সুন্নতের মূর্ত প্রতিক,
হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা
জাহান থেকে কুফরী,
শেরেকী ও বিদ্য়াতের মুলৎপাটনকারী, বাতিলের
আতঙ্ক এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক
মূখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”
পত্রিকায় যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে তার
প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছুদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব
লেখাই পত্রস্থ করা হয়,
যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করনে বিশেষ সহায়ক।
তদ্রুপ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে”-
ইমামাহ্ বা পাগড়ী মোবারক ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে
ফতওয়া দেয়ার উদ্দেশ্য বা মাকছুদও ঠিক তাই। কারণ অধিকাংশ মুসলমানই পাগড়ীর সঠিক
আহ্কাম ও ফযীলত সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। যার ফলে তারা পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে সঠিক
আক্বীদা পোষণ করতে যেরূপ ব্যর্থ, তদ্রুপ পাগড়ীর ন্যায় একখানা গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ
দায়েমী সুন্নত পালনেও ব্যর্থ। যা অবশ্যই মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর রেজামন্দী হাছিলের ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায়।
স্মরণযোগ্য যে,
অনেকেই পাগড়ীর সঠিক আহ্কাম ও ফযীলত না জানার কারণে পাগড়ীকে
অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে থাকে এবং পাগড়ী পরিহিত ব্যক্তিকে ঠাট্টা বা বিদ্রুপ
করে থাকে। অথচ এটা সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। কেননা আক্বাইদের ইমামগণের মতে
শুধু পাগড়ী নয় বরং যে কোন সুন্নতের অবজ্ঞাই কুফরীর কারণ। এ প্রসঙ্গে আক্বাইদের
কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
“কদু খাওয়া সুন্নত।
কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কদু পছন্দ করতেন এবং খেয়েছেন। তাই কেউ যদি বলে
যে, আমি কদু খাওয়া পছন্দ করিনা তবে সে কাফির হয়ে যাবে। কারণ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেটা পছন্দ করেছেন সেটা সে অপছন্দ করলো।”
আর তাই আক্বাইদের কিতাবে লিখা হয় যে,
اهانة السنة كفر.
অর্থঃ- “সুন্নতের
অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।”
সুতরাং বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, পাগড়ীর ন্যায় মহান সুন্নতের প্রতি
অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা নিঃসন্দেহে ঈমান হানীর কারণ। অথচ বান্দার
ইবাদত-বন্দেগী বা নেক আমল কবুলযোগ্য হওয়ার জন্যে প্রধানতম শর্ত হচ্ছে- আক্বীদা
শুদ্ধ থাকা অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা।
কারণ বিশুদ্ধ আক্বীদা আমল কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত। তাই মহান আল্লাহ্ পাক, পবিত্র
কালামে পাকে এরশাদ করেন,
والعصر ان الانسان لفى خسر الا الذين امنوا وعملوا الصالحات.
অর্থঃ- “আছরের
সময়ের কছম! সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে, একমাত্র তারা ছাড়া, যারা
ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে।” (সূরা আছর)
উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক মানব জাতির ধ্বংস হতে নাযাত পাওয়ার প্রথম উপায়
হিসাবে ঈমান (আক্বীদা)কে আখ্যায়িত করেছেন। অতঃপর আমলের প্রশ্ন। কারণ ঈমানহীন
ব্যক্তির নেক আমলের কোন মূল্যই আল্লাহ্ পাক-এর নিকট নেই। কাজেই বান্দার জন্যে
প্রধানতম ফরজ এই যে,
সে সর্ব প্রথম তার ঈমান বা আক্বীদাকে বিশুদ্ধ করবে অর্থাৎ
ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে,
আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ন্যায় আক্বীদা পোষণ করবে।
কেননা আক্বীদাগত কারণেই ইসলামে ৭২টি বাতিল ফেরকার আবির্ভাব হয়েছে। যদিও তাদের
কথাবার্তা, চাল-চলন, ছূরত-সীরত ইত্যাদি বাহ্যিক দৃষ্টিতে অনেক ক্ষেত্রেই মুসলমানের ন্যায় বা
ইসলামসম্মত, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তারা ইসলামের মৌলিক বিষয়ে ইসলাম তথা কুরআন শরীফ, হাদীস
শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার সম্পূর্ণ বিপরীত
আক্বীদা পোষণ করে থাকে,
যা সুস্পষ্ট কুফরী।
যেমন- ক্বদরিয়া সম্প্রদায়-
তারা তক্বদীরকে অবিশ্বাস করে, অথচ তক্বদীরের উপর ঈমান আনা ফরজ।
খারেজী সম্প্রদায়- তাদের
আক্বীদা হলো, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ কাফির। (নাউযুবিল্লাহ্), অথচ হযরত
ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের প্রতি সুধারণা পোষণ করা ঈমানের অঙ্গ বা ফরজ।
রাফেজী বা শিয়া সম্প্রদায়-
তাদের আক্বীদা মতে শিয়াদের ইমামদের মর্যাদা নবী-রাসূল আলাইহিস্ সালামগণের চেয়েও
বেশী, বর্তমান কুরআন শরীফ পরিবর্তীত, হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু ব্যতীত
খোলাফা-ই-রাশেদীনের সকলেই মুরতাদ। (নাউযুবিল্লাহ)
মুশাব্বিহা বা মুনাব্বিরা
সম্প্রদায়ঃ- তাদের আক্বীদা হলো, মহান আল্লাহ্ পাক “নূর বা আলো” মহান
আল্লাহ্ পাক-এর দেহ বা আকার-আকৃতি রয়েছে। অথচ মহান আল্লাহ্ পাক উল্লিখিত সকল বিষয়
থেকেই সম্পূর্ণ বেনিয়াজ ও পবিত্র।
অনুরূপ বর্তমান যামানার ভয়ঙ্কর ফিৎনা- কাদিয়ানী সম্প্রদায়, তাদের
আক্বীদা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবী নন, তাঁর পর আরো নবী পৃথিবীতে আসবে, তাই তারা
গোলাম কাদিয়ানীকে নবী বলে বিশ্বাস করে, যা অকাট্য কুফরী।
অথচ তারা প্রত্যেকেই বাহ্যিক দৃষ্টিতে নামাজ, রোযা, হজ্ব, যাকাতের
কথা বলে, টুপি, কোর্তা, পাগড়ী পরিধান করে। এতকিছুর পরও তারা আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া
মোতাবেক কাফির বা অমুসলিম। কারণ তাদের উপরোক্ত আক্বীদাসমূহ সম্পূর্ণই কুফরী।
আর এদের প্রসঙ্গেই হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে যে,
ستفترق امتى على ثلاث وسبعين فرقة كلهم فى النار الا ملة واحدة قيل من هى يارسول الله صلى الله عليه وسلم قال ما انا عليه واصحابى.
অর্থঃ- “অতি
শীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত সকল দল জাহান্নামে
যাবে। জিজ্ঞাসা করা হলো- যে দলটি (নাযাত পাবে) সেটা কোন দল? ইয়া
রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে (মত-পথের) উপর আমি আমার
ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ রয়েছি, তার উপর যাঁরা থাকবে, তাঁরাই
সেই নাযাত প্রাপ্ত দল।”
(আহ্মদ, আবু দাউদ, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ
ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইসলামের
যেকোন আমলই করা হোক না কেন এবং যে কেউই করুক না কেন, তা যদি আক্বীদা শুদ্ধ রেখে শরীয়ত
সম্মতভাবে করা হয়,
তবে তা গ্রহণযোগ্য। আর যদি আক্বীদার মধ্যে কোন ত্রুটি থাকে, তবে তা
অবশ্যই পরিত্যাজ্য। যেমন- খারেজী, রাফেজী, কাদিয়ানী ইত্যাদি সম্প্রদায় পরিত্যাজ্য ও বাতিল।
অতএব, প্রতিটি মুসলমানকেই পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে সঠিক বা বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করতে
হবে। কোন ভাবেই পাগড়ীকে অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবেনা।
দ্বিতীয়তঃ অনেকেই অজ্ঞতা
হেতু বলে থাকে যে,
পাগড়ী পরিধান করা দায়েমী সুন্নত নয় বরং শুধুমাত্র নামাজের
মধ্যে পরিধান করলেই চলে। আবার কেউ কেউ সুন্নত স্বীকার করলেও নামাজের মধ্যে পাগড়ী
পরিধান করার সুন্নত ও ফযীলতকে অস্বীকার করে থাকে।
অথচ তাদের উল্লিখিত বক্তব্য শুধু শরীয়ত বিরোধীই নয় বরং মনগড়া, অজ্ঞতামূলক
ও বিভ্রান্তিকরও বটে। কারণ পাগড়ী পরিধান করা নামাজের বাইরে ও ভিতরে উভয় অবস্থায়ই
সুন্নত ও ফযীলতের কারণ। যেমন, নামাজের বাইরে পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত হওয়ার ব্যাপারে
হাদীস শরীফের সহীহ্ কিতাব “তিরমিযী শরীফের”
হাশিয়ায় উল্লেখ আছে, ان لبس العمامة سنة.
অর্থঃ- “নিঃসন্দেহে
পাগড়ী পরিধান করা (দায়েমী) সুন্নত।”(হাশিয়ায়ে শামায়িলে তিরমিযী/৮)
আর নামাজের মধ্যে পাগড়ী
পরিধান করার ফযীলত সম্পর্কে উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে যে,
ان ركعتين مع العمامة افضل من سبعين ركعة بدونها.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই
পাগড়ী পরিধান করে দু’রাকায়াত নামাজ আদায় করা, পাগড়ী ছাড়া ৭০ রাকায়াত নামাজ আদায় করার চেয়ে অধিক
ফযীলতপূর্ণ।” (হাশিয়ায়ে শামায়িলে তিরমিযী/৮)
পাগড়ীর উল্লিখিত ফযীলত থেকে যেন উম্মত মাহরুম না হয় সে জন্যে সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উম্মতদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে,
فاعتموا فان العمامة سيماء الاسلام وهى الحاجز بين المسلمين والمشركين.
অর্থঃ- “তোমরা
পাগড়ী পরিধান কর। নিশ্চয়ই পাগড়ী ইসলামের নির্দশন এবং তা মুসলমান ও মুশরিকদের মাঝে
পার্থক্যকারী।” (যারকানী ৬ষ্ঠ জিঃ,
২৭২ পৃষ্ঠা, উমদাতুল ক্বারী, ২১ জিঃ, ৩০৮
পৃষ্ঠা, খাছায়িলুন্ নবী ৭৮ পৃষ্ঠা, তুহ্ফাতুল আহওয়াজী ৫ম জিঃ, ৪১২ পৃষ্ঠা)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো এরশাদ করেন যে,
عليكم بالعمائم فانها سيماء الملئكة.
অর্থঃ- “তোমাদের
জন্যে পাগড়ী অবধারিত,
কেননা তা ফেরেশ্তাগণের নিদর্শন স্বরূপ।” (মিশকাত
শরীফ/৩৩৭, ফাইদুল ক্বদীর ৪র্থ জিঃ, ৪৫৪ পৃষ্ঠা, শুয়াবুল ঈমান লিল বাইহাক্বী ৫ম
জিঃ, ১৭৬ পৃষ্ঠা)
অতএব, সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, পাগড়ী পরিধান করা যেরূপ দায়েমী
সুন্নত। তদ্রুপ অশেষ ফযীলত লাভেরও কারণ। নামাজের সময় যেরূপ পাগড়ী পরিধান করা
সুন্নত, নামাজের বাইরেও তদ্রুপ পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত। অর্থাৎ পাগড়ী পরিধান করা
হচ্ছে- “দায়েমী বা সার্বক্ষণিক সুন্নত।”
এছাড়াও পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য মাসিক আল বাইয়্যিনাতের
অগণিত পাঠকের পক্ষ হতে প্রেরিত অসংখ্য চিঠিও “পাগড়ী ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে” ফতওয়া
দেয়ার একটি কারণ।
কেননা মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফে এরশাদ করেন,
فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.
অর্থঃ- “যদি
তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা হক্কানী আলেমগণের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (সূরা
নহল/৪৩ ও আম্বিয়া/৭) অর্থাৎ তোমরা যারা জাননা বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা
যাঁরা জানেন, তাঁদের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।
অতএব, যাঁরা জানেন,
তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব হলো- প্রশ্নকারীর প্রশ্নের
শরীয়তসম্মত জাওয়াব প্রদান করা। কারণ যারা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের
জবাব প্রদান হতে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে। যেমন
আখেরী রসূল, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
من سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.
অর্থঃ- “যাকে
দ্বীন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়, জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা
গোপন করে অর্থাৎ জবাব না দেয়, তবে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুণের বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে
মাযাহ্, আহ্মদ, মিশকাত, বযলুল মাজহুদ,
উরফুশ্শাজী, তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারিফুস্
সুনান, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী,
তা’লীকুছ্ ছবীহ্,
আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরআতুল
মানাজীহ্ ইত্যাদি)
অন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “তার জ্বিহ¡া আগুণের কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হবে।”
কাজেই উপরোক্ত হাদীস শরীফে যে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে
বাঁচার জন্যে অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার লক্ষ্যে এবং বিদ্য়াতীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের
কারণে সাধারণ মুসলমানগণ যেন পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে কুফরী আক্বীদা পোষণ না করে
অর্থাৎ পাগড়ীর ন্যায় মহান সুন্নতকে যেন অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করে এবং
তাদের প্ররোচনায় যেন এ মহান সুন্নত ত্যাগ করতঃ অশেষ ফযীলত ও রেজায়ে মাওলা অর্জনে
ব্যর্থ না হয় বরং পাগড়ী সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয়ে সঠিক ও সহীহ্ আক্বীদা পোষণ করতে
পারে এবং পাগড়ীর ন্যায় অশেষ ফযীলতপূর্ণ সুন্নত পালন করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর
হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যেই “মসিক আল
বাইয়্যিনাতে” পাগড়ী মোবারক ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া প্রকাশ করা হলো।
এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে, আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব
নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের
সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খেলাফ বা
বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র
আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থঃ- “যে
ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মুহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ
পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।”
(আবূ দাউদ, তিরমিযী, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তুহ্ফাতুল
আহ্ওয়াজী, মায়ারিফুস্ সুনান,
মিশকাত, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহিরে
হক্ব, লুময়াত, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
বস্তুতঃ মাসিক আল
বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত
ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীস শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই “মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়” “পাগড়ী ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়
সম্পর্র্কে” সঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়সালা প্রদান করার মুল মাকছুদ হলো- সত্যান্বেষী বা
হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যেন প্রত্যেকেই পাগড়ী সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং
সুন্নত মোতাবেক আমল করে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক এত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মু’মিন অপর
মু’মিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত। কারণ হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে যে, المؤمن مرأة المؤمن.
অর্থঃ- “এক মু’মিন অপর
মু’মিনের জন্যে আয়না স্বরূপ।” (আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ)
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ওমর
ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু স্বীয় খিলাফতকালে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রীতিনীতি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে
সমবেত আনছার এবং মুহাজির রদিয়াল্লাহু আনহুমগণকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি আমি
দ্বীনের হুকুম-আহ্কামকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত বিরোধী কোন আদেশ দান করি, তবে
তোমরা কি করবে?” উপস্থিত লোকেরা নীরব রইল। হযরত ওমর ইব্নুল খত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু দ্বিতীয়
এবং তৃতীয়বার একই কথার পূণরাবৃত্তি করলেন। তখন হযরত বশীর ইব্নে সাঈদ রদিয়াল্লাহু
আনহু বললেন, “যদি আপনি এরূপ করেন,
তবে আমরা আপনাকে এরূপ সোজা করবো, যেরূপ
তীরকে সোজা করা হয়।”
এ কথা শুনে হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “তোমরাই
আমার প্রকৃত বন্ধু,
দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী।” (আওয়ারেফুল মা’আরেফ)
অতএব, পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে যারা ফিৎনা বা বিভ্রান্তিতে রয়েছে, তাদের সে
ফিৎনা ও বিভ্রান্তি নিরসন করা ও উপরোক্ত হাদীস শরীফের মেছদাক হওয়াই মাসিক আল
বাইয়্যিনাতে পাগড়ী সম্পর্কিত ফতওয়া প্রকাশ করার মূল কারণ।
বস্তুতঃ পাগড়ী পরিধান করা যদিও “সুন্নত” তবে
সুন্নতের অনুসরণই মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি
হাছিলের একমাত্র মাধ্যম। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ করেছেন,
قل انكنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفرلكم ذنوبكم والله غفور رحيم.
অর্থঃ- “ হে
হাবীব! (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলুন, যদি তোমরা মহান আল্লাহ্ পাক-এর
ভালবাসা চাও তবে আমাকে (আমার সুন্নতকে) অনুসরণ কর তবেই আল্লাহ্ পাক তোমাদেরকে
ভালবাসবেন এবং তোমাদের সকল গুণাহ্-খতা ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল ও
দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান/৩১)
আর উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় “হাদীসে কুদসীতে” এরশাদ
হয়েছে,
لايزال العبد يتقرب الى بالنوافل حتى احبه.
অর্থঃ- “মহান
আল্লাহ্ পাক বলেন,
আমার বান্দারা নফল অর্থাৎ সুন্নত বা মুস্তাহাব আমলের দ্বারা
আমার এতটুকু নৈকট্য বা সন্তষ্টি হাছিল করে যে, স্বয়ং আমি আল্লাহ্ পাক তাকে
মুহব্বত করি বা ভালবাসি।”
অতএব, বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, পাগড়ীর আমলের দ্বারা বান্দা অবশ্যই মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর
হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী লাভ করতে পারবে।
কারণ পাগড়ী আখেরী রাসূল,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতসমূহের মধ্যে একখানা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ
ও অশেষ ফযীলতপূর্ণ সুন্নত।
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
“ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান করা
দায়েমী সুন্নত হওয়ার বিস্তারিত নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য দলীল-আদিল্লাসমূহ
গত কয়েক সংখ্যার আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, খোলাফা-ই-রাশেদীন
রদিয়াল্লাহু আনহুমসহ সকল ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুম এবং চার মাযহাব ও চার
তরীক্বার ইমামসহ সকল আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম হুজুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতসমূহ বা আদেশ-নিষেধসমূহ
সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম বা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পালন করতেন। তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, ইমামাহ্
বা পাগড়ীর ক্ষেত্রেও তারা আখেরী রসূল, নূরে মুজাস্সাম, শাফিউল
মুজনেবীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই অনুসরণ-অনুকরণ করতেন। অর্থাৎ
হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুম ও হযরত আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি
আলাইহিমগণ দায়েমীভাবে পাগড়ী পরিধান করতেন।
অথচ আজকাল অনেকেই পীর,
ছুফী, দরবেশ, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সীর, আল্লামা, আশেকে রসূল কত কি দাবি করে। কিন্তু “পাগড়ী” দায়েমীভাবে
পরিধান করাতো দূরের কথাই নামাযের সময়ও পরিধান করেনা।
অথচ পাগড়ী পরিধান করা হচ্ছে, আখেরী নবী ও রসূল, দো’জাহানের বাদশাহ্, ফখরে
মওজুদাত, সরকারে কায়েনাত,
নূরে মুজাস্সাম হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর খাছ তথা দায়েমী সুন্নত। শুধু তাই নয় পূর্ববর্তী সকল নবী-রসূল
আলাইহিমুস্ সালামগণ সকলেই পাগড়ী পরিধান করেছেন এবং মহান আল্লাহ্ পাক-এর
ফেরেশ্তাগণও দায়েমীভাবে পাগড়ী পরিধান করে থাকেন।
অতএব, পাগড়ী পরিধান করা ফেরেশ্তাগণের
সুন্নত, সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিস্ সালামগণের সুন্নত, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল
আলামীন, নূরে মুজাস্সাম হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সুন্নত, হযরত
ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের সুন্নত ও হযরত আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি
আলাইহিমগণের সুন্নত। তাঁরা প্রত্যেকেই দায়িমী বা সার্বক্ষণিকভাবে অর্থাৎ অধিকাংশ
সময় পাগড়ী পরিধান করেন বা করতেন।
নিম্নে উল্লিখিত বিষয়ে পর্যায়ক্রমে ও বিস্তারিতভাবে নির্ভরযোগ্য ও অকাট্ট
দলীল-আদিল্লাসমূহ উল্লেখ করা হলো-
ইমামাহ্ বা পাগড়ী বাঁধা
নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের খাছ সুন্নত হওয়ার অকাট্য দলীল-আদিল্লাসমূহ
তাফসীর ও হাদীস শরীফের ৭৯টি নির্ভরযোগ্য ও অখন্ডনীয় দলীল দ্বারা সুস্পষ্ট ও
অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, ফেরেশ্তাগণ দায়েমী বা সার্বক্ষণিকভাবে পাগড়ী পরিধান করেন।
পাগড়ী যে শুধু ফেরেশ্তাগণেই পরিধান করেন তা নয় বরং মহান আল্লাহ্ পাক-এর সবচেয়ে
প্রিয় এবং তাঁর নিকট সবচেয়ে বেশী সম্মানের অধিকারী নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ
সকলেই পাগড়ী পরিধান করতেন। অর্থাৎ পাগড়ী পরিধান ছিল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের
খাছ আদত বা অভ্যাসগত আমল। যেমন, এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে,
العمامة سنة الرأس وعادة الانبياء والسادة- (عارضة الاحوذى شرح ترمذى الجلد السابع ص ২৪৩)
অর্থঃ- পাগড়ী মাথায় পরিধান
করা সুন্নত এবং সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণের বিশেষ অভ্যাসগত আমল।(আরিদাতুল
আহওয়াজী শরহে তিরমিযী ৭ম জিঃ ২৪৩ পৃষ্ঠা)
উল্লেখিত বর্ণনা দ্বারা সুষ্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, প্রথম
নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম হতে শুরু করে আমাদের নবী আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত সকল
নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান করেছেন। যার প্রমাণ স্বরূপ
নিম্নে গত সংখ্যায়র ন্যায় বিশেষ বিশেষ কয়েকজন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের পাগড়ী
সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
হযরত হারুন আলাইহিস্
সালাম-এর ইমামাহ্ বা পাগড়ী মোবারক
আল্লাহ্ পাক-এর নবী হযরত
হারুন আলাইহিস্ সালাম সম্পর্কে কুরআন শরীফে আল্লাহ্ পাক বলেন,
ان ياتيكم التابوت فيه سكينة من ربكم وبقية مما ترك ال موسى وال هارون. سورة البقرة- ২৪৮)
অর্থঃ- (তালুতের নেতৃত্বের
চিহ্ন হলো এই যে) “তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে একটা সিন্দুক আসবে। তোমাদের
সন্তুষ্টির জন্য। আর তাতে থাকবে হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম ও হযরত হারুন আলাইহিস্
সালাম এবং তাঁদের সন্তানগণের কিছু পরিত্যক্ত সামগ্রী। (সূরা বাক্বারা- ২৪৮)
উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে হযরত হারুন আলাইহিস্ সালাম যে পাগড়ী পরিধান করেছিলেন
তার প্রমাণ মিলে। নিম্নে এ বিষয়ে বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ সমূহের সুষ্পষ্ট
দলীল-আদিল্লাসমূহ পেশ করা হলো-
[৮৫]
(بقية) قال الثورى من الناس من يقول البقية قفيزا من فى طست من ذهب وعصا موسى وعمامة هاورن- (تفسير القرطبى الجلد الثانى ص ২৫০)
অর্থঃ- (بقية “তাদের
পরিত্যক্ত সামগ্রী হচ্ছে) হযরত সুফিয়ান সাউরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইমামগণের
মধ্যে কেউ কেউ বলে থাকেন যে, بقية
অর্থাৎ পরিত্যক্ত সামগ্রী হচ্ছে স্বর্ণের তৈরি প্লেটে নেয়ামতপূর্ণ খাদ্য
মান্নার কিছু অংশ,
হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম-এর লাঠি এবং হযরত হারুন আলাইহিস্
সালাম-এর পাগড়ী মোবারক। (তাফসীরুল কুরতুবী ২য় জিঃ ২৫০ পৃষ্ঠা)
[৮৬]
(وبقية مما ترك ال موسى وال هارون) هى رضاض الالواح وثياب موسى وعمامة هرون وطست من ذهب كانت تغسل به قلوب الانبياء- (تفسير روح المعانى الجلد الثانى ص ১৬৯)
অর্থঃ (بقية مما ترك ال موسى وال هارون পরিত্যক্ত সামগ্রী যা
হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম ও হযরত হারুন আলাইহিস্ সালাম এবং তাঁদের সন্তানগণ রেখে
গেছেন) সেগুলি হচ্ছে- লেখার জন্য কিছু চূর্ণ পাথর, হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর কাপড়, হযরত
হারুন আলাইহিস্ সালাম-এর পাগড়ী মোবারক। আর স্বর্ণের তৈরি প্লেট যার দ্বারা হযরত
নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের (মর্যাদার উদ্দেশ্যে) ক্বালব সমূহ ধৌত করা হত।
(তাফসীরু রুহুল মায়ানী ২য় জিঃ ১৬৯ পৃষ্টা)
[৮৭]
(وبقية مما ترك ال موسى وال هارون) هما رضاض الالواح وعصا موسى من اس الجنة وثيابه ونعلاه وعمامة هارون- (تفسير روح البيان الجلد الاول ص ৩৮৬)
অর্থঃ (بقية مما ترك ال موسى وال هارون) পরিত্যক্ত সামগ্রী গুলি হলো লেখার জন্য চূর্ণকৃত কিছু পাথর, জান্নাত
থেকে প্রদান কৃত হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর লাঠি, কাপড় ও জুতা মোবারক এবং হযরত
হারুন আলাইহিস্ সালাম-এর ইমামাহ্ বা পাগড়ী মোবারক। (তাফসীরু রুহুল বয়ান ১ম জিঃ ৩৮৬
পৃষ্ঠা)
[৮৮]
(وبقية مما ترك ال موسى وال هارون) وعصاه موسى ونعلاه وعمامة هارون وعصاه- (تفسير المظهرى الجلد الاول ص- ৩৪৯)
অর্থঃ- (بقية مما ترك ال موسى وال هارون অর্থাৎ তাতে ছিল হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম ও হারুন আলাইহিস্
সালামএবং তাঁদের সন্তানগণের পরিত্যক্ত সামগ্রী) যেমন, হযরত
মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর লাঠি ও জুতা মোবারক এবং হযরত হারুন আলাইহিস্ সালাম-এর
পাগড়ী ও লাঠি মোবারক। (তাফসীরুল মাযহারী ১ম জিঃ ৩৪৯ পৃষ্ঠা)
[৮৯]
(وبقية مما ترك ال موسى وال هارون) يعنى الرضاض من الالواح وقفيز من فى طست من ذهب وعصا موسى وعمامة هارون- (تفيير السمر قندى الجلد الاول ص ২১৯)
অর্থঃ- (بقية مما ترك ال موسى وال هارون অর্থাৎ তাতে থাকবে হযরত মুসা ও হযরত হারুন আলাইহিমাস্ সালাম এবং
তাঁদের সন্তানগণের কিছু পরিত্যক্ত সামগ্রী) অর্থাৎ লেখার জন্য কিছু চূর্ণ পাথর, স্বর্ণের
তৈরি প্লেটে অনুগ্রহের খাদ্য মান্নার কিছু অংশ, হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর লাঠি
ও হযরত হারুন আলাইহিস্ সালাম-এর পাগড়ী মোবারক। (তাফসীরুস্ সমরকান্দী ১ম জিঃ ২১৯
পৃষ্ঠা।)
[৯০]
(وبقية) هى رضاض الالواح وعصا موسى وثيابه وشئ من التورة ونعلا موسى وعمامة هارون عليهما السلام. (تفسير الماوردى الجلد الاول حاشية ৩২৮- ص২৪৮)
অর্থঃ- (بقية পরিত্যক্ত সমগ্রী হচ্ছে) লেখার জন্য কিছু চূর্ণ পাথর, হযরত
মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর লাঠি মোবারক ও কাপড়, তাওরাতের কিছু অংশ। হযরত মুসা
আলাইহিস্ সালাম-এর জুতা এবং হযরত হারুন আলাইহিস্ সালাম-এর পাগড়ী মোবারক। (তাফসীরুল
মাওয়ারদী ১ম জিঃ হাশিয়াহ নং ৩৩৮, পৃষ্ঠা-২৪৮)
হযরত মুসা আলাইহিস্
সালাম-এর ইমামাহ্ বা পাগড়ী মোবারক
আল্লাহ্ পাক-এর নবী ও রসূল হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম সম্পর্কে কুরআন শরীফে
আল্লাহ্ পাক বলেন,
ان ياتيكم التابوت فيه سكينة من ربكم وبقية مما ترك ال موسى وال هارون. سورة البقرة- ২৪৮)
অর্থঃ- (তালুতের নেতৃত্বের
চিহ্ন হলো এই যে) “তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে একটা সিন্দুক আসবে। তোমাদের
সন্তুষ্টির জন্য। আর তাতে থাকবে হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম ও হযরত হারুন আলাইহিস্
সালাম এবং তাঁদের সন্তানগণের কিছু পরিত্যক্ত সামগ্রী। (সূরা বাক্বারা- ২৪৮)
উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে
হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম যে পাগড়ী পরিধান করেছিলেন তার প্রমাণ মিলে। নিম্নে এ
বিষয়ে বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ সমূহের সুষ্পষ্ট দলীল-আদিল্লা পেশ করা হলো-
[৯১]
(فيه سكينة من ربكم وبقية مما ترك ال موسى وال هارون) وفى السكينة سبعة اقوال
.......... والسادس انها رضاض الالواح وقفيز من فى طست من ذهب وعصا موسى وعمامته- قاله مقاتل- (تفسير زاد المسير فى علم التفسير الجلد الاول ص ২৫৯)
অর্থঃ- (তালুতের নেতৃত্বের
নিদর্শন হল- তোমাদের কাছে একটা সিন্দুক আসবে তোমাদের পালন কর্তার পক্ষ থেকে
তোমাদের সন্তুষ্টির জন্য। আর তাতে থাকবে হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম ও হযরত হারুন
আলাইহিস্ সালাম এবং তাঁদের সন্তানগণের কিছু পরিত্যক্ত সামগ্রী।) এখানে فى السكينة (সিন্দুকের মধ্যে) এর ব্যাখ্যায় সাতটি মত রয়েছে, ষষ্ঠ মত
হলো সেখানে ছিল লেখার সামগ্রী চূর্ণপাথর, স্বর্ণের তৈরি প্লেটে নেয়ামতপূর্ণ
মান্না’র কিছু অংশ এবং হযরত হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর লাঠি ও ইমামাহ্ বা পাগড়ী
মোবারক। (তাফসীরু যাদুল মাসীর ফী ইল্মিত তাফসীর ১ম জিঃ ২৫৯ পৃষ্ঠা)
[৯২]
(وبقية مما ترك ال موسى وال هارون) هى رضاض الالواح وثياب موسى (تفسير روح المعانى الجلد الثانى ص ১৬৯)
অর্থঃ- (بقية مما ترك ال موسى وال هارون পরিত্যক্ত সামগ্রী যা
হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম ও হযরত হারুন আলাইহিস্ সালাম এবং তাঁদের সন্তাগণ রেখে
গেছেন) সেগুলি হচ্ছে- লেখার জন্য কিছু চূর্ণ পাথর, হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর কাপড়
(যার মধ্যে পাগড়ীও অন্তর্ভূক্ত ছিল। (তাফসীরু রুহুল মায়ানী ২য় জিঃ ১৬৯ পৃষ্টা)
[৯৩]
(وبقية مما ترك ال موسى وال هارون) هما رضاض الالواح وعصا موسى من اس الجنة وثيابه ونعلاه. (تفسير روح البيان الجلد الاول ص৩৮৬)
অর্থঃ- (بقية مما ترك ال موسى وال هارون পরিত্যক্ত সামগ্রী গুলি হলো লেখার জন্য চূর্ণকৃত কিছু পাথর, জান্নাত
থেকে প্রদান কৃত হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর লাঠি, তাঁর কাপড়(যার মধ্যে পাগড়ীও
অন্তর্ভূক্ত ছিল) ও জুতা মোবারক। (তাফসীরু রুহুল বয়ান ১ম জিঃ ৩৮৬ পৃষ্ঠা)
[৯৪]
(وبقية) هى رضاض الالواح وعصا موسى وثيابه شئ من التورة ونعلا موسى. (تفسير الماوردى الجلد الاول حاشية ৩৩৮- ص ২৪৮)
অর্থঃ- (بقية পরিত্যক্ত সমগ্রী হচ্ছে) লেখার জন্য কিছু চূর্ণ পাথর, হযরত
মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর লাঠি মোবারক ও কাপড় (যার মধ্যে পাগড়ীও অন্তর্ভূক্ত ছিল)
এবং তাওরাতের কিছু অংশ। তাছাড়াও হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর জুতা মোবারক।
(তাফসীরুল মাওয়ারদী ১ম জিঃ,
হাশিয়াহ্ নং ৩৩৮, পৃষ্ঠা ২৪৮)
হযরত ঈসা আলাইহিস্
সালাম-এর ইমামাহ্ বা পাগড়ী মোবারক
মহান আল্লাহ্ পাক হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফে বলেন,
وقولهم اناقتلنا المسيح عيسى ابن مريم رسول الله وما قتلوه وما صلبوه ولكن شبه لهم. (سورة النساء ১৫৭)
অর্থঃ- “আর তাদের
(ইহুদীদের) এ কথা বলার কারণে যে, আমরা হযরত মরিয়ম আলাইহাস্ সালাম-এর পুত্র হযরত ঈসা মসীহ্
আলাইহিস্ সালামকে হত্যা করেছি। যিনি আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছিলেন। অথচ না তারা তাঁকে
হত্যা করেছে। আর না শুলেতে চড়িয়েছে। বরং তারা সন্দেহে পতিত হয়েছিল।” (সূরা
নিসা/১৫৭)
উক্ত আয়াতাংশের ولكن شبه لهم. এর ব্যাখ্যায় তাফসীর গ্রন্থে হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম যে পাগড়ী
পরিধান করেছিলেন তা উল্লেখ আছে। যেমন, তাফসীর গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে যে,
[৯৫]
ইমামে তাফসীর হযরত দ্বহ্হাক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইহুদীরা
যখন হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামকে হত্যা করার জন্য বদ্ধ পরিকর হলো, তখন তাঁর
উক্ত সহচরবৃন্দ একস্থানে সমবেত হলেন। হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামও সেখানে উপস্থিত হলো, ইবলীস
শয়তান তখন রক্ত পিপাসু ইহুদী ঘাতকদেরকে হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর অবস্থানের
ঠিকানা অবগত করিয়ে দিল। চার হাজার ইহুদী দুরাচার একযোগে গৃহ অবরোধ করলো। তখন হযরত
ঈসা আলাইহিস্ সালাম স্বীয় উম্মত তথা
অনুচরদেরকে সম্বোধন করে বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ অত্র গৃহ হতে বহির্গত ও শহীদ হতে এবং
পরকালে বেহেস্তে আমার সাথী হতে প্রস্তুত আছো কি? জনৈক অনুচর শহীদ হওয়ার জন্য উঠে
দাঁড়ালেন। তখন
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থাৎ- হযরত ঈসা আলাইহিস্
সালাম নিজের জামা ও পাগড়ী মোবারক তাঁকে পরিধান করালেন। অতঃপর তাঁকে হযরত ঈসা
আলাইহিস্ সালাম-এর সাদৃশ্য করে দেয়া হলো। যখন তিনি গৃহ হতে বহির্গত হলেন, তখন
ইহুদীরা তাঁকে ঈসা আলাইহিস্ সালাম মনে করে বন্দী করে নিয়ে গেল এবং শুলে চড়িয়ে শহীদ
করলো। অপর দিকে হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামকে আল্লাহ্ পাক আসমানে উঠিয়ে নিলেন।
(তাফসীরু মায়ারিফুল কুরআন ২য় জিঃ ৬০১ পৃষ্ঠা)
উল্লেখ্য যে,
উপরালোচিত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ছাড়াও অপরাপর
সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ দায়িমী ভাবে পাগড়ী পরিধান করতেন। শুধু তাই নয়, ইমামাহ্
বা পাগড়ী পরিধান তাঁদের আদত বা অভ্যাসগত আমল হিসেবেও পরিগণিত ছিল। যার উজ্জ্বল, সুস্পষ্ট
এবং অকাট্য প্রমাণ তিরমিযী শরীফের বিশ্ব বিখ্যাত শরাহ “আরিদাতুল
আহওয়াজীর” ৭ম জিঃ ২৪৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত ইবারতটি। যাতে বলা হয়েছে,
العمامة سنة الرأس وعادة الانبياء والسادة-
অর্থঃ- “পাগড়ী
মাথায় পরিধান করা সুন্নত এবং সমস্ত আম্বিয়া (নবী-রসূল) আলাইহিমুস্ সালামগণের বিশেষ
অভ্যাসগত আমল।”
তাই এ বিষয়টি সুষ্পষ্ট যে আল্লাহ্ পাক ইমামাহ্ বা পাগড়ীর মধ্যে এতই ফযীলত
নিহিত রেখেছেন যে,
যার কারণে সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ দায়িমীভাবে
অভ্যাসগত আমল হিসেবে বরণ করে নিয়েছিলেন। আর তাই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ইমামাহ্ বা পাগড়ী দায়িমী বা
সার্বক্ষণিক পরিধান করবেন এটাইতো শতসিদ্ধ কথা। এজন্যই সমস্ত ইমাম মুজতাহিদ
রহমতুল্লহি আলাইহিমগণ ইহা দায়িমী সুন্নত হিসেবে জেনেছেন এবং ফতওয়া দিয়েছেন।
আমাদেরও উচিত পাগড়ীকে দায়িমী সুন্নত হিসেবে জেনে দায়িমীভাবে আমলে বাস্তবায়িত করার মাধ্যমে
অশেষ ফযীলতের পাশা-পাশি আল্লাহ্ পাক এবং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করা।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দায়িমী বা
সার্বক্ষণিকভাবে ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান করতেন
ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান করা সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের সুন্নতের
অন্তর্ভূক্ত। যা আমরা ইতিপূর্বে ৮০ থেকে ৯৫ নম্বর দলীল অর্থাৎ মোট ১৬ টি অকাট্য ও
নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে প্রমাণ করেছি। এখন আমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন,
রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ইমামাহ্ বা পাগড়ী দায়িমী বা সার্বক্ষণিক
ভাবে পরিধান করেছিলেন সে বিষয়টি অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে
প্রমাণ করব। (ইনশাআল্লাহ্)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন,
নূরে মুজাস্সাম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর ইমামাহ্ বা পাগড়ী মোবারকের নাম
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন হুজুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এমন দু’প্রকারের পাগড়ী ছিল যার একটির নাম
ছিল ‘সাহাব’ আর অপরটির নাম ছিল ‘ইকাব’। এ বিষয়ে হাদীস শরীফ এবং হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে,
[৯৬]
اعلم انه صلى الله عليه وسلم كانت له عمامة تسمى السحاب وكان يلبس تحتها القلانس. (جمع الوسائل شرح الثمائل الجلد الاول ص ২০৪)
অর্থঃ- “জেনে
রাখুন! নিশ্চয়ই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এক প্রকার পাগড়ী যার
নাম ‘সাহাব’ ছিল। আর তিনি তার নিচে টুপি পরিধান করতেন।” (জামউল ওয়াসাইল শরহে শামাইল ১ম জিঃ
২০৪ পৃষ্ঠা)
[৯৭-৯৮]
كانت له عمامة تسمى السحاب (احياء علوم الدين الجلد الثانى ص ৩৭৬- حاشية احياء علوم الدين الجلد الثانى ص- ৩৭৬)
অর্থঃ- “হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ‘সাহাব’ নামে এক
প্রকার পাগড়ী ছিল।”
(ইহইয়াউ উলুমুদ্দীন ২য় জিঃ ৩৭৬ পৃষ্ঠা, হাশিয়ায়ে
ইহইয়াউ উলুমুদ্দীন ২য় জিঃ ৩৭৬ পৃষ্ঠা)
[৯৯]
روى ابن سعد أن رأيته سوداء تسمى العقاب (جمع الوسائل شرح الشمائل الجلد الاول ص ২.৪
অর্থঃ- “হযরত
ইবনে সা’দ রদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই তিনি (ইবনে সা’দ
রদিয়াল্লাহু আনহু) তাঁকে (হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে) কালো পাগড়ী
পরিহিত অবস্থায় দেখেছেন,
যার নাম ছিল ‘ইকাব’।” (জামউল
ওয়াসাইল শরহে শামাইল ১ম জিঃ ২০৪ পৃষ্ঠা)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন,
হাবীবুল্লাহ, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর সাধারণ সময়ের ইমামাহ্ বা পাগড়ী মোবারক
[১০০]
عن عائشة رضى الله عنها ان رجلا اتى النبى صلى الله عليه وسلم على برذون وعليه عمامة طرفها بين كتفيه فسألت النبى صلى الله عليه وسلم عنه فقال رأيته ذالك جبريل عليه السلام- (مسند احمد بن حنبل الجلد السادس ص ১৪৮-১৫২)
অর্থঃ- “হযরত
আয়েশা রদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন। একদা একব্যক্তি নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর নিকট ‘বারজুন’ নামক স্থানে আসল,
যখন তাঁর মাথা মোবারকে পাগড়ী ছিল, যার
শামলা তাঁর দু’কাঁধের মাঝখানে ঝুলছিল। (হযরত আয়েশা রদিয়াল্লাহু আনহা বলেন) আমি এ বিষয়ে নবী
করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে বললেন আমি
অনুরুপ ভাবে (পাগড়ী পড়তে) হযরত জিব্রাইল আলাইহিস্ সালামকে দেখেছি।” (মুসনাদে
আহমদ ইবনে হাম্বল ৬ষ্ঠ জিঃ ১৪৮-১৫২ পৃষ্ঠা)
[১০১-১০২]
وكان عمامته صلى الله عليه وسلم فى اكثر الاحيان ثلاثة اذرع شرعية وفى الصلاة الخمس سبعة اذرع. (عرف الشاذى حاشية الترمذى الجلد الاول ص ৩.৪- الطبرانى الشريف)
অর্থঃ- “ হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাধারণভাবে ব্যবহৃত পাগড়ী ছিল তিন হাত।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে ব্যবহার করতেন সাত হাত পাগড়ী। (উরফুশ শাজী হাশিয়ায়ে তিরমিযী ১ম
জিঃ ৩০৪ পৃষ্ঠা, তাবরানী শরীফ)
[১০৩]
قال النووى رحمة الله عليه ان عمامة النبى صلى الله عليه وسلم فى اكثر الاوقات كانت ثلاثة اذرع. (فيض البارى الجلد الرابع ص ৩৭৫)
অর্থঃ- “হযরত
ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নিশ্চয়ই হযরত নবী করিম
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অধিকাংশ সময়ের (পাঁচ ওয়াক্ত জুমুয়া ও ঈদের
নামাযের সময় ছাড়া অন্য সময়ে পাগড়ী মোবারক ছিল তিন হাত। (ফাইদ্বুল বারী ৪র্থ জিঃ, ৩৭৫
পৃষ্ঠা)
[১০৪-১০৭]
ظاهر كلام المدخل ان عمامته كانت سبعة اذرع مطلقا من غير تقييد بالقصير والطويل. (عون المعبود الجلد الرابع ص ৯৬- تحفة الاجوذى الجلد الخامس ص ৪১৪- جمع الوسائل الجلد الاول ص ২.৭- مرقاة الجلد الثامن ص ২৫০)
অর্থঃ- “মাদখালে’ রয়েছে যে, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাগড়ী সাধারণতঃ সাত হাত ছিল। যা বেশী লম্বা
ও ছোট ছিল না।” (আউনুল মা’বুদ ৪র্থ জিঃ ৯৬ পৃষ্ঠা, তুহফাতুল আহওয়াজী ৫ম জিঃ ৪১৪ পৃষ্ঠা, জামউল
ওয়াসাইল ১ম জিঃ ২০৭ পৃষ্ঠা,
মিরকাত ৮ম জিঃ ২৫০ পৃষ্ঠা)
[১০৮-১১২]
من كلام النووى ذكر فيه انه كان له صلى الله عليه وسلم عمامة قصيرة وعمامة طويلة- وان القصير كانت سبعة اذرع والطويلة كانت اثنى عشر ذراعا. (عون المعبود الجلد الرابع ص ৯৬- تحفة الاحوذى الجلد الخامس ص ৪১৪- جمع الوسائل الجلد الاول ص ২.৭- مرقاة الجلد الثامن ص ২৫০- حاشية المشكوة ص ৩৭৪)
অর্থঃ- কালামুল নববী’র মধ্যে
রয়েছে, সাধারনভাবে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছোট ও দীর্ঘ (লম্বা)
উভয় প্রকার পাগড়ী ছিল। ছোট পাগড়ী ছিল সাত হাত এবং লম্বা পাগড়ী ছিল বার হাত দীর্ঘ।
(আউনুল মা’বুদ ৪র্থ জিঃ ৯৬পৃষ্ঠা,
তুহফাতুল আহওয়াজী ৫ম জিঃ ৪১৪পৃষ্ঠা, জামউল
ওয়াসাইল ১ম জিঃ ২০৭ পৃষ্ঠা,
মিরকাত ৮ম জিঃ ২৫০ পৃষ্ঠা, হাশিয়ায়ে মিশকাত ৩৭৪ পৃষ্ঠা)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে অধিকাংশ সময় সাত হাত গাগড়ী
মোবারক ব্যবহার করতেন আর জুমুয়া, ঈদ ও বিশেষ বিশেষ দিনে বার হাত পাগড়ী ব্যবহার করতেন।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, রাউফুর রাহীম,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুক্বীমী
অবস্থায় ইমামাহ্ বা পাগড়ী
[১১৩]
عن ابى امامة رضى الله عنه ان النبى صلى الله عليه واله وسلم كان يمسح على الخفين والعمامة ثلاثا فى السفر ويوما وليلة فى الحضر (نيل الاوطار الجلد الاول ص ১৮২)
অর্থঃ- হযরত আবু উমামা
রদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে
থাকাবস্থায় তিনদিন এবং মুক্বীমী অবস্থায় একদিন ও একরাত মোজা এবং পাগড়ীর উপর মাসেহ
করতেন। (নাইলুল আওতার ১ম জিঃ ১৮২ পৃষ্ঠা)
[১১৪]
قال السخاوى فى فتاوى رأيت من نسب لعائشة عمامته فى السفر بيضاء واللحضر سوداء. (الزرقانى الجلد السادس ص ২৫৭)
অর্থঃ- হযরত সাখাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ফতওয়ার কিতাবে লিখেছেন যে, আমি ঐ ব্যক্তিকে দেখেছি যিনি ঐ
বর্ণনাটিকে হযরত আয়িশা রদিয়াল্লাহু আনহা-এর দিকে সম্পৃক্ত করে বর্ণনা করেছেন যে, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সফর অবস্থায় সাদা পাগড়ী ছিল এবং মুক্বীমী
অবস্থায় কালো পাগড়ী ছিল। (যুরকানী ৬ষ্ঠ জিঃ ২৫৭ পৃষ্ঠা)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, সাইয়্যিদুল কাওনাইন ওয়াস সাক্বলাইন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর সফর অবস্থায় ইমামাহ্ বা পাগড়ী
[১১৫-১১৭]
عن عروة بن المغيرة بن شعبة رضى الله عنه عن ابيه قال تخلف رسول الله صلى الله عليه وسلم وتخلفت معه فلما قضى حاجته قال امعك ماء فاتيته بمطهرة فغسل كفيه ووجهه ثم ذهب يحسر عن ذراعيه فضاق كم الجبة فاخرج يده من تحت الجبة والقى الجبة على منكبيه وغسل ذراعيه ومسح بناصينه وعلى العمامة وعلى خفيه. (مسلم شريف الجلد الاول ص ১৩৪ نسائى شريف الجلد الاول ص ৩০، مشكوة شريف ص ৫৩)
অর্থঃ- হযরত উরওয়াহ ইবনে
মুগীরা ইবনে শু’বা রদিয়াল্লাহু আনহু তার পিতা মুগীরা রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন। তিনি
বলেন, (এক সফরে) রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পিছে রয়ে গেলেন। আমিও
তাঁর সাথে পিছনে পড়লাম। তিনি হাজত পূরণ করে বললেন, তোমার সাথে কি পানি আছে? আমি একটি
পানির পাত্র নিয়ে এলাম। তিনি উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত এবং মুখমন্ডল ধুলেন তারপর উভয়
হাত বের করতে চাইলেন,
কিন্তু জুব্বার আস্তিনে আটকে গেল। এতে জুব্বার নিচের দিক
দিয়ে তিনি হাত বের করলেন এবং জুব্বাটি কাঁধের উপর রেখে দিলেন। অতপর উভয় হাত ধুলেন, মাথার
সম্মুখভাগ এবং পাগড়ী ও উভয় মোজার উপর মাসেহ্ করলেন। (মুসলিম শরীফ ১ম জিঃ ১৩৪
পৃষ্ঠা, নাসায়ী শরীফ ১ম জিঃ ৩০ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ৫৩ পৃষ্ঠা)
[১১৮]
باب كيف المسح على العمامة عن ابن سيرين قال اخبرنى عمروبن وهب الثقفى قال سمعت المغيرة بن شعبة
........... قال كنا معه فى سفر فبرز كحاجته ثم جاء فتوضأ ومسح بناصيته وجانبى عمامته ومسح على الخفيه. (نسائى شريف الجلد الاول ص ৩০)
অর্থঃ- পাগড়ীর উপর মাসহের
পদ্বতি সম্পর্কে বাবঃ হযরত ইবনে সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার কাছে
খবর পৌঁছিয়েছেন হযরত আমর ইবনে ওহাব সাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি হযরত
মুগীরা ইবনে শু’বাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে শুনেছি, ... তিনি বলেছেন, (একদা
সফরে) আমরা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। তিনি তাঁর
হাজত পূরণ করে আসলেন এবং ওযু করলেন। তাঁর মাথা মোবারকের এক চতুর্থাংশ, পাগড়ীর
এক পার্শ্ব এবং মোজাদ্বয়ের উপর মাসেহ্ করলেন। (নাসায়ী শরীফ ১ম জিঃ ৩০ পৃষ্ঠা)
[১১৯]
عن ابى امامة رضى الله عنه ان النبى صلى الله عليه واله وسلم كان يمسح على الخفين والعمامة ثلاثا فى السفر ويوما وليلة فى الحضر. (نيل الاوطار الجلد الاول ص ১৮২)
অর্থঃ- হযরত আবু উমামা
রদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে
থাকাবস্থায় তিনদিন এবং মুক্বীমী অবস্থায় একদিন ও একরাত মোজা এবং পাগড়ীর উপর মাসেহ
করতেন। (নাইলুল আওতার ১ম জিঃ ১৮২ পৃষ্ঠা)
[১২০]
قال السخاوى فى فتاوى رأيت من نسب لعاشة عمامته فى السفر بيضاء. (الزرقانى الجلد السادس ص ২৫৭)
অর্থঃ- হযরত সাখাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ফতওয়ার কিতাবে লিখেছেন যে, আমি ঐ ব্যক্তিকে দেখেছি যিনি ঐ
বর্ণনাটিকে হযরত আয়িশা রদিয়াল্লাহু আনহা-এর দিকে সম্পৃক্ত করে বর্ণনা করেছেন যে, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সফরবর্তী কালের সাদা পাগড়ী ছিল। (যুরকানী
৬ষ্ঠ জিঃ ২৫৭ পৃষ্ঠা)
মাসয়ালা
হযরত আবূ উমামাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত
উপরোক্ত হাদীস শরীফ ও অন্যান্য হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে যে, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মোজা ও পাগড়ীর
উপর মসেহ্ করেছেন। কিন্তু আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া মোতাবেক মোজার উপর মসেহ্
করা জায়েয কিন্তু পাগড়ীর উপর মছেহ্ করা জায়েয নেই। কেননা হানাফীদের মতে উক্ত আমল
পরবর্তীতে মানসুফ হয়ে গেছে। তবে অন্যান্য মাযহাবের ইমামগণের মতে পাগড়ীর উপর মসেহ্
করাও জায়েয।” (অসমাপ্ত
0 Comments:
Post a Comment