মসজিদসমূহ উত্তমভাবে তাযীম - তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করা ফরয

পিডিএফ লিংক - https://drive.google.com/open?id=1D-Pfe0FszFMk_ZeKWc7GmnmJMt3UcE9u



কুল-কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত
অনন্তকালব্যাপী জারীকৃত মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ
উনার সুমহান সম্মানার্থে প্রকাশিত

بِسْمِ اللهِ الرَّحْـمٰنِ الرَّحِيْمِ.
فِـىْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ يُسَبِّحُ لَهٗ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ মুবারক করেন- সম্মান করার জন্য এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার জন্য অর্থাৎ না ভাঙ্গার জন্য, ঐ সকল মুবারক ঘরসমূহ উনাদেরকে যে সকল মুবারক ঘরসমূহে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক স্মরণ করা হয় ও তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করা হয় সকাল-সন্ধ্যায়।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নূর শরীফ : সম্মানিত  ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬)

اَلْفَتْوٰى لِلْمُجَدِّدِ الْاَعْظَمِ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِـى الْـمَسْجِدِ
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ফতওয়া মুবারক

সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করা ফরয



গবেষণা কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ


প্রকাশনায় :
গবেষণা কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
৫/১, আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা-১২১৭
ফোন (পিএবিএক্স) : ৯৩৩৮৭৮৭, ৮৩৩৩৯২৭
মোবাইল : ০১৭১১-২৬৪৬৯৪, ০১৭১১-২৩৮৪৪৭, ০১৭১২-৬৪৮৪৫৩
ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৯৩৩৮৭৮৮
ওয়েবসাইট : uswatun-hasanah.net; al-ihsan.net


প্রকাশকাল :
প্রথম প্রকাশ :
পবিত্র যিলক্বদ শরীফ               ১৪৩৯ হিজরী সন
ছানী                                 ১৩৮৬ শামসী সন

প্রাপ্তিস্থান :
মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ (বিক্রয়কেন্দ্র)
৫/১, আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা-১২১৭
ফোন (পিএবিএক্স) : ৪৮৩১৪৮৪৮ (বর্ধিত ১২৫)
মোবাইল : ০১৭১০-৩২০৪১২, ০১৭১৭০-২২৬৬৬৪

কম্পিউটার অলঙ্করণ :
মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ (কম্পিউটার বিভাগ)
৫/১, আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা-১২১৭
ফোন (পিএবিএক্স) : ৪৮৩১৪৮৪৮ (বর্ধিত ১২১)
মোবাইল : ০১৭১২-৮৫৫৩৪৫

মুদ্রণে :
মুহম্মদিয়া বুক বাইন্ডিং অ্যান্ড প্রিন্টিং প্রেস
১৩/২, গোলাপবাগ, ঢাকা। ফোন : ৭৫৪৭৭৯৬
মোবাইল : ০১৭১১-১৭৮৬৮৪, ০১৮৩৪-৯৬২১৬৮


হাদিয়া : ৪০ টাকা
اَلْـمُؤَسِّسُ وَالْـمُشْرِفُ لِـمَرْكَزِ الْبَحْثِ مُـحَمَّدِيَّةٍ جَامِعَةٍ شَرِيْفٍ وَّالْـمَجَلَّةِ الشَّهْرِيَّةِ الْبَيِّنَاتِ وَالْـجَرِيْدَةِ الْيَوْمِيَّةِ الْاِحْسَانِ- خَلِيْفَةُ اللهِ، خَلِيْفَةُ رَسُوْلِ اللهِ، اِمَامُ الشَّرِيْعَةِ وَالطَّرِيْقَةِ، قُطْبُ الْعَالَـمِ، اَلْغَوْثُ الْاَعْظَمُ، سُلْطَانُ الْاَوْلِيَاءِ، مَـخْزَنُ الْـمَعْرِفَةِ، خَزِيْنَةُ الرَّحْمَةِ، مُعِيْنُ الْـمِلَّةِ، لِسَانُ الْاُمَّةِ، تَاجُ الْـمُفَسِّرِيْنَ، رَئِيْسُ الْـمُحَدِّثِيْنَ، فَخْرُ الْفُقَهَاءِ، حَاكِمُ الْـحَدِيْثِ، حُجَّةُ الْاِسْلَامِ، سَيِّدُ الْـمُجْتَهِدِيْنَ، مُحْىُ السُّنَّةِ، مَاحِىُ الْبِدْعَةِ، صَاحِبُ الْاِلْـهَامِ، رَسُوْلِ نُـمَا، سَيِّدُ الْاَوْلِيَاءِ، سُلْطَانُ الْعَارِفِيْنَ، اِمَامُ الصِّدِّيْقِيْنَ، سَيِّدُ الْـمُجَدِّدِيْنَ، سَيِّدُ الْـخُلَفَاءِ، اَبُو الْـخُلَفَاءِ، اِمَامُ الْاَئِمَّةِ، اَلْـمُجَدِّدُ الْاَعْظَمُ، قَيُّوْمُ الزَّمَانِ، اَلْـجَبَّارِىُّ الْاَوَّلُ، اَلْقَوِىُّ الْاَوَّلُ، سُلْطَانٌ نَّصِيْرٌ، حَبِيْبُ اللهِ، جَامِعُ الْاَلْقَابِ، اَلْـمُطَهَّرُ، اَلْـمُطَهِّرُ، اَهْلُ بَيْتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مَوْلَانَا سَيِّدُنَا اَلْاِمَامُ
خَلِيْفَةُ اللهِ حَضْرَتْ اَلسَّفَّاحُ عَلَيْهِ الصَّلـٰوةُ وَالسَّلَامُ
اَلْـحَسَنِىُّ وَالْـحُسَيْنِىُّ وَالْقُرَيْشِىُّ وَالْـحَنَفِىُّ وَالْقَادِرِىُّ وَالْچِشْتِىُّ وَالنَّقْشَبَنْدِىُّ وَالْـمُجَدِّدِىُّ وَالْـمُحَمَّدِىُّ
رَاجَارْبَاغُ شَرِيْفٌ، دَاكَا
গবেষণা কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ এবং দৈনিক আল ইহসান শরীফ উনাদের প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক- খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরী‘য়াহ ওয়াত তরীক্বাহ, কুতুবুল ‘আলম, আল গওছুল আ’যম, সুলত্বানুল আওলিয়া, মাখযানুল মা’রিফাহ, খযীনাতুর রহমাহ, মুঈনুল মিল্লাহ, লিসানুল উম্মাহ, তাজুল মুফাসসিরীন, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, ফখরুল ফুক্বাহা, হাকীমুল হাদীছ, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, মুহইস সুন্নাহ, মাহিউল বিদয়াহ, ছাহিবুল ইলহাম, রসূলে নুমা, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, সুলত্বানুল ‘আরিফীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, সাইয়্যিদুল মুজাদ্দিদীন, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, ইমামুল আইম্মাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ক্বইয়ূমুয যামান, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামি‘উল আলক্বাব, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা সাইয়্যিদুনা ইমাম -
খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম
আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাঈশী ওয়াল হানাফী ওয়াল ক্বাদিরী ওয়াল চীশতী ওয়ান নকশবন্দী ওয়াল মুজাদ্দিদী ওয়াল মুহম্মদী, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা।

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ক্বওল শরীফ
نَـحْمَدُهٗ وَنُصَلِّىْ وَنُسَلِّـمُ عَلـٰى رَسُوْلِهِ الْكَرِيْـمِ وَعَلـٰى حَضْرَتْ وَالِدَىْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلـٰى حَضْرَتْ اُمَّهَاتِ الْـمُؤْمِنِيْنَ عَلَيْهِنَّ السَّلَامُ وَعَلـٰى حَضْرَتْ اَهْلِ بَيْتِهِ الْكَرِيْـمِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ. اَمَّا بَعْدُ:
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَاَنَّ الْمَسٰجِدَ لِلّٰهِ.
অর্থ: “আর নিশ্চয়ই সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। অর্থাৎ সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ও পবিত্র ঘর মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও সম্মানিত ও পবিত্র সূরা জিন শরীফ : সম্মানিত ও সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮)
আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
اَلْـمَسْجِدُ بَيْتُ اللهِ وَالْـمَدْرَسَةُ بَيْـتِـىْ.
অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ও পবিত্র ঘর মুবারক আর সম্মানিত ও পবিত্র মাদ্রাসা মুবারক আমার সম্মানিত ও পবিত্র ঘর মুবারক।” সুবহানাল্লাহ!
¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فِـىْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ يُسَبِّحُ لَهٗ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ মুবারক করেন- সম্মান করার জন্য এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার জন্য অর্থাৎ না ভাঙ্গার জন্য, ঐ সকল মুবারক ঘরসমূহ উনাদেরকে যে সকল মুবারক ঘরসমূহে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক স্মরণ করা হয় ও তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করা হয় সকাল-সন্ধ্যায়।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নূর শরীফ : সম্মানিত ও সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬)
আর اَذِنَ اللَّهُ اَنْ تُرْفَعَ উনার ব্যাখ্যায় উল্লেখ রয়েছে,
اَمَرَ اللهُ اَنْ تُبْنٰى
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করার জন্য এবং না ভেঙ্গে উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার জন্য সম্মানিত আদেশ মুবারক করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে নীশপূরী শরীফ ১/৭৬৫)
আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِبْنُوا الْمَسَاجِدَ
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ নির্মাণ করো। অর্থাৎ ভাঙ্গার তো প্রশ্নই আসে না বরং আরো বেশী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ নির্মাণ করতে হবে।” সুবহানাল্লাহ! (মুছান্নাফে আবী শায়বাহ শরীফ ১/২৭৪, আস সুনানুল কুবরাহ লিলবাইহাক্বী ২/৬১৫)
কাজেই, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করা অর্থাৎ সার্বিকভাবে হিফাজত করা ও হিফাযত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা ফরয। সুবহানাল্লাহ! আর এর বিপরীত অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার মানহানী করা ও করার সহযোগীতা করা কাট্টা কুফরী ও হারাম এবং চির জাহান্নামী হওয়ার কারণ। না‘ঊযুবিল্লাহ! কেননা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক। তাই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উনাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতিই সম্মান প্রদর্শন। যার প্রতিদান জান্নাত। সুবহানাল্লাহ! আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহের প্রতি অসম্মান বা বেয়াদবী করা প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতিই বেয়াদবী করার শামিল। যার পরিণাম জাহান্নাম। নাউযুবিল্লাহ!
তাই সমস্ত মুসলমান উনাদের জন্য ফরযে আইন হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করা অর্থাৎ সার্বিকভাবে হিফাজত করা ও হিফাযত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং বেশি বেশি করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করা। সুবহানাল্লাহ! আর যারা বিভিন্ন অজুহাদ দেখিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভেঙ্গে যাচ্ছে, ভাঙ্গার কোশেশ করে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং শক্ত প্রতিবাদ করা। সুবহানাল্লাহ!
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সবাইকে সেই তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
সুওয়াল: সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দেশে রাস্তা নির্মাণের দোহাই দিয়ে, সৌন্দর্য বর্ধনের কথা বলে ইত্যাদি বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ! এ ব্যাপারে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সঠিক ফায়ছালা কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: প্রাথমিকভাবে এবং সংক্ষিপ্তাকারে সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম অর্থাৎ সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার ফতওয়া হচ্ছেন পবিত্র ও সম্মানিত মসজিদসমূহ উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করা অর্থাৎ সার্বিকভাবে হিফাজত করা ও হিফাযত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা ফরয। এর বিপরীত অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার মানহানী করা ও করার সহযোগীতা করা কাট্টা কুফরী ও হারাম এবং জাহান্নামী হওয়ার কারণ। কেননা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ঘর। তাই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উনাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতিই সম্মান প্রদর্শন। যার প্রতিদান জান্নাত। সুবহানাল্লাহ! আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহের প্রতি অসম্মান বা বেয়াদবী করা প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতিই বেয়াদবী করার শামিল। যার পরিণাম জাহান্নাম। নাউযুবিল্লাহ! অর্থাৎ, ওয়াকফকৃত স্থানে পবিত্র ও সম্মানিত মসজিদ নির্মিত হলে কিয়ামত পর্যন্ত ভাঙ্গা জায়িয নেই। এছাড়াও পবিত্র ও সম্মানিত মসজিদসমূহ উনাদের জন্য ওয়াকফকৃত সম্পত্তিও কিয়ামত পর্যন্ত অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা জায়িয নেই।
মসজিদ শব্দের আভিধানিক অর্থ সিজদার স্থান। আর পারিভাষিক অর্থ যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার উদ্দেশ্যে নামায অর্থাৎ রুকূ, সিজদা, ই’তিকাফ প্রভৃতি ইবাদতের নির্দিষ্ট স্থানকে মসজিদ বলা হয়।
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
(দলীল নং: ১)
وَاَنَّ الْمَسٰجِدَ لِلّٰهِ.
অর্থ: “আর নিশ্চয়ই সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। অর্থাৎ সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ও পবিত্র ঘর মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও সম্মানিত ও পবিত্র সূরা জিন শরীফ : সম্মানিত ও সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮)
আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
(২-৪)
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْمَسَاجِدُ بُيُوْتُ اللهِ.
অর্থ: “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ও পবিত্র ঘর মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (শু‘য়াবুল ঈমান শরীফ ৪/৩৮০, জামিউল আহাদীছ লিস সুয়ূত্বী ২২/১৫৪, কানজুল উম্মাল ৭/৫৭৯)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
(৫-৮)
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ بُيُوْتَ اللهِ فِـى الْاَرْضِ الْمَسَاجِدُ وَاِنَّ حَقًّا عَلَى اللهِ اَنْ يُّكْرِمَ مَنْ زَارَهٗ فِيْهَا.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই দুনিয়ার যমীনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ও পবিত্র ঘর মুবারক। যাঁরা ওই সকল সম্মানিত ও পবিত্র ঘর মুবারক উনাদের মধ্যে প্রবেশ করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে সম্মানিত করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ৯/৩, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/৩২, জামি‘উল আহাদীছ লিস সূয়ূত্বী ৮/৪৮০, আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ ৩/৪৬৬ ইত্যাদি)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
(৯-১২)
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُمَا قَالَ اَلْمَسَاجِدُ بُيُوْتُ اللهِ فِـى الْاَرْضِ تُضِىْءُ لِاَهْلِ السَّمَاءِ كَمَا تُضِىْءُ نُـجُوْمُ السَّمَاءِ لِاَهْلِ الْاَرْضِ.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছেন দুনিয়ার যমীনে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ও পবিত্র ঘর মুবারক।’ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ আসমানবাসী উনাদেরকে এমনভাবে আলোকিত করে থাকেন, যেমনিভাবে আসমানের তারকারাজি যমীনবাসী উনাদেরকে আলোকিত করে থাকে।” সুবহানাল্লাহ! (শু‘য়াবুল ঈমান লিলবাইহাক্বী ৪/৩৮০, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১৫, জামি‘উল আহাদীছ ৮/৩৩৮, আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ ৩/৪৬৭ ইত্যাদি)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
(১৩)
اَلْـمَسْجِدُ بَيْتُ اللهِ وَالْـمَدْرَسَةُ بَيْـتِـىْ.
অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ও পবিত্র ঘর মুবারক আর সম্মানিত ও পবিত্র মাদ্রাসা মুবারক আমার সম্মানিত ও পবিত্র ঘর মুবারক।” সুবহানাল্লাহ!
কাজেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর হওয়ার কারণে উনাদের প্রতি সম্মান ও আদব রক্ষা সম্পর্কে অনেক সম্মানিত ও পবিত্র আদেশ ও নির্দেশ মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে।

প্রথম নির্দেশ মুবারক হচ্ছেন, উনাদের মধ্যে উচ্চস্বরে কথা বলা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
(১৪-২২)
عَنْ حَضْرَتْ اَلسَّائِبِ بْنِ يَزِيْدَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ كُنْتُ قَائِمًا فِى الْمَسْجِدِ فَحَصَبَنِـىْ رَجُلٌ فَنَظَرْتُ فَاِذَا حَضْرَتْ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَالَ اذْهَبْ فَأْتِنِـىْ بِـهٰذَيْنِ‏. فَجِئْتُهٗ بِـهِمَا‏. قَالَ مَنْ اَنْتُمَا اَوْ مِنْ اَيْنَ اَنْتُمَا قَالَا مِنْ اَهْلِ الطَّائِفِ‏. قَالَ لَوْ كُنْتُمَا مِنْ اَهْلِ الْبَلَدِ لَاَوْجَعْتُكُمْ تَرْفَعَانِ اَصْوَاتَكُمَا فِـىْ مَسْجِدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: হযরত সায়িব ইবনে ইয়াযীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা তিনি বর্ণনা করেন, একদা আমি মসজিদে দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলাম, এমন সময় এক ব্যক্তি আমার প্রতি একটি কঙ্কর নিক্ষেপ করলে আমি তাকিয়ে দেখি, তিনি আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, যান, ঐ দুই ব্যক্তিকে আমার নিকট নিয়ে আসুন। আমি তাদেরকে উনার নিকট নিয়ে আসলাম। তিনি বললেন, তোমরা কোন গোত্রের ও কোথাকার লোক? তারা বললো, আমরা তায়েফের লোক। তিনি বললেন, যদি তোমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার লোক হতে, তবে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে কঠোর শাস্তি দিতাম। কারণ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার মধ্যে তোমরা তোমাদের স্বর উচ্চ করেছো। (বুখারী শরীফ, আস সুনানুল কুবরা লিলবাইহাক্বী ২/৪৪৭, শরহুস সুন্নাহ লিলবাগভী ২/৩৭৫, মুসনাদে ফারূক্ব লিইবনে কাছীর ১/১৫৭, তুহফাতুল আশরাফ ৮/২২, জামি‘উল আহাদীছ লিস সুয়ূত্বী ২৮/২৮১, জামি‘উল উছূল লিইবনে আছীর ১১/৮৭৫১, কানযুল ‘উম্মাল ৮/৩১৫, জাম‘উল ফাওয়াইদ লিল মাগরিবী)
উল্লেখিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত মসজিদে স্বর উঁচু করলেই কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হয় তাহলে মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত মসজিদ ভাঙ্গলে কত কঠিন ও শক্ত শাস্তির যোগ্য হবে, তা ফিকির করতে হবে। নাঊযুবিল্লাহ!


দ্বিতীয় নির্দেশ মুবারক হচ্ছেন, মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত মসজিদসমূহে দুনিয়াবী কথা বলা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
(২৩)
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَكَلَّمَ بِكَلَامِ الدُّنْيَا فِـى الْـمَسْجِدِ اَحْبَطَ اللهُ عَمَلَهٗ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মধ্যে দুনিয়াবী কথা বলবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার ৪০ বছরের আমল নষ্ট করে দিবেন। অর্থাৎ তার অপরাধের কারণে ৪০ বৎসরের আমল নষ্ট হয়ে যাবে। অর্থাৎ তার সমস্ত জীবনের আমল নষ্ট হয়ে যাবে।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (লুবাবুল হাদীছ লিলইমাম জালালুদ্দীন আস সুয়ূত্বী ১/১৩)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
(২৪)
وَقَدْ قَالَ النَّبِـىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَكَلَّمَ بِكَلَامِ الدُّنْيَا فِىْ خَـمْسَةِ مَوَاضِعٍ اَحْبَطَ اللهُ تَعَالـٰى مِنْهُ عِبَادَةَ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً اَلْاَوَّلِ فِـى الْـمَسْجِدِ وَالثَّانِـىْ فِى تِلَاوَةِ الْقُرْاٰنِ وَالثَّالِثِ فِـىْ وَقْتِ الْاَذَانِ وَالرَّابِـــعِ فِـىْ مَـجْلِسِ الْعُلَمَاءِ وَالْـخَامِسِ فِـىْ زِيَارَةِ الْقُبُوْرِ
অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি পাঁচ স্থানে দুনিয়াবী কথা বলবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার ৪০ বছরের ইবাদাত নষ্ট করে দিবেন- অর্থাৎ তার অপরাধের কারণে ৪০ বৎসরের আমল নষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ তার সমস্ত জীবনের আমল নষ্ট হয়ে যাবে। ১. মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মধ্যে, ২. সম্মানিত কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার সময়, ৩. সম্মানিত আযান উনার সময়, ৪. আলিম-উলামাগণ উনাদের মজলিসে এবং ৫. ক্ববর যিয়ারতের সময়।” (তাফসীরে আহ্মদী ৭১০ পৃষ্ঠা)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
(২৫)
عَنِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّهٗ قَالَ اِذَا اَتَى الرَّجُلُ الْمَسْجِدَ فَاَكْثَرَ مِنْ الْكَلَامِ تَقُوْلُ لَهُ الْمَلَائِكَةُ اُسْكُتْ يَا وَلِـىَّ اللهِ فَاِنْ زَادَ تَقُوْلُ اُسْكُتْ يَا بَغِيْضَ اللهِ فَاِنْ زَادَ تَقُوْلُ اُسْكُتْ عَلَيْكَ لَعْنَةُ اللهِ
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন কোন ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মধ্যে আসার পর দুনিয়াবী কথা বলতে শুরু করে, তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা উক্ত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
اُسْكُتْ يَا وَلِـىَّ اللهِ
হে মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী! চুপ করুন।’
এরপরেও যদি সে কথা বলতে থাকে, তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তাকে বলেন,
اُسْكُتْ يَا بَغِيْضَ اللهِ
হে মহান আল্লাহ পাক উনার দুশমন! চুপ কর।’
তারপরেও যদি সে কথা বলতে থাকে, তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তাকে বলেন,
اُسْكُتْ عَلَيْكَ لَعْنَةُ اللهِ
তোর উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত, তুই চুপ কর’।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (আল মাদখাল ২/২২৭)
উল্লেখিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা প্রমাণিত হয়, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদে সাধারণ দুনিয়াবী কথা বললেই চল্লিশ বছরের আমল নষ্ট হয়, অর্থাৎ তার সমস্ত জীবনের আমল নষ্ট হয়, সাথে সাথে লা’নতের উপযুক্ত হয় এবং মহান আল্লাহ তায়ালা উনার শত্রু ও মালউন বা অভিশপ্ত হিসেবে সম্বোধনও করা হয়। তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভেঙ্গে ফেললে তার কত বছরের আমল নষ্ট হবে? এবং তাকে কি হিসেবে সম্বোধন করা হবে?
প্রকৃতপক্ষে তার জীবনের সমস্ত আমল নষ্ট হবে, ঈমান নষ্ট হবে এবং সে মালউন হবে। আর তাকে সম্বোধিত ও আখ্যায়িত করা হবে বড় যালিম বা সীমালংঘনকারী মালউন এবং আদুউল্লাহ অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার শত্রু হিসেবে। নাউযুবিল্লাহ!

তৃতীয় নির্দেশ মুবারক হচ্ছেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর। কাজেই কোন বান্দা-বান্দি অর্থাৎ কোন সৃষ্টির জন্য জায়িয নেই মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মসজিদ ভাঙ্গা। কেননা স্বয়ং যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ নির্মাণ করার ও বিশেষভাবে সম্মান করার এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার আদেশ মুবারক করেছেন।

এ প্রসঙ্গে যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
(২৬)
فِـىْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ يُسَبِّحُ لَهٗ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ মুবারক করেন- সম্মান করার জন্য এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার জন্য অর্থাৎ না ভাঙ্গার জন্য, ঐ সকল মুবারক ঘরসমূহ উনাদেরকে যে সকল মুবারক ঘরসমূহে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক স্মরণ করা হয় ও তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করা হয় সকাল-সন্ধ্যায়।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নূর শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬)
আলোচ্য সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত بُيُوْتٍ ‘সম্মানিত ঘর মুবারকসমূহ’ শব্দ মুবারক উনার ব্যাখ্যায় পৃথিবীর সমস্ত বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থসমূহে الْمَسَاجِدُ ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ’ উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ আলোচ্য সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত بُيُوْتٍ ‘সম্মানিত ঘর মুবারকসমূহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য الْمَسَاجِدُ ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ’। সুবহানাল্লাহ!
যেমন ‘তাফসীরে মাযহারী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
(২৭)
وَالْمُرَادُ بِـهَا الْـمَسَاجِدُ قَالَ حَضْرَتْ سَعِيْدُ بْنُ جُبَيْرٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اَلْـمَسَاجِدُ بُيُوْتُ اللهِ فِى الْاَرْضِ وَهِىَ
تُضِىْءُ لِاَهْلِ السَّمَاءِ كَمَا تُضِىْءُ لِاَهْلِ الْاَرْضِ النُّجُوْمُ.
অর্থ: “এখানে ‘সম্মানিত ঘর মুবারকসমূহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ’। হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছে দুনিয়ার যমীনে মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ঘর মুবারক।’ সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ আসমানবাসী উনাদেরকে এমনভাবে আলোকিত করে থাকেন, যেমনিভাবে আসমানের তারকারাজি যমীনবাসী উনাদেরকে আলোকিত করে থাকে।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী শরীফ ৬/৩৩৯)
তাফসীরে বাগভী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
(২৮)
وَالْبُيُوتُ هِىَ الْمَسَاجِدُ،
অর্থ: “আর ‘সম্মানিত ঘর মুবারকসমূহ’ হচ্ছে ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ’।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে বাগভী শরীফ ৩/৪১৮)
তাফসীরে নীশাপুরী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
(২৯)
{فِـىْ بُيُوْتٍ} يَعْنِى الْـمَسَاجِدَ
অর্থ: “সম্মানিত ঘর মুবারকসমূহে অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে।” (তাফসীরে নীশাপূরী শরীফ ১/৭৬৫)
তাফসীরে ত্ববারী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
(৩০)
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ فِىْ قَوْلِهٖ { فِـىْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ } يَعْنِـىْ كُلَّ مَسْجِدٍ يُصَلّٰى فِيْهِ جَامِعٍ اَوْ غَيْرِهٖ
অর্থ: “রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি فِـىْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ “মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ মুবারক করেন- সম্মান করার জন্য এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার জন্য অর্থাৎ না ভাঙ্গার জন্য, ঐ সমস্ত ঘর মুবারক” এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে বলেন, كُلَّ مَسْجِدٍ يُصَلّٰى فِيْهِ جَامِعٍ اَوْ غَيْرِهٖঅর্থাৎ প্রত্যেক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যেখানে নামায পড়া হয়। সেটা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জামি’ মসজিদ মুবারক হোক অথবা অন্য যে কোন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকই হোক।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে ত্ববারী শরীফ ১৯/১৮৯)
আলোচ্য আয়াত শরীফ উনার মধ্যে اَذِنَ শব্দ মুবারক উনার অর্থ মুবারক হচ্ছে ‘তিনি আদেশ করেছেন’। যেমন- এই সম্পর্কে ‘তাফসীরে নীশাপূরী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
(৩১)
اَمَرَ اللهُ اَنْ تُبْنٰى
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করার জন্য এবং না ভেঙ্গে উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার জন্য সম্মানিত আদেশ মুবারক করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে নীশপূরী শরীফ ১/৭৬৫)
তাফসীরে কুরতুবী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
(৩২)
" اَذِنَ" مَعْنَاهُ اَمَرَ وَقَضٰى.
অর্থ: اَذِنَ শব্দ মুবারক উনার অর্থ মুবারক হচ্ছেন اَمَرَ তিনি সম্মানিত আদেশ মুবারক করেছেন, قَضٰى সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (কুরতুবী শরীফ ১২/২৬৬)
আর اَنْ تُرْفَعَ উনার অর্থ মুবারক সম্পর্কে ‘তাফসীরে মাযহারী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
(৩৩)
وَمَعْنٰى اَنْ تُرْفَعَ قَالَ حَضْرَتْ مُـجَاهِدٌ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنْ تُبْنٰى نَظِيْرُهٗ قَوْلُهٗ تَعَالـٰى وَاِذْيَرْفَعُ اِبْرٰﻫٖﻢُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَاِسْـمٰعِيْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ بَنٰى لِلّٰهِ مَسْجِدًا بَنَـى اللهُ لَهٗ بَيْتًا فِى الْـجَنَّةِ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ مِنْ حَدِيْثِ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَقَالَ الْـحَسَنُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ مَعْنَاهُ اَنْ تُعَظَّمَ يَعْنِـىْ لَا يُذْكَرُ فِيْهَا الْقَبِيْحُ مِنَ الْقَوْلِ قَالَ اللهُ تَعَالـٰى اَنْ طَهِّرَا بَيْـتِـىَ لِلطَّـــآئِفِيْنَ وَالْعٰكِفِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ
অর্থ: “আর اَنْ تُرْفَعَ শব্দ উনার অর্থ- হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন,  اَنْ تُبْنٰىনির্মাণ করা, তৈরি করা’ এবং না ভেঙ্গে উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করা। এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম মুবারক-
وَاِذْيَرْفَعُ اِبْرٰﻫٖﻢُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَاِسْـمٰعِيْلُ
স্মরণ করুন, যখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইসমাঈল যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা সম্মানিত কা’বা ঘর উনার ভিত্তি নির্মাণ করেছিলেন।” এখানে يَرْفَعُ ‘নির্মাণ করা’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য একটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ একটি ঘর বা বালাখানা নির্মাণ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম উনার থেকে “বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ”-এ বর্ণিত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
আর হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, اَنْ تُرْفَعَ অর্থ اَنْ تُعَظَّمَ ‘সম্মান করা’। অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে অশ্লীল ও অনর্থক কোনো কথা না বলা, দুনিয়াবী কোনো আলোচনা না করা অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উনাদেরকে উত্তমভাবে এবং তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اَنْ طَهِّرَا بَيْـتِـىَ لِلطَّـــآئِفِيْنَ وَالْعٰكِفِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ
আপনারা আমার সম্মানিত ঘর মুবারক উনাকে তাওয়াফকারী, অবস্থানকারী ও রুকু-সিজদাকারী উনাদের জন্য পবিত্র রাখুন। অর্থাৎ উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করুন।” অর্থাৎ এখানে সম্মানিত কা’বা ঘর শরীফ-এ অশ্লীল ও অপছন্দনীয় কথা-বার্তা ও আলাপ-আলোচনা থেকে বিরত থাকার জন্য এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার জন্য সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দেয়া হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী শরীফ ৬/৩৩৯)
তাফসীরে আব্দুর রাজ্জাক’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
(৩৪)
اَذِنَ اللهُ اَنْ تُبْنٰى
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ নির্মাণ করার জন্য নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গার নির্দেশ মুবারক দেননি।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে আব্দুর রাজ্জাক ২/৪৪২)
তাফসীরে দুররে মানছূর শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
(৩৫)
فِـىْ مَسَاجِدَ اَنْ تُبْنٰى
অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করার ব্যাপারে সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দেয়া হয়েছে। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গার নির্দেশ মুবারক দেননি।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে দুররে মানছূর ৬/২০২)
সুতরাং সর্বজনমান্য ও নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থসমূহ থেকে এই বিষয়টিই দিবালোকের অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করার জন্য, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনাদেরকে তা’যীম-তাকরীম বা সম্মান করার জন্য, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনাদেরকে পবিত্র রাখার জন্য এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার জন্য অর্থাৎ না ভাঙ্গার জন্য সম্মানিত আদেশ মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! কাজেই, যারা মহান আল্লাহ পাক উনার এই সম্মানিত আদেশ মুবারক লঙ্ঘন করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙবে অর্থাৎ উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করবে না, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে এবং সমর্থন করবে, নিঃসন্দেহে তারা সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফির এবং চির জাহান্নামী, মহান আল্লাহ পাক উনার শত্রু, যার কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে তাদের জন্য রয়েছে ইহকালে গযব ও লাঞ্ছনা এবং পরকালে তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী জাহান্নাম। না‘ঊযুবিল্লাহ!


চতুর্থ নির্দেশ মুবারক হচ্ছেন, রাস্তা নির্মাণের দোহাই দিয়ে, সৌন্দর্য বর্ধনের নামে এবং বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গার তো প্রশ্নই উঠে না; বরং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী প্রতি মহল্লায় মহল্লায়, বাড়িতে বাড়িতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করতে হবে, সাথে সাথে উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করতে হবে কোন অবস্থাতেই ভাঙ্গা যাবে না এবং সম্মানিত মুসলমান উনাদের সুবিধার্থে রাস্তার পাশে ও মোড়ে মোড়ে আরো অসংখ্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করতে হবে রাস্তার দোহাই দিয়ে কোন অবস্থাতেই ভাঙ্গা যাবে না এবং প্রতিটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ অত্যন্ত আদব ও তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণের সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে

এই সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
(৩৬-৩৭)
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِبْنُوا الْمَسَاجِدَ
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ নির্মাণ করো। অর্থাৎ ভাঙ্গার তো প্রশ্নই আসে না বরং আরো বেশী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ নির্মাণ করতে হবে।” সুবহানাল্লাহ! (মুছান্নাফে আবী শায়বাহ শরীফ ১/২৭৪, আস সুনানুল কুবরাহ লিলবাইহাক্বী ২/৬১৫)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
(৩৮-৪৬)
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ قِرْصَافَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اَنَّهٗ سَـمِعَ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ اِبْنُوا الْمَسَاجِدَ وَاَخْرِجُوا الْقُمَامَةَ مِنْهَا فَمَنْ بَنٰـى لِلّٰهِ مَسْجِدًا بَنَى اللهُ لَهٗ بَيْتًا فِى الْـجَنَّةِ قَالَ رَجُلٌ يَّا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهٰذِهِ الْمَسَاجِدُ الَّتِـىْ تُبْنٰى فِى الطَّرِيْقِ قَالَ نَعَمْ وَاِخْرَاجُ الْقُمَامَةِ مِنْهَا مُهُوْرُ حُوْرِ الْعِيْنِ
অর্থ: “হযরত আবূ ক্বিরছাফাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, তোমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করো এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখো। অর্থাৎ ভাঙ্গার তো প্রশ্নই আসে না বরং আরো বেশী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ নির্মাণ করতে হবে এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করো। সুবহানাল্লাহ! কেননা যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য একটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ একটি বালাখানা নির্মাণ করবেন। সুবহানাল্লাহ! একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে সকল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক রাস্তায় নির্মাণ করা হয়? (সেই সকল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনাদের হুকুম কী? ওই সকল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা নির্মাণ করবেন, উনাদের জন্যও কি জান্নাতে বালাখানা নির্মাণ করা হবে?) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হ্যাঁ। সুবহানাল্লাহ! আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক থেকে ময়লা দূর করা তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা অর্থাৎ ভাঙ্গার তো প্রশ্নই আসে না বরং আরো বেশী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ নির্মাণ করতে হবে এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ শুধু নির্মাণ করলেই চলবে না। সাথে সাথে উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণও করতে হবে এবং তা’যীম-তাকরীমের সাথে উত্তমভাবে সংরক্ষণ করাটা সম্মানিত জান্নাতী হুর উনাদের মোহরানাস্বরূপ। (অর্থাৎ যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করবে এবং তা’যীম-তাকরীমের সাথে উত্তমভাবে সংরক্ষণ করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে হুরদের সাথে বিবাহ দিবেন। নিশ্চিত সেই ব্যক্তি তিনি জান্নাতী।)” সুবহানাল্লাহ! (ত্ববারনী শরীফ ৩/১৯, দুরররে মানছূর ৪/১৪৪, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১১৩, জামি‘উছ ছগীর ১/৫, ফাতহুল কাবীর ১/২১, জামি‘উল আহাদীছ ১/১৩৭, কাশফুল খফা ২/৩৪, আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ ৩/৪৮৮, কানযুল ‘উম্মাল ৭/৬৫৫ ইত্যাদী)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
(৪৭-৫০)
عَنْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلصِّدِّيْقَةِ (حَضْرَتْ عَائِشَةَ) عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ اَمَرَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِبِنَاءِ الْمَسَاجِدِ فِى الدُّوْرِ وَاَنْ تُنَظَّفَ وَتُطَيَّبَ
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাড়িতে বাড়িতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করার জন্য সম্মানিত আদেশ মুবারক করেছেন এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় করে রাখার জন্য অর্থাৎ ভাঙ্গার তো প্রশ্নই আসে না বরং আরো বেশী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ নির্মাণ করতে হবে এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ নির্মাণ করার জন্য এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার জন্য সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ ইত্যাদী)
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে দিবালোকের ন্যায় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, স্বয়ং যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার মধ্যে এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করার জন্য এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার সম্মানিত আদেশ মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! এ ছাড়াও স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই বিশেষভাবে বাড়িতে বাড়িতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করার এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার জন্য সম্মানিত আদেশ মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই রাস্তা নির্মাণের দোহাই দিয়ে, সৌন্দর্য বর্ধনের নামে এবং বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গার তো প্রশ্নোই উঠে না; বরং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী প্রতি বাড়িতে বাড়িতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করতে হবে এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করতে হবে। উল্লেখ্য এই দেশের শতকরা ৯৮ ভাগ সম্মানিত মুসলমান উনাদের সুবিধার্থে রাস্তার পাশে ও মোড়ে মোড়ে আরো অসংখ্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করতে হবে এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করতে হবে। যাতে করে সম্মানিত মুসলমান উনাদের সম্মানিত নামায আদায় করতে কোনো প্রকার অসুবিধা না হয়। সুবহানাল্লাহ! যে বা যারা এ বরকতময় ও নিয়ামতপূর্ণ কাজের আনজাম দিবেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সম্মানিত ফতওয়া মুবারক অনুযায়ী উনারা প্রত্যেকেই নিশ্চিত জান্নাতী হবেন। সুবহানাল্লাহ!


পঞ্চম নির্দেশ মুবারক হচ্ছেন,স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভেঙ্গে রাস্তা নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন।

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
(৫১-৬২)
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ خِصَالٌ لَّا تَنْبَغِىْ فِى الْمَسْجِدِ لَا يُتَّخَذُ طَرِيْقًا
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কতগুলো অভ্যাস বা কাজ রয়েছে সেগুলো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনাদের মধ্যে করা জায়িয নেই। যেমন- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনাদেরকে (ভেঙ্গে) রাস্তা বানানো জায়েয নেই। বরং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার মুবারক আদেশ করা হয়েছে।” (সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ, আল জামি‘উছ ছগীর ১/৩৬৬, আল ফাতহুল কাবীর ২/৮২, জামি‘উল আহাদীছ ১২/২৭৫, মিছবাহুয যুজাযাহ ১/৯৫, আত তানভীর শরহু জামি‘য়িছ ছগীর ৫/৪৮২, আল বাদরুল মুনীর ৯/৫১১, আদ দিরায়াহ ১/২৮৮, আল বাহরুল রায়িক্ব ৬/৩১৭, আদ দুররুল মানছূর লিস সুয়ূত্বী ১১/৭৮, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৬/৬৩, আল মুহাররুল ওয়াজীয ৬/৪৩৭ ইত্যাদী)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
(৬৩-৭৪)
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَتَّخِذُوا الْمَسَاجِدَ طُرُقًا
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনাদেরকে (ভেঙ্গে) রাস্তা হিসেবে গ্রহণ করো না (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভেঙ্গে রাস্তা তৈরী করো না বরং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উনাদেরকে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করো।)।” (আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ১০/৪৫৩, আল মু’জামুল আওসাত্ব ১/১৪, শরহু সুনানি ইবনে মাজাহ লিল মুগলত্বাই ১/১২৪৪, ফাইযুল ক্বদীর ৬/৫০২, আত তাইসীর বিশরহিল জামি‘িয়ছ ছগীর ২/৯৪৫, মাছাবীহুত তানভীর ২/২৫, আত তানভীর শরহুল জামি‘িয়ছ ছগীর ১১/৮২, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/৩৪, আল জামি‘উছ ছগীর ২/৩৮৮, আল ফাতহুল কাবীর ৩/৩০০, দায়লামী শরীফ ৫/১৫, জামি‘উল আহাদীছ ১২/২৭৫ ইত্যাদী)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
(৭৫-৭৬)
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وَحَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّهٗ نَـهٰى اَنْ تُتَّخَذَ الْـمَسَاجِدُ طُرُقًا.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনাদেরকে রাস্তা বানাতে (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভেঙ্গে রাস্তা নির্মাণ করতে) নিষেধ করেছেন। বরং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার মুবারক আদেশ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (শরহু সুনানি ইবনে মাজাহ ১/১২৫০, যাখীরতুল হুফ্ফায ২/৮৮৬)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
(৭৭-৮৪)
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتّٰى تُتَّخَذَ الْمَسَاجِدُ طُرُقًا
অর্থ: “হযরত ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনাদেরকে (ভেঙ্গে) রাস্তা হিসেবে গ্রহণ করা হবে।” অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ না করে ভেঙ্গে রাস্তা নির্মাণ করা ক্বিয়ামতের আলামত বা লক্ষণ। না‘ঊযুবিল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম ৪/৪৪৬, মা’রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার লিল বাইহাক্বী ৩/১৬৩, আদ দুররুল মানছূর লিস সুয়ূত্বী ১৩/২৮৯, আল বাদরুল মুনীর ৯/৫১১, জামি‘উল আহাদীছ ১৬/২৮১, মুখতাছারু তালখীছিয যাহাবী ৭/৩২৯৬, আল উম্ম লিল ইমাম আশ শাফি ৭/১৮৬, খাছায়েছু কুবরা ২/২৪০ ইত্যাদী)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
(৮৫)
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ اَمَارَاتِ السَّاعَةِ اَنْ تُتَّخَذَ الْمَسَاجِدُ طُرُقًا
অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ক্বিয়ামতের আলামত বা লক্ষণসমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনাদেরকে (ভেঙ্গে) রাস্তা বানানো (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ না করে ভেঙ্গে রাস্তা তৈরি করা)।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (আল বাদরুল মুনীর ৯/৫১১)
উপরোক্ত সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার সম্মানিত আয়াত শরীফ ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের থেকে দিবালোকের ন্যায় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ঘর মুবারক। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভেঙ্গে রাস্তা নির্মাণ করা জায়িয নেই। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভেঙ্গে রাস্তা নির্মাণ করতে স্বয়ং যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা নিষেধ করেছেন তো অবশ্যই বরং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার জন্য মুবারক আদেশ করেছেন।
আরো প্রমাণিত হলো যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভেঙ্গে রাস্তা নির্মাণ করা ক্বিয়ামতের আলামত বা লক্ষণ। তাই মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের সম্মানিত আদেশ মুবারক অমান্য করে যারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করবে না বরং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙবে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গার কাজে ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক বিরাণ করার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকে ইবাদত-বন্দেগী, জিকির-ফিকির করার ক্ষেত্রে বাঁধা দিবে, দেয়ার চেষ্টা করবে এবং ইত্যাদী কাজে সমর্থন করবে, তারাই হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার শত্রু। অতএব তারাই সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফির, সবচেয়ে বড় কাট্টা মুশরিক, সবচেয়ে বড় কাট্টা যালিম এবং চির মাল‘ঊন ও চির জাহান্নামী।
এদের প্রসঙ্গেই যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
(৮৬)
وَمَنْ اَظْلَمُ مِـمَّنْ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ وَسَعٰى فِـىْ خَرَابِـهَا اُولٰٓئِكَ  مَا كَانَ لَـهُمْ اَنْ يَّدْخُلُوْهَا اِلَّا خَآئِفِيْنَ لَـهُمْ فِـى الدُّنْيَا خِزْىٌ وَّلَـهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ.
অর্থ: “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে? যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে। (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বন্ধ করে রাখে, হক্ব আদায় করে না তা’যীম-তাকরীম করে না) তাদের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় অর্থাৎ খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করা ব্যতীত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে প্রবেশ করা জায়িয নেই। তাদের জন্য রয়েছে ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ১১৪)
এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে জালালাইন শরীফ ও তাফসীরে মাযহারী শরীফ’ উনাদের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
(৮৭-৮৮)
لَا اَحَدَ اَظْـلَمُ مِـمَّنْ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ
অর্থ: “ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে বড় যালিম, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক স্মরণ করতে বাধা দেয়।” (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বন্ধ করে রাখে, হক্ব আদায় করে না তা’যীম তাকরীম করে না) (তাফসীরে জালালাইন ১/২৪, তাফসীরে মাযহারী ১/১১৬)
(৮৯-৯১)
তাফসীরে সমরকন্দী শরীফ, তাফসীরে খাযিন শরীফ ও তাফসীরে বাগবী শরীফ’ উনার মধ্যে وَمَنْ اَظْـلَمُ “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে?” এই অংশের ব্যাখ্যায় উল্লেখ রয়েছে, وَمَنْ اَكْفَرُওই ব্যক্তির চেয়ে বড় কাফির আর কে?
অর্থাৎ ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফির, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে।” (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বন্ধ করে রাখে, হক্ব আদায় করে না, তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করে না) না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে সমরকন্দী শরীফ ১/৮৬, তাফসীরে খাযিন শরীফ ১/৭২, তাফসীরে বাগবী শরীফ ১/১৫৭)



আল্লামা কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে মাযহারী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
(৯২)
لَـهُمْ فِـى الدُّنْيَا خِزْىٌ قَتْلٌ وَسَبْـىٌ وَّذِلَّةٌ بِضَرْبِ الْـجِزْيَةِ وَّلَـهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ. اَلنَّارُ الْـمُؤَبَّدَةُ بِكُفْرِهِمْ وَظُـلْمِهِمْ.
অর্থ: “তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়ার যমীনে লাঞ্ছনা। (অর্থাৎ) কতল (হত্যা, মৃত্যুদ-), বন্দিত্ব (জেল-হাজত) এবং জিযিয়া কর প্রদানের অবমাননা। আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। (অর্থাৎ পরকালে) তাদের জন্য রয়েছে তাদের কুফরী ও যুলুমের কারণে চিরস্থায়ী জাহান্নাম।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী শরীফ ১/১১৬)
দশম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত বিশ্বখ্যাত ও সর্বজনমান্য তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে জালালাইন শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
(৯৩)
{لَـهُمْ فِـى الدُّنْيَا خِزْىٌ}هَوَانٌ بِالْقَتْلِ وَالسَّبْـىِ وَالْـجِزْيَةِ {وَّلَـهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ} هُوَ النَّارُ
অর্থ: “তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়ার যমীনে লাঞ্ছনা। (অর্থাৎ) কতল (হত্যা, মৃত্যুদ-), বন্দিত্ব (জেল-হাজত) এবং জিযিয়া কর প্রদানের অবমাননা। আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। (অর্থাৎ পরকালে) তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে জালালাইন শরীফ ১/২৪)
বিশ্বখ্যাত মুফাসসির ও ইমাম আল্লামা আবূ জা’ফর মুহম্মদ ইবনে জারীর ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ-৩১০ হিজরী শরীফ) উনার লিখিত বিশ্বখ্যাত ও সর্বজনমান্য তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে ত্ববারী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
(৯৪)
وَتَاْوِيْلُ الْاٰيَةِ لَـهُمْ فِى الدُّنْيَا الذِّلَّةُ وَالْـهَوَانُ وَالْقَتْلُ وَالسَّبْىُ عَلـٰى مَنْعِهِمْ مَسَاجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ وَسَعْيُهُمْ فِـىْ خَرَابِـهَا وَلَـهُمْ عَلـٰى مَعْصِيَتِهِمْ وَّكُفْرِهِمْ بِرَبّـِهِمْ وَسَعْيِهِمْ فِـى الْاَرْضِ فَسَادًا عَذَابُ جَهَنَّمَ وَهُوَ الْعَذَابُ الْعَظِيْمُ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক উচ্চারণ করতে বাধা দেয়ার কারণে এবং সেগুলোকে উজাড় বা বিরান করার কোশেশ করার কারণে অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহকে হাক্বীক্বীভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ না করার কারণে তাদের জন্য দুনিয়ার যমীনে রয়েছে অবমাননা, লাঞ্ছনা, কতল তথা হত্যা, মৃত্যুদ-, জেল-হাজত, গ্রেফতারী। আর তাদের পাপাচার, মহান আল্লাহ পাক উনার ব্যাপারে কুফরী করা এবং দুনিয়ার যমীনে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করে দেয়ার কোশেশ করার কারণে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব বা শাস্তি। এটাই হচ্ছে اَلْعَذَابُ الْعَظِيْمُ তথা কঠিন আযাব বা শাস্তি।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে ত্ববারী শরীফ ২/৪৪৮)
বিশ্বখ্যাত মুফাসসির ও ইমাম আল্লামা আবুল হাসান আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে হাবীব বছরী বাগদাদী মাওয়ারদী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৪৫০ হিজরী শরীফ) উনার লিখিত বিশ্বখ্যাত ও সর্বজনমান্য তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে মাওয়ারদী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
(৯৫)
{وَّلَـهُمْ فِـى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ} هُوَ اَشَدُّ مِنْ كُلِّ عَذَابٍ لِاَنَّـهُمْ اَظْـلَمُ مِنْ كُلِّ ظَالِـمٍ.
অর্থ: “আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন আযাব বা শাস্তি। (অর্থাৎ) তা হচ্ছে সমস্ত আযাব বা শাস্তি হতে সবচেয়ে কঠিন আযাব বা শাস্তি। কেননা তারা হচ্ছে সমস্ত যালিমদের থেকে সবচেয়ে বড় যালিম কারণ তারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহকে হাক্বীক্বীভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করেনি।” (তাফসীরে মাওয়ারদী শরীফ ১/১৭৪)
বিশ্বখ্যাত মুফাসসির ও ইমাম আল্লামা কাযী নাছিরুদ্দীন আবূ সাঈদ আব্দুল্লাহ ইবনে উমর ইবনে মুহম্মদ শীরাজী বায়যাভী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৬৮৫ হিজরী শরীফ) উনার লিখিত বিশ্বখ্যাত ও সর্বজনমান্য তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে বায়যাভী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
(৯৬)
لَـهُمْ فِى الدُّنْيَا خِزْىٌ قَتْلٌ وَسَبْىٌ اَوْ ذِلَّةٌ بِضَرْبِ الْـجِزْيَةِ وَّلَـهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ بِكُفْرِهِمْ وَظُلْمِهِمْ.
অর্থ: “তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়ার যমীনে লাঞ্ছনা। (অর্থাৎ) কতল (হত্যা, মৃত্যুদ-), বন্দিত্ব (জেল-হাজত) অথবা জিযিয়া কর প্রদানের লাঞ্ছনা। আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে তাদের কুফরী ও যুলুমের কারণে কঠিন আযাব বা শাস্তি কারণ তারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহকে হাক্বীক্বীভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করেনি।” (তাফসীরে বায়যাভী শরীফ ১/১০১)
এখন বলার বিষয় হচ্ছে, যদি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত যিকির মুবারক করতে, উনার নাম মুবারক উচ্চারণ করতে বাধা দেয়ার কারণে এবং সেগুলোকে উজার বা বিরান করে দেয়ার কোশেশ করার কারণে অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহকে হাক্বীক্বীভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ না করার কারণে সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফির, চির মাল‘ঊন ও চির জাহান্নামী হতে হয় এবং দুনিয়ার যমীনে অবমাননা, লাঞ্ছনা, জেল-হাজত, গ্রেফতার ও কতল তথা মৃত্যুদ-ের শিকার হতে হয়, তাহলে যারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগীতা করবে এবং সমর্থন করবে তাদের ফায়ছালা কী? সম্মানিত কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস শরীফ উনাদের সম্মানিত ফতওয়া মুবারক অনুযায়ী- “নিঃসন্দেহে তারা সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফির, চির মাল‘ঊন ও চির জাহান্নামী হবে। তাদের প্রত্যেককেই অবশ্যই অবশ্যই গ্রেফতার করে জেল-হাজতে প্রবেশ করাতে হবে। অতঃপর তওবা করার জন্য তিন দিন সময় দিতে হবে। যদি তারা তওবা করে ভালো; অন্যথায় তাদের প্রত্যেককেই মৃত্যুদ- দিতে হবে।

প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ
সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সকল বিষয়েই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত তথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফসম্মত আক্বীদা পোষণ করেন এবং আমল করে থাকেন। যারা রাজারবাগ শরীফ উনার সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায় ও উনার আক্বীদা-আমল সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে তাদের প্রতি-
রাজারবাগ শরীফ উনার তরফ থেকে শর্ত সাপেক্ষে প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করা হচ্ছে


ষষ্ঠ নির্দেশ মুবারক হচ্ছেন, কেউ যদি নিজেকে ঈমানদার দাবি করতে চায়, তার জন্য ফরযে আইন হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিবাদ করা এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক হিফাযতে অর্থাৎ হাক্বীক্বীভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার ব্যাপারে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
(৯৭-৯৮)
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اَحَبَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ فَلْيُحِبَّنِـىْ وَمَنْ اَحَبَّنِـىْ فَلْيُحِبَّ اَصْحَابِـىْ وَمَنْ اَحَبَّ اَصْحَابِـىْ فَلْيُحِبَّ الْقُرْاٰنَ وَمَنْ اَحَبَّ الْقُرْاٰنَ فَلْيُحِبَّ الْمَسَاجِدَ فَاِنَّهَا اَفْنِيَةُ اللهِ اَبْنِيَتُهٗ.
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করে, সে যেন আমাকে মুহব্বত করে। আর যে ব্যক্তি আমাকে মুহব্বত করে, সে যেন আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে মুহব্বত করে। আর যে ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে মুহব্বত করে, সে যেন সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে মুহব্বত করে। আর যে ব্যক্তি সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে মুহব্বত করে, সে যেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উনাদেরকে মুহব্বত করে। (মুহব্বতের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণের সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অর্থাৎ যাতে কেউ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গতে না পারে বা কোন প্রকার ক্ষতি করতে না পারে এবং মুসল্লীদের পবিত্র মসজিদ কেন্দ্রিক কোন ইবাদতে বিঘœ সৃষ্টি করতে না পারে। সুবহানাল্লাহ!) কেননা নিঃসন্দেহে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার আঙ্গিনা, মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ঘর মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে কুরতুবী শরীফ ১২/২৬৬, শরহুল বুখারী শরীফ ১/৪১৪)
এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার থেকে যেই বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্ট তা হচ্ছে- যে ব্যক্তি সম্মানিত কুরআন শরীফ উনাকে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে মুহব্বত করে, তার জন্য ফরযে আইন হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উনাদেরকে মুহব্বত করা। মুহব্বতের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণের সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অর্থাৎ যাতে কেউ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গতে না পারে বা কোন প্রকার ক্ষতি করতে না পারে এবং মুসল্লীদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ কেন্দ্রিক কোন ইবাদতে বিঘœ সৃষ্টি করতে না পারে। আর যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উনাদেরকে মুহব্বত করে না, সে মূলত সম্মানিত কুরআন শরীফ উনাকে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে মুহব্বত করে না। না‘ঊযুবিল্লাহ! অর্থাৎ সে ঈমানদার নয় বরং কাট্টা কাফির চির জাহান্নামী। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
(৯৯-১০৫)
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ سَعِيْدِ ۣ الْـخُدْرِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ رَاٰى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهٖ فَاِنْ لَّـمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهٖ فَاِنْ لَّـمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهٖ وَذٰلِكَ اَضْعَفُ الْاِيْـمَانِ.
অর্থ: “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের কেউ যখন সম্মানিত শরীয়ত মুবারক উনার খিলাফ কোন কাজ দেখবে, তখন সে যেন তা হাত দিয়ে বাঁধা দেয়। যদি হাত দিয়ে বাঁধা দিতে সক্ষম না হয়, তাহলে সে যেন তা মুখ দিয়ে বাঁধা দেয়। যদি তাতেও সম্ভব না হয়, তাহলে যেন তা অন্তরে বাঁধা দেয়। অর্থাৎ অন্তরে খারাপ জেনে সেখান থেকে দূরে সড়ে যায়। এটা হচ্ছে সম্মানিত ঈমান মুবারক উনার সর্বনি¤œ স্তর।” (মুসলিম শরীফ, নাসাঈ শরীফ, মুসনাদে আহমদ, শরহুস সুন্নাহ, শু‘য়াবুল ঈমান, ছহীহ ইবনে হিব্বান, হিলইয়াতুল আউলিয়া)
অপর বর্ণনায় রয়েছে-
(১০৬-১০৭)
وَلَيْسَ وَرَاءَ ذٰلِكَ مِنَ الْاِيْـمَانِ حَبَّةُ خَرْدَلٍ.
অর্থ: “এরপর আর সরিষার দানা পরিমাণও সম্মানিত ঈমান মুবারক অবশিষ্ট থাকবে না।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অতএব, কেউ যদি নিজেকে ঈমানদার দাবি করতে চায়, তার জন্য ফরযে আইন হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিবাদ করা এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে হিফাযতে অংশগ্রহণ করা।

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করার ফযীলত

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
(১০৮-১১০)
عَنْ حَضْرَتْ عُثْمَانَ ذِى النُّوْرَيْنِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ بَنٰى لِلّٰهِ مَسْجِدًا بَنَى اللهُ لَهٗ بَيْتًا فِـى الْـجَنَّةِ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য একটি সম্মানিত ও পবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ একটি বালাখানা নির্মাণ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে-
(১১১-১১২)
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْۢ بَنٰى مَسْجِدًا لِّلّٰهِ كَمَفْحَصِ قَطَاةٍ اَوْ اَصْغَرَ بَـنَـى اللهُ لَهٗ بَيْتًا فِى الْـجَنَّةِ
অর্থ: “হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কেউ যদি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য কবুতরের বাসার মতো অথবা তার চেয়েও ছোট একটি মসজিদ নির্মাণ করে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ একটি বালাখানা নির্মাণ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ, কানযুল উম্মাল)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
(১১৩-১২১)
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ بَنٰـى لِلّٰهِ مَسْجِدًا صَغِيْرًا كانَ اَوْ كَبِيْرًا بَـنَـى اللهُ لَهٗ بَيْتًا فِـى الْـجَنَّةِ.
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কেউ যদি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য একটি সম্মানিত ও পবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করেন, তা ছোট হোক অথবা বড় হোক, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার জন্য সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ একটি সম্মানিত বালাখানা মুবারক নির্মাণ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, মুস্তাদরকে হাকিম, আহকামুশ শরী‘য়্যাহ, আল ফাতহুল কাবীর, জামি‘উল আহাদীছ, জামি‘উল উছূল, কাশফুল খফা, আল মাত্বালিবুল ‘আলিয়্যাহ, কানযুল উম্মাল ইত্যাদি)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
(১২২-১২৩)
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ سَـمِعْتُ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ مَنْ زَادَ بَيْتًا فِى الْمَسْجِدِ فَلَهُ الْـجَنَّةُ.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার জায়গা বৃদ্ধি করবে, তার জন্য সম্মানিত জান্নাত ওয়াজিব।” সুবহানাল্লাহ! (ফাদ্বাইলুছ ছাহাবা ৫/১১৮, কানযুল উম্মাল ৭/৬৫৩)

পরিশিষ্ট
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা যে বিষয়গুলো সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমানিত হয়েছে- তাহলো:
১। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ও সম্মানিত ঘর।
২। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ইবাদতের পবিত্রস্থান।
৩। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ঘর ও পবিত্র ইবাদতের স্থান হওয়ার কারণেই সেখানে উচ্চ স্বরে কথা বলা ও দুনিয়াবী কথা বলা হারাম।
৪। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনাকে তা’যীম-তাকরীম বা সম্মান করা কুল মাখলুকাতের জন্য ফরয। সুবহানাল্লাহ!
৫। স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ নির্মানের নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন এবং বহু ফযীলত বর্ণনা করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
৬। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র প্রতিটি মসজিদ তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করা সরকার ও জনগণ সকলের জনই ফরযে আইন। সুবহানাল্লাহ!
৭। সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে ওয়াক্বফকৃত স্থানে একবার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ নির্মিত হলে তা ক্বিয়ামত পর্যন্ত ভাঙ্গা জায়িয নেই।
৮। সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে রাস্তা নির্মান বা অন্যকোনো অজুহাতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা হারাম ও কুফরী।
৯। সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে যে কুফরী করে সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে মুরতাদের ফায়ছালা হলো- সে ঈমান হারা হবে, তার সমস্ত নেকী বাতিল হবে, বিয়ে করে থাকলে স্ত্রী তালাক হবে, ওয়ারিছসত্ত্ব বাতিল হবে এ অবস্থায় সে মারা গেলে তার জানাযা পড়া জায়িয হবে না, তাকে মুসলমান কবরস্থানে দাফন করা যাবে না, কুকুর-শৃগালের মত গর্তে পুতে রাখতে হবে। ইসলামী খিলাফত থাকলে তাকে তওবা করার জন্য ৩ দিন সময় দেয়া হবে এর মধ্যে তওবা না করলে তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদ-।
অতএব ৯৮ ভাগ মুসলমান ও রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম উনার দেশের সরকারের জন্য ফরয হচ্ছে- রাস্তা করার অজুহাতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত থেকে অতিসত্বর সরে আসা। পাশাপাশি দেশের প্রতিটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ তা’যীম-তাকরীম ও আদবের সাথে সংরক্ষনের সার্বিক ব্যাবস্থা গ্রহণ করা এবং প্রত্যেক পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায় এমনকি ঘরে ঘরে অসংখ্য-অগনিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ নির্মান করা ও নির্মানে সার্বিক সহযোগীতা করা। নচেৎ ইহকাল ও পরকালে কঠিন কাফফারা আদায় করতে হবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে উপরোক্ত ফতওয়া মোতাবিক আমল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
(বি: দ্র:- এখানে সংক্ষিপ্তভাবে সম্মানিত ফতওয়া মুবারক পেশ করা হলো। বর্তমান ফতওয়ায় ১২৩ খানা দলীল উল্লেখ করা হলো। এই বিষয়ে আরো অধিক দলীল-আদিল্লাহসহ বিস্তারিত ফতওয়া যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এ ২৬৪ তম সংখ্যা থেকে নিয়মিতভাবে পত্রস্থ হয়ে আসছে।)