একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১৭

 


একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার খিলাফত লাভ-

 মাদারজাদ ওলী হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে উনার প্রাণের আকাঁ, মুর্শীদ হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার মধ্যস্থতায় আল্লাহ্ পাক অতি অল্প সময়ে কামিয়াবী দান করেন। তিনি দশ বছর মহান মুর্শিদের মুবারক সোহ্বত এখ্তিয়ার করেন। মুর্শিদ উনার এই যোগ্য মুরীদের প্রতি পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট ছিলেন এবং লব্ধ নিয়ামত সোপর্দ করার জন্য একজন উপযুক্ত পাত্র হিসেবে উনাকে খুঁজে পেয়েছিলেন। এ কারণে তিনি উনার অনেক পুরাতন ও অভিজ্ঞ মুরীদ থাকা সত্ত্বেও খাছ নিয়ামত দানের প্রশ্নে প্রিয়তম মুরীদ হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহিকেই বেছে নিয়েছিলেন এবং আল্লাহ্ পাক-উনার আদেশে বাইয়াত হবার কিছুদিনের মধ্যেই উনাকে খিলাফত দান করেছিলেন।    

 হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার ইন্তিকাল-

ইতোমধ্যে আল্লাহ্ পাক-উনার মাহবুব ওলী হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বার্ধ্যক্যে উপনীত হয়েছেন। সকল কর্মচাঞ্চল্য এবং আরোপিত দায়িত্ব পালনের রেশ জীবন সায়াহ্নে এসে পুঞ্জীভূত হয়েছে। আল্লাহ্ পাক-উনার মনোনীত দ্বীন পালনে মানুষকে অভ্যস্ত করে তোলা এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সুন্নত জিন্দা করণে বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও অভাবিত সাফল্যের আনন্দ-বেদনা ঘেরা অনুপম স্মৃতিরা উনার ঝাপসা দৃষ্টির সামনে এসে ভিড় করেছে। মনে হয় কতো কাজ বাকী রয়ে গেল। দায়িত্ব পালনের অনাবিলতায় আল্লাহ্ পাক-উনার বিবেচনায় কোন খাদ ধরা পড়েছে কিনা, সে দুর্ভাবনা মনকে অনিবার আন্দোলিত করে যায়। জীবন কতো ছোট! সাধ ও সাধ্যের গরমিল মনকে বেদনাক্লিষ্ট করে।  ওলী আল্লাহ্ গণের দায়িত্ব পালনের প্রকৃতি, পদ্ধতি, পরিধি ও পরিণতি মহান আল্লাহ্ পাক নির্ধারণ করে দিয়ে থাকেন। উদ্দিষ্ট কাজ শেষ হয়ে গেলেই জাগতিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। কাজ ফুরিয়ে গেলে আপন অস্তিত্বেরও অবসান হয়। তখন বিদায়ের ঘন্টা বেজে উঠে। অর্পিত দায়িত্বের আঞ্জাম দান শেষে হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহিও জীবনের অন্তিম মূহুর্তে এসে দাঁড়িয়েছেন। এখন বিদায়ের পালা। আপন দেশে গিয়ে এখন কেবল রফিকে আলার সাথে মহামিলনের অধীর অপেক্ষা। উপস্থিত আপনজন, খলিফা এবং মুরীদগণকে হৃদয়ের পরম মমতা ও মুহব্বত মাখা নসীহতে শেষ বারের মত তিনি বলে যান নশ্বর দুনিয়ার অসারতার কথা, আল্লাহ্ পাক-উনার আহ্কাম পালন ও তাতে ইস্তিকামত থাকার কথা এবং ধ্যান, ধারণা ও অনুশীলনসহ সকল কাজে অনুক্ষণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আবেহায়াতের কাছেই ফিরে যাবার কথা। কামিয়াবীর সোপান ও যোগ্যতার শ্রেণীক্রমানুসারে সকল মুরীদকেই তিনি দান করে যান উনার জীবনের আয়াসসাধ্য অর্জন, অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক প্রদত্ত নিয়ামতের হিস্যা। হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে তিনি দিয়ে যান পুজ্ঞীভূত নিয়ামতের নির্যাস। অবশেষে হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইন্তিকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)

 মুর্শিদ আলাইহিস সালাম উনার ইন্তিকালে বিরহ কাতর হযরত

সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-

 যে মুর্শিদের মুবারক সন্নিধানে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার হৃদয়ের গভীরে লালিত ইচ্ছারা পল্লবিত হয়েছে, যাঁর মধ্যস্থতায় পরম প্রত্যাশিত আল্লাহ্ পাক-উনার মুহব্বত ও মারিফাত এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সন্তুষ্টি হাছিল হয়েছে, তিনি বিদায় নিয়েছেন। জীবন-জগৎ এখন দুর্বিষহ। পৃথিবী আগের মতোই আছে। বদলে গেছে কেবল আগের ভালোলাগা। অন্তরে ঠাঁই নিয়েছে প্রিয়তম মুর্শিদের বিরহ যন্ত্রণা। মুর্শিদের ছোহবতে পেতে থাকা অনাবিল প্রশান্তিধারা কোথায় হারিয়ে গেছে!

        বিরহ কাতর মন ও পেরেশান মননে এখন শুধুই নিস্তরঙ্গ নিরবতা। এ নিথর নিরবতা উনাকে এনে দিয়েছে হৃদয়ের কাঙ্খিত নিবেদন ও একাগ্রতা। বিবেক, অনুভূতি, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির এটি এমন এক অনির্বচনীয় অবস্থা, যেখানে দুনিয়া ও আখিরাত একাকার হয়ে গেছে। হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার অন্তর মুবারকে এখন দুনিয়ার মোহ আর অবশিষ্ট নেই। (অসমাপ্ত)

আবা-৭৬

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১৬

 


একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার বুযুর্গী ও বৈশিষ্ট্য-

একজন ওলী আল্লাহ্-উনার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি আল্লাহ্ পাক-উনার বন্ধু। অর্থাৎ তিনি দুনিয়া বিমুখ এবং ঘনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্ পাক-উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। তিনি আল্লাহ্ পাক কর্তৃক হিফাযতকৃত এবং নিরাপত্তাপ্রাপ্ত। বিশিষ্ট বান্দা হিসেবে আল্লাহ্ পাক-উনার সাথে গভীর জানাজানি ও নিবিড় সম্পর্কের বিষয় এবং উনার মাকাম (অবস্থান) ও সম্মান সাধারণ মানুষের অবোধ্য। নৈকট্য প্রাপ্তগণের অনেকেই যখন আপন উত্তরণ ও অবস্থান সম্পর্কে অনবহিত, সেখানে অন্যের পক্ষে ওলী আল্লাহ্গণের বুযুর্গী ও সম্মান উপলব্ধির প্রশ্ন অবান্তর। মূলতঃ বিষয়টি সাধারণ্যে অজ্ঞাত ও দুর্বোধ্য। ওলী আল্লাহ্গণের লক্ষ্য একমাত্র আল্লাহ্পাক হওয়ায় উনাদের প্রজ্ঞা, অন্তরস্থ অনুভব ও জীবনের আয়োজন ব্যাপকতর। অজ্ঞ ও অতি সাধারণ মুসলমান বান্দারা আল্লাহ্ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার উদিষ্ট গুণাবলীতে বিভূষিত না থাকায় খাছ (বিশেষ) মাহবুবিয়াতের দরজায় উপনীত হওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনা। কাজেই তারা ওলী আল্লাহ্গণের অবস্থা জানবে কি করে? মাটির পৃথিবীতে বাস করেও যে সবার লক্ষ্যগোচর সীমানা ও অনুমেয় গন্তব্য পেরিয়ে বিশিষ্ট বান্দাগণ নিগূঢ় নৈকট্য লাভ করে থাকেন, তা তাদের অজানা। তাই বদ্নসীব ও মূর্খরা স্বভাবদোষে ওলী আল্লাহ্গণের ওলীত্বকে অস্বীকার করে বসে। অজ্ঞতা, মূর্খতা ও নেতিবাচক মনোবৃত্তির কারণে তারা আল্লাহ্ পাক-উনার কোপানলে পড়ে যায়। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীসে কূদসীতে বলেছেন, আল্লাহ্ পাক বলেন, “যারা  আমার ওলীদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে, আমি তাদের বিরূদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে থাকি।” (নাউযুবিল্লাহ্)

          যেসব রীতিনীতি ও আচার-আচরণ ধারণ, বহন ও অনুশীলনে একজন ওলী, আল্লাহ্ পাক-উনার সীমাহীন মুহব্বত ও মারিফাতের কাঙ্খিত মঞ্জিলের দিক নিরন্তর এগুতে থাকেন, তা উনাদের বৈশিষ্ট্যগুণ নামে অভিহিত। স্বভাব-সম্পৃক্ত গুণাবলীসূচক এসব বৈশিষ্ট্যের মানদন্ডে আল্লাহ্ পাক উনার একজন মাহবুব ওলীকে যতটুকু কামিয়াবী ও সম্মান দান করেন, ততটুকুই উনার বুযুর্গী। বুযুর্গী অর্থ-সম্মান, মর্যাদা, কামিয়াবীর সোপান। এ সম্মান, মর্যাদা ও কামিয়াবীর পরিমাণ ও পরিধি সাধারণ মানুষের অনুমান এবং অনুভূতি নির্ভর হয়ে থাকে। কারণ বুযুর্গীর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য কখনোই দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। মূলকথা, প্রাপ্ত ও প্রাপ্তব্য নিয়ামত সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক-উনার হিকমতপূর্ণ অভিপ্রায় অনুপুঙ্খ জানা না থাকায় ওলীগণ নিজেরাও উনাদের বুযুর্গীর অবস্থান, পরিণত স্তর ও স্থায়ীত্বের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকেননা। ওলী আল্লাহ্গণের অবয়ব ও বাহ্যিক আচরণ প্রত্যক্ষ করেই মানুষ তাদেরকে বুযুর্গ অভিধায় সম্মান করে থাকে। ওলী আল্লাহ্গণের মর্যাদা নিরূপণ এবং উনাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এটাই প্রচলিত পদ্ধতি। অবশ্য ওলীগণকে সম্মান করার জন্য সংশ্লিষ্ট জনপদের মানুষ ও বিশ্ববাসীকে আল্লাহ্ পাক বাধ্য করে থাকেন। আল্লাহ্ পাক উনার মাহবুব ওলীগণের প্রতি সামষ্টিক অসম্মান কখনই বরদাশত্ করেননা।

          হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ্ পাক-উনার মনোনীত মাহবুব ওলী। উনার মুবারক বৈশিষ্ট্য ও বুযুর্গী ছিল অতুলনীয়। কিন্তু তা আলোচনায় তুলে ধরা আয়াসসাধ্য নয়, অসাধ্য। তিনি ছিলেন আল্লাহ্ পাক ও হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পরিপূর্ণ ফর্মাবরদার। সুন্নতের পাবন্দ্ এবং সুন্নত যিন্দাকারী। বিবেক ও প্রজ্ঞার উন্মেষ ঘটিয়ে মানুষকে সুন্নত পালনে অভ্যস্ত করে তোলা, দুনিয়া আসক্ত মানুষকে আখিরাতের প্রতি ঝুঁকিয়ে দেয়াই ছিল উনার মহান ব্রত। উনার মুবারক মধ্যস্থতায় আল্লাহ্ পাক অনেক জাহান্নামী মানুষকে করেছেন জান্নাতী। উনার ছিল অগণিত কারামত। (অসমাপ্ত)

আবা-৭৫

 

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১৫

 


একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 দীর্ঘ প্রতীক্ষা অবসানে বাইয়াত মুবারক হবার শুভ মুহুর্ত-

 প্রাণের আকাঁ মুর্শিদ হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও এমন একজন মুরীদেরই অপেক্ষায় ছিলেন, যাঁকে তিনি উনার জীবনের লব্ধ পরম নিয়ামত প্রদানে সমৃদ্ধ করে তুলবেন। আল্লাহ্ পাক-উনার উদ্দিষ্ট ব্যবস্থায় নিগূঢ় নৈকট্যদানে কামিয়াবীর শীর্ষ মঞ্জিলের পর্যায়ক্রমিক সোপানগুলো যাঁকে তিনি অবলীলাক্রয় অতিক্রমে করাবেন। আল্লাহ্ পাক-উনার মাহবুব ওলীগণ উনাদের লব্ধ নিয়ামত, যোগ্য কারো কাছে সোপর্দ করে দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান করে থাকেন। প্রক্রিয়াগত সোপর্দের পূর্ব পর্যন্ত জীবন সায়াহ্নে এসে এই নিয়ামত বহন করা যেন এক দুঃসহ বেদনাভার। মুহব্বত-মারিফাতের উপলব্ধি ও চর্চা সিলসিলাক্রমে এভাবেই পৃথিবীতে বহমান রেখেছেন আল্লাহ্ পাক। একই কারণে জীবনের সঞ্চিত নিয়ামত, যোগ্য কাউকে দান করার অধীর আগ্রহে দিন কাটছিলো হযরত ছাওয়াল পীর ক্বিবলাজান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার। মুহব্বত-মারিফাত হাছিলের পরিণত ধাপে উপনীত হওয়ার জন্য অনুক্ষণ ব্যাকুল হযরত আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে একান্ত নাগালে পেয়েছেন তিনি। প্রথম দর্শনের গভীর পর্যবেক্ষনেই তিনি বুঝে ফেলেন যে, এই মুরীদের জন্যই উনার এতোদিনের উন্মুখ প্রতীক্ষা। বাইয়াত হওয়ার নিবেদন পেশ করা মাত্রই পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি পরম মমতা ও অধীর আগ্রহে হাত মোবারক প্রসারিত করে দেন। এ যেনো আশেক ও মাশুকের মহা মিলন। যার মাঝে কোন পর্দা নেই। সময়কাল ১৯৩৫। মুর্শিদ উনার প্রাণের মুরীদকে এক নিমিষেই সোপর্দ করে দিলেন আল্লাহ্ পাক-উনার কাছে। আর মুরীদ হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি বাইয়াত হবার শুভ মুহুর্তেই অবগাহন করে উঠলেন আল্লাহ্ পাক-উনার মুহব্বত মারিফাতের অথৈ সাগরে। খানকা শরীফে উপস্থিত সকলেই প্রত্যক্ষ করলেন, মুর্শিদ ও মুরীদ যেনো কত দিনের চেনা, কত কালের পরিচিত।

বাইয়াতের পর ভাবান্তরিত মননে অভিনিবেশ

          হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি একজন কামিল ওলী আল্লাহ্। আল্লাহ্ পাক-উনার মতে এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পথে জীবন-যাপনে যিনি পরিপূর্ণরূপে অভ্যস্ত একজন কামিল পুরুষ। তিনি যে কাজে ব্যাপৃত, তাহলো- মানুষকে দুনিয়ার মোহ থেকে বিরাগ করে আখিরাতের প্রতি ঝুঁকিয়ে দেয়া, সুন্নত পালনসহ ইবাদত-বন্দেগী ও যিকির-ফিকিরে মানুষকে অভ্যস্ত করে তোলা  এবং  জাহান্নামের পথযাত্রীকে জান্নাতী করে দেয়া। উনার এ যোগ্যতা মহান আল্লাহ্ পাক-উনারই দান। কার সাধ্য যে, উনার মোবারক ছোহবতে গিয়ে লক্ষ্যবিচ্যুত হয়? বিশেষতঃ মাদারজাদ ওলী, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি, আল্লাহ্ পাক-উনার পূর্ব নিধারিত ব্যবস্থায় উনার ভেতর প্রচ্ছন্ন রয়েছে কামিয়াবীর সকল গুণাবলী, প্রত্যাশিত মুর্শিদের সন্নিধাণে মঞ্জিলে মাকসুদের চুড়ান্ত ধাপে উপনীত হওয়া ছাড়া উনার গত্যন্তর কোথায়? আল্লাহ্ পাক-উনার সন্তুষ্টি হাছিলের পরিণত গন্তব্যে পৌঁছা উনার আবাল্য অভিপ্রায়, সুলুকের কোন মাকামেই তাঁঁর থেমে থাকবার অবকাশ নেই। অসীমের আকর্ষনে শিশুকাল থেকেই অন্তরের গভীরে মিশে থাকা মধুর যন্ত্রনা, কাতরতা এবং অতঃপর দুর্নিবার মানসিক অস্থিরতাই তাঁকে মুর্শিদের ছোহবতে নিয়ে আসে। বাইয়াতের পর উনার মাঝে ঘটে যায় এক অনুপম ভাবান্তর। লক্ষ্য অর্জনে এ ভাবান্তর তাঁকে দান করে নিগূঢ় মননে গভীর অভিনিবেশ। এটি এক নতুন অনুভূতি। এমন অনির্বচনীয় অনুভূতি, ধ্যান, খেয়াল ও অনাবিল মনোবৃত্তির জন্যই ছিল উনার এতোদিনের উদ্বেগাকুল প্রতীক্ষা।

 প্রাণের আঁকা মুর্শিদ হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার মোবারক সান্নিধ্যে উনার দিনগুলো কাটতে থাকে। ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির ও মুরাকাবা-মুশাহিদায় জীবনের মূল্যবান সময়গুলো তিনি অবিরাম ব্যয় করেন, মহামূল্যবান নিয়ামত সঞ্চয়ের প্রত্যাশায়। মুর্শিদ সান্নিধ্যে উনার সূক্ষ্ম সমঝ ও উপলব্ধির দ্বার এখন অবারিত। এখন উনার নিরন্তর প্রাপ্তিযোগের পরিবর্ধন। অর্থাৎ প্রতিনিয়ত বর্তমান অবস্থান থেকে পরবর্তী উন্নত অবস্থানে উনার অনিঃশেষ উত্তরণ। মুর্শিদ ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার নেক দৃষ্টি ও ফয়েজে পরিপুষ্ট যোগ্য মুরীদ, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাবার পালা। অজানা-অচেনা চিন্তা ও ধারণার অনুষঙ্গরা উনার আনন্দ-বেদনা ভারাক্রান্ত মানস সরোবরে। এখন কেবলই ফুটছে মুহব্বত ও মারিফাতের নিত্য-নতুন পথকলি।                                         (অসমাপ্ত)

আবা-৭৪

 

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১৪

 


একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 মুর্শিদ আলাইহিস সালাম উনার- সন্ধানে তাহ্ক্বীক-

মুর্শিদের কাছে বায়াত হওয়ার অদম্য ইচ্ছে উনার মন ও মননে ঠাঁই পেয়েছে শিশুকালেই। সে ইচ্ছে বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই একজন যোগ্য মুর্শিদ তালাশে এখন উনার নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগ ও উদ্বেলিত প্রয়াস। পূর্ব আলোচনায় জানা গেছে, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রথম জীবনে কিছুদিন সরকারী চাকুরী করেছেন। কর্মস্থল ছিল দার্জিলিং, আসাম, কলকাতা, রাজশাহী, বগুড়া ও ঢাকায়। কর্তৃপক্ষ ও সহকর্মীদের অনৈতিক এবং আখিরাত পরিপন্থী কাজকর্ম ও আচরণে সকল কর্মস্থলেই তিনি দুঃখিত ও ক্ষুব্ধ থেকেছেন।        অবশেষে নাতিদীর্ঘ কর্মজীবনের অবসানে চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে অবাঞ্ছিত পরিবেশ-প্রতিবেশ থেকে নিজেকে মুক্ত করেন তিনি। চাকুরীতে প্রবেশের কিছুদিনের মধ্যেই ১৯৩৬ সালে উনার শাদী মোবারক অনুষ্ঠিত হয়। বায়াত হওয়ার অপার আগ্রহে উনার মানস তৈরী হয়েছে বহু পূর্বেই। মহান আল্লাহ্ পাক উনার মনোনীত বান্দাগণকে সময়োচিত নিয়ামত সম্ভারে পূর্ণতা দানে কামিয়াবীর শীর্ষ ধাপে এগিয়ে নিয়ে যান। বান্দার আয়াসসাধ্য তদ্বীর (কোশেশ) যখন নির্ধারিত তক্দীরের সাথে মিলে যায় তখনই নিয়ামত প্রাপ্তির দ্বার অবারিত হয়।

 মূলতঃ আসমানেই সবকিছুর ফায়সালা হয়। জমীনে হয় তার বাস্তবায়ন। আসমানী ফায়সালার অনুকূলে অথবা প্রতিকূলে বান্দার প্রানান্তকর কোশেশের পরিবৃদ্ধি অথবা পরিসমাপ্তি ঘটে থাকে। বান্দার জানাই নেই কখন, কোন নিয়ামত তার জন্য অপেক্ষা করছে এবং কোন বিষয়ে আল্লাহ্ পাক উনাকে যোগ্যতা দান করেছেন। তাই নৈকট্যলাভে বান্দার অবিরাম কোশেশকে আল্লাহ্ পাক এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাধ্যতামূলক করেছেন। পাক কুরআনে উনারশাদ হয়েছে, “যারা আমাকে পেতে কোশেশে আত্মনিয়োগ করে, আমি (আল্লাহ্ পাক) অবশ্যই তাদেরকে আমার সুপথসমূহ প্রদর্শন করব।” (সূরা আনকাবুত/৬৯)

 আল্লাহ্ পাক এ আয়াত শরীফে নৈকট্য প্রত্যাশী বান্দাদেরকে কামিয়াবী দান করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। হাদীস শরীফেও উনার মর্মবাণী বিধৃত হয়েছে, “যে কোশেশ করে সে কামীয়াবী হাসিল করে।

          আল্লাহ্ পাক-উনার নির্ধারিত ব্যবস্থায় হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার প্রত্যাশা পূরণ হয়। তিনি উনার কাঙ্খিত মুর্শিদের সন্ধান পেয়ে যান। বুযুর্গী ও কামিয়াবীর জন্য মানুষের কাছে ব্যাপক পরিচিতি সে মুর্শিদের। আল্লাহ্ প্রেমে বিভোর, দুনিয়া বিরাগ এক মহান আধ্যাত্ম পুরুষ তিনি। পরিপূর্ণরূপে সুন্নতের পাবন্দ এই মহান ওলী দুনিয়ামুখী আসক্ত মানুষকে আখিরাতমুখী করে দেয়ার যোগ্য কারিগর। উনার সোহ্বতে গিয়ে মানুষ পায় অনাবিল প্রশান্তি। উনার নাম মোবারক হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি। প্রখ্যাত এই ওলীআল্লাহ্-উনার সন্ধান পেয়ে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সান্নিধ্যে যান। অন্তরে লালিত অদম্য বাসনা পূরণে যে মুর্শিদের কাছে তিনি বায়াত হবেন, তিনি কেমন তা জেনে নেয়া জরুরী। বিশেষতঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নির্দেশমতে শায়খকে পরখ করে নেয়া অত্যাবশ্যক। তীক্ষ্ম মেধা ও মননের অধিকারী মাদারজাদ ওলী হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি মুর্শিদের সান্নিধানে গিয়ে উপলব্ধি  করেন যে, আল্লাহ্ পাক-উনার নৈকট্য লাভের অনিবার্য প্রয়োজনে যাঁর কাছে বায়াত হওয়ার জন্য তিনি জীবনের এতোগুলো দিন সযতে¦ গুছিয়ে তুলেছেন, ইনি সেই মহান মুর্শিদ। প্রথম দর্শনেই দৃঢ় প্রত্যয় জন্মে যে, এই মুর্শিদেরই ব্যকুল প্রত্যাশায় তিনি জীবনের অস্থির সময়গুলো অতিবাহিত করেছেন। মুর্শিদের সাথে বাস্তব সাক্ষাত পূর্বে কোন দিনও হয়নি। কাছে গিয়ে প্রত্যাশিত মুর্শিদকে তিনি প্রাণ ভরে দেখেন। দৃষ্টি ফেরানো যায় না। এমন মোবারক মুহুর্তে তিনি বায়াত হবার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। (চলবে)

আবা-৭৩

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১৩

 


একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

আল্লাহ্ পাক-উনার নিগূঢ় নৈকট্যলাভে হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার উদ্বেলিত মনোযোগ ও নিরন্তর প্রয়াস-

 জগৎ-সংসারের কার্যব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, মাখলুকাত সৃষ্টি, পরিচালনা, তাদের নশ্বর স্থিতি এবং মানুষের ঐহিক ও পারলৌকিক জীবন পরিক্রমার প্রতিটি স্তরে আল্লাহ্ পাক-উনার সন্তুষ্টি ও নিয়ামত অনুক্ষণ আপন গতিতে বহ্মান। একইভাবে বান্দার নাফরমানীতে নিজ অভ্যস্ততায় আল্লাহ্ পাক-উনার অসন্তুষ্টি এবং ক্রোধও সমভাবে বিদ্যমান। যে বান্দার অন্তরে আল্লাহ্ পাক নিজ অনুগ্রহে উনার মুহব্বত ও মারিফাতের উপলব্ধি ঠাঁই করে দিয়েছেন, তিনি প্রেমময় বন্ধুত্বের শীর্ষ মঞ্জিলের অভিযাত্রায় অবিরাম এগিয়ে চলেন। নৈকট্য হাছিলের অপার আগ্রহে যে অন্তর যন্ত্রণাকাতর, মারিফাতের অথৈ সাগরের ডুব-সাঁতারে যাঁর প্রগাঢ় আকর্ষণ, বেদনা-বিমুগ্ধ ধ্যান নিমগ্নতায় যাঁর স্বস্তি ও প্রশান্তি, সে বান্দার হৃদয়ই আল্লাহ্ পাক-উনার যোগ্য আসন। বিশ্ব মরমী চিন্তা ও অনুভূতির অন্যতম রূপকার হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এক হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন, আসমান যমীনে মোর ঠাঁই নাহি হয়, মুমিনের ক্বল্বেতে শুধু ঠাঁই পাই। আল্লাহ্ পাক-উনার মুহব্বত ও মারিফাতের ধারক ও বাহক সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মূল হাদীস শরীফে বলেছেন, মুমিনের হৃদয় আল্লাহ্ পাক-উনার আরশ।

 মুর্শিদ আলাইহি সালাম উনার সন্ধানে তাহ্ক্বীক্ব

 উদ্দিষ্ট নিয়ামত সম্ভারে আল্লাহ্ পাক উনার প্রিয়তম বান্দা কুতুবুজ্জামান, আরিফবিল্লাহ্, আওলাদে রাসূল, হযরতুল আল্লামা, শাহ্ সূফী, আলহাজ্ব সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান, আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাঈশী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে পরিতুষ্টি দান করবেন এটাইতো স্বাভাবিক। সময়ের দাবী পূরণে উনার মুবারক মধ্যস্থতায় এই জনপদে আল্লাহ্ পাক উনার ইসলাম ধর্ম আবাদ করবেন, মানুষকে তাসাউফে দীক্ষিত করবেন এবং সর্বোপরি উনার এক মুবারক পুত্র সন্তানের উছীলায় পরিপূর্ণ ইসলাম প্রতিপালনে জগৎব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করবেন, এটা আল্লাহ্ পাক-উনার পূর্ব নির্ধারিত সদয় ইচ্ছে। এই লক্ষ্যে মাদারজাদ ওলী হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার কামিয়াবীর শীর্ষ সোপানে উত্তরণ অপরিহার্য। মহান আল্লাহ্ পাক-উনার ইচ্ছেই এমন যে, তিনি তাঁকে নিগূঢ় নৈকট্য দান করবেন। এ কারণেই একজন আনুষ্ঠানিক মুর্শিদ প্রয়োজন। কিন্তু কোথায় সে কাঙ্খিত মুর্শিদ? কেমন তিনি? কোথায় উনার আবাস? মনের গভীরে লালিত অব্যক্ত নিবেদন, আকুতি ও যন্ত্রণাদগ্ধ তীব্র অনুভূতিরা অনুক্ষণ তাঁকে অস্থির করে রাখে।

 মুর্শিদের সান্নিধ্য ব্যতিরেকে আল্লাহ্ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য হাছিলের বিকল্প কোন পথ মানুষের জন্য সৃষ্টি হয়নি। শায়খ-উনার সোহ্বত ছাড়া আপন কোশেশে প্রাথমিক পর্যায়ে ছালেকের কিছুটা অগ্রগতি হওয়া বিচিত্র নয় এবং অসম্ভবও নয়। এ ধরণের স্বেচ্ছাচারী প্রয়াসের অগ্রগতিতে ছালেকের মন-মননে অহংকার, মূর্খতা ও অজ্ঞতা বেপরোয়াভাবে বৃদ্ধি পেয়ে তার ঈমান হরণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমন অনভিপ্রেত অবস্থায় তাগুত (ইবলিশ) মানুষের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় আসন গেড়ে বসে। আপন খেয়ালে কামিয়াবী হাছিলের নামে ঈমান বিধ্বংসের এমন ঘটনা জগৎ সংসারে অসংখ্য। মানুষের নশ্বর জীবন সংক্ষিপ্ত। পক্ষান্তরে তাসাউফ বিশাল, সীমাহীন এবং আল্লাহ্ পাক-উনার মুহব্বত ও মারিফাত অসীম, অন্তহীন। আল্লাহ্ প্রেমের আতিশয্যে আত্মনিবেদিত ওলীগণের এমন নিরূপম ও অনির্বচনীয় সময়ও এসে যায়, যখন উনারা একান্তই সংযতবাক, বিমূঢ়, অসহায়, এমনকি আত্মবিস্মৃতও। বেদনাক্লান্ত অনুভূতির এমন নাজুক পটভূমিতেই উনাদের কেউ কেউ সৃষ্টি করেন লায়লা-মজনু, শিরি-ফরহাদ অথবা অন্য কোন প্রেমঘন অমর উপাখ্যান। নিজেদের সৃষ্ট সংলাপ ও ভাবোন্মত্তার কল্পিত মাধ্যমে অসীমকে উপলব্ধির বিকল্প তৃপ্তি ও আস্বাদন খুঁজে নিতে হয়। আল্লাহ্ পাককে উপলব্ধি করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। উপলব্ধির এই প্রক্রিয়া শুরু হয় একান্তভাবেই মুর্শিদের মুবারক সন্নিধানে।

   যোগ্য শিক্ষক (মুর্শিদ)-উনার বর্ণনায় হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যাঁর সন্নিধানে গেলে আল্লাহ্ পাক-উনার খেয়াল মনে জেগে উঠে, যাঁর নসীহত শুনলে দ্বীনী প্রজ্ঞার পরিবৃদ্ধি ঘটে এবং যাঁর আমল দেখলে আখিরাতের আমল করতে ইচ্ছে হয়।

 শিক্ষাগ্রহণের পূর্বে প্রশিক্ষককে পরখ করে নিতে তিনি উম্মতকে নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ, বাঁকা লাঠির ছায়া বাঁকা হয়। আল্লাহ্ পাক এবং উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আদেশের অনুসরণে হযরতুল আল্লামা, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি সেই যোগ্য মুর্শিদ অনুসন্ধানে ব্যাপৃত। কামিয়াবীর শীর্ষধাপে উত্তরণের জন্যই উপযুক্ত মুর্শিদ খুঁজে পাওয়া প্রয়োজন। কাজেই এতো তাহ্ক্বীক্ব। (অসমাপ্ত)

আবা-৭২

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১২

 


একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদারে  মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 আল্লাহ্ পাক-উনার নিগূঢ় নৈকট্যলাভে হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার উদ্বেলিত মনোযোগ ও নিরন্তর প্রয়াস-

 কুতুবুজ্জামান, আরিফ বিল্লাহ, আওলাদে রাসূল, হযরতুল আল্লামা, শাহ্ সুফী, আলহাজ্ব সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান, আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাঈশী রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার শাদী মুবারক সম্পন্ন হয়েছে। মহান আল্লাহ্ পাক-উনার সদয় ইচ্ছায় মাদারজাদ ওলী, আওলাদে রাসুল হযরত সাইয়্যিদাহ মোসাম্মত জাহানারা বেগম, আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাঈশী আলাইহিস সালাম-উনার সাথে পরিণয় সূত্রে  আবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার অন্যতম একটি সুন্নাত পালনে তিনি এখন পরিতুষ্ট। নেককার স্ত্রীর পরিপূরক অবদান, ঘনিষ্ট সাহচর্য ও মমতাময় সান্নিধ্যে সৃষ্ট মানসিক স্থিতি ও প্রশান্তি আল্লাহ্ পাক-উনার নৈকট্য হাসিলের জন্য উনাকে কাঙ্খিত অনুকুল ক্ষেত্র তৈরী করে দিয়েছে। এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাবার পালা।

          আল্লাহ্ পাক-উনার মাহবুব ওলীগণ আল্লাহ্ পাক কর্তৃক আকৃষ্ট হওয়া সত্ত্বেও আকর্ষণকারী হতে বাধ্য থাকেন। অবধারিত এ বাধ্যতা আল্লাহ্ পাক-উনারই বিধান এবং মহান দান। আকর্ষিত ব্যক্তির অপরিমেয় নিয়ামতলাভ যতো সহজ, আকর্ষণকারীর পক্ষে ততো কঠিন। একজন মাদারজাদ ওলী পূর্বেই গন্তব্য সোপানে আসীন থেকেও আল্লাহ্ পাক-উনার সৃষ্ট বিধানের অভ্যস্ততায় বান্দা হিসেবে উনাকে উবুদিয়াতের মাকামগুলো কোশেশের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে  পাড়ি দিতে হয়। অবিরাম অনাবিল কোশেশকারীই আকর্ষণকারী অভিধায় সম্মানিত হয়ে থাকেন। মহব্বত ও মারিফত দানের ক্ষেত্রে আল্লাহ্ পাক-উনার উন্মুখ ইচ্ছা এবং যুগপৎ আকর্ষিত ও আকর্ষনকারী বান্দাগণের ব্যাকুলতা ও নিষ্কলুষ অন্তরের নিরন্তর প্রয়াস সমন্তরাল হয়ে থাকে। মাদারজাদ ওলী, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ্ পাক কর্তৃক আকর্ষিত হওয়া সত্ত্বেও আকর্ষনকারী হওয়া ছাড়া উনার গত্যন্তর এখন একজন মুর্শিদ প্রয়োজন।

মুর্শিদ আলাইহিস সালাম উনার সন্ধানে-

 আওলিয়া-ই-কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম গণেরই মুবারক জীবন চরিত পাঠে জানা যায় যে, যিনি যতো  বেশী নৈকট্যলাভকারী, তিনি ততো বেশী অবনত, নিবেদিত ও আত্মসমর্পিত। এই মর্মে আরিফগণের এমন উচ্চারণ শোনা যায়, “ইশ্কের আগুনে কলিজা কাবাব না হলে ইশ্কের স্রষ্টা আল্লাহ্ পাককে অনুভব করা যায়না।এই অনুভব আত্মপরিচয়ের, আত্মজাগৃতির, আত্মোপলব্ধির। আল্লাহ্ পাক-উনার মহিমা, গরিমা, কুদরত, হিকমত, মুহব্বত ও মারিফাতের পূর্ণতম বিকাশস্থল সাইয়্যিদুল আলম, হাবীবে আযম হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ওলী আল্লাহ্গণের আত্মপরিচয় ও আত্মজাগৃতির দ্বার উম্মোচনের আবশ্যিক প্রয়োজনীয়তার জন্য বলেছেন, “মান আরাফা নাফসাহু ফাক্বাদ আরাফা রাব্বাহু (অর্থঃ যার আত্মপরিচয় ঘটেছে, সে তার রবকে চিনে ফেলেছে)।অবিরাম কোশেশের মাধ্যমেই বান্দার আত্মপরিচয়ের সন্ধান মিলে।

          দুনিয়া, নফস ও পরিবার-পরিজনের প্রতি বিরাগ হয়ে পরিপূর্ণরূপে আল্লাহ্ পাক-উনার প্রতি সমর্পিত হওয়াই একজন মুমিনের অভিষ্ট লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনে অনাবিল অন্তরে ইবাদত-বন্দেগী অপরিহার্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একনিষ্ঠ ও যথার্থরূপে অনুকরণ ও অনুসরণ করাই হলো ইবাদত-বন্দেগীর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য। কোন আমল আল্লাহ্ পাক-উনার কাছে তখনই ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়, যখন তা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নির্দেশিত পন্থায় সম্পাদিত হয়। কামিয়াবীতো সেই মানুষের, যিনি সুন্নাত অনুসরণে আল্লাহ্ পাক-উনার বিধান পালনে ইবাদত-বন্দেগীতে একজন শায়েখ”-উনার কাছে বাইয়াত হয়ে উনার তত্ত্বাবধানে নিবেদিত থাকলে আধ্যাত্ম পথযাত্রীর আত্মআবিস্কার ও আত্মবিকাশের পথ উন্মুক্ত হয়। এমন আত্মপরিচয়লাভকারী মানুষের অন্তরেই আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মারিফাত ও মহব্বতের স্থান সংকুলান হয়। তাই পরিপূর্ণ কামিয়াবী অর্জনের অনিবার্য প্রয়োজনে আল্লাহ্ পাক ও হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আদেশমতে শায়খ”-উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরজ। এই ফরজ অস্বীকার করা গোমরাহীর নামান্তর। পূর্ববর্তী আওলিয়া-ই-কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অনুসরণে আওলাদে রাসুল, হযরতুল আল্লামা, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি এখন বাইয়াত হওয়ার জন্য ব্যাকুল। মনের এই ব্যাকুলতা অভিনব নয়। ধমনীতে প্রবাহিত বুযুর্গ পূর্বপুরুষ রহমাতুল্লাহি আলাইহি গণ-উনার মুবারক রক্তধারা এবং একই বংশজাত উপরিস্থ আওলিয়া-ই-কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি গণ-উনার মুবারক মন ও মননের হিস্যার যোগ্য ভাগীদার এই মাদারজাদ ওলী কামিয়াবীর শীর্ষ সোপানে উপনীত হওয়ার উদগ্র বাসনায় একজন শায়খ”-উনার মধ্যস্থতা একান্তভাবে অনুভব করেন। এখন তিনি ব্যাপৃত সেই প্রত্যাশিত মুর্শিদ সন্ধানে। (অসমাপ্ত)

আবা-৭১

 

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১১

 


একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 হযরত সাইয়্যিদাতুনা আহমদ জাহানারা বেগম আলাইহাস সালাম উনার অনুপম পরহেযগারী মুবারক উনার পরিচয়-

 মাদারজাদ ওলী, আওলাদে রাসূল, হযরত সাইয়্যিদাতুনা আহমদ জাহানারা বেগম , আলহাসানী, ওয়াল হুসাইনী, ওয়াল কুরাঈশী আলাইহাস সালাম বাড়ী মজলিশগ্রামে বুযুর্গ পিতার কাছে দ্বীন ইসলাম-এর সার্বিক ইল্ম ও তাসাউফের দীক্ষায় ব্যুৎপত্তিলাভ করেন। পরহেযগারীতে অভ্যস্ততা উনার নিত্যদিনের বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়ায়। অল্প বয়সেই উনার দৃঢ় প্রত্যয় জন্মে যে, পার্থিব ও পারলৌকিক সৌভাগ্যলাভের ক্ষেত্রে তাকওয়া অবলম্বন ছাড়া অন্য কোন বিকল্প পথই মানুষের জন্য আল্লাহ্ পাক সৃষ্টি করেননি। চিরস্থায়ী সৌভাগ্যের জন্য পরিপূর্ণরূপে আল্লাহ্ পাক উনার প্রতি একান্তভাবে নিবেদিত হওয়া অপরিহার্য। ইবাদত-বন্দেগীর পরিণত স্তরই হলো সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক প্রণীত শরিয়তের পাবন্দ হওয়া এবং সুন্নাত মুবারক অনুসরণে অভ্যস্ত হওয়া। প্রণীত শরিয়তের নীতি নির্ধারণ করে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আচার-আচরণ, অভ্যাস, উচ্চারণ ও ইবাদত-বন্দেগীসহ যাবতীয় বিষয়াবলীর মাহাত্ম্যপূর্ণ ও সৌন্দর্যমন্ডিত রীতির বাস্তব নমুনা দেখিয়েছেন। কোন আমল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অভ্যাসগত মনে করে পরিহার করলে আল্লাহ্ পাক উনার সন্তুষ্টির অবারিত পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। কারণ উনার কোন কাজই আপন ইচ্ছা অথবা অভ্যাসপ্রসূত নয়, সবই আল্লাহ্ পাক কর্তৃক নির্দেশিত ও নিয়ন্ত্রিত। হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমলের কোনটি আমাদের জন্য ফরজ, কোনটি ওয়াজিব, কোনটি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্, কোনটি নফল, সুন্নাতে যায়েদা, মুস্তাহাব। বন্দেগীর এই শ্রেণীভিত্তিক বিভাজন কোন ইবাদতেরই গুরুত্ব ও গভীরতা হাল্কা অথবা হ্রাস করেনা। আল্লাহ্ পাক উনার ইচ্ছা অনুযায়ী উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক শ্রেণীবিন্যাসকৃত এসব ইবাদত পালনে পদ্ধতিগত ব্যতিক্রম থাকলেও, এর প্রতিটিতেই একই মাত্রার পূর্ণ হুজুরী (মনোনিবেশ) আবশ্যক। সুন্নাতের তাৎপর্য ও গুরুত্ব বুঝাতে বলা হয়ে থাকে, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইবাদত ও আমলের সবগুলোই উম্মতের জন্য সুন্নাত। কিন্তু শ্রেণীবিন্যাসকৃত সুন্নাত মুবারক গুলো ফরজ নয়।

          হযরত সাইয়্যিদাতুনা আহমদ জাহানারা বেগম আলাইহাস সালাম জন্ম সূত্রেই তীক্ষ মেধা ও সূক্ষসমঝ লাভ করেন। মাদারজাত ওলী হিসেবে ছোট কালেই তিনি আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি আনুগত্যপূর্ণ মানসিকতায় তাসাউফের হাক্বীক্বত (মূল তত্ত্ব) উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। বুযুর্গ পিতার কাছে তিনি শিক্ষালাভ করেন যে, গায়রুল্লাহ্ থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে আল্লাহ্ পাক উনার প্রতি মনোযোগী না হলে ইহকাল ও পরকাল বরবাদ হয়ে যায়। আর আল্লাহ্ পাক এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে অটল না থাকলে আল্লাহ্ পাক উনার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ মনোযোগ আচ্ছন্ন হয়ে যায় এবং ইবাদত-বন্দেগীসহ জীবনের সকল আয়াসসাধ্য আয়োজন নিষ্ফল হয়ে পড়ে। এই নিগূঢ় তত্ত্ব অনুধাবনে তিনি পরিপূর্ণরূপে আল্লাহ্ পাক ও উনার রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ পালনে মনোযোগী ও অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। এই অবিরাম অভ্যস্ততা উনাকে আল্লাহ্ পাক ও হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ণ সন্তুষ্টি অর্জনের কাঙ্খিত মন্জিলে পৌঁছে দেয়।

 নিসবতে আযীম মুবারক-

 ক্রমান্বয়ে বসয় মুবারক বেড়ে ঊনিশে দাঁড়ায়। এখন শাদী মুবারক দেয়া প্রয়োজন। দুনিয়া বিমুখ এই মাদারজাত ওলীর জন্য একজন উপযুক্ত পাত্র দরকার। পিতা-মাতার আরজু একজন বুযুর্গ ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া। আল্লাহ্ পাক উনাদের আরজু পূরণ করেন। একই উর্দ্ধতন পুরুষের মুবারক বংশজাত কুতুবুজ্জামান, আরিফবিল্লাহ, আওলাদে রাসূল হযরতুল আল্লামা, শাহ সুফী, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান, আল হাসানী, ওয়াল হুসাইনী, ওয়াল কুরাঈশী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে ১৯৩৬ সালে উনার নিসবতে আযীম মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। আল্লাহ্ পাক উনার বিধানই এমন যে, তিনি উনার মনোনীত ইসলাম ধর্ম আবাদের জন্য পরিণয়ণসূত্রে বুযুর্গ পাত্র-পাত্রীর সম্মিলন ঘটিয়ে থাকেন। এই মহামিলনের মাধ্যমে আল্লাহ্ পাক উনার মাহবুব ওলীগণকে জমিনে পাঠিয়ে লক্ষ্যবিচ্যূত মানুষকে হিদায়েত দানে জান্নাতে যাবার পথ সুগম করে থাকেন। আলোচ্য ক্ষেত্রেও আল্লাহ্ পাক উনার অনুরূপ সদয় ইচ্ছা বাস্তবায়ন করেছেন। আল্লাহ্ পাক উনার পূর্ব পরিকল্পিত ব্যবস্থায় মাদারজাত ওলী, আওলাদে রাসূল, হযরত সাইয়্যিদাতুনা আহমদ জাহানারা বেগম, আল হাসানী, ওয়াল হুসাইনী, ওয়াল কুরাঈশী, আলাইহাস সালাম উনার নেক ঔরসে এমন এক মুবারক পুত্র সন্তান দান করেন, যিনি আল্লাহ্ পাক উনার লক্ষ্যস্থল এবং উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কায়েম মাক্বাম ও উনার প্রণীত শরীয়তের রক্ষক। যিনি বিদ্য়াত অপসারণকারী, সুন্নাত যিন্দাকারী এবং মানুষকে তাসাউফে দীক্ষাদানকারী। সর্বোপরি যিনি সহীহ্ তরীকায় বর্তমানে খিলাফত আলা মিনহাযিন্নুবুওওয়া উনার সফল রূপকার। যিনি দুনিয়া আসক্ত মানুষকে মহান আল্লাহ্ পাক উনার অপার রহমতে দুনিয়া থেকে বিরাগ করে জান্নাতী করে দেয়ার এক মহান মুজাদ্দিদ, যুগ-যুগান্তরের প্রত্যাশিত এক মহামানব। যথাস্থানে উনার সম্পর্কে সবিস্তারে আলোচিত হবে।

 বুযুর্গী মুবারক ও বৈশিষ্ট্য মুবারক-

 হযরত সাইয়্যিদাতুনা আহমদ জাহানারা বেগম আলাইহাস সালাম উনার বুযুর্গী ও মুবারক বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে নিম্নরূপঃ-

(১) তিনি বুযুর্গ পূর্ব পুরুষের অধঃস্তন সন্তান। উনার বংশ পরম্পরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে।

(২) তিনি মাদারজাত ওলী।

(৩) তিনি একজন কুতুবুজ্জামান রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সহধর্মিণী,

(৪) তিনি পরিপূর্ণরূপে আল্লাহ্ পাক উনার প্রতি সমর্পিত

(৫) তিনি বর্তমান জামানার মুজাদ্দিদে আযম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আম্মাজান। (অসমাপ্ত)

আবা-৭০

 

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১০

 


একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 সাইয়্যিদাতুনা আহমদ জাহানারা বেগম আলাইহাস সালাম( দাদী হুযুর ক্বিবলা ) উনার লালন-পালন ও শিক্ষা লাভ-

 পূর্ব বুযুর্গ নানা-নানীর ঘরে পরিপূর্ণ এক ধর্মীয় পরিবেশে হযরত সাইয়্যিদাতুনা আহমদ জাহানারা বেগম আলাইহাস সালাম দ্বীনের প্রাথমিক সবক লাভ করেন। আল্লাহ্ পাক উনার মনোনীত ওলীগণকে কামিয়াবীর সকল পথ সুগম করে দিয়ে থাকেন। গন্তব্য সোপানে উপনীত হতে অবিরাম অবারিত পথ চলায় তাঁরা ক্লান্তি ও ক্লেশহীন। উন্মুখ অন্তর, চারিত্রিক দৃঢ়তা ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ওলীআল্লাহ্গণ বর্তমানকে পিছনে ফেলে কেবলই কাঙ্খিত মাকামের দিকে এগিয়ে যান।

 আল্লাহ্ পাক উনার মুহব্বত-মারিফত হাছিলের উপযোগী বেদনাহত হৃদয়, নিবিষ্ট চিন্তা, অনুসন্ধিৎচ্ছু মনন, জাগ্রত বিবেক, শানিত অনুভূতি অনুক্ষণ তাঁদের মাঝে নবতর উপলব্ধির উন্মেষ ঘটায়। উনাদের সকল বিষয় কর্মই সুন্নাতের সাথে সংগতিপূর্ণ হয়ে যায়। বাধ্যতামূলক এ সংগতি বিধানের অনিবার্য প্রয়োজনে বার বার উনাদেরকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আবেহায়াতের কাছেই ফিরে যেতে হয়। উল্লিখিত গুণাবলী অর্জনের ক্ষেত্রে মজবুত ঈমান ও বিশুদ্ধ আক্বীদা অবধারিত প্রাথমিক সোপান। এখান থেকেই শুরু হয় মুমিন বান্দার অভিযাত্রা। তবে প্রজ্ঞা (ইল্ম) ও সমঝ (সূক্ষ্ম উপলব্ধি), ঈমান ও আক্বীদার সহযোগী না হলে গন্তব্যে পৌঁছা যায়না। ঈমান, আক্বীদা, ইল্ম ও সমঝ সহীহ্ না হলে জীবনব্যাপী আয়াসসাধ্য আয়োজন ও নিরবচ্ছিন্ন কঠোর আমল ও পরিণতিতে মানুষকে জাহান্নামী করে দেয়। ইল্ম ও সমঝদানের মোবারক মাধ্যম সাইয়্যিদুল বাশার, শাফিউল মুজনিবীন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন প্রত্যেক নর-নারী উনাদের জন্য জ্ঞান (ইল্ম) অর্জন করা ফরজ।তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “আল্লাহ্ পাক যাঁর মঙ্গল চান, তাঁকে দ্বীনি সমঝ দান করে থাকেন।

 ইল্ম ও সমঝের জন্য জন্মলগ্ন থেকেই ওলীআল্লাহ্গণের মন ও মনন উন্মুখ থাকে। আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দায়েমী মুহব্বত ও হুজুরীতে বিভোর এসব ওলীগণ আবাল্য স্বাধীন। কোলাহল ও হলাহলপূর্ণ দুনিয়ায় বাস করেও উনারা জগৎ সংসারের প্রতি নির্লিপ্ত। এযেনো আপন ঘরে পরবাস। এ মর্মে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “দুনিয়াতো আল্লাহ্ পাক তাকেও দেন, যাঁকে মুহব্বত করেন। আর তাকেও দেন, যাকে মুহব্বত করেননা। কিন্তু ঈমান কেবলমাত্র তাঁকেই দান করেন, যাঁকে মুহব্বত করেন।এই মুহব্বতের কারণেই আল্লাহ্ পাক উনার মনোনীত ওলীগণকে সুগভীর প্রজ্ঞা ও নিগূঢ় সমঝদানে সমৃদ্ধ করে থাকেন। কারণ ইল্ম, সমঝ ও ইখলাস হলো আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নৈকট্য লাভের সহায়ক মাধ্যম। এসব অনুপম বৈশিষ্ট্য গুণগুলোই বিশুদ্ধ আমলের সূত্রপাত ঘটিয়ে মানুষকে মঞ্জিলে মাকসুদের চূড়ান্ত ধাপে এগিয়ে নিয়ে যায়।

          আল্লাহ্ পাক উনার পূর্ব নির্ধারিত ব্যবস্থায় মাদারজাদ ওলী, আওলাদে রাসূল, হযরত সাইয়্যিদাতুনা আহমদ জাহানারা বেগম আলাইহাস সালাম উনার মাঝে উনার জন্মলগ্নেই উপরোক্ত সকল গুণাবলীর সমাবেশ ঘটিয়েছেন। অন্তরের ব্যাকুলতায় সূক্ষ্ম ইল্ম ও সমঝ হাছিলের প্রতি তাঁর অনুরক্ত হওয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিলনা। এ সবের প্রথম পাঠ শুরু হয় বুযুর্গ নানা-নানীর মুবারক সান্নিধ্যে। বয়স মুবারক বাড়তে থাকে। মাঝে-মধ্যে পিতৃ নিবাস বাড়ী মজলিশগ্রামে আসেন এবং অবস্থান করেন।

 সেখানে উনাকে সার্বিক ইল্ম-এর তালীম এবং তাসাউফের দীক্ষা দান করেন বুযুর্গ পিতা, হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুস সবুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি। পূর্বোক্ত বুযুর্গ পুরুষ হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলাউদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও সাইয়্যিদ মুহম্মদ সালাহউদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে ছিলেন সহোদর ভাই। পথভ্রষ্ট ও গোমরাহীতে নিমজ্জিত মানুষকে হিদায়েত দান, বিদ্য়াত অপসারণ এবং অবলুপ্ত সুন্নাত জিন্দা করার লক্ষ্যে উভয়ের আদর্শ ও আয়োজন ছিল অভিন্ন।উনাদের যুগপৎ অক্লান্ত প্রয়াসেই প্রত্যক্ষভাবে ঐ জনপদের এবং পরোক্ষভাবে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ইসলাম পালনে আগ্রহী হয়েছে, দ্বীনের সহীহ্ সমঝ লাভ করেছে, সুন্নত অনুসরণে অভ্যস্ত হয়েছে এবং বিধর্মীরা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে ইবাদত-বন্দেগীতে মনোযোগী হয়েছে। হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলাউদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ সালাহ্উদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক মন, মনন, আদর্শ ও ঐতিহ্যে দ্বীন ইসলামের পরিপুষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ আবহে পিতৃনিবাসে বুযুর্গ পিতা-মাতার কাছে ক্রমান্বয়ে দ্বীন-ইসলামের সকল স্তরের সহীহ্ ইল্ম ও তাসাউফের অন্তর্নিহিত প্রজ্ঞা এবং অনুশীলনে বড় হতে থাকেন মাদারজাদ ওলী, আওলাদে রাসূল, হযরত সাইয়্যিদাতুনা আহমদ জাহানারা বেগম, আল হাসানী, ওয়াল হুসাইনী, ওয়াল কুরাঈশী আলাইহাস সালাম। (অসমাপ্ত)

আবা-৬৯