১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৩১ ( আওলাদে রসূল ছলাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামগণের খিদমত করার প্রতিদান )



আওলাদে রসূল ছলাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামগণের খিদমত করার প্রতিদান-পর্ব-৩১

"আনোয়ারুল আরেফীন” নামক কিতাবে হযরত রবী বিন সুলায়মান রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন যে, আমি একদিন হজ্জ যাত্রীদের সাথে হজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আমরা কুফা নামক স্থানে পৌঁছে প্রত্যেকেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করার জন্য বাজারে গেলাম। হঠাৎ বাজারের

পাশে একটি জঙ্গল আমার দৃষ্টিগোচরে আসলো। সেখানে মৃত একটি খচ্চর বা গাধা পড়ে আছে, আর জীর্ণ-শীর্ণ কাপড় পরিহিতা এক মহিলা (যাকে দেখে মনে হলো অত্যন্ত শরীফ) তিনি চাকু দিয়ে খচ্চর বা গাধার গোশত কেটে কেটে উনার থলিতে ভরছেন।

তখন আমার সন্দেহ হলো যে, মহিলাটি মৃত জন্তুর গোশত নিয়ে বাজারে বিক্রি করে কিনা? তা দেখার জন্য আমি অতি সংগোপনে উনার পিছে পিছে যেতে লাগলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর মহিলাটি একটি বাড়ির দরজার কড়া নাড়লেন, তখন জীর্ণ-শীর্ণ কাপড় পরিহিতা চারটি মেয়ে দরজা খুলে দিলেন। উনাদেরকে দেখেও মনে হলো, অত্যন্ত শরীফ বংশের লোক। মহিলাটি ঘরে প্রবেশ করে ক্রন্দনরত অবস্থায় উনাদেরকে বললেন, এ গোশতগুলো রান্না করো এবং মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করো।

আমি এ হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখে অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে সেই মহিলাকে ডাক দিয়ে বললাম, "হে মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দীগণ! আপনাদের এ হারাম গোশত খাওয়ার পিছনে কি কারণ রয়েছে? আপনারা কি মজুসী? আমার জানা মতে মজুসীদের মধ্যে একদল আছে, যারা মৃত গাধার গোশত খাওয়া জায়িয মনে করে।" এর জবাবে মহিলাটি পর্দার আড়াল থেকে বললেন, "হে অপরিচিত ব্যক্তি! আপনার হয়তো জানা নেই, আমরা হলাম নবুওওয়াতী খান্দানের লোক অর্থাৎ আওলাদে রসূল।

আমাদেরকে যিনি রক্ষণাবেক্ষণ করতেন অর্থাৎ এই মেয়েদের পিতা, তিনি গত তিন বৎসর পূর্বে ইন্তিকাল করেছেন। পরিত্যক্ত সম্পদ যা ছিল, তা শেষ হয়ে গিয়েছে। আমাদের জানা আছে যে, মৃত জন্তুর গোশত খাওয়া জায়িয নেই। কিন্তু আমরা আজ তিন দিন যাবত না খেয়ে রয়েছি, এখন আমাদের জন্য মৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া মুবাহ।"

হযরত রবী বিন সুলায়মান রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, "আমি সম্মানিতা আওলাদে রসূল উনার এই হৃদয় বিদারক ঘটনা শুনে অনেকক্ষণ কাঁদলাম। অতঃপর বললাম, "আপনারা এ সমস্ত খাদ্য দয়া করে খাবেন না। আমি খাদ্যের ব্যবস্থা করছি।" একথা বলে বাজারে গিয়ে উনাদের জন্য কাপড়-চোপড় এবং খাবার কিনে আনলাম এবং ছয়শত দিরহাম উনাদেরকে হাদিয়া স্বরূপ দিলাম। যদিও এর কারণে আমার হজ্জে যাওয়ার টাকা-পয়সা শেষ হয়ে গিয়েছে।

এগুলো পেয়ে উনারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। মহিলাটি দোয়া করলেন,

"আয় আল্লাহ পাক, হযরত রবী বিন সুলায়মান রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার আগের এবং পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করুন এবং উনাকে জান্নাত নছীব করুন।"

বড় মেয়েটি দোয়া করলেন, "আয় আল্লাহ পাক। উনার গুনাহ মাফ করে দ্বিগুণ ছাওয়াব দান করুন।"

দ্বিতীয় মেয়েটি দোয়া করলেন, "আয় আল্লাহ পাক। তিনি যা দান করেছেন, উনাকে তার চেয়ে বেশি দান করুন।"

তৃতীয় মেয়েটি দোয়া করলেন, "আয় আল্লাহ্ পাক! উনাকে আমাদের নানা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে একত্রিত হওয়ার তাওফীক দান করুন।"

এবং সবশেষে ছোট মেয়েটি বললেন, "আয় আল্লাহ পাক! তিনি আমাদের প্রতি যে ইহসান করেছেন, এজন্য উনাকে অচিরেই উত্তম জাযা দান করুন।"

অতঃপর আমি কুফায় এসে দেখলাম হাজীদের কাফেলা হজ্জের উদ্দেশ্যে চলে গিয়েছে। তখন আমি সেখানেই অবস্থান করতে থাকলাম। যথাসময়ে হাজীদের প্রত্যাবর্তনের সময় হয়ে আসলো। উনাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে দোয়া নেয়ার জন্য আমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম।

হাজীদের কাফেলা পর্যায়ক্রমে আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমি উনাদেরকে মুবারকবাদ দিচ্ছিলাম। আর উনারা প্রত্যেকেই আমাকে দেখে অবাক হয়ে বলছিলেন, আপনি কিভাবে আমাদের পূর্বেই চলে এলেন? আমরা আপনাকে তো আরাফার ময়দানে, মুযদালিফায়, মিনাতে, মদীনা শরীফে, হজ্জের প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখেছি। এমনকি একজন হাজী বললেন, "আপনি রওযা শরীফ যিয়ারত করার পর বাবে জিব্রাঈল থেকে বের হওয়ার সময় হাজীদের ভীড়ের কারণে আমার কাছে আমানতস্বরূপ এ থলেটি রেখেছিলেন। এখন আপনার থলেটি আপনি গ্রহণ করুন।" উক্ত হাজী সাহেব এমনভাবে বললেন যে, থলেটি আমাকে গ্রহণ করতেই হলো। কিন্তু ইতোপূর্বে এ থলেটি আর কখনো দেখিনি।

অতঃপর আমি বাড়িতে এসে ঘটনাগুলো ফিকির করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম। স্বপ্নে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দীদার মুবারক লাভ হলো। আমি সালাম দিয়ে উনার হস্ত মুবারক চুম্বন করলাম। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুচকি হেসে বললেন, "হে রবী বিন

সুলাইমান! তুমি যে হজ্জ করেছো, তা প্রমাণ করার জন্য আমি আর কতজন সাক্ষী পেশ করবো?" জবাবে আমি বললাম, "ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দুনিয়ার আর কেউ না জানুক আপনি তো জানেন যে, আমি এ বৎসর হজ্জ করিনি।"

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, "হ্যাঁ তুমি হজ্জে যাওনি ঠিকই; কিন্তু যখন তুমি আমার সম্মানিতা আওলাদ উনাদের খিদমত মুবারকের আনজাম দিলে, আর উনারা তোমার জন্য দোয়া করলেন, তখন আমিও উনাদের সাথে সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করলাম যেন মহান আল্লাহ পাক তোমাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করেন। এই দোয়ার কারণে মহান আল্লাহ পাক তোমার আকৃতিতে একজন ফেরেশতা সৃষ্টি করলেন। সেই ফেরেশতা তোমার পক্ষ হয়ে, তোমার আকৃতিতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত প্রতি বছর হজ্জ করবেন, আর তার ছওয়াব তোমার আমলনামায় পৌঁছতে থাকবে। আর উক্ত থলিতে তোমাকে তোমার ছয়শত রৌপ্যমুদ্রার পরিবর্তে ছয়শত স্বর্ণমুদ্রা দেয়া হয়েছে।"

অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বাক্যটি উচ্চারণ করলেন, "আমাদের সাথে যে ব্যবসা করে, সে লাভবান হয়।” সুবহানাল্লাহ!

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৩০ ( আওলাদে রসূল ছলাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনীদের প্রতি সম্মান )

আওলাদে রসূল ছলাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনীদের প্রতি সম্মান-পর্ব-৩০

একবার হযরত ইমামে আ'যম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি তা'লীম বা দর্স দিচ্ছিলেন। এমন সময় একটা বিষধর সাপ দর্সগাহে প্রবেশ করলো। সেটা হযরত ইমামে আ'যম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার দিকে এগিয়ে আসলো এবং উনার পা মুবারকে দংশন করলো। হযরত ইমামে আ'যম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি এতো অধিক হুযূরী ও আদবের সাথে পবিত্র কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফের তালীম দিতেন যে,

একটু নড়াচড়া তো করলেনই না, এমনকি উফ শব্দটা পর্যন্ত করলেন না। এদিকে সাপটা পরপর ছয়বার কামড় দিয়ে তার বিষ উনার শরীরে প্রবেশ করাতে চেষ্টা করলো, কিন্তু পারলো না। অবশেষে সপ্তমবার সে ক্ষিপ্ত হয়ে খুব জোরে কামড় দিলে, হযরত ইমামে আ'যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার শরীরের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বতের যে জযবা ছিল, সেটা সাপের শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে। ফলে সাপটা নিজেই মারা যায়। সুবহানাল্লাহ!

সেই হযরত ইমামে আ'যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকেই আরেকবার দেখা গেল, দর্স দানের সময় বারবার উঠে দাঁড়াচ্ছেন আবার বসছেন। ছাত্র এবং উপস্থিত লোকেরা এতে যারপরনাই আশ্চর্য হলেন। দর্স শেষ হলে, একজন আদবের সাথে এর কারণ জানতে চাইলেন। তখন হযরত ইমামে আ'যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন, 'তোমরা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছো যে, দর্সগাহের সামনেই কয়েকজন বাচ্চা ছুটাছুটি করছিল। তাদের মধ্যে একজন বারবার আমার কাছাকাছি চলে আসছিলেন। তিনি ছিলেন একজন আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি যখনই আমার কাছাকাছি আসছিলেন, তখনই আমি উনার সম্মানার্থে দর্স দিতে দিতেও বারবার দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলাম।' সুবহানাল্লাহ!

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধরগণের প্রতি অনুসরণীয় ইমাম মুজতাহিদগণ উনারা যেরকম আদব ইহতিরাম প্রদর্শন করেছেন তা অতুলনীয়। হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা যে, সমস্ত মুহব্বত-সন্তুষ্টি-নিয়ামতের মূল তা উনারা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-২৯ ( একজন সাইয়্যিদার সম্মান হিফাযতের পুরষ্কার )

একজন সাইয়্যিদার সম্মান হিফাযতের পুরষ্কার-পর্ব-২৯

বাগদাদ শহরে একটি খারাপ দল ছিল। তাদের কাজ ছিল খুনখারাবি, ছিনতাই, রাহাজানি, মহিলা ব্যবসা করা। নাউযুবিল্লাহ! সেই দলে ছেলে বুড়ো বুড়ি জোয়ান অনেকে মিলেই কাজ করতো বিভিন্ন রকম চুরি জোচ্চরি ডাকাতি ইত্যাদি করার জন্য। এভাবে একদিন তাদের দলের এক বুড়ি একজন মেয়েকে ধোঁকা দিয়ে আনলো। মেয়েটি যখন বুঝতে পারলেন তিনি খারাপ চক্রের পাল্লায় পড়েছেন, তখন তিনি বারবার উনাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করতে লাগলেন। বললেন, তিনি একজন আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে যেন উনার কোনো ক্ষতি না করা হয়, উনাকে মুক্ত করে দেয়া হয়।

সে দলের প্রধান ছিল খুব শক্তিশালী লোক। মেয়েটির বারবার অনুরোধ শুনে তার মনে চিন্তা জাগ্রত হলো যে সত্যিই তিনি যদি আওলাদে রসূল হন তাহলে উনার সাথে কোনো রকম বেয়াদবি করা ঠিক হবে না। তাই সে তার লোকদের বললো, মেয়েটিকে ছেড়ে দিতে। কিন্তু দলের লোকেরা ভাবলো, তাদের সর্দার বোধহয় নিজে এই মেয়েটিকে দখল করে ব্যবসা করতে চায়। নাউযুবিল্লাহ! তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নিল। এক পর্যায়ে লোকটি তার দলের একজনকে খুন করে ফেললো, নিজেও আহত হলো। এই দেখে দলের বাকিরা পালিয়ে গেল। তখন লোকটি মেয়েটিকে অনুরোধ করলো, তিনি যেন দ্রুত এখান থেকে চলে যান। কেননা দলের লোকেরা আরো সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে আসলে সে আর তাদের থামাতে পারবে না। মেয়েটি একথা শুনে তাড়াতাড়ি সে স্থান ত্যাগ করে নিরাপদ জায়গায় চলে গেলেন।

ইতিমধ্যে খবর পেয়ে পুলিশ এসে লোকটিকে গ্রেফতার করলো। লোকটিও স্বীকার করলো যে সেই খুন করেছে। তাকে জেলখানায় আটকে রাখা হলো। সেই রাতেই বাগদাদ শহরের পুলিশ কমিশনার স্বপ্নে দেখলো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক এনেছেন। তিনি তাকে বললেন, 'আজ রাতে তোমার হাজতে একজন খুনীকে গ্রেফতার করে আনা হয়েছে। তুমি অতি সত্ত্বর তাকে মুক্ত করে দাও।' পুলিশ কমিশনার তো ঘুম থেকে উঠে তড়িঘড়ি করে জেলখানায় ছুটল। খবর নিল কাকে গ্রেফতার করে আনা হয়েছে। লোকটিকে তার সামনে পেশ করতে বললো। লোকটি যখন আসলো তখন কমিশনার তার সাথে একাকী কথা বললো, সমস্ত ঘটনা জানতে চাইলো। লোকটি সব খুলে বললো। কমিশনার সব শুনে বললো, 'আপনি অতি উত্তম কাজ করেছেন। আপনার উপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এতো সন্তুষ্ট হয়ে গিয়েছেন যে, তিনি নিজে আমাকে হুকুম করেছেন আপনাকে মুক্ত করে দিতে।' সুবহানাল্লাহ! লোকটি এই কথা শুনে অনেক কাঁদলো এই ভেবে যে, তার মত এমন নিকৃষ্ট একটা লোকের জন্য স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সুপারিশ করেছেন! সে খালিছ তওবা ইস্তিগফার করলো যে, আর কখনো কোনো খারাপ কাজ করবে না। হাক্বীক্বী ঈমানদার হিসেবে জীবন কাটাবে। সত্যিই তিনি একজন হক্কানী ওলীআল্লাহ উনার নিকট বাইয়্যাত হয়ে নিজেও খালিছ আল্লাহওয়ালা হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ!

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-২৮ ( পালোয়ানদের সর্দার হয়ে গেলেন আল্লাহওয়ালাদের সর্দার )

 

পালোয়ানদের সর্দার হয়ে গেলেন আল্লাহওয়ালাদের সর্দার-পর্ব-২৮

এক বাদশাহের অধীনে একজন কুস্তিগীর ছিল, তার নাম ছিল জুনায়েদ। তাকে কেউ কখনো পরাজিত করতে পারেনি। বাদশাহ নানা দেশ থেকে কুস্তিগীরদেরকে তার সাথে লড়াই করার জন্য আমন্ত্রণ জানাতো। কিন্তু পৃথিবীর সব কুস্তিগীরকেই সে একে একে পরাজিত করলো। তখন বাদশাহ খুশি হয়ে ঘোষণা দিলো যদি কেউ তার কুস্তিগীরকে হারাতে পারে তাহলে তাকে এক লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা দেয়া হবে। অনেকে আসলো কুস্তি করতে, কিন্তু সবাই হেরে গেলো। বাদশাহ এতমিনান হলো যে, তার কুস্তিগীরই সেরা কুস্তিগীর।

একদিন একজন লোক আসলেন। উনার চেহারা সুরত দেখে উনাকে কুস্তিগীর বলে মনে হচ্ছিলো না। উনাকে সবাই কুস্তি লড়তে নিরুৎসাহিত করলো; কিন্তু তিনি বললেন, যেহেতু স্বর্ণমুদ্রা দেয়া হবে, আর কুস্তির সুযোগও দেয়া হয়েছে তাই তিনি এসেছেন। কুস্তির দিন তারিখ, স্থান ঠিক হলো। অনেক দিন পর কুস্তি হবে এ জন্য বহু লোক জমা হলো। সেই ব্যক্তি এবং বাদশাহর পালোয়ান মুখোমুখি হলেন। দেখা গেলো, কুস্তি শুরু করার পূর্বে সেই ব্যক্তি পালোয়ানের কানে কানে কিছু কথা বললেন। পালোয়ান উনার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। উনার প্রদর্শনী থেমে গেলো। এতে সবাই খুব আশ্চর্য হলো। তারপর কুস্তি শুরু হলে দেখা গেলো, সেই ব্যক্তি চোখের পলকে পালোয়ানকে মাটিতে শুইয়ে তার সিনার উপর চড়ে বসলেন, পরপর তিনবার। দেখে মনে হচ্ছিলো পালোয়ানের নড়ারও কোন ক্ষমতা নেই। সেই ব্যক্তিকে জয়ী ঘোষণা করা হলো। তিনি পুরষ্কার নিয়ে চলে গেলেন।

বাদশাহ তাজ্জব হয়ে গেলো। পালোয়ান এসে বাদশাহকে বললেন যে, তিনি আর কখনও কুস্তি করবেন না। বাদশাহ পালোয়ানকে জিজ্ঞেস করলো, সে পরাস্ত হলো কিভাবে? পালোয়ান বললেন, "আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন কুস্তি শুরু করার পূর্বে সেই ব্যক্তি আমাকে কানে কানে কিছু কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি একজন আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, অমুক স্থান থেকে এসেছেন। উনার এলাকায় তিনি প্রধান। সেখানে উনার অনেক বংশধর আছেন। উনারা অনেক সচ্ছল ছিলেন, কিন্তু ব্যবসা মন্দার কারণে অনেক ঋণ হয়ে গিয়েছে। এমতাবস্থায় উনার পরিবারের সম্মান ইজ্জত রক্ষা করা কঠিন হয়ে গিয়েছে। তিনি বাদশাহের ঘোষণা শুনে ভেবেছেন, পুরষ্কার যদি পাওয়া যায় তাহলে ঋণ পরিশোধ করে দেয়া যাবে। তিনি কোনো কুস্তিগীর নন, কখনও কুস্তি করেননি, কুস্তির নিয়মকানুনও জানেন না। তিনি বলেছেন 'হে পালোয়ান! তুমি অনেক বড় পালোয়ান এবং যুবক, আর আমার বয়স হয়েছে। তোমার এই শক্তি কিন্তু সবসময় থাকবে না। কিন্তু আমি যেহেতু আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাই তুমি যদি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে আমার কাছে পরাজিত হও, তাহলে আমি পুরস্কার পাবো আর আমাদের শত শত লোকের সম্মান রক্ষা হবে। আমরা তোমার জন্য দোয়া করবো। আর মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা তোমাকে ইহকাল ও পরকালে কামিয়াবী দিবেন; সেটাই তোমার জন্য স্থায়ী হবে।' আমি ভাবলাম, আমি কি করবো? আমার এত নাম যশ খ্যাতি! কিন্তু আসলেই এগুলো চিরস্থায়ী না। কিন্তু আমি এই ব্যক্তির সম্মানার্থে যদি পরাজিত হই, তাহলে আমার নাম যশ খ্যাতি নষ্ট হলেও মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি রেযামন্দি হাছিল করতে পারবো। তাই আমি ইচ্ছা করেই পরাজিত হয়েছি এবং আর কখনও কুস্তি করবো না।" বাদশা বললো, 'সেই ব্যক্তি যে আসলেই আওলাদে রসূল তার কোনো প্রমাণ তো তোমার কাছে ছিল না।' পালোয়ান বলল, 'না, কিন্তু আমি উনাকে বিশ্বাস করেছিলাম।'

সেই রাতে পালোয়ান স্বপ্নে দেখলো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক এনেছেন। তিনি পালোয়ানকে বললেন, 'হে জুনায়েদ! তুমি আজকে যে কাজটা করেছো; আমার সম্মানার্থে তোমার সব মান-সম্মান

বিসর্জন দিয়েছো, তাতে আমি তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়ে গেছি। সেই ব্যক্তি আসলেও আমার আওলাদ এবং ঋণগ্রস্ত। তুমি তো পালোয়ানদের সর্দার ছিলে তাই আমিও তোমাকে "সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা" অর্থাৎ আল্লাহওয়ালাদের সর্দার করে দিলাম।' সুবহানাল্লাহ! পালোয়ান ঘুম থেকে উঠে তওবা ইস্তেগফার করলেন, শুকরিয়া আদায় করলেন। বাদশাহকে জানালেন যে, তিনি ঠিক কাজই করেছিলেন। এই পালোয়ান সত্যিই পরে রিয়াজত-মাশাক্কাত করে মহান আল্লাহ পাক উনার অনেক বড় ওলী হয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-২৭ ( সূক্ষ্মদর্শী ইমাম )

সূক্ষ্মদর্শী ইমাম-পর্ব-২৭

আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বারোজন ইমামের মাঝে হযরত ইমাম মুহম্মদ তক্কী আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন নবম, তাই উনাকে হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম বলা হয়। সকলের মাঝে তিনি হযরত ইমাম মুহম্মদ জাওয়াদ আলাইহিস সালাম হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তবে উনার আসল নাম সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ আলাইহিস সালাম।

একদিন, তিনি বাগদাদের এক গলিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন কিছু বালক সেখানে খেলাধূলা করছিল। হঠাৎ তৎকালীন খলীফা মামুনুর রশীদ সে পথ দিয়ে গমন করলো, তখন সকল বালকরা (মামুনুর রশীদকে দেখে ভয়ে পথ ছেড়ে) পালিয়ে গেলো। কিন্তু হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম তিনি স্বস্থানেই দাঁড়িয়ে রইলেন। তখন উনার বয়স ছিল ৯ বছর অথবা ১৪ বছর। যাহোক, ছোট্ট এক বালক উনার এভাবে অবিচল ও নির্ভিক চিত্তে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে খলীফা মামুনুর রশীদ বালক ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম উনার কাছে আসলো। খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি মামুনুর রশীদের অন্তরে হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম উনার প্রতি মুহাব্বত ঢেলে দিলেন। তখন মামুনুর রশীদ বললো, হে বালক! কোন জিনিস আপনাকে চলে যেতে নিষেধ করলো? অর্থাৎ আমাকে দেখার সাথে সাথে অন্য সকল বালকরা দৌড়ে পালালো অথচ আপনি স্বস্থানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তার কারণ কি? হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম তিনি সাথে সাথে অতি দ্রুত জাওয়াব দিলেন, "হে আমীরুল মু'মিনীন! পথ সংকীর্ণ নয় যে, আমি সরে গিয়ে আপনার পথ প্রশস্ত করে দিবো। আর আমি কোনো অপরাধও করিনি যে আপনাকে ভয় পাবো। আপনার প্রতি আমার সুধারণা রয়েছে যে, আপনি বিনা অপরাধে কাউকে শাস্তি দেন না।" উনার কথা-বার্তা এবং উনার সুন্দর চেহারা মামুনুর রশীদকে অভিভূত করলো। তখন মামুনুর রশীদ হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলো, আপনার নাম কি? আপনার পিতার নাম কি?

তিনি বললেন, "আমি হচ্ছি মুহম্মদ ইবনে আলী রিযা আলাইহিস সালাম"। অর্থাৎ হযরত ইমাম আলী রিযা আলাইহিস সালাম উনার ছেলে মুহম্মদ তক্কী (আলাইহিস সালাম)। খলীফা উনার নাম শুনে বুঝে ফেললো যে উনার পিতা হচ্ছেন, আহলু বাইত শরীফ উনাদের অষ্টম ইমাম, হযরত আলী রিযা আলাইহিস সালাম; যিনি হযরত ইমামুছ ছামিন আলাইহিস সালাম হিসেবে সকলের নিকট সুপরিচিত। তখন মামুনুর রশীদ উনার আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে সহানুভূতি প্রকাশ করলো এবং উনার বদান্যতার বিষয় বর্ণনা করলো।

খলীফা মামুনুর রশীদের নিকট অনেক শিকারী বাজপাখি ছিল। যখন সে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম উনার কাছ থেকে চলে গেলো তখন তার একটি বাজ পাখিকে শিকারের জন্য ছেড়ে দিলো। বাজ পাখিটি অদৃশ্য হয়ে গেলো। অতঃপর বাজ পাখিটি তার চঞ্চুতে করে (থাবায় করে) সমুদ্র থেকে একটি অর্ধ জীবিত ছোট মাছ নিয়ে ফিরে আসলো। মামুনুর রশীদ এটা নিয়ে পূর্বের জায়গায় প্রত্যাবর্তন করলো। সে এসে দেখলো, বালকগুলো তখনও আগের অবস্থায়ই আছে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম তিনিও তখন পর্যন্ত তাদের কাছেই অবস্থান করছেন। (মামুনুর রশীদকে দেখে) বালকগুলো আবার ভয়ে পালিয়ে গেলো। কিন্তু ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম তিনি একইভাবে স্বস্থানে দাঁড়িয়ে রইলেন। তখন মামুনুর রশীদ হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম উনার নিকটবর্তী হলো এবং উনাকে উদ্দেশ্য করে বললো, (বলুন তো) আমার হাতে কি? জবাবে তিনি বললেন, হে আমীরুল মু'মিনীন! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কুদরতে সমুদ্রে এক প্রকার ছোট মাছ সৃষ্টি করেছেন। যেই মাছগুলো রাজা-বাদশাহ ও খলীফাদের বাজপাখীরা শিকার করে থাকে আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সদস্যগণ উনারা সে বিষয়ে সংবাদ দিয়ে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! তখন মামুনুর রশীদ বললো যে, আপনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছামিন আলাইহিস সালাম উনার যোগ্যতম আওলাদ। সুবহানাল্লাহ! তারপর মামুনুর রশীদ হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম উনাকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে নিয়ে গেলো, উনার সাথে অনেক উত্তম ব্যবহার করলো এবং উনাকে অনেক তা'যীম-তাকরীম করলো। কখনও উনার প্রতি তার উত্তম ব্যবহারে ত্রুটি ঘটেনি।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম উনার বয়স অল্প হওয়া সত্ত্বেও যখন উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মান, সম্মানিত ইলম মুবারকের পরিপূর্ণ আযমত বা শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণসমূহ ব্যাপকভাবে প্রকাশ পেলো, তখন মামুনুর রশীদ তার আওলাদ হযরত উম্মুল ফযল আলাইহাস সালাম উনাকে হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম উনার সাথে শাদী বা সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দেয়ার জন্য সংকল্প করলো এবং এ বিষয়ে দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত করলো।

তখন আব্বাসীয়রা খলীফা মামুনুর রশীদকে বাধা দিলো। মামুনুর রশীদ যখন তাদের সাথে আলোচনা করলো যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম উনাকে সে এজন্য পছন্দ করেছে যে, উনার সম্মানিত বয়স মুবারক অল্প হওয়া সত্ত্বেও তিনি সম্মানিত ইলম মুবারক, সম্মানিত মা'রিফাত মুবারক, বিচক্ষণতা ও ধৈর্য্যশীলতার দিক থেকে পরিপূর্ণ মর্যাদার অধিকারী। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম তিনি যে এই সকল সম্মানিত ছিফত মুবারক বা বৈশিষ্ট্য মুবারক উনাদের অধিকারী এ বিষয়ে তারা বিরোধীতা করলো। তখন তারা পরষ্পর ওয়াদা করলো যে, তারা এমন এক ব্যক্তিকে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম উনার নিকট প্রেরণ করবে, যে উনাকে পরীক্ষা করবে। তাই তারা হযরত ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে আকছাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে প্রেরণ করলো। আর তারা উনাকে অনেক বিষয়ের প্রতিশ্রুতি দিলো এইজন্য যে, যেন তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম উনাকে কথা দিয়ে আটকিয়ে দিতে পারেন। তারপর আব্বাসীয়রা হযরত ইয়াহইয়া ইবনে আকছাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং খিলাফতের বিশেষ ব্যক্তিদেরসহ মামুনুর রশীদের নিকট উপস্থিত হলো।

তখন মামুনুর রশীদ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম উনার জন্য একখানা বিছানা বা আসনের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিলো। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম তিনি সেখানে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নিলেন। তারপর হযরত ইয়াহইয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম উনাকে অনেক মাসয়ালা-মাসায়িল জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি অতি উত্তমভাবে সে সকল মাসয়ালা-মাসায়িলের জবাব দিলেন এবং সেগুলো ব্যাখ্যা করে হযরত ইয়াহইয়া ইবনে আকছাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বুঝিয়ে দিলেন।

হযরত ইয়াহইয়া ইবনে আকছাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, হে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম। সম্মানিত ও পবিত্র হজ্জ মুবারক উনার সময় পশু শিকার নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও সেই ইহরামকারীর ব্যাপারে আপনার কি বক্তব্য, যে ব্যক্তি কোনো শিকার হত্যা করেছে তথা পশু শিকার করেছে?

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, শিকারটিকে হেরেম শরীফের (কাবা শরীফের চারপাশের নিষিদ্ধ সীমার) বাইরে হত্যা করেছে নাকি মধ্যে? সে মাসয়ালা জানতো নাকি অজ্ঞ ছিল? ইচ্ছাকৃত হত্যা করেছে নাকি ভুলবশত? সেই ইহরামকারী গোলাম ছিল নাকি আযাদ (মুক্ত) ছিল? ছোট (নাবালেগ) ছিল নাকি বড় (বালেগ) ছিল? এটা তার প্রথম শিকার ছিল নাকি ইতিপূর্বেও সে শিকার করেছিল? শিকারটি কি পাখী ছিল নাকি অন্য কিছু? ছোট পাখী ছিল নাকি বড় পাখী? ইহরামকারী কি পুনরায় শিকার করার জেদ পোষণ করে নাকি অনুতপ্ত? এ শিকার রাতের বেলায় পাখীদের বাসা থেকে ছিল নাকি দিনের আলোয় প্রকাশ্যে? ইহরাম হজ্জের জন্যে বেঁধে ছিল নাকি উমরার জন্যে?

উনার এসব প্রশ্ন শুনে হযরত ইয়াহইয়া ইবনে আকছাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি এমনভাবে হতভম্ব হয়ে গেলেন যে, উনার চেহারার মধ্যে অপারগতা ও অক্ষমতার ভাব পরিপূর্ণরূপে ফুটে উঠলো ফলে মজলিসের

উপস্থিত সবাই ইয়াহইয়া ইবনে আকছাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার পরাজয়ের বিষয়টি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলো। সুবহানাল্লাহ!

তখন মামুনুর রশীদ হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম উনাকে বললো, আপনি অতি উত্তম জবাব মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ। আপনি যদি ইচ্ছা মুবারক করেন, তাহলে ইয়াহইয়া ইবনে আকছাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করুন। উনাকে অন্তত একটি মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করুন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম তিনি হযরত ইয়াহইয়া ইবনে আকছাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললেন, আপনি এমন ব্যক্তির ব্যাপারে কি বলেন, যে ব্যক্তি দিবসের প্রথমভাগে এক মহিলার দিকে অবৈধ দৃষ্টি দিলো। তারপর দ্বিপ্রহরের সময় উক্ত মহিলা তার জন্য হালাল হয়ে গেলো।

অতঃপর যুহরের সময় উক্ত মহিলা তার জন্য হারাম হয়ে গেলো। তারপর আছরের সময় তার জন্য সে মহিলা হালাল হয়ে গেলো। অতঃপর মাগরিবের সময় তার জন্য হারাম হয়ে গেলো। তারপর ঈশার সময় তার জন্য হালাল হয়ে গেলো। অতঃপর মধ্যরাতে তার জন্য হারাম হয়ে গেলো। তারপর ফজরের সময় তার জন্য হালাল হয়ে গেলো। জবাবে হযরত ইয়াহইয়া ইবনে আকছাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আমি জানি না। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম তিনি হযরত ইয়াহইয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, সেই মহিলা হচ্ছে দাসী।

একজন অপরিচিত ব্যক্তি শাহাওয়াতের সাথে তার দিকে দৃষ্টি দিয়েছিল, এটা তার জন্য হারাম। তারপর এ ব্যক্তি উক্ত দাসীকে দ্বিপ্রহরের সময় ক্রয় করলো, (তখন তার জন্য হালাল হয়ে গেলো) যুহরের সময় আযাদ করে দিলো, (তখন তার জন্য হারাম হয়ে গেলো) আছরের সময় তাকে বিবাহ করলো, (তখন তার জন্য হালাল হয়ে গেলো) আর মাগরিবের সময় তার সাথে জিহার করলো, (তখন তার জন্য হারাম হয়ে গেলো) ঈশার সময় কাফফারা আদায় করলো, (তখন তার জন্য হালাল হয়ে গেলো) আর মধ্যরাতে তাকে রেজ'য়ী তালাক দিলো (তখন তার জন্য হারাম হয়ে গেলো) এবং ফজরের সময় রজা'য়াত করলো তথা ফিরিয়ে নিলো। (তখন আবার হালাল হয়ে গেলো) সুবহানাল্লাহ! সেই মুহূর্তে মামুনুর রশীদ আব্বাসীয়দেরকে বললো, তোমরা যে বিষয়ে অবজ্ঞা করেছিলে, তোমরা কি তা বুঝতে পেরেছো? তারপর মামুনুর রশীদ ঐ মজলিসেই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম উনাকে বলে, আমি আমার মহাসম্মানিতা বানাত সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল ফযল আলাইহাস সালাম উনাকে আপনার নিকট সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দিতে চাই, আপনি দয়া করে কবুল করুন! সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুত তাসি' আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত সম্মতি মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর ঐ মজলিসেই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুত তাসি' মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল ফষল আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। সুবহানাল্লাহ!

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-২৬ ( জান্নাতে সরাইখানা কিনে দিতে পারেন যিনি )

     

জান্নাতে সরাইখানা কিনে দিতে পারেন যিনি-পর্ব-২৬

একবার জনৈক ব্যক্তি হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ষষ্ঠ ইমাম (ইমামুস সাদিস) হযরত ইমাম জাফর ছদিক আলাইহিস সালাম উনার কাছে এসে আরজ করলেন যে, "হুযূর! আমি হজ্জে যাচ্ছি। আপনি অনুমতি দিলে আমি আপনার কাছে আমার জীবনের সঞ্চিত অর্থ দশ হাজার দীনার দিয়ে যেতে চাই। আপনি আমার জন্য এই দীনার দিয়ে কোনো একটি সরাইখানা কিনবেন, যাতে আমি ফিরে এসে সপরিবারে তাতে বসবাস করতে পারি।" অনুমতি পেয়ে লোকটি কথা অনুযায়ী হজ্জ সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে চলে গেলো।

হজ্জ থেকে ফিরে এসে সেই ব্যক্তি হযরত ইমামুছ সাদিস আলাইহিস সালাম উনার খিদমতে হাযির হলো। সালাম কালাম পেশ করে সে ব্যক্তি উনার সামনে বসে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। হযরত ইমামুছ সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি তাকে দেখে বললেন, "আমি তোমার জন্য জান্নাতে সরাইখানা কিনেছি। যার এক সীমা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বদম মুবারকের নিচে, এক সীমা আমীরুল মু'মিনীন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার কদম মুবারকের নীচে, এক সীমা ইমামুছ ছানী সাইয়্যিদুনা হযরত হাসান আলাইহিস সালাম উনার কদম মুবারকের নিচে এবং এক সীমা ইমামুছ ছালিছ সাইয়্যিদুনা হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার কদম মুবারকের নিচে খতম (শেষ) হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! একটা কাগজে তিনি এটা লিখে দিয়ে বললেন, "এই নাও, আমি এটা লিখে দিলাম"।

লোকটি একথা শুনে বললো, "হুযূর আমি এতে অনেক খুশি।" সে লিখিত দলীল নিয়ে নিজ ঘরে ফিরে গেলো। বাড়িতে পৌঁছেই সে অসুস্থ হয়ে পড়লো। আত্মীয়-স্বজনদেরকে ওছিয়ত করলো যে, "আমার মৃত্যুর পর কাফন-দাফন শেষে এই লিখিত দলীলটি আমার সাথে কবরে আমার সীনার উপরে দিয়ে দিবে।" সত্যিই আত্মীয়-স্বজনরা লাশ দাফন করার সময় ওছিয়ত মুতাবিক সেই লিখিত দলীলটি কবরের ভিতরে সেভাবেই দিয়ে দিলো। কিন্তু পরের দিন দেখতে পেল যে, সেই কাগজে লিখিত দলীলটি কবরের উপরে পড়ে আছে। আর তার অপর পৃষ্ঠায় লিখিত রয়েছে যে, "হযরত ইমামুছ সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি যা বলেছিলেন তা সত্যে পরিণত হয়েছে। কাজেই এই দলীলটির আর প্রয়োজন নেই।" সুবহানাল্লাহ!