নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার   পবিত্র ইল্মে গইব বিষয়ে  বাতিল ফিরক্বাদের মিথ্যাচারিতার জবাব

Image result for ইলমে গইবনূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
 পবিত্র ইল্মে গইব বিষয়ে
বাতিল ফিরক্বাদের 

মিথ্যাচারিতার জবাব





পি.ডি.এফ- https://drive.google.com/open?id=16Lpr3u2QaJ8P3uUz6u4VXOgQ42ZQYgsr

আওয়ালুল মুশাফ্ফা, আওয়ালিল মুসলিমীন, আওয়ালু মা ইয়ানশাক্কুল আরদ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (মহান আল্লাহ পাক প্রদত্ত্ব) ইল্মে গয়িব উনার অধিকারী ছিলেন।

মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ মুবারক করেন, “আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গায়েবের সংবাদ প্রচারে কৃপণতা করেননি।” (পবিত্র সূরা তাকভীর, পবিত্র আয়াত শরীফ ২৪)
অদৃশ্য সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করা আল্লাহ্ পাক উনার কাজ নয়, তবে আল্লাহ্ পাক উনার রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের মধ্যে যাঁকে ইচ্ছা মনোনীত করেন।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান, পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭৯)

মহান আল্লাহ্ পাক আরো বলেন, “মহান আল্লাহ্ পাক গায়েবের মালিক। তিনি গায়েবের বিষয় কারো কাছেই প্রকাশ করেননা। তবে তিনি যাঁকে রসূল হিসেবে মনোনীত করেছেন তিনি ব্যতীত।”
(পবিত্র সূরা জ্বিন, পবিত্র আয়াত শরীফ ২৭)

হাদীস শরীফে ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে, “হযরত আবূ মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল বিষয়ের সমস্ত ইল্ম দান করা হয়েছে।”(ত্ববরানী, কানযুল উম্মাল ৩১৯২৬)
উপরোক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা একথা স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন, “মহান আল্লাহ্ পাক উনার প্রদত্ত্ব ইল্মে গয়িব উনার অধিকারী।”
পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “আমি সমস্ত ইল্মসহ প্রেরীত হয়েছি।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত/৫১২)
পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক আমার জন্য পৃথিবীকে এমন করে দিয়েছেন যে, আমি পৃথিবীর পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিমপ্রান্ত পর্যন্ত সমস্ত কিছুই দেখি।” (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমীযী, আহমদ)
অন্য হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আইশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, আমি আল্লাহ্ পাককে উত্তম ছূরতে দেখেছি। তখন আল্লাহ্ পাক আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, মালায়ে আলা ফেরেশ্তাগণ কি নিয়ে তর্ক করছেন। আমি বললাম, আপনি ভাল জানেন। তখন আল্লাহ্ পাক উনার কুদরতি হাত আমার দুই কাঁধের মাঝে রাখলেন। তখন আমি উনার শীতলতা অনুভব করলাম। আর আমাকে আসমান এবং জমিনের সবকিছুই অবগত করানো হলো।”(সুবহানাল্লাহ) (দারেমী, তিরমিযী, মিশকাত শরীফ/৭০)         
          ফুতুহাতে আহমদীয়া” কিতাবে উল্লেখ আছে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইল্ম সমগ্র জগত তথা জ্বীন-ইনসান এবং ফেরেশ্তাগণের ব্যাপক ইল্মকেও পরিবেষ্টন করে রয়েছে। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক উনাকে সমগ্র জগত সম্পর্কে অবহিত করেছেন। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল আলিমদের ইল্ম উনাকে দান করেছেন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা ছিল ও যা হচ্ছে বা হবে সমস্ত বিষয় জানিয়ে দিয়েছেন। উনার এ ব্যাপক ইল্মের জন্য কুরআন শরীফের ইল্মই যথেষ্ট।”

          মহান আল্লাহ্ পাক উনার কালাম পাকে ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি এ কিতাবে (কুরআন শরীফে) কোন কিছুই বাদ দেইনি।”

          আফদ্বলুল ক্বোরা” কিতাবে উল্লেখ আছে, “মহান আল্লাহ্ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস্ সালামকে সমস্ত দুনিয়া সম্পর্কে অবহিত করেছেন। সুতরাং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল আলিমদের ইল্মকে, এবং যা কিছু হয়েছে ও যা কিছু হবে, সবকিছুই জানিয়ে দেয়া হয়েছে।”
         
কাসিদায়ে বুরদাতে” উল্লেখ করা হয়েছে, “সবাই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট থেকে ইল্ম আহরণ করে থাকেন। যেমন, কেউ সমুদ্র থেকে কলসি ভরে বা প্রবল বৃষ্টি ধারার ছিটে ফোটা থেকে পানি সংগ্রহ করে।”

এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে, “সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিস্তৃতি ও ব্যাপক ইল্ম ভান্ডার থেকে ইল্ম আহরন করেছেন এবং সকলেই উনার সে অঝোর বারি ধারার মত করুনা থেকে করুণাপ্রাপ্ত হয়েছেন। কেননা, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হলেন ফয়েযদাতা আর অন্যান্য নবীগণ হলেন ফয়েয গ্রহণকারী। মহান আল্লাহ্ পাক সর্বপ্রথম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রূহ্ মুবারক সৃষ্টি করে তাতে সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও পূর্বাপর প্রত্যেক বিষয়ের ইল্ম সঞ্চিত রাখেন। অতঃপর অন্যান্য রসূলগণ উনাদেরকে সৃষ্টি করেন। সুতরাং উনারা সবাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে ইল্ম সংগ্রহ করেছেন।” (কাছীদায়ে বুরদা)

 ইমাম কুসতালানি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “মহান আল্লাহ্ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গায়েব বা অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। (মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া)
         
মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া” কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, “এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মহান আল্লাহ্ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এর থেকেও অনেক বেশী বিষয়সমূহ সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তাঁকে আওয়াল আখির তথা পূর্বাপর সমস্ত ইল্ম দান করেছেন।”

ক্বাইউমে আউয়াল, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি “মকতুবাত শরীফ” উনার ১ম খন্ড ৩১০ নং মাকতুবে বলেছেন, “যে ইল্ম একমাত্র আল্লাহ্ পাক উনার জন্য বিশেষরূপে নির্ধারিত সে ইল্ম কেবলমাত্র বিশেষ রসূলগণ উনাদেরকে জানানো হয়।”
জামউন্নেহায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্ব বিষয়ে অবহিত না করে তার নবুওয়াতের প্রকাশ ঘটাননি।”
শরহে মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া” কিতাবে উল্লেখ আছে, “ইলমে গায়েব সম্পর্কীয় হাদীস শরীফ সমূহের ভাবার্থে বর্ণনাকারীগণ ঐক্যমত হয়েছেন এ অর্থে যে, গায়েব সম্পর্কে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবগত। আর এ মাসয়ালাটি ওই সব আয়াত শরীফের পরিপন্থী নয় যা দ্বারা ইহা বুঝা যায় যে, মহান আল্লাহ্ পাক ছাড়া আর কেউ গায়েব জানেন না। কেননা উক্ত আয়াতসমূহে যে বিষয়টির অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হয়েছে, তাহলো, মাধ্যম ছাড়া অর্জিত ইল্ম (স্বত্ত্বাগত ইল্ম) আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ্ পাক প্রদত্ত ইল্মের বলে গায়ব সম্পর্কে অবহিত হওয়ার ব্যাপারটি মহান আল্লাহ্ পাক উনার কালামের সে আয়াত শরীফ থেকে প্রমাণিত হয়। যেখানে বলা হয়েছে, “উনার পছন্দনীয় রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদেরকে অদৃশ্য বিষয়াদীর ইল্ম দান করা হয়।” (পবিত্র সূরা জ্বিন, পবিত্র আয়াত শরীফ ২৭)

উল্লেখ্য যে, নবী-রসুল আলাইহিমুস্ সালামগণতো অনেক দূরের কথা হক্কানী ওলীআল্লাহ্গণকেও আল্লাহ্ পাক ইল্মে গায়েব দান করেন। যেমন, হযরত খিযির আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি উনাকে ইল্মে লাদুন্নী দান করেছি।” (পবিত্র সূরা কাহাফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৫)

কিতাবুল এলাম” ও “সুল্লুল হুস্সাম” কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, “বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ তথা আউলিয়া-ই-কিরাম রহ্মতুল্লাহি আলাইহিমগণ কোন ঘটনা বা সিদ্ধান্তের ব্যাপারে গায়েবী ইল্ম জানেন বা অর্জন করেন, ইহা গ্রহণযোগ্য। যেমন, অনেক আউলিয়া-ই-কিরাম রহ্মতুল্লাহি আলাইহিমগণ কর্তৃক এমন ঘটনা সংগঠিত হয়েছে এবং তা প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।”

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনায় এটাই ছাবেত হলো যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহ্মতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহান আল্লাহ্ পাকই সর্ববিষয়ের ইল্ম দান করেছেন। কাজেই তিনি অবশ্যই ইল্মে গায়েবের অধিকারী ছিলেন। এমনকি পূর্ববর্তী সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ এবং হক্কানী ওলীআল্লাহ্গণ উনাদেরকেও মহান আল্লাহ্ পাক ইল্মে গায়েব দান করেন।
আয় আল্লাহ্ পাক ইলমে লাদুন্নী দ্বারা আমাদের সকলের ক্বলবকে কোষাদা করুন। (আমিন)

তাফসীরে ইলমে গইব
Image result for ইলমে গইবতাফসীরে ইলমে গইব

يعلم ما بين ايديهم و ما خلفهم و لا يحيطون بشيء من علمه إلا بما شاء

১) তিনি তাদের অগ্র ও পশ্চাত সম্পর্কে অবগত।তার ইলমের কোন অংশ কেউ অবগত হতে পারে না তবে যাকে তিনি ইচ্ছা করেন অবগত করান।

[সূরা বাকারা, আয়াত নং ২৫৫]

ইমাম বাইহাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি এই আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন,

ولا يحيطون بشيء من علمه إلا بما شاء أي لا يعلمون من علمه إلا ما شاء أن يعلمهم إياه بتعليمه

তার ইলমের কোন অংশ কেউ জানে না, তবে যাকে ইচ্ছা তিনি তা জানান অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা যাকে ইচ্ছা তাকে বিশেষ ইলম শিক্ষা দেন। [আল-আসমা ওয়াস সিফাত, ইমাম বাইহাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি . পৃ.১৪৩]


ইমাম ইবনে কাসীর রহমতুল্লাহি আলাইহি এই আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন,

وقوله : ( ولا يحيطون بشيء من علمه إلا بما شاء ) أي : لا يطلع أحد من علم الله على شيء إلا بما أعلمه الله عز وجل وأطلعه عليه

অর্থাৎ আল্লাহর ইলমের ব্যাপারে কেউ অবগত হতে পারে না, তবে আল্লাহ তায়ালা কাউকে যদি অবহিত করেন তাহলে সে অবগত হতে পারে।

২. আল্লাহ তায়ালা সূরা কাহাফে হযরত খাজির আলাইহিস সালাম এর সম্পর্কে বলেছেন,

فَوَجَدَا عَبْدًا مِنْ عِبَادِنَا آتَيْنَاهُ رَحْمَةً مِنْ عِنْدِنَا وَعَلَّمْنَاهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْمًا

অত:পর তারা উভয়ে আমার একজন নেককার বান্দার দেখা পেল, যাকে আমি আমার রহমত দান করেছি এবং আমার পক্ষ থেকে বিশেষ ইলম দান করেছি।[ সূরা কাহাফ, আয়াত নং ৬৫]

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,

عَالِمُ الْغَيْبِ فَلا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا إِلا مَنِ ارْتَضَى مِنْ رَسُولٍ فَإِنَّهُ يَسْلُكُ مِن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ رَصَدًا

অর্থাৎ তিনিই অদৃশ্য সম্পর্কে অবগত। অতএব তিনি তার গায়েবী বিষয় সম্পর্কে কাউকে অবহিত করেন না। তবে তার মনোনীত রাসূল ব্যতীত। সেক্ষেত্রে তিনি তার সামনে ও পেছনে প্রহরী নিয়োজিত করেন।

[সূরা জিন, আয়াত নং ২৬-২৭]

এ আয়াতের তাফসীরে ইবনে কাসীর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

وهكذا قال هاهنا: إنه يعلم الغيب والشهادة، وإنه لا يطلع أحد من خلقه على شيء من علمه إلا مما أطلعه تعالى عليه


এখানে তিনি বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা দৃশ্য-অদৃশ্য সব কিছু জানেন। কোন সৃষ্টি তার কোন ইলম সম্পর্কে জানতে পারে না তবে যাকে তিনি জানান, কেবল সেই জানতে পারে।

[তাফসীরে ইবনে কাসীর, খ.৬, পৃ.২৮৪]

ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
قال علماؤنا: أضاف سبحانه علم الغيب إلى نفسه في غيرما آية من كتابه إلا من أصطفى من عباده....فالله تعالى عنده علم الغيب وبيده الطرق الموصلة إليه لا يملكها إلا هو : فمن شاء إطلاعه عليها أطلعه , ومن شاء حجبه عنها حجبه

আমাদের আলেমগণ বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা কুরআনের অনেক আয়াতে গায়েব সম্পর্কিত জ্ঞানকে নিজের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন, তবে তার নির্বাচিত বান্দাদেরকে কিছু গায়েবের সংবাদ দিয়ে থাকেন। সুতরাং একমাত্র আল্লাহর নিকটই গায়েবের ইলম রয়েছে। গায়েবের ইলম পর্যন্ত পৌছার রাস্তা সম্পর্কে তিনিই পরিজ্ঞাত। তবে তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে গায়েব সম্পর্কে অবহিত করেন, যাকে ইচ্ছা তার থেকে গোপন রাখেন। [তাফসীরে কুরতুবী খ.৭, পৃ.২]

ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ফাতহুল বারীতে লিখেছেন,

وأما ما ثبت بنص القرآن أن عيسى عليه السلام قال أنه يخبرهم بما يأكلون وما يدخرون وأن يوسف قال إنه ينبئهم بتأويل الطعام قبل أن يأتي ذلك مما ظهر من المعجزات والكرامات : فكل ذلك يمكن أن يستفاد من الاستثناء في قوله تعالى ( إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِن رَّسُولٍ ) ,فإنه يقتضي إطلاع الرسول على بعض الغيب , والولي التابع للرسول عن الرسول يأخذ وبه يكرم , والفرق بينهما أن الرسول يطلع على ذلك بأنواع الوحي كلها , والولي لا يطلع على ذلك الا بمنام أو إلهام , والله اعلم

কুরআনের স্পষ্ট নস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে হযরত ইসা আ. তারা কী খায় ও সন্চয় করে সে সম্পর্কে বলেছেন এবং হযরত ইউসুফ আ. তাদের খাদ্যের ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, গায়েব সংক্রান্ত এ বিষয়গুলো অবহিত হওয়ার বিষয়টি পবিত্র কুরআনের এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, “ তিনিই গায়েব সম্পর্কে পরিজ্ঞাত। তিনি কারও সম্মুখে গায়েব প্রকাশ করেন না, তবে তার নির্বাচিত রাসূল ব্যতীত।” কেননা, এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, রাসূলগণ কিছু গায়েব সম্পর্কে অবহিত। আর রাসূলের অনুসারী ওলীগণ তাদের কারণেই কিছু গায়েব সম্পর্কে অবহিত হন এবং তাদের মাধ্যমেই সম্মানিত হন। রাসূল ও ওলীর কিছু গায়েব সম্পর্কে অবহিত হওয়ার ক্ষেত্রে পার্থক্য হলো, রাসূল ওহী পাঠানোর সবগুলো পদ্ধতির মাধ্যমে গায়েব সম্পর্কে অবহিত হন, আর ওলী শুধু স্বপ্ন বা ইলহামের মাধ্যমে গায়েব সম্পর্কে অবহিত হন।” [ফাতহুল বারী, খ.৮, পৃ.৫১৪]

কাযী শাওকানী তাফসীরে ফাতহুল কাদীরে লিখেছেন,

إن الله سبحانه قد يطلع بعض عبيده على بعض غيبه

আল্লাহ তায়ালা কোন কোন বান্দাকে কিছু কিছু গায়েব সম্পর্কে অবহিত করে থাকেন।[ফাতহুল কাদীর, কাযী শাওকানী, খ.৩, পৃ.২০, শামেলা]

يخصص الرسول بالملك في اطلاعه على الغيب، والأولياء يقع لهم ذلك بالإلهام


ফেরেশতাদের মাধ্যমে গায়েব অবহিত হওয়ার বিষয়টি রাসুলগণের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ওলীগণ কিছু কিছু গায়েব সম্পর্কে অবহিত হয়ে থাকেন ইলহামের মাধ্যমে।

[তাফসীরে বায়যাবী, খ.১৩, পৃ.৩৬৪]

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন ‘ আল্লামাকা মা লাম তাকুন তা’লাম ” আর্থাৎ, তিনি আপনাকে এমন জিনিস শিক্ষা দিয়েছেন যা আপনি জানতেন না “
( সুরা নিসা আয়াত ১১৩)

এ আয়াতে ব্যাখা করতে গিয়ে প্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থ “জালালাইন শরীফে” বলা হয়েছে ” আউযয়ু মিনাল আহকামে ওয়াল গাইব ” অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) কে শরীয়তের যাবতীয় হূকুম ও গায়েব সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছেন।

তাফসীরে সাভার ৪র্থ খন্ডে ২৭৫ পৃষ্টা রয়েছে,
“ইনণাহু(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) লাম ইয়াখ রুজু মিনাদ দুনিয়া হাত্বা আ’লামাহু ল্লাহু বি জামইহি মুগি বাতিদ দুনিয়া ওয়াল আখেরাহ “
অর্থাৎ, আল্লাহর দুনিয়া এবং আখেরাতের সমস্ত গায়েব না জানানো পর্যন্ত রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) দুনিয়া থেকে ইন্তেকাল করেন নি ।

তাফসিরে খায়েন ৪র্থ পারায় রয়েছে ;
” মা কানাল্লাহু লি ইয়াজ রাল মু’মিনিনা আলা মা ানতুম আলাইকুম “
উক্ত আয়াতের ব্যখ্যাু উল্লেখ করা হয়েছে – রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) এরশাদ করেন , আমার কাছে আমর উম্মতকে তাদের নিজ নিজ মাটির আকৃতিতে পেশ করা হয়েছে যেমন ভাবে আদম (আলাহিস সালাম) এর কাছে পেশ করা হয়েছিল । আমাকে জানানো হয়েছে , কে আমার উপর ঈমান আনবে ? কে আমাকে অস্বিকার করবে ? যখন এ খবর মুনাফিকদের কাছে পোছলো তখন তারা ঠাট্টা করে বললো -কে তাঁর উপর ঈমান আনবে আর কে তাকে অস্বিকার করবে তাদের কে তাদের জন্মের পুর্বেই মুহাম্মদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) জানতেন বলে বলেন । অথচ আমরা তাঁর সাথেই আছি – কিন্তু আমাদেরকে চিন্তে পারেন নি । এ খবর যখন রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) এর নিকট পৌছলো । তখন তিনি মিম্বরের উপরে দাড়ালেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করে ইরশাদ করলেন,

“( কালা মা বালআকওয়ামে তায়ানু ফি ইলমি লা তাসআলু নি আন শাঈন ফিমা বাইনাকুম ওয়া বাইনাস সাআতি ইল্লা আনবাইতুকুম বিহ্‌)
অর্থাৎ, এসব লোকেদের ( মুনাফিকদের) কি যে হলো আমার জ্ঞান নি্যে তারা বিরূপ সমালোচনা করছে । তোমরা এখন থেকে কেয়ামত পর্যন্ত যে কোন বিষয় সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসা করো আমি অবশ্যই উহা তোমাদের কে বলে দিবো”
(তাফসীরে খায়েন )



ইলমে গইব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নবুয়তের অন্যতম দলীল ।
Image result for ইলমে গাইবইলমে গইব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নবুয়তের অন্যতম দলীল ।
১. হযরত আমর ইবনে আখতাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্নিত , তিনি বলেন , হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামাজ পড়লেন । অতঃপর মিম্বরে আরোহন করলেন এবং আমাদের উদ্দেশে দীর্ঘ বক্তব্য প্রদান করলেন ; এমন কি যোহরের নামায পড়ালেন ।অতঃপর আবারো আরোহন করলেন মিম্বরে , আর বক্তব্য দেওয়া শুরু করলেন ,এমন কি আসরের নামাযের সময় উপস্থিত হল । অতঃপর মিম্বরে হতে নেমে আসরও পড়লেন । পুনরায় মিম্বরে আরোহন করে বক্তব্য দিতে দিতএ সুর্য অস্তমিত হয়ে গেল । সে দিন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতীতে যা কিছু এবং ভবিষ্যতে যা কিছু হবে সকল বিষয়ে আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন । আমাদের মধ্যে যাঁদের স্মরণশক্তি অধিক তাঁরা সেসব (অদৃশ্য) সংবাদ বেশী মনে রাখতে পেরেছেন ।

( সুত্র : বুখারী শরীফ হাদিস নম্বর ৬২৩০ কিতাবুল কদর , মুসলিম শরিফ হাদিস নম্বর ২৮৯১ কিতাবুল ফিতান , তোরমিযী শরীফ হাদিস নম্বর ২১৯১ কিতাবুল ফিতান , আবু দাউদ শরীফ হাদিস নম্বর ৪২৮ কিতাবুল ফিতাম , মিসকাতুল মাসাবিহ : কিটাবুল ফিটাম ৪৬১ পৃষ্ঠা )

২.পবিত্র ক্বোরআনের ভাষায় বলা যায় - নবীপাক সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য মহান আল্লাহ অজানা কিছুই রাখেন নি ; হোকনা তা অতীত কিংবা ভবিষ্যত । কিয়ামত পরবর্তি বেহেশত-দোযখের সংবাদ পর্যন্ত যেখানে লুকায়ে থাকতে পারেনি ।তাই তো তিনি উপস্থিত আনেক লোকের মনের খবর বলে দিয়েছেন , মুনাফিক্বেদের অন্তরে আবৃত অন্ধকার কুঠুরিতে লালিত কপটতা প্রকাশ করে মসজিদ থেকে তাদের অনেককে বের করে দিয়েছেন । এমন কি অনেক সাহাবীর আবেদন পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বংশ তালিকা নিখুঁত ভাবে বলে দিয়েছেন এ গুলো কি প্রমান করে না নবীপাকের ইলমে গায়েব বিতর্কের উর্ধ্ধে একটি স্বীকৃত বিষয় ?

`৩.হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাল্যবন্ধু নয় কেবল সারাজীবনের একান্ত সঙ্গী ইসলামের প্রথম খলিফা এবং নবীগনের পর যিনি শ্রেষ্ট মানুষ , সিদ্দিকে আকবর হযরত আবু বকর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইসলাম গ্রহনের প্রক্কালে নবী করীমের কাছে তাঁর নুবুয়তের পক্ষে দলিল কি আছে জানতে চাইলে নবী করীম উত্তর দিতে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেলেন নি বরং দু'শ ভাগ দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে বলে দিয়েছিলেন কেন গত রাতে তুমি যে স্বপ্ন দেখেছ , আকাশের চন্দ্র-সুর্য তোমার কোলে এসে হাজির । আর সিরিয়া যাত্রাপথে সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যাকারী তোমাকে যা কিছু বলেছে তাইতো আমার নুবুয়তের পক্ষে দলিল ।
এমন আশ্চর্যজনক তথ্যপ্রদানের অবস্থ হচ্ছে সিদ্দিক-ই-আকবরের স্তম্ভিত ! তিনি শতভাগ নিশ্চিত হলেন যে , এই অদৃশ্যজ্ঞানের সংবাদদাতা (নবী) কষ্মিণকালেও মিথ্যুক হতে পরেন না ।
৪.তদ্রুপ হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর কথা শোনা যাক । বদরের যুদ্ধের বন্দিদের কে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ হলে অন্য বন্দীরা যথারীতি মুক্তিপণ আদায়ে ব্যস্ত । এ দিকে চাচা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও ঐ যুদ্ধবন্দীদের একজন । তিনি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাছে এসে আবেদন করলেন ইয়া হাবিবাল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আমি তো গরিব মানুষ ! মুক্তিপন দেয়ার মত আমার কাছে কোন সম্পদ নেই ।উত্তরে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন " কেন চাচা ! আপনি যুদ্ধে আসার পুর্বে আমার চাচীর কাছে যে স্বর্নালন্কার লুকিয়ে রেখে এসেছেন সে গুলো কোথায় ? হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহূর সে গোপন সংবাদ তো দুনিয়ার বুকে অন্য কেউ জানার কথা নয় ! কিন্তূ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিভাবে সুস্পস্টভাবে বলে দিলেন । তা রীতিমত বিষ্ময়ের ! না! এ ধরনের অদৃশ্য সংবাদদাতা কোনদিন মিথ্যুক হতে পারেন না । তাঁর কপালও চমকে উঠল । হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাতে নিজেকে সঁ'পে দিয়ে বলে উঠলেন হে আল্লাহর রাসুল ! আমাকে ইসলামের কালেমা শরীফ পড়িয়ে মুসলমান বানীয়ে দিন । আমি এতদিন ছিলাম গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত। এবার আলোতে আসতে চাই । নবীজি তাঁকে কালেমা পড়িয়ে নিজ হাতে বায়াত করে মুসলমান বানালেন । এ ভাবে একজন জাহান্নামী মুহুর্তে বেহেশতী হয়ে গেলেন । শুধু কি তাই ? নবীর পরশে শ্রেষ্ট সোনার মানুষে রুপান্তরিত হলেন ।
এ ভাবে হাজারো দৃষ্টান্ত রয়েছে যদ্বারা স্পস্ট প্রমাণিত হয় -মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবীব কে ইলমে গায়েব দান করেছেন ।
এখন আরো কয়েকটি সহিহ হাদীসের উদ্ধৃতি পেশ করব যাতে সহীহ হাদীস ছাড়া অন্য কিছূ মানিনা বলে যারা গলার পানি শুকিয়ে ফেলে তারা বিষয়েটি শজে বুঝতে পেরে হিদায়াত লাভ করে ।

৫.হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত , তিনি বলেন একদা হুজুর নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহিস সালাম আমাদের সামনে দন্ডায়মান হলেন অতঃপর সৃষ্টিজগতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তথা বেহেশত বাসীরা বেহেশতে এবং দোযখনাসীরা দোযখে প্রবেশ করা পর্যন্ত সবকিছু আমাদের সামনে বলে দিলেন । আমাদের মধ্যে যারা মুখস্ত রাখতে পেরেছে তারা মুখস্ত রেখেছে ; আর যারা ভুলে যাবার তারা ভুলে গেছে ।
[ বুখারী : হাদীস নং ৩০২০ : কিতাবু বাডয়িল খালক্ব ]

৬.হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত । তিনি বলেন রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সামনে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করলেন- সে দিন থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে টার কোন বিষয়েই তাঁর বক্তব্যে বাদ দেননি । শ্রোতাদের মধ্যে যে মুখস্থ রাখার সে মুখস্ত রেখেছে আর যে ভুলে যাবা সে ভুলে গেছে ।
( বুখারী শরীফ হাদীস নং ৬২৩০ কিতাবুল কদর । মুসলিম শরীফ হা:নং২৮৯১ কিতাবুল ফিতন )

৭.হযরত আনাস বিন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আহু হতে াপর এক হাদীস শরিফে দেখা যায় । তিনি বলেন একদা নবীপাক সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে তাশরীফ আনলেন তখন সয়র্য পশ্চিমাকাশে দিকে ঝুঁকে পড়েছিল ( অর্থাৎ যোহরের নামাযের সময় হয়ে গিয়েছিল ) অতঃপর নবী করীম যোহরের মানায পড়লেন আর সালাম ফিরানোর পর মিম্বরে আরোহন করে ক্বিয়ামতের আলোচনা রাখলেন এবং ক্বিয়ামতের পুর্বেকার কতিপয় বড় বড় ঘটনা বর্ননা দিলেন আর উপস্থিত সাহাবিদেরকে সম্বোধন করে বললেন , খোদার কসম তোমরা আমার কাছে যা কিছু জানতে চাইবে আমি এই মজলিসেই সব প্রশ্নের উত্তর দেব ।
হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন হুজুরের বানীর এমন দৃঢ়তা দেখে আনসারী সাহাবাদের মধ্যে আনন্দের কান্নার রোল বয়ে গেলো । আর নবীপাক বারবার বলে যাচ্ছেন - তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর , প্রশ্ন কর । অতঃপর এক ব্যক্তি দাড়িয়ে প্রশ্ন করল - হে আল্লাহর রাসুল ! পরকালে আমার ঠিকানা কোথায় হবে ? নবীপাকে বললেন জাহান্নাম । অথপর আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফা বললেন -ইয়া রাসুল লাল্লাহ ! আমার পিতা কে ? নবী করীম বললেন - তোমার পিতা হুযাফা । নবীপাক আবার ও জোর তাগিদ দিয়ে বললেন , তোমরা প্রশ্ন কর , প্রশ্ন কর ।
অথপর ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম বরাবর সামনে গিয়ে বসলেন আর বললেন -আমরা সন্তস্ট আল্লাহ কে রব হিসাবে পেয়ে , ইসলাম কে ড্বীন হিসাবে আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে রাসুল হিসেবে পেয়ে । তিনি এসব কথা বলার সময় নবী করীম চুপ রইলেন । অতঃপর বললেন -সেই সত্তার কসম ! যার হাতে আমার প্রান , আমার এ দেয়ালের সামনে এই মাত্র বেহেসত ও দোযখ হাজির করা হয়েছে , যখন আমি নামায পড়ছিলাম , আজকের মত কোন ভাল-মন্দকেও দেখিনি ।
(সুত্র বুখারী শরীফ হাদীস নং৬৮৬৪ কিতাবুল ই'তিসাম , বিল কিতাবে ওয়াস সুন্নাহ :, মুসলিম শরীফ হাদিস নং ২৩৫৯ )
এ ভাবে অসংখ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় রাসুলে আকরম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়া ষাল্লাম ইলমে গায়েবের অধিকারী ছিলেন । অবশ্যই তা আল্লাহ প্রদত্ত ।

৮.আর সত্তাগত আলিমুল গায়েব হলেন একমাত্র আল্লাহ । আর আল্লাহর রাসুলের ইলমে গায়েব আল্লাহ্‌ প্রদত্ত । যেমন এ পসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে -
'' মা কানাল্লাহু লি উতলিয়াকুম আলাল গাইবে ওয়া কিন নাল্লাহা ইজতাবিয়ু মির রুসুলিহু মাইয়া সায়ু ''
অর্থাৎ হে সাধারাণ লোকগন ! আল্লাহ তা'আলার শান নয় যে , তিনি তোমাদেরকে ইলমে গায়েব দান করবেন , তবে হ্যাঁ রাসুলগনের মধ্য হতে তিনি যাকে চান তাকে অদৃশ্যজ্ঞানের জন্য মনোনীত করেন ।( সুরা আলইমরান ১৭৯)
রসুলগণের মধ্য হতে যদি আল্লাহ পাক কাউকে নির্বাচিত করেন। তাহলে সর্বপ্রথমে কাকে নির্বাচিত করবেন টা সহজেই অনুমেয় ।
আরেক জায়গায় ইরশাদ হয়েছে ;
তিনি স্বীয় গায়েবের বিষয়ে কাউকে ক্ষমতাবান করেন না । কিন্তূ রাসুলদের মধ্য যার উপর তিনি সন্তষ্ট হন ( তাকেই ক্ষমতা বান করেন )
(সুরা জিন- আয়াত ২৬-২৭ )

৯.আল্লাহ তায়ালা ইরশদ করেছেন ' আল্লামাকা মা লাম তাকুন তা'আলাম " আর্থাৎ ' তিনি আপনাকে এমন জিনিস শিক্ষা দিয়েছেন যা আপনি জানতেন না "
( সুরা নিসা আয়াত ১১৩)
এ আয়াতে ব্যাখা করতে গিয়ে প্রসিদ্ধ গ্রন্থ জালালাইন শরীফে বলা হয়েছে " আউযয়ু মিনাল আহকামে ওয়াল গাইব '' অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহিস সালাম কে শরীয়তের যাবতিয় হূকুম ও গায়েব সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছেন ।
উপরে বর্নিত আয়াত এবনহ জালালাইন শরীফের ব্যাখ্যা দ্বারা বুঝা গেল
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনন তানন হাবীব সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহিস সালাম কে ইলমে গায়েব জানাইয়াছেন । তাই আমরা বলি রাসুল সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহিস সালাম ইলমে গায়েব জানেন । অসংখ্য হাদিসে মাধ্যমে জানা যায় যে রাসুল সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহিস সালাম স্পস্ট বলে দিয়েছেন -কে কখন মৃত্যুবরন করবে ? কোন জায়গায় কে মারা যাবে এবং কার গর্ভে ছেলে সন্তান অথবা মেয়ে সন্তান রয়েছে ইত্যাদি।
যদি রাসুল সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহিস সালাম এ সব বিষয়ে গয়েব না জানতেন , তাহলে সম্স্ত গয়েবের সংবাদ কি ভাবে দিলেন ?
৯.তাফসীরে সাভার ৪র্থ খন্ডে ২৭৫ পৃষ্টা রয়েছে
"ইনণাহু সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহিস সালাম লাম ইয়াখ রুজু মিনাদ দুনিয়া হাত্বা আ'লামাহু ল্লাহু বি জামইহি মুগি বাতিদ দুনিয়া ওয়াল আখেরাহ "
অর্থাৎ আল্লাহর দুনিয়া এবং আখেরাতের সমস্ত গায়েব না জানানো পর্যন্ত রাসুল সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহিস সালাম দুনিয়া থেকে ইনতেকাল করেন নি ।
তাফসিরে খায়েন ৪র্থ পারায় রয়েছে ;
" মা কানা ল্লাহু লি ইয়াজ রাল মুক মিনিনা আলা মা ানতুম আলাইকুম "
উক্ত আয়াতের ব্যখ্যাু উল্লেখ করা হয়েছে - রাসুল সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহিস সালাম এরশাদ করেন , আমার কাছে আমর উম্মতকে তাদের নিজ নিজ মাটীর আকৃতিতে পেশ করা হয়েছে যেমন ভাবে আদম আলািহিস সালাম এর কাছে পেশ করা হয়েছিল । আমাকে জানানো হয়েছে , কে আমার উপর ঈমান আনবে ? কে আমাকে অস্বিকার করবে ? যখন এ খবর মুনাফিকদের কাছে পোছলো তখন তারা ঠাট্টা করে বললো -কে তাঁর উপর ঈমান আনবে আর কে তাকে অস্বিকার করবে তাদের কে তাদের জন্মের পুর্বেই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহিস সালাম জানতেন বলে বলেন । অথচ আমরা তাঁর সাথেই আছি - কিন্তু আমাদেরকে চিন্তে পারেন নি । এ খবর যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহিস সালাম -এর নিকট পৌছলো । তখন তিনি মিম্বরের উপরে দাড়ালেন এবং আল্লাহর প্রসংসা করে ইরশাদ করলেন
(" কালা মা বালআকওয়ামে তায়ানু ফি ইলমি লা তাসআলু নি আন শাঈন ফিমা বাইনাকুম ওয়া বাইনাস সাআতি ইল্লা আনবাইতুকুম বিহ্‌")
অর্থাৎ " এসব লোকেদের ( মুনাফিকদের) কি যে হলো আমার জ্ঞান নি্যে তারা বিরূপ সমালোচনা করছে । তোমরা এখন থেকে কেয়ামত পর্যন্ত যে কোন বিষয় সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসা করো আমি াবশ্যই উহা তোমাদের কে বলে দিবো"
(তাফসীরে খয়েন )


বুখারী শরীফের ' বাদ্‌য়ু খালকে " শীর্ষক আলোচনায় ও মিশকাত শরীফের বাদয়ু খলকে ওয়া জিকরুল আমবিয়া শীর্ষক াধ্যায়ে হযরত উমর ফারূক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহূ থেকে বর্নিত অর্থাৎ হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন -- " রাসুল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আনহু এক জায়গায় আমাদের সাথে অবস্থান করছিলেন । সে খানে তিনি আমাদের সৃষ্টির সুচনা তজেকে সংবাদ দিচ্ছিলেন - এমন কি বেহেস্তবাসী দোযখবাসী নিজ নিজ ঠিকানায় যাওয়ার াবধি পরিব্যাপ্ত যাবতিয় আবস্থা ও ঘটনা বলী প্ড়দান করেন ,যিনি ওসব স্মরণ রাখতে পেরেছেন তিনিতো স্মরণ রেখেছেন ; আর যিনি রাখতে পারেন নি তিনি ভুলে গেছেন । ( মেশকাত শরীফ ৫০৬)
মেশকাত শরিফের আল-ফিতনা অধ্যায়ে বুখারী ও মুসলিম শরীফ বরাত দিয়ে হযরত হুয়াইফা রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্নিত হয়েছে
অনুবাদ : রাসুল সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহিস সালাম সে স্থানে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে সব কিছুর খবর দিয়েছেন । কোন কিছুই বাদ দেন নাই । যারা মনে রাখার তারা মনে রেখেছেন, আর যারা ভুলে যাওয়ার তারা ভুলে গেছেন ।( মিশকাত)
এ সমস্ত হাদীস শরীফের মাধ্যমে জানা গেল রাসুল সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহিস সালাম সৃষ্তির শুরু থেকে কেয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে উহা জানতেন এবং উহার সংবাদ সাহাবাদের দিয়েছেন ।