রংয়ের ইমামাহ্ বা পাগড়ীর আহকাম
লাল, কুসুম, হলুদ ও যা’ফরানী রংয়ের পোশাক যেমন কুর্তা , লুুঙ্গি, চাঁদর, রুমাল ও ইমামাহ্ বা পাগড়ী ইত্যাদি পরিধান করা জায়েয নেই। বরং মাকরুহ তাহরীমী-এর অন্তর্ভূক্ত।
লাল ও কুসুম রংয়ের কাপড় সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে,
[৮৬৭-৮৭০]
عن عبد الله بن عمرو بن العاص اخبره قال رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم على ثوبين معصفرين فقال ان هذه من ثياب الكفار فلا تلبسها. (مسلم شريف ج২. ص১৯৩. مسلم بشرح النووى. شرح الابى والسنوسى. فتح الملهم ج৪ ص১১৩)
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর ইবনে আছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদা হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার পরিধানে দুটি কুসুম রংয়ের কাপড় দেখলেন। অতঃপর তিনি বললেন, এ রংয়ের কাপড় কাফিরদের হয়ে থাকে। তাই ইহা পরিধান করনা।” (মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ ১৯৩ পৃষ্ঠা, মুসীলম বিশরহিন্ নববী, শরহুল উবাই ওয়াস্ সিনূসী, ফতহুল মুলহিম ৪র্থ জিঃ ১১৩ পৃষ্ঠা)
অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
[৮৭১-৮৭৩]
والحديث نص على منع الثوب المعصفر للرجال والمختار عند الخنفية كراهته تحريما للرجال دون النساء كما فى الدر المنتاره৫: ৩৫১ واشعة اللمعات ৩: ২৯৬. والمشهور عن الشافعى اباحته. وكذلك نقل النووى عن ابى حنيفة، ولكن المختار عند الحنفية الكراهة كما ذكرنا. (فتح الملهم ج৪ ص১১৩)
অর্থঃ- “অত্র হাদীস শরীফ থেকে প্রমাণিত হয় যে, কুসুম রংয়ের কাপড় পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ। হানাফীদের নিকট গ্রহণযোগ্য মত হল পুরুষের জন্য উক্ত রংয়ের কাপড় মাকরূহ তাহরীমী, তবে মহিলাদের জন্য নয়। যেমন, দুররুল্ মুখতার ৫ম জিঃ ৩৫১ পৃষ্ঠা, আশয়াতুল্ লুময়াত ৩য় জিঃ ২৯৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে।
হযরত ইমাম শাফিঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি -এর নিকট প্রসিদ্ধ মত হল উহা মুবাহ্ অর্থাৎ জায়েয। অনুরূপভাবে ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে নকল করেছেন। তবে হানাফীদের নিকটে গ্রহণযোগ্য মত হলো- কুসুম রংয়ের কাপড় মাকরূহ্ তাহরীমী। যেমন আমরা বর্ণনা করেছি।” (ফতহুল মুলহিম ৪র্থ জিঃ ১১৩ পৃষ্ঠা, আশয়াতুল্ লুময়াত ৩য় জিঃ ২৯৬ পৃষ্ঠা, দুররুল্ মুখতার ৫ম জিঃ ৩৫১ পৃষ্ঠা)
[৮৭৪-৮৭৭]
عن عبد الله بن عمرو قال مر على النبى صلى الله عليه وسلم رجل عليه ثوبان احمران فسلم عليه فلم يرد عليه النبى صلى الله عليه وسلم. (ابو داؤد شريف ج২ ص২০৮. بذل المجهود ج৬ ص৪৯. عون المعبود ج৪ ص৯২ شرح ابى داؤد لبدر الدين العينى)
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি দুটি লাল কাপড় পরিহিত অবস্থায় নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাঁকে সালাম করলো। কিন্তু নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সালামের জওয়াব দেননি।” (আবু দাউদ শরীফ ২য় জিঃ ২০৮ পৃষ্ঠা, বযলুল মাজহুদ ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯ পৃষ্ঠা, আউনুল মা’বূদ ৪র্থ জিঃ ৯২ পৃষ্ঠা, শরহু আবী দাউদ লি বদরিদ্দীন আইনী)
অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে যে,
[৮৭৮]
احتج بهذا الحديث القائلون بكراهة لبس الاحمر. (عون المعبود ج৪ ص৯২)
অর্থঃ- “এই হাদীস থেকে দলীল নেয়া হয় যে, লাল পোশাক মাকরূহ্ তাহরীমী।” (আউনুল মা’বুদ ৪র্থ জিঃ ৯২ পৃষ্ঠা)
[৮৭৯]
والمختار من المذهب ان الكراهة. (حاشية ابى داؤد ج২ ص২০৮)
অর্থঃ- “হানাাফী মাযহাব মতে গ্রহণযোগ্য মত হল নিশ্চয়ই লাল পোশাক মাকরূহ তাহরীমী।” (হাশিয়ায়ে আবু দাউদ ২য় জিঃ ২০৮ পৃষ্ঠা)
সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, লাল ও কুসুম রংয়ের পাগড়ী বা পোশাক পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী।
হলুদ ও যা’ফরানী রংয়ের পোশাক সম্পর্কে হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
[৮৮০-৮৮৯]
عن انس رضى الله عنه قال نهى النبى صلى الله عليه وسلم ان يتزعفر الرجل. (بخارى شريف ج২ ص২২ ص২২. ارشاد السادى ج৮ ص৪৪২. شرح الكرمانى ج২১ ص৯০. تيسير البادى ج৭ ص৫৭১. مسلم شريف ج২ ص১৯৮. مسلم بشرح النووى. شرح الابى والسنوسى. فتح الملهم ج৪ ص১৪৭)
অর্থঃ- “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষদেরকে যা’ফরানী রংয়ের পোশাক পরিধান করতে নিষেধ করেছেন।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ ৮৬৯ পৃষ্ঠা, ফতহুল বারী ১০ম জিঃ ৩০৪ পৃষ্ঠা, উমদাতুলক্বারী ২২তম জিঃ ২২ পৃষ্ঠা, ইরশাদুস্ সারী ৮ম জিঃ ৪৪৬ পৃষ্ঠা, শরহুল কিরমানী ২১ জিঃ ৯০ পৃষ্ঠা, তাইসীরুল বারী ৭ম জিঃ ৫৭১ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ ১৯৮ পৃষ্ঠা, মুসলিম বিশরহিন্ নববী, শরহুল উবাই ওয়াস্ সিনূসী, ফতহুল মুলহিম ৪র্থ জিঃ ১৪৭ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয় যে,
[৮৯০]
وكره لبس المعصفر والمزعفر والاحمر والاصفر للرجال لايكره للنساء. (درالمختار ج৫ ص২৫২)
অর্থঃ- “কুসুম, যা’ফরানী, লাল এবং হলুদ রংয়ের পোশাক পুরুষদের জন্য পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী, তবে মহিলাদের জন্য মাকরূহ তাহরীমী নয়।” (দুররুল মুখতার ৫ম জিঃ ২৫২ পৃষ্ঠা)
[৮৯১-৮৯৩]
তাছাড়াও, ‘বুখারী শরীফের’ كتاب اللباس এর মধ্যে باب একটি (বাব) এর নাম করণ করা হয়েছে-
باب النهى عن التزعفر للرجال-
অর্থঃ- “পুরুষদের জন্য যা’ফরানী রং নিষিদ্ধ সম্পর্কিত পরিচ্ছেদ।
‘তিরমিযী শরীফে’ বাব নেয়া হয়েছে,
باب ماجاء فى كراهية التزعفر ....... للرجال.
অর্থঃ- “পুরুষদের জন্য যা’ফরানী রং মাকরূহ তাহরীমী সম্পর্কিত পরিচ্ছেদ।
‘মুসলিম শরীফের’ كتاب اللباس এ বাব নেয়া হয়েছে,
باب نهى الرجل عن التزعفر.
অর্থঃ- “যা’ফরানী রং পুরুষদের জন্য নিষেধ সম্পর্কিত পরিচ্ছেদ।”
অতএব, উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা এ বিষয়টি প্রমাণ করতে পারি যে, যা’ফরানী ও হলুদ রং-এর পোশাক পুরুষদের জন্য মাকরূহ তাহরীমীর অন্তর্ভূক্ত।
মোটকথা হল, ইমামাহ্ বা পাগড়ী যেহেতু পোশাকের মধ্যে মাথায় পরিধানের জন্য বিশেষ একখানা সুন্নতী পোশাক। তাই অন্যান্য পোশাকের মত ইমামাহ্ বা পাগড়ী লাল, হলুদ, কুসুম ও যা’ফরানী রংয়ের পরিধান করা জায়েয নাই। কেননা তা মাকরূহ তাহরীমী-এর অন্তর্ভূক্ত। আর ইহাই হচ্ছে প্রাধান্য প্রাপ্ত ও নির্ভরযোগ্য মত।
হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইমামাহ বা পাগড়ী মুবারকের দৈর্ঘ্য
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইমামাহ্ বা পাগড়ী ছিল তিন ধরনের। যথা- (১) তিনহাত, (২) সাত হাত ও (৩) বার হাত লম্বা। তিনহাত পাগড়ী সাধারণতঃ ঘরের ভিতরে, সাত হাত পাগড়ী পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে এবং সাধারণভাবে বার হাত পাগড়ী বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন- জুমুয়ার দিনে ও দুই ঈদে পরিধান করতেন। আর নিম্নে বিশ্ব বিখ্যাত, বিশ্বসমাদৃত, সর্বজনমান্য কিতাব সমূহ থেকে এ সম্পর্কিত দলীল-আদিল্লা উল্লেখ করা হলো-
[৮৯৪]
قال الشيخ شمس الدين الجزرى: تبتعت قدر عمامة النبى صلى الله عليه وسلم فتبين من كلام الشيخ محى الدين النووى انها كانت على انحاء ثلاثة اذرع وسبعة واثنتى عشر من الذراع الشرعى وهو النصف من ذرعنا وتلك الاخيرة كانت للعيدين. (فيض البارى ج৪ ص৩৪৫)
অর্থঃ- “হযরত শায়খ শামসুদ্দীন জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাগড়ীর পরিমাপ সম্পর্কে অনেক অনুসন্ধান করলাম। অতঃপর তা হযরত শায়খ মুহিউদ্দীন নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর অভিমত থেকে জানতে পারলাম যে, নিশ্চয়ই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাগড়ীর পরিমাপ ছিল (১) তিন হাত, (২) সাত হাত ও (৩) বার হাত। যা শরয়ী গজ হিসেবে ছিল। আর তা হচ্ছে আমাদের প্রচলিত গজ এর অর্ধেক অর্থাৎ এক হাত পরিমান। উল্লেখিত বার হাত পাগড়ী তিনি ঈদের নামাযে ব্যবহার করতেন। (ফাইদুল বারী ৪র্থ জিঃ ৩৭৫ পৃষ্ঠা)
[৮৯৫]
وكان عمامة النبى صلى الله عليه وسلم فى عامة الاحيان ثلاثة اذرع شرعية وفى الصلوة الخمس سبعة اذرع وفى الجمع والاعياد وحين الوفود اثنى عشر ذراعا. (انوار المحمود ج২ ص৪৪২)
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অধিকাংশ সময়ের(ঘরের ভিতরে) ব্যবহৃত পাগড়ী ছিল তিন হাত দীর্ঘ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে ব্যবহৃত পাগড়ী ছিল সাত হাত। আর জুমুয়া, ঈদের দিন এবং কোন দেশের প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাতের সময় ব্যবহার করতেন বার হাত পাগড়ী।” (আনওয়ারুল মাহমূদ ২য় জিঃ ৪৪২ পৃষ্ঠা)
[৮৮৬-৮৯৬]
وكان عمامته صلى الله عليه وسلم فى اكثر الاحيان ثلاثة اذرع شرعية وفى الصلاة الخمس سبعة اذرع. (عرف الشاذى ج১ ص৪.২. الطبرانى. انوار المحمود ج২ ص৪৪২)
অর্থঃ- “হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অধিকাংশ সময়ে (ঘরের ভিতরে) ব্যবহৃত পাগড়ী ছিল তিন হাত। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে ব্যবহার করতেন সাত হাত পাগড়ী।” (উরফুশ শাজী ১ম জিঃ ৩০৪ পৃষ্ঠা, তাবারানী, আন্ ওয়ারুল মাহমূদ ২য় জিঃ ৪৪২ পৃষ্ঠা)
[৮৯৯-৯০৭]
وفى المرقاة قال الجزرى فى تصحيح المصابيح قدتتبعت الكتب وتطلبت من السير والتواريخ لاقف على قدر عمامة النبى صلى الله عليه وسلم عمامة قصيرة وعمامة طويلة وان القصيرة كانت سبعة اذرع والطويلة اثنى عشر ذراعا ذكره القارى وقال وظاهر كلام المدخل ان عمامة كانت سبعة اذرع مطلقا من غير تقييد بالقصير والطويل. (عون المعبود ج৪ ص৯৬. تصحيح المصابيح. المدخل. تحفة الاحوذى ج৫ ص৪১৪. التعليق الصبيح ج৪ ص৩৪৯. مرقاة ج৮ ص২৫০. جمع الوسائل ج১ ص২০৭. خصائل نبوى صلى الله عليه وسلم ص৯১. اخلاق النبى صلى الله عليه وسلم ص১৮১)
অর্থঃ- “মিশকাত শরীফের শরাহ মিরকাত শরীফে আছে; হযরত ইমাম জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “তাছহীহুল মাছাবীহ্” গ্রন্থে লিখেছেন যে, আমি অনেক দিন পর্যন্ত অনুসন্ধান করেছি এবং অসংখ্য সীরত গ্রন্থ ও ইতিহাস এর কিতাব তালাশ করেছি। কিন্তু কোথাও নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাগড়ীর পরিমাপ সম্পর্কে আলোচনা পাই নাই। পরিশেষে এক প্রখ্যাত আলিম আমাকে জানালেন যে, তিনি ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এ সম্পর্কিত একটি উক্তি পেয়েছেন। যাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নিশ্চয়ই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছোট ও দীর্ঘ (লম্বা) উভয় প্রকার পাগড়ী ছিল। ছোট পাগড়ী ছিল সাত হাত ও লম্বা পাগড়ী ছিল বার হাত দীর্ঘ। হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উহা উল্লেখ করেছেন। হযরত ইমাম জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং “মাদখাল” গ্রন্থের ভাষ্য মতেঃ নিশ্চয়ই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাগড়ী সাধারণত সাত হাত ছিল। যা অতিরিক্ত লম্বা ও ছোট ছিল না।” (আউনুল মা’বূদ ৪র্থ জিঃ ৯৬ পৃষ্ঠা, তাছহীহুল মাছাবীহ, আল মাদখাল, তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম জিঃ ৪১৪ পৃষ্ঠা, আত্ তা’লকিুছ ছবীহ্ ৪র্থ জিঃ ৩৮৯ পৃষ্ঠা, মিরকাত ৮ম জিঃ ২৫০ পৃষ্ঠা, জামউল ওয়াসাইল ১ম জিঃ ২০৭ পৃষ্ঠা, খছাইলে নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৯১ পৃষ্ঠা, আখলাকুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১৮১ পৃষ্ঠা)
[৯০৮-৯১১]
উর্দু কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- “হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাগড়ীর পরিমাপ সম্পর্কে আল্লামা ইমাম জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ........... নিশ্চয়ই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দু’প্রকার পাগড়ী ছিল। প্রথম প্রকার ছোট, যা সাত হাত ছিল। দ্বিতীয় প্রকার লম্বা, যা বার হাত ছিল।” (দরসে মিশকাত ৩য় জিঃ ১৫৫ পৃষ্ঠা, আশয়াতুল লুময়াত ৩য় জিঃ ৫৮৩ পৃষ্ঠা, আত্ তা’লীকুছ্ ছবীহ ৪র্থ জিঃ ৩৮৯ পৃষ্ঠা, তানযীমুল আশতাত ৪র্থ জিঃ ১৬৭ পৃষ্ঠা)
[৯১২-৯১৩]
طبرانى كى ايك روايت مير سات ذراع ائى هى. (خصائل نبوى صلى الله عليه وسلم ص৯১. طبرانى شريف)
অর্থঃ- “তাবারানী শরীফ” এর এক বর্ণনা মতে, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাগড়ী ছিল সাত হাত লম্বা।” (খছাইলে নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৯১ পৃষ্ঠা, তাবারানী শরীফ)
[৯১৪]
انحضرت صلى الله عليه وسلم كاعمامة تقريبا سات كزكا هوتا تها. (شمائل نبوى صلى الله عليه وسلم ص৪১১)
অর্থঃ- “হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাগড়ী মুবারক সাত হাত লম্বা ছিল।” (শামাইলে নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪১১ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইমামাহ্ বা পাগড়ীর পরিমাপ বা দৈর্ঘ্য ছিল- তিন হাত। সাত হাত এবং বার হাতদ্দ অর্থাৎ তিনি ঘরে থাকা অবস্থায় তিন হাত, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে বা অন্যান্য সময় সাত ও জুমুয়া, ঈদ বা বিশেষ বিশেষ সময় বার হাত পাগড়ী মুবারক ব্যবহার করতেন। অতএব, পাগড়ী তিন হাত, সাত হাত এবং বার হাত হওয়াই খাছ সুন্নত।
হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের প্রস্থ
সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইমামাহ্ বা পাগড়ীর দৈর্ঘ্য ছিল তিন, সাত ও বার হাত। আর প্রস্থ ছিল এক হাত, দেড় হাত এবং দুই হাত। নিম্নে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাগড়ীর প্রস্থ সম্পর্কে দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করা হলো-
[৯১৫]
وما وقع للطبرانى فى طولها انه نحو سبعة اذرع ولغيره انه نقل عن عاشة انه سبعة فى عرض ذراع. (شمائل بشرح المناوى ج১ ص২০৯)
অর্থঃ- “হযরত ইমাম তাবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে পাগড়ীর দৈর্ঘ্য হল “নিশ্চয়ই উহা সাত হাত হবে। ইহা ছাড়াও তিনি হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে নকল করে বলেন যে, নিশ্চয়ই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাগড়ী একগজ প্রস্ত বিশিষ্ট কাপড় সাত হাত দীর্ঘ ছিল। অর্থাৎ দৈর্ঘ্য ছিল সাত হাত, আর প্রস্থ ছিল এক হাত।” (শামাইল বিশ্রহিল্ মানাবী ১ম জিঃ ২০৯ পৃষ্ঠা)
[৯১৬]
وما وقع للطبرانى من ان طولها نحو سبعة اذرع ولغيره ان طولها نحو سبعة اذرع فى عرض ذراع. (المواهب اللدنية على الشمائل المحمدية ص৯৯)
অর্থঃ- “হযরত ইমাম তাবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে পাগড়ীর দৈর্ঘ্য হল সাত হাত। ইহা ছাড়াও অন্য মতে, নিশ্চয়ই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাগড়ীর দৈর্ঘ্য ছিল সাত হাত, একগজ প্রস্থ বিশিষ্ট কাপড়ের মধ্যে।” (আল মাওয়াহিবুল্ লাদুন্নিয়া আলাশ্ শামাইলিল মুহম্মদিয়া ৯৯ পৃষ্ঠা)
[৯১৭]
হযরত ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাগড়ী এত বড়ও ছিল না, যা মাথায় বহন করতে কষ্টকর হয় এবং এত ছোটও ছিল না যা মাথাকে শীতাতপ হতে রক্ষা করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়।
আমরা হযরত ইবনুল কাইয়্যিম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বর্ণিত নীতিটি সম্পূর্ণ যুক্তি সঙ্গত বলে মনে করি। এই নীতি অনুসারে এই কথা বলা অন্যায় হবে না যে, পাগড়ীর কাপড় যদি মাঝারি ধরণের মোটা হয় এবং উহার পরিসর (প্রস্থ) মাঝারি ধরণের অর্থাৎ প্রায় দেড় হাত হয় তাহলে পাগড়ীর দৈর্ঘ্য ৬ বা ৭ হাত হলেই ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বর্ণিত উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে। (শামাইলুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ২৩৫ পৃষ্ঠা)
উল্লেখ্য, কোন কোন বর্ণনায় পাগড়ীর প্রস্থতা ছিল অর্ধ হাত বা এক বিঘত।
ইমামাহ্ বা পাগড়ীর
‘শামলা’-এর পরিমাপ
ইমামাহ্ বা পাগড়ীর ‘শামলা’-এর পরিমাপ হচ্ছে- নিম্নে চার আঙ্গুল আর উর্দ্ধে এক হাত পরিমান। তবে উত্তম হল একহাত প্রলম্বিত হওয়া। নিম্নে পাগড়ীর ‘শামলা’-এর পরিমাপ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হলো-
পাগড়ীর ‘শামলা’
এক হাত হওয়ার প্রমাণ
ইমামাহ্ বা পাগড়ী বাধার পর পাগড়ীর যে অংশ পিছনে পিটের উপর ঝুলে থাকে তাকেই “শামলা” বলে। ইমামাহ্ বা পাগড়ীর ‘শামলা’ একহাত প্রলম্বিত হওয়া খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সুন্নতে মালাইকা, সুন্নতে ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এবং সুন্নতে আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম। কেননা তাঁরা সকলেই পাগড়ী বেঁধে একহাত শামলা রেখেছেন। যার দলীলসমূহ নিম্নে বর্ণনা করা হলো-
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাগড়ীর শামলা একহাত রাখতেন
[৯১৮-৯২৯]
قال السيوطى فى الحاوى للفتاوى: وأما مقدار العمامة الشريفة قلم يثبت فى حديث وقد روى البيهقى فى شعب الايمان عن ابن سلام بن عبد الله بن سلام قال: سألت ابن عمر كيف كان انبى صلى الله عليه وسلم يعتم؟ قال كان يدير العمامة على رأسه ويغر زها من وراءه ويرسل لها ذوابة بن كتفيه، وهذا يدل على انها عدة اذرع. (تحفة الاحوذى ج৫ ص৪১৪. نيل الاوطار للشوكانى ج২. ص১১৩. الحاوى. الفتاوى. شعب الايمان للبيهقى ج৫ ص১৭৪)
অর্থঃ- “হযরত ইমাম সূয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “হাবীলিল ফতওয়া” কিতাবে লিখেন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাগড়ী মুবারকের পরিমাপ(দৈর্ঘ্য-প্রস্থ) সম্পর্কে হাদীস শরীফে প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘শুয়াবুল ঈমান’ কিতাবে হযরত ইবনে সালাম ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিভাবে পাগড়ী বাঁধতেন? তিনি উত্তরে বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাগড়ীর একটি প্রান্ত মাথা মুবারকে পেঁচাতেন এবং তারই শেষ প্রান্ত পিছনে উপরে গুঁজে দিতেন। আর পাগড়ীর শামলা উভয় কাঁধের মাঝখানে ঝুলিয়ে রাখতেন। এই হাদীস শরীফটি প্রমাণ করে যে, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাগড়ীর শামলা ছিল একহাত পরিমান। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম জিঃ ৪১৪ পৃষ্ঠা, নাইলুল আউতার লিশ শাওকানী ২য় জিঃ ১১৩ পৃষ্ঠা, আল্ হাবী লিল ফতওয়া, শুয়াবুল ঈমান লিল বাইহাক্বী ৫ম জিঃ ১৭৪ পৃষ্ঠা। অনুরূপ উমদাতুল্ ক্বারী ২১ জিঃ ৩০৮ পৃষ্ঠা, ইরশাদুস্ সারী ৮ম জিঃ ৪২৮ পৃষ্ঠা, জামউল ওয়াসাইল ১ম জিঃ ২০৬ পৃষ্ঠা, মিরকাত ৮ম জিঃ ২৪৯ পৃষ্ঠা, আত্ তা’লীকুছ ছবীহ ৪র্থ জিঃ ৩৮৮ পৃষ্ঠা, আয্ যুরকানী ৬ষ্ঠ জিঃ ২৭৬ পৃষ্ঠা, আল্ লিবাসু ওয়ায্ যীনাহ্ ১৩৪ পৃষ্ঠা, মাজমাউয্ যাওয়াইদ ৫ম জিঃ ১২০ পৃষ্ঠা ইত্যাদি কিতাবেও উল্লেখ আছে।
হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণও পাগড়ীর শামলা একহাত পরিমাণ ঝুলাতেন
[৯৩০]
عن ابى العنبس عمروبن مروان عن ابيه قال رأيت على على رضى الله عنه عمامة قد ارخى طرفها من خلفه نحوا من ذراع. (مصنف ابن ابى شيبة ج৮ ص২৩৯)
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল আম্বাস আমর ইবনে মারওয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে পাগড়ী পরিহিত দেখেছি। যার প্রান্ত বা শামলা তাঁর পিছনে (পিঠের উপর) এক হাত পরিমাণ প্রলম্বিত ছিল।” (মুছান্নাফু ইবনে আবী শাইবাহ্ ৮ম জিঃ ২৩৯ পৃষ্ঠা)
[৯৩১-৯৩২]
حدثنا سلمة بن وردان قال: رايت على انس عمامة سوداء على غير قلنسوة وقد ارخاها من خلفه نحوا من ذراع. (مصنف ابن ابى شيبة ج৮ ص২৩৫. طبقات ابن سعد ج১-৭ ص১১)
অর্থঃ- “হযরত সালামাহ্ ইবনে ওয়ারদান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে টুপি ছাড়া কালো রংয়ের পাগড়ী পরিধান করতে দেখেছি।) (তবে পরবর্তীতে তিনি টুপির উপর পাগড়ী পরিধান করেছেন। তিনি তাঁর পাগড়ীর শামলা পিছনে (পিঠের উপর) এক হাত পরিমান ঝুলন্ত রাখতেন।” (মুছান্নাফু ইবনে আবী শাইবাহ্ ৮ম জিঃ ২৩৫ পৃষ্ঠা, ত্ববাক্বাতু ইবনে সা’দ ১ম ও ৭ম জিঃ ১১ পৃষ্ঠা)
[৯৩৩-৯৩৭]
قد اخرخ ابن ابى شيبة ان عبد الله بن الزبير كان يعتم بعمامة سوداء قد ارخاها من خلفه نحوا من ذراع. (عون المعبود ج৫ ص৯৬. مرقاة ج৩ ص২৬৮. شمائل النبى صلى الله عليه وسلم ص২৩৬. نيل الاوطار شرح منتقى الا خبار ج২ ص১১৩. تحفة الاحوزى ج৫ ص৪১২)
অর্থঃ- “ইবনে আবী শাইবাহ্ বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কালো পাগড়ী পরিধান করে উহার শামলা পিছনে (পিঠের উপর) একহাত পরিমাণ ঝুলাতেন।” (আউনুল মা’বূদ ৪র্থ জিঃ ৯৬ পৃষ্ঠা, মিরকাত ৩য় জিঃ২৬৮ পৃষ্ঠা, শামাইলুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ২৩৬ পৃষ্ঠা, নাইলুল আউতার শরহে মুনতাক্বাল আখবার ২য় জিঃ ১১৩ পৃষ্ঠা, তুহফাতুল আহওয়াযী ৪১৩ পৃষ্ঠা)
পাগড়ীর শামলা নিম্নে চার আঙ্গুল
থেকে এক বিঘত হওয়ার প্রমাণ
[৯৩৮-৯৪১]
روى سعدبن سعيد عن رشدين قال رأيت عبد الله بن الزبير يعتم بعمامة سوداء ويرخيها شبرا اواقل من شبر. (عون المعبود ج৪ ص৯৬. تحفة الاحوذى ج৫ ص৪১৩. مرقاة ج৩ ص২৬৮. نيل الاوطار شرح منتقى الاخبار ج২ ص১১৩)
অর্থঃ- “হযরত সা’দ ইবনে সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত রশিদীন রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে কালো পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় দেখেছি যে, তিনি উহার শামলা অর্ধহাত অথবা অর্ধহাতের থেকে একটু কম ঝুলিয়ে ছিলেন।” (আউনুল মা’বূদ ৪র্থ জিঃ ৯৬ পৃষ্ঠা, তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম জিঃ ৪১৩ পৃষ্ঠা, মিরকাত ৩য় জিঃ ২৬৮ পৃষ্ঠা, নাইলুল আউতার শরহে মুনতাকাল আখবার ২য় জিঃ ১১৩ পৃষ্ঠা)
[৯৪২]
مقدار العذبة اربعة اصابع واكثرها ذراع وحسبا الى نصف الظهر. (حاشية الشمائل الترمذى ص৮)
অর্থঃ- “পাগড়ীর শামলার (নিম্ন) পরিমাণ চার আঙ্গুল আর অধিক পরিমান একহাত এবং উহা ঝুলাতে হবে পিঠের অর্ধাংশ পর্যন্ত।” (হাশিয়ায়ে শামাইলুত তিরমিযী ৮ পৃষ্ঠা)
[৯৪৩]
উর্দু কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- “ইমামাহ্ বা পাগড়ীর শামলার নিম্ন পরিমাণ চার আঙ্গুল আর সর্বোচ্চ পরিমাপ একহাত।” (তানযীমুল আশতাত ৪র্থ জিঃ ১৬৭ পৃষ্ঠা)
[৯৪৪-৯৪৫]
উর্দু কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- “পাগড়ীর শামলার (নিম্ন) পরিমাপ চার আঙ্গুল আর উর্ধ্ব মাপ একহাত। আর এর চেয়ে অতিরিক্ত করা বিদয়াতের অন্তর্ভূক্ত।” (মুযাহিরে হক্ব ৩য় জিঃ ৫৩৪ পৃষ্ঠা, আশয়াতুল্ লুময়াত ৩য় জিঃ ৫৪৫ পৃষ্ঠা)
পাগড়ীর ‘শামলা’ চার আঙ্গুল বা একহাতের চেয়ে কম-বেশী হওয়ার হুকুম
পাগড়ী পরিধান করে এর শামলা ঝুলিয়ে রাখা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। তবে পাগড়ীর শামলা অবশ্যই কম পক্ষে চার আঙ্গুল আর উর্দ্ধে এক হাত পরিমান লম্বা হতে হবে। কারণ পাগড়ীর শামলা এক হাতের চেয়েও অধিক লম্বা হওয়া সুন্নত পরিপন্থি বা মাকরূহ। এ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
[৯৪৬]
উর্দু কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- “পাগড়ীর শামলার নিম্ন পরিমান চার আঙ্গুল আর সর্বোচ্চ পরিমান এক হাত। এক হাতের চেয়ে বেশী পিঠের মাঝামাঝির নিচে লটকানো কে “ইসবাল” বলা হয়। এতে ফখর এসে থাকে তাই তা হারাম তবে ফখর না হলে মাকরূহ হবে।” (তানযীমুল্ আশতাত ৪থৃ জিঃ ১৬৭ পৃষ্ঠা)
[৯৪৭]
উর্দু কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- “পাগড়ীর শামলার নিম্ন পরিমাণ চার আঙ্গুল এবং সর্বোচ্চ পরিমাণ এক হাত। আর এর থেকে অতিরিক্ত লম্বা করা বিদয়াতের অন্তর্ভূক্ত।” (মুযাহিরে হক্ব ৩য় জিঃ ৫৩৪ পৃষ্ঠা)
[৯৪৮]
আলিমগণের মত এই যে, পাগড়ীর প্রান্ত (শামলা) চারি আঙ্গুল থেকে একহাত পর্যন্ত ঝুলানো চলবে। (শামাইলুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ২৩৬ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত বিশদ আলোচনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণীত হল যে, ইমামাহ্ বা পাগড়ীর শামলা, (১) একহাত, (২) অর্ধহাত, (৩) চারআঙ্গুল ও (৪) নিছফে যুহর অর্থাৎ অর্ধপিঠ পর্যন্ত ঝুলানো খাছ সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। একহাত পরিমানে ঝুলানো হচ্ছে সর্বোত্তম।
ইমামাহ্ বা পাগড়ীর ‘শামলা’ ঝুলানোর স্থান
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইমামাহ্ বা পাগড়ী বেঁধে উহার শামলা কখনো ডানদিকে সামনে আবার কখনো দু’কাঁধের মাঝা-মাঝি অর্থাৎ পিঠের উপর ঝুলিয়ে রাখতেন। তবে অধিকাংশ সময় উভয় কাঁধের মাঝে অর্থাৎ পিঠের উপর ঝুলাতেন। এজন্য, উভয় কাঁধের মাঝে পাগড়ীর শামলা ঝুলানো আফযল বা সর্বোত্তম। যেমন কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,
[৯৪৯-৯৫০]
استحباب ارخاء طرف العمامة بين الكتفين. عون المعبود ح৪ ص৯০. تحفة الاحوذى ج৫ ص৪১১)
অর্থঃ- “দু’কাঁধের মাঝা-মাঝি স্থানে পাগড়ীর শামলা, ঝুলানো মুস্তাহাব সুন্নত।” (আউনুল মা’বূদ ৪র্থ জিঃ ৯৫ পৃষ্ঠা, তুহফাতুল্ আহওয়াযী ৫ম জিঃ ৪১১ পৃষ্ঠা)
[৯৫১]
سنتها ان تكون لها ذوابة يسدلهابين كتفيه ويجعلها بعضهم على صدره وعادة اهل المشرق كلهم ان تكون مسدلة بين الكتفين. (عارضة الاحوذى ج৭ ص২৪৩. ص২৪৪)
অর্থঃ- “পাগড়ী পরিধানের সুন্নত হল তার শামলা উভয় কাঁধের মাঝে ঝুলিয়ে রাখা। কেউ কেউ উহা বক্ষদেশের উপর ঝুলিয়ে রাখে। তবে আহ্লে মাশরিক গণের অভ্যাস ছিল তাঁরা পাগড়ীর শামলা দু’কাঁধের মাঝখানে ঝুলাতেন।” (আরিদ্বাতুল আহওয়াযী ৭ম জিঃ ২৪৩ ও ২৪৪ পৃষ্ঠা)
[৯৫২]
ارسال ذنب العمامة بين كتفيه وهكذا فى غيره من كتب الحنفية. (اشعة اللمعات ج৩ ص৫৪৫)
অর্থঃ- “ইমামাহ্ বা পাগড়ীর কিনারা (শামলা) দু’কাঁধের মাঝখানে ঝুলাতে হয়। অনুরূপভাবে হানাফীগণের অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত আছে। (আশয়াতুল্ লুময়াত ৩য় জিঃ ৫৪৫ পৃষ্ঠা)
বিশেষভাবে জ্ঞাতব্য যে, পাগড়ীর শামলা পিছনে পিঠের উপর ঝুলানোই আফযল বা উত্তম। যা মুস্তাহাব সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। একটি বিষয় জেনে রাখা দরকার, তাহল, পাগড়ীর শামলা সামনে বাম দিকে ঝুলানো বিদয়াত। যেমন, কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,
[৯৫৩]
উর্দু কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- “পাগড়ীর শামলা বাম দিকে সামনে ঝুলিয়ে রাখা বিদয়াত।” (মুযাহিরে হক্ব ৩য় জিঃ ৫৩৪ পৃষ্ঠা)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’কাঁধের মাঝে তথা পিছনে পিঠের উপর শামলা ঝুলাতেন
[৯৫৪-৯৭১]
عن ابن عمر رضى الله عنهما قال كان النبى صلى الله عليه وسلم اذا اعتم سدل عمامته بين كتفيه. (ترمذى الجلد الاول ص২০৭- تحفة الاحوذى المجلد الخامس ص৪১১- عارضة الاحوذى الجزء السابع ص২৪৩- شمائل الترمذى ص৯- جمع الوسائل الجزء الاول ص২০৬- المواهب اللدنية على الشمائل المحمدية ص১০১- شمائل بشرح المناوى الجلد الاول ص২০৪ خصائل نبوى صلى الله عليه وسلم ص৯৩- مشكوة ص৩৭৪- مرقاة الجلد التامن ص২৪৯- شرح الطيبى الجلد الثامن ص২১৬- التعليق الصبيح الجزء الرابع ص৩৮৮- اشعة اللمعات الجلد الثالث ص৫৪৪- مظاهر حق جلد سوم ص৫৩৪- فتح البارى الجلد العاشر ص২৭৩- فتح البارى الجلد الحادى والعشرون ص৩০৭- ارشاد السارى الجلد الثامن ص৪২৮- نيل الاوطار الجلد الثانى ص১১১)
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন পাগড়ী মুবারক পরতেন তখন তাঁর পাগড়ীর শামলা উভয় কাঁধের মাঝে ঝুলিয়ে রাখতেন।” (তিরমিযী ১ম জিঃ ২০৭ পৃষ্ঠা, তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম জিঃ ৪১১ পৃষ্ঠা, আরিদাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড ২৪৩ পৃষ্ঠা, শামাইলুত্ তিরমিযী ৯ পৃষ্ঠা, জামউল ওয়াসাইল ১ম খন্ড ২০৬ পৃষ্ঠা, আল মাওয়াহিবুল্ লাদুন্নিয়া আলাশ্ শামাইলি মুহম্মদিয়া ১০১পৃষ্ঠা, শামাইলু বি শরহিল মানাবী ১ম জিঃ ২০৪ পৃষ্ঠা, খছাইলে নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৯৩ পৃষ্ঠা, মিশকাত ৩৭৪ পৃষ্ঠা, মিরকাত ৮ম জিঃ ২৪৯ পৃষ্ঠা, শরহুত্ তীবী ৮ম জিঃ ২১৬ পৃষ্ঠা, আত্-তালীকুছ ্ছবীহ্ ৪র্থ খন্ড ৩৮৮ পৃষ্ঠা, আশয়াতুল লুময়াত ৩য় জিঃ ৫৪৪ পৃষ্ঠা, মুযাহিরে হক্ব ৩য় জিঃ ৫৩৪ পৃষ্ঠা, ফতহুল বারী ১০ জিঃ ২৭৩ পৃষ্ঠা, ফতহুল বারী ২১জিঃ ৩০৭ পৃষ্ঠা, ইরশাদুস্ সারী ৮ম জিঃ, ৪২৮ পৃষ্ঠা, নাইলুল আউতার ২য় জিঃ ১১১ পৃষ্ঠা)
শামলা পিছনে ঝুলানোর ব্যাপারে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ
[৯৭২-৯৮৯]
عن عبادة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم عليكم بالعمائم فانها سيماء الملائكة وارخوها خلف ظهوركم. (مشكوة شريف ص৩৭৭- مرقاة ج৮ ص২৬৫- شرح الطيبى ج৮ ص২২৮- التعليق الصبيح ج৪ ص৩৯৫- اشعة اللمعات ج৩ ص৫৫৬- مظاهر حق ج৩ ص৫৪৩- مرأة المناجيح- تحفة الاحوذى ج৫ ص৪১৪- شعب الايمان للبيهقى ج৫ ص১৭৬- فيض القدير ج৪ ص৪৫৪- المعجم الكبير ج১২ ص২৯৩- جامع المسانيد والسنن ج২৯ ص৩৮৩- اللباس والزينة ص১২৭ مجمع الزوائد ج৫ ص১২০- الكبير ج১২ ص৩৮৩- الميزان ج৪ ص৩৯৬- الضعيفة ج২ ص১১৯- كشف الخفاء ومزيل الالباس ج২ ص৬৭)
অর্থঃ- “হযরত উবাদা ইবনে সামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের জন্য পাগড়ী পরিধান আবশ্যক। কেননা তা ফেরশ্তাগণের নিদর্শণ স্বরূপ। আর উহার (পাগড়ীর) শামলা তোমাদের পিছনে পিঠের উপর ছেড়ে দাও।” (মিশকাত শরীফ ৩৭৭ পৃষ্ঠা, মিরকাত ৮ম জিঃ ২৬৫ পৃষ্ঠা, শরহুত্ ত্বীবী ৮ম জিঃ ২২৮ পৃষ্ঠা, আত্ তালীকুছ ছবীহ ৪র্থ জিঃ ৩৯৫ পৃষ্ঠা, আশয়াতুল্ লুময়াত ৩য় জিঃ ৫৫৬ পৃষ্ঠা, মুযাহিরে হক্ব ৩য় জিঃ ৫৪৩ পৃষ্ঠা, মিরয়াতুল মানাজীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম জিঃ ৪১৪ পৃষ্ঠা, শুয়াবুল ঈমান লিল্ বাইহাক্বী ৫ম জিঃ ১৭৬ পৃষ্ঠা, ফাইদ্বুল ক্বদীর ৪র্থ জিঃ ৪৫৪ পৃষ্ঠা, আল মু’জামুল কবীর ১২ জিঃ ২৯৩ পৃষ্ঠা, জামিউল্ মাসানীদি ওয়াস্ সুনান ২৯ জিঃ ৩৮৩ পৃষ্ঠ্,া আল্ লিবাসু ওয়ায্ যীনাহ্ ১২৭ পৃষ্ঠা, মাজমাউয্ যাওয়াইদ ৫ম জিঃ ১২০ পৃষ্ঠা, আল কবীর ১২ জিঃ ৩৮৩ পৃষ্ঠা, আল মীযান ৪র্থ জিঃ ৩৯৬ পৃষ্ঠা, আদ্ দ্বঈফাহ ২য় জিঃ ১১৯ পৃষ্ঠা, কাশফুল খফা ওয়া মুযীলুল ইলবাস ২য় জিঃ ৬৭ পৃষ্ঠা)
উপরল্লিখিত অসংখ্য নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লাহর মাধ্যমে অকাট্য ভাবে প্রমাণিত হয় যে, ইমামাহ বা পাগড়ীর শামলা উভয় কাঁধের মাঝামাঝি তথা পিছনে পিঠের উপর ঝুলানো খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্তর্ভূক্ত।
সমস্ত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস্ সালামগণ দু’কাঁধের মাঝে তথা পিছনে পিঠের উপর ইমামাহ্ বা পাগড়ীর শামলা ঝুলান
[৯৯০-৯৯৬]
روى عن على بن ابى طالب وابن عباس وغيرهما ان الملائكة اعتمت بعمائم بيض قد ارسلوها بين اكتافهم. (تفسير القرطبى ج২ ص১৯৬. تفسير الخازن ج১ ص২৮০. تفسير ابى السعود ج২ ص৮১. تفسير ابن اثير ج১ ص২০১. حاشية محى الدين شيخ زاده على تفسير البيضاوى ج১ ص৬৬৯. تفسير الجلالين ص৬০. تفسير المظهرى ج২ ص১৩৩)
অর্থঃ- “হযরত আলী ইবনে আবু ত্বালিব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা ও অন্যান্যগণের থেকে বর্ণিত আছে- নিঃসন্দেহে ফেরেশ্তাগণ ‘সাদা পাগড়ী’ পরিধান করেন, যার শামলা তাঁরা দু’কাঁধের মধ্যবর্তীস্থানে ঝুলিয়ে রাখেন।” (তাফসীরুল্ কুরতুবী ২য় জিঃ ১৯৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ খাযিন ১ম জিঃ ২৮০ পৃষ্ঠা, তাফসীরু আবী সাউদ ২য় জিঃ ৮১ পৃষ্ঠা, তাফসীরু ইবনে কাসীর ১ম জিঃ ২০১ পৃষ্ঠা, হাশিয়াতু মুহিউদ্দীন শায়খ যাদাহ্ আলা তাফসীরিল্ বাইযাভী ১ম জিঃ ৬৬৯ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ জালালাইন ৬০ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল মাযহারী ২য় জিঃ ১৩৩ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত অসংখ্য দলীল-আদিল্লাহ্র মাধ্যমে অকাট্য ভাবে প্রমাণিত হয় যে, ইমামাহ্ বা পাগড়ীর শামলা পিছনে দু’কাঁধের মাঝখানে তথা পিঠের উপর ঝুলানো সুন্নতে মালাইকা-এর ও অন্তর্ভূক্ত।
হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ ইমামাহ্ বা পাগড়ীর শামলা উভয় কাঁধ তথা পিছনে পিঠের উপর ঝুলাতেন
[৯৯৭]
قال عبيد الله اخبرنا اشياخنا أنهم رأوا اصحاب النبى صلى الله عليه وسلم يعتمون ويرخونها بين اكتافهم. (مصنف ابن ابى شيبة ج৮ ص২৩৯)
অর্থঃ- “হযরত উবাইদুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাকে আমার শায়খ বা উস্তাদগণ বলেছেন যে, নিশ্চয়ই তাঁরা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মধ্যে যত জনেরই সাক্ষাত লাভ করেছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই পাগড়ী পরিধান করতে দেখেছেন। আর তাঁরা পাগড়ীর শামলা তাঁদের দু’কাঁধের মাঝামাঝি ঝুলিয়ে রাখতেন।” (মুছান্নাফু ইবনে আবী শাইবাহ্ ৮ম জিঃ ২৩৯ পৃষ্ঠা)
[৯৯৮]
عن السائب بن يزيد قال: رايت عمربن الخطاب يوم عيد معتما قدارخى عمامته من خلفه. (شعب الايمان للبيهقى ج৫ ص১৫৪)
অর্থঃ- “হযরত সাইব ইবনে ইয়াযীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ঈদের দিনে হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় দেখেছি যে, তাঁর পাগড়ীর শামলা পিছনে (পিঠের উপর) প্রলম্বিত ছিল।” (শুয়াবুল ঈমান লিল্ বাইহাক্বী ৫ম জিঃ ১৭৪ পৃষ্ঠা)
[৯৯৯]
قال اسماعيل وحدثنى محمد بن يوسف عن. (ابى رزين) قال: شهدت على بن ابى طالب يوم عيد معتما قدارخى عمامته من خلفه والناس مثل ذلك. (شعب الايمان للبيهقى ج৫ ص১৭৪)
অর্থঃ- “হযরত ইসমাঈল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেন, হযরত মুহম্মদ ইবনে ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি (হযরত আবু রযীন রহমতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত আবু রযীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে ঈদের দিনে পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। তাঁর পাগড়ীর শামলা তাঁর পিছনে (পিঠের উপর) ঝুলছিল। (রাবী বলেন) এবং অন্যান্য মানুষগণ (মুসলমানগণ)ও অনুরূপভাবে পাগড়ী বেঁধেছিলেন।” (শুয়াবুল ঈমান লিল্ বাইহাক্বী ৫ম জিঃ ১৭৪ পৃষ্ঠা)
[১০০১-১০০২]
قال نالع رأيت عبد الله يسدل عمامته من خلفه. (شعب الايمان للبيهقى ج৫ ص১৭৪- عمدة القارى ج২১ ص৩০৭)
অর্থঃ- “হযরত ইমাম নাফে’ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমাকে দেখেছি, তিনি পাগড়ীর শামলা পিছনে (পিঠের উপর) ঝুলাতেন।” (শুয়াবুল ঈমান লিল্ বাইহাক্বী ৫ম জিঃ ১৭৪ পৃষ্ঠা, উমদাতুল ক্বারী ২১ জিঃ ৩০৭ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, পাগড়ীর শামলা পিছনে দু’কাঁধের উপর তথা পিঠের উপর ঝুলানো সুন্নতে ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম।
হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ইমামাহ্ বা পাগড়ীর শামলা দু’কাঁধের মাঝামাঝি বা পিছনে পিঠের উপর ঝুলাতেন
আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, সকলেই ইমামাহ্ বা পাগড়ী বাঁধার পর শামলা পিছনে পিঠের উপর তথা দু’কাঁধের মাঝামাঝি ঝুলাতেন। নিম্নে কিছু সংখ্যক আইলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের শামলা সম্পর্কে আলোচনা করা হলঃ
[১০০২-১০০৩]
حدثنا عبيد الله بن عمر عن سالم والقاسم كان يرخيان عمائمهم بين اكتافهم. (مصنف ابن ابى شيبة ج৮ ص২৪০- طبقات ابن سعد ج৫ ص১৪৩-১৪৬)
অর্থঃ- “হযরত উবাইদুল্লাহ্ ইবনে উমর রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত সালিম ও ক্বাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহিমা থেকে বর্ণনা করেন যে, তাঁরা (হযরত সালিম ও ক্বাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহিমা) দু’জন তাঁদের পাগড়ীর শামলা উভয় কাঁধের মাঝখানে ঝুলাতেন।” (মুছান্নাফু ইবনে আবী শাইবাহ্ ৮ম জিঃ ২৪০ পৃষ্ঠা, ত্ববাকাতু ইবনে সা’দ ৫ম জিঃ ১৪৩ ও ১৪৬ পৃষ্ঠা)
[১০০৪-১০০৫]
উর্দু কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- “হযরত আসওয়াদ ইবনে ইয়াযীদ রহমতুলাহি আলাইহি কালো রংয়ের পাগড়ী মাথায় বাঁধতেন। এর শামলা পিছনে (দু’কাঁধের মধ্যবর্তীস্থানে ঝুলে থাকতো।” (সিয়ারুছ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ৭ম জিঃ ৪৩ পৃষ্ঠা, ত্ববাকাতু ইবনে সা’দ ৬ষ্ঠ জিঃ ৫৯ পৃষ্ঠা)
[১০০৬-১০০৭]
قال اشهب كان مالك اذا اعتم جعل منها تحت ذقنه- وسدل طرفيها بين كتفيه. (غذاء الالباب ج২ ص২৪৩- سيرة امام مالك رحمة الله عليه)
অর্থঃ- “হযরত আশহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন পাগড়ী বাঁধতেন, তখন পাগড়ীর একাংশ থুতনীর নিচে চাপ দিয়ে ধরতেন। অতঃপর পাগড়ীর দুই প্রান্ত বা শামলা উভয় কাঁধের মাঝামাঝি ঝুলাতেন।” (গিযাউল্ আলবাব ২য় জিঃ ২৪৩ পৃষ্ঠা, সীরতে ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি)
[১০০৮-১০০৯]
“হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লিবাস (পোশাক) পূর্ণ সুন্নত মোতাবিক ছিল এবং তিনি পাগড়ী পরিধান করতেন। যার শামলা দু’কাঁধের মাঝামাঝি ঝুঁলিয়ে দিতেন।” (জাওয়াহিরে মুজাদ্দিদিয়া ৫২ পৃষ্ঠা, বিপ্লবী মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি)
সুতরাং অকাট্যভাবে প্রমাণীত হলো যে, ইমামাহ্ বা পাগড়ীর ‘শামলা’ উভয় কাঁধের মাঝখানে তথা পিছনে পিঠের উপর ঝুলানো সুন্নতে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সুন্নতে মালাইকা আলাইহিমুস্ সালাম, সুন্নতে ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এবং সুন্নতে আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর অন্তর্ভূক্ত।
(অসমাপ্ত)