালভাবে জানেন।” (সূরা নূর/২৮) ৩. বিশেষ প্রয়োজনে মহিলাদের হতে পর্দার আড়ালে থেকে হালাল জিনিস প্রার্থনা করা যাবে, আর পর্দা করে কিছু চাওয়া উভয়ের অন্তরের পবিত্রতার কারণ। যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, [২৬৩৭]
واذا سألتموهن متاعا فسألوهن من وراء حجاب ذلكم اطهر لقلوبكم وقلوبهن.
অর্থঃ- তোমরা উম্মুল্ মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব/ ৫৩)      অত্র আয়াত শরীফে যদিও হযরত উম্মুল মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণকে সম্বোধন করা হয়েছে। মূলতঃ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে তাঁদেরকে উদ্দেশ্য করে। কিন্তু এর হুকুম সমস্ত মুমিন পুরুষ ও মহিলাদের জন্য প্রযোজ্য। কেননা, কুরআন শরীফের নুযূল খাছ অর্থাৎ একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে নাযিল হয়েছে কিন্তু এর হুকুম আম যা সমস্ত মুসলমান পুরুষ ও মহিলাদের  জন্য প্রযোজ্য।    ৪. হাত, পা, মুখমণ্ডল এবং সমস্ত শরীর ঢেকে তথা বোরকা পরিধান করে বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বের হলে ফাসিক, ফুজ্জার, মুনাফিক এবং কাফিরদের কষ্ট-ক্লেশ জব্দ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেছেন, [২৬৩৮]
يايها النبى قل لازواجك وبنتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن ذلك ادنى ان يعرفن فلايؤذين وكان الله غفورا رحيما. (سورة الاحزاب ৫৯)
অর্থঃ- হে আমার নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণকে, কন্যা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণকে এবং মুমিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের মুখমণ্ডলের উপর ঝুলিয়ে রাখে। এতে তাদেরকে চিনা সহজ হবে। ফলে তাঁদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আহযাব/৫৯) ৫. পর্দার সাথে নিজ ঘরে অবস্থানকারী মহিলা জিহাদকারী তথা মুজাহিদগণের ফযীলত লাভ করবে। হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, [২৬৩৯]
عن انس رضى الله عنه قال جئن النساء الى رسول الله صلى عليه وسلم فقلن يا رسول الله ذهب الرجال بالفضل والجهاد فى سبيل الله تعالى، فما لنا عمل ندرك به عمل المجاهدين فى سبيل الله تعالى، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قعدت او كلمة نحوها منكن فى بيتها فانها تدرك عمل المجاهدين فى سبيل الله تعالى. (تفسير ابن كثير جص৭৬৮)
অর্থঃ- হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণ সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পুরুষ লোকেরা আল্লাহ্ পাক-এর পথে জিহাদে অংশ গ্রহণ করে তার ফযীলত লাভ করছেন। আমাদের জন্য কি এমন আমল আছে যার দ্বারা আমরা মুজাহিদগণের মত ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা লাভ করতে পারি? উত্তরে সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যারা নিজেদের ঘরে পর্দার সাথে বসে থাকবে তারা আল্লাহ্ পাক-এর পথে জিহাদকারী তথা মুজাহিদগণের সমমর্যাদা ফযীলত লাভ করবে।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর ২য় জিঃ ৭৬৮ পৃষ্ঠা)        ৬. পর্দার সাথে ঘরের প্রকোষ্টে অবস্থানকারিণী মহিলা সর্বদাই আল্লাহ পাক-এর রহমতের নিকটবর্তী থাকে। হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে, [২৬৪০-২৬৫২]
عن عبد الله رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال "ان المرأة عورة فاذا خرجت استشرفها الشيطان واقرب ما تكون بروحة ربها وهى فى قعر بيتها". ورواه الترمذى عن بندار عن عمرو بن عاصم به نحوه. (ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، مشكوة شريف، مرقاة، شرح الطيبى، التعليق الصبيح، مظاهر حق، لمعات، اشعة اللمعات، مرأة المناجيح، تفسير ابن كثير جص ৭৬৮، ৭৬৯)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। সাইয়্যিদুনা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই মহিলা পর্দার অধীন। যখন সে ঘর থেকে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে উঁকি-ঝুঁকি মারে। সে তার রব আল্লাহ্ পাক-এর রহমতের নিকটবর্তী হয় তখনই যখন ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করতে থাকে। হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফ খানা বিনদার রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি আমর বিন আছিম  রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন।” (তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, মিশকাত শরীফ, মিরকাত, শরহুত ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ, মুযাহিরে হক্ব, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মিরয়াতুল্ মানাজীহ, তাফসীরে ইবনে কাছীর ২য় জিঃ ৭৬৮, ৭৬৯ পৃষ্ঠা) [২৬৫৩-২৬৫৮]
اخرج الترمذى والبزار عن ابن مسعود عن النبى صلى الله عليه وسلم قال ان المرأة عورة فاذا خرجت من بيتها استشرفها الشيطان واقرب ما تكون من رحمة ربها وهى فى قعر بيتها، (ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، بزار، تفسير روح المعانى ج১২ ص৬)
অর্থঃ- হযরত ইমাম তিরমিযী ও আবূ বকর বাযযার রহমতুল্লাহি আলাইহিমা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে, তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “নিশ্চয়ই মহিলা পর্দার অধীন, যখন সে ঘর থেকে বাইরে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে উঁকি-ঝুঁকি মারে। সে তার রব আল্লাহ পাক-এর রহমতের নিকটবর্তী হয় তখনই যখন ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করতে থাকে।” (তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ শাযী, বাযযার, তাফসীরে রূহুল মায়ানী ১২ জিঃ ৬ পৃষ্ঠা)      ৭. মহিলাদের অন্দর মহলের নামায সাধারণ ঘর, হুজরা এবং মসজিদের নামায থেকে উত্তম তথা অধিক ফযীলতের কারণ। হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, [২৬৫৯-২৬৬৭]
عن النبى صلى الله عليه وسلم قال "صلوة المرأة فى مخدعها افضل من صلاتها فى بيتها وصلاتها فى بيتها افضل من صلاتها فى حجرتها. وهذا اسناد جيد. (بزار، ابو داود شريف، بذل المجهود، عون المعبود، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، تفسير ابن كثير جص৭৬৮، ৭৬৯)
অর্থঃ- সাইয়্যিদুনা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “মহিলা মানুষের অন্দর মহলের নামায তার ঘরের নামায হতে উত্তম, তার ঘরের নামায হুজরা বা আঙ্গিনার নামায হতে উত্তম।এ সনদটি উৎকৃষ্ট।” (বায্যার, আবূ দাঊদ শরীফ, বযলুল্ মাজহুদ, আউনুল মাবুদ, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, তাফসীরে ইবনে কাছীর ২য় জিঃ ৭৬৮, ৭৬৯ পৃষ্ঠা) ৮. মহিলাদের অন্দর মহলের নামায মসজিদে জামায়াতে নামায পড়ার থেকে পঁচিশগুণ বেশী ফযীলতপূর্ণ। হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,  [২৬৬৮]
عن ابن عمر عن ابنى صلى الله عليه وسلم صلاة المراة تفضل على صلاتها فى الجمع خمسا وعشرين درجة (فردوس للديلمى شريف جصفه ৩৮৯)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মহিলাদের মসজিদে জামায়াতে নামায পড়ার চেয়ে ঘরে একা নামায পড়ায় ২৫ গুণ বেশী ফযীলত পাওয়া যায়।”(ফিরদাউস লিদ্ দাইলামী২য় জিঃ ৩৮৯পৃঃ) ৯. পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য হারাম কাজ থেকে নিজেদের চক্ষু এবং লজ্জাস্থান ও সমস্ত শরীর হিফাযত করা তাযকিয়ায়ে নফস তথা অন্তর পরিস্কার করণে সহায়ক। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, [২৬৬৯]
وقل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فروجهم ذلك ازكم لهم ان الله خبير بما يصنعون.
অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুমিনগণকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের ইজ্জত ও আবরু হিফাযত করে। এতে তাদের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ্ পাক তা অবহিত রয়েছেন।” (সূরা নূর/৩০)       ১০. বেগানা নারীর সৌন্দর্যের প্রতি প্রথম দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে আল্লাহ পাক-এর ভয়ে চোখের দৃষ্টি ফিরেয়ে নিলে, আল্লাহ পাক সে বান্দার ইবাদত সমূহে স্বাদ ও মজা সৃষ্টি করে দেন। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, [২৬৭০-২৬৭১]
عن ابى امامة رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال ما من مسلم ينظر الى محاسن امرأة اول مرة ثم يغض بصره الا احدث الله له عبادة يجد حلاوتها. (مسند احمد بن حنبل، الفتح الربانى)
অর্থঃ- হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সাইয়্যিদুনা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন কোন মুসলমান অন্য নারীর সৌন্দর্যের প্রতি প্রথম দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে চক্ষু ফিরিয়ে নিবে, আল্লাহ পাক তার ইবাদতে স্বাদ ও আনন্দ সৃষ্টি করে দিবেন।” (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, আল্ ফতর্হু রব্বানী) [২৬৭২-২৬৭৩]
عن عبد الله بن مسعود رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان النظر سهم من سهام ابليس مسموم من تركه مخافتى ابدلته ايمانا يجد حلاوتها فى قلبه. (طبرانى شريف، تفسير ابن كثير جص ৪৫২)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই কুদৃষ্টি শয়তানী তীর সমূহের মধ্যে একটি তীর। (আল্লাহ পাক বলেন,)              যে ব্যক্তি আমার ভয়ে নিজের দৃষ্টিকে সংযত রাখে, আমি তাঁর অন্তরে এমন ঈমানী নূর সুদৃষ্টি করে দেই। যার স্বাদ বা মজা সে উপভোগ করে থাকে। হাদীছে কুদসী। (ত্ববারানী শরীফ, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫২ পৃষ্ঠা) ১১. যে ব্যক্তি (পুরুষ হোক বা স্ত্রী হোক) তার চক্ষুর দৃষ্টি এবং লজ্জাস্থান কে হারাম থেকে হিফাযত করবে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিবেন। হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, [২৬৭৪-২৬৮৯]
عن ابى امامة يقول سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول اكفلوا لى بست اكفل لكم بالجنة اذا حدث احدكم فلا يكذب واذا اوتمن فلايخن واذا وعد فلا يخلف وغضوا ابصاركم وكفوا ايديكك واحفظوا فروجكم. وفى صحيح البخارى من يكفل لى ما بين لحييه وما بين رجليه اكفل له الجنة. (مشكوة شريف، مرقاة، شرح الطيبى، التعليق الصبيح، لمعات، اشعة اللمعات، مظاهر حق، مرأة المناجيح، تفسير ابن كثير جص৪৫১، تفسير البغوى، بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تبيسير البارى)
অর্থঃ- হযরত আবূ উমামাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি। তিনি- সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা ছয়টি কাজের দায়িত্ব নাও, তাহলে আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের দায়িত্ব নিচ্ছি। ছয়টি কাজ হলো- (১) তোমাদের মধ্যে যখন কেউ কথা বলবে, তখন মিথ্যা বলবে না, (২) যখন তোমাদের কাছে আমানত রাখা হয়তখন তা খিয়ানত করবে না, (৩) যখন ওয়াদা করবে, তখন তা ভঙ্গ করবে না, (৪) তোমাদের দৃষ্টিকে নিম্নগামী করবে, (৫) যুলূম করা থেকে হাতকে সংযত রাখবে এবং (৬) তোমাদের নিজেদের ইজ্জত আবরুকে হিফাযত করবে।    ছহীহ বুখারী শরীফে আরো বর্ণিত আছে, “যে ব্যক্তি তার জিহবা এবং দুরানের মধ্যবর্তী স্থান তথা শরমগাহের হিফাযতের দায়িত্ব নিবে, আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব নিবো।” (মিশকাত শরীফ, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫১ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল বাগবী, বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল বারী, শরহুল্ কিরমানী)             ১২. ক্বিয়ামতের কঠিন সময় ঐ সমস্ত চোখ কাঁদবে না অর্থাৎ ঐ সমস্ত ব্যক্তি এতমিনানে তথা শান্তিতে থাকবে, যে সমস্ত ব্যক্তির চোখ আল্লাহ পাক-এর হারামকৃত জিনিস দেখা থেকে সংযত ছিল। তাফসীরের কিতাবে হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে, [২৬৯০]
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كل عين باكية يوم القيامة الا عينا غضت عن محارم الله وعينا سهرت فى سبيل الله وعينا يخرج منها مثل رأس الذباب من خشية الله عز وجل. (تفسير ابن كثير جص ৪৫২)
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন প্রত্যেক চোখই কাঁদবে।  শুধু ঐ চোখ কাঁদবেনা যে চোখ আল্লাহ তায়ালার হারামকৃত জিনিষ দেখা থেকে সংযত থেকেছে, আর ঐ সমস্ত চোখ যা আল্লাহ তায়ালার পথে রাত্রি জেগেছে এবং ঐ সমস্ত চোখ যে আল্লাহ তায়ালার ভয়ে কেঁদে অশ্রু বের করেছে। যদিও চোখের পানি মাছির মাথার সমান হয়।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫২ পৃষ্ঠা) ১৩. নির্জনে গোসল করার জন্য নির্জন গোসলখানা তৈরি করা অনেক ফযীলতের কারণ। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,  [২৬৯১-২৬৯৮]
عن ابن عمر انه قال اطيب ما انفق الرجل درهم يعطيه للحمام فى خلوة. (ابو داؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عرضة الاحوذى، عرف الشذى، تفسير القراطبى جص ২২৪)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নির্জন গোসলের জন্য নির্জন গোসলখানা তৈরি করতে এক দিরহাম ব্যয় করে তা অতি পবিত্র।” (আবূ দাঊদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মাবুদ, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ শাযী, তাফসীরুল্ কুরতুবী ৬ষ্ঠ জিঃ ২২৪পৃষ্ঠা) ১৪. ঘরে প্রবেশ করার সময় স্বজনদেরকে সালাম দেয়া আল্লাহ পাক-এর পক্ষ থেকে মুবারক (কল্যাণময়) ও ত্বইয়্যিব (পবিত্র) দোয়া। আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন, [২৬৯৯]
فاذا دخلتم بيوتا فسلموا على انفسكم تحية من عند الله مبركة طيبة كذلك يبين الله لكم الايت لعلكم تعقولن. (سورة النور ৬১ اية)
অর্থঃ- যখনই তোমরা ঘরে প্রবেশ করবে, তখনই তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম দিবে। এটা আল্লাহ পাক-এর পক্ষ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। এমনিভাবে আল্লাহ পাক তোমাদের জন্যে আয়াত বা নিদর্শন তথা আদেশ-নির্দেশসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন। যাতে তোমরা বুঝে নাও।” (সূরাতুন্ নূর ৬১ নং আয়াত শরীফ) ১৫. লজ্জাস্থান হিফাযতকারী তথা পর্দা পালনকারী  পুরুষ ও মহিলাদেরকে আল্লাহ পাক ক্ষমা করে দিবেন এবং মহা পুরস্কার তথা আল্লাহ পাক ও আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি, রেযামন্দী এবং অফুরন্ত সুখময় স্থান জান্নাত দান করবেন। আল্লাহ পাক কালামে পাকে ইরশাদ  করেছেন, [২৭০০]
ان المسلمين والمسلمت والمؤمنين والمؤمنت والقنتين والقنتت والصدقين والقدقت والصبرين والصبرت والخشعين والخشعت والمتصدقين والمتصدقت والصائمين والصئمت والحفظين فروجهم والحفظت والذكرين الله كثيرا والذكرت اعد الله لهم مغفرة واجرا عظيما. (سورة الاحزاب ৩৫ اية)
অর্থঃ- নিশ্চয়ই মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ, ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযা পালনকারী পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, লজ্জাস্থান হিফাযতকারী পুরুষ, লজ্জাস্থান হিফাযতকারী নারী, আল্লাহ পাক-এর অধিক যিকিরকারী পুরুষ ও অধিক যিকিরকারিণী নারী তাদের জন্য আল্লাহ পাক প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা এবং মহা পুরস্কার।” (সূরাতুল্ আযহাব ৩৫ নং আয়াত শরীফ) পরিশিষ্ট   আল হামদু লিল্লাহ। আল্লাহ পাক-এর সমস্ত প্রশংসা যে আল্লাহ পাক হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াশেষ করার তাওফীক দিলেন। মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১১২তম সংখ্যা থেকে ১৩১তম সংখ্যা মোট ২০টি সংখ্যায় ২৭০০ [দুহাজার সাতশ’] দলীল-আদিল্লা ভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রত্যেক মুসলমান, ঈমানদার মহিলা ও পুুরুষদের জন্য হিজাব বা পর্দা করা ফরযে আইন এবং এর অস্বীকারকারী, অবজ্ঞাকারী, অবহেলাকারী কাফির। যা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর শরীফ, শরাহ, ফতওয়া, ফিক্বহ, লুগাত, তাছাউফ ও তারীখ ইত্যাদি কিতাবের অসংখ্য দলীল-আদিল্লা দ্বারা প্রমাণ করা হয়েছে। নিম্নে এই বিশদ, বিস্তারিত আলোচনার সার সংক্ষেপ তথা মূল ফতওয়া ও মাসয়ালা গুলো উপস্থাপন করা হলোঃ ১. শরীয়তের দলীল হচ্ছে কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ তথা হাদীছ শরীফ, ইজমায়ে উম্মত ও ক্বিয়াস। (আল্ মানার, নূরুল আনওয়ার, উছূলুশ্ শাশী)     ২. আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের প্রমাণিত ফতওয়া ও মাসয়ালাই শুধু গ্রহণযোগ্য। খারিজী, রাফিযী, শিয়া, মুতাজিলা, ওহাবী, কাদিয়ানী, বাহাই ইত্যাদি বাতিল ফিরক্বার ফতওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, তাদের আক্বীদার মধ্যে কুফরী রয়েছে।      ৩. প্রত্যেক মুসলমান নর ও নারীর জন্য পর্দা রক্ষা করা ফরযে আইন। পর্দা অস্বীকারকারী, অবজ্ঞাকারী, অবহেলাকারী কাফির। সমস্ত মুহাক্কিক, মুদাক্কিক, ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এ ব্যাপারে একমত।         ৪. অনুসরণীয় মুফাস্সিরূন, মুহাদ্দিছূন, ফুক্বাহা তথা ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে, হিজাব বা পর্দা ফরয হয়েছে পঞ্চম হিজরী সনের যিলক্বদ মাসে।       ৫. হিজাব বা পর্দা ফরয সম্পর্কিত সর্বপ্রথম নাযিলকৃত আয়াত শরীফ হলো সূরা আহযাবএর ৫৩ নং আয়াত শরীফ।           ৬. অনুমতি নিয়ে কারো ঘরে প্রবেশ করা ফরয। কারো ঘরে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা হারাম। ৭. কারো ঘরের ছিদ্র দিয়ে ভিতরে তাকানো হারাম। এতে ঘরওয়ালা যদি পাথর মেরে অথবা লৌহ খণ্ড দিয়ে চোখ নষ্ট করে দেয়, তাতে কোন গুণাহ হবে না।           ৮. ঘরওয়ালাকে যদি দেখা যায় তাহলে প্রথমে সালাম দিবে অতঃপর প্রবেশের অনুমতি নিবে। কিন্তু যদি ঘরওয়ালাকে দেখা না যায় তাহলে লোক মারফত অথবা অন্য কোনভাবে প্রবেশের অনুমতি নিবে অতঃপর সালাম দিয়ে প্রবেশ করবে।   ৯. অন্যের ঘরে প্রবেশের জন্য তিনবার সালাম দেয়া  সুন্নত। তিনবার সালামের পর যদি কোন সাড়া শব্দ না পাওয়া যায়, তবে ফিরে যেতে হবে।             ১০. অন্যের ঘরে প্রবেশের লক্ষ্যে অনুমতি নেয়ার জন্যে কড়া নাড়া বা গলা খাকড়ানোর চেয়ে সালাম দেয়াই আফযল বা উত্তম।        ১১. ঘরওয়ালা অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে।  ১২. কারো ঘরে প্রবেশের জন্য খটখটি দিতে হলে সুন্নত পদ্ধতি হলো, আঙ্গুল দ্বারা মৃদুভাবে আস্তে আস্তে খটখটি দেয়া। যাতে ঘরওয়ালার বিরক্তির সৃষ্টি না হয়।             ১৩. ঘরওয়ালার প্রশ্নের জবাবে অনুমতি প্রার্থনাকারীর স্পষ্টভাবে নিজের নাম বলা সুন্নত। অজ্ঞাত লোকের মত আমি আমিবলা সুন্নতের খিলাফ।             ১৪. যে ব্যক্তি সালাম দেয়না, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে প্রবেশের অনুমতি দিতে নিষেধ করেছেন।         ১৫. কোন ব্যক্তির পাঠানো দূতই তার জন্য প্রবেশের অনুমতি স্বরূপ।      ১৬.শুধু দেখা হলেই চলবে না, প্রবেশের অনুমতি চাইতে হবে।        ১৭. নিজ ঘরের অধিবাসী যেমন, মা, বোন প্রমূখগণের ঘরে প্রবেশের সময় অনুমতি নেয়াও ওয়াজিব। এতে মান-সম্মান, ইজ্জত সংরক্ষণ থাকে। ১৮. নিজ গৃহে তথা যে গৃহে কেউ নেই এমন গৃহে, হুজরায়, মসজিদে প্রবেশের সময় السلام عليك يا رسول الله صلى الله عليه وسلم. والسلام علينا وعلى عباد الله الصالحين. পাঠ করা সুন্নত।         ১৯. অনুমতি চাওয়ার পর ঘরওয়ালা অনুমতি না দিয়ে ফিরে যেতে বললে ফিরে যাওয়াই ফরয, জোরপূর্বক প্রবেশ করতে যাওয়া হারাম।           ২০. আলিম এবং উস্তাযের কাছে ইলম্ শিক্ষার জন্য তার বাড়িতে গিয়ে তার অপেক্ষায় বাইরে বসে থাকাই আদব। উস্তাযকে খবর দিয়ে নিজ প্রয়োজনে ডেকে আনা আদবের খিলাফ তথা বেয়াদবী।         ২১. যে সমস্ত ঘরে কেউ বসবাস করে না যেমন, মসজিদ, মাদ্রাসা, লঙ্গরখানা, সরাইখানা, বিরানঘর ইত্যাদি এমন ঘরে প্রবেশের জন্য সাধারণতঃ অনুমতির প্রয়োজন নেই। এতে কোন গুণাহ্ও হবে না।      ২২. নিজ দাসী ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক-বয়স্কাদেরকে তিন সময়ে ঘরে আসতে অনুমতি গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফজরের নামাযের পূর্বে যখন মানুষেরা ঘুমের কাপড় পাল্টিয়ে নামাযের কাপড় পরিধান করে, দুপুরে যখন মানুষের কাজড় আলগা করে বিশ্রামের জন্য শুয়ে থাকে এবং ইশার নামাযের পর যখন মানুষেরা কাপড় পাল্টিয়ে ঘুমানোর জন্য আলাদা কাপড় পরিধান করে থাকে। এ তিন সময় ছাড়া অন্যসময় অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ করতে অসুবিধা নেই। ২৩. নিজ সন্তান যদি প্রাপ্ত বয়স্ক-বয়স্কা হয়, তবে তাদের জন্যও অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করা ওয়াজিব।    ২৪.  মুসলিমা, মুমিনা মহিলাদের কাছ থেকে বিশেষ প্রয়োজনে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে শালীনতার সাথে চাইতে হবে। বেপর্দা হয়ে সামনা সামনি দেখা করে চাওয়া জায়িয নেই বরং হারাম।            ২৫. মহিলাদের জন্য গায়রে মাহরামদের সামনে মুখমণ্ডল বা চেহারাসহ সমস্ত শরীরই ঢেকে রাখা ফরযে আইন।          ২৬. মাহরামদের সম্মুখে মহিলাদের মুখমণ্ডল, হাত, পা, খোলা রাখা জায়িয; গাইরে মাহরামদের সামনে জায়িয নয়। ২৭. আল্লাহ পাক-এর বাণী الا ماظهر منها. এর অর্থ হলোঃ যা অনিচ্ছা সত্ত্বেও আপছে আপ বের হয়ে যায় তা ব্যতীত।অর্থাৎ নামাযের সময় হাত, পা, মুখমন্ডল খুলে নামায পড়া এবং মাহরামের সামনে হাত, মুখমন্ডল, পায়ের পাতা ইত্যাদি খোলা যে জায়িয, এ আয়াত শরীফ দ্বারা সেটাই বুঝানো হয়েছে। যারা বলে, ‘এ আয়াত শরীফ পর-পুরুষদের সামনে হাত, পা, মুখমন্ডল খোলা জায়িয প্রমাণ করেতাঁদের এ বক্তব্য কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ ও ফতওয়া মতে অশুদ্ধ। মূল ফতওয়া হলো হাত, পা, মুখমন্ডলসহ মহিলাদের সম্পূর্ণ শরীর, ঢেকে রাখা ফরযে আইন।           ২৮. মহিলাদের জন্য জোরে পদচারণা করা, অন্যকে গলার আওয়ায শুনানো, সুগন্ধি মেখে বাইরে বের হওয়া ইত্যাদি বেগানা পুরুষকে আকৃষ্ট করার কার্যকলাপ সবই হারাম। পাঁয়ে ঝুমুর বা নুপুর পড়ে বের হওয়াও হারাম।      ২৯. জরুরতে বেগানা বা পর পুরুষের সাথে কথা বলতে হলে কঠোর বা শক্তস্বরে কথা বলতে হবে, কোমল ও আকর্ষণীয় স্বরে কথা বলা জায়িয নেই। কথা বলার সময় মুখে হাত দিয়ে কর্কশভাবে কথা বলতে হবে। ৩০. মহিলাদের সর্বদাই ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করা ফরয, বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া এবং জাহিলী যুগের ন্যায় নিজ সৌন্দর্য প্রদর্শন করা হারাম। বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে মাথা থেকে পা পর্যন্ত সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে বাইরে যেতে হবে। সামান্য একটু অঙ্গ খোলা রাখা নাজায়িয, হারাম।     ৩১. পুরুষের জন্য বেগানা মহিলার দিকে দৃষ্টি দেয়া হারাম ও কবীরা গুনাহ।    ৩২. আমরাদ তথা দাড়ি মোচ বিহীন সুদর্শন বালকের দিকে শাহওয়াতের সাথে দৃষ্টি দেয়া হারাম। ৩৩. মহিলাদের জন্যও বেগানা পুরুষের দিকে দৃষ্টি দেয়া হারাম ও কবীরা গুনাহ।            ৩৪. মহিলাদের জন্য অপর মহিলার নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত স্থানের দিকে তাকানো হারাম। পুরুষ কর্তৃক অপর পুরুষেরও নাভির নিচ থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত অঙ্গের প্রতি দৃষ্টিপাত করা হারাম বা নাজায়িয। ৩৫. দুজন পুরুষ বস্ত্রহীন হয়ে একই চাদরের নিচে শয়ন করা জায়িয নেই। দুজন স্ত্রী লোকও বস্ত্রহীন হয়ে একই চাদরের নিচে শয়ন করা জায়িয নেই।             ৩৬. বেগানা মহিলার সামনে পুরুষের সতর হলো সমস্ত শরীর। অনুরূপভাবে বেগানা  পুরুষের কাছে মহিলার সতর হলো সমস্ত শরীর। তাই পুরুষ কর্তৃক মহিলার দিকে এবং মহিলা  কর্তৃক পুরুষের কোন অঙ্গের দিকে দৃষ্টি দেয়া জায়িয নেই। ৩৭. মহিলাদের ইজ্জত-আবরু তথা সতরকে পরদৃষ্টি ও ব্যভিচার থেকে হিফাযত করা ফরযে আইন।      ৩৮. সৌন্দর্য প্রকাশ না করে অতিবৃদ্ধাদের জন্য অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার না করা জায়িয, তবে ব্যবহার করা উত্তম। ৩৯. গাইরে মাহরামদের সামনে মহিলাদের মুখমণ্ডল, হাত ও পা খোলা রাখা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম।             ৪০. বংশ সম্পর্কের কারণে যাদেরকে বিবাহ করা হারাম, দুধ পান সম্পর্কিত কারণেও তাদেরকে বিবাহ করা হারাম। মুছাহিরার কারণেও হারাম হয়। (মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১২৪তম সংখ্যার ২৫, ২৬, ২৭ নং পৃষ্ঠায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে)          ৪১. যতজন পুরুষ কতৃক মহিলাদেরকে এবং মহিলা কর্তৃক পুরুষকে দেখা করা বা দেখা দেয়া জায়িয তার একটি তালিকা দেয়া হলো- ক. একজন পুরুষ কর্তৃক যতজন মহিলাকে দেখা জায়িয। (১) মা (আপন ও সৎ উভয়েরই দেখা করা জায়িয)।      (২) দাদী, পরদাদী (এভাবে যত উর্ধে যাক)।      (৩) নানী, পরনানী (এভাবে যত উর্ধে যাক)             (৪) মেয়ে (বৈপিত্রেয়া, বৈমাত্রিয়া মেয়ে ও দুধ মেয়েও শামিল)         (৫) পুতনী (এখানে দুধ ছেলে ও বৈমাত্রেয়া ও বৈপিত্রেয় ছেলের মেয়েও শামিল)    (৬) নাতনী (এখানে দুধ মেয়ে ও বৈপিত্রেয়া মেয়ের মেয়েও শামিল) (৭) বোন (তিন প্রকারঃ আপন, বৈমাত্রিয়া বোন ও বৈপিত্রিয়া বোন শামিল) (৮) ফুফু (আপন ফুফু, বৈমাত্রিয়া ফুফু, বৈপিত্রিয়া ফুফু ও দুধ ফুফু শামিল)      (৯) খালা (আপন খালা, বৈমাত্রিয়া খালা, বৈপিত্রিয়া ও দুধ খালা শামিল) (১০) ভাতিজী (ভাতিজীর মেয়ে যত নিম্নে যাক)।    (১১) ভাগ্নী (ভাগ্নীর মেয়ে যত নিম্নে যাক)      (১২) দুধ মা (আড়াই বছরের মধ্যে যার দুধ পান করা হয়েছে)।      (১৩) দুধ বোন (আপন বোনের মত দুধ বোনকে দেখা জায়িয)   (১৪) শাশুড়ী (এখানে শুধু আপন শাশুড়ী উদ্দেশ্য, সৎ শাশুড়ীকে দেখা হারাম)।             (১৫) যে স্ত্রীর সাথে মিলামিশা করা হয়েছে তার অন্য পক্ষের মেয়ে।             (১৬) ঔরসজাত পুত্রের বধু বা স্ত্রী (এখান থেকে পালক পুত্রের স্ত্রীকে বাদ দেয়া হয়েছে) (১৭) দুধ  পুত্রের বধু বা স্ত্রী।        (১৮) অতি বৃদ্ধা মহিলা, যাদের প্রতি তাকালে আকর্ষণ বিকর্ষণে পরিণত হয়। খ. একজন মহিলা যতজন পুরুষকে দেখতে পারে বা দেখা দিতে পারে।         (১) পিতা (আপন ও মায়ের পূর্বের স্বামী উভয়েরই দেখা করা  জায়িয)          (২) দাদা (পর দাদা এভাবে যত উর্ধে যাক)             (৩) নানা (পর নানা এভাবে যত উর্ধে যাক)       (৪) ছেলে (বৈপিত্রেয়, বৈমাত্রেয় ও দুধ ছেলে সকলেই শামিল)        (৫) নাতী বা পৌত্র (এখানে দুধ ছেলে, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ছেলের ছেলেও শামিল)        (৬) নাতী বা দৌহিত্র (এখানে দুধ মেয়ে, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় মেয়ের ছেলেও শামিল)       (৭) ভাই (আপন, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভাই শামিল)       (৮) চাচা (আপন, বৈমাত্রেয়, বৈপিত্রেয় ও দুধ চাচা শামিল)   (৯) মামা (আপন, বৈমাত্রেয়, বৈপিত্রেয় ও দুধ মামা শামিল)            (১০) ভাতিজা (ভাতিজার ছেলে যত নিম্নে যাক)  (১১) ভাগিনা (ভাগিনার ছেলে যত নিম্নে যাক)         (১২) দুধ পিতা (আড়াই বছরের ভিতরে যার স্ত্রীর দুধ পান করা হয়েছে)        (১৩) দুধ ভাই (আপন ভাইয়ের মত দুধ ভাইকেও দেখা ও দেখা দেয়া জায়িয)     (১৪) শ্বশুর। (শুধু আপন শশুর উদ্দেশ্য)            (১৫) যে স্বামীর সাথে মিলামিশা করা হয়েছে তার অন্য পক্ষের বা স্ত্রীর ছেলে।            (১৬) ঔরসজাত মেয়ের স্বামী বা জামাতা (এখান থেকে পালিত মেয়ের স্বামী বাদ যাবে) (১৭) দুধ মেয়ের স্বামী বা জামাতা।             (১৮) পুরুষদের মধ্যে যারা অবুঝ, মহিলার প্রতি যাদের কোন আকর্ষণ নেই। (১৯) বালকদের মধ্যে ঐ সমস্ত বালক যাদের কাছে এখনো মেয়েদের বিষয়টি স্পষ্ট হয়নি।     (২০) অতি বৃদ্ধ পুরুষ, যাদের দিকে তাকালে আকর্ষণ বিকর্ষণে পরিণত হয়।             ৪২. জরুরতে বোরকা পরিধান করে সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে বের হতে হবে। মুখের নেকাব ঝুলাতে হবে এবং হাত পায়ে মোজা পরিধান করে ঢাকতে হবে। তাহলেই পরিপূর্ণ হিজাব হবে, অন্যথায় নয়।       ৪৩. মহিলারা ইহরাম অবস্থায়ও নেকাব ব্যবহার করবে। তবে এরূপভাবে ব্যবহার করবে যেন নেকাব মুখমণ্ডল বা চেহারা স্পর্শ না করে এবং তার চেহারাও ঢেকে থাকে।    ৪৪. হাদীছ শরীফে যে এক চোখ খোলা রাখার কথা বলা হয়েছে। এর পদ্ধতি হলো, সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে মাথার উপর থেকে মুখমন্ডলের উপর এমন ভাবে নিকাব ঝুলাতে হবে যাতে শুধু নিচের দিকে রাস্তা দেখা যায়, পর পুরুষ যেন চোখের কোন অংশই দেখতে না পারে। কারণ মহিলাদের সম্পূর্ণ শরীরই পর্দার অন্তর্ন্তুক্ত।   ৪৫. বিশেষ প্রয়োজনে ডাক্তার মহিলার প্রয়োজনীয় অঙ্গ দেখতে পারবে। তবে সামান্য সময় বেশী এবং সামান্য বেশী অংশ দেখা হারাম।        ৪৬. মহিলাদের কণ্ঠস্বরও হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। ৪৭. নিজ ঘরে প্রবেশের জন্য সালাম দেয়া সুন্নত।           ৪৮. পুরুষদের মত মহিলাদেরও পরস্পরের সালাম দেয়া সুন্নত, আর জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব।         ৪৯. মাহরাম ও মাহরামাদের মধ্যে সালাম ও জাওয়াব দেয়া জায়িয। ৫০. নেক্কার স্ত্রীলোকের জন্য বদকার স্ত্রীলোকের সহিত দেখা করা ঠিক নয়। হিদায়েত করার জন্য জায়িয আছে। ৫১. বোরকার উপর ইচ্ছাকৃত দৃষ্টি দেয়া হারাম।         ৫২. নির্জনে দুধ বোন ও শাশুরীর সহিত সাক্ষাৎ নিষেধ।    ৫৩. নিকাহে  মুতয়া এবং নিকাহে মুওয়াক্কাত বা সাময়িক বিবাহ বাতিল, মানসূখ, হারাম ও নাজায়িয।    ৫৪. হানাফী মাযহাব মতে, পুরুষের নামাযের ছতর হলো নাভির নিচ থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত অঙ্গ। অর্থাৎ এ পরিমাণ অঙ্গ নামাযের সময় ঢাকা ফরয। আর মহিলাদের নামাযের ছতর হলো মুখমণ্ডল, হাতের কব্জির উপর এবং পায়ের পাতা ব্যতীত সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ। অর্থাৎ নামাযের সময় মুখমণ্ডল, হাতের কব্জির উপর এবং পাতা ছাড়া সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা ফরয।      ৫৫. ইলিম্ অর্জনের জন্য খাছ পর্দার সাথে মহিলাদের বাইরে বের হওয়া জায়িয।     ৫৬. মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে, ঈদগাহে, জুমুয়াতে যাওয়া হারাম ও কুফরী। কেননা এতে ইজমাকে অস্বীকার করা হয় এবং ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণকে অবজ্ঞা করা হয়। ৫৭. মহিলাদের মাহরাম সহ হজ্ব বা ছফর করা ফরয, মাহরাম ব্যতীত হজ্ব করা জায়িয নেই বরং হারাম।             ৫৮. মাহরামসহ ছফরকারীনী পরহেযগার মহিলার তথ্যাবধানে আরো একাধিক মহিলা ছফরসঙ্গী হিসেবে থাকলে খাছ পর্দার শর্তে তাদের ছফর জায়িয। তথ্যাবধায়ক মহিলার মাহরামই সকলের মাহরামের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ধার্য হবে। তাই এমন ছফর শরীয়ত মতে জায়িয।           ৫৯. মহিলাদের  পোশাক পর্দার অন্তর্ভুক্ত।         ৬০. বাইরে বের হওয়ার সময় মহিলাদের জন্য আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা জায়িয নেই।      ৬১. মহিলাদের চাকুরী করা জায়িয নেই। তবে কেউ না থাকলে, জরুরতে হালাল পন্থায় পর্দার সাথে চাকুরী বা ব্যবসা করতে পারবে। তবে শর্ত সাপেক্ষে।            ৬২. পুরুষ ও মহিলারা সাধারণতঃ ১৫ বছর বয়সে বালিগ-বালিগা বা প্রাপ্ত বয়স্ক-বয়স্কা হয়। মহিলারা কোন কোন সময় কমপক্ষে ৯ বছর বয়সেও প্রাপ্ত বয়স্কা হয়ে থাকে। যত বছর বয়সেই বালিগা হোক না কেন, বালিগা হওয়ার সাথে সাথেই তার জন্য পর্দা করা ফরযে আইন হয়ে যায়। ৬৩. হিজাব বা পর্দার বিধান তথা পর্দা সকলের জন্য ফরযে আইন। এর অস্বীকারকারীরা কাফির।            ৬৪. ইসলামী শরীয়তে নারী নেতৃত্ব সম্পূর্ণ হারামএকে হালাল বা জায়িয বলা ও জানা কুফরী।   ৬৫. ইছলাহ বা অন্তর শুদ্ধ হলেও বেগানা মহিলাদের সাথে সাক্ষাৎ করা জায়িয হবেনা।   ৬৬. যে সমস্ত ভণ্ড পীর, মাওলানা, নামধারী আলিম, ইমাম, খতীব, ওয়ায়িয বেগানা মহিলাদের সাথে সাক্ষাৎ করে, একসঙ্গে মিটিং-মিছিল করে তাদের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। যদি তারা এগুলোকে হারাম জেনে করে থাকে। কারণ, তারা চরম ফাসিক। আর যদি হালাল জেনে করে তবে তাদের পিছনে নামায পড়া শক্ত হারাম, কারণ তারা কাফির। ৬৭. যে মহিলা আতর বা সুগন্ধি মেখে পরপুরুষের কাছে অথবা বাইরে বের হয়, সে ব্যভিচারিণী।             ৬৮. বেপর্দা হয়ে বাইরে সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী মহিলাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং মুনাফিকা মহিলা।            ৬৯. কু-দৃষ্টি শয়তানের তীর সমূহের একটি তীর।      ৭০. ব্যভিচার নিকৃষ্ট ও অশ্লীল কাজ।   ৭১. যারা ব্যভিচারের প্রসার ঘটায় তাদের জন্য ইহকালে ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আছে।             ৭২. দাইয়্যূছ কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা, তাদের জন্য জান্নাত হারাম। দাইয়্যূছ হলো, যে নিজে পর্দা করে না এবং পরিবার পরিজনকেও পর্দায় রাখে না। সে যে শ্রেণীরই হোক না কেন।          ৭৩. হাত দিয়ে, ভি.ডি.ও দিয়ে এবং ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা  সমানভাবে হারাম। এতে কোন পার্থক্য নেই।        ৭৪. টি.ভি, ভি.সি.আর, ভি.সি.পি, ভি.ডি.ও, এ.টি.এন চ্যানেল, সিনেমা, ডিস, বাইস্কোপ ইত্যাদি দেখা, অপরকে দেখতে সাহায্য করা এবং এতে প্রোগাম বা অনুষ্ঠান করা হারাম, নাজায়িয এবং কুফরী। ৭৫. পর্দার সাথে নিজ ঘরে অবস্থানকারী মহিলা জিহাদে অংশগ্রহণের সমান ফযীলত লাভ করবে।            ৭৬. ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থানকারী মহিলা সর্বদাই আল্লাহ পাক-এর রহমতের মধ্যে থাকে।    ৭৭. মহিলাদের গহিন কোঠরির নামায সাধারণ ঘর, হুজরা এবং মসজিদের নামায থেকে উত্তম এবং পঁচিশগুণ ও বহুগুণ ছাওয়াব লাভের কারণ।      ৭৮. খাছ পর্দা করে চললে, আল্লাহ পাক ইবাদতে স্বাদ ও মজা সৃষ্টি করে দেন।            ৭৯. পর্দা রক্ষাকারীদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব।             ৮০. পর্দাকারী পুরুষ, মহিলারাই ক্বিয়ামতের দিন শান্তিতে থাকবে।   ৮১. হিজাব বা পর্দা রক্ষাকারীদের জন্য ক্ষমা এবং বিরাট পুরস্কার রয়েছে। তথা আল্লাহ পাক এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি, রেযামন্দী এবং জান্নাত রয়েছে। ৮২. আহলে তাছাউফগণ ছাড়া হাক্বীক্বীভাবে পর্দা করা অন্যান্যদের জন্য খুবই কঠিন। বাইয়াত হয়ে, হক্কানী ওলীআল্লাহ্র ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ এর মাধ্যমে নফস ও ক্বলব শুদ্ধ হলেই খাছ পর্দা রক্ষা করা সহজ সাধ্য হয়ে যায়। আয় আল্লাহ পাক! আমাদেরকে হিজাব বা পর্দার যাবতীয় মাসয়ালা জেনে ও মেনে তা নিজের  জীবনে বাস্তবায়ন করে আপনার সন্তুষ্টি এবং আপনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি অর্জন করার তাওফীক দান করুন। (আমীন) (সমাপ্ত)