১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৮ (দানশীল ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু)

দানশীল ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু- পর্ব- ৮

একবার একজন মহিলা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে এসে আরয করলেন, উনার অবশ হাতটি ভালো করে দিতে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো সবই জানেন, সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ইলমই উনাকে হাদিয়া মুবারক করা হয়েছে। তবুও উম্মতদের নছীহতের জন্য তিনি জিজ্ঞাসা মুবারক করলেন যে, উনার এই হাতটির এমন অবস্থা হলো কিভাবে?

মহিলা বললেন, 'আমি একদিন স্বপ্নে দেখি কিয়ামত কায়িম হয়ে গিয়েছে। কোটি কোটি মানুষ তাদের আমল অনুযায়ী একেক হালতে আছে। আমি ভাবলাম আমার পিতা-মাতা তো ইন্তিকাল করেছেন। উনারা কি অবস্থায় আছেন? আমি খুঁজতে খুঁজতে আমার আম্মাকে দেখলাম যে, তিনি জাহান্নামের কঠিন আগুন পরিবেষ্টিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তার হাতে কেবল এক টুকরা চর্বি আর এক টুকরা কাপড়। সেগুলো দিয়ে তিনি সেই ভয়াবহ আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। তার এই অবস্থা হয়েছে কারণ তিনি দুনিয়াতে থাকতে নামায রোযা করেছেন, স্বামীর খেদমত করেছেন ঠিকই; কিন্তু শুধু সেই চর্বি আর কাপড়ের টুকরাটি ছাড়া আর কিছুই দান খয়রাত করেননি। নাঊযুবিল্লাহ! তাই কৃপণদের জন্য নির্ধারিত আযাবে তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। নাঊযুবিল্লাহ! আমি তখন আব্বার কথা জানতে চাইলাম। আম্মা বললেন যে, যেহেতু তিনি অনেক দানশীল ছিলেন, নিশ্চয়ই জান্নাতে আছেন।

আমি এবার আব্বাকে খুঁজতে লাগলাম। দেখলাম যে তিনি হাউজে কাওছারের পাশে অত্যন্ত ইতমিনানের সাথে পানি পান করছেন এবং লোকজনকে পানি পান করাচ্ছেন। আমি দৌড়ে আব্বার কাছে গেলাম এবং দুঃসংবাদ দিয়ে পানি চাইলাম। কিন্তু আব্বা অপারগতা প্রকাশ করে জানালেন যে, কোনো জাহান্নামীর জন্য জান্নাতের নিয়ামত জায়িয নেই। তাই তিনি দিতে পারবেন না। তখন আমি আব্বার অগোচরে কিছু পানি নিয়ে আম্মার কাছে গেলাম। কিন্তু আম্মাকে পানি দেয়া মাত্র আমার হাতটি অবশ হয়ে গেলো। তারপর থেকে এটা সেই অবস্থাতেই আছে।'

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো রহমাতুল্লিল আলামীন। তিনি তখন সেই মহিলা ছাহাবী উনার হাতটি ভালো করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!


১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৭ (মু'মিন বান্দাদের কবরের জীবন)

মু'মিন বান্দাদের কবরের জীবন- পর্ব-৭

একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইন্তেকাল করলেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার জানাযা পড়ালেন। তারপর একদল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে মৃতদেহ দাফন করার জন্য কবরস্থানে আসলেন ।

দুই জন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা কবর খুঁড়তে শুরু করলেন। সবাই চুপচাপ মৃতদেহকে ঘিরে বসে আছেন। কবর খনন শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গভীর মনোযোগ দিয়ে কবর খোঁড়া দেখছিলেন। একটু পরে সবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনারা কি জানেন, মানুষ মারা যাওয়ার পর, তার আত্মার কি হয়?' সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে আমাদেরকে বলুন।'

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রথমে কবরের দিকে তাকালেন, তারপর আকাশের দিকে তাকালেন। তারপর ইরশাদ মুবারক করলেন, “যখন মানুষ একেবারে মৃত্যু শয্যায় শায়িত থাকে, তখন সে মৃত্যুর ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনাকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু যে হাক্বীক্বী মু'মিন, তাকে মৃত্যুর ফেরেশতা আলাইহিস সালাম হাসি মুখে সালাম দেন, অভয় দেন এবং তার মাথার পাশে এসে বসেন। তারপর মৃতপ্রায় মানুষটির দিকে তাকিয়ে বলেন, 'হে পবিত্র আত্মা! আপনি আপনার পালনকর্তা উনার ক্ষমা ও মুহাব্বত গ্রহণ করুন এবং এই দেহ থেকে বের হয়ে আসুন।' মু'মিনের আত্মা যখন বের হয়ে আসে তখন সে কোনো ধরণের ব্যথা-বেদনা অনুভব করে না।”

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিষয়টি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে বললেন, “মনে করুন একটা পানির জগ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর, তা থেকে এক ফোঁটা পানি যেমন নিঃশব্দে নিচে গড়িয়ে নেমে আসে, ঠিক তেমনি নীরবে ও বিনা কষ্টে আত্মাটি তার দেহ থেকে বের হয়ে আসে। সেই সময় আরো দুই জন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম বেহেশত থেকে সুগন্ধি মাখানো একটা নরম সুতোর সাদা চাদর নিয়ে আসেন এবং আত্মাটিকে সেই চাদরে আবৃত করে আকাশের দিকে নিয়ে যান। উনারা যখন আকাশে পৌঁছেন তখন অন্যান্য ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ সেই আত্মাটিকে দেখার জন্য এগিয়ে আসেন। কাছে এসে সবাই বলেন, 'সুবহানাল্লাহ!

কত সুন্দর আত্মা! কি সুন্দর তার ঘ্রাণ!' তারপর সবাই জানতে চান, ‘এই আত্মাটি কার?' উত্তরে আত্মা বহনকারী ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ বলেন, 'তিনি হলেন, ফুলান ইবনে ফুলান অর্থাৎ অমুকের সন্তান অমুক।' তখন অন্যান্য ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ আত্মাটিকে সালাম দেন। তারপর আবার জিজ্ঞেস করেন, 'তিনি কি আমল করেছেন? উনার আত্মায় এতো সুঘ্রাণ কেন?' আত্মা বহনকারী ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ তখন বলেন, 'আমরা শুনেছি মানুষজন নিচে বলাবলি করছে, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার ভালো বান্দা ছিলেন, অনেক দয়ালু ছিলেন, মানুষের অনেক উপকার করেছেন।'

এতটুকু বলার পর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটু থামলেন। তারপর সবার দিকে দৃষ্টি মুবারক দিয়ে, কণ্ঠ মুবারক একটু বাড়িয়ে বললেন, 'এই কারণেই বলছি, সাবধান! আপনারা কিন্তু মানুষের সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করবেন না। আপনারা ইন্তেকাল করার পর মানুষ আপনাদের সম্পর্কে যা যা বলবে, আত্মা বহনকারী ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণও আকাশে গিয়ে ঠিক একই কথা অন্যদেরকে বলবেন।'

তারপর তিনি আবার একটু চুপ করলেন; কবরটার দিকে দৃষ্টি মুবারক দিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন, “এই সময় মানুষ যখন পৃথিবীতে মৃতদেহকে কবর দেয়ার জন্য গোসল দিয়ে প্রস্তুত করবে, তখন মহান আল্লাহ তা'য়ালা আত্মা বহনকারী ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণকে বলবেন, “আপনারা যান, এখন আবার এই আত্মাকে তার শরীরে রেখে আসুন।' তারপর মৃতদেহকে কবরে রেখে যাওয়ার পর দুই জন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম আসবেন। উনাদের নাম মুনকার ও নাকির আলাইহিমাস সালাম। উনারা মৃত ব্যক্তিকে তার সৃষ্টিকর্তা, তার দ্বীন ও তার নবী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। তারপর চলে যাবেন।

উনারা চলে যাওয়ার পর, আত্মাটি আবার কবরে একাকী হয়ে যাবে। সে এক ধরণের অজানা আশংকায় অপেক্ষা করবে। এমন সময় সে দেখবে, খুব সুন্দর একজন তার কবরে তার সাথে দেখা করতে এসেছে। তাকে দেখার পর আত্মাটি ভীষণ মুগ্ধ হবে। এতো মায়াবী ও সুন্দর চেহারা সে জীবনে

কোনদিন দেখেনি। আত্মাটি তাকে জিজ্ঞেস করবে, ‘আপনি কে?' সেই সুন্দর ব্যক্তি বলবে, 'আমি আপনার জন্য অনেক বড় সুসংবাদ নিয়ে এসেছি। আপনি দুনিয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আপনার জন্য মহান আল্লাহ তা'য়ালা জান্নাতের ব্যবস্থা করেছেন। আপনি কি সেটা একটু দেখতে চান?' আত্মাটি ভীষণ খুশি হয়ে বলবে, 'অবশ্যই আমি দেখতে চাই, আমাকে একটু জান্নাত দেখান।' সুন্দর ব্যক্তি বলবে, 'আপনার ডান দিকে তাকান।' আত্মাটি ডানে তাকিয়ে দেখবে কবরের দেয়ালটি সেখানে আর নেই। সেই দেয়ালের দরজা দিয়ে অনেক দূরে সুন্দর বেহেশত দেখা যাচ্ছে। বেহেশতের এই রূপ দেখে আত্মাটি মুগ্ধ হবে ও প্রশান্তি লাভ করবে এবং সেখানে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে সুন্দর ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করবে, 'আমি সেখানে কখন যাবো? কিভাবে যাবো?' সুন্দর ব্যক্তি মৃদু হেসে বলবে, ‘যখন সময় হবে, তখনই আপনি সেখানে যাবেন ও সেখানেই থাকবেন। আপাততঃ কিয়ামত পর্যন্ত আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। ভয় পাবেন না। আমি আপনার সাথেই আছি। আপনাকে আমি শেষ পর্যন্ত সঙ্গ দিবো।' আত্মাটি তখন তাকে আবারো জিজ্ঞেস করবে, ‘কিন্তু আপনি কে?' তখন সুন্দর ব্যক্তি বলবে, ‘আমি আপনার এতদিনের আমল। পৃথিবীতে আপনার সব ভালো কাজের, আপনার সব পুণ্যের রূপ আমি। আজ আপনি আমাকে একজন সঙ্গী রূপে দেখছেন। মহান আল্লাহ তা'য়ালা আমাকে পাঠিয়েছেন আপনাকে সঙ্গ দেয়ার জন্যই।' এই কথা বলে, সে আত্মাটির উপর যত্ন করে হাত বুলিয়ে দিবে এবং বলবে, 'হে পবিত্র আত্মা! এখন আপনি শান্তিতে ঘুমান। নিশ্চিন্তে বিশ্রাম নিন।' তারপর আত্মাটি এক নযরে বেহেশতের দিকে তাকিয়ে থাকবে এবং একসময় এই তাকানো অবস্থায় গভীর প্রশান্তিতে ঘুমিয়ে পড়বে।”

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এতটুকু বলে থামলেন। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নিজেদের ভেজা চোখ মুছলেন।




১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৬ (বনের হরিণীও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আজ্ঞাবহ)

বনের হরিণীও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আজ্ঞাবহ- পর্ব-৬

একবার এক ইহুদী একটা হরিণীকে শিকারের পর গাছের সাথে আটকে রাখলো। সেই হরিণীর ছোট ছোট বাচ্চা ছিল। একে তো বন্দি হওয়ার দুর্বিষহ যন্ত্রণা, তদুপরি ছোট বাচ্চাদের মমতায় ওই হরিণী উদ্বেলিত হয়ে উঠছিল। ক্ষুধার্ত ছোট বাচ্চাদেরকে দুধ পান করাতে হবে। তাই সে মুক্তি চায়। কিন্তু মুক্তির উপায় কি? হরিণীর চোখে পানি। অঝোর ধারায় সে কাঁদছে। ওই পথ দিয়েই যাচ্ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি তো সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত কিছুই জানেন । তবুও কায়িনাতবাসীর ইবরত-নছীহতের লক্ষ্যে হরিণীকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, 'কী হয়েছে তোমার?' হরিণীর বিনীত নিবেদন, ‘ইয়া রহমাতুল্লিল আলামীন, রউফুর রহীম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এক ইহুদী আমাকে আটকে রেখেছে। আমার ছোট বাচ্চারা ক্ষুধার্ত। ওদেরকে দুধ পান করাতে হবে। দয়া করে যদি আপনি কিছু সময়ের জন্য আমার বাঁধন খুলে দিতেন, তাহলে বাচ্চাদেরকে দুধ পান করিয়েই আমি আবার এখানে চলে আসবো।'

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওই হরিণীকে মুক্ত করে দেন। হরিণী অতি দ্রুত বাচ্চাদের কাছে গিয়ে বলে, *আজ এক মুবারক ঘটনার অবতারণা হয়েছে। এক ইহুদী আমাকে আটকে রেখেছিল। আমার খোশ নসীব। ইতোমধ্যে আমি রহমাতুল্লিল আলামীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক সাক্ষাৎ লাভ করি। তোমাদেরকে দুধ পান করানোর লক্ষ্যে সাময়িক মুক্তির জন্য আমি উনার ক্বদম মুবারকে সবিনয়ে প্রার্থনা জানাই। তিনি অল্প সময়ের জন্য আমাকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন। তখন ইহুদী সেখানে উপস্থিত ছিল না। দ্রুত ফিরে যাবো বলে আমি উনাকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছি। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। তোমরা অতিসত্বর দুধপান করে আমাকে যেতে দাও।' বাচ্চারা শুনে বলে, ‘মাগো! আমাদের দুধপান করার প্রয়োজন নেই। এতে বিলম্ব হবে। বিলম্ব হলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে চরম বেয়াদবি হবে। আমরা দুধ পান করবো না। চলো আমরা একসঙ্গে এখনই উনার মুবারক খিদমতে গিয়ে হাযির হই।'

ইতোমধ্যে ইহুদীটি ঘটনাস্থলে ফিরে এসে দেখতে পায়, তার আটককৃত হরিণী যথাস্থানে নেই। সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খতামুন নাবিয়্যীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইহুদীকে বলেন, 'বাচ্চাকে দুধ পান করানোর জন্য হরিণীকে আমি অল্প সময়ের জন্য ছেড়ে দিয়েছি। সে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসবে।' বিষয়টি ইহুদীর বিশ্বাস হয়নি। ক্ষুব্ধ ইহুদী মনে মনে ভাবে, ‘হরিণী কি মানুষ? সে কিভাবে প্রতিশ্রুতি দিবে? কিভাবে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে? আর কেনই বা সে ফিরে আসবে?' আসলে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে ওই হরিণীরও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হরিণী যে উনার একান্ত আজ্ঞাবহ, তা অজ্ঞ ইহুদী বুঝবে কি করে?

কিন্তু দেখা গেলো, ইহুদীর ক্ষোভ মিশ্রিত দুর্ভাবনা শেষ না হতেই হরিণী তার বাচ্চাসহ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে ফিরে আসলো! এ অভাবিত ঘটনা দেখে ইহুদী মুসলমান হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ।




আদ্ দুরারুল মুখতারাহ্ - ফী নিসবাতি সুলত্বানিন নাছীর (১ম খণ্ড) পর্ব-১০

১১. মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আর্মরা মহাসম্মানিত ও মহাপৰিত্ৰ হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনার মহাসম্মানিত ব্যাখ্যা মুবারক- পর্ব- ১২

মহা সম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত শান মুবারক-এ আখাছ্‌ছুল খাছ বিশেষ তিনখানা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, যেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফগুলো আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রায় সময় আলোচনা মুবারক করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

১নং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ:

عن إمام الأول سيدنا حضرت كرم الله وجهه عليه السلام قال إنّ النبي صلى الله عليه وسلم كان يقول نحن أهل بيت طهرهم الله من شجرة النبوة وموضع الرسالة ومختلف الملائكة وبيت الرحمة ومعدن

অর্থ: “ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবসময় ইরশাদ মুবারক করতেন, আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে (আমাদেরকে) সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক উনার বৃক্ষ, সম্মানিত রিসালাত মুবারক উনার স্থান, বিভিন্ন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের, উনাদের দ্বারা সম্মানিত খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলিম মুবারক উনার খনি মুবারক (ইত্যাদি সমস্ত কিছু) থেকে পবিত্র রেখেছেন, ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী) করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!! সুবহানাল্লাহ!!! (তাফসীরে দুররে মানছুর ৬/৬০৬, তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম ৯/৩১৩৩)

২নং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ:

عن إمام الأول سيدنا حضرت كرم الله وجهه عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم نحن أهل بيت شجرة النبوة ومعدن الرسالة ليس أحد من الخلائق يفضل أهل بيتي غيري

অর্থ: “ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমরা সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক উনার সম্মানিত বৃক্ষ মুবারক এবং সম্মানিত রিসালাত মুবারক উনার সম্মানিত খনি মুবারক। সুবহানাল্লাহ! সমগ্র সৃষ্টি জগতে একমাত্র আমি ব্যতীত দ্বিতীয় আর কেউ নেই, যে আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে। অর্থাৎ সমগ্র সৃষ্টি জগতে আমার পরেই আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক, ফযীলত মুবারক।” সুবহানাল্লাহ!

৩নং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ:

عن حضرت انس رضی الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله

عليه وسلم تخن أهل بيت لا يقاس بنا أحد

অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমাদের সাথে অন্য কারো তুলনা করা যাবে না।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!! সুবহানাল্লাহ!!! (দায়লামী ৪/২৮৩, জামিউল আহাদীছ ২২/২১৯, কানজুল উম্মাল ১২/১০৪, জাম—উল জাওয়ামি’ ১/২৪৯৫০, যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ ১/১৭, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৭ ইত্যাদি)

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে বলেছেন যে, আলোচ্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে

نحن أهل بيت

(আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম) বলে- আমি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে আমার নিজের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছি।” সুবহানাল্লাহ!

তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুতুহ্হার, মুত্বাহির, আছ ছমাদ মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতো বেমেছাল মহাসম্মানিত তা'য়াল্লুক-নিসবত মুবারক সেটা সকলের চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!


নছীহতে উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম -(১ম খণ্ড) ভূমিকা


যদি কেউ দুনিয়াতে শরীয়ত মুতাবিক চলে পরকাল হাছিল করতে চায় তার জন্য তিনটি কাজ করা আবশ্যক -

১. নেক সোহবত ইখতিয়ার করা,

২. যতক্ষণ সোহবতে থাকবে না, ততক্ষণ জবানকে যিকির দ্বারা সিক্ত রাখা এবং

৩. সুন্নতের পূর্ণ অনুসরণ করা তথা অনুসরণে সদা সচেষ্ট থাকা।

এই তিনটা মূলনীতি মেনে চলতে পারলে আর কোনো চিন্তা নেই।

الامم