মহাসম্মানিত সুন্নতী খাদ্যসমূহ- আঙ্গুর , কিশমিশ ও আনার/ডালিম/বেদানা


 
মহাসম্মানিত সুন্নতী খাদ্যসমূহ- আঙ্গুর , কিশমিশ ও আনার/ডালিম/বেদানা 

৩৭. আঙ্গুর (اَلْاَعْنَابُ) আল আ’নাব

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَيَـوَدُّ اَحَدُكُمْ اَنْ تَكُوْنَ لَهٗ جَنَّةٌ مِّنْ نَّـخِيْلٍ وَّاَعْنَابٍ تَـجْرِيْ مِنْ تَـحْتِهَا الْاَنْـهَارُ

অর্থ: “তোমাদের কেউ পছন্দ করে যে, তার একটি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান হবে, এর তলদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত হবে।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৬৬)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

اَنَّا صَبَـبْـنَا الْمَاءَ صَبًّا. ثُـمَّ شَقَقْنَا الْأَرْضَ شَقًّا. فَاَنْـبَـتْـنَا فِيْـهَا حَبًّا. وَّعِنَـبًا وَّقَضْبًا. وَّزَيْـتُـوْنًا وَّنَـخْلًا. وَحَدَائِقَ غُلْبًا

অর্থ: “আমি আশ্চর্য উপায়ে পানি বর্ষণ করেছি। এরপর আমি ভূমিকে বিদীর্ণ করেছি। অতঃপর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য। আঙ্গুর, শাক-সবজি, জয়তুন, খেজুর, ঘন উদ্যান।” (পবিত্র সূরা ‘আবাসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৫-৩০)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنَّا نُصِيْبُ فِيْ مَغَازِيْـنَا الْعَسَلَ وَالْعِنَبَ فَـنَأْكُلُهٗ وَلَا نَـرْفَـعُهٗ.

অর্থ: “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ‘উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলিইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে অবস্থান মুবারক কালীন সময়ে) আমরা জিহাদের সময় মধু ও আঙ্গুর লাভ করতাম। আমরা তা খেয়ে নিতাম, (খুমুস হিসেবে) জমা রাখতাম না।” (বুখারী শরীফ: কিতাবু ফারদ্বুল খুমুস: হাদীছ শরীফ নং ৩১৫৪)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- “আঙ্গুর ফল রক্তকে বিশুদ্ধ করে, বলিষ্ঠতা দান করে এবং কিডনিতে শক্তি সঞ্চার করে তাকে পরিস্কার করে।”


৩৮. কিশমিশ (زَبِيْبٌ) যাবীব

কিশমিশ হলো আঙ্গুর ফলের শুকনা রূপ। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَتَّابِ بْنِ أَسِيْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ اَمَرَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنْ يُـخْرَصَ الْعِنَبُ كَمَا يُـخْرَصُ النَّخْلُ وَتُؤْخَذُ زَكَاتُهُ زَبِيْبًا كَمَا تُؤْخَذُ زَكَاةُ النَّخْلِ تَـمْرًا.

অর্থ: “হযরত আত্তাব ইবনে আসীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আঙ্গুরের পরিমাণ নির্ধারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন, যেমন খেজুরের পরিমাণ নির্ধারণ হয় এবং আঙ্গুরের যাকাত গ্রহণ করবে কিশমিশ দ্বারা যেমন খেজুরের যাকাত খুরমা দ্বারা নেয়া হয়।” (আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুয যাকাত : হাদীছ শরীফ নং ১৬০৩)

অর্থাৎ খুরমা যেমন খেজুরের শুকনা রূপ বা অবস্থা তেমনি কিশমিশও আঙ্গুরের শুকনা রূপ।

কিশমিশ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُنْقَعُ لَهُ الزَّبِيْبُ فَيَشْرَبُهُ الْيَوْمَ وَالْغَدَ وَبَعْدَ الْغَدِ اِلٰى مَسَاءِ الثَّالِثَةِ ثُـمَّ يَأْمُرُ بِهٖ فَيُسْقٰى اَوْ يُهَرَاقُ‏.

অর্থ: “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য জন্য কিমিশ পানিতে ডুবিয়ে রাখা হতো। তিনি সেদিন, তার পরের দিন এবং তৃতীয় দিন বিকাল পর্যন্ত তা পান করতেন। অতঃপর উনার নির্দেশ মুবারক-এ কোন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পান করানো হতো কিংবা ফেলে দেয়া হতো।” (মুসলিম শরীফ: কিতাবুশ শারাবাহ্: হাদীছ শরীফ নং ৫১২৩)

কিশমিশের উপাদান:

এক গবেষনায় জানা যায়, প্রতি ১০০ গ্রাম কিশমিশে রয়েছে এনার্জি ৩০৪ কিলোক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট ৭৪.৬ গ্রাম, ডায়েটরি ফাইবার ১.১ গ্রাম, ফ্যাট ০.৩ গ্রাম, প্রোটিন ১.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৮৭ মিলিগ্রাম, আয়রন ৭.৭ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৭৮ মিলিগ্রাম ও সোডিয়াম ২০.৪ মিলিগ্রাম। এটি রক্তে শর্করার মাত্রায় ঝামেলা তৈরী করে না। এটি খেলে শরীরের রক্ত দ্রুত বৃদ্ধি পায়, পিত্ত ও বায়ুর সমস্যা দূর হয়। এটি হৃদপিণ্ডের জন্যও অনেক উপকারী।

কিশমিশের উপকারিতা:

১. কিশমিশে রয়েছে চিনি, গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ, যা তাৎক্ষণিকভাবে দেহে এনার্জি সরবরাহ করে থাকে। তাই দুর্বলতার ক্ষেত্রে কিশমিশ খুবই উপকারি।

২. কিশমিশে রয়েছে ওলিনোলিক অ্যাসিড, যা মুখের ভেতরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে বাঁধা দিয়ে দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষা করে।

৩. কিশমিশে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং বোরন নামক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস। ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করে এবং বোরন হাড়ের ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে।

৪. কিশমিশের পলিফেনলস এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফেমেটরী উপাদান কাঁটা-ছেড়া বা ক্ষত হতে ইনফেকশন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।

৫. কিশমিশে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনলিক অ্যাসিড, যা ক্যান্সার মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

৬. কিশমিশে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা পরিপাকক্রিয়া দ্রুত হতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।

৭. কিশমিশে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লৌহ উপাদান। যা অবসাদ ও শারীরিক দুর্বলতা দূর করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।

৮. কিশমিশে রয়েছে ব্যাকটেরিয়ারোধী, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ফলে এটা ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জ্বর নিরাময় করতে সাহায্য কারে।

৯. কিশমিশে রয়েছে ভিটামিন এ, এ-বিটা ক্যারোটিন এবং এ-ক্যারোটিনয়েড। যা চোখের ‍দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে।

১০. কিশমিশ শরীরে পটাশিয়াম বাড়িয়ে এবং সোডিয়াম কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

তাছাড়া, কিশমিশ খারাপ কোলেস্টেরল কমায়, অনিদ্রা দূর করে, এসিডিটি কমায়, ওজন বাড়ায় এবং মস্তিষ্কের জন্য উপকারি।

কিশমিশ খাওয়ার নিয়ম:

১৫০ গ্রাম কিশমিশ ভালো করে ধুয়ে ১ গ্লাস পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। পরেরদিন সকালে কিশমিশ ছেকে নিয়ে সেই পানি হালকা গরম করে খালি পেটে খেয়ে নিন। এর পরে আধ ঘন্টা আর অন্য কোনও খাবার খাওয়া চলবে না। সপ্তাহে কমপক্ষে চারদিন এই পানি খেলে এক মাসের মধ্যেই তফাৎটা অনুভব করবেন। অথবা প্রতিদিন ৬/৭ টা বা যতটা পারেন নিয়মিত খাবেন।

৩৯. আনার/ডালিম/বেদানা (رُمَّانٌ) রুম্মান

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فِيْهِمَا فَاكِهَةٌ وَّنَـخْلٌ وَّرُمَّانٌ

অর্থ: “তথায় আছে ফল-মূল, খেজুর ও আনার।” (পবিত্র সূরা রহমান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৮)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْل اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏‏مَا مِنْ رُمَّانٍ مِّنْ رُمَّانِكُمْ هٰذَا اِلَّا وَهُوَ مُلقَّحٌ بِـحَبَّةٍ مِّنْ رُمَّانِ الْـجَنَّةِ‏‏

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, প্রতিটি ডালিম জান্নাতের পানির একটি ফোঁটা ধারণ করে।” (তাফসীরে দূররে মানছূর লিস সূয়ূতী, তারীখে দামেশক)

ফলশ্রুতিতে ডালিমে রয়েছে এমন সব গুণাগুণ যা পৃথিবীর অন্য কোন ফলে নেই।

অন্য বর্ণনায় বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْل اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اَكَلَ حَبَّةً مِّنْ رُمَّانٍ اَمْرَضَتْ شَيْطَانَ الْوَسْوَسَةِ اَرْبَعِيْنَ يَـوْماً.

অর্থ: “হযরত আবূ আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আনার বা ডালিম ফল খাবে, এটি তাকে শয়তানের প্রভাব থেকে ৪০ দিনের জন্য পবিত্র রাখবে।” সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুল কাফী)

আনারের উপকারিতা:

১. রক্ত পরিশুদ্ধ করে

২. শরীরে শক্তি সঞ্চার করে

৩. পাকস্থলি পরিস্কার করে

৪. পরিপাকতন্ত্রের বাধা ও জটিলতা দূর করে

৫. ডায়রিয়া বন্ধ করে

৬. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে

৭. স্নায়ুকে শক্তিশালী করে

৮. কণ্ঠ বা গলা পরিস্কার রাখে

৯. ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখে

১০. হৃৎপিণ্ড ভালো রাখে

১১. স্কিন ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

১২. ভুলে যাওয়া রোগ এলজেইমা প্রতিরোধ করে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে

১৩. রক্তস্বল্পতা দূর করে

১৪. হাড়ের রোগ প্রতিরোধ করে হাড়কে সুস্থ রাখে

১৫. দাঁতের রোগ প্রতিরোধ করে

১৬. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে

১৭. সর্দি-কাশি ভালো করে

১৮. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে

১৯. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

২০. ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক সংক্রমণ ঘায়ের প্রতিষেধক

২১. পেশীর ব্যাথা দূর করে

২২. ভিটামিন সি, , কে সহ উল্লেখযোগ্য পুষ্টির যোগান দেয় ইত্যাদি।

৪০. ডুমুর/আঞ্জির (تِيْنٌ) তীন

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ‘তীন’ নামে একটি পবিত্র সূরা শরীফ নাযিল করেছেন এবং সেখানে তীনের শপথ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَالتِّيْنِ وَالزَّيْـتُـوْنِ

অর্থ: “শপথ! তীন ও যয়তুনের।” (পবিত্র সূরা তীন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১)

এছাড়া পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ اُهْدِيَ اِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَبَقُ مِنْ تِيْن فَقَالَ لِاَصْحَابِهٖ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُمْ : كُلُوا التِّيْنَ فَلَوْ قُلْتُ اِنَّ فَاكِهَةً نَزَلَتْ مِنَ الْـجَنَّةِ بِلَا عَجْمٍ لَقُلْتُ هِيَ التِّيْنُ وَاِنَّهٗ يَذْهَبُ بِالْبَـوَاسِيْرِ وَيَـنْـفَعُ مِنَ النِّقْرِسِ

অর্থ: “হযরত আবূ যর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে এক থালা তীন (ডুমুর) আসলে, তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা তীন (ডুমুর) ফল খান, যদি আমি বলতাম, সম্মানিত জান্নাত হতে একটি ফল বীজ ছাড়া (যমীনে) নাযিল হয়েছে তাহলে বলতাম নিশ্চয়ই সেটা তীন (ডুমুর) ফল। তীন (ডুমুর) অর্শ (পাইলস) রোগের জন্য প্রতিষেধক এবং গেঁটেবাতের জন্য বিশেষ উপকারি।” (জামিউছ ছগীর লিস সুয়ূতী ২য় খণ্ড ১৬৬ পৃষ্ঠা: হাদীছ শরীফ নং ৬৩৯৩; ফতহুল কবীর লিস সুয়ূতী ২য় খণ্ড ৩০০ পৃষ্ঠা: হাদীছ শরীফ নং ৮৬৬৭;  মুসনাদে ফিরদাঊস লি দায়লামী; কানযুল উম্মাল শরীফ ১০ম খণ্ড ৮৯ পৃষ্ঠা: হাদীছ শরীফ নং ২৮৩০৭)

তীন (ডুমুর) গরম প্রকৃতির ফল এবং শুষ্ক ও ভেজা উভয় ধরণের হয়। ডুমুর অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেক বেশি পুষ্টিকর। শুষ্ক ডুমুর অধিক পুষ্টিগুণে ভরপুর।

ডুমুরের উপকারিতা:

১. অর্শ (পাইলস্) ও গিঁটবাতের প্রতিষেধক

২. যকৃতে ও প্রোস্টেটে জমাটকৃত ময়লা দূর করে, যকৃত সুস্থ রাখে

৩. দেহে বিষ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে

৪. বুক, গলা ও শ্বাসনালীর রুক্ষতা দূর করে

৫. শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি (বিষন্নভাব) দূর করতে সাহায্য করে

৬. ফুসফুসের জমাটবাধা কফ পরিস্কার করে

৭. শরীরে পুষ্টি সরবরাহ করে

৮. নার্ভ (স্নায়ু) শক্তিশালী করে

৯. নারী-পুরুষের দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি করে

১০. এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

১১. রক্তে ক্ষতিকর সুগারের পরিবর্তে ন্যাচারাল সুগার তৈরী করে ভারসাম্য রক্ষা করে।

১২. মরণব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।

১৩. ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। ফাইবার সমৃদ্ধ এই ফল খাদ্য তালিকায় রাখার ফলে ৩৪% নারীর মধ্যে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম দেখা গিয়েছে।

১৪. চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। শিশুদের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে তীন ফল একান্ত অপরিহার্য।

১৫. শরীরের অপ্রয়োজনীয় মেদ বা চর্বি কমায়।

১৬. হার্ট এটাকের ঝুঁকি কমায়।

১৭. মরণব্যাধি ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে রাখে ইনসুলিনের ওপর নির্ভরশীল ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ডুমুর খুবই উপকারী।

১৮. কাঁচা ডুমুর চর্মরোগের ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। থেঁতো করে ব্রণ ও মেছতায় নিয়মিত লাগালে তা সেরে যায়।

১৯. গর্ভবতী মা ও শিশুর রক্তশূন্যতা রোধ করে কার্যকরী।

২০. ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

২১. এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলস প্রতিরোধে সহায়তা করে।

২২. শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানী রোগ নিরাময়েও সহায়তা করে।

২৩. যাদের দুধ ও দুধের তৈরী খাবারে অ্যালার্জি আছে তাঁরা ক্যালসিয়ামের ঘাটতির পূরণের জন্য নিয়মিত ডুমুর খেতে পারেন। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম।

২৪. শুকনা তীন একরাত যয়তুনের তেলে ভিজিয়ে সকালে ১ টা খেলে গায়ের বিভিন্ন রকম ব্যাথার উপশম হয়।



মহাসম্মানিত সুন্নতী খাদ্যসমূহ- খেজুর চিপা রস ও কিশমিশের রস মিশ্রিত শরবত , শসা ও তরমুজ

 মহাসম্মানিত সুন্নতী খাদ্যসমূহ- খেজুর চিপা রস ও কিশমিশের রস মিশ্রিত শরবত , শসা ও তরমুজ

৩৪. খেজুর চিপা রস ও কিশমিশের রস মিশ্রিত শরবত

এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ صَفِيَّةَ بِنْتِ عَطِيَّةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهَا قَالَتْ دَخَلْتُ مَعَ نِسْوَةٍ مِنْ عَبْدِ الْقَيْسِ عَلٰى حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَسَأَلْنَاهَا عَنِ التَّمْرِ وَالزَّبِيْبِ فَـقَالَتْ كُنْتُ اٰخُذُ قَـبْضَةً مِنْ تَـمْرٍ وَقَـبْضَةً مِنْ زَبِيْبٍ فَاُلْقِيْهِ فِي اِنَاءٍ فَأَمْرُسُهُ ثُـمَّ اَسْقِيْهِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ‏‏.‏

অর্থ: “হযরত সাফিয়্যাহ বিনতু ‘আত্বিয়্যাহ রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ‘আবদুল ক্বায়িস গোত্রের মহিলাদের সঙ্গে আমি উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক খিদমতে উপস্থিত হলাম। উনাকে খেজুর ও কিশমিশ মিশ্রিত শরবত সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি এক মুষ্টি খেজুর ও এক মুষ্টি কিশমিশ একটি পাত্রে ঢালতাম। তা আঙ্গুল দিয়ে চেপে রস বের করতাম, অতঃপর তা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পান করাতাম।” (আবূ দাঊদ শরীফ: কিতাবুশ শারাবাহ: হাদীছ শরীফ নং ৩৭০৮)

৩৫. শসা (قِثَّاءٌ) কিছ্ছা

শসার সাথে খেজুর একসাথে খাওয়াকে কিছ্ছা বলে। এটি গরম ও ঠান্ডার একটি সুষম মিশ্রণ। এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ جَعْفَرٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ اَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَأْكُلُ الْقِثَّاءَ بِالرُّطَبِ

অর্থ: “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জাফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শসার সঙ্গে ‘রুত্বাব’ (পাঁকা খেজুর) খেতেন।” (আবূ দাঊদ শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামাহ: হাদীছ শরীফ নং ৩৮৩৫)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে কিছ্ছার উপকারিতা সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ اَرَادَتْ اُمِّي اَنْ تُسَمِّنِّي لِدُخُوْلِيْ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ اَقْبَلْ عَلَيْهَا بِشَىْءٍ مِـمَّا تُرِيْدُ حَتّٰى اَطْعَمَتْنِي الْقِثَّاءَ بِالرُّطَبِ فَسَمِنْتُ عَلَيْهِ كَأَحْسَنِ السِّمَنِ‏

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার মুবারক ইচ্ছা ছিল আমাকে স্বাস্থ্যবতী বানিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক হুজরা শরীফ পাঠাবেন। এজন্য তিনি অনেক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, কিন্তু কোন ফল হয়নি। শেষে তিনি আমাকে কিছ্ছার সাখে রুত্বাব (পাকা খেজুরের সাথে শসা) খাওয়াতে থাকলে আমি তাতে উত্তমরূপে স্বাস্থ্যের অধিকারী হই।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ: কিতাবুত ত্বিব: হাদীছ শরীফ নং ৩৯০৩)

শব্দগত কিছু পার্থক্যসহ অত্র হাদীছ শরীফখানা ইবনে মাজাহ শরীফ (কিতাবুত ত্বয়ামাহ্: হাদীছ শরীফ নং ৩৩২৪) উনার মধ্যেও বর্ণিত রয়েছে।

অর্থাৎ কিছ্ছা স্বাস্থ্য উন্নয়নে সহায়ক।

প্রস্তুত প্রণালী: শসাকে টুকরা করে কেটে একটি প্লেটে রাখুন, প্রতি টুকরা শসার সাথে ১টি অথবা আংশিক খেজুরসহ খাওয়া যায়। আবার শসাকে সালাদের মত কুচি কুচি করে কেটে তার সাথে খেজুরের কুচি একত্র করেও খাওয়া যায়।

৩৫(১) শসা: قِثَّاءٌ বলতে শুধু শশাকেও বুঝায়। আরবী خِيار ব্দ দিয়েও শসা বুঝায়।

উপকারিতা:

১. ফাইবার ও ফ্লুইডসমৃদ্ধ শসা শরীরে ফাইবার এবং পানির পরিমাণ বাড়ায়। পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফাইবার থাকার কারণে শসা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে।

২.  শসায় ও শসার খোসায় রয়েছে স্টেরল নামের এক ধরনের উপাদান, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৩. দেহের মেদ নিয়ন্ত্রণে শসা খুব উপকারী।

৪. কিডনি, ইউরিনারি, ব্লাডার, লিভার ও প্যানক্রিয়াসের সমস্যায় শসা বেশ সাহায্য করে থাকে।

৫. এরেপসিন নামক অ্যানজাইম থাকার কারণে শসা হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সমাধান করে থাকে।

৬. শসা বা শসার রস ডায়াবেটিস রোগীর জন্যও বেশ উপকারী।

৭. শসার রস আলসার, গ্যাস্ট্রাইটিস, অ্যাসিডিটির ক্ষেত্রেও উপকারী।

৮. মিনারেলসমৃদ্ধ শসা নখ ভালো রাখতে, দাঁত ও মাড়ির সমস্যায় সাহায্য করে।

৯. ডাক্তারের পরামর্শনুযায়ী শসার রস খেলে আর্থ্রাইটিস, একজিমা, হার্ট ও ফুসফুসের সমস্যায় উপকার হতে পারে।

১০. গাজরের রসের সাথে শসার রস মিশিয়ে খেতে ইউরিক অ্যাসিড থেকে উদগত ব্যাথার সমস্যায় কাজ করে।

৩৬. তরমুজ (بِطِّيْخٌ) বিত্তীখ্ব

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْكُلُ الْبِطِّيْخَ بِالرُّطَبِ فَـيَـقُوْلُ ‏نَكْسِرُ حَرَّ هٰذَا بِبَـرْدِ هٰذَا وَبَـرْدَ هٰذَا بِـحَرِّ هٰذَا‏‏.

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাজা খেজুর দিয়ে তরমুজ খেতেন। তিনি বলতেন, এর ঠান্ডা ওটার গরম কমাবে, এবং এর গরম ওটির ঠান্ডা কমিয়ে দিবে।” (আবূ দাঊদ শরীফ: কিতাবুত ত্বয়াম: হাদীছ শরীফ নং ৩৮৩৬)

তরমুজের অসাধারণ গুণাগুণ সম্পর্কে একটি পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে- “তোমাদের মধ্যে এমন কোন মহিলা নেই যে গর্ভধারণ করা অবস্থায় তরমুজ খেয়েছে অথচ সন্তান প্রসবে ব্যর্থ হয়েছে, এটি নবজাতকের মুখ-অবয়ব ও চরিত্রের জন্য উত্তম।”

তরমুজের রাসায়নিক উপাদান:

তরমুজে প্রায় ৯২% পানি আছে। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তরমুজে রয়েছে ৯২ থেকে ৯৫ গ্রাম পানি, আঁশ ০.২ গ্রাম, আমিষ ০.৫ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, ক্যালোরি ১৫ থেকে ১৬ মি.গ্রাম। এছাড়াও তরমুজে ক্যালসিয়াম রয়েছে ১০ মি.গ্রাম, আয়রন ৭.৯ মি.গ্রাম, কার্বহাইড্রেট ৩.৫ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.২ গ্রাম, ফসফরাস ১২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ও ভিটামিন বি। তরমুজের বিশেষ কয়েক ধরনের অ্যামাইনো এসিডও পাওয়া যায়।

তরমুজের উপকারিতা:

১. পানি শূণ্যতা নিবারণ করে: তরমুজে যেহেতু প্রায় ৯২% পানি। তাই নিদারুণ গরমের মধ্যে তরমুজ খেলে সহজেই পানির তৃষ্ণা মিটানো যায়, ফলে পানি শূণ্যতা নিবারণ করা যায়।

২. মূত্রবর্ধক এবং কিডনি ও লিভার সুস্থ রাখে: তরমুজে রয়েছে প্রচুর জলীয় উপাদান যা প্রস্রাবের জ্বালা কমায়। এছাড়াও তরমুজ প্রস্রাবের প্রবাহ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, যা একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। তরমুজে রয়েছে এমন এন্টিবডি যা কিডনি ও লিভার সুরক্ষায় অত্যন্ত কার্যকর। তরমুজের Citrulline একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা কিডনির জন্য অত্যন্ত উপকারী।

কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকিও কমায়। ডাবের পানির যে গুণাগুণ, তরমুজেও রয়েছে সেই গুণাগুণ। এটি কিডনি ও মুত্রথলিকে বর্জ্যমুক্ত করে।

৩. চোখ সুস্থ রাখে: তরমুজের লাল রঙ বিটা ক্যারোটিনের একটি চমৎকার উৎস যা চোখের রেটিনা সুরক্ষায় অত্যন্ত উপকারী। আর তাই নিয়মিত তরমুজ খেলে চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পায় এবং চোখের ছানি পড়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বিটা ক্যারোটিন রাতকানা প্রতিরোধেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

৪. ত্বকের উপকার করে: তরমুজের সমৃদ্ধ ভিটামিন এ দেহের ত্বককে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত তরমুজ খেলে ত্বকের হারিয়ে যাওয়া লাবণ্য ফিরে আসে। ত্বক উজ্জ্বল হয় ও সুস্থ থাকে। ত্বকের মেচতা দূর করতে সহায়ক। লাইকোপিনসহ বিভিন্ন উপাদানে সমৃদ্ধ তরমুজ খাওয়ার অভ্যাসে বার্ধক্য দেরিতে আসে। ত্বকে সহজে ভাঁজ বা বলিরেখা পড়ে না।

৫. হৃদযন্ত্রে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে: তরমুজ ভাসডিলেশন (vasodilation)-এর মাধ্যমে রক্ত প্রবাহ উন্নত করে ও কার্ডিওভাসকুলার-এর সাথে সম্পর্কিত ফাংশনসমূহ উন্নত করে ফলে  হৃদযন্ত্রে সঠিকভাবে রক্তপ্রবাহ হতে সাহায্য করে। এতে হৃদযন্ত্রে ব্লক হওয়ার প্রবণতা অনেকটা হ্রাস পায়। তরমুজে আরও আছে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যা রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও তরমুজের বিচিতে রয়েছে আর্গিনাইন নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড। যার কাজ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ। করোনারি হার্ট ডিজিজের চিকিত্‍‌সার ক্ষেত্রেও এটা একটা জরুরী উপাদান। 

৬. ওজন কমাতে সহায়তা করে: তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এমাইনো এসিড যা শরীরের কোলেস্টরেল ও চর্বি কমাতে অত্যন্ত সহায়ক। এছাড়া তরমুজে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট যা শরীরের জমে থাকা কোলেস্টরেল কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও তরমুজে আছে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং খুব অল্প পরিমাণে ক্যালরি। আর তাই পেট ভরে তরমুজ খেলেও সেই অনুযায়ী ওজন বাড়ে না।

৭. হাড় মজবুত করে: তরমুজ লাইকোপিনো নামক লাল উপাদান যাতে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। তাই তরমুজ হাড় গঠন ও মজবুত করতে অত্যন্ত সহায়ক। তরমুজ পটাসিয়াম সমৃদ্ধ ফল তাই হাড়ের ক্যালসিয়াম ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং হাড়ের জোড়া/সন্ধি মজবুত করে।

৮. ব্যাথা/প্রদাহ নিরাময় করে: তরমুজ ফ্ল্যাভোনয়েড (flavonoids), ক্যারটিনয়েড (carotenoids), ট্রিটেপেনইডিস (triterpenoids) এবং ফেনোলিক (phenolic)এর মতো যৌগের সমৃদ্ধ ফল। ফলে শরীরের যে কোনো প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিনি সি যা ত্বক, দাঁত এবং গোশতপেশীর সুরক্ষায় প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে

৯. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: তরমুজে লাইকোপেন নামের এক ধরনের খাদ্য উপাদান রয়েছে, যা অন্ত্রের ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও নিয়মিত তরমুজ খেলে ফুসফুসের ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।

১০. প্রজনন শক্তি বৃদ্ধি করে: টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যারা যৌনশক্তির দিক থেকে দুর্বল তাদের জন্য তরমুজ প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। একটি তরমুজে প্রচুর পরিমাণে সিট্রোলিন নামের অ্যামাইনো এসিড থাকে যা ভায়াগ্রার বিকল্প হিসেবে কাজ করে।