৩৫ নং-সুওয়াল : খোলা তালাক কি? স্ত্রীর পক্ষে স্বামীকে তালাক দেয়া পবিত্র শরীয়ত উনার জায়িয কিনা জানতে বাসনা রাখি।


সুওয়াল : খোলা তালাক কি? স্ত্রীর পক্ষে স্বামীকে তালাক দেয়া পবিত্র শরীয়ত উনার জায়িয কিনা জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব : স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিল-মুহব্বত না হলে এবং স্বামী যদি তালাক না দেয় এই অবস্থার সমাধানের জন্য শরীয়তে খোলা তালাকের বিধান জারি কর হয়েছে। স্ত্রীর মন স্বামীর সাথে না মিললে প্রথমেই তালাক না চেয়ে সবর করবে এবং মিল-মুহব্বতের চেষ্টা করবে। কিছুতেই যদি সবর না করতে পারে এবং মন না বসাতে পারে তবে স্বামীকে বলতে পারে যে, আপনি কিছু টাকা পয়সা নিয়ে অথবা আপনার জিম্মায় যে মোহরের টাকা আছে তার দাবি আমি পরিত্যাগ করলাম, আমাকে রেহাই দিন। অত:পর উক্ত মজলিসেই স্বামী যদি বলে, ‘আমি তোমাকে ছাড়িয়া দিলামতবে এটাতে স্ত্রীর উপর এক তালাক বায়েন হবে। স্বামী তাকে আর ফিরায়ে আনার ক্ষমতা থাকবে না। অবশ্য ঐ মজলিসে স্বামী কিছু না বলে যদি চলে যায় বা স্বামী কিছু বলবার পূর্বেই যদি স্ত্রী উঠে চলে যায়, তারপর স্বামী বলে, ‘আচ্ছা আমি তোমাকে ছেড়ে দিলামতবে এটাতে খোলা হবে না। অর্থাৎ একই স্থানে সুওয়াল-জাওয়াব হওয়া চাই। এই উপায়ে স্ত্রী নিজেকে স্বামীর বিবাহ বন্ধন থেকে জুদা করে নেয়াকে খোলা তালাকবলে।
স্ত্রীর পক্ষে স্বামীকে তালাক দেয়া পবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে জায়িয নেই। হ্যাঁ তবে যদি তাফবীজে তালাক অর্থাৎ স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ক্ষমতা দান করেন। যেমন, স্বামী- স্ত্রীকে মৌখিক বললো বা লিখে দিলো, যদি আমি ছয় মাসের মধ্যে তোমার কোনো খোঁজ খবর না নেই, তবে আমি তোমাকে ক্ষমতা প্রদান করলাম, ছয় মাস অতীত হয়ে গেলে যে কোনো সময় তুমি তোমার নফসকে (নিজেকে) তালাক দিতে পারবে। স্বামী এরূপ বললে বা লিখে দিলে শর্ত পূর্ণ হওয়ার পর স্ত্রী নিজেকে তালাক দিয়ে ঐ স্বামী হতে মুক্ত হবার  ক্ষমতাশালি হবে বটে কিন্তু তাফবীজ ছহীহ হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্ত আছে। (১) স্বামীর কথার মধ্যে নফস বা নিজশব্দের উল্লেখ হওয়া জরুরী। বিয়ের আকদ হওয়ার পর এরূপ কথা বলা বা লিখা জরুরী। (২) বিয়ে আকদ হওয়ার পূর্বে এরূপ কথা লিখলে তাফবীজ ছহীহ হবে না এবং স্ত্রীর তালাল নেওয়ার ক্ষমতাও হবে না। (৩) স্বামীর কথার মধ্যে অতীত বা বর্তমানকালের ক্রিয়া থাকা চাই, নতুবা ভবিষ্যতকালের ক্রিয়া হলে তাফবীজ ছহীহ হবে না। (৪) স্বামী যে শর্ত করেছে, সেই শর্ত পূর্ণ হয়ে যাওয়া চাই। শর্ত পূর্ণ না হলে স্ত্রীর তালাক নেবার ক্ষমতা হবে না। (৫) স্বামীর শর্তের মধ্যে যে কোনো সময় শব্দের উল্লেখ হওয়া চাই, নতুবা যখন শর্ত পূর্ণ হবে তখনই সেই মজলিসেই যদি তালাক নেয়, তবে তা তালাক হবে। মজলিস পরিবর্তন হয়ে গেলে আর তালাক নেবার ক্ষমতা থাকবে না। অবশ্য যে কোনো সময় শব্দের উল্লেখ থাকলে শর্ত পূর্ণ হওয়ার পর যে কোনো সময় ইচ্ছা তালাক নিতে পারবে।
 আবা-৫

৩৪ নং- সুওয়াল :কোন্ কোন্ ব্যক্তিকে সালাম দেয়া বৈধ এবং কোন্ কোন্ ব্যক্তিকে সালাম দেয়া অবৈধ ।

 
সুওয়াল : পবিত্র ইসলাম উনার দৃষ্টিতে কোন্ কোন্ ব্যক্তিকে সালাম দেয়া বৈধ এবং কোন্ কোন্ ব্যক্তিকে সালাম দেয়া অবৈধ বা দেয়া যাবে না, জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব : পবিত্র ইসলাম উনার দৃষ্টিতে মুলমান ব্যতীত কোনো বিধর্মীকে সালাম দেয়া জায়িয নয়। আর মুসলমানদের মধ্যেও যার ফাসিক তাদেরকে সালাম দেয়া কারও মতে মাকরূপ, কারও মতে হারাম। (ফতওয়ায়ে শামী)
হ্যাঁ, তবে যদি কোনো ব্যক্তি কোনো ফাসিককে হিদায়েতের উদ্দেশ্যে সালাম দেয়, তবে সেটা জায়িয। যদি ফাসিক উস্তাদ হয়, তবেও উস্তাদের সম্মানে জন্য সালাম দেয়া জায়িয। আর যদি মুসলমান ও কাফির মিশ্রিত অবস্থায় থাকে তাহলে সালামের সময় বলতে হবে আসসালামু আলা মানিত্তাবাআল হুদা।অর্থাৎ ঐ ব্যক্তির উপর সালাম যিনি হিদায়েতের উপর রয়েছেন।

আবা-৫
৩৩ নং- সুওয়াল: গীবত কাকে বলে? কাদের গীবত করা জায়িয?


সুওয়াল: গীবত কাকে বলে? কাদের গীবত করা জায়িয?
জাওয়াব: কোনো মুসলমানের অুপস্থিতিতে তার সম্বন্ধে এমন কোনো কথা বলা যা শুনলে সে মুনঃক্ষুণ্ন হবে, এটারই নাম গীবত। গীবত মুখেও হয়, হাত বা চক্ষু প্রভৃতির ইঙ্গিতেও হয়। যেমন, কাউকে বুদ্ধিহীন ও বোকা বলা। কারও মান সম্ভ্রম, বংশগৌরব, কাজকর্ম, বাড়িঘর প্রভৃতি যে কোনো জিনিস যা তার সাথে সম্পর্কযুক্ত ওটার কোনো দোষত্রুটি প্রকাশ করা যা শুনলে তার মনে কষ্ট টায়। গীবত করা শক্ত কবীরাহ গুনাহ। আর গীবতের দ্বারা হক্কুল ইবাদতও নষ্ট হয়। মহান আল্লাহ পাক গীবত সম্বন্ধে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তোমরা কি তোমাদের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? অবশ্যই করবে না।অর্থাৎ গীবত করা আর মৃত মুসলমানের গোশত খাওয়া উভয়ই সমান।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ  মুবারক করেছেন, “গীবত জ্বিনা হতেও শক্ত গুণাহ।অতএব, এমন জঘন্য গুণাহ হতে আত্মরক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমারে জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। তথাপিও নিম্নোলিখিত কয়েক প্রকার লোকের দোষত্রত্রুটি বর্ণনা করলে গীবত হয় না।
(১) রাজ-বাদশাহ, আমীর-উমরাহদের ইসলাহ বা সংশোধনের জন্য তাদের দোষত্রুটিগুলি বর্ণনা করা হয়েছে গীবত হবে না। কেননা, তাদের দোষত্রুটি বর্ণনা না করলে তারা ইসলাহ হবে না।
(২) ফতওয়ার জন্য মুফতী ছাহেবের নিকট কারো দোষত্রুটি বর্ণনা করলে গীবত হবে না কারণ, সত্য কথা না বললে সঠিক ফতওয়া পাওয়া যাবে না।
(৩) কাজী ছাহেবের নিকট যদি কোনো ব্যক্তি বিচারপ্রার্থী হয়ে বিপরীত পক্ষের দোষত্রুটি বর্ণনা করে, তবে গীবত হবে না। কারণ, বিপরীত পক্ষের পূর্ণ বিবর না দিলে সঠিক বিচার হবে না।
(৪) ফাসিকের দোষত্রুটি বর্ণনা করলে গীবত হয় না। ফাসিক বলা হয় তাদেরকে যারা ফরয-ওয়াজিব ও সুন্নতে মোয়াক্কাদা তরক করে। বা সব সময় কবীরা গুনাহ করে।
(৫) কোন ব্যক্তি যদি মশহুর হয়ে যায় এমন কোনো নামে যা দোষত্রুটিযুক্ত। যেমন, বোবা, তোতলা, লুলা, ল্যাংড়া বলে ডাকা হয় তাহলে সেটা গীবত হবে না। যেমন, একজন বড় আলিমের নাম ছিল আমাশ (অর্থ- যার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ে)। বাদশাহ নাম ছিলো তৈমুর লঙ্গ (অর্থ ঘোড়া)।
(৬) উলামায়ে সূএর দোষত্রুটি বর্ণনা করলে গীবত হয় না। কেননা, আলেম দ্ইু প্রকার। এক প্রকার উলামায়ে হক্ব ও দ্বিতীয় প্রকার উলামায়ে সূবা বিদয়াতী মাওলানা। উলামায়ে হক্ব হলো উনারা, যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টির মাধ্যমে দ্বীন যিন্দা করার জন্য দুনিয়া বিসর্জন দিতে প্রস্তুত থাকেন। আর উলামায়ে সূহলো তারা, যারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টির গুরুত্ব না দিয়ে, দ্বীনকে বিসর্জন দিয়ে দুনিয়া হাছিল করে।
(৭) কোনো পিতা যদি তার ছেলেকে বিয়ে করাতে চায় বা মেয়েকে বিয়ে দিতে চায়; তাহলে বিপরীত পক্ষের ছেলে বা মেয়েদের প্রতিবেশীদের কাছে সেই ছেলে বা মেয়ে সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে এবং প্রতিবেশীরা যদি সত্য কথা বলতে গিয়ে কিছু দোষত্রুটি বর্ণনা করে তাহলে সেটা গীবত হবে না।
 ্আবা-৫
৩২ নং- সুওয়াল : অনেকে বলে থাকে, মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কালাম পাক উনার সংখ্যা ৯০ হাজার।

সুওয়াল : অনেকে বলে থাকে, মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কালাম পাক উনার সংখ্যা ৯০ হাজার। তার মধ্যে ৩০ হাজার জাহিরী ও ৬০ হাজার বাতিনী। তাদের একথাগুলো ঠিক কিনা?
জাওয়াব : যদি কোনো ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার ৯০ হাজার পবিত্র কালাম শরীফ নাযিল করেছেন তার মধ্যে ৩০ হাজার জাহিরী ও ৬০ হাজার বাতিনী তাহলে সে কুফরী করলো এবং কাফির হবে। (শরহে আকাইদে নছফী এবং অন্যান্য আকাইদের কিতাব দ্রষ্টব্য)
আবা-৫
৩১ নং- সুওয়াল : ছূফী শব্দের অর্থ কী? এ সম্বন্ধে জানতে চাই।

সুওয়াল : ছূফী শব্দের অর্থ কী? এ সম্বন্ধে জানতে চাই।
জাওয়াব : ছূফী শব্দটি দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। একটি লোগাতী বা আভিধানিক আর দ্বিতীয়টি ইস্তেলাহী বা প্রচলিত। আভিধানিক অর্থে ছূফী বলতে বুঝায়, যারা পশমী কাপড় পরিধান করে, আর প্রচলিত অর্থে ছূফী বলতে বুঝায়, যারা গাইরুল্লাহকে ত্যাগ করে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতে মশগুল থাকে। মূলত ইলমে তাছাউফে ছূফী বলতে বুঝায় যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ হওয়ার জন্য কোশেশে মশগুল হয়ে গাইরুল্লাহ থেকে বিরত আছেন।

আবা-৫
৩০ নং- সুওয়াল :ইবাদত কিভাবে একাগ্রতার সাথে আদায় করতে পারবো ।

সুওয়াল : মন বার বার মহান আল্লাহ পাক উনার স্মরণ থেকে গাফিল হয়ে যায়। ইবাদতে মন কিছুতেই বসাতে পারি না। এজন্য আমার জন্য দোওয়া করবেন। আর ইবাদত কিভাবে একাগ্রতার সাথে আদায় করতে পারবো, তা বলে দিন।
জাওয়াব : একাগ্রতা বা মনোযোগের সাথে ইবাদত করতে হলে ক্বলব ইসলাহ বা শুদ্ধ করতে হবে। ক্বালব ইসলাহ বা শুদ্ধ ব্যতীত ইবাদতে একাগ্রতা বা মনোযোগ আসবে না। কেননা, নূরে  মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আদম সন্তানের শরীরে এক টুকরা গোশত আছে যদি সেটা শুদ্ধ হয়ে যায় তাহলে সমস্ত শরীর শুদ্ধ হয়ে যায়। আর যদি সেটা অশুদ্ধ হয়ে যায় তাহলে সমস্ত শরীর বরবাদ হয়ে যায়। সাবধান ওটা হচ্ছে ক্বলব। (বুখারী শরীফ)
কাজেই ক্বলব ইছলাহ ছাড়া ইবাদতে একাগ্রতা আসবে না এবং ক্বলব ইসলাহ হবে না, মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির ছাড়া। সেজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, সাবধান! মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির দ্বারা দিল ইতমিনান হয়। এবং এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “শয়তান আদম সন্তানের ক্বলবের উপর বসে, আর যখন মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির থেকে গাফিল হয় তখন শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয়।
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই সাবেত হয় যে, যিকির ব্যতীত দিল ইছলাহ বা ইতমিনান হবে না এবং শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচা যাবে না। কাজেই যিকির করতে হবে। আর যিকির কতে হলে কোনো হক্কানী শায়েখ বা পীরানে তরীক্বত উনার নিকট বাইয়াত হয়ে ছোহবত ইখতিয়ার করতে হবে। সেজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।
কাজেই একাগ্রতার সাথে ইবাদত করতে হলে পীর ছাহেবের ছোহবত ইখতিয়ার করে বেশি বেশি যিকির করতে হবে এবং যিকির করে দিল ইসলাহ কতে হবে। তাহলেই একাগ্রতার সাথে ইবাদত করা যাবে অন্যথায় সম্ভব নয়।
আবা-৫
২৯ নং- সুওয়াল :পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লিখিত উলিল আমর সম্পর্কে জানতে চাই।

সুওয়াল : পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উলীল আমরগণকে অনুসরণ করতে বলেছেন। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লিখিত উলিল আমর সম্পর্কে জানতে চাই।
জাওয়াব : মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উলিল আমর বলতে উনাদেরকেই বুঝিয়েছেন যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ মুতাবিক চলেন এবং পরিচালনা করেন। এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় কোনো কোনো তাফসীরের মধ্যে ছয় প্রকার লোকের কথা উল্লেখ করেছেন। (১) মাযহাবের ইমামগণ, (২) তরীক্বতের ইমাম, (৩) পীরানে তরীক্বত, (৪) মুফতীগণ, (৫) কাজী ছাহেব, (৬) ইনসাফগার বাদশাহ। (তাফসীরে আযীযী)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উলিল আমরউনার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যাকে দেখলে মহান আল্লাহ পাক উনার কথা স্মরণ হয়, যার কথা শুনলে দ্বীনি ইলম বৃদ্ধি পায় এবং যার আমল দেখলে পরকালের আমল করতে ইচ্ছা হয়।
আবা-৫
২৮ নং- সুওয়াল : মৃত ব্যক্তির গোছল করানোর পূর্বে তার নিকটে পবিত্র কুরআন শরীফ পড়া জায়িয আছে কিনা?

সুওয়াল : মৃত ব্যক্তির গোছল করানোর পূর্বে তার নিকটে পবিত্র কুরআন শরীফ পড়া জায়িয আছে কিনা?
জাওয়াব : মৃত ব্যক্তিকে গোছল করানোর পূর্বে তার নিকট পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা জায়িয নেই। যদি কোনো ব্যক্তি তিলাওয়াত করতে চায় তাহলে, লাশ যে ঘরে বা যে রুমে রাখা হয়েছে তার নিকটবর্তী অন্য কোনো রূমে তিলাওয়াত করতে পারবে। অথবা লাশ যদি এমন কোন রূমে রাখা হয় তা যদি অনেক বড় হয়, তবে রুমের এক পাশে লাশ রাখবে এবং অন্য পশে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতে পারবে। আর লাশ গোছল করানোর পর নিকটবর্তী বা দূরবর্তী যে কোন স্থানে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলায়াত জায়েয আছে।
 আবা-৪

২৭ নং- সুওয়াল : যে সকল স্থানে একাধারে ৬ মাস রাত ৬ মাস দিন অথবা ৯ মাস রাত ৩ মাস দিন অথবা ৩ মাস রাত ৯ মাস দিন থাকে সে সকল স্থানে নামায, রোযা, ঈদ কিভাবে আদায় করতে হবে তা জানতে বাসনা রাখি।


সুওয়াল : যে সকল স্থানে একাধারে ৬ মাস রাত ৬ মাস দিন অথবা ৯ মাস রাত ৩ মাস দিন অথবা ৩ মাস রাত ৯ মাস দিন থাকে সে সকল স্থানে নামায, রোযা, ঈদ কিভাবে আদায় করতে হবে তা জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব : মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মুমিনদের উপর নির্ধারিত সময় নামায আদায় করাকে ফরয করা হয়েছে।” (প্রত্যেক ওয়াক্তের নামায ওয়াক্ত হলেই আদায় করা ফরয)
পবিত্র রমযান শরীফ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যারা রমযান শরীফ পাবে (উপস্থিত হবে) তারা যেন অবশ্যই পবিত্র রমযান শরীফ রোযা রাখে। যাকাত সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা যাকাত আদায় কর।
সিহাহ সিত্তাহ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ছাহেবে নেছাব অর্থাৎ নিছাব পরিমাণ সম্পত্তিওয়ালা ব্যক্তিকে তার সম্পদের উপর এক বৎসর অতিবাহিত হলে যাকাত আদায় করতে হবে।
যেমন জোহরের ওয়াক্ত না হলে জোহরের নামায আদায় করা ফরয হয় না। পবিত্র রমযান শরীফ উনার মাস না পাওয়া গেলে কোনো ব্যক্তির জন্য পবিত্র রমযান শরীফ উনার রোযা রাখা ফরয হয় না। এবং এক বৎসর অতিবাহিত না হলে কোনো ব্যক্তির সম্পদের উপরও যাকাত ফরয হয় না। কিন্তু যে সমস্ত দেশে এক বৎসর অতিবাহিত না হলে কোনো ব্যক্তির সম্পদের উপরও যাকাত ফরয হয় না। কিন্তু যে সমস্ত দেশে এক বৎসরের ছয় মাস রাত, ছয় মাস দিন অথবা নয় মাস রাত, তিন মাস দিন অথবা তিন মাস রাত নয় মাস দিন থাকে সে সকল স্থানে মূলত উপরোক্ত আয়াতসমূহ মোতাবেক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযই ফরয হয়। আর পবিত্র রমযান শরীফ উনার রোযা কারো উপরে ফরয হয় না এবং যাকাতও ফরয হয় না। কাজেই যদি কোনো ব্যক্তি বৎসরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযই শুধু পড়ে আর পবিত্র রমযান শরীফ উনার রোযা না রাখে এবং যাকাত আদায় না করে, তাহলে তার পক্ষে দ্বীনদার পরহেযগার হওয়া কঠিন। মূলত মহান আল্লাহ পাক তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন (২৪ ঘণ্টা দিবা-রাত্রির মধ্যে) বৎসরে এক মাস পবিত্র রমযান শরীফ উনার রোযা রাখাকে ফরয করেছেন। এবং বৎসরে একবার যাকাত আদায় করাকে ফরয করেছেন। যেহেতু প্রত্যেক দেশেই লোকজন চাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্য, খাওয়া দাওয়া, ঘুম ইত্যাদি চব্বিশঘন্টা হিসাব করে থাকে। সেহেতু নামায, রোযা, যাকাত ইত্যাদি চব্বিশ ঘণ্টা হিসাবে দিন, মাস, বৎসর বের করে আদায় করতে হবে। সেজন্য মোহাক্কিকীন মোদাক্কেকীন ওলামায়ে কিরামগণ উনারা ফায়সালা দিয়েছেন, যে সমস্ত এলাকার ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকেই এটাই ছাবিত হয় যে, ওয়াক্ত না পাওয়া গেলে নামায আদায় এলাকাবাসীগণ তাদের সময়সূচী সংগ্রহ করে সে মোতাবেক তাদের নামায, রোযা, যাকাত ইত্যাদি আদায় করতে হবে। অথবা  পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনার সময়সূচী সংগ্রহ করে তাদের নামায, রোযা, যাকাত আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য যে, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা তদ্রুপ আদায় করতে হবে।
শামী ও হাসিয়ায়ে তাহতাবী কিতাবে পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে উল্লেখ করেছেন, চব্বিশ ঘণ্টা দিবা-রাত্রির মধ্যে যে পরিমাণ সময়ান্তর নামায পড়া হয়, সে সময়, সে পরিমাণ সময় বাদ দিয়ে প্রত্যেক দিনের প্রত্যেক ওয়াক্তের নামায আদায় করতে হবে।
শামী ও হাসিয়ায়ে তাহতাবী কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে- রোযা, যাকাত, হজ্জ, ইদ্দত কেনাবেচার মুদ্দত, বায়ে সালাম ইত্যাদি যাবতীয় কার্য চব্বিশ ঘন্টা দিবারাত্রির নিয়মে পরিমাণ করা সমাধা করবে। কিন্তু গ্রীষ্ম, বর্ষা ও বসন্ত ইত্যাদি ঋতুসমূহের প্রতি দৃষ্টি রাখবে। কেননা ঋতু ভেদে দিবা রাত্রি বড় ছোট হয়ে থাকে।
 আবা-৪

২৬ নং -  সুওয়াল :অনেকে বলে, পীর ছাহেব উদাদের নিকট মুরীদ না হলে বেহেশতে যাওয়া যাবে না।


সুওয়াল : আমার পিতা মাতা বিগত এক বৎসর হলো মারা গিয়েছেন। এবং আমার বর্তমান বয়স ৩৫ বছর। আমি কোনো পীর ছাহেব উনার মুরীদ হয়নি। অনেকে বলে, পীর ছাহেব উদাদের নিকট মুরীদ না হলে বেহেশতে যাওয়া যাবে না। কথাটি সত্য না মিথ্যা জানতে বাসনা রাখি। এবং যদি মুরীদ হতেই হয় তবে কোন্ ধরনের পীর ছাহেব বা দরবেশ উনাদের কাছে মুরীদ হতে হবে তা আপনাদের কাছে জানতে চাই।
জাওয়াব : বেহেশতে যাওয়া না যাওয়া মহান আল্লাহ পাক উনার ইখতিয়ার। কাজেই পীর ছাহেব উনার নিকট মুরীদ না হলে বেহেশতে যাওয়া যাবে না আর পীর ছাহেব উনার নিকট মুরীদ হলে বেহেশতে যাওয়া যাবে এ কথা বলা শুদ্ধ হবে না। তবে একথা অবশ্যই সত্য যে, কোনো খালিছ আল্লাহওয়ালা পীর ছাহেব উনার নিকট মুরীদ হলে এবং উনার তরীক্বায় কায়িম থাকলে বেহেশতে যাওয়া সহজ হবে। আর কোথাও মুরীদ না হলে বেহেশতে যাওয়া বা নাজাত পাওয়া সত্যিই কঠিন ব্যাপার। কেননা, পীর ছাহেব গ্রহণ করা ও ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করা উভয়াই ফরয। কারণ, ইলমে তাছাউফ ছাড়া দিল ইছলাহ বা সংশোধন হয় না। আর যে দিল ইসলাহ বা সংশোধন হয়নি তার আমল মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কবুলযোগ্য নয়। কাজেই, পীর ছাহেব গ্রহণ করে ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করে দিল ইসলাহ বা সংশোধন করতে হবে। অথবা ইসলাহ বা সংশোধণ করার কোশেশ করতে হবে। কেননা, পীর ছাহেব ছাড়া ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করা যায় না। এই জন্য হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিমিয়ায়ে সাআদাতকিতাবে, হযরত গাউসুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফাতহুর রাব্বানীকিতাবে, হযরত ইসমাইল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তাফসীরে রুহুল বয়ান  ইত্যাদি  আরো অনেক কিতাবে পীর ছাহেব গ্রহণ করা ফরয বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা বরা হয়, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের জন্য কোন সঙ্গী উত্তম হবে? (আমরা কার ছোহবত ইখতিয়ার করবো)। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, যাকে দেখলে মহান মহান আল্লাহ পাক উনার কথা স্মরণ হয়, যার কথা শুনলে দ্বীনি ইলম বৃদ্ধি পায় এবং যার আমল দেখলে পরকালের আমল করতে ইচ্ছে হয় (পরকালের কথা স্মরণ হয়)। অর্থাৎ যিনি সীরত, ছূরত ও আমল ইত্যাদিতে সম্পূর্ণ সুন্নত মুবারক উনার পাবন্দ।
হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমুতল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, হুযূর! লোকেরা আপনার পর কার ছোহবত ইখতিয়ার করবে বা কার নিকট মুরীদ হবে। তিনি বললেন, তোমরা যাকে আল্লাহওয়ালা মনে করো উনার নিকট আসা-যাওয়া করতে থাকবে। যদি আসা যাওয়ার করার কারণে দিলে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ও হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত মুবারক পয়দা হয় ও নেক কাজ করার ইচ্ছে হয় এবং দুনিয়ার মুহব্বত দূর হয়ে যায়, তবে উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করা ও উনার নিকট মুরীদ হওয়া জরুরী। আর যদি উনার নিকটে আসা যাওয়ার করার কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার ও হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত তো বৃদ্ধি হয়ই না, বরং দুনিয়াবী মুহব্বত বৃদ্ধি পায় আর নেক কাজ করার ইচ্ছে হয় না বা আমলে পরিবর্তন হয় না তবে উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করা বা উনার কাছে আসা যাওয়া করা সম্পূর্ণ নাজায়িয। আর তার নিকট মুরীদ হওয়া হারাম।
আবা-৪

২৫ নং - সুওয়াল : আমি একটি ধর্মীয় পত্রিকায় পেয়েছি, কনে পছন্দ করার মূল দায়িত্ব বরের।

সুওয়াল : আমি একটি ধর্মীয় পত্রিকায় পেয়েছি, কনে পছন্দ করার মূল দায়িত্ব বরের। এমনকি বরের পিতার ও বিয়ের পূর্বে কনেকে দেখা শরীয়তসম্মত নহে। এ কথাটি কতটুকু সত্য বিস্তারিত জানতে চাই।
জাওয়াব : পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মেয়েদেরকে বিবাহ করতে হবে। তাদের পরহেযগারী, স্বচ্ছলতা, সৌন্দর্য ও বংশ দেখে।তবে তাদের পরহেযগারীতাকে প্রাধান্য দিতে হবে বেশি। যদিও পাত্রই পাত্রীকে দেখে পছন্দ করার মূল ব্যক্তি। তথাপিও পাত্রের পিতা ও মাতার কিছু দায়িত্ব রয়েছে। যেহেতু পবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে পর্দা করা ফরয। তাই পিতা তার ছেলেকে বিবাহ করানোর পূর্বে ছেলের জন্য নির্ধারিত পাত্রীকে দেখতে পারবে না। তবে ছেলে মেয়েকে শারিরীক ভাবে বিস্তারিত দেখার দায়িত্ব পিতারই। আর মেয়েকে শারীরিক ভাবে বিস্তারিত দেখার দায়িত্ব ছেলের মায়ের উপর।

আবা-৪
২৪ নং- সুওয়াল : আউলিয়া কাকে বলে? কিরূপে আউলিয়া হওয়া যায়? বিস্তারিত জানতে চাই।

সুওয়াল : আউলিয়া কাকে বলে? কিরূপে আউলিয়া হওয়া যায়? বিস্তারিত জানতে চাই।
জাওয়াব : আউলিয়া শব্দটি বহুবচন। তার অর্থ হলো, বন্ধুগণ। আর আউলিয়া উল্লাহ শব্দের অর্থ হলো মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু। তার একবচন হলো ওলী। ওলী শব্দের অর্থ হলো বন্ধু। আর ওলীআল্লাহ শব্দের অর্থ হলো মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে, “মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ইলম দুপ্রকার। প্রথম প্রকার হলো, ইলমে তাছাউফ বা ক্বালবী ইলম। যা ফায়দাজনক বা উপকারী ইলম। দ্বিতীয় প্রকার ইলম হলো, ফিক্বাহ বা জবানী ইলম, যা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে বান্দার জন্য দলীলস্বরূপ।
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় হযরত মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যা মিশকাত শরীফ কিতাব উনার ব্যাখ্যা মিরকাত শরীফকিতাব উনার মধ্যে হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি শুধু ইলমে ফিক্বাহ শিখলো, ইলমে তাছাউফ শিখলো না সে ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত। আর যে ব্যক্তি ইলমে তাছাউফের বা মারিফাতের দাবীদার অথবা ইলমে ফিক্বাহকে গুরুত্ব দেয় না সে ব্যক্তি যিন্দীক বা কাফির। আর যে উভয়টিই শিক্ষা করলো, তিনি মুহাক্কিক বা আল্লাহওয়ালা।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করেন বান্দার মধ্যে যারা আলিম।আর মিশকাত শরীফউনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, আল্লাহওয়ালা আলিম উনারাই যারা ইলম অনুযায়ী আমল করেন।
দুনিয়ার লোভ আলিমের অন্তর থেকে ইলম বের করে দেয়। হযরত হাসান বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহওয়ালা আলিমগণের সংজ্ঞায় বলেন, যিনি দুনিয়া থেকে বিরাগ, পরকালের প্রতি আসক্ত, গুণাহ সম্পর্কে সদা সতর্ক, সর্বদা ইবাদতে মশগুল, পরহেযগার বা সুন্নতে পাবন্দ, কোন মুসলমানের মান সম্ভ্রম নষ্ট করেন না এবং তাদের মালের প্রতিও লোভ করেন না, সব সময় নছীহত করেন। যার মধ্যে এ সমস্ত গুণ থাকবে তিনিই আল্লাহওয়ালা।
সুতরাং উপরোক্ত গুণ সম্পন্ন ব্যক্তিই মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, যারা আমাকে পাওয়ার জন্য কোশেশ করে, অবশ্যই অবশ্যই আমি তাদেরকে আমাকে পাওয়ার রাস্তাগুলি জানিয়ে দেই। নিশ্চয়ই যারা মুহসিন (নেককার) মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের সাথে আছেন।
মহান আল্লাহ পাক অন্য এক পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা নেক (আল্লাহওয়ালা) লোকের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করো।
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহওয়ালা বা মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী হতে হলে মহান আল্লাহ পাক উনার ওলীগণ উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করে ইলমে তাছাউফ অর্জন করলে মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী হওয়া যায়।
আবা-৪
২৩ নং- সুওয়াল : পাক পাঞ্জাতন কারা? উনাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।

সুওয়াল : পাক পাঞ্জাতন কারা? উনাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
জাওয়াব : পাক শব্দের অর্থ পবিত্র। পাঞ্জা শব্দের অর্থ পাঁচ আর তিন শব্দের অর্থ শরীর। একত্রিত ভাবে পাক পাঞ্জাতন শব্দের অর্থ পাঁচটি পবিত্র শরীর বা দেহ। সাধারণত পাক পাঞ্জাতন বলতে ১. হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ২. হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম। ৩. হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম। ৪. হযরত ইমাম হাসান আলাইহাস সালাম। ৫. হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদেরকেই বুঝায়ে থাকেন। কেউ কেউ আবার ১. হাবীবুল্লাহ, নূরে মজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ২. হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম। ৩. হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম। ৪. হযরত উছমান যিন নূরাইন আলাইহিস সালাম। ৫. হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ উনাদেরকে বুঝায়ে থাকেন।
আবা -৪
২২ নং- সুওয়াল : জনৈক খতিব উনার নাম লিখতে *** লিখেন। এই নাম দর্শনে কতিপয় আলিম ও ব্যাকরণ বিশারদ ব্যাঙ্গোক্তি করেছে। ফলে মৌলভী শায়েখ হামিদী নামক ব্যক্তি বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন। উক্ত নামের আসল আভিধানিক অর্থ কি? এবং শরীয়ত অনুযায়ী ** এ নামকরণ বৈধ কিনা, কিতাবের হাওলাসহ জানতে চাই।


সুওয়াল : জনৈক খতিব উনার নাম লিখতে *** লিখেন। এই নাম দর্শনে কতিপয় আলিম ও ব্যাকরণ বিশারদ ব্যাঙ্গোক্তি করেছে। ফলে মৌলভী শায়েখ হামিদী নামক ব্যক্তি বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন। উক্ত নামের আসল আভিধানিক অর্থ কি? এবং শরীয়ত অনুযায়ী ** এ নামকরণ বৈধ কিনা, কিতাবের হাওলাসহ জানতে চাই।

জাওয়াব : ** শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো মুরুব্বী, সর্দার, আঁকা ইত্যাদি। আর পবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে * শব্দের অর্থ হলো বুযূর্গ, আলিম, ফক্বীহ, দ্বীনদার শরীয়তের পাবন্দ। * এর আভিধানিক অর্থ হলো বৃদ্ধ। আর পবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে * শব্দের অর্থ হলো বুযূর্গ, পীর, ওলী, পেশোয়া, মুর্শিদ ইত্যাদি। * এর অর্থ হলো যার প্রশংসা করা হয়েছে। হামিদমহান আল্লাহ পাক উনার একটি ছিফতী নাম মুবারকও। হামিদী শব্দের * ইয়ায়ে নিছবতী  যে ইয়া সম্পর্কে বুঝায়)। যদি কোনো ব্যক্তির নাম শায়খ হয় আর সে আলিম হয়, তবে তাকে মৌলভী শায়খ বলা যায়। আর হামিদী শব্দ যেমন কেউ যদি হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম উনার বংশধর হয় তবে তিনি ছিদ্দীক্বী, কেউ যদি হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার বংশধর হয়, তবে তিনি ফারুকী লিখেন। আবার কেউ যদি দেওবন্দ মাদ্রাসায় পড়ে তবে সে কাসিমী লিখে। কারণ, দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতার নাম হলো মাওলানা কাসেম ছাহেব।
 মৌলভী শায়েখ হামীদি এর পূর্ব পুরুষগণের মধ্যে কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম যদি হামীদবা আব্দুল হামীদথেকে থাকে অথবা তার কোনো উস্তাদের নাম যদি হামীদবা আব্দুল হামীদহয়, তবে তার সাথে নিসবত বা সম্পর্ক বুঝানোর জন্যে যদি * রেখে থাকে তবে ঠিক আছে। অথবা মৌলভী শায়েখ হামীদী সাহেব যে স্থানে থাকে সে স্থানের নাম হামীদপুর বা এ ধরনের কোনো নাম হয়ে থাকে তবে হামীদী লেখা শুদ্ধ হবে। যেমন, দিল্লীর বাসিন্দা হলে দেহলভী, কাশ্মিরের বাসিন্দা হলে কাশ্মিরী ও সিলেটের বাসিন্দা হলে সিলেটি ইত্যাদি সম্বন্ধসূচক শব্দ অনেকে তাদের নামের সাথে ব্যবহার করে থাকে।
কাজেই মৌলভী শায়েখ হামীদি ছাহেবের নাম তার পূর্ব পুরুষগণের কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি অথবা তার কোনো উস্তাদ অথবা কোনো স্থানের নামের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়ে থাকে, তাহলে মৌলভী শায়েখ হামীদ অথবা মৌলভী শায়েখ আব্দুল হামীদ লেখাটাই যুক্তিযুক্ত। (লিসানুল আরব, আল কামুস আল মুহিত, মিসবাহুল লুগাত, আল মুনজিত, লুগাতে হীরা, সাইদী, ফিরোজুল লুগাত।)
আবা-৪
২১ নং- সুওয়াল : হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে সংক্ষেপে জানতে চাই।


সুওয়াল : হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে সংক্ষেপে জানতে চাই।
জাওয়াব : হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ভারতের পূর্ব পাঞ্জাবের পাতিয়ালা রাজ্যের উমরগড় নিজামতের ফতেহগড় তহশীলে ৯৭১ হিজরী সনের ১৪ই শাওয়াল রোড শুক্রবার সুবহে সাদিকের সময় জন্মগ্রহণ করেন। উনার পিতা ছিলেন শায়েশ আব্দুল আহাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি চিশতীয়া তরীক্বার একজন বিশিষ্ট বুযূর্গ ছিলেন। উনার নাম মুবারক ছিলো শায়খ আহমদ। উনার কুনিয়াত ছিলো আবুল বারাকাত বদরুদ্দিন। তিনি দ্বিতীয় সহস্রাব্দের সংস্কারক ছিলেন। সেজন্য উনাকে মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলা হয় এবং তিনি মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি নামেই মশহুর। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যা কিনা জামউল জাওয়াম ও জামেউস দোরার কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে। উনার সংস্কারের বিশেষ বিশেষ দিকগুলো হচ্ছে বাদশাহ আকবর প্রবর্তীত দ্বীনে ইলামীকে রদ করে বা মিটিয়ে দিয়ে তৎস্থলে ইসলামী আইন কানুন প্রবর্তন বা জারী করা। কারণ, বাদশাহ আকবর কতিপয় উলামায়ে সূঅর্থাৎ দুনিয়াদার আলিম যেমন, মোল্লা মোবারক নাগরী, আবুল ফজল, ফৈজী এবং আরো অন্যান্যদের সহযোগিতায় হিন্দু পারসিক জৈন, জরথুষ্ট, রাজপুত্র ইত্যাদি ধর্মের সমন্বয়ে এক নতুন ধর্ম প্রবর্তন করে, যার নাম রাখা হয় দ্বীনে ইলাহী। দ্বীনে ইলাহীর অনুসারীদের চেলা বলা হতো। দ্বীনে ইলামের মধ্যে বিশেষভাবে সূর্য পূঁজা, মাথায় টিকি রাখা ও মুখের দাড়ি কাটাকে প্রাধান্য দেয়া হতো। ইসলাম যাকে হালাল বলেছে তাকে তারা হালাল বলতো। যেমন শুকর, বাঘ, ভল্লুক ইত্যাদি জন্তুকে খাওয়া তাদের ধর্মে হালাল ছিলো। আর গরু, ছাগল, বকরী, ভেড়া ইত্যাদি প্রাণী খাওয়া তাদের ধর্মে অর্থাৎ দ্বীনে ইলাহীতে হারাম ছিলো। এছাড়া তারা শরাব পান করাকে হালাল মনে করে। তাদের কলেমা ছিলো লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আকবারু খলীফাতুল্লাহ। দ্বীনে ইলাহীতে সালাম প্রথার পরিবর্তে সেজদার প্রথা জারী ছিলো। দ্বীনে ইলাহীর মূল বিষয়ই ছিলো দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধিতা করা। তাছাড়া হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইলমে তাছাউফ সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করে দিয়ে সঠিক ধারণা তুলে ধরেন। এবং তাছাউফের মাকামাত সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য দান করেন। যা পূর্বে কেউই উল্লেখ করেনি। তিনি সমস্ত তরীক্বাগুলিকে সংস্কার করেন। উনার মর্যাদা মর্তবা সম্পর্কে অনেক কিতাবে অনেক কিছু বর্ণনা করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য বর্ণনা পেশা করা হলো।
হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মাবাদা মাআদনামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন, আমি একদিন আমার সঙ্গী-সাথীগণ উনাদের সাথে বসা ছিলাম, তখন আমার দৃষ্টি স্বীয় খারাবীর দিকে পতিত হলো। কিছুক্ষণ এই অবস্থায় থাকার পর আমার মনে হলো, ফকিরী দরবেশীর সাথে আমি পূর্ণভাবে সম্পর্কহীন। মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য যে অবনত হয়, মহান আল্লাহ পাক তাকে উচ্চ করেন। এই পবিত্র হাদীছ শরীফ অনুযায়ী মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাকে মাটি হতে উত্তোলন করলেন এবং আমি আমার অন্তকরণে শব্দ শুনতে পেলাম- আমি আপনাকে ক্ষমা করলাম এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যারা আপনাকে মধ্যস্থতায় অথবা বিনা মধ্যস্থতায় ওছীলা করবে তাদেরকেও ক্ষমা করে দিলাম। এই কথা আমার অন্তরে পুনঃ পুনঃ নিক্ষিপ্ত হচ্ছিলো। যখন আমি সন্দেহহীন হলাম, তখন এটা প্রকাশ করার জন্য আদেশ প্রাপ্ত হলাম। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ ইলহাম দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়, যারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত এ তরিক্বায় দালিখ হবে এবং মউতের পূর্ব পর্যন্ত কায়িম থাবে তাদের পরকালে নাজাত নিশ্চিত।
হযরত মুজাদ্দিদ আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি কিছুসংখ্যক কিতাবও রচনা করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিতাবসমূহ হচ্ছে, ‘মাকতুবাত শরীফ’, ‘মাআরীফে লাদুন্নিয়া’, ‘মাব্দা মাআদ’, ‘মুকাশিফাতে আইনিয়াইত্যাদি। কাইয়্যূমে আউয়াল হিসাবে তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেন। উনার সাত ছেলে এবং তিন মেয়ে ছিলো। উনার তৃতীয় ছেলে খাজা মুহম্মদ মাছূম উরওয়াতুল উসক্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ওফাতের পর গদিন্নশীন হন। তিনি কাইয়্যূমে ছানী ছিলেন।
হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ১০৩৪ হিজরীর ২৮শে ছফর, বুধবার পূর্বাহ্ণে ৬৩ বৎসর বয়সে ইন্তিকাল ফরমান। উনার মাজার শরীফ সিরহিন্দ শরীফ-এ অবস্থিত।
আবা-৪