তাবলীগী নেসাবের প্রণেতা মালানা যাকারিয়া দৃষ্টিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপাদমস্তক নূর।
Image result for আলোতাবলীগী নেসাবের প্রণেতা মালানা যাকারিয়া দৃষ্টিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপাদমস্তক নূর।

রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাহ্যিক আকৃতির বর্ণনাকে মুহাদ্দিসীনে কিরাম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। ইমাম তিরমিযী শামাইলে তিরমিযী এর প্রথম অধ্যায়ই এনেছেন-

باب ما جاء فى خلق رسول الله صلى الله عليه وسلم

অর্থাৎ রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর خلق তথা বাহ্যিক আকৃতি প্রসঙ্গে। কুরআন ও সুন্নাহ যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর নির্ভরশীল সেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি সর্বোত্তম দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উচিত।

কাফির মুশরিকরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি যেরূপ দৃষ্টিতে তাকাতো সেভাবে না তাকিয়ে ঈমানের নজরে তাকানো উচিত।

হযরত আল্লামা মোল্লা আলী কারী শামাইলে তিরমিযীর পূর্বোক্ত বাবের ((باب ما جاء فى خلق رسول الله صلى الله عليه وسلم ব্যাখ্যায় লিখেছেন, এই বাব হলো সে সকল হাদীস সম্পর্কে যা আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক তদীয় মহান রাসূল ও নবীয়ে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আকৃতি পরিপূর্ণরূপে সৃষ্টির বর্ণনায় এসেছে।


এজন্য বলা হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমানের পরিপূর্ণতার অংশ হলো এই বিশ্বাস রাখা যে, রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বদন মুবারকে বাতিনী সৌন্দর্যের প্রতি নির্দেশক যত জাহিরী সৌন্দর্য একত্রিত হয়েছে, তদ্রুপ সৌন্দর্য অন্য কোনো মানুষের শরীরে একত্রিত হয়নি।

এ বিষয়ে ইমাম কুরতুবী (রহ:) বর্ণনা করেন, কেউ কেউ বলেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিপূর্ণ সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়নি। যদি তা পূর্ণরূপে প্রকাশিত হতো তাহলে সাহাবায়ে কিরাম তাঁর দিকে তাকানো সম্ভব হতো না। আর কাফিরদের অবস্থা তো সেরূপ যেরূপ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,,,

تراهم ينظرون اليك وهم لا يبصرون ـ

অর্থাৎ আপনি দেখবেন তারা আপনার প্রতি দৃষ্টিপাত করছে অথচ তারা দেখছে না।

কোনো কোনো সুফী বলেন, অধিকাংশ মানুষ আল্লাহকে চিনতে পেরেছে কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে চিনতে পারেনি। কেননা মানবীয় পর্দা তাদের দৃষ্টিশক্তিকে ঢেকে দিয়েছে। (মোল্লা আলী কারী ‘জামউল ওসাইল ফী শরহিশ শামাইল’ পৃষ্ঠা-১০)।

বর্তমানে দেখা যায়, শয়তান যেভাবে আদম আলাইহিস সালামকে কে মাটি বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য (এহানত) করেছিল ঠিক সেভাবে শয়তানের দোসর কোন কোন আলেম নামধারী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মাটির নবী বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে থাকে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় তাদের কেউ কেউ তাবলীগী ও দেওবন্দের অনুসারী।

অথচ তাবলীগী নেসাবের প্রণেতা ও দেওবন্দেীদের অনুসরণীয় বুযুর্গ শায়খুল হাদীস মালানা যাকারিয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নূর বলেছে। সে তাঁর শামাইলে তিরমিযীর ব্যাখ্যাগ্রন্থে শামাইলে তিরমিযীর প্রথম অধ্যায় باب ما جاء فى خلق رسول الله صلى الله عليه وسلم ـ প্রসঙ্গে লিখেছে

, ‘‘ গ্রন্থকার (ইমাম তিরমিযী) এই পরিচ্ছেদে এ সকল হাদীস উল্লেখ করেছেন যা হুযূরে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাহ্যিক আকৃতি বর্ণনায় এসেছে। হুযূরে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুবারক সৌন্দর্য যথাযথভাবে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। নূরে মুজাস্সাম এর আকৃতি বর্ণনা করা সাধ্যের বাইরে। (শামাইলে তিরমিযী মা’আ উর্দু হাসিয়া খাসাইলে নববী। পৃষ্ঠা -১০)


এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো যাকারিয়া প্রথমে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ‘‘নূরে মুজাস্সাম’’ বলেছে। এরপর বলেছে, নূরে মুজাস্সাম এর আকৃতি বর্ণনা করা সাধ্যের বাইরে। নি:সন্দেহে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি আদবের দিকে খেয়াল রেখে তিনি এরূপ বলেছে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি আদবের দৃষ্টি রাখা মুমিনের জন্য ফরয।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অন্যান্য মানুষের মতো বলা কিংবা মাটির নবী বলা চরম দেয়াদবী রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন সকল দিক থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।

এ বিষয়ে জাকারিয়া আল্লামা মানাভী এর উক্তি-উদ্ধৃতি করেছে। সে শামাইলে তিরমিযীর প্রথম পরিচ্ছেদে ৫ম হাদীসের ‘ফায়দা’ অংশে লিখেছে: মানাভী লিখেছেন, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য এই আকীদা পোষণ করা বাধ্যতামূলক যে, হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শরীর মুবারক যে সকল সুন্দর গুণে বিভূষিত অন্য কেউও এ সকল গুণে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমান হতে পারে না। এ বিষয়টি শুধুমাত্র বিশ্বাসের বিষয় নয়, বরং সিয়র হাদীস ও ইতিহাসের কিতাব এ জাতীয় বর্ণনায় পরিপূর্ণ।

আল্লাহ তা’য়ালা বাতিনী কামালতের সাথে সাথে জাহিরি পূর্ণতাও তাঁকে দান করেছিলেন। (শামাইলে তিরমিযী মা’আ উর্দু হাশিয়া খাসাইলে নববী পৃষ্ঠা-১৬) باب ما جاء فى تواضع رسول الله রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিনয় অধ্যায়ে ১৩ নং হাদীসে এসেছে-

كان بشرامن البشر يفلى ثوبه ـ

অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের মধ্যে একজন মানুষ ছিলেন। তার পোশাকের মধ্যে নিজেই উকুন তালাশ করতেন, এ হাদীসের ব্যাখ্যায় হযরত জাকারিয়া সাহেব রহ, লিখেছেন, উলামায়ে কিরামের তাহকীক হলো, হুযূরে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শরীরে উকুন হতো না। কারণ, শরীরের ময়লা হতে উকুনের সৃষ্টি হয় এবং ঘামের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপাদমস্তক নূর ছিলেন। সেখানে ময়লা থাকার সুযোগ কোথায়? (শামাইলে তিরমিযী মা’আ উর্দু হাশিয়া খাসাইলে নববী, পৃষ্ঠা -৩৫৪)

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, كان بشرامن البشرـ হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যাকারিয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে سرا سرنور (আপাদমস্তক নূর) বলেছে।

দেওবন্দীদের অনুসারী দাবীদার যে সকল তথাকথিত ওয়াইজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মাটির নবী বলে তারা আসলে কাদের অনুসারী বা ঠিকাদার সেটা খুঁজে দেখা দরকার। তারা বিচ্যুত হয়ে নজদের পানে ছুটছেনাতো ???




মৃত ব্যক্তির জন্য আপনার কি করনীয় ?
Image result for মৃতমৃত ব্যক্তির জন্য আপনার কি করনীয় ?
২১ শে ফেব্রুয়ারী , স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বুদ্ধিজীবী দিবসে দেখা যায় দলে দলে লোক যেয়ে ফুল দিয়ে আসে। কিন্তু এই ফুল কি কাজে আসবে ? মৃত ব্যক্তির রুহে কি এই ফুল যাবে ? একজন মুসলমান যিনি দেশের জন্য মারা গেছেন তিনি জীবিত ব্যক্তির কাছে নেকি আশা করেন যাতেউনার রুহের মাগফেরাত হয়। সে হিসেবে একজন মুসলমান হিসেবে আপনি যা যা করতে পারেন -

১. মৃত ব্যক্তিদের জন্য দুআ ও ক্ষমা প্রার্থনা করা :
আল-কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে—
وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ. (الحشر :১০)
‘যারা তাঁদের পরে এসেছে তারা বলে ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ও আমাদের যে সকল ভাই পূর্বে ঈমান গ্রহণ করেছেন তাদের ক্ষমা করুন।’[সূরা হাশর : ১০]

এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে সকল মুসলিম দুনিয়া থেকে চলে গেছেন, তাদের মাগফিরাতের জন্য প্রার্থনা করতে শিখিয়েছেন। তাই বুঝে আসে মৃত ব্যক্তিদের জন্য মাগফিরাতের দুআ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। এমনিভাবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মৃত ব্যক্তিদের জন্য দুআ-প্রার্থনা করার কথা কুরআনের একাধিক আয়াতে উল্লেখ করেছেন।
হাদীসে এসেছে—
عن أبي أسيد الساعدي قال سأل رجل من بني سلمة فقال يارسول الله هل بقي من بر أبواي شيء أبرهما بعد موتهما، فقال نعم، الصلاة عليهما والاستغفار لهما وإنفاذ عهدهما بعد موتهما وصلة الرحم التي لا توصل إلا بهما وإكرام صديقهما.رواه أبو داود وابن ماجة
—সাহাবী আবু উসাইদ আস-সায়েদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কর্তৃক বর্ণিত যে, বনু সালামা গোত্রের এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর রাসূল ! আমার পিতা-মাতার মৃত্যুর পর এমন কোন কল্যাণমূলক কাজ আছে যা করলে পিতা-মাতার উপকার হবে? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন : হ্যাঁ, আছে। তাহল, তাদের উভয়ের জন্য আল্লাহর রহমত প্রার্থনা করা। উভয়ের মাগফিরাতের জন্য দুআ করা। তাদের কৃত ওয়াদা পূর্ণ করা। তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখা ও তাদের বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করা।[আবু দাউদ ও ইবনে মাজা]
হাদীসে এসেছে—
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا مات الإنسان انقطع عنه عمله إلا من ثلاث: إلا من صدقة جارية أو علم ينتفع به أو ولد صالح يدعو له.رواه مسلم ১৬৩১ والنسائ ৩৫৯১
আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি কাজের ফল সে পেতে থাকে—

১. সদকায়ে জারিয়াহ (এমন দান যা থেকে মানুষ অব্যাহতভাবে উপকৃত হয়ে থাকে) ২. মানুষের উপকারে আসে এমন ইলম (বিদ্যা) ৩. সৎ সন্তান, যে তার জন্য দুআ করে।[মুসলিম ও নাসায়ী]
এ হাদীস দ্বারা বুঝে আসে যে : সন্তান যদি সৎ হয় ও পিতা-মাতার জন্য দুআ করে তবে তার ফল মৃত পিতা-মাতা পেয়ে থাকেন।

২-মীলাদ
ইমাম জালালুদ্দিন আস সৈয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি “আল উয়াছায়েল ফী শরহিশ শামাইল” গ্রন্থে উল্লেখ করেন,যে গৃহে বা মসজিদে কিংবা মহল্লায় মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। তখন অবশ্যই সে গৃহ বা মসজিদ বা মহল্লা অসংখ্য ফেরেশতা দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে এবং উক্ত স্থান সমূহে যারা অবস্থান করে তাদের জন্য তারা সালাত পাঠ করে। (অর্থাৎ তাদের গুণাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে) এবং আল্লাহ তায়ালা তাদের সবাইকে সাধারণভাবে রহমত ও সন্তুষ্টি দ্বারা ভূষিত করেন। অতঃপর নূরের মালা পরিহিত ফেরেশতাকুল বিশেষতঃ হযরত জিব্রাঈল, মীকাঈল, ঈস্রাফীল ও আজরাঈল আলাইহিস সালাম মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে মাহফিল আয়োজনকারীর গুণাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকেন।

৩-খতমে তাহলীল
খতম শব্দের অর্থ শেষ। তাহলীল শব্দের অর্থ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ। অতএব খতমে তাহলীলের অর্থ হল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ শেষ করা। পারিভাষিক অর্থে এক লাখ বা সোয়া লাখ বার লা-ইলা ইল্লাল্লাহ পাঠ করা। এ যেমন এককভাবে আদায় করা হয়, তেমনি কিছু সংখ্যক লোক একত্র হয়ে পাথর বা কোন দানা গুনে গুনে এ খতম আদায় করে থাকে। সাধারণত: কোন লোক ইন্তেকাল করলে তার আত্মার মাগফিরাতের জন্য এ খতমের আয়োজন করা হয়।

৪-কুরআন খতম বা কুরআনখানি
মৃত ব্যক্তির প্রতি সওয়াব পাঠানোর জন্য কুরআন খতম বা কুরআন খতমের অনুষ্ঠান করা হয়।

৫- তবারুক খাওয়ানো-
মৃত ব্যক্তির মাগফিরাত কামনায় দরিদ্র অসহায় লোকদের জন্য খাবারের আয়োজন করা। আল্লাহ ও তার রাসূল মানুষকে খাদ্য দানে উৎসাহিত করেছেন এবং এর জন্য পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন।

৬. মৃত ব্যক্তির জন্য দান-সদকাহ করা ও জনকল্যাণ মূলক কাজ করা :
হাদীসে এসেছে—
عن عائشة رضي الله عنها أن رجلا أتى النبى صلى الله عليه وسلم، فقال يا رسول الله إن أمي افتلتت نفسها ولم توص وأظنها لو تكلمت تصدقت أفلها أجر إن تصدقت عنها؟ قال: نعم.رواه البخاري ১৩৮৮ و مسلم ১০০৪
আয়েশা আলাইহাস সালাম থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করল যে, আমার মা হঠাৎ মৃত্যু বরণ করেছেন, কোন কিছু দান করে যেতে পারেননি। আমার মনে হয় যদি তি কথা বলতে পারতেন তবে কিছু সদকা করার নির্দেশ দিতেন। আমি যদি তার পক্ষে সদকা করি তাহলে তিনি কি তা দিয়ে উপকৃত হবেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : হ্যাঁ।[ বুখারী : ১৬৩১ ও মুসলিম ৩৫৯১]
হাদীসে এসেছে—
عن سعد بن عبادة رضي الله عنه أنه قال: يا رسول الله إن أم سعد ماتت فأي الصدقة أفضل؟ قال: الماء، فحفر بئرا وقال : لأم سعد. رواه النسائي ৩৫৮৯ وأحمد
সাহাবী সা’দ বিন উবাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা ইন্তেকাল করেছেন। কী ধরনের দান-সদকা তার জন্য বেশি উপকারী হবে? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ‘পানির ব্যবস্থা কর’। অত:পর তিনি (সা’দ) একটা পানির কূপ খনন করে তার মায়ের নামে (জন সাধারণের জন্য) উৎসর্গ করলেন।[নাসায়ী ও মুসনাদ আহমদ]
হাদীসে আরো এসেছে
عن ابن عباس رضي الله عنهما أن رجلا قال يا رسول الله إن أمه توفيت أفينفعها إن تصدقت عنها، قال نعم، قال فإن لي مخرفا فأشهدك أني قد قد تصدقت به عنها. رواه النسائي ৩৫৯৫
ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা মৃত্যু বরণ করেছে। যদি আমি তার পক্ষে ছদকাহ (দান) করি তাহলে এতে তার কোন উপকার হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। এরপর লোকটি বলল, আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি আমি আমার একটি ফসলের ক্ষেত তার পক্ষ থেকে সদকাহ করে দিলাম।[নাসায়ী, ৩৫৯৫]

৭) ফাতেহা পাঠ
সূরা ফাতেহা পাঠ করা। তবে, পরিভাষায় মৃত ব্যক্তির কবরে উপস্থিত হয়ে তার জন্য সূরা ফাতেহা বা সংক্ষিপ্ত দুআ-প্রার্থনা করা।

৮) কুরবানী করা :
যেমন হাদীসে এসেছে—
عن عائشة وأبي هريرة رضي الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان إذا أراد أن يضحي اشترى كبشين عظيمين سمينين أقرنين أملحين موجوئين ( مخصيين)، فذبح أحدهما عن أمته لمن شهد لله بالتوحيد وشهد له بالبلاغ، وذبح آخر عن محمد وعن آل محمد صلى الله عليه وسلم . (رواه ابن ماجة ৩১১৩ وصححه الألباني)
আয়েশা আলাইহাস সালাম ও আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কুরবানী দিতে ইচ্ছা করলেন তখন দুটো দুম্বা ক্রয় করলেন। যা ছিল বড়, হৃষ্টপুষ্ট, শিং ওয়ালা, সাদা-কালো বর্ণের এবং খাসি। একটা তিনি তার ঐ সকল উম্মতের জন্য কুরবানী করলেন, যারা আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দিয়েছে ও তার রাসূলের রিসালাত পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছে, অন্যটি তার নিজের ও পরিবার বর্গের জন্য কুরবানী করেছেন।[ইবনে মাজা]


৯) মৃতদের পক্ষ থেকে তাদের অনাদায়ি হজ উমরা, রোযা আদায় করা :
বহু সংখ্যক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, মৃত ব্যক্তির অনাদায়ি হজ, উমরা, রোযা—ইত্যাদি আদায় করা হলে তা মৃতের পক্ষ হতে আদায় হয়ে যায়। যেমন তাদের পক্ষ থেকে তাদের পাওনা আদায় করলে তা আদায় হয়ে যায়।[মুসলিম, ১৯৩৫]

উল্লেখিত হাদীসসমূহে মৃত ব্যক্তির জন্য করণীয় সম্পর্কে যে দিক-নির্দেশনা আমরা পেলাম তা হল মৃত ব্যক্তির জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দুআ করা। কুরআন ও হাদীসে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। তাদের ইছালে ছাওয়াবের জন্য অধিকতর স্থায়ী জনকল্যাণ মূলক কোন কাজ করা। যেমন মানুষের কল্যাণার্থে নলকূপ, খাল-পুকুর খনন, বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ, মাদরাসা-মসজিদ, পাঠাগার নির্মাণ। দ্বীনি কিতাবাদী-বই-পুস্তক দান, গরিব-দু:খী, অভাবী, সম্বলহীনদের দান-সদকা করা। মসজিদ, মাদরাসা, ইসলামী প্রতিষ্ঠানের জন্য স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা হয়—এমন সদকা বা দান। মৃত মাতা-পিতার বন্ধু বান্ধবদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখা। তাদের রেখে যাওয়া অঙ্গীকার পূর্ণ করা।

আমাদের বিদায়ি আপনজনদের জন্য এমন কিছু করা উচিত যা সত্যিকারার্থে তাদের কল্যাণে আসে। এবং এ ব্যাপারে প্রচলিত সকল প্রকার কুসংস্কার, বিদআত, মনগড়া অনুষ্ঠানাদি পরিহার করে কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনায় কাজ করা কাম্য। কেননা, তা যতই চাকচিক্যময় হোক না কেন, তা মৃত ব্যক্তির কোন উপকারে আসে না। বরং, আয়োজনকারীরা গুনাহগার হয়ে থাকেন।
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن مما يلحق المؤمن من عمله وحسناته بعد موته علماً علمه ونشره وولدا صالحا تركه ومصحفا ورثه أو مسجدا بناه أو بيتا لابن السبيل بناه أو نهرا أجراه أو صدقة أخرجها من ماله في صحته وحياته من بعد موته. رواه ابن ماجه رقم ২৪৯


আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘মুমিনের ইন্তেকালের পর তার যে সকল সৎকর্ম তার কাছে পৌঁছে তা হল, সে জ্ঞান শিক্ষা দিয়ে যাওয়া যার প্রচার অব্যাহত থাকে, সৎ সন্তান রেখে যাওয়া, কুরআন শরীফ দান করে যাওয়া, মসজিদ নির্মান করে যাওয়া, মুসাফিরদের জন্য সরাইখানা নির্মান করে যাওয়া, কোন খাল খনন করে প্রবাহমান করে দেওয়া অথবা এমন কোন দান করে যাওয়া যা দ্বারা মানুষেরা তার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর উপকার পেতে থাকে।’[ইবনে মাজা, হাদীসটি সহীহ]