উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত
হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
পরিচিতি মুবারক:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম
উনার সম্মানিত নাম মুবারক হচ্ছেন হযরত উম্মে হাবীবা বিনতে আবি সুফিয়ান আলাইহাস সালাম।
তিনি কুরাইশ গোত্রের উমাইয়া শাখার অন্তর্ভূক্ত। হযরত হাবীবাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহা উনার মেয়ের নাম, সেজন্য হযরত উম্মে
হাবীবা আলাইহাস সালাম এই কুনিয়াত মুবারকেই তিনি প্রসিদ্ধ হয়েছেন। উনার প্রকৃত নাম মুবারক
ছিল হযরত রামলা আলাইহাস সালাম। উনার পিতা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
তিনি ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কুরাঈশ নেতা ছিলেন।
হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আসল নাম ছিল ছখর ইবনে হারব (ইছাবা)।
তিনি ছিলেন এক বড় ব্যবসায়ী। শাম (সিরিয়া),
রোম ও
আজমে (অনারব দেশ সমূহ) তিনি কাফেলা পাঠাতেন। মাঝে মাঝে কাফেলার সাথে তিনি নিজেই যেতেন।
হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার তিন মেয়ের মধ্যে এক মেয়ের নাম হযরত
যায়নব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। তিনি প্রখ্যাত ধনী ছাহাবী হযরত উরওয়া ইবনে মাসউদ
আছ-ছাকাফী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া ছিলেন। উনার শাদী মুবারক হয়েছিল ইসলাম-পূর্ব
জীবনে। তখন হযরত ‘উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়ার সংখ্যা ছিল দশ জন।
তন্মধ্যে চার জন কুরাইশ বংশীয়া এবং হযরত যয়নব বিনতে আবী সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহা ছিলেন উনাদের অন্যতমা। হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলাম গ্রহণ করলে
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে
নির্দেশ মুবারক দেন, তিনি যেন চারজন আহলিয়াকে
রেখে অবশিষ্টদেরকে ত্যাগ করেন। সুতরাং তিনি চারজনকে বাছাই করে নেন। উনাদের মধ্যে একজন
ছিলেন হযরত যায়নাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা।
হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অপর দুই মেয়ে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে হাবীবাহ আলাইহাস সালাম
এবং হযরত ফারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাদের শাদী হয় উবায়দুল্লাহ বিন জাহাশ এবং
হযরত আবু আহমদ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের সাথে, যারা ছিলেন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস-সাদিসাহ আলাইহাস সালাম অর্থাৎ
উম্মুল মু’মিনীন হযরত যায়নব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম উনার দুই ভাই।
হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া হযরত হিন্দা বিনতে উতবা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উহুদের জিহাদে (ঈমান গ্রহণ না করা অবস্থায়) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত চাচা, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, হযরত হামযাহ আলাইহিস সালাম উনার কলিজা মুবারক চিবিয়ে
ছিলেন। হযরত হিন্দা বিনতে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা পরে ইসলাম গ্রহণ করে ছাহাবিয়া
হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। তিনি ছিলেন উমাইয়া খলীফা, সাইয়্যিদুনা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাতা।
হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অন্য আহলিয়া যিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল
আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম
উনার সম্মানিতা মাতা ছিলেন উনার নাম হযরত ছফিয়া আলাইহাস সালাম যিনি তৃতীয় খলীফা, সাইয়্যিদুনা হযরত যূন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার
সম্মানিতা ফুফু ছিলেন। কাজেই উমাইয়া খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু ছিলেন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন,
সাইয়্যিদাতুনা
হযরত হাদিয়াতা আশার আলাইহাস সালাম উনার বৈমাত্রিয় ভাই।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম
উনার পিতার পরিবার পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় পর্যন্ত ইসলামের প্রতি বিদ্বেষী থাকলেও সাইয়্যিদাতু
নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম
এবং উনার অন্য দুই বোন হযরত যায়নব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এবং হযরত ফারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহা উনাদের জাওয মুকাররমের পরিবার দ্বীন ইসলাম উনার সূচনা পর্বেই মুসলমান হয়ে
যান। কাজেই উনারাও উনাদের জাওয মুকাররম উনাদের সাথে পবিত্র ইসলাম কবুল করেন। হযরত আবু
সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনার আহলিয়া হযরত হিন্দা বিনতে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহা উনারা পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের সময় ইসলাম গ্রহণ করেন এবং দুই জনই ছাহাবী
হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন।
বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম
সম্মানিত নবুওয়ত মুবারক প্রকাশের ১৭ বছর পূর্বে, ২৯ জুমাদাল উলা শরীফ,
ইয়াওমুছ
ছুলাছা শরীফ (মঙ্গলবার) বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন (ইছাবা, দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)।
ইসলাম গ্রহণ ও হিজরত:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম
উনার প্রথম শাদী হয়েছিল উবায়দুল্লাহ বিন জাহাশের সঙ্গে (তার ঔরসেই হযরত হাবীবাহ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহা বিলাদতি শান মুবারক প্রকাশ করেন)। অতঃপর দ্বীন ইসলাম উনার প্রাথমিক যুগে
উভয়ে এক সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম
উনার আহাল উবায়দুল্লাহ বিন জাহাশের সাথে হাবশায় হিজরত করেছিলেন। উনার অপর এক বোন হযরত
ফারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাও ইসলাম গ্রহণ করে উনার জওয মুকাররম হযরত আবু আহমদ
ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে হাবশায় হিজরত করেছিলেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার
সঙ্গে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ:
হাবশায় কিছুদিন অবস্থানের পর উবায়দুল্লাহ বিন জাহাশ দ্বীন ইসলাম ত্যাগ করে ঈসায়ী
ধর্ম গ্রহণ করে। উবায়দুল্লাহ ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করার কিছুদিন পূর্বে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল
আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম
তিনি একটি স্বপ্ন মুবারক দেখেন। স্বপ্নে তিনি উনার আহাল উবায়দুল্লাহকে বিভৎসরূপে দেখেন। তিনি ভীত-শঙ্কিত হয়ে আপন মনে বলেন, নিশ্চয়ই তার কোন খারাপ পরিণতি হতে যাচ্ছে। সকাল
বেলা উবায়দুল্লাহ উনাকে বলল: উম্মু হাবীবা ! আমি ধর্মের ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা করে
দেখেছি। ঈসায়ী ধর্ম থেকে অন্য কোন ধর্ম ভাল বলে মনে হয়নি। যদিও আমি মুসলমান হয়েছি, তবে আমি ইহা ত্যাগ করে ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করছি।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম
তার এহেন পথভ্রষ্টতায় যথেষ্ট তিরস্কার করলেন এবং নিজের স্বপ্নের কথাও তাকে বললেন। কিন্তু
কোন কিছুতেই কাজ হলো না। সে ঈসায়ী ধর্মে থেকে গেল। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম
তাকে ছেড়ে দিয়ে একাকী বসবাস করতে লাগলেন। অতঃপর উবায়দুল্লাহ বেপরোয়াভাবে জীবন যাপন
করতে লাগল। সে একদিন মাত্রারিক্ত মদ পান করে,
ফলে মৃত্যুমুখে
পতিত হয়। মতান্তরে অধিক মদ পান করে সে সাগরে ডুবে মারা যায়। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম
আরো বলেন: উক্ত স্বপ্নের মধ্যে আমি আরও দেখলাম, কেউ আমাকে “ইয়া উম্মাল মু’মিনীন” বলে ডাকছেন। আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
আমি এর ব্যাখ্যা করলাম যে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হয়ত আমার
নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হবে। (তাবাক্বাত, শরহুল মাওয়াহিব)।
ইতিমধ্যে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
হিজরত মুবারক করে পবিত্র মদীনা শরীফে তশরীফ আনয়ন করেন। তিনি উবায়দুল্লাহ ইবনে জাহাশের
ইসলাম ত্যাগ এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন,
উম্মুল
মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া
আশার আলাইহাস সালাম উনার ঈমানী দৃঢ়তার উপরোক্ত সংবাদ অবগত হন। অতঃপর নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আমর ইবনে উমাইয়া
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু উনাকে হাবশার বাদশাহ নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার
নিকট প্রেরণ করে উনার মাধ্যমে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম
উনার সঙ্গে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার প্রস্তাব দেন। সম্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার পক্ষ হতে হযরত আবরাহা রহমতুল্লাহি আলাইহা নামে জনৈকা দাসী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উক্ত প্রস্তাব
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম
উনার নিকট উপস্থাপন করলে তিনি এই মুবারক এই সুসংবাদ উনার জন্য খালিক, মালিক,
রব, মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফে শুকরিয়া জ্ঞাপনের
উদ্দেশ্যে স্বীয় অলঙ্কার (২টি রূপার চুড়ি,
কানের
দুল ও একটি নকশা করা আংটি) উক্ত দাসীকে হাদিয়া করেন। অতঃপর সম্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি
আলাইহি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার ভাই হযরত জাফর ত্বাইয়ার রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আন্হু উনাকে রাজ দরবারে আহ্বান করে আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ
অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতঃ উপস্থিত সকলকে আপ্যায়ন করেন। সম্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
পক্ষ হতে ৪০০ দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) মোহরও আদায় করে দেন। মোহরের অর্থ সাইয়্যিদাতু নিসায়িল
আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম
উনার নিকট পৌঁছলে সেখান থেকে ৫০ দীনার তিনি দাসী হযরত আবরাহা রহমতুল্লাহি আলাইহা উনাকে
দিতে চান। কিন্তু হযরত আবরাহা রহমতুল্লাহি আলাইহা তা গ্রহণ করতে অসম্মতি জানান এবং
বলেন, স¤্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি
আলাইহি আমাকে কিছু নিতে নিষেধ করেছেন। তাই তিনি ইতিপূর্বে উনাকে যা কিছু দেয়া হয়েছিল
তাও ফিরিয়ে দেন। এ সময় হযরত আবরাহা রহমতুল্লাহি আলাইহা নিজের দ্বীন ইসলাম গ্রহণের কথা
জানান এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন,
উম্মুল
মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া
আশার আলাইহাস সালাম উনাকে অনুরোধ করেন,
তিনি
যেন উনার দ্বীন ইসলাম গ্রহণের কথা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অবহিত করেন এবং উনার তরফ থেকে উনার নিকট
সালাম পৌঁছিয়ে দেন। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন,
সাইয়্যিদাতুনা
হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম বলেন: আমি পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত আবরাহা
রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার সব কথা বলি এবং তার সালাম পেশ করি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মৃদু হেসে উত্তর
দেন-
و عليها السلام و رحمة الله و بركاته -
পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার তারিখ:
হিজরী ৭ম হিজরী সনের ৩ মাহে ছফর শরীফ,
ইয়াওমুল
ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) এই পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সাইয়্যিদাতু
নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম
উনার বয়স মুবারক হয়েছিলেন ৩৬ বছর ৮ মাস ৪ দিন (ইছাবা, আসাহহুস সিয়ার, দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)।
বর্ণিত আছে যে, এই নিসবাতুল আযীম শরীফ
অনুষ্ঠানের সংবাদ যখন হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট পৌঁছে
তিনি অসন্তুষ্ট হননি, যদিও তখন পর্যন্ত তিনি
ইসলাম গ্রহণ করেননি। তিনি নূরে মুজাস্সাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সম্পর্কে তখন মন্তব্য করেছিলেন:
ذاك الفحل، لا يقرع أنفه
অর্থ: তিনি তো এমন সম্ভ্রান্ত কুফূ অর্থাৎ সমকক্ষ, যা প্রত্যাখ্যান করা যায়না।
অর্থাৎ এই নিসবাতুল আযীম শরীফ খুবই মানানসই হয়েছে (তাবাকাত)।
পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ আনয়ন:
নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম
তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার পর স¤্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি
আলাইহি হযরত জা’ফর ত্বাইয়ার বিন আবী তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে
একদল মুহাজিরের সাথে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন,
সাইয়্যিদাতুনা
হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনাকে জাহাজযোগে পবিত্র মদীনা শরীফে পাঠিয়ে দেন। এই
কাফিলা যখন পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছেন,
তখন নূরে
মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
খায়বরে অবস্থান করছিলেন। সুবহানাল্লাহ ! (আবু দাউদ শরীফ, সিয়ারু আলামিন নুবালা)।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশারহ আলাইহাস সালাম
উনার আক্দ মুবারক স¤্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পন্ন করেছেন। এই ব্যাপারে ইজমা হয়েছে। তবে
হযরত কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের
বর্ণিত একটি পবিত্র হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে, উনার আক্দ মুবারক সম্পন্ন হয়েছে পবিত্র মদীনা শরীফে হযরত যূন
নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার ব্যবস্থাপনায়। সুবহানাল্লাহ! (সিয়ারু আলামিন নুবালা)। এই
উপলক্ষে মুবারক ওলীমার ব্যবস্থা করা হয় এবং মেহমানদের গোশত খাওয়ানো হয়। সীরাত বিশেষজ্ঞগণ
কেউ কেউ বলেছেন, হতে পারে পবিত্র মদীনা
শরীফে আসার পর আবার একটি আক্দ মুবারক এবং ওলীমা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ইবনে আব্বাস আলাইহিস সালাম বলেন: নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল
আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম
উনার সাথে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়, তখন এই পবিত্র আয়াত শরীফটি নাযিল হয়-
عَسَى اللهُ أنْ يَّجْعَلَ بَيْنَكُمْ وَ بَيْنَ الّذِيْنَ عَادَيْتُمْ مِنْهُمْ مَوَدَّةً
অর্থ: যারা আপনাদের শত্রু খালিক,
মালিক, রব,
মহান
আল্লাহ পাক তিনি তাদের মধ্যে এবং আপনাদের মধ্যে শীঘ্রই বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দিবেন।
সুবহানাল্লাহ ! (সুরা আল মুমতাহিনা-৭)
বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
হিজরী ৪৪ সনের ১৭ মাহে শা’বান শরীফ ইয়াওমুল খামীস (বৃহস্পতিবার) ৭৩ বছর ২ মাস ১৮
দিন বয়স মুবারকে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন,
উম্মুল
মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়াহ
আশার আলাইহাস সালাম উনার ভাই সাইয়্যিদুনা হযরত মু‘য়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু
উনার খিলাফতের সময় তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন (আসাহহুস সিয়ার, দৈনিক আল ইহসান শরীফ)।
বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পূর্বে তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা
আলাইহাস সালাম উনাকে ডেকে বলেন: নবী পরিবারে আজওয়াজে মুতাহহারাত হিসাবে আমরা একসঙ্গে
বসবাস করেছি। যদি কোন ব্যাপারে আপনার মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, তবে আমাকে মাফ করে দিন এবং আমার জন্য দোয়া করুন।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা
হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উত্তর দিলেন:
سررتنى سرك الله
(আপনি আমাকে খুশী করেছেন, মহান আল্লাহ পাক আপনাকে খুশী করুন। সুবহানাল্লাহ!
(তাবাকাত, সিয়ারু আলামিন নুবালা)।
ফযীলত ও মর্যাদা মুবারক:
সামগ্রিকভাবে সকল উম্মুহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অপরিসীম মর্যাদা
মর্তবার বিষয়ে খালিক, মালিক, রব্ব,
মহান
আল্লাহ পাক পবিত্র কালাম মজীদে ইরশাদ মুবারকে করেছেন,
لستن كاحد من النساء -
অর্থাৎ উনারা অন্য কোন নারীর মত নন।
সুরা আহযাবের ৬নং আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক উনাদেরকে উম্মাহাতুল মু’মিনীন বলে
উল্লেখ করেছেন, যেমন-
ألنَّبِيُّ أوْلَى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ أنْفُسِهِمْ وَ أزْوَاجُهُ أمُّهَاتُهُمْ
(নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঈমানদারগণের
নিকট উনাদের প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয়। আর উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনারা মু’মিনগণের
মাতা)।
খালিক, মালিক, রব্ব,
মহান
আল্লাহ পাক এই পবিত্র আয়াত শরীফে উনাদেরকে أمَّهَاتُ الْمُؤْمِنِيْنَ (মু’মিনগণের মাতা) এই সম্মানিত লক্বব
মুবারকে উল্লেখ করেছেন। এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মর্ম থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ তিনি ব্যতীত অন্যান্য সকল মু’মিন
অর্থাৎ হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মু’মিন দুনিয়াতে
এসেছেন, এখন আছেন এবং ভবিষ্যতে ক্বিয়ামত
পর্যন্ত থাকবেন উনাদের সকলেরই মহা সম্মানিত মাতা। সুবহানাল্লাহ ! সুতরাং উনাদের মর্যাদা-মর্তবা
আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
الجَنّةُ تَحْتَ أقْدَامِ الْأُمُّهَاتِ -
অর্থাৎ সম্মানিত জান্নাত সম্মানিতা মাতা উনাদের পায়ের নিচে। সুবহানাল্লাহ!
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সকলেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে একই সম্মানিত
জান্নাত মুবারকে একই সাথে অবস্থান মুবারক করবেন। সুবহানাল্লাহ! এ থেকে বুঝা যায়, হযরত উম্মুহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের
শান-মান, ফাযায়েল ফযীলত, বুযুর্গী সম্মান কত বে-মেছাল, যা তামাম কায়েনাতবাসীর চিন্তা ও ফিকিরের উর্দ্ধে।
খালিক, মালিক, রব,
মহান
আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে বেমেছাল পুতঃপবিত্রা ও সুমহান চরিত্র মুবারকের অধিকারিণী
করে আল্লাহ পাক উনার হাবীব-উনার জন্য খাছ করে সৃষ্টি করেছেন সেজন্য উনাদের আরেকটি লক্বব
মুবারক হচ্ছে أزواج مطهرات (আযওয়াজে মুত্বাহহারাত অর্থাৎ পুতঃপবিত্রা
আহলিয়াগণ) অর্থাৎ উনাদের চরিত্র সকল প্রকার কলুষ-মুক্ত। সুবহানাল্লাহ !
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম সংখ্যায় ১৩ জন ছিলেন। উনাদের সকলই
অনেক বৈশিষ্ঠ্যপূর্ণ গুণাবলীতে গুণান্বিতা ছিলেন। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশারহ আলাইহাস সালাম
উনারও অনেক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গুণাবলী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
কুরাইশ নেতা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি দ্বীন ইসলাম গ্রহণ
করার পূর্বে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সকল যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন।
উনার এই সম্মানিতা মেয়ে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন,
সাইয়্যিদাতুনা
হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম াদাস উনার পিতা কুফরী অবস্থায় থাকাকালীন সময়েই ইসলামের
জন্য স্বীয় জন্মভূমি ত্যাগ করে সুদূর হাবশায় হিজরত করেন এবং সেখানে উনার আহাল বিধর্মী
হয়ে গেলেও তিনি তৎক্ষণাৎ তাকে পরিত্যাগ করেন।
ফলত তিনি সমুদয় বিপদ তুচ্ছ করে পবিত্র ঈমানী দৃঢ়তায় দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি প্রগাঢ়
মুহব্বত ও মাহাত্মের পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি বেমেছালভাবে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত
মুবারক অনুসরণ করতেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম
উনার সূত্রে যাঁরা পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, উনাদের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন: হযরত হাবীবা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার দুই ছেলে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত উতবা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে
উতবা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবু সুফিয়ান ইবনে
সাঈদ ছাক্বাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত
সালিম ইবনে সাওয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত
আবুল জাররাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সাফিয়া বিনতে
শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহা, হযরত যায়নব বিনতে উম্মে
সালামা রহমতুল্লাহি আলাইহা, হযরত উরওয়া ইবনে যুবায়র
রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবু সালিহ আস
সাম্মান রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শাহর বিন হাওশাব
রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আনবাসা রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত শুতাইর ইবনে শাকাল রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত আবু মালীহ রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত আমির হুযালী রহমতুল্লাহি
আলাইহি, প্রমূখ। সুবহানাল্লাহ! (ইছাবা)
মুহাদ্দিছে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের হিসাব মতে রাবীদের বর্ণনা অনুযায়ী
উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার সংখ্যা বলা হয়েছে ৬৫ খানা। তবে প্রকৃতপক্ষে সকল উম্মাহাতুল
মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ পবিত্র
সুন্নতের পাবন্দ। কাজেই উনাদের কাজকর্ম,
কথা-বার্তা, আচার ব্যবহার সবই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অন্তর্ভূক্ত।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সাথে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয় হিজরী ৭ সনে এবং উনার বিছালী শান মুবারক
প্রকাশিত হয় হিজরী ৪৪ সনে। প্রায় ৩৭ বছর তিনি উম্মতের হিদায়েতের কাজে ব্যাপৃত ছিলেন।
সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম
উনার মেয়ে হযরত হাবিবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গৃহেই প্রতিপালিত
হন। ছাক্বীফ গোত্রের এক বড় নেতার সাথে উনার শাদী মুবারক হয়েছিলেন।
একবার উনার পিতা কুরাইশ নেতা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তখনও
তিনি মুসলমান হননি) হুদায়বিয়ার সন্ধির মেয়াদ বৃদ্ধি করার জন্য পবিত্র মদীনা শরীফে আগমন
করেন। এ উপলক্ষে তিনি উনার মেয়ে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম
উনার সাথে সাক্ষাত করতে উনার ঘরে আসেন। তিনি ঘরে প্রবেশ করে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছানা মুবারকে
বসছিলেন, ঠিক এ সময় সাইয়্যিদাতু নিসায়িল
আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম
তিনি উক্ত বিছানা মুবারক উল্টিয়ে ফেলেন। উনার পিতা উনাকে জিজ্ঞেস করলেন: আপনার এ বিছানা
কি আপনার পিতা অপেক্ষা অধিকতর প্রিয়?
সাইয়্যিদাতু
নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম
উত্তর দিলেন: ইহা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
পবিত্র বিছানা মুবারক। আপনি যেহেতু মুশরিক,
আপনি
অপবিত্র। তাই এ বিছানায় আপনি বসতে পারেন না। সুবহানাল্লাহ! (তাবাকাত, আল-বিদায়া)।
হাফেজ যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রসঙ্গে বলেন: বংশের দিক থেকে হযরত উম্মাহাতুল
মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে কেউই উনার চেয়ে বেশী নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অধিক নিকটের
ছিলেন না। উনার চেয়ে বেশী মোহর অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের
সময় ছিল না। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সাথে অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম উনার চেয়ে বেশী দূরে অবস্থান করা অবস্থায়
নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়নি। সুবহানাল্লাহ! (সিয়ারু আলামিন নুবালা)
বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল
আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম
তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
নিকট থেকে শুনেছিলেন যে, যে ব্যক্তি দৈনিক ১২
রাকাত নফল নামায পড়ে, জান্নাত তার আবাসস্থল
হবে। যখন হতে তিনি এ পবিত্র হাদীছ শরীফ শুনেছেন, এই নামায কখনও তিনি পরিত্যাগ করেননি (বুখারী শরীফ)। গরীব দুঃখী
ইয়াতীমদের প্রতি তিনি খুব লক্ষ্য করতেন। একবার এক মুসলমানের মৃত্যু হলে তার সব সন্তান
সন্ততিকে তিনি লালন পালনের ভার গ্রহণ করেন এবং তাদের বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত তাদের
লালন পালন করেন। সুবহানাল্লাহ !
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
পবিত্র হাদীছ শরীফের উপর তিনি কঠোরভাবে আমল করতেন। উনার পিতা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু যখন বিছাল শরীফ লাভ করেন,
তিন দিন
পরই তিনি সুগন্ধি চেয়ে নিয়ে নিজ কপাল মুবারকে মাখেন এবং বলেন: আমি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইরশাদ মুবারক
করতে শুনেছি, খালিক, মালিক,
রব, মহান আল্লাহ পাক ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মহিলার
একমাত্র আহাল (স্বামী) ব্যতীত অন্য কোন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন
করা জায়েয নেই। আহালের (স্বামীর) জন্য চার মাস দশ দিন শোক করতে হবে। সুবহানাল্লাহ!
(তাবাক্বাত)
(সুত্র সমূহ: উসুদুল
গাবা, ইছাবা, তাবাক্বাত, সিয়ারু আলামিন নুবালা,
আসাহহুস
সিয়ার, দৈনিক আল ইহসান শরীফ )
অনন্তকালব্যাপী সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের লক্ষ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
অনুপম আদর্শ মুবারক আলোচনা ও অনুসরণ
আজ মহিমান্বিত ৩রা মাহে ছফর শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
যা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উম্মুল মুমিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল
হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনাদের নিসবাতুল আযীম শরীফ দিবস।
গোটা উম্মাহ ও মুসলিম বিশ্বের প্রত্যেক সরকারের উচিত- যথাযথ ভাবমর্যাদা ও ভাবধারার
সাথে এ দিবস মুবারক পালন করা।
সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সব সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
প্রতি অফুরন্ত পবিত্র দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, যে নিজেকে চিনেছে সে মহান আল্লাহ পাক উনাকে চিনেছে।
নিজেকে সে তখনই চিনবে যখন নিজের মা সম্পর্কে জানবে। আর নিজের মা সম্পর্কে তার তখনই
জানা পূর্ণ হবে যখন সে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাদের ব্যতীত অন্য সবার সম্মানিত মাতা তথা উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ
উনাদের সম্পর্কে জানবে, মানবে, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করবে, উনাদের সাথে সম্পৃক্ত বিশেষ দিনসমূহ পালন করবে
তথা সম্মানিত আইয়্যিমিল্লাহ বা মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শন সম্বলিত দিনগুলো পালন
করবে।
বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি মুসলমান কিন্তু এই মুসলমান জানেনা কিভাবে
তারা মুসলমান। মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক উনাকে এক ও অদ্বিতীয় মানার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাকে এবং মহাসম্মানিত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ উনাদেরকে এবং মহাসম্মানিত
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে জানা এবং মানার পরই সে মুসলমান। সুবহানাল্লাহ!
সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!
মুসলমান তিনিই যিনি মৃত্যুর পর ইনশাআল্লাহ জান্নাতে যাবেন এবং কাফেরদের মত জাহান্নামে
গিয়ে আযাব-গযবে গ্রেফতার হওয়া থেকে নাজাত লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!
গভীর পরিতাপের বিষয়, মুসলমানরা আজ হলিউড, ঢালিউড,
বলিউড
ইত্যাদি সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের নাম তাদের কাহিনী জানে। তেরেসা, নাইটিংগেল, কুরি এদের সম্পর্কে মুসলমানরা জানে। অথচ যিনি নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারকের
মূল, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম
উনাকে এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে মুসলমানরা জানে না।
উনাদের মহাসম্মানিত জীবনী মুবারক মুসলমানরা বলতে পারে না। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!
নাউযুবিল্লাহ!
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা ছিলেন মোট ১৩ জন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন,
নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত
মুবারক-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নেয়ার মুবারক ধারাবাহিকক্রম অনুযায়ী সাইয়্যিদাতুন
নিসায়ি আলাল আলামীন, আফদ্বলুন নাস ওয়ান
নিসা বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আল হাদিয়াহ্ আশার আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন ‘আল হাদিয়াহ্ আশার তথা ১১তম’। এ জন্য
উনাকে ‘উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ আশার আলাইহাস সালাম বলা হয়।
সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের
সম্পর্কে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন “আপনারা অন্যান্য নারীদের মত
নন”। প্রসঙ্গতঃ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার তাজদীদ মুবারক এই
পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারাই প্রতিভাত হয়- উনারা সেই মহান ব্যক্তিত্ব যারা দুনিয়াতেও
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একান্ত সাথী
এবং পরকালেও তাই। উনাদের মেছাল মুবারক শুধু উনারাই। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ উনার ১০৯নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে
ইরশাদ মুবারক করেছেন, “হে আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি
বলে দিন, আমার রব উনার শান-মান লিখার
জন্য যদি সমুদ্রের পানিকে কালি বানানো হয় তবুও মহান আল্লাহ পাক উনার শান মুবারক বর্ণনা
শেষ হবে না বরং শেষ হওয়ার পূর্বে সমুদ্রের পানি নিঃশেষ হয়ে যাবে। আরো অনুরূপ যোগ করা
হলেও।”
বলাবাহুল্য, এটা যেমন স্বয়ং মহান
আল্লাহ পাক উনার শান মুবারকে তেমনি উনার হাবীব আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
শান মুবারকেও এবং সাথে সাথে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম
উনার শান মুবারকেও যথাযোগ্যভাবে প্রযোজ্য। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!
প্রসঙ্গতঃ আজ পবিত্র ০৩রা ছফর শরীফ উপলক্ষ্যে নিবন্ধে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম
উনার পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ দিবস সম্পর্কে আলোচনার অবকাশ মূলত: সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে
আযম, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত ইমামুল
উমাম আলাইহিস সালাম উনার রূহানী ফায়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক উনার এক বিচ্ছুরন। নতুবা কারো
সাধ্য নেই এ মহিমান্বিত বিষয় আলোকপাতের কোনো প্রয়াস পাওয়া।
সঙ্গতকারণেই মুসলমানদের উচিত- যামানার সুমহান ইমাম ও মুজতাহিদ, ছাহিবে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ সাইয়্যিদুনা হযরত
ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার প্রতি অব্যাক্ত শুকরিয়া জ্ঞাপন করা ও গোলামী করার এবং
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম
উনার প্রতি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে অকৃত্রিম মুহব্বত রাখা, তা’যীম তাকরীম করা বিশেষ করে উনার পবিত্র নিসবাতুল
আযীম শরীফ প্রকাশের মহাসম্মানিত দিন হিসেবে মহাসমারোহে, ব্যাপক শান-শওকত ও জওক-শওক সহকারে পালন করা।
যামানার সুমহান মুজাদ্দিদ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে
আ’যম, ছহিবে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার
এবং মহাসম্মানিত পূতঃপবিত্র হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উছীলায় মহান
আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন! আমীন! আমীন!
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত সিলসিলা মুবারক
এবং ইলমে তাছাউফ উনার সম্মানিত সিলসিলা মুবারক উনাদের মধ্যে পার্থক্য
ইলমে তাছাউফ উনার সম্মানিত সিলসিলা মুবারক: একজন ওলীআল্লাহ তিনি উনার সম্মানিত
বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পূর্বে উনার সম্মানিত মূল নিয়ামত মুবারক উনার খাছ মুরীদকে
হাদিয়া করে যান। তিনি আবার উনার খাছ মুরীদকে,
তিনি
আবার উনার খাছ মুরীদকে। এইভাবে ইলমে তাছাউফ বা ওলীআল্লাহ উনাদের সম্মানিত নিয়ামত মুবারক
বা সিলসিলা মুবারক উনার বিষয়টি এসেছেন। আর সেই খাছ মুরীদ স্বীয় সন্তানও হতে পারেন।
আবার অন্য কোন ব্যক্তিও হতে পারেন। এখানে সন্তান হওয়া শর্ত নয়। আমরা যদি তাছাউফের সিলসিলা
মুবারক উনার দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাবো যে, একজন ওলীআল্লাহ উনার মূল নিয়ামত মুবারক স্বীয় সন্তান
লাভ না করে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে খাছ মুরীদ
উনারাই লাভ করেছেন। এর ব্যতিক্রম খুবই কম ঘটেছে। যেমন, হযরত খাজা উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার
থেকে হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চীশতী আজমিরী সানজিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চীশতী আজমিরী সানজিরী রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার থেকে হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি
উনার থেকে বাবা ফরীদুদ্দীন মাস‘ঊদ গঞ্জেশোকর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, বাবা ফরীদুদ্দীন মাস‘ঊদ গঞ্জেশোকর রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার থেকে মাহবূবে এলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, মাহবূবে এলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার থেকে সিরাজুদ্দীন আখি উছমান আওদাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ উনারা
প্রত্যকে খাছ মুরীদ হিসেবে সম্মানিত শায়েখ উনার থেকে সম্মানিত মূল নিয়ামত মুবারক হাছিল
করেছেন। সুবহানাল্লাহ! উনারা কেউ কারো সন্তান ছিলেন না। বরং একজন আরেকজনের মুরীদ ছিলেন।
অর্থাৎ উনাদের মাঝে পিতা-পুত্রের সম্পর্ক ছিলো না; বরং শায়েখ-মুরীদের সম্পর্ক ছিলো। সুবহানাল্লাহ! এভাবে ইলমে তাছাউফের
সিলসিলা মুবারকগুলো এই পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত সিলসিলা মুবারক:
আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি যে, মহাসম্মানিত হযরত আহলু
বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে তিনটি স্তর মুবারক রয়েছেন। উনাদের মধ্যে প্রথম
স্তর মুবারক-এ হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ!
দ্বিতীয় স্তর মুবারক-এ হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা।
সুবহানাল্লাহ! তৃতীয় স্তর মুবারক-এ হচ্ছেন মহাসম্মানিত হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা এবং মহাসম্মানিতা হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনারা এবং উনাদের মহসম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম
উনারা। সুবহানাল্লাহ! আর ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস
সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম উনারা এবং ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত আওলাদ
আলাইহিমুস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম উনারা প্রত্যেকেই মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত
শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ! তবে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ
ছানী আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত কুরবত মুবারক এবং উনার সম্মানিত মূল নিয়ামত মুবারক
উনার মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান মুছান্না আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে
এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত কুরবত মুবারক এবং উনার
সম্মানিত মূল নিয়ামত মুবারক উনার মহাসম্মানিত আওলাদ ইমামুর রাবি’ সাইয়্যিদুনা হযরত
ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে জারী থাকেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর এইভাবে
বংশানুক্রমে মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত কুরবত
মুবারক এবং উনার সম্মানিত মূল নিয়ামত মুবারক উনার ধারাবাহিকতায় মহাসম্মানিত সিলসিলা
মুবারক এই পর্যন্ত জারি রয়েছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবেন। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, একই যামানায় একাধিক
আহলু বাইত শরীফ থাকতে পারেন। তবে মূল থাকবেন একজন। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে পার্থক্য
এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেকে মনে করে থাকে যে, যিনি আওলাদে রসূল তিনিই আহলু বাইত শরীফ। আওলাদে
রসূল এবং আহলু বাইত শরীফ উনাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। নাঊযুবিল্লাহ! আবার অনেকে
মনে করে থাকে যে, আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে যারা বড় ওলীআল্লাহ উনারা হচ্ছেন আহলু বাইত শরীফ। নাঊযুবিল্লাহ!
প্রকৃতপক্ষে এই বক্তব্যগুলো একটাও শুদ্ধ না। মূলত মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ
আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মাঝে
অনেক পার্থক্য রয়েছে। যেমন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যাঁরা বংশধর অর্থাৎ যাঁরা ইমামুছ ছানী
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার এবং ইমামুছ ছালিছ সাইয়্যিদুনা হযরত
ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের উভয়ের যাঁরা বংশধর উনারা প্রত্যেকেই
আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত।
তবে আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে তিনটি ভাগ রয়েছে।
যেমনÑ
১. যাঁদের আক্বীদা ও আমল আখলাক্ব
শুদ্ধ রয়েছে উনাদেরকে মুহব্বত করতে হবে এবং অনুসরণও করতে হবে।
২. যাঁদের আক্বীদা শুদ্ধ রয়েছে কিন্তু
আমল আখলাক্ব শুদ্ধ নেই উনাদেরকে মুহব্বত করতে হবে, সম্মান করতে হবে;
কিন্তু
অনুসরণ করা যাবে না।
৩. যাদের আক্বীদার মধ্যে কুফরী রয়েছে, তাদেরকে আওলাদে রসূল বা সাইয়্যিদ বলা যাবে না।
মুহব্বত, সম্মান ও অনুসরণ করার তো প্রশ্নোই
উঠে না।
এই সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ بُرَيْدَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيهِ وَسَلَّمَ لَا تَقُوْلُوْا لِلْمُنَافِقِ سَيِّدٌ فَاِنَّكُمْ اِذَا فَعَلْتُمْ اَغْضَبْتُمْ رَبَّكُمْ تَبَارَكَ وَتَعَالـٰى.
অর্থ: “হযরত বুরাইদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
তোমরা
মুনাফিক্বদেরকে সাইয়্যিদ বলো না। যদি তোমরা এরূপ করো, তাহলে তোমরা তোমাদের রব মহান আল্লাহ পাক তাবারাকা
ওয়া তায়ালা উনাকে অসন্তুষ্ট করলে।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (আল আদাবুল মুফরাদ ১/২৬৭, মুসনাদে বাযযার ৪/২৯৫, আবূ দাঊদ)
আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত
সিবতুন ও সিবত্বাতুন (নাতী-নাতনী) আলাইহিমুস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের পর থেকে
ক্বিয়ামত পর্যন্ত যেই সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক বংশানুক্রমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত কুরবত মুবারক এবং উনার সম্মানিত
মূল নিয়ামত মুবারক ধারণ করবেন, উনারাই মহাসম্মানিত
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম হিসেবে মনোনীত হবেন। আর উনারাই মহাসম্মানিত হযরত
আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
উনারা প্রত্যেকেই পূর্ব মনোনীত। উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র করার মতো
পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! উনারা শুধু যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান
আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী হচ্ছেন উনারা। সুবহানাল্লাহ!
নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যেমন পূর্ব মনোনীত ঠিক তেমনিভাবে মহাসম্মানিত হযরত
আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারাও পূর্ব মনোনীত। সুবহানাল্লাহ!
সহজে বুঝার জন্য বলা যেতে পারে,
প্রত্যেক
রসূলই নবী; কিন্তু প্রত্যেক নবীই রসূল
নন। ঠিক তেমনিভাবে মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রত্যেকেই
আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! কিন্তু প্রত্যেক আওলাদে
রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আহলু বাইত শরীফ নন।
সুতরাং উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনার দ্বারা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো
যে, প্রত্যেক আওলাদে রসূলই আহলু
বাইত শরীফ নন। আবার আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে বড় ওলীআল্লাহ
হলেই আহলু বাইত শরীফ হওয়া যায় না। বরং মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম
উনাদের বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে আলাদা। সুবহানাল্লাহ! উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মান মুবারক এক কথায় উনারা শুধু মহান আল্লাহ পাক
তিনি নন এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া যত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক রয়েছেন সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী হচ্ছেন উনারা। সুবহানাল্লাহ!
উনারা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের মুহতাজ। এছাড়া কায়িনাতের
অন্য কারো মুহতাজ নন; বরং কায়িনাতের সকলেই
উনাদের মুহতাজ। সুবহানাল্লাহ! উনাদের সাথে কারো তুলনা করা যাবে না। সুবহানাল্লাহ!
উনাদের শান মুবারকেই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ لَّا يُقَاسُ بِنَا اَحَدٌ.
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
আমরা
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমাদের সাথে অন্য কারো তুলনা করা
যাবে না।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী ৪/২৮৩, জামি‘উল আহাদীছ ২২/২১৯, কানজুল উম্মাল ১২/১০৪, জাম‘উল জাওয়ামি’ ১/২৪৯৫০, যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ ফী মানাক্বিবে যাওইল কুরবা
লিমুহিব্বে ত্ববারী ১/১৭, সুবুলুল হুদা ওয়ার
রশাদ ১১/৭ ইত্যাদি)
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের
মহাসম্মানিত শান মুবারকসমূহ অত্যন্ত সূক্ষ্ম থেকেও সূক্ষ্মতর
আরবী ক্বাওয়ায়িদ বা ব্যাকরণ অনুযায়ীاَهْلُ بَيْتٍ (আহলু বাইত) মুরাক্কাবে ইদ্বাফী হয়েছে।
অর্থাৎ اَهْلُ (আহাল) শব্দ মুবারকখানা
হচ্ছেন মুদ্বাফ আর بَيْتٍ (বাইত) শব্দ মুবারকখানা
হচ্ছেন মুদ্বাফ ইলাইহ। اَهْلُ (আহাল) শব্দ মুবারক
উনার অর্থ মুবারক হচ্ছেন অধিবাসী, পরিবার-পরিজন, লোকজন,
বাসিন্দা, সদস্য,
আত্মীয়-স্বজন
ইত্যাদি। আর بَيْتٍ (বাইত) শব্দ মুবারক
উনার অর্থ মুবারক হচ্ছেন ঘর, হুজরা শরীফ, বাড়ি,
বাসস্থান, পরিবার ইত্যাদি। সুতরাং اَهْلُ بَيْتٍ (আহলু বাইত) উনার শাব্দিক অর্থ মুবারক
হলো, ঘরের অধিবাসী, হুজরা শরীফ উনার অধিবাসী, পরিবারের সদস্য, পরিবারের লোকজন,
পরিবার-পরিজন
ইত্যাদি। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত শরীয়ত মুবারক উনার পরিভাষায় اَهْلُ بَيْتٍ ‘আহলু বাইত’ বলতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পরিবার মুবারক উনাকে বুঝায়, উনার সম্মানিত পরিবার মুবারক উনার সম্মানিত সদস্যগণ
উনাদেরকে বুঝায়, উনার সম্মানিত হুজরা
শরীফ উনার অধিবাসী উনাদেরকে বুঝায়। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার অধিবাসী যাঁরা রয়েছেন, উনারাই হচ্ছেন মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ
আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, যদিও স্বাভাবিকভাবে
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত
হুজরা শরীফ উনার অধিবাসী বলতে উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালাম উনাদেরকে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে, হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাদেরকে, হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে এবং উনাদের মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম
ও আওলাদ আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বুঝায়,
তথাপি
বিষয়টি অতি সূক্ষ্ম, অত্যন্ত ব্যাপক এবং
অনেক ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। তবে সংক্ষেপে বলতে গেলে, যেই সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনারা মহাসম্মানিত হযরত আহলু
বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম হিসেবে দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন এবং
ক্বিয়ামত পর্যন্ত সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নিবেন, উনারা প্রত্যেকেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার অধিবাসী। সুবহানাল্লাহ! এই বিষয়টি
সম্মানিত কুদরত মুবারক এবং সম্মানিত মু’জিযা শরীফ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
যদিও স্বাভাবিকভাবে মানুষের জন্য বুঝতে একটু কঠিন মনে হতে পারে।
তবে সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ এই বিষয় মুবারক উনার বরকতময় হাক্বীক্বত মুবারক অত্যন্ত
সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হবে। সুবহানাল্লাহ! যেই সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনারা
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন, উনারা প্রত্যেকেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার অধিবাসী হবেন। উনারা
একই সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ অবস্থান মুবারক করবেন। সুবহানাল্লাহ! তবে অবশ্যই সম্মানিত
কুরবত বা নৈকট্য মুবারক উনার প্রগাঢ়তা অনুযায়ী স্তর বিন্যাস রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
আরো সহজভাবে বলতে গেলে- মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
قُلْ لَّا اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ اَجْرًا اِلَّا الْمَوَدَّةَ فِى الْقُرْبـٰى.
অর্থ: “(হে আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলে দিন, তোমাদের নিকট কোনো বিনিময় চাওয়া হচ্ছে না, চাওয়াটাও স্বাভাবিক নয়। তবে তোমাদের জন্য ফরয হচ্ছে
আমার সর্বাধিক নিকট সম্পর্কের অধিকারী,
নিকটাত্মীয়
তথা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক
দেয়া।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা শূরা শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ-২৩)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে এই সম্মানিত কুরবত মুবারক এবং উনার সম্মানিত মূল
নিয়ামত মুবারক বংশানুক্রমে (অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বংশধর আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে) যেই সকল সুমহান
ব্যক্তিত্ব মুবারক এবং ব্যক্তিত্বা মুবারক উনারা ধারণ করেছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত
যেই সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক এবং ব্যক্তিত্বা মুবারক উনারা ধারণ করবেন, উনারাই হচ্ছেন মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ
আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ! উনাদের শান মুবারকেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-
نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ طَهَّرَهُمُ اللهُ مِنْ شَجَرَةِ النُّبُوَّةِ وَمَوْضِعِ الرِّسَالَـةِ وَمُـخْتَلِفِ الْمَلَائِكَةِ وَبَيْتِ الرَّحْـمَةِ وَمَعْدِنِ الْعِلْمِ.
অর্থ: “আমরা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ! মহান
আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস উনাদেরকে (আমাদেরকে) সম্মানিত
নুবুওয়াত মুবারক উনার বৃক্ষ, সম্মানিত রিসালাত মুবারক
উনার স্থান, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস
সালাম উনাদের, উনাদের দ্বারা সম্মানিত
খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক
উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারক উনার খনি মুবারক (ইত্যাদি সমস্ত কিছু) থেকে
পবিত্র রেখেছেন, ছমাদ তথা বেনিয়ায
(অমুখাপেক্ষী) করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে দুররে
মানছূর লিস সুয়ূত্বী ৬/৬০৬, তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম
৯/৩১৩৩)
মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি মুহব্বত মুবারক
স্থাপন করা ফরযে আইন
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرة ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم احبوا الله لـما يعذوكم من نعمة واحبونـى لـحب الله واحبوا اهل بيتـى لـحبى.
অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
মহান
আল্লাহ পাক উনাকে তোমরা মুহব্বত করো;
কেননা
তিনি খাওয়া-পরার মাধ্যমে অনুগ্রহ করে থাকেন। আর আমাকে তোমরা মুহব্বত করো, মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্রতম মুহব্বত মুবারক
হাছিলের জন্য। আর আমার আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে তোমরা মুহব্বত করো
আমার মুহব্বত মুবারক হাছিলের জন্য।” (তিরমিযী শরীফ)
এ হাদীছ শরীফ খানা উনার মাধ্যমে তিনটি পবিত্রতম ফরয সাব্যস্ত হয়েছে-
প্রথমত: মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্রতম মুহব্বত মুবারক পোষণ করা ফরয।
দ্বিতীয়: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম মুহব্বত মুবারক পোষণ করা ফরয।
তৃতীয়ত: পবিত্রতম আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক পোষণ করা
ফরয।
এই সম্মানিত তিন প্রকার ফরয মুবারক পারস্পারিক- এমনিভাবে সম্পর্র্কযুক্ত যে, কোন এক প্রকার ফরয মুবারক ব্যতিরেকে অন্য কোন প্রকার
ফরয মুবারক হাছিল করা সম্ভব নয়।
কাজেই, মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত
ও সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করতে হলে মহান আল্লাহ পাক উনার যিনি হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত ও সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করতে
হবে। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত
ও সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করতে হলে উনার আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত
করতে হবে ও সন্তুষ্ট করতে হবে। মূলতঃ হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্রতম
মুহব্বতই হচ্ছেন পবিত্রতম ঈমান। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বতই ঈমানের মূল উনাদের মুহব্বত
মুবারক ব্যতীত কস্মিনকালেও কোন অন্তরে পবিত্র ঈমান প্রবেশ করবে না
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرة العباس رضى الله تعالى عنه بن حضرة عبد الـمطلب عليه السلام قال كنا نلقى النفر من قريش و هم يتحدثون فيقطعون حديثهم فذكرنا ذلك للنبـى صلى الله عليه وسلم فقال ما بال اقوام يتحدثون فاذا رأوا الرجل من اهل بيتـى قطعوا حديثهم و الله لا يدخل قلب رجل الايـمان حتـى يـحبهم لله ولقرابتهم منـى
অর্থ: হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমরা কুরাইশদের আলোচনারত অবস্থায় তাদের দলের সাথে
মিলিত হতাম। ফলে তারা (আমাদের দেখে) তাদের কথা বন্ধ করে দিত। তারপর আমরা নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে তা নিয়ে আলোচনা করলাম।
জবাব মুবারক-এ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, লোকদের কি হলো যে, তারা আলোচনারত থাকে, অতঃপর যখন আমার পবিত্র আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস
সালাম উনাদের লোকটিকে দেখে তখন তাদের আলোচনা বন্ধ করে দেয়। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম!
কোন ব্যক্তির ক্বালবের মাঝে ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমান প্রবেশ করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত মহান
আল্লাহ পাক উনার জন্য এবং উনাদের সাথে আমার আত্মীয়তার কারণে পবিত্র আহলে বাইত শরীফ
আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত না করবেন। সুবহানাল্লাহ! (ইবনু মাজাহ, হাকিম,
তাবরানী, বাযযার,
আহমদ
ফিল ফাদ্বাইল, ইবনু আসাকির, জামিউল আহাদীছ, জামউল জাওয়ামি’ আও আলজামিউল কাবীর, কানযুল উম্মাল, মুসনাদুছ ছাহাবা)
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম
উনাদের মুহব্বত মুবারক করলে গুণাহ ঝরে যায়
ইমাম আব্দুর রহমান আদ দামিশক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার আউলিয়া আল্লাহি বাইনাল
মাফহূমিছ ছূফী নামক কিতাবে এবং ইমাম হুয়াইযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার তাফসীরু
নূরিছ ছাক্বালাইন নামক কিতাবে উল্লেখ করেন,
مـحبة أهل البيت تـمحو الذنوب
অর্থ : পবিত্রতম আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্রতম মুহব্বত মুবারকই
সকল গুণাহ মিটিয়ে দেয় অর্থাৎ পবিত্র আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত
মুবারক উনার মাধ্যমেই সকল গুণাহ মাফ হয়ে যায়,
মর্যাদা
বৃদ্ধি পায়। সুবহানাল্লাহ! (আউলিয়া আল্লাহি বাইনাল মাফহূমিছ ছূফী লি-আবদির রহমান আদ
দামিশক্বী, তাফসীরু নূরিছ ছাক্বালাইন লিল
হুয়াইযী, বাওয়ারিক্বুল হাক্বায়িক্ব)
পবিত্রতম আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম
উনারাই হেদায়েত উনার উজ্জলতম নূর মুবারক
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,
عَنْ حَضْرَةْ جابر بن عبد الله رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ رايت رَسُوْل اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فـي حجته يوم عرفة وهو على ناقته القصواء يـخطب فسمعته يقول يا ايها الناس اِنّـىْ قد تَرَكْتُ فِيْكُمْ مَا اِنْ اَخَذْتُـمْ بِه لَنْ تَضِلُّوْا كِتٰبَ اللهِ وَعِتْرَتِـىْ اَهْلَ بَيْتِىْ.
অর্থ : “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাকে দেখেছি, তিনি বিদায় হজ্জে আরাফার
দিন উনার ‘কাসওয়া’ নামক উষ্ট্রীর উপর সাওয়ার অবস্থায় খুৎবা দান করেছেন। আমি শুনেছি, তিনি খুৎবা মুবারক উনার মধ্যে
বলেছেন, হে লোক সকল, নিশ্চয়ই আমি আপনাদের মাঝে এমন দু’টি নিয়ামত মুবারক
রেখে যাচ্ছি, আপনারা যদি তা শক্তভাবে
ধরে রাখেন, তবে আপনারা কখনও গুমরাহ হবেন
না; প্রথম নিয়ামত মুবারক হচ্ছেন
মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব আর দ্বিতীয় নিয়ামত মুবারক হচ্ছেন আমার বংশধর অর্থাৎ আমার
হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ ৫৬১)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,
عن حضرة زيد بن ارقم رضى الله تعالى عنه قال قام رسول الله صلى الله عليه وسلم يوما فينا خطيبا بـماء يدعى خـما بيـن مكة والـمدينة فحمد الله واثنـى عليه ووعظ وذكر ثـم قال اما بعد الا ايها الناس انـما انا بشر يوشك ان ياتينـى رسول ربـى فاجيب وانا تارك فيكم الثقلين اولـهما كتاب الله فيه الـهدى والنور فخذوا بكتاب الله واستمسكوا به فحث على كتاب الله ورغب فيه ثـم قال واهل بيتـى اذكركم الله فى اهل بيتـى اذكركم الله فى اهل بيتـى.
অর্থ : “হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনাদের মধ্যবর্তী
‘খোম’ নামক পানির নালার নিকট দাঁড়িয়ে আমাদেরকে খুতবা মুবারক প্রদান করলেন। প্রথমে মহান
আল্লাহ পাক উনার হামদ শরীফ ও ছানা মুবারক বর্ণনা করলেন, এরপর ওয়াজ ও নছীহত মুবারক করলেন। অতঃপর বললেন, সাবধান! হে লোক সকল! নিশ্চয়ই আমি একজন নবী ও রসূল, অচিরেই আমার নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার দূত (হযরত
মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম তিনি) আসবেন। তখন আমি আমার রব তায়ালা উনার পবিত্রতম আহবানে
সাড়া দিব। আমি আপনাদের মাঝে দু’টি মূল্যবান নিয়ামত মুবারক রেখে যাচ্ছি। তন্মধ্যে প্রথম
নিয়ামত মুবারক হলেন- মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব। উনার মধ্যে রয়েছেন পবিত্রতম হিদায়েত
ও নূর। অতএব, আপনারা মহান আল্লাহ
পাক উনার কিতাব উনাকে খুব মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরুন এবং দৃঢ়তার সাথে উনার বিধি-বিধান মেনে
চলুন।” (বর্ণনাকারী বলেন,) মহান আল্লাহ পাক উনার
কিতাব উনার নির্দেশাবলী দৃঢ়ভাবে মেনে চলার জন্য তিনি খুব বেশি উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করলেন। অতঃপর বললেন,
“দ্বিতীয়
নিয়ামত মুবারক হলেন-আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা। আমি আপনাদেরকে
আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ
থেকে বিশেষভাবে সতর্ক তথা নছীহত মুবারক করছি। আমি আপনাদেরকে আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ
আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে বিশেষভাবে সতর্ক তথা
নছীহত মুবারক করছি।” (মুসলিম শরীফ)
পবিত্রতম আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্রতম মুহব্বত হাছিলের জন্য
প্রত্যেক মুসলমান সন্তানদেরকে আদব শিক্ষা দেয়া ফরয
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছেন,
عن حضرة علي كرم الله وجهه عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أدِّبُوا أوْلادَكُمْ على ثلاثِ خِصالٍ حُبَّ نَبِيِّكُمْ وَحُبَّ أهْلِ بَيْتِهِ وقِراءَةِ القُراٰنِ الكريـم .
অর্থ: হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে
তিনটি বিশেষ আদর্শ মুবারক সম্পর্কে আদব মুবারক শিক্ষা দাও। (১) তোমাদের যিনি নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম মুহব্বত
মুবারক সম্পর্কে। (২) পবিত্রতম হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্রতম
মুহব্বত মুবারক সম্পর্কে। (৩) পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত মুবারক সম্পর্কে। (ফতহুল
কবীর, জামিউছ ছগীর লিসসুয়ূতী)
যে ব্যক্তি আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম
উনাদের মুহব্বতে ইন্তিকাল করবে তার কবর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সর্বদায়
যিয়ারতে মশগুল থাকবেন
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرة جرير بن عبد الله البجلى رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الا و من مات على حب ال (سيدنا حضرة) مـحمد صلى الله عليه وسلم جعل الله قبره مزار ملائكة الرحـمة
অর্থ : হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ আল বাযালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- “হে ঈমানদারগণ!
আপনারা সাবধান হয়ে যান! যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সম্মানিত বংশধরগণ তথা পবিত্রতম আহলে বাইত ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাদের মুহব্বতে ইন্তিকাল করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি
উনার কবরকে রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাযার তথা জিয়ারতগাহ বানিয়ে দিবেন।”
সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে রূহুল বয়ান ৮/২৩৯,
তাফসীরে
হাক্কী ১৩/৭৯, তাফসীরে কবীর, তাফসীরে কুরতুবী ১৬/২৩, তাখরীজু আহাদীছিল কাশ্শাফ, নুযহাতুল মাজালিস)
উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র বরকতময় নসবনামাহ মুবারক
সাইয়্যিদাতু নিসায়ি ‘আলাল ‘আলামীন,
আফদ্বলুন
নাস ওয়ান নিসা’ বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নসব মুবারকগত দিক
থেকে সম্মানিত কুরাইশ বংশীয়। সুবহানাল্লাহ! উনার মহাসম্মানিত পিতা হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা
হযরত আবূ সুফিয়ান আলাইহিস সালাম। উনার মূল নাম মুবারক হচ্ছেন- সাইয়্যিদুনা হযরত ছখ্র
আলাইহিস সালাম। তিনি ছিলেন সম্মানিত কুরাইশ বংশ উনার বিশেষ শাখা বনূ উমাইয়্যাহ গোত্রের
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মুবারক। উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার
আলাইহাস সালাম তিনি উনার মহাসম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম উনার দিক থেকে ৬ষ্ঠ পুরুষে
যেয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে
মিলিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! যেমন-
اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتُناَ حَضْرَتْ اُمُّ حَبِيبَةَ بِنْتُ أَبِي سُفْيَانَ بْنِ حَرْبِ بْنِ أُمَيّةَ بْنِ عَبْدِ شَمْسِ بْنِ عَبْدِ مَنَافِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ
১. اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتُناَ حَضْرَتْ اُمُّ حَبِيبَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা
হযরত উম্মু হাবীবাহ্ আলাইহাস সালাম।
২. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ اَبُوْ سُفْيَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সুফইয়ান
আলাইহিস সালাম।
৩. حَرْب عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত র্হাব আলাইহিস
সালাম।
৪. أُمَيّة عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত উমাইয়্যাহ্
আলাইহিস সালাম।
৫. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ عَبْدُ شَمْسٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আব্দু শাম্স
আলাইহিস সালাম।
৬. عَبْدُ مَنَافٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ
সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আব্দু মানাফ আলাইহিস সালাম।
সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আব্দু মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
(মিরআতুল আনসাব-২৪, আল আহাদ ওয়াল মাছানী ৫/৪১৮, আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ২৩/২১৯, ইবনে হিশাম ২/৬৪৮, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ্ লিলবাইহাক্বী ৭/২৮৫, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/১৪৪, শারহুয যারক্বানী ৪/৩৬০, মাওয়াহিবুল লাদুন নিয়্যাহ ১/৪৯১, বিদায়া-নিহায়া ৫/৩১৫ ইত্যাদী)
মহাসম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম উনার দিক থেকে-
সাইয়্যিদাতু নিসায়ি ‘আলাল ‘আলামীন,
আফদ্বলুন
নাস ওয়ান নিসা’ বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান হচ্ছেন- সাইয়্যিদুনা
হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার আপন ফুফু সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছফিয়্যাহ্ বিনতে
আবুল ‘আছ আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!। সুবহানাল্লাহ! তিনিও ছিলেন সম্মানিত বনী উমাইয়্যাহ্
গোত্রের। সুবহানাল্লাহ! উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস
সালাম তিনি উনার মহাসম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম উনার দিক থেকেও ৬ষ্ঠ পুরুষ সাইয়্যিদুনা
হযরত ‘আবদু মানাফ আলাইহি সালাম উনার নিকট যেয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মিলিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! যেমন-
اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتُناَ حَضْرَتْ اُمُّ حَبِيبَةَ بِنْتُ صَفِيَّةُ بِنْتُ أَبِي الْعَاصِ بْنِ أُمَيَّةَ بْنِ عَبْدِ شَمْسٍ، بْنِ عَبْدِ مَنَافِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ
১. اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتُناَ حَضْرَتْ اُمُّ حَبِيبَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা
হযরত উম্মু হাবীবাহ্ আলাইহাস সালাম।
২.سَيِّـدَتُنَـا حَضْرَتْ صَفِيَّةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছফিয়্যাহ্
আলাইহাস সালাম।
৩. أَبو الْعَاصِ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল ‘আছ
আলাইহিস সালাম।
৪. أُمَيّة عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত উমাইয়্যাহ্
আলাইহিস সালাম।
৫. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ عَبْدُ شَمْسٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আবদু শাম্স
আলাইহিস সালাম।
৬. عَبْدُ مَنَافٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ
সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আবদু মানাফ আলাইহিস সালাম।
সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আবদু মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
(মিরআতুয যামান ৭/৬৪, ‘উয়ূনুল আছার ২/৩৭৩, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/১৯৩, তারীখে ত্ববারী ১১/৬০৩, আনসাবুল আশরাফ ৫/৬ ইত্যাদী)
সাইয়্যদাতুনা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা বেমেছোল, অতুলনীয়
সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ لَّا يُقَاسُ بِنَا اَحَدٌ.
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ
আলাইহিমুস সালাম। আমাদের সাথে অন্য কারো ক্বিয়াস বা তুলনা করা যাবে না।” সুবহানাল্লাহ!
সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী ৪/২৮৩,
জামি‘উল
আহাদীছ ২২/২১৯, কানজুল উম্মাল ১২/১০৪, জাম‘উল জাওয়ামি’ ১/২৪৯৫০, যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ ১/১৭, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৭ ইত্যাদি)
আলোচ্য সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে- اَهْلُ بَيْتٍ نَـحْنُ (আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত
আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম) বলেÑ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে উনার নিজের অন্তর্ভুক্ত
করে নিয়েছেন। তারপর তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
‘আমাদের
সাথে অন্য কারো ক্বিয়াস বা তুলনা করা যাবে না।’ সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও
মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে সৃষ্টি জগতের কারো ক্বিয়াস
বা তুলনা যাবে না। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَـلِـىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ شَجَرَةُ النُّبُوَّةِ وَمَعْدِنُ الرِّسَالَـةِ لَيْسَ اَحَدٌ مِّـنَ الْـخَلَائِقِ يَفْضُلُ اَهْلَ بَيْـتِـىْ غَيْرِىْ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন, আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমরা সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক উনার সম্মানিত
বৃক্ষ মুবারক এবং সম্মানিত রিসালাত মুবারক উনার সম্মানিত খনি মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
সমগ্র সৃষ্টি জগতে একমাত্র আমি ব্যতীত দ্বিতীয় আর কেউই নেই, যে আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত
শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে। অর্থাৎ সমগ্র সৃষ্টি জগতে আমার
পরেই আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শ্রেষ্ঠত্ব
মুবারক, ফযীলত মুবারক।” সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস
সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস
সালাম উনাদের মধ্যে তিনটি স্তর মুবারক রয়েছেন। উনাদের মধ্যে প্রথম স্তর মুবারক-এ হচ্ছেন
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বা আলাইহিস সালাম তিনি
এবং মহাসম্মানিতা হযরত আম্মা আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা। সুবহানাল্লাহ! দ্বিতীয়
স্তর মুবারক-এ হচ্ছেন মহাসম্মানিতা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা।
সুবহানাল্লাহ!
তৃতীয় স্তর মুবারক-এ হচ্ছেন মহাসম্মানিত হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনারা এবং মহাসম্মানিতা হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনারা এবং উনাদের মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম ও মহাসম্মানিতা আওলাদ
আলাইহিন্নাস সালামগণ উনারা।” সুবহানাল্লাহ!
তাহলে উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল, সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম-কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে।
সুবহানাল্লাহ! এক কথায় উনারা শুধু যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া যত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক রয়েছেন, সমস্ত কিছুর অধিকারিণী হচ্ছেন উনারা। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই উনার সাথে সৃষ্টি জগতের কারো ক্বিয়াস বা তুলনা যাবে না। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুন নিসায়িল আলামীন উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত
পবিত্রতা মুবারক
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্রতা
মুবারক সম্পর্কে স্বয়ং যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اِنَّـمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُـطَـهِّـرَكُمْ تَطْهِيْرًا.
অর্থ: “হে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! নিশ্চয়ই
মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে আপনাদেরকে পবিত্র
করার মতো পবিত্র করতে। অর্থাৎ তিনি আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক
করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত
শরীফ ৩৩)
এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন,
هُمْ اَهْلُ بَيْتٍ طَهَّرَهُمُ اللهُ مِنَ السُّوْءِ وَاخْتَصَّهُمْ بِرَحْمَتِهٖ
অর্থ: “উনারা হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম।
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা ও পাপ থেকে পূত-পবিত্র রেখেছেন
এবং উনার সম্মানিত রহমত মুবারক দ্বারা খাছ করে নিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
فَاَنَا وَاَهْلُ بَيْتِـىْ مُطَهَّرُوْنَ مِنَ الذُّنُوْبِ.
অর্থ: “আমি এবং আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম
আমরা সকলেই যুনূব তথা সমস্ত প্রকার ছগীরা-কবীরা এবং যাবতীয় অপছন্দনীয় কাজ থেকে পূত-পবিত্র।”
সুবহানাল্লাহ! (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ লিল বায়হাক্বী, শিফা ১/৩২৫,
সীরাতে
হালাবিয়্যাহ ১/৪২, আল মা’রিফাতু ওয়াত
তারীখ ১/৪৯৮, খছাইছুল কুবরা ১/৬৬, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/২৩৫, তাফসীরে দুররে মানছূর লিস সুয়ূত্বী ৬/৬০৬, তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম ৯/৩১৩৩ ইত্যাদি)
সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اَنَّ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُوْلُ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ طَهَّرَهُمُ اللهُ مِنْ شَجَرَةِ النُّبُوَّةِ وَمَوْضِعِ الرِّسَالَـةِ وَمُـخْتَلِفِ الْمَلَائِكَةِ وَبَيْتِ الرَّحْمَةِ وَمَعْدِنِ الْعِلْمِ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
সবসময় ইরশাদ মুবারক করতেন, আমরা মহাসম্মানিত ও
মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে (আমাদেরকে)
সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক উনার বৃক্ষ,
সম্মানিত
রিসালাত মুবারক উনার স্থান, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস
সালাম উনাদের, উনাদের দ্বারা সম্মানিত
খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক
উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারক উনার খনি মুবারক (ইত্যাদি সমস্ত কিছু) থেকে
পবিত্র রেখেছেন, ছমাদ তথা বেনিয়ায
(অমুখাপেক্ষী) করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে দুররে
মানছূর ৬/৬০৬, তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম
৯/৩১৩৩)
ইমামুল মুহাদ্দিছীন মিনাল আউওয়ালীন ইলাল আখিরীন, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা
ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আলোচ্য সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে-
اَهْلُ بَيْتٍ نَـحْنُ (আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত
আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম) বলেÑ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে উনার নিজের অন্তর্ভুক্ত
করে নিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! আর طَهَّرَهُمُ الله - মহান আল্লাহ পাক
তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে পবিত্র
করেছেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থ হলো- মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত
আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী) করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস
সালাম উনারা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের মুহতাজ ও উনাদের সম্মানার্থে
উনারা সম্মানিত এবং উনাদের প্রতিই উনারা দায়েমীভাবে রুজু। সুবহানাল্লাহ! ফলে উনারা
সমস্ত কিছু থেকেই বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক,
সম্মানিত
রিসালাত মুবারক, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস
সালাম উনাদের, উনাদের দ্বারা সম্মানিত
খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক
উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারক উনার খনি মুবারক ইত্যাদি বরকতময় নিয়ামত মুবারক
উনাদের প্রতি রুজু হওয়ার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম
উনাদের কোন সুযোগ নেই। অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস
সালাম উনারা সমস্ত কিছু থেকে পবিত্র,
ছমাদ
তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কারণেই সম্মানিত নুবুওওয়াত
মুবারক, সম্মানিত রিসালাত মুবারক, সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা, সম্মানিত রহমত মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারকসহ
সমস্ত কিছুই ফযীলতপ্রাপ্ত হয়েছেন, সম্মানিত হয়েছেন।”
সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اَللهُ الصَّمَدُ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)।” সুবহানাল্লাহ!
(সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ইখলাছ শরীফ,
সম্মানিত
ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২)
ইমামুল মুফাসসিরীন মিনাল আউওয়ালীন ইলাল আখিরীন, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা
ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যেমন সমস্ত মাখলূকাত থেকে, সমস্ত কিছু থেকে ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)।
সুবহানাল্লাহ! ঠিক তেমনিভাবে নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
একমাত্র যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত সমস্ত মাখলূকাত থেকে, সমস্ত কিছু থেকে ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)।
সুবহানাল্লাহ! আর ঠিক একইভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস
সালাম উনারাও যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
অর্থাৎ উনারা ব্যতীত সমস্ত কায়িনাত থেকে,
সমস্ত
কিছু থেকে ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)। সুবহানাল্লাহ!
উনারা মহাসম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক,
সম্মানিত
রিসালাত মুবারক, বিভিন্ন হযরত ফেরেশতা
আলাইহিমুস সালাম উনাদের, উনাদের দ্বারা সম্মানিত
খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক
উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম উনার খনি মুবারক ইত্যাদি সমস্ত কিছু থেকে পবিত্র, ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)। সুবহানাল্লাহ!
সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! উনাদের শান-মান,
ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মান মুবারক এক কথায় উনারা শুধু মহান
আল্লাহ পাক তিনি নন এবং উনার হাবীব,
নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন। এছাড়া যত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত,
বুযূর্গী-সম্মান
মুবারক রয়েছেন, সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী হচ্ছেন উনারা। সুবহানাল্লাহ!
উনারা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের মুহতাজ। এছাড়া কায়িনাতের
অন্য কারো মুহতাজ নন; বরং কায়িনাতের সকলেই
উনাদের মুহতাজ। সুবহানাল্লাহ!
তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত
পবিত্রতা মুবারক, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কত বেমেছাল, তা এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! যদি
তাই হয়ে থাকে, তাহলে মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মূল উম্মাহাতুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস
সালাম উনাদের মহাসম্মানিত পবিত্রতা মুবারক,
শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল, সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার ঊর্ধ্বে।
যা কস্মিনকালেও ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সুবহানাল্লাহ! তবে এক কথায় উনারা শুধু যিনি
খ¦ালিক মালিক রব মহান
আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
নন; এছাড়া যত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক রয়েছেন, সমস্ত কিছুর অধিকারিণী উনারা। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত
ছানা-ছিফত মুবারক
সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ بَيْنَا رَأْسُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِـىْ حِجْرِىْ فِـىْ لَيْلَةٍ ضَاحِيَةٍ اِذْ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَلْ يَكُوْنُ لِاَحَدٍ مِّنَ الْـحَسَنَاتِ عَدَدُ نُـجُوْمِ السَّمَاءِ قَالَ نَعَمْ حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ قُلْتُ فَاَيْنَ حَسَنَاتُ حَضْرَتْ اَبِـىْ بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ اِنَّـمَا جَمِيْعُ حَسَنَاتِ حَضْرَتْ عُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ كَحَسَنَةٍ وَّاحِدَةٍ مِّنْ حَسَنَاتِ حَضْرَتْ اَبِـىْ بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম
উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক জ্যোস্নার রাতে
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার সম্মানিত কোল মুবারক-এ সম্মানিত মাথা
মুবারক রেখে শুয়ে ছিলেন। আমি বললাম,
ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
কারো কি আকাশের তারকার সমপরিমাণ নেকী মুবারক রয়েছে? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হ্যা, ফারূক্বে আ’যম হযরত
উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার আকাশের তারকার সমপরিমাণ নেকী মুবারক রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
তখন আমি বললাম, তাহলে ছিদ্দীক্বে আকবর
সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নেকী মুবারক উনার
পরিমাণ কত?
জবাবে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস
সালাম উনার জিন্দেগীর সমস্ত নেকী মুবারক হচ্ছে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস
সালাম উনার একখানা সম্মানিত নেকী মুবারক উনার সমান।” সুবহানাল্লাহ! (রযীন শরীফ, জামিউল উছূল শরীফ লিইবনে আছীর, মিশকাত শরীফ)
আর তাহচ্ছে আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, ছিদ্দীক্বে আকবর সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস
সালাম তিনি সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার সময় সম্মানিত সাওর গুহা মুবারক-এ চার দিন তিন
রাত্রি মুবারক নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়ে যেই নেকী মুবারক অর্জন
করেছিলেন, সেই সম্মানিত নেকী মুবারক।
সেই সম্মানিত খেদমত মুবারকখানা হচ্ছেন,
সাইয়্যিদুনা
হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার জিন্দেগীর সমস্ত নেকী মুবারক উনার সমান। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১লা রবী‘উল আউওয়াল শরীফ লাইলাতুল খমীস শরীফ ফজরের
পূর্বে সম্মানিত সাওর গুহা মুবারক-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রাখেন এবং মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র ৫ই রবী‘উল আউওয়াল শরীফ লাইলাতুল ইছনাইনিল ‘আযীম শরীফ অন্ধকার হওয়ার সাথে
সাথে সেখান থেকে বের হন। সুবহানাল্লাহ!
এখন বলার বিষয় হচ্ছে যে, যদি সাইয়্যিদুনা হযরত
ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার সময় সম্মানিত সাওর
গুহা মুবারক-এ চার দিন তিন রাত্রি মুবারক নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়ে এতো বেমেছাল নেকী মুবারক
অর্জন করেন যে, সেই সম্মানিত নেকী
মুবারক সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার জিন্দেগীর সমস্ত নেকী মুবারক
উনার সমান হয়। সুবহানাল্লাহ! তাহলে উম্মাহাতুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত
কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি যে, একাধারে ২৪ বছর ৪ মাস
২৫ দিন বেমেছালভাবে সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিলেন, যার কোন মেছাল নেই, পৃথিবীর ইতিহাসে কারো পক্ষে এরূপ বেমেছাল সম্মানিত
খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া সম্ভব হয়নি, আর হবেও না।
তাহলে উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সম্মানিত নেকী মুবারক উনার
পরিমাণ কতো সীমাহীন হবেন, সেটা জিন-ইনসানের চিন্তা
ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল, তা কেউ ভাষা দিয়ে প্রকাশ করতে পারবে? কস্মিনকালেও নয়। সুবহানাল্লাহ! সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে।
সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اِنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا اُسْرِىَ بِهٖ لَيْلَةَ الْمِعْرَاجِ اِلَى السَّمٰوَاتِ الْعُلـٰى وَوَصَلَ اِلَى الْعَرْشِ الْمُعَلّٰى اَرَادَ خَلْعَ نَعْلَيْهِ اَخْذًا مِّـنْ قَوْلِهٖ تَعَالـٰى لِسَيِّدِنَا حَضْرَتْ مُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ حِيْنَ كَلَّمَهٗ فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَ اِنَّكَ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى. فَنُوْدِىَ مِنَ الْعَـلِـىِّ الْاَعْلـٰى يَا حَضْرَتْ مُـحَمَّدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَـخْلَعْ نَعْلَيْكَ فَاِنَّ الْعَرْشَ يَتَشَرَّفُ بِقُدُوْمِكَ مُتَنَعِّـلًا وَّيَفْتَخِرُ عَلـٰى غَيْرِهٖ مُتَـبَـرِّكًـا فَصَعِدَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلَى الْعَرْشِ وَفِىْ قَدَمَيْهِ النَّعْلَانِ وَحَصَلَ لَهٗ بِذٰلِكَ عِزٌّ وَّشَأْنٌ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিইয়্যীন,
নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সম্মানিত মি’রাজ শরীফ উনার রাতে সুউচ্চ সপ্ত আসমান অতিক্রম
করে সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক উনার নিকটবর্তী হলেন, তখন তিনি উনার সম্মানিত ও পবিত্র না’লাইন শরীফ খুলে সম্মানিত
আরশে আযীম মুবারক-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নেয়ার চিন্তা মুবারক করলেন। মহান আল্লাহ
পাক উনার ওই সম্মানিত ও পবিত্র কালাম মুবারক ফিকির মুবারক করে, যেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি (যখন সাইয়্যিদুনা হযরত
কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি তূর পাহাড়ে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কথা বলার জন্য
তাশরীফ মুবারক রাখবেন, তখন) হযরত কালীমুল্লাহ
আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেছিলেন-
فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَ اِنَّكَ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى.
‘আপনি আপনার সম্মানিত
না’লাইন শরীফ খুলুন। কেননা আপনি সম্মানিত (তূর পাহাড়ের) পবিত্র তুয়া উপত্যকায় তাশরীফ
মুবারক গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। (সেখানে আমার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক উনার ৭০ হাজার
ভাগের এক ভাগ সম্মানিত নূর মুবারক বর্ষিত হয়েছেন। যার কারণে সেই স্থানটি সম্মানিত ও
পবিত্র হয়ে গেছেন। সুবহানাল্লাহ! তাই আপনি সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলে আসুন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই বিষয়টি ফিকির
করে উনার সম্মানিত ও পবিত্র না’লাইন শরীফ খুলার চিন্তা মুবারক করেছিলেন মাত্র।) তখন
মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ওহী মুবারক করলেন, হে আমার হাবীব,
নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া
করে আপনি আপনার সম্মানিত ও পবিত্র না’লাইন শরীফ খুলবেন না। অর্থাৎ আপনি আপনার সম্মানিত
ও পবিত্র না’লাইন শরীফসহ আমার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক
গ্রহণ করুন। সুবহানাল্লাহ! কেননা আমার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক আপনার সম্মানিত ও
পবিত্র না’লাইন শরীফ উনাদের পরশ মুবারক-এ,
আপনার
সম্মানিত ও পবিত্র না’লাইন শরীফ উনাদের সম্মানিত ও পবিত্র ধূলি-বালি মুবারক উনাদের
স্পর্শ মুবারক-এ ধন্য হবেন, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক হাছিল করবেন। সুবহানাল্লাহ! (শুধু তাই
নয়,) আমার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক
আপনার সম্মানিত ও পবিত্র না’লাইন শরীফ উনাদের সম্মানিত স্পর্শ মুবারক পাওয়ার কারণে, আপনার সম্মানিত ও পবিত্র না’লাইন শরীফ উনাদের সম্মানিত
ও পবিত্র ধূলি-বালি মুবারক লাভ করে বরকতময় হয়ে আরো পবিত্রতা হাছিল করবেন এবং অন্য সবার
উপর ফখর করবেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত ও পবিত্র না’লাইন শরীফ পরিধান মুবারক
করা অবস্থাতেই সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। আর
সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সম্মানিত ও পবিত্র না’লাইন শরীফ উনাদের সম্মানিত স্পর্শ মুবারক লাভ করে, সম্মানিত ও পবিত্র না’লাইন শরীফ উনাদের সম্মানিত
ও পবিত্র ধূলি-বালি মুবারক পেয়ে ইজ্জত-সম্মান, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক হাছিল করলেন।” সুবহানাল্লাহ!
(ফাতহুল মুত‘য়াল ফী মাদহি খইরিন নি‘য়াল শরীফ)। অনুরূপ বর্ণনা দশম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ
হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘ই’জাযুল
কুরআন শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এখন বলার বিষয় হচ্ছে, হযরত মূসা কালীমুল্লাহ
আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন একজন জলীলুল ক্বদর নবী এবং রসূল। সুবহানাল্লাহ! যদি কিতাব
হিসেবে ধরা হয়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিষয়টি আলাদা।
এছাড়া অন্যান্য সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে হযরত কালীমুল্লাহ
আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন প্রথম। সুবহানাল্লাহ! আর উনাকেই তূর পাহাড়ে যেতে হয়েছিলো
উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলে। কেননা সেখানে সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক উনার সত্তর
হাজার ভাগের এক ভাগ নূর মুবারক যাহির হয়েছিলো। অন্যদিকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সরাসরি স্পর্শ মুবারক পেয়েছেন উনার সম্মানিত ও পবিত্র না’লাইন শরীফ। আর
সম্মানিত ও পবিত্র না’লাইন শরীফ উনাদের স্পর্শ মুবারক পেয়েছে ধূলি-বালি। ফলে ধূলি-বালি
এতো পবিত্রতা, ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক হাছিল করলেন যে, সম্মানিত মি’রাজ শরীফ উনার রজনীতে স্বয়ং মহান আল্লাহ
পাক উনার মূল সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক সেই সম্মানিত ও পবিত্র ধূলি-বালি মুবারক লাভ
করার জন্য বেক্বারার-পেরেশান হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, সম্মানিত ও পবিত্র না’লাইন শরীফ উনাদের সম্মানিত
ও পবিত্র ধূলি-বালি মুবারক পেয়ে স্বয়ং সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক ধন্য হলেন, মর্যাদা-মর্তবা মুবারক হাছিল করলেন, সম্মানিত হলেন, বরকতময় হলেন এবং আরো পবিত্রতা হাছিল করলেন; এমনকি এই কারণে অন্য সকলের উপর ফখর করলেন। সুবহানাল্লাহ!
যদি এই বিষয়টি এরূপ হয়, তাহলে উম্মাহাতুল মু’মিনীন
আলাইহিন্নাস সালাম উনারা যে সরাসরি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ছোহবত মুবারক-এ থাকলেন, উনার সাথে অবস্থান মুবারক করলেন এবং বেমেছালভাবে
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিলেন, আর উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সরাসরি স্পর্শ
মুবারক-এ যে ধূলি-বালি এসেছেন, সেই সম্মানিত ও পবিত্র
ধূলি-বালি মুবারক উনাদের ফযীলত, মর্যাদা, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক ও পবিত্রতা মুবারক উনার
হুকুম কী? অবশ্যই অবশ্যই সেই সম্মানিত
ও পবিত্র ধূলি-বালি মুবারক উনাদের ফযীলত,
মর্যাদা, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক ও পবিত্রতা মুবারকও আসমান-যমীন, সম্মানিত কা’বা শরীফ, সম্মানিত কুরসী শরীফ এবং মহান আল্লাহ পাক উনার
আরশে আযীম মুবারক থেকেও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি হবে। সুবহানাল্লাহ!
শুধু তাই নয়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র না’লাইন শরীফ উনাদের ধূলি-বালি মুবারক পেয়ে সম্মানিত
আরশে আযীম মুবারক যেরূপ ধন্য হয়েছিলেন,
মর্যাদা-মর্তবা
হাছিল করেছিলেন, সম্মানিত হয়েছিলেন, বরকতময় হয়েছিলেন এবং আরো পবিত্রতা হাছিল করেছিলেন, উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের
সরাসরি স্পর্শ মুবারক পেয়েছেন যে ‘সম্মানিত ও পবিত্র ধূলি-বালি মুবারক’ সেই সম্মানিত
ও পবিত্র ধূলি-বালি মুবারক পেলেও মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক আরো
লক্ষ-কোটি গুণ বেশি ধন্য হবেন, মর্যাদা-মর্তবা মুবারক
হাছিল করবেন, সম্মানিত হবেন, বরকতময় হবেন এবং পবিত্রতা হাছিল করবেন। সুবহানাল্লাহ!
আরো স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র
না’লাইন শরীফ উনাদের সম্মানিত ও পবিত্র ধূলি-বালি মুবারক পেয়ে সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক
যেমনিভাবে আরো পবিত্রতা হাছিল করেছেন,
সম্মানিত
ও বরকতময় হয়েছেন এবং সকলের উপর ফখর করেছেন,
তেমনিভাবে
উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সম্মানিত ও পবিত্র না’লাইন শরীফ উনাদের
সম্মানিত ও পবিত্র ধূলি-বালি মুবারক পেলেও সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক আরো পবিত্রতা
হাছিল করবেন, সম্মানিত ও বরকতময়
হয়ে যাবেন এবং সকলের উপর ফখর করবেন। সুবহানাল্লাহ!
মূলত উনারা শুধু যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া যত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক রয়েছেন, সমস্ত কিছুর অধিকারিণী উনারা। সুবহানাল্লাহ!
এই বিষয়গুলো কিন্তু শুধু যাঁরা হাক্বীক্বী ঈমানদার একমাত্র উনারাই বুঝবেন, উপলব্ধি করবেন এবং বীনা চূ-চেরা, ক্বীল-ক্বালে মেনে নিবেন। কিন্তু যারা মুনাফিক্ব
তারা এই বিষয়গুলো কস্মিনকালেও বুঝবে না,
উপলব্ধি
করার তো প্রশ্নোই উঠে না; বরং নানা চূ-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করবে। না‘ঊযুবিল্লাহ!
এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَلِلّٰهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُوْلِهٖ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَلٰكِنَّ الْمُنٰفِقِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
অর্থ: “সমস্ত ইজ্জত তথা শান-মান,
ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক একমাত্র যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান
আল্লাহ পাক উনার জন্য, উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
(এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বা আলাইহিস সালাম উনার এবং মহাসম্মানিতা হযরত আম্মা
আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের,
মহাসম্মানিতা
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত
আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের) জন্য এবং (উনাদের সাথে নিসবত স্থাপন করার কারণে)
মু’মিনীন উনাদের জন্য। সুবহানাল্লাহ! কিন্তু মুনাফিক্বরা তা জানে না, বুঝে না।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ:
সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৮)