হস্তি বাহিনীর ধ্বংস এবং সংশ্লিষ্ট মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘটনা মুবারকসমূহ -২২ শে মুহরমুল হারাম শরীফ


 হস্তি বাহিনীর ধ্বংস এবং সংশ্লিষ্ট মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘটনা মুবারকসমূহ (১ম পর্ব) 

 কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার পরিচিতি:

ইয়ামানের নাজরান প্রদেশে হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার প্রকৃত অনুসারীদের অবশিষ্ট কিছু লোক তখনও বেঁচে ছিলেন। উনারা ছিলেন জ্ঞানী-গুণী ও সুদৃঢ় মনোবলের অধিকারী। উনাদের সাইয়্যিদ ছিলেন আবুদল্লাহ ইবনে ছামির। ইয়াহূদী বংশদ্ভুত যূ-নাওয়াস নামক এক জালিম শাসক উনাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে ইহুদী ধর্ম গ্রহণের দাওয়াত দেয় এবং পরিষ্কার বলে দেয়, “হয় ইহুদী হও, অন্যথায় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও।” উনারা ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। যার ফলে উনাদের জন্য সে পরিখা খনন করে। শেষ পর্যন্ত উনাদেরকে সেখানে ফেলে নির্মমভাবে আগুনে পুড়িয়ে মারে এবং অনেককে তরবারি দিয়ে হত্যা করে উনাদের লাশ বিকৃত করে। এভাবে যালিম যূ-নাওয়াস প্রায় ২০ হাজার লোককে হত্যা করে। 

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, 

 قُتِلَ أَصْحَابُ الْأُخْدُودِ. النَّارِ ذَاتِ الْوَقُودِ. إِذْ هُمْ عَلَيْهَا قُعُودٌ. وَهُمْ عَلَى مَا يَفْعَلُونَ بِالْمُؤْمِنِينَ شُهُودٌ. وَمَا نَقَمُوا مِنْهُمْ إِلَّا أَنْ يُؤْمِنُوا بِاللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ

অর্থ: “ধ্বংস হয়েছে গর্তওয়ালারা বা গর্তের অধিকারীরা। (যে গর্ত) ইন্দনবিশিষ্ট অগ্নিকু-ে পরিপূর্ণ। স্মরণ করুন, ঐ সময়ের কথা যখন তারা তার কিনারে বসা ছিলো এবং মু’মিনদের (হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার দীনের অনুসারীদের) প্রতি তারা যে হত্যাকা- চালাচ্ছিলো তারা সেই দৃশ্য উপভোগ করছিলো। না‘ঊযুবিল্লাহ! মু’মিনদের প্রতি তাদের শুধু এই কারণেই আক্রোশ ছিলো যে, উনারা প্রশংসিত মহাপরাক্রমশীল মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান এনেছিলেন।” (সম্মাানিত ও পবিত্র সূরা বুরূজ শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৪-৮)

এই নির্মম হত্যাকা- থেকে সাবা গোত্রের দাউস যূ-সুলুবান নামক এক ব্যক্তি সুকৌশলে বেঁচে গিয়ে রোম শাসক কাইছারের নিকট এই নির্মম হত্যাকা-ের প্রতিশোধ নেয়ার ব্যাপারে সাহায্য প্রার্থনা করে। তখন কাইছার বলে, ‘তোমার দেশ আমার এখান থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। তাই আমি হাবশা তথা আবিসিনিয়ার রাজাকে চিঠি প্রেরণ করবো। সেও আমার ধর্মাবলম্বী। তাছাড়া তার দেশও তোমার দেশের কাছাকাছি।’ তারপর দাউস যূ সুলুবান রোম শাসক কাইছারের চিঠি নিয়ে হাবশার শাসকের কাছে হাজির হলো। তখন হাবশার শাসক সত্তর হাজার সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী দাউসের সাথে পাঠিয়ে দিলো। আর সেই বাহিনীর সেনাপতি করা হলো ‘আরিয়াত’ নামক এক ব্যক্তিকে। তার সহযোগী হিসেবে ঐ বাহিনীতে আবরাহা আল আশরাম তথা নাক কাটা আবরাহা সেও ছিলো। 

আরিয়াতের রওনার খবর পেয়ে যূ-নাওয়াস এবং তার অনুগামী অন্যান্য ইয়ামানী গোত্র আরিয়াতের সৈন্যদের বাধা দিতে এগিয়ে গেলো। উভয় পক্ষে তুমুল লড়াই হলো। অবশেষে যূ-নাওয়াসের দলবল পরাজিত হলো। এ অবস্থায় যূ-নাওয়াস তার ঘোড়া নিয়ে সমুদ্রের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং সেখানেই সে মারা গেলো। আর এখানেই যালিম যূ-নাওয়াস ও তার ইহুদীবাদী শাসনের অবসান ঘটলো এবং আরিয়াত ইয়ামানে প্রবেশ করে সিংহাসনে আরোহণ করলো। (ইবনে হিশাম, আর রওদ্বুল উন্ফ)

 সেটাই মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন, 

قُتِلَ أَصْحَابُ الْأُخْدُودِ.

অর্থ: “ধ্বংস হয়েছে গর্তওয়ালারা বা গর্তের অধিকারীরা।” (সম্মাানিত ও পবিত্র সূরা বুরূজ শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৪-৮)

অতঃপর আরিয়াত দীর্ঘদিন ইয়ামানের শাসন পরিচালনা করে। তারপর কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা আরিয়াতের সাথে দ্বন্দে লিপ্ত হয়। সে মিথ্যা দাবী করে বলে যে, রাজার প্রতিনিধি হিসেবে ইয়ামান শাসন করার অধিকার তারই বেশী। এই প্রশ্নে হাবশী সৈন্যরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে যুদ্ধের উপক্রম হলে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা আরিয়াতকে এই বলে বার্তা পাঠায় যে, “হাবশীরা পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হলে নিজেরাই ধবংস হযে যাবে, পরিণামে কোন লাভ হবে না। সুতরাং আসো আমরা দু’জন সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হই। আমাদের দু’জনের মধ্যে যে বিজয়ী হবে, সমস্ত সৈন্যবাহিনী তার আনুগত্য করবে।” সরলমনা আরিয়াত কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার চক্রান্ত বুঝতে না পেরে এই প্রস্তাবে রাজী হয়ে বললো, “হ্যাঁ, তুই  ঠিকই বলেছিস।” তারপর আরিয়াত ও আবরাহার মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হলো। কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা নিজের আত্মরক্ষার জন্য তার অনুগত এক ক্রীতদাসকে পিছনের দিকে রাখে। আরিয়াত তার তরবারি দ্বারা কাট্টা যালিম আবরাহার মাথায় আঘাত করলো, কিন্তু তা তার মুখম-লের উপর লাগলো। এতে কাট্টা যালিম আবরাহার নাক ও কপালের ভ্রু কেটে গেল এবং ঠোঁট ও চোখ আঘাতপ্রাপ্ত হলো। এ কারণেই তাকে আবরাহা আল-আশরাম বা নাক কাটা আবরাহা বলা হয়। তখন কাট্টা যালিম আবরাহার ক্রীতদাস পিছন থেকে এসে আরিয়াতকে আক্রমণ করে হত্যা করলো। এরপর আরিয়াতের অনুগত হাবশী সৈন্যরা আবরাহার দলে চলে যায় এবং নাক কাটা আবরাহা আবিসিনিয়ার প্রতিনিধিরূপে ইয়ামান শাসন করতে থাকে। 

হস্তি বাহিনী ধ্বংসের ঘটনা:

 কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা জানতে পারলো যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে এমন একখানা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক রয়েছেন, যেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ বলা হয়। উনাকে সমস্ত মানুষ অত্যন্ত সম্মান, তা’যীম-তাকরীম করেন, উনাকে তাওয়াফ করেন এবং উনাকে কেন্দ্র করে হজ্জ সম্পাদন করেন। সুবহানাল্লাহ! তখন সে হিংসাবশত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র  কা’বা শরীফ উনার বিকল্প হিসেবে, উনাকে ইহানত করার জন্য এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ কেন্দ্রীক হজ্জ ও তাওয়াফ বন্ধ করার জন্য ইয়ামানের সানা শহরে একটি গির্জা তৈরী করে। যাকে ‘খলীছা’ নামে নামকরণ করা হয়। এই সংবাদ যখন আরবগণ শুনলেন, তখন কিছু আরব ব্যবসায়ী ইয়ামানে ব্যবসার উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন এবং এই গির্জায় রাতে অবস্থান করেছিলেন। উনারা সেখান থেকে রওনা দেয়ার পূর্বে উনাদের মধ্য থেকে একজন গোস্বা করে নাক কাটা আবরাহার নিকৃষ্ট কাজের প্রতিবাদে এই গির্জার এককোণে ইস্তেন্জা করে চলে আসেন। এটা দ্বারা তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, “এই গীর্জা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার বিকল্প হতে পারে না এবং এটা কখনোই হজ্জের কেন্দ্র হওয়ার যোগ্য নয়।” তখন কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা এই খবর শুনতে পেয়ে ভীষণভাবে রেগে যায় এবং সে অঙ্গীকার করে অবশ্যই সে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে ধ্বংস করে ফেলবে। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!

হাবশীদেরকে সে তার নিকৃষ্ট মনোবাসনা জানালে হাবশীরা সব রকমের উপকরণ ও সরঞ্জাম দিয়ে তাকে প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। যথাসময়ে সে একদল হস্তী নিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ অভিযানে বেরিয়ে পড়ে। আরবরা ব্যাপারটা জানতে পেরে অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েন। মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা ধ্বংস করতে চায় শুনে আরবগণ উপলব্ধি করলেন যে, তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা উনাদের একান্ত কর্তব্য।

কাট্টা যালিম আবরাহার নিকৃষ্ট কাজের প্রতিবাদ এবং তাকে প্রতিহত করার চেষ্টা:

ইয়ামানের জনৈক সম্ভ্রান্ত ও প্রভাবশালী ব্যক্তি ‘যূ-নফর’ সমগ্র ইয়মানবাসী এবং অন্যান্য আরবদেরকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে রক্ষা করার জন্য কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার বিরূদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হতে আহ্বান জানান। যারা উনার আহ্বানে সাড়া দেয়, তিনি তাদের নিয়ে আবারাহার বিরুদ্ধে জিহাদ করলেন। কিন্তু যূ-নফর উনার বাহিনী সুবিধা করতে পারেননি। ফলে তিনি বন্দী হন। এরপর কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা তার হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। 

‘খাস’য়াম’ নামক গোত্রের এলাকায় পৌঁছলে নুফাইল ইবনে হাবীব আল্ খাসয়ামী দু’টি খাসয়ামী গোত্র শাহরান ও নাহিস এবং আরো কয়েকটি সমমনা আরব গোত্রকে সাথে নিয়ে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। যুদ্ধে নুফাইলও সদলবলে পরাজিত ও বন্দী হয়। 

কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা নুফাইলকে মুক্তি দিলে নুফাইল তার পথ প্রদর্শক হিসেবে সহযাত্রী হয়। 

কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা যখন তায়েফের উপর দিয়ে এগিয়ে চলে, তখন সাকীফ গোত্রের কিছু লোকজন নিয়ে মাস‘ঊদ ইবনে মু’আততিব তার সাথে সাক্ষাৎ করে এবং তাকে বলে, “হে রাজা, আমরা একান্ত অনুগত গোলামতুল্য। তোমার বিরোধী নই আমরা। তুমি যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনাকে লক্ষ্য করে চলেছো, ওটা আমাদের উপাসনার ঘর নয়। তুমি তো চাইছো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার মহসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক-এ হামলা চালাতে। বেশ; আমরা তোমার পথপ্রদর্শক হিসেবে একজন লোক সঙ্গে দিচ্ছি। সে তোমাকে দেখিয়ে দেবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ।”

কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা তাদের প্রতি প্রীত ও সদয় হয়। তায়েফবাসী তার সাথে ‘আবূ রিগাল’ নামক এক নিকৃষ্ট ব্যক্তিকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার পথ দেখিয়ে দেয়ার জন্য পাঠায়। আবরাহা ও তার দলবলকে সাথে নিয়ে ‘মুগাম্মাস’ নামক স্থানে উপনীত হলে আবু রিগাল মারা যায়। (‘মুগাম্মাস’ হচ্ছে তায়েফগামী পথে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার নিকটবর্তী একটি স্থানের নাম।) পরবর্তীকালে আরববাসী আবূ রিগালের কবরে পাথর নিক্ষেপ করতো এবং আজও ‘মুগাম্মাস’ নামক স্থানে তার কবরে মানুষ পাথর নিক্ষেপ করে থাকে।

কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা ‘মুগাম্মাস’ নামক স্থানে যাত্রাবিরতি করা অবস্থায় ‘আসওয়াদ বিন মাকসূদ’ নামক এক হাবশী ব্যক্তিকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ পরিদর্শনে পাঠায়। আসওয়াদ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ পর্যন্ত যায় এবং ফিরে আসার সময় উপত্যকায় চারণভূমিতে বিচরণশীল কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্রের লোকদের গবাদি পশু লুট করে নিয়ে আসে। এইসব গবাদি পশুর মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুইশত উটও ছিল। তিনি ঐ সময় কুরাইশ উনাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি এবং উনাদের সাইয়্যিদ তথা প্রধান ছিলেন। গবাদি পশু লুট করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ ঐ এলাকার কুরাইশ, কিনানা এবং হুযাইল গোত্র আবরাহার বিরূদ্ধে জিহাদ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উনাদের অপ্রস্তুতির কারণে উনারা সেই ইচ্ছা ত্যাগ করেন। (ইবনে হিশাম, আর রওদ্বুল উন্ফ)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার বার্তা বাহক:

এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,

وَبَعَثَ أَبْرَهَةُ حُنَاطَةَ الْحِمْيَرِيّ إلَى مَكّةَ وَقَالَ لَهُ سَلْ عَنْ سَيّدِ أَهْلِ هَذَا الْبَلَدِ وَشَرِيفِهَا، ثُمّ قُلْ لَهُ إنّ الْمَلِكَ يَقُولُ لَك : إنّي لَمْ آتِ لِحَرْبِكُمْ إنّمَا جِئْت لِهَدْمِ هَذَا الْبَيْتِ فَإِنْ لَمْ تَعْرِضُوا دُونَهُ بِحَرْبِ فَلَا حَاجَةَ لِي بِدِمَائِكُمْ فَإِنْ هُوَ لَمْ يُرِدْ حَرْبِي ، فَأْتِنِي بِهِ فَلَمّا دَخَلَ حُنَاطَةُ مَكّةَ ، سَأَلَ عَنْ سَيّدِ قُرَيْشٍ وَشَرِيفِهَا ، فَقِيلَ لَهُ عَبْدُ الْمُطّلِبِ بْنُ هَاشِمٍ فَجَاءَهُ فَقَالَ لَهُ مَا أَمَرَهُ بِهِ أَبْرَهَةُ فَقَالَ لَهُ عَبْدُ الْمُطّلِبِ : وَاَللّهِ مَا نُرِيدُ حَرْبَهُ وَمَا لَنَا بِذَلِكَ مِنْ طَاقَةٍ هَذَا بَيْتُ اللّهِ الْحَرَامِ وَبَيْتُ خَلِيلِهِ إبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السّلَامُ - أَوْ كَمَا قَالَ - فَإِنْ يَمْنَعْهُ مِنْهُ فَهُوَ بَيْتُهُ وَحَرَمُهُ وَإِنْ يُخَلّ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ فَوَاَللّهِ مَا عِنْدَنَا دَفْعٌ عَنْهُ فَقَالَ لَهُ حُنَاطَةُ فَانْطَلِقْ مَعِي إلَيْهِ فَإِنّهُ قَدْ أَمَرَنِي أَنْ آتِيَهُ بِك . 

অর্থ: “কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা ‘হুনাতাহ আল হিমইয়ারী’ নামক এক ব্যক্তিকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ পাঠায় এবং বলে দেয় যে, ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব মুবারক এবং যিনি সাইয়্যিদ তথা প্রধান, উনাকে চিনে নিবে। অতঃপর উনাকে বলবে যে, আমি (কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা) আপনাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসেনি। আমি এসেছি শুধু মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে ধ্বংস করতে। (না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!) আপনারা যদি এই কাজে বাধা দিতে কোনো যুদ্ধ-জিহাদে লিপ্ত না হন, তাহলে আপনাদের রক্তপাতের কোনো প্রয়োজন আমার নেই। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব মুবারক এবং যিনি সাইয়্যিদ তথা প্রধান তিনি যদি যুদ্ধ-জিহাদ না করতে চান, তাহলে উনাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে।’ অতঃপর হুনাত্বাহ নামক ঐ ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ প্রবেশ করে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব মুবারক এবং সাইয়্যিদ হচ্ছেন- সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সে উপস্থিত হয়ে হয়ে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা তাকে যা বলতে বলেছিলো তা বললো। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে বললেন,

وَاَللّهِ مَا نُرِيدُ حَرْبَهُ وَمَا لَنَا بِذَلِكَ مِنْ طَاقَةٍ هَذَا بَيْتُ اللّهِ الْحَرَامِ وَبَيْتُ خَلِيلِهِ إبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السّلَامُ أَوْ كَمَا قَالَ فَإِنْ يَمْنَعْهُ مِنْهُ فَهُوَ بَيْتُهُ وَحَرَمُهُ وَإِنْ يُخَلّ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ فَوَاَللّهِ مَا عِنْدَنَا دَفْعٌ عَنْهُ 

‘মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমরা তার সাথে যুদ্ধ-জিহাদ করতে চাইনা এবং সেই প্রস্তুতিও আমাদের নেই। এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খলীল সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক। অথবা তিনি যেমনটি বলেছেন। কাজেই নিশ্চয়ই তিনিই কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহাকে এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনার ব্যাপারে বাধা দিবেন। এটা উনার নিজস্ব মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক এবং উনার নিজস্ব ইয্যত-সম্মান মুবারক উনার ব্যাপার। আর যদি তিনি বাধা না দেন, তাহলে সেটা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার বিষয়। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহাকে প্রতিহত করার কোনো প্রস্তুতি আমাদের নেই।’

তখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উদ্দেশ্য করে হুনাত্বাহ নামক ঐ ব্যক্তি বললো, 

فَانْطَلِقْ مَعِي إلَيْهِ فَإِنّهُ قَدْ أَمَرَنِي أَنْ آتِيَهُ بِك 

অর্থ: “(দয়া করে) আপনি আমার সাথে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার কাছে চলুন। কারণ অবশ্যই সে আমাকে আদেশ করেছে যে, আমি যেনো আপনাকে তার কছে নিয়ে যাই।”

কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

أَنَّ عَبْدَ الْـمُطَّلِبِ لَـمَّا دَخَلَ عَلٰى اَبْرَهَةَ سَجَدَ لَه فِيْل من الفيلة، 

 অর্থ: “যখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আবরাহার নিকট গেলেন, তখন হাতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হাতিটি উনাকে সিজদা করলো।” সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ) 

কিতাবে বর্ণিত আরো রয়েছেন,

فَلَمَّا نظر الْفِيل إِلَى وَجه حضرت عبد الْمطلب عليه السلام بَرَكَ كَمَا يَبْرُكُ الْبَعِيْرُ وَخَرَّ سَاجِدًا 

অর্থ: “যখন হাতিটি সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখলো, তখন সে উটের ন্যায় হাঁটু গেড়ে বসলো এবং উনার সম্মানার্থে সেজাদয় লুটিয়ে পড়লো।” সুবহানাল্লাহ! (সিমতুন নুজূম)

হস্তি বাহিনীর ধ্বংস এবং সংশ্লিষ্ট মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘটনা মুবারকসমূহ (২য় পর্ব)

 সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গোপন সূত্রে সংবাদ প্রেরণ এবং সংবাদ শুনার পর মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ মুবারক করা

কাট্টা যালিম আবরাহা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাছাকাছি পৌঁছলে এক ব্যক্তি গোপন সূত্রে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট চিরকুটের মাধ্যমে কাট্টা যালিম আবরাহা এবং তার সৈন্য-সামন্ত সম্পর্কিত তথ্য পেশ করে। চিরকুটখানা নি¤œরূপ-

الى عبد المطلب بن هاشم سيد قريش ان ابرهة قادم اليكم بجيش جراد ومعه الفيل لهدم الكعبة

অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদ উনার প্রতি- ‘নিশ্চয়ই কাট্টা যালিম আবরাহা পঙ্গপালের ন্যায় অসংখ্য সৈন্য-সামন্ত নিয়ে আপনাদের দিকে অগ্রসর হয়ে আসছে। আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ ধ্বংস করার জন্য তার সাথে হাতি রয়েছে’।”

চিরকুটের মাধ্যমে এই গোপন সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথেই সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহপবিত্র দরবার শরীফ-এ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ মুবারক করেন- 

يا رب الكعبة احفظ بيتك

অর্থ: “আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আপনি আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনাকে হিফাযত করুন।” সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের বহিঃপ্রকাশ:

কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,

وَكَانَ عَبْدُ الْمُطّلِبِ أَوْسَمَ النّاسِ وَأَجْمَلَهُمْ وَأَعْظَمَهُمْ فَلَمّا رَآهُ أَبْرَهَةُ أَجَلّهُ وَأَعْظَمَهُ وَأَكْرَمَهُ عَنْ أَنْ يُجْلِسَهُ تَحْتَهُ وَكَرِهَ أَنْ تَرَاهُ الْحَبَشَةُ يَجْلِسُ مَعَهُ عَلَى سَرِيرِ مُلْكِهِ فَنَزَلَ أَبْرَهَةُ عَنْ سَرِيرِهِ فَجَلَسَ عَلَى بِسَاطِهِ وَأَجْلَسَهُ مَعَهُ عَلَيْهِ إلَى جَنْبِهِ ثُمّ قَالَ لِتُرْجُمَانِهِ قُلْ لَهُ حَاجَتُك ؟ فَقَالَ لَهُ ذَلِكَ التّرْجُمَانُ فَقَالَ حَاجَتِي أَنْ يَرُدّ عَلَيّ الْمَلِكُ مِئَتَيْ بَعِيرٍ أَصَابَهَا لِي ، فَلَمّا قَالَ لَهُ ذَلِكَ قَالَ أَبْرَهَةُ لِتُرْجُمَانِهِ قُلْ لَهُ قَدْ كُنْت أَعْجَبْتنِي حين رأيتك ثم زهدت فيك حين كلمتني أتكلمني في مائتي بعير أصبتها لك وتترك بيتا هو دينك وَدِينُ آبَائِك قَدْ جِئْت لِهَدْمِهِ لَا تُكَلّمُنِي فِيهِ ؟ قَالَ لَهُ عَبْدُ الْمُطّلِبِ : إنّي أَنَا رَبّ الْإِبِلِ وَإِنّ لِلْبَيْتِ رَبّا سَيَمْنَعُهُ قَالَ مَا كَانَ لِيَمْتَنِعَ مِنّي ، قَالَ أَنْتَ وَذَاكَ . وَكَانَ - فِيمَا يَزْعُمُ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ - قَدْ ذَهَبَ مَعَ عَبْدِ الْمُطّلِبِ إلَى أَبْرَهَةَ حِينَ بَعَثَ إلَيْهِ حُنَاطَةَ يَعْمُرُ بْنُ نُفَاثَةَ بْنِ عَدِيّ بْنِ الدّئْلِ بْنِ بَكْرِ بْنِ مَنَاةَ بْنِ كِنَانَةَ - وَهُوَ يَوْمَئِذٍ سَيّدُ بَنِي بَكْرٍ - وَخُوَيْلِدُ بْنُ وَاثِلَةَ الْهُذَلِيّ - وَهُوَ يَوْمَئِذٍ سَيّدُ هُذَيْلٍ - فَعَرَضُوا عَلَى أَبْرَهَةَ ثُلُثَ أَمْوَالِ تِهَامَةَ ، عَلَى أَنْ يَرْجِعَ عَنْهُمْ وَلَا يَهْدِمَ الْبَيْتَ فَأَبَى عَلَيْهِمْ . وَاَللّهُ أَعْلَمُ أَكَانَ ذَلِكَ أَمْ لَا ، فَرَدّ أَبْرَهَةُ عَلَى عَبْدِ الْمُطّلِبِ الْإِبِلَ الّتِي أَصَابَ لَهُ 

অর্থ: “আর সাইয়্যদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন অত্যন্ত সুদর্শন এবং অনেক সুন্দর ও বেমেছাল মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব মুবারক। সাইয়্যদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেই নাক কাটা কাট্টা যালিম আবরাহা মুগ্ধ ও অভিভূত হলো। সাইয়্যদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সে এতখানি সম্মানিত মনে করলো যে, নিজে উচ্চ আসনে বসে উনাকে নীচে বসতে দিতে পারলো না। পক্ষান্তরে সাইয়্যদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাবশীরা নাক কাটা কাট্টা যালিম আবরাহার সাথে একই রাজকীয় আসনে উপবিষ্ট দেখুক, সেটাও সে পছন্দ করলো না। তাই নাক কাটা কাট্টা যালিম আবরাহা নিজের রাজকীয় আসন থেকে নেমে নীচের বিছানায় বসলো এবং সাইয়্যদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সেখানে নিজের পাশে বসালো। অতঃপর দোভাষীকে বললো, “উনাকে প্রয়োজনীয় বিষয় বলতে বলো।” দোভাষী সেটা উনাকে বললো। তখন সাইয়্যদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “আমার প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে- আমার যে দুই শত উট নাক কাটা কাট্টা যালিম আবরাহার হাতে এসেছে, তা ফেরত দেয়া হোক।” দোভাষী যখন একথা নাক কাটা কাট্টা যালিম আবরাহাকে বললো, তখন নাক কাটা কাট্টা যালিম আবরাহা দোভাষীকে বললো, উনাকে বলো- 

قَدْ كُنْت أَعْجَبْتنِي حين رأيتك ثم زهدت فيك حين كلمتني أتكلمني في مائتي بعير أصبتها لك وتترك بيتا هو دينك وَدِينُ آبَائِك قَدْ جِئْت لِهَدْمِهِ لَا تُكَلّمُنِي فِيهِ قَالَ لَهُ عَبْدُ الْمُطّلِبِ إنّي أَنَا رَبّ الْإِبِلِ وَإِنّ لِلْبَيْتِ رَبّا سَيَمْنَعُهُ قَالَ مَا كَانَ لِيَمْتَنِعَ مِنّي قَالَ أَنْتَ وَذَاكَ

অর্থ: “অবশ্যই আপনি আমাকে অবিভূত করেছিলেন যখন আমি আপনাকে দেখেছিলাম। আপনি যখন আমার সাথে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক বললেন, তখন (আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক শুনে) আপনার প্রতি আমার ভীষণ বীতশ্রদ্ধা জন্মে গেছে। আপনিক কি আমার সাথে দু’শত উটের বিষয় নিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক বলছেন, যা আমি আপনার থেকে লুট করেছি? অথচ আপনার এবং আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীনের কেন্দ্র মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ- যা ধ্বংস করার জন্য আমি এসেছি, সেই বিষয়ে আপনি কিছুই বলছেন না?” সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “আমি শুধু উটেরই মলিক। আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার একজন মালিক রয়েছেন। অবশ্যই তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনাকে রক্ষা করবেন।” নাক কাটা কাট্টা যালিম আবরাহা বললো, “আমার আক্রমণ থেকে কেউই (এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনাকে) রক্ষা করতে পারবেন না।” সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “সেটা তোমার আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মালিক উনার ব্যাপার।” সুবহানাল্লাহ! (আর রওদ্বুল উন্ফ ১/১২০)

فَرَدّ أَبْرَهَةُ عَلَى عَبْدِ الْمُطّلِبِ الْإِبِلَ الّتِي أَصَابَ لَهُ

অর্থ: “অতঃপর নাক কাটা কাট্টা যালিম আবরাহা যেই উটগুলি লুট করেছিলে সেগুলো সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ফিরিয়ে দিলো।”


সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ মুবারক এবং বেমেছাল মহাসম্মানিত ও সমহাপবিত্র তাওয়াক্কুল মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ মুবারক:

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফিরে এসে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনাদেরকে কাট্টা যালিম যালিম আবরাহা এবং তার সৈন্য-সামন্ত সম্পর্কে অবহিত করেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক সংরক্ষণ করার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ মুবারক করেন। এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,

انْصَرَفَ عَبْدُ الْمُطّلِبِ إلَى قُرَيْشٍ فَأَخْبَرَهُمْ الْخَبَرَ وَأَمَرَهُمْ بِالْخُرُوجِ مِنْ مَكّةَ وَالتّحَرّزِ فِي شَعَفِ الْجِبَالِ وَالشّعَابِ تَخَوّفًا عَلَيْهِمْ مِنْ مَعَرّةِ الْجَيْشِ ثُمَّ قَامَ عَبْدُ الْمُطّلِبِ فَأَخَذَ بِحَلْقَةِ بَابِ الْكَعْبَةِ وَقَامَ مَعَهُ نَفَرٌ مِنْ قُرَيْشٍ يَدْعُونَ اللّهَ ويستنصرونه عَلَى أَبْرَهَةَ وَجُنْدِهِ فَقَالَ عَبْدُ الْمُطّلِبِ وَهُوَ آخِذٌ بِحَلْقَةِ بَابِ الْكَعْبَةِ

لَا هُمّ إنّ الْعَبْدَ يَمْ ... نَعُ رَحْلَهُ فَامْنَعْ حَلَالَك

لَا يَغْلِبَن صَلِيبَهُمْ ... وَمِحَالُهُمْ غَدْوًا مَحَالُك

إنْ كنت تاركهم و ... قبلتنا فَأَمْرٌ مَا بَدَا لَكْ

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুরাইশদের নিকট ফিরে এসে তাদেরকে সমস্ত সংবাদ জানালেন এবং তাদেরকে সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিলেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ থেকে বেরিয়ে পার্শ্ববর্তী পাহাড় পর্বতের গোপন গুহাগুলোতে আশ্রয় নিয়ে আবরাহার সৈন্যদের সম্ভাব্য নির্যাতন থেকে আতœরক্ষা করার জন্য। এরপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে কুরাইশদের একদল লোককে সাথে নিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দরজা মুবারক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র চৌকাঠ মুবারক আঁকড়ে ধরে দাঁড়ালেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আবরাহা ও তার সৈন্য সামন্তের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে উনার সাহায্য কামনা করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ মুবারক করতে লাগলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র চৌকাঠ মুবারক ধরে বলতে লাগলেন,

لَا هُمّ إنّ الْعَبْدَ يَمْ ... نَعُ رَحْلَهُ فَامْنَعْ حَلَالَك

لَا يَغْلِبَن صَلِيبَهُمْ ... وَمِحَالُهُمْ غَدْوًا مَحَالُك

إنْ كنت تاركهم و ... قبلتنا فَأَمْرٌ مَا بَدَا لَكْ

“আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! একজন বান্দাও তার দলবলকে রক্ষা করে থাকে। অতএব আপনি আপনার অনুগত লোকদেরকে রক্ষা করুন। ওদের নিকৃষ্ট ক্রুশ এবং শক্তি যেন আপনার শক্তির উপর বিজয়ী না হয়। আমাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ক্বিবলা মুবারক উনাকে আপনি যদি ওদের উপর ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার যা খুশি করুন!” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে হিশাম)

অন্য বর্ণনায় রয়েছেন, সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার গিলাফ মুবারক ধরে বলতে লাগলেন, 

اللهم ان المرء يمنع + رحله فامنع رحالك

وانصر على ال الصليب + وعابديه اليوم لك

لا يغلبن صليبهم + ومحالهم ابدا محالك

جروا جميع بلادهم + والفيل كى يسبوا عيالك

عمدوا حمال بليدهم + جهلا وما رقبوا جلالك

অর্থ: “আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! নিশ্চয়ই বান্দা তার জায়গার হিফাযত করে। কাজেই আপনি আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক হিফাযত করুন। ক্রুশের অধিকারী এবং ক্রুশের উপসনাকারীদের মুকাবিলায় আপনার অনুসারীদের সাহায্য করুন। ওদের ক্রুশ এবং ওদের প্রচেষ্টা আপনার ইচ্ছার উপর কখনো বিজয়ী হতে পারে না। সুবহানাল্লাহ! সৈন্য-সামন্ত ও হাতি নিয়ে আবরাহা এসেছে আপনার প্রতিবেশীদের গ্রেফতার করতে। না‘ঊযুবিল্লাহ! আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক ধ্বংস করার উদ্দেশ্য নিয়ে জিহালতীর কারণে তারা এ সংকল্প করেছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! তারা আপনার বড়ত্ব ও শক্তির প্রতি কোনো ভ্রƒক্ষেপ করছে না।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (দালাইলিনু নুুবুওওয়াহ, মাদারিযুন নবুওওয়াত, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

তিনি আরো বললেন, ‘আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আপনি এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনার মালিক এবং হিফাযতকারী। আমি এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনার দেখাশুনার দায়িত্বে ছিলাম তা যথাযথ পালন করার চেষ্টা করেছি। এখন আবরাহা এসেছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার ক্ষতি করার জন্য। সে যে পরিমাণ সৈন্য-সামন্ত ও অস্ত্রপাতি নিয়ে এসেছে, তাকে বাধা দেয়ার মত আমাদের প্রস্তুতি নেই। কাজেই, আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক আপনার হিফাযতে দিয়ে আমরা নিরাপদ দূরত্বে চলে যাচ্ছি।’

আরো বর্ণিত রয়েছেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনাদেরকেও মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দু‘আ করার জন্য উৎসাহ মুবারক দেন। তিনি বলেন,

فلندع رب البيت ان يحمى بيته

অর্থ: “সুতরাং আমাদের জন্য আবশ্যক হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রব তা‘য়ালা উনার নিকট দু‘আ করা, যেন তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক রক্ষা করেন।” সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন,

طُوْفُوْا بِالْبَيْتِ وَادْعُوْا رَبَّه اَن يَّقْسِمَ ابرهةَ كَمَا قَسَمَ الْـجَبَابِرَةَ

অর্থ: “আপনারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ মুবারক করুন এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রব তা‘য়ালা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দু‘আ করুন যেনো মহান আল্লাহ পাক তিনি আবরাহাকে তদ্রুপ ধ্বংস করে দেন, যেমন তিনি পূর্বে চরম যালিম জাতিদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন।” সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন, “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক। সুবহানাল্লাহ! 

ومن يَّتَجَرَّم اليه يَقْسِمه الله

আর যারা (মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনার ইহানত করার মাধ্যমে) মহান আল্লাহ পাক উনাকে অভিযুক্ত করতে চায়, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে ধ্বংস করে দেন।” সুবহানাল্লাহ!


সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বেমেছাল তাওয়াক্কুল মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ মুবারক এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে রক্ষা করার বিষয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনাদের দৃঢ়তা প্রকাশ:

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার যুলুম থেকে আতœরক্ষার জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনাদেরকে সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিলেন, তখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনারা বলেছিলেন,

انترك مكة

অর্থ: “আমরা কি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ ফেলে রেখে চলে যাবো?”

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে সান্তনা মুবারক দিয়ে বলেন, 

وكيف نترك بيت الحرام تالله لنبكين الى اخر الدهر فعسى رب هذا البيت يجد لنا مهجة 

অর্থ: “কিভাবে আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনাকে ফেলে রাখতে পারি, ফেলে রেখে চলে যেতে পারি? মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই আমরা শেষ মূহর্ত পর্যন্ত কান্নাকাটি, রোনাযারী (করে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দু‘আ করবো এবং কুদরতী ফায়সালা মুবারক উনার জন্য অপেক্ষা) করবো। আর অবশ্যই এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনার রব তা‘য়ালা মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের অন্তর লক্ষ্য করবেন।”

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন,

يا معشر قريش ما اظن رب الكعبة يدمر ابرهة يدبر بيته العظيم طوفوا واطلبوا من رب الكعبة ان يحمى مكة واهلها والبيت الحرام 

অর্থ: “হে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ সম্প্রদায়! আমি মহাসম্মানিত ও মহপবিত্র কা’বা শরীফ উনার রব তা‘য়ালা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি যা ধারণা করি তা হচ্ছেন- অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহাকে ধ্বংস করে দিবেন এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনার বিষয়ে পরিকল্পনা মুবারক করবেন অর্থাৎ হিফাযত করবেন। সুবহানাল্লাহ! আপনারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ তাওয়াফ মুবারক করুন এবং মহাসম্মানিত ও মহপবিত্র কা’বা শরীফ উনার রব তা‘য়ালা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দু‘আ করুন যেনো তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনাকে, উনার অধিবাসী উনাদেরকে এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনাকে রক্ষা করেন।” সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ মুবারক:

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “কাট্টা যালিম আবরাহা যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ আসলো, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সোপর্দ করে দিয়ে কাট্টা যালিম আবরাহার ধ্বংসের জন্য বদদোয়া মুবারক করেন। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার সম্মানিত অধিবাসী উনাদেরকে পাহাড়ে আরহণ করার জন্য সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দেন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও পাহাড়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক নেয়ার জন্য বলেন। কিন্তু সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পাহাড়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক নিতে অসম্মতি মুবারক প্রকাশ করেন এবং তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হুজরা শরীফ উনার মধ্যেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র অবস্থান মুবারক করেন। তিনি সেখানে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র অবস্থান মুবারক করেই কাট্টা যালিম আবরাহার ধ্বংসের জন্য বদদোয়া মুবারক করেন। আর তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে ইরশাদ মুবারক করেন যে, কাট্টা যালিম আবরাহা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, বরং সে নিজেই ধ্বংস হয়ে যাবে।” সুবহানাল্লাহ! 

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাহাড়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক নিয়ে সেখান থেকে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহাকে পর্যবেক্ষণ করা এবং তার ধ্বংসের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ মুবারক করা:

এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,

ثم أرسل عبد المطلب حلقة باب الكعبة وانطلق هو ومن معه من قريش الى شعف الجبال فتحرزوا فيها ينتظرون ما أبرهة فاعل بمكة إذا دخلها

অর্থ: “তারপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহপবিত্র দরজা মুবারক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র চৌকাঠ মুবারক ছেড়ে দিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনাদেরকে নিয়ে পহাড়ের চূড়ায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। অতঃপর উনারা সেখানে অবস্থান মুবারক করে দূর থেকে দেখতেছিলেন যে, কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ প্রবেশের পর কি করে।” (আস সীরাতুন নাবাবিয়্যাহ লি ইবনে হিশাম ১/১৭১)

কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,

فَلَمَّا أَصْبَحَ أَبْرَهَةُ تَهَيَّأَ لِدُخُولِ مَكَّةَ، وَهَيَّأَ فِيلَهُ وَعَبَّى جَيْشَهُ، وَكَانَ اسْمُ الْفِيلِ مَحْمُودًا، وَأَبْرَهَةُ مُجْمِعٌ لِهَدْمِ الْبَيْتِ، ثُمَّ الِانْصِرَافِ إلَى الْيَمَنِ. فَلَمَّا وَجَّهُوا الْفِيلَ إلَى مَكَّةَ، أَقْبَلَ نُفَيْلُ بْنُ حَبِيبٍ (الْخَثْعَمِيُّ حَتَّى قَامَ إلَى جَنْبِ الْفِيلِ، ثُمَّ أَخَذَ بِأُذُنِهِ، فَقَالَ: اُبْرُكْ مَحْمُودُ، أَوْ ارْجِعْ رَاشِدًا مِنْ حَيْثُ جِئْتَ، فَإِنَّكَ فِي بَلَدِ اللَّهِ الْحَرَامِ، ثُمَّ أَرْسَلَ أُذُنَهُ. فَبَرَكَ الْفِيلُ، وَخَرَجَ نُفَيْلُ بْنُ حَبِيبٍ يَشْتَدُّ حَتَّى أَصْعَدَ فِي الْجَبَلِ، وَضَرَبُوا الْفِيلَ لِيَقُومَ فَأَبَى، فَضَرَبُوا (فِي) رَأْسِهِ بالطَّبَرْزِينَ لِيَقُومَ فَأَبَى، فَأَدْخَلُوا مَحَاجِنَ لَهُمْ فِي مَرَاقِّهِ فَبَزَغُوهُ بِهَا لِيَقُومَ فَأَبَى، فَوَجَّهُوهُ رَاجِعًا إلَى الْيَمَنِ، فَقَامَ يُهَرْوِلُ، وَوَجَّهُوهُ إلَى الشَّامِ فَفَعَلَ مِثْلَ ذَلِكَ، وَوَجَّهُوهُ إلَى الْمَشْرِقِ فَفَعَلَ مِثْلَ ذَلِكَ، وَوَجَّهُوهُ إلَى مَكَّةَ فَبَرَكَ 

অর্থ: “পরের দিন সকালে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার ভিতরে প্রবেশ করার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলো। তার হস্তী বাহিনী এবং সৈন্য বাহিনীকে সুসংহত করলো। তার (হাতীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়) হাতীটির নাম ছিল মাহমূদ। কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে ধ্বংস করে তারপর সে ইয়ামান ফিরে যাবে। হস্তী বাহিনীকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার দিকে পরিচালিত করলে নুফাইল ইবনে হাবীব তিনি এগিয়ে এসে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার হাতীর পাশে দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি হাতীর কান ধরে বললেন, 

اُبْرُكْ مَحْمُودُ، أَوْ ارْجِعْ رَاشِدًا مِنْ حَيْثُ جِئْتَ،

‘মাহমূদ! তুমি হাঁটু গেড়ে বসে পড়ো। অথবা যেখান থেকে এসেছো নিরাপদে সেখানেই ফিরে যাও। কেননা, এখন তুমি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নগরী উনার মধ্যে রয়েছো।’

অতঃপর নুফাইল ইবনে হাবীব তিনি হাতির কান ছেড়ে দিলেন। হাতি এ কথা শুনেই বসে পড়লো। অতঃপর  নুফাইল খুব দ্রুত পাহাড়ের উপর যেয়ে আরোহন করলেন। চালকরা হাতীকে অনেক প্রহার করলো, কিন্তু হাতীটি দাঁড়ালো না। তারপর তারা হাতীকে দাঁড় করানোর জন্য তার মাথায় কুঠার দিয়ে প্রহার করলো, তারপরেও সে দাঁড়ালো না। অতঃপর তারা হাতীকে দাঁড় করানোর জন্য তার শুঁড়ের ভেতর আঁকাবাঁকা লাঠি ঢুকিয়ে রক্তাক্ত করে দিলো, তবুও সে দাঁড়ালোনা। তখন তারা তাকে ইয়ামেনের দিকে ফিরিয়ে দিতে চাইলো, সে সাথে সাথে উঠে দ্রুত চলতে থাকলো। সিরিয়ার দিকে ফিরিয়ে দিতে চাইলো, তখনও সাথে সাথে দ্রুত চলতে লাগলো। পূর্ব দিকে ফিরিয়ে দিতে চাইলো, তখনও সাথে সাথে দ্রুত চলতে লাগলো। আবার যখন তাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার দিকে চালিত করলো, সাথে সাথেই সে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো।” সুবহানাল্লাহ! (আস সীরাতুন নাবাবিয়্যাহ লি ইবনে হিশাম ১/১৭১-১৭২)

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনাদেরকে পাহাড়ের চূড়ায় আরহণ করার জন্য সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়ে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার ধ্বংসের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট বিশেষভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ মুবারক করেন এবং কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার ধ্বংসযজ্ঞ দেখার জন্য অপক্ষা মুবারক করতে থাকেন। এ সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনাদেরকে সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়ে বলেন,

يا اهل مكة تحصنوا فى الجبال وفى الشعاف واحتموا بها حتى نرى ما يكون من امر ابرهة الاشرم ولا اظن رب البيت يترك بيته

অর্থ: “হে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবসীগণ! আপনারা পাহাড়সমূহে এবং পাহাড়ের চূড়াসমূহে অবস্থান করে নিজেদেরকে সুরক্ষিত করুন এবং সেখানে আতœরক্ষা করুন। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা নাক কাটা আবরাহার কি হয়, তা না দেখছি। আর আমি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার রব তা‘য়ালা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি এমন ধারণা পোষণ করি যে, অবশ্যই তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনাকে রক্ষা করবেন।” সুবহানাল্লাহ!

তারপর তিনি বার বার এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ মুবারক করতে থাকেন-

اَللّٰهُمَّ اقْسِمْ اَبْرَهَةَ كَمَا قَسَمْتَ الْـجَبَابِرَةَ قَبْلَه، اَللّٰهُمَّ اقْسِمْ اَبْرَهَةَ كَمَا قَسَمْتَ الْـجَبَابِرَةَ قَبْلَه، اَللّٰهُمَّ اقْسِمْ اَبْرَهَةَ كَمَا قَسَمْتَ الْـجَبَابِرَةَ قَبْلَه

অর্থ: “আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আপনি ধ্বংস করে দিন কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহাকে, যেমন তার পূর্বে অনেক যালিম জাতিদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আপনি ধ্বংস করে দিন কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহাকে, যেমন তার পূর্বে অনেক যালিম জাতিদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আপনি ধ্বংস করে দিন কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহাকে, যেমন তার পূর্বে অনেক যালিম জাতিদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন।” সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ মুবারক উনার বরকতে মহান আল্লাহ পাক তিনি কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা এবং তার সৈন্য বাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য ঝাঁকেঝাঁকে পাখি প্রেরণ করেন। সুবহানাল্লাহ! এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,

فأرسل الله تعالى عليهم طيرا من البحر

 অর্থ: “অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি সমুদ্রের দিক থেকে ঝাঁকেঝাঁকে পাখী পাঠালেন।” সুবহানাল্লাহ! (আস সীরাতুন নাবাবিয়্যাহ লি ইবনে হিশাম ১/১৭২)

তাদের মাথা ছিলো হিংস্র জন্তুর মত, ঠোট ছিলো হাতির শুঁড়ের মত আর নখগুলি ছিলো কুকুরের মত। প্রত্যেকটি পাখি তিনটি কঙ্করময় প্রস্তর বহন করে এনেছিলো। একটি ঠোঁটে, দু’টি দুই পায়ে। পাখিগুলো এসে আবরাহা ও তার বাহিনীর উপরে সেই কঙ্করগুলি নিক্ষেপ করতে লাগলো। এর ফলে তৎক্ষনাত কিছু ধ্বংস হয়ে গেলো। কিছু আহত অবস্থায় পলায়ন করার পথে ধ্বংস হলো। কঙ্করগুলি উপর দিক থেকে পড়ে নিচ দিয়ে বের হয়ে মাটিতে অদৃশ্য হয়ে যেত। যার কারণে আবরাহার সৈন্য বাহিনী, হস্তিবাহিনী ভক্ষিত তৃণের ন্যায় হয়ে গেলো। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাঈশগণ উনারা দূর থেকে এই ঘটনা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করলেন। আর কঙ্করগুলি ছিলো ডাল অপেক্ষা বড় ও ছোলা বুট থেকে ছোট। আবরাহা ইয়েমেন পর্যন্ত পৌঁছলো। তার উপর দিয়ে পাখিগুলি উড়তে থাকলো। সেখানে পৌঁছার পরে পাখির কঙ্কর নিক্ষেপের কারণে সেও ভক্ষিত তৃণের ন্যায় হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! আর নাক কাটা যালিম আবরাহার মন্ত্রী ইয়াকছুম পালিয়ে আবিসিনিয়ায় রাজার কাছে এই সংবাদ পৌঁছায়। তার উপর দিয়েও একটি পাখি উড়ছিলো। সে সংবাদ পৌঁছানোর পর পাখিটি কঙ্কর নিক্ষেপ করায় সেও ভক্ষিত তৃণের ন্যায় হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!

কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার ধ্বংস হওয়া দেখে ক্রশধারীদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে নুফাইল ইবনে হাবীব একটি কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন,

أَيْنَ الْمَفَرُّ وَالْإِلَهُ الطَّالِبُ ...

وَالْأَشْرَمُ الْمَغْلُوبُ لَيْسَ الْغَالِبُ

‘পালাবে কোথায়? মহান আল্লাহ পাক তিনি অনুসন্ধান করতেছেন। আর ক্রুশের অধিকারী নাক কাটা আবরাহা অবশ্যই পারিজিত; কখনোই সে বিজয়ী হতে পারে না’।” সুবহানাল্লাহ! (আস সীরাতুন নাবাবিয়্যাহ লি ইবনে হিশাম ১/১৭২)

মহান আল্লাহ পাক তিনি কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা এবং তার সৈন্য বাহিনীর ধ্বংস করে দেয়ার কারণে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খুশি প্রকাশ:

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন দেখলেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ঝাঁকেঝাঁকে পাখি প্রেরণ করে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহাকে ভক্ষিত তৃণের ন্যায় করে দিয়েছেন, তখন তিনি অত্যন্ত খুশি প্রকাশ করেন এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনাদেরকে নিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তালবিয়াহ্ মুবারক পাঠ করতে করতে পাহাড়ের চূড়া থেকে নীচে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তালবিয়াহ্ মুবারকখানা ছিলেন নি¤œরূপ:

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيكَ لَكَ

(উচ্চরণ: লাব্বাইকাল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্কা, লা শারীকা লাকা।)

অর্থ: “আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আমি আপনার জন্য বার বার হাযির (উপস্থিত), বার বার হাযির (উপস্থিত)। আপনার কোনো শরীক (অংশিদার) নেই, আমি আপনার জন্য বার বার হাযির (উপস্থিত)। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, বিলাসিতা তথা শান-শওকাত এবং রাজত্ব-কর্তৃত্ব মুবারক একমাত্র আপনারই জন্য। আপনার কোনো শরীক (অংশিদার) নেই, আমি আপনার জন্য বার বার হাযির (উপস্থিত)।” সুবহানাল্লাহ!

অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবাইকে নিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তালবিয়াহ্ মুবারক পাঠ করতে করতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করেন এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ তাওয়াফ করেন। সুবহানাল্লাহ!


 ইয়াওমুল ফীল বা হস্তিবাহিনী ধ্বংসের দিবস-২২ মুহররমুল হারাম শরীফ


 
ইয়াওমুল ফীল বা হস্তিবাহিনী ধ্বংসের দিবস-২২ মুহররমুল হারাম শরীফ

 

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের ৫০ দিন পূর্বে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ২২শে মুহররমুল হারাম শরীফ মহাসম্মানিত ও মহপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ইছনাইনিল ‘আযীম শরীফ) সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম) উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বদদো‘আ মুবারক উনার কারণে আছ্হাবুল ফীল তথা হস্তি বাহিনী অর্থাৎ আবরাহা ও তার দলবল খোদায়ী গযবে পরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, ধ্বংস হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত তারীখ মুবারক উনাকে ‘ইয়াওমুল ফীল তথা হস্তি বাহিনীর ধ্বংসের দিবস’ হিসেবে নামকরণ মুবারক করেছেন। সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পবিত্র তাফসীর শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছেন, আবিসিনিয়ার রাজার অনুমতিক্রমে তার প্রতিনিধি হিসেবে ‘আবরাহা’ নামে এক ব্যক্তি ইয়েমেনের শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হয়।

‘আবরাহা’ লক্ষ্য করলো, পবিত্র হজ্জ উনার সময় লক্ষ লক্ষ লোক প্রচুর মাল-সম্পদ নিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ হজ্জ করতে যায়, তা দেখে সে ঈর্ষান্বিত হয় এবং চিন্তা করে, ইয়েমেনে সানা শহরে একটা সুন্দর গির্জা তৈরী করে মানুষদেরকে হজ্জ করার জন্য আহবান করবে। তার ডাকে লোকজন যদি সাড়া দিয়ে হজ্জ করতে আসে তাহলে সমস্ত পশুপাল ও মাল-সম্পদ দ্বারা সে ফায়দা লাভ করতে পারবে। এ খেয়ালে সে ইয়েমেনের সানা শহরে মূল্যবান পাথর দিয়ে একটা গির্জা তৈরি করে। সে গির্জাকে ‘খলীছা’ নামে নামকরণ করে। গির্জার দেয়ালগুলি স্বর্ণ, মণি-মুক্তা হীরা-জহরত দিয়ে প্রলেপ দেয় এবং নানা রকম মূর্তি, প্রতিমা স্থাপন করে। অতঃপর সে তার দেশ ও আশেপাশের এলাকায় ঘোষণা করে দেয়, যাতে সকলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ না গিয়ে তার এ ‘খলীছা’ গির্জায় হজ্জ করতে আসে। এতে আরববাসী বিশেষ করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফবাসী ও উনার অধিবাসী কুরাঈশগণ অসন্তুষ্ট হন। 

এক বর্ণনায় রয়েছে, কেনানা গোত্রের এক ব্যক্তি সেখানে চাকুরি নেয়। অতঃপর সে সুযোগ বুঝে এক রাত্রিতে গির্জায় প্রবেশ করে সেখানে ইস্তিঞ্জা করে অপবিত্র করে সেখান থেকে চলে যায়। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, এক ব্যবসায়ী কাফেলা সেখানে রাত্রি যাপন করে। তারা আলো এবং খাবার পাক করার জন্য আগুন জ্বালায়, সে আগুনে হঠাৎ গির্জার একটা অংশ পুড়ে যায়। আবরাহার কিছু লোক যারা সেখানে পূজা করতো তারা সে স্থান ত্যাগ করে চলে যায়। এটা শুনে আবরাহা অত্যন্ত রাগান্বিত হয় এবং শপথ করে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ সে ধ্বংস করে দিবে। নাঊযুবিল্লাহ! কারণ স্বরূপ সে বলে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী উনারাই তার গির্জা অপবিত্র করেছে ও পুড়িয়ে দিয়েছে।

তখন সে আবিসিনিয়ার রাজাকে ব্যাপারটা জানিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। নাঊযুবিল্লাহ! অনেক সৈন্য-সামন্ত ও পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হাতি মাহমুদসহ ১৩টি হাতি নিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার দিকে রওয়ানা হয়। আবরাহা চেয়েছিল, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আটটা হাতি দিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার চারটা ভিত উনাদের সাথে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে সজোরে টান দিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে সহজেই ভূপতিত করবে। নাঊযুবিল্লাহ! রাস্তায় অনেকে বাধা দেয়া স্বত্ত্বেও সে বাধা উপেক্ষা করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ পৌঁছে। সেখানে পবিত্র মক্কাবাসী উনাদের উটসহ অনেক চতুষ্পদ জন্তু তারা লুটপাট করে নেয়। তার মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুইশত উটও ছিল। এ সংবাদ শুনে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আবরাহার সাথে দেখা করেন এবং উনার দুইশত উট ফেরত চান। আবরাহা উনাকে দেখে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত তা’যীম-তাকরীম করে এবং বিস্ময় প্রকাশ করে বলে, আপনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার হিফাযতের কথা না বলে শুধু আপনার উট চাইলেন, এর কি কারণ? 

জবাবে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, উটের মালিক আমি, সেজন্য উটগুলি হিফাযত করা আমার দায়িত্ব। আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার মালিক আমি নই। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার মালিক হচ্ছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি। আর আমি হচ্ছি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার খিদমতগার বা খাদিম। কাজেই, মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে তিনি নিজেই হিফাযত করবেন; তা বলার অপেক্ষাই রাখে না। আর তোমাদের সাথে যুদ্ধ করার আদৌ কোন ইচ্ছা আমাদের নেই। এখন তোমার যা ইচ্ছা তুমি তা-ই করতে পারো। আমরা অতিসত্ত্বর স্থান ত্যাগ করে নিরাপদ দূরত্বে আশ্রয় নিবো। 

অতঃপর আবরাহা সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উট ফেরত দিলো সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কিছু লোকজনসহ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার কাছে গিয়ে উনার গিলাফ ধরে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট রোনাজারি করে দুয়া করলেন এবং বললেন, ‘আয় আল্লাহ পাক! আপনি এ ঘরের মালিক ও হিফাযতকারী। আমি এ ঘরের দেখাশুনার দায়িত্বে ছিলাম তা যথাযথ পালন করার চেষ্টা করেছি। এখন আবরাহা এসেছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার ক্ষতি করার জন্য। সে যে পরিমাণ সৈন্য-সামন্ত ও অস্ত্রপাতি নিয়ে এসেছে তাকে বাধা দেয়ার মত আমাদের ক্ষমতা নেই। কাজেই, আপনার ঘর মুবারক আপনার হিফাযতে দিয়ে আমরা নিরাপদ দূরত্বে আশ্রয়ে চলে যাচ্ছি।’

পরের দিন আবরাহা তার সমস্ত বাহিনী নিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার ক্ষতি করার জন্য অগ্রসর হলো। কিন্তু হাতিগুলো একটাও সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো না। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেলো, কিছু ক্ষুদ্র আকৃতির পাখি যা আকারে কবুতরের চেয়ে ছোট। কতগুলি সাদা বর্ণের, কতগুলি কালো বর্ণের, কতগুলি নীল বর্ণের। সমুদ্রের দিক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে লাগলো।

তাদের মাথা ছিলো হিংস্র জন্তুর মত, ঠোট ছিলো হাতির শুঁড়ের মত আর নখগুলি ছিলো কুকুরের মত। প্রত্যেকটি পাখি তিনটি কঙ্করময় প্রস্তর বহন করে এনেছিলো। একটি ঠোঁটে, দু’টি পায়ে। আবরাহা ও তার বাহিনীর উপরে এসে সে কঙ্করগুলি নিক্ষেপ করতে লাগলো। এর ফলে তৎক্ষনাৎ কিছু ধ্বংস হয়ে গেলো। কিছু আহত অবস্থায় পলায়ন করার পথে ধ্বংস হলো। কঙ্করগুলি উপর দিক থেকে পড়ে নিচ দিয়ে বের হয়ে মাটিতে অদৃশ্য হয়ে যেত। যার কারণে আবরাহার সৈন্য বাহিনী, হস্তিবাহিনী ভক্ষিত তৃণের ন্যায় হয়ে গেলো। কুরাঈশগণ দূর থেকে এ ঘটনা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করলেন। আর কঙ্করগুলি ছিলো ডাল অপেক্ষা বড় ও ছোলা বুট থেকে ছোট। আবরাহা ইয়েমেন পর্যন্ত পৌঁছলো। এবং তার উপর দিয়ে পাখিগুলি উড়তে থাকলো। সেখানে পৌঁছার পরে পাখির কঙ্কর নিক্ষেপের কারণে সেও ভক্ষিত তৃণের ন্যায় হয়ে গেলো। আর নাক কাটা যালিম আবরাহার মন্ত্রী ইয়াকছুম পালিয়ে আবিসিনিয়ায় রাজার কাছে এ সংবাদ পৌঁছায়। তার উপর দিয়েও একটি পাখি উড়ছিলো। সে সংবাদ পৌঁছানোর পর পাখিটি কঙ্কর নিক্ষেপ করায় সেও ভক্ষিত তৃণের ন্যায় হয়ে যায়।

যিনি খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এ বিষয়কে কেন্দ্র করে ‘সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ফীল শরীফ’ নাযিল করেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,


(১) আপনি কি দেখেননি অর্থাৎ আপনি তা দেখেছেন যে, আপনার মহান রব তায়ালা তিনি হস্তিবাহিনীর সাথে বা হাতিওয়ালাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করলেন? اَلَـمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحٰبِ الْفِيلِ 

(২) তিনি কি তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ বা ব্যর্থ করে দেননি? اَلَـمْ يَـجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِىْ تَضْلِيلٍ 

(৩) এবং প্রেরণ করলেন তাদের উপর ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا اَبَابِيلَ 

(৪) উহারা তাদের উপর কঙ্করময় পাথর নিক্ষেপ করল تَرْمِيهِم بِـحِجَارَةٍ مِّن سِجِّيلٍ 

(৫) অত:পর তিনি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণের ন্যায় করলেন। فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّاْكُولٍ 


(তরজমায়ে মুজাদ্দিদে আ’যম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সংকলিত)



 আত ত্বাহিরাহ, আত ত্বইয়্যিবাহ, আয যাকিয়্যাহ, হাবীবাতুল্লাহ, উম্মু উম্মিল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার বেমেছাল মর্যাদা-মর্তবা মুবারক


 
আত ত্বাহিরাহ, আত ত্বইয়্যিবাহ, আয যাকিয়্যাহ, হাবীবাতুল্লাহ, উম্মু উম্মিল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার বেমেছাল মর্যাদা-মর্তবা মুবারক

 আজ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ৫ই মুহাররমুল হারাম শরীফ। সুবহানাল্লাহ! এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ৫ই মুহাররমুল হারাম শরীফ হচ্ছেন আত ত্বাহিরাহ, আত ত্বইয়্যিবাহ, আয যাকিয়্যাহ, হাবীবাতুল্লাহ, উম্মু উম্মিল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের  মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তারিখ মুবারক। সুবহানাল্লাহ! উনার সবচেয়ে বড় পরিচয় মুবারক হচ্ছেন, তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, হাবীবাতুল্লাহ, উম্মুল উমাম আমাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহা ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

 আর সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, হাবীবাতুল্লাহ, উম্মুল উমাম, উম্মুল মুরিদীন আমাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহা ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক সরাসরি সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সাথে রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তবে বিশেষভাবে উনার নিসবত মুবারক হচ্ছেন সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আলাল আলামীন, ত্বহিরা, ত্বইয়্যিবা, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আলাল আলামীন, ত্বাহিরা, ত্বইয়্যিবা, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে। সুবহানাল্লাহ!

এটা হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল উমাম, উম্মুল মুরিদীন, সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, হাবীবাতুল্লাহ উম্মুল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহা ওয়া সাল্লাম উনার একখানা একক আখাচ্ছুল খাছ খুছূছিয়াত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক। সুবহনাল্লাহ! এই আখাচ্ছুল খাছ খুছূছিয়াত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক অন্য কাউকে দেয়া হয়নি। সুবহানাল্লাহ!

‘সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মুল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহা ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক খাছভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে’Ñ এর লক্ষ-কোটি ব্যাখ্যা রয়েছেন। তন্মধ্যে একটি ব্যাখ্যা হচ্ছেন ত্বাহিরা, ত্বইয়্যিবাহ উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যম দিয়ে যেমন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নসবনামাহ মুবারক ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবেন তথা ক্বিয়ামত পর্যন্ত হযরত আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা দুনিয়ার যমীনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক নিবেন তেমনিভাবে সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, উম্মুল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহা ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যম দিয়েও মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার  মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র  নসবনামা মুবারক ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবেন তথা ক্বিয়ামত পর্যন্ত মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত  ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা দুনিয়ার যমীনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক নিবেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হযরত আওলাদ আলাইহিমু সালাম তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যম দিয়ে যেমন জিন-ইনসান ক্বিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মানিত নিয়ামত লাভ করবে, নাজাত লাভ করবে, মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক লাভ করবে, ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী লাভ করবে তেমনি উম্মুল মুরিদীন, উম্মুল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহা ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম তথা মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম তথা পরবর্তী মুবারক বংশধর আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যম দিয়েও জিন-ইনসান ক্বিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত প্রকার মহাসম্মনিত ও মহাপবিত্র নিয়ামত মুবারক লাভ করবে, নাজাত লাভ করবে, মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক লাভ করবে, ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবি লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!

অন্যদিকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার সমস্ত খুছূছিয়াত মুবারকই মহান আল্লাহ পাক তিনি হাবীবাতুল্লাহ, উম্মুল উমাম, উম্মুল মুরীদীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহা ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তবে পার্থক্য হচ্ছে শুধু এতটুকু যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন মা আর আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মুল উমাম, উম্মুল খুলাফা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহা ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আওলাদ। এছাড়া আর কোনো পার্থক্য নেই। সুবহানাল্লাহ!

মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন পরিপূর্ণরূপে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একক হাক্বীক্বী ক্বায়িম-মাক্বাম তেমনিভাবে উম্মুল উমাম, উম্মুল খুলাফা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহা ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন পরিপূর্ণরূপে উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনিসহ সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের একক হাক্বীক্বী ক্বায়িম-মাক্বাম। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছলাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক উনার কারণে যেমন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন, এছাড়া সমস্ত মর্যাদা-মর্তবা, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী; তেমনিভাবে মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক উনার কারণে হাবীবাতুল্লাহ, ত্বাহিরাহ, ত্বইয়্যিবাহ, সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, উম্মুল উমাম, উম্মুল মুরীদীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহা ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন এবং আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন এছাড়া সমস্ত মর্যাদা-মর্তবা, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনার অধিকারী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লহ!

 আর উনারই মহাসম্মানিতা আম্মাজান হচ্ছেন আত ত্বাহিরাহ, আত ত্বইয়্যিবাহ, আয যাকিয়্যাহ, হাবীবাতুল্লাহ, উম্মু উম্মিল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! তাহলে আত ত্বাহিরাহ, আত ত্বইয়্যিবাহ, আয যাকিয়্যাহ, হাবীবাতুল্লাহ, উম্মু উম্মিল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কতো মাহবূবাহ, তিনি কতো সীমাহীন পবিত্রতা মুবারক উনার অধিকারী এবং উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল, তা এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে আত ত্বাহিরাহ, আত ত্বইয়্যিবাহ, আয যাকিয়্যাহ, হাবীবাতুল্লাহ, উম্মু উম্মিল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার হাক্বীক্বী শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উপলব্ধি করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন! 



 মাহজুবা, ত্বাহিরা, ত্বইয়িবা, তাওশিয়া, তাজিমা, তাকরিমা, শাফিয়াহ, মুশাফ্ফায়া, হাবীবাতুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, আওলাদে রসূল,সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম উনার বেমেছাল মর্যাদা-মর্তবা ও মুবারক কারামত প্রসঙ্গে-

 মাহজুবা, ত্বাহিরা, ত্বইয়িবা, তাওশিয়া, তাজিমা, তাকরিমা, শাফিয়াহ, মুশাফ্ফায়া, হাবীবাতুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, আওলাদে রসূল,সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম উনার বেমেছাল মর্যাদা-মর্তবা ও মুবারক কারামত প্রসঙ্গে-

 “নিশ্চয়ই যে সকল মহান ব্যক্তিত্ব-ব্যক্তিত্বা উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু, উনাদের কোনো ভয়ভীতি নেই এবং উনারা চিন্তিতও হবেন না।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৬২)

‘আউলিয়া’ শব্দটি ‘ওলী’ শব্দের বহুবচন। আরবী ভাষায় ‘ওলী’ শব্দের অর্থ: নিকটবর্তী এবং দোস্ত, বন্ধু- উভয়ই বুঝায়।

হযরত আল্লামা আলুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পার্থিব জীবনে ওলীআল্লাহগণ উনাদের ভয় ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা বলতে এই বুঝায় যে, পৃথিবীবাসী সাধারণতঃ যেসব ভয় ও দুশ্চিন্তার সম্মুখীন থাকে; আরাম-আয়েশ, মান-সম্ভ্রম, ধন-সম্পদ ইত্যাদির সামান্য ক্ষতিতেই তারা যেমন মুষড়ে পড়ে; ওলীআল্লাহগণ উনাদের ব্যাপার সেরকম নয়। উনাদের স্থান এ থেকে বহু ঊর্ধ্বে। পৃথিবীর সামান্য দুঃখ-কষ্ট উনাদের বিচলিত করতে পারে না এবং এগুলো উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে রহমত হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের মর্যাদা-মর্তবা বুলন্দ করার জন্য বিভিন্ন বিপদ-আপদ দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন।

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আলিম উনারাই মহান আল্লাহ পাক উনাকে পূর্ণভাবে ভয় করেন।” সুবহানাল্লাহ!

এক কথায় আল্লাহওয়ালা উনারা দুনিয়াবী লাভ-লোকসান, ক্ষয়-ক্ষতি, অভাব-অনটন ইত্যাদি হতে সম্পূর্ণ ভয়হীন ও চিন্তামুক্ত। আর উনারা সবসময় মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়ে ভীত। সুবহানাল্লাহ!

আর হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “যিনি যতবেশি আল্লাহভীরু, তিনি ততবড় আল্লাহওয়ালা।” সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের প্রত্যেকেরই কম-বেশি কারামত থেকে থাকে।

আক্বাইদের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, “ওলীআল্লাহ উনাদের কারামত সত্য (অভ্রান্ত)।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার মাহবুব ওলী উনারা হক্ব কারামতের অধিকারী। সুবহানাল্লাহ! 

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “(হে উম্মু রুহিল্লাহ আলাইহাস্ সালাম! আপনি) ওই খেজুর গাছের শাখা নিজের দিকে অবনমিত করুন, আপনার জন্য তা থেকে পড়বে সদ্যপক্ক খেজুর। অতএব, তা থেকে আপনি আহার করুন, পান করুন এবং নয়ন পরিতৃপ্ত করুন।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৫, ২৬)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার যোগসূত্রে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “যখনই হযরত যাকারিয়া আলাইহিস্ সালাম তিনি মেহরাবের মধ্যে (ইবাদতখানার কাছে) আসতেন, তখনই দেখতে পেতেন কিছু খাদ্যসম্ভার। জানতে চাইতেন: হে হযরত উম্মু রুহিল্লাহ আলাইহাস্ সালাম! এসব কোথা থেকে পেলেন? উম্মু রুহিল্লাহ হযরত মারইয়াম আলাইহাস্ সালাম তিনি জবাব দিতেন: এসব মহান আল্লাহ পাক উনার কাছ থেকে আসে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে ইচ্ছা উনাকে অপরিমেয় রিযিক দান করে থাকেন।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৭)

হযরত উম্মু রুহিল্লাহ আলাইহাস্ সালাম তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহমুস সালাম ছিলেন না। উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে বিধৃত অলৌকিক পন্থায় উনার খাদ্যসম্ভার প্রাপ্তি এবং এর কারণ জানতে সাইয়্যিদুনা হযরত যাকারিয়া আলাইহিস্ সালাম উনার ঔৎসুক্য- হযরত উম্মু রুহিল্লাহ আলাইহাস্ সালাম উনার কারামত (সম্মান) নির্দেশ করে। 

সাইয়্যিদুনা হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম উনার মুবারক আদেশের প্রেক্ষিতে উনার উযীরে আ’যম হযরত আসিফ বিন বরখিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সম্রাজ্ঞী হযরত বিলকিস রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার আশি হাত দীর্ঘ, চল্লিশ হাত প্রশস্ত এবং তিরিশ হাত উঁচু বিরাট এক সিংহাসন নিমিষেই অর্থাৎ এক পলক সময়ের পূর্বেই ইয়েমেনের রাজধানী সাবা থেকে তুলে এনে সাইয়্যিদুনা হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম উনার সমীপে হাজির করেন। সুবহানাল্লাহ!

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যিনি কিতাবের ইলমপ্রাপ্ত ছিলেন তিনি বললেন, (হে হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম!) আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেবো। অতঃপর হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম তিনি যখন তা সামনে রক্ষিত দেখলেন, তখন বললেন- এটি আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আন্ নমল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪০)

হযরত আসিফ বিন বরখিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের অর্ন্তভুক্ত ছিলেন না। সুদূর ইয়েমেনের রাজধানী সাবা থেকে সম্রাজ্ঞী হযরত বিলকিস রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার বিশাল সিংহাসন নিমিষেই সাইয়্যিদুনা হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম উনার সমীপে হাজির করার পারঙ্গমতা নিঃসন্দেহে হযরত আসিফ বিন বরখিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কারামত নির্দেশ করে, যা মহান আল্লাহ পাক উনার দান। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, কারামত হচ্ছে ওলীআল্লাহ উনাদের সম্মান। মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত এবং হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মু’জিযা শরীফ উনাদের ন্যায় ওলীআল্লাহগণ উনাদের কারামত সত্য এবং তা বিশ্বাস করা ফরয। কারণ তা ঈমানী আক্বীদার অন্তর্ভুক্ত। 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সাইয়্যিদাতুন নিসা, উম্মু উম্মিল উমাম, মাহজুবা, ত্বাহিরা, ত্বইয়িবা, তাওশিয়া, তাজিমা, তাকরিমা, শাফিয়াহ, মুশাফ্ফায়া, হাবীবাতুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন বেমেছাল কাশফ ও কারামতসম্পন্ন ওলীআল্লাহ। বেমেছাল কাশফ ও কারামত উনার অধিকারী হওয়ায় লোকেরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে উনার কাছে আরজু পেশ করতো। দেখা গেছে- উনি যেভাবে যা বলেছেন, হুবহু তাই মিলে যেত। সুবহানাল্লাহ!

উনার অসংখ্য-অগণিত কারামত মুবারক উনাদের মধ্য হতে এখানে কতিপয় কারামত মুবারক উল্লেখ করা হলো।

(১) আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম উনার কাছে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট হওয়ার জন্য অনেকে দোয়ার আরজু করতো। তারা আরো পেশ করতো তাদের রেজাল্ট কি হবে। তখন আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি যাদের কথা বলতেন দেখা যেত শুধু তারাই পরীক্ষায় পাস করেছে। সুবহানাল্লাহ! 

(২) একবার এক ছেলের বিয়ে হচ্ছিলো না। অনেক জায়গায় ঠিক করা হয় কিন্তু বিয়ের সময় হলে ছেলেটির বিয়ে ভেঙ্গে যেত। আত্মীয়-স্বজনরা বিষয়টি আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম উনার কাছে পেশ করলেন। তখন আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি বলে দিলেন অমুক জায়গায় অমুক স্থানে যাও। সেখানে ওমুক পরিবারের একটি মেয়ে আছে। তার সাথেই ওই ছেলের বিয়ে হবে। অতঃপর উনার মুবারক ক্বওল শরীফ অনুযায়ী দেখা গেলো সেখানেই ছেলেটির বিয়ে হলো। সুবহানাল্লাহ!

(৩) আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম উনাদের গ্রামের বাড়ি কুমরাদী এলাকায় একটি বড় মাদরাসা ছিল। উক্ত মাদরাসায় একজন বুযুর্গ শিক্ষক ছিলেন। তিনি পরবর্তীতে ঢাকার একটি মাদরাসায় চলে আসেন। আসার সময় উনাকে হযরত উম্মু উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত পিতা ক্বারীউল কুররা, উস্তাযুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ, মমতাজুল মুহাদ্দিছীন ওয়াল মুফাস্সিরীন ওয়াল ফুক্বাহা, আওলাদে রসূল হযরতুল আল্লামা ক্বারী মুহম্মদ আব্দুল আজিজ আলাইহিস সালাম তিনি নিজ বুযুর্গ মেয়ের জন্য বুযুর্গ পাত্রের সন্ধান দিতে বলেছিলেন। আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম উনার বড়ভাই মাওলানা সাইয়্যিদ মুহম্মদ বাহাউদ্দিন আলাইহিস সালাম তিনি ঢাকায় ঐ বুযুর্গ শিক্ষকের কাছে আসা যাওয়া করতেন। 

একদিন ঐ বুযুর্গ শিক্ষক ছাহেব তিনি ওলীয়ে কামিল, সুফিয়ে বাতিন, ইমামুছ ছরফ ওয়ান নাহু, ছহিবুল ইলম ওয়াল হিকাম, ছহিবুল কাশফ ওয়াল কারামত, ছহিবুত তাক্বওয়া, ফখরুল ওলামা, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা সম্মানিত আবু উম্মিল উমাম আলাইহিস সালাম উনার তাক্বওয়া বুযুর্গী পরহেযগারী বর্ণনা করে বললেন- আমার জানা মতে, উনার চেয়ে তাক্বওয়াসম্পন্ন বুযুর্গ, পরহেযগার আল্লাহওয়ালা পাত্র আর হতে পারে না। তখন বড়ভাই মাওলানা সাইয়্যিদ মুহম্মদ বাহাউদ্দিন আলাইহিস সালাম তিনি এবং পরিবারের অন্যান্য সবাই আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত আবু উম্মিল উমাম আলাইহিস সালাম উনার তাক্বওয়া বুযুর্গী পরহেযগারী দেখে উনার সাথেই আওলাদে রসূল সম্মানিতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নিসবতে আযীম মুবারক সম্পন্ন করেন। 

ওলীয়ে কামিল, সুফিয়ে বাতিন, ইমামুছ ছরফ ওয়ান নাহু, ছহিবুল ইলম ওয়াল হিকাম, ছহিবুল কাশফ ওয়াল কারামত, ছহিবুত তাক্বওয়া, ফখরুল উলামা, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত আবু উম্মিল উমাম আলাইহিস সালাম উনার মতো তাক্বওয়াধারী বুযুর্গ, পরহেযগার বেমেছাল ও চরম আল্লাহওয়ালা যাওজা পাওয়া সেটাও আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম উনার মহান কারামত। সুবহানাল্লাহ! 

(৪) আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম উনার জীবনের অসংখ্য অগণিত কারামত মুবারক উনার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কারামত হলো- সাইয়্যিদাতুন নিসা, যাওজাতু মুজাদ্দিদে আ’যম, আফদ্বালুন নিসা, যামানার উম্মুল মু’মিনীন, উম্মুল উমাম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার মতো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহিলা ওলীআল্লাহ উনার সম্মানিতা আম্মাজান হওয়া। সুবহানাল্লাহ!

(৫) তবে উনার আখাছছুল খাছ কারামত হচ্ছে যে, বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের আগেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এবং যতদিন পার হয়েছে তত গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন যে, উনার মহাসম্মানিতা আওলাদ উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি হবেন ক্বায়িম-মাক্বামে সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম ও সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তথা জাওযাতুল মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি একদম শুরুর পর্যায়ে আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত আবু উম্মিল উমাম আলাইহিস সালাম উনার যবান মুবারকে হযরত সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে শুনেই উনার বুযুর্গী মুবারক সম্পর্কে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত দাদী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার পরে মহিলাদের মধ্যে জাহিরীভাবে উনিই হযরত সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার বুযুর্গী অনুধাবনে অগ্রণী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! এটা ছিল উনার অনন্য কারমত মুবারক।

উল্লেখ্য যে, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি সুমহান ৫ই মুহররমুল হারাম শরীফে পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আর আজই হচ্ছেন- সেই মহাপবিত্র সুমহান ৫ই মুহররমুল হারাম শরীফ। প্রত্যেকের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে- উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক জেনে উনাকে মুহব্বত ও অনুসরণ-অনুকরণ করা।




 আজ ঐতিহাসিক 'ইয়াওমুল ফিল' বা হস্তীবাহিনী দিবস , ২২ শে মুহররমুল হারাম শরীফ

আজ ঐতিহাসিক 'ইয়াওমুল ফিল' বা হস্তীবাহিনী দিবস :

আজ পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাসের ২২ তারিখ। আজকের এই দিনেই আবরাহা লা'নতুল্লাহি আলাইহি মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত কা'বা শরীফ ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কা শরীফ-এ এসেছিল।
পৃথিবীতে খ্বলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার অনন্য নিদর্শন হলো- মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত 'কা'বা শরীফ'। ভৌগোলিকভাবে গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে বরকতময় পবিত্র কা'বা শরীফ অবস্থান- দুনিয়াবাসীর নিকট এটাও একটি আশ্চর্যজনক বিষয়! কা'বাগৃহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- ইহা পৃথিবীর সর্বপ্রথম ও সুপ্রাচীন ঘর। খ্বলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন- "নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর; যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে। সেটিই হচ্ছে এ ঘর; যা পবিত্র মক্কা নগরীতে অবস্থিত।" (সূরাতুল আল ইমরান শরীফ : আয়াত শরীফ নম্বর ৯৬)

ইসলামী জ্ঞানের তথ্যমতে- পৃথিবীতে ভূমির সৃষ্টি হয় বিশাল সাগরের মাঝে; যা পবিত্র মক্কায় অবস্থিত পবিত্র কা'বা ঘরের স্থলকে কেন্দ্র করেই। তাই, পবিত্র কা'বা ঘরের নিচের জমিনটুকু-ই হচ্ছে- পৃথিবীর প্রথম মাটি। ধীরে ধীরে এর চারপাশ ভরাট হয়ে সৃষ্টি হয় একটি বিশাল মহাদেশের। পরে এক মহাদেশ থেকেই ক্রমান্বয়ে সৃষ্টি হয় সাত মহাদেশের। মাটিতে রূপান্তর হওয়ার আগে কা'বা সাদা ফেনা আকারে ছিল। সে সময় পৃথিবীতে পানি ছাড়া আর কিছুই ছিল না। খ্বলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার আরশ মুবারকও ছিল পানির উপর। মাটি বিছানোর পর জমিন হেলতে-দুলতে থাকে। এটাকে স্থির করার জন্য খ্বলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পাহাড়-পর্বত সৃষ্টি করেন। এ সম্পর্কে খ্বলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন- "তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন; যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে আন্দোলিত না হয় অর্থাৎ হেলে না যায়।" (সূরাতুল আল নাহল শরীফ : আয়াত শরীফ নম্বর ১৫)
এভাবেই পবিত্র কা'বা শরীফ-এর বরকতে পৃথিবী স্থির হয়ে যায়। ধীরে ধীরে এখান থেকেই মানবসভ্যতার গোড়াপত্তন শুরু হয়।

আবরাহা লা'নতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক পবিত্র কা'বা শরীফ আক্রমণের ইতিহাস : আবরাহা ছিল ইথিওপিয়ার (তৎকালীন হাবশা) সম্রাট নাজ্জাশীর পক্ষ থেকে ইয়ামেনের গভর্নর। এ সম্পর্কে ইতিহাসে বর্ণিত রয়েছে, যখন ইথিওপিয়ার সম্রাট নাজ্জাশী কর্তৃক এক ইথিওপিয়াবাসী-কে ইয়ামেনের গভর্নর নিয়োগের পরোয়ানা ঘোষণা করা হলো; তখন ইয়ামেনের সৈন্যরা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করলো। তারা ইথিওপিয়াবাসী ওই ব্যক্তির পরিবর্তে আবরাহাকে ইয়ামেনের গভর্নর পদে নিয়োগের দাবি জানাতে লাগলো। শেষ পর্যন্ত আবরাহাকেই ইয়ামেনের গভর্নর পদে নিয়োগ দেয়া হলো। আবরাহা ছিল ইথিওপিয়ার আদুলিস নৌবন্দরের এক গ্রীক খ্রিস্টান ব্যবসায়ীর ক্রীতদাস।
যাইহোক, ইয়ামেনের গভর্নর হয়ে আবরাহা যখন দেখলো- আরববাসীসহ সমগ্ৰ বিশ্বের মুসলমানগণ পবিত্র কা'বা শরীফ-এ হজ্জব্রত পালন করছেন এবং এই পবিত্র কা'বা শরীফ-এর উদ্দেশ্যেই বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন সেখানে আগমন করছেন। সে সুবিধায় পবিত্র মক্কা নগরী অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক কেন্দ্রে রূপান্তরিত হচ্ছে। এ কারণে আবরাহা ঈর্ষায় ফেটে পড়ে।

সে পবিত্র কা'বা শরীফ-এর সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করার জন্য ইয়ামেনের তৎকালীন রাজধানী সানআ'য় একটি বিরাট গির্জা নির্মাণ করলো এবং আরববাসীসহ সমগ্ৰ বিশ্বের মুসলমানদেরকে পবিত্র কা'বা শরীফ-এর পরিবর্তে সেখানে হজ্জব্রত পালন করার আহবান জানালো। আরব ঐতিহসিকগণ একে 'আল কালীস' নামে উল্লেখ করেছেন। আবরাহা আশা করেছিল- আস্তে আস্তে মানুষ এখানে আসা শুরু করবে এবং ইয়ামেন নতুন কেন্দ্রে পরিণত হবে। (নাউযুবিল্লাহ)
কিন্তু আরববাসীগণ তার এ আহ্বান ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলেন। ইতিমধ্যে 'বনু কিনানা' গোত্রের লোকজন যখন এ সংবাদ অবগত হলেন; তখন তাঁরা এক রাত্রে গোপনে আবরাহা কর্তৃক নির্মিত গির্জায় প্রবেশ করে তার চারপাশে ইস্তেঞ্জা (মানুষের মল-মূত্র) লেপন করে একদম নোংরা করে ফেললেন। পরের দিন এ দৃশ্য দেখে আবরাহা বুঝতে পারলো যে, এটা সম্পূর্ণ মুসলমানদের কাজ! তাই সে ভয়ানক ক্রোধান্বিত হয়ে প্রতিশোধ গ্রহণকল্পে শপথ গ্রহণ করে বললো যে, "মুসলমানদের কা'বাকে গুঁড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে না দেয়া পর্যন্ত আমি স্থির হয়ে বসবো না।" (নাউযুবিল্লাহ)

যুগশ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক মুহম্মদ ইবনে ইসহাকের বর্ণনা মতে, নবনির্মিত গির্জার এই পরিবেশ দেখে সে ইথিওপিয়ার বাদশাহ নাজ্জাসীর নিকট চিঠি লিখে জানায়, "আমি আরবদের হজ্জকে মক্কার কা'বার পরিবর্তে সানআ'র গির্জার দিকে ফিরিয়ে না দিয়ে ক্ষান্ত হবো না।"
অবশেষে ৫৭০ ঈসায়ী সনের ২২শে মুহররমুল হারাম শরীফ তারিখে (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের ৫০ দিন আগে) 'মাহমুদ' নামক সবচেয়ে শক্তিশালী একটি হস্তীপৃষ্ঠে আরোহণ করে ১৩টি শক্তিশালী হস্তী আর ৬০ হাজার অস্ত্র সজ্জিত সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী নিয়ে পবিত্র কা'বা শরীফ ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কা অভিমুখে অগ্রসর হয়।

এ সেনাদল তায়েফের নিকটবর্তী হলে 'বনু সকীফ' সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ আশঙ্কা করে যে, হয়তো তাদের 'লাত' দেবতার মন্দির তারা ভেঙে ফেলবে। ফলে তাদের সরদার মাসউদ একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে আবরাহার সাথে দেখা করে। তারা তাকে বলে, "আপনি যে উপাসনালয়টি ভাঙতে এসেছেন; আমাদের এ মন্দিরটি সে উপাসনালয় নয়। সেটি মক্কায় অবস্থিত। কাজেই আপনি আমাদেরটায় হাত দেবেন না। আমরা মক্কার পথ দেখাবার জন্য আপনাকে পথ প্রদর্শক সংগ্রহ করে দিচ্ছি।"
আবরাহা তাদের এ প্রস্তাব গ্রহণ করে। ফলে 'বনু সকীফ' সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ 'আবু রিগাল' নামক এক ব্যক্তিকে তার সাথে দিয়ে দেয়। মক্কা পৌঁছতে যখন আর মাত্র তিন ক্রোশ বা ৬ মাইল পথ বাকি রয়েছে,; তখন 'আবু রিগাল' অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।

এরপর আবরাহা মক্কাবাসীদের কাছে নিজের একজন দূতকে পাঠায়। তার মাধ্যমে মক্কাবাসীদের কাছে এই মর্মে বাণী পাঠায়- "আমি তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসিনি। আমি এসেছি শুধুমাত্র এই ঘরটি (কা'বা শরীফ) ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে। যদি তোমরা যুদ্ধ না কর; তাহলে আমি তোমাদের প্রাণ ও ধন-সম্পত্তির কোনো ক্ষতি করবো না।"

অতঃপর সে অপর আরেক দূতকেও মক্কাবাসীদের কাছে পাঠিয়ে জানায় যে, "মক্কাবাসীরা যদি তার সাথে কথা বলতে চায়- তাহলে তাদের সরদারকে যেন আমার নিকট পাঠিয়ে দেয়।"

আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাদা সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন মক্কার সরদার। দূত তার সাথে সাক্ষাৎ করে আবরাহার পয়গাম তার কাছে পৌঁছয়ে দেয়। তিনি বলেন, "আবরাহার সাথে যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই। এটা খ্বলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর; তিনি চাইলে উনার ঘর রক্ষা করবেন।"
দূত বলে, "আপনি আমার সাথে আবরাহার কাছে চলুন।"সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি সম্মত হন এবং দূতের সাথে আবরাহার কাছে যান।

সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি এতই সুশ্রী, আকর্ষণীয় ও প্রতাপশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন যে, আবরাহা তাকে দেখে অত্যন্ত প্রভাবিত হয়ে পড়ে। সে সিংহাসন থেকে নিচে নেমে তাঁর সাথে এসে বসে। সে প্রথমে জিজ্ঞেস করে- "আপনি কি চান?"

সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন : "আমার যে উটগুলো ধরে নেয়া হয়েছে, সেগুলো আমাকে ফেরত দেয়া হোক।"

আবরাহা বললো : "আপনাকে দেখে তো আমি বড় প্রভাবিত হয়েছিলাম। কিন্তু আপনি নিজের উটের দাবি জানাচ্ছেন, অথচ এই যে ঘরটা আপনার ও আপনার পূর্ব-পুরুষদের ধর্মের কেন্দ্র সে সম্পর্কে কিছুই বলছেন না। আপনার এ বক্তব্য আপনাকে আমার দৃষ্টিতে মর্যাদাহীন করে দিয়েছে।"

প্রত্যুত্তরে সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন : "আমি তো কেবল আমার উটের মালিক এবং সেগুলোর জন্য আপনার কাছে আবেদন জানাচ্ছি। আর এই ঘরের একজন মালিক রয়েছেন। তিনি নিজেই এই ঘরের হেফাজত করবেন।"

আবরাহা দাম্ভিকতার সাথে জবাব দেয়, "তিনি তো এই ঘরকে আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন না।"

সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন : "আচ্ছা ঠিক আছে, এ ব্যাপারে আপনি জানেন ও তিনিই ভালো জানেন।" এ কথা বলে তিনি সেখান থেকে উঠে পড়লেন।

আবরাহা তাঁকে তাঁর উটগুলো ফিরিয়ে দেয়। আবরাহার নিকট থেকে ফিরে এসে সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি কুরাইশদেরকে বললেন : "আপনারা নিজ-নিজ পরিবার-পরিজনদের নিয়ে পাহাড়ের উপর চলে যান। তাহলে তাঁরা ব্যাপক গণহত্যার হাত থেকে রক্ষা পাবেন।"

অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি কুরাইশদের কয়েকজন সরদারকে সাথে নিয়ে পবিত্র কা'বা শরীফ-এ গিয়ে হাজির হন। সবাইকে নিয়ে পবিত্র কা'বা শরীফ-এর দরজার কড়া ধরে খ্বলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সরাসরি এই বলে দোয়া করতে থাকেন-

"আয় আল্লাহ পাক! তাদের মোকাবিলায় আপনি ছাড়া কারো প্রতি আমার আশা নেই। হে আমার রব! তাদের হাতে থেকে আপনি আপনার পবিত্র ঘরকে হেফাজত করুন। এই ঘরের শত্রু আপনার শত্রু। এই জনপদকে ধ্বংস করা থেকে আপনি তাদেরকে বিরত রাখুন। আপনি আপনার ঘর ও এই ঘরের খাদিমদের হিফাযত করুন।"

এমন সময়ে খ্বলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এক ঝাঁক ছোট ছোট পাখি প্রেরণ করলেন। সেই পাখিগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে পাথরের ছোট ছোট টুকরো সৈন্যদের উপর নিক্ষেপ করতে লাগলো। প্রত্যেকটি পাখি তিনটি করে পাথরের কংকর নিয়ে আসতো একটি ঠোঁটে এবং দুইটি দুই পায়ে। কংকরগুলোর আকার-আকৃতি ছিল ছোলার মতো। কিন্তু কংকরগুলো যার যে অঙ্গে লাগতো সেই অঙ্গ ফেটে গিয়ে সেখান দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হতে হতে সে মারা যেত।
এ অলৌকিক ঘটনায় সকলেই ভীষণভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়লো। প্রাণভয়ে পলায়নের উদ্দেশ্যে যখন বেপরোয়াভাবে ছুটাছুটি শুরু করলো তখন পদতলে পিষ্ট হয়ে অনেকেই প্রাণত্যাগ করলো। কংকরাঘাতে ছিন্নভিন্ন এবং পদতলে পিষ্ট হয়ে মুহূর্তের মধ্যে বীরপুরুষরা মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়লো।

এদিকে আবরাহার উপর খ্বলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এক মুসিবত প্রেরণ করলেন যে, তার আঙ্গুল সমূহের জোড়া খুলে গেল। তার বক্ষ বিদীর্ণ হয়ে হৃদপিণ্ড বেরিয়ে এলো। অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে পাখির বাচ্চার মতো হয়ে গেলো। অবশেষে সে ইয়ামেনের রাজধানী সানাআ'য় ফিরে যেতে চাইলো। কিন্তু সানাআ'য় ফিরে যেতে না যেতেই সে মৃত্যুমুখে পতিত হলো।
পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পবিত্রতা মুবারক

পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পবিত্রতা মুবারক



যিনি খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

اِنَّـمَا يُرِيْدُ الله لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُـطَـهِّـرَكُمْ تَطْهِيْرًا.

অর্থ: “হে মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে। অর্থাৎ তিনি আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা আহযাব শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ৩৩)

এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

هُمْ اَهْلُ بَيْتٍ طَهَّرَهُمُ الله مِنَ السُّوْءِ وَاخْتَصَّهُمْ بِرَحْمَتِهٖ

অর্থ: “উনারা হচ্ছেন মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা ও পাপ থেকে পূত-পবিত্র রেখেছেন এবং উনার সম্মানিত রহমত মুবারক দ্বারা খাছ করে নিয়েছেন, উনার সম্মানিত খাছ রহমত মুবারক দ্বারা আবৃত করে নিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,

فَاَنَا وَاَهْلُ بَيْتِىْ مُطَهَّرُوْنَ مِنَ الذُّنُوْبِ.

অর্থ: “আমি এবং আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম আমরা সকলেই যুনূব তথা সমস্ত প্রকার ছগীরা-কবীরা এবং যাবতীয় অপছন্দনীয় কাজ থেকে পূত-পবিত্র।” সুবহানাল্লাহ! (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ লিল বায়হাক্বী, শিফা ১/৩২৫, সীরাতে হালবিয়্যাহ ১/৪২, আল মা’রিফাতু ওয়াত তারীখ ১/৪৯৮, খছাইছুল কুবরা ১/৬৬, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/২৩৫, তাফসীরে দুররে মানছূর লিস সুয়ূত্বী ৬/৬০৬, তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম ৯/৩১৩৩ ইত্যাদি)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

اَنَّ نَبِـىَّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُوْلُ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ طَهَّرَهُمُ اللهُ مِنْ شَجَرَةِ النُّبُوَّةِ وَمَوْضِعِ الرِّسَالَـةِ وَمُـخْتَلِفِ الْمَلَائِكَةِ وَبَيْتِ الرَّحْمَةِ وَمَعْدِنِ الْعِلْمِ.

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রায় সবসময় ইরশাদ মুবারক করতেন। আমরা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে (আমাদেরকে) সম্মানিত নুবুওয়াত মুবারক উনার বৃক্ষ, সম্মানিত রিসালাত মুবারক উনার স্থান, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের, উনাদের দ্বারা সম্মানিত খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারক উনার খনি মুবারক (ইত্যাদি সমস্ত কিছু) থেকে পবিত্র রেখেছেন, ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী) করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে দুররে মানছূর ৬/৬০৬, তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম ৯/৩১৩৩)

ইমামুল মুহাদ্দিছীন মিনাল আউওয়ালিন ইলাল আখিরীন, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আলোচ্য সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে- اَهْلُ بَيْتٍ نَـحْنُ (আমরা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম) বলেÑ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে উনার নিজের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! আর طَهَّرَهُمُ الله - মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে পবিত্র করেছেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থ হলো- মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)  করেছেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের মুহতাজ ও উনাদের সম্মানার্থে উনারা সম্মানিত এবং উনাদের প্রতিই উনারা দায়েমীভাবে রুজু। সুবহানাল্লাহ! ফলে উনারা সমস্ত কিছু থেকেই বেনিয়াজ। সুবহানাল্লাহ! কাজেই সম্মানিত নুবুওয়াত মুবারক, সম্মানিত রিসালাত মুবারক, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারক উনার খনি মুবারক ইত্যাদি বরকতময় নিয়ামত মুবারক উনাদের প্রতি রুজু হওয়ার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কোন সুযোগ নেই। অর্থাৎ মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা সমস্ত কিছু থেকে পবিত্র, ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী) । সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কারণেই সম্মানিত নুবুওয়াত মুবারক, সম্মানিত রিসালাত মুবারক, সমস্ত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা, সম্মানিত রহমত মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারকসহ সমস্ত কিছুই ফযীলতপ্রাপ্ত হয়েছেন, সম্মানিত হয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

اَلله الصَّمَدُ

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি ছমাদ তথা  বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা ইখলাছ শরীফ, সম্মানিত আয়াত শরীফ ২)

ইমামুল মুফাসসিরীন মিনাল আউওয়ালিন ইলাল আখিরীন, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যেমন সমস্ত মাখলূকাত থেকে, সমস্ত কিছু থেকে ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)। সুবহানাল্লাহ! ঠিক তেমনিভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একমাত্র যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত সমস্ত মাখলূকাত থেকে, সমস্ত কিছু থেকে ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)। সুবহানাল্লাহ! আর ঠিক একইভাবে মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত সমস্ত কায়িনাত থেকে, সমস্ত কিছু থেকে ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)। সুবহানাল্লাহ! উনারা সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক, সম্মানিত রিসালাত মুবারক, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম উনার খনি মুবারক ইত্যাদি সমস্ত কিছু থেকে পবিত্র, ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মান মুবারক এক কথায় উনারা শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন। এছাড়া যত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক রয়েছেন, সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী হচ্ছেন উনারা। সুবহানাল্লাহ! তাহলে মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত পবিত্রতা মুবারক, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কত বেমেছাল, তা এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! আর সেই মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরই অন্তুর্ভুক্ত হচ্ছেন পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! তাহলে উনার সম্মানিত পবিত্রতা মুবারক, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল, সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। যা কস্মিনকালেও ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সুবহানাল্লাহ! কাজেই উনার সাথে সৃষ্টি জগতের কারোই তুলনা করা যাবে না। সুবহানাল্লাহ! এই সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ لَّا يُقَاسُ بِنَا اَحَدٌ.

অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমাদের সাথে অন্য কারো তুলনা করা যাবে না।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী ৪/২৮৩, জামি‘উল আহাদীছ ২২/২১৯, কানজুল ‘উম্মাল ১২/১০৪, জাম‘উল জাওয়ামি’ ১/২৪৯৫০, যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ ফী মানাক্বিবে যাওইল কুরবা লিমুহিব্বে ত্ববারী ১/১৭, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৭ ইত্যাদি)

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বেমেছাল পবিত্রতা মুবারক উনার হিস্সা আমাদেরকে নছীব করুন। আমীন!

 **************************************





পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক সম্পর্কে জানা সকলের জন্য ফরয



যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

قُلْ لَّا اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ اَجْرًا اِلَّا الْمَوَدَّةَ فِى الْقُرْبـٰى وَمَنْ يَّقْتَرِفْ حَسَنَةً نَّزِدْ لَهٗ فِيْهَا حُسْنًا اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ شَكُوْرٌ.

অর্থ: “(হে আমার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি সমস্ত বান্দা-বান্দীদেরকে, উম্মতদেরকে, তামাম কায়িনাতবাসীকে) বলে দিন যে, তোমাদের নিকট কোনো বিনিময় চাওয়া হচ্ছে না, প্রতিদান চাওয়া হচ্ছে না। আর চাওয়াটাও স্বাভাবিক নয়; তোমাদের পক্ষে দেয়াও কস্মিনকালে সম্ভব নয়। বরং তোমাদের জন্য এটা চিন্তা করাটাও কাট্টা কুফরী হবে। তবে তোমরা যদি ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করতে চাও, যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের হাক্বীক্বী রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করতে চাও, তাহলে তোমাদের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে, ফরয হচ্ছে, আমার নিকটাত্মীয় তথা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া, উনাদের সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করা। আর যে ব্যক্তি কোনো নেক কাজ করে আমি তার সেই নেকীকে বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিয়ে থাকি। নিশ্চিয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ক্ষমাশীল এবং সর্বোত্তম প্রতিদান দানকারী।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা শূরা শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ২৩)

এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

 عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ  تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَحِبُّوا اللهَ لِمَا يَغْذُوْكُمْ مِّنْ نِّـعْمَةٍ وَّاَحِبُّوْنِـىْ لـِحُبِّ اللهِ وَاَحِبُّوْا اَهْلَ بَــيْـتِـىْ لِـحُبِّىْ.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করো। কেননা তিনি তোমাদেরকে খাদ্যসামগ্রীসহ সার্বিকভাবে অনুগ্রহ করে থাকেন। আর তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত-মা’রিফাত মুবারক পেতে হলে, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক পেতে হলে আমাকে মুহব্বত করো। আর তোমরা আমার সম্মানিত মুহব্বত-মা’রিফাত মুবারক পেতে হলে, সম্মানিত রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক পেতে হলে আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, মুস্তাদরাকে হাকিম, ত্ববারনী শরীফ, শু‘য়াবুল ঈমান)

‘আল বাহ্রুল মাদীদ ফী তাফসীরিল কুরআনিল মাজীদ’ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,

مَـحَبَّةُ اَهْلِ الْبَيْتِ وَاجِبَةٌ عَلَى الْبَشَرِ حُرْمَةً وَّتَعْظِيْمًا لِّسَيِّدِ الْبَشَرِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ قَالَ مَنْ اَحَبَّهُمْ فَبِحُبّـِىْ اَحَبَّهُمْ وَمَنْ اَبْغَضَهُمْ فَبِبُغْضِـىْ اَبْغَضَهُمْ فَمَحَبَّةُ الرَّسُوْلِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رُكْنٌ مّـِنْ اَرْكَانِ الْاِيْـمَانِ وَعَقْدٌ مِّنْ عُقُوْدِهٖ لَا يَـتِمُّ الْاِيْـمَانُ اِلَّا بِـهَا وَكَذٰلِكَ مَـحَبَّةُ اَهْلِ بَيْتِهٖ. وَفِـى الْـحَدِيْثِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُؤْمِنُ اَحَدُكُمْ حَتّٰى يُـحِبَّنِـىْ وَلَا يـُحِبُّنِـىْ حَتّٰى يُـحِبَّ ذَوِىْ قَرَابَـتِـىْ اَنَا حَرْبٌ لِّـمَنْ حَارَبَهُمْ وَسَلْمٌ لِّـمَنْ سَالَـمَهُمْ وَعَدُوٌّ لِّـمَنْ عَادَاهُمْ اَلَا مَنْ اٰذٰى قَرَابَـتِـىْ فَقَدْ اٰذَانِـىْ وَمَنْ اٰذَانِـىْ فَقَدْ اٰذَى اللهَ تَعَالـٰى. وَقَالَ اَيْضًا عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ اِنّـِـىْ تَارِكٌ فِيْكُمْ مَّا اِنْ تَـمَسَّكْتُمْ بِهٖ لَنْ تَضِلُّوْا كِتَابَ اللهِ تَعَالـٰى وَعِتْرَتِـىْ.

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে এবং উনার মর্যদা-মর্তবা, শান-মান, ফযায়িল-ফযীলত, পবিত্রতা মুবারক উনাদের কারণে মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা সমস্ত মানুষের জন্য, সমস্ত কায়িনাতের জন্য ফরয। সুবহানাল্লাহ! আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সম্মানিত মুহব্বত মুবারক করলো, সে মূলত, আমার সম্মানিত মুহব্বত মুবারক উনার কারণেই উনাদেরকে সম্মানিত মুহব্বত মুবারক করলো। সুবহানাল্লাহ! আর যারা উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলো, তারা মূলত, আমার প্রতি তাদের বিদ্বেষ থাকার কারণেই উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলো। নাঊযুবিল্লাহ! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারক সম্মানিত ঈমান উনার রুকনসমূহ থেকে একখানা রুকন মুবারক এবং সম্মানিত ঈমান উনার বন্ধনসমূহ থেকে একখানা বন্ধন মুবারক। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারক ব্যতীত সম্মানিত ঈমান পূর্ণ হয় না। সুবহানাল্লাহ! অনুরূপভাবে মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক। অর্থাৎ মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক সম্মানিত ঈমান উনার রুকনসমূহ থেকে একখানা রুকন মুবারক এবং সম্মানিত ঈমান উনার বন্ধনসমূহ থেকে একখানা বন্ধন মুবারক। উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক ব্যতীত সম্মানিত ঈমান পূর্ণ হয় না। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা আমাকে মুহব্বত না করবে। আর তোমরা আমাকে মুহব্বত করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত না করবে। আমি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবো, যারা আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে। নাঊযুবিল্লাহ!  আর আমি তাদের সাথে সন্ধি স্থাপন করবো, যারা আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে সন্ধি স্থাপন করবে। সুবহানাল্লাহ! তারা আমার শত্রু, যারা আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করবে। নাঊযুবিল্লাহ! সাবধান! যারা আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে কষ্ট দিলো, তারা মূলত আমাকেই কষ্ট দিলো। নাঊযুবিল্লাহ! আর যারা আমাকে কষ্ট দিলো, তারা মূলত যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে কষ্ট দিলো। নাঊযুবিল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, আমি তোমাদের মাঝে দু’খানা সম্মানিত বিশেষ নিয়ামত মুবারক রেখে যাচ্ছি, যতদিন তোমরা উনাদেরকে আঁকড়িয়ে ধরে রাখবে, ততদিন পর্যন্ত তোমরা গোমরাহ হবে না। আর তা হচ্ছেন, ১. মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত কিতাব কুরআন শরীফ এবং ২. আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা।” সুবহানাল্লাহ! (আল বাহ্রুল মাদীদ ফী তাফসীরিল কুরআনিল মাজীদ ৫/২১১)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ لَيْلـٰى رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُؤْمِنُ عَبْدٌ حَتّٰى اَكُوْنَ اَحَبَّ اِلَيْهِ مِنْ نَّفْسِهٖ وَاَهْلِـىْ اَحَبَّ اِلَيْهِ مِنْ اَهْلِهٖ وَعِتْرَتِـىْ اَحَبَّ اِلَيْهِ مِنْ عِتْرَتِهٖ وَذَاتِـىْ اَحَبَّ اِلَيْهِ مِنْ ذَاتِهٖ.

অর্থ: “হযরত আবূ লায়লা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোনো বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকট তার নফস তথা জীবন থেকে অধিক প্রিয় না হবো, আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা তার নিকট তার পরিবার থেকে অধিক প্রিয় না হবেন, আমার সম্মানিত বংশধরগণ উনারা তার নিকট তার বংশধর থেকে অধিক প্রিয় না হবেন এবং আমার মহাসম্মানিত ওজুদ মুবারক তার নিকট তার যাত থেকে অধিক প্রিয় না হবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল আওসাত্ব লিত্ব ত্ববারনী ৬/৫৯, আল মু’জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারনী ৭/৭৫, জামি‘উল আহাদীছ ১৬/৪৯৩, আছ ছওয়া‘ইকুল মুহরিক্বহ ২/৪৯৫)

অপর বর্ণনায় এসেছে,

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ لَيْلـٰى رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُؤْمِنُ عَبْدٌ حَتّٰـى اَكُوْنَ اَحَبَّ اِلَيْهِ مِنْ نَّفْسِهٖ وَتَكُوْنَ عِتْرَتِـىْ اَحَبَّ اِلَيْهِ مِنْ عِتْرَتِهٖ وَيَكُوْنَ اَهْلِـىْ اَحَبَّ اِلَيْهِ مِنْ اَهْلِهٖ وَتَكُوْنَ ذَاتِـىْ اَحَبَّ اِلَيْهِ مِنْ ذَاتِهٖ.

অর্থ: “হযরত আবূ লায়লা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোনো বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকট তার নফস তথা জীবন থেকে অধিক প্রিয় না হবো, আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা তার নিকট তার পরিবার থেকে অধিক প্রিয় না হবেন, আমার সম্মানিত বংশধরগণ উনারা তার নিকট তার বংশধর থেকে অধিক প্রিয় না হবেন এবং আমার মহাসম্মানিত ওজুদ মুবারক তার নিকট তার যাত থেকে অধিক প্রিয় না হবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল আওসাত্ব ৬/৫৯, আল মু’জামুল কাবীর ৭/৭৫, জামি‘উল আহাদীছ ১৬/৪৯৩, আছ ছওয়া‘ইকুল মুহরিক্বহ ২/৪৯৫, শু‘আবুল ঈমান শরীফ ৩/৮৮, দায়লামী শরীফ ৫/১৫৪ ইত্যাদি)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ صَعِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْـمِـنْۢـبَرِ فَحَمِدَ اللهَ تَعَالـٰى وَاَثْنٰـى عَلَيْهِ ثُـمَّ قَالَ مَالِـىَ اَرَاكُمْ تَـخْتَلِفُوْنَ فِـىْ اَصْحَابِـىْ اَمَا عَلِمْتُمْ اَنَّ حُبِّـىْ وَحُبَّ اَهْلِ بَيْتِـىْ وَحُبَّ اَصْحَابِـىْ فَرَضَهُ اللهُ تَعَالـٰى عَلـٰى اُمَّتِـىْ اِلـٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ.

অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত মিম্বর শরীফ উনার উপর সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রাখলেন। অতঃপর তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হামদ ও ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা মুবারক করলেন। তারপর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, কি হলো! আমি তোমাদেরকে দেখতে পাচ্ছি, তোমরা আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে ইখতিলাফ করো? সাবধান! তোমরা জেনে রাখ, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার সম্মানিত মুহব্বত মুবারক, আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক এবং আমার হযরত ছাহাবা-ই কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক ক্বিয়ামত পর্যন্ত তথা অনন্তকাল যাবৎ আমার উম্মতের উপর অর্থাৎ সমস্ত কায়িনাতের উপর ফরয করে দিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (রিয়াদ্বুন নাদ্বরহ)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ اَلْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا بَالُ اَقْوَامٍ اِذَا جَلَسَ اِلَيْهِمْ اَحَدٌ مِّنْ اَهْلِ بَيْتِـىْ قَطَعُوْا حَدِيْثَهُمْ وَالَّذِىْ نَفسِىْ بِيَدِهٖ لَا يَدْخُلُ قَلْبَ امْرَئِ ۣ الْاِيْـمَانُ حَتّٰى يُـحِبَّهُمْ لِلّٰهِ  وَلِقَرَابَتِـىْ.

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্ত্বলিব আলাইহিমাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, লোকদের কি হলো যে, তারা আলোচনারত থাকে, যখন আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে কাউকে দেখে, তখন তাদের আলোচনা বন্ধ করে দেয়! যেই মহান সত্তা উনার সম্মানিত কুদরতী হাত মুবারক-এ আমার সম্মানিত প্রাণ মুবারক উনার শপথ! কোন লোকের অন্তরে ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমান প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য এবং আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম হওয়ার কারণে উনাদেরকে মুহব্বত না করবে।” সুবহানাল্লাহ! (আল ফাতহুল কাবীর ৩/৮০, জামি‘উল আহাদীছ ৩৫/২৮১)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ دُرَّةَ بِنْتِ اَبِـىْ سَهْبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهَا قَالَتْ خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُغْضِبًا حَتَّى اسْتَوٰى عَلَى الْـمِـنْۢـبَرِ فَحَمِدَ اللهَ وَاَثْنٰـى عَلَيْهِ ثُـمَّ قَالَ مَا بَالُ الرِّجَالِ يُؤْذُوْنَنِـىْ فِـىْ اَهْلِىْ وَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهٖ لَا يُؤْمِنُ عَبْدٌ حَتّٰى يُـحِبَّنِـىْ وَلَا يُـحِبُّنِـىْ حَتّٰى يُـحِبَّ ذَوِىْ.

অর্থ: “হযরত র্দুরা বিনতে আবী সাহ্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত জালালী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (সম্মানিত হুজরা শরীফ থেকে) বের হয়ে সম্মানিত মিম্বর শরীফ উনার মধ্যে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রাখলেন। অতঃপর তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হামদ ও ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা মুবারক করলেন। তারপর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, লোকদের কি হলো যে, তারা আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যাপারে আমাকে কষ্ট দেয়? যেই মহান সত্তা উনার সম্মানিত কুদরতী হাত মুবারক-এ আমার সম্মানিত প্রাণ মুবারক উনার শপথ! কোন বান্দা-বান্দী কখনও ঈমানদার হতে  পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আমাকে মুহব্বত না করবে এবং কখনও তারা আমাকে মুহব্বত করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত না করবে।” সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ শরীফ ১১/৯)

সুতরাং উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনার দ্বারা দিবালোকের ন্যায় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা ব্যতীত কেউ কস্মিনকালেও ঈমানদার হতে পারবে না। সুবহানাল্লাহ!

এ জন্যই শাফেয়ী মাযহাব উনার সম্মানিত ইমাম হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন,

يَا اَهْلَ بَيْتِ رَسُوْلِ اللهِ حُبُّكُمْ..........فَرْضٌ مِّنَ اللهِ فِـى الْقُرْاٰنِ اَنْزَلَهٗ

অর্থ: “হে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! আপনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে ফরয করা হয়েছে, যা মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার সম্মানিত আয়াত শরীফ নাযিল করে সাব্যস্ত করে দিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (দেওয়ানে শাফেয়ী ১০৬ পৃ., মুখতাছরুত তোহফাহ ১/৭, ছব্বুল আযাব ১/৩১৯, আল ক্বওলুল বাদী’ ফী ছলাতি ‘আলা হাবীবিশ শাফী’ লিস সাখাওই ১/৯১)

হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেছেন,

اِنْ كَانَ رَفْضًا حُبُّ اٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  ...............  فَلْيَشْهَدِ الثَّقَلَانِ اَنِّـىْ رَافِضِـىٌّ.

অর্থ: “যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করলে রাফিযী হতে হয়, তাহলে জিন-ইনসান তারা সাক্ষী থাকুক যে, নিশ্চয়ই আমি রাফেযী।” সুবহানাল্লাহ! (দেওয়ানে শাফেয়ী ৮৯ পৃ., মুখতাছরুত তোহফাহ ১/৮, ছব্বুল আযাব লিল আলূসী ১/৩২১)

তিনি আরো বলেছেন,

اَلْعِلْمُ وَالتَّوْحِيْدُ فِـىْ جَانِبٍ    ...............وَّحُبُّ اَهْلِ الْبَيْتِ فِـىْ جَانِبٍ.

অর্থ: “সম্মানিত ইলম এবং তাওহীদ মুবারক এক পাশে আর মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক এক পাশে।” সুবহানাল্লাহ! (মুখতাছরুত তোহফাহ ১/৭, ছব্বুল আযাব ১/৩২০)

অর্থাৎ মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক ব্যতীত সম্মানিত ইলম মুবারক ও সম্মানিত তাওহীদ মুবারক দ্বারা কেউ কোনো ফায়দা লাভ করতে পারবে না। কাজেই মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক হচ্ছেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরয। সুবহানাল্লাহ! উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক ব্যতীত কেউ কস্মিনকালেও ঈমানদার হতে পারবে না।

আর মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করতে হলে অবশ্যই উনাদের সম্পর্কে জানতে হবে, উনাদের বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক জানতে হবে, অন্যথায় উনাদেরকে মুহব্বত করা আদৌ সম্ভব নয়। আর উছূল হচ্ছে,

مَا لَا يَتِمُّ بِهِ الْفَرْضُ فَهُوَ الْفَرْضُ

অর্থ: “যা ব্যতীত ফরয পূর্ণ হয় না, সেটাও ফরয।”

অতএব, মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক সম্পর্কে জানা সমস্ত  জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন। সুবহানাল্লাহ! আর পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিত্বা মুবারক। সুবহানাল্লাহ! কাজেই উনার বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক সম্পর্কে জানাও সমস্ত  জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক হাক্বীক্বীভাবে উপলব্ধি করে উনার সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক করার, সম্মানিত তা’যীম-তাকরীম মুবারক করার এবং সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!

 ************************





পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সমস্ত কায়িনাতবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারী



সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ عَلِـىٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النُّجُوْمُ اَمَانٌ لِّاَهْلِ السَّمَاءِ اِذَا ذَهَبَتِ النُّجُوْمُ ذَهَبَ اَهْلُ السَّمَاءِ وَاَهْلُ بَيْتِـىْ اَمَانٌ لِّاَهْلِ الْاَرْضِ فَاِذَا ذَهَبَ اَهْلُ بَيْـتِـىْ ذَهَبَ اَهْلُ الْاَرْضِ.

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তারকারাজী আসমানবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারী। যখন তারকারাজি বিদায় নিবে, তখন আসমানবাসীরাও ধ্বংস হয়ে যাবে। আর আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন যমীনবাসীর জন্য, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারী। যখন আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বিদায় নিবেন, তখন সমস্ত যমীনবাসীরা, সমস্ত কায়িনাতবাসীরা ধ্বংস হয়ে যাবে।” সুবহানাল্লাহ! (ফাদ্বায়িলুছ ছাহাবাহ ২/৬৭১, আছ ছওয়ায়িকুল মুহরিক্বহ ২/৬৭৫, আল মু’জাম ১/৪০৪, মিরক্বাত শরীফ ৯/৩৯৮৮, যাখায়িরুল ‘উক্ববাহ ১/১৭, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৭)

অপর বর্ণায় এসেছে,

عَنْ حَضْرَتْ سَلَمَةَ بْنِ الْاَكْوَعِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلنُّجُوْمُ اَمَانٌ لِّاَهْلِ السَّمَاءِ وَاَهْلُ بَيْتِـىْ اَمَانٌ لِّاُمَّتِـىْ.

অর্থ: “হযরত সালামাহ ইবনে আকওয়া’ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তারকারাজি হচ্ছে আসমানবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারী। আর আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন আমার সমস্ত উম্মতের জন্য নিরাপত্তাদানকারী।” সুবহানাল্লাহ! (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, মুসাদ্দাদ, আবূ ইয়া’লা, হাকিম, তিরমিযী, ত্ববারনী, ইবনে ‘আসাকির, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৬, যাখায়িরুল ‘উক্ববাহ ১/১৭)

অপর বর্ণনায় রয়েছে,

النُّجُوْمُ اَمَانٌ لِّاَهْلِ السَّمَاءِ وَاَهْلُ بَيْتِـىْ اَمَانٌ لِّاَهْلِ الْاَرْضِ فَاِذَا ذَهَبَ اَهْلُ بَيْـتِـىْ ذَهَبَ اَهْلُ الْاَرْضِ.

অর্থ: “তারকারাজি আসমানবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারী। আর আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন যমীনবাসীর জন্য, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারী। যখন আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বিদায় নিবেন, তখন সমস্ত যমীনবাসী, সমস্ত কায়িনাতবাসী ধ্বংস হয়ে যাবে।” সুবহানাল্লাহ!

অর্থাৎ মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন তারকারাজিসহ সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারী। সুবহানাল্লাহ! উনাদের সম্মানার্থেই সমস্ত কায়িনাতবাসী নিরাপত্তা লাভ করে থাকে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত নিরাপত্তা লাভ করতেই থাকবে। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কত বেমেছাল তা এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! উনারা হচ্ছেন সমস্ত উম্মতের জন্য, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারী। যাঁরা উনাদেরকে মুহব্বত করবেন, তা’যীম-তাকরীম করবেন, উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিবেন, উনাদের সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক করবেন, উনারা ইহকাল ও পরকালে নিরাপত্তা লাভ করবেন, হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করবেন। সুবহানাল্লাহ!

আর পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিত্ব মুবারক। সুবহানাল্লাহ! কাজেই তিনি হচ্ছেন সমস্ত উম্মতের জন্য, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারিণী। যাঁরা উনাদেরকে মুহব্বত করবেন, তা’যীম-তাকরীম করবেন, উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিবেন, উনাদের সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক করবেন, উনারা ইহকাল ও পরকালে নিরাপত্তা লাভ করবেন, হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করবেন। সুবহানাল্লাহ!

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে সর্ববিষয়ে, সর্বদিক থেকে, সবসময় হাক্বীক্বী নিরাপত্তা নছীব করুন। আমীন!



******************************





পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক



মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

اِنَّا اَعْطَيْنٰكَ الْكَوْثَرَ

অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সম্মানিত কাউছার মুবারক হাদিয়া মুবারক করেছি।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা কাওছার শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ১)

এই সম্মানিত কাওছার মুবারক উনার লক্ষ-কোটি ব্যাখ্যা মুবারক। উনাদের মধ্যে একখানা ব্যাখ্যা মুবারক হচ্ছেন, ‘খইরে কাছীর’ তথা সমস্ত প্রকার ভালাই। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত প্রকার ভালাই তথা সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয় মুবারকগুলো হাদিয়া মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! অপরদিকে উনার সাথে যে বিষয় মুবারকগুলো সম্পৃক্ত হয়েছেন, সে বিষয় মুবারকগুলো সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ হয়ে গেছেন। সুবহানাল্লাহ!

যার কারণে এই ব্যাপারে সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইজমা করেছেন যে,

اِنَّ التُّرْبَةَ الَّتِىْ اِتَّصَلَتْ اِلـٰى اَعْظُمِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَفْضَلُ مِنَ الْاَرْضِ وَالسَّمَاءِ حَتَّى الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ.

অর্থ: ‘নিশ্চয়ই এক মুহূর্তের তরেও নূরে মুজসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জিসম মুবারক উনার স্পর্শ মুবারক-এ এসেছেন, যেই মাটি, ধূলি-বালি (পদার্থ-বস্তু যা কিছুই হোক না কেন) উনাদের ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা আসমান-যমীন; এমনকি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক থেকেও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি।” সুবহানাল্লাহ!

অন্য ইজমা মুবারক-এ বলা হয়েছে,

فَاِنَّهٗ اَفْضَلُ مُطْلَقًا مِّنَ الْكَعْبَةِ وَالْـكُـرْسِىِّحَتَّى الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ.

অর্থ: ‘নিশ্চয়ই নূরে মুজসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্পর্শ মুবারক-এ যা কিছু এসেছেন তা অবশ্যই সম্মানিত কা’বা শরীফ, সম্মানিত কুরসী শরীফ; এমনকি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক থেকেও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি ফযীলতপ্রাপ্ত, সম্মানিত এবং সর্বশ্রেষ্ঠ।’ সুবহানাল্লাহ!

অর্থাৎ এক মুহূর্তের তরেও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্পর্শ মুবারক-এ যা কিছু এসেছেন তা আসমান-যমীন, সম্মানিত কা’বা শরীফ, সম্মানিত কুরসী শরীফ, মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতে যা কিছু রয়েছে; এমনকি সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক থেকেও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি পবিত্র, ফযীলতপ্রাপ্ত, সম্মানিত এবং সর্বশ্রেষ্ঠ।’ সুবহানাল্লাহ!

সেই বিষয়টি সম্মানিত মি’রাজ শরীফ উনার রজনীতে স্পষ্ট হয়ে গেছে। যেটা সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

اِنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا اُسْرِىَ بِهٖ لَيْلَةَ الْمِعْرَاجِ اِلَى السَّمٰوَاتِ الْعُلـٰى وَوَصَلَ اِلَى الْعَرْشِ الْمُعَلّٰى اَرَادَ خَلْعَ نَعْلَيْهِ اَخْذًا مِّـنْ قَوْلِهٖ تَعَالـٰى لِسَيِّدِنَا حَضْرَتْ مُوسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ حِيْنَ كَلَّمَهٗ فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَ اِنَّكَ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِطُوًى. فَنُوْدِىَ مِنَ الْعَـلِـىِّ الْاَعْلـٰى يَا حَضْرَتْ مُـحَمَّدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَـخْلَعْ نَعْلَيْكَ فَاِنَّ الْعَرْشَ يَتَشَرَّفُ بِقُدُوْمِكَ مُتَنَعِّـلًا وَّيَفْتَخِرُ عَلـٰى غَيْرِهٖ مُتَـبَـرِّكًـا فَصَعِدَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلَى الْعَرْشِ وَفِىْ قَدَمَيْهِ النَّعْلَانِ وَحَصَلَ لَهٗ بِذٰلِكَ عِزٌّ وَّشَأْنٌ.

অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত মি’রাজ শরীফ উনার রাতে সুউচ্চ সপ্ত আসমান অতিক্রম করে সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক উনার নিকটবর্তী হলেন, তখন তিনি উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলে সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক নেয়ার চিন্তা মুবারক করলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার ওই বাণী মুবারক ফিকির করে, যেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি (যখন সাইয়্যিদুনা হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি তূর পাহাড়ে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কথা বলার জন্য তাশরীফ মুবারক রাখবেন, তখন) হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেছিলেন,

فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَ اِنَّكَ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى.

‘আপনি আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ মুবারক খুলুন। কেননা আপনি সম্মানিত (তূর পাহাড়ের) পবিত্র তুয়া উপত্যকায় তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। (সেখানে আমার সম্মানিত আরশে আযীম উনার ৭০ হাজার ভাগের এক ভাগ সম্মানিত নূর মুবারক পতিত হয়েছে। যার কারণে সেই স্থানটি সম্মানিত ও পবিত্র হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ! তাই আপনি সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলে আসুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই বিষয়টি ফিকির করে উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলার চিন্তা করেছিলেন।) তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ওহী মুবারক করলেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে আপনি আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলবেন না। অর্থাৎ আপনি আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফসহ আমার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করুন। কেননা আমার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ উনাদের পরশে, উনাদের ধূলি-বালি মুবারক উনাদের স্পর্শ মুবারক-এ ধন্য হবেন, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক হাছিল করবেন। সুবহানাল্লাহ! (শুধু তাই নয়,) আমার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ উনাদের স্পর্শ মুবারক পাওয়ার কারণে, উনাদের ধূলি-বালি মুবারক লাভ করে বরকতময় হয়ে আরো পবিত্রতা হাছিল করবেন এবং অন্য সবার উপর ফখর করবেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত না’লাইন শরীফ পরিধান মুবারক করা অবস্থাতেই সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। আর সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ মুবারক উনাদের স্পর্শ মুবারক লাভ করে, উনাদের ধূলি-বালি মুবারক পেয়ে ইয্যত-সম্মান, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক হাছিল করলেন।” সুবাহানাল্লাহ! (ফাতহুল মুত‘য়াল ফী মাদহি খইরিন নি‘য়াল শরীফ)

দশম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘ই’জাযুল কুরআন শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ্য করেন,

وَمَوْلَانَا مُـحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَـمَّا زُجَّ بِهٖ فِىْ عَالَـمِ الْعِزَّةِ اَرَادَ اَنْ يـَّخْلَعَ نَعْلَيْهِ فَاِذَا النِّـدَاءُ يَا مـُحَمَّدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَـخْلَعْ نَعْلَيْكَ. فَقَالَ يَا رَبِّ سَــمِعْتُكَ تَقُوْلُ لِـمُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَ .فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَئِنْ اَمَرْتُ حَضْرَتْ مُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ بِنَزْعِ نَعْلَيْهِ عَلـٰى جَبَلِ الطُّوْرِ فَقَدْ اَبَـحْنَا لَكَ اَنْ تَطَأَ بِنَعْلَيْكَ عَلـٰى بَسَاطِ النُّوْرِ لِاَنَّكَ الْمُكَرَّمُ عِنْدَنَا وَالْعَزِيْزُ لَدَيْنَا.

অর্থ: “আর আমাদের যিনি মাওলা, নবী-রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন (সম্মানিত মি’রাজ শরীফ উনার রজনীতে) সম্মানিত ইয্যত উনার জগতে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন তথা সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক উনার নিকটবর্তী হলেন, তখন তিনি উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলার চিন্তা মুবারক করলেন। এমতাস্থায় মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ওহী মুবারক করেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, দয়া করে আপনি আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলবেন না। অর্থাৎ আপনি সম্মানিত না’লাইন শরীফসহ আমার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করুন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আয় বারে ইলাহী, আমি তো শুনেছি, আমি জানি, আপনি জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেছিলেন,

فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَ

অর্থ: “(আপনি সম্মানিত তূর পাহাড়ে তাশরীফ মুবারক রাখতে যাচ্ছেন। তাই) আপনি আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলে আসুন।” (সম্মানিত সূরা ত্বহা শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ১২)

তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যদিও আমি হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলে সম্মানিত তূর পাহাড়ে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ মুবারক প্রদান করেছি। কিন্তু আমি আপনার ক্ষেত্রে এটাই পছন্দ করি যে, আপনি যেন আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফসহ সম্মানিত নূর মুবারক উনার প্রশস্ত ময়দান মুবারক-এ তথা নূরে নূরময় আমার সম্মানিত নূরানী আরশে আযীম মুবারক-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! কেননা আপনি আমার নিকট সবচেয়ে সম্মানিত এবং সর্বাধিক প্রিয়, মাহবূব। সুবহানাল্লাহ! (আমার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ উনাদের পরশে, উনাদের ধূলি-বালি মুবারক পেয়ে ধন্য হবেন, শান-মান, ফাযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক হাছিল করবেন। শুধু তাই নয়, আমার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ উনাদের স্পর্শ মুবারক লাভ করে, উনাদের ধূলি-বালি মুবারক পেয়ে বরকতময় হয়ে আরো পবিত্রতা হাছিল করবেন এবং অন্য সবার উপর ফখর করবেন।)” সুবহানাল্লাহ! (ই’জাযুল কুরআন শরীফ ৩/৬৩)

এখন বলার বিষয় হচ্ছে, হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন একজন জলীলুল ক্বদর নবী এবং রসূল। সুবহানাল্লাহ! যদি কিতাব হিসেবে ধরা হয়, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিষয়টি আলাদা। এছাড়া অন্যান্য সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন প্রথম। সুবহানাল্লাহ! আর উনাকেই তূর পাহাড়ে যেতে হয়েছিলো উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলে। কেননা সেখানে সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক উনার সত্তর হাজার ভাগের এক ভাগ নূর মুবারক বর্ষিত হয়েছিলো বা যাহির হয়েছিলো। অন্যদিকে, সাধারণ মাটি, ধূলি-বালি যার কোনো ক্বদর নেই; কিন্তু নূরে মুজসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত স্পর্শ মুবারক-এ আসার কারণে উক্ত মাটি, ধূলি-বালির মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব, পবিত্রতা আসমান-যমীন, কা’বা শরীফ, কুরসী শরীফ, এমনকি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক থেকেও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ উনাদের ধূলি-বালি মুবারক পেয়ে সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক আরো পবিত্রতা হাছিল করেছেন, সম্মানিত ও বরকতময় হয়েছেন এবং সকলের উপর ফখর করেছেন। সুবহানাল্লাহ! যদি তাই হয়, তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নূরুন নাজাত (রক্ত) মুবারক যেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনার সম্মানিত জিসম মুবারক-এ প্রবাহিত, সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক, পবিত্রতা মুবারক কত বেমেছাল সেটা এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! মূলত, এক কথায় তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া যত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক, পবিত্রতা মুবারক রয়েছে সমস্ত কিছুর অধিকারিণী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! উনাকে শুধু পূত-পবিত্র বললে ভুল হবে। তিনি হচ্ছেন পূত-পবিত্রতাদানকারী। সুবহানাল্লাহ!

যাঁরা আক্বলমান্দ উনাদের জন্য আর কোনো দলীলের প্রয়োজন নেই। কিন্তু যারা সৃষ্টির সর্বনিকৃষ্ট জীব ইহুদী, খ্রিস্টান, কাফির, মুশরিক, মুনাফিক্ব, উলামায়ে সূ’, ওহাবী, খারিজী, দেওবন্দী, লা-মাযহাবী ও বদ আক্বীদাধারী, বদ মাযহাবী তাদেরকে আরো শত-সহস্র, লক্ষ-কোটি দলীল দিলেও তারা কস্মিনকালেও বুঝবে না। তারা হচ্ছে চতুষ্পদ জন্তু তথা শূকর, কুকুরের চেয়েও অত্যধিক নিকৃষ্ট। না‘ঊযুবিল্লাহ! এদের ব্যাপারেই যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন,

وَلَقَدْ ذَرَاْنَا لِـجَهَنَّمَ كَثِيْرًا مِّنَ الْـجِـنِّ وَالْاِنْسِ لَـهُمْ قُلُوْبٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ بِـهَا وَلَـهُمْ اَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُوْنَ بِـهَا وَلَـهُمْ اٰذَانٌ لَّا يَسْمَعُوْنَ بِـهَا اُولٰـئِكَ كَالْاَنْعَامِ بَلْ هُمْ اَضَلُّ اُولٰـئِكَ هُمُ الْغٰفِلُوْنَ.

অর্থ: “আর জিন ও মানুষের মাঝে এমন অনেক জিন ও মানুষ রয়েছে, যাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গেছে। অর্থাৎ তারা তাদের বদ আমলের দ্বারা তাদের উপর জাহান্নাম অবধারিত করে নিয়েছে। তাদের অন্তর রয়েছে; কিন্তু তারা উপলব্ধি করতে পারে না। তাদের চক্ষু রয়েছে; কিন্তু তারা দেখতে পায় না। তাদের কান রয়েছে; কিন্তু তারা শুনতে পায় না। তারা হচ্ছে চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায়; বরং তার চেয়েও অধিক নিকৃষ্ট। মূলত তারা হচ্ছে গাফিল।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (সম্মানিত সূরা আ’রাফ শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ১৭৯)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,

وَلِلَّهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَلَكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَا يَعْلَمُونَ

অর্থ: “সমস্ত ইজ্জত তথা শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক একমাত্র যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য, উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার (এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বা আলাইহিস সালাম উনার এবং মহাসম্মানিত হযরত আম্মা আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের, মহাসম্মানিতা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের এবং মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের) জন্য এবং মু’মিনীন উনাদের জন্য। সুবহানাল্লাহ! কিন্তু মুনাফিক্বরা তা জানে না, বুঝে না।” (সম্মানিত সূরা মুনাফিকূন শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ৮)

সুতরাং পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক নিয়ে যারা চূ-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করবে, তারা হচ্ছে গোমরা, পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত, মুনাফিক্ব ও উলামায়ে সূ’দের অন্তর্ভুক্ত।

মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক হাক্বীক্বী উপলব্ধি করে উনার হাক্বীক্বী ছানা-ছাফত মুবারক করার তাওফীক্ব দান করুন এবং উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে যাহিরী-বাত্বিনী সর্বদিক থেকে হাক্বীক্বী পবিত্রতা দান করুন। আমীন!

 ************************************

 



পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক নিয়ে যারা চূ-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করবে, উনার বিরোধীতা করবে, উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে, তাদের ভয়াবহ কঠিন পরিণতি

পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইতি শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিত্ব মুবারক এবং মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ১২ ইমাম আলাইহিমসু সালাম উনাদের মধ্যে মহাসম্মানিত ৪র্থ ইমাম আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! আর মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইতি শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক নিয়ে চূ-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করার, উনাদের বিরোধীতা করার, উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার ভয়াবহ কঠিন পরিণতি সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ عَلِـىٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ لَـمْ يَعْرِفْ حَقَّ عِتْرَتِـىْ وَالْاَنْصَارِ وَالْعَرَبِ فَهُوَ لِاِحْدٰى ثَلَاثٍ اِمَّا مُنَافِقٌ وَاِمَّا لِزَنْيَةٍ وَاِمَّا امْرُؤٌ حَمَلَتْ بِهٖ اُمُّهٗ فِـىْ غَيْرِ طُهْرٍ.

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের,  হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের এবং সম্মানিত আরব উনাদের হক্ব মুবারক বুঝলো না তথা উনাদের সম্মান ইজ্জত মুবারক বুঝলো না, উনাদেরকে সম্মান করলো না, উনাদের বিরোধিতা করলো, সেই ব্যক্তির তিনটির যেকোনো একটি অবস্থা হবেÑ হয় সে মুনাফিক্ব, না হয় অবৈধ সন্তান অথবা তার মা তাকে গাইরে তুহুর তথা নিষিদ্ধ সময় গর্ভে ধারণ করেছে।” নাঊযুবিল্লাহ! (দায়লামী শরীফ ৩/৬২৬, আছ ছওয়ায়িকুল মুহরিক্বাহ ২/৪৯৯, জামিউল আহাদীছ লিস সুয়ূত্বী ২১/৪২০, জামউল জাওয়ামি’, শুয়াবুল ঈমান লিল বাইহাক্বী ৩/১৬২, তারতীবুল আমালী ১/২০৬, আল মাক্বাছিদুল হাসানাহ ১/৬৪, কাশফুল খফা ১/৫৪, যখীরাতুল হুফফায ৪/২৪০৫, শরফুল মুস্ত¡ফা ৫/৩৩৬ ইত্যাদি)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ سَعِيْدِ ۨ الْـخُدْرِى رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اَبْغَضَنَا اَهْلَ الْبَيْتِ فَهُوَ مُنَافِقٌ.

অর্থ: “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিরোধিতা করে, উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, সে মুনাফিক্ব।” নাঊযুবিল্লাহ! (দুররুল মানছূর ১৩/১৫১, ফাযায়িলু  ছাহাবা লিআহমদ ইবনে হাম্বল ২/৬৬১, আর রিয়াদুন নাদ্বরা ১/৩৬২, যখায়েরুল উক্ববা ১/১৮)

অন্য বর্ণনায় এসেছে,

ومن أبغض أهل البيت فهو منافق ٌ.

অর্থ: “যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলো, উনাদের বিরোধিতা করলো, সে মুনাফিক্ব।” নাঊযুবিল্লাহ! (যাখায়েরুল উক্ববা লিমুহিব্বে ত্ববারী ১/১৮, জামিউল আহাদীছ লিস সুয়ীত্বী ৪১/৩৬০, আছ ছওয়াইকুল মুহ্রিক্বাহ্ লিইবনে হাজার হাইছামী ২/৫০৩, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ লিইউসূফ ছালিহী শামী ১১/৮, দায়লামী শরীফ ইত্যাদি)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْاَنْصَارِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ خَطَبَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَمِعْتُهٗ وَهُوَ يَقُوْلُ يَا اَيُّهَا النَّاسُ مَنْ اَبْغَضَنَا اَهْلَ الْبَيْتِ حَشَّرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَهُوْدِيًّا فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاِنْ صَامَ وَصَلّٰى قَالَ وَاِنْ صَامَ وَصَلّٰى وَزَعِمَ اَنَّهٗ مُسْلِمٌ.

অর্থ: “হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা মুবারক দিলেন এবং বলতে থাকলেন যে, হে লোক সকল! যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে, উনাদের বিরোধিতা করবে, তার হাশর-নশর হবে ইহুদীদের সাথে। আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যদিও  সে রোযা রাখে এবং নামায পড়ে? উত্তরে তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হ্যাঁ! যদিও সে রোযা রাখে, নামায পড়ে এবং দাবি করে যে, সে মুসলমান। (তা সত্ত্বেও মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ বিরোধিতা করার কারণে, উনাদের শত্রু হওয়ার কারণে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ওই ব্যক্তির সমস্ত ইবাদত বিনষ্ট করে দিয়ে তাকে ক্বিয়ামতের দিন ইহুদীদের দলভুক্ত করে উঠাবেন।)” (আল মু’জামুল আওসাত্ব লিতত্ববারণী ৪/২১২, জামিউল আহাদীছ লিস সুয়ূত্বী ১০/৪৭৫, জামউল জাওয়ামি‘ লিস সুয়ূত্বী, মাজমাউয যাওয়াইদ লিল হাইছামী ৯/৭১২, তারীখে জুরজান ৩৬৯ পৃষ্ঠা)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ اَنَّ رَجُلًا صَفَّ بَيْنَ الرُّكْنِ وَالْـمَقَامِ فَصَلّٰى وَصَامَ ثُـمَّ لَقِىَ اللهَ وَهُوَ مُبْغِضٌ لِّاَهْلِ بَيْتِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ النَّارَ.

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোন ব্যক্তি যদি সম্মানিত রুকনে ইয়ামেন এবং মাক্বামে ইবরাহীম শরীফ উনাদের মধ্যবর্তী স্থানে সারিবদ্ধ হয়ে থাকে। অতঃপর নামায পড়ে এবং রোযা রাখে। কিন্তু এই অবস্থায় তার মৃত্যু হয় যে, সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। তাহলে সে অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (যাখাইরুল উক্ববা লিমুহিব্বে ত্ববারী ১/১৮, খ¦ছায়িছুল কুবরা ২/৪৬৫)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ عَلِـىٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اٰذَانِـىْ فِـىْ عِتْـرَتِـىْ فَقَدْ اٰذَى اللهَ عَزَّ وَجَلَّ.

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যাপারে আমাকে কষ্ট দিলো, সে মূলত যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকেই কষ্ট দিলো।” নাঊযুবিল্লাহ! (দায়লামী শরীফ, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৯)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ عَلِـىٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اٰذَانِـىْ وَعِتْرَتِـىْ فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ.

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমাকে এবং আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে কষ্ট দিবে, তার উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত।” নাঊযুবিল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৯)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ عَلِـىٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حُرِّمَتِ الْـجَنَّةُ عَلـٰى مَنْ ظَلَمَ اَهْلَ بَيْتِـىْ اَوْ قَاتَلَهُمْ اَوْ اَعَانَ عَلَيْهِمْ اَوْ سَبَّهُمْ.

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারামÑ ১. যে আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর যুলুম করবে ২. অথবা উনাদেরকে শহীদ করবে ৩. অথবা উনাদের বিরোধিতা করার জন্য সাহায্য সহযোগীতা করবে। ৪. অথবা উনাদেরকে গালমন্দ করবে, কষ্ট দিবে।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৯)

অপর বর্ণনায় এসেছে,

حُرِّمَتِ الْـجَنَّةُ عَلـٰى مَنْ ظَلَمَ اَهْلَ بَيْتِـىْ وَاٰذَانِـىْ فِـىْ عِتْرَتِـىْ

অর্থ: “ওই ব্যক্তির উপর জান্নাত হারামÑ যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর যুলুম করবে এবং আমার সম্মানিত বংশধর উনাদের ব্যাপারে আমাকে কষ্ট দিবে।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে কুরতুবী ১৬/২২, তাফসীরে কাশ্শাফ ৪/২২০, তাফসীরে হাক্কী ১৩/৭৯, তাফসীরে রূহুল বায়ান ৮/২৩৮ ইত্যাদি)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ سَعِيْدِ ۨ الْـخُدْرِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهٖ لَا يُبْغِضُ اَهْلَ الْبَيْتِ اَحَدٌ اِلَّا اَدْخَلَهُ اللهُ النَّارَ.

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সা‘ঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ওই মহান আল্লাহ পাক উনার কসম, যেই মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত কুদরতী হাত মুবারক-এ আমার সম্মানিত প্রাণ মুবারক। যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (ছহীহ ইবনে হিব্বান ১৫/৪৩৫, মুস্তাদরকে হাকিম ৩/১৬২, আদ দুররুল মানছূর ফিত তাফসীরি বিল মা’ছূর লিস সুয়ূত্বী ১৩/৫১, তাফসীরে রূহুল মা‘আনী ১৩/৩২, তাফসীরে নীসাপুরী ১/৩২০, জামি‘উল আহাদীছ ১৭/৩, জাম‘উল জাওয়ামি’ ১/১৯০৪১, খছায়িছুল কুবরা ২/৩৯৫, শরফুল মুস্ত¡ফা ৫/৩৩২, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ২/১২৩,

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ اَلْـحُسَيْنِ بْنِ عَلِىٍّ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ سَبَّ اَهْلَ الْبَيْتَ فَاِنَّـمَا يَسُبُّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

অর্থ: “ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন ইবনে হযরত আলী আলাইহিমাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে গালি দিলো, নিন্দা করলো, মন্দ বললো, উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলো, তারা মূলত মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকেই গালি দিলো, নিন্দা করলো, মন্দ বললো, উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলো।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ফী সীরাতি খইরিল ইবাদ ১১/৮)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ اَلْـحَسَنِ بْنِ عَلِـىٍّ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُبْغِضُنَا وَلَا يَحْسُدُنَا اَحَدٌ اِلَّا ذِيْدَ عَنِ الْـحَوْضِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِسِيَاطٍ مِّنْ نَّارٍ.

অর্থ: “ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান ইবনে হযরত আলী আলাইহিমাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যারা আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ  আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে, উনাদের বিরোধিতা করবে, উনাদের সাথে হিংসা করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে সম্মানিত হাউযে কাওছার হতে আগুনের দোররা দ্বারা প্রহার করে তাড়িয়ে দেয়া হবে।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (আল মু’জামুল আওসাত্ব ৩/৩৯, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৯/১৭২, আদ দুররুল মানছূর ফিত তাফসীরি বিল মা’ছূর ১৩/৫১, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৮, আছ ছওয়ায়িক্বুল মুহরিক্বাহ ২/৫০৪ )

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ سَعِيْدِ ۨ الْـخُدْرِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِشْتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلـٰى مَنْ اٰذَانِـىْ فِـىْ عِتْرَتِـىْ.

অর্থ: “হযরত আবূ সা‘ঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমাকে আমার মহাসম্মানিত বংশধর তথা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যাপারে আমাকে কষ্ট দিবে, মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি, আযাব-গযব তার উপর কঠোর হবে।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (আছ ছওয়া‘িয়কুল মুহরিক্বহ ২/৫৪৩, আল জামি‘উছ ছগীর ১/৮০, আল ফাতহুল কাবীর ১/১৭৫, জামি‘উল আহাদীছ ৪/৪১২, কানযুল ‘উম্মাল ১২/৯৩)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ سَعِيْدِ ۨ الْـخُدْرِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِشْتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلَى الْيَهُوْدِ وَاشْتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلَى النَّصَارٰى وَاشْتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلـٰى مَنْ اٰذَانِـىْ فِىْ عِتْرَتِـىْ.

অর্থ: “হযরত আবূ সা‘ঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার গযব, অসন্তুষ্টি কঠোর হয়েছে ইহুদীদের উপর, মহান আল্লাহ পাক উনার গযব, অসন্তুষ্টি কঠোর হয়েছে খ্রিস্টানদের উপর। আর যে ব্যক্তি আমাকে আমার বংশধর তথা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যাপারে কষ্ট দিবে, মহান আল্লাহ পাক উনার গযব ও অসন্তুষ্টি তার উপর কঠোর হবে।” সুবহানাল্লাহ! (মানাক্বিবু আলী আলাইহিস সালাম ১/৩৫৬, )

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ عَلِـىٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَخْرَجَهُمْ عَدَاوَةُ اَهْلِ بَيْتِـىْ اِلَـى الْيَهُوْدِيَّةِ فَهُمْ اَهْلُ النَّارِ.

 অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি শত্রুতা লোকদেরকে ইহুদীবাদের দিকে নিয়ে যাবে। অতঃপর ওই সকল লোকেরাই জাহান্নামী।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (তারতীবুল আমালী ১/১৭৭, আল ঈমা ইলা যাওয়ায়িদিল আমালী ৫/১৭৯)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ عَلِـىٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْوَيْلُ لِظَالِـمِىْ اَهْلِ بَيْتِـىْ عَذَابُـهُمْ مَعَ الْـمُنَافِقِيْنَ فِى الدَّرْكِ الْاَسْفَلِ مِنَ النَّارِ.

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি যুলুমকারীদের উপর, বিদ্বেষ পোষণকারীদের উপর জাহান্নাম অবধারিত। তাদের শাস্তি হবে মুনাফিক্বদের সাথে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (মানাক্বিবে আলী ইবনে ত্বালিব আলাইহিস সালাম ১/১২০, শরফুল মুস্ত¡ফা ৫/৩৭৪)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ جَرِيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْبَـجَـلِـىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلَا وَمَنْ مَّاتَ عَلـٰى بُغْضِ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَكْتُوْبًا بَيْنَ عَيْنَيْهِ اٰيِسٌ مِّنْ رَّحْـمَةِ اللهِ اَلَا وَمَنْ مَّاتَ عَلـٰى بُغْضِ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ كَافِرًا اَلَا وَمَنْ مَّاتَ عَلـٰى بُغْضِ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَـمْ يَشُمَّ رَائِحَةَ الْـجنَّةِ.

অর্থ: “হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাবধান! আর যে ব্যক্তি স মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, ক্বিয়ামতের দিন তার দুই চোখের মাঝখানে লিখা থাকবে যে, সে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত রহমত থেকে বঞ্চিত। নাঊযুবিল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, সে কাফির অবস্থায় মারা যাবে। নাঊযুবিল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, সে সম্মানিত জান্নাত উনার ঘ্রাণ পর্যন্ত পাবে না।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে কুরতুবী ১৬/২৩, তাফসীরে কবীর ২৭/৫৯৫, তাফসীরে হাক্কী ১৩/৭৯, তাফসীরে রূহুল বয়ান ৮/২৩৯, তাখরীজু আহাদীছুল কাশ্শাফ ৩/২৩৮, নুজহাতুল মাজালিস ১/৩৬৫)

সুতরাং যারা পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাথে শত্রুতা পোষণ করবে, উনার বিরোধিতা করবে, উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে, উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক নিয়ে চূ-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করবে, তাদের কতো ভয়াবহ কঠিন পরিণতি হবে, তা এখান থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। না‘ঊযুবিল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সম্মানার্থে ওই সকল সৃষ্টির সর্বনিকৃষ্ট প্রাণীদেরকে চিহ্নিত করার ও প্রতিহত করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!



*****************************************





 পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত মুহব্বত মুবারক করার এবং উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক হাছিল করার বেমেছাল ফযীলত



মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

وَتَحْسَبُهُمْ أَيْقَاظًا وَّهُمْ رُقُوْدٌ وَّنُقَلِّبُهُمْ ذَاتَ الْيَمِيْنِ وَذَاتَ الشِّمَالِ وَكَلْبُهُمْ بَاسِطٌ ذِرَاعَيْهِ بِالْوَصِيْدِ لَوِ اطَّلَعْتَ عَلَيْهِمْ لَوَلَّيْتَ مِنْهُمْ فِرَارًا وَّلَمُلِئْتَ مِنْهُمْ رُعْبًا.

অর্থ: “(আপনি উম্মতদেরকে বলে দিন,) তোমরা মনে করবেতারা জাগ্রত, অথচ তারা নিদ্রিত। আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাই ডান দিকে ও বাম দিকে। তাদের কুকুরটি সামনের পা দুটি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে রয়েছে। যদি তোমরা  উঁকি দিয়ে তাদেরকে দেখতে, তবে পেছনে ফিরে পলায়ন করতে এবং তাদের ভয়ে আতঙ্ক গ্রস্ত হয়ে পড়তে।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা কাহ্ফ শরীফ, সম্মানিত আয়াত শরীফ ১৮)

এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে ‘তাফসীরে কুরতুবী শরীফ উনার ১০ম খ-ের ৩৭১-৩৭২ পৃষ্ঠায়’ উল্লেখ রয়েছে,

قَالَ ابْنُ عَطِيَّةَ وَحَدَّثَنِىْ اَبِىْ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَـمِعْتُ اَبَا الْفَضْلِ الْـجَوْهَرِىَّ فِىْ جَامِعِ مِصْرَ يَقُوْلُ عَلٰى مِنْبَرِ وَعْظِهٖ سَنَةَ تِسْعٍ وَّسِتِّيْنَ وَأَرْبَعِمِائَةٍ: اِنَّ مَنْ اَحَبَّ اَهْلَ الْـخَيْرِ نَالَ مِنْ بَرَكَتِهِمْ، كَلْبٌ اَحَبَّ اَهْلَ فَضْلٍ وَّصَحِبَهُمْ فَذَكَرَهُ اللهُ فِىْ مُـحْكَمِ تَنْزِيْلِهٖ. قُلْتُ: اِذْ كَانَ بَعْضُ الْكِلَابِ قَدْ نَالَ هٰذِهِ الدَّرَجَةَ الْعُلْيَا بِصُحْبَتِهٖ وَمُخَالَطَتِهِ الصُّلَحَاءَ وَالْاَوْلِيَاءَ حَتّٰى اَخْبَرَ اللهُ تَعَالٰى بِذٰلِكَ فِىْ كِتَابِهٖ جَلَّ وَعَلَا فَمَا ظَنُّكَ بِالْـمُؤْمِنِيْنَ الْـمُوَحِّدِيْنَ الْـمُخَالِطِيْنَ الْمُحِبِّيْنَ لِلْاَوْلِيَاءِ وَالصَّالِـحِيْنَ بَلْ فِىْ هٰذَا تَسْلِيَةٌ وَّاُنْسٌ لِلْمُؤْمِنِيْنَ الْمُقَصِّرِيْنَ عَنْ دَرَجَاتِ الْكَمَالِ، الْمُحِبِّيْنَ لِلنَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاٰلِهٖ خَيْرِ اٰلٍ. رَوَى الصَّحِيْحُ عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ: بَيْنَا اَنَا وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَارِجَانِ مِنَ الْمَسْجِدِ فَلَقِيَنَا رَجُلٌ عِنْدَ سُدَّةِ الْمَسْجِدِ فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مَتَى السَّاعَةُ؟ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:" مَا اَعْدَدْتَّ لَـهَا" قَالَ فَكَاَنَّ الرَّجُلَ اسْتَكَانَ، ثُـمَّ قَالَ: وَيَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مَا اَعْدَدْتُّ بِـهَا كَثِيْرَ صَلَاةٍ وَّلَا صِيَامٍ وَّلَا صَدَقَةٍ، وَّلَكِنِّىْ اُحِبُّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. قَالَ:" فَاَنْتَ مَعَ مَنْ اَحْبَبْتَ". فِىْ رِوَايَةٍ قَالَ حَضْرَتْ اَنَسُ بْنُ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ: فَمَا فَرِحْنَا بَعْدَ الْاِسْلَامِ فَرَحًا اَشَدَّ مِنْ قَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:" فَاَنْتَ مَعَ مَنْ اَحْبَبْتَ". قَالَ حَضْرَتْ اَنَسٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ: فَاَنَا اُحِبُّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَحَضْرَتْ اَبَا بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَحَضْرَتْ عُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ، فَاَرْجُوْ اَنْ اَكُوْنَ مَعَهُمْ وَاِنْ لَّـمْ اَعْمَلْ بِاَعْمَالِـهِمْ قُلْتُ: وَهٰذَا الَّذِىْ تَـمَسَّكَ بِهٖ حَضْرَتْ اَنَسٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ يَشْمَلُ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ كُلَّ ذِىْ نَفْسٍ، فَكَذٰلِكَ تَعَلَّقَتْ اَطْمَاعُنَا بِذٰلِكَ وَاِنْ كُنَّا مُقَصِّرِيْنَ، وَرَجَوْنَا رَحْمَةَ الرَّحْمٰنِ وَاِنْ كُنَّا غَيْرَ مُسْتَأْهِلِيْنَ، كَلْبٌ اَحَبَّ قَوْمًا فَذَكَرَهُ اللهُ مَعَهُمْ فَكَيْفَ بِنَا وَعِنْدَنَا عَقْدُ الْاِيْـمَانِ وَكَلِمَةُ الْاِسْلَامِ، وَحُبُّ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،" وَلَقَدْ كَرَّمْنا بَنِىْ اٰدَمَ وَحَمَلْناهُمْ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْناهُمْ مِنَ الطَّيِّباتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلـٰى كَثِيْرٍ مِـمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيْلًا".

অর্থ: “ইবনে আতিয়্যাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার শ্রদ্ধেয় পিতা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেছেন যে, তিনি ৪৬৯ হিজরী সনে মিসরের জামে মসজিদে আবুল ফযল জওহারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি ওয়ায শুনেছেন। তিনি মিম্বরে বসে বলেছিলেন, যে ব্যক্তি নেককার উনাদেরকে মুহব্বত করে উনাদের নেকীর অংশ সে-ও পায়। দেখ, আছহাবে কাহ্ফের কুকুর উনাদেরকে মুহব্বত করেছে এবং উনাদের সঙ্গী হয়ে গেছে। ফলে মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত কুরআন শরীফ-এ এই কুকুরটির কথা উল্লেখ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

(ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,) আমি বলি, একটি কুকুর যখন নেককার এবং ওলীগণ উনাদের ছোহবত মুবারক অর্জন করার কারণে এবং উনাদের সঙ্গী হওয়ার কারণে এই সুউচ্চ মর্যাদা পেতে পারে যে, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি এই বিষয়টি উনার সম্মানিত কিতাব কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আলোচনা মুবারক করেছেন, তখন আপনি অনুমান করুন, যেসব ঈমানদার তাওহীদী লোক মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী ও নেককার উনাদেরকে মুহব্বত করে, উনাদের সঙ্গী হয়, তাদের মর্যাদা কতটুকু হবে? সুবহানাল্লাহ! এ ঘটনা মুবারক-এ সেসব মুসলমান উনাদের জন্য সান্তনা ও সুসংবাদ রয়েছে, যারা আমলে কাঁচা, কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মনে প্রাণে মুহব্বত করে। সুবহানাল্লাহ!

(অতঃপর ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,) ‘ছহীহ বুখারী শরীফ’-এ হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে। তিনি বলেন, একদিন আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্মানিত মসজিদে নববী শরীফ থেকে বের হচ্ছিলাম। সম্মানিত মসজিদে নববী শরীফ উনার দরজা মুবারক উনার নিকট আমাদের সাথে একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার দেখা হলো। তিনি সুওয়াল করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, কিয়ামত কবে হবে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি কিয়ামতের জন্যে কী প্রস্তুতি নিয়েছেন (যে, আপনি কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন)? এই কথা শুনে উক্ত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি মনে মনে কিছুটা লজ্জিত হলেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমি কিয়ামতের জন্যে অনেক নামায, রোযা ও দান-খয়রাত সঞ্চয় করিনি, কিন্তু আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে মুহব্বত করি। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, যদি তাই হয়, তবে আপনি (পরকালে) উনার সাথে থাকবেন, যাকে আপনি মুহব্বত মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!

অপর বর্ণনায় রয়েছে, হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন,

فَاَنْتَ مَعَ مَنْ اَحْبَبْتَ

“আপনি (পরকালে, সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ) উনার সাথে থাকবেন, যাকে আপনি মুহব্বত মুবারক করেন।” সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জবান মুবারক-এ এই সম্মানিত হাদীছ শরীফ শুনে আমরা এতই আনন্দিত হলাম যে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার পর, মুসলমান হওয়ার পর এর চাইতে বেশী আনন্দিত আর কখনো হইনি। সুবহানাল্লাহ! হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি আরো বলেন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে, উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে ও সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে মুহব্বত করি এবং আশা করি যে, (পরকালে সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ) উনাদের সাথেই থাকবো। যদিও আমি উনাদের অনুরূপ আমল করি না। সুবহানাল্লাহ!

(অতঃপর ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,) আমি বলি, আর এই বিষয়টি যা হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি আঁকড়িয়ে ধরেছেন, তা প্রত্যেক মুসলমান উনাদেরকে শামিল করেছে। সুবহানাল্লাহ! অনুরূপভাবে আমাদের কাঙ্খিত প্রত্যাশা, কামনা-বাসনা তার সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে, যদিও আমরা এই বিষয়ে ব্যর্থ। আর আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত রহমত মুবারক প্রত্যাশা করি, যদিও আমরা আযোগ্য। সুবহানাল্লাহ! কুকুর আছহাবে কাহ্ফ উনাদেরকে মুহব্বত করার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের সাথে কুকুরের আলোচনা (কুরআন শরীফ উনার মধ্যে) করেছেন। (যদি তাই হয়,) তাহলে আমাদের তো রয়েছে সম্মানিত ঈমান মুবারক উনার বন্ধন, সম্মানিত ইসলাম উনার কালিমা মুবারক এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারক, তাহলে আমাদের সাথে মহান আল্লাহ পাক তিনি কিরূপ আচরণ করবেন? সুবহানাল্লাহ! (অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘সম্মানিত সূরা বানী ইসরাঈল শরীফ উনার ৭০নং আয়াত শরীফ’ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন,)

وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِىْ اٰدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلـٰى كَثِيْرٍ مِـمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيْلًا.

 “নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তান উনাদেরকে সম্মানিত করেছি, আমি উনাদেরকে স্থল ও পানিতে চলাচলের বাহন দান করেছি; উনাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং উনাদেরকে অনেক তথা সমস্ত সৃষ্টি জীবের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।” সুবহানাল্লাহ!  (তাফসীরে কুরতুবী শরীফ ১০/৩৭১-৩৭২)

কিতাবে বর্ণিত রয়েছে যে, নি¤েœাক্ত ১০টি প্রাণী বিশেষ কারণে সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ প্রবেশ করবে-

১. হযরত ছালিহ আলাইহিস সালাম উনার উটনী, ২. হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার এবং হযরত ইসমাঈল যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উনাদের দুম্বা, ৩. হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গাভী, ৪. বালআম ইবনে  বাঊরার গাধা, ৫. হযরত ইউনূস আলাইহিস সালাম উনাকে যেই মাছ গিলেছিলো সেই মাছ। এই মাছ সবসময় মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করতো, ৬. হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনার পিপীলিকা, ৭. হযরত ওযাইর আলাইহিস সালাম উনার গাধা, ৮. রাণী হযরত বিলকিস আলাইহাস সালাম উনার হুদহুদ পাখি, ৯. আসহাবে কাহ্ফের কুকুর এবং ১০. সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত উটনী মুবারক।

হযরত শেখ সা’দী রমহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,

   ساگ  اصحاب كهف روزے  چند

 پئے نيگاں گرفت  مردم شد

অর্থ: “আছহাবে কাহ্ফের কুকুর নেককারদের ছোহবতে থাকার কারণে মানুষের ছূরতে জান্নাতী হবে।” সুবহানাল্লাহা!

রঈসুল মুফাসসিরীন মিনাল আউওয়ালীনা ইলাল আখিরীন, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পরকালে হিসাব-নিকাশের পর আছহাবে কাহ্ফের কুকুরটি বনী ইসরাঈলের মরদূদ দরবেশ বাল‘আম ইবনে বা‘ঊরার ছূরতে সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ প্রবেশ করবে এবং অনন্তকাল যাবৎ সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ অবস্থান করবে।” সুবহানাল্লাহ!

এখন বলার বিষয় হচ্ছে, সূরা কাহ্ফ হচ্ছেন সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার অন্যতম একখানা সূরা শরীফ। সুবহানাল্লাহ! সেই সম্মানিত সূরা শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘আছহাবে কাহ্ফ’ উনাদের আলোচনা করেছেন এবং উনাদের সাথে  উনাদের কুকুরটিরও আলোচনা করেছেন। সুবহানাল্লাহ! এই কুকুরটি উনাদেরকে মুহব্বত করার কারণে, উনাদের সঙ্গী হওয়ার কারণে পরকালে মরদূদ দরবেশ বাল‘আম ইবনে বা‘ঊরার ছূরতে জান্নাতী হবে। সুবহানাল্লাহ! আছহাবে কাহ্ফ উনার সদস্যরা ছিলেন হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উম্মত। উনারা অনেক বড় ওলীআল্লাহ ছিলেন তা না। উনারা ঈমান হেফাযতের লক্ষ্যে পাহাড়ের গুহায় প্রবেশ করেছেন। আর উনাদেরকে মুহব্বত করার কারণে, উনাদের সঙ্গী হওয়ার কারণে যদি একটি কুকুর এত বেমেছাল ফযীলত লাভ করে যে, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজে কুরআন শরীফ উনার মধ্যে কুকুরটির আলোচনা করেন এবং কুকুরটি পরকালে মানুষের ছূরতে জান্নাতী হবে। সুবহানাল্লাহ! তাহলে পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক হচ্ছেন- এক কথায় তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারিণী। সুবহানাল্লাহ! তাহলে উনাকে যাঁরা সম্মানিত মুহব্বত মুবারক করবেন, উনার সম্মানিত ছোহবত মুবারক অর্জন করবেন এবং উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক হাছিল করবেন, উনারা কী নিয়ামত মুবারক লাভ করবেন? মূলত তা সমস্ত জিন-ইনসান তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার ঊর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ফযল-করম মুবারক-এ এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দয়া-দান, ইহ্সান মুবারক-এ ঐ সকল ব্যক্তি উনারা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের আখাচ্ছুল খাছ তায়াল্লুক-নিসবত, কুরবত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করবেন এবং উনাদের খাদিম হিসেবে উনাদের সাথেই অনন্তকাল যাবৎ সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ অবস্থান মুবারক করবেন। সুবহানাল্লাহ! যদিও উনাদের আমলে শত ত্রুটি থাকুক না কেন। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাক্বীক্বীভাবে সম্মানিত মুহব্বত মুবারক করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!

********************************



মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত

 ১১ ইমাম আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক এবং বিছালী শান মুবারক প্রকাশের সম্মানিত তারিখ মুবারক প্রকাশে আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার অভুতপূর্ব বেমেছাল বিস্ময়কর মহাসম্মানিত তাজদীদ মুবারক



সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَضَّرَ اللهُ امْرَءًا سَـمِعَ مِنَّا حَدِيْثًا فَبَلَّغَهٗ كَمَا سَـمِعَهٗ فَرُبَّ مُبَلَّغٍ اَوْعـٰى مِنْ سَامِعٍ.

অর্থ: “ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ওই ব্যক্তির সম্মানিত চেহারা মুবারক সম্মুজ্জ্বল করুন, (উনাকে সম্মানিত রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক, মা’রিফাত-মুহব্বত মুবারক দান করুন,) যিনি আমার থেকে যেরূপ সম্মানিত হাদীছ শরীফ শুনবেন ঠিক হুবহু সেরূপ বর্ণনা করবেন। কেননা (পরবর্তীতে) যেই সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাদের কাছে সম্মানিত হাদীছ শরীফ পৌঁছানো হবে, উনারা যাঁদের থেকে সম্মানিত হাদীছ শরীফ শুনবেন, উনাদের থেকে অধিক বেশি বুঝবেন, উপলব্ধি করবেন, অনেক বেশি সম্মানিত ইলম মুবারক উনার অধিকারী হবেন।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, ছহীহ ইবনে হিব্বান, মুসনাদে বাযযার, ত্ববারনী শরীফ)

এই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার পরিপূর্ণ মিছদাক্ব হচ্ছেন আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক হাদিয়া মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি হচ্ছেন সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক উনার মালিক। সুবহানাল্লাহ!

মূলত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাথে এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার বেমেছালা সম্মানিত তা‘য়াল্লুক-নিসবত, মুহব্বত-ক্বুরবত মুবারক রয়েছেন, যা কায়িনাতের কারো পক্ষে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সুবহানাল্লাহ! যার কারণে মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ১১ ইমাম আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক এবং বিছালী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ নিয়ে অনেকে অনেক ইখতিলাফ করলেও যিনি সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ছাহিবুল ইলমিল আউওয়াল ওয়াল ইলমিল আখিরি, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সকলের সমস্ত ইখতিলাফকে মিটিয়ে দিয়ে মহাসম্মানিত ১১ ইমাম আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক এবং বিছালী শান মুবারক প্রকাশের সম্মানিত তারিখ মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো-

ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম:

মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ: আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত রিসালত মুবারক প্রকাশের ১০ বছর পূর্বে ১৩ই রজবুল হারাম শরীফ জুমুয়াহ শরীফ যোহরের ওয়াক্তে। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ: ৪০ হিজরী সনের ১৭ই রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুস সাবত শরীফ আছরের সময়। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম:

মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ : ৩য় হিজরী সনের ১৫ই রমাদ্বান ইয়াওমুল আরবিয়া শরীফ বা’দ আছর। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ: ৪৯ হিজরী সনের ২৮শে সফর শরীফ জুমুয়াহ শরীফ ভোর রাত্রে। ফজরের আগে তাহাজ্জুদের শেষ সময়ে। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম:

মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ: ৪র্থ হিজরী সনের ৫ই শা’বান শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ শরীফ বা’দ আছর। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ: ৬১ হিজরী সনের ১০ই মুহাররমুল হারাম শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ শরীফ যোহরের সময়। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রাবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম:

মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ: ৪৭ হিজরী সনের ৫ই শা’বান শরীফ ইয়াওমুল খমীস শরীফ। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ: ৯৪ হিজরী সনের ২৫ শে মুহাররমুল হারাম শরীফ ইছনাইনিল ‘আযীম শরীফ। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল খ¦ামিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম:

মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ: ৬৭ হিজরী সনের ১লা রজবুল হারাম শরীফ জুমুয়াহ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ: ১১৭ হিজরী সনের ৭ই যিলহজ্জ শরীফ ইছনাইনিল ‘আযীম শরীফ। সুবহানাল্লাহ!



সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম:

মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ: ৯৬ হিজরী সনের ১৭ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইছনাইনিল ‘আযীম শরীফ। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ: ১৪৮ হিজরী সনের ১৪ই রজবুল হারাম শরীফ ইছানাইনিল ‘আযীম শরীফ রাতে বাদ ঈশা। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম:

মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ: ১২৮ হিজরী সনের ৭ই সফর শরীফ ইছনাইনিল ‘আযীম শরীফ। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ: ১৮৩ হিজরী সনের ২৫শে রজবুল হারাম শরীফ জুমুয়াহ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছামিন মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম:

মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ: ১৪৮ হিজরী সনের ১১ই যিলক্বদ শরীফ ইয়াওমুল আহাদ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ: ২০৮ হিজরী সনের ২১শে রমাদ্বান শরীফ জুমুয়াহ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুত তাসি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম:

মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ: ১৯৫ হিজরী সনের ১০ই রজবুল হারাম শরীফ জুমুয়াহ শরীফ রাতে। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ: ২২০ হিজরী ৬ই যিলহজ্জ শরীফ ছুলাছা’ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম:

মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ: ২১০ হিজরী সনের ১৫ই যিলহজ্জ শরীফ জুমুয়াহ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ: ২৫৪ হিজরী সনের ৩০ শে জুমাদাল উখরা শরীফ ইছনাইনিল ‘আযীম শরীফ। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল হাদী ‘আশার মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম:

মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ: ২৩১ হিজরী সনের ১০ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইছনাইনিল ‘আযীম শরীফ। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ: ২৬০ হিজরী সনের ৮ই রবীউল আউওয়াল শরীফ জুমুয়াহ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!

  মূলত, এর মাধ্যমেই প্রতিভাত হয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার কত বেমেছাল আখাচ্ছুল খাছ তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক, যেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার ঊর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!

  ******************************************************************

মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সম্মানিত দুরূদ শরীফ পাঠ করা ব্যতীত নামায কবূল হয় না



সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ مَسْعُوْدِ ۣ الْاَنْصَارِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلّٰى صَلٰوةً لَّـمْ يُصَلِّ فِيْهَا عَلَىَّ وَلَا عَلـٰى اَهْلِ بَيْـتِـىْ لَـمْ تُقْبَلْ مِنْهُ.

অর্থ: “হযরত আবূ মাস‘ঊদ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি নামায পড়বে, কিন্তু নামাযে আমার এবং  আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সম্মানিত দুরূদ শরীফ পাঠ করবে না, তার নামায কবূল হবে না।” (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৯, সুনানুদ দারাকুত্বনী ২/১৭১, শরহু সুনানি আবী দাঈদ লিল ‘আইনী ৪/২৬৬, আল বাদরুল মুনীর ৪/১৫, নাছবুর রাইয়াহ ১/৪২৭, আদ দিরায়াহ ১/১৫৮, আল ‘ইলাল ৬/১৯৭, আন নাজমুল ওহহাজ ২/১৬৪)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ مَسعُودٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ لَوْ صَلَّيْتَ صَلٰوةً لَّـمْ يُصَلَّ فِيْهَا عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا عَلـٰى اَهْلِ بَيْتِهٖ لَرَاَيْتَ اَنَّهَا لَا تَتِمُّ مَوْقُوْفًا.

অর্থ: “হযরত আবূ মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তুমি যদি কোন নামায আদায় কর, কিন্তু ওই নামাযে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ না করো। তাহলে তুমি অবশ্যই দেখবে যে, সেই নামায পূর্ণ হয়নি; বরং ঝুলন্ত।” (দারাকুত্বনী ৬/১৯৮)

আরো বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ جَعْفَرٍ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِـىِّ بْنِ الْـحُسَيْنِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ اَنَّهٗ قَالَ لَوْ صَلَّيْتُ صَلٰوةً لَّـمْ اُصَلِّ فِـيْهَا عَلَى النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا عَلـٰى اَهْلِ بَيْتِهٖ لَرَاَيْتُ اَنَّهَا لَا تَتِمُّ.

অর্থ: “হযরত আবূ জা’ফর মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন আলাইহিমুস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যদি কোন নামায আদায় করি, কিন্তু ওই নামাযে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সম্মানিত দুরূদ শরীফ পাঠ না করি। অবশ্যই আমি দেখি যে, নিশ্চয়ই উক্ত নামায পূর্ণ হয়নি।” সুবহানাল্লাহ! (শিফা শরীফ ২/৬৪, শরহুশ শিফা ২/১১২, তাফসীরে কুরতুবী শরীফ ১৪/২৩৬, দারাকুত্বনী ইত্যাদি)

কাজেই  মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সম্মানিত ছলাত তথা দুরূদ শরীফ পাঠ না করলে, নামায কবুল হয় না। আর এই কারণেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি কিভাবে সম্মানিত ছলাত বা দুরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে, সেই বিষয়টি তা’লীম বা শিক্ষা মুবারক দিয়েছেন। যেমন, এই সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ اَبِـىْ لَيْلٰى رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ لَقِيَـنِـىْ حَضْرَتْ كَعْبُ بْنُ عُجْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ فَقَالَ اَلَا اُهْدِىْ لَكَ هَدِيَّةً سَـمِعْتُهَا مِنَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ بَلٰى فَاَهْدِهَا لِـىْ فَقَالَ سَاَلْنَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَيْفَ الصَّلٰوةُ عَلَيْكُمْ اَهْلَ الْبَيْتِ فَاِنَّ اللهَ قَدْ عَلَّمَنَا كَيْفَ نُسَلِّـمُ عَلَيْكُم قَالَ قُوْلُوْا اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلـٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلـٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلـٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلـٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّـجِيْدٌ اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلـٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلـٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلـٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلـٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّـجِيْدٌ.

অর্থ: “হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবূ লাইলা (তাবেয়ী) রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত কা’ব ইবনে উজরা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সাথে একদা আমার সাক্ষাৎ হলো। তিনি বললেন, (হে আব্দুর রহমান!) আমি কি আপনাকে একটি কথা হাদিয়া দিবো না, যা আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে শুনেছি? আমি বললাম, হাঁ, আমাকে তা হাদিয়া করুন। তখন তিনি বললেন, একবার আমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সুওয়াল করেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার এবং আপনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অর্থাৎ আপনাদের প্রতি কিভাবে সালাম পাঠ করবো তা মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। দয়া করে বলুন, আপনার প্রতি এবং আপনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি আমরা কিভাবে সম্মানিত ‘ছলাত’ (দুরূদ শরীফ) পাঠ করবো?

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনারা এইভাবে বলবেন,

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلـٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلـٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلـٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلـٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّـجِيْدٌ اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلـٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلـٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلـٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلـٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّـجِيْدٌ.

“হে মহান আল্লাহ পাক! আপনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সম্মানিত ছলাত মুবারক পেশ করুন, যেভাবে আপনি ছলাত পেশ করেছেন সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার এবং উনার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত এবং সম্মানিত। সুবহানাল্লাহ! হে মহান আল্লাহ পাক! আপনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সম্মানিত বরকত নাযিল করুন, যেভাবে আপনি বরকত নাযিল করেছেন সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার এবং উনার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত এবং সম্মানিত।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মেশকাত শরীফ)

এই সম্মানিত দুরূদ শরীফ প্রতি ওয়াক্তে প্রত্যেক নামাযেই পাঠ করা হয়। সুবহানাল্লাহ! যারা নামাযে উপরোক্ত সম্মানিত দুরূদ শরীফ পাঠ করে না, তাদের নামায কবুল হয় না। সুবহানাল্লাহ!

এ জন্যই হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন,

يَا اَهْلَ بَيْتِ رَسُوْلِ اللهِ حُبُّكُمْ ................. فَرْضٌ مِّنَ اللهِ فِـى الْقُرْاٰنِ اَنْزَلَهٗ

يَكْفِيْكُمْ مِّنْ عَظِيْمِ الْفَخْرِ اَنَّكُمْ  ............... مَّنْ لَّـمْ يُصَلِّ عَلَيْكُمْ لَا صَلَاةَ لَهٗ.

অর্থ: “হে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! আপনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে ফরয, যা মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার সম্মানিত আয়াত শরীফ নাযিল করে সাব্যস্ত করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

আপনাদের মহাসম্মানিত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক বুঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, যে ব্যক্তি আপনাদের উপর সম্মানিত দুরূদ শরীফ পাঠ করে না, তার নামায কবূল হয় না।” সুবহানাল্লাহ! (দেওয়ানে শাফেয়ী ১০৬ পৃ., মুখতাছরুত তোহফাহ ১/৭, ছব্বুল আযাব ১/৩১৯, আল ক্বওলুল বাদী’ ফী ছলাতি ‘আলা হাবীবিশ শাফী’ ১/৯১)

***********************************





সাইয়্যিদু সুলত্বানিল আউলিয়া, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, আবূ আব্দুল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সংক্ষিপ্ত পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক

           

হযরত আহালু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে জানা, উনাদের মুহব্বত করা, উনাদের খিদমত মুবারক করা, উনাদের তা’যীম-তাকরীম করা এবং উনাদের মুবারক ছানা-ছিফত করা সমস্ত মুসলমান তথা জিন-ইনসান সমস্ত কায়িনাতের জন্য ফরয। যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কিতাব কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,



قل لا أسألكم عليه أجرأ الا المودة  في القربى. ومن يقترف حسنة نزد له فيها حسنا. ان الله غفورشكور.



অর্থ: “(হে আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন, “তোমাদের কাছে কোনো কিছু চাওয়া হচ্ছে না (আর তোমাদের পক্ষে কোনো বিনিময় দেয়াও সম্ভব নয়, বরং বিনিময় দেয়ার চিন্তা করাও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত); তবে তোমরা আমার ক্বরীব তথা আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে সদাচরণ (তা’যীম-তাকরীম, ছানা-ছিফত ও খিদমত মুবারক) করবে। যে কেউ এই মহান নেক কাজ (আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের তা’যীম-তাকরীম, ছানা-ছিফত, খিদমত মুবারক) করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে আরো উত্তম প্রতিদান হাদিয়া করবেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাশীল এবং আমলে উত্তম প্রতিদান দানকারী।” সুবহানাল্লাহ!

আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা আমার আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো আমার মুহব্বতে।” সুবহানাল্লাহ!

হযরত আহালু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ইমাম বারো (১২) জন। এই ১২ জন ইমাম উনারা হলেন- ১. ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আসাদুল্লাহিল গালিব, বাবু মদীনাতিল ইলম, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম, ২. ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম, ৩. ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, শহীদে কারবালা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম, ৪. ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদু সুলত্বানুল আউলিয়া, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, আবূ আব্দুল্লাহ, সাইয়্যিদুনা ইমাম হযরত আলী আওসাত যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম, ৫. ইমামুল খামীস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মুহম্মদ বাকির আলাইহিস সালাম, ৬. ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম, ৭. ইমামুস সাবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মুসা কাযিম আলাইহিস সালাম, ৮. ইমামুছ ছামিন মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আলী রিযা আলাইহিস সালাম, ৯. ইমামুত তাসি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মুহম্মদ তকী আলাইহিস সালাম, ১০. ইমামুল আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মুহম্মদ নকী আলাইহিস সালাম, ১১. ইমামুল হাদি আশার মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আসকারী আলাইহিস সালাম এবং ১২. ইমামুছ ছানী আশার মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মুহম্মদ মাহদী আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

প্রথম ১১ জন ইমাম উনারা পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। আর ১২তম ইমাম তিনি আখিরী যামানায় তাশরীফ আনবেন। উনাদের জীবনী মুবারক জানা সকলের জন্যই ফরয। এখানে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী তথা জীবনী মুবারক আলোচনা করার কোশেশ করবো। ইনশাআল্লাহ!



পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন- ৪৭ হিজরী সন উনার ৫ই শা’বান শরীফ ইয়াওমুল খমীস বা বৃহস্পতিবার।



 পবিত্র নাম ও নসব মুবারক:

ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, সুলত্বানুল আউলিয়া, যীনাতুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের চতুর্থ ইমাম। উনার মূল নাম মুবারক ‘আলী আওসাত’ আলাইহিস সালাম। ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একজন যাওজাতুম মুকাররমাহ ছিলেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত লাইলা বিনতে মুররা আলাইহাস সালাম। (তারিখুত তাবারী- ৩/৩৩০)

উনার পবিত্র রেহেম শরীফে যিনি তাশরীফ এনেছিলেন উনারও নাম মুবারক ছিল সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আলী’ আলাইহিস সালাম। পরবর্তী সময়ে তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আলী আকবর’ আলাইহিস সালাম হিসেবে মাশহুর হন।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার আরো একজন পুত্র আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারকও ছিল সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আলী’ আলাইহিস সালাম। উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আলী আছগর’ আলাইহিস সালাম বলা হয়। আর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকের সাথে ‘আওসাত’ সংযুক্ত করে বলা হয় ‘আলী আওসাত’ আলাইহিস সালাম। কারবালার প্রান্তরে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আলী আকবর আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আলী আছগর আলাইহিস সালাম উনারা শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। হযরত আলে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্য থেকে শুধুমাত্র একজন আওলাদ কারবালার ময়দান থেকে ফিরে আসেন। তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার মাধ্যম দিয়েই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নসব মুবারক জারি রয়েছে। ইহুদীদের মদদপুষ্ট, কাট্টা কাফির, চির লা’নতগ্রস্ত, মালউন ইয়াযীদ কাফির এবং তার শয়তান সাঙ্গপাঙ্গরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বংশধারা মিটিয়ে দিতে চাইলেও তারা তা পারেনি।



কুনিয়াত মুবারক:

উনার কুনিয়াত মুবারক বা উপনাম মুবারক আবুল হাসান ও আবূ মুহম্মদ। উনাকে আবূ আব্দুল্লাহ মাদানীও বলা হয়। (তাহযীবুত তাহযীব-৭/২৬০)



সম্মানিতা মাতা:

সম্মানিতা মাতা ছিলেন পারস্য শাসকের কন্যা সাইয়্যিদাতুনা হযরত শহরবানু আলাইহাস সালাম। ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার সাথে নিসবতে আযীম মুবারক হওয়ার পর উনাকে “সালমা” আলাইহাস সালাম এই মুবারক নামে নামকরণ করা হয়। কেউ কেউ “গাযালা” আলাইহাস সালামও বলেছেন। (তাহযীবুল কামাল- ১৩/২৩৭, সুয়ারুল মিন হায়াতিত তাবিয়ীন/৩৩৭)



 পবিত্র লক্বব মুবারক:

ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, সুলত্বানুল আউলিয়া, যীনাতুল আরিফীন আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধুমাত্র “আল্লাহ পাক” এবং “রসূল পাক” ব্যতীত যত লক্বব মুবারক রয়েছে তিনি সমস্ত লক্বব মুবারকেরই অধিকারী তথা মালিক ও বণ্টনকারী। উনার বিশেষ লক্বব মুবারক হচ্ছেন ‘যাইনুল আবিদীন’। এই লক্বব মুবারকেই তিনি সারা দুনিয়ায় পরিচিত। এখানে উনার কিছু লক্বব মুবারক উল্লেখ করা হলো।

ইয়াদগারে নবুওয়াত (নুবুওয়াত উনার স্মারক),

যাইনুল আবিদীন (ইবাদতকারীগণের সৌন্দর্য),

 পেশওয়ায়ে দ্বীন (পবিত্র দ্বীন উনার ধারক-বাহক),

যাক্বী (অত্যন্ত বুদ্ধিমান),

আমীন (চরম বিশ্বাসী),

যীনাতুল আরিফীন (নৈকট্যপ্রাপ্তদের সৌন্দর্য),

সাইয়্যিদুল মুতাওয়াককিলীন (তাওয়াককুলকারীগণের সাইয়্যিদ),

ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন (মুহাক্বক্বিক্বীনগণের ইমাম),

আফদ্বালুল উম্মাহ (সর্বশেষ্ঠ উম্মত),

ফকীহুদ দ্বীন (দ্বীনের ফকীহ),

আফকাহুন্ নাস (মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সমঝদার)। (তাহযীবুল কামাল-১৩/২৩৮, তাহযীবুত তাহযীব-৭/২৬০)

ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুসলিম জাহানের চতুর্থ খলীফা, বাবুল ইলম ওয়াল হিকাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি যেদিন পবিত্র শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছিলেন তার প্রায় ৭ বৎসর পর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে আগমন করেন। কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় তিনি প্রায় ১৪ বছর বয়স মুবারকের অধিকারী ছিলেন।



তা’লীম তরবিয়ত মুবারক:

সুলত্বানুল আরিফীন, পেশওয়ায়ে দ্বীন, ইয়াদগারে নুবুওয়াত, যীনাতুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সবচেয়ে বড় পরিচয়, তিনি ইমামে আহলে বাইত, আওলাদে রসূল। আর হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা সমস্ত ইলমের মালিক। উনাদের প্রতি পবিত্র ওহী নাযিল হয়নি, তবে উনারা কুদরতীভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং উনাদেরকে সমস্ত ইলমই হাদিয়া করা হয়েছে। উনাদের জিসিম মুবারকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুন নাজাত মুবারক প্রবাহিত। তাই উনারা অন্যান্য মানুষের মতো নন এবং উনাদের ইলম হাছিলের বিষয়টিও সাধারণ মানুষের মতো নয়।

মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে সৃষ্টিজগৎ রক্ষাকারী ও পবিত্রকারী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।             সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি যেদিন কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন, সে সময় উনার বয়স মুবারক ছিল প্রায় ১৪ বছর। এর পূর্ব পর্যন্ত উনার সম্মানিত পিতা উনার খাছ ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ পেয়ে ছিলেন। নবী পরিবার উনার পূর্ণ হিসসা তিনি পেয়েছেন। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি ইলমের শহর আর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন সেই শহরের দরজা।” সেই ইলম ও হিকমাহ সাইয়্যিদুশ শুহাদা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সীনা মুবারক হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সীনা মুবারকে স্থান পায়। খোদ সাইয়্যিদুশ শুহাদা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরবিয়ত দাতা; তাহলে তিনি কিরূপ ইলম, আকল, সমঝ, প্রাপ্ত তা সহজেই অনুমেয়।

একবার হযরত মুহম্মদ হানাফিয়া ইবনে কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিত ইমামত উনার ব্যাপারে মুসলিম উম্মতকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে সুলত্বানুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আরজ করলে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইহা উত্তম হবে যে, আমরা উভয়ে লোকজনসহ পবিত্র কা’বা শরীফ প্রাঙ্গণে হাজরে আসওয়াদ উনার নিকট যাই। উনাকে জিজ্ঞাসা করি- বর্তমান সময়ের ইমাম কে? তাতে প্রকৃত সত্য সকলের নিকট প্রকাশিত হবে।

অতঃপর উনারা হাজরে আসওয়াদ উনার নিকট গেলেন। হাজরে আসওয়াদ উনাকে (কালো পাথর) জিজ্ঞাসা করলে উনার জবান খুলে গেল। হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) স্পষ্টভাবে বলে দিলেন, “সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরে ‘সম্মানিত ইমামত’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছেছে। তিনিই বর্তমান সময়ের ইমাম।” সুবহানাল্লাহ!

মূলত, এভাবে আনুষ্ঠানিকতা দ্বারা হযরত মুহম্মদ হানাফিয়া ইবনে কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম উনার ইমামত জগদ্বাসীর সামনে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! আর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই কারামত দেখে উপস্থিত সকলেই অন্তর থেকে উনাকে ইমামুর রবি’ হিসেবে গ্রহণ করলেন এবং উনার খিমতে নিজদের উৎসর্গ করলেন। সুবহানাল্লাহ!

একদিন জনৈক ব্যক্তি সুলত্বানুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন- হে আওলাদে রসূল! দুনিয়া ও আখিরাতে সবচেয়ে নেককার ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, “যে ব্যক্তি সচ্ছল ও সুখী থাকা সত্ত্বেও অন্যায় পথ অবলম্বন না করে। আর রাগের সময় ইনছাফের সীমা অতিক্রম না করে, সে ব্যক্তিই হচ্ছে নেককার।” (কাশফুল মাহযুব/৮৫)

তিনি উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার নিকট থেকে ইলম ও হিকমত মুবারক শিক্ষা করেন। এছাড়া উনার সম্মানিত পিতা, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সম্মানিত চাচা সাইয়্যিদু শাবাবি আহলি জান্নাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রঈসুল মুহাদ্দিছীন হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, ছাহিবে রসূলিল্লাহ হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং ফকীহুল আছর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ অনেক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের নিকট ইলম ও হিকমত শিক্ষা করেন। সুবহানাল্লাহ! (তায্কিরাতুল হুফফায-১/৭৮, তাযীবুল কামাল ১৩/২৩৭, তাহযীবুত্ তাহযীব-৭/২৬০, সিয়ারু আলা মিন নুবালা-৪/৩৮৭)

উনার পবিত্রতম ছোহবতে থেকে যে সকল মহান ব্যক্তিত্বগণ উনারা তা’লীম ও তরবিয়ত হাছিল করেন উনাদের মধ্যে উনার আওলাদগণ হযরত আবু জা’ফর আলাইহিস সালাম, হযরত মুহম্মদ আলাইহিস সালাম, হযরত যায়িদ আলাইহিস সালাম, হযরত উমর আলাইহিস সালাম উনারা ব্যতীত হযরত যায়িদ ইবনে আসলাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আসিম ইবনে উমর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইয়াহহিয়া ইবনে সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব যিনাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি অন্যতম। (তায্কিরাতুল হুফফাজ-১/৭৮, তাহযীবুল কামাল-১৩/২৩৭, তাহযীবুত্ তাহযীব-৭/২৬০, সিয়ারু আলামিন নুবালা-৪/৩৮৭)

হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন- আমি ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ফকীহ আর দ্বিতীয় কাউকে দেখিনি। অথচ তিনি খুব কম পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। (তাযকিরাতুল হুফফাজ-১/৭৮)

মূলত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারাই তো ফক্বীহ পয়দা করেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম উনার পরবর্তী বংশধর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার দয়া-দান-ইহসান মুবারকে তো ইমামে আয’ম হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এত সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠ মাযহাব হাদিয়া পেয়েছেন। বর্ণিত রয়েছে আখিরী যামানায় হযরত রূহুল্লাহ ইবনে মরিয়ম আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হিসেবে দুনিয়ায় আসবেন ১২তম ইমাম হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনাকে সহযোগিতা করার জন্য। সুবহানাল্লাহ!

অর্থাৎ হযরত  রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনিও হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত-খিদমত করবেন। কারণ সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত। আর উম্মতের জন্য ফরয হচ্ছে হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, উনাদের খিদমত মুবারক করা। হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যেহেতু জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল, অথচ উম্মত হিসেবে এসেছেন, তাই তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে ইজতিহাদ করে চলবেন। কিন্তু মানুষ উনাকে হানাফী মাযহাব উনার অনুসারী মনে করবেন। কারণ উনার ইজতিহাদগুলো ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে মিলে যাবে। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা খাছ ইলম মুবারক উনার অধিকারী। সুবহানাল্লাহ!



ইবাদত-বন্দেগী:

হযরত ইমাম আবু হাজিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন- বনি হাশিমগণের সমসাময়িকদের মধ্যে উনাকেই আমি শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন দেখেছি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুসাইয়িব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, আমি উনার মতো পরহিযগার আর কাউকে দেখিনি। সুবহানাল্লাহ!

মালিকী মাযহাবের ইমাম, হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন- “আমার নিকট এই মর্মে খবর পৌঁছেছে যে, হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দিন-রাতে এক হাজার রাকাত নামায আদায় করতেন। আর এটা উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ পর্যন্ত জারি ছিল। এ কারণে উনাকে হযরত ‘যাইনুল আবিদীন’ তথা ইবাদতকারীগণের সৌন্দর্য লক্বব মুবারকে অভিহিত করা হয়। তিনি ছিলেন সেই যামানার সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত গুজার। সুবহানাল্লাহ!

(তাযকিরাতুল হুফফাজ-১/৭৮, সিয়ারু আলামিন নুবালা-৪/৩৮৮, তাহযীবুত্ তাহযীব-৭/২৬০, তাহযীবুল কামাল-১৩/২৩৯, হিলয়াতুল আউলিয়া-৩/১৬৫, সুয়ারুম মিল হায়াতিত্ তাবিয়ীন/৩৪২)

আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হিকমতপূর্ণ বাক্য জ্ঞানীর হারানো সম্পদ। কাজেই যেখানে বা যার নিকট উহা পাবে সেখান থেকে বা উনার নিকট থেকেই তা সংগ্রহ করবে।” সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবন মুবারকে উহার পূর্ণ বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হয়। ইলমের প্রতি ছিল উনার অদম্য আগ্রহ। তিনি যেখানে ইলমের সন্ধান পেতেন সেখানেই ছুটে যেতেন। ধনী-গরিব উঁচু-নিচু কারো ভেদাভেদ করতেন না।

একদিন হযরত ইমাম নাফে রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমা করুন। আপনি সমস্ত মানুষের সাইয়্যিদ। সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আর আপনি একজন গোলামের মজলিসে বসেন। উল্লেখ্য যে, তিনি হযরত যায়িদ ইবনে আসলাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইলমের মজলিসে বসতেন। আর তিনি ছিলেন গোলাম।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “ইলম হাছিলের ক্ষেত্রে এরূপ মনোভাব থাকা সমীচীন নয়। বরং যেখানে ইলমের সন্ধান যাওয়া যাবে সেখান থেকে তা হাছিল করা উচিত।” সুবহানাল্লাহ!

 (হিলয়াতুল আউলিয়া-৩/১৬২, তাহযীবুল কামাল-১৩/২৩৯, সিয়ারু আলামিন নুবালা-৪/৩৮৮)

হযরত ইমাম নাফে ইবনে যুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, আপনি এমন লোকদের ছোহবত মুবারকে যান- যারা আপনার সমতুল্য নয়। এর হিকমত কি? তিনি বললেন, আমার দ্বীনের ফায়দার জন্য উনাদের ছোহবত মুবারকে গিয়ে থাকি। (সিয়ারু নুবালা-৪/৩৮৮)

মুলত, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মানুষকে ফায়দা দেয়ার জন্যই এমন হিকমত করতেন। তিনি ছিলেন দ্বীনের গৌরব। বিনয়-নম্রতার শাহী মুকুট।

মূলত, সুলত্বানুল আউলিয়া, ইয়াদগারে নুবুওয়াত, পেশওয়ায়ে দ্বীন, যীনাতুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সালিক বা শিক্ষার্থীদের জন্য এমন আদর্শ রেখে গেছেন, যা অনাগত ভবিষ্যতে সবার জন্য অনুসরণীয়-অনুকরণীয় কামিয়াবী লাভের সোপান।

মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বাণী, “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য বিনীত হয়, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।” তারই বাস্তব প্রতিফলন।



পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:

ইমামুল মুত্তাক্বীন, সুলত্বানুল আউলিয়া, পেশওয়ায়ে দ্বীন, যীনাতুল আরিফীন আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ৯৪ হিজরী ২৫ মুহররমুল হারাম শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন ৪৭ বছর বয়স মুবারকে। মুনাফিক ও কাফিরেরা উনাকে বিষ পান করিয়েছিল। নাউযুবিল্লাহ! উনার পবিত্র রওযা শরীফ পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী শরীফে অবস্থিত।

মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি আমাদের সকলকে হযরত আহালু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে হাক্বীক্বীভাবে মুহব্বত করার, তা’যীম-তাকরীম করার, উনাদের ছানা-ছিফাত ও খিদমত মুবারক করার তাওফীক দান করুন। আমীন!

 ************************************************



সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কিছু ছিফাত মুবারক



আলে রসূল, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র শা’বান শরীফ উনার ৫ তারিখ ইয়াওমুল খামীস (বৃহস্পতিবার) হিজরী ৪৭ সনে যমীনে মুবারক তাশরীফ গ্রহণ করেন। উনার পিতা সম্মানিত বেহেশ্ত উনার যুবক উনাদের সাইয়্যিদ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, শহীদে কারবালা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম এবং মাতা ছিলেন পারস্য সম্রাট ইয়াজদ্গির্দ-এর কনিষ্ঠা কন্যা হযরত শাহারবানু ওরফে গাযালা আলাইহাস সালাম।          সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কথা বলার বয়স হতেই পরিবারের অন্যান্য শিশুগণের সাথে পবিত্র মসজিদে নববী শরীফে যাতায়াত শুরু করেন এবং অতি অল্প বয়স মুবারকেই পবিত্র কুরআন শরীফ হিফ্য করেন। সুবহানাল্লাহ!           তখনকার যুগে পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ ছিল দুনিয়ার সেরা শিক্ষাকেন্দ্র। বিজ্ঞ ছাহাবীগণ পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ-এ বসে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, তাফসীর শরীফ, ফিক্বাহ্, ক্বিরায়াত প্রভৃতি দ্বীনী ইলমের বিভিন্ন শাখার উপর শিক্ষা দান করতেন। শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীগণ অনেক সময় দল বেঁধে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের খিদমতে গিয়ে হাজির হতেন এবং উনাদের যবান মুবারকে বিভিন্ন ঘটনা শ্রবণ করে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ করতেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেমন ছিলেন, উনার আদত-অভ্যাস মুবারক কেমন ছিল, উনার দিন-রাত কিভাবে কাটতো- এ সমস্ত বর্ণনা শ্রবণ করে তরুণ তাবিয়ীগণ নিজ নিজ জীবনে সেই আদর্শ মুবারক বাস্তবায়িত করার সাধনা করতেন। সুবহানাল্লাহ!       এ সমস্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে অতি অল্প বয়সেই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম তিনি সকলের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অস্বাভাবিক মেধা ও সুতীক্ষè ধীশক্তিবলে মাত্র আট/নয় বছর বয়সেই তিনি বড় বড় জ্ঞানী-গুণীগণের মজলিসে সমাদর পেতে লাগলেন। উনারা শিশু সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ে পর্যন্ত খোলাখুলি আলোচনা করে মুগ্ধ হতেন। সুবহানাল্লাহ!

ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে মুবারক ইলম উনার খাছ উত্তরাধিকার ইমাম খান্দানে প্রবেশ লাভ করেছিল; যা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রক্ষা করার জন্য কঠোর সাধনা করে গেছেন। যদিও তিনি খাছ ইলমে লাদুন্নি উনার পূর্ণ অধিকারী। ইল্মের সন্ধান তিনি যেখানেই পেতেন বিনা দ্বিধায় সেখানে হাযির হওয়াই ছিল উনার সাধারণ অভ্যাস মুবারক। তিনি সমগ্র মুসলিম জাহানে ইলমের ক্ষেত্রে অনন্য মর্যাদা এবং উম্মতের সম্মানিত ইমাম ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!    সমকালীন মুসলিম জাহানে ইলমে হাদীছ শরীফ এবং ইলমে ফিক্বাহ উনাদের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন সকলের ইমাম, সর্বাপেক্ষা বিচক্ষণ আলিম।      ইল্মে তরীক্বতে তিনি ছিলেন ছূফীগণের মাথার মুকুট। ইলমে তরীক্বতের যত শাজরা শরীফ আছে তার প্রায় প্রত্যেকটির শীর্ষদেশে ইমাম হিসেবে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক চোখে পড়ে। সুবহানাল্লাহ!

তাছাড়া সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ত্যাগ, অপূর্ব ধৈর্য ও রূহানিয়ত মুবারক উনার মহিমার দ্বারাই ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা কঠিন বিপর্যয়ের হাত হতে উদ্ধারপ্রাপ্ত হয়ে মুসলিম সমাজ পবিত্র কুরআন শরীফ- পবিত্র সুন্নাহ শরীফ ভিত্তিক খিলাফতে রাশিদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছিলেন।

ভোগ-বিলাসের ক্রোড়ে লালিত উমাইয়া খান্দানের সর্বাপেক্ষা সৌখিন যুবক হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শিক্ষা, ছোহবত ও নীরব সাধনা মুবারক উনার গুণেই আদর্শ খলীফা ও দ্বিতীয় উমরে পরিণত হয়েছিলেন।

 ****************************************************



আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক দোয়ায় মুষলধারে বৃষ্টি



একবার পবিত্র হজ্জের সময় মক্কা শরীফ উনার মাঝে ভয়ানক খরা (অনাবৃষ্টি) দেখা দিলো। পানির অভাবে লোকজনের মধ্যে হাহাকার পড়ে গেল। বিদেশ হতে আগত পবিত্র হজ্জযাত্রীগণের সাথে সাথে খোদ মক্কাবাসীগণের মধ্যেও পানির এমন সঙ্কট দেখা দিলো যে, লোকজন হয়রান-পেরেশান হয়ে চারিদিকে পানির তালাশে ছুটাছুটি করতে লাগলো। পবিত্র কা’বা শরীফ উনার মাঝে পর্যায়ক্রমে লোকেরা দোয়া-ইস্তিসকা করছেন, কিন্তু এক ফোটা বৃষ্টির চিহ্ন কোথাও দেখা গেল না।

বসরা হতে একদল দরবেশ পবিত্র হজ্জে আসলেন। লোকজন উনাদের নিকট গিয়ে দোয়ার জন্য আবেদন-নিবেদন করলেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। গরম উত্তরোত্তর বাড়তে লাগলো। শেষ পর্যন্ত নিরাশ জনতার দৃষ্টি অপূর্ব দেহসৌষ্ঠব বিশিষ্ট এক যুবকের উপর নিবদ্ধ হলো। তিনি নিবিষ্ট মনে তাওয়াফ করছেন। উনার চেহারা মুবারক হতে যেন অপূর্ব নূরের আভা ফুটে বাহির হচ্ছিল। সম্মানিত যুবক তিনি তাওয়াফ হতে অবসর হওয়ার পর লোকজন গিয়ে উনার চতুর্দিকে সমবেত হলেন। কিছু সংখ্যক লোক উনাকে চিনে ফেললেন।

বলতে লাগলেন, হে আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মাঝে আজ লাখ লাখ লোক পিপাসায় কাতর হয়ে ছুটাছুটি করছে। আপনি দোয়া মুবারক করুন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন বৃষ্টি বর্ষণ করেন।

লোকজনের অস্থিরতা লক্ষ্য করে সুলত্বানুল আউলিয়া, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, পেশওয়ায়ে দ্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুনরায় পবিত্র কা’বা শরীফ উনার সন্নিকটে ফিরে গেলেন। দুই রাকাত নামায পড়ে সিজদারত অবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে পানির জন্য দোয়া মুবারক করতে লাগলেন।

দেখা গেল, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিজদারত অবস্থাতেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে প্রবল বর্ষণ শুরু হলো।

এমন বর্ষণ হলো যে, পবিত্র কা’বা শরীফ উনার প্রাঙ্গণে রীতিমত পানির স্রোত প্রবাহিত হতে লাগল। পিপাসার্ত মক্কাবাসীগণ শান্ত হলো। হজ্জে আগত লাখ লাখ লোকের মধ্যেও সুলত্বানুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যথার্থ পরিচয় মুবারক আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লো।

********************************************************



সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনার পর আর কখনো হাসেননি

            কারবালার ঘটনার পর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখনই পানি দেখতেন, তখনই কারবালায় আহলু বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পিপাসার কথা মনে পড়তো ও তিনি এতে অত্যন্ত ব্যথিত হতেন।

            তিনি কোনো ভেড়া বা দুম্বা জবাই করার দৃশ্য দেখলেও কেঁদে আকুল হতেন। তিনি প্রশ্ন করতেন- এদেরকে জবাইর আগে পানি পান করানো হয়েছে কিনা। পানি দেয়া হয়েছে একথা শোনার পর তিনি বলতেন, কিন্তু আহলু বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পানি না দিয়েই শহীদ করেছিল ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির সৈন্যরা।

            সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবসময় রোযা রাখতেন। ইফতারির সময় তিনি অত্যন্ত বেদনাতুর হয়ে বলতেন, হযরত আওলাদে রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শহীদ করা হয়েছে ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত অবস্থায়।

            সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার এই দুনিয়াবী জিন্দেগীর পুরো সময়ই সম্মানিত আহলু বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্য অশ্রু ঝরিয়েছেন, উনাদের ব্যথায় বেদনাতুর সময় কাটিয়েছেন। যে কারণে উনাকে কারাবালার মর্মান্তিক ঘটনার পর কেউ কখনো হাসতে দেখেনি।

            কখনো কখনো কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা স্মরণ হলেই উনার এত বেশি কান্না আসতো যে- অশ্রুতে খাবার মুবারক ভিজে যেত এবং খাবার মুবারকের পানিতেও অশ্রু মুবারক মিশে যেত। একদিন উনার খাদিম উনার এমন অবস্থা দেখে বললো, আপনার ব্যথা-বেদনা এখনো রয়ে গেলো? উত্তরে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তোমার জন্য আফসুস! মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম তিনি উনার ১২ জন আওলাদ উনাদের একজন আওলাদ হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনাকে কয়েক বছর না দেখে উনার ব্যথা-বেদনায় উনার চক্ষু মুবারক উনাদের দৃষ্টি মুবারক হারিয়েছেন, উনার চুল মুবারক সাদা হয়ে যায়, উনি দ্রুত বৃদ্ধ হয়ে যান। আর আমি আমার সম্মানিত পিতা, ভাই এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সবাইকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় অত্যন্ত নির্মমভাবে শহীদ হতে দেখেছি, তাহলে কিভাবে আমার ব্যথা-বেদনা থামতে পারে?

 **************************************





সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইল্ম ও তাক্বওয়া মুবারক



হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, আমি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ফকীহ আর দ্বিতীয় কাউকে দেখিনি। অথচ তিনি খুব কম সংখ্যক পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। (তাযকিরাতুল হুফফাজ-১/৭৮)

হযরত ইমাম আবু হাজিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন- বনি হাশিমগণের সমসাময়িকদের মধ্যে উনাকেই আমি শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন দেখেছি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুসাইয়িব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, আমি উনার মতো পরহেযগার আর কাউকে দেখিনি।

মালিকী মাযহাবের ইমাম, হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন- “আমার নিকট এই মর্মে খবর পৌঁছেছে যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দিন-রাতে এক হাজার রাকায়াত নামায আদায় করতেন। সুবহানাল্লাহ! আর এটা উনার পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ পর্যন্ত জারি ছিল। সুবহানাল্লাহ! এ কারণে উনাকে ‘যাইনুল আবিদীন’ তথা ইবাদতকারীগণের সৌন্দর্য লক্বব মুবারকে অভিহিত করা হয়। তিনি ছিলেন সেই যামানার সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত গুজার। (তাযকিরাতুল হুফফাজ-১/৭৮, সিয়ারু আলামিন নুবালা-৪/৩৮৮, তাহযীবুত্ তাহযীব-৭/২৬০, তাহযীবুল কামাল-১৩/২৩৯, হিলয়াতুল আউলিয়া-৩/১৬৫, সুয়ারুম মিল হায়াতিত্ তাবিয়ীন/৩৪২)

আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “হিকমতপূর্ণ বাক্য জ্ঞানীর হারানো সম্পদ। কাজেই যেখানে বা যার নিকট উহা পাবে সেখান থেকে বা উনার নিকট থেকেই তা সংগ্রহ করবে।”

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবন মুবারকে এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পূর্ণ বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হয়। ইলমের প্রতি ছিল উনার অদম্য আগ্রহ। যেখানে পবিত্র ইলম উনার সন্ধান পেতেন সেখানেই ছুটে যেতেন। ধনী-গরিব উঁচু-নিচু কারো ভেদাভেদ করতেন না। সুবহানাল্লাহ!

একদিন হযরত ইমাম নাফে’ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন- “মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমা করুন। আপনি সমস্ত মানুষের ‘সাইয়্যিদ’ এবং সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আর আপনি একজন গোলামের মজলিসে বসেন। উল্লেখ্য যে, তিনি যায়িদ ইবনে আসলাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইলমী মজলিসে বসতেন। আর তিনি ছিলেন গোলাম।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন- “ইলম হাছিলের ক্ষেত্রে এরূপ মনোভাব থাকা সমীচীন নয়। বরং যেখানে ইলমের সন্ধান পাওয়া যাবে সেখান থেকে তা হাছিল করা উচিত।” (হিলয়াতুল আওলিয়া-৩/১৬২, তাহযীবুল কামাল-১৩/২৩৯, সিয়ারু আলামিন নুবালা-৪/৩৮৮)

 ***************************************************************



সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহামূল্যবান নছীহত মুবারক



পবিত্র মুহররমুল হারাম মাস উনার সুমহান ও বরকতময় ২৫ তারিখ মুবারকে শাহদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, যিনি পূত-পবিত্র হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের চতুর্থ ইমাম- সুলত্বানুল আউলিয়া, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। উনার সুমহান পবিত্র শানে শুকরিয়া  প্রকাশস্বরূপ উনার পবিত্র যবান মুবারক থেকে নিসৃত কতিপয় মহামূল্যবান নছীহত মুবারক উল্লেখ করছি-

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

* আমি তায়াজ্জুব (আশ্চর্য) হই ওই ব্যক্তি সম্পর্কে- যে ফখর ও অহঙ্কার করে। কারণ গতকাল যে সামান্য পানি ছিল এবং আগামীকাল যে মৃত্যুবরণ করে আবার মাটিতে মিশে যাবে, তার অহঙ্কার দেখলে বড়ই আশ্চর্য হই।

* আর ওই ব্যক্তির জন্যও আশ্চর্য হতে হয়- যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার আযমত সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনিই তাকে সৃষ্টি করেছেন।

* ওই ব্যক্তি সম্পর্কেও আশ্চর্য হই- যে পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে; অথচ প্রথমবার মহান আল্লাহ পাক তিনিই তাকে পয়দা করেছেন।

 * আর ওই ব্যক্তি সম্পর্কেও আশ্চর্য হই- যে ক্ষণস্থায়ী জিন্দেগী অর্থাৎ দুনিয়ার জন্য সবসময় আমল করে; কিন্তু চিরস্থায়ী জিন্দেগী অর্থাৎ পরকালের জন্য আমল করে না। হে ব্যক্তিগণ! তোমরা লক্ষ্য করো, দুনিয়া হচ্ছে মুসাফিরখানা। আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ওই আমল থেকে পানাহ তলব করছি- যা লোকদের নিকট জাহিরীভাবে (বাহ্যিকভাবে) ভালো মনে হয়। কিন্তু হাক্বীক্বতে তা অত্যন্ত খারাপ। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন, কিছু লোক আছেন, যাঁহারা মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়ে ইবাদত করেন। মূলত ইহাই বান্দা বা গোলামদের ইবাদত। কিছু লোক আছে যারা জান্নাত উনার আশায় ইবাদত করে ইহা ব্যবসায়ীদের ইবাদত। আর কিছু লোক রয়েছে যারা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায়ের লক্ষ্যে ইবাদত করে মূলত ইহা হচ্ছে আযাদ বা স্বাধীন ব্যক্তির ইবাদত। (সফওযাতুছ্ ছাফওয়া, সিয়ারুছ্ ছাহাবা)

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পূর্বে একদিন উনার সুযোগ্য আওলাদ সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল খামিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- যিনি হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ৫ম ইমাম, উনাকে ডেকে কিছু মহামূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ নছীহত মুবারক করেন। মুয়ামিলাত-মুয়াশিরাত তথা সংসার জীবনযাপন করার ব্যাপারে। তিনি বললেন, হে আমার প্রিয় আওলাদ!

* পাঁচ ধরনের লোকদের সাথে কখনো বন্ধুত্ব করবেন না। এমনকি তাদের সাথে দুশমনিও করতে যাবেন না।

প্রথমত, ফাসিক বা পাপীদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন না। তাদের সহচার্য হতে সবসময় দূরে সরে থাকবেন। ওই সমস্ত লোক আপনাকে প্রবৃত্তির গোলামে পরিণত করতে চাইবে এবং যে বিষয়ের কোনো প্রয়োজন নেই- এমন সব বিষয়ে আত্মনিয়োজিত হতে প্ররোচিত করবে।

দ্বিতীয়ত, কৃপণের সাথে বন্ধুত্ব করবেন না। কেননা যদি কখনো আপনার আর্থিক সমস্যা দেখা দেয়, তখন সে-ই ব্যক্তি বখিলীর কারণে আপনার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে পালিয়ে যাবে।

তৃতীয়ত, মিথ্যাবাদীর সাথে কখনো বন্ধুত্ব করবেন না। কেননা এমন লোক মরীচিকার মতো; সে তার অভ্যাসবশতই আপনার আপনজনদেরকে আপনার থেকে দূরে সরিয়ে দিবে।

 চতুর্থত, আহমক/বোকা লোকের সাথে বন্ধুত্ব করবেন না। কারণ এ ধরনের লোক উপকার করতে গিয়েও এমন ভয়ানক ক্ষতি করে ফেলবে, যার প্রতিকার করা অনেক সময় সম্ভবপর হবে না।

পঞ্চমত, রক্তের সম্পর্ক ছিন্নকারী লোকদের সাথে সম্পর্ক রাখবেন না। কারণ আমি যে সমস্ত আসমানী কিতাব পাঠ করেছি, প্রত্যেক আসমানী কিতাবে এ ধরনের লোকদেরকে অভিশপ্ত হিসেবে উল্লেখ দেখেছি। (হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন/৭৫)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গুরুত্বপূর্ণ এবং মহামূল্য নছীহত মুবারক অনুযায়ী আমল করার তাওফীক ইনায়েত করুন। আমীন!

-আহমদ উম্মুল হায়া।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত আহলে বাইত শরীফ ও হযরত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনারাই হচ্ছেন উনার ঘনিষ্ঠ বা আপনজনের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!



মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক  করেন, “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি জানিয়ে দিন, আমি তোমাদের নিকট কোনো বিনিময় চাচ্ছি না। আর চাওয়াটাও স্বাভাবিক নয়; তোমাদের পক্ষে দেয়াও কস্মিনকালে সম্ভব নয়। তবে তোমরা যদি ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করতে চাও; তাহলে তোমাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে- আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনাদের খিদমত মুবারক উনার আনজাম দেয়া।”

মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্রতা ঘোষণা করেছেন। সুবহানাল্লাহ! ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হে হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদেরকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা থেকে দূরে রাখতে চান এবং আপনাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে চান।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সর্বপ্রকার অপবিত্রতা থেকে দূরে রেখে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করেই সৃষ্টি করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যেমন উনার শ্রেষ্ঠতম নবী, শ্রেষ্ঠতম রসূল এবং উনার হাবীব হিসেবে মনোনীত করেছেন, তদ্রƒপ উনার যারা পবিত্র আহলে বাইত শরীফ ও হযরত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকেও তিনি মনোনীত করেছেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার নবী, রসূল ও হাবীব যেরূপ রিয়াজত-মাশাক্কাত শিক্ষা-দীক্ষা, আমল-আখলাকের দ্বারা হওয়া যায় না, তদ্রƒপ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইত শরীফ ও হযরত আওলাদ আলাইহিমুস সালামও রিয়াজত-মাশাক্কাত দ্বারা হওয়া যায় না।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করো, কেননা তিনি তোমাদেরকে নিয়ামত দানের মাধ্যমে অনুগ্রহ করে থাকেন। আর আমাকে মুহব্বত করো মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত লাভ করার জন্য। আর আমার সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ, হযরত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো আমার মুহব্বত পাওয়ার জন্য।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, যদি তারা (বান্দা-বান্দী, উম্মত) মু’মিন হয়ে থাকে তাহলে তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য হলো, মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সন্তুষ্ট মুবারক করা। উনারাই সন্তুষ্টি মুবারক পাওয়ার ক্ষেত্রে সমধিক হক্বদার।

পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা দ্বারা স্পষ্টভাবেই ফুটে উঠেছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করতে হলে হযরত আহলে বাইত শরীফ ও হযরত আওলাদে আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে নিসবত মুবারক স্থাপন করা সকলের জন্যই দায়িত্ব-কর্তব্য।

 **************************************************



সুলত্বানুল আউলিয়া, ইমামুল মুহাক্কিকীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার সংক্ষিপ্ত সম্মানিত পরিচিতি মুবারক



ইয়াদগারে নুবুওওয়াত, পেশওয়ায়ে দ্বীন, সুলত্বানুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম উনার মুবারক নাম আলী। তবে তিনি ‘আলী আওসাত’ নাম মুবারকে ভূষিত হন। উনার মুবারক কুনিয়াত আবুল হাসান ও আবু মুহম্মদ আলাইহিস সালাম। আবু আব্দিল্লাহ মাদানী আলাইহিস সালামও বলা হয়।

‘যাইনুল আবিদীন’ উনার অসংখ্য অগণিত লক্বব মুবারকের মধ্যে একখানা বিশেষ লক্বব মুবারক। সারাবিশ্বে তিনি এই মহান লক্বব মুবারকে পরিচিত বা মশহুর রয়েছেন।

সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তিনি হচ্ছেন উনার সম্মানিত পিতা।

উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার অপর যাওজাতুল মুকাররমাহ ছিলেন হযরত লাইলা বিনতে মুররা আলাইহাস সালাম। উনার পবিত্র রেহেম শরীফে যিনি তাশরীফ এনেছিলেন উনারও মুবারক নাম ছিল হযরত আলী আলাইহিস সালাম। সঙ্গতকারণে তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আলী আকবর নাম মুবারকে ভূষিত হয়েছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার অপর একজন আওলাদ আলাইহিস সালাম উনারও মুবারক নাম ছিল আলী। যিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আলী আসগর আলাইহিস সালাম নামে মশহুর বা পরিচিত ছিলেন। তিনি কারবালার প্রান্তরে শান শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। অর্থাৎ সাইয়্যিদুনা ইমাম হযরত আলী আকবর এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আলী আছগর আলাইহিমাস সালাম উনারা দু’জনই কারবালার প্রান্তরে পবিত্র শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন।

উনার সম্মানিতা মাতা: পারস্য শাসক-এর কন্যা শহরবানু আলাইহাস সালাম। ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিদমতে আসার পর উনার নাম মুবারক হয় হযরত সালমা আলাইহাস সালাম। কেউ কেউ হযরত গাযালা আলাইহাস সালাম বলেও উল্লেখ করেছেন।

সে সময় ছিল আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকাল। সারাবিশ্বে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার পতাকা পত পত করে উড়তেছিল। অনেক এলাকা বিজিত হয়। রোম ও পারস্যের মতো দুই পরাশক্তিও ইতোমধ্যে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার পতাকাতলে ঠাঁই পায়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিম সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে সারা পৃথিবীর খলীফা বলা হয়। কারণ রোম ও পারস্যের মতো পরাশক্তিকে পরাভূত করতঃ সম্মানিত খিলাফত প্রতিষ্ঠার অর্থই হচ্ছে সারা দুনিয়ায় খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা। সুবহানাল্লাহ!

পারস্য শাসক রাজধানী মাদায়েন হতে কাবুলের নিকট এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার সেনাপতি উনাকে বললেন, “যদি পারস্য শাসক বাড়াবাড়ি না করে তাহলে আর তাড়া করার দরকার নেই। বিজিত এলাকার জনগণের কল্যাণের দিকে মনোযোগ দিন। কিন্তু পারস্য শাসক নিজের হাতে তার শেষ পরিণতি ডেকে আনলো। সে বিপুল সম্পদ ব্যয় করে শাহী ফৌজকে পুনর্গঠিত করলো এবং পার্শ্ববর্তী চীন শাসক খাকানের দরবারে হাজির হয়ে সাহায্য প্রার্থনা করলো। চীন শাসক খাকানও আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করতো। কারণ পারস্যের পরেই চীন সীমান্ত। কাজেই আগেভাগে মুসলমানগণের গতিরোধ করা বুদ্ধিমানের কাজ মনে করে এগিয়ে আসলো। কিন্তু সেই স্বপ্ন খড়কুটোর মতো ভেসে গেলো। পারস্য ও চীন শাসকের সম্মিলিত বাহিনীও মুসলিম সেনাপতি উনার গতিরোধ করতে পারলো না। তিন দিন যুদ্ধের পর চীন শাসক খাকান তার বাহিনীসহ পিছটান দিলো। আর পারস্য শাসক নিহত হলো। পারস্য শাসকের পরিবার-পরিজনসহ অনেক লোক মুসলমানগণের পবিত্র হাতে বন্দি হলো। পারস্য শাসক পরিবারের কয়েক শতাব্দীর সঞ্চিত রতœভা-ার খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র দরবার শরীফে হাজির করা হলো। বন্দিদের মধ্যে ছিলেন পারস্য শাসকের তিন কুমারী কন্যা। যারা ছিলেন রূপে গুণে অনন্যা। (মিরয়াতুল আছরার-২০৭, ইমাম যাইনুল আবিদীন-২)

পারস্য শাসকের মেয়েদের জন্য মজলিসে শুরা (পরামর্শ মজলিস) ডাকানো হলো। অনেক আলোচনা হলো। এক পর্যায়ে আসাদুল্লাহিল গালিব, ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া আমীরুল মু’মিনীন! তারা খান্দানী মেয়ে। তাদের সাথে সাধারণ বন্দিদের মতো আচরণ করা ঠিক হবে না। কাজেই তাদের জন্য একটা মুক্তিপণ ধার্য করা হোক। আর আমিই সেই মুক্তিপণ বাইতুল মালে জমা দিবো ইনশাআল্লাহ। তারপর তাদেরকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দিকে আহবান করা হবে। যদি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার তিনজন যুবককে যাওজ হিসেবে গ্রহণ করার ইখতিয়ার দেয়া হোক। তাতে যদি সম্মত না হয়, তাহলে অন্য কোনো স্থানে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারবে।

এই প্রস্তাব সকলেরই মনঃপুত হলো। সবাই এই প্রস্তাব মেনে নিলেন। আর পারস্য শাসকের মেয়েগণও অত্যন্ত খুশি হলেন। তারা সবাই সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র হাত মুবারকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম কবুল করলেন।

স্মর্তব্য যে, উনারা পূর্বেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীতে নতুন করে তওবা করলেন উনার হাত মুবারকে। অতঃপর বড় মেয়ে তিনি যাওজুল মুকাররম হিসেবে গ্রহণ করলেন খোদ সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার আওলাদ হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে। মধ্যমা আওলাদ তিনি পছন্দ করলেন খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আফযালুন নাছ বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার আওলাদ হযরত মুহম্মদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে। আর ছোট্ট মেয়ে হযরত শহরবানু আলাইহাস সালাম তিনি পুলক কম্পিত চিত্তে আঙ্গুলী মুবারক নির্দেশ করলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররমাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার পাশে বসা সম্মানিত জান্নাতী যুবকদের সাইয়্যিদ হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি রাইতি রসূলিল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দিকে। সাথে সাথে নিসবাতুল আযীম মুবারক সুসম্পন্ন হলো।

আসাদুল্লাহিল গালিব, ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উনাদেরকে মুবারকবাদ জানালেন এবং প্রাণ খুলে দোয়া করলেন। বললেন আরব আ’যমের দুইটি শ্রেষ্ঠ রক্তধারার মহামিলন হওয়ার ফলে আপনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি দুনিয়ার সেরা প্রতিভাবান সন্তান দান করবেন। মহান আল্লাহ পাক উনার অন্তর নিংড়ানো দোয়া কবুল করেছেন। সেই সৌভাগ্যবর্তী মেয়ে উনাদের রেহেম শরীফে তাশরীফ আনেন ইমামুল মুহাক্কিকীন, সুলত্বানুল আউলিয়া, ইয়াদগারে নবুওওয়াত, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইমাম কাসিম ইবনে মুহম্মদ ইবনে  আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম এবং ইলমে ফিক্বাহ উনার যুগ শ্রেষ্ঠ ইমাম হযরত সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর আলাইহিস সালাম।



**************************************************





সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বুযুর্গী, সম্মান ও ফযীলত মুবারক



আলে রসূল, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র শা’বান শরীফ উনার ৫ তারিখ ইয়াওমুল খামীস (বৃহস্পতিবার) হিজরী ৪৭ সনে তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন।

উনার পিতা সম্মানিত বেহেশ্ত উনার যুবক উনাদের সাইয়্যিদ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, শহীদে কারবালা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম এবং মাতা ছিলেন পারস্য শাসক-এর কনিষ্ঠা কন্যা হযরত শাহারবানু ওরফে গাযালা বা হযরত সালমা আলাইহাস সালাম।   সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কথা বলার বয়স হতেই পরিবারের অন্যান্য শিশুগণের সাথে পবিত্র মসজিদে নববী শরীফে যাতায়াত শুরু করেন এবং অতি অল্প বয়স মুবারকেই পবিত্র কুরআন শরীফ হিফ্য করেন।        তখনকার যুগে পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ ছিল দুনিয়ার সেরা শিক্ষাকেন্দ্র। বিজ্ঞ ছাহাবীগণ পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ-এ বসে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, তাফসীর শরীফ, ফিক্বাহ্, ক্বিরায়াত প্রভৃতি দ্বীনি ইলমের বিভিন্ন শাখার উপর শিক্ষা দান করতেন। শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীগণ অনেক সময় দল বেঁধে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের খিদমতে গিয়ে হাজির হতেন এবং উনাদের যবান মুবারকে বিভিন্ন ঘটনা শ্রবণ করে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ করতেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেমন ছিলেন, উনার আদত-অভ্যাস মুবারক কেমন ছিল, উনার দিন-রাত কিভাবে কাটতো এ সমস্ত বর্ণনা শ্রবণ করে তরুণ তাবিয়ীগণ নিজ নিজ জীবনে সেই আদর্শ মুবারক বাস্তবায়িত করার সাধনা করতেন।        এ সমস্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে অতি অল্প বয়সেই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম তিনি সকলের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অস্বাভাবিক মেধা ও সুতীক্ষè ধীশক্তিবলে মাত্র আট/নয় বছর বয়সেই তিনি বড় বড় জ্ঞানী-গুণীগণের মজলিসে সমাদর পেতে লাগলেন। উনারা শিশু সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সূক্ষ্মতিসূক্ষ্ম বিষয়ে পর্যন্ত খোলাখুলি আলোচনা করে মুগ্ধ হতেন।

মুবারক ইলম উনার খাছ উত্তরাধিকারী সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনিই আর উনার মাধ্যমেই ইমাম খান্দানে প্রবেশ লাভ করেছিল। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম তিনি তা রক্ষা করার জন্য কঠোর সাধনা করে গেছেন। যদিও তিনি খাছ ইলমে লাদুন্নি উনার পূর্ণ অধিকারী। ইল্মের সন্ধান তিনি যেখানেই পেতেন বিনা দ্বিধায় সেখানে হাযির হওয়াই ছিল উনার সাধারণ অভ্যাস মুবারক। ফলে সমগ্র মুসলিম জাহানে ইলমের ক্ষেত্রে তিনি অনন্য মর্যাদা এবং উম্মতের সম্মানিত ইমাম হওয়ার দুর্লভ সম্মান লাভ করেছিলেন।   সমকালীন মুসলিম জাহানে ইলমে হাদীছ শরীফ এবং ইলমে ফিক্বাহ উনাদের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন সকলের ইমাম, সর্বাপেক্ষা বিচক্ষণ আলিম।      ইল্মে তরীক্বতে তিনি ছিলেন সাধককুলের মাথার মুকুট। ইলমে তরীক্বতের যত শাজরা আছে তার প্রায় প্রত্যেকটির শীর্ষদেশে ইমাম হিসেবে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক চোখে পড়ে।    তাছাড়া সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ত্যাগ, অপূর্ব ধৈর্য ও রূহানিয়ত মুবারক উনার মহিমার দ্বারাই ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা কঠিন বিপর্যয়ের হাত হতে উদ্ধারপ্রাপ্ত হয়ে মুসলিম সমাজ পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ শরীফ ভিত্তিক খিলাফতে রাশিদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। ভোগ-বিলাসের ক্রোড়ে লালিত উমাইয়া খান্দানের সর্বাপেক্ষা সৌখিন যুবক হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম উনার শিক্ষা, ছোহবত ও নীরব সাধনা মুবারক উনার গুণেই আদর্শ খলীফা দ্বিতীয় উমরে পরিণত হয়েছিলেন।  কারবালার বিভীষিকাময় সন্ধিক্ষণে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অসুস্থ ছিলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে কুদরতীভাবে হিফাযত করতঃ উনার মাধ্যমেই দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা পবিত্র বংশধারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ধারাবাহিকতা জারি করেছেন।     ইল্ম ও আধ্যাত্মিকতার সাধনা ছিল হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রধান উত্তরাধিকার। জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে অকল্পনীয় প্রতিকূলতা অতিক্রম করেও এই মহান নিয়ামতের উত্তরাধিকারীগণ দুনিয়ার বুকে আদর্শের গৌরবময় নূরটি সবসময় নূরান্বিত করে রেখেছেন।       যুগ পরম্পরায় উনাদের সাধনার ধারাবাহিকতা সমগ্র জগৎ প্লাবিত করেছে। গাওছূল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, আশিকে রসূল হযরত শায়েখ সাইয়্যিদ আহমদ কবীর রিফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মুজাদ্দিদে যামান, হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি আরিফবিল্লাহ হযরত খাজা নকশবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, এবং মুজাদ্দিদে যামান, শহীদে আ’যম, হযরত শায়েখ শহীদ আহমদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাদের ন্যায় দুনিয়ার শীর্ষস্থানীয় ওলী-আউলিয়াগণ সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ উনাদেরই পবিত্র বংশধারার উত্তরাধিকারী। এ পবিত্র বংশধারায় এত মহান ওলীআল্লাহ উনাদের আবির্ভাব হয়েছেন যে, সাধারণভাবে তার বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়।

*********************************************



ইমামুল মুত্তাক্বীন, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, পেশওয়ায়ে দ্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইমামত সম্পর্কে হাজরে আসওয়াদ উনার সাক্ষী



ইমামুল মুত্তাক্বীন, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, পেশওয়ায়ে দ্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি শহীদী শান মুবারক প্রকাশ করার পর উনার ক্বায়িম-মক্বাম বা গদ্দিনসীন হন। উনার ইমামতের মাক্বামটি তিনিই অলংকৃত করেন।

আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি ইলমের শহর আর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন সেই শহরের দরজা।” সেই ইলম ও হিকমাহ সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার সীনা মুবারক হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সীনা মুবারকে স্থান পায়। খোদ সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার তরবিয়ত দাতা; তাহলে তিনি কিরূপ ইলম, আকল, সমঝ প্রাপ্ত তা সহজেই অনুমেয়।

একবার হযরত মুহম্মদ হানাফিয়া ইবনে কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিত ইমামত সম্পর্কে মুসলিম উম্মতকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে। সুলত্বানুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আরজ করলে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ইহা উত্তম হবে যে, আমরা উভয়ে লোকজনসহ পবিত্র কা’বা শরীফ প্রাঙ্গণে হাজরে আসওয়াদ উনার নিকট যাই। উনাকে জিজ্ঞাসা করি- বর্তমান সময়ের ইমাম কে? তাতে প্রকৃত সত্য সকলের নিকট প্রকাশিত হবে।

অতঃপর উনারা সম্মানিত হাজরে আসওয়াদ উনার নিকট গেলেন। সম্মানিত হাজরে আসওয়াদ উনাকে (কালো পাথর) জিজ্ঞাসা করলে উনার জবান খুলে গেল। সম্মানিত হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) স্পষ্টভাবে বলে দিলেন, “ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরে ইমামত সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছেছে। তিনিই বর্তমান সময়ের ইমাম। সুবহানাল্লাহ!

মূলত, এভাবে আনুষ্ঠানিকতা দ্বারা হযরত মুহম্মদ হানাফিয়া ইবনে কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম উনার ইমামত জগদ্বাসীর সামনে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! আর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই কারামত দেখে উপস্থিত সকলেই অন্তর থেকে উনাকে ইমামুর রবি’ হিসেবে গ্রহণ করলেন এবং উনার খিমতে নিজদের উৎসর্গ করলেন। সুবহানাল্লাহ!



**********************************************************

ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, আওলাদু রসূলিল্লাহ, ইয়াদগারে নুবুওওয়াহ, পেশওয়ায়ে দ্বীন,

আস সাজ্জাদ, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রাবি’ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক উসীলায় নিয়ামতে পরিপূর্ণ হয়েছে মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, মুহিউদ্দিন, আওলাদে রসূল,

সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি

উনার মক্ববূল মাশহূর ক্বাদিরিয়া তরীক্বা



একথা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের নিকট ইলমসহ সমস্ত নিয়ামতরাজি পুঞ্জীভূত। যা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে সুস্পষ্ট হয়েছে। হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উসীলা ব্যতিত কোনো কিছুই পূর্ণাঙ্গতা লাভ করে না। যার বাস্তব নমুনা ইলমে তাছাউফ উনার তরীক্বাসমূহ।

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার অসীম রহমত বরকত সাকীনা মুবারক উনার বদৌলতে এবং সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ইহসান উনার উসীলায় আজো বিশ্বব্যাপী জারি রয়েছে মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গউছুল আ’যম, দস্তগীর, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মক্ববূল মাশহূর পবিত্র ক্বাদিরিয়া তরীক্বা। সুবহানাল্লাহ! ইনশাআল্লাহ ক্বিয়ামত পর্যন্ত তা ছহীহ তরতীবে জারি থাকবে সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তবে এ তরীক্বা নিয়ামতে পরিপূর্ণ হয়েছে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক উসীলায়। যা এ মহান ত্বরীক্বা উনার পবিত্র শাজরা শরীফ পর্যালোচনা করলেই দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হবে। বিশ্বব্যাপী সুমহান শান মুবারক-এ জারি থাকা মুবারক ক্বাদিরিয়া তরীক্বা উনার সুমহান শাজরা শরীফ এখানে উল্লেখ করা হলো:-

১। ইলাহী বহুরমতে কুল-মাখলূক্বাতের নবী ও রসূল, হায়াতুন নবী, ছাহিবে ইলমে গইব, ছাহিবে মুত্তালা’ ‘আলাল গইব, জামিউল ইলম, ছাহিবে মাফাতীহুল ইলম, আল্হাদ্বির, আন্নাযির, ছাহিবে লাওলাক, ছাহিবে ক্বাবা ক্বওসাইনি আও আদনা, ছাহিবে কাওছার, ছাহিবে মাক্বামে মাহমূদ, ছাহিবে লিওয়ায়িল হামদ্, ছাহিবে শাফা‘আতে কুবরা, ছাহিবে লাসতু কাআহাদিকুম, ছাহিবে মি’রাজ, ছাহিবে কুন ফাইয়াকুন, ছাহিবে ওয়াহ্য়ি, ছাহিবে শারীআহ, আলগনিইয়্যূ, রঊফুর রহীম, আত্ত্বাহির, আত্তইয়িব, শাফিউল উম্মাহ, খতীবুল আম্বিয়া ওয়াল উমাম, সাইয়্যিদুল মাখদূম, ছাহিবে জামিউল আসমা ওয়াছ ছিফাত, ফাদ্বলুল্লাহ, আকরামুল আওওয়ালীন ওয়াল আখিরীন, ফখরুল আম্বিয়া, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

২। ইলাহী বহুরমতে সাইয়্যিদুল আরব, বাবুল ইলমি ওয়াল হিকমাহ, আমীনু আহলি আরদ্ব, কুদওয়াতুল মুত্তাক্বীনা, যীনাতুল আরিফীন, নূরুল মুত্বীয়ীন, ইমামুল আদিলীন, আহলু বাইতিন নাবিইয়ি, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আসাদুল্লাহিল গালিব, আল ইমামুল আউওয়াল মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম।

৩। ইলাহী বহুরমতে সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সিবতু রসূলিল্লাহ, আলু রসূলিল্লাহ, আল ইমামুস সাইয়্যিদ, আল ইমামুল হুমাম, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আল ইমামুছ ছানী মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

৪। ইলাহী বহুরমতে সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সিবতু রসূলিল্লাহ, আলু রসূলিল্লাহ, আল ইমামুস সাইয়্যিদ, আল ইমামুল হুমাম, কাবীরুশ শা’ন, শহীদে কারবালা, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, আল ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

৫। ইলাহী বহুরমতে ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, আওলাদু রসূলিল্লাহ, ইয়াদগারে নুবুওওয়াহ, পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, আল ইমামুর রাবি’ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

৬। ইলাহী বহুরমতে ইমামুল হুদা, ইমামু আহলিল ইয়াক্বীন, সুলালাতুন নুবুওওয়াহ, সিরাজুল মিল্লাহ, আল ইমামুল খামিস মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

৭। ইলাহী বহুরমতে ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, আওলাদু রসূলিল্লাহ, ইয়াদগারে নুবুওওয়াহ, ইমামুস সাদিস মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

৮। ইলাহী বহুরমতে ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, আওলাদু রসূলিল্লাহ, ইয়াদগারে নুবুওওয়াহ, ইমামুস সাবি’ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

৯। ইলাহী বহুরমতে ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, আওলাদু রসূলিল্লাহ, ইয়াদগারে নুবুওওয়াহ, ইমামুছ ছামিন মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

১০। ইলাহী বহুরমতে ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হযরত শায়েখ মা’রূফ কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১১। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আবূল হাসান সাররী সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১২। ইলাহী বহুরমতে হযরত খাজা সাইয়্যিদুত ত্বায়িফা জুনায়িদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১৩। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১৪। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আব্দুল আযীয বিন হারিছ তামিমী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১৫। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আব্দুল ওয়াহিদ বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১৬। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আবূল ফাররাহ মুহম্মদ তারতুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১৭। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আবূল হাসান হাককারী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১৮। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আবূ সাঈদ মুবারক মখদুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১৯। ইলাহী বহুরমতে ইমামে রব্বানী, মাহবূবে সুবহানী, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, ইমামুর রাসিখীন, সুলত্বানুল আরিফীন, গাউছে সামদানী, মাশায়েখে আকবর মাশরিক ওয়াল মাগরিব, কুতুবুল আলম, ফরদুল আহবাব, গউছুল আ’যম, শায়খে শুইয়খিল আলম, গাউসে সাক্বালাইন, শাইখুল ইসলাম, ইমামুল আইম্মা, সাইয়্যিদুনা হযরত মুহিউদ্দীন বড়পীর ছাহিব আল হাম্বলী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

* তিনিই পবিত্র ক্বাদিরিয়া তরীক্বা উনার সম্মানিত ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি। সকলের নিকট তিনি বড়পীর ছাহিব গাউছুল আ’যম, দস্তগীর লক্বব মুবারক-এ মশহূর।

২০। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ সাইয়্যিদ আব্দুর রাযযাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২১। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ শরফুদ্দীন কাত্তাল রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২২। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আব্দুল ওয়াহহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২৩। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ বাহাউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২৪। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আক্বীল রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২৫। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ শামসুদ্দীন সাহরায়ি রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২৬। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ গাদায়ে রহমান আউয়াল রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২৭। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ শামসুদ্দীন আরিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২৮। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ গাদায়ে রহমান ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২৯। ইলাহী বহুরমতে হযরত শাহ ফাযিল রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৩০। ইলাহী বহুরমতে হযরত শাহ কামাল কায়থালী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৩১। ইলাহী বহুরমতে হযরত শাহ সিকান্দার কায়থালী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৩২। ইলাহী বহুরমতে আফযালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, কাইয়্যুমে আউওয়াল, আজিমুল বারাকাত, গউছুছ ছাক্বালাইন, খাযীনাতুর রহমাহ, মাখদূমে যামান, আল মুনাওওয়ার, খাজায়ে খাঁজেগা, আবূল বারাকাত বদরুদ্দীন হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী সিরহিন্দী আল হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

* তিনি একাদশ হিজরী শতকের মহান মুজাদ্দিদ।

* তিনি মহান মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বা উনার ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনিই হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খেরকা মুবারক হযরত শাহ সিকান্দার কায়থালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক মারফত প্রাপ্ত হয়েছেন।

৩৩। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আদম বিন নূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৩৪। ইলাহী বহুরমতে হযরত সাইয়্যিদ আব্দুল্লাহ আকবরাবাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৩৫। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আব্দুর রহীম মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৩৬। ইলাহী বহুরমতে রঈসুল মুহাদ্দিছীন, মুজাদ্দিদে যামান ও মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

* তিনি দ্বাদশ হিজরী শতকের মহান মুজাদ্দিদ।

৩৭। ইলাহী বহুরমতে হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৩৮। ইলাহী বহুরমতে আমীরুল মু’মিনীন, মুজাদ্দিদে যামান, হযরত শাহ সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী আলাইহিস সালাম।

* তিনিই ত্রয়োদশ হিজরী শতাব্দীর মহান মুজাদ্দিদ এবং সুপ্রসিদ্ধ ‘মুহম্মদিয়া তরীক্বা’ উনার সম্মানিত ইমাম।

৩৯। ইলাহী বহুরমতে কুতুবুল আকতাব হযরত মাওলানা শাহ ছূফী নূর মুহম্মদ নিজামপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৪০। ইলাহী বহুরমতে ওয়াসিল বিল্লাহ, আশিক্বে রসূলিল্লাহ, কুতুবুল ইরশাদ হযরত মাওলানা শাহ ছূফী ফতেহ আলী বর্ধমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

* উনাকে রসূলে নোমা বলা হয়। কারণ তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিয়ারত করিয়ে দিতে পারতেন।

৪১। ইলাহী বহুরমতে আমীরুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, মুজাদ্দিদে যামান, কুতুবুল আলম শাহ ছূফী আলহাজ্জ হযরত মাওলানা আব্দুল্লাহিল মা’রূফ মুহম্মদ আবূ বকর ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী আল হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

* তিনি চতুর্দশ হিজরী শতকের মহান মুজাদ্দিদ।

৪২। (ক) ইলাহী বহুরমতে ওলীয়ে মাদারযাদ, কুতুবুল আলম, সুলত্বানুল আরিফীন, হযরত মাওলানা শাহ ছূফী আবূ নজম মুহম্মদ নাজমুস সায়াদাত ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

(খ) ইলাহী বহুরমতে, কুতুবুল আলম, কাইয়্যুমে যামান, শায়েখুল মাশায়িখ, হযরত মাওলানা শাহ ছূফী আবূ নছর মুহম্মদ আব্দুল হাই ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৪৩। ইলাহী বহুরমতে কুতুবুল আলম, আমীরুশ শরীয়ত, মাহতাবে তরীক্বত, সুলত্বানুল আরিফীন, মাহিয়ে বিদয়াত, মুহইয়ে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে যামান, হুজ্জাতুল ইসলাম, তাজুল মুফাসসিরীন, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, ফখরুল ফুক্বাহা আলহাজ্জ হযরত মাওলানা শাহ ছূফী আবূল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজীহুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি।

তিনি উপরোক্ত উনাদের দু’জন থেকেই খিলাফত প্রাপ্ত হন। তবে উনার প্রধান শায়েখ হচ্ছেন হযরত নাজমুস সায়াদাত ছিদ্দীক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৪৪। ইলাহী বহুরমতে, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইউস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, ক্বইয়ূমুয যামান, হুজ্জাতুল ইসলাম, সুলত্বানুল আরিফীন, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যূল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম।

* তিনিই সারা বিশ্বে সমাদৃত, প্রশংসিত, গ্রহণযোগ্য ও হক্ব সিলসিলা “রাজারবাগ শরীফ”-উনার মহা সম্মানিত হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম। তিনিই হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর ‘মহান মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম।’

 এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, উনার সুমহান তরীক্বা শরীফ উনার সুযোগ্য আকাবির খলীফা আজমাঈন উনাদের মাধ্যমে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে সম্প্রসারিত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! তবে বর্তমানে খুব কম খানকায়, কম সিলসিলায়, কম দরবারে গদ্দীনশীন ব্যক্তিবর্গ মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গউছুল আ’যম, দস্তগীর, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তর্জ-তরীক্বা মুতাবিক আমল-আক্বীদা ইত্যাদি হুবহু নকশায় জারি রেখেছেন। বরং প্রায় সকলেই বিভিন্নভাবে উনার তরীক্বা মুবারক উনার সবক, আমল-আখলাক আদর্শ ইত্যাদিকে বিকৃত করেছে, অনেক কিছু ছেড়ে দিয়েছে কেউবা কমবেশি করেছে। নাউযুবিল্লাহ!



কিন্তু বর্তমান যামানায় একমাত্র ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ কিবলা কা’বা মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমেই বর্তমান যামানা পর্যন্ত জারি রয়েছে মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গউছুল আ’যম, দস্তগীর, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মক্ববূল মাশহূর পবিত্র ক্বাদিরিয়া তরীক্বা। সুবহানাল্লাহ!

আয় বারে ইলাহী! উনাদের উসীলায় আমাদের উপর আপনার খাছ রহমত, মুহব্বত ও মা’রিফাত এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ তাওয়াজ্জুহ, ফায়িয, যিয়ারত, মুহব্বত ও মা’রিফাত দান করুন। সুন্নতের পূর্ণ পায়রবী করার তাওফীক দিন। যাহিরী ও বাতিনী দৃঢ়তা আর ইহকাল ও পরকালের সুস্থতা দান করুন। এই সকল বুযুর্গানে দ্বীন উনাদের ফুয়ূজাত, বারাকাত ও কামালাতের পূর্ণ হিসসা নছীব করুন। আমীন!





মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত ঈমানের মূল।

তাই উনাদের ছানা ছিফত ও ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা মুসলমান উনাদের ঈমানী দাবি।



মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

قُل لَّا اَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ اَجْرً‌ا اِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْ‌بٰـى ۗ وَمَن يَقْتَرِ‌فْ حَسَنَةً نَّزِدْ لَهٗ فِيْهَا حُسْنًا ۚ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ‌ شَكُوْرٌ.

অর্থ: “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) উম্মাহকে বলে দিন যে, তোমাদেরকে ঈমান-হিদায়েত দেয়ার কারণে তোমাদের কাছে কোনো বিনিময় চাওয়া হচ্ছে না। বিনিময় দেয়া তোমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বিনিময় দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করাও তোমাদের জন্য কুফরী। তোমাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে আমার ক্বুরবা বা নিকটাত্মীয় আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে তোমরা সদাচরণ করো। যে ব্যক্তি নেকী হাছিল করে, আমি তা বৃদ্ধি করে দেই। অর্থাৎ যে ব্যক্তি উনাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করবে তার জন্য রয়েছে সর্বোত্তম প্রতিদান। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাশীল এবং প্রতিদান প্রদানকারী।” (পবিত্র সূরা শু‘য়ারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩)

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সদাচরণ তথা সর্বোচ্চ হুসনে যন বা সুধারণা পোষণ করতে হবে, উনাদের ছানা-ছিফত করতে হবে, উনাদের সাওয়ানেহ উমরী মুবারক বা জীবনী মুবারক বেশি বেশি আলোচনা-পর্যালোচনা করতে হবে। তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি দুনিয়া-আখিরাতে উত্তম প্রতিদান প্রদান করবেন। মহান আল্লাহ পাক উনাকে ক্ষমাশীল হিসেবে লাভ করা যাবে। জিন্দেগীর সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হবে। খাছ খায়ের, বরকত, রহমত, সাকীনাহ নাযিল হবে। সমস্ত নেক মক্বছূদ পূরণ হবে। সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে বিশেষ নিসবত মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এবং উনাদের আখাছছুল খাছ সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক হাছিল হবে। সুবহানাল্লাহ! আর এ বিষয়টিই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করা হয়-

عَنْ حضرت جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْبَجَلِىِّ رضى الله تعالى عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبّ اٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَاتَ شَهِيْدا. أَلا وَمن مَاتَ عَلـٰى حُبّ اٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّم مَاتَ مغفورا لَهُ. أَلا وَمن مَاتَ عَلـٰى حُبّ اٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَاتَ تَائِبًا. أَلا وَمن مَاتَ عَلـٰى حُبّ اٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّم مَاتَ مُؤمنا مُسْتَكْمل الْإِيمَان. الا وَمن مَاتَ عَلـٰى حُبّ اٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم بشره ملك الْمَوْت بِالْجنَّةِ ثمَّ مُنكر وَنَكِير. أَلا وَمن مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يزف إِلَى الْجنَّة كَمَا تزف الْعَرُوس إِلَى بَيت زَوجهَا. أَلا وَمن مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فتح الله لَهُ فِي قَبره بَابَيْنِ إِلَى الْجنَّة. أَلا وَمن مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّم جعل الله قَبره مَزَار مَلَائِكَة الرَّحْمَة. أَلا وَمن مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّم مَاتَ عَلَى السّنة وَالْجَمَاعَة.

অর্থ: “হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, তিনি শহীদ হিসাবে ইন্তিকাল করবেন। সুবহানাল্লাহ। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, তিনি ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ইন্তেকাল করবেন। সুবহানাল্লাহ। সাবধান! যিনি হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, তিনি তওবাকারী হিসেবে ইন্তেকাল করবেন। সুবহানাল্লাহ। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, তিনি পরিপূর্ণ ঈমানদার মু’মিন হিসেবে ইন্তেকাল করবেন। সুবহানাল্লাহ। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, উনাকে মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম, হযরত মুনকার ও নকীর আলাইহিমাস সালাম উনারা সম্মানিত বেহেশত মুবারক উনার সুসংবাদ মুবারক দিবেন। সুবহানাল্লাহ। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, উনাকে এমনভাবে সুসজ্জিত করে জান্নাতে নেয়া হবে, যেমনভাবে  নববধূকে সাজিয়ে তার স্বামীর ঘরে নেয়া হয়। সুবহানাল্লাহ। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, উনার কবরে সম্মানিত জান্নাত উনার দিকে দুটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক ইন্তেকাল করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত কবরকে সম্মানিত রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের যিয়ারতের স্থান বানাবেন। সুবহানাল্লাহ। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, তিনি আহলু সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার আকাইদের উপর ইন্তেকাল করবেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!! সুবহানাল্লাহ!!! (তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে কবীর, তাফসীরে রূহুল বয়ান,  নুজহাতুল মাজালিস)

অর্থাৎ যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, (১) তিনি শহীদী মৃত্যু পাবেন। (২) তিনি ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ইন্তেকাল করবেন। (৩) তিনি তওবাকারী হিসেবে ইন্তেকাল করবেন। (৪) তিনি পরিপূর্ণ ঈমানদার মু’মিন হিসেবে ইন্তেকাল করবেন। (৫) উনাকে মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম, হযরত মুনকার ও নকীর আলাইহিমাস সালাম উনারা সম্মানিত বেহেশত মুবারক উনার সুসংবাদ মুবারক দিবেন। (৬) উনাকে নববধূর ন্যায় সুসজ্জিত করে জান্নাতে নেয়া হবে (৭) উনার কবরে সম্মানিত জান্নাত উনার দিকে দুটি দরজা খুলে দেয়া হবে। (৮)  মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কবরকে সম্মানিত রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের যিয়ারতের স্থান বানাবেন। (৯)  তিনি সম্মানিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার আকাইদের উপরই ইন্তেকাল করবেন।” সুবহানাল্লাহ!

হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করলে উপরোক্ত নিয়ামতসমূহ লাভ করা যায়, কেউ যদি জীবিত অবস্থায় হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত না করে, উনাদের খিদমতের আঞ্জাম না দেয়, তাহলে সে কি ইন্তিকালের সময় উনাদের মুহব্বত অন্তরে রাখতে পারবে? কখনোই নয়। হ্যাঁ, যদি জীবিত অবস্থায় হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত করে, উনাদের খিদমতের আঞ্জাম দেয়, তাহলে তার জন্য উভয়কালেই কামিয়াবী। যা অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন-

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اربعة انا لـهم شفيع يوم القيامة الـمكرم لذريتى والقاضى لـهم حوائجهم والساعى لهم فى امورهم عند اضطرارهم اليه والمحب لهم بقلبه ولسانه-

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ক্বিয়ামতের দিন আমি নিজেই চার শ্রেণীর লোককে খাছভাবে সুপারিশ করবো- ১. যে ব্যক্তি আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সম্মান করবে। ২. যে ব্যক্তি অর্থ-সম্পদ দ্বারা আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের খিদমত করবে। ৩. যে ব্যক্তি শারীরিক শক্তি দিয়ে, শ্রম দিয়ে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের খিদমত করবে। ৪. যে ব্যক্তি হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মনে প্রাণে, জবানে গভীরভাবে মুহব্বত করবে।” সুবহানাল্লাহ! (আল বুরহানু ফী তাফসীরিল কুরআন লিল বাহরানী- ১/২৩, তাফসীরু নূরিছ ছাক্বালাইন লিল হুয়াইযী ২/৫০৪)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ سَلمَةَ بْنِ الأَكْوَع رَضِىَ الله تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النجوم أمان لأهل السماء ، وأهل بيتي أمان لأهل الأرض، فإذا ذهبت النجوم ذهب أهل السماء، وإذا ذهب أهل بيتي ذهب أهل الأرض ..

অর্থ: “হযরত সালমা ইবনে আকওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- আকাশের তারকারাজি আসমানবাসীদের জন্য নিরাপত্তা দানকারী। আর আমার পবিত্র আহলু বাইত শরীফ তথা আওলাদুর রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা আমার উম্মত তথা  গোটা কায়িনাতবাসীর একমাত্র নিরাপত্তা দানকারী তথা নাজাত দানকারী। সুবহানাল্লাহ! তারকারাজি যখন বিদায় নিবে, তখন আসমানবাসীগণও বিদায় নিবেন। আর আমার পবিত্র আহলু বাইত শরীফ তথা আওলাদুর রসূল আলাইহিমুস সালাম যখন বিদায় নিবেন, তখন জমীন ধ্বংস হয়ে যাবে।”  (কানযুল উম্মাল)

অর্থাৎ যমীনে দায়িমীভাবে সবসময় খাছ পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কেউ না কেউ অবস্থান মুবারক করবেন। উনাদের উসিলায় এই জমীন টিকে থাকবে। কিয়ামতের আগে এই জমীন পবিত্র আহলু বাইত শরীফ তথা আওলাদুর রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে খালি হবে না। তাহলে বর্তমান সময়ে পবিত্র আহলু বাইত শরীফ তথা আওলাদুর রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা কারা? সে বিষয়টিই বলা হয়েছে-

মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার যবান মুবারক-এ আমরা শুনেছি। তিনি বলেন: “আমি মুবারক স্বপ্নে দেখলাম- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অতি সুন্দর জায়গায় সুন্দর একটি আসন মুবারকে বসে রয়েছেন। উনার মুবারক সামনে ঘেরাও করা মনোরম জায়গা মুবারক রয়েছে। তিনি আমাকে এবং আমার আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে ডেকে নিয়ে ওই মুবারক জায়গায় বসালেন এবং বললেন: ‘আপনারা সবাই আমার আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত।’ সুবহানাল্লাহ!

মূল কথা হচ্ছে, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে যারা দুনিয়া হতে পর্দা করেছেন এবং যারা দুনিয়াতে অবস্থান মুবারক করছেন, উনাদের সকলকে সর্বাধিক মুহব্বত করতে হবে, সার্বিকভাবে উনাদের খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিতে হবে এবং উনাদের মুবারক শানে সর্বোচ্চ হুসনে যন পোষণ করতে হবে। যা পবিত্র ঈমান পূর্ণতার পূর্বশর্ত। আর এ জন্যই মুসলিম সন্তাদেরকে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যাপারে অবগত করতে সিলেবাসে উনাদের আলোচনা অন্তর্ভুক্ত করা অতীব জরুরী। অর্থাৎ এদেশের ৯৮ ভাগ মুসলমান উনাদের একান্ত দাবি।