পবিত্র মীলাদ শরীফ বিষয়ে প্রথম দিকে যারা কিতাব রচনা করেছেন উনাদের মধ্যে অন্যতম হলেন হাফিয হযরত আবুল খত্ত্বাব ইবনে দাহিয়্যাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি ছিলেন পবিত্র হাদীছ শাস্ত্রের অন্যতম গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব

পবিত্র মীলাদ শরীফ বিষয়ে প্রথম দিকে যারা কিতাব রচনা করেছেন উনাদের মধ্যে অন্যতম হলেন হাফিয হযরত আবুল খত্ত্বাব ইবনে দাহিয়্যাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি ছিলেন পবিত্র হাদীছ শাস্ত্রের অন্যতম গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব

পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিষয়ে প্রথম দিকে যারা কিতাব রচনা করেছেন উনাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- হযরত আবুল খত্ত্বাব উমর ইবনে দাহিয়্যাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫৪৪-৬৩৩ হিজরী)। উনার লিখিত কিতাবখানা হলো- كِتَابُ التَّنْوِيْرِ فِيْ مَوْلِدِ الْبَشِيْرِ وَالنَّذِيْرِ ‘কিতাবুত্ তান্উয়ীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর’ (কোনো কোনো কিতাবে كِتَابُ التَّنْوِيْرِ فِيْ مَوْلِدِ السِّرَاجِ الْمُنِيْرِ ‘কিতাবুত্ তান্উয়ীর ফী মাওলিদিস সিরাজিল মুনীর’ উল্লেখ আছে)। 
বাতিলপন্থীরা পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার বিরোধিতা করতে গিয়ে হযরত আবুল খত্ত্বাব ইবনে দাহিয়্যাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জাহিল, মন্দভাষী, মিথ্যাবাদী প্রভৃতি অভিযোগে অভিযুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ তিনি ছিলেন জগদ্বিখ্যাত আলিম, মুহাদ্দিছ ও ফুদ্বালাগণের অন্তর্ভুক্ত। যেমন কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
كان حضرت أبو الخطاب رحمة الله عليه المذكور من أعيان العلماء ومشاهير الفضلاء، متقناً لعلم الحديث النبوي وما يتعلق به، عارفاً بالنحو واللغة وأيام العرب وأشعارها، واشتغل بطلب الحديث في أكثر بلاد الأندلس الإسلامية، ولقي بها علماءها ومشايخها، ثم رحل منها إلى بر العدوة ودخل مراكش واجتمع بفضلائها، ثم ارتحل إلى إفريقية ومنها إلى الديار المصرية ثم إلى الشام والشرق والعراق ودخل إلى عراق العجم وخراسان وما والاها ومازندران، كل ذلك في طلب الحديث والاجتماع بأئمته والأخذ عنهم، وهو في تلك الحال يؤخذ عنه، ويستفاد منه 
অর্থ: হযরত আবুল খত্ত্বাব ইবনে দাহিয়্যাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন সম্মানিত আলিমগণ ও প্রসিদ্ধ ফুদ্বালাগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত, পবিত্র হাদীছে নববী শরীফ ও উনার সংশ্লিষ্ট ইলমে যথোপযুক্ত, ইলমে নাহু ও ইলমে লুগাত এবং আরব্য ইতিহাস ও কাব্যে ব্যাপক পারদর্শী। আন্দুলুসের অধীন বিভিন্ন ইসলামিক দেশে তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ অন্বেষণে মশগুল ছিলেন এবং এ কারণে তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিশেষজ্ঞ অনেক আলিম ও মাশায়িখগণ উনাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। অতঃপর তিনি সেখান থকে ‘র্বুরুল উদ্ওয়া’ (এটি মারাবিতূনদের শাসনাঞ্চল, ১০৪০-১১৪৭ ঈসায়ী, যাকে ‘আল-মাগ্রীবুল আক্বছা’ও বলা হয়। যা বর্তমান স্পেন ও উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার এক বিশাল অঞ্চল নিয়ে গঠিত ছিলো) এলাকায় সফর করেন এবং মারাকিশ্ শহরে প্রবেশ করে সেখানে অবস্থিত ফুদ্বালাগণ উনাদের সাথে মিলিত হন। অতঃপর আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চল সফর করে সেখান থেকে মিশর অতঃপর শাম, প্রাচ্য, ইরাক, খোরাসান, মাওয়ালাহা, মযান্দারন (বর্তমান ইরানের একটি প্রদেশ)। আর এসব অঞ্চল সফরের উদ্দেশ্য ছিলো পবিত্র হাদীছ শরীফ অন্বেষণ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ইমামগণ উনাদের সাথে সাক্ষাৎ এবং উনাদের নিকট থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ সংগ্রহ। সে সময় উনার থেকেও পবিত্র হাদীছ শরীফ গ্রহণ করা হতো ও উনার থেকে ফায়দা হাছিল করা হতো। সুব্হানাল্লাহ! (ওয়াফিয়্যাতুল আ’ইয়ান লি ইবনে খল্লিকান ৩/৩৯৪) 
কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,
قال حضرت ابن خلِّكان في ترجمة الحافظ ابي الخطّاب بن دحيّة رحمة الله عليه: كان من أعيان العلماء ومشاهير الفضلاء.
অর্থ: হযরত ইবনে খল্লিকান তিনি হাফিয আবুল খত্ত্বাব ইবনে দাহিয়্যাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে বলেন, তিনি ছিলেন সম্মানিত আলিমগণ ও প্রসিদ্ধ ফুদ্বালাগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুব্হানাল্লাহ! (আল্-হাউয়ী লিল্ ফাতাওয়া ১/১৮২)
শুধু তাই নয়, উনার বংশগত মর্যাদাও ছিলো অনেক উচ্চ মানের। তিনি মাতার দিক থেকে ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনার বংশধর। অন্যদিকে পিতার দিক থেকে তিনি ছিলেন প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত দাহিয়াতুল ক্বলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বংশধর। এ কারণে উনাকে ‘দাহিয়্যাহ’ বলা হয়। এ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,
كان يذكر أن أمه أمة الرحمن بنت أبي عبد الله ابن أبي البسام موسى بن عبد الله بن الحسين بن جعفر بن علي بن محمد بن علي بن موسى بن جعفر بن محمد بن علي بن الحسين بن علي بن أبي طالب، رضي الله عنـهم، فلهذا كان يكتب بخطه " ذو النسبين دحية والحسين، رضي الله عنهما "
অর্থ: উল্লেখ করা হয় যে, হাফিয আবুল খত্ত্বাব ইবনে দাহিয়্যাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাতা হলেন আমাতুর রহমান বিনতে আবু আব্দুল্লাহ ইবনে আবুল বাসসাম মূসা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হুসাইন ইবনে জা’ফর ইবনে আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে মূসা ইবনে জা’ফর ইবনে মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবী ত্বলিব আলাইহিমুস সালাম। এ কারণে তিনি উনার লিখনীতে ‘যুন্ নাসাবাইন দাহিয়্যাহ ওয়া হুসাইন’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা লিখতেন অর্থাৎ দাহিয়্যা ও হুসাইন এ দুই নসবের অধিকারী তিনি। সুবহানাল্লাহ! (ওয়াফিয়্যাতুল আ’ইয়ান লি ইবনে খল্লিকান ৩/৩৯৩-৯৪)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো, হাফিয আবুল খত্ত্বাব ইবনে দাহিয়্যাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন একজন জগদ্বিখ্যাত আলিম ও মুহাদ্দিছ। ইলমে নাহু, ইলমে লুগাত ও কাব্য শাস্ত্রেও ছিলো উনার ব্যাপক ব্যুৎপত্তি। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সম্মানিত একজন ব্যক্তি। সেই সময়ের বিভিন্ন মুহাদ্দিছগণ উনার কাছ থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ সংগ্রহ করতেন। সুবহানাল্লাহ! আর বংশীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। উনার শরীর মুবারকে বহমান ছিলো সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খুন মুবারক। সঙ্গতকারণে উনার তাক্বওয়া-পরহেযগারীও যে ছিলো বেমেছাল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সুবহানাল্লাহ! 
তাই উনার লিখিত পবিত্র মীলাদ শরীফ বিষয়ক কিতাব كِتَابُ التَّنْوِيْرِ فِيْ مَوْلِدِ الْبَشِيْرِ وَالنَّذِيْرِ ‘কিতাবুত্ তান্উয়ীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর’ অথবা كِتَابُ التَّنْوِيْرِ فِيْ مَوْلِدِ السِّرَاجِ الْمُنِيْرِ ‘কিতাবুত্ তান্উয়ীর ফী মাওলিদিস সিরাজিল মুনীর’ অবশ্যই গ্রহণযোগ্য ও দলীলযোগ্য। যারা উনার বিরুদ্ধে বিষোদগার করে থাকে, মিথ্যারোপ করে থাকে তাদের বক্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় বরং উনার ব্যাপারে বিষোদগারকারীরা বাতিল ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন!