কথিত আহলে হাদীস বা লা-মাহযাবীদের উৎপত্তি এবং কুফরী আক্বীদাসমূহ

Image result for লা-মাযহাবী

কথিত আহলে হাদীস বা লা-মাহযাবীদের উৎপত্তি এবং কুফুরী আক্বীদাসমূহ-

ইংরেজ সৃষ্ট কথিত আহলে হাদীস ওরফে ওহাবী গ্রুপঃ এদের উৎপত্তি ইতিহাস আহলে হাদিস গুরুপের উৎপত্তির ছহীহ ইতিহাস-
ইংরেজদের ষড়যন্ত্রঃ ইতিহাস সাক্ষ্য ইংরেজরা আসার আগে এই উপমহাদেশে মাযহাবের বিরোধিতা ছিলনা। ধর্মীয় কোন্দল ছিলনা। টিপু সুলতান রহঃ, মোঘল সম্রাজ্যের সকল মোঘল বাদশা, শাহজাহান, ঘুরি, জাহাঙ্গীর, বাদশা যফরসহ সকলেই হানাফী মাযহাবী ছিল। এ উপমহাদেশে যত মুসলিম হাকিম বংশীয়, যত গোলাম বংশীয় আর যত ঘুরি বংশীয়, আর যত খিলজী বংশীয়, সাদাত বংশীয়, তুঘলোক বংশীয়, আর সুরী অথবা মোগল বংশীয় বাদশা ছিল, সবাই ছিলেন সুন্নী হানাফী। ….. (তরজুমানে ওহাবিয়া-২৫)

যখন ইংরেজরা আসল। ওরা দেখল এদেশের মুসলমানরা তাদের ধর্মের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ। তাদের মাঝে কোন অভ্যান্তরীণ বিভেদ নাই। একতার এক স্বর্গীয় বাঁধনে তারা জড়িয়ে আছে। তাই ইংরেজরা তাদের বহুল প্রচলিত “ডিভাইট এন্ড রোলস” তথা “পরস্পরে বিভেদ সৃষ্টি করে তাদের উপর শাসন করা হবে” এই নীতি বাস্তবায়িত করতে উঠেপরে লেগে গেল। মুসলমানদের মাঝে ধর্মীয় বিভেদ-কোন্দল সৃষ্টির জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করে দিল। টাকা দিয়ে, অর্থ সম্পদ দিয়ে, বিত্ত-বৈভব দিয়ে কিছু দুনিয়ালোভি আলেমদের নির্বাচিত করে।

একদিকে হুসাইন আহমাদ মাদানী ছাহেবের ফাতওয়া যে, “ইংরেজদের দলে ঢুকা হারাম”। আর আশরাফ আলী থানবী ছাহেবের ফাতওয়া, “ইংরেজদের পণ্য ব্যবহার হারাম”। অপরদিকে ইংরেজরা একদল ঈমান বিক্রেতাদের ক্রয় করে নিল। ইংরেজদের পক্ষে একজন কিতাব লিখল- “আল ইকতিসাদ ফি মাসায়িলিল জিহাদ”। যাতে সে লিখে যে, ইংরেজদের শাসন ইসলামী রাষ্ট্র। আর ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হারাম। এই বই লিখার পর তাকে ‘শামসুল উলামা উপাধী’ দেয়া হয়, তাকে মেডেল দেয়া হয়। অনেক পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

ওহাবী সম্বোধনঃ যখন এদেশের মানুষ দেখল যে, ওরা ইংরেজদের দালালী করেছে। তখন তাদেরকে “ওহাবী” বলে গালিদেয়া শুরু হয়। ওহাবী সেই যুগে তাদের বলা হত- যারা দেশের গাদ্দার। দেশদ্রোহী। ওরা যেখানেই যেত সাধারণ মানুষ তাদের দেখে বলত- এইতো ওহাবী চলে এসেছে।

আহলে হাদীছ নামকরণঃ এভাবে যখন তাদেরকে সবাই ঘৃণার চোখে দেখতে লাগল, তখননিজেদের সম্মানিত করার জন্যওরা রাণী ভিক্টোরিয়ার কাছে গিয়ে আবেদন করল যে,আমরাতো আপনাদের কথাঅনুযায়ী কিতাব লিখে আপনাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হারাম বলেছি, এখন আমাদেরসবাই ধিক্কার দিচ্ছে। গালি দিচ্ছে “ওহাবী” বলে। আমাদের জন্য সম্মানজক কোনপদবীর ব্যবস্থা করুন। তখন তাদের নাম দেয় রাণী ভিক্টোরিয়া “মুহাম্মদী”এবং পরবর্তীতে “আহলে হাদীস”। (এশায়াতুস সুন্নাহঃ পৃ: ২৪-২৬, সংখ্যা: ২, খ: ১১)

পাঠকের সুবিধার্থে ওহাবী থেকে আহলে হাদীছ পদবী পাওয়ার একটি দরখাস্তের অনুবাদ নিম্নে তুলে ধরা হলঃ
“বখেদমতে জনাব গভার্মেন্ট সেক্রেটারী,

আমি আপনার খেদমতে লাইন কয়েক লেখার অনুমতি এবং এর জন্য ক্ষমাও পার্থনা করছি। আমার সম্পাদিত মাসিক “ এশায়াতুস সুন্নাহ” পত্রিকায় ১৮৮৬ ইংরেজিতে প্রকাশ করেছিলাম যে, ওহ্হাবী শব্দটি ইংরেজ সরকারের নিমক হারাম ও রাষ্ট্রদ্রোহীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। সুতরাং এ শব্দটি হিন্দুস্তানের মুসলমানদের ঐ অংশের জন্য ব্যবহার সমীচিন হবে না, যাদেরকে “আহলে হাদীস” বলা হয় এবং যারা সর্বদা ইংরেজ সরকারের নিমক হালালী, আনুগত্যতা ও কল্যাণই প্রত্যাশা করে, যা বার বার প্রমাণও হয়েছে এবং সরকারী চিঠি প্রত্রে এর স্বীকৃতিও রয়েছে।

অতএব, এ দলের প্রতি ওহ্হাবী শব্দ ব্যবহারের জোর প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে এবং সাথে সাথে গভার্মেন্টের বরাবর অত্যন্ত আদব ও বিনয়ের সাথে আবেদন করা যাচ্ছে যে, সরকারীভাবে এ ওহ্হাবী শব্দ রহিত করে আমাদের উপর এর ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক এবং এ শব্দের পরিবর্তে “আহলে হাদীস” সম্বোধন করা হোক।

আপনার একান্ত অনুগত খাদেম

আবু সাঈদ মুহাম্মদ হুসাইন

সম্পাদক, এশায়াতুস সুন্নাহ

দরখাস্ত মুতাবেক ইংরেজ সরকার তাদের জন্যে “ ওহ্হাবী ” শব্দের পরিবর্তে “আহলে হাদীস” নাম বরাদ্দ করেছে। এবং সরকারী কাগজ-চিঠিপত্র ও সকল পর্যায়ে তদের “আহলে হাদীস” সম্বোধনের নোটিশ জারি করে নিয়মতান্তিকভাবে দরখাস্তকারীকেও লিখিতভাবে মঞ্জুরী নোটিশে অবহিত করা হয়- ক) সবর্প্রথম পাঞ্জাব গভার্মেন্ট সেক্রেটারী মি: ডাব্লিউ, এম, এন (W.M.N) বাহাদুর চিঠি নং-১৭৫৮ এর মাধ্যমে ৩রা ডিসেম্বর ১৮৮৬ ইংরেজিতে অনুমোদনপত্র প্রেরণ করেন। খ) অতপর ১৪ই জুলাই ১৮৮৮ ইং সি,পি গভার্মেন্ট চিঠি নং-৪০৭ এর মাধ্যমে গ) এবং ২০শে জুলাই ১৮৮৮ ইং ইউ,পি গভার্মেন্ট চিঠি নং-৩৮৬ এর মাধমে ঘ) এবং ১৪ই আগষ্ট ১৮৮৮ ইং বোম্বাই গভার্মেন্ট চিঠি নং-৭৩২ এর মাধ্যমে ঙ) এবং ১৫ই আগষ্ট ১৮৮৮ মাদ্রাজ গভার্মেন্ট চিঠি নং-১২৭ এর মাধ্যমে চ) এবং ৪ঠা মার্চ ১৮৯০ ইং বাঙ্গাল গভার্মেন্ট চিঠি নং-১৫৫ এর মাধ্যমে দরখাস্তকারী মৌলভী আবু সাইদ মুহাম্মদ হুসাইন বাটালভীকে অবহিত করা হয়। ( এশায়াতুস সুন্নাহঃ পৃ: ৩২-৩৯, সংখ্যা: ২, খ: ১১)
এদের ভন্ডামী ও গোড়ামীর একাংশঃ
 এরা যা আমল করে সেগুলো সহীহ হাদীছ। যা করে না তা বেদয়াতী, কুফরী, শিরকী আমল। অথচ এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই।

· যে সমস্ত হাদীছ তাদের দলের/মতের পক্ষে সেগুলোকে বলে ছহীহ হাদীছ। আর যে হাদীছগুলো তাদের মতের বিরুদ্ধে যায় সেগুলো ছহীহ হলেও তারা বলে এটা জাল হাদিস। (নাউযুবিল্লাহ)

· বুখারী শরীফ খুলে যা বুঝবে তাই আমল করবে। কাউকে অনুসরণ করবে না বা কোন বিশেষজ্ঞদের নিকট জ্ঞান অন্বেষণ করবেনা।

· মাযহাব মানা বেদয়াত ও নাজায়েয। অথচ মাযহাব অনুসরণ করেছিলেন বুখারী, মুসলিম, তিরিমীযী, আবু দাউদ, নাসাঈ সহ সমস্ত হাদীছ শরীফ এর লিখকগণ এবং হক্কানী রব্বানী আলিম ওলামাগণ সকলেই। এমনকি মদীনায় মালেকী মাযহাব এবং মক্কা শরীফে হাম্বলী মাযহাবের প্রচলন রয়েছে।

· বড়ই আশ্চর্যের বিষয় যে, রমযান এলে বেনামাযী নামাযী হয়ে যায়। ফরজ যারা পড়তেন তারা নফল পড়া শুরু করেন। সকল আমলকে বাড়িয়ে দেন। যে কুরআন পড়েনা, সেও কুরআন পড়তে শুরু করে। যে নফল দুই রাকাত পড়ত সেও ৪ রাকাত বা বেশি পড়তে থাকে। কিন্তু এই নাফরমান, ওহাবী, গায়রে মুকাল্লিদ, আহলে হাদীছ গ্রুপ ২০ রাকাত তারাবীহকে কমিয়ে ৮ রাকাত পড়ে। তারা যে বুখারী শরীফের দলীল যে তাতে তারাবীর নামাযের কথা নেই। মক্কা-মদীনা শরীফেও ২০ রাকাত তারাবীহ পড়া হয়। মুলতঃ তারাবীর নামায বিশ রাকায়াত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লাম-এর যুগ থেকেই শুরু হয়েছে। (মুসান্নেফ ইবনে আবী শায়বা ২/২৮৬, আবু দাউদ ১/২০২, বাইহাকী ২/৯৬)

ফেতনাবাদ এই দলের অযৌক্তিক প্রশ্ন “তোমরা মুহাম্মদী না হানাফী”?
ওদের এই প্রশ্নটিই একটা ধোঁকাবাজি। এরকম প্রশ্ন মূর্খতা ছাড়া কিছু নয়, আজ শনিবার নাকি ৫ তারিখ? আজ নভেম্বর নাকি রবিবার? প্রশ্ন হবে সামঞ্জস্যতামূলক আজ শনিবার নাকি রবিবার? আজ নভেম্বর নাকি ডিসেম্বর? সুতরাং এক্ষেত্রেও প্রশ্ন হবে-“তুমি মুহাম্মদী না ঈসায়ী? তুমি হানাফী না শাফেয়ী?” কিন্তু একথা বলা ভুল- আজ নভেম্বর না শনিবার? তুমি হানাফী না মুহাম্মদী?”
আসলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না। এরা মুহাম্মদি পরিচয় দিতে চায় কিন্তু আমরা উপরে ইতিহাস পড়েছি যে, এরা কথিত আহলে হাদীছ যারা ছিল ইংরেজদের দালাল তথা ওহাবী ।

এরা সন্দেহ সৃষ্টির এক ভয়ানক দল:
আহলে হাদীস গ্রুপ ইংরেজদের হওয়ার কারণে, নবীজির শান মুবারকে মানহানি ও সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সমালোচনায়, এবং জঙ্গিপনায়, দুর্নীতি মামলায় জর্জরিত। এসবের দিকে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। বরং যেই লোকগুলো নামায পড়ছে তাদের মনে ওয়াসওয়াসা তথা সন্দেহ সৃষ্টি করে দিয়ে বলছে যে, তোমাদের নামায হয়না। তোমাদের নামায মুহাম্মদী নামায নয় হানাফী নামায। এদের ওয়াসওয়া থেকে আশ্রয়ের জন্য আল্লাহ তায়ালা শিক্ষা দিয়েছেন যে, যারা মানুষের মনে ওয়াসওয়াসা তথা সন্দেহ সৃষ্টি করে দেয় মানুষ ও জিন জাতির মধ্য থেকে তাদের থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। {সূরা নাস-৫-৬}

 এরা যা আমল করে সেগুলো সহীহ হাদীছ। যা করে না তা বেদয়াতী, কুফরী, শিরকী আমল। অথচ তাদের হাদীছ ও বেদয়াত, কুফরী, শিরকীর কোন জ্ঞান নেই।

· যে সমস্ত হাদীছ তাদের দলের/মতের পক্ষে সেগুলোকে বলে ছহীহ হাদীছ। আর যে হাদীছগুলো তাদের মতের বিরুদ্ধে যায় সেগুলো ছহীহ হলেও তারা বলে এটা জাল হাদিস।
· বুখারী শরীফ খুলে যা বুঝবে তাই আমল করবে। কাউকে অনুসরণ করবে না বা কোন বিশেষজ্ঞদের নিকট জ্ঞান অন্বেষণ করবেন।
· মাযহাব মানা বেদয়াত ও নাজায়েয। অথচ মাযহাব অনুসরণ করেছিলেন বুখারী, মুসলিম, তিরিমীযী, আবু দাউদ, নাসাঈ, মুয়াত্তায়ে মালেক সহ সমস্ত হাদীছ শরীফ এর লিখকগণ এবং হক্কানী রব্বানী আলিম ওলামাগণ সকলেই মাযহাব অনুসরণ করেছেন এবং করেন। এমনকি মদীনায় মালেকী মাযহাব এবং মক্কা শরীফে হাম্বলী মাযহাব অনুসরণ করা হয়।

· বড়ই আশ্চর্যের বিষয় যে, রমযান এলে বেনামাযী নামাযী হয়ে যায়। ফরজ যারা পড়তেন তারা নফল পড়া শুরু করেন। সকল আমলকে বাড়িয়ে দেন। যে কুরআন পড়েনা, সেও কুরআন পড়তে শুরু করে। যে নফল দুই রাকাত পড়ত সেও ৪ রাকাত বা বেশি পড়তে থাকে। কিন্তু এই নাফরমান, ওহাবী, গায়রে মুকাল্লিদ, আহলে হাদীছ গ্রুপ আমলকে ২০ রাকাত তারাবীহকে কমিয়ে ৮ রাকাত পড়ে। মক্কা মদীনা শরীফেও ২০ রাকাত তারাবীহ পড়া হয়। তারা যে বুখারী শরীফের দলীল যে তাতে তারাবীর নামাযের কথা নেই আছে কিয়ামুল লাইল। কিয়ামুল লাইল ও তারাবীহ তো এক নহে। মুলতঃ তারাবীর নামায বিশ রাকায়াত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের যুগ থেকেই শুরু হয়েছে। (মুসান্নেফ ইবনে আবী শায়বা ২/286, আবু দাউদ ১/২০২, বাইহাকী ২/৯৬)

হক্কানী উলামায়ে কেরাম তথাকথিত আহলে হাদীসদের বিরোধিতা করেন কেন

পৌত্তলিকতার অন্ধকারে নিমজ্জিত এ উপমহাদেশে যেদিন থেকে একমাত্র মুক্তির ও জান্নাতী ধর্ম ইসলাম প্রবেশ করে। তখন থেকেই দ্বীনী মাসায়েলে একতার প্লাটফর্মে ছিল উপমহাদেশের সমস্ত মুসলমান। মসজিদে, ঈদগাহে, জানাযা ও তারাবীহ জামাতে কোন বিবাদ ছিল না। ছিল না মসজিদের মত পবিত্র স্থানে কোন বিভক্তির নোংরা আঁচড়। ধনী দরিদ্র সবাই মিলে একত্রিত হয়ে আদায় করতো নামায।
কিন্তু ইংরেজরা সেই একতা সইতে পারেনি। তাদের পুরনো থিউরী “ডিবাইট এন্ড রোলস” বাস্তবায়ন করতে শুরু করে কার্যক্রম। রাজনৈতিক সকল মতাদর্শী যেখানে এক কাতারে একতাবদ্ধ হতো সেই মসজিদের একতার কাতারে ফিতনা বিভক্তি ঢুকানোর জন্য শুরু হল ষড়যন্ত্র। সৃষ্টি করল “আহলে হাদীস” নামক একটি সুন্দর নামের আড়ালে বিষধর এক সর্প। যাদের ছোবলে আজ মুসলিম ঐক্য বিনষ্ট হচ্ছে মসজিদে। ছড়িয়ে পড়ছে দ্বন্দ বছরের দু’টি আনন্দের স্থান ঈদগাহ থেকে নিয়ে জীবনের সবচে’ শোকাতুর সময়ের জানাযা নামায পর্যন্ত।

রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে নিয়ে সূত্র পরম্পরায় ইসলাম আসার পর থেকে নিয়ে এ উপমহাদেশে যে আমল চলে আসছে সেই আমল ও আকিদার বিপরীত যেসব ভ্রান্ত আকিদার বিজ বপন করে আমাদের একতাকে বিনষ্ট করে ভাইয়ে ভাইয়ে বিবাদ সৃষ্টি করছে এসব নামধারী আহলে হাদীস/লামাযহাবী/শব্দধারী মুসলিম জামাতের লোকেরা তার একটি ঝলক তাদের কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে নিচে উপস্থাপন করা হল। আশা করি এর দ্বারা সবার কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে এ ফিরক্বার মানসিকতা কতটা জঘন্য ও ঈমান বিধ্বংসী।

কথিত আহলে হাদীস নামধারীদের প্রকাশিত বই থেকেই তাদের উম্মতের বিভক্তকারী আকিদা ও আমল ও বিদ্বেষমাখা কথাগুলো হুবহু উদ্ধৃত করা হচ্ছে।
১.সারা পৃথিবীর মানুষ কালিমার মধ্যে আল্লাহ ও মুহাম্মদকে এক করে আল্লাহ ও মুহাম্মদকে দুই ভাই বানিয়ে ফেলেছে। [তথ্যসূত্র-ইসলামের মূলমন্ত্র কালিমা তয়্যেবাহ লাইলাহা ইল্লাল্লাহ, পৃষ্ঠা-৯, লেখক-আব্দুল্লাহ ফারুক বিন আব্দুর রহমান]
২.লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ এটা কোন পবিত্র বাক্য নয়। [কালিমার মর্মকথা, পৃষ্ঠা-৩১৮, লেখক আকরামুজ্জান বিন আব্দুস সালাম]
৩.হানাফী ইহুদীদের অভ্যাস হল তারা কুরআনের মাঝে কম-বেশি করে কুরআনের হুকুম অস্বীকার করে। {মাসায়েলে গাইরে মুকল্লিদীন, পৃষ্ঠা-৪৭, লেখক-মাওলানা আবুবকর গাজিপুরী]
৪.কোন নবী বা অন্যকোন সৎ আমলকারীর কবর জিয়ারত করার উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ নেই। {দ্বীন ইসলামের জানা অজানা, পৃষ্ঠা-১১৯, লেখক-ড. ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ]
৫.“সাহাবাগণের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কথা দলীল স্বরূপ পেশ করা যাবে না।” [আর রাওজাতুল নাদীয়া-পৃ.১/১৪১] এবং তাদের বুঝ নির্ভরযোগ্য নয়। আর রাওজাতুল নাদীয়া-পৃ.১/১৫৪, লেখক-নবাব সিদ্দীক হাসান খান]
৬.“সাহাবীদের কথা প্রমাণযোগ্য নয়”। { ফাতাওয়ায়ে নজীরিয়া-পৃ.১/৩৪০, লেখক মিয়া নজীর হুসাইন দেহলবী]
৭.“সাহাবাদের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক ফাসেক্বও ছিল, যেমন-ওয়ালিদ, তেমনি ভাবে মুয়াবিয়া, উমর, মুগীরা ও সামুরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু প্রমুখ সম্বন্ধেও অনুরূপ বলা যেতে পারে ”।(!) [নুযুলুল আবরার, পৃ.২/৯৪, লেখক-নবাব ওহীদুজ্জামান খান]
৮.“তাক্বলীদ হচ্ছে ঈমানদারদের জন্য শয়তানের সৃষ্ট বিভ্রান্তি।”[ কাটহুজ্জাতীর জওয়াব, পৃ.৮৩, লেখক- মাও. আবু তাহের বর্দ্ধমানী]
৯.”মুক্বাল্লিদগণকে মুসলমান মনে করা উচিত নয়।”[ তাওহীদী এটম বোম, পৃ.১৫, লেখক- মাওলানা আব্দুল মান্নান সিরাজনগরী (বগুড়া)]
১০.“মাযহাবীগণ ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত, তাদের মধ্যে ইসলামের কোন অংশ নেই। [তাম্বিহুল গাফেলীন, আব্দুল কাদির রচিত পৃ.৭]
১১.”চার ইমামের মুক্বাল্লেদ এবং চার তরিকার অনুসারীগণ মুশরিক ও কাফির।”[ ইতেছামুস সুন্নাহ পৃ.৭-৮, লেখক- মাও. আব্দুল্লাহ মুহাম্মদী]
১২.পাঞ্জাবী, টুপি এগুলো সুন্নতী পোশাক নয় বরং ভিক্ষা বৃত্তির পোশাক। ইসলামে সুন্নতী পোশাক বলতে কোন পোশাক নেই। বরং প্রত্যেক দেশের প্রচলিত পোশাকই সুন্নতী পোশাক এবং যে পোশাক যার কাছে ভাল লাগে তাই সুন্নতী পোশাক তবে শর্ত হল উক্ত পোশাক দেখতে সুন্দর হতে হবে। টুপি পাগড়ী পড়লে সুন্দর লাগে এতটুকুই কিন্তু এগুলোকে সুন্নতী পোশাক বলা যাবে না। কেননা, পাগড়ি হল সুদান, আফগানিস্তান, ইরান আর ভারতের শিখদের পোশাক। এটা কোন সুন্নতী পোশাক নয়। {দ্বীন ইসলামের জানা অজানা, পৃ-২১২-২১৩, লেখক-ড.ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ]
১৩.হানাফীরা রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তরীকা অনুযায়ী নামায আদায় করে না, কেননা তাদের ধর্ম ইসলাম নয় বরং হানাফী, তাদের প্রভু আল্লাহ নয় বরং আবূ হানীফা, তাদের নবী মুহাম্মদ নয় বরং উলামায়ে আহনাফ। {মাসায়েলে গাইরে মুকাল্লিদীন, পৃ-৪৯, লেখক-মাওলানা আবু বকর গাজিপুরী]
১৪.হানাফীরা যদিও যাহেরীভাবে কালেমা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” বলে কিন্তু তাদের আসল কালিমা হলো “লা ইলাহা ইল্লা আবু হানীফা ওয়া উলামাউল আহনাফ আরবাবুন মিন দুনিল্লাহ”। {মাসায়েলে গাইরে মুকাল্লিদীন, পৃ-৪৯, লেখক-মাওলানা আবু বকর গাজিপুরী]

► এক নজরে গাইরে মুকাল্লিদ তথাকথিত আহলে হাদীসদের আকীদা বিশ্বাস ও চিন্তাধারাঃ

১। আল্লাহ তা’আলা আরশের উপর বসে আছেন এবং আরশ হলো তাঁর বসতবাড়ী। (অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা সর্বত্র বিরামান নয়) (নাউজু বিল্লাহ) (হাদিয়াতুল মাহদী পৃষ্ঠা: ৯)
২। আল্লাহ তাআলার চেহরা, চোখ, হাত, হাতের তালু, আঙ্গুল, বাহু, সীনা, গোড়ালী, কোমর, পা ইত্যাদি প্রত্যেক অঙ্গই বিদ্যমান। (নাউজু বিল্লাহ) (হাদিয়াতুল মাহদী পৃষ্ঠা ৯)
৩। আল্লাহ যে কোন রূপ (মানুষ, পশু, পাখী ইত্যাদি) ধারণ করে জনসমক্ষে আসতে পারেন। (হাদিয়াতুল মাহদী পৃষ্ঠা ৯)

► নবী রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কেঃ
৫। সাধারণ ইসমাত তথা সার্বিকভাবে গোনাহ মুক্ত হওয়া রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য স্বীকৃত নয়। না হয় সাহাবায়ে কেরাম তাঁর বিভিন্ন ভুলের উপর প্রশ্ন করতেন না। (নাউজু বিল্লাহ) (তাহকীকুল কালাম ফী মাসআলাতিল বায়আ ওয়াল হাম পৃষ্ঠা ৪৪-৪৫)

৬। ইমামগণ এবং সাহাবীগণ এমনকি স্বয়ং নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও যদি নিজের কোন মত ব্যক্ত করেন তাও শরীয়তের দলীল হতে পারে না। (নাউজু বিল্লাহ) (তারীকে মুহাম্মদী পৃষ্ঠা ৫৭)

৭। রাম চন্দ্র, কৃষ্ণজী প্রমূখ যা হিন্দুদের মধ্যে আছে, যরতশত যা ফরাসীদের মধ্যে আছে, কানফিউশস, মহাত্মামা যো চিন, জাপান ইত্যাদিতে আছে, ‍সক্বরাত, ফীসাগুস যা ইউনানের মধ্যে এসকল নবী রাসূলদের উপর ঈমান আনা আমাদের জন্য ওয়াজিব। (নাউজু বিল্লাহ) (হাদিয়াতুল মাহদী পৃষ্ঠা ৮৫)

৮। শরীয় আহকাম ও বিধানে নবীদের (আ.) ভুল ভ্রান্তি হতে পারে। (নাউজু বিল্লাহ) (রাদ্দে তাকলীদ পৃষ্ঠা ১৩)

► খোলাফায়ে রাশেদীন সম্পর্কেঃ

৯। জুমআর খোতবার মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদীনের কথা উল্লেখ করা বিদআত। (হাদিয়ায়ে মাহদী পৃষ্ঠা ১১০)

১০। হযরত আবু বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে দ্বিতীয় খলীফা মনোনীত করা প্রকৃত ইসলামের বিপরীত হয়েছে। (তারীকে মুহাম্মদী পৃষ্ঠা ৮৩)

১১। ফারুকে আজম (হযরত উমর) রদ্বিয়াল্লাহু আনহু স্পষ্ট ও বড় বড় মাসআলায়ও ভুল করেছেন। (তারীকে মুহাম্মদী পৃষ্ঠা ৫৪)

১২। সমসাময়িক মাসআলাসমূহ হযরত উমরের কাছে জানা ছিল না। (তারীকে মুহাম্মদী পৃষ্ঠা ৫৫)

১৩। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর ফতওয়া নবীজীর হাদীসের বিপরীত ছিল। (তাইসীরুল বারী ৭/১৬৯)

১৪। আমরাতো উমরের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কালিমা পড়িনি যে, তার কথা মানতে হবে। (ফতাওয়ায়ে সানাইয়্যা ২/২৫২)

১৫। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর বহু মাসআলা হাদীসের বিপক্ষে ছিল। (ফতাওয়ায়ে সানাইয়্যা ২/২৫২)

১৬। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর কথা না দলীলের যোগ্য না আমল করা আবশ্যক। (ফতাওয়ায়ে সানাইয়্যা ২/২৫২)

১৭। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু যদি মুতআ (সাময়িক বিয়ে যা শিয়াদের মধ্যে প্রচলিত) নিষেধ না করতেন তবে দুনিয়ায় কোন যেনাকারী থাকত না। (লুগাতুল হাদীস ৪/১৮৬)

১৮। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ফতওয়া দলীল নয়। (ফতাওয়ায়ে সাত্তারিয়া ২/৬৫)

১৯। উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর ইজতিহাদ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীসের বিপরীত ছিল। (তাইসীরুল বারী ৭/১৭০)

২০। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর আমল দলীল যোগ্য নয়। (ফতাওয়া সানাইয়্যা (২/২৩৩)

২১। উসমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর আযান বিদআত ছিল, কোনভাবেই জায়েয নেই। (ফতাওয়া সাত্তারিয়া ৩/৮৫,৮৬,৮৭)

২২। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর স্বৈরাচারী খেলাফত এর চার পাঁচ বছর ছিল উম্মতের জন্য আল্লাহর আযাব। (নাউজু বিল্লাহ) (সাদীকায়ে কায়েনাত পৃষ্ঠা ২৩৭)

২৩। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর ইন্তিকালের পরই উম্মত শান্তির নিস্বাস ফেলেছে। (সাদীকায়ে কায়েনাত পৃষ্ঠা ২৩৭)

২৪। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সাবায়ী তথা শীয়াদের নির্বাচিত খলীফা ছিলেন। (নাউজ বিল্লাহ) (সাদীকায়ে কায়েনাত ২৩৭)

২৫। নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনেও হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু খিলাফত তথা ক্ষমতা লাভের জন্য অন্তরে কারসাজীতে নিয়োজিত ছিল। (নাউজু বিল্লাহ) (সাদীকায়ে কায়েনাত পৃষ্ঠা ২৩৭)

২৬। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিন তালাক দেওয়াতে তিন তালাক নিপতিত হওয়ার কথা রাগান্বিত হয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে ছিলেন। (তানভীরুল আফাক ফী মাসআলাতিত তালাক পৃষ্ঠা ১০৩)

২৭। খোলাফায়ে রাশেদীনগণ কুরআন ও সুন্নাত পরিপন্থী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যেগুলো উম্মত প্রত্যাখ্যান করেছে। (তানবীরুল আফাক ফী মাসআলাতিত তালাক পৃষ্ঠ ১০৭)

২৮। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের সামনে কয়েকটি হাদীস পেশ করা হয়েছিল কিন্তু মুসলিহাতের কারণে তারা মনেননি। (তানভীরুল আফাক পৃষ্ঠা ১০৮)

২৯। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বুঝ বা বুদ্ধি নির্ভরযোগ্য নয়। (শময়ে মুহাম্মদী পৃষ্ঠা ১৯)

► সাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাদের সম্পর্কেঃ

৩০। হযরত মাআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু প্রশংসা করা জায়েয নেই। (লোগাতুল হাদীস ২/৩৬)

৩১। মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু দুষ্টপ্রকৃতির ছিলেন। (নাউজু বিল্লাহ) (লোগাতুল হাদীস ২/৩৬)

৩২। ইসলামের সমস্ত মাআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু নষ্ট করে দিয়েছেন। (নাউজু বিল্লাহ) (লোগাতুল হাদীস ৩/১০৪)

৩৩। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের কথা দলীল নয়। (তায়সীরুল বারী ৭/১৬৫)

৩৪। কিছু কিছু সাহাবী মুষ্টিযুদ্ধ করতেন। (আরফুল জাভী ২০৭)

৩৫। সাহাবায়ে কেরামের কথা দলীল নয়। (ফতাওয়ায়ে নযীরিয়া ১/৩৪০)

৩৬। সাহাবায়েকেরামের মওকূফ (কাজ ও আমল) দলীল নয়। (রাসালায়ে আব্দুল মান্নান ১৪, ৫৯, ৮১, ৮৪, ৮৫)

৩৭। সাহাবায়ে কেরামের দেরায়াত (বুঝ) নির্ভরযোগ্য নয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী ২/৪৪, শময়ে মুহাম্মদী ১৯)

৩৮। কোনো কোনো সাহাবী ফাসেক ছিলেন। (নাউজু বিল্লাহ) (নাযলুল আবরার ৩/৯৪)

৩৯। মুতআখখেরীন তথা পরের উলামায়ে কেরাম সাহাবী থেকে উত্তম হতে পারেন। (নাউজু বিল্লাহ) (হাদিয়াতুল মাহদী ৯০)

৪০। সাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং ফকীহদের কথা মানুষকে গোমরাহ করে। (ফতাওয়া সানাইয়্যাহ ২/২৪৭)

৪১। সাহাবাগণের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কথা দলীল নয়। (আরফুল জাভী ৪৪, ৫৮, ৮০, ১০১, ২০৭)

৪২। সাহাবায়ে কেরামের বুঝ নির্ভরযোগ্য নয়। (আররাওযুন নদিয়্যা ৯৮)

৪৩। হযরত মুগীরার রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর আমানত ও সততা চলে গিয়েছিল। (লোগাতুল হাদীস ৩/১৬০)

কুরআন হাদীস বিরোধী আহলে হাদীস মতাদর্শের কিছু নমুনা নিচে উপস্থাপন করা হল-

মতবাদ-১
গায়রে মুকল্লিদদের নিকট কাফেরদের জবাই করা পশু হালাল। আর তা খাওয়া জায়েজ। {গায়রে মুকাল্লিদ আলেম নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান সাহেব রচিত দলীলুত তালেব-৪১৩},

গায়রে মুকাল্লিদ আলেম নূরুল হাসান খান রচিত উরফুর জাদী-২৪৭,

নিজেদের আহলে হাদীস দাবী করে কুরআন হাদীসের রেফারেন্স না দিয়ে এখানে তারা আল্লামা শাওকানী রহঃ অন্ধ তাকলীদ করেছেন। এ কুরআন হাদীসের দলিল ছাড়া এ তাকলীদ কি [কথিত আহলে হাদীসদের বক্তব্য অনুসারে] শিরক নয়?

মতবাদ-২
একই সময়ে যতজন মহিলাকে ইচ্ছে বিয়ে করা জায়েজ। চার জনই হতে হবে এর কোন সীমা নেই। {গায়রে মুকাল্লিদ আলেম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান রচিত যফরুল লাজী-১৪১, ১৪২, এবং উরফুল জাদী-১১৫}

এ মতবাদটি সরাসরি কুরআনের আয়াত বিরোধী। এখানে ও কথিত আহলে হাদীসরা কুরআন হাদীস ছেড়ে আল্লামা শাওকানী রহঃ এর অন্ধ তাকলীদের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন।

মতবাদ-৩
স্থলভাগের ঐ সকল প্রাণী হালাল, যার শরীরে রক্ত নেই। {গায়রে মুকাল্লিদ আলেম নওয়াব সিদ্দীক হাসান রচিত বুদূরুল আহিল্লাহ-৩৪৮}

এ বক্তব্যটির পক্ষে কথিত আহলে হাদীসদের পক্ষে কুরআন হাদীসের কী দলিল আছে? কোত্থেকে নাজীল হল এ মতবাদ?

মতবাদ-৪
মৃত প্রাণী পাক, নাপাক নয়। {দলীলুত তালেব-২২৪}

কুরআন বা হাদীসের কোন বর্ণনার উপর ভিত্তিশীল এ বানানো মতবাদ?

মতবাদ-৫
নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান সাহেব লিখেন-“শুকর নাপাক হওয়ার উপর আয়াত দিয়ে দলিল দেয়া গ্রহণযোগ্য নয়। বরং তা পাক হওয়াকেই বুঝায়। {বুদূরুল আহিল্লাহ-১৫, ১৬}

তাহলে কথিত আহলে হাদীসদের মতে শুকর পাক? এ মতবাদ কোত্থেকে আমদানী হল?

মতবাদ-৬
হায়েজ নেফাসের রক্ত ছাড়া মানুষ ও সকল প্রাণীর রক্ত পাক। {দলীলুত তালেব-২৩০, বুদুরুল আহিল্লাহ-১৮, উরফুল জাদী-১০}

কুরআনের কোন আয়াত বা কোন হাদীসের ভিত্তিশীল এ উদ্ভট মতবাদ?

মতবাদ-৭
ব্যবসায়িক সম্পদে কোন জাকাত নেই। {বুদুরুল আহিল্লাহ-১০২}
কুরআনের কোন আয়াত বা কোন হাদীসের ভিত্তিশীল এ মতবাদ?

মতবাদ-৮
হাদীসে বর্ণিত ছয়টি বস্তু ছাড়া বাকি সকল বস্তুতে সুদ নেয়া জায়েজ। {দলীলুত তালেব, উরফুল জাদী, আল বুনয়ানুল মারসূস, বুদূরুল আহিল্লাহ ইত্যাদি গ্রন্থ।
কুরআনের কোন আয়াত বা হাদীস দ্বারা এ মতবাদ প্রমাণিত?

মতবাদ-৯
গোসল ছাড়াই নাপাক ব্যক্তি কুরআন কারীম স্পর্শ করা, উঠানো, রাখা, হাত লাগানো জায়েজ। {দলীলুত তালেব-২৫২, উরফুল জাদী, আল বুনইয়ানুল মারসূস}
এ মতবাদের পক্ষে কী দলিল আছে?

মতবাদ-১০
স্বর্ণ রোপার অলংকারে যাকাত আবশ্যক নয়। {বুদুরুল আহিল্লাহ-১০১}
কুরআন হাদীসের কোথায় আছে এ মতবাদ?

মতবাদ-১১
মদ নাপাক ও অপবিত্র নয়, বরং তা পাক। {বুদূরুল আহিল্লাহ-১৫, দলীলুত তালেব-৪০৪, উরফুর জাদী-২৪৫}
কী দলিল আছে এ মতবাদের?

মতবাদ-১২
স্বর্ণ রোপার অলংকারে কোন সূদ নেই। তাই যেভাবে ইচ্ছে কম-বেশি করে তা ক্রয়-বিক্রয় জায়েজ। {দলীলুত তালেব-৫৭৫}
কি দলিল আছে এ মতবাদের?

মতবাদ-১৩
বীর্য পাক। {বুদূরুল আহিল্লাহ-১৫}
কুরআনে কারীমের কোন আয়াত বা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এ মতবাদ?

মতবাদ-১৪
সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়ার আগেই জুমআর নামায পড়া জায়েজ। {বুদূরুল আহিল্লাহ-৭১}
কোন স্থানে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, সূর্য হেলার আগেই জুমআর নামায পড়া জায়েজ? এ ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস আছে কি?

মতবাদ-১৫
জুমআর নামাযের জন্য জামাত হওয়া জরুরী নয়। যদি দুইজন ব্যক্তিও হয়, তাহলে একজন খুতবা পড়বে, তারপর উভয়ে মিলে জুমআর নামায পড়ে নিবে। {বুদূরুল আহিল্লাহ-৭২}

আহলে হাদীস বা লা-মাহযাবীদের আরো কিছু কুফরী আকিদা:

১- আহলে হাদিসদের রচিত ‘হাদয়িতুল মাহদি’ পুস্তকের ১১০ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “জুমার খুতবায় খোলাফায়ে রাশেদার নাম নেয়া বিদয়াত।” (নাউযুবিল্লাহ) ।

২- আহলে হাদিসদের রচিত ‘তানবীরুল আফা-ক’ পুস্তকের ১০৭ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “খোলাফায়ে রাশেদা অর্থাৎ হযরত আবু বকর, হযরত উমর, হযরত উসমান এবং হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) উনারা শরীয়তের খেলাফ হুকুম জারি করতেন। (নাউযুবিল্লাহ)।

৩-আহলে হাদিসদের রচিত ‘কাশফুল হিজাব’ পুস্তকের ২১ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “হযরত আয়েশা (রা) আলীর সাথে যুদ্ধ করে মুরতাদ হয়ে গেছেন।” (নাউযুবিল্লাহ)।
৪- আহলে হাদিসদের রচিত ‘হাদয়িতুল মাহদি’ পুস্তকের ১০৩ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “আয়িম্মায়ে ইছনা আশারা যারা শীয়াদের ইমাম, আমরা তাদের অনুসারী।”

উল্লেখ্য, এ কথা দ্বারা পুরোপুরিভাবে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, মাযহাবের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডাকারী ও আহলে হক্বের সাথে আলোচনার টেবিলে যোগদানে অস্বীকারকারী ক্রমাগত পালিয়ে বেড়ানো আহলে হাদিস নামধারি কথিত ছহি হাদিসের অনুসারীরা মূলত শীয়াদেরই একটি অঙ্গ সংগঠন। যাদের কাজই হল আহলুস সুন্নাহ’র অনুসারী মুসলিমের বিভ্রান্ত করে মাযহাবের বন্ধন থেকে সরিয়ে দেয়া ও ধীরেধীরে সাহাবী বিদ্বেষী করে তুলা। পর্যায়ক্রমে শীয়াদের পাল্লাই ভারি করা। যা দেরিতে হলেও আজ দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার।

৫- আহলে হাদিসদের রচিত ‘তানবীরুল আফা-ক’ পুস্তকের ৪৯৮-৪৯৯ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “হযরত উমর কুরআনের হুকুম পরিবর্তন করে ফেলেছেন।” (নাউযুবিল্লাহ) ।
৬- আহলে হাদিসদের রচিত ‘দলীলুত ত্বলিব’ পুস্তকের ৫২ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “অপবিত্র অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা জায়েজ।” (নাউযুবিল্লাহ) ।
৭- আহলে হাদিসদের রচিত ‘বদূরুল আহিল্লাহ’ পুস্তকের ১৪-১৫ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “সমস্ত জানোয়ার তথা জন্তুর পেশাব পবিত্র।” (নাউযুবিল্লাহ)।

৮- আহলে হাদিসদের রচিত ‘দলীলুত ত্বালিব’ পুস্তকের ২৬৪ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “নামাযের জন্য কাপড় পাক হওয়া জুরুরি নয়।” (নাউযুবিল্লাহ)।

৯-আহলে হাদিসদের রচিত ‘হাদয়িতুল মাহদি’ পুস্তকের ২৩ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “মহিলাও মুয়াজ্জিন হতে পারবে।” (নাউযুবিল্লাহ)।

১০- আহলে হাদিসদের রচিত ‘বদূরুল আহিল্লাহ’ পুস্তকের ৩৯১ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “এক বকরীতে ১০০ মানুষের পক্ষ থেকে কুরবানি হতে পারে।” (নাউযুবিল্লাহ)।

১১- আহলে হাদিসদের রচিত ‘যফরুল কাযী’ পুস্তকের ১৪১, ‘উরুফুল জাবী’ পুস্তকের ১১৫ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “পুরুষ একই সময় যত ইচ্ছে বিয়ে করতে পারবে।” (নাউযুবিল্লাহ)।
(সংক্ষেপিত)

পিডিএফ লিংক-https://drive.google.com/open?id=1wp723CL-YXi6QOVmmJ1njTkBkij31F56





0 Comments: