আমরা কেন মিলাদ শরীফ ক্বিয়াম শরীফ করবো?

 

আমরা কেন মিলাদ শরীফ ক্বিয়াম শরীফ করবো?

 

আসসালামুআলাইকুম।।আপনার মতামত জানতে চাই।।।সকল ঈদের সেরা ঈদ - সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ

 

ঈদে মিলাদুন্নবী -

 

১. আল্লাহ পাক কি বলেছেন ?- https://khawajarazi.blogspot.com/2022/10/blog-post_9.html

 

২. নবিজি কি পালন করেছেন ? - https://khawajarazi.blogspot.com/2022/10/blog-post_41.html

 

৩. নবি-রাসুলগন কি পালন করেছেন ? - https://khawajarazi.blogspot.com/2022/10/blog-post_32.html

 

৪. খোলাফায়ে রাশেদীন কি পালন করেছেন?- https://khawajarazi.blogspot.com/2022/10/blog-post_80.html

 

৫. ছাহাবাগন কি পালন করেছেন ? - https://khawajarazi.blogspot.com/2022/10/blog-post_22.html

 

৬. তাবেয়ী-তাবেতাবেঈন কি পালন করেছেন ? - https://khawajarazi.blogspot.com/2022/10/blog-post_49.html

 

৭. ইমাম-মুজতাহিদগন কি পালন করেছেন ? - https://khawajarazi.blogspot.com/2022/10/blog-post_24.html

 

৮. মক্কা-মদীনা শরীফে কি পালন হয়? - https://khawajarazi.blogspot.com/2022/10/blog-post_15.html

 

৯. দেওবন্দী - কওমীদের গুরুরা কি বলেছে?- https://khawajarazi.blogspot.com/2022/10/blog-post_89.html

তাহলে যারা তোতা পাখির মত মুখস্থ কথা বলে " ইহা বিদয়াত" তারা কি কোরান - হাদীস -ইজমা ক্বিয়াসকে অস্বীকারকারী নয় ?

 

এমন ব্যক্তি মুসলমান থাকবে কি ?

 

দেওবন্দী - কওমীদের গুরুদের ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন

 

দেওবন্দী - কওমীদের গুরুদের ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন

১. মৌলভী আশ্রাফ আলী থানভীর মিলাদ পালন
দেওবন্দীদের অন্যতম বুযূর্গ মৌলভী আশ্রাফ আলী থানভী বর্ণনা করে," হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারকের উসিলায় সমস্ত জগত সৃষ্টি হয়েছে।" 


আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,

وذکرہم بایام اللہ-ان فی ذالک لایت لکل صبار ‌‎‎شکور-

“আল্লাহ তায়ালা হযরত মূসা আলাইহিস সালাম কে নির্দেশ দেন যে,আপনি তাদেরকে(বনী ইসরাঈল) আল্লাহর নিদর্শনাবলীর কথা স্মরন করিয়ে দিন।নিশ্চয় এতে প্রত্যেক অধিক সবরকারী,শুকুর গুজারদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।”


  • " এ আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে বলে,এ কথা সুস্পষ্ট হলো যে,নবী পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেলাদত উপলক্ষে খুশী আনন্দ করা বৈধ।শুধু তাই নয় বরং তা বরকত হাসিলের বড় উপায়।এ কথার ওপর স্পষ্ট যে, আমরা নবীর বেলাদত উপলক্ষে মূল খুশী হবার বিরোধী নই।বরং এ কাজের উপর সর্বদা আমলকারী।"



  • এ আশ্রাফ আলী থানভী আরো বলে, “আল্লাহ তায়ালা হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুভাগমনকে কুরআন শরীফের মধ্যে নেয়ামতের খোটা দেয়ার ধরন বর্ণনা করেছেন।(কেন আমরা মিলাদুন্নাবী পালন করব না?অবশ্যই করব।)অতএব এখান থেকে আমাদের এই শিক্ষা গ্রহন করা দরকার যে,আমরা যেন প্রত্যেহ একবার হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর মিলাদের আলোচনা করি।”



  • সে  আরো বলে"  নবী পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই নিজের মিলাদ বর্ণনা করেছেন।কিন্তু তা বর্ণনা কম করেছেন।আহকামের আলোচনা অধিক করেছেন।হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নাতের অনুসরন এভাবে হবে যে,হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নবুয়তের পুরা জীবনের মধ্যে যে পরিমান বেলাদতের বর্ণনা করেছেন;এতটুকু যেন তোমরা পালন কর।"



  • সে ইমাম আহমদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর সূত্রে আরো বর্ণনা করে যে," বৃহস্পতিবার রাত্রি(জুমার রাত্রি) কদরের রাত্রি থেকে অনেক গুন বড়।এই কারনে যে,ওই রাত্রিতে হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার  আম্মাজান হযরত আমেনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফে  হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়ার মধ্যে তাশরীফ আনয়নের মধ্যে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতের মঙ্গল নিহিত রয়েছে;যা গণনা করা যাবে না।"



২. মৌলভী রশিদ আহমদ গাংগুহীর ওস্তাদের মিলাদ পালন


  • দেওবন্দীদের ইমাম রশিদ আহমদ গাঙ্গুহীর ওস্তাদ শাহ আব্দুল গণি দেহলভী বলে , “এ কথা হক্ব ও সত্য যে,হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর মিলাদ পালন এবং ইসালে সাওয়াবের আয়োজন করা মানবের পরিপূ্র্ণ কল্যানের একটি সোপান।বাস্তব এই যে,হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মিলাদ পালন করার মধ্যে এবং ইসালে সাওয়াব উপলক্ষে ফাতেহা পড়া মিলাদের খুশী উদযাপন মানবের জন্য পুরোই মঙ্গল   ”


  • থানভী  বিভিন্ন লেখায় শেখ দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মহা মর্তবা বর্ণনা করেছে।থানভী তার কিতাব ‘শুকরুন নি’য়মা বিষিকরি রাহমাতির রাহমা’ এর ৬৫ পৃষ্ঠায় শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি  রচিত ‘আশিয়াতুত লুমাত’ কিতাবের একটি ইবারত উদ্ধৃত করে বলে , “যেহেতু শেখ আব্দুল হক দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি একজন বড় হাদীস বিশারদ।তিনি শাফায়াতের দশ প্রকারের বর্ণনা দিলেন তা আমরা কোন হাদীসের কিতাবে পাইনি।তারপরেও তিনি (শেখ দেহলভী) যেহেতু হাদীসের মধ্যে বিশাল দৃষ্টির অধিকারী।এ কারনেই এই বর্ণনা গ্রহনযোগ্য।”
তথ্য সুত্র - 


  • "মিলাদুন্নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম" ১৯২ পৃষ্ঠা কৃত মৌলভী আশ্রাফ আলী থানভী।


  • "তাফসীরে বয়ানুল কুরআন" কৃত মৌলভী আশ্রাফ আলী থানভী।


  • "জুমা কি ফযায়েল ওয়া আহকাম" কৃত মৌলভী আশ্রাফ আলী থানভী।
মক্কা-শরীফ এবং মদীনা শরীফে ঈদে মিলাদুননবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন।

 

মক্কা-শরীফ এবং মদীনা শরীফে ঈদে মিলাদুননবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন।



  • মক্কাবাসীদের মিলাদ পালন -

ইমাম শামসুদ্দীন সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি সূত্রে মোল্লা আলী ক্বা্রী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মক্কা বাসীরা অধিকতর মঙ্গল ও বরকতের অধিকারী।এই পবিত্র নগরীর দিকে মুসলিম মিল্লাত অতি আগ্রহের মাধ্যমে অগ্রসর হও্য়ার চেষ্টা করে।এটার কারন এই যে,এখানে হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মৌলুদ শরীফ(পবিত্র জন্মস্থান) বিদ্যমান।এ পবিত্র জন্মস্থানটি তৎকালীন ‘সুকুল লাইল’নামে খ্যাত ছিল।যা বর্তমানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের পূর্ব পাশে ‘মাকতবা আল মক্কা আল মুকাররমা’ নামে দালান হিসেবে অবস্থিত।


উক্ত পবিত্র স্থানে লোকেরা দলে দলে অতি আগ্রহের সাথে মনোবাসনা নিয়ে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে গমন করতেন।বিশেষ করে ১২ ই রবিউল আউয়াল শরীফে ঈদে মিলাদুন্নাবী’র দিনে অনেক গুরুত্বসহকারে লোকজন মাহফিলের আয়োজন করতেন।ধনী-গরীব,আমীর-প্রজা সকলেই এতে অংশগ্রহন করতেন। তৎকালীন মক্কা নগরীর কাযী এবং প্রখ্যাত আলেম আল বুরহানী আশ-শাফেয়ী যিয়ারতকারী ও ঈদে মিলাদুন্নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলে অংশগ্রহনকারীদেরকে তাবাররুক বা খানা খাওয়ানোর ব্যাবস্থা করতেন।আর ঈদে মিলাদুন্নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে হেযাযের আমীর তাঁর বাসভবনে হেযাযের নাগরীকদের জন্য ঈদে মিলাদুন্নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে বিশাল খাবারের আয়োজন করতেন এবং এই নিয়ত করতেন যে,এই মিলাদে পাকের দ্বা্রা তাঁর অনেক মুসিবত দূরীভূত হবে।তাঁর পরবর্তীতে তাঁর উত্তরসূরী পূত্র “আল-জমালী” এই মাহফিলের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিলেন।" 


  • দুই.‘মাহনামা তরিক্বত’ লাহোর পত্রিকায় মক্কা শরীফে জশনে ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের বর্ণনাঃ-

১৯৭১ সালের জানুয়ারী মাসে ‘মাহনামা তরিক্বত’ লাহোর পত্রিকার রিপোর্টের মধ্যে মক্কা শরীফের জশনে ঈদে মিলাদুন্নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের বর্ণনা এভাবে দেন যে, “হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শুভাগমন দিবসে মক্কা শরীফের মধ্যে বড় ধরনের আনন্দ উৎসব পালন করা হয়।ঐ দিবসকে ‘ঈদে ইয়াওমে বেলাদতে রাসূল’ বলা হয়।ঐ দিন চারিদিকে পতাকা উড়তে থাকে।হেরেম শরীফের গভর্ণর এবং হেযাযের কমান্ডারসহ আরো অন্যান্য কর্মকর্তাগণ আভিজাত্য পোশাক পরিধান করে মাহফিলে উপস্থিত হতেন এবং হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘পবিত্র জন্মস্থানে’-এ গিয়ে কিছুক্ষন নাত-গজল পরিবেশন শেষে ফিরে যেতেন।হেরেম শরীফ থেকে ‘মৌলিদুন্নবী’(পবিত্র জন্মস্থান) পর্যন্ত দুই সাড়িতে আলোকসজ্জা করা হত।ঐ মৌলিদ শরীফের স্থান নূরের আলোর ভূমিতে পরিণত হত এবং মৌলিদ শরীফের স্থানে সু-কন্ঠে প্রিয় নবীর মিলাদ পালন করত।এ অবস্থায় রাত দুইটা পর্যন্ত মিলাদখানী,নাত এবং বিভিন্ন খত্‌ম পড়ত।দলে দলে লোকজন এসে নাত পরিবেশন করত।১১ রবিউল আউয়াল শরীফের মাগরীব হতে ১২ ই রবিউল আউয়াল শরীফের আসর পর্যন্ত ২১ টি তোপধ্বনি করা হত।মক্কা শরীফের ঘরে ঘরে মিলাদুন্নাবী উপলক্ষে খুশি আনন্দ এমনকি স্থানে স্থানে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হত।”


  • মদিনাবাসীর মিলাদ পালনঃ-

মক্কাবাসীদের ন্যায় মদীনা পাকের অধিবাসীরাও ঈদে মিলাদুন্নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলের আয়োজন করতেন।

  • হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজের মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক মিলাদ পালন- 

দেওবন্দীদের পীর-মুর্শিদ হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজের মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি  বলেন, “আমাদের ওলামা মৌলুদ শরীফ সম্পর্কে অনেক বিতর্ক শুরু করে দিয়েছেন।এর পরেও ওলামায়ে কেরামের এ কাজ(মিলাদুন্নাবী পালন)বৈধ হবার পক্ষে মত দিয়েছেন।যখন বৈধ হওয়ার কথা আছে,কেন এ (দেওবন্দী,তাবলীগী) আলেমরা এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।আমাদের হেরেমাইন (মক্কা ও মদিনা শরীফ)এর অনুসরন যথেষ্ট।

তিনি আরো বলেন,দুই হেরেমের অধিবাসীরা যে মিলাদ শরীফ পালন করেন তা আমাদের জন্য দলীল হবার ব্যাপারে যথেষ্ট।

তিনি আরো বলেন, “ফকীরের(নিজের দিকে সম্বোধন করে বলেন) মাযহাব হল মিলাদুন্নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাহফিলে অংশগ্রহন করা।শুধু তাই নয় বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে আমি প্রতি বছর তা অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে পালন করি এবং সালাত-সালামের সময় কিয়ামের মধ্যে অনেক রুহানী স্বাদ পেতে থাকি।”


  • হযরত আব্দুল হক দেহলভীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক মিলাদ পালন


পাক ভারতে হাদীস চর্চার অন্যতম মুহাদ্দীস হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি  তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাব ‘মাসাবাতা বিস্‌ সুন্নাহ’ এর ৮২ পৃষ্ঠার মধ্যে জশনে ঈদে মিলাদুন্নাবী এর পালন বৈধতা ও উপকারীতার অনেক দলীল ও প্রমাণ প্রদান করেছে।শেখ দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি যিনি পাক ভারত উপমহাদেশে সুন্নী নয় শুধু ,দেওবন্দীদের নিকট গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিত্ব।তাঁর সম্পর্কে দেওবন্দীদের বুযূর্গ আশ্রাফ আলী থানভী বর্ণনা করেন, “শাহ আব্দুল হক দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রত্যেক দিন নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর দিদার লাভে ধন্য হতেন।”

 সূত্র সমূহঃ

*আল মওরেদুর রবী ১৫ পৃষ্ঠা কৃত মোল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

*শামায়েলে এমদাদিয়া ৮৭,৮৮,৯৪ পৃষ্ঠা কৃত হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী।

*ফয়সালা-এ হাফত মাসায়েল ৯ পৃষ্ঠা কৃত হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী।
*শেফাউল সায়েল কৃত শাহ আব্দুল গনি দেহলভী।

*হাওলুল ইহতেফাল বেযিকরা আল মৌলেদিন নববী আল-শরীফ কৃ শেখ মুহাম্মদ আলভী মালেকী মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি(ইন্তেকাল ১৪২৫হিজরী২০০৪ইংরেজী)
ঈদে মিলাদুননবী নিয়ে ইমাম মুজতাহিদগনের কি অভিমত ?

 

ঈদে মিলাদুননবী নিয়ে ইমাম মুজতাহিদগনের কি অভিমত ?


১. প্রসিদ্ধ তাবেঈ হযরত হাসান বসরী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ) বলেন
قال حسن البصري رضي الله تعالی عنه وددت لو کان لی مثل جبل احد ذھبا فانفقته علی قراءة مولد النبي صلی الله علیه وسلم
অর্থাৎ- যদি আমার উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকত তাহলে আমি তা রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাহফিলে খরচ করতাম।
[আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-১১]
২. হযরত জুনাইদ বাগদাদী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ) বলেন
যে ব্যক্তি ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ উপস্থিত হয়ে তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করেছে, সে ঈমানের সফলতা লাভ করেছে।
[আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-১১]

৩. হযরত মারুফ কারখী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ) বলেন
যে ব্যক্তি ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপলক্ষে পানাহারের আয়োজন করে মুসলিমদের ভাইদের একত্রিত করে, আলোকসজ্জা করে, নতুন পোষাক পরিধান করে এবং খুশবো, আতোর, গোলাপ ও লোবান প্রয়োগে নিজেকে সুগন্ধিযুক্ত করে; রোজ কিয়ামতে প্রতম শ্রেণীর নবীদের সাথে তার হাশর হবে এবং ইল্লীঈনের সর্বোচ্চ স্থানে সে অবস্থান করবে।
[আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-১১]
৪. শাফেঈ মাযহাবের প্রবর্তক ইমাম শাফেঈ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ) বলেন
যদি কোন ব্যক্তি ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপলক্ষে মুসলিম ভাইদেরকে খাবার তৈরী করে মজলিসে আপ্যায়ন করে ও ইবাদাত সম্পন্ন করে, রোজ কিয়ামতে সিদ্দীকিন, শাহাদা ও সালেহীনদের সাথে তার হাশর হবে এবং জান্নাতুন নাঈমে সে অবস্থান করবে।
[আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-১৩]
৫. ৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ) বলেন
তিনি তার স্ব-রচিত “আল উয়াছায়েল ফী শরহিশ শামাইল” গ্রন্থে উল্লেখ আরও করেন, “যে গৃহে বা মসজিদে কিংবা মহল্লায় মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। তখন অবশ্যই সে গৃহ বা মসজিদ বা মহল্লা অসংখ্য ফেরেশতা দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে এবং উক্ত স্থান সমূহে যারা অবস্থান করে তাদের জন্য তারা সালাত পাঠ করে। (অর্থাৎ তাদের গুণাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে) এবং আল্লাহ তায়ালা তাদের সবাইকে সাধারণভাবে রহমত ও সন্তুষ্টি দ্বারা ভূষিত করেন। অতঃপর নূরের মালা পরিহিত ফেরেশতাকুল বিশেষতঃ হযরত জিব্রাঈল, মীকাঈল, ঈস্রাফীল ও আজরাঈল আলাইহিস সালাম মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে মাহফিল আয়োজনকারীর গুণাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকেন”।
তিনি আরো বলেন, “যে মুসলমানের গৃহে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ পাঠ করা হয়, সে গৃহ ও গৃহে বসবাসকারী ব্যক্তি দুর্ভিক্ষ, মহামারী, অগ্নি, পানি, পরনিন্দা, কুদৃষ্টি ও চুরি ইত্যাদির আক্রমণ থেকে মুক্ত থাকবে। সে ঘরে যার মৃত্যু হবে সে মৃত ব্যক্তি কবরে মুনকার নকীরের প্রশ্নের উত্তর অতি সহজে দিতে পারবে। যে ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ কে সম্মান করতে চায়, তার জন্য ইহাই যথেষ্ট। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তির নিকট নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদের কোন মর্যাদা নেই, তার অন্তর এত নিকৃষ্ট হয়ে পড়বে যে, তার সামনে হুযুরপুর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিশ্বজোড়া প্রশংসাগীতি উচ্চারিত হলেও তার অন্তরে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য বিন্দুমাত্র মুহাব্বতের উদ্রেক হবে না”।
[আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং- ১৩ ও ১৪]
৬. বুখারী শরীফের ব্যাখাকার বিশ্ববিখ্যাত মোহাদ্দিস আল্লামা কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহে আলাইহি (মৃত্যুঃ ৯২৩ হিজরী) বলেন-
“যে ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শুভাগমনের মোবারক মাসের রাতসমূহকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করে, আল্লাহ তার উপরে রহমত বর্ষণ করেন। আর উক্ত রাত্রকে ঈদ হিসেবে উদযাপন করবে এ জন্য যে, যাদের অন্তরে (নবী বিদ্বেষী) রোগ রয়েছে। তাদের ঐ রোগ যেন আরো শক্ত আকার ধারণ করে এবং যন্ত্রণায় অন্তর জ্বলে পুড়ে যায়”।
[শরহে জুরকানী আলাল মাওয়াহেব, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ২৬২
৭. হযরত সাররী সাক্বত্বী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ) বলেন
“যে ব্যক্তি মিলাদ শারীফ পাঠ বা মিলাদুন্নাবী (সাঃ) উদযাপন করার জন্য স্থান নির্দিষ্ট করল, সে যেন তার জন্য জান্নাতে রওজা বা বাগান নির্দিষ্ট করল। কেননা সে তা হুজুর পাক (দঃ) এর মহব্বতের জন্যই করেছে।”
[আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং- ১৩]
৮. ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বপ্রথম মোহাদ্দিস হযরত শায়খ আবদুল হক মোহাদ্দেসে দেহলভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি বলেন-
“যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রাত্রকে ঈদ হিসেবে পালন করে, তার উপর আল্লাহ তায়ালা রহমত নাযিল করেন। আর যার মনে হিংসা এবং [নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুশমনির] রোগ রয়েছে, তার ঐ (নবী বিদ্বেষী) রোগ আরও শক্ত আকার ধারণ করে”।
[মা সাবাতা বিসসুন্নাহ (উর্দু) পৃষ্ঠা নং-৮৬]
এখন যারা মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করাকে শিরক, হারাম ও বিদয়াত ইত্যাদি ফতোয়া দিয়ে থাকেন তাদেরকে উপরোক্ত মুহাদ্দীসের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য নসিহত করা গেল। তাদের থেকে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের ঈমানকে পরিশুদ্ধ করুন। তাদের ইলমে হাদীসের ক্ষেত্রে অবদান না থাকলে, আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশের বর্তমান আলেমগণ হাদীস কি শাস্ত্র তাও চিনতেন না।
ইমাম মুজতাহিদ ,আউলিয়া কিরাম উনাদের ঈদে মিলাদুন্নবি পালন ।

 

ইমাম মুজতাহিদ ,আউলিয়া কিরাম উনাদের ঈদে মিলাদুন্নবি পালন ।

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পরবর্তী তাবিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের যুগে এবং তৎপরবর্তী প্রত্যেক যুগেই অনুসরণীয় ইমাম-মুজহাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা প্রত্যেকেই অত্যন্ত জওক-শওক ও খুশি প্রকাশ করে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল করেছেন এবং এ ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে যে, বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি শতাধিক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন, যিনি ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খলীফা ও ছাত্র ছিলেন। তিনি বলেন-
وددت لو كان لى مثل جبل أحد ذهبا فانفقته على قرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم.

  • অর্থ: “আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকতো তাহলে আমি তা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ অর্থাৎ ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন উপলক্ষে ব্যয় করতাম।”সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম)

আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম কিতাব উনার লিংক:https://goo.gl/PP1v6d

এরপরে মাযহাবের ইমামগণও মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে অর্থাৎ ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাহফিলের ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করেছেন। যেমন কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
قال الامام الشافعى رحمة الله عليه من جمع لمولد النبى صلى الله عليه وسلم اخوانا وهيأ طعاما واخلى مكانا وعمل احسانا وصار سببا لقرائته بعثه الله يوم القيامة مع الصديقين والشهداء والصالحين ويكون فى جنات النعيم.

  • অর্থ: হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে লোকজন একত্রিত করবে, খাদ্য তৈরি করবে, জায়গা নির্দিষ্ট করবে এবং উত্তমভাবে (তথা সুন্নাহভিত্তিক) আমল করবে তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক তিনি হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ ও ছালিহীনগণ উনাদের সাথে উঠাবেন এবং উনার ঠিকানা হবে জান্নাতুল নায়ীমে।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম)

এরপরে মহান আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী হযরত ইমাম মারূফ কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও বিলাদত শরীফ উপলক্ষে অর্থাৎ মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের ফযীলত বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন,
من هيا طعاما لاجل قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم وجمع اخوانا و اوقد سراجا و لبس جديدا و تبخر و تعطر تعظيما لمولد النبى صلى الله عليه وسلم حشره الله يوم القيامة مع الفرقة الاولى من النبيين وكان فى اعلى عليين.

  • অর্থ: “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে খাদ্য প্রস্তুত করবে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এর সম্মানার্থে মুসলমান ভাইদের একত্রিত করবে, (আলো দানের উদ্দেশ্যে) প্রদীপ বা বাতি জ্বালাবে, নতুন পোশাক পরিধান করবে, (সুগন্ধির উদ্দেশ্যে) ধূপ জ্বালাবে এবং আতর-গোলাপ মাখবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক তিনি তার হাশর-নশর করবেন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রথম দলের সাথে এবং তিনি সে সুউচ্চ ইল্লীনে অবস্থান করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম)

এরপর মুসলমানদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি কিতাব লিখেছেন। যিনি হিজরী দশম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, সুলতানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
قال سلطان العارفين الامام جلال الدين السيوطى قدس الله سره ونور ضريحه فى كتابه المسمى بالوسائل فى شرح الشمائل ما من بيت أو مسجد أومحلة قرئ فيه مولد النبى صلى الله عليه وسلم الا حفت الملائكة ذلك البيت أو المسجد او المحلة وصلت الملئكة على أهل ذلك المكان وعمهم الله تعالى بالرحمة والرضوان وأما المطوقون بالنور يعنى جبرائيل وميكائيل واسرافيل وعزرائيل عليهم السلام فانهم يصلون على من كان سببا لقرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم.

  • অর্থ: সুলতানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ওসায়িল ফী শরহি শামায়িল নামক কিতাবে বলেন, “যে কোনো ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় খুশি প্রকাশ করে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা হয় সেখানে অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বেষ্টন করে নেন। আর উনারা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান চার ফেরেশতা অর্থাৎ হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম, হযরত মীকাঈল আলাইহিস সালাম, হযরত ইসরাফিল আলাইহিস সালাম ও হযরত আজরাইল আলাইহিস সালাম উনারা মীলাদ শরীফ পাঠকারীর উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন।”

এরপর এ উপমহাদেশে যিনি হাদীছ শাস্ত্রের ব্যাপক প্রচার-প্রসার করেছেন, ইমামুল মুফাসসিরীন ওয়াল মুহাদ্দিছীন ওয়াল ফুক্বাহা হযরত শায়খ শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
من عظم ليلة مولده بما امكنه من التعطيم والاكرام كان من الفايزين بدار السلام.

  • অর্থ: “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ দিবসকে তা’যীম করবে এবং সে উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করবে সে চিরশান্তিময় জান্নাতের অধিকারী হবে।” (ইবনু নাবাতা, আল বাইয়্যিনাত ১৫৯/৩০)

হযরত শায়খ শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছেলে উল্লেখ করেছেন,
اخبرنى سيدى الوالد قال كنت اصنع فى ايام المولد طعاما صلة بالنبى صلى الله عليه وسلم فلم يفتح لى سنة من السنين شئى اصنع به طعاما فلم اجد الا حمصا مقليا فقسمته بين الناس فرايته صلى الله عليه وسلم بين يديه هذه الحمص مبتهجا بشاشا.

  • অর্থাৎ “আমার শ্রদ্ধেয় পিতা আমার উদ্দেশ্যে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উদযাপন উপলক্ষে প্রতিবছর বিশেষ তাবারুকের আয়োজন করতাম। কিন্তু এক বৎসর সামান্য ভাজাকৃত বুট ব্যতীত অন্য কিছুই আয়োজন করা আমার সামর্থ্যে ছিলো না। তবুও আমি তা লোকজনের মধ্যে বিতরণ করে দিলাম। অতঃপর আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে (এমতাবস্থায়) দেখলাম যে, সেই বুটগুলো উনার সম্মুখে রয়েছে। আর তিনি (তাতে) অত্যন্ত উৎফুল্ল।” (আদ-দুররুস সামীন)

এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও মুহাক্কিক হযরতুল আল্লামা শায়খ শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার কিতাবের ৬২৪ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেন-
اے اللہ! میرا کوئی عمل ایسا نہیں ہے جسے آپکے دربار میں پیش کرنے کے لائق سمجھوں، میرے تمام اعمال میں فساد نیت موجود رہتی ہے، البتہ مجھ حقیر فقیر کا ایک عمل صرف تیری ذات پاک کی عنایت کیوجہ سے بہت شاندار ہے اور وہ یہ ہے کہ مجلس میلاد کے موقع پر میں کھڑے ہو کر سلام پڑھتاہوں اور نہایت ہی عاجزی وانکسار ی محبت وخلوص کے ساتھ تیری حبیب پاک صلی اللہ علیہ وسلم پر درود سلام بھیجتا رہا ہوں. اے اللہ! وہ کون سا مقام ہے جہاں میلاد مبارک سے زیادہ تیری خیر وبرکت کانزول ہوتا ہے! اس لئے اے ارحم الراحمین مجھے پکا یقین ہے کہ میرا یہ عمل کبھی بیکار نہ جائیگا بلکہ یقینا تیری بارگاہ میں قبول ہوگا اور جوکوئی درود وسلام پڑھے اور اس کےذریعہ دعا کرے وہ کبھی مسترد نہیں ہو سکتی

  • অর্থ: “আয় আল্লাহ পাক! আমার এমন কোনো আমল নেই; যা আপনার মুবারক দরবারে পেশ করার উপযুক্ত মনে করি। আমার সমস্ত আমলের নিয়তের মধ্যেই ত্রুটি রয়েছে। তবে আমি নগণ্যের শুধুমাত্র একটি আমল আপনার পবিত্র জাতের দয়ায় অনেক সম্মানিত বা মর্যাদাবান। আর সেটা হচ্ছে- পবিত্র মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এর মজলিস করি এবং এ মজলিসে ক্বিয়ামের সময় দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করি। আর একান্ত আজীজী, ইনকিসারী, মুহব্বত, ইখলাছের সাথে আপনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করি।

আয় আল্লাহ পাক! এমন কোনো স্থান আছে কি যেখানে মীলাদ মুবারক-এর চেয়ে অর্থাৎ বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে ছলাত ও সালাম পাঠ করা থেকে অধিক খায়ের বরকত নাযিল হয়? হে আরহামুর রাহিমীন! আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আমার এ আমল কখনো বৃথা যাবে না। বরং অবশ্যই আপনার পবিত্র দরবারে কবুল হবে এবং যে কেউ বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে ছলাত-সালাম পাঠ করবে এবং উহাকে উসীলা দিয়ে দোয়া করবে সে কখনো মাহরূম হতে পারে না। অর্থাৎ সে অবশ্যই কবুলযোগ্য।” সুবহানাল্লাহ!
উপরের দলীলভিত্তিক বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, সকল ঈদের সেরা ঈদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার জন্য যেরূপ স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি বলেছেন এবং নিজে করেছেন। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও করেছেন এবং করতে বলেছেন, খুলাফায়ে রাশিদীন, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পালন করেছেন ও পালন করতে বলেছেন। তেমনি অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন এবং পালন করার জন্য উম্মাহকে উৎসাহ প্রদান করেছেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল উপলক্ষে বেশি বেশি খরচ করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।
সাহাবা যুগে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলের প্রমান

 

সাহাবা যুগে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলের প্রমান


হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম উনার উপস্থিতিতে সাহাবায়ে কেরাম মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠান করেছেন |
নিম্নে কয়েকটি প্রমান :

১. হযরত আল্লামা জালাল উদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি যার সনদ সহ প্রায় ২ লক্ষ হাদিস শরীফ মুখস্থ ছিল সেই
তাজুল মুফাস্সিরীন মোহাদ্দেস মুসান্নিফ সুয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত কিতাব " সুবলুল

হুদা ফি মাওলেদে মুস্তাফা আলাইহি ওয়া সাল্লাম "" এ দুই খানা সহি হাদিস শরীফ বর্ণনা করেছেন |

পবিত্র হাদিস শরীফে এরশাদ হয়েছে "
ﻋَﻦْ ﺍَﺑِﻰ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ ﺍَﻧَّﻪﻣَﺮَّ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍِﻟٰﻰﺑَﻴْﺖِ ﻋَﺎﻣِﺮِ ﺍﻻَﻧْﺼَﺎﺭِﻯِّ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻳُﻌَﻠِّﻢُ ﻭَﻗَﺎﺋِﻊَﻭِﻻﺩَﺗﻪِ ﺻَﻠَّﻰ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻻَﺑْﻨَﺎﺋِﻪﻭَﻋَﺸﻪِﺗَﺮْﻴِ ﻭَﻳَﻘُﻮْﻝُ ﻫٰﺬَﺍ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻫٰﺬَﺍ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَﻓَﻘَﺎﻝَ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺼَّﻠٰﻮﺓُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡُ ﺍِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻓَﺘَﺢَﻟَﻚَ ﺍَﺑْﻮَﺍﺏَ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻼﺋِﻜَﺔُ
ﻛُﻠُّﻬُﻢْﻳَﺴْﺘَﻐْﻔِﺮُﻭْﻥَ ﻟَﻚَ ﻣَﻦْ ﻓَﻌَﻞَ
ﻓِﻌْﻠَﻚَ ﻧَﺠٰﻰﻧَﺠٰﺘَﻚ
অর্থাৎ হজরত আবু দ্বারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  হতে বর্ণিত , হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন হজরত আমির আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  এর গৃহে গেলেন এবং হুজুর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  দেখতে পেলেন আমির আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  উনার পরিবার পরিজন ও আত্বীয় স্বজনদের নিয়ে একত্রিত হয়ে খুশি মনে রাসুল পুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ পাঠ করছেন | অর্থাৎ নবীজি এইদিনে পৃথিবীতে আসছেন , পৃথিবীতে প্রত্যেকটা মাখলুক আনন্দিত হয়ে ইত্যাদি | এই ঘটনা শ্রবণ করে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে হজরত আমির আনসারীকে বললেন , আল্লাহ পাক আপনার জন্য উনার রহমতের দরজা প্রশস্থ করেছেন এবং সমস্থ ফেরেস্থাগন আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন | যে আপনার জন্য এইরূপ কাজ করবে সেও আপনার মত নাজাত ( ফজিলত ) লাভ করবে | ( সুবহান
আল্লাহ )

২. পবিত্র হাদিস শরীফে আরো এরশাদ হয়েছে "
ﻋَﻦْ ﺍِﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﺍَﻧَّﻪٗﻛَﺎﻥَ ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﺫَﺍﺕَ ﻳَﻮْﻡٍ
ﻓِﻰْ ﺑَﻴْﺘِﻪٖ ﻭَﻗَﺎﺋِﻊَﻭِﻻﺩَﺗٖﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟِﻘَﻮْﻡٍ ، ﻓَﻴَﺴْﺘَﺒْﺸِﺮُﻭْﻥَ
ﻭَﻳُﺤَﻤِّﺪُﻭْﻥَ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﻳُﺼَﻠُّﻮْﻥَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﺎِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَﺍﻟﻨَّﺒِﻰُّ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ ﺣَﻠَّﺖْﻟَﻜُﻢْ ﺷَﻔَﺎﻋَﺘِﻰْ
অর্থাৎ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তাইয়ালা আনহু  নিজেই বর্ণনা করেন , একদা তিনি উনার গৃহে সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে একত্রিত হয়ে হুজুর পুর নূর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ পাঠ করছিলেন |( এই দিনে হুজুর পৃথিবীতে আসছেন , স্বয়ং আল্লাহ উনার হাবিবের উপর দুরুদ সালাম দিয়েছেন ) শ্রবন্কারীরাও তা শুনে আনন্দ পাচ্ছিলেন | ঠিক ওই সময় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন , তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেছে "|
এই হাদিসটি বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে এসেছে যেমন : 

  • মাওলুদুল কবীর , 
  • হকিকতে মোহাম্মদী ( মিলাদ অধ্যায় ), 
  • দুররুল মুনাজ্জাম , 
  • ইশবাউল কালাম |
  • ইবনে দাহইয়ার আত-তানভির ৬০৪ হিজরি 
হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের ঈদে মিলাদুননবি পালন

 

হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের ঈদে মিলাদুননবি পালন



মক্কা শরীফের অন্যতম প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা শিহাব উদ্দিন আহমদ ইবনে হাজার আল হায়তামী আশশাফী রহমতুল্লাহে আলাইহি (জন্ম- ৮৯৯ হিজরী, ওফাত- ৯৭৪ হিজরী) তাঁর সুবিখ্যাত “আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের মধ্যে নিম্নোক্ত হাদীস গুলো তিনি বর্ণনা করেন-
১। সর্বশ্রেষ্ট সাহবী ও ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন-
مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلَى قِرا ةَ مَوْ لِدِ النَّبىُ مَلَى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَنَرَفِيْقِى فىِ الجَنّةِ
অর্থাৎ- “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে এক দিরহাম খরচ করবে সে জান্নাতে আমার সঙ্গী হবে”।
  • আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-৭

২। দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন -
مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدِ النَّبِىُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ اَخْيَا الاسْالاَمُ
অর্থাৎ- “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সম্মান করলো, সে অবশ্যই ইসলামকে জীবিত করলো”।
  • আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-৭

৩। তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান বিন আফফান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন -
مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلَى قرأة مَوْلِدِ النَّبِىُ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ فَكَا نَّمَا ثَهِيد غَزُوَةِ بَدَر رَوحُنَيْنُ
অর্থাৎ- “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠ করার জন্য এক দিরহাম খরচ করল- সে যেন নবীজীর সাথে বদর ও হুনাইন জিহাদে শরীক হলো”।
  • আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-৮

৪। চুতর্থ খলিফা হযরত আলি মুরতাদ্বার রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন-
مَنْ عَظَّمَ مَوْ لِدِ النَّبِى صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ وَكَانَ سَبَبَا لِقرا ته لا يَحْرُمُ مِنَ الدُّنْيَا اِلا َّبِالاِ يْمَانِ وَيَدْخُلُ الجَنَّهَ بِغَيْرِ حِسَاب
অর্থাৎ- “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সম্মান করবে এবং উদ্যোক্তা হবে সে ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে”।
  • আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-৮

বিখ্যাত মুহাদ্দীস আল্লামা ইউসুফ নাবহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর মতে হাদীসগুলো সম্পূর্ণ সহীহ এবং সনদ নির্ভরযোগ্য। তিনি তাঁর ‘জাওয়াহেরুল বিহার’ এর গ্রন্থে ৩য় খন্ডের ৩৫০ পৃষ্ঠায় উপরে উল্লিখিত বর্ণনা উপস্থাপন করে বলেছেন যে, আমার উপরোক্ত হাদীস সমূহের সনদ জানা রয়েছে।"
অপরদিকে মক্কা শরীফের স্বনামধন্য আল্লামা ইবন হাজর হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর নির্ভরতা প্রশ্নাতীত। তাঁর “আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের উপর বহু শরাহ লিখা হয়েছে অর্থাৎ তাঁর লিখিত কিতাবকে আলেমগণ নির্ভরযোগ্য হিসেবেই গণ্য করতেন এবং সেই সাথে রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করতেন। তন্মধ্যে আল্লামা দাউদী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি  ও আল্লামা সাইয়িদ আহমদ আবেদীন দামেস্কি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি অন্যতম। তাঁর রিওয়াতকৃত উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণীত হল যে, খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগেও মিলাদুন্নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চালু ছিল এবং তারাও এর জন্য অন্যকে তাগীদ করেছেন।
হযরত নবী-রসুল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন ।

 

হযরত নবী-রসুল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন ।


১. হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে প্রত্যেক নবী-রসুল আলাইহিমুস সালাম নিজ নিজ যুগে আমাদের প্রিয়নবী ও আল্লাহ পাক প্রিয় হাবিব হুযুর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আবির্ভাবের সুসংবাদ দিয়ে গেছেন | হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার প্রিয় পুত্র ও প্রতিনিধি হযরত শীস আলাইহিস সালাম উনাকে নুরে মুহাম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাজিম করার জন্য নিম্ন অসিয়ত করে গেছেন |



অনুবাদ অংশ টি নিম্নে বর্ননা করা হলোঃ
" আদম আলাইহিস সালাম আপন পুত্র হযরত শীস আলাইহিস সালাম উনাকে লক্ষ্য করে বললেন : হে প্রিয় বৎস , আমার পরে আপনি আমার খলিফা | সুতরাং এই খেলাফত কে তাকওয়ার তাজ ও দৃঢ় একিনের দ্বারা মজবুত করে ধরে রাখবেন | আর যখনই আল্লাহর নাম যিকির (উল্লেখ) করবেন তাঁর সাথেই মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নামও উল্লেখ করবেন | তাঁর কারন এই : আমি রূহ ও মাটির মধ্যবর্তী থাকা অবস্থায়ই উনার পবিত্র নাম আরশের পায়ায় (আল্লাহর নামের সাথে ) লিখিত দেখেছি | এরপর আমি সমস্ত আকাশ ভ্রমন করেছি | আকাশের এমন কোন স্থান ছিলনা যেখানে মুহম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম অঙ্কিত পাইনি? আমার রব আমাকে বেহেস্তে বসবাস করতে দিলেন | বেহেস্তের এমন কোন  প্রাসাদ ও কামরা পাই নাই যেখানে মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম ছিলনা ? আমি মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম আরোও লিখিত দেখেছি সমস্ত হুরদের স্কন্ধ দেশে , বেহেস্তের সমস্ত বৃক্ষের পাতায় , বিশেষ করে তুলা বৃক্ষের পাতায় পাতায় , পর্দার কিনারায় এবং ফেরেসতাগনের চোখের মনিতে ঐ নাম অঙ্কিত দেখেছি | সুতরাং হে শীস আলাইহিস সালাম !আপনি এই নাম বেশী বেশী করে জপতে থাকবেন  | কেননা , ফেরেস্তাগন পুর্ব হতেই এই নাম জপনে মশগুল রয়েছেন " [ জুরকানি শরীফ ]

উল্লেখ্য যে সর্ব প্রথম দুনিয়াতে ইহাই ছিল যিকরে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম |

২. হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর মিলাদ পাঠ ও কেয়াম :

হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম যখন আল্লাহর ঘর তৈরী করছিলেন , তখন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উক্ত ঘরের নির্মাণ কাজ কবুল করার জন্য নিজের ভবিষ্যৎ সন্তানাদিদের মুসলমান হয়ে থাকার জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করার পর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বা কেয়াম করে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আবির্ভাব আরবে ও হযরত ইসমাইলের বংশে হওয়ার জন্য এভাবে দোয়া করেছেন | "অর্থাৎ হে আমার রব ! আপনি এই আরব ভুমিতে আমার ইসমাইল আলাইহিস সালাম  বংশের মধ্যে তাদের মধ্যে হতেই সেই মহান রাসুলকে প্রেরণ করুন - যিনি আপনার  আয়াত সমুহ তাদের কাছে পাঠ করে শুনাবেন , তাদেরকে কোরআন সুন্নাহর বিশুদ্ধ জ্ঞান শিক্ষা দেবেন এবং বাহ্যিক ও আত্বিক অপবিত্রতা থেকে তাদের পবিত্র করবেন"
[সুরাহ আল বাকারা ১২৯ আয়াত ]

এখানে দেখা যায় হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম রসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪০০০ বৎসর পুর্বেই মুনাজাত আকারে তাঁর আবির্ভাব , তাঁর সারা জিন্দেগীর কর্ম চাঞ্চল্য ও মাণুষের আত্বার পরিশুদ্ধির ক্ষমতা বর্ননা করে হুজুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর মিলাদের সারাংশ পাঠ করেছেন এবং এই মুনাজাত বা মিলাদ দন্ডায়মান অবস্থাই করেছেন যা পুর্বের দুটি আয়াতের মর্মে বুঝা যায় |

৩. ইবনে কাছির রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার "বেদায়া ও নেহায়া" গ্রন্থে ২য় খন্ডে ২৬১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন " দোয়া ইব্রাহিমু আলাইহি ওয়া সাল্লামু ওয়াহুয়া কায়েমুন "অর্থাৎ উক্ত দোয়া করার সময় ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম দন্ডায়মান ছিলেন | নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেণ " আনা দুয়াওতু ইব্রাহীমা " আমি হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস
সালাম এর দোয়ার ফসল |" হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহর নিকট থেকে চেয়ে আমাদের প্রিয় নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আরবের ইসমাইল আলাইহিস সালাম উনার বংশে নিয়ে এসেছেন | এটা উপলব্ধির বিষয় |
আশেক ছাড়া এ মর্ম অন্য কেউ বুঝবে না | |
সুতরাং আমাদের মিলাদ শরিফ পাঠ ও কেয়াম হযরত ইব্রাহীম আলাহিস সালাম উনারই সুন্নাত । [ বেদায়া ও নেহায়া ২য় খন্ড ২৬১পৃষ্ঠ ]

৪. হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মিলাদ পাঠ ও কেয়াম:
নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ৫৭০ বৎসর পুর্বে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম আবির্ভাব।  তিনি তাঁর উম্মত হাওয়ারী ( বনি ইসরাইল ) কে নিয়ে নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মিলাদ শরীফ পাঠ করেছেন । উম্মতের কাছে তিনি আখেরী জামানার পয়গম্বর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম ও ছানা - ছিফত এবং আগমন বার্তা এভাবে বর্নণা করেছেন : অর্থাৎ " হে আমার প্রিয় রাসুল ! আপনি স্বরণ করে দেখুন ঐ সময়ের কথা যখন মরিয়ম আলাইহাস সালাম উনার সন্তান হযরত  ঈসা আলাইহিস সালাম বলেছেন : হে বনী ইসরাইল , আমি তোমাদের কাছে নবী হয়ে প্রেরিত হয়েছি | আমি আমার পুর্ববর্তী তওরাত কিতাবের সত্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছি এবং এমন এক মহান রাসুলের সুসংবাদ দিচ্ছি যিনি আমার পরে আগমন করবেন এবং উনার নাম হবে আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম [ সুরা আছ- ছফ ৬ আয়াত ]
হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম  উনার ভাষন সাধারনত দন্ডায়মান হতো আর এটাই ভাষনের সাধারন রীতি ও বটে |
ইবনে কাছির রহমতুল্লাহি আলাইহি বেদায়া ও নেহায়া গ্রন্থের ২য় খন্ডে ২৬১ পৃষ্ঠয় উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন : " আখাতোবা ঈসা আলাইহেস সালামু উম্মাতাহুল হাওয়ারিইনা কায়েমা" " অর্থৎ হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম দন্ডায়মান (কেয়াম) অবস্থায় তাঁর উম্মৎ হাওয়ারীদেরকে নবীজীর আগমনের সুসংবাদ দিয়ে বক্তৃতা করেছেন " | সুতরাং মিলাদ ও কিয়াম হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এর সুন্নাত এবং নবীযুগের ৫৭০ বৎসর পুর্ব হতেই |
[ বেদায়া ও নেহায়া ]