৫৭৭ নং- সুওয়াল : আমরা এনএসআই মসজিদের মুসল্লীগণের পক্ষ হতে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার সুওয়াল জাওয়াব বিভাগের নিকট এই বিষয় ফতওয়া কামনা করছি যে, উক্ত মসজিদের পূর্বদিকে সংলগ্ন রয়েছে ইমাম সাহেবের হুজরা খানা। উল্লেখ্য যে, হুজরার ছাদ, মসজিদের ছাদ হতে দেড় ফুট নিচু এবং মসজিদের মেঝে হতে হুজরার মেঝে এক ফুট উঁচু। এখন আমাদের জানার বিষয় হলো- উক্ত হুজরা খানায় ইমাম সাহেব স্ত্রী-পুত্র নিয়ে বসবাস করতে পারবেন কিনা?

সুওয়াল : আমরা এনএসআই মসজিদের মুসল্লীগণের পক্ষ হতে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার সুওয়াল জাওয়াব বিভাগের নিকট এই বিষয় ফতওয়া কামনা করছি যে, উক্ত মসজিদের পূর্বদিকে সংলগ্ন রয়েছে ইমাম সাহেবের হুজরা খানা। উল্লেখ্য যে, হুজরার ছাদ, মসজিদের ছাদ হতে দেড় ফুট নিচু এবং মসজিদের মেঝে হতে হুজরার মেঝে এক ফুট উঁচু। এখন আমাদের জানার বিষয় হলো- উক্ত হুজরা খানায় ইমাম সাহেব স্ত্রী-পুত্র নিয়ে বসবাস করতে পারবেন কিনা?
জাওয়াব : মসজিদ সংলগ্ন হুজরা শরীফে ইমাম সাহেবের জন্য স্বপরিবারে বসবাস করা জায়েয তো বটেই বরং সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। কারণ স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার রাসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মসজিদে নববী সংলগ্ন হুজরা শরীফে স্বপরিবারে অর্থাৎ হযরত উম্মুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের নিয়ে বসবাস করতেন।
(বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, শরহে নববী, ফতুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, মাদারিজুন নুবুওয়াহ, সীরাতুন্নবী, সীরাতে হালুবী, জাদুল মায়াদ, মাওয়াহীবুল্লাদুন্নীয়াহ, মিশকাত শরীফ, মেরকাত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত, লুমুয়াত, শরহে তিবরানী)
আবা-৩২
৫৭৬ নং- সুওয়াল : নামাযের কাতারের মধ্যে যদি ৬/৮ ইঞ্চি প্রশস্ত জুতার বাক্স রাখা হয়, তবে নামাযের কোন ক্ষতি হবে কি?

সুওয়াল : নামাযের কাতারের মধ্যে যদি ৬/৮ ইঞ্চি প্রশস্ত জুতার বাক্স রাখা হয়, তবে নামাযের কোন ক্ষতি হবে কি?
জাওয়াব : নামাযে কাতার সোজা করা এবং ফাঁক বন্ধ করা ওয়াজিব। আর কাতারের মধ্যে জুতার বাক্স রাখলে ফাঁক থেকে যায়, যা ওয়াজিব তরকের গুণাহের কারণ, কিন্তু নামায ভঙ্গের কারণ নয়। বাক্স কাতারে না রেখে সামনে বা পিছনে রাখা যেতে পারে। আর যদি এমন হয় যে, সামনে বা পিছনে রাখার জায়গা নেই, তাহলে প্রত্যেকে তার দুপায়ের মাঝে অথবা সামনে জুতা রাখতে পারবে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে- মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
 اذا صلى احد كم فلا يضع نعليه عن يمينه ولاعن يساره فتكون عن يميين غيرة الا ان لا يكون على يسارة احد وليضعهما بين رجليه.
অর্থ : যখন তোমাদের মধ্যে কেউ নামায পড়ে, তখন সে যেন তার জুতা ডান দিকেও না রাখে এবং বাম দিকেও না রাখে, যাতে অপরের ডানদিক হয়ে যায়। অবশ্য বামদিকে যদি কোন লোক না থাকে (তাহলে রাখা যেতে পারে)। সবচেয়ে আফজল জুতা যেন তার  দুপায়ের মাঝখানে রাখে।
সুতরাং দুপায়ের মাঝখানে রাখাটাই নিরাপদ, যা তার এতমিনানের কারণ। তবে জুতা দুপায়ের মাঝে বা হাঁটুর সামনে রাখলে মসজিদ যেমন নাপাক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমন দুর্গন্ধময় হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নাপাকী ও দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার জন্য জুতার মধ্যে তরল জাতীয় কোন নাপাকী লেগে থাকলে তা ঝেড়ে অতঃপর পলিথিন জাতীয় কোন প্যাকেটে জুতা ভরে হিফাযত মতো রাখতে হবে।
যদি কোন মসজিদ এমন হয়, যার খুটিগুলি কাতারের মাঝে পড়ে। যার কারণে অনিচ্ছা সত্বেই কাতারের মাঝখানে ফাঁক থেকে যায়, তবে সেই ফাঁকের মধ্যে ইচ্ছা করলে জুতার বাক্স রাখা যেতে পারে।
আবা-৩২
৫৭৫ নং- সুওয়াল : ওযু করার পর নামায আদায় করার পূর্বে কোন মহিলা বেগানা পুরুষকে দেখলে অথবা উক্ত পুরুষ গোপনে মহিলাকে দেখলে ওযু নষ্ট হবে কি?

সুওয়াল : ওযু করার পর নামায আদায় করার পূর্বে কোন মহিলা বেগানা পুরুষকে দেখলে অথবা উক্ত পুরুষ গোপনে মহিলাকে দেখলে ওযু নষ্ট হবে কি?
জাওয়াব : কোন বেগানা পুরুষ বেগানা মহিলাকে দেখলে এবং বেগানা মহিলা বেগানা পুরুষকে দেখলে তা প্রকাশ্যেই হোক অথবা গোপনেই হোক, ওযু ভঙ্গ হবে না। তবে বেগানা পুরুষ ও মহিলা পরস্পর পরস্পরকে দেখা হারাম ও কবীরা গুণাহের অন্তর্ভূক্ত। ওযু করে গুণাহ করলে ওযু হালকা হয়ে যায়। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
لاتتبع النظر فان لك الاولى وليست لك الاخرة.
অর্থ : হে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম! দৃষ্টিকে অনুসরণ করোনা। প্রথম দৃষ্টিকে ক্ষমা করা হবে, পরবর্তীগুলি নয়।
অর্থাৎ যদি কোন বেগানা পুরুষ কিম্বা মহিলা পরস্পর পরস্পরকে অতর্কিতে দেখে ফেলে, তাহলে তাদের প্রথম দৃষ্টি গুণাহের কারণ হবে না, কিন্তু পরবর্তী প্রতিটি দৃষ্টিতেই একটি করে কবীরা গুণাহ হবে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لعزالله الناظر والمنظور اليه.
অর্থ : যে দেখে এবং দেখায় উভয়ের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লানত (অভিশম্পাত)।
 আবা-৩২

৫৭৪ নং-সুওয়াল : কোন মুছল্লী যদি যোহরের  চার রাকায়াত সুন্নত অথবা জুমুয়ার চার রাকায়াত সুন্নত নামায শুরু করার পরে জোহরের জামায়াত অথবা জুমুয়ার খুৎবা শুরু হয়ে যায়, তাহলে সে কি করবে? অথবা অন্য কোন নফল বা এশা ও আসরের চার রাকায়াত সুন্নতে যায়েদাহ শুরু করার পর জামায়াত শুরু হয়ে যায়, তাহলে সে কি করবে?

সুওয়াল : কোন মুছল্লী যদি যোহরের  চার রাকায়াত সুন্নত অথবা জুমুয়ার চার রাকায়াত সুন্নত নামায শুরু করার পরে জোহরের জামায়াত অথবা জুমুয়ার খুৎবা শুরু হয়ে যায়, তাহলে সে কি করবে? অথবা অন্য কোন নফল বা এশা ও আসরের চার রাকায়াত সুন্নতে যায়েদাহ শুরু করার পর জামায়াত শুরু হয়ে যায়, তাহলে সে কি করবে?
জাওয়াব : যোহরের চার রাকায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ অথবা কাবলাল জুমুয়ার চার রাকায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নামায শুরু করার পর জামায়াত বা খুৎবা শুরু হয়ে গেলে দুরাকায়াত পূর্ণ করে সালাম ফিরায়ে জামায়াতে বা জুমুয়াতে শামিল হবে এবং ফরয নামায আদায়ের পর পূণরায় চার রাকায়াত আদায় করতে হবে। যদি তৃতীয় রাকায়াতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে চার রাকায়াত পূর্ণ করেই জামায়াতে বা জুমুয়ায় শামিল হবে।
আর যদি ইশা ও আসর কিম্বা কোন নফল নামায শুরু করার পর জামায়াত শুরু হয়, তাহলে দুরাকায়াত পূর্ণ করে জামায়াতে শামিল হবে। পরে তাকে বাকি নামায পড়তে হবে না। যদি তৃতীয় রাকায়াতের জন্য দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে চার রাকায়াত পূর্ণ করেই জামায়াতে শামিল হবে।
কোন মুছল্লী যদি আছর ও ইশার নামাযের সুন্নত বা কোন নফল নামায শুরু করার পর, ফরজ নামাযের জামায়াত শুরু হওয়ার কারণে অজ্ঞতা বশতঃ জামায়াতে শামিল হওয়ার জন্য নামায ছেড়ে দেয়, তাহলে অবশ্যই তাকে পরবর্তীতে দুরাকায়াত নামায আদায় করে নিতে হবে।
আবা-৩২
৫৭৩ নং- সুওয়াল : কোন ব্যক্তি যদি ফরয নামায শুরু করে আর এ অবস্থায় যদি ঐ নামাযের জামায়াত শুরুহয়, তাহলে সে কি করবে?

সুওয়াল : কোন ব্যক্তি যদি ফরয নামায শুরু করে আর এ অবস্থায় যদি ঐ নামাযের জামায়াত শুরুহয়, তাহলে সে কি করবে?
জাওয়াব : নামায যদি দুই বা তিন রাকায়াত বিশিষ্ট হয়, আর মুছল্লী যদি তখনও দ্বিতীয় রাকায়াতের সিজদা না করে থাকে, তাহলে তৎক্ষণাৎ সালাম ফিরায়ে জামায়াতে শামিল হবে। আর মুছল্লী যদি দ্বিতীয় রাকায়াতের সিজদা করে থাকে, তবে ঐ নামাযই পুরা করবে। জামায়াতে শামিল হতে হবেনা।
আর নামায যদি চার রাকায়াত বিশিষ্ট হয় এবং মুসুল্লী যদি প্রথম রাকায়াতের সিজদা না করে থাকে, তাহলে তৎক্ষণাৎ ডান দিকে এক সালাম ফিরায়ে জামায়াতে শামিল হবে। মুছল্লী যদি এক সিজদাও করে থাকে, তাহলে তাকে দুরাকায়াত পূর্ণ করে সালাম ফিরায়ে জামায়াতে শামিল হতে হবে।
মুছল্লী যদি দুরাকায়াত পূর্ণ করে তৃতীয় রাকায়াতের জন্য দাঁড়িয়ে যায় এবং তৃতীয় রাকায়াতের সিজদা না করে থাকে, তাহলে দাঁড়ানো অবস্থায়ই সালাম ফিরায়ে জামায়াতে শামিল হবে। আর মুছল্লী যদি তৃতীয় রাকায়াতের সিজদা করে থাকে, তাহলে তাকে নামায না ছেড়ে চার রাকায়াতই পূর্ণ করতে হবে।
নামায যদি যোহর ও এশা হয়, তাহলে চার রাকায়াত পূর্ণ করে সালাম ফিরায়ে জামায়াতে শামিল হবে। নামায যদি আসর হয়, তাহলে জামায়াতে শামিল হতে হবেনা। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)

আবা-৩২
৫৭২ নং- সুওয়াল : আমার এক বিধর্মী প্রতিবেশী আছে, যার সাথে আমি উঠা-বসা, চলাফেরা করে থাকি। কখনও ওযু করার পর তার শরীরে আমার হাত লাগে। এতে ওযু বা নামাযের কোন ক্ষতি হবে কি? আর কখনও সে আমার কাছে দোয়া চায়, আমি তার জন্য দোয়া করতে পারবো কি? দয়া করে জানাবেন।

সুওয়াল : আমার এক বিধর্মী প্রতিবেশী আছে, যার সাথে আমি উঠা-বসা, চলাফেরা করে থাকি। কখনও ওযু করার পর তার শরীরে আমার হাত লাগে। এতে ওযু বা নামাযের কোন ক্ষতি হবে কি? আর কখনও সে আমার কাছে দোয়া চায়, আমি তার জন্য দোয়া করতে পারবো কি? দয়া করে জানাবেন।
জাওয়াব : ওযু করার পর কোন বিধর্মীর শরীরে হাত লাগলে ওযুর কোন ক্ষতি হবেনা এবং সে ওযু দিয়ে নামায পড়লে নামাযেরও কোন ক্ষতি হবেনা। হ্যাঁ, তবে যদি ভিজা হাত বিধর্মীর শরীরে লাগে, আর তার শরীরের মধ্যে কোন নাপাকী থাকে, তাহলে ওযুর কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু এ নাপাক হাতসহ নামায আদায় করলে নামায হবেনা। অতএব উক্ত হাত ধুয়ে নামায আদায় করতে হবে।  (সমূহ ফিক্বহের কিতাব)
আবা-৩২
৫৭১ নং- সুওয়াল : একজন স্বামী তার স্ত্রীর উপর কোন একটি ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করাতে ঐ সন্দেহযুক্ত কাজটি থেকে তার স্ত্রীকে নিরাপদ করার উদ্দেশ্য নিয়ে স্ত্রীর উপর ভিত্তি স্বরূপ তালাকের শর্ত আরোপ করেন।  শর্তটি হলো- “যদি তুমি অমুক কাজটি কর, তবে সাথে সাথে তোমার দুই তালাক হয়ে যাবে অথবা তিন তালাক হয়ে যাবে।” মনে করুন স্ত্রী সে কাজই করে বসলো এবং স্বামীর দৃষ্টি এড়ালো না। এখনকি ঐ স্ত্রী লোকটি সত্যিই তালাক হয়ে যাবে? যদি দুই তালাকের শর্ত থাকে, তবে কয় তালাক হয়ে যাবে এবং তিন তালাকের শর্ত থাকলে, কয় তালাক হয়ে যাবে জানতে চাই। যদি শরীয়ত মতে তালাক হয়েই যায় এবং স্বামী যদি পূণঃ তাকে নিয়ে ঘর-সংসার করতে চায়, তবে হিলার ব্যাবস্থা করতে হবে কিনা অথবা শুধু বিবাহ পড়ালে চলবে কিনা, বিস্তারিত জানতে চাই।

৫৭১ নং- সুওয়াল : একজন স্বামী তার স্ত্রীর উপর কোন একটি ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করাতে ঐ সন্দেহযুক্ত কাজটি থেকে তার স্ত্রীকে নিরাপদ করার উদ্দেশ্য নিয়ে স্ত্রীর উপর ভিত্তি স্বরূপ তালাকের শর্ত আরোপ করেন। শর্তটি হলো- “যদি তুমি অমুক কাজটি কর, তবে সাথে সাথে তোমার দুই তালাক হয়ে যাবে অথবা তিন তালাক হয়ে যাবে।” মনে করুন স্ত্রী সে কাজই করে বসলো এবং স্বামীর দৃষ্টি এড়ালো না। এখনকি ঐ স্ত্রী লোকটি সত্যিই তালাক হয়ে যাবে? যদি দুই তালাকের শর্ত থাকে, তবে কয় তালাক হয়ে যাবে এবং তিন তালাকের শর্ত থাকলে, কয় তালাক হয়ে যাবে জানতে চাই। যদি শরীয়ত মতে তালাক হয়েই যায় এবং স্বামী যদি পূণঃ তাকে নিয়ে ঘর-সংসার করতে চায়, তবে হিলার ব্যাবস্থা করতে হবে কিনা অথবা শুধু বিবাহ পড়ালে চলবে কিনা, বিস্তারিত জানতে চাই।


সুওয়াল : একজন স্বামী তার স্ত্রীর উপর কোন একটি ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করাতে ঐ সন্দেহযুক্ত কাজটি থেকে তার স্ত্রীকে নিরাপদ করার উদ্দেশ্য নিয়ে স্ত্রীর উপর ভিত্তি স্বরূপ তালাকের শর্ত আরোপ করেন।
শর্তটি হলো- যদি তুমি অমুক কাজটি কর, তবে সাথে সাথে তোমার দুই তালাক হয়ে যাবে অথবা তিন তালাক হয়ে যাবে।মনে করুন স্ত্রী সে কাজই করে বসলো এবং স্বামীর দৃষ্টি এড়ালো না। এখনকি ঐ স্ত্রী লোকটি সত্যিই তালাক হয়ে যাবে? যদি দুই তালাকের শর্ত থাকে, তবে কয় তালাক হয়ে যাবে এবং তিন তালাকের শর্ত থাকলে, কয় তালাক হয়ে যাবে জানতে চাই। যদি শরীয়ত মতে তালাক হয়েই যায় এবং স্বামী যদি পূণঃ তাকে নিয়ে ঘর-সংসার করতে চায়, তবে হিলার ব্যাবস্থা করতে হবে কিনা অথবা শুধু বিবাহ পড়ালে চলবে কিনা, বিস্তারিত জানতে চাই।
জাওয়াব : কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীকে শর্ত সাপেক্ষে তালাক দেয়, তা এক তালাক হোক, দুতালাক হোক বা তিন তালাকই হোক না কেন, যে শর্তে যত তালাক দেবে, স্ত্রী যদি সে শর্ত পুরা করে, তাহলে যত তালাকের কথা বলা হয়েছিল, স্ত্রীর উপর তত তালাকই পড়বে।
যদি এক বা দুতালাক রেজয়ী হয়, তাহলে যখন ইচ্ছা তখনই ফিরায়ে নিতে পারবে। আর যদি এক বা দুতালাক বাইন হয়, তাহলে বিয়ে দোহরায়ে গ্রহণ করতে পারবে। আর যদি তিন তালাক দেয়, তাহলে ফিরিয়ে নিতেও পারবেনা এবং বিয়ে দোহরানোও চলবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,
حتى تنكح زوجا غيره.
অর্থ : যতক্ষণ পর্যন্ত অন্য স্বামী বিবাহ না করবে।
অর্থাৎ তিন তালাক বিশিষ্ট স্ত্রীকে যদি তিন তালাকদাতা স্বামী বিবাহ করতে চায়, তাহলে তার তালাক প্রাপ্তা স্ত্রী তালাকের ইদ্দতর পালনের পর অন্য কোথাও বিবাহ বসে এবং সে স্বামীর সংসার করে অর্থাৎ স্বামী দ্বারা স্ত্রী ব্যবহৃতা হওয়ার পর, দ্বিতীয় স্বামী যদি তালাক দেয়। অতঃপর এ তালকের ইদ্দত পালনের পর প্রথম স্বামী পূণরায় বিবাহ করতে পারবে। অন্যথায় সে স্ত্রীকে বিবাহ করতে পারবে না। (সমূহ ফিক্বাহ ও তাফসীরের কিতাব)

আবা-৩২
৫৭০ নং- সুওয়াল : জামায়াতে নামাযের সময় যদি এক বা একাধিক রাকায়াত না পাই এবং শেষ বৈঠকে ইমামের সাথে ভুলে ডানে-বামে সালাম ফিরায়ে ফেলি, তখন কি পূণরায় নামায দোহরাতে হবে, না অবশিষ্ট নামায পড়লেই হবে?

সুওয়াল : জামায়াতে নামাযের সময় যদি এক বা একাধিক রাকায়াত না পাই এবং শেষ বৈঠকে ইমামের সাথে ভুলে ডানে-বামে সালাম ফিরায়ে ফেলি, তখন কি পূণরায় নামায দোহরাতে হবে, না অবশিষ্ট নামায পড়লেই হবে?
জাওয়াব : ইমামের সাথে ভুলে সালাম ফিরায়ে যদি এমন কোন কাজ না করে, যা নামায ভঙ্গের কারণ, তবে শুধু অবশিষ্ট নামায পড়ে নিলেই নামায আদায় হয়ে যাবে। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)
আবা-৩২
৫৬৯ নং- সুওয়াল : নামাযে মুছল্লী এবং ইমাম কখন দাঁড়াবেন? মুয়াজ্জিন যখন হাইয়্যা আলাসসালাহ বলেন- তখন, না অন্য সময়? এ ব্যাপারে সঠিক মাসয়ালাটি জানার বাসনা রাখি।

সুওয়াল : নামাযে মুছল্লী এবং ইমাম কখন দাঁড়াবেন? মুয়াজ্জিন যখন হাইয়্যা আলাসসালাহ বলেন- তখন, না অন্য সময়? এ ব্যাপারে সঠিক মাসয়ালাটি জানার বাসনা রাখি।
জাওয়াব : এ মাসয়ালার কয়েকটি সুরত রয়েছে:
(১) ইমাম সাহেব যদি নিজেই ইক্বামত দেন, তবে মুক্তাদীগণকে ইমাম সাহেবের দাঁড়ানোর সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
(২) মুয়াজ্জিন সাহেব যদি ইক্বামত দেন, তবে ইমাম ও মুক্তাদীগণ সকলের জন্যই হাইয়্যালাল ফালাহ বলার সময় দাঁড়ানো সুন্নতে যায়েদাহ বা মুস্তাহাব।
(৩) আর যদি ইমাম সাহেব ইক্বামতের পূর্বেই কিম্বা হাইয়্যালাল ফালাহ বলার পূর্বেই দাঁড়ান, (কাতার সোজা ও ফাঁক বন্ধ করার জন্য) তবে ইমাম সাহেবের সাথে সাথে মুক্তাদীগণের দাঁড়িয়ে যাওয়াটা সুন্নাত ও আদব। এটাই ইমাম আযম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অভিমত। (ফতওয়ায়ে আলমগীরি ও অন্যান্য ফিক্বাহর কিতাব)
আবা-৩২
৫৬৮ নং- সুওয়াল : কেউ যদি তাহাজ্জুদ নামায বা অন্য কোন দু’রাকায়াত বিশিষ্ট ফরয, সুন্নত বা নফল নামাযে ভুলবশতঃ আখেরী বৈঠকে তাশাহুদ পড়ে দাঁড়িয়ে যায়, পরে তার মনে হয় যে, দু’রাকায়াত বিশিষ্ট নামাযের নিয়ত করা হয়েছে। তখন কিভাবে নামায শেষ করতে হবে? অথবা কেউ যদি কোন দু’রাকায়াত বিশিষ্ট নামাযে ভুলবশতঃ শেষ বৈঠকে না বসে দাঁড়িয়ে যায়, তখন সে কি করবে?

সুওয়াল : কেউ যদি তাহাজ্জুদ নামায বা অন্য কোন দুরাকায়াত বিশিষ্ট ফরয, সুন্নত বা নফল নামাযে ভুলবশতঃ আখেরী বৈঠকে তাশাহুদ পড়ে দাঁড়িয়ে যায়, পরে তার মনে হয় যে, দুরাকায়াত বিশিষ্ট নামাযের নিয়ত করা হয়েছে। তখন কিভাবে নামায শেষ করতে হবে? অথবা কেউ যদি কোন দুরাকায়াত বিশিষ্ট নামাযে ভুলবশতঃ শেষ বৈঠকে না বসে দাঁড়িয়ে যায়, তখন সে কি করবে?

জাওয়াব : শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর সালাম ফিরানোর পূর্বে ভুলে যদি দাঁড়িয়ে যায়, আর তৃতীয় রাকায়াতে সিজদাহ করার পূর্বে স্মরণ হয়, তবে তৎক্ষনাৎ বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে অথবা আত্তাহিয়্যাতু না পড়ে একদিকে সালাম ফিরায়ে সিজদায়ে সাহু করবে। অতঃপর যথারীতি নামায শেষ করবে। আর যদি তৃতীয় রাকায়াতে সিজদা করার পর স্মরণ হয়, তাহলে আরো এক রাকায়াত পড়ে চার রাকায়াত পূর্ণ করে সিজদায়ে সাহু দিয়ে নামায শেষ করবে। এতে তার পরবর্তী দুরাকায়াত নফল হিসাবে আদায় হবে। আর যদি তৃতীয় রাকায়াতেই সিজদায়ে সাহু দিয়ে নামায শেষ করে ফেলে, তবে দুরাকায়াত আদায় হয়ে যাবে এবং পরবর্তী এক রাকায়াত বাতিল বলে গন্য হবে। কিন্তু এটা করা ঠিক হবে না।
দুরাকায়াতের পর অর্থাৎ আখিরী বৈঠকে বসা ফরয। এ ফরয ভুলে তরক করার মধ্যে কয়েকটি নিয়ম রয়েছে-
(১) ভুলে দাঁড়িয়ে যাওয়ার সময় যদি শরীরের নিম্নার্ধ সোজা হওয়ার পূর্বে স্মরণ হয়, তবে বসে আত্তাহিয়্যাতু, দুরূদ শরীফ ও দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফিরাবে। সিজদায়ে সাহু করতে হবে না। নামায শুদ্ধভাবে আদায় হয়ে যাবে।
(২) ভুলে যদি সম্পূর্ণ দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর স্মরণ আসে অথবা দাঁড়ানোর পর সুরা ফাতিহা পড়ার পর স্মরণ হয় অথবা তৃতীয় রাকায়াতে রুকু করার পরও এমনকি সিজদার পূর্বে যদি স্মরণ হয়, তবে বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে সিজদায়ে সাহু করতে হবে এবং বাকী নামায যথারীতি শেষ করতে হবে।
(৩) আর যদি তৃতীয় রাকায়াতে সিজদা করার পর স্মরণ হয়, তবে না বসে দাঁড়িয়ে আরো এক রাকায়াত পড়ে চার রাকায়াত পূর্ণ করবে, এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নামাযই নফল হয়ে যাবে। পূণরায় তাকে দুরাকায়াত নামায আদায় করতে হবে।
(৪) যদি চার রাকাত না মিলিয়ে তিন রাকায়াত পড়ে নামায শেষ করে ফেলে, তবে এক রাকায়াত বাতিল হয়ে দুরাকায়াত নফল হবে। পূণরায় তাকে দুরাকায়াত আদায় করতে হবে।
আবা-৩২
৫৬৭ নং- সুওয়াল : যে ইমাম সাহেব টিভিতে শুধু খবরের অনুষ্ঠান দেখে, তার পিছনে নামায ঠিক হবে কিনা?

সুওয়াল : যে ইমাম সাহেব টিভিতে শুধু খবরের অনুষ্ঠান দেখে, তার পিছনে নামায ঠিক হবে কিনা?
জাওয়াব : টিভি দেখা হারাম। কারণ টিভির মূল বিষয় হচ্ছে ছবি। আর ছবি তোলা, আঁকা, দেখা সম্পূর্ণই হারাম। কারণ বুখারী শরীফ-এ বর্ণিত হয়েছে,
ان اشد الناس عذابا يوم القيامة المصورون.
অর্থ : নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে ছবি আঁকে বা ছবি তোলে।
আর মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,                  
تعاونوا على البر والتقوى ولا تعاونوا على الائم والعدوان.
অর্থ : তোমরা নেকী ও পরহেযগারীর মধ্যে সাহায্য কর, পাপে ও শত্রুতার মধ্যে সাহায্য করোনা।
যারা টেলিভিশন দেখে, তারা নিজেরা যেমন পাপ কাজ করে, তদ্রুপ মানুষকে পাপ কাজে সাহায্য করে থাকে।
অতএব কোন ইমাম সাহেব যদি টেলিভিশন দেখে, তা খবরের অনুষ্ঠানই হোক বা অন্য যেকোন অনুষ্ঠানই হোক, তাহলে সে হারাম কাজ করলো। যে হারাম কাজ করে সে হলো ফাসিক। আর ফাসিকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।
[ছবি, টিভি, ভিসিআর ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম সংখ্যা পড়ুন। ]
আবা-৩২

৫নং- ছবি ফতোয়া
৫৬৬ নং- সুওয়াল : অনেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দিয়ে হজ্ব করে থাকে। আমরা জানি প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকার মধ্যে সুদের টাকা রয়েছে। অতএব উক্ত টাকা দিয়ে হজ্ব করলে হজ্ব হবে কি? আমার জানা মতে হজ্বে যাওয়ার জন্য খাঁটি জমি বিক্রি করে হজ্ব করতে হয়। এটা কি ঠিক?

সুওয়াল : অনেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দিয়ে হজ্ব করে থাকে। আমরা জানি প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকার মধ্যে সুদের টাকা রয়েছে। অতএব উক্ত টাকা দিয়ে হজ্ব করলে হজ্ব হবে কি? আমার জানা মতে হজ্বে যাওয়ার জন্য খাঁটি জমি বিক্রি করে হজ্ব করতে হয়। এটা কি ঠিক?
জাওয়াব : হজ্ব করার জন্য টাকা বা পাথেয় হালাল হওয়া ফরয। হারাম টাকা দিয়ে হজ্ব আদায় করলে হজ্ব আদায় হবেনা। হজ্ব করতে হলে জমি বিক্রি করে বা অন্য নির্দিষ্ট কোন কিছুর মাধ্যমে টাকা উপার্জন করে হজ্ব করতে হবে এমন কোন শর্ত শরীয়তে দেয়া হয়নি। বরং শর্ত দেয়া হয়েছে- হালাল টাকা, তা শরীয়তসম্মত যে কোন পদ্ধতিতেই উপার্জিত হোক না কেন, চাই তা জমি বিক্রি করে, চাকুরি করে, ব্যবসা করে বা ওয়ারীশ স্বত্ব লাভ করে ইত্যাদি যেভাবেই হোক না কেন।
প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দিয়েও হজ্ব করলে হজ্ব হয়ে যাবে। তবে শর্ত হলো- প্রভিডেন্ট ফান্ডের মধ্যে যে সুদের টাকা রয়েছে, তা বাদ দিয়ে তার নিজস্ব জমাকৃত যে হালাল টাকা রয়েছে, সে টাকা দিয়ে হজ্ব করতে হবে।

আবা-৩২
৫৬৫ নং-সুওয়াল : ধুমপান হালাল না হারাম? হারাম হলে দলীল কি? যারা ধুমপানকে হালাল বলে থাকেন, তারা কি গুণাহগার হবেন? বিস্তারিত জানতে আগ্রহী।

সুওয়াল : মাসিক আল জামিয়া ডিসেম্বর/৯৫ সংখ্যায় নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপানো হয়-
প্রশ্ন : ধুমপান হালাল না হারাম? হারাম হলে দলীল কি? যারা ধুমপানকে হালাল বলে থাকেন, তারা কি গুণাহগার হবেন? বিস্তারিত জানতে আগ্রহী।
উত্তর : এ সম্পর্কে চার মাযহাবে উলামা মাশায়েখদের মধ্যে অত্যন্ত মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়। শামীতে বলা হয়েছে,       
اضطرات اراء العلماء فيه فبعضهم قال بكراهيته وبعضهم قال مباحته وقد افتى بالمنع صفه ৪৫৯ وظاهر الكلام انه مكروه تحرمما صفه ৩৬০.
উপরোক্ত এবারতের দ্বারা এ ব্যাপারে ফুকাহাদের মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়, কিন্তু দুর্গন্ধ এবং শারীরিক ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে ধুমপানের অঞ্জাম মাকরূহ পর্যায়ে আসে। তাই ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে- অন্যথায় নয়। না করাই উত্তম। বিশেষতঃ এ অবস্থায় মসজিদে যাওয়া অন্যান্য মুসল্লীদের জন্য কষ্টের কারণ। ভাল করে মুখ ধুয়ে মসজিদে যাবে।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে- প্রদত্ত উত্তরটি একেবারেই অস্পষ্ট, যা পরোক্ষভাবে ধুমপানের প্রতি প্রেরণা যোগায়। স্পষ্ট ও সঠিক জাওয়াব কি হবে, তা জানায়ে সন্দেহমুক্ত করবেন।

জাওয়াব : মাসিক আল জামিয়ার উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তরে যে দলীল ও বক্তব্য পেশ করা হয়েছে, তা অস্পষ্ট ও অশুদ্ধ হয়েছে। কারণ স্পষ্ট, ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া মুতাবিক ধুমপান যেখানে মাকরূহ তাহরীমী, সেখানে মনগড়া মত পেশ করে তারা যেমন নিজেদের গুমরাহী প্রকাশ করেছে, তেমনি সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করার ব্যর্থ কোশেশ করেছে।
মূলত : ধুমপানের মাসয়ালাটি ক্বিয়াসী মাসয়ালার অন্তর্ভুক্ত। যার বর্ণনা সরাসরি পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লেখ নেই। আর না থাকাটাই স্বাভাবিক, কেননা বিড়ি, সিগারেট হুক্কা ইত্যাদি যা তামাক দ্বারা তৈরী হয়। যার ব্যবহার মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানার অনেক পরে শুরু হয়েছে।
আমেরিকার পাশে কিউবা নামক একটি দেশে তামাকের চাষ হতো, সেখান থেকে বাদশাহ জাহাঙ্গীরের শাসনামলে জনৈক রাষ্ট্রদূত ভারত উপমহাদেশে সর্ব প্রথম তামাক নিয়ে আসে। পরবর্তীতে এ উপমহাদেশে ধুমপানের ব্যবহার শুরু হয়। তামাক সম্পর্কে সর্ব প্রথম ফতওয়া প্রদান করেন, হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দুররে ছামীনকিতাবে। তাতে তিনি ধুমপান মাকরূহ তাহরীমী বলে ফতওয়া প্রদান করেন এবং তিনিই ধুমপানের সর্ব প্রথম ফতওয়া প্রদানকারী। উনার পরে ফতওয়া দেন, হযরত শাহ আব্দুল আজিজ রহমতুল্লাহি আলাইহি। যা সহীহ হাদীছ শরীফ থেকে ক্বিয়াস করে প্রদান করা হয়েছে। এবং এটাই ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য ফতওয়া, যার উপর ওলামায়ে হক্কানী, রব্বানীগণ একমত।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
من اكل هذه الشجرة المنتنة فلا يقربن مسجدنا فان الملائكة تتأذى مما يتأذى منه الانس.
অর্থ : যে ব্যক্তি এমন দুর্গন্ধযুক্ত বৃক্ষের (কাঁচা পিঁয়াজ বা রসূনের) কিছু খায়, সে যেন আমাদের মসজিদের নিকটেও না আসে। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ ও মিশকাত শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে,
نهى عن هاتين الشجر تين يعنى البصل والثوم وقال من اكلهما فلا يقرين مسجدنا وقال ان كنتم لا بد اكلهما فا ميتو هما طبخا.
অর্থ : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ দুটি বস্তু খেতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ পিঁয়াজ ও রসূন এবং বলেছেন, “যে ব্যক্তি ওটা খায়, সে যেন আমাদের মসজিদের নিকটেও না আসে।তিনি আরো বলেছেন, “তোমাদের যদি খেতেই হয়, তাহলে তা রান্না করে দুর্গন্ধ বিনষ্ট করে খাবে।” (আবূ দাউদ শরীফ ও মিশকাত শরীফ)
উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা কুতুবুদ্দীন খান দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “যে সকল দুর্গন্ধযুক্ত বস্তুর দ্বারা মানুষের কষ্ট হয়, তার দ্বারা ফেরেশতাদেরও কষ্ট হয়।” (মুযাহেরে হক্ব)
সুতরাং কাঁচা পিঁয়াজ, কাঁচা রসূন এবং এ জাতীয় যে সমস্ত কাঁচা দ্রব্য খেলে মুখে দুর্গন্ধ হয়, সেটা খাওয়া মাকরূহ তানযিহী এবং সেটা খেয়ে মসজিদে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী।
এ মাসয়ালার উপর ক্বিয়াস করে ধুমপান করা মাকরূহ তাহরীমী এবং ধুমপান করে মসজিদে যাওয়া হারাম ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে। কেননা কাঁচা পিঁয়াজ, কাঁচা রসুন খাওয়া অপেক্ষা ধুমপানে মুখ অনেক বেশী দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে থাকে।
এ ছাড়াও ফিক্বাহের কিতাবসমূহে ধুমপান মাকরূহ তাহরীমী হওয়ার ব্যাপারে নিম্নোক্ত কারণসমূহ উল্লেখ করা হয়েছে-
(১) বিড়ি, সিগারেটে নিকোটিনরয়েছে। যেটা পান করা বিষ পানের নামান্তর।
(২) চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে ধুমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।
(৩) ধুমপানে আর্থিক অপচয় হয়। কুরআন শরীফে এরশাদ হয়েছে,
ان المبذرين كانوا اخوانا الشياطين.
অর্থ : নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।
(৪) ধুমপানে আগুনের ধোঁয়া মুখের ভিতর প্রবেশ করানো হয়, যা জাহান্নামীদের সাথে সদৃশ হয়ে যায়।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আছে,
كل دخان حوام.
অর্থ : প্রত্যেক ধোঁয়াই (পান করা) হারাম।
(৫) ধুমপান বিধর্মীদের প্রচলিত অভ্যাস। ধুমপানে তাদের মুশাবেহাত হয়। হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থ : যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখবে, তাদের সাথেই তার হাশর-নশর হবে।
(৬) ধুমপানে মানুষ ও  হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের কষ্ট হয়। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে,                  
ايذاء المسلم كفر.
অর্থ : মুসলমানদেরকে কষ্ট দেয়া কুফরী।
(৭) ধুমপানে নেশার সৃষ্টি হয়। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে,      
كل مسكر حرام.
অর্থ : সমস্ত নেশাজাতীয় দ্রব্যই হারাম।
এছাড়াও আরো শত সহস্র কারণ রয়েছে। কাজেই যারা ধুমপান মুবাহ ফতওয়া দিয়েছে, তাদের ফতওয়া কখনোই গ্রহণয্যো নয়। কারণ কাঁচা পিঁয়াজ, কাঁচা রসুন বা এ জাতীয় সাধারণ গন্ধযুক্ত খাদ্য খাওয়া যেখানে মাকরূহ তানযিহী, সেখানে বিড়ি, সিগারেট, হুক্কা ইত্যাদি মারাত্মক দুর্গন্ধযুক্ত দ্রব্য কি করে মুবাহ হতে পারে?
অতএব ধুমপান সম্পর্কে শরীয়তের মূল ফতওয়া হচ্ছে- মাকরূহ তাহরীমী। কেউ কেউ হারাম ফতওয়াও দিয়েছেন।
তাছাড়া নিন্মোক্ত কিতাবসমূহেও ধুমপানকরা মাকরূহ তাহরীমীলেখা হয়েছে- শরহে ওহবানিয়া, গায়াতুল আওতার, সুয়ালাতে আসরার, হাদিয়া, তরীকায়ে মুহাম্মদীয়া উসিলায়ে আহমদীয়া, নাসিহাতু ইবাদিল্লাহ ওয়া উম্মতে রসূলিল্লাহ, ক্বাওলুস সাবিত, দুররে ছামীন, তারাবিহুল কেনান, সুলুহুল ইখওয়ান বি ইযাতে নারিদ্দুখান, তোহফাতুল ইখওয়ান ফি শরবিদ্দুখান, তোহফাতুল মাকাসেদে ওয়ার রাসায়েল, ইমামুল ইখওয়ান ফি তাহরীমুদ্দুখান, আল বুরহান ফি তাহরীমুদ্দুখান, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, তিবইয়ান, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, মুযাহেরে হক্ব, ফতওয়ায়ে আজিজীয়া, ফতওয়ায়ে আব্দুল হাই লক্ষ্মৌবী, ফতওয়ায়ে আমিনীয়া, ফতওয়ায়ে আশরাফিয়া, ইমদাদুল ফতওয়া, নেহায়া, আইনী, দায়লামী শরীফ, দুররে মুখতার, আল আশবা ওয়ান নাজায়ের, ফতওয়ায়ে আলমগিরী, ফতওয়ায়ে হাম্মাদীয়া, শরহে মাওয়াহেবুর রহমান, মাজালেসুল আবরার, কেফায়েতুল মুফতী, আল হালালু ওয়াল হারামু ফিল ইসলাম ইত্যাদি।
[ধুমপান সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া অচিরেই আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় প্রকাশ করবো ইনশাআল্লাহ। ]
আবা-৩২
৫৬৪ নং- সুওয়াল :‘আখিরী যুহর’ নামায পড়তে হবে কিনা? কেউ কেউ বলেন যে, আখিরী যুহর নামায না পড়লে বছরের ৫২ ওয়াক্ত যুহরের নামায কাযা হবে, এ বিষয়ে মতামত জানতে চাই।

সুওয়াল : মাসিক পৃথিবী ডিসেম্বর-৯৫ ইং সংখ্যায় নিম্নোক্ত প্রশ্নের উত্তর ছাপানো হয়-
প্রশ্ন : আখিরী যুহরনামায পড়তে হবে কিনা? কেউ কেউ বলেন যে, আখিরী যুহর নামায না পড়লে বছরের ৫২ ওয়াক্ত যুহরের নামায কাযা হবে, এ বিষয়ে মতামত জানতে চাই।
উত্তর : কুরআন হাদীছ ও ফিকহের কোন কিতাবে কোথাও আখিরী যুহর নামে কোন নামাযের হদীস পাওয়া যায়না। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ যে নামাযের কোন অস্তিত্ব নেই তা পড়ার কথা বলা যায়না। আখিরী যুহর না পড়লে বছরে ৫২ ওয়াক্ত যুহর নামায কাযা হবে, একথাটি ঠিক নয়।
মাসিক পৃথিবী পত্রিকায় প্রদত্ত আখিরী যুহর সম্পর্কিত এ উত্তর কতটুকু শুদ্ধ? নির্ভরযোগ্য দলিল সহ জানায়ে উপকৃত করবেন।

জাওয়াব : কিল্লতে ইলম, কিল্লতে ফাহম (কম জ্ঞান কম বুঝই) হচ্ছে ফিতনার মুল কারণ। আখিরী যোহরেরপবিত্র হাদীছ শরীফ সম্পর্কে মাসিক পৃথিবীর উত্তর শুধু অশুদ্ধই নয়, বরং সম্পূর্ণ মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও দলীল বিহীন। যা অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ, ফক্বীহগণের এবং ফতোয়ার কিতাবসমূহের বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত ও বিরুদ্ধ মত।
নিম্নে মাসিক পৃথিবীর দলীল বিহীন আপত্তিকর ও বিভ্রান্তিমূলক ভুল উত্তরের সঠিক জাওয়াব দেয়া হলো-
আমরা ইসলাম বলতে মূলতঃ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদেরকেই বুঝে থাকি। অর্থাৎ কোন বিষয় ইসলাম বা শরীয়তসম্মত হওয়ার মাপকাঠি হলো- উপরোক্ত চারটি বিষয়। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে আখিরী যোহর বা এহতিয়াতুয যোহর অবশ্যই ইসলামের অন্তর্ভূক্ত। কেননা যদিও পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সরাসরি আখেরী যোহরের কথা উল্লেখ নেই, কিন্তু ইজমা ও ক্বিয়াস তথা ফিক্বাহের কিতাবসমূহে তা স্পষ্ট উল্লেখ আছে। যেমন- বিখ্যাত কিতাব মারাক্কিউল ফালাহ”-এ উল্লেখ আছে যে,
قوله بصلاة اربع بنية اخر ظهر عليه هو الاحسن. (صفد ৩২৬(
অর্থ : মুছান্নেফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আখেরী যোহরের নিয়তে চার রাকায়াত নামায পড়ে নেয়া সর্বোত্তম।
ইমাম-মুজতাহিদগণ মূলতঃ আখেরী যোহর বা এহতিয়াতুয যোহর পড়ার আদেশ একারণেই দিয়েছেন যে, যেহেতু ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে ইমাম আবূ ইউছুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন যে, এক শহরের একের অধিক জায়গায় জুমুয়ার নামায পড়া জায়িয নেই। তবে শহর যদি বড় হয় এবং শহরের মধ্যখান দিয়ে যদি নদী-নালা প্রবাহিত হয়ে থাকে, তাহলে এক শহরে একের অধিক স্থানে জুমুয়া পড়া জায়িয।
আর ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, এক শহরে একের অধিক স্থানে জুমুয়া বিনাশর্তে জায়িয এবং এটার উপরই ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে।
উপরোক্ত ইখতিলাফ বা মতভেদের কারণে পরবর্তী হযরত ইমাম-মুজতাহিদ বা ফক্বীহ উনারা ইজতিহাদ করতঃ ফতওয়া প্রদান করেন যে, ইহতিয়াত বা সাবধানতার জন্য জুমুয়ার নামায আদায় করার পর চার রাকায়াত ইহতিয়াতুয যোহর বা আখেরী যোহরের নিয়তে পড়া উত্তম। যেমন বিশ্ব বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাব শরহে বেকায়াতেউল্লেখ আছে যে,

ঊদূ লেখা ঢুকবে.......................

অর্থ : জুমুয়ার নামাযের পর চার রাকাত (আখেরী) যোহর পড়তে হবে কিনা? ফতোয়ায়ে শামী কিতাবে পড়াকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, ঘরের ভিতরে চুপে চুপে পড়ে নিবে। আর ওস্তাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, জুমুয়ার পর বিনা জামায়াতে চার রাকায়াত (ইহতিয়াতুয-যোহর) পড়া মোস্তাহসান (উত্তম)। (১ম জিঃ পৃষ্ঠা ১৭২ উর্দ্দু শরাহ)
ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব রদ্দুল মোহতারেউল্লেখ আছে যে, 
كل موضع وقع الشك فى كونه مصرا اوتعددت الجمة ينبغى لهم ان يصلوا بعد الجمعة اربعا بنية الظهرا حتياط (ج صفه ৪৫)
অর্থ : যে স্থান শহর হওয়ার ব্যাপারে অথবা এক শহরে একের অধিক স্থানে জুমুয়া জায়িয হওয়া না হওয়ার মতবিরোধের কারণে সন্দেহ দেখা দেয়, সে স্থানে জুমুয়ার নামাযের পর আখিরী যোহরের নিয়তে ইহতিয়াত বা সাবধানতার জন্য চার রাকায়াত নামায পড়ে নেয়া উচিত।
উক্ত কিতাবে আরো বলা হয়েছে যে,
لما ابتلى اهل هرو باقامة الجمعتين فيها مع اختلاف العلماء فى جواز هما امرائمة هم بالاربعة بعد هااحتياطا- لا يمنع الشريعة الاحتياط للتقوى.
অর্থ : যখন ইমামগণ একের অধিক স্থানে জুমুয়া জায়িয হওয়ার ব্যাপারে আলিমগণের মতবিরোধ জানতে পারলেন, তখন ইমামগণ জুমুয়ার নামাযের পর চার রাকায়াত ইহতিয়াতুয যোহর পড়ার হুকুম দেন। কেননা শরীয়তে তাক্বওয়ার জন্য সাবধানতা অবলম্বন করতে নিষেধ করা হয়নি।” (২য় জিঃ ১৪৫)
এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে আবেদীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতওয়ায়ে শামীতে বলেন,   
قلت على انه لو سلم ضعفه فالخروج عن خلافه اولى فكيف مع خلاف هئلائ الائمة وفى الحديث متفق عليه فمن اتقى الشبهة استبرأ لدينه وعرضه- ولذا قال بعضهم فيما يقضى صلاة عمره مح انه لم يفيته منها شئ لا يكره لانه احذ بالاحتياط-
অর্থ : আমি বলি এক স্থানে একাধিক মসজিদে জুমুয়া নাযায়িয হওয়ার দলীল জঈফ হলেও যেহেতু এটাতে ইমামগণ মতভেদ করেছেন, সেহেতু চার রাকায়াত ইহতিয়াতুয যোহর পড়ে নেয়াই উত্তম। বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উনাদের মধ্যে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে, যে ব্যক্তি সন্দেহ হতে বাঁচল, সে তার দ্বীন ও সম্মান রক্ষা করলো।
এর উপর ভিত্তি করে কোন কোন ফক্বীহ ফতওয়া দেন যে, যে ব্যক্তির নামায কাযা হয়নি, এমন ব্যক্তিও যদি উমরী কাযা আদায় করে, তবে মাকরূহ হবেনা। কেননা সে এটা ইহতিয়াত বা সাবধানতার জন্য পড়েছে।
উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য ও বিশ্ববিখ্যাত কিতাবসমূহের বরাত দ্বারা সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, ইহতিয়াত বা সাবধানতার জন্য জুমুয়ার নামাযের পর চার রাকায়াত আখিরী যোহর পড়ে নেয়া জায়িয ও মোস্তাহসান (উত্তম), আর এটাকে অস্বীকার করা গোমরাহীর নামান্তর।
পক্ষান্তরে এটাও দিবালোকের ন্যায় উজ্জ্বল হলো যে, আখিরী যোহরের পবিত্র হদীছ শরীফ সম্পর্কে মাসিক পৃথিবীরবক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল ও জিহালতপূর্ণ। আর তারা ইলমে ফিক্বাহ ও ফিক্বাহের কিতাব সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ। কারণ অসংখ্য ফিক্বাহের কিতাবের দলীলের দ্বারা প্রমাণিত যে, আখিরী যোহর বা ইহতিয়াতুয যোহর পড়া জায়িয ও মুস্তাহসান। অতএব, ফিক্বাহের কিতাবের সাথে যাদের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই, তাদের পক্ষে আখেরী যোহরের হাদীছ না পাওয়াটাই স্বাভাবিক।
উপরোক্ত দলীল ছাড়াও নিম্নোক্ত কিতাবসমূহে আখেরী যোহর পড়া জায়িয বলা হয়েছে-
ফতওয়ায়ে আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, মুহীত্ব, ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া, কাফী, দুররুল মুখতার, আইনী, ক্বিনইয়া, গায়াতুল আওতার, কবীরী, ছগীরি, কিতাবুল ফিক্বাহ আলা মাযাহিবিল আরবা, শরহুল বিক্বায়া, ফতহুল ক্বাদীর, ফতওয়ায়ে আযীযী, বাহারে শরীয়ত, ইলমুল ফিক্বাহ, রুকুনুদ্দীন, ফতওয়ায়ে আমিনীয়া ইত্যাদি।
মোটকথা হলো- আখিরী যোহর বা ইহতিয়াতুয যোহর পড়া জায়িয, যা সুন্নাতে উম্মত মোস্তাহসান। এটাকে ফরয, ওয়াযিব মনে করা যেমন জায়িয হবে না, তদ্রুপ জুমুয়া ছহীহ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করাও সঠিক হবে না। তাক্বওয়ার জন্য পড়ে নেয়া উত্তম, তবে না পড়লে গুণাহগার হবে না এবং জুমুয়ার নামাযেরও কোন ক্ষতি হবেনা।
সুতরাং যারা বলে যে, আখিরী যোহর না পড়লে বছরে ৫২ ওয়াক্ত নামায কাযা হবে, এটা তাদের মনগড়া বানানো কথা, যা সম্পূর্ণ শরীয়ত উনার খেলাফ।