১২ রবিউল আউয়াল শরীফ ই নুরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার তারিখ।
Related image১২ রবিউল আউয়াল শরীফ ই নুরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার তারিখ।
=================================================
সুওয়াল ৪ : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ নিয়ে ইখতিলাফ বা মতভেদ আছে। তাই মতভেদ সম্পর্কিত বিষয় পালন করা ঠিক নয়।
সুওয়াল ৫ : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবসের তারিখ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জানতেন না।
সুওয়াল ৬ : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবসের তারিখ মুবারক ১২ তারিখ নয় বরং ৯ তারিখ।
জওয়াব : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ মুবারক নিয়ে কোন ইখতিলাফ বা মতভেদ নেই। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ সম্পর্কে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই জানতেন এবং তা বর্ণনাও করেছেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবসের তারিখ- ৯ তারিখ নয় বরং ১২ তারিখ।
এ প্রসঙ্গে হাফিয হযরত আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছহীহ সনদ সহকারে বছর ও বার উল্লেখপূর্বক সুস্পষ্টভাবেই বর্ণনা করেছেন যে, পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ মুবারক হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنِ حَضْرَتِ الـمُطَّلِبِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ قَيْسِ بْنِ مَـخْرَمَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ اَبِيْهِ عَنْ جَدّهٖ قَالَ وُلِدْتُ اَنَا وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيلِ وَسَاَلَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ عَلَيْهِ السَّلَامَ قُبَاثَ بْنَ اَشْيَمَ اَخَا بَنِيْ يَعْمَرَ بْنِ لَيْثٍ اَاَنْتَ اَكْبَرُ اَمْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَ: رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَكْبَرُ مِنِّي وَاَنَا اَقْدَمُ مِنْهُ فِي الْمِيْلَادِ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيْلِ.
অর্থ : “হযরত মুত্তালিব ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে কাইস ইবনে মাখরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার পিতা হতে এবং উনার পিতা উনার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি “হাতীর বছরে” বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, আমিও সেই হাতীর বছরেই বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেছি। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি হযরত কুবাস বিন আশিয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে প্রশ্ন করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বড় না আপনি বড়? তিনি উত্তরে বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার থেকে বড়, আর আমি উনার পূর্বে বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেছি।” (তিরমিযী শরীফ, হযরত আবূ ঈসা মুহাম্মদ ইবনু ঈসা রহমতুল্লাহি আলাইহি (২৭৯ হিঃ), আস সুনান, প্রকাশনা- বৈরুত, দারু ইহ্য়ায়িত তুরাসিল আরাবী, হাদীছ শরীফ নং ৩৬১৯)
আবার অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ بِـهٰذَا الْـحَدِيْثِ زَادَ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَرَاَيْتَ صَوْمَ يَوْمِ الْاِثْنَيْنِ وَيَوْمِ الْـخَمِيْسِ قَالَ ‏فِيْهِ وُلِدْتُّ وَفِيْهِ اُنْزِلَ عَلَىَّ الْقُرْاٰنُ.
অর্থ : “হযরত আবূ কাতাদা আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ ও ইয়াওমুল খ¦মীস রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলো, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, এদিন (ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ) আমি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি, আর এদিনই আমার উপর ওহী বা পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে।” (মুসলিম শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৮০৭, আবূ দাঊদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৪২৮, সুনানে কুবরা লি বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৮২১৭, ইবনে খুজাইমা শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২১১৭, মুসনাদে আবি আওয়ানা : হাদীছ শরীফ নং ২৯২৬, মুসনাদে আহমদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২২৬০৩)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফদ্বয় উনাদের বর্ণনা থেকে এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন বছর হিসেবে ‘হাতীর বছর’ আর সাপ্তাহিক বার হিসেবে ‘ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ’।
আর অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَفَّانَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ سَلِيْمِ بْنِ حَيَّانَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ سَعِيْدِ بْنِ مِينَا رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْأَنْصَارِيّ وَحَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيلِ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ الثَّانِـيْ عَشَرَ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعٍ الْاَوَّلِ.
অর্থ : “হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত সালিম বিন হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ হস্তি বাহিনী বর্ষের মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ হয়েছিল।” সুবহানাল্লাহ! (বুলুগুল আমানী শরহিল ফাতহির রব্বানী, আছ ছিহ্হাহ্ ওয়াল মাশাহীর ১ম খ- ২৬৭ পৃষ্ঠা)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনার সনদের মধ্যে প্রথম বর্ণনাকারী হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে মুহাদ্দিছগণ উনারা বলেছেন, “তিনি একজন উচ্চ পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য ইমাম, প্রবল স্মরণশক্তি ও দৃঢ়প্রত্যয় সম্পন্ন ব্যক্তি।” (খুলাছাতুত তাহযীব শরীফ)
“দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ণনাকারী যথাক্রমে হযরত সালিম বিন হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাও অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।” (খুলাছাহ শরীফ, তাক্বরীব শরীফ)
সনদের উপরের দুজন তো ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের তো কোন তুলনাই নেই। অপর তিন জন রাবী হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সলিম ইবনে হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে রেজালের কিতাবে বলা হয়েছে উনারা উচ্চ পর্যায়ের নির্ভযোগ্য ইমাম, সিকাহ, তীক্ষè স্মরণশক্তিসম্পন্ন, বিশস্ত এবং নির্ভরযোগ্য, দৃঢ় প্রত্যয়সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব।’’ (খুলাছাতুত তাহযীব ২৬৮ পৃষ্ঠা, ত্বাকরীবুত তাহযীব ২য় খন্ড ১২৬ পৃষ্ঠা, সমূহ রেজালের কিতাব)
আর হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা দু’জন উচ্চ পর্যায়ের ফক্বীহ ছাহাবী। উনাদের বিশুদ্ধ সনদ সহকারে বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, “মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।” এ ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনার উপরই হযরত ইমামগণ উনাদের ইজমা (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (সীরাত-ই-হালবিয়াহ শরীফ, যুরক্বানী আলাল মাওয়াহিব শরীফ, মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ শরীফ ইত্যাদি)
উপরোক্ত বর্ণনার দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবসের তারিখ মুবারক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জানতেন।
তাহলে ‘নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবসের তারিখ মুবারক সম্পর্কে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জানতেন না’ বলা কত বড় মিথ্যাচার তা সহজেই অনুধাবনীয়। যা অসংখ্য হাদীছ শরীফ অস্বীকারের নামান্তর।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমনের সুসংবাদ প্রত্যেক যামানায় প্রত্যেক হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যমীনে জিন-ইনসানকে প্রদান করেছেন। এমনকি আলমে আরওয়াহতেও মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে ওয়াদা মুবারক নিয়েছেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সর্ব বিষয়ে উনারা খিদমত মুবারক করবেন।
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاِذْ اَخَذَ اللهُ مِيْثَاقَ النَّبِيّيْنَ لَمَا اٰتَيْتُكُم مّنْ كِتَابٍ وَّحِكْمَةٍ ثُـمَّ جَاءَكُمْ رَسُوْلٌ مُّصَدّقٌ لّمَا مَعَكُمْ لَـتُؤْمِنُنَّ بِهٖ وَلَتَنْصُرُنَّهٗ ۚ قَالَ اَاَقْرَرْتُـمْ وَاَخَذْتُـمْ عَلٰى ذٰلِكُمْ اِصْرِي ۖقَالُوْا اَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَاشْهَدُوْا وَاَنَا مَعَكُم مّنَ الشَّاهِدِيْنَ ◌
অর্থ : “(হে আমার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা) যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আলমে আরওয়াহতে সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাছ থেকে ওয়াদা নিয়েছিলেন যে, আপনাদেরকে আমি কিতাব ও হিকমত দান করবো। অতঃপর আপনাদেরকে সত্য প্রতিপাদনের জন্য আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করবো। আপনারা উনাকে নবী ও রসূল হিসেবে মেনে নিবেন এবং সর্ব বিষয়ে উনার খিদমত মুবারক করবেন। আপনারা কি এই ওয়াদার কথা মেনে নিলেন? উত্তরে সকলে বললেন, হ্যাঁ আমরা এই ওয়াদা স্বীকার করলাম। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনারা সাক্ষী থাকুন, আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী হয়ে গেলাম।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮১)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে প্রদত্ত ওয়াদা মুবারক অনুযায়ী প্রত্যেক যামানায় প্রত্যেক হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যমীনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমনের সুসংবাদ মুবারক প্রদান করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ক্বওল শরীফ উল্লেখ করে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمُبَشّرً‌ا ۢبِرَ‌سُوْلٍ يَّأْتِـيْ مِنْ ۢبَعْدِي اسْـمُهٗ اَحْـمَدُ.
অর্থ : “আমি এমন একজন সম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমনের সুসংবাদদানকারী, যিনি আমার পরে পৃথিবীতে তাশরীফ মুবারক আনবেন, উনার সুমহান নাম মুবারক হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (পবিত্র সূরা ছফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমনের ভবিষ্যতদ্বাণী ছহিবে তাওরাত শরীফ, হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ইয়াহূদী সম্প্রদায়কে জানিয়েছেন। আর পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মাধ্যমে পরবর্তী ইয়াহূদী সম্প্রদায় এই ভবিষ্যতদ্বাণী জেনে বছরের পর বছর সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান করতে থাকে শুধুমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক হাছিল করার জন্য।
তাহলে যে বিষয়টি আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে গিয়েছেন। সে বিষয়টি অর্র্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফ মুবারক নেয়ার বিষয়টি, উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জানতেন না এ কথাটি কিভাবে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে। এটি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি সুস্পষ্ট অপবাদ বৈ কিছুই নয়।
শুধু তাই নয় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অন্য সনদেও এ বিষয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ আছে। ইমাম হযরত হাকিম নিশাপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ প্রসঙ্গে উনার কিতাবে উল্লেখ করেন-
عَنْ حَضْرَتْ مُـحَمَّدِ بْنِ اِسْحَاقَ رَحـْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِاِثْنَتَيْ عَشَرَ لَيْلَةٍ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ
অর্থ : “হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার বারো রাত অতিবাহিত হওয়ার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” (মুস্তাদরাক লিল হাকিম শরীফ ৪র্থ খ-, ১৫৬৮ পৃষ্ঠা, হাদীছ শরীফ নং ৪১৮২)
অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
قَالَ مُـحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وُلِدَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ، عَامَ الْفِيْلِ لِاِثْنَتَيْ عَشْرَةَ لَيْلَةٍ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعٍ الاَوَّلِ
অর্থ : “হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ, হস্তীর বছর, রাত্রির শেষভাগে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” (দালায়িলুন নুবুওওয়াত লি ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি : হাদীছ শরীফ নং ২৩; কিতাবুল ওয়াফা লি আহওয়ালিল মুস্তফা লি আল্লামা ইবনে জাওজী রহমতুল্লাহি আলাইহি, পৃষ্ঠা ৮৭; প্রকাশনা : দারূল কুতুব ইসলামিয়া, বৈরূত, লেবানন)
উপরোক্ত বিশুদ্ধ বর্ণনা মুতাবিক পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফই হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস। এটাই সর্বাধিক ছহীহ ও মশহূর মত। এর বিপরীতে যেসব মত ঐতিহাসিকগণ থেকে বর্ণিত হয়েছে তা অনুমান ভিত্তিক ও দূর্বল। অতএব তা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।
এ প্রসঙ্গে হাফিজুল হাদীছ ইমাম হযরত কুস্তালানি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
هُوَ الْـمَشْهُوْرُ اَنَّهٗ وُلِدَ ثَانِـيْ عَشَرَ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ وَهُوَ قَوْلُ اِبْنِ اِسْحَاقَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَغَيْرِهٖ
অর্থ : “প্রসিদ্ধ মত অনুসারে নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন। যা ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যদের এটাই মত।” (শরহুল মাওয়াহিব ১ম খ- ২৪৮ পৃষ্ঠা)
অন্যত্র বর্ণিত আছে-
وَعَلَيْهِ عَمَلُ اَهْلِ مَكَّةَ فِـيْ زِيَارَتِـهِمْ مَوْضِعَ مَوْلِدِهٖ فِـيْ هٰذَا الْوَقْتِ
অর্থ : “মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখে সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী উনাদের মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থান মুবারক যিয়ারত করার আমল বর্তমান অবধি জারী রয়েছে।’’ (শরহুল মাওয়াহিব ১ম খ- ২৪৮ পৃষ্ঠা)
বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইমাম হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ لِاِثْنَتَـيْ عَشْرَةَ لَيْلَةٍ خَلَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ عَامَ الْفِيْلِ
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, আমুল ফিল বা হস্তী বাহিনীর বছর রাতের শেষ ভাগে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন।” (সীরাতে ইবনে হিশাম ১ম খ- ১৫৮ পৃষ্ঠা)
বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيْلِ لِاِثْنَتَـيْ عَشْرَةَ لَيْلَةٍ خَلَتْ مِنْ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ لِاَرْبَعِيْنَ سَنَةً مّنْ مُلْكِ كِسْرٰي انَوْشِيْرْوَان
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, আমুল ফিল বা হস্তী বাহিনীর বছর রাতে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন। তখন ছিলো শাসক নাওশেরাওয়ার শাসনকালের ৪০তম বছর।” (তারীখে ইবনে খালদুন ২য় খ- ৩৯৪ পৃষ্ঠা)
ইমাম হযরত জারির তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ عَامَ الْفِيْلِ لِاِثْنَيْ عَشْرَةَ لَيْلَةٍ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, আমুল ফিল বা হস্তী বাহিনীর বছর রাতের শেষ ভাগে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন।’’ (তারীখে ওমুম ওয়াল মূলক ২য় খ- ১২৫ পৃষ্ঠা)
ইমাম হযরত ইবনে কাছীর ও ইমাম হযরত যুরকানী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনারা বলেন,
وَهُوَ الْـمَثْهُوْرُ عِنْدَ الْـجُمْهُوْرِ .. هُوَ الَّذِيْ عَلَيْهِ الْعَمَلُ
অর্থ : “মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার (পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের) তারিখ হিসাবে জমহুর উলামায়ে কিরামের নিকট প্রসিদ্ধ। উক্ত মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফ মুবারক গ্রহণ হিসেবে সবাই পালন করে আসছেন।” (শরহুল মাওয়াহিব ২য় খ- ২৪৮ পৃষ্ঠা)
হাফিজুল হাদীছ হযরত আবুল ফাত্তাহ আন্দালুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وُلِدَ سَيّدُنَا وَنَبِيُّنَا مُـحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ لِاِثْنَتَـيْ عَشْرَةَ لَيْلَةٍ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ عَامَ الْفِيْلِ قِيْلَ بَعْدَ الْفِيْلِ بِـخَمْسِيْنَ يَوْمًا
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, রাতের শেষ ভাগে হস্তী বাহিনীর বছর দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন। বলা হয়, হস্তী বাহিনীর ঘটনার ৫০ দিন পরে তিনি দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন।” (আইনুল আসার ১ম খ- ৩৩ পৃষ্ঠা)
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, উপমহাদেশের যুগশ্রেষ্ঠ আলিম, শায়েখ হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ হিসাবে মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখই মশহূর। সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী উনাদের আমল হলো উক্ত মুবারক তারিখে উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মুবারক স্থান যিয়ারত করতেন।’’ (মা-সাবাতা বিস সুন্নাহ ৮১ পৃষ্ঠা)
উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত আছে, “সমস্ত মুসলমান এ বিষয়ের উপর ইজমা করেছেন বা একমত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন।” (মা-সাবাতা বিস সুন্নাহ ৮২ পৃষ্ঠা)
দেওবন্দী ওহাবীদের মুরুব্বীদের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে- “সারকথা যে বছর আসহাবে ফীল পবিত্র কা’বা শরীফ আক্রমন করে, সেই বছর পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসে মহাসম্মানিত ১২ তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) ছিলো পৃথিবীর জীবনে এক অনন্য বিশেষ দিবস। যেদিন নিখিল ভূবন সৃষ্টির মূল লক্ষ্য, দিবস রজনী পরিবর্তনের মূখ্য উদ্দেশ্য, হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম ও বনী আদমের গৌরব, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার কিস্তির নিরাপত্তার নিগূঢ় তাৎপর্য, হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দুআ ও হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম ও হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ভবিষ্যদ্বাণীসমূহের উদ্দিষ্ট ব্যক্তিত্ব অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক নেন।” (সীরাতে খতিমুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠা ৪, প্রকাশনা : এমদাদিয়া লাইব্রেরি)
উক্ত কিতাবে একটি টীকা সংযোজন করা হয়েছে, “সর্বসম্মত মতানুসারে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ হয়েছিল পবিত্র রবীউল আউয়াল শরীফ মাস উনার ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ। কিন্তু তারিখ নির্ধারণের জন্য ৪টি রেওয়ায়েত প্রসিদ্ধ রয়েছে। যথা- দ্বিতীয়, অষ্টম, দশম, দ্বাদশ। হাফিজ মোগলতাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি (৬৮৯-৭৬২ হিজরী) ২য় তারিখের রেওয়ায়েত গ্রহণ করে অন্যান্য রেওয়ায়েতকে দূর্বল বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু প্রসিদ্ধ রেওয়ায়েত হচ্ছে দ্বাদশ তারিখের রেওয়ায়েত। এমনকি হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইহার উপর ইজমার দাবী বর্ণনা করেছেন। ইহাকে কামেলে ইবনে আছীরে গ্রহণ করা হয়েছে।”
অথচ উনবিংশ শতাব্দীতে মাহমুদ পাশা আল ফালাকি (১৮১৫-১৮৮৫ ঈসায়ী) নামক একজন মিশরীয় জ্যোতির্বিদ দাবী করেছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস হচ্ছে পবিত্র ৯ রবীউল আউওয়াল শরীফ। নাঊযুবিল্লাহ! আর তার দাবীকৃত এই বিভ্রান্তিমূলক তারিখটিই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দুশমনরা ব্যবহার করে থাকে। তাদের কাছে ছহীহ হাদীছ শরীফ অপেক্ষা একজন নাস্তিকের দাবী বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নাঊযুবিল্লাহ! তাই এই নাস্তিক সম্পর্কে তুলে ধরা হলো।
নাস্তিক মাহমুদ পাশা আল ফালাকি ছিল সে সময়কার তথাকথিত মিশরীয় রেনেসাঁর একজন ব্যক্তি। সে ফ্রান্সের বৃত্তি নিয়ে গবেষণা ও পড়াশোনা চালিয়েছিল। এই মিশরীয় রেনেসাঁকে আরবীতে বলা হয় ‘আন-নাহদা’। ১৮০০-১৯০০ সালের মাঝামাঝি সময়টিতে এই কথিত রেনেসাঁ সংঘটিত হয়। আর আন-নাহদার মূল ব্যক্তি হচ্ছে ‘রিফা আত-তাহতাবী’ নামক এক ব্যক্তি। তাকেও ফ্রান্সে পাঠানো হয়েছিল। সে মিশরে এসে প্রচার চালায় যে, মুসলমানদেরকে অবশ্যই পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। নাঊযুবিল্লাহ! রিফা আত-তাহতাবী ছাড়াও এই আন-নাহদার আরেক মূল ব্যক্তি ছিল ‘বুরতুস আল বুস্তানী’। সেও মুসলমান ছিল না, ছিল এক লেবানিজ ম্যারেনাইট খ্রীস্টান। অর্থাৎ মিশরীয় তথাকথিত রেনেসাঁ সংশ্লিষ্টরা ফ্রান্সপন্থী ছিল। ফ্রান্সের বৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা করে তারা মুসলিম মূল্যবোধ মুছে দিয়ে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি চালু করতে উঠে পড়ে লেগেছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল খ্রীস্টান, এমনকি তাদের মধ্যে অনেকে শিয়াও ছিল।
আরেকটি বিষয় হলো, মিশরীয় তথাকথিত রেনেসাঁপন্থীরা ছিল প্রাচীন মিশরের ফেরাউনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মিশরীয় তথাকথিত রেনেসাঁপন্থীদের এক ভাস্কর্যশিল্পী মাহমূদ মোখতার বানিয়েছিল ‘মিশরের নবজাগরণ’ নামক এক মূর্তি, যা ছিল ফেরাউন ও স্ফিংসের জোড়া ভাস্কর্য। অর্থাৎ মিশরীয় তথাকথিত রেনেসাঁ ছিল ফেরাউনের যুগে ফিরে যাওয়ার চেতনাধারী।
উল্লেখ্য, উনবিংশ শতাব্দীর মিশরীয় নাস্তিক মাহমুদ পাশা আল ফালাকি নাস্তিক্যবাদে উদ্বুুদ্ধ হয়ে কাফিরদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মুবারক ১২ই শরীফ তারিখকে বিকৃত করে বই রচনা করেছে। আর বাতিল ৭২ ফিরকার লোকেরা ছহীহ হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনাকে পাশ কাটিয়ে এক নাস্তিকের বর্ণনাকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছে, যা পবিত্র হাদীছ শরীফ অবজ্ঞা করার কারণে কুফরী হয়েছে।
সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ। মহাকাশবিদগণও গবেষণা করে উল্লেখিত তারিখ ও বার বিশুদ্ধ বলে স্বীকার করে নিয়েছে।
উপসংহার :
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সুস্পষ্ট বর্ণনা অনুযায়ীই, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস হচ্ছে হাতির বছরের মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ।
সাবধান! মৌলুদ আর মিলাদ কিন্তু এক নয় !
Image result for সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফসাবধান! মৌলুদ আর মিলাদ কিন্তু এক নয় !
=================================================
সাবধান! মৌলুদ আর মিলাদ কিন্তু এক নয় !
=================================================
ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীরা প্রায় বলে থাকে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নাকি ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করেছেন এবং তারা দলীল স্বরুপ বলে থাকে, যেখানে মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি বলেন- “যদি আল্লাহর নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আজকের যুগে থাকতেন আর এই সব মাহফিল দেখতে পেতেন, আমি হেন অধমের দৃঢ় বিশ্বাস যে কখনো তিনি এ কাজ পছন্দ করতেন না, বরং এ সব অনুষ্ঠান একেবারে বন্ধ করে দিতেন”। পাশাপাশি তারা অনেক ইমাম-মুজতাহিদগণ উনাদের রেফারেন্স ব্যবহার করে।
কিন্তু এ কাজ করতে গিয়ে বীরুধীতাকারীরা একটি বিষয় এড়িয়ে যায়, তা হলো মৌলুদ আর মাউলিদ/ঈদে মীলাদ এক নয়। ঐ সময় মৌলুদ নামক এক চরম বেহায়া, বেদাতী, হারাম নাজায়েজ অনুষ্ঠানের প্রচলন করা হতো। যেখানে গান-বাদ্য-বেহায়া বেপর্দার ঘটনা ঘটতো। যেসব দলিল ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতায় বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো মূলত মৌলুদ নামক অনুষ্ঠানের, ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করে নয়।
যেমন কওমী গুরু আশরাফ আলী থানভী মৌলুদকে হারাম বলেছে, কিন্তু বেহেস্তী জেওরে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অপরিহার্য বলেছেন। তাই যারা মৌলুদ আর ঈদে মীলাদকে এক করে বিভ্রান্তি ছড়ায়, তারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার শত্রু ছাড়া অন্যকিছু নয়।
জম্মোৎসব পালন করা সম্মানিত সুন্নাহ শরীফ উনার অন্তভূক্ত।
Related imageজম্মোৎসব পালন করা সম্মানিত সুন্নাহ শরীফ উনার অন্তভূক্ত।
=================================================
বিভিন্ন বাতিল ফিরকার লোকেরা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুধীতা করতে গিয়ে বলে থাকে ‘জম্মোৎসব পালন করা নাকি পৌত্তলিক রীতি এবং কোনো ধর্মগ্রন্থ বা নাবীদের শিক্ষায় নাকি এর কোন অস্তিত্ব নেই। !!’ নাউযুবিল্লাহ।
অথচ জন্মোৎসব পালন বা জন্মদিন উৎযাপন মোটেও কোন পৌত্তলিক রীতি নয়। বরং পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারাই এর ভিত্তি প্রমাণিত। আর হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের শিক্ষা প্রত্যেক নবী-রসূল আলাইহিস সালাম তিনি স্বীয় উম্মতকে দিয়ে গিয়েছেন।
জন্মোৎসব পালন বা জন্মদিন উৎযাপনের বিষয়টি কয়েকভাবে হতে পারে।
১. কোন শিশু যেদিন জন্মগ্রহণ করে সেদিনই শিশুর অভিভাবক কর্তৃক কোন অনুষ্ঠান বা খানাপিনার আয়োজন।
২. শিশুর জন্মের ৭ম দিনে শিশুর আক্বীক্বা দিয়ে নাম রেখে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন।
৩. প্রত্যেক বছর জন্মদিনের তারিখে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন।
কোন শিশু যেদিন জন্মগ্রহণ করে সেদিনই শিশুর অভিভাবক কর্তৃক কোন অনুষ্ঠান বা খানাপিনার আয়োজন।
এই বিষয়ে হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের বিখ্যাত সঙ্কলক ইমাম হযরত বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘আদাবুল মুফরাদ’ কিতাবে ২ খানা বাব বা পরিচ্ছেদ রচনা করেছেন যথাক্রমে –
بَابُ الدَّعْوَةِ فِي الْوِلَادَةِ – শিশুর জন্মগ্রহণ উপলক্ষ্যে দাওয়াত।
بَابُ الدُّعَاءِ فِي الْوِلَادَةِ – সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্য দোয়া করা।
بَابُ الدَّعْوَةِ فِي الْوِلَادَةِ – “শিশুর জন্মগ্রহণ উপলক্ষ্যে দাওয়াত” পরিচ্ছদে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে জানা যায় যে, একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার রোযা ভঙ্গ করে শিশুর জন্মগ্রহণ উপলক্ষ্যে দাওয়াতের খানা খেয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ بِلَالِ بْنِ كَعْبٍ الْعَكِّيِّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ زُرْنَا حَضْرَتْ يَـحْيَى بْنَ حَسَّانَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِـي قَرْيَتِهِ اَنَا وَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيمُ بْنُ اَدْهَمَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَ حَضْرَتْ عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ قَرِيرٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَ حَضْرَتْ مُوسَى بْنُ يَسَارٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَجَاءَنَا بِطَعَامٍ، فَاَمْسَكَ حَضْرَتْ مُوسٰى رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَكَانَ صَائِمًا فَقَالَ حَضْرَتْ يَـحْيَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَمَّنَا فِـي هٰذَا الْمَسْجِدِ رَجُلٌ مِنْ بَنِي كِنَانَةَ مِنْ اَصْحَابِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكَنَّى حَضْرَتْ اَبَا قِرْصَافَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً، يَصُوْمُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا، فَوُلِدَ لِاَبِـيْ غُلَامٌ، فَدَعَاهُ فِـي الْيَوْمِ الَّذِيْ يَصُوْمُ فِيْهِ فَاَفْطَرَ، فَقَامَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيمُ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَكَنَسَهُ بِكِسَائِهِ، وَاَفْطَرَ حَضْرَتْ مُوْسٰى رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ حَضْرَتْ اَبُو عَبْدِ اللهِ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَبُو قِرْصَافَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اسْـمُهُ جَنْدَرَةُ بْنُ خَيْشَنَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ.
অর্থ : “হযরত বিলাল ইবনে কা’বিল ‘আক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি, হযরত ইবরাহীম ইবনে আদহাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল আযীয ইবনে কুদাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত মূসা ইবনে ইয়াসার ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত ইবনে হাসান বাকরী ফালাসতিনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে উনার গ্রামে গিয়ে সাক্ষাত করলেন। হযরত ইবনে হাসান বাকরী ফালাস্তিনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাদের জন্য খাবার আনলেন। হযরত মূসা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি রোযাদার হওয়ায় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। হযরত ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কিনানা গোত্রীয় একজন ছাহাবী, যাঁর উপনাম হযরত আবূ কিরসাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি চল্লিশ বছর যাবত এই মসজিদে ইমামতি করেন। তিনি এক দিন রোযা রাখেন এবং এক দিন বিরতি দেন। আমার একজন ভাই জন্মগ্রহণ করলে আমার পিতা উনাকে দাওয়াত দেন। সেটি ছিল উনার রোযা রাখার দিন। তিনি রোযা ভাঙ্গলেন। হযরত ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উঠে দাঁড়িয়ে উনাকে উনার চাদরখানা হাদিয়া দেন এবং হযরত মূসা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও রোযা ভাঙ্গেন। হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ছাহাবী হযরত আবূ কিরসাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নাম মুবারক হযরত জানদারা ইবনে খায়শানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।” (আদাবুল মুফরাদ : কিতাবুল খিতা-ন : বাবুদ্ দা’ওয়াতি ফীল উইলাদাত : হাদীছ শরীফ নং ১২৫৩)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে শিশুর জন্মদিনেই জন্মদিন পালনের নির্দেশনা পাওয়া যায়। এমনকি মহান আল্লাহ পাক উনার চুড়ান্ত সন্তুষ্টি মুবারক দুনিয়াতেই প্রাপ্ত হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার রোযা ভঙ্গ করে জন্মদিন উপলক্ষ্যে পরিবেশিত খাদ্য গ্রহণ করেছেন।
আবার بَابُ الدُّعَاءِ فِي الْوِلَادَةِ – “সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্য দোয়া করা” পরিচ্ছদে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে জানা যায় যে, একদল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা শিশুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত দাওয়াতে এসে খানাপিনা করেছেন এবং শিশুর জন্য দোয়া করেছেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ مُعَاوِيَةَ بْنَ قُرَّةَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ يَقُوْلُ لَمَّا وُلِدَ لِـي اِيَاسٌ دَعَوْتُ نَفَرًا مِنْ اَصْحَابِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاَطْعَمْتُهُمْ فَدَعَوْا فَقُلْتُ‏‏ اِنَّكُمْ قَدْ دَعَوْتُـمْ فَبَارَكَ اللهُ لَكُمْ فِيْمَا دَعَوْتُـمْ وَاِنّـيْ اِنْ اَدْعُوْ بِدُعَاءٍ فَاَمّنُوْا قَالَ‏ فَدَعَوْتُ لَهُ بِدُعَاءٍ كَثِيْرٍ فِـيْ دِينِهِ وَعَقْلِهِ وَكَذَا قَالَ‏‏ فَاِنّـيْ لَاَتَعَرَّفُ فِيْهِ دُعَاءَ يَوْمِئِذٍ‏.‏
অর্থ : “হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনার আওলাদ ইয়াস জন্মগ্রহণ করলে তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একদল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে দাওয়াত করে খাবার পরিবেশন করেন। উনারা দোয়া মুবারক করলেন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আপনারা দোয়া মুবারক করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের দোয়া মুবারক উনার উসীলায় আপনাদের বরকত মুবারক দান করুন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তখন বললেন, তিনিও কতগুলো দোয়া করবেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেন আমীন বলেন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি উনার আওলাদের দ্বীনদারি, জ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের জন্য অনেক দোয়া করলেন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি সেদিনের দোয়ার প্রভাব লক্ষ্য করেছেন।” (আদাবুল মুফরাদ : কিতাবুল খিতা-ন : বাবুদ্ দু‘য়ায়ি ফীল উইলাদাত : হাদীছ শরীফ নং ১২৫৫)
সুতরাং জন্মদিন পালন বা জন্মোৎসব করা সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার রীতি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রদান করেছেন বলেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা শিশুর জন্মদিনের দাওয়াতে গিয়েছেন, জন্মদিন উপলক্ষ্যে পরিবেশিত খাবার খেয়েছেন এমনকি রোযা ভঙ্গ করে খাবার খেয়েছেন এবং দোয়া মুবারক করেছেন। তাই জন্মোৎসব পালন করাকে একটি পৌত্তলিক রীতি বলা সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু এই বিষয়টি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শিক্ষা দিয়েছেন।
শিশুর জন্মের ৭ম দিনে শিশুর আক্বীক্বা দিয়ে নাম রেখে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন। সন্তান জন্মগ্রহণের শুকরিয়াস্বরূপ যে পশু যবাই করা হয় তাকে আক্বীক্বা বলে। জন্মের সপ্তম দিনে আক্বীক্বা করা সুন্নত।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ سَـمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ كُلُّ غُلَامٍ رَهِيْنَةٌ بِعَقِيْقَتِهِ تُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ سَابِعِهِ وَيُـحْلَقُ وَيُسَمَّى‏.
অর্থ : “হযরত সামুরাহ ইবনে জুনদুব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, প্রত্যেক শিশু তার আক্বীক্বার বিনিময়ে বন্ধক থাকে। তার জন্মের সপ্তম দিনে আক্বীক্বা করতে হয়, মাথার চুল ফেলতে হয় এবং নাম রাখতে হয়।” (আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুল আদ্বহা : বাবু ফিল আক্বীক্বাহ : হাদীছ শরীফ নং ২৮৩৮)
জন্মের ৭ম দিনে আক্বীক্বা করা উত্তম। ৭ম দিনে সম্ভব না হলে ১৪ বা ২১তম দিনেও করা যায়। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এই তিন দিনের উল্লেখ আছে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
“হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আক্বীক্বার পশু ৭ম বা ১৪তম বা ২১তম দিনে যবাই করা যাবে।” (আল মু’জামুল আওসাত লিত ত্ববারানী ৫/৪৫৭)
সামর্থ না থাকার কারণে এ তিন দিনেও কারো পক্ষে সম্ভব না হলে, পরে যে কোনো সময় আক্বীক্বা করা যেতে পারে।
আক্বীক্বার গোশত কুরবানীর গোশতের মতই। তা নিজে খাবে, আত্মীয় স্বজনকে খাওয়াবে এবং গরীব-মিসকীনকে ছদকা করবে। তবে যেমনভাবে কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজে খাওয়া, একভাগ ছদকা করা এবং এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনকে হাদিয়া হিসাবে দান করা জরুরী নয়, ঠিক তেমনিভাবে আক্বীক্বার গোশতও উক্ত নিয়মে তিন ভাগ করা জরুরী নয়। আক্বীক্বার গোশত যদি সম্পূর্ণটাই রান্না করে এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব এবং অন্যান্য মুসলমানদেরকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ায় তাতেও যথেষ্ট হবে। অর্থাৎ আক্বীক্বার গোশত পিতা-মাতা ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলেই খেতে পারবে।
সুতরাং আক্বীক্বার গোশত দিয়ে খাদ্য খাওয়ার জন্য দাওয়াতের ব্যবস্থা করার বিধান সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে রয়েছে। অর্থাৎ আক্বীক্বার মাধ্যমে জন্মোৎসব পালনের বিধান সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে রয়েছে।
প্রত্যেক বছর জন্মদিনের তারিখে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ مَرَّ مَعَ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلٰى بَيْتِ عَامِرِ الاَنْصَارِىّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَكَانَ يُعَلّمُ وَقَائِعَ وِلادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِاَبْنَائِهٖ وَعَشِيْرَتِهٖ وَيَقُوْلُ هٰذَا الْيَوْمَ هٰذَا الْيَوْمَ فَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلامُ اِنَّ اللهَ فَتَحَ لَكَ اَبْوَابَ الرَّحْـمَةِ وَالْمَلائِكَةُ كُلُّهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ لَكَ مَنْ فَعَلَ فِعْلَكَ نَـجٰى نَـجٰتَكَ.
অর্থ : “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশী উনাদেরকে নিয়ে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস; এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)। এতদশ্রবণে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মুবারক রহমত উনার দরজা মুবারকসমূহ আপনার জন্য উম্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মত এরূপ কাজ করবে, তিনিও আপনার মত নাযাত (ফযীলত) লাভ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানউইর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)
উপরের হাদীছ শরীফ হতে বুঝা যাচ্ছে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন।
এমনকি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি প্রতি বছর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিন উট যবেহ করে মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিতেন।
এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে-
يَوْمَ مَوْلِدِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَبَحَ حَضْرَتْ اَبُوْ بَكْرٍ الصّـِدّيْقُ عَلَيْهِ السَّلَامَ مِائَةَ نَاقَةٍ وَتَصَدَّقَ بِـهَا
অর্থ : “পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক দিনে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ১০০ উট যবেহ করতেন এবং তা বিলিয়ে দিতেন।” (আন্ নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফি মাওলিদি সাইয়্যিদি ওয়ালাদি আ’যম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা ছালিছ উর্দূ তরজমাতি মা’য়া ইতেরাযাত কে তাহক্বিক্বী জওয়াবাত আওর তাফছিলী হালাতে মছান্নিফ কে সাত বা’নামে নে’য়মাতে কুবরা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম : পৃষ্ঠা ৫৪)
আর হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি প্রতি বছর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিন মানুষের মাঝে গম বিলিয়ে দিতেন।
এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে-
تَصَدَّقُ حَضْرَتْ اَبُوْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ فِـىْ ذٰلِكَ بِثَلَاثَةِ اَقْرَاصِ مِنْ شَعِيْرِ
অর্থ : “পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক দিনে হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ৩ গামলা গম বিলিয়ে দিতেন।” (আন্ নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফি মাওলিদি সাইয়্যিদি ওয়ালাদি আ’যম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা ছালিছ উর্দূ তরজমাতি মা’য়া ইতেরাযাত কে তাহক্বিক্বী জওয়াবাত আওর তাফছিলী হালাতে মছান্নিফ কে সাত বা’নামে নে’য়মাতে কুবরা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম : পৃষ্ঠা ৫৪)
সুতরাং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে জন্মোৎসব বা জন্মদিন পালনের বিধান রয়েছে। আর তাই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেমন নিজেরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস উৎযাপন করেছেন। তেমনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জন্মদিন পালনকে পছন্দ করেছেন বিধায় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পরবর্তী উম্মতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।
যেহেতু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষায় জন্মোৎসব পালনের অস্তিত্ব বিদ্যমান। তাই জন্মোৎসব পালনকে একটি পৌত্তলিক রীতি বলা কুফরী।
আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যে ব্যক্তি কুফরী করে তওবা ছাড়া মারা গেল তার পরিণাম সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ ثُـمَّ مَاتُوْا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَنْ يَغْفِرَ اللهُ لَـهُمْ.
অর্থ : “নিশ্চয়ই যারা কাফির এবং মহান আল্লাহ পাক উনার পথ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, মহান আল্লাহ পাক তিনি কখনোই তাদেরকে ক্ষমা করবেন না।” (পবিত্র সূরা মুহম্মদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৪)
অন্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَمَاتُوْا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْ اَحَدِهِم مّلْءُ الْاَرْضِ ذَهَبًا وَلَوِ افْتَدٰى بِهِ ۗ اُولٰـئِكَ لَـهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ وَمَا لَـهُم مّنْ نَّاصِرِيْنَ ◌
অর্থ : “যারা কাফির হয়েছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তারা যদি তার পরিবর্তে সারা পৃথিবী পরিমান স্বর্ণও দেয়, তবুও তাদের তওবা কবুল করা হবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব! পক্ষান্তরে তাদের কোনই সাহায্যকারী নেই।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯১)
পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনকারীদের জন্য শাফায়াত মুবারক এবং নাজাত সুনিশ্চিত। সুবহানআল্লাহ!!
Related imageপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনকারীদের জন্য শাফায়াত মুবারক এবং নাজাত সুনিশ্চিত। সুবহানআল্লাহ!!
=================================================
পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিরুধীতাকারীরা বলে থাকে “পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের আগে নাকি নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ঠিকমত আদায় করতে হবে।কিয়ামতের ময়দানে নাকি এসবের হিসেব নেওয়া হবে, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের নয়।”
তাদেরকে বলতে চাই পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের জন্য নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি যথাযথভাবে আদায়ের শর্ত আরোপ করা হয়নি। বরং সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত বিনা শর্তেই ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করতে নির্দেশ প্রদান করেছে।
কেউই নামায, রোযা পালন করে কামিয়াবী হাছিল করতে পারবে না, নাজাত লাভ করতে পারবে না, যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শাফায়াত মুবারক লাভ করা না যায়। পক্ষান্তরে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা এমন একটি ইবাদত যা অন্য সমস্ত ইবাদত অপেক্ষা সর্বোত্তম। আর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনকারীদের জন্য শাফায়াত সুনিশ্চিত, নাজাতও সুনিশ্চিত। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا خَلَقْتُ الْـجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ.
অর্থ : “আমি জিন ও ইনসানকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি।” (পবিত্র সূরা যারিয়াহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
এই পবিত্র আয়াত শরীফ হতে সুস্পষ্ট যে, মানুষ ও জিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করার জন্য। আর মহান আল্লাহ পাক তিনিই ইবাদতের নিয়ম-নীতি, তরতীব বা পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন। সেই মহান আল্লাহ পাক তিনিই সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন কোন ইবাদত সর্বোত্তম।
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مّن رَّبّكُمْ وَشِفَاءٌ لّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لّلْمُؤْمِنِيْنَ ◌ قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْـمَتِه فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مّـمَّا يَـجْمَعُوْنَ ◌
অর্থ : “হে মানবজাতি! অবশ্যই তোমাদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে এসেছেন মহান নছীহতকারী, তোমাদের অন্তরের সকল ব্যাধিসমূহ দূরকারী, কুল-কায়িনাতের মহান হিদায়েত দানকারী ও ঈমানদারদের জন্য মহান রহমত (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি অনুগ্রহ ও রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন; সেজন্য তারা যেনো ঈদ উদযাপন তথা খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সেসব কিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” (পবিত্র সূরা ইঊনুস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭-৫৮)
মানুষ দুনিয়া আখিরাতের জন্য যা সঞ্চয় করে তাহলো ধন-দৌলত, টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি, আহাল-ইয়াল বা পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি, নেক আমল- নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, দান-খয়রাত ইত্যাদি। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি এই সমস্ত কিছু থেকেও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে খুশি মুবারক প্রকাশ করাকে সর্বোত্তম ইবাদত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
তাই পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি কটাক্ষ করা সম্পূর্ণরূপে কুফরী। কেননা কেউই নামায রোযা পালন করে কামিয়াবী হাছিল করতে পারবে না, নাজাত লাভ করতে পারবে না, যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শাফায়াত মুবারক লাভ করা না যায়। পক্ষান্তরে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা এমন একটি ইবাদত যা অন্য সমস্ত ইবাদত অপেক্ষা সর্বোত্তম। আর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনকারীদের জন্য শাফায়াত সুনিশ্চিত, নাজাতও সুনিশ্চিত।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا اَنَّهٗ كَانَ يُـحَدّثُ ذَاتَ يَوْمٍ فِىْ بَيْتِه وَقَائِعَ وِلادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِقَوْمٍ فَيَسْتَبْشِرُوْنَ وَيُـحَمّدُوْنَ اللهَ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِذَا جَاءَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَلَّتْ لَكُمْ شَفَاعَتِىْ.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজগৃহে সমবেত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ উনারা আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল মুবারক পাঠ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি (পবিত্র ছলাত শরীফ-পবিত্র সালাম শরীফ) পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তথায় তাশরীফ মুবারক নেন এবং (পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে) বললেন, “আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানউইর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)
এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ مَرَّ مَعَ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلٰى بَيْتِ عَامِرِ الاَنْصَارِىّ وَكَانَ يُعَلّمُ وَقَائِعَ وِلادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَبْنَائِهٖ وَعَشِيْرَتِهٖ وَيَقُوْلُ هٰذَا الْيَوْمَ هٰذَا الْيَوْمَ فَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلامُ اِنَّ اللهَ فَتَحَ لَكَ اَبْوَابَ الرَّحْـمَةِ وَالْمَلائِكَةُ كُلُّهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ لَكَ مَنْ فَعَلَ فِعْلَكَ نَـجٰى نَـجٰتَكَ.
অর্থ : “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশী উনাদেরকে নিয়ে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস; এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)। এতদশ্রবণে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মুবারক রহমত উনার দরজা মুবারক আপনার জন্য উম্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মত এরূপ কাজ করবে, তিনিও আপনার মত নাজাত (ফযীলত) লাভ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানউইর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)
যেহেতু হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করে শাফায়াত সুনিশ্চিত করেছেন, নাজাত সুনিশ্চিত করেছেন। আর উনাদের অনুসরণে পরবর্তী উম্মতের জন্যও শাফায়াত মুবারক ও নাজাতের সুনিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَالسَّابِقُوْنَ الْاَوَّلُوْنَ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ وَالْاَنْصَارِ وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِاِحْسَانٍ رَّضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ وَاَعَدَّ لَـهُمْ جَنَّاتٍ تَـجْرِي تَـحْتَهَا الْاَنْـهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا اَبَدًا ۚ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ ◌
অর্থ : “হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে অগ্রগণ্য এবং উনাদেরকে উত্তমভাবে অনুসরণকারী সকলের প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি সন্তুষ্ট আর উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করতে পেরেছেন। আর উনাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন সম্মানিত জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত। সেখানে উনারা চিরকাল থাকবে। এটাই হলো মহান কামিয়াবী।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০)
সুতরাং, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা হচ্ছে মুসলমান উনাদের জন্য সর্বপ্রধান ও সর্বপ্রথম দায়িত্ব-কর্তব্য। যা পালন করা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে ফরয। নামায রোযা পালন করাও মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে ফরয। যেহেতু মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক না আনলে নামায রোযা কিছুই ফরয হতো না, সেহেতু উনাকে পাওয়ার কারণে খুশি মুবারক প্রকাশ করাই সর্বপ্রধান ও সর্বোত্তম ইবাদত। অর্থাৎ পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা নামায রোযা পালনের চেয়েও উত্তম ইবাদত। তাই সর্বোচ্চ খুশি সহকারে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন তো করতেই হবে, অন্যান্য সকল ফরয ইবাদত যেমন নামায রোযা পালনও করতে হবে, ছেড়ে দেয়া যাবে না। আবার কিয়ামতের ময়দানে সমস্ত আমলের হিসেব নেয়া হলেও পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনকারীদের কোন হিসেবই নেয়া হবে না। কারণ উনারা দুনিয়াতেই ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে গিয়েছেন, যা উপরোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।
প্রত্যেক ঈমানদারদের জন্য ফরজ ওয়াজিব হচ্ছে সার্বক্ষন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রশংসা মুবারক ও উনার সুমহান শান মুবারক এ ছলাত ও সালাম মুবারক পাঠে মশগুল থাকা।
Related imageপ্রত্যেক ঈমানদারদের জন্য ফরজ ওয়াজিব হচ্ছে সার্বক্ষন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রশংসা মুবারক ও উনার সুমহান শান মুবারক এ ছলাত ও সালাম মুবারক পাঠে মশগুল থাকা।
=================================================
পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরবিরুধীতা কারীরা বলে থাকে,আলাদা করে নাকি প্রশংসা করার জন্য ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার দরকার নেই”
মূলত আযান, ইক্বামত, খুতবায় যেমন মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উচ্চারিত হওয়ার পরও আলাদাভাবে নামায আদায় করতে হয়, যিকির-আযকার করতে হয়, তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করতে হয়। ঠিক তেমনিভাবে আযান, ইক্বামত, খুতবায় মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উচ্চারিত হওয়ার পরপরই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উচ্চারিত হয়, এর পরও মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক-এ আলাদাভাবেই অনন্তকাল ধরে দুরূদ শরীফ পাঠ করতে আদেশ মুবারক করেছেন।
একইভাবে নামাযের মধ্যে দুরূদ শরীফ পাঠ করা সত্ত্বেও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক-এ আলাদাভাবেই অনন্তকাল ধরে দুরূদ শরীফ পাঠ করতে মহান আল্লাহ পাক আদেশ মুবারক করেছেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيّ ۚ يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلّمُوْا تَسْلِيْمًا ◌
অর্থ : “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার শান মুবারক-এ ছলাত শরীফ পেশ করছেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও উনার খিদমত মুবারক-এ ছলাত শরীফ পেশ করো এবং সেই  সাথে যথাযথ সম্মানে সালাম মুবারক পেশ করো।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
এই ছলাত শরীফ-সালাম শরীফ কতক্ষণ পেশ করতে হবে তা মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্ট করে উল্লেখ করেননি। তবে পবিত্র আয়াত শরীফ উনার প্রথমেই যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই ছলাত শরীফ পাঠ করছেন বলে উল্লেখ রয়েছে। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন অনন্ত-অনাদি। তাই তিনি অনাদিকাল থেকে অনন্তকালের জন্যই উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ পাঠ করছেন। আর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ-সালাম শরীফ পেশ করছেন। সুতরাং মানুষের জন্যও ফরয হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অনন্তকাল ধরে ছলাত শরীফ-সালাম শরীফ পেশ করা। যদিও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক তারা আযান, ইক্বামত, খুতবায় উচ্চারণ করুন না কেন।
অধিকন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّا اَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشّرًا وَّنَذِيْرًا ◌ لّتُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَتُعَزّرُوْهُ وَتُوَقّرُوْهُ وَتُسَبّحُوْهُ بُكْرَةً وَّاَصِيْلًا ◌
অর্থ : “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে। অতএব, তোমরা (উম্মতরা) মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি ঈমান আনো এবং তোমরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক করো, সম্মান মুবারক করো ও সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ সদা-সর্বদা উনার ছানা-ছিফত মুবারক করো।” (পবিত্র সূরা ফাত্হ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮-৯)
সুতরাং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক অনন্তকাল ধরেই করতে হবে, উনাকে অনন্তকাল ধরেই সম্মান মুবারক করতে হবে, উনার খিদমত মুবারক অনন্তকাল ধরেই করতে হবে।
অর্থাৎ অনন্তকাল ধরেই উনার প্রতি ছলাত শরীফ-সালাম শরীফ পেশ করতে হবে। এমনকি হযরত আম্বিয়া ওয়া মুরসালূন আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নুবুওওয়াত-রিসালাত মুবারকও হাদিয়া করা হয়েছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রসূল হিসেবে মেনে নেয়ার এবং সর্ব বিষয়ে উনার খিদমত মুবারক করার শর্তে।
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاِذْ اَخَذَ اللهُ مِيْثَاقَ النَّبِيّيْنَ لَمَا اٰتَيْتُكُم مّنْ كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُـمَّ جَاءَكُمْ رَسُوْلٌ مُّصَدّقٌ لّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِه وَلَتَنصُرُنَّه ۚ قَالَ اَاَقْرَرْتُـمْ وَاَخَذْتُـمْ عَلٰى ذٰلِكُمْ اِصْرِيْ ۖقَالُوْا اَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَاشْهَدُوْا وَاَنَا مَعَكُم مّنَ الشَّاهِدِيْنَ ◌
অর্থ: “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা) যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আলমে আরওয়াহতে সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাছ থেকে ওয়াদা নিয়েছিলেন যে, আপনাদেরকে আমি কিতাব ও হিকমত দান করবো। অতঃপর আপনাদেরকে সত্য প্রতিপাদনের জন্য আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করবো। আপনারা উনাকে হযরত নবী ও রসূল হিসেবে মেনে নিবেন এবং সর্ববিষয়ে উনার খিদমত মুবারক করবেন। আপনারা কি এই ওয়াদার কথা মেনে নিলেন? উত্তরে সকলে বললেন, হ্যাঁ! আমরা এই ওয়াদা স্বীকার করলাম। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, আপনারা সাক্ষী থাকুন, আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী হয়ে গেলাম।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮১)
অতএব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আলাভাবে খিদমত মুবারক করার অর্থাৎ উনার প্রতি ছলাত শরীফ-সালাম শরীফ পেশ করার শর্তেই যেখানে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নুবুওওয়াত-রিসালাত মুবারকও হাদিয়া করা হয়েছে। সেখানে আলাদা করে প্রশংসা করার জন্য পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার দরকার নেই বলা কতবড় কুফরী তা সহজেই বুঝা যায়।
মূলত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিদ্বেষীদের পক্ষেই এ ধরনের উক্তি করা সম্ভব।
অথচ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দায়িমী ছলাত শরীফ আদায় করার জন্য বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরজু পেশ করার প্রেক্ষিতে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ الطُّفَيْلِ بْنِ اُبَـىّ بْنِ كَعْبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ اَبِيهِ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا ذَهَبَ ثُلُثَا اللَّيْلِ قَامَ فَقَالَ‏ يَا اَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوا اللهَ اذْكُرُوا اللهَ جَاءَتِ الرَّاجِفَةُ تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ جَاءَ الْمَوْتُ بِـمَا فِيْهِ جَاءَ الْمَوْتُ بِـمَا فِيْهِ‏.‏ قَالَ اُبَىٌّ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنّـِي اُكْثِرُ الصَّلَاةَ عَلَيْكَ فَكَمْ اَجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلَاتِـي فَقَالَ‏ مَا شِئْتَ‏.‏ قَالَ قُلْتُ الرُّبُعَ‏.‏ قَالَ مَا شِئْتَ فَاِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ‏.‏ قُلْتُ النِّصْفَ.‏ قَالَ‏ مَا شِئْتَ فَاِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ‏.‏ قَالَ قُلْتُ فَالثُّلُثَيْنِ.‏ قَالَ مَا شِئْتَ فَاِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ‏.‏ قُلْتُ اَجْعَلُ لَكَ صَلَاتِـي كُلَّهَا.‏ قَالَ اِذًا تُكْفَى هَـمُّكَ وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ‏.‏ قَالَ اَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيْثٌ حَسَنٌ‏.‏
অর্থ : “হযরত তুফাইল ইবনে উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিতা থেকে বলেন, একদা রাতের দুই তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুতবা মুবারক প্রদান করার জন্য দাঁড়ালেন এবং ইরশাদ মুবারক করলেন, হে মানুষেরা! মহান আল্লাহ পাক উনাকে স্মরণ করুন। মহান আল্লাহ পাক উনাকে স্মরণ করুন। ভূমিকম্প এসেছে, তার সাথে মহামারীও এসেছে, যেভাবে মৃত্যু আসার সেভাবে মৃত্যুও এসেছে। হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার জন্য ছলাত মুবারক, সালাম মুবারক, ছানা-ছিফত মুবারক বেশি বেশি করতে চাই। কত সময় ধরে আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করবো ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি যতটুকু সম্ভব করুন। তাহলে চার ভাগের এক ভাগ (অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় ৬ ঘণ্টা) আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করবো ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটা শুনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি যতটুকু সম্ভব করুন, তবে এর চাইতে আরো বৃদ্ধি করতে পারলে আরো উত্তম হবে। তিনি বললেন, তাহলে অর্ধেক সময় (২৪ ঘণ্টায় ১২ ঘণ্টা) আপনার আমি ছানা-ছিফত মুবারক করবো ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাহলে কি হবে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার যতটুকু সম্ভব আপনি করুন, তবে এর চাইতে আরো বৃদ্ধি করতে পারলে আরো উত্তম হবে। সুবহানাল্লাহ! তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ (২৪ ঘণ্টায় ১৬ ঘণ্টা) আমি আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করবো ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাহলে কি হবে? শুনে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি যতটুকু ইচ্ছা পারেন করুন, তবে এর চাইতে আরো বৃদ্ধি করতে পারলে আরো উত্তম হবে।
তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাহলে আমি আমার জিন্দেগীর সমস্ত সময় (২৪টা ঘণ্টাই) আমি আপনার ছানা-ছিফত মুবারক উনার মধ্যে ব্যয় করবো। সুবহানাল্লাহ! এটা শুনে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুশি হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি খুশি হয়ে ইরশাদ মুবারক করলেন, খুব উত্তম! আপনি যদি এটা করতে পারেন তাহলে আপনার জিন্দেগীর যত নেক মকছুদ সবগুলো পুরা করে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ! এবং আপনার জিন্দেগীর যত গুনাহ-খাতা রয়েছে সব ক্ষমা করে দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ : কিতাবু ছিফাতিল ক্বিয়ামাতি ওয়া রিক্বাক্ব ওয়া ওয়ারা : হাদীছ শরীফ নং ২৪৫৭; মুস্তাদরকে হাকিম শরীফ ২/৪২১; শু‘য়াবুল ঈমান শরীফ ৩/১৩৮; জামিউল আহাদীছ শরীফ ৩২/৩৭৩; জামিউল উছূল শরীফ ১১/৮৪৬৭; রিয়াদুছ ছলিহীন ১/৩৪৭)
সুতরাং আলাদাভাবে মীলাদ শরীফ-দুরূদ শরীফ আদায়ের বিরোধিতা করা মহান আল্লাহ পাক উনাকে কটুক্তি করার শামিল। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দা-বান্দিকে দায়িমীভাবেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করতে আদেশ মুবারক করেছেন।
রোয়া এবং ঈদ কখনো বিপরীত নয় বরং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম এ রোযা রেখেও ঈদ পালন করা যায় ।
Related imageরোয়া এবং ঈদ কখনো বিপরীত নয় বরং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম এ রোযা রেখেও ঈদ পালন করা যায় ।
=================================================
বিভিন্ন বাতিল ও গোমরাহ ফেরকার লোকেরা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুধীতা করতে গিয়ে বলে থাকে, রোযা নাকি ঈদ এর বিপরীত এবং নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি উনার জম্মদিনে রোযা রেখেছেন আর আমরা ঈদ পালন করাই নাকি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুধীতা করি !!
প্রকৃত বিষয় হল, সাওম বা রোযা ঈদের বিপরীত এ ধরনের কোন কথা সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার বিধানে নেই। তাই রোযা রেখে যেমন ঈদ পালন করা যায়, তেমনি রোযা না রেখেও ঈদ পালন করা যায়। অর্থাৎ ‘ঈদ ও রোযা কখনো এক সাথে হয় না’ -এ ধরনের বক্তব্য কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
পবিত্র ৯ যিলহজ্জ শরীফ (যা ইয়াওমুল আরাফাহ বা পবিত্র আরাফা উনার দিন ) সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَمَّارِ بْنِ اَبِـي عَمَّارٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ قَرَاَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ ‏‏(‏اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَاَتْـمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلاَمَ دِيْنًا‏)‏ وَعِنْدَهٗ يَهُوْدِيٌّ فَقَالَ لَوْ اُنْزِلَتْ هٰذِهٖ عَلَيْنَا لَاتَّـخَذْنَا يَوْمَهَا عِيْدًا‏.‏ قَالَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ فَاِنَّـهَا نَزَلَتْ فِيْ يَوْمِ عِيْدٍ فِيْ يَوْمِ جُـمُعَةٍ وَيَوْمِ عَرَفَةَ‏.‏
অর্থ : “হযরত আম্মার ইবনে আবূ আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একদা ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম। …. (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)’ এ আয়াত শরীফ খানা শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেন। তখন উনার নিকট এক ইয়াহূদী ছিল, সে বলে উঠলো, যদি এমন আয়াত শরীফ আমাদের ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো, আমরা আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করতাম। এটা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, এ আয়াত শরীফ সেই দিন নাযিল হয়েছে যেদিন ঈদ ছিলো- (১) জুমুয়ার দিন এবং (২) আরাফার দিন!” (তিরমিযী শরীফ : হাদীছ শরীফ ৩৩১৮)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, পবিত্র আরাফা উনার দিবস মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন। কিন্তু ঈদের দিবস হওয়া সত্ত্বেও পবিত্র আরাফা উনার দিবসে রোযা রাখার ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبـِى قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ اَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ اَنْ يُكَفّرَ السَّنَةَ الَّتِى قَبْلَهٗ وَالسَّنَةَ الَّتِى بَعْدَهٗ.
অর্থ : “হযরত আবূ ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আরাফাহ দিবসে রোযা রাখবে তার পিছনের এক বছরের এবং সামনের এক বছরের গুনাহখতা ক্ষমা করে দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ : কিতাবুছ ছিয়াম : বাবু ইসতিহ্বাবি ছিয়ামি ছালাছাতি আইয়্যামিন মিন কুল্লি শাহরিন ওয়া ছওমি ‘আরাফাতা ওয়া ‘আশূরায়া ওয়া ইছনাইনি ওয়া খ¦মীস : হাদীছ শরীফ নং ১১৬২; আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুছ ছাওম : বাবু ফী ছাওমিদ্ দাহ্রি তাত্বওউ‘য়া : হাদীছ শরীফ নং ২৪২৫; তিরমিযী শরীফ : কিতাবুছ ছাওম : বাবু মা জায়া ফী ফাদ্বলি ইয়াওমি আরাফাহ : হাদীছ শরীফ নং ৭৪৯; ইবনে মাজাহ শরীফ : কিতাবুছ ছিয়াম : হাদীছ শরীফ নং ১৭৩০)
সুতরাং পবিত্র আরাফা উনার দিবস মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন হওয়া সত্ত্বেও এ দিবসে রোযা রাখার বিধান সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে রয়েছে। তাহলে সাওম বা রোযা হল ঈদের বিপরীত। সাওম বা রোযা পালন করলে ঈদ পালন করা যায় না, ঈদ ও সাওম কখনো এক সাথে হয় না। এই কথাগুলো কত বড় মিথ্যাচার ও পবিত্র হাদীছ শরীফ অস্বীকারের নামান্তর তা সহজেই বোধগম্য।
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার বিধান অনুযায়ী বছরে ৫ দিন রোযা রাখা হারাম।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
قد منع صيام خـمسة ايام يوم عيد الفطر وعيد الاضحى وثلاثة ايام بعده.
অর্থ : “বছরের পাঁচদিন রোযা রাখা নিষেধ। তা হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিত্বর উনার দিন, পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার দিন। আর পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার পরের তিন দিন।”
এখন উপরোক্ত হাদীছ শরীফ অনুযায়ী পবিত্র কুরবানী উনার দিন ও পরবর্তী ৩ দিন অর্থাৎ পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ উনার ১০, ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ রোযা রাখা হারাম
আবার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ اَيَّامٍ اَحَبُّ اِلٰى اللهِ اَنْ يَّتَعَبُّدَ لَهُ فِيْهَا مِنْ عَشْرِ ذِى الْـحِجَّةِ يَعْدِلُ صِيَامُ كُلّ يَوْمٍ مِنْهَا بِصِيَامِ سَنَةٍ وَ قِيَامُ كُلّ لَيْلَةٍ مِنْهَا بِقِيَامِ لَيْلَةِ الْقَدْرِ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দিনসমূহের মধ্যে এমন কোন দিন নেই যে দিন সমূহের ইবাদত মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার প্রথম দশ দিনের ইবাদত অপেক্ষা অধিক প্রিয় বা পছন্দনীয়। পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ১ম দশ দিনের প্রতি দিনের পবিত্র রোযা উনার ফযীলত হচ্ছে ১ বছর রোযা রাখার সমপরিমাণ এবং প্রতি রাতের ইবাদত উনার ফযীলত হচ্ছে পবিত্র ক্বদরের রাত উনার ইবাদতের সমপরিমাণ।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ : কিতাবুছ ছওম : বাবু মা জায়া ফীল ‘আমালি ফী আইয়্যামিল ‘আশর : হাদীছ শরীফ নং ৭৫৮)
অত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ১ম দশ দিনের, প্রতি দিনের পবিত্র রোযা উনার ফযীলত ১ বছর রোযা রাখার সমপরিমাণ। কিন্তু পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ১০ম তারিখ হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আদ্বহা। তাহলে সে দিন রোযা রাখা যায় কিভাবে? সে দিন রোযা রাখা হারাম।
পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার দিন খাদ্য গ্রহণের নিয়ম সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ بُرَيْدَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ اَبِيْهِ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ لاَ يَـخْرُجُ يَوْمَ الْفِطْرِ حَتَّى يَأْكُلَ وَكَانَ لاَ يَأْكُلُ يَوْمَ النَّحْرِ حَتَّى يَرْجِعَ‏.
অর্থ : “হযরত ইবনে বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ঈদুল ফিত্বর উনার দিন কিছু না খেয়ে বের হতেন না, আর পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার দিন পবিত্র হুজরা শরীফ উনার মধ্যে ফিরে না আসা পর্যন্ত কিছু খেতেন না।” (ইবনে মাজাহ শরীফ : কিতাবুস সিয়াম : হাদীছ শরীফ নং ১৮২৮)
অন্য বর্ণনায় বর্ণিত রয়েছে- “হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার দিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র কুরবানীর গোশত দিয়ে খাদ্য গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত অন্য কিছু খেতেন না।” (মুস্তাদরিকে হাকিম : হাদীছ শরীফ নং ১১২৭; বাদায়িউছ ছানায়ে ১/৩২৪; বাহরুর রায়িক ২/১৬৩)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার দিন পবিত্র কুরবানীর গোশত দিয়ে দিনে খাদ্য গ্রহণ শুরু করার দ্বারাই ১টি পূর্ণ রোযা রাখার ফযীলত হাছিল করা যায়। তাহলে দেখা যাচ্ছে পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার দিনেও রোযার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
সুতরাং এটা প্রমাণিত হলো যে, সাওম বা রোযা ঈদের বিপরীত নয়। অর্থাৎ সাওম পালন করলেও ঈদ পালন করা যায়। ঈদ ও সাওম কখনো এক সাথে হয় আবার কখনো এক সাথে হয় না। তাই পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের দিবস উপলক্ষ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রোযা রেখেছেন বিধায় উক্ত মহান দিনে ঈদ পালন করা যাবে না- এর স্বপক্ষে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের কোন বিধানই নেই। বরং উপরোক্ত আলোচনা হতে প্রমাণিত যে, ঈদের দিনেও রোযা রাখা যায় এবং রোযা রেখেও ঈদ পালন করা যায় এবং ঈদ পালন করাটা কখনোই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুধীতা নয়। আর সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার বিধান যেখানে যেভাবে বলা হয়েছে সেখানে সেভাবেই মানতে হবে। নিজের মনগড়া মত প্রদান করার কোন সুযোগ নেই।
কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍ ۚ فَمَا جَزَاءُ مَن يَفْعَلُ ذٰلِكَ مِنْكُمْ اِلَّا خِزْيٌ فِي الْـحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ اِلٰى اَشَدّ الْعَذَابِ ۗ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ ◌
অর্থ : “তোমরা কী কিতাবের কিছু মানবে আর কিছু অস্বীকার করবে? যারা এরূপ করে, পার্থিব জীবনে দূর্গতি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৫)
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুবারক তাজদীদ - সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা সকল ঈদের সেরা ঈদ, ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন মুবারকের ঈদ
Related imageসর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুবারক তাজদীদ - সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা সকল ঈদের সেরা ঈদ, ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন মুবারকের ঈদ
=================================================
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক তাজদীদ আন নাযীরু, আন নাজমুছ ছাক্বিবু, আন নূরুম মুজাসসামু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার দিনই হচ্ছে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদু ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদু ঈদে আকবর এবং তা পালন করা জিন-ইনসান তো অবশ্যই বরং কুল-কায়িনাতের জন্য ফরয আর এই মুবারক তাজদীদই হচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ তাজদীদ মুবারক ।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
محمد رسول الله
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল।” (পবিত্র সূরা ফাতহ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)
মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক ফরমান,
وما محمد الا رسول
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রসূলুল্লাহ ব্যতীত আর কিছুই নন।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৪)
আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি সমস্ত সৃষ্টির জন্যে রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।” (মুসলিম শরীফ)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু আমাদেরই রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নন; বরং তিনি মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সহ সমস্ত মাখলুকাতের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার পরেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাক্বাম। তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক নন। এছাড়া বাকি সমস্ত মর্যাদা-মর্তবার অধিকারী তিনি। সুবহানাল্লাহ!
আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা হচ্ছে- কোনো ব্যক্তি যদি ক্বিয়ামত পর্যন্ত শুধু لا اله الا الله“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পড়ে তারপরেও সে ঈমানদার হতে পারবে না যতোক্ষণ পর্যন্ত না “মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” না পড়বে। সম্মানিত বেহেশত উনার দরজায়, গাছের পাতায় পাতায়, হুর-গেলমানদের কপালে কপালে কুদরতীভাবে সোনালী হরফে লিখা রয়েছে-
“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”।  এই পবিত্র কালিমা শরীফ শুধু উম্মতে হাবীবী তথা আমাদের জন্যই খাছ নয়; বরং সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত মাখলুকাতের, এমনকি সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও পবিত্র কালিমা শরীফ হচ্ছে এই পবিত্র কালিমা শরীফ।” সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি  নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘হাবীবুল্লাহ’ হিসেবেই সৃষ্টি করেছেন।
এ সম্পর্কে হাদীছে কুদসী শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে,
كنت كنزا مخفيا فاحببت ان اعرف فخلقت الخلق لاعرف
অর্থ: “আমি গুপ্ত ছিলাম। আমার মুহব্বত হলো যে, আমি জাহির হই। তখন আমি আমার (রুবুবিয়্যত) জাহির করার জন্যই সৃষ্টি করলাম মাখলূকাত (আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে)।” (আল মাকাসিদুল হাসানা/ ৮৩৮, কাশফূল খিফা/২০১৩, আসনাল মুত্বালিব/১১১০, তমীযুত তীব/১০৪৫, আসরারুল মারফুআ/৩৩৫, তানযিয়াতুশ শরীয়াহ ১/১৪৮, আদ্দুরারুল মুন্তাছিরা/৩৩০, আত তাযকিরা ফি আহাদীসিল মুশতাহিরা/১৩৬, সিররুল আসরার, কানযুল উম্মাল)
মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-
لولاك لما اظهرت الربوبية
অর্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য না থাকলে আমি আমার রুবুবিয়্যতই প্রকাশ করতাম না।” (কানযুল উম্মাল)
হাদীছে কুদসী শরীফ-এ আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اتانى جبريل عليه السلام فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم لولاك ماخلقت الجنة ولولاك ماخلقت النار
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন: হযরত জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম আমার নিকট আগমন করে বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহু ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে এই বলে পাঠিয়েছেন যে, আপনি যদি না হতেন তবে আমি জান্নাত ও জাহান্নাম কিছুই সৃষ্টি করতাম না।” (দায়লামী, কানযুল উম্মাল-৩২০২২)
মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি স্বীয় হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি  মুবারক না করতেন, তাহলে কোনো কিছুই সৃষ্টি করতেন না। এই সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন “আমি যদি আমার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হযরত মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি মুবারক না করতাম তাহলে আমি আপনাকেও সৃষ্টি করতাম না।” (মুসতাদরেকে হাকীম)
এমনকি কাউকে কোনো পবিত্র নুবুওওয়াত মুবারক, কোনো রিসালত মুবারক দেয়া হতো না বা প্রকাশ পেতো না যতোক্ষণ পর্যন্ত না আপনার প্রতি পবিত্র ঈমান আনা হতো। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “রোযাদারের জন্য দুটি খুশি বা ঈদ। একটা হচ্ছে ইফতার করার সময়। আর একটা মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাৎ মুবারক উনার সময়।” (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
عَنْ حَضْرَتْ عُبَيْدِ ابْنِ السَّبَّاقِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي جُـمُعَةٍ مِنَ الْـجُمَعِ يَا مَعْشَرَ الْمُسْلِمِيْنَ اِنَّ هٰذَا يَوْمٌ جَعَلَهُ اللهُ عِيْدًا فَاغْتَسِلُوْا وَمَنْ كَانَ عِنْدَهٗ طِيْبٌ فَلَا يَضُرُّهٗ اَنْ يـَّمَسَّ مِنْهُ وَعَلَيْكُمْ بِالسّوَاكِ
অর্থ : “হযরত উবাইদ বিন সাব্বাক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক পবিত্র জুমুআ উনার দিনে ইরশাদ মুবারক করেন, এ পবিত্র জুমআহ উনার দিন হচ্ছেন এমন একটি দিন, যে দিনকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র ঈদ উনার দিন সাব্যস্ত করেছেন। তাই তোমরা গোসল কর আর যার নিকট সুগন্ধি রয়েছে, সে তা হতে স্পর্শ করলে ক্ষতি নেই। মিসওয়াক ব্যবহার করা তোমাদের কর্তব্য।” সুবহানাল্লাহ! (মুয়াত্তা মালিক শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৪৪, ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১১৯৮, মা’য়ারিফুস সুনান ওয়াল আছার বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ ১৮০২, মুসনাদে শাফিয়ী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৬৮, আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৩৪৩৩)এছাড়াও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র আরাফা উনার দিনকেও ঈদের দিন বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, –
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي لُبَابَةَ بْنِ عَبْدِ الْمُنْذِرِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ سَيّدُ الاَيَّامِ وَاَعْظَمُهَا عِنْدَ اللهِ وَهُوَ اَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ مِنْ يَّوْمِ الاَضْحٰى وَيَوْمِ الْفِطْرِ فِيْهِ خَـمْسُ خِلَالٍ خَلَقَ اللهُ فِيْهِ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَاَهْبَطَ اللهُ فِيْهِ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِلَى الْأَرْضِ وَفِيْهِ تَوَفَّى اللهُ حَضْرْتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَفِيْهِ سَاعَةٌ لَا يَسْأَلُ اللهَ فِيْهَا الْعَبْدُ شَيْئًا اِلَّا اَعْطَاهُ مَا لَـمْ يَسْأَلْ حَرَامًا وَفِيْهِ تَقُوْمُ السَّاعَةُ مَا مِنْ مَلَكٍ مُّقَرَّبٍ وَلَا سَـمَاءٍ وَلَا اَرْضٍ وَلَا رِيَاحٍ وَلَا جِبَالٍ وَلَا بَـحْرٍ اِلَّا وَهُنَّ يُشْفِقْنَ مِنْ يَّوْمِ الْـجُمُعَةِ‏.
অর্থ : “হযরত আবূ লুবাবা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র জুমআ শরীফ উনার দিন সকল দিনের সাইয়্যিদ এবং সকল দিন অপেক্ষা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এদিনটি পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার দিন ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার দিন অপেক্ষাও মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এ দিনটিতে পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয় রয়েছে- (১) এ দিনে মহান আল্লাহ পাক তিনি আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন, (২) এ দিনে উনাকে যমীনে প্রেরণ করেছেন, (৩) এ দিনে তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, (৪) এ দিনটিতে এমন একটি সময় রয়েছে, যে সময়টিতে বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করেন, যে পর্যন্ত না সে হারাম কিছু চায় এবং (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এমন কোন ফেরেশতা আলাইহিস সালাম নেই, আসমান নেই, যমীন নেই, বাতাস নেই, পাহাড় নেই, সমুদ্র নেই, যে জুমুআর দিন সম্পর্কে ভীত নয়।” (ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১১৩৭, আল্ মু’জামুল কবীর লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৪৫১১, বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৯৭৩)
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,-
قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَـمَ اللّٰـهُمَّ رَبَّنَا اَنْزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُوْنُ لَـنَا عِيْدًا لّاَوَّلِنَا وَاٰخِرِنَا وَاٰيَةً مّنْكَ ۖ وَارْزُقْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ ◌ قَالَ اللهُ اِنّــِيْ مُنَزِّلُـهَا عَلَيْكُمْ ۖ فَمَنْ يَكْفُرْ بَعْدُ مِنْكُمْ فَاِنّـِـيْ اُعَذّبُهٗ عَذَابًا لَّا اُعَذّبُهٗ اَحَدًا مّنَ الْعَالَمِيْنَ ◌
অর্থ : “হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহি তিনি বলেন, আয় আমাদের রব মহান আল্লাহ পাক! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশ্তী) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষ্যটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ (খুশি) স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ হতে একটি নিদর্শন হবে। আমাদেরকে রিযিক দান করুন।
নিশ্চয় আপনিই উত্তম রিযিকদাতা। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই আমি আপনাদের প্রতি খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করবো। অতঃপর যে ব্যক্তি সে খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিলের দিনকে ঈদ বা খুশির দিন হিসেবে পালন করবেনা বরং অস্বীকার করবে আমি তাকে এমন শাস্তি দিবো, যে শাস্তি সারা কায়িনাতের অপর কাউকে দিবো না।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪-১১৫)
এখন বলার বিষয় হচ্ছে, আবুল বাশার হযরত আদম শফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আগমন ও বিছাল শরীফ এর দিন হওয়ার কারণে পবিত্র জুময়া উনার দিন যদি পবিত্র ঈদ উনার দিন হয় এবং তা পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পবিত্র ঈদুল আযহা উনার দিন থেকেও সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠ হয়, পবিত্র আরাফা উনার দিন যদি পবিত্র ঈদ উনার দিন হয়, রোযাদারের জন্য যদি ইফতারের সময় ঈদ হয়, খাঞ্চা নাযিলের কারণে খাঞ্চা নাযিলের উক্ত দিনটি যদি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এবং উনার উম্মতের জন্য খুশির দিন হয় এবং সে দিনকে খুশির দিন হিসেবে পালন না করলে কঠিন শাস্তির যোগ্য হতে হয়; তাহলে যিনি সৃষ্টি না হলে মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমান-যমীন, আরশ-কুরসী, লওহ, কলম, জামাদাত-শাজারাত-হাজারাত, জিন-ইনসান কোনো কিছুই সৃষ্টি করতেন না, কোনো হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালাম সৃষ্টি হতেন না, হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনারাও সৃষ্টি হতেন না। রোযা, নামায, যাকাত এমনকি খোদ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অজুদ মুবারক খুঁজে পাওয়া যেতো না, শুধু তা-ই নয় স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার রুবূবিয়াতকেও প্রকাশ করতেন না, তাহলে সেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেই দিন যে তারিখে এই দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ আনলেন, সেই পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার দিন কি পবিত্র ঈদ উনার দিন হবে না, অন্যান্য ঈদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, মর্যাদাবান ও ফযীলতপূর্ণ হবে না এবং সমস্ত মাখলুকাতের জন্য তা পালন করা ফরয-ওয়াজিব হবে না?
অবশ্যই অবশ্যই সেই দিন পবিত্র ঈদের দিন হবে, সকল ঈদের সেরা ঈদ তথা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদু ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদু ঈদে আকবর হবে এবং তা পালন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য তো অবশ্যই এমন কি সমস্ত মাখলুকাতের জন্য ফরয-ওয়াজিব হবে। আর তা পালন না করলে কঠিন শাস্তিতে গ্রেফতার হতে হবে।
আর এটাই হচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সর্বশ্রেষ্ঠ তাজদীদ মুবারক। আর এই মুবারক তাজদীদ-ই হচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ তাজদীদ মুবারক। কেননা অন্যান্য মুজাদ্দিদগণ উনাদের তাজদীদসমূহ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সাথে সম্পৃক্ত। আর এই মুবারক তাজদীদ স্বয়ং পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রতিষ্ঠাতা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অজুদ মুবারক উনার সাথে সম্পৃক্ত। যিনি না হলে খোদ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অজুদ মুবারক পাওয়া যেতো না।
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অজুদ মুবারক উনার মর্যাদা, বুযুর্গী, সম্মান অন্যান্য তাজদীদসমূহের তুলনায় অনেক বেশি। আর এর তাজদীদকারী সুমহান মুজাদ্দিদ উনার মর্যাদা, সম্মান, বুযুর্গীও অন্যান্য মুজাদ্দিদ উনাদের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং এই তাজদীদ মুবারক-ই হচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুবারক তাজদীদ। আর এর তাজদীদকারী মুজাদ্দিদই হচ্ছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ। আর এই জন্যই উনার দ্বারা শোভা পেয়েছে এই তাজদীদ মুবারক করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে সুমহান মুজাদ্দিদ উনাকে চেনার এবং উনার এই মুবারক তাজদীদকে বুঝার তাওফীক দান করুন, কবুল করুন, মদদ করুন। (আমীন)