কাজেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে শয়তানের ওয়াসওয়াসার কথা উল্লেখ রয়েছে, এখন মুসলমানদের জন্য ফরয-ওয়াজিব শয়তানের সর্বপ্রকার ওয়াসওয়াসা থেকে নিজেকে হিফাযত করা। কারণ শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। এজন্য প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ফরয হচ্ছে ক্বলব বা অন্তর পরিষ্কার করা। ক্বলব বা অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য একজন হক্বানী-রব্বানী খালিছ ওলীআল্লাহ উনার নিকট বাইয়াত হওয়া। বাইয়াত হয়ে ক্বলবি যিকিরের মাধ্যমে স্বীয় ক্বলবকে পরিশুদ্ধ করা। আর যখন ক্বলব বা অন্তর পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে তখন শয়তান আর ওয়াসওয়াসা দিতে পারবে না এমনকি সে কাছেও আসতে পারবে না। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حضرت عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رضىى الله تعالى عنه أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَىَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَىَّ صَلاَةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللَّهَ لِىَ الْوَسِيلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِى الْجَنَّةِ لاَ تَنْبَغِى إِلاَّ لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ فَمَنْ سَأَلَ لِىَ الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, যখন তোমরা মুয়াজ্জিন উনাকে আযান দিতে শুনবে, তার জাওয়াবে বলবে সে যা বলবে তার অনুরূপ। অতঃপর আমার উপর পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করবে। কেননা যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ শরীফ পড়বে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন। তারপর তোমরা তোমাদের নাজাতের জন্য এবং আমার রেযামন্দি ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের লক্ষ্য আমার জন্য যে বুলন্দ মুবারক মাক্বাম উছিলা নির্দিষ্ট রয়েছে সে জন্য দোয়া করবে, আর উহা হইতেছে জান্নাতের একটি সুউচ্চ মর্যাদাবান মাক্বাম মুবারক, যা মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দাদের মধ্যে একজন মাত্র বান্দা ব্যতীত অন্য কারও জন্য উপযোগী নয়। ইনশাআল্লাহ! অবশ্যই আমিই হবো সেই বান্দা ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর তোমরা তোমাদের নাজাতের জন্য এবং আমার রেযামন্দি ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের লক্ষ্য আমার জন্য যে বুলন্দ মুবারক মাক্বাম উছিলা নির্দিষ্ট রয়েছে সে জন্য দোয়া করবে, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হবে।” (মুসলিম শরীফ)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে,
عَنْ حضرت عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ عليه السلام قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ. فَقَالَ أَحَدُكُمُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ. ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ. قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ. قَالَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ. ثُمَّ قَالَ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ. قَالَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ. ثُمَّ قَالَ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ. قَالَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ. ثُمَّ قَالَ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ.
قَالَ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ. ثُمَّ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ. قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ. مِنْ قَلْبِه دَخَلَ الْجَنَّةَ
অর্থ: “হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন- যখন মুয়াজ্জিন বলে, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’, অতঃপর তোমাদের মধ্যে শ্রবণকারী যেন বলে- ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’। অতঃপর যখন মুয়াজ্জিন তিনি বলেন, ‘আশহাদু আললা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, তখন এর জবাবে যেন বলে- ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। আবার যখন মুয়াজ্জিন বলেন, ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ’, তখন যেন বলে- আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ।’ অতঃপর যখন মুয়াজ্জিন বলেন, হাইয়্যা আলাছ ছালাহ, সে যেন বলে, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। পরে যখন মুয়াজ্জিন বলে- হাইয়্যা আলাল ফালাহ, তখন শ্রবণকারী যেন বলে- ‘লা-হাওলা ওয়ালা-কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। আবার মুয়াজ্জিন যখন বলে- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার সে যেন বলে- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। অতঃপর যখন মুয়াজ্জিন বলে- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে ব্যক্তি যেনো বলে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। অন্তর হতে মূলত সে ব্যক্তি জান্নাতে দাখিল হবে।” সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ)
স্মরণীয় যে, পবিত্র আযানের মধ্যে যখন কোনো ব্যক্তি আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ তথা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূত-পবিত্র নাম মুবারক শুনবে, তখন সে যেন বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে লাগায়।
এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سمع اسمى فى الاذان و وضع ابهاميه على عينيه فانا طالبه فى صفوف القيامة وقائده الى الجنة.
অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, যে ব্যক্তি পবিত্র আযান উনার সময় আমার নাম মুবারক শুনলো এবং তার উভয় অঙ্গুলি দু’চোখের উপর রাখলো, আমি তাকে ক্বিয়ামতের দিন কাতারের মধ্যে তালাশ করবো এবং তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবো। সুবহানাল্লাহ! (ছালাতে নখশী)
পবিত্র আযান উনার মধ্যে অঙ্গুলি চুম্বন সম্পর্কিত উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছহীহ ‘মারফু, মাওকুফ, জঈফ সব ধরনের সনদে বর্ণিত রয়েছে। বদ মাযহাব বা বদ আক্বীদাযুক্ত ওহাবী খারিজী সম্প্রদায় কিল্লতে ইলম কিল্লতে ফাহমের কারণে বলে থাকে আযানে অঙ্গুলি চুম্বনের ব্যাপারে কোনো ছহিহ হাদীছ শরীফ নেই। তাই করা যাবে না। নাঊযুবিল্লাহ!
আমরা বলবো, তাদের বক্তব্য সঠিক নয়। আযানে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নাম মুবারক শুনে অঙ্গুলি চুম্বন সম্পর্কে সবধরনের সনদে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
যেমন, ফিক্বাহর বিখ্যাত ও মাশহুর কিতাব “মারাকিউল ফালাহ” কিতাবের ১৩৭ পৃষ্ঠায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাব “দায়লামী” শরীফ উনার বরাত দিয়ে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা মারফু হিসেবে উল্লেখ আছে,
وذكر الديلمى فى الفردوس من حديث حضرت ابى بكر عليه السلام مرفوعا من مسح العين بباطن انملة السبابتين بعد تقبيلهما عند قول المؤذن اشهد ان محمدا رسول الله وقال اشهد ان محمدا عبده ورسوله ....... حلت له شفاعتى.
অর্থ: “ইমাম দায়লামী রহমতুল্লাহি আলাইহি (উনার বিখ্যাত ও মাশহুর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাব) “ফিরদাউস লিদ দায়লামীতে” হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম উনার মারফূ হাদীছ উল্লেখ করেন যে, “যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিন উনার আযানের সময় ‘মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ’ শুনে শাহাদাত অঙ্গুলি দুটির ভিতরের দিকে চুম্বন করে চোখে বুছা দিবে, তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হবে।” সুবহানাল্লাহ!
এছাড়াও হযরত ইমাম ছাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “মাকাসিদুল হাসানা” কিতাবে, হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “মাওযুআতুল কবীর” কিতাবে এবং হযরত মুহম্মদ ফাত্তানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “মাজমাউল বিহার” কিতাবে “আযানের সময় অঙ্গুলি চুম্বন করা সম্পর্কিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে মারফু হিসেবে ছহীহ বলে উল্লেখ করেছেন।”
মুফতিয়্যুল আ’যম হযরত আমীমুল ইহসান মুজাদ্দিদী আল বরকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “ফতওয়ায়ে বরকতিয়া” কিতাবে এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে “মাওকুফ” হিসেবে ছহীহ বলে উল্লেখ করেন।
অতএব, উপরোক্ত বর্ণনা ছাড়াও যদি পবিত্র হাদীছ শরীফখানাকে জঈফ হিসেবেও ধরে নেয়া হয়, তবুও এরা দ্বারা উক্ত আমল বিদয়াত প্রমাণিত হয় না। কারণ সম্মানিত শরীয়ত উনার কোথাও এ কথা উল্লেখ নেই যে, কোনো বিষয়ে ছহীহ হাদীছ শরীফ উনার প্রমাণ না থাকলেই তা বিদয়াত। বরং সম্মানিত শরীয়ত উনার বিধান হলো, যে সব বিষয় ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত নয় বরং জঈফ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত, সে সব বিষয়ও ফযীলত লাভের উদ্দেশ্যে আমল করা বিদয়াত নয়, বরং জায়িয ও মুস্তাহাব।
এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহের বিশ্ব বিখ্যাত বিতাব “ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবে উল্লেখ আছে,
الاستحباب يثبت بالضعيف.
অর্থ: “পবিত্র জঈফ হাদীছ শরীফ দ্বারা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়।”
কাজেই যেখানে আযানের সময় বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয় চুম্বন করা আফযালুন্নাস বা’দাল আম্বিয়া, (হযরত নবী ও রসূল আলাইমুস সালাম উনাদের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ) হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার সুন্নত বলে প্রমাণিত। শুধু তাই নয়, বরং পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছহীহ।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, “আযানের সময় চোখে বুছা দেয়া খাছ সুন্নতে ছাহাবা যা অবশ্যই মুস্তাহাব; এবং জায়িয তো বটেই।”
“তাফসীরে জালালাইন শরীফ উনার” হাশিয়ায় আযানে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ’ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলার সময় অঙ্গুলি চুম্বন করে চোখে লাগানো মুস্তাহাব বলা হয়েছে।
যেমন, “তাফসীরে জালালাইন শরীফ উনার” ৩৫৭ পৃষ্ঠার ১৩ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
اعلم انه يستحب ان يقال عند سماع الاولى من الشهادة الثانية صلى الله عليك يا رسول الله صلى الله عليه وسلم وعند سماع الثانية قرة عينى بك يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم يقال اللهم متعنى بالسمع والبصر بعد وضع ظفر الابهامين على العينين فانه صلى الله عليه وسلم قائدله الى الجنة.
অর্থ: “জেনে রাখ! আযানের সময় শাহাদাতে ছানিয়া অর্থাৎ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ প্রথমবার শুনে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলা এবং উক্ত শাহাদাতের বাক্য দ্বিতীয়বার শুনে ‘কুররাতু আইনী বিকা ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলা মুস্তাহাব।
অতঃপর বৃদ্ধাঅঙ্গুলিদ্বয়ের নখ চুম্বর করে চোখের উপর রেখে ‘আল্লাহুমা মাত্তিনী বিসসাময়ী ওয়াল বাছার’ বলা মুস্তাহাব। এরূপ আমলকারীকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে বেহেশতে নিযে যাবেন।” সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, “তাফসীরে জালালাইন শরীফ উনার মধ্যে” এটাও উল্লেখ আছে যে, “আমলের ক্ষেত্রে পবিত্র জঈফ হাদীছ শরীফ দলীল হিসেবে গ্রহণ করা জায়িয।” এমতটিকেই অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ছহীহ বা বিশুদ্ধ বলেছেন।
যেমন, “তাফসীরে জালালাইন শরীফ” উনার উক্ত পৃষ্ঠার হাশিয়ায় আরো উল্লেখ আছে,
قد صح من العلماء تجويز الاخذ بالحديث الضعيف فى العمليات.
অর্থাৎ “আমলের ক্ষেত্রে জঈফ হাদীছ শরীফ উনাকে গ্রহণ করা জায়িয। এ মতটিকে অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ছহীহ বা বিশুদ্ধ বলেছেন।” কিন্তু এরপরেও কিছু কিছু লোক তাদের কিল্লতে ইলমের কারণে, স্বল্পজ্ঞানের কারণে, বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
যেমন, “তাফসীরে জালালাইন শরীফ” উনার ৩৫৭ পৃষ্ঠার ১৩নং হাশিয়ার পরিশেষে বলা হয়েছে,
لان بعض الناس ينازع فيه لقلة علمه.
অর্থাৎ “কিছু কিছু লোক তাদের ক্বিল্লতে ইলমের কারণে এ ব্যাপারে অর্থাৎ আযানে অঙ্গুলি চুম্বন করে চোখে লাগানোর ব্যাপারে বিতর্কের সৃষ্টি করে।”
উল্লেখ্য, যে আমল বিশুদ্ধ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত ও সুন্নাতে ছাহাবা সে আমল সম্পর্কে কি করে বলা যেতে পারে যে, তা সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে আমলযোগ্য নয়। সম্মানিত শরীয়ত বলতে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস শরীফ উনাদের বুঝায়। আর আযানে অঙ্গুলি চুম্বন করার বর্ণনাটি যদিও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে প্রত্যক্ষভাবে উল্লেখ নেই কিন্তু পরোক্ষভাবে তা উল্লেখ আছে।
যেমন, মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ উনার “পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ” উনার ৫৬নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলেন,
ان الله وملئكته يصلون على النبى يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما.
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক ও উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত পাঠ করেন। হে ঈমানদারগণ! আপনারাও উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করুন পাঠ করার মত।”