ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ( ১ নং )

ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলার শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” 

পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলার শরয়ী আহকাম ও  তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ খালিছ হক্ব মত-পথ তালাশ করা বা ছহীহ ও সুন্নতী আমলের মাধ্যমে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার রেজামন্দি বা সন্তুষ্টি হাছিল করা। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের ছহীহ আক্বীদা লাভ ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।  প্রসঙ্গতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলার শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক তাই।
মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন-
كنتم خير امة اخرجت للناس تامرون بالمعروف وتنهون عن المنكر وتؤمنون بالله.
অর্থ: তোমরা (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার উম্মত হওয়ার কারণে) শ্রেষ্ঠ উম্মত, তোমাদেরকে মানুষের মধ্য হতে বের করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে এবং আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি ঈমান আনবে।” (সূরা আলে ইমরান-১১০) উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের সাথে সাথে আরো একটি শর্ত যুক্ত করে দিয়েছেন। সেটা হলো- تؤمنون অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং দ্বীন সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে সঠিক ও পরিশুদ্ধ ঈমান আনা। অর্থাৎ তৎসম্পর্কে বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করা। তবেই সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের মাধ্যমে পরিপূর্ণ ফায়দা বা আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার খাছ সন্তুষ্টি লাভ করা সম্ভব হবে। স্বরণযোগ্য যে, বর্তমান বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা সম্পর্কে সত্যান্বেষী সমঝদার মুসলমানগণের মনে নানাবিধ সংশয় ও প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে।  যার ফলশ্রুতিতে  মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকার পাঠক, গ্রাহক, শুভাকাঙ্খী ও শুভানুধ্যায়ীগণ মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর আকর্ষণীয় ও নির্ভরযোগ্য বিভাগ সুওয়াল-জাওয়াববিভাগে, বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা সম্পর্কে শরীয়তের ফায়ছালা জানার জন্য অসংখ্য সুওয়াল প্রেরণ করেন। যেহেতু আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন কালামে পাকে ইরশাদ করেন-
فسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون
অর্থ: যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা হক্কানী আলিমগণের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (সূরা নহল-৪৩ ও সূরা আম্বিয়া-৭) অর্থাৎ তোমরা যারা জাননা বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা, যাঁরা জানেন, তাঁদের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।
অতএব, যাঁরা জানেন, তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব হলো- প্রশ্নকারীর প্রশ্নের শরীয়তসম্মত জাওয়াব প্রদান করা। কারণ যারা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাব প্রদান হতে বিরত থাকবে, তার জন্যে কঠিন শাস্তির কথা হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من نار.
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যাকে কোন প্রশ্ন করা হয়, সে জানা থাকা সত্ত্বেও যদি তার জাওয়াব না দেয় এবং গোপন করে রাখে তবে ক্বিয়ামত দিবসে তাকে আগুনের বেড়ি পরিয়ে দেয়া হবে।” (আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত) অন্য হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, “তার জিহ¡া আগুনের কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হবে।
কাজেই উপরোক্ত হাদীছ শরীফে যে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে বাঁচার জন্যে অর্থাৎ আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার লক্ষ্যে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকারঅগণিত পাঠক, গ্রাহক ও সত্যান্বেষী সমঝদার মুসলমানগণের প্রেরিত সুওয়ালসমূহে উল্লেখকৃত বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শরীয়তসম্মত তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে জাওয়াব বা ফতওয়া দেয়া হলো।
প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়
এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় এই যে, মূলতঃ আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খেলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে-
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احب لله وابغض واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী)
বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়” “ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলার শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়ার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো- বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা সম্পর্কে সঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়ছালা প্রদান করা এবং যারা জেনে হোক বা না জেনেই হোক বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা সম্পর্কে জনসাধারণের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং নিজেদের ও জনসাধারণের ঈমান-আমলের বিরাট ক্ষতি করছে।  তাদের সে ঈমান ও আমলের হিফাযত করা ও সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সঠিক বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যার মাধ্যমে প্রত্যেকেই তাদের ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক ইত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মুমিন অপর মুমিনের ভুল ধরিয়ে বা শুধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত। কারণ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে-
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم المؤمن مرأة المؤمن اذا رأى فيه عيبا اصلحه.
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এক মুমিন অপর মুমিনের জন্যে আয়না। যখন সে তার মধ্যে কোন দোষত্রুটি দেখবে তখন সে তাকে সংশোধন করে দিবে।” (বুখারী, আবূ দাউদ, মিশকাত)
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বীয় খিলাফতকালে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার রীতিনীতি বা আদর্শ প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সমবেত আনছার এবং মুহাজিরগণকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “যদি আমি দ্বীনের হুকুম-আহ্কামকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শরীয়তের বিরোধী কোন আদেশ প্রকাশ করি, তবে তোমরা কি করবে?” উপস্থিত লোকেরা নীরব রইল।
হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার একই কথার পূণরাবৃত্তি করলেন। তখন হযরত বশীর ইব্নে সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “যদি আপনি এরূপ করেন, তবে আমরা আপনাকে এরূপ সোজা করবো, যেরূপ তীরকে সোজা করা হয়।তখন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “তোমরাই আমার প্রকৃত বন্ধু, দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী।” (আওয়ারেফুল মাআরেফ) সুতরাং উপরোক্ত হাদীছ শরীফের আলোকে অসংখ্য, অগণিত পাঠকগণের পূণঃপূণঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে মুসলমানদের আক্বীদা ও আমল হিফাযতের লক্ষে ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল ও অন্যান্য খেলাধুলার শরয়ী ফায়সালা প্রদান করা হলো। যাতে করে সত্যান্বেষী, সমঝদার মুসলমানগণ খেলাধুলা সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্যসমূহের সঠিক শরয়ী ফায়সালা অবগত হন, যার ফলশ্রুতিতে সকলেই উক্ত আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহ থেকে নিজেদের ঈমান ও আমলের হিফাযত করে আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারেন। সুওয়ালকারীদের নাম-ঠিকানা  ১। ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ হাবিবুল হক, গুলশান, ঢাকা। ২। মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক, গুলবাগ, ঢাকা। ৩। মুহম্মদ আব্দুর রহিম, গেন্ডারিয়া, ঢাকা। ৪। মুহম্মদ আলী হায়দার, পাহাড়তলি, চট্টগ্রাম। ৫। মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান, পোর্ট কলোনী, চট্টগ্রাম। ৬। মুহম্মদ উবায়দুল আজিম, সদর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ। ৭। মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন বাবু, নূরপুর, রংপুর। ৮। মুহম্মদ হামিদুর রহমান, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম। ৯। সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুক্তাদুল ইসলাম, শিবগঞ্জ, সিলেট। ১০। মুহম্মদ আখতার হুসাইন, খালিশপুর, খুলনা। ১১। মুহম্মদ রুহুল আমীন ভূঁইয়া, দাউদকান্দি, কুমিল্লা। ১২। মুহম্মদ সোহেলুর রহমান, সদর, চাঁদপুর। ১৩। মুহম্মদ রুহুল্লাহ, বানারিপাড়া, বরিশাল। ১৪। মুহম্মদ মুবারক হুসাইন, ভোলাহাট, নবাবগঞ্জ। ১৫। মুহম্মদ তৈয়বুর রহমান, চাটখিল, নোয়াখালী।
সুওয়াল গত ৯ই জুন-২০০৬ ঈসায়ী থেকে শুরু হয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবলের অষ্টাদশ পর্ব। এতে দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাই ব্যাপকভাবে মেতে উঠেছে। বাড়িতে বাড়িতে যার যার প্রিয় দলের বিশাল বিশাল পতাকা উড়িয়েছে। পুরানো টেলিভিশন বদলে নতুন বড় টেলিভিশন কেনা এমনকি নিতান্ত গরীবদের মাঝেও জিনিসপত্র বিক্রি করে টেলিভিশন কেনার হিড়িক পড়েছে। রিক্শাওয়ালাও তার একমাত্র রিক্শা বিক্রি করে টেলিভিশন কিনেছে খেলা দেখার জন্য। এছাড়া অনেক মাওলানা নামধারীও এজন্য টিভি কিনেছে।
বিশ্বকাপ খেলা উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবেও ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। জায়গায় জায়গায় সরকারিভাবে বড় স্ক্রীনে খেলা দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবার রাজনৈতিক নেতা, পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রমূখদের পক্ষ থেকেও খেলা দেখানোর ব্যাপারে ব্যাপক সহযোগিতা করা হচ্ছে।  এমনকি অনেকে প্রিয় দলের বিজয়ে উল্লাস করে খাসি-গরু যবাই করেও খাইয়েছে। অনেকে প্রিয়দল ও প্রিয় খেলোয়াড়ের জন্য রোজা রেখেছে, দান-খয়রাত করেছে, মুনাজাত করেছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বকাপের এহেন উম্মাদনায় আলিম নামধারীরাও পিছিয়ে নেই। গত ৮ই জুন-২০০৬ ঈসায়ী দৈনিক যায়যায়দিনপত্রিকা সূত্রে জানা যায় যে, “যাত্রাবাড়ি জামিয়া ইসলামীয়া মাদ্রাসার ছাত্র জানিয়েছে, বিশ্বকাপ দেখতেই হবে, মিস করা যাবেনা।এদিকে তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা জয়নুল আবেদীন যায়যায়দিনকে জানিয়েছেন, “বিশ্বকাপ নিয়ে আমরা কোনো ফতওয়া দিতে চাইনা। ছাত্রদের এ বিষয়ে আমরা উদ্বুদ্ধও করিনা। আবার নিষেধও করিনা। এটা তাদের ইচ্ছা।এছাড়াও অনেক মসজিদের ইমাম ছাহেব, মাদ্রাসার ওস্তাদ ও অন্যান্য নামধারী আলিম-ওলামা অনেকেই টেলিভিশনের মাধ্যমেও খেলা দেখেছে এবং রাতে জেগে খেলা দেখার কারণে ফযর নামায পিছিয়ে দিয়েছে।
আবার অনেকেই খেলায় জয়লাভের কারণে খুশীও প্রকাশ করেছে, হাতে তালি দিয়েছে, এমনকি খুশি হওয়ার কারণে রং পর্যন্ত ছিটিয়েছে। বিশেষ করে কোন দুর্বল দেশ বা দল কোন কারণে হঠাৎ জয়লাভ করায় অনেকে বলেছে যে, স্বয়ং আল্লাহ্ পাক নিজ হাতে দুর্বল দেশ বা দলকে জিতিয়ে দিয়েছেন। আর কোন মুসলমান দেশ বা দলের খেলার দিন অনেকে বলেছে- ছওয়াবের নিয়তে খেলা দেখতে যাব। আর খেলা দেখার সময় দোয়া করব যাতে মুসলমান দেশ বা দল জয়লাভ করে।
স্মর্তব্য, কিছুদিন পূর্বে দৈনিক পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে, বাইতুল মুর্কারম মসজিদের খতীব উবায়দুল হক, মাসিক মদীনা পত্রিকার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ও চর্মনাইয়ের পীর ফজলুল করিম প্রমূখ মহিলা ফুটবল ও মহিলা কুস্তিকে জায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছে। তারা দলীল হিসেবে উল্লেখ করে যে, আশরাফ আলী থানভী ছাহেব তার বেহেস্তী জিওরের২৪৫ পৃষ্ঠায় এবং পাকিস্তানের মুফতী- মুফতী শফি ছাহেব, “আদাবুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকিতাবের অনুবাদে ১১ পৃষ্ঠায় ক্রিকেট, ফুটবল, হকি ইত্যাদি খেলাকে মুবাহ্ ও পছন্দনীয় বলেছে।  এখন আমাদের সুওয়াল হচ্ছে-  (১) খেলাধুলা সম্পর্কে শরীয়তের ফায়ছালা কি? অনেকে বলে, ‘কিছু কিছু খেলা জায়িয।তা কোন্ কোন্ খেলা? (২) মাঠে গিয়ে বা টিভিতে খেলা দেখা এবং খেলা দেখার জন্য টিভি কেনা কতটুকু জায়িয?  (৩)  কোন দলকে সমর্থন করা বা কোন দলের জয় কামনা করে দোয়া করা বা রোযা রাখা, হাতে তালি দেয়া, রং বা কাদাপানি ছিটানো, শুকরিয়া আদায় করা শরীয়ত সম্মত কিনা? (৪) বিশ্বকাপ ফুটবলের নামে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি ইত্যাদি দেশের সমর্থন করা, প্রশংসা করা ও পতাকা উড়ানোর ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি?  (৫) কোন দুর্বল দেশ বা দল কোন কারণে হঠাৎ জয়লাভ করায় অনেকে বলেছে যে, ‘স্বয়ং আল্লাহ্ পাক নিজ হাতে দুর্বল দেশ বা দলকে জিতিয়ে দিয়েছেন।এ কথাটি কতটুকু শরীয়ত সম্মত? (৬)  ছওয়াবের নিয়তে খেলা দেখতে যাব। আর খেলা দেখার সময় দোয়া করব যাতে মুসলমান দেশ বা দল জয়লাভ করে।এ কথাটি কতটুকু শরীয়ত সম্মত? (৭) আশরাফ আলী থানভী ও মুফতী শফীর খেলা সম্পর্কিত বক্তব্যকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করা কতটুকু সঠিক? (৮) বাইতুল মুর্কারম মসজিদের খতীব উবায়দুল হক, মাসিক মদীনা পত্রিকার সম্পাদক মাহিউদ্দীন খান ও চর্মনাইয়ের পীর ফজলুল করিম প্রমূখদের খেলা সম্পর্কিত ফতওয়া কতটুকু সঠিক?  (৯) আমরা কোন ফতওয়া দিতে চাইনা, ছাত্রদের আবার নিষেধও করিনা। এটা তাদের ইচ্ছা’- তামীরুল মিল্লাত মাদ্রাসার অধ্যক্ষের এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক?  (১০) নামধারী মাওলানাদের বিশ্বকাপ ফুটবল দেখা ও সমর্থন করা এবং এজন্য টিভি ক্রয়কারী ও রাত জেগে খেলা দেখার কারণে ফজর নামায পিছিয়ে দেয়া ইমাম ও মাওলানাদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি? তারা হক্কানী আলিম কি? তাদের পিছনে নামায পড়া জায়িয কি? দয়া করে উল্লিখিত বিষয়গুলো দলীল-আদিল্লার মাধ্যমে বিস্তারিত জাওয়াব দানে দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর ঈমান হিফাযতে সাহায্য করুন।  জাওয়াব
প্রাককথাঃ বিশ্বকাপ- বিশ্বায়নের নামে বিধর্মীকর্তৃক মুসলমানদের ঈমান ও আমল বিনষ্টকরণের ষড়যন্ত্র
মুসলমানদের ঈমান-আমল নষ্ট করে কুফরীতে নিমজ্জিত করার ক্ষেত্রে ইহুদী-খ্রীস্টানদের প্রবর্তিত বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা এক ধরনের কুটকৌশল। তাদের এ কুটকৌশলের মধুমাখা শ্লোগান হলো বিশ্বায়ন।এ বিশ্বায়নের নামে তারা বিশ্বকাপ ফুটবল, ক্রিকেট, অলিম্পিক ইত্যাদি হুজুগ দ্বারা মুসলমানদের হারাম আনন্দে ভুলিয়ে তাদের ঈমান-আমল ধ্বংস করে দিচ্ছে।
মূলতঃ যারা ইহুদী-খ্রীস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, মজুসী ও মুশরিক তারা সদাসর্বদা চেষ্টা করে থাকে, মুসলমানদেরকে কি করে ঈমান-আমল নষ্ট করে কাফিরে পরিণত করা যায়।  ইহুদী-খ্রীস্টানরা প্রতিহিংসাবশত: চায় মুসলমানদের  কাফির বানিয়ে দিতেআমল বিনষ্ট করতে। এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ود كثير من اهل الكتب لو يردونكم من بعد ايمانكم كفارا حسدا من عند انفسهم.
অর্থ: ইহুদী-নাছারা তথা আহলে কিতাবদের মধ্যে অনেকেই প্রতিহিংসাবশতঃ চায় যে, মুসলমান হওয়ার পর তোমাদের কোন রকমে কাফির বানিয়ে দিতে।” (সূরা বাক্বারা-১০৯) আরো ইরশাদ হয়েছে,
لتجدن اشد الناس عداوة للذين امنوا اليهود والذين اشركوا
অর্থ:তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।” (সূরা মায়িদা-৮২) তাই তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে থাকে, মুসলমানদেরকে ঈমান হারা করার জন্য।
যেমন একদিকে খেলার সাথে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে চেষ্টা করছে, অপরদিকে টেলিভিশনে খেলা ও হাজারো অশ্লীলতা দেখিয়ে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতি নষ্ট করছে তথা চরম পাপাচারে মত্ত করছে।
ইসলামে বিজাতীয় তর্জ-তরীক্বা গ্রহণ কুফরী
ইসলাম বহির্ভুত বিজাতীয় তর্জ-তরীক্বা, নিয়মনীতি গ্রহণ করা কোন মুসলমানের জন্য জায়িয নেই। তা কাট্টা কুফরী। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
ومن يبتغى غير الاسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الاخرة من الخسرين.
অর্থ: যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন (নিয়মনীতি, অন্য ধর্ম) তালাশ করে, তা কখনোই তার থেকে গ্রহণ করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।” (সূরা আলে ইমরান-৮৫) অর্থাৎ মুসলমানকে কোন আমল করতে হলে, বিধর্মী ও বিজাতীয় কোন পন্থা অনুসরণ করা যাবে না বা তাদের থেকে কোন নিয়মনীতি গ্রহণ করা যাবেনা। শুধুমাত্র দ্বীন ইসলামের দলীল- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস অনুযায়ী আমল করতে হবে।
 আর এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
عن جابر رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم حين اتاه عمر فقال انا نسمع احاديث من يهود تعجبنا افترا ان نكتب بعضها فقال امتهوكون انتم كما تهوكت اليهود والنصرى لقد جئتكم بها بيضاء نقية ولو كان موسى حيا ماوسعه الا اتباعى.
অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত ওমর ইবনে খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নিকট এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা ইহুদীদের থেকে তাদের কিছু ধর্মীয় কথা শুনে থাকি, যাতে আমরা আশ্চর্যবোধ করি, ওটার কিছু আমরা লিখে রাখবো কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরাও কি দ্বিধাদন্দ্বে রয়েছো? যে রকম ইহুদী নাছারারা দ্বিধাদন্দ্বে রয়েছে? অবশ্যই আমি তোমাদের নিকট পরিপূর্ণ, উজ্জ্বল ও পরিষ্কার দ্বীন নিয়ে এসেছি। হযরত মুসা আলাইহিস্ সালামও যদি দুনিয়ায় থাকতেন, তাহলে তাঁকেও আমার অনুসরণ করতে হতো।” (মুসনদে আহমদ, বায়হাক্বী, মিশকাত)
সুতরাং উক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ হতে বুঝা গেল যে, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস ছাড়া অন্য কোন বিজাতীয় পন্থার অনুসরণ করা হারাম। 
উপরোক্ত আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং তার ব্যাখ্যার দ্বারা এটাই ছাবিত হলো যে, বিজাতীয়, বিধর্মীদের কোন নিয়ম-নীতি, আমল-আখলাক ও সীরত-ছূরত কোনটাই অনুসরণ-অনুকরণ করা যাবে না। কেননা, বিধর্মীরা মূলতঃ মুসলমানদের ঈমান-আমল বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে নিত্য নতুন ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। যার একটি হলো, বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা। যা মূলতঃ বিধর্মীদেরই আবিস্কার বা তাদের উদ্ভাবিত নিয়ম-নীতি। ফুটবলের ইতিহাস ও উৎস সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোচনা করলেই বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে।
ফুটবলের আদি ইতিহাস
ফুটবল খেলার আদি নাম সু-চু। আজ হতে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে চীনে এ খেলার প্রচলন ছিলো। সুঅর্থ বলকে পা দিয়ে লাথি মারা এবং চুঅর্থ চামড়া দিয়ে তৈরী বল। জাপানে সপ্তম শতাব্দীর দিকে ফুটবল খেলাটি ক্যাসারি নামে পরিচিত ছিলো। মাত্র চৌদ্দ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে ৮ জন খেলোয়াড় হুড়োহুড়ি করে খেলতো এ খেলা। রোমদের মধ্যে এ খেলার প্রচলন করে জুলিয়াস সীজার। গ্রীকরা এর নাম দিয়েছিল অ্যাপিসকিরোস।রোমানরা একে বলতো হ্যারাপাসতুম।রাজা উইলিয়াম হেস্টিংস ১০৬৬ সালে ইংল্যান্ডে খেলাটির প্রচলন করে। ইংল্যান্ডে প্রচলিত খেলাটিতে নিয়মকানুনের কোন বালাই ছিলোনা। দুদলে প্রতিটিতে প্রায় ৫০০ জন ব্যক্তির মধ্যে দুপুরে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেলা চলত। মাঠের দৈর্ঘ্য হত প্রায় আধা মাইল। এর মধ্যে প্রায়ই রক্তারক্তি ও বীভৎসতার রূপ লাভ করত। বিপদজনক এই গণফুটবলের নাম ছিলো মিলিস কিংবা মেলাস। হিংস্র এ উম্মত্ততা ১৩১৪ সালে প্রথমবারের মত ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় এডওয়ার্ড আইন করে খেলা ইংল্যান্ডে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।  কারণ এমন বিপদজনক খেলায় বহু যুবকের জীবনাবসান ঘটত এবং বহু যুবক আহত ও পঙ্গু হত। ফলে সেনা দলে ভাল যুবকের অভাব পড়বে ভেবে এ খেলা নিষিদ্ধ করা হয়। ষোড়শ শতাব্দীতে নিয়মশৃঙ্খলা আর কুশলতার মধ্য দিয়ে ইটালিতে প্রথম ফুটবল খেলা প্রচলিত হয়। ইটালিতে এ খেলার নাম ছিল ক্যাসালিও। এ সময় এ খেলা পরিচালনা করত ইংল্যান্ডের একজন হেডমাস্টার রিচার্ড মূল কাস্টমার। যার নির্দেশে বিরোধ নিষ্পত্তি ঘটত। তিনি এ খেলার প্রশিক্ষকও বটে।
ফুটবলের নতুন যুগ
শিল্প বিপ্লবের জোয়ার শুরু হওয়ার পর ফুটবলের বর্তমান যুগের সূচনা হয়। ইংল্যান্ডের ইটন, হ্যারো ও ইউনচেস্টার প্রমূখ স্কুল ফুটবলকে একটি আধুনিক খেলা হিসেবে  সংগঠিত করে। ১৮৪৮ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বপ্রথম কিছু নিয়ম-কানুন প্রবর্তন করে। এটি কেমব্রিজ রুলস নামে খ্যাত। এ ব্যাপারে ফুটবল ইতিহাসে জে.সি থিঙ্কস-এর নাম স্মরণীয়। তিনি ১৮৬২ সালে ফুটবলের ১০টি মৌলিক আইন প্রবর্তন করেন। ফুটবলের প্রথম
১৮৫৫ সালে ইংল্যান্ডে শিফিল্ড ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব ১ম গড়ে উঠে ১৮৬৩ সালে লেদার বলনামে একটি সংগঠন প্রথম ফুটবলের রীতিনীতি প্রণয়ন করে। ১৮৬৩ সালে ডিফ্রিংগ রচিত ফুটবলের উপর প্রথম বই প্রকাশিত হয়। ১৮৭২ সালে স্কটল্যান্ড ও ইংলান্ডের মধ্যে প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। স্কটল্যান্ডের প্রাসগো  শহরে এ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।   ফিফার জন্ম ঋওঋঅ (ফিফা) ঋবফধৎধঃরড়হ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ফব ঋড়ড়ঃনধষষ ধংংড়পরধঃরড়হ ২১ মে ১৯০৪ সালে ফিফা গঠিত হয়। ফিফার বর্তমান সদস্য দেশ ২০৪টি। ফিফার স্বপ্নদ্রষ্টা দুজন ফরাসি ব্যক্তিত্ব হেনরি ডেলনে ও জুলে রিমে। ফিফার বর্তমান সদর দফতর সুইজারল্যান্ডের জুরিখে।

বিশ্বকাপ ট্রফি
বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য ২টি ট্রফি নির্মিত হয়, জুলেরিমে ও ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ট্রফি। বর্তমান বিশ্বকাপ ট্রফির নাম ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ট্রফি। জুলেরিমে ট্রফি নামকরণ করা হয় ফিফার স্বপ্নদ্রষ্টা জুলে রিমের নামানুসারে। এর নির্মাণ শৈলী ভাস্কর্যের প্রতীক মাথার উপর দুহাত উচিয়ে বিজয় গৌরবে উল্লাসিত বিজয়ের দেবী এক পরী। ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপ থেকে শুরু হয়। এই কাপের ডিজাইনার হচ্ছে ইতালির ভাস্কর শিল্পী সিলভিও গাজ্জানিগা। ১৮ ক্যারেটের ৪.৯৭ কেজি ওজনের স্বর্ণের কাপটি ৩৬ সে.মি. লম্বা, যাতে দুজন অ্যথেলেট পিঠাপিঠি করে ধরে আছেন তাদের উপর গোটা বিশ্বকে। অর্থাৎ বিশ্বকাপ উচ্চারণ হচ্ছে দুটো মূর্তির হাতের উপর বিশ্ব’- এরকম ধারণাকে আওড়ানো যা কিনা মূর্তি সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি দেয়ার নামান্তর।
বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু
১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয়। টেলিভিশনে ১৯৫৪ সালে প্রথম বিশ্বকাপ দেখানো হয়। ১৯৩০ থেকে নিয়ে ২০০২ সাল পর্যন্ত ১৭টি বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা হয়েছে। এবার হলো ১৮তম পর্ব।
বিশ্বকাপে মুসলিম দেশের ইতিহাস
১৯৩০ সালে উরুগুয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে কোন মুসলিম দেশ অংশ নেয়নি। তবে এতে অংশ গ্রহণের জন্য মুসলিম বিশ্বের উপর চলতে থাকে ইহুদী-খ্রীস্টানদের নিরন্তর প্রচেষ্টা ও প্রলোভন। সে প্রক্রিয়ায় ইতালিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বিশ্বকাপে প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে অংশ নেয় মিসর। ১৯৫৪ সালে সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত পঞ্চম বিশ্বকাপে দ্বিতীয় মুসলিম দেশ হিসেবে অংশ নেয় তুরস্ক। ১৯৭০ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে তৃতীয় মুসিলম দেশ হিসেবে আফ্রিকার মরক্কো খেলতে আসে।  প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে ১৯৮৬ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল মরক্কো। একাদশ বিশ্বকাপের আসর বসে ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনায়। ওই আসরে দুটি মুসলিম দেশ ইরান এবং তিউনিসিয়া অংশগ্রহণ করে। ইরান ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো খেলতে আসে। ১৯৮২ সালে স্পেন বিশ্বকাপে আফ্রিকার আলজেরিয়া এবং এশিয়ার কুয়েত অংশ নেয়। ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে আসে সৌদি আরব। ২০০৬ সালেও বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে ইরান, সৌদি আরব, তিউনিশিয়া প্রভূতি মুসলিম দেশ অর্থাৎ বিশ্বকাপ ফুটবল যে মুসলমানদের স্বতঃস্ফূর্ত বিষয় নয় উপরোক্ত ইতিহাসে তাই প্রমাণিত হয়। ফুটবলের উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত ইতিহাস থেকে সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ফুটবল বা এ জাতীয় সকল খেলাধুলার উদ্ভাবক হচ্ছে বিধর্মীরা। অর্থাৎ বর্তমানে প্রচলিত সমস্ত খেলাধুলাই বিধর্মীদের প্রবর্তিত নিয়মনীতি, তর্জ-তরীক্বা। যদি তাই হয়ে থাকে তবে মুসলমানদের জন্য তা অনুসরণ ও সমর্থন করা কি করে জায়েয হতে পারেএবার সুওয়ালে উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের দলীলভিত্তিক আলোচনা করা যাক।
খেলাধুলা সম্পর্কে শরীয়তের ফায়ছালা কি? অনেকে বলে, ‘কিছু কিছু খেলা জায়িয।তা কোন্ কোন্ খেলা?
এর জবাবে বলতে হয় যে, হাদীছ শরীফের বিখ্যাত কিতাব, “মুস্তাদরিকে হাকিম”-এর মধ্যে হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “সর্ব প্রকার খেলা নিষিদ্ধ তিনটি বিষয় ব্যতীত- (১) তীর ধনুক চালনা করা, (২) অশ্বকে প্রশিক্ষণ দান করা, (৩) নিজ স্ত্রীর সাথে শরীয়তসম্মত হাসি-খুশী করা।” “আবু দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসাঈ শরীফ, ইবনে মাজাহ্ শরীফইত্যাদি হাদীছ শরীফের কিতাবেও হযরত ওকবা ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে অনুরূপ হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। তবে শব্দের কিছু তারতম্য রয়েছে।  হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে রেওয়ায়েত আছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মুমিনের শ্রেষ্ঠ খেলা অর্থাৎ প্রশিক্ষণ হচ্ছে সাঁতার কাটা, আর নারীর শ্রেষ্ঠ খেলা অর্থাৎ কাজ হচ্ছে সূতা কাটা।”  “সহীহ্ মুসলিমমুসনদে আহ্মদ শরীফেহযরত সালমান ইবনে আকওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দৌড় অনুশীলনে এজাযত দিয়েছেন।” (তবে অবশ্যই খেলা হিসেবে নয় বরং জিহাদের প্রশিক্ষণ হিসেবে।) আর আবূ দাউদ শরীফেবর্ণিত আছে, “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোকনা পাহ্লোয়ানকে কুস্তিতে ধরাশায়ী করেছিলেন।” (তবে তা অবশ্যই খেলা হিসেবে নয় বরং রিসালতের প্রমাণ ও মুজিযা হিসেবে তিনি রোকনা পাহলোয়ানের সাথে কুস্তি করেছেন এবং তাকে পরাস্ত করেছেন।) প্রকৃতপক্ষে হাদীছ শরীফে তথা শরীয়তে যেসব বিষয়ের অনুমোদন রয়েছে, তা ব্যতীত যত প্রকার খেলা রয়েছে তার প্রত্যেকটির মধ্যেই, না-কোন দ্বীনী ফায়দা রয়েছে এবং না-কোন দুনিয়াবী ফায়দা রয়েছে। বরং প্রতিটি খেলা তিনটি অবস্থার কোন এক অবস্থা থেকে খালি নয়। ১. হয় তা কুফরী হবে, ২. অথবা হারাম হবে, ৩. আর না হয় তা মাকরূহ্ হবে।  (১) যে খেলা বিধর্মীদের সাথে তাশাব্বুহ্ বা সাদৃশ্য রাখে অথবা দ্বীন ইসলাম থেকে সরিয়ে দেয় বা কুফরীতে নিমজ্জিত করে তা সম্পূর্ণ কুফরী।  হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,
عن عمرو بن شعب عن ابيه عن جده ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ليس منا من تشبه بغيرنا.
অর্থ: হযরত আমর বিন শুয়াইব তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ঐ ব্যক্তি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে বিজাতীয়দের সাথে সাদৃশ্য রাখে।” (মিশকাত) (২) যে খেলা ইসলামী আক্বীদা থেকে সরিয়ে নেয়না কিন্তু হারাম ও গুণাহ্র কাজে লিপ্ত করে দেয়, তা কুফরী নয়, তবে কবীরা গুণাহ্র কারণ। অর্থাৎ হারাম। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
تعاونوا على البر والتقوى ولا تعاونوا على الاثم والعدوان
অর্থ: তোমরা পরস্পর পরস্পরকে নেক কাজ ও পরহিযগারীর মধ্যে সাহায্য কর, পাপ ও শত্রুতার মধ্যে সাহায্য করনা।” (সূরা মায়িদা-২) (৩) আর যে সমস্ত খেলা কুফরী ও হারাম কোনটিই নয় কিন্তু প্রকাশ্যে তা পাপ বলেও মনে হয়না, মানুষ সাধারণভাবে সে সমস্ত খেলাকে জায়িয মনে করে থাকে, প্রকৃতপক্ষে তাও পাপেরই অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ মাকরূহ।  এতে যেমন ইবাদত-বন্দিগীর ব্যাঘাত ঘটে এবং স্বাস্থ্য, সময় ও টাকা-পয়সার অপচয় হয়, তদ্রুপ পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষও পয়দা হয়।  এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,
ان المبذرين كانوا اخوان الشيطين.
অর্থ: নিশ্চয়ই (সর্বপ্রকার) অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।” (সূরা বণী ইসরাঈল-২৭)  আর হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
عن على بن حسين عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من حسن اسلام المرء تركه ما لايعنيه.
অর্থ: হযরত আলী ইবনে হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোন ব্যক্তির জন্য দ্বীনের সৌন্দর্য হলো অহেতুক বা অপ্রয়োজনীয় কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকা।” (তিরমিযী, মিশকাত) উল্লেখ্য যে, শরীয়তের ফতওয়া হচ্ছে- যে কাজ হারাম ও কুফরী, তাকে হালাল মনে করা কুফরী। অর্থাৎ যে হালাল মনে করবে, সে কাফির বা মুরতাদ হয়ে যাবে। আর যে কাজ হারাম ও কুফরী নয় কিন্তু পাপের কারণ, আর সে পাপকে হালকা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য মনে করা অর্থাৎ এ ধরণের পাপ করলে কিছু হয়না ইত্যাদি মনে করাটাও কুফরী। উল্লেখ্য, হাদীছ শরীফ বা শরীয়তে যে সমস্ত বিষয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, সে সমস্ত বিষয়গুলি প্রকৃতপক্ষে খেলা বলতে যা বুঝায় তার অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ হাদীছ শরীফে তীর ধনুক চালনা করা, অশ্বকে প্রশিক্ষণ দেয়া, স্ত্রীর সাথে শরীয়ত সম্মত হাসিখুশী করা, সাঁতার কাটা, সূতা কাটা, দৌড় অনুশীলন করা ইত্যাদিকে যদিও শাব্দিক অর্থে খেলা বলা হয়েছে কিন্তু হাক্বীক্বত তা খেলা নয়।  কারণ, উল্লিখিত বিষয়ের মধ্যে যেমন দ্বীনী ফায়দা রয়েছে, তেমনি দুনিয়াবী ফায়দাও নিহিত রয়েছে। যেমন- তীর চালনা করা, অশ্বকে প্রশিক্ষণ দেয়া, সাঁতার কাঁটা, দৌড় অনুশীলন ইত্যাদি জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের অন্তর্ভুক্ত এবং স্বাস্থ্যকে সুঠাম ও বলিষ্ঠ রাখার কারণ।  হাদীছ শরীফে উল্লেখ রয়েছে,
العلم علمان علم الاديان وعلم الابدان
অর্থ: ইল্ম হচ্ছে দুপ্রকার। একটি হচ্ছে দ্বীন সংক্রান্ত আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত।” (কানযুল উম্মাল)  অর্থাৎ দ্বীনী ইল্ম জরুরত আন্দাজ অর্জন করা যেরূপ ফরযের অন্তর্ভুক্ত। তদ্রুপ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ইল্ম জরুরত আন্দাজ শিক্ষা করাও ফরয। হাদীছ শরীফে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
اغتنم خمسا قبل خمس شبابك قبل هرمك وصحتك قبل سقمك وغناك قبل فقرك وحياتك قبل موتك وفراغك قبل شغلك.
অর্থ: পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিসের পূর্বে গণিমত মনে করো। (১) বৃদ্ধ হওয়ার পূর্বে যৌবনকালকে, (২) অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে, (৩) অভাবের পূর্বে স্বচ্ছলতাকে, (৪) মৃত্যুর পূর্বে হায়াতকে এবং (৫) ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়কে।” (হাকিম, বায়হাক্বী, আল্ মুনাব্বিহাত) উল্লেখ্য, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই তার স্বাস্থ্য ও সুস্থতা নিয়ামত ও গণিমত স্বরূপ, যা রক্ষা করা প্রত্যেকেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য। অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই তার যৌবন, অবসর সময়, স্বচ্ছলতা, সুস্থতা ও হায়াত এক বিশেষ নিয়ামত ও গণীমতস্বরূপ, যা শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে যথাযথভাবে ব্যবহার করা ও রক্ষা করা প্রত্যেকেরই দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভূক্ত।  আর সুতা কাঁটা মেয়েদের সাংসারিক কাজের অন্তর্ভুক্ত যা দ্বারা তাদের সংসারের আর্থিক স্বচ্ছলতাও আসে।  আর স্ত্রীর সাথে শরীয়ত সম্মত হাসি-খুশী করা, বংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যকে পূর্ণতা দান করে ও উভয়ের দ্বীন ও ঈমান হিফাযতের ও সুস্থতার কারণ হয়।        এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,
هن لباس لكم وانتم لباس لهن
অর্থ: তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের আবরণ এবং তোমরা (পুরুষরা) তাদের আবরণ।” (সূরা বাক্বারা-১৮৭) অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরের ইজ্জত-আবরু তথা দ্বীন ও ঈমান হিফাযতের কারণ।  হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضى الله تعالى عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قال ان الدنيا كلها متاع وخير المتاع الدنيا المرأة الصالحة.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই দুনিয়ার সবকিছুই সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। আর উত্তম সম্পদ হচ্ছে নেক্কার স্ত্রী।” (মুসলিম, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ) মূলকথা হলো, শরীয়তের দৃষ্টিতে বর্তমানে যেসব খেলা প্রচলিত রয়েছে যেমন, ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, ভলিবল, বেডমিন্টন, টেনিস, টেবিল টেনিস, এথলেটিক, সাঁতার, গল্ফ, বেস্বল, রাগবী, দাবা, কুস্তি, জুডো, কারাতে ইত্যাদি প্রতিযোগিতামূলক সমস্ত খেলাই পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যেই হারাম।
(২) মাঠে গিয়ে বা টিভিতে খেলা দেখা  এবং খেলা দেখার জন্য টিভি কেনা  কতটুকু জায়িয?
এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, খেলা যেহেতু শরীয়তসম্মত নয় সেহেতু  তা মাঠে গিয়ে হোক আর টিভিতে হোক সবখানেই দেখা হারাম। উপরন্তু টিভিতে খেলা দেখা বা যে কোন প্রোগ্রাম করা দেখা এবং এজন্য টিভি ক্রয়-বিক্রয় করাও সম্পূর্ণরূপে হারাম। কারণ, টিভি শুধু গানবাজনার জন্যই হারাম নয় বরং ছবি ও বেপর্দা তথা অশ্লীলতার কারণেও টিভি দেখা-রাখা, ক্রয়-বিক্রয় করা শক্ত হারাম।
টিভিতে খেলা বা অন্যান্য প্রোগ্রাম দেখার ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা
শরীয়তে টিভি দেখা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম। কারণ প্রথমত: টিভিতে জানদার প্রাণীর ছবির মাধ্যমে অনুষ্ঠান বা প্রোগ্রাম করা হয়। অথচ বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফইত্যাদি সমস্ত ছহীহ হাদীছ শরীফের কিতাবসমূহে ছবি তোলা, আঁকা, রাখা, দেখা শক্ত হারামবলে  বর্ণনা করা হয়েছে।   যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি শুনেছি, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী)
عن معاوية رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان من اشد اهل النار يوم القيامة عذابا المصورون.
অর্থ: হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে।” (মুসলিম শরীফ)
عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال ان اصحاب هذه الصور الذين يصنعونها يعذبون يوم القيمة ويقال لهم احيوا ما خلقتم.
অর্থঃ হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু  তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয় প্রাণীর ছবি তৈরীকারীদের ক্বিয়ামাতের দিন শাস্তি দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যে ছবিগুলো তৈরী করেছ তার মধ্যে প্রাণ দাও (কিন্তু তারা প্রাণ দিতে সক্ষম হবেনা)।” (নাসায়ী)
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صور صورة عذبه الله حتى ينفخ فيها يعنى الروح وليس ينافخ فيها يعنى الروح وليس ينافخ فيها.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোন প্রাণীর ছবি তৈরী করবে, আল্লাহ্ পাক তাকে ঐ ছবির মধ্যে প্রাণ না দেয়া পর্যন্ত শাস্তি দিবেন। কিন্তু সে তার মধ্যে প্রাণ দিতে সক্ষম হবে না।” (তিরমিযী শরীফ) দ্বিতীয়ত: টিভিতে বেগানা পুরুষ বেগানা মহিলাকে ও বেগানা মহিলা বেগানা পুরুষকে দেখে পুরুষ-মহিলা প্রত্যেকেই পর্দা তরক করে থাকে।  শুধু তাই নয়, খেলার সময়ও টিভিতে প্রোগ্রামে চরম বেহায়াভাবে অর্থাৎ প্রায় ক্ষেত্রেই প্রায় পোশাক ছাড়া এমনকি প্রায় ব্যাভিচাররত অবস্থারও দৃশ্য দেখানো হয়। অথচ পর্দা করা ফরযে আইন আর বেপর্দা হওয়া তথা অশ্লীলতা শক্ত কবীরা গুণাহ। কুরআন শরীফে  সূরা নিসা, সূরা নূর ও সূরা আহযাবইত্যাদি সূরাসমূহে পর্দা করার ব্যাপারে কঠোর আদেশ নির্দেশ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون. وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن ويحفظن فروجهن ولا يبدين زينتهن.
অর্থ: “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতার কারণ। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তারা যা করে তার খবর রাখেন। আর আপনি মুমিনাদেরকে বলুন, তারাও যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে ও তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর-৩০,৩১) হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن الحسن مرسلا قال بلغنى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لعن الله الناظر والمنظور اليه.
অর্থ: হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেন, আমার নিকট এই হাদীছ শরীফ পৌছেছে, যে দেখে এবং দেখায় তার প্রতি আল্লাহ পাক-এর লানত।” (বাইহাক্বী, মিশকাত) অর্থাৎ আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাক এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাদীছ শরীফ দ্বারা সরাসরি পর্দাকে ফরয করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় বরং চোখের দৃষ্টিসহ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে হিফাযত করে পর্দা করতে বলেছেন।  যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى عليه وسلم العينان زناهما النظر والاذنان زناهما الاستماع واللسان زناه الكلام واليد زنها البطش والرجل زناها الخطى والقلب يهوى ويتمنى ويصدق ذلك الفرج ويكذبه.
অর্থ: হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “চোখের ব্যভিচার হলো দৃষ্টি করা, কানের ব্যভিচার হলো শ্রবণ করা, মুখের ব্যভিচার হলো কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হলো স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হলো ধাবিত হওয়া, অন্তর চায় ও আকাঙ্খা করে এবং লজ্জাস্থান সেটাকে সত্য অথবা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে।” (বুখারী, মুসলিম, কানযুল উম্মাল) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن بريدة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعلى يا على لا تتبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليست لك الاخرة.
অর্থ: হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, দৃষ্টিকে অনুসরণ করোনা। প্রথম দৃষ্টি (যা অনিচ্ছা সত্ত্বে পতিত হয় তা) ক্ষমা করা হবে; কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না।অর্থাৎ প্রতি দৃষ্টিতে একটি কবীরা গুণাহ্ লেখা হয়ে থাকে। (আহমদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, দারিমী, মিশকাত)
অর্থাৎ যারা বেপর্দা হয়ে থাকে হাদীছ শরীফের বর্ণনা মুতাবিক তারা সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা অবৈধ কাজ তথা ব্যভিচারে মশগুল বা লিপ্ত।  পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে আরো উল্লেখ্য যে, আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,
النبى اولى بالمؤمنين من انفسهم وازواجه امهتهم.
অর্থ: আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ট এবং তাঁর আহলিয়াগণ তাদের মাতা।” (সূরা আহযাব-৬)
ما كان لكم ان تؤذوا رسول الله ولا ان تنكحوا ازواجه من بعده ابدا ان ذلكم كان عند الله عظيما.
অর্থ: আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর বেছাল শরীফের পর তাঁর আহলিয়াগণকে আক্বদ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহ পাক-এর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।”  (সূরা আহযাব-৫৩)
স্মরণীয় যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আহলিয়াগণ হচ্ছেন মুমিনগণের মাতা। যাদেরকে আক্বদ করা বা আক্বদের চিন্তা করাটাও উম্মতের জন্য হারাম ও কুফরী এবং সেটা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়ার শামীল এবং স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর কাছে গুরুতর অপরাধ অর্থাৎ কুফরী। তারপরও উম্মুল মুমিনীনগণ যে কিরূপ পর্দা করেছেন তা নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফ থেকে অনুধাবন করা যায়। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ام سلمة رضى الله تعالى عنهما انها كانت عند رسول الله صلى الله عليه وسلم وميمونة رضى الله تعالى عنهما اذ اقبل ابن ام مكتوم فدخل عليه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم احتجبا منه فقلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم اليس هو اعمى لا يبصرنا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم افعمياوان انتما الستما تبصرانه.
অর্থ: হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, একবার তিনি এবং হযরত মাইমূনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার কাছে বসা ছিলেন। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলেন অন্ধ ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল মুমিনীনগণকে বললেন, আপনারা দুজন তাঁর থেকে পর্দা করুন। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি কি অন্ধ নন? তিনি তো আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন না। উত্তরে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আপনারাও কি অন্ধ? আপনারাও কি তাঁকে দেখতে পাচ্ছেন না?” (মুসনাদে আহমদ, আবূ দাঊদ)
এখানে ফিকিরের বিষয় যে, কুরআন শরীফে যাদেরকে মুমিনগণের মাবলা হয়েছে, যাদের ব্যাপারে অন্তরে কোন প্রকার খারাপ চিন্তাও উদয় হওয়া সম্ভব নয়। তাদেরকেও পর্যন্ত আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্দা করার জন্য কঠোর তাকিদ দিয়েছেন।  তাহলে সাধারণ লোকের জন্য পর্দার কতটুকু গুরুত্ব রয়েছে তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়।  অতএবটিভি দেখা, রাখা, ক্রয় করা, বিক্রয় করা, চাই খেলা হোক বা অন্যান্য প্রোগ্রাম হোক সবই দেখা হারাম। কোন মতেই জায়িয নেই। বরং তা শক্ত হারাম ও কবীরা গুণাহ্র অন্তর্ভূক্ত।
আরো উল্লেখ্য যে, খেলা চলাকালীন সময়ে টিভিতে শুধু খেলাই দেখানো হয়না তার সাথে সাথে দেখানো হয় প্রায় পোশাক ছাড়া নর-নারীর ব্যভিচার। কাজেই খেলা দর্শণকারীরা শুধু হারাম খেলা দেখার গুনাহেই গুনাহ্গার হয়না বরং এসব ব্যভিচার দর্শণের কারণে তারা শুক্ত ব্যভিচারীর তবক্বায় পড়ে তথা গুনাহ্গার হয়।
(৩) কোন দলকে সমর্থন করা বা কোন দলের
জয় কামনা করে দোয়া করা বা রোযা রাখা, রেডিওতে খেলার খবর শোনা বা টিভিতে খেলা দেখা, খেলার খবর শুনে খুশি প্রকাশ করা, হাতে তালি দেয়া, রং বা কাদাপানি ছিটানো, শুকরিয়া আদায় করা শরীয়ত সম্মত কিনা?
এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, “কোন দলকে সমর্থন করা বা কোন দলের জয় কামনা করে দোয়া করা বা রোযা রাখা, রেডিওতে খেলার খবর শোনা বা টিভিতে খেলা দেখা, খেলার খবর শুনে খুশি প্রকাশ করা, হাতে তালি দেয়া, রং বা কাদাপানি ছিটানো, শুকরিয়া আদায় করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কুফরী। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে রয়েছে,
عن العرس بن عميرة رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال اذا عملت الخطيئة فى الارض من شهدها فكرهها كان كمن غاب عنها ومن غاب فرضيها كان كمن شهدها.
অর্থ: হযরত উরস্ বিন উমাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যখন পৃথিবীতে কোথাও কোন পাপ কাজ সংঘটিত হয়, তখন যে ব্যক্তি উক্ত স্থানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও উহাকে ঘৃণা করে, সে ব্যক্তি এরূপ যেন উহা হতে দূরে ছিল। আর যে ব্যক্তি দূরে থেকেও উক্ত পাপের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, সে এরূপ যেন তথায় উপস্থিত ছিল।” (আবূ দাউদ, মিশকাত) অর্থাৎ গুণাহ্র কাজ যে স্থানেই সংঘটিত হোক না কেন, তাতে যে ব্যক্তি সম্মতি পেশ করবে অথবা সমর্থন করবে, সে ব্যক্তিই সেই গুণাহে গুণাহ্গার হবে। সেখানে তার উপস্থিত থাকা বা না থাকা উভয়টাই বরাবর। আর সাধারণ মানুষের মধ্যে যারা শুধু রেডিওতে খেলার খবর শুনেছে, টেলিভিশনে খেলা দেখেছে, তারা সকলেই কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার হবে। এবং তাদের মধ্যেও দুশ্রেণী হবে। এক শ্রেণী- যারা হারাম ও নাজায়িয মনে করে শুনেছে ও দেখেছে, তারা ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত। আর যারা হালাল ও জায়িয মনে করে শুনেছে ও দেখেছে, তাদের উপরও কুফরীর ফতওয়া বর্তাবে। এরপর যারা খেলার সংবাদ শুনে খুশী প্রকাশ করেছে, তারা সকলেই কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার হবে। তারাও দুশ্রেণীর অন্তর্ভুক্তঃ (১) যারা হারাম ও নাজায়িয  মনে করে খুশী প্রকাশ করেছে, তারা ফাসেক হবে। আর (২) যারা হালাল ও জায়িয মনে করে শোকর আদায় করেছে ও খুশী প্রকাশ করেছে, তাদের উপরও কুফরীর ফতওয়া বর্তাবে। এছাড়া যারা রং ছিটিয়ে খুশী প্রকাশ করেছে এমনকি রং ছিটাতে গিয়ে কাদা মাটি ও নোংরা পানি পর্যন্ত ছিটিয়েছে। এরা সকলেই কবীরা গুনাহে গুনাহগার হবে। তারাও দুই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্তঃ (১) যারা হারাম ও নাজায়িজ মনে করে রং কাদামাটি ও নোংরা পানি ছিটিয়েছে তারা ফাসিক হবে। (২) যারা হালাল ও জায়িয মনে করে রং, কাদামাটি ও নোংড়াপানি ছিটিয়েছে তাদের উপর কুফরীর ফতওয়া বর্তাবে। যারা রং ছিটিয়ে খুশী প্রকাশ করেছে তাদের কাজটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলি পূজার অনুরূপ হয়েছে। যার ফলে তাদের হাশর-নশরও হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  কেননা এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছৈ
عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মুসনদে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ) এ প্রসঙ্গে হিন্দুস্থানের একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। হিন্দুস্থানে একজন জবরদস্ত আল্লাহ পাক-এর ওলী ছিলেন। যিনি ইন্তিকালের পর অন্য একজন বুযুর্গ ব্যক্তি তাঁকে স্বপে¦ দেখে জিজ্ঞেস করেন, “হে আল্লাহ পাক-এর ওলী, আপনি কেমন আছেন?”  তখন সেই আল্লাহ্ পাক-এর ওলী জাওয়াবে বলেন, “আপাততঃ আমি ভালই আছি, কিন্তু আমার উপর দিয়ে এক কঠিন সময় অতিবাহিত হয়েছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না।  তখন স্বপ¦দ্রষ্টা ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি আমাকে আপনার সেই কঠিন অবস্থা সম্পর্কে বলবেন? আল্লাহ্ পাক-এর ওলী জবাব দিলেন অবশ্যই বলবো। কারণ তাতে যমীনবাসীদের জন্য শক্ত ইবরত বা নছীহত রয়েছে। এরপর বলা শুরু করলেন, আমার ইন্তেকালের পর আমাকে ফেরেশ্তারা সরাসরি আল্লাহ্ পাক-এর সম্মুখে পেশ করেন। আল্লাহ্ পাক ফেরেশ্তাদের বললেন, “হে ফেরেশ্তাগণ তোমরা কেন তাকে এখানে নিয়ে এসেছ”? ফেরেশ্তাগণ বললেন, হে আল্লাহ্ পাক! আমরা তাকে খাছ বান্দা হিসেবে আপনার সাথে সাক্ষাত করার জন্য নিয়ে এসেছি।  একথা শুনে আল্লাহ্ পাক বললেন, “তাকে এখান থেকে নিয়ে যাও, তার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে। কেননা সে পূঁজা করেছে। সেকথা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম এবং আমার সমস্ত শরীর ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগল।  তখন আমি আল্লাহ্ পাক-এর নিকট আরজু করলাম, “আয় আল্লাহ পাক! আমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেন? আমি তো সব সময়ই আপনার এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ফরমাবরদার ছিলাম। কখনও ইচ্ছাকৃত নাফরমানি করিনি আর পূজা করার তো প্রশ্নই উঠেনা।আয় আল্লাহ পাক! পূজা তো দূরের কথা আমি কখনো মন্দিরের আশ-পাশ দিয়েও হাঁটিনি।  তখন আল্লাহ পাক বললেন, “তুমি সেদিনের কথা স্মরণ কর, যেদিন হিন্দুস্থানে হোলি পূঁজা হচ্ছিল। তুমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলে। তোমার সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নীচে আশে-পাশে সমস্ত গাছ-পালা, তরুলতা, পশু-পাখী, কীট-পতঙ্গ, বাড়ী-ঘর, সব কিছুতেই রং দেয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় তোমার সামনে দিয়ে একটি গর্দভ (গাধা) হেঁটে যাচ্ছিল যাকে রং দেয়া হয়নি। তখন তুমি পান চিবাচ্ছিলে, তুমি সেই গর্দভের গায়ে এক চিপটি পিক বা পানের রঙ্গীন রস নিক্ষেপ করে বলেছিলে- হে গর্দভ! তোমাকে তো এই হোলি পুজার দিনে কেউ রং দেয়নি তাই আমি তোমাকে রং দিয়ে দিলাম। এতে কি তোমার পুজা করা হয়নি? তুমি কি জান না যে আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনمن تشبه بقوم فهو منهم  “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।সুতরাং তোমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে। যখন আল্লাহ পাক এই কথা বললেন, তখন আমি লা জওয়াব হয়ে গেলাম এবং ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বললাম, “আয় আল্লাহ পাক! আমি তো বুঝতে পারিনি, আর আমাকে তো কেউ বুঝিয়েও দেয়নি। আমার অন্তরও সাড়া দেয়নি। হে আল্লাহ্ পাক! আমাকে আপনি দয়া করে ক্ষমা করুন।”  কিছুক্ষণ পর আল্লাহ্ পাক বললেন, “হ্যাঁ তোমাকে তোমার অন্যান্য আমলের কারণে ক্ষমা করা হলো।অতএব, মুসলমানদের জন্য বিধর্মীদের অনুসরণ করে রং ছিটানো সম্পূর্ণ কুফরী ও শিরকের অন্তর্ভুক্ত। এর থেকে বেঁচে থাকা সকলের জন্যই ফরয। আর যারা কাদা মাটি ও নোংড়া পানি ছিটিয়ে খুশী প্রকাশ করেছে তারা মুসলমানদের নিরাপত্তা নষ্ট করেছে ও তাদের কাপড় ও পয়সা ইত্যাদি নষ্ট করে আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক কষ্ট দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده.
অর্থ:হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মুসলমান ঐ ব্যক্তি যার যবান ও হাত থেকে অন্যান্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।” (তিরমিযী, নাসায়ী, বাইহাক্বী, মিশকাত) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
ايذاء المسلم كفر
অর্থ: মুসলমানদেরকে কষ্ট দেয়া কুফরী। অর্থাৎ যে মুসলমানদেরকে কষ্ট দিল সে কুফরী করল। অতএব যারা রং, কাদা মাটি ও নোংড়া পানি ছিটিয়ে হিন্দুদের হোলী পুজার অনুসরণ করল, মুসলমানদের কাপড় ও পয়সা ইত্যাদি নষ্ট করে আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক কষ্ট দিল ও মুসলমানদের নিরাপত্তা নষ্ট করল তারা অবশ্যই কুফরী করল। আর যারা কুফরী করে তারা কি করে মুসলমান থাকতে পারে। যারা খেলা দেখে খুশী হয়ে হাতে তালি দিল তারা সকলেই কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার হবে। তাদের মধ্যে দুশ্রেণী হবে। (১) যারা নাজায়েয জেনে হাতে তালি দিয়েছে তারা ফাসিকের অন্তর্ভূক্ত হবে, (২) আর যারা জায়েয মনে করে দিয়েছে তাদের উপর কুফরীর ফতওয়া বর্তাবে।
(৪) বিশ্বকাপ ফুটবলের নামে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি ইত্যাদি দেশের সমর্থন করা, প্রশংসা করা ও পতাকা উড়ানোর ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি?
এর জাওয়াবে বলতে হয় যেবিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে কোন দলকে সমর্থন করা, প্রশংসা করা ও কোন দলের পতাকা উড়ানো, চাই তা বিধর্মী দেশ হোক অথবা মুসলিম দেশ সেটা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কুফরী। কারণ, এতে প্রথমত: বিধর্মী ও ফাসিক ফুজ্জারকে সমর্থন বা মুহব্বত করা হয়। অথচ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم انه قال المرء مع من احب.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে যাকে মুহব্বত করে বা সমর্থন করবে তার হাশর-নশর তার সাথেই হবে।” (বুখারী, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)
عن انس رضى الله تعالى قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا مدح الفاسق غضب الرب تعالى واهتزله العرش.
অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ফাসিকের প্রশংসা করা হলে আল্লাহ পাক গোস্সা করেন এবং সে কারণে আরশ মুবারক কেঁপে উঠে।” (বাইহাক্বী, মিশকাত-১১৪) শুধু এতটুকুই নয় হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابراهيم بن ميسرة رحمة الله عليه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من وقر صاحب بدعة فقد اعان على هدم الاسلام.
অর্থ: তাবিয়ী হযরত ইব্রাহীম ইবনে মাইসারা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোন বিদ্য়াতী তথা ফাসিককে সম্মান করলো, সে মূলত: দ্বীন ইসলাম ধ্বংসের কাজে সাহায্য করলো।” (বাইহাক্বী, মিশকাত) কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ان شر الدواب عند الله الذين كفروا فهم لا يؤمنون.
অর্থ: নিশ্চয়ই সমস্ত প্রাণীর মাঝে আল্লাহ পাক-এর নিকট কাফিরেরাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যারা ঈমান আনেনি।” (সূরা আনফাল- ৫৫) উল্লেখ্য, কোন ফাসিক ও বিদ্য়াতীকে সম্মান করা ও প্রশংসা করার কারণে যদি আল্লাহ পাক-এর আরশ কেঁপে উঠে ও আল্লাহ পাক অসন্তুষ্ট হন এবং ইসলামের ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে তবে কাফির বা বেদ্বীন যারা আল্লাহ পাক-এর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্টপ্রাণী তাদের প্রশংসা করলে আল্লাহ পাক কতটুকু অসন্তুষ্ট হবেন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। অর্থাৎ কাফিরদের প্রশংসা করা কাট্টা কুফরী। আর পতাকা উড়ানোর ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা হচ্ছে, একদিক থেকে তা বিজাতীয়দের অনুসরণ যা শরীয়তে হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। আর অপরদিক থেকে তা চরম অপব্যয়। কারণ সারাবিশ্বে মুসলমানেরা কোটি কোটি পতাকা উড়িয়েছে। আরো নতুন নতুন পতাকা তৈরি করে উড়াচ্ছে। যা তৈরি করতে কোটি কোটি গজ কাপড় ব্যবহার হচ্ছে। যার মূল্য হিসাব করলে শত কোটি টাকার কম হবেনা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,
والذين اذا انفقوا لم يسرفوا
অর্থ: আল্লাহ পাক-এর প্রকৃত বান্দারা অর্থাৎ ঈমানদাররা যখন দান বা ব্যয় করে তখন তারা অপব্যয় বা অযথা ব্যয় করেনা।” (সূরা ফুরক্বান-৬৭) এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হযরত মুফাস্সিরীনে কিরামগণ বলেন, “আল্লাহ তায়ালার নাফরমানী ও গুণাহ্র কাজে ব্যয় করার নাম অপব্যয়। যদিও তা এক পয়সাও হয়।” (তাফসীরে মাযহারী) আর অযথা বা অনর্থক ব্যয় সরাসরি কুরআন শরীফের আয়াত শরীফের দ্বারা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,
ولا تسرفوا انه لايحب المسرفين
অর্থ: তোমরা অপব্যয় করোনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক অপব্যয়কারীকে পছন্দ করেন না।” (সূরা আনয়াম-১৪১) কারণ, অপব্যয়কারীরা হচ্ছে শয়তানের ভাই এবং তারা জাহান্নামী। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,
ان المبذرين كانوا اخوان الشيطين
অর্থ: নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই।” (সূরা বণী ইসরাঈল- ২৭)
ان المسرفين هم اصحاب النار
অর্থ: নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা জাহান্নামী।” (সূরা মুমিন-৪৩) কাজেই যারা ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ইত্যাদি বেদ্বীন, বদ্দ্বীন ও মুসলিম দেশের ফাসিক-ফুজ্জারকে সমর্থন করবে ও প্রশংসা করবে এবং তাদের সমর্থনে পতাকা উড়াবে তারা কঠিন গুণাহগার হবে এবং তাদের হাশর-নশর বেদ্বীন-বদদ্বীন ও ফাসিক ফুজ্জারদের সাথেই হবে।  কেননা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মুসনদে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)
(৫) কোন দুর্বল দেশ বা দল কোন কারণে হঠাৎ জয়লাভ করায় অনেকে বলেছে যে, ‘স্বয়ং আল্লাহ্ পাক নিজ হাতে দুর্বল দেশ বা দলকে জিতিয়ে দিয়েছেন।এ কথাটি কতটুকু শরীয়ত সম্মত?
এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, কোন দুর্বল দেশ বা দল কোন কারণে হঠাৎ জয়লাভ করার কারণে অনেকে বলেছে যে, স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজ হাতে দুর্বল দেশ বা দলকে জিতিয়ে দিয়েছেন। তাদের এ কথাটি বলাও শুদ্ধ হয়নি। বরং কুফরী হয়েছে।  কারণ আল্লাহ পাক বলেন,
تعاونوا على البر والتقوى ولا تعاونوا على الاثم والعدوان واتقوا الله ان الله شديد العقاب.
অর্থ: তোমরা পরস্পর পরস্পরকে নেক কাজ ও পরহেযগারীর মধ্যে সাহায্য কর, পাপ ও শত্রুতার মধ্যে সাহায্য করনা। (এ বিষয়) তোমরা আল্লাহ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা মায়িদা-২) উক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক নিজেই তাঁর বান্দাদেরকে পাপ কাজে সাহায্য করতে নিষেধ করেছেন। তাহলে আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজেই কি করে পাপ কাজে সাহায্য করবেন? কাজেই, যদি কেউ বলে যে, ‘আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজে পাপ কাজে বা হারাম কাজে সাহায্য করেনতাহলে সেটা কুফরী হবে। মূলতঃ আল্লাহ পাক কোন হারাম কাজে সাহায্য করেননা।
(৬) ছওয়াবের নিয়তে খেলা দেখতে যাব। আর খেলা দেখার সময় দোয়া করব যাতে মুসলমান দেশ বা দল জয়লাভ করে।এ কথাটিইবা কতটুকু শরীয়ত সম্মত?
এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, কোন মুসলমান দেশ বা দলের খেলার দিন অনেকে বলেছে, ছওয়াবের নিয়তে খেলা দেখতে যাব আর খেলা দেখার সময় দোয়া করব যাতে মুসলমান দেশ বা দল জয়লাভ করে। একথা বলাও শুদ্ধ হয়নি। বরং কুফরী হয়েছে।  কেননা, শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম কাজের জন্য দোয়া করা যেরূপ হারাম ও কুফরী তদ্রুপ হারাম কাজে মশগুল ব্যক্তি বা দলের জন্যও দোয়া করা হারাম। এর প্রমাণ হাদীছ শরীফেই রয়েছে। যেমন, ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن عمرو رضى الله تعالى عنه قال مر رجل وعليه ثوبان احمران فسلم على النبى صلى الله عليه وسلم فلم يرد عليه النبى صلى الله عليه وسلم السلام.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা লাল বর্ণের দুটি কাপড় (ইযার ও চাদর) পরিহিত এক ব্যক্তি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে সালাম দিল। কিন্তু হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সালামের জাওয়াব দেননি।” (তিরমিযী, আবূ দাউদ, মিশকাত, নাইলুল আওতার) উক্ত হাদীছ শরীফদ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে, পুরুষদের জন্য লাল কাপড় পরিধান করা নিষেধ বা হারাম। আর হারাম কাজে মশগুল এমন ব্যক্তির সালামের জাওয়াব দেয়াও নিষেধ। উল্লেখ্য,  ‘সালামহচ্ছে একজন মুসলমানের তরফ থেকে আরেকজন মুসলমানের প্রতি সাধারণভাবে দোয়াস্বরূপ। এখন এই সাধারণ দোয়াটাই যদি হারাম আমলকারী ব্যক্তির জন্য দেয়া বা করা নিষেধ হয় অর্থাৎ সালামের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও হারামে মশগুল থাকার কারণে যদি ওয়াজিব সাকেত হয়ে যায় তাহলে খেলাধুলার মত এত বড় হারাম কাজে মশগুল ব্যক্তিদের জন্যে দোয়া করা কত বড় গুনাহ্র কাজ তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।  শরীয়তের মাসয়ালা হলো, হারাম কাজে মশগুল ব্যক্তির হারাম কাজে তরক্কীর জন্য দোয়া করা কুফরী। কাজেই যেখানে হারাম কাজে মশগুল ব্যক্তিকে সালাম দেয়া বা তার সালামের জাওয়াব দেয়া নিষেধ সেখানে ফুটবল বা খেলাধুলার ন্যায় হারাম কাজে মশগুল ব্যক্তি বা দলের জন্য দোয়া করা কস্মিনকালেও জায়িয হতে পারেনা। মূলত: তা সম্পূর্ণই হারাম ও কবীরাহ গুনাহ্ এবং ক্ষেত্র বিশেষে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।  তাই যারা নাজায়িয, হারাম ও কুফরী কাজ করেছে, তাদের প্রত্যেকের জন্যই উচিত এ থেকে খালিছ তওবা করা এবং ভবিষ্যতে না করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া।
(৭) আশরাফ আলী থানভী ও মুফতী শফির  খেলা সম্পর্কিত বক্তব্যকে দলীল হিসেবে  উল্লেখ করা কতটুকু সঠিক?
এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, যারা আশরাফ আলী থানভী ছাহেবের বেহেস্তী জিওরেরএবং মুফ্তী শফি ছাহেবের অনুবাদকৃত আদাবুন্ নবীকিতাবের বরাত দিয়ে ফুটবল, ক্রিকেট, হকিসহ এ সমস্ত খেলাকে মুবাহ বা পছন্দনীয় সাব্যস্ত করতে চায়, তা তাদের কুট উদ্দেশ্য বলেই গণ্য হবে, যা হারাম ও কুফরীর নামান্তর। কেননা কোন ব্যক্তি বিশেষকে চাই আশরাফ আলী থানভী ছাহেব হোক বা মুফ্তী শফি ছাহেব হোক অথবা অন্য কাউকে শরীয়ত দলীল হিসেবে সাব্যস্ত করেনা। অর্থাৎ আশরাফ আলী থানভী ছাহেব ও মুফ্তী শফি ছাহেব কোন বিষয়ে জায়িয ফতওয়া দিলেই তা জায়িয হবে অথবা নাজায়িয ফতওয়া দিলেই তা নাজায়িয হবে, তা শরীয়তের কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। বরং শরীয়তের দলীল হচ্ছে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ ও তার আলোকে ইজ্মা ও ক্বিয়াস। আশরাফ আলী থানভী ছাহেব ও মুফ্তী শফি ছাহেব তাদের উল্লিখিত কিতাবদ্বয়ে ফুটবল, হকি ও ক্রিকেট খেলাকে মুবাহ্ ও পছন্দনীয় বলেছে, তবে তারা তার আগে ও পরে কিছু শর্ত শারায়েতও উল্লেখ করেছে। সে সমস্ত শর্ত শারায়েতের কারণে কোন প্রকার খেলাই কস্মিনকালেও জায়িয হতে পারেনা, যা শরীয়ত নিষেধ করেছে। আশরাফ আলী থানভী ছাহেবের প্রদত্ত শর্তগুলি হলোঃ (১) সময় নষ্ট, (২) পয়সা নষ্ট, (৩) কাজ নষ্ট, (৪) নামাজ ক্বাজা, (৫) ছতর খোলা, (৬) কুসংসর্গে মেশা ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকতে পারলে মুবাহ্ হবে। আর মুফ্তী শফি ছাহেবের প্রদত্ত শর্তগুলি হলোঃ (১) ফরজ তরক, (২) হারামে পতিত ও (৩) কাফেরদের নির্ধারিত নিয়মাবলীর মধ্যে খেলা ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকতে পারলে মুবাহ্ বা পছন্দনীয় হবে।  মূলতঃ এসব খেলাতে উপরোক্ত শর্ত সমূহের কোন কোনটা থেকে যদিও বেঁচে থাকা সম্ভব হয়, কিন্তু সময় নষ্ট, বিধর্মীদের নিয়মনীতি অনুসরণ, স্বাস্থ্য নষ্ট, পয়সা নষ্ট, কাজ নষ্ট ইত্যাদি শর্ত থেকে বেঁচে থাকা কখনই সম্ভব হবেনা।  এরপরেও বলতে হয় যে, উপরোক্ত শর্ত-শারায়েত দিয়ে উল্লিখিত খেলা সমূহকে মুবাহ্ বা পছন্দনীয় বলে উল্লেখ করাটা আশরাফ আলী থানভী ছাহেব এবং মুফ্তী শফি ছাহেবের জন্যও সঠিক হয়নি।  কেননা তাদের এ ফতওয়ার কারণে অনেকেই ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় হারামের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আর অনেকেই হারামকে হালাল করার পায়তারা করছে। অথচ তাদের উল্লিখিত শর্ত-শারায়েত ছাড়াও খেলা হারাম হওয়া সম্পর্কে আরো অনেক কারণ উল্লেখ করেছেন অন্যান্য ইমাম-মুজ্তাহিদগণ। যেমনঃ (১) স্বাস্থ্য নষ্ট হয়, (২) খেলায় প্রতিযোগীতা থাকে, (৩) বাজি ধরে, (৪) পরস্পরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পয়দা হয়, (৫) খেলার কারণে সমাজে ফিৎনার সৃষ্টি হয়, (৬) বেদ্বীন ও বদ্দ্বীনী আমল করে, (৭) রং ছিটাছিটি করে, (৮) বেপর্দা হয়, (৯) সমাজ ও দেশ-বিদেশের লোকেরা হারাম কাজে মশগুল হয়,  (১০) হারাম কাজে উৎসাহিত করে, (১১) বাহবা দেয়, (১২) হাতে তালি দেয়, (১৩) অভিনন্দন জানায়, (১৪) আর্থিক সহযোগীতা করে, (১৫) খুশী প্রকাশ করে, (১৬) হারামকে হালাল বলে, (১৭) ঈমান নষ্ট করে, (১৮) বিধর্মীদের অনুসরন করে, (১৯) টেলিভিশন দেখে, (২০) মারামারি কাটাকাটি করে, (২১) খুন খারাবি করে ও (২২) রক্ত প্রবাহিত করে ইত্যাদি। উল্লেখ্য, কোন হারামকে শর্ত সাপেক্ষে মোবাহ বলে ফতওয়া দেয়ার অর্থ হলো হারামকে হালাল বলে সাব্যস্ত করার নামান্তর। যা শক্ত গুনাহ্র অন্তর্ভুক্ত। এখন অনেকে বলতে পারে যে, “শরীয়তে মৃত গরু, ছাগল, বকরী, ভেড়া ইত্যাদি খাওয়া নাজায়িয। কিন্ত যদি কেউ তিন দিন না খেয়ে থাকে তাহলে তার জন্য জরুরত আন্দাজ উল্লিখিত মৃত প্রাণীর গোশ্ত খাওয়া মুবাহ। তাহলে কি এখানে এ ফতওয়ার দ্বারা হারামকে হালাল বলে সাব্যস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে? কেননা এখানেও শর্ত দিয়ে মৃত প্রাণীর গোশ্ত খাওয়াকে মোবাহ্ বলা হয়েছে।
এর জাওয়াব হচ্ছে, প্রাণ বা জান রক্ষা করা হচ্ছে ফরজ। আর প্রাণ রক্ষা করার জন্য খাদ্য গ্রহণ করা বা খাওয়াও ফরজ। সুতরাং প্রাণ রক্ষা করার জন্য যদি কেউ হালাল খাদ্যের ব্যবস্থা করতে না পারে এমতাবস্থায় তিনদিন অতীত হয়ে যায়।
অর্থাৎ তিনদিন অনাহারে কেটে যায় অথচ ফরজ পরিমাণ খাদ্য সে সংগ্রহ করতে পারল না, তখন সে মাজুর হয়ে যায় এবং তখনই তার জন্য অর্থাৎ এই মাজুরের জন্য হারাম মোবাহ হয়ে যায়। শরীয়তের দৃষ্টিতে মাজুর ঐ ব্যক্তি যাকে জীবন রক্ষা বা ফরয-ওয়াজিব পালন করার পূর্ব শর্ত হিসেবে শরীয়তের খেলাফ কোন কাজ অনিচ্ছাসত্ত্বেও করতে হয়। আর এ সমস্ত খেলাধুলা কারো জন্য ফরজ-ওয়াজিব নয় এবং এ সমস্ত খেলাধুলার জন্য কোন ব্যক্তি কখনই মাজুরও হয় না।  কাজেই কোন ব্যক্তি যদি কোন বিষয় মাজুর না হয় তাহলে  তার জন্য শর্ত শারায়েতের কি প্রয়োজন থাকতে পারে? যেহেতু হাদীছ শরীফে এ সমস্ত খেলাধুলাকে সরাসরি হারাম বলে ফতওয়া দেয়া হয়েছে। তবে যারা ফক্বীহ তারা এ সমস্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে খেলাধুলা কেন হারাম বলা হয়েছে তার কিছু কারণ প্রত্যেকেই তার আক্বল অনুযায়ী উল্লেখ করেছেন। সেজন্য এর অর্থ এটা নয় যে, এ সমস্ত কারণগুলো দুরীভূত হলেই উক্ত খেলাধুলা জায়েয হয়ে যাবে। কারণ ইমাম-মুজতাহিদ বা ফক্বীহগণ যে সমস্ত কারণ উল্লেখ করেছেন, তাছাড়া আরো শত সহস্র কারণ রয়েছে।   যেমন আল্লাহ পাক বলেন
وما اوتيتم من العلم الا قليلا
অর্থ:তোমাদেরকে অল্প জ্ঞান ব্যতীত দেয়া হয়নি। (সূরা বণী ইসরাঈল-৮৫) অর্থাৎ মানুষকে যেহেতু অল্প ইল্ম দেয়া হয়েছে সেহেতু মানুষ যে কারণ বর্ণনা করবে তা অবশ্যই অল্প হবে। আর আল্লাহ পাক-এর ইল্ম যেহেতু অসীম সেহেতু আল্লাহ্ পাক-এর সমস্ত কারণ জানা রয়েছে। তাই আল্লাহ পাক এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেলা হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন।  যেহেতু উক্ত খেলাধুলা হাদীছ শরীফে হারাম ফতওয়া দেয়া হয়েছে তাই তা বিনা শর্ত শারায়েতেই হারাম। কারণ হাদীছ শরীফে মুবাহ্ হওয়ার জন্য কোন শর্ত শারায়েত উল্লেখ করা হয়নি।
অতএব, হাদীছ শরীফে যে সকল বিষয় জায়িয বলে উল্লেখ করা হয়েছে তা ব্যতীত অন্য কোন খেলা ও তার অনুরূপ কোন বিষয় কস্মিনকালেও জায়েয, মুবাহ্ বা পছন্দনীয় হতে পারেনা। আর উপরোল্লিখিত সমস্ত প্রকার খেলাই বিধর্মী, বিজাতী ও বেদ্বীনদের দ্বারা প্রবর্তিত। এছাড়া বর্তমানে সমস্ত প্রকার খেলাই আন্তর্জাতিক বা জাতীয় অথবা সামাজিক বা ব্যক্তিগত পর্যায় বা উদ্যোগেই হোক না কেন তা অবশ্যই বিধর্মীদের নির্ধারিত নিয়মাবলীর মাধ্যমেই হয়ে থাকে। যদিও স্থান ও ক্ষেত্রবিশেষে কিছু নিয়ম পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয়ে থাকে।  যারা উল্লিখিত খেলাসমূহকে ব্যায়াম হিসেবে উল্লেখ করতে চায়, তাদের সম্পর্কে হাফিজে হাদীছ, বাহ্রুল উলুম, ফখরুল ফুক্বাহা, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, তাজুল মুফাস্সিরীন, মুফ্তীয়ে আযম, মুবাহিসে আযম, পীরে কামিলে মুকাম্মিল, শাহ্ সূফী, হযরত মাওলানা মুহম্মদ রুহুল আমীন বশীরহাটি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
জায়িয কাজ দ্বারা যখন ব্যায়াম করার উপায় আছে, তখন নাজায়েয কাজের দ্বারা কিরূপে জায়েয হবে? খেলার প্রতিযোগীতা করলে কি ফল হবে? কিন্তু লাঠি, তীর ছোড়া, তরবারী ভাঁজা, ঘোড়-দৌড় ইত্যাদিতে শত্রুদের হস্ত হতে কতকটা নিষ্কৃতি লাভের উপায় হতে পারে। পক্ষান্তরে খেলাতে এই প্রকার কোন লাভ হতে পারে না। বরং ওটা খাঁটি খেলবাজি ভিন্ন আর কিছুই নয়। কাজেই ওটা কিছুতেই জায়িয হতে পারে না। কেবল দুনিয়াদার স্বার্থপর আলেম দুএকজন ওটা জায়েয হওয়ার ফতওয়া দিয়েছেন। তাদের ফতওয়া কিছুতেই গ্রহণীয় হতে পারে না। (ফতওয়ায়ে আমিনিয়া) অতএব, ফুটবল, ক্রিকেট, হকি ইত্যাদি সম্পর্কিত থানবী ও শফি ছাহেবের বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে ভুল ও দলীলবিহীন, তাই তাদের উক্ত বক্তব্য দলীল হিসেবে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বরং শরীয়তের ফায়ছালা হলো, প্রত্যেক প্রকার খেলাই নাজায়িয ও হারাম।
(৮) বাইতুল মুর্কারম মসজিদের খতীব উবায়দুল হক, মাসিক মদীনা পত্রিকার সম্পাদক মাহিউদ্দীন খান ও চর্মনাইয়ের  পীর ফজলুল করিম প্রমূখদের খেলা সম্পর্কিত ফতওয়া কতটুকু সঠিক?
এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, মহিলা ফুটবল ও মহিলা কুস্তি সম্পর্কিত খতীব উবায়দুল হক্ব, মাহিউদ্দীন খান ও চর্মনাইয়ের পীর ফজলুল করিমের খেলা সম্পর্কিত ফতওয়া মোটেও সঠিক ও শরীয়তসম্মত হয়নি। কারণ, শরীয়তের দৃষ্টিতে যেখানে পুরুষের জন্য ফুটবল ও কুস্তি প্রতিযোগিতা জায়িয নেই সেখানে মহিলাদের জন্য তা জায়িয হয় কিভাবে? কাজেই যারা মহিলা ফুটবল ও কুস্তিকে জায়িয ফতওয়া দিয়েছে তারা কাট্টা কুফরী করেছে।  স্মর্তব্য, খতীব উবায়দুল হক, মাহিউদ্দীন খান ও চর্মনাইয়ের পীর ফজলুল করিম তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কোন দলীল পেশ করেনি বা করতে পারেনি। অথচ বিনা দলীলে বা দলীলবিহীন কোন কথাই শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।  কেননা, কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
هاتوا برهانكم ان كنتم صدقين
অর্থ: তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক তবে দলীল পেশ কর।” (সূরা বাক্বারা-১১১ ) কাজেই বিনা দলীলে মহিলা ফুটবল ও কুস্তিকে জায়িয বলে তারা যে শুধু কুফরী করেছে তা নয়। উপরন্তু তাদের ফতওয়ার কারণে যারা এ সম্পর্কিত হারাম কাজে মশগুল হবে তাদের সকলের গুনাহই যারা ভুল ফতওয়া দিয়েছে তাদের উপরও বর্তাবে। কেননা, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من افتى بغير علم كان اثمه على من افتاه.
অর্থ: হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তিকে ইলম্ ব্যতীত ফতওয়া দেয়া হয়েছে (এবং সে তদনুযায়ী আমল করেছে) তার গুনাহ যে তাকে ফতওয়া দিয়েছে তার উপরই বর্তাবে।” (আবু দাউদ, মিশকাত)
(৯)  আমরা কোন ফতওয়া দিতে চাইনা, ছাত্রদের আবার নিষেধও করিনা। এটা তাদের ইচ্ছা’- তামীরুল মিল্লাত মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বক্তব্য কতটুকু সঠিক?
এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, “তামীরুল মিল্লাত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ফুটবলসম্পর্কে ফতওয়া দিবনা এবং ছাত্রদেরকে নিষেধও করবো না”- একথা বলে বোবা শয়তান ও আমানতের খেয়ানতকারী হিসেবে নিজেকে সাব্যস্ত করেছে। কেননা, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
الساكت عن الحق فهو شيطان اخرس
অর্থ: হক্ব কথা বলা থেকে যে বিরত থাকে সে বোবা শয়তান।” (মিশকাত) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من نار.
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যাকে কোন প্রশ্ন করা হয়, সে জানা থাকা সত্ত্বেও যদি তার জাওয়াব না দেয় এবং গোপন করে রাখে তবে ক্বিয়ামত দিবসে তাকে আগুনের বেড়ি পরিয়ে দেয়া হবে।” (আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول كلكم راع وكلكم مسئول عن رعيته.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি শুনেছি যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং প্রত্যেকেই তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” (বুখারী, মুসলিম) কাজেই মাদ্রাসার ছাত্ররা যেহেতু শিক্ষকের অধীন এবং ছাত্রদের পরিচালনার দায়িত্বভার শিক্ষকদের হাতে তাই ফুটবলইত্যাদি খেলা সম্পর্কে ছাত্রদের নিষেধ না করা বা ছাত্রদের ইখতিয়ারে দিয়ে দেয়া অবশ্যই আমানতের খেয়ানতের শামীল যা সুস্পষ্ট হারাম ও কবীরা গুনাহ্র অন্তর্ভুক্ত।
(১০)  নামধারী মাওলানাদের বিশ্বকাপ ফুটবল দেখা ও সমর্থন করা এবং এজন্য টিভি ক্রয়কারী ও রাত জেগে খেলা দেখার কারণে ফজর নামায পিছিয়ে দেয়া ইমাম ও মাওলানাদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি? তারা হক্কানী আলিম কি? তাদের পিছনে নামায পড়া জায়িয কি?
এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, উল্লিখিত মাওলানাসহ যে সকল মাওলানারা খেলা দেখে, সমর্থন করে এবং এজন্য টিভি ক্রয় করে এবং রাত জেগে খেলা দেখার কারণে ফজর নামায পিছিয়ে দেয় তারা কস্মিনকালেও হক্কানী আলিম নয় বরং উলামায়ে ছূবা দুনিয়াদার আলিম। তাদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা হলো, তারা যদি তা হারাম জেনে করে থাকে তবে তারা চরম ফাসিক তথা উলামায়ে ছূ। আর যদি হালাল জেনে করে থাকে তবে তারা মুরতাদের অন্তর্ভুক্ত। তাদের পিছনে নামায পড়ার হুকুম হলো, যে সমস্ত মাওলানারা হারামকে হালাল মনে করে তাদের পিছনে নামায পড়া সম্পূর্ণ হারাম। তাদের ইমাম হিসেবে নিয়োগ করাও হারাম। আর যারা হারামকে হারাম জেনে আমল করে তারা চরম ফাসিক।  ফাসিকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। উক্ত নামায দোহরায়ে পড়া ওয়াজিব।
তথাকথিত মাওলানা, মৌলভী, মসজিদের ইমাম ও  আলিমদের কর্তৃক খেলা দেখা ও দেখতে উৎসাহিত করা, সমর্থন করা এবং দোয়া করা প্রসঙ্গঃ
যে সমস্ত মাওলানা, মৌলভী, মসজিদের ইমাম ছাহেব খেলার জন্য দোয়া করেছে, বাহবা দিয়েছে, অভিনন্দন জানিয়েছে, উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছে, টেলিভিশনে দেখেছে, তার সংবাদ শুনে বা জেনে রং, কাদা-মাটি বা নোংরা পানি ইত্যাদি ছিটিয়ে খুশী প্রকাশ করেছে তারা কেউই হক্কানী আলিম নয়। বরং তারা হচ্ছে উলামায়ে ছূর অন্তর্ভুক্ত।
শরীয়তে হক্কানী আলিমের পরিচয়
আলিম হওয়ার জন্য প্রথমত: শর্ত হলো ঈমান দ্বিতীয়ত: শর্ত হলো তাক্বওয়া। তৃতীয়ত: শর্ত হলো অর্জিত ইলম্ অনুযায়ী আমল। যেমন এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ان اولياء الله لا خوف عليهم ولاهم يحزنون الذين امنوا وكانوا يتقون.
অর্থ: নিশ্চয়ই ওলীআল্লাহ তথা আলিমগণের কোন ভয় নেই এবং তাঁদের কোন চিন্তাও নেই। তাঁদের পরিচয় হচ্ছে যারা ঈমান এনেছেন এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করেছেন।” (সূরা ইউনুস-৬২, ৬৩) অর্থাৎ এখানে ওলীআল্লাহ বা আলিম হওয়ার জন্য ঈমান আনাকে প্রথম শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত: আলিম ঐ ব্যক্তিই যার অন্তরে তাক্বওয়া বা খোদাভীতি রয়েছে। অর্থাৎ যিনি আল্লাহ পাক-এর ভয়ে হারাম, নাজায়িয কাজ থেকে বিরত থাকেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
انما يخش الله من عباده العلماء
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ পাক-এর বান্দাদের মধ্য হতে শুধুমাত্র আলিমগণই আল্লাহ পাককে ভয় করেন।” (সূরা ফাতির-২৮) তৃতীয়তঃ ঐ ব্যক্তিই হাক্বীক্বী আলিম যিনি অর্জিত ইলম্ অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن سفيان ان عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه قال لكعب من ارباب العلم قال الذين يعملون بما يعلمون قال فما اخرج  العلم من قلوب العلماء قال الطمع.
অর্থ: হযরত সুফীয়ান ছওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত কাব ইবনুল আহ্বার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন, আলিম কে? তিনি উত্তরে বললেন, যাঁরা ইল্ম অনুযায়ী আমল করেন। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পুণরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোন্ জিনিস আলিমদের অন্তর থেকে ইল্মকে বের করে দেয়? তিনি উত্তরে বললেন, লোভ অর্থাৎ দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা।” (দারিমী, মিশকাত) বিশিষ্ট তাবিয়ী, ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ইমাম হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলো- আলিম কে? তিনি জবাবে বলেন,
انما الفقيه الزاهد فى الدنيا والراغب الى الاخرة والبصير بذنبه والمداوم على عبادة ربه والورع والكف عن اعرض المسلمين والعفيف عن اموالهم والناصح لجماعتهم.
অর্থ: ফক্বীহ্ বা আলিম হলো ঐ ব্যক্তি, যে দুনিয়া হতে বিরাগ, পরকালের প্রতি ঝুঁকে আছেন, গুণাহের প্রতি সতর্ক, সর্বদা মহান আল্লাহ্ পাক-এর ইবাদতে মশগুল, পরহিযগার বা সুন্নতের পাবন্দ, মুসলমানের মান-সম্মান নষ্ট করেন না, তাদের সম্পদের প্রতি লোভ করেন না এবং তাঁর অধীনস্থদেরকে নছীহত করেন।” (হিল্ইয়াতুল আওলিয়া) উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেলো, আলিম হওয়ার জন্য প্রথমত: শর্ত হলো ঈমান আনা। দ্বিতীয়ত: শর্ত হলো তাক্বওয়া অবলম্বন করা। তৃতীয়ত: শর্ত হলো অর্জিত ইলম্ অনুযায়ী আমল করা। আর উল্লিখিত যে সমস্ত মাওলানা, মৌলভী, মসজিদের ইমাম ছাহেব খেলার জন্য দোয়া করেছে, বাহবা দিয়েছে, অভিনন্দন জানিয়েছে, উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছে, টেলিভিশনে দেখেছে, তার সংবাদ শুনে বা জেনে রং, কাদা-মাটি বা নোংরা পানি ইত্যাদি ছিটিয়ে খুশী প্রকাশ করেছে তারা কেউই হক্কানী আলিম নয়। বরং তারা হচ্ছে উলামায়ে ছূর অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের উলামায়ে ছূদের ব্যাপারেই হাদীছ শরীফে আখিরী রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
عن انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ويل لامتى من علماء السوء يتخذون هذا العلم تجارة يبعونها من امراء زمانهم ربحا لانفسهم لااربح الله تجارتهم.
অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, উলামায়ে ছূদের কারণে আমার উম্মতের ক্ষতিসাধন হবে অর্থাৎ জাহান্নামী হবে। তারা ইল্মকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করতঃ তাদের যুগের শাসকদের নিকট থেকে অর্থ ও পদ লাভের প্রচেষ্টা চালাবে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সকল উলামায়ে ছূদের বিরুদ্ধে এই বলে বদ্দোয়া করেন যে, “আয় আল্লাহ পাক! যারা নিজেদের ইল্ম দ্বারা দুনিয়াবী সরকারের সাথে ব্যবসা করতে চায় তাদের ব্যবসায় বরকত দিবেন না।” (কানযুল উম্মাল) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن زياد بن حدير رحمة الله عليه قال قال لى عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه هل تعرف ما يهدم الاسلام قال قلت لا قال يهدمه زلة العالم وجدال المنافق بالكتاب وحكم الائمة المضلين
অর্থ: হযরত যিয়াদ বিন হুদাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, আমাকে হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেনতুমি কি জান কোন্ জিনিস ইসলামকে ধ্বংস করে? আমি বললাম- না, আমি জানিনা। তখন তিনি বললেন, ইসলামকে ধ্বংস করে আলিমের পদস্খলন, মুনাফিকদের কিতাব সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক এবং গোমরাহ শাসকদের আদেশ-নির্দেশ।” (দারিমী, মিশকাত)। হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ রয়েছে,
عن ابى سعيد الخدرى رضى الله تعالى عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من راى منكم منكرا فليغيره بيده فان لم يستطع فبلسانه فان لم يستطع فبقلبه وذلك اضعف الايمان.
অর্থ: হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অন্যায় কাজ সংঘটিত হতে দেখে, সে যেন তা হাত দ্বারা বাঁধা দেয়। যদি সে হাত দিয়ে বাঁধা দিতে না পারে, তাহলে সে যেন তা জবান দ্বারা বাধা দেয়। যদি জবানের দ্বারাও বাঁধা দিতে না পারে, তাহলে অন্তরে যেন সে পাপকে ঘৃণা করে। আর এটাই সবচেয়ে দূর্বল ঈমানের পরিচয়।” (মুসলিম, মিশকাত)
عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ليس وراء ذالك من الايمان حبة خردل.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এরপর ঈমানের আর শস্য পরিমাণও বাকি থাকেনা।”  (মুসলিম) উপরোক্ত হাদীছ শরীফ থেকে প্রমাণিত হলো যে, যারা পাপ কাজে বাঁধা দেয়না, বিরত থাকতে বলেনা এবং পাপকে ঘৃণাও করেনা তাদের মূলতঃ ঈমান নেই।  অতএব, যারা উল্লিখিত খেলাসমূহ হারাম জানা সত্ত্বেও চাকুরীর ভয়ে, মসজিদ কমিটি বা মুছল্লীদের চাপে অনিচ্ছাসত্ত্বেও অথবা ব্যক্তিগত স্বার্থে বা দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে দোয়া করেছে, বাহবা দিয়েছে, অভিনন্দন জানিয়েছে, উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছে, খেলার খবর ও ধারাবিবরণী রেডিওতে শুনেছে অথবা টেলিভিশনে দেখেছে, তার সংবাদ শুনে বা জেনে রং, কাদা-মাটি বা নোংরা পানি ইত্যাদি ছিটিয়ে খুশী প্রকাশ করেছে অথবা শুধু খুশী প্রকাশ করেছে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তারা ফাসেকের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ও দূর্বল ঈমানের পরিচয় দিয়েছে। তাদের উচিত ছিল মুছল্লীদেরকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া যে, এ সমস্ত খেলা হারাম। এতে তাদেরও ঈমান হিফাযত হতো এবং মুছল্লীদেরও ঈমান হিফাযত হতো।  শরীয়ত ইমামের জন্য নেককার হওয়ার শর্ত দিয়েছে। কোন ফাসিক ব্যক্তিকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ করা মাকরূহ বলে ফতওয়া দিয়েছে। কাজেই উক্ত ইমামকে উল্লিখিত হারাম কাজ থেকে খালিছ ইস্তিগফার-তওবা করতে হবে। এরপর নামায পড়াবে। কারণ ফাসিকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ।  অর্থাৎ মুছল্লীগণ বা মুক্তাদীগণ ফাসিক ইমামের পিছনে নামায আদায় করলে নামাযের পরিপূর্ণ ফায়দা হাছিল করতে পারবে না। সেজন্য নামায দোহরানো ওয়াজিব।  কাজেই উক্ত ইমাম ছাহেব যদি তওবা ইস্তিগফার না করে তাহলে মুছল্লীদের ফায়দার জন্য উক্ত ইমাম ছাহেবকে অব্যহতি দিয়ে অন্য কোন নেককার, পরহিযগার ও আল্লাহ্ওয়ালা ইমাম নিয়োগ করা কমিটি ও মুছল্লীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। অন্যথায় সকলেই ফাসিকী গুণাহ্ েগুণাহ্গার হবে। দ্বিতীয়তঃ যারা এটাকে হালাল মনে করে দোয়া করেছে, বাহবা দিয়েছে, অভিনন্দন জানিয়েছে, উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছে, খেলার খবর ও ধারাবিবরণী রেডিওতে শুনেছে অথবা টেলিভিশনে দেখেছে, তার সংবাদ শুনে বা জেনে রং, কাদা-মাটি বা নোংরা পানি ইত্যাদি ছিটিয়ে খুশী প্রকাশ করেছে অথবা শুধু খুশী প্রকাশ করেছে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের উপর কুফরীর ফতওয়া বর্তাবে। কারণ তারা কুফরী করেছে। শরীয়ত ইমামের জন্য ঈমানদার হওয়ার শর্ত দিয়েছে। কোন কাফির ব্যক্তিকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ করা জায়িয নেই। কাফিরের পিছনে নামায আদায় করলে নামায আদায় হবে না।  কাজেই যে সমস্ত ইমাম ছাহেব উল্লিখিত হারাম খেলাধুলাকে হালাল বলেছে অথবা দোয়া করেছে অথবা তাতে খুশী প্রকাশ করেছে অথবা খেলোয়াড় বা তৎসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে বাহবা দিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে উৎসাহিত বা অনুপ্রাণিত করেছে তাদের পিছনে নামায পড়লে নামায জায়িয হবে না। কেননা শরীয়তের মাসয়ালা হলো- হারামকে হালাল এবং হালালকে হারাম বললে, হারাম কাজে খুশী প্রকাশ করলে, হারাম কাজগুলিকে হালাল মনে করে সাহায্য-সহযোগীতা ও সমর্থন করলে বা হারাম কাজে বাহবা দিলে বা অভিনন্দন জানালে বা হারাম কাজে উৎসাহিত বা অনুপ্রাণিত করলে কুফরী হয়। যারা কুফরী করে তারা মুরতাদ হয়ে যায়। আর শরীয়তে মুরতাদের ফায়সালা হলো, তার স্ত্রী তালাক হবে যদি বিয়ে করে থাকে এবং এক্ষেত্রে পূনরায় তওবা না করে, বিয়ে না দোহরানো ব্যতীত তার স্ত্রীর সাথে বসবাস করা বৈধ হবেনা। আর এ অবৈধ অবস্থায় সন্তান হলে সে সন্তানও অবৈধ হবে। হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে যদি হজ্জ করে থাকে, সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে, তার ওয়ারিশসত্ব বাতিল হবে। তাকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য এবং যদি তওবা করে, তবে ক্ষমা করা হবে। অন্যথায় তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদ-। কেননা হাদীছ শরীফে রয়েছে, তিন কারণে মৃত্যুদ- দেয়া জায়িয। যথা- ১. ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে। ২. ঐ জিনাকার বা জিনাকারিনী, যারা বিবাহিত বা বিবাহিতা। ৩. যে অন্যায়ভাবে কাউকে ক্বতল করে, তাকে।  আর মুরতাদ মারা যাবার পর যারা জানাযার নামায পড়ে বা পড়ায় বা জানাযার নামাযে সাহায্য-সহযোগীতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সকল মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানগণের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। এমনকি মুসলমানের ন্যায়ও দাফন করা যাবেনা।  বরং তাকে কুকুরের ন্যায় একটি গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে।  উল্লেখ্য, যে সমস্ত ইমাম ছাহেবরা কুফরী করেছে তারা যদি খালিছ ইস্তিগফার-তওবা করে কুফরী থেকে ফিরে আসে তাহলে তাদের পিছনে নামায আদায় করলে নামায জায়িয হবে। অন্যথায় এ সমস্ত ইমাম ছাহেবদের অব্যহতি দিয়ে নেক্কার, পরহিজগার ও আল্লাহওয়ালা ইমাম ছাহেব নিয়োগ করা কমিটি ও মুছল্লীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।  কারণ উক্ত ইমামের পিছনে যারাই নামায পড়বে তাদের কারো নামাযই হবে না।  কাজেই কমিটি ও মুছল্লী সকলেই হারাম ও কুফরী গুণাহে গুণাহ্গার হবে। উল্লেখ্য, যে সকল মাওলানা, মৌলভী ও ইমাম ছাহেব খেলা সম্পর্কিত বিষয়ে সাধারন লোকের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে বা যাবতীয় হারাম কাজে লিপ্ত হয়েছে। তারা মূলত: কুরআন শরীফে বর্ণিত সেই বণী ইসরাঈলী রাহবারদের ন্যায়। যাদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
لولا ينههم الربنيون والاحبار عن قولهم الاثم واكلهم السحت لبئس ما كانوا يصنعون.
অর্থ: দরবেশ ও আলিমরা কেন তাদেরকে পাপের কথা বলা থেকে এবং হারাম খাওয়া থেকে নিষেধ করেনা? তারা খুবই মন্দ কাজ করছে।” (সূরা মায়িদা-৬৩) হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما وقعت بنوا اسرائيل فى المعاصى نهتهم علماؤهم فلم ينتهوا فجالسوهم فى مجالسهم واكلوهم وشاربوهم فضرب الله قلوب بعضهم ببعض فلعنهم على لسان داود وعيسى ابن مريم ذلك بما عصو وكانوا يعتدون قال فجلس رسول الله صلى الله عليه وسلم وكان متكئا فقال لا والذى نفسى بيده حتى تأطروهم اطرا.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন বণী ইসরাইল পাপাচারে লিপ্ত হলো তখন তাদের আলিমগণ (প্রথম প্রথম) তাদেরকে এই কাজে বাঁধা দিলো কিন্তু তারা বিরত হলোনা। অতঃপর ঐ সমস্ত আলিমগণ তাদের সাথে উঠাবসা ও খানাপিনায় শরিক হয়ে পড়লো। ফলে আল্লাহ তায়ালা তাদের পরস্পরের অন্তরকে পাপাচারে কুলষিত করে দিলেন।  তখন আল্লাহ তায়ালা হযরত দাউদ আলাইহিস্ সালাম ও হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম আলাইহিস্ সালাম-এর মাধ্যমে তাদের উপর লানত করলেন। আর এটা এই কারণে যে, তারা আল্লাহ পাক-এর নাফরমানিতে লিপ্ত হয় এবং সীমালংঘন করে। বর্ণনাকারী বলেন, এই সময় আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেলান দিয়ে বসেছিলেন; অতঃপর তিনি সোজা হয়ে বসে বললেন, ‘সেই পবিত্র সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ পাক-এর শাস্তি হতে রেহাই পাবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা যালিম ও পাপীদেরকে তাদের পাপকার্যে বাধা প্রদান না করবে।” (তিরমিযী, আবু দাউদ) উল্লেখ্য, উলামায়ে ছূদের হারাম কাজকে সমর্থন ও হারাম কাজে মশগুল হয়ে যাওয়াতে শুধু তারাই আল্লাহ পাক-এর গযবে পতিত হবে তা নয় বরং তাদের এ অপকর্মের কারণে গোটা জাতী গযবে পতিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن جابر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اوحى الله عز وجل الى جبرئيل عليه السلام ان اقلب مدينة كذا وكذا باهلها فقال يا رب ان فيهم عبدك فلانا لم يعصك طرفة عين قال فقال اقلبها عليه وعليهم فان وجهه لم يتمعر فى ساعة قط.
অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ পাক হযরত জিব্রীল আলাইহিস্ সালামকে নির্দেশ দিলেন যে, অমুক অমুক শহরকে তার অধিবাসীসহ উল্টিয়ে দাও। তিনি বললেন, ‘আয় আল্লাহ পাক! এদের মধ্যে তো আপনার অমুক এক বান্দা আছে, যে মুহূর্তের জন্যও আপনার নাফরমানী করেনা।হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তখন আল্লাহ পাক বললেন, তাকেসহ সকলের উপরই শহরটিকে উল্টিয়ে দাও। কারণ, তার সম্মুখে পাপাচার হতে দেখে মুহূর্তের জন্যও সে তার চেহারা একটু বাঁকাও করেনা।” (বায়হাক্বী, মিশকাত) তাফসীরে উল্লেখ করা হয়, আল্লাহ পাক হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস্ সালাম-এর উপর ওহী নাযিল করলেন, ‘হে আমার নবী! আপনার উম্মতের মধ্যে এক লক্ষ লোককে ধ্বংস করে দেয়া হবে, যার মধ্যে ষাট হাজার লোক সরাসরি গুণাহে লিপ্ত (গোমরাহ)। তখন হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস্ সালাম বললেন, ‘আয় আল্লাহ পাক ষাট হাজার লোক সরাসরি গুণাহে লিপ্ত তাই তাদের ধ্বংস করে দেয়া হবে কিন্তু বাকী চল্লিশ হাজার লোককে ধ্বংস করা হবে কেন?” তখন আল্লাহ পাক বললেন, “যেহেতু তারা ঐ গুণাহে লিপ্ত লোকদের সাথে মিলা-মিশা ও উঠা-বসা করে এবং সম্পর্ক রাখে আর গুণাহের কাজে বাধা দেয় না, তাই তাদেরকেসহ ধ্বংস করে দেয়া হবে এবং ধ্বংস করে দেয়া হলো।মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে সূরা মায়িদা৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
لتجدن اشد الناس عداوة للذين امنوا اليهود والذين اشركوا.
অর্থ:তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।মূলতঃ এই ইহুদীরাই মুনাফিক সেজে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লামকে কষ্ট দিয়েছিল, তাঁকে শহীদ করার চক্রান্ত করেছিল। এই ইহুদীরাই মুনাফিকী করে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পরস্পরের মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল। আর মূলতঃ এই ইহুদীরাই মুসলমানের ঈমান-আমল  বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল ফিরকার জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ শিয়া, খারিজী, মুতাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী ও ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো ইহুদীদেরই এজেন্ট। বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো উলামায়ে ছু। ইহুদীদের এজেন্ট এসকল উলামায়ে ছূরা হারাম টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে।  যেমন, তারা প্রচার করছে- ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদ্য়াত ও শিরক্, ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা বিদয়াত ও হারাম, নিয়ত করে রওযা শরীফ ও মাযার শরীফ যিয়ারত করা শিরক, কদমবুছী করা নাজায়িয ও শিরক, মাযহাব মানার কোন প্রয়োজন নেই, পীর-মুরীদী শরীয়ত বিরোধী প্রথা, মীলাদ-ক্বিয়াম করা র্শিক-বিদ্য়াত, শবে বরাত পালন করা বিদ্য়াত, তারাবীহ নামায জরুরী কোন নামায নয়, আট রাকায়াত তারাবীহ পড়লেই চলে ইত্যাদি ইত্যাদি। (নাঊযুবিল্লাহ) অথচ উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ই কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ তথা শরীয়তসম্মত এবং তন্মধ্যে কোনটা সুন্নত আবার কোনটা  ফরয।  পক্ষান্তরে উলামায়ে ছূতথা দুনিয়াদার মাওলানারা ছবি, টেলিভিশন, সিনেমা, নাটক, নোবেল, বেপর্দা হওয়া, নারী নেতৃত্ব মানা, ভোট দেয়া, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয়া, মহিলাদের  জামায়াতের জন্যে মসজিদে যাওয়া, মহিলাদের বাইরে বের হওয়ার সময় হাত ও মুখ খোলা রাখা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, গণতন্ত্র করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, মৌলবাদী দাবী করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি নাজায়িয কাজগুলোকে জায়িয বলে প্রচার করছে এবং নিজেরাও তা আমল করছে।  (নাঊযুবিল্লাহ) অর্থাৎ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুসলমানদেরকে ইসলাম থেকে সরিয়ে, ইবাদত থেকে সরিয়ে অনৈসলামিক ও হারাম কাজে মশগুল করে দিয়ে বেঈমান করে দেয়া। মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ছূরা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে। যেমন, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায় উলামায়ে ছূআবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশাহ আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল। বর্তমান যামানার উলামায়ে ছূতথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক তথা নমুনা।
দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা নাজায়িয ও হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে নাজায়িয ও হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা।  যেমন, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لا يضلونكم ولا يفتنونكم.
অর্থ: হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত) উল্লেখ্য, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ছূরা উল্লিখিত বিষয়গুলোর ন্যায় ফুটবল বা খেলাধুলাসম্পর্কেও সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাই এদের থেকে আমাদের সতর্ক থাকা ফরয-ওয়াজিব। প্রকৃতপক্ষে সত্য কথা বলতে গেলে বলতে হয় যে, আওয়ামুন্ নাছ বা সাধারণ লোক কুরআন সুন্নাহ্ সম্পর্কে অজ্ঞ বা তাদের পর্যাপ্ত জ্ঞানই নেই। কারণ তারা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ পড়েওনি এবং সে সম্পর্কে তারা শিক্ষা গ্রহণও করেনি। যার ফলে তাদের পক্ষে শরীয়তের দৃষ্টিতে হালাল-হারাম, হক্ব-নাহক্ব, ঈমান ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য করে সৎ মত ও সৎ পথে পরিচালিত হওয়া দুরূহ ব্যাপার।  বিশেষ করে উলামায়ে ছুযারা দ্বীন বিক্রি করে দুনিয়া হাছিল করে, তারাই তাদের দুনিয়াবী স্বার্থ উদ্ধারের জন্য সাধারণ লোককে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় কুফরী-শিরেকীর দিকে ধাবিত করে থাকে এবং করছে। তবে সাধারণ জনগণের উচিৎ তাদের ঈমান হিফাযতের ব্যাপারে সতর্ক থাকা। উল্লেখ্য, সদ্য হওয়া বিশ্বকাপ ফুটবলের ক্ষেত্রেও এরূপটি হয়েছে। উলামায়ে ছুর দল একথা তো বলেইনি যে, ফুটবল খেলা নাজায়িয, হারাম। টেলিভিশনেও তা দেখা নাজায়িয ও হারাম। আর এসব কাজ সমূহকে জায়িয মনে করা কুফরী। অর্থাৎ এ সাবধান বাণী তো উচ্চারণ করেইনি বরং নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে আম মানুষের সাথে তাল মিলিয়ে ফুটবল খেলাকে জায়িয ফতওয়া দিয়েছে, তজ্জন্য দোয়া করেছে এবং শুকরিয়া জ্ঞাপন করেছে, অভিনন্দন জানিয়েছে এবং উৎসাহিত করেছে। এতদ্বপ্রেক্ষিতে কেবলমাত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতের পক্ষ থেকে হক্ব মত-পথের অতন্দ্র প্রহরী তথা জামানার তাজদীদী মুখপত্র হিসেবে আওয়ামুন্ নাছ বা আম জনতার ঈমান রক্ষার্থে নাজায়েয খেলার ও তার সমর্থনকারী উলামায়ে ছুদের বিরুদ্ধে দ্ব্যর্থহীনভাবে কুরআন-সুন্নাহ্ মোতাবেক সঠিক জাওয়াব ব্যক্ত করা হল। যাতে করে মানুষ হক্ব মত ও হক্ব পথে কায়েম থাকতে পারে।  পরিশিষ্ট উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা যে বিষয়গুলো প্রমাণিত হয়েছে তার সারসংক্ষেপ হলো- ১. বিশ্বকাপ ফুটবলসহ প্রায় সবগুলো খেলাই বিধর্মী তথা ইহুদী-নাছারা কর্তৃক প্রবর্তিত। অর্থাৎ বিজাতীয় নিয়মনীতি বা তর্জ-তরীক্বা। ২. মুসলমানদের জন্য বিজাতীয় নিয়মনীতি বা তর্জ-তরীক্বা অনুসরণ-অনুকরণ করা সম্পূর্ণই হারাম। ৩. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবলসহ সমস্ত খেলাধুলাই হারাম। ৪. মাঠে গিয়ে হোক আর টিভিতে হোক সর্বাবস্থায়ই খেলা দেখা হারাম ও কবীরাহ গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। তবে টিভিতে খেলা দেখা বা অন্যান্য অনুষ্ঠান দেখা আরো কঠিন ও অধিক গুণাহ্র কারণ। কেননা, শরীয়তের দৃষ্টিতে টিভি দেখা, রাখা ইত্যাদি সবই হারাম। কারণ, টিভির মূলই হচ্ছে ছবি ও বেপর্দা। ছবি তোলা, আঁকা, দেখা রাখা ও বেপর্দা হওয়া কাট্টা হারাম। ৫. খেলা সম্পর্কিত কোন দলকে সমর্থন করা, প্রশংসা করা, পতাকা উড়ানো, দলের জয় কামনা করে দোয়া করা, রোযা রাখা, দলের জয়ে খুশি প্রকাশ করা, হাতে তালি দেয়া, রং ছিটানো ও শুকরিয়া আদায় করা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী। ৬. দুর্বল দেশকে আল্লাহ পাক নিজ হাতে জিতিয়ে দেন’- একথা বলা সুস্পষ্ট কুফরী। ৭. ছওয়াবের নিয়তে খেলা দেখা বা খেলা দেখলে ছওয়াব হয়মনে করা সুস্পষ্ট কুফরী। ৮. ফুটবল, ক্রিকেট ও হকি ইত্যাদি খেলা সম্পর্কিত থানবী ও শফির বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল ও দলীলবিহীন। তাদের উক্ত বক্তব্যকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করা জিহালতী ও গোমরাহী বৈ কিছুই নয়।  ৯. মহিলা ফুটবল ও কুস্তি জায়িয’- খতীব উবায়দুল হক, মাহিউদ্দীন খান ও চর্মনাইয়ের পীর ফজলুল করীমের এ বক্তব্য কুফরীমূলক হয়েছে। ১০. বিশ্বকাপ ফুটবল সম্পর্কিত তামীরুল মিল্লাত মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বক্তব্যও ভুল, দলীলবিহীন, জিহালতর্পূ ও গোমরাহী মূলক হয়েছে। ১১. যে সকল মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, খতীব, আমীর, পীর নামধারী ব্যক্তিরা খেলা দেখে ও খেলা দেখার জন্য টিভি ক্রয় করে এবং রাত জেগে খেলা দেখার কারণে ফযর নামায পিছিয়ে দেয় তারা যদি তা হারাম জেনে করে তবে তারা চরম ফাসিক। তাদের পিছনে নামায পড়া, তাদেরকে ইমাম নিয়োগ করা মাকরূহ তাহরীমী। আর যদি তারা হালাল জেনে করে থাকে তবে তারা মুরতাদ। তাদের পিছনে নামায পড়া ও তাদের ইমাম নিয়োগ করা হারাম। কেননা, হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম মনে করা উভয়টি কুফরী। ১২. শরীয়তের দৃষ্টিতে যারা কুফরী করে তারা মুরতাদ। মুরতাদের হুকুম হলো কোন মুসলমান কুফরী করলে সে মুরতাদ হয়ে যায়।  মুরতাদের শাস্তি হচ্ছে- তার যিন্দিগীর সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। বিয়ে করে থাকলে তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। হজ্জ করে থাকলে তা বাতিল হয়ে যাবে। তার ওয়ারিছ সত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তার তওবার জন্য সময়সীমা হচ্ছে তিনদিন। এর মধ্যে তওবা না করলে ইসলামী খিলাফতের তরফ থেকে তার একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদ-। সে মারা গেলে তার জানাযা, দাফন, কাফন কোনটিই জায়িয নেই। বরং তাকে কুকুর-শৃগালের মত গর্তে পুঁতে রাখতে হবে। ১৩. যারা হারাম কাজ করে হারামকে হালাল বলে তারা মুরতাদ বা কাফির। সুতরাং তারা কস্মিনকালেও হক্কানী আলিম নয়। বরং তারা উলামায়ে ছূবা দুনিয়াদার ও ধর্মব্যবসায়ী। কারণ, হক্কানী আলিম তিনিই যিনি পরিপূর্ণরূপে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী, তাক্বওয়াধারী বা পরহিযগার এবং সুন্নতের পূর্ণ পাবন্দ ও ইলমে ফিক্বাহ ও তাছাউফ উভয়প্রকার ইলমের অধিকারী। ১৪. বিধর্মীরা মুসলমানদের বড় শত্রু তারা সর্বদাই মুসলমানদের ঈমান-আমল বিনষ্ট করার কূট ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাই তারা নিত্যনতুন হারাম নাজায়িয কাজগুলো মুসলমানদের মধ্যে বিস্তার করে যাচ্ছে। আর এক্ষেত্রে ধর্মব্যবসায়ী বা উলামায়ে ছূদের ষড়যন্ত্র ও ধোকা থেকে প্রত্যেক মুসলমানদের ঈমান আমল হিফাজত করা ফরজ-ওয়াজিব।  মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে প্রদত্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে হক্ব মত ও হক্ব পথে দায়েম-ক্বায়েম থাকার ও আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার খাছ রেজামন্দী হাছিল করার তাওফিক দান করুন। (আমীন) [বি: দ্র; এখানে খেলাধুলা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ফতওয়া দেয়া হলো। প্রয়োজনে পরবর্তীতে আরো বিস্তারিতভাবে ফতওয়া দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ। 

0 Comments: