এবং বাইয়াত গ্রহণ করা ফরজ
১। পবিত্র আল কুরআন উল কারিম উনার মধ্যে আল্লাহ
পাক তিনি ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার
রহমত - মুহসিন অথবা আল্লাহওয়ালাগণ উনাদের নিকটে।” (সূরা আ’রাফ শরীফঃ আয়াত শরীফ ৫৬)
২। পবিত্র আল কুরআন উল কারিম উনার ‘সূরা কাহাফ শরীফ’ উনার ১৭ নম্বর আয়াত শরীফ
উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, কামিল মুর্শিদের গুরুত্ব সম্পর্কে
কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মোবারক হয়েছে, “আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে হেদায়েত দান করেন, সেই হিদায়েত পায়। আর যে ব্যক্তি গুমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে, সে কোন ওলীয়ে মুর্শিদ (কামিল
শায়খ বা পীর) উনার ছোহবত লাভ করতে পারে
না।
৩। আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “তোমরা সব আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও”। (সূরা আল ইমরান শরীফ-আয়াত শরীফ ৭৯)
৪। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ পাক
উনার সূরা তওবা শরীফ উনার ১১৯ নম্বর আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মোবারক করেন, “হে ঈমানদারগণ!
তোমরা
আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো এবং ছাদিক্বীন বা সত্যবাদীগণ উনাদের সঙ্গী হও। এখানে ছাদিক্বীন বলতে ওলী-আল্লাহগণ
উনাদেরকেই বুঝানো হয়েছে।
৫। আল্লাহ পাক পবিত্র আল কুরআন উল কারিম উনার
মধ্যে বলেন, “আল্লাহ পাক উনার ও উনার
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার ইত্বায়াত করো এবং তোমাদের মধ্যে যারা (উলিল
আমর) আদেশদাতা, তাদের অনুসরণ করো”।
৬। আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “হে ঈমানদারগণ!
তোমরা
আমাকে পাওয়ার জন্য উসিলা তালাশ কর”। (সূরা মায়িদা শরীফঃ আয়াত
শরীফ ৩৫)
৭। পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ উনার ২৮ নম্বর আয়াত শরীফে উল্লেখ আছে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “আপনি নিজেকে উনাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যাঁরা সকাল-সন্ধ্যায়
উনাদের রবকে ডাকেন উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক, উনার সন্তুষ্টি হাছিলের
জন্য ক্বলবী যিকির করেন, উনার অনুসরণ ও ছোহ্বত (সাক্ষাত) এখতিয়ার
করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
৮। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আদম সন্তানের শরীরে এক
টুকরা গোস্ত আছে যদি সেটা শুদ্ধ হয়ে যায় তবে সমস্ত শরীর শুদ্ধ হয়ে যায়। আর যদি সেটা অশুদ্ধ হয় তাহলে সমস্ত শরীর
বরবাদ হয়ে যায়, সাবধান ওটা হচ্ছে কলব”। (বুখারি শরীফ)
৯। মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “যার ক্বলবে আমার যিকির জারি নেই সে নফসের অনুসরণ করে এবং
তার আমলগুলো হয় শরীয়তের খিলাফ।”
১০। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে
বলেন, “সাবধান! আল্লাহ পাক উনার যিকির
দ্বারা দিল ইতমিনান হয়।” এই আয়াতের ব্যাখ্যায় রসুলুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“শয়তান
আদম সন্তানের কলবের উপর বসে, যখন আল্লাহ পাক উনার যিকির করে তখন পালিয়ে
যায়, আর যখন আল্লাহ পাক উনার যিকির থেকে গাফিল হয় তখন শয়তান
ওসওয়াসা দেয়”।
১১। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাদীছ শরীফ-এ
ইরশাদ মোবারক করেন, “প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর
জন্য (জরুরত আন্দাজ)
ইলম
অর্জন করা ফরয। (বায়হাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব, আশয়াতুল লুময়াত)
১২। হাদীছ শরীফ-এ
বর্ণিত রয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“ইলম
দু’প্রকার-
(১) ক্বলবী ইলম অর্থাৎ ইলমে তাছাউফ। আর এটাই মূলতঃ উপকারী ইলম।
(২)
যবানী
ইলম অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ্, যা আল্লাহ্ পাক, উনার পক্ষ হতে বান্দার
জন্য দলীল। (দারিমী, তারগীব ওয়াত তারহীব, তারীখ, আব্দুল বার, দাইলামী, বায়হাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব)
সকলেই একমত যে, ইলমে তাছাউফ অর্জন করার
মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুযূরী ক্বল্ব হাছিল করা তথা অন্ততঃপক্ষে বিলায়েতে
আম হাছিল করা ফরয। এ ফরয ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত একজন কামিল
মুর্শিদ, উনার নিকট বাইয়াত না হবে।
১৩। সুলতানুল আরিফীন, হযরত বায়েজীদ বোস্তামী
রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত্ ত্বায়িফা হযরত জুনায়েদ
বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুজ্জাতুল ইসলাম, হযরত
ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকেই বলেন যে, “যার কোন পীর বা মুর্শিদ নেই তার মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শক হলো
শয়তান”। (ক্বওলুল জামীল, নুরুন আলা নূর, তাছাউফ তত্ত্ব)
১৪। হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মোবারক হয়েছে, “তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন শিক্ষা করছো, তাকে দেখে নাও”। (মুসলিম শরীফ) তাই, ইসলাম তিনি কখনও বলেন না যে তোমরা কোন ওলী-আল্লাহ
উনাদের কাছে যেও না, বরং উনাদের কাছে যাওয়ার জন্যই নির্দেশ করা
হয়েছে।
১৫। আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “যদি তোমরা না জান, তবে আহলে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণ উনাদেরকে
জিজ্ঞেস করে জেনে নাও”। (সূরা নহল শরিফঃ আয়াত শরীফ ৪৩ ও সূরা আম্বিয়া
শরিফঃ আয়াত শরীফ ৭)
১৬) আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা ‘আনহু
উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়া তা’আলা
বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার অলী উনার সাথে শত্রুতা করে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা
করছি। আমার বান্দার প্রতি যা ফরয করেছি তা দ্বারাই
সে আমার অধিক নৈকট্য লাভ করে। আমার বান্দা নফল কাজের মাধ্যমেও আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে। অবশেষে আমি তাকে ভালবেসে ফেলি। যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা
দিয়ে সে শোনে, তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে
সে ধরে এবং তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলাফেরা করে। সে আমার কাছে কিছু চাইলে, আমি তাকে তা দেই। সে যদি আমার নিকট আশ্রয় কামনা করে, তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি যা করার ইচ্ছা করি, সে ব্যাপারে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে
ভুগি না কেবল মুমিনের আত্মার ব্যাপার ছাড়া। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার মন্দকে
অপছন্দ করি। [সহিহ বুখারী শরিফঃ হাদিস শরীফ
৬৫০২]
উল্লিখিত উছুলের ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে এটিই
প্রমাণিত হয় যে, ফরয পরিমাণ ইলমে তাছাউফ যেহেতু অর্জন করা ফরয, আর তা যেহেতু কামিল
মুর্শিদ বা পীর ছাহেব, উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ব্যতীত অর্জন করা
সম্ভব নয়, সেহেতু একজন কামিল মুর্শিদ অর্থাৎ যিনি
সর্বদা আল্লাহ্ পাক, উনার যিকিরে মশগুল, যিনি ১০০ ভাগ কোরআন
সুন্নাহ অনুসরণ করে নিজেকে গড়ে তুলেছেন উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয।
0 Comments:
Post a Comment