পবিত্র কুরআন ও হাদীছ শরীফ এর আলোকে প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা, রাখা, দেখা হারাম


পিডিএফ লিংক- https://drive.google.com/open?id=1ZOYxl80J99VSesdtIdKC5tbIQlImbvci 
Image result for ক্যামেরাপবিত্র কুরআন ও হাদীছ শরীফ এর আলোকে
প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা, রাখা, দেখা হারাম

ছবি কি?
ছবির সংজ্ঞা: প্রতিফলন এবং প্রতিসরণ ব্যতীত যদি কোন বস্তু বা জীব যে কোন উপায়েই হোক কোন স্থানের আকার আকৃতিতে আবির্ভূত হয় তবে সেটাকে ছবি বলে।
একটি ছবি কিন্তু যদি প্রতিফলন বা প্রতিসরণের মাধ্যমে সেটা হয় তখন সেটা ছবি না। ছবির ধারণাকে ভালভাবে বোঝানোর জন্য নিম্ন বর্ণিত বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা জরুরী:-
·         আলোর প্রতিফলন
·         আলোর প্রতিসরণ

আলোর প্রতিফলন, আলোর প্রতিসরণ কি?

আলোর প্রতিফলন: আলোকরশ্মি যখন বায়ু বা অন্য কোন স্বচ্ছ মাধ্যমের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় অন্য কোন মাধ্যমে বাধা পায়, তখন দুই মাধ্যমের বিভেদ তল থেকে কিছু পরিমাণ আলো প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে। আলোর বাধা পেয়ে এই ফিরে আসাকে আলোর প্রতিফলন বলে।

আলোর প্রতিসরণ: আলোকরশ্মি এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে প্রবেশ করার সময় দুই মাধ্যমের বিভেদ তলে আলোকরশ্মি দিক পরিবর্তন করে। একে আলোর প্রতিসরণ বলে। একই মাধ্যমে ঘণত্বের তারতম্যের কারণেও প্রতিসরণ হয়ে থাকে।

প্রতিফলন বিষয়টি বুঝতে উদাহরণঃ মনে করি, একটা অন্ধকার রুম। সেখানে একটি গোলাপ ফুল রয়েছে। আমরা সেই গোলাপ ফুলটি দেখতে পাব না। কারণ কোন বাতি বা আলো নেই। এখন যদি বাতি জ্বালানো হয় তখন বাতির আলো সেই ফুলে ছিটকে আমাদের চোখে আসে তখন আমরা ফুলটিকে দেখতে পাই। এভাবেই আমরা দেখে থাকি।

রুমঃ এখন মনে করি ফুলটিকে একটি আয়নার কাছে নিয়ে গেলাম। বাতির আলোটি ফুলে পড়বে, ফুল থেকে আয়নাতে বাড়ি খেয়ে সে আলোটিই আমার চোখে ঢুকবে, তখনই আমি আয়নার ভেতরেও আরেকটা ফুল দেখতে পাব। এই যে আয়নার মধ্যে বাড়ি খেয়ে আলোটা আমার চোখে আসলো এটাকে বলা হচ্ছে প্রতিফলন।

আয়নাঃ প্রতিসরণের বিষয়টি বুঝতে উদাহরণঃ প্রতিসরণ বোঝার জন্য একটা উদাহরণ দেয়া যায়- যেমন, কেউ যদি চশমা পড়ে থাকেন তাহলে এ ফুলটিকে কিভাবে দেখবেন? ফুলের থেকে প্রথমেই যে আলো চশমার যে কাঁচ রয়েছে সে কাঁচের ভেতর দিয়ে আমার চোখে আসছে। এইযে বাতাসের মাধ্যমে কাঁচের মাধ্যমে যাচ্ছে এ বিষয়টি হচ্ছে প্রতিসরণ। এটাও কিন্তু মূল আলো অর্থাৎ ফুল থেকে যে আলোটি আসছে সেটিই আমি দেখতে পাচ্ছি। এটা হচ্ছে প্রতিসরণ।

আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণের মাধ্যমে তৈরি দৃশ্য ছবি নয়ঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন বস্তু বা জীব যেখানেই যে অবস্থায়ই থাকুক, আলোর প্রতিফলন বা প্রতিসরণ বা উভয়ের মাধ্যমে যদি তা যে কোন স্থানে আকার আকৃতিতে দৃশ্যমান হয় তবে সেই আকার আকৃতিটি ছবি নয়।
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গামলার পানির মধ্যে এবং দর্পনে নিজ চেহারা মুবারক দেখেছেন।
কোন কোন মাধ্যমে তৈরি দৃশ্য ছবি হয়?
ক্যামেরা কিভাবে ছবি তৈরি করে? ক্যামেরা দিয়ে যে বস্তুর ছবি তোলা হয় সেটা থেকে বিচ্ছুরিত আলো ক্যামেরার মধ্যে ঢুকে। ক্যামেরার ভেতরে একটা ফিল্ম থাকে তার উপর সেই আলোটারই পৃথকভাবে ছাপ পড়ে। এই ছাপটা ক্যামেরার ফিল্মের উপরে রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে অথবা Electric Signalএর মাধ্যমে তৈরী হয়। যার ফলে আমরা দেখতে পাই, আয়নার সামনের বস্তুটিকে যদি ঢেকে দেয়া হয় তখন সেটাকে আর আয়নার ভেতর দেখা যায়না। কিন্তু ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তোলার পর যদি ক্যামেরার সামনের বস্তুটিকে ঢাকা হয় তাহলে কিন্তু ছাপটা (ছবি) ফিল্মের মধ্যে থেকেই যাবে। এটাই হচ্ছে একটা ডুপ্লিকেট কপি যেটা Wash (প্রিন্ট) করার পর আমরা ছবি হিসেবে দেখতে পাই।

ক্যামেরার মতো ছবি তৈরি করে এমন আরো কিছু ডিভাইস-
টিভি: কিভাবে ছবি তৈরী করে প্রথমে একটি ক্যামেরা দিয়ে রেকর্ড করা হয়। সেটা টিভির সেন্টারগুলোতে বড় এ্যান্টেনা দিয়ে ছড়িয়ে দেয়া হয়, ট্রান্সমিট করা হয়। এরপর টিভির যে বাক্স সেটার মধ্যে একটা এ্যান্টেনা থাকে সেটাকে রিসিভ করে। রিসিভ করে মনিটরের(টিভির পর্দা) মধ্যে সেটা দেখায়। মনিটরে ছবি তৈরীর অনেক পদ্ধতি রয়েছে, আগে ইলেকট্রন ছুড়ে তৈরী করা হতো যেটা ফসফরসেন্ট স্ক্রীনে ডিসপ্লে হয় অথবা এখন বর্তমানে এলসিডি ব্যাবহার করা হয়। উল্লেখ্য যে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ না বোঝার কারণে অনেকে টেলিভিশনকে পানি ও আয়নার সাথে তুলনা করে থাকে এবং টিভি দেখা জায়েয বলে মনগড়া ফতওয়া দিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করে থাকে।

সিসিটিভি: কিভাবে ছবি তৈরী করেএটাকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বলা হয়, কারণ সিসিটিভি ক্যামেরা এবং ডিসপ্লে সাধরণত তার দিয়ে যুক্ত থাকে। (এখন ওয়ারলেসও বের হয়েছে) যার মাধ্যমে ক্যামেরায় ধারণকৃত ছবি সরাসরি প্রদর্শিত(ডিসপ্লে) হয়। উল্লেখ্য যে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে কথিত নিরাপত্তার অযুহাত দিয়ে সউদী আরবে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষের হজ্ব নষ্ট করা হচ্ছে। রয়েছে সকল পবিত্র স্থানে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরা। এ সকল ক্যামেরার কারণে হাজী সাহেবদের প্রতি মুহূর্তে ছবি উঠতে থাকে এবং যার কারণ হাজী সাহেবদের আমলনামায় লিখা হয় কোটি কোটি কবীরা গুনাহ।

হজ্বের পবিত্র স্থান সমূহে সিসিটিভি: ইহুদীদের একটি সূক্ষ ষড়যন্ত্র। 
ইহুদী-খ্রিস্টানরা চায় কিভাবে মুসলমানের ঈমান এবং আমলকে ধ্বংস করা যায়। তারই ধারাবাহিকতায় অন্যতম এবং জঘন্যতম একটিষড়যন্ত্র হচ্ছে- মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ-এ সিসিটিভি লাগানো। সউদী আরবের ওহাবী সরকার ও উলামায়ে ছূ, যারা ইহুদী-নাছারা, কাফির-মুশরিক এক কথায় বেদ্বীনদের গোলাম, তারা একত্রিত হয়ে কাবা শরীফ হিফাযতের নাম দিয়ে মক্কা শরীফ-এর হেরেম শরীফ-এর ভিতরে অর্থাৎ কাবা শরীফ, ছাফা, মারওয়া, মিনা, মুজদালিফা, আরাফাহ ও মদীনা শরীফ ইত্যাদি পবিত্র স্থানে সমূহে হাজার হাজার সিসিটিভি ফিট করেছে। এসব ক্যামেরা এতই শক্তিশালী যে, একটি ক্যামেরা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৪০০ ছবি তুলতে সক্ষম। এখন ফিকিরের বিষয় যে, কোন মুসলমান হজ্জ করতে গিয়ে যদি ২০ দিন অথবা তার অধিক সময় থাকে, তাহলে তার ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় কত লক্ষ-কোটি হারাম কাজ তথা কবিরা গুনাহ হচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ! ক্বাবা শরীফ, রওজা শরীফ এর নিরাপত্তার মালিক স্বয়ং আল্লাহ পাক।

পূর্ববর্তী একটি ঘটনা সংক্ষেপে: একবার আবরাহা এসেছিল ক্বাবা শরীফ ধ্বংস করতে। সে যুগের নবী ছিলেন হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম। তিনি ক্বাবা শরীফ-এর পবিত্র গিলাফ ধরে দোয়া করেছিলেন আয় আল্লাহ পাক! আবরাহা এসেছে বিশাল সৈন্য-সামন্ত, হাতি, ঘোড়া নিয়ে পবিত্র ক্বাবা শরীফ ধ্বংস করতে। আমাদের উচিত ছিল আবরাহার বাহিনী ধ্বংস করে দেয়া কিন্তু আমদের সে ব্যবস্থা-প্রস্তুতি নেই। আয় বারে এলাহী! আমিতো ক্বাবা শরীফ-এর মালিক নই। আপনি ক্বাবা শরীফ-এর মালিক; মালিকানা গ্রহণ করুন। অতঃপর, আল্লাহ পাক অসংখ্য আবাবিল পাখি পাঠিয়ে আবরাহা ও তার বাহিনীকে ধ্বংস করে ক্বাবা শরীফ হেফাযত করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
সূরা ফীল-এ আল্লাহ পাক বলেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কী দেখেননি যে, আপনার রব তায়ালা তিনি হস্তিওয়ালাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন এবং তাদের কূটকৌশল কিভাবে ধূলিস্যাৎ করেছেন, এবং প্রেরণ করেছেন তাদের উপর ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি, উহারা তাদের উপর কঙ্করময় পাথর নিক্ষেপ করেছে, অতঃপর তিনি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণের ন্যায় করেছেন।অর্থাৎ এ সূরায় বর্ণিত ঘটনা থেকে বান্দা ও উম্মতকে এ নছীহত গ্রহণ করতে হবে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি কাবা শরীফ, রওজা শরীফসহ পবিত্র স্থান সমূহ সবসময়ই কুদরতীভাবে হিফাযত করেছেন, করেন ও করবেন। কাজেই, হিফাযত করার জন্য সিসি ক্যামেরার/ছবি তোলার প্রয়োজন নেই, আল্লাহ পাক তিনিই যথেষ্ট।

শরীয়তে প্রাণীর ছবির ফায়সালা কি?

ছবিকে আরবীতে تصوير (তাসবীর), ইংরেজীতে Photo, Picture ইত্যাদি বলা হয়। যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন এবং যে কোন পদ্ধতিতেই তৈরী, আঁকা বা তোলা হোক না কেন- কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও কিয়াস অর্থাৎ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদা মোতাবেক প্রাণীর ছবি তৈরী করা, তোলা, তোলানো, আঁকা, রাখা, দেখা, দেখানো ইত্যাদি হারাম ও নাযায়িজ। হাদীস শরীফ-এ প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার বিষয়ে দলীল নিচে দেওয়া হলো।

হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “প্রত্যেক ছবি তুলনে ওয়ালা জাহান্নামী।নাঊযুবিল্লাহ! (মুসলিম শরীফ)

হযরত আবূ মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত, “নিশ্চয় ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন আজাব হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে।” (মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০১)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি- তিনি বলেছেন, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ঐ ব্যক্তিকে কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে। (মিশকাত শরীফ- ৩৮৫)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যারা প্রাণীর ছবি তৈরী করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। এবং তাদেরকে বলা হবে, যে ছবিগুলো তোমরা তৈরী করেছ, সেগুলোর মধ্যে প্রাণ দান কর।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ৮৮০, মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ২০১)

হযরত আমাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত মুসলিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মাসরুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইরের ঘরে ছিলাম, তিনি উনার ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা উনহু উনার নিকট শুনেছি, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ৮৮০)

হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি- তিনি বলেছেন, “মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তি অধিক অত্যাচারী, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছুরত তৈরী করে। তাদেরকে বলা হবে- তাহলে তোমরা একটি পিপিলিকা অথবা একটি শস্য অথবা একটি গম তৈরী করে দাও।” (মিশকাত শরীফ পৃঃ ৩৮৫)

হযরত সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট এসে বলল, আমি এমন এক ব্যক্তি যে প্রাণীর ছবি অংকন করি, সুতরাং এ ব্যাপারে আমাকে ফতওয়া দিন। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাকে বললেন, তুমি আমার নিকটবর্তী হও। সে ব্যক্তি উনার নিকটবর্তী হল। পুণরায় বললেন, তুমি আরো নিকটবর্তী হও। সে আরো নিকটবর্তী হলে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার মাথায় হাত রেখে বললেন, আমি নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ ব্যাপারে যা বলতে শুনেছি তোমাকে তা বলব। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “প্রত্যেক প্রাণীর ছবি তৈরীকারীই জাহান্নামে যাবে। এবং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি প্রত্যেকটি ছবিকে প্রাণ দিবেন এবং সেই ছবি গুলো তাদেরকে জাহান্নামে শাস্তি দিতে থাকবে।এবং ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, তোমার যদি ছবি আঁকতেই হয় তবে, গাছ-পালা বা প্রাণহীন বস্তুর ছবি আঁক। (মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০২)

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে প্রাণীর ছবি বা ছবিযুক্ত সকল জিনিস (থাকলে) ধ্বংস করে ফেলতেন। (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ৮৮০, মিশকাত পৃঃ ৩৮৫)

হযরত আবু যুরয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে মদীনা শরীফের এক ঘরে প্রবেশ করলাম, অতঃপর তিনি ঘরের উপরে এক ছবি অংকনকারীকে ছবি অঙ্কন করতে দেখতে পেলেন, এবং বললেন আমি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন, মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তি অধিক অত্যাচারী, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছুরত সৃষ্টি করে। তাকে বলা হবে একটি শস্যদানা সৃষ্টি কর অথবা একটি পিপিলিকা সৃষ্টি কর। (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০)

 হযরত আবু হুজায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিতা হতে বর্ণনা করেন, “খতামুন্নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রক্তের দাম, ও কুকুরের দাম নিতে এবং যেনাকারীনীর উপার্জন নিষেধ করেছেন, এবং যে ঘুষ খায়, যে ঘুষ দেয়, যে অংগে উলকি আঁকে এবং যে আঁকায়, আর যে ছবি অংকন করে, এদের সবার ওপর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লানত দিয়েছেন।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ৮৮১)

উম্মুর মুমিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার নিকট আসলেন। প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা চাদর গায়ে দেয়া ছিলাম। এটা দেখে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক রঙ্গিন হয়ে গেল। অতঃপর তিনি চাদর খানা নিয়ে ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন ক্বিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির সাদৃশ্য (কোন প্রাণীর ছুরত) সৃষ্টি করে” (মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০০)

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “নিশ্চয় ক্বিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছুরত তৈরী করবে।(মিশকাত পৃঃ ৩৮৫)

হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত- হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, ক্বিয়ামতের দিন এমন একখানা আগুনের গর্দান বের হবে, যার দুটো চক্ষু থাকবে। যদ্বারা সে দেখতে পাবে। দুটো কান থাকবে, যদ্বারা সে শুনতে পাবে। একটি মূখ থাকবে, যদ্বারা সে কথা বলবে। গর্দানটি বলবে- নিশ্চয় আমাকে তিন ব্যক্তির অভিভাবক বানান হয়েছে- () প্রত্যেক অহংকারী অত্যাচার লোকের () যারা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে অন্যকেও প্রভু ডাকে () যারা প্রাণীর ছবি তৈরী করে। (মিশকাত শরীফ পৃঃ ৩৮৬)

হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি রাখতে নিষেধ করেছেন এবং ওটা তৈরী করতেও নিষেধ করেছেন। (তিরমিযি ১ম জিঃ পৃঃ ২০৭)

হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মক্কা বিজয়ের সময় হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে হুকুম করলেন- তিনি যেন পাথর দিয়ে ক্বাবা ঘরের সমস্ত মূর্তি বা চিত্রগুলি ধ্বংস করে দেন। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ক্বাবা ঘরের মুর্তি বা চিত্রগুলো ধ্বংস না করা পর্যন্ত ক্বাবা ঘরে প্রবেশ করলেন না। (আবু দাউদ শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২১৯)

 হযরত ঈসা বিন হুমাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, হযরত ওকবাতুল হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমাদের মসজিদে প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা কাপড় রয়েছে। তখন হযরত ঈসা বিন হুমাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, তুমি (মসজিদ থেকে) ওটা সরিয়ে ফেল। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২য় জিঃ পৃঃ৪৬)

হযরত আবু উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, লোবাবাহ উনার মাতা হতে আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, উনার মাতা হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খেদমতে ছিলেন, আর হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি প্রাণীর ছবিযুক্ত একটি সিন্দুকের দিকে নামায পড়ছিলেন। অতঃপর হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আদেশে ওটা নিঃচিহ্ন করে ফেলা হলো। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২য় জিঃ পৃঃ৪৬)

হযরত ইবনে মাস্উদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিদের ক্বিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি হবে, যারা কোন নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে শহীদ করেছে অথবা কোন নবী আলাইহিমুস সালাম যাদেরকে হত্যা করেছেন এবং ঐ সমস্ত লোক যারা বিনা ইলমে মানুষদেরকে গোম্রাহ করে এবং যারা প্রাণীর ছবি তৈরী করে। (মুসনদে আহ্মদ ২য় জিঃ পৃঃ২১৭)

হযরত উসামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে পবিত্র ক্বাবা ঘরে প্রবেশ করলাম। আমি ক্বাবা ঘরের ভিতরে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলাম। অতঃপর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুকুমে আমি পাত্রে করে পানি নিয়ে আসলাম।হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঐ ছবিগুলিতে পানি নিক্ষেপ করলেন এবং বললেন, “মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ঐ গোত্রের সাথে জ্বিহাদ ঘোষণা করেছেন, যে গোত্র এরূপ প্রাণীর ছুরত তৈরী করে। যা সে তৈরী করতে অক্ষম অর্থাৎ জীবন দিতে পারেনা” (মুছান্নেফ ইবনে আবী শায়বা ৮ম জিঃ পৃঃ২৯৬, তাহাবী ২য় জিঃ পৃঃ৩৬৩)

হযরত আবু তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “ঐ ঘরে রহমতের ফেরেস্তা প্রবেশ করে না, যে ঘরে প্রাণীর ছবি বা কুকুর থাকে।(বুখারী, কিতাবুললিবাছ, বাবুত তাছাবীর, ২য় জিঃ ৮৮০ পৃষ্ঠা)

মাজুর বা অপরাগতা    

ইসলাম কোন ক্ষেত্রেই যেমন বাড়াবাড়ি বা জোড় জবরদস্তী করেনি বা করার অনুমতিও দেয়নি তেমনিভাবে কঠিনও করেনি। বরং সহজ করে দিয়েছে। যেমন- ফরয নামাযের সময় ক্বিয়াম করা বা দাড়ানো হচ্ছে ফরয। এখন কেউ যদি এরূপ হয় যে, সে দাড়াতে সক্ষম নয় তার ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি?

তার ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা হলো সে যদি দাড়াতে না পারে তবে সে বসে বসেই নামায আদায় করবে। যেহেতু সে দাড়ানোর ব্যাপারে মাজুর বা অক্ষম।অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে, لَاۤ اِكْرَاهَ فِى الدِّيْنِ অর্থাৎ দ্বীনের মধ্যে কোন প্রকার কাঠিন্যতা নেই।(সূরা বাক্বারা- ২৫৬)

আর হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে, ان الدين يسر অর্থাৎ, ‘দ্বীন বা শরীয়ত হচ্ছে সহজ।’ (ইয়ুসরুন)
অনুরূপভাবে হারাম খাওয়া সকলের জন্যই হারাম। কিন্তু কেউ যদি একাধারে তিনদিন না খেয়ে থাকে তার নিকট যদি কোন হালাল খাদ্য মওজুদ না থাকে তবে তার ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কিতার ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা হলো- এমতাবস্থায় হারামটা তার জন্য মুবাহ হয়ে যায় জীবন রক্ষার্থে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক বলেন, فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ অর্থাৎ, “তোমরা আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর তোমাদের সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী। (সূরা তাগাবুন-১৬) অর্থাৎ সাধ্যের বাইরে শরীয়ত কাউকে কোন আদেশ করেনি।
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন, لاَ يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا اِلاَّ وُسْعَهَاঅর্থাৎ, আল্লাহ পাক কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেন না। (সূরা বাক্বারা-২৮৬)   
আর উছুলের কিতাবে উল্লেখ আছে, الضرورة تبيح الـمحذورات অর্থাৎ, জরুরত হারামকে মুবাহকরে দেয়। (উছূলে বাযদূবী, উছূলে কারখী)

শরীয়তের পরিভাষায় এরূপ অবস্থাকে মাজুর বা অপরাগতাবলা হয়। ফিক্বাহ-এর কিতাবসমুহে এরূপ অসংখ্য মাজুর এর মাসয়ালা বর্ণিত রয়েছে।

. চাকরি-ব্যবসাএখন চাকরি-ব্যবসা একটি জরুরী বিষয়। কারণ বেঁচে থাকতে হলে খেতে হবে। অর্থাৎ প্রত্যেককে বাঁচার জন্য তার জীবন রক্ষা করা হচ্ছে ফরয। আর সে জন্য হালাল রিযিক তালাশ করা বা কামাই করাও ফরয।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, فَاِذَا قُضِيَتِ الصَّلٰوةُ فَانْتَشِرُوْا فِى الْاَرْضِ وَابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللهِ. 
অর্থাৎ, “নামায শেষ করে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহ পাক উনার ফযল তথা হালাল রিযিক অন্বেষণ কর।” (সূরা জুমুয়া-১০)

আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, 
عن عبد الله رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم طلب كسب الحلال .فريضة .بعد الفريضة
অর্থ:  হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, (পুরুষের জন্য) অন্যান্য ফরযের পর হালাল কামাই করাও ফরয। (বাইহাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান, মিশকাত-২৪২ পৃঃ)
এখন কারো জন্য যদি হালাল কামাই করতে গিয়ে চাকরি-ব্যবসা করতেই হয়। তবে তাকে প্রথমতঃ কোশেশ করতে হবে ছবি ছাড়া চাকরি ও ব্যবসা করার। যদি ছবি ছাড়া চাকরি-ব্যবসার কোন ব্যবস্থা না হয় তবে সেক্ষেত্রে মাজুর বা অপরাগ হিসেবে চাকরি বা ব্যবসার ক্ষেত্রে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই ছবি তুলতে পারবে। তবে অবশ্যই তাও হারাম জেনেই তুলতে হবে।

. পাসপোর্টঃ যদি কারো পক্ষে দেশে থেকে জরুরত আন্দাজ হালাল কামাই করা সম্ভব না হয় এবং কেউ এরূপ অসুস্থ হয় যে- দেশে তাকে চিকিৎসা করে ভাল করা সম্ভব নয় বিদেশে নিলে ভাল হবে এক্ষেত্রে মাজুর হিসেবে ছবিসহ পাসপোর্ট করে বিদেশ যেতে পারবে। এছাড়া ভ্রমণ বা জরুরত ব্যতীত অন্যকোন কারণে ছবিসহ পাসপোর্ট করা জায়িয নেই।

. ড্রাইভিং লাইসেন্সঃ যানবাহন বর্তমানে একটি জরুরী বিষয়। আর ড্রাইভার ব্যতীত যান বাহনের কোন চিন্তাই করা যায় না। তাছাড়া অনেকের জন্য ড্রাইভিং পেশাটাও যেহেতু হালাল কামাইয়ের একটি অন্যতম মাধ্যম তাই এক্ষেত্রে মাজুর হিসেবে লাইসেন্স এর জন্য ছবি তোলা মুবাহ।

. ব্যাংক একাউন্টঃ যদি কারে জন্য টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার, নিজ ঘরে রাখা নিরাপদ মনে না হয়। বরং চুরি-ডাকাতির আশঙ্কা থাকে তবে এক্ষেত্রেও ছবিসহ ব্যাংক একাউন্ট করা মাজুর হিসেবে মুবাহ হবে।

. জমি রেজিস্ট্রীঃ জমি ক্রয় বিক্রয়ের বিষযটিও ক্ষেত্র বিশেষে জরুরী। কাজেই যদি কারো জন্য জমি ক্রয় করা বিক্রয় করা অপরিহার্য হয়েই পরে তবে সেক্ষেত্রে মাজুর হিসেবে ছবিসহ জমি ক্রয় বিক্রয় করতে পারবে।

. লেখা-পড়াযেহেতু জরুরত আন্দাজ ইলমঅর্জন করা সকলের জন্য ফরয। তার পাশাপাশি হুনর বা দুনিয়াবী জ্ঞানঅর্জন করাও জরুরী বিধায় উল্লিখিত ক্ষেত্রে ছবি তোলার ব্যাপারে সকলে মাজুর। তবে ছবি ছাড়া পড়া শুনা করার যদি কোন সুযোগ থাকে তবে সেক্ষেত্রে ছবিসহ পড়া-শুনা করা জায়িয হবে না।
মূলতঃ উল্লিখিত প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা মাজুর। যেহেতু আমাদের দেশে খিলাফত জারী নেই। গণতান্ত্রিক সরকার জোড় পূর্বক অনেক শরীয়ত বিরোধী আদেশ আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে থাকে। যেমন ছবি চাপিয়ে দিয়েছে। এক্ষেত্রে জরুরতে মাজুর হিসেবে যারা ছবি তুলবে কোন গুণাহ হবে না বরং এ সমস্ত গুনাহের দায়-দায়িত্ব সরকারের উপরই বর্তাবে। কেননা হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,         
হযরত জারীর বিন আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে কেউ ইসলামে কোন উত্তম পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে (যা শরীয়তসম্মত) তার জন্যে তিনি ছওয়াব পাবেন এবং তারপর যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে তার ছওয়াবও তিনি পাবেন। আবার যে কেউ দ্বীন ইসলামে কোন শরীয়ত বিরোধী পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে, তার গুনাহ সে পাবে এবং তার পরে যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে তাদের গুনাহও তার আমলনামায় দেয়া হবে।” (মুসলিম শরীফ)

তাই সরকারের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হবে উল্লিখিত প্রতিটি ক্ষেত্রে ছবিকে বাদ দেয়া। যেহেতু শরীয়তে ছবি তোলা বা তোলার শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ। কাজেই ৯৭% মুসলমানের এদেশে শরীয়ত বিরোধী ও গুনাহের কাজ মুসলমানের এদেশে শরীয়ত বিরোধী ও গুনাহের কাজ মুসলমানদের উপর জোর পূর্বক চাপিয়ে দেয়া সরকারের উচিত হবে না। যেখানে পরিচয় বা সনাক্ত করণের জন্য ছবি ছাড়া বৈধ আরো পদ্ধতি রয়েছে- যেমন ফিঙ্গার প্রিন্ট। সেখানে ছবিকে বাধ্যতামূলক করা হারাম ও কুফরী হবে।
আইডি কার্ডের জন্য ছবি তোলার শরয়ী বিধানঃ সাধারণভাবে কোন প্রকার আইডি কার্ড বা পরিচয় পত্রের জন্যই ছবি তোলা জায়িয নেই। ভোটার আইডি কার্ড ও ন্যাশনাল আইডি কার্ডের জন্যও ছবি তোলা জায়িয নেই। কারণ এগুলো কোনটাই জরুরতের মধ্যে পড়ে না। কাজেই সাধারণভাবে এক্ষেত্রে মাজুরের মাসয়ালাও গ্রহণযোগ্য নয়। তবে হ্যাঁ সরকার বা কোম্পানী অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ যদি জোরপূর্বক ছবিসহ পরিচয় পত্র করতে বাধ্য করে আর পরিচয় পত্র না করলে যদি চাকরি চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে সেক্ষেত্রে সে মাজুর বলে গণ্য হবে।

হারাম ছবির প্রচারণায় নেপথ্যে প্রথমত কারা?
এটা চিন্তার বিষয় যে, কিভাবে বিশ্ব মুসলিম ছবির ধোঁকায় পড়ে ঈমান হারাচ্ছে? কারা মুসলমানদের মধ্যে সূক্ষ্মভাবে ছবির প্রচলণ ঘটিয়ে মুসলমানদের ঘরকে রহমত থেকে বঞ্চিত করছে? মূলত ইহুদী, খ্রিস্টান, কাফির-মুশরেক তারাই এর নেপথ্যে অতি সূক্ষাতিসূক্ষ ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে, ছবি তুলতে আমাদের বাধ্য করছে, আমাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। কালামুল্লাহ শরীফ-এ এরশাদ হয়েছে, “মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে প্রথমে ইহুদী, এরপরে মুশরিক।
আহলে কিতাব (ইহুদী, মুশরিকরা) হিংসাবশত সবসময় চেয়ে থাকে মুসলমানদের ঈমান আনার পর কিভাবে তাঁদের ঈমান নষ্ট করে দেয়া যায়। নাউযুবিল্লাহ! মূলত এজন্যই তারা কৌশলে ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, হারাম টিভি চ্যানেল ইত্যাদিতে মুসলমানদের মশগুল করে দিয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!
ইহুদীদের পরে দ্বিতীয়ত কারা হারাম ছবিকে জায়েয বলে?

ইহুদী-মুশরেকদের পক্ষে তাদেরই ক্রয়কৃত গোলাম/এজেন্ট হিসেবে ছবির পক্ষে মুসলমানদের বিভ্রান্ত করেছে কিছু সংখ্যক ধর্মব্যবসায়ী কথিত মাওলানা-মুফতি যাদেরকে কালামুল্লাহ শরীফ-উলামায়ে ছূবলা হয়েছে। এরা দুনিয়াবী অর্থ-সম্পদের লালসায় ধর্ম বিক্রী করে থাকে অর্থাৎ হারামকে হালাল, হালালকে হারাম বলে ফতওয়া দেয়এসব মোল্লা সূরতের ধর্মব্যবসায়ীরা বলে থাকে বর্তমান যুগে ছবি তোলা জায়েযনাউযুবিল্লাহ।
হাদীস শরীফ-এ এরশাদ হয়েছে, “আমার উম্মতের মধ্যে যারা উলামায়ে ছূতাদের জন্য ধ্বংস।কারণ তারা তাদের অর্জিত ইলিমকে ব্যবসার জন্য ব্যবহার করে থকে এবং তারা আমির-ওমরা, রাজা-বাদশাহদের পেছন পেছন ঘুরে অর্থ-সম্পদের লোভে। আল্লাহ পাক বলেছেন, এ শ্রেণীর ধর্মব্যবসায়ীদের ব্যবসায় আল্লাহ পাক বরকত দিবেন না। আমাদের দেশে ওহাবী, খারিজি, জামাতী, দেওবন্দী, তবলীগী, মুফতি আমিনী, চরমোনাইর ভন্ড পীর সহ নামে বে-নামে অনেক ধর্মব্যবসায়ী উলামায়ে ছূরয়েছে যারা বর্তমান যুগে ছবি তোলা জায়েযবলে, ‘আল্লাহ পাক উনার হাবীব আমাদের মতো সাধারণ মানুষবলে এবং এরুপ অনেক ভ্রান্ত ফতওয়া দেয় যা বিশ্বাস করলে মুসলমানদের ঈমান নষ্ট হয়ে যায়।
মূলতঃ এরা হচ্ছে ইবলিসের অনুরুপ। ইবলিস ছয় লক্ষ বছর ইবাদত করেও ধ্বংস হয়ে গেছে। অনুরুপ এরাও অনেক ইলিম অর্জন করার পরও এরা ধ্বংস। সূতরাং এদের থেকে সবসময় সাবধান থাকতে হবে।

ছবি নিয়ে ধর্মব্যবসায়ীদের ফতওয়া ভুল কেন?
·         ধর্মব্যবসায়ীরা বলে থাকে বর্তমান যুগে ছবি তোলা জায়েয’, ‘বর্তমান আধুনিক যামানায় ছবি ছাড়া চলেনা।নাউযুবিল্লাহ!
·         ছবি নিয়ে ইহুদীদের শেখানো এসব ফতওয়া ভ্রান্ত হওয়ার কারণ-কালামুল্লাহ শরীফ-এ এরশাদ হয়েছে, “ইসলাম হচ্ছে পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থাঅর্থাৎ মানুষের জন্য যা কিছু প্রয়োজন তা ইসলাম দিয়ে দিয়েছে। যেহেতু প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা, দেখা ইসলামী শরীয়তেই হারাম করা হয়েছে সূতরাং ক্বেয়ামত পর্যন্ত এটা মানুষের কোন প্রয়োজন নেই, এটা ছাড়াও মানুষের চলবে। মূলতঃ আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব যেটা নিষেধ করেছেন সেটা বান্দা ও উম্মতের কোন প্রয়োজন নেই, সেটাতে কোন ফায়দা নেই।
অনেকে মনে করে থাকেসবাই যেটা করে আমাদেরও সেটাই করা উচিত। এ ব্যাপারে কালামুল্লাহ শরীফ-এ এরশাদ হয়েছে, “তোমরা যদি দুনিয়াতে অধিকাংশ লোকের অনুসরণ করে থাক তবে তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।
মূলতঃ কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ কেয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তনীয় থাকবে। এখানে পরিবর্তন বা সংশোধন করার মতো কিছু নেই। তাই এখানে যেটাকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে সেটা কেয়ামত পর্যন্ত হারাম।
তৃতীয়ত ছবি তুলতে বাধ্য করছে কারা ?
·         ইহুদীদের চক্রান্ত আর ধর্মব্যবসায়ীদের উলামায়ে ছূদের ধোঁকার পর তৃতীয়ত পর্যায়ে মুসলমানদের হারাম ছবি তুলতে বাধ্য করছে হারাম তন্ত্রে-মন্ত্রে পরিচালিত জালিম সরকার গং।
·         পরিপূর্ণ ইসলামী খিলাফত জারি না থাকায় হারাম ছবি থেকে মুসলমান বাঁচতে পারছেনা। জালিম সরকার মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে, বাধ্য করছে ছবি তুলতে। নাউযুবিল্লাহ।
·         এখন হজ্জ্ব পালন করতে হলেও অসংখ্য ছবি তুলতে বাধ্য হতে হয় অর্থাৎ একটি ফরয আদায় করতে হলে বাধ্য হয়ে অসংখ্য কবীরা গুনাহ করতে হয়। (যদিও এমতাবস্থায় হজ্জ্ব ফরয থাকেনা)
·         অনেকে সউদী আরবকে অন্ধ অনুসরণ করে বলে থাকে যে, সউদী আরবে ছবির প্রচলন আছে, সেখানেও হজ্জ্বের জন্য ছবি তুলতে হয়, কাজেই এটা জায়েয। নাউযুবিল্লাহ।
মূলতঃ দেশ কখনো অনুসরণীয় নয়, অনুসরণীয় হচ্ছে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ। সূতরাং সউদী আরব দলীল নয়। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বর্তমান সউদী ওহাবী সরকার সবচাইতে বড় জালিম সরকার। যারা ইহুদীদের খাছ এজেন্ট। কাজেই এদের অনুসরণ করা উচিত হবেনা।

তাহলে বর্তমান যুগে ছবি তোলার বিষয়ে আমাদের কি করা উচিত?
জরুরত বা মাজুরতার কারণে হারামটা মুবাহ হয়ে যায়।যেমন জীবন বাঁচানো ফরয। এখন কেউ যদি তিনদিন পর্যন্ত হালাল খাদ্য না পেয়ে অনাহারে থাকে তার জন্য হারাম খাদ্য এমনকি শুকরের গোস্তও মুবাহ হয়ে যায়। ঠিক নামায, রোযার ক্ষেত্রেও কেউ অসুস্থ বা শরীয়তের দৃষ্টিতে মাজুর বলে গন্য হলে তার জন্য নামায বা রোযা ফরয থাকেনা। একইভাবে যেহেতু হালাল রুজি অন্বে^ষন করা ফরয তাই হালাল রুজি উপার্যন করতে গিয়ে যদি ছবি তোলা বাধ্যতামূলক হয়ে যায় সেক্ষেত্রে ছবি তুলে যতকপি প্রয়োজন ঠিক ততকপিই করতে হবে। বেশি করাটা উচিত হবেনা। এবং মনে মনে এটাকে হারাম জেনে, মন থেকে ঘৃণা করে, আল্লাহ পাক উনার নিকট অনুতপ্ত হতে হবে এবং সাথে সাথে তওবাহ-ইস্তেগফার করতে হবে যেন আল্লাহ পাক ক্ষমা করেন। (বর্তমান যুগে বিশ্বের কোথাও ইসলামী শাসন ব্যবস্থ্যা জারি নেই। তাই জালিম সরকার ও মানবরচিত শাসন ব্যবস্থার কারণে বাধ্য হয়ে ছবি তুলতে হয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে এখানে হালাল উপার্যনকারী ব্যাক্তি মাজুর বলে গন্য হবে।)
ছবির বিকল্প কি?
মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন মানুষের জন্য প্রয়োজন এমন সকল ব্যবস্থা দিয়েই মানুষকে জমিনে প্রেরণ করেছেন। মানুষের পরিচিতি, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিশেষ প্রয়োজনেও যে ব্যবস্থা দিয়েছেন তার বিকল্প কোন কিছু হতে পারেনা। যেমন- ছবির বিকল্প হিসেবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই যেসব বিশ্ময়কর ব্যবস্থা দিয়ে দিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো-
ফিঙ্গার প্রিন্ট
প্রত্যেক মানুষেরই আঙ্গুলের তালুতে নকশার মতো অসংখ্য অতি সূক্ষ্ম রেখা বিদ্যমান যে নকশা প্রতিটি মানুষের জন্য পৃথক। একজনের নকশা অন্য জনের সাথে কখানোই মিলবেনা এমনকি জময ভাই(যাদের চেহারা একই রকম দেখতে) তাদের আঙ্গুলেরও রেখার সাথে মিল থাকেনা। সুবহানাল্লাহ! পৃথিবীর সবজায়গায় গুরুত্বপূর্ণ কাজে ছবির চেয়ে ফিঙ্গার প্রিন্টকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। যেমন- মূল্যবান দলিলপত্রে, ব্যাংকে, বিমান বন্দরে, অধিক নিরাপত্তামূলক এমন বিভিন্ন স্থানে। তাই ছবির প্রচলনকে বাদ দিয়ে সর্বত্র ফিঙ্গার প্রিন্টসহ অন্যান্য বিকল্প ব্যবস্থা চালু করা উচিত।
কয়েকটি সহজলভ্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট ডিভাইস ছবির আরো কি কি বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে? ফিঙ্গার প্রিন্ট ছাড়াও কোন ব্যাক্তিকে চিহ্নিত করণ বা সনাক্তকরণের অনেক বিকল্প পদ্ধতি রয়েছে।
যেমন-
·       চোখের রেটিনা স্ক্যান
·       চেখের রং
·       চোখের পুতুলির দুরত্ব
·       জন্ম দাগ(স্পট): অধিকাংশ মানুষেরই শরীরের কোথাও না কোথাও জন্ম দাগ থাকে যেটা মৃত্যু পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকে।
·       ডিএনএ
·       তিল
·       দস্তখত (স্বাক্ষর)

-          সমাপ্ত  -