একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৮৩

 


ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছহিবে  ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

পরোপকার ও দানশীলতা

موتوا قبل تموتوا.

অর্থঃ তোমরা মৃত্যুর আগেই মৃত্যু বরণ করো”- এ হাদীছ শরীফের মিছদাক্ব হয়ে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম ইন্তিকালের আগে বার বার ইন্তিকালের স্বাদ গ্রহণ করে ইল্মে লাদুন্নী ও ছাহিবে ইসমে আযম-এ সম্মানে অভিষিক্ত হয়েছেন। এ কারণে অন্তর্দৃষ্টির গভীরতায় দুনিয়া ও দুনিয়ার প্রাচুর্যকে তুচ্ছ জ্ঞান করা উনারর দায়িমী স্বভাবে পরিণত হয়েছে। আল্লাহ পাক-উনার মাহবুব ওলীগণের বহুবিধ কাজের মধ্যে একটি মূল কাজ হলো, আল্লাহ পাক এবং তার প্রিয়তম হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি হাছিলের লক্ষ্যে অজ্ঞান ও লক্ষ্যভ্রষ্ট মানুষের উপযুক্ত মানস গঠন করা।

 আখিরাতের স্থায়িত্ব এবং নশ্বর দুনিয়ার অসারতা সম্পর্কে মানুষের ঘুমন্ত অন্তরকে জাগিয়ে তোলা, বিবেক ও অনুভূতি শাণিত করা। অমোঘ শরীয়তের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা এবং সুন্নত পালনের দায়িমী অভ্যস্ততায় আল্লাহ পাক-উনার প্রতি দায়িমী হুযূরীতে নিমগ্ন থাকায় মানুষকে অভ্যস্ত করে তোলাই ওলীআল্লাহগণের প্রকৃত কাজ। শরীয়ত পালনের অনিবার্যতা এবং উনার কল্যাণ সম্পর্কে সাইয়্যিদুস্ সাকালাইন, রহমতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

اتعجب من قوم يقادون الى الجنة بالسلاسل.

অর্থঃ তুমি সে সম্প্রদায়ের অবস্থা দেখে আশ্চর্যবোধ করছো, যাদেরকে শিকলে বেঁধে জান্নাত অভিমুখে টেনে নেয়া হচ্ছে”? তিনি আরো ইরশাদ করেছেনঃ

انتم تتهافتون على النار وانا اخذ بحجزكم.

অর্থঃ তোমরা উম্মত হয়ে পতঙ্গের মতো নিজেদেরকে দোযখের আগুনে নিক্ষেপ করছো। আর আমি তোমাদেরকে তোমাদের কোমর ধরে পিছন দিকে টেনে ধরছি (যেনো দোযখে নিক্ষেপিত না হও)।এ দুটি হাদীছ শরীফে জান্নাতী হওয়ার জন্য শরীয়ত তথা সুন্নতের অনুশাসনে মানুষের প্রতি যবরদস্তী প্রয়োগের তাৎপর্য বিধৃত হয়েছে। নূরে মুজাস্সাম, ছাহিবে মাক্বামে মাহমুদ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ক্বায়িম মক্বাম খাছ নায়িবগণও (হক্কানী ওলীআল্লাহ) জাহান্নাম অভিমুখে অগ্রসরমান মানুষের অন্তর ইছলাহ (পরিশুদ্ধ) করে জান্নাতী করার কাজে নিরন্তর ব্যাপৃত থাকেন। মানুষের অন্তর ইছলাহ করেছেন এবং উনার প্রক্রিয়া সম্পর্কে শিক্ষাদান করেছেন, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি আল্লাহ পাক ও মাখলুকের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী। আল্লাহ পাক সম্পর্কে মানুষের নিবিড়তম চিন্তা, মনোযোগ, অনুসন্ধান, অনুভব ও আনুগত্যের প্রবেশদ্বার তিনিই উন্মোচন করেছেন। তিনিই খালিক ও মাখলুকের মধ্যে পার্থক্যের পরিপূর্ণ ও বোধগম্য ব্যাখ্যাদান করেছেন। তিনিই অবুঝ ও বিপথগামী মানুষের মন ও মননে অনুভব, প্রজ্ঞা ও সমঝ-উনার উন্মেষ ঘটিয়েছেন এবং তাদের আত্মজাগৃতি ঘটিয়েছেন। এ মর্মে আল্লাহ পাক বলেন,

لقد من الله على المؤمنين اذ بعث فيهم رسولا من انفسهم يتلوا عليهم اليته ويزكيهم ويعلمهم الكتب والحكمة وان كانوا من قبل لفى ضلل مبين.

অর্থঃ- নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক ঈমানদারদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের নিকট তাদের নিজেদের মধ্য থেকে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠিয়েছেন। তিনি তাদেরকে উনারর আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনান ও তাদেরকে ইছলাহ (অন্তর  পরিশুদ্ধ) করেন এবং তাদেরকে কিতাব (শরীয়ত) ও হিকমত (প্রজ্ঞা) শিক্ষা দান করেন এবং অবশ্যই উনার পূর্বে তারা প্রকাশ্য গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল।” (সূরা আলে ইমরান-১৬৪) (অসমাপ্ত)

আবা-১৪৩

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৮২

 

ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

পরোপকার ও দানশীলতা-

সাধারণের জন্য প্রয়োজনাতিরিক্ত অর্থ-সম্পদ মোটেই উৎকৃষ্ট নয়। বরং প্রাচুর্যের অপব্যবহারে তাদের অন্যায়ের ক্ষেত্র ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হতে থাকে। তবে তাদের জীবন নির্বাহে এবং সাংসারিক প্রয়োজনে পরিমিত সহায়-সম্পদের অনিবার্য ভূমিকা সকলেরই জানা। বিপুল বৈভবেও আল্লাহ পাক-উনার প্রতি ওলীগণের আনুগত্য তুলনাহীন। উনার ভুরি পরিমাণ উদাহরণ উল্লেখ করা যায়।

ইমামুন্ ফিল উলুমিশ্ শারইয়্যাতিল মারদ্বিয়্যাতি (শরীয়তের জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইমাম), আল হুজ্জাতু (শরীয়তের দলীল), ক্ববিয়্যূল বুরহানী (শক্তিশালী দলীল প্রমাণের অধিকারী), মুজাদ্দিদুল মিল্লাত ওয়াদ্ দ্বীনি (মুসলিম মিল্লাত ও দ্বীনের সংস্কারক), ইমামে আযম, হযরত আবু হানীফা আলাইহিস সালাম-উনার বিপুল অর্থ-প্রাচুর্য ছিলো। ইন্তিকাল অবধি তিনি অকাতরে তা থেকে দান করেছেন। উনার ইন্তিকালের সময় যে নগদ অর্থ-সম্পদ ছিলো, বর্তমানের হিসাবে তাপ্রায় এগারো কোটি টাকা। (সুবহানাল্লাহ!)

আমাদের আলোচ্য ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ফখরুল আউলিয়া, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, ছাহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম-উনারও প্রচুর বিত্ত-বৈভব ছিলো। ইন্তিকালের সময় তিনি অঢেল ধন-সম্পদ রেখে যান। মুবারক জীবদ্দশায় তিনি অকাতরে দান করেছেন। উনার দেয়া অর্থ সাহায্যে অনেকের সাংসারিক খরচ নির্বাহ হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী উনার দরাজ হাত মুবারকের সাহায্যে ও নেক দুআগ্রহণে খালিছ আল্লাহওয়ালা হতে সক্ষম হয়েছে।

 মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তব ও সমাজ কল্যাণমূলক কাজের জন্য তিনি বিপুল পরিমাণ টাকা-পয়সা ও জায়গা-জমি দান করেছেন। দান-খয়রাত করলে যে আল্লাহ পাক উনার বান্দার প্রাচুর্য আরো বাড়িয়ে দেন, তিনিই তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ।

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم قال الله تعالى انفق يا ابن ادم انفق عليك.

অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ পাক বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি দান করো, আমি তোমাকে দান করবো।” (বুখারী শরীফ  ও মুসলিম শরীফ)

পরোপকার ও দান-খয়রাতের মধ্যে আল্লাহ পাক ইহলৌকিক ও পারলৌকিক অশেষ কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।

আকরামুল আউয়ালীন, ওয়াল আখিরীন, সাইয়্যিদু জামিয়ীল আম্বিয়ায়ী ওয়াল মুরসলীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে অর্থ ব্যয়ে মানুষ কটুভাষী ব্যক্তির বাক্যবাণ থেকে আপন সম্মান রক্ষা করে, তা ছদক্বা বলে গণ্য হয়।

অর্থ-বিত্ত খরচ করে আপন ইজ্জত-আবরু রক্ষা করার এ প্রক্রিয়া সাধারণ বিবেচনায় পার্থিব উপকার। কিন্তু প্রকৃত বিবেচনায় অর্থ-কড়ি ব্যয় করে নিজের ইজ্জত ও ঐতিহ্য হিফাজতের মাধ্যমে মানসিক যন্ত্রণা ও আবিলতা মুক্ত হয়ে নিরুদ্বিগ্নভাবে যিকির-ফিকির ও ইবাদত-বন্দেগীতে মনোনিবেশের অনুকূল ক্ষেত্র তৈরী হয়। তাই এমন ব্যয় নির্বাহ ছদক্বা হিসাবে গণ্য হওয়ায় উনার উপকার মূলতঃ পারলৌকিক।

মাদারজাদ ওলী, ফখরুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম অনুক্ষণ  মনে রেখেছেন, উনার বিত্ত-বৈভবের মালিক আল্লাহ পাক। আল্লাহ পাক আপন অনুগ্রহে কিছুদিনের জন্য তা উনার যিম্মায় রেখেছেন। তাই অকাতরে তিনি দান-খয়রাতে নিমগ্ন থেকেছেন। জন কল্যাণে তিনি অঢেল অর্থ-সম্পদ ব্যয় করেছেন। কার্পণ্যের ভয়াবহ পরিণতির কথা আল্লাহ পাক-উনার মাহবুব ওলীগণ ব্যতীত আর কে ভালো জানে? (অসমাপ্ত)

আবা-১৪২

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৮১

 


ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

পরোপকার ও দানশীলতা-

কোন অভাবগ্রস্ত মানুষ এবং সায়েলকেই রহমাতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনোই ফেরত দেননি। এমনকি অনেক সময় ধার-কর্জ করেও অনবরত দান করেছেন। ফখরুল আউলিয়া, কুতুবুয্ যামান, হযরতুল আল্লামা, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম এ সুন্নত পালনে অর্জিত ধন-সম্পদ ব্যয়ে আল্লাহ পাক এবং প্রিয়তম হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সন্তুষ্টি হাছিলে নিমগ্ন থেকেছেন।

হযরত হারেসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একদিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমীপে বিনীত নিবেদন করলেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি যথার্থ মুমিন হতে পেরেছি বলে মনে করি।এতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে জানতে চাইলেনঃ উনার প্রমাণ কী?’ হযরত হারেসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সবিনয় জানালেনঃ দুনিয়ার মোহ আমার অন্তর থেকে এমনভাবে পলায়ন করেছে যে, আমার দৃষ্টিতে স্বর্ণ ও রৌপ্যের মধ্যে কোন পার্থক্য সূচিত হয়না। উভয় বস্তুই আমার কাছে সমান তুচ্ছ। জান্নাত এবং জাহান্নাম আমি দিব্য চোখে দেখতে পাই।

 এ কথা শুনে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ঈমানের যে সোপানে তোমার উপনীত হওয়া প্রয়োজন ছিল, সে সোপানে তুমি উপনীত হয়েছ। এখন সযত্নে এ ঈমানকে হিফাজত করো।

ইতোপূর্বে বর্ণিত হাদীছ শরীফ থেকে জানা গেছে, অভাব মোচনের মতো পরিমিত ধন-সম্পদ না থাকলে সঠিক ঈমান রক্ষার ক্ষেত্রে কুফরী হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। অভাবের তীব্রতা সমুহ বিনাশ সাধন করতে পারে।

 পরিমিত সম্পদের অভাবে আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সন্তুষ্টি হাছিলের প্রশস্ত পথ বিপদ সংকুল হয়ে উঠাও বিচিত্র নয়। যেমন, অর্থ-সম্পদের অভাবে দান-খয়রাত, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি নেক কাজ সমাধা করা যায়না এবং সম্পদরূপ নিয়ামতের জন্য আল্লাহ পাক-উনার শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে অশেষ পূণ্যলাভে মাহরূম থাকতে হয়। তাই প্রয়োজন পূরণের পরিমাণ সম্পদ থাকা বাঞ্ছনীয়। সম্পদের বহুবিধ অপকার সত্ত্বেও দুনিয়ায় প্রায় সর্বক্ষেত্রে উনার কল্যাণ অনস্বীকার্য। আল্লাহ পাক বলেছেনঃ

ولاتنس نصيبك من الدنيا.

অর্থঃ- দুনিয়া থেকে তোমাদের প্রাপ্য অংশ গ্রহণে ভুল করোনা।” (সূরা ক্বাছাছ/৭৭) অনেক জরুরী বিষয়ে এবং অসংখ্য মুবাহ কাজে অর্থ-বিত্ত ব্যয়ে এ আয়াত শরীফের মিছদাক হওয়ার সুযোগ অবারিত।

কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছেঃ

يايها الذين امنوا لا تلهكم امو الكم ولا اولادكم عن ذكر الله ومن يفعل ذلك فاولئك هم الخسرون.

অর্থঃ- হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ধন-দৌলত এবং সন্তান-সন্তুতি যেনো তোমাদেরকে আল্লাহ পাক-উনার যিকির থেকে বিরত না রাখে। যারা বিরত থাকবে, নিশ্চয়ই তারা ক্ষতিগ্রস্তের অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা মুনাফিকূন/৯)

এ আয়াত শরীফে ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততির নিন্দা করা হয়েছে। তবে ধন-দৌলত এবং সন্তান আধিক্যের সময়ও যেনো মানুষ আল্লাহ পাক-উনার খালিছ স্মরণ থেকে গাফিল না হয়, মূলতঃ সে সম্পর্কেই এ আয়াত শরীফে সাবধান করা হয়েছে। একমাত্র মাহবুব ওলীগণ ব্যতীত সম্পদ ও বৈভবে নির্লিপ্ত থেকে পরিপূর্ণ আনুগত্যে আল্লাহ পাক-উনার শুকরিয়া আদায় এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সন্তুষ্টি হাছিল করা অন্য কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। এ কারণে কেবলমাত্র ওলীআল্লাহগণের জন্যই সম্পদ উৎকৃষ্ট। অন্য কারো জন্য নয়। (অসমাপ্ত)

আবা-১৪১

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৮০

 


ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইসমে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদুর রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুয যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 পরোপকার ও দানশীলতা-

মানুষ যে পরিমাণ দান করতে সক্ষম, তা করতে ত্রুটি করলে, সে ত্রটিকেই শরীয়ত কৃপণতা আখ্যা দেয়। অর্থাৎ, সক্ষম হয়েও দান করার মতো সম্পদ দান করতে যে ব্যক্তি কুণ্ঠিত, তাকেই কৃপণ নামে অভিহিত করা হয়। শরীয়তের নির্দেশ, বিবেকের ফায়ছালা এবং মানবতাবোধে যতোটুকু দান-খয়রাত করা ও যাকাত দেয়া অত্যাবশ্যক, ততোটুকু করতে পারলে ধর্ম বিধানে সে দানশীল-উনার পর্যায়ে পড়ে। বিবেক ও মানবতাবোধের সংমিশ্রণে শরীয়তের নির্দেশ পালনের স্বাভাবিকতায় সে ব্যক্তি দায়মুক্তি লাভ করে। সওয়াব ও আখিরাতের কল্যাণ লাভের মহৎ লক্ষ্যেই মানুষ শরীয়ত নির্দেশিত দান করতে উদ্বুদ্ধ হয়। তবে আখিরাতের কল্যাণ ও সওয়াব লাভের বশবর্তী না হয়ে কেবল মহান আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, মাশুকে মাওলা, ছাহিবে মাকামে মাহমুদ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি প্রগাঢ় মুহব্বতে আপন স্বার্থ ও সুবিধা ত্যাগে দান না করতে পারলে প্রকৃত দানশীলতার মাকাম অর্জিত হয় না।

গায়রুল্লাহ বিবর্জিত অনাবিল অন্তরে দানশীলতা এমন দুর্লভ গুণ অর্জন করা সাধারণের কাজ নয়। এখানে দানের পরিমাণগত বিষয়টি বিবেচ্য নয়। যাবিবেচ্য তা হলো, মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ সন্তুষ্টি লাভে গুণগত মান রক্ষায় অমলিন অন্তরের (ইসলাহপ্রাপ্ত অন্তর) উৎকর্ষতা। কোন সায়েলকে বঞ্চিত না করে তার হাতে অর্থ-সম্পদ তুলে দিলে এবং জাগতিক প্রয়োজনে ব্যক্তি ও ব্যষ্টির কল্যাণে সম্পদ ব্যয় করলেই দানশীল হওয়া যায় না। কাজটি অত্যন্ত কঠিন। অন্তর পরিপূর্ণ ইসলাহ না হওয়া পর্যন্ত যাকাত ও দান-খয়রাতের রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। তবে জগৎ-সংসার পরিপালন ব্যবস্থায় ধনাঢ্য ব্যক্তিদের রিয়াযুক্ত (যাদের অন্তর মলিন) দান-খয়রাত ও যাকাত প্রদানে অভাবী মানুষের দুঃখ মোচন হয়। এ ধরণের ধন-সম্পদ আদান-প্রদানে দান গ্রহণকারীর কোন দোষ হয়না। কারণ, সাধারণত দাতার রিয়ার সঙ্গে সে আদৌ সংশ্লিষ্ট থাকে না। মহান আল্লাহ পাক উনার পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি বিধানে এমন দানশীলতার গুণে গুণান্বিত ছিলেন মাদারজাদ ওলী, কুতুবুয যামান, আশিকে নবী, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম।

দান-খয়রাতের জন্য সঙ্গতি থাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ, ধন-সম্পদ অধিকারে থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ধন-সম্পদ সকলের জন্যই কল্যাণকর নয়। দুনিয়ার ধন-সম্পদ কেবলমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার মাহবুব ওলীগণ উনাদের জন্যই উৎকৃষ্ট। কারণ, উনারা সম্যকরূপে অবহিত যে, মহান আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য যতোটুকু প্রয়োজন, তার বেশি সম্পদ হলাহল তুল্য। অভাব মোচনের চেয়ে অতি বেশি সম্পদের মধ্যে বিনাশ নিহিত থাকে। সম্পদের প্রতি মোহগ্রস্ততার অপকার সম্পর্কে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন- تيس عبد الدينار والدرهم. অর্থ- স্বর্ণ ও রৌপ্যের গোলামের জন্য আফসুস।অর্থাৎ ধন-সম্পদের গোলাম ঊর্ধ্বপদ ও অধোমস্তক বিশিষ্ট হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি যে বিষয়ের প্রতি আসক্ত, সে ব্যক্তি সে বিষয়েরই গোলাম নামে অভিহিত হয়।

অপরদিকে অভাব মোচনের কম পরিমাণ সম্পদ থেকে কুফরীর গন্ধ বের হয়। তীব্র অভাব-অনটনের ভয়াবহতা সম্পর্কে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

كاد الفقر ان يكون كفرا.

অর্থ: অত্যধিক অসচ্ছলতা কুফরীর উপক্রম ঘটায়।” (ত্ববারানী) উম্মতের সতর্কতার জন্য তাই ইহকাল ও পরকালের যাবতীয় সম্পদ ও প্রাচুর্য (নিয়ামত) বণ্টনের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে ইখতিয়ার (মালিকানা) প্রাপ্ত মাশুকে মাওলা, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এভাবে সবিনয় প্রার্থনা জানিয়েছেন- হে পরওয়ারদিগার মহান আল্লাহ পাক! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তান-সন্ততিকে অভাব মোচনের পরিমাণ জীবিকা দান করুন।

দুনিয়া এবং দুনিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয় কর্মের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার মাহবুব ওলীগণ পরিপূর্ণরূপে নিস্পৃহ। সম্পদের মোহ উনাদের অন্তরকে আচ্ছন্ন করে না এবং সম্পদহীনতাও উনাদের ধৈর্যহানি ঘটায় না, পেরেশান করে না। এ কঠিন দুটি অবস্থাকেই ওলীআল্লাহগণ উনারা তুচ্ছ জ্ঞান করেন এবং দৃঢ়তার সঙ্গে পথ অতিক্রম করেন। যেমন বিপুল বিত্ত ও বৈভব অধিকারে থাকা সত্ত্বেও মাদারজাদ ওলী, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম তিনি সম্পদের প্রতি ছিলেন বিমুখ। (অসমাপ্ত)

আবা-১৪০

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৭৯

 


ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুযযামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

পরোপকার ও দানশীলতা-

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছেঃ সর্বদা দানশীল মানুষের অপরাধ মার্জনা করো। কারণ, দানশীল মানুষের কোন প্রকার দুঃখকষ্ট হলে আল্লাহ পাক উনাদের সহায় হয়ে থাকেন।

উপরোক্ত হাদীছ শরীফে উল্লিখিত দানশীলতা ও সৎ স্বভাবের পরিপূর্ণ মিছদাক ছিলেন ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ দাওয়াত, আফজালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশ্ফ ও কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছাহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, আশিকে নবী, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম। অতুলনীয় কোমলান্তকরণময়তার জন্য উনার ছিল আকাশচুম্বী প্রসিদ্ধি। যে সব কারণে তিনি আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার একান্ত মাহবুব হয়েছেন, দানশীলতা উনার অন্যতম। এই কালজয়ী ওলীআল্লাহ মুবারক স্বভাব-সহজতায় বদান্যতা, অপরের প্রতি ইহসান ও সহানুভূতি প্রদর্শনে এতো উঁচু মাকামে উপনীত ছিলেন, এসব দেখে শত্রুপক্ষেরও বাকরুদ্ধ হয়েছে এবং তারা মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছে।

অন্যের অভাব ও প্রয়োজনকে নিজের অভাব ও প্রয়োজনের উপর প্রাধান্য দিতে তিনি ছিলেন অকুণ্ঠচিত্ত। নিজের প্রয়োজন অপূর্ণ রেখে তিনি অপরের প্রয়োজন পূরণে তৎপর থেকেছেন আজীবন। এটি উনার বিরল গুণ। আল্লাহ পাক-উনার মাহবুব ওলী ছাড়া অন্য কারো পক্ষে এ গুণ বৈশিষ্ট্যের মাকাম অর্জনের আশা কেবল দুরাশা মাত্র। কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছেঃ 

ويؤثرون على النفسهم ولوكان بهم خصاصة.

অর্থঃ- নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও তারা অন্যের অভাবকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।” (সূরা হাশর/৯)

উপরোক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় আল্লাহ পাক-উনার প্রিয়তম হাবীব, আকরামুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন দ্রব্য পেয়ে যায়, যাতার বাঞ্ছিত, অতঃপর আপন আকাঙ্খা অপূর্ণ রেখে বাঞ্ছিত দ্রব্যটি সন্তুষ্ট চিত্তে সে অপরের প্রয়োজনে দান করে ফেলে, তবে আল্লাহ পাক তার যাবতীয় পাপ মার্জনা করেন।দানশীলতার প্রশংসায় হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ রয়েছেঃ

 

السخى حبيب الله ولو كان فاسقا البخيل عدو الله ولو كان عابدا.

অর্থঃ- দানশীল ব্যক্তি আল্লাহ পাক-উনার হাবীব (বন্ধু), যদিও সে ফাসিক হয় এবং কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহ পাক-উনার শত্রু, যদিও সে ইবাদত গুজার বান্দা হয়।” (লুগাতুল হাদীছ) দানশীলতার অপরিসীম ফযীলত সত্ত্বেও মাহবুব ওলীআল্লাহগণ ব্যতীত অন্যরা সমর্থবান হলেও অন্তরের কদর্যতায় লোভ, লালসা ও প্রবৃত্তি চরিতার্থে তারা কৃপণতাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।

কার্পণ্যের মূল কারণ হলো, ধন-সম্পদের প্রতি প্রবল আকর্ষণ। মানুষ যে বিষয় মুহব্বত করে সে লক্ষ্যেই ছুটে চলে। এ চলায় তার বিরাম থাকে না। প্রাচুর্য ও বৈভবের মোহ মানুষের মজ্জাগত। কবরে না যাওয়া পর্যন্ত উনার মোহমুক্তি ঘটে না। ইবলিসের কুমন্ত্রণায় দারিদ্র্যের দুর্ভাবনায় মানুষ ক্লিষ্ট হয়। এ মর্মে আল্লাহ পাক বলেনঃ

الشيطن يعدكم الفقر ويامركم بالفحشاء.

অর্থঃ- শয়তান তোমাদেরকে অভাব-অনটনের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতায় উৎসাহ দেয়।” (সূরা বাক্বারা/২৬৮)

নশ্বর জীবনে যতোটুকু প্রয়োজন, তার বেশী প্রাপ্তির লালসাই শরীয়তের অমোঘ বিধান লঙ্ঘনের ক্ষেত্র তৈরী করে এবং কার্পণ্যের পথ প্রশস্ত করে। দুনিয়ার দুর্বার আসক্তিতে যার যতো বেশী দূরাশা ও দুর্লোভ, স্বভাবগত কারণে সে ততো বেশী কৃপণ। আখিরাতের প্রতি অমনোযোগিতা এবং অন্তরের সংকীর্ণতায় প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ সংগ্রহ ও সংরক্ষণে নিশিদিন সে ব্যাপৃত থাকে।

অসমাপ্ত

আবা-১৩৯

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৭৮

 


ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে- একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

সুন্নত মুবারক অনুশীলনসহ ইসলাম ধর্ম  পালনে মানুষকে অভ্যস্ত করে  তোলায় নিরলস কোশেশ সুন্নত পরিপন্থী কোন কথা, আমল, আচরণ ও অনুভবের সঙ্গে তিনি কখনো আপোষ করেননি। আমরণ তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সুন্নতের উপর দায়িম-ক্বায়িম থেকে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাপালন করেছেন। দৃঢ়চেতা, তেজোদ্দীপ্ত, ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যে অনুপম, সদাচার ও মধুর বাক্যালাপে অতুলনীয়, একনিষ্ঠ আশিকে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আল্লাহ পাক-উনার মাহবুব এই মাদারজাদ ওলীর সান্নিধ্যে এসে মানুষ দ্বীনের ছহীহ সমঝ্ লাভে সক্ষম হয়েছে এবং সুন্নত পালনে অভ্যস্ত হয়েছে। সূক্ষ্মদর্শী এই মহান ওলীআল্লাহ মানুষের অভ্যন্তরীণ ত্রুটি আবিষ্কার করেছেন অবলীলায় এবং তানিরবধি সংশোধন (ইছলাহ্) করেছেন সযত্নে প্রয়াসে।

 মাহবুব ওলীআল্লাহগণের মতো তিনিও জানতেন, নির্জন সময়ই প্রকৃত সময় এবং বর্তমান সময়ই মূল্যবান সময়। মূল্যবান সময় ব্যয়ে মহামূল্যবান নিয়ামত (আল্লাহ পাক-উনার আরো নিগূঢ় নৈকট্য) হাছিলের লক্ষ্যে অন্যসব ওলীআল্লাহ-উনার মতো তিনিও নিরন্তর নিমগ্ন রয়েছেন। স্বভাব গুণে আপন ঘরে পরবাস”-এ বিশ্বাসী ও অভ্যস্ত হয়েও মানুষের দুঃখ-দুর্দশা প্রচলিত বদ্ রুসম, বিশুদ্ধ ঈমান, আক্বীদা, ইল্ম, আমল-উনার প্রতি অনীহা এবং বিদ্য়াত-উনার প্রচার-প্রসার দেখে তিনি দুঃখ পেয়েছেন। এসব অনাচার নির্মূলে তিনি আজীবন জিহাদে নিয়োজিত থেকেছেন।

 এ জিহাদ তিনি করেছেন কথায়, কাজে, আমলে এবং প্রয়োজনে কখনো জামালী অথবা জালালী ব্যঞ্জনায়। উনার প্রত্যয়ী ব্যক্তিত্বের প্রভা অগণিত মানুষের অন্তর স্পর্শ করেছে। উনার মুবারক ছোহ্বতে মানুষ ইসলাম ধর্ম পালনে মনোযোগী ও অভ্যস্ত হয়েছে। যে অনন্য বৈশিষ্ট্যগুণে তিনি মহিমান্বিত হয়েছেন তাহলো সুন্নতের প্রতি মুহব্বত, দায়িমীভাবে সুন্নত পালন এবং এতে মানুষের মন ও মননকে আন্দোলিত করে তাদেরকে আমলে নিয়োজিত করে তোলা। সমস্যা ও সংকটে তিনি বার বার রুজু হয়েছেন খাজিনাতুর রহমত, রউফুর রহীম, রহমতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আবেহায়াতের দিকে। অর্থাৎ ওমা র্আসালনাকা ইল্লা রহমাতাল্লিল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আবেহায়াতের সঙ্গে তিনি অনুক্ষণ সম্পৃক্ত রয়েছেন।

 মুবারক সম্পর্কের নিরবচ্ছিন্নতায় অনবরত নিয়ামত সমৃদ্ধ হয়ে বিশুদ্ধ ঈমান ও আক্বীদায় ইসলাম ধর্ম পালনে উদ্বুদ্ধ করণে তিনি সমাজ-মানুষের শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।  পরোপকার ও দানশীলতা দানশীলতার ফযীলত অপরিসীম। আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে দানশীলতার প্রশংসা করেছেন এবং কার্পণ্যের নিন্দা করেছেন। দানশীলতা এমন এক মহৎ গুণ, যা মানুষকে আল্লাহ পাক-উনার নৈকট্য সোপানে উপনীত করে। পক্ষান্তরে কার্পণ্য এমন এক মন্দ দোষ, যামানুষকে আল্লাহ পাক-উনার রোষানলে উপনীত করে এবং কার্পণ্যের চর্চাকারী পরিণতিতে জাহান্নামের অবধারিত বাসিন্দা হয়। কার্পণ্যের নিন্দায় আল্লাহ পাক বলেনঃ

 ومن يبخل فانما يبخل عن نفسه.

 অর্থঃ- যে ব্যক্তি কৃপণতা করে, সে নিজের নফসের সঙ্গেই কৃপণতা করে।” (সূরা মুহম্মদ/৩৮)  দানশীলতার প্রশংসায় আল্লাহ পাক আরো বলেনঃ

 ومن يوق شح نفسه فاولئك هم المفلحون.

 অর্থঃ- যারা কৃপণ স্বভাব হতে মুক্ত রয়েছে, তারাই কামিয়াবী লাভ করবে।সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ পাক দানশীল ও সৎস্বভাব বিশিষ্ট মানুষ ভিন্ন অন্য কাকেও ওলী মনোনীত করেননি।তিনি আরো বলেনঃ মানুষের দুটি স্বভাবকে আল্লাহ পাক পছন্দ করেন। তার একটি সাখাওয়াত, অর্থাৎ দানশীলতা এবং দ্বিতীয়টি সৎস্বভাব। অনুরূপভাবে মানুষের দুটি দোষ আল্লাহ তায়ালা খুবই ঘৃণা করেন। তার একটি বখিলী, অর্থাৎ কৃপণতা এবং অন্যটি মন্দ স্বভাব।  (অসমাপ্ত)

আবা-১৩৮