নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে পবিত্র
হুযরা শরীফ উনার মধ্যে উঠিয়ে নেয়া প্রসঙ্গে
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
النَّبِيُّ
أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنفُسِهِمْ وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মু’মিন-মু’মিনাদের সবচেয়ে প্রিয়।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া উম্মাহাতুল মু’মিনীন
আলাইহিন্নাস সালামগণ উনারা মু’মিনগণ উনাদের মাতা। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ :
পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন
নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন উম্মুল মু’মিনীন বা মু’মিন উনাদের মাতা।
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
يَا نِسَاء النَّبِيِّ
لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَاء
অর্থ: “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস
সালামগণ! আপনারা অন্যান্য মহিলাদের মতো নন। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত
শরীফ ৩২)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন দুনিয়ার অন্য কোনো মানুষের
মতো নন, তেমনি উনার হযরত আহলিয়া
আলাইহিন্নাস সালাম উনারাও দুনিয়ার অন্য কোনো মহিলাদের মতো নন। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, উম্মুল মু’মিনীন
হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সম্মানিত আহলিয়া উনার অন্তর্ভুক্ত। দুনিয়া ও আখিরাতে তথা অনন্তকাল উনার সম্মানিত আহলিয়া।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت ام المؤمنين عائشة صديقة عليها السلام قال رسول الله صلى الله عليه و سلم أما ترضين أن تكوني زوجتي في الدنيا والآخرة فأنت زوجتي في الدنيا والآخرة
অর্থ: হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা মুবারক করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেছেন, হে হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস
সালাম! আপনি কি দুনিয়া ও আখিরাতে আমার সঙ্গিনী হিসেবে থেকে সন্তুষ্ট নন? (আপনি জেনে রাখুন) আপনি দুনিয়া ও আখিরাতে আমার সঙ্গিনী
হিসেবেই থাকবেন। সুবহানাল্লাহ! (মুসতাদরিক, কানযুল উম্মাল)
কাজেই উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
আহাল উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
উনার নিকাহিল আযীম শরীফ সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে আমরা উনার পরিচিতি সম্পর্কে
কিছু আলোকপাত করবো ইনশাআল্লাহ!
উনার নাম মুবারক: হযরত আয়িশা আলাইহাস
সালাম। লক্বব মুবারক: হযরত ছিদ্দীক্বা ও হযরত হুমায়রা। কুনিয়াত বা উপনাম: হযরত
উম্মু আব্দিল্লাহ।
উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার কোন সন্তান ছিলেন না।
তিনি উনার বোন হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার ছেলে হযরত আব্দুল্লাহ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি ইতিহাসে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু নামে পরিচিত উনার নাম মুবারক- এ কুনিয়াত মুবারক ধারণ করেন।
মূলতঃ তৎকালীন সময়ে আরবে
‘কুনিয়াত’ ছিল শরাফত ও আভিজাত্যের প্রতীক। অভিজাত শ্রেণীর লোকদের নাম ধরে ডাকার
নিয়ম ছিল না। কুনিয়াত বা উপনামেই সম্বোধন করা হতো। ফলে একদিন উম্মুল মু’মিনীন হযরত
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ
ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার অন্য আহলিয়া উম্মুল
মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা উনাদের পূর্বের স্বামীদের সন্তানদের নামে
নিজেদের কুনিয়াত ধারণ করেছেন, আমি কার নামে কুনিয়াত ধারণ করি? উত্তরে নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি বললেন, আপনার বোনের
ছেলে হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নাম মুবারকে কুনিয়াত নাম
মুবারক ধারণ করুন। সেই দিন থেকে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম
উনার কুনিয়াত বা ডাক নাম মুবারক হয় ‘উম্মু আব্দিল্লাহ’ তথা আব্দুল্লাহ’র মা।
উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার পিতা আফদ্বালুন্ নাস
বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু
রসূলিল্লাহ, ছিদ্দীক্বে
আকবার, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব
আলাইহিস সালাম এবং মাতা হযরত উম্মু রূমান যয়নব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বিনতে
আমির মতান্তরে উমাইর আল কিনানী। পিতার দিক দিয়ে তিনি কুরাইশ গোত্রের বনু তাইম
শাখার এবং মাতার দিক দিয়ে বনু কিনানার সন্তান।
উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার মাতা উম্মু রূমান তিনি
গনম ইবনে মালিক ইবনে কিনানার সম্মানিতা মেয়ে।
নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
এবং উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাদের বংশধারা
পিতৃকূলের দিক দিয়ে উপরের দিকে সপ্তম/অষ্টম পুরুষে মিলিত হয়েছেন এবং মাতৃকূলের দিক
দিয়ে একাদশ/দ্বাদশ পুরুষে মিলিত হয়েছেন।
উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাস্সাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত
প্রকাশের চতুর্থ বৎসর পবিত্র শাওওয়াল
মাসে বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন।
আফদ্বালুন্ নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি
সর্বপ্রথম পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সুশীতল ছায়ার নিচে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এই
সূত্রে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা
আলাইহাস সালাম তিনি সেইসব মহোত্তম ব্যক্তিত্বের অন্তর্ভুক্ত যাঁদের কান কখনও অধর্ম
ও অবিশ্বাসের আওয়াজ শ্রবণ করেননি। সুবহানাল্লাহ! এ মর্মে উম্মুল মু’মিনীন হযরত
আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি নিজেই বলেন, যখন থেকে আমি আমার সম্মানিত পিতা-মাতা উনাদেরকে চিনতে পারি, উনাদেরকে মুসলমান হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত দেখেছি। সুবহানাল্লাহ!
(বুখারী শরীফ)
স্মরণীয় যে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
প্রথম আহলিয়া উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুব্রা আলাইহাস সালাম উনাকে নিকাহ
মুবারক করার সময় নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক
দুনিয়াবী বয়স মুবারক ছিল পঁচিশ। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সাথে পঁচিশ বছর অবস্থান করার পর আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের দশম বছর ১৭ই পবিত্র
রমাদ্বান শরীফ পবিত্র হিজরত উনার তিন বছর পূর্বে উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল
কুব্রা আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। তখন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
যমীনে তাশরীফ মুবারক গ্রহণের পর থেকে বয়স মুবারক পঞ্চাশ এবং উম্মুল মু’মিনীন হযরত
খাদীজাতুল কুব্রা আলাইহাস সালাম উনার বয়স মুবারক পঁয়ষষ্ট্রি।
উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুব্রা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ
উনার পর নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে চিন্তিত দেখে উনার খালা হযরত খাওলা
বিনতে হাকীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে
আপনি আবার আহলিয়া গ্রহণ করুন। নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জানতে চাইলেন কাকে? হযরত খাওলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেন, বিধবা ও কুমারী দু’রকম পাত্রী বা সঙ্গীনি আছেন। যাকে আপনার
পছন্দ হয় উনার বিষয়ে কথা বলা যেতে পারে।
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আবার জানতে চাইলেন, উনারা কারা? হযরত খাওলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেন, বিধবা পাত্রি হলেন উম্মুল মু’মিনীন হযরত সাওদা বিনতে যামআ’
আলাইহাস সালাম, আর কুমারী যিনি
তিনি হলেন হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার মেয়ে উম্মুল মু’মিনীন হযরত
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
বললেন, বেশ ভাল। আপনি উনাদের
সম্পর্কে কথা বলুন।
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মতি পেয়ে হযরত খাওলা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা প্রথমে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার বাড়ী
এসে প্রস্তাব দেন।
জাহিলী যুগে আরবদের রীতি ছিল, তারা আপন ভাইয়ের সন্তানদের যেমন বিবাহ করতো না, তেমনি সৎ ভাই, জ্ঞাতি ভাই বা পাতানো ভাইয়ের সন্তানদের বিবাহ করা বৈধ মনে করতো না। এ কারণে
প্রস্তাবটি শুনে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে হযরত খাওলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা! হযরত ছিদ্দীক্বা
আলাইহাস সালাম তিনি তো নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভাতিজী। উনার সাথে
নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকাহ
মুবারক হবে কেমন করে? হযরত
খাওলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি ফিরে আসলেন এবং নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
নিকট বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
বললেন, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব
আলাইহিস সালাম তিনি হলেন আমার দ্বীনী ভাই অর্থাৎ ছাহাবী বা উম্মত। আর এ ধরনের
ভাইদের অর্থাৎ ছাহাবী বা উম্মতের সন্তানদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা যায়।
উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সাথে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার নিকাহ মুবারকের
প্রস্তাব আসার আগে জুবাইর ইবনে মুতইম ইবনে আদী’র (যিনি তখনও পবিত্র দ্বীন ইসলাম
উনাকে গ্রহণ করেননি) সাথে উনার বিবাহের কথা হয়েছিল। যখন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
তরফ থেকে উনার খালা হযরত খাওলা বিনতে হাকিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা যিনি
বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত উছমান বিন মাজউন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিতা
আহলিয়া ছিলেন। তিনি বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে আফদ্বালুন্ নাস্ বা’দাল আম্বিয়া হযরত
আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার বাড়ীতে গেলেন এবং এ বিষয়ে কথা বললেন।
তখন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস
সালাম তিনি হযরত মুতইম ইবনে আদী’র কাছে যেয়ে বললেন, আপনি আপনার ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিবাহের প্রস্তাব
করেছিলে। এখন আপনাদের সিদ্ধান্ত কি, বলুন। হযরত মুতইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন।
হযরত মুতইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পরিবার তখনও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে
গ্রহণ করেননি। এ কারণে উনার আহলিয়া বললেন, এ মেয়ে আমাদের ঘরে এলে আমাদের ছেলে ধর্মত্যাগী হয়ে যাবে।
আমার এ প্রস্তাবে মত নেই। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি হযরত মুতইম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মতামত জানতে চাইলেন যে, আপনার কি মত? হযরত মুতইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমার আহলিয়া যা বলেছে আমারও মত তাই।
অতঃপর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বাড়িতে ফিরে এসে হযরত খাওলা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে বললেন, আপনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে আসুন। হযরত খাওলা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে নিয়ে আসলে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার সুমহান শাদী মুবারক পড়িয়ে দিলেন।
আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত প্রকাশের দশম বৎসরের পবিত্র শাওওয়াল মাসের ২১ তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম বা সোমবার শরীফ হযরত
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার ৬ বৎসর বয়স মুবারকে
উনার সাথে শাদী মুবারক সুসম্পন্ন করেন।
উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার শাদী মুবারক উনার পর নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মাঝে প্রায়
আড়াই বছর অবস্থান করেন। অতঃপর পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত মুবারক করেন। হিজরতকালে
হযরত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনারা পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যেই অবস্থান
করছিলেন। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অবস্থা
স্বাভাবিক হলে পবিত্র হুজরা শরীফ নির্মাণ করা হয়। অতঃপর হযরত যায়েদ ইবনে হারেসা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আবু রাফি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে উরায়কাত রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনাদেরকে পবিত্র মক্কা শরীফ
উনার মধ্যে প্রেরণ করা হয়। উনারা হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত
ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পরিবারবর্গ উনাদেরকে পবিত্র মদীনা শরীফ নিয়ে
যান। অতঃপর হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বনু হারিস
ইবনে খাযরায মহল্লায় আপন পরিবারের সাথে ছয় মাস অবস্থান করেন। অতঃপর নূরেমুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে পবিত্র
হুজরা শরীফ-এ উঠিয়ে নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ মুবারক প্রকাশ করেন। মুবারক ইচ্ছা
অনুযায়ী আনছারী মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনারা হযরত ছিদ্দীক্বে
আকবর আলাইহিস সালাম উনার হুজরা শরীফে একত্রিত হয়ে আযীমুশ শান ওয়ালিমা মুবারকের
আয়োজন করেন। আর সেই মুবারক আয়োজনেই প্রথম হিজরী সনের পবিত্র শাওওয়াল মাসে হযরত
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি ৯ বছর বয়স মুবারকে হাবীবী-নববী হুজরা শরীফে তাশরীফ
মুবারক রাখেন। আর সেই তারিখ মুবারকেই উনার আযীমুশ শান উরুস মুবারক সুসম্পন্ন হয়।
সুবহানাল্লাহ!
অপর এক বর্ণনায় এসেছে, উম্মুল
মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, বিবাহের সময় আমি এক ছোট্ট মেয়ে। ‘হাওফ’ নামক এক প্রকার
পোশাক পরি। বিবাহের পর ছোট হওয়া সত্বেও আমার মধ্যে লজ্জা এসে যায়। উল্লেখ্য, ‘হাওফ’ হলো চামড়ার তৈরি এক ধরনের মূল্যবান দামী মুবারক
পোশাক।
কাজেই, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা
আলাইহাস সালাম উনাকে ৬ বছর বয়স মুবারকে শাদী মুবারক করেন এবং ৯ বছর বয়স মুবারকে
ঘরে তুলে নেন। উনার নিকাহ মুবারকে ৫০০ দিরহাম দেনমোহর ধার্য করা হয়। উনার সেই
পবিত্র নিকাহ মুবারক সম্পন্ন হয়েছিল পবিত্র শাওওয়াল মাসের ২১ তারিখ। তাই এই মুবারক
দিনটি কুল-কায়িনাতের জন্য বিশেষ রহমত, বরকত, সাকীনা ও
নাজাতের কারণ। পাশাপাশি ঈদ বা খুশি প্রকাশের দিন। এ মুবারক দিন উপলক্ষে খুশি
প্রকাশ করে মাহফিলের আয়োজন করে উনার বরকতময় সাওয়ানেহে উমরী মুবারক আলোচনা করে ইবরত
নছীহত হাছিল করা।
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি
উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার মাধমেই বাল্যবিবাহকে সুন্নত
হিসেবে সাব্যস্ত করেন। কারণ উনার আক্বদ বা নিকাহ মুবারক সম্পন্ন হয়েছে ৬ বছর বয়স
মুবারকে। মূলত, পবিত্র ২১শে শাওওয়াল শরীফ উনাকে “বাল্যবিবাহ দিবস” হিসেবেও
আখ্যায়িত করা যায়। তাই সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার ফতওয়া মুতাবিক বাল্যবিবাহের
বিরুদ্ধে বলা, বাল্যবিবাহকে কটাক্ষ করা এবং বাল্যবিবাহ রোধে আইন করা
কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
কুচক্রী যালিম ব্রিটিশ সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবেই মেয়েদের
বিয়ে বসা বা বিয়ে দেয়ার জন্য কমপক্ষে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আইন বা শর্ত করে দেয় এবং ১৮
বছর বয়সের নিচে কোনো মেয়েকে বিয়ে দেয়া, বিয়ে করা বা কোনো মেয়ের জন্য বিয়ে বসা দ-নীয় অপরাধ বলে সাব্যস্ত করে (নাঊযুবিল্লাহ); যা সম্পূর্ণরূপে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফ উনাদের খিলাফ।
এক্ষেত্রে বিশেষভাবে স্মরণীয় যে, যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজেই উম্মুল মু’মিনীন হযরত
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে ৬ বছর বয়স মুবারকে আক্বদ মুবারক করেছিলেন ও ৯ বছর
বয়স মুবারকে হুজরা শরীফ-এ তুলে নিয়েছিলেন। তাহলে কি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ
পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি এবং
উনার পিতা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ব্রিটিশদের নিয়ম-নীতি অনুযায়ী
দ-নীয় হবেন? নাঊযুবিল্লাহ্
মিন যালিক! যা কেউ কল্পনা করলেও কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে।
কুচক্রী ব্রিটিশরা স্বয়ং খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ও উম্মুল
মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে দোষী সাব্যস্ত করা এবং উনাদেরকে
দ-নীয় অপরাধে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করার জন্যই ইসলামী আইন বাতিল করে এই আইন
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার নামে চাপিয়ে দিয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! যা মানা ও বিশ্বাস
করা কাট্টা কুফরী। ব্রিটিশদের এই কুফরী আইন যদি কোনো মুসলমান মেনে নেয় তাহলে
কস্মিনকালেও সে ঈমানদার থাকতে পারে না।
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ
وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا
অর্থ: “কোনো মু’মিন নর-নারীর জন্য জায়িয হবে না, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যে ফায়ছালা করেছেন, সেই ফায়ছালার মধ্যে স্বীয় মত পেশ করা। (যে ব্যক্তি স্বীয় মত
পেশ করলো, সে নাফরমানী
করল) আর যে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার নাফরমানী করে, সে প্রকাশ্য গুমরাহীতে গুমরাহ হয়ে যাবে।” (পবিত্র সূরা আহ্যাব শরীফ: পবিত্র
আয়াত শরীফ : ৩৬)
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমল কিংবা
ফয়ছালাকৃত বিষয় সম্পর্কে বিন্দু থেকে বিন্দুতম যে চু-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করবে সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে কাট্টা কাফির ও
মুরতাদে পরিণত হবে এবং পরিণামে সে চিরজাহান্নামী হয়ে যাবে।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন
নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয় তা মহান আল্লাহ পাক তিনি পূর্ব থেকেই মনোনীত করে
রেখেছিলেন। সে সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে,
عن ام المؤمنين حضرت عائشة الصديقة عليها السلام قالت قال لى رسول الله صلى الله عليه وسلم اريتك فى المنام ثلث ليال يجيى بك الملك فى سرقة من حرير فقال لى هذه امرأتك فكشفت عن وجهك الثوب فاذا انت هى فقلت ان يكن هذا من عند الله يمضه-
অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা মুবারক করেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
আমার নিকট ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনাকে তিন রাত্রিতে স্বপ্নযোগে আমাকে দেখান হয়েছে। একজন ফেরেশতা আলাইহিস
সালাম তিনি আপনাকে রেশমী কাপড় মুবারক-এ জড়িয়ে নিয়ে আসেন এবং আমাকে বলেন, ইনি আপনার পবিত্রতম আহলিয়া আলাইহাস সালাম। তখন আমি আপনার ‘চেহারা
মুবারক’ উনার কাপড় মুবারক খুললাম। তখন দেখতে পেলাম, আপনিই। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর আমি (মনে মনে) বললাম, ইহা যদি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই পূর্ণ হবে। সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ ও
মুসলিম শরীফ)
অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি হলেন নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সবচেয়ে প্রিয়া, পছন্দনীয় ও মুহব্বতের সম্মানিতা আহলিয়া আলাইহাস সালাম। হযরত
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার পুতঃপবিত্র আখলাক বা চরিত্র মুবারক মূলতঃ তা নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট থেকে পেয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, খালিক্ব মালিক
রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার
পূত-পবিত্রা আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালামগণ উনাদের সাথে সর্বাবস্থায়ই উত্তম ব্যবহার
করতেন। উনাদেরকে সাহচর্য ও মানসিক শান্তি প্রদান করতেন। আর উম্মুল মু’মিনীন
আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের পুতঃপবিত্র আখলাক বা চরিত্র মুবারক এতো বেমেছাল থেকে
বেমেছালময় ছিলো যে, হযরত আনছার
ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের শিশুদেরকে এনে হযরত উম্মাহাতুল
মু’মিনীন তথা উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার কাছে দিতেন
আদর-সোহাগ করার জন্য। সুবহানাল্লাহ! পাশাপাশি হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার
সঙ্গে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এতো বেমেছাল তায়াল্লুক, নিছবত ও মুহব্বত ছিলো। যা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এ প্রসঙ্গে বলতে হয় যে, উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি যে পাত্র মুবারক-এ পানি
পান করতেন, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও সেই পাত্র মুবারক-এ পানি পান
করতেন। এমনকি যেখানে হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি মুখ মুবারক লাগাতেন নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও ঠিক সেখানেই মুখ মুবারক লাগাতেন।
সুবহানাল্লাহ!
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
মিসওয়াক মুবারক করতে চাইলে মিসওয়াক মুবারকটি প্রথমে হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম
উনার হাত মুবারকে দিতেন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি
নিজের মুখ মুবারক দিয়ে চিবিয়ে মোলায়েম করে দিলে অতঃপর আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা দিয়ে মিসওয়াক করতেন।
সুবহানাল্লাহ!
কাজেই এটা উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার প্রতি আখিরী
রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চূড়ান্ত পর্যায়ের
মুহব্বত মুবারক উনার নিদর্শন। রোযাদার থাকা অবস্থায় আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা
আলাইহাস সালাম উনার জানু মুবারক উনার উপর হেলান দিতেন এবং উনার মুবারক বুছা গ্রহণ
করতেন। সুবহানাল্লাহ!
আহলিয়ার সাথে খুশি করা সুন্নত সে বিষয় তালীম দেয়ার লক্ষ্যে একবার আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা
আলাইহাস সালাম উনার সঙ্গে দৌঁড় দিলেন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস
সালাম তিনি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বে
গন্তব্যস্থলে পৌঁছলেন। এর কিছুদিন পর আবার খুশি করার লক্ষ্যে দৌঁড় দিলেন। এবার
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন
হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার পূর্বে গন্তব্যস্থলে পৌঁছলেন। সুবহানাল্লাহ!
বর্ণিত রয়েছে, প্রথম দৌঁড়ে
উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার আগে যান। দ্বিতীয়বার দৌঁড়ে
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আগে যাওয়ার পর
উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন, প্রথমবারে আপনি অগ্রগামী হয়েছিলেন তাই দ্বিতীয়বারে আমি
অগ্রগামী হলাম। সুবহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যে, খালিক্ব মালিক
রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ
الْكَوْثَرَ
অর্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনাকে কাওছার
হাদিয়া করেছি।” (পবিত্র সূরা কাউছার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ- ১)
এই ‘কাওছার’ উনার লক্ষ-কোটি তাফসীর রয়েছে। এর এক তাফসীর হচ্ছে হাউজে কাওছার। আর
এর অন্য একটি তাফসীর হচ্ছে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে যা কিছু হাদিয়া করা হয়েছে সবই কাওছার বা খায়রে কাছির।
আর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ মুজাদ্দিদে আ’যম, হাবীবে আ’যম, গাউছুল আ’যম, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, কাইয়্যুমুয যামান, রঈসুল মুহাদ্দিসীন ওয়াল মুফাসসিরীন ওয়াল ফুকাহা, হাকীমুল হাদীছ, জাব্বারিউল আউয়াল, ক্বাবিউল
আউয়াল, আওলাদে রসূল, সুলতানুল ওয়াজিন, জামিউল আলক্বাব সাইয়্যিদুনা ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ
ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ‘কাওছার’ উনার তাফসীর মুবারক করেছেন- ‘কুল-কায়িনাতের
যা কিছু আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সংস্পর্শে এসেছেন
তাই ‘কাওছার’ বা ‘খায়রে কাছীর’ হয়ে গিয়েছে, তা-ই মর্যাদা-মর্তবাপূর্ণ হয়ে গিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
আলীমা, ফক্বীহা, তাওশিয়াহ, হুমায়রা উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত, ফযীলতপূর্ণ, মর্যাদাম-িত অর্থাৎ সর্বপ্রকার বুযুর্গী দিয়েই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ
পাক তিনি সৃষ্টি করেছেন। এরপর তিনি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সংস্পর্শে আসার কারণে আরো বহুগুণে
মর্যাদাবান, মর্তবাবান, ফযীলতপূর্ণ হয়েছেন। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠা হয়েছেন।
সুবহানাল্লাহ!
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক করেন,
يَا نِسَاء النَّبِيِّ
لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَاء
অর্থ: “হে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালামগণ!
আপনারা পৃথিবীর অন্য কোনো নারীদের মতো নন।” (পবিত্র সূরা আহ্যাব শরীফ: পবিত্র আয়াত
শরীফ : ৩২) অর্থাৎ আপনাদের শান, মান, ফাযায়িল-ফযীলত
মর্যাদা-মর্তবা হচ্ছে সর্বোচ্চ শিখরে। সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার হাক্বীক্বী মিছদাক্ব হচ্ছেন- আলীমা, ফক্বীহা, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে একমাত্র কুমারী ছিলেন হযরত ছিদ্দীক্বা
আলাইহাস সালাম। অতি অল্প বয়স মুবারকেই তিনি ইলমের বিভিন্ন শাখায় পা-িত্য অর্জন
করেন। অর্থাৎ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
মুবারক ছোহবত মুবারকের কারণে তিনি অল্প বয়স মুবারক-এ ইলমের বিভিন্ন শাখায় পা-িত্য
অর্জন করতে পেরেছেন। কিতাবে উল্লেখ করা হয় তিনি অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য দ্বারা
বৈশিষ্ট্যম-িত হয়েছিলেন। যেমন ১. স্মরণশক্তির আধিক্যতা। ২. পবিত্র হাদীছ শরীফ
বর্ণনার সূক্ষ্মতর জ্ঞান। ৩. পরিশুদ্ধ বাগ্মিতার অধিকারিণী। ৪. মুকছিরীন হাদীছ
বর্ণনাকারীদের অন্যতমা। ৫. সাহসী ৬. ব্যক্তিত্ববান। ৭. দয়ার্দ্র হৃদয়ের অধিকারিণী।
৮. বড় ফক্বীহা ৯. বড় মুহাদ্দিছা ১০. আরবদের সংবাদ ও বংশধারা সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী
১১. চিকিৎসা শাস্ত্রে অধিক দক্ষ ১২.
মুয়াল্লিমাতুস সাহাবীওয়াত তাবিয়ী ওয়াত তাবিয়ীন।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন
নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার সম্পর্কে বলেন,
خذوا نصف دينكم عن هذه الحميراء عليها السلام
অর্থ: “তোমরা দ্বীনের ইলম হুমায়রা তথা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার
থেকে শিক্ষা করো।” সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت أبي موسى الأشعري رضى الله تعالى عنه قال ما أشكل علينا أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم حديث قط ، فسألنا عائشة عليها السلام إلا وجدنا عندها فيه علما.
অর্থ: “হযরত আবূ মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবীগণ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম যখনই কোনো মাসয়ালায় সন্দেহ বা সমস্যায় পড়তাম, তখন আলীমা, ফক্বীহা, উম্মুল মু’মিনীন
হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলে সঠিক সমাধান বা উত্তর পেয়ে
যেতাম।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت موسى بن طلحة رضى الله تعالى عنه قال : ما رأيت أحدا أفصح من حضرت عائشة عليها السلام
অর্থ: তাবিয়ী হযরত মুসা ইবনে ত্বলহা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, ফক্বীহা, ফাছীহা, উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার অপেক্ষা সুন্দর ও নির্ভুল
ভাষ্যের অধিকারিণী আমি কাউকে দেখিনি।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
0 Comments:
Post a Comment