সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক


পরিচিতি মুবারক:

সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার নাম মুবারক হযরত রায়হানা বিনতে শামউন বিন যায়িদ আলাইহাস সালাম। তিনি ইয়াহুদী সম্প্রদায়ভূক্ত ছিলেন। তিনি পিতার দিক থেকে বনু নাদ্বীর গোত্রের এবং আহালের দিক থেকে বনু কুরায়জা গোত্রের মহিলা ছিলেন। বনু কুরায়জা গোত্রের আল-হাকাম ছিল উনার আহাল (ইছাবা, যারক্বানী)। 
ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনা মতে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার পিতৃকূলের নসব মুবারক হলো: হযরত রায়হানা আলাইহাস সালাম বিনতে যায়দ ইবনে ’আমর ইবনে খুনাফা: ইবনে শামউন ইবনে যায়দ। তবে অধিকাংশ লোক আহালের দিকটাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। সেজন্য উনাকে বনু কুরাইজা গোত্রের মহিলা বলেছেন (তাবাকাত)। সুবহানাল্লাহ!

বিলাদত শরীফ:

সম্মানিত নবুওয়ত মুবারক প্রকাশের ১৯ বছর পূর্বে পবিত্র মাহে রবিউল আউয়াল শরীফ উনার ২৮ তারিখ, ইয়াওমুছ ছুলাছা শরীফ (মঙ্গলবার) সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি বিলাদতি শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! (দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)

ইসলাম গ্রহণ ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবতে আযীম শরীফ:

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠানের কয়েকটি বর্ণনা সীরত গ্রন্থগুলিতে উল্লেখ আছে।
বনু কুরায়জা গোত্র বিশ্বাসঘাতকতা করলে, অন্যান্যদের ন্যায় সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার আহাল, আল-হাকামও অভিযুক্ত হয়ে নিহত হয় এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আত-তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম যুদ্ধ বন্দিনী হয়ে পড়েন। পরে তিনি স্বেচ্ছায় দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। সুবহানাল্লাহ! ইহা হচ্ছে জমহুর সীরত গ্রন্থকারদের বর্ণনা।
বনু কুরায়জা ইহুদি গোত্রের বিশ^াসঘাতকতার কারণে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার আহাল ও অন্যান্য যারা নিহত হয়েছিল তার প্রেক্ষাপট এই যে, পবিত্র মদীনা শরীফে তিনটি ইহুদি গোত্র বাস করত। তন্মধ্যে তাদের বৃহত্তম গোত্র ছিল বনু কুরাইজা। এই গোত্র ছিল চরম বদ ও দুর্মুখো। আর এ কারণে খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে শায়েস্তাও করেন কঠোরভাবে। ঐ সময় ইহুদিরা মুসলমানদেরকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করে। প্রাথমিক পর্যায়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহুদীদের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। তাতে তাদের জান-মাল ও ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ক্রমে তারা বিদ্রোহী হয়ে উঠে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সাথে নতুন চুক্তি সম্পাদনে আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু বনু নাদ্বীর তাতে অস্বীকৃতি জানালে তাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পক্ষান্তরে বনু কুরাইজা নতুন করে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় তাদেরকে দেশে থাকার নিরাপত্তা দেয়া হয়, মুসলিম শরীফে তাদের ঘটনা সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণিত আছে। 
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলতেন, বনু নাদ্বীর ও বনু কুরাইজার ইহুদীগণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে যুদ্ধ করে। তিনি বনু নাদ্বীরকে দেশ থেকে বের করে দেন। আর বনু কুরাইজাকে দেশে থাকার অনুমতি বহাল রাখেন। এক্ষেত্রে বনু কুরাইজার চুক্তি নবায়নে একটি কূট উদ্দেশ্যও ছিল। তা হলো- পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে সুযোগ বুঝে মুসলমানদেরকে আক্রমণ করা। খন্দকের জিহাদে তারা এই সুযোগ প্রয়োগ করেছিল। 
মোট কথা বনু নাদ্বীর দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর তাদের প্রধান নেতা হুয়াই বিন আখত্বাব, আবু রাফে’, সালাম ইবনে আবিল হুকায়ক প্রমূখ খায়বারে গিয়ে বসতি স্থাপন করে এবং তথাকার নেতৃত্ব লাভ করে। খন্দকের জিহাদ ছিল তাদের চেষ্টার ফল। তারা কুরায়শ, বনু সুলায়ম, গাতফান, বনু আসাদ, আশজা’, ফাযারা, বনু মুররা প্রভৃতি আরবের সকল গোত্রগুলিতে যাতায়াত করে তাদেরকে ক্ষিপ্ত করে তোলে এবং একযোগে পবিত্র মদীনা শরীফ আক্রমণে উদ্ধুদ্ধ করে। ফলে বিভিন্ন গোত্রের ১০ হাজার আরব মুসলমানদের উপর একযোগে আক্রমণ পরিচালনা করে।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, পবিত্র মদীনা শরীফে বসে আত্মরক্ষা করা সম্ভব হবে না। সুতরাং পবিত্র মদীনা শরীফে নারী ও শিশুদেরকে রেখে সকল পুরুষ সামনে অগ্রসর হয়ে সালা’ পর্বতের নিকট সমবেত হন। সালা’ পর্বত পশ্চাতে রেখে সম্মুখ দিকে খন্দক/পরীখা খনন করা হয় এবং এই পরীখার ঘেরাওয়ের মধ্যে সকলে অবস্থান গ্রহণ করেন। কাফির বাহিনী এসে খন্দক/পরীখা ঘেরাও করে।
বনু কুরাইজা তখন পর্যন্ত মুসলমানদের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল। ঠিক সে সময় সংবাদ পাওয়া গেল যে, বনু কুরাইজা প্রকাশ্যে চুক্তি ভঙ্গ করেছে। হুয়াই বিন আখত্বাবের প্ররোচনায় তারা বিদ্রোহ করেছে। সে তাদেরকে আশ^াস দিয়েছে যে, যদি কুরাইশরা পিছু হটে যায়, তাহলে আমি তোমাদের সাথে বসতি স্থাপন করব। এ সংবাদে মুসলমানগণ পবিত্র মদিনা শরীফ হিফাজতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের চিন্তা করেন। কারণ পবিত্র মদীনা শরীফে নারীকূল, শিশু ও সব মালামাল ছিল এবং হযরত ইবনে উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সেখানে খলীফা করে সেখানে রেখে আসা হয়েছে। তাদেরকে রক্ষা করার কোন উপায় ছিল না। পুরুষগণ খন্দক/পরীখার মধ্যে আবদ্ধ, আর বনু কুরাইজার আবাসভূমি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অদূরেই ছিল। যে কোন মূহূর্তে তাদের পক্ষ থেকে আক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রথম সংবাদ যাচাইয়ের জন্য হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত হাওয়াত বিন যুবায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রমূখ কতিপয় ছাহাবীকে প্রেরণ করেন। উনারা এসে সংবাদ সত্য বলে অবহিত করেন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনু হারিছার কতিপয় সাহসী নওজোয়ানকে পবিত্র মদীনা শরীফে প্রেরণ করেন, এরপরেও মুসলমানগণ আরো বিশেষ ব্যবস্থার গ্রহণ করেন। দীর্ঘ এক মাস পর্যন্ত কাফিররা মুসলমানদের অবরোধ করে রাখে। অবশেষে খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে গায়েবী মদদ এসে যায়। এক শীতের রাত্রে প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া এসে কাফিরদের তাঁবু উড়িয়ে নেয়। তাদের হাড়ি, পাতিল, আগুন আর কিছুই স্থির থাকল না, সব লন্ডভন্ড হয়ে যায়। অতঃপর হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তখন পর্যন্ত তিনি মুসলমান হননি) উনার নির্দেশে কাফিরগণ তৎক্ষণাৎ খন্দকের জিহাদের স্থান পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়। সকাল বেলা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল মুসলমানদেরকে নিয়ে খন্দক প্রান্তর ত্যাগ করেন এবং পবিত্র মদীনা শরীফে এসে পৌঁছেন (সীরতে ইবনে হিশাম)।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খন্দকের জিহাদ থেকে পবিত্র মদীনা শরীফে ফিরে গিয়ে তখনও যুদ্ধের অস্ত্রসস্ত্র খোলেননি, এমতাবস্থায় হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এসে উপস্থিত হন। উনার মাথায় ছিল রেশমী পাগড়ী। তিনি বললেন: ইয়া রসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আপনি কি হাতিয়ার রেখে দিয়েছেন? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: হাঁ। হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম বললেন: কিন্তু ফেরেশতাগণ এখনও অস্ত্র রাখেননি। আমি এই মাত্র শত্রুদের ধাওয়া করে আসলাম। খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক আপনাকে বনু কুরাইজার উপর হামলা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি তাদের কাপিয়ে দিতে যাচ্ছি। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশে ঘোষক এইরূপ ঘোষণা করল: তোমরা যারা বাধ্য, অনুগত, তারা বনু কুরাইজার বসতিতে গিয়েই আছরের নামায আদায় করবে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনাকে পতাকা নিয়ে সবার আগেই পাঠিয়ে দেন। অতঃপর মুসলিম বাহিনীর অগ্রগামী সৈন্যগণ যখন বনু কুরাইজার দুর্গের নিকটে উপস্থিত হন, তখন তারা প্রকাশ্যেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গালমন্দ করতে শুরু করে। অতঃপর তাদেরকে অবরোধ করা হয়। (সীরাতুন্নবী, ইবনে হিশাম)। 
দীর্ঘ ২৫ দিন অবরোধের পর তারা আবেদন জানায় যে, হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যে ফয়ছালা করবেন, তাই তারা মেনে নিবে (সীরাতুন্নবী, ইবনে হিশাম)। হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও উনার বংশ বনু কুরাইজার মিত্র ছিলেন। তাদের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত ছিল। আরবদের মধ্যে এই সম্পর্ক বংশসূত্রের সম্পর্ক থেকেও বড় বিবেচিত হতো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের আবেদন মঞ্জুর করলেন। হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এ ব্যাপারে রায় দেন যে, বনু কুরাইজার যুদ্ধক্ষম ব্যক্তিদেরকে হত্যা করা হোক। মহিলা ও শিশুদেরকে বন্দী করে রাখা হোক এবং তাদের মাল-সামানা গণিমত হিসাবে নিয়ে নেয়া হোক। এ রায় ছিল তাওরাত শরীফ উনার নির্দেশ অনুযায়ী। সুবহানাল্লাহ!
বহু হাদীছ শরীফে উল্লেখ হয়েছে, হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন এ রায় দেন, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আপনি তো আসমানী ফায়সালাই করেছেন। ইহুদীদেরকে এ রায় শুনানোর পর তাদের মুখ থেকে যেসব কথা বেরিয়েছিল, তা থেকে স্পষ্টত বোঝা যায় যে, তারা এ রায়কে মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমের অনুরূপই মনে করেছিল। সুবহানাল্লাহ!
ইহুদী বনু কুরাইজা গোত্রের প্রতি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনেক ইহসান করেন। তাদেরকে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেন। তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। তাদের জান-মালের নিরাপত্তার অঙ্গীকার প্রদান করেন। বনু কুরাইজা সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকে বনু নাদ্বীর অপেক্ষা নীচে ছিল। যেমন, বনু নাদ্বীর গোত্রের কোন লোক যদি বনু কুরাইজার কোন লোককে হত্যা করত, তবে তাকে অর্ধেক রক্তপণ দিতে হতো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের উপর এ ইহসান করেন যে, রক্তপণ আদায়ের ক্ষেত্রে বনু কুরাইজাকে সমমর্যাদা প্রদান করা হয়। ফলে বনু নাদ্বীরকে পরিপূর্ণ রক্তপণ আদায়ে বাধ্য করেন। এ সবের পরেও বনু কুরাইজা চুক্তি ভঙ্গ করে খন্দকের জিহাদে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। খন্দকের জিহাদের সময় হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম ও অন্যান্য মুসলিম মহিলাকে যে দুর্গে রাখা হয়েছিল, দুর্বৃত্ত বনু কুরাইজা সে দুর্গ আক্রমনে উদ্যত হয়েছিল। নাউযুবিল্লাহ!
হুয়াই বিন আখত্বাবকে বিদ্রোহ করার দরুণ দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সে সব আরব গোত্রকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল এবং তারই প্রত্যক্ষ কারসাজিতে খন্দকের জিহাদ সংগঠিত হয়েছিল। বনু কুরাইজা তাকে সাথে নিয়ে এসেছিল। সুতরাং এসব অবস্থার প্রেক্ষিতে বনু কুরাইজার সাথে কঠোর ফায়সালা ছাড়া আর অন্য কিছুই সম্ভব ছিল না।
অনেক মুনাফিকরা অপপ্রচার করে যে, হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জিহাদে আহত হয়েছিলেন, সেজন্য তিনি বনু কুরাইজার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে এরূপ কঠোর ফয়ছালা দিয়েছিলেন। ইহা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ তিনি খন্দকের জিহাদে আহত হয়েছিলেন, বনু কুরাইজার কেউ উনাকে আহত করেনি। বনু কুরাইজা ছিল উনার মিত্র গোত্র। কাজেই তিনি পবিত্র তাওরাত শরীফ অনুযায়ী চুক্তিভঙ্গের শাস্তির রায় ন্যায়-সঙ্গতভাবেই দিয়েছিলেন, কোনরূপ শত্রুতার বশবর্তী হয়ে রায় দেননি। 
নিহতদের সংখ্যা ঐতিহাসিকগণ ৬ শত বলে উল্লেখ করেছেন। তবে বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উনাদের বর্ণনায় জানা যায় যে, এরা ছিল ৪ শত জন। এদের মধ্যে একজন ছিল মহিলা। তাকে কেছাছের জন্য হত্যা করা হয়েছিল। সে দুর্গের উপর থেকে পাথর নিক্ষেপে একজন মুসলমানকে হত্যা করেছিল। এই ছিল বনু কুরাইজা গোত্রের যুদ্ধক্ষম ব্যক্তিদের নিহত হওয়া, তাদের নারী ও শিশুদের বন্দী হওয়া এবং তাদের পরিত্যক্ত সম্পদ গণিমত হিসাবে মুসলমানদের অধিকারে আসার প্রেক্ষাপট। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুন নবী, শিবলী নুমানী)।
এক বর্ণনায় উল্লেখ আছে যে, একবার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের মধ্যে উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় পেছন থেকে আওয়াজ শুনতে পেয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ছালাবা ইবনে শুবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উম্মুল মু’মিনীন, হযরত আত তাসিয়া আলাইহাস সালাম উনার ইসলাম গ্রহণের সুসংবাদ নিয়ে আসছেন। একটু পরে ঠিকই উক্ত ছাহাবী পবিত্র দরবার শরীফে এসে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়া আলাইহাস সালাম উনার ইসলাম গ্রহণের সুসংবাদ দিলেন। সুবহানাল্লাহ! (উসুদুল গাবা, ইছাবা)। 
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত খুশী হন এবং উনাকে আযাদ করে উনার সাথে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার প্রস্তাব দেন। অতঃপর উনার সাথে উনার পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয় ৬ষ্ঠ হিজরী সনের পবিত্র মাহে মুহররমুল হারাম শরীফ উনার ২৩ তারিখ, পবিত্র ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ। সুবহানাল্লাহ! ( দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)। 
সীরাত গ্রন্থসমূহে এ বিষয়ে অনেক এলোমেলো বর্ণনাও রয়েছে। বলা হয়েছে যে, উনাকে আযাদ হওয়ার স্বাধীনতা প্রদান করলে তিনি উক্ত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বন্দীদশাকেই স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেন, যা সম্পূর্ণ অসম্ভব এবং উনার শানের সম্পূর্ণ খেলাফ। সীরত গ্রন্থসমূহের মধ্যে তাবাকাতে ইবনে সা’দ, মুসা ইবনে উকবার মাগাযী প্রথম দিকের মৌলিক সীরতের কিতাব। পরবর্তী সীরত লেখকগণ এসব কিতাব অনেক ক্ষেত্রে অনুসরণ করেছেন। মুসলমানদের বাগদাদ ও স্পেনের গ্রন্থাগারগুলি কাফিরগণ ধ্বংস করে দেয়ার পর এই কিতাবসমূহ দুষ্প্রাপ্য হয়ে যায়। তাবাকাতে ইবনে সা’দ ইউরোপে পাওয়া যায়। এসব কিতাবের তথ্যবলী ইউরোপীয় কাফিরগণ যে সংযোজন বা বিয়োজন করেনি তা কে বলবে? সেজন্য কোন সীরত গ্রন্থের বর্ণনা যদি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের খেলাফ কিছু বর্ণিত পাওয়া যায় তবে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। (আছাহহুস সিয়ার)। 
একটি বর্ণনায় এরূপ উল্লেখ আছে যে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি নিজেই বর্ণনা করেছেন যে, বন্দীদের বিচার শেষে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার নিকট তাশরীফ এনে বললেন: আপনি যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের গ্রহণ করেন, তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের জন্য আপনাকে গ্রহণ করবেন। আমি বললাম: আমি মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের গ্রহণ করলাম। আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে আযাদ করে দেন এবং অন্যান্য উম্মুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ন্যায় ১২ উকিয়া স্বর্ণ মোহর ধার্য করে আমার সাথে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার ব্যবস্থা করেন এবং আমার উপর পর্দা পালনের আহকাম জারি করেন। সুবহানাল্লাহ! (তাবাকাত, ইছাবা)। 
কাজেই এসব বর্ণনার পরিপন্থী ভিন্ন ধরণের বর্ণনা সমূহ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। 
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়া আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠানের সময় উনার বয়স মুবারক ছিলেন ৩৬ বছর ৯ মাস ২৫ দিন। সুবহানাল্লাহ! (দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়া আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, বনু কুরাইজার জিহাদের পর ইহুদিদের মনোনিত বিচারক হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার রায় অনুযায়ী প্রায় ৪০০ বা ৬০০ যুদ্ধক্ষম ইহুদী নিহত হয়। এতে বহু সংখ্যক ইহুদী নারী বিধবা হয়ে পড়ে। উনারা মুসলমানদের মধ্যে সামাজিকভাবে আত্মসম্মান নিয়ে মর্যাদা সহকারে যাতে বসবাস করতে পারেন, এর প্রয়োজন দেখা দেয়। সাধারণত বিধবা বিবাহে লোক আগ্রহী হয়না, একটি সংসারে নতুন করে ফিৎনা সৃষ্টি করতে কেউ চায় না। তাছাড়া উনারা ছিলেন একটি ভিন্ন কওমের নারী। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে উনার পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফে আনয়ন করে উম্মুল মু’মিনীন হিসাবে মর্যাদা দান করেন। সাথে সাথে পবিত্র সুন্নতের অনুসরণে অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও আশ্রয়হীনা বিধবা নারীগণকে বিনা দ্বিধায় শাদী মুবারক করে আশ্রয় দান করেন। সুবহানাল্লাহ!

বিছাল শরীফ:

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১০ম হিজরীতে বিদায় হজ্জ হতে প্রত্যাবর্তন করার পর হিজরী ১১ সনে পবিত্র মাহে মুহররমুল হারাম শরীফ উনার ৫ তারিখ, পবিত্র ইয়াওমুল খামীস তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! জান্নাতুল বাকীতে উনার দাফন মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। তখন উনার বয়স মুবারক হয়েছিলেন ৪১ বছর ৯ মাস ৭ দিন। সুবহানাল্লাহ! (দৈনিক আল-ইহসান শরীফ, ইছাবা)।

ফযীলত ও মর্যাদা:

উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত-তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারকে উনার উপস্থিতিতে তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তিনি নিজে উনার জানাযা মুবারক পড়েন এবং দাফন মুবারক সম্পন্ন করেন। সুবহানাল্লাহ! (সূত্র: সীরত গ্রন্থাবলী)
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আজওয়াজুম মুতাহারাত পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অর্ন্তভুক্ত। আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা মর্তবা সম্পর্কে খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন-

إنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أهْلَ الْبَيْتِ وَ يُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًا -

(হে নবী পরিবার! খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক অবশ্যই চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করতে) অর্থাৎ আপনাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করেই তিনি সৃষ্টি করেছেন। উনারা নিজেরা শুধু পবিত্রই নন, বরং উনারা পবিত্রতা দানকারী। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা মর্তবার দিক থেকে সর্বপ্রথম হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত আব্বা আলাইহিস সালাম এবং মহাসম্মানিতা আম্মা আলাইহাস সালাম, উনারা হচ্ছেন সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ উনাদের মূল। অতঃপর হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা, অতঃপর হযরত আবনাউ রসুলিল্লাহ এবং বানাতে রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মর্যাদা এবং অতঃপর অন্যান্য আওলাদে রসুল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্তবা মর্যাদা। সুবহানাল্লাহ!
উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অপরিসীম মর্যাদা মর্তবার বিষয়ে খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালাম মজীদে ইরশাদ মুবারকে করেছেন:
لستن كاحد من النساء -
অর্থ: উনারা অন্য কোন নারীর মত নন। অর্থ্যাৎ উনাদের কোন মেছাল নেই, উনারা বেমেছাল। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন:
اَلنَّبِـىُّ اَوْلـٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ وَاَزْوَاجُه اُمَّهٰتُهُمْ.
অর্থ: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন মু’মিনদের নিকট তাদের জানের চেয়েও অধিক প্রিয়, আর উনার মহা-সম্মানিতা আযওয়াজুম মুত্বাহহারাত (হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম) উনারা হচ্ছেন সমস্ত মু’মিন উনাদের মহাসম্মানিতা মাতা আলাইহিন্নাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! (সুরা আহযাব শরীফ, আয়াত শরীফ ৬)।
তাহলে উম্মাহাতুল মু’মিনীন উনার অর্থ হচ্ছেন সমস্ত মু’মিন উনাদের মহাসম্মানিতা মাতাগণ। সুবহানাল্লাহ! এই সম্মানিত লক্বব মুবারক উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনিই দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ হযরত নবী-রসুল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সৃষ্টির শুরু থেকে এ পর্যন্ত যত মু’মিন দুনিয়াতে এসেছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মু’মিন দুনিয়ার যমিনে আসবেন, (শুধু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যতীত) উনাদের প্রত্যেকেরই মহা-সম্মানিতা মাতা হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ!
সকল হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে তা’যীম, তাকরীম করা ও মুহব্বত করা উম্মতের জন্য ফরয-ওয়াজিব। যেমন খালিক, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন:
قُل لا أسْألُكُمْ عَلَيْهِ أجْرًا إلَّا الْمَوَدَّةَ فِى الْقُرْبَى - 
অর্থ: হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মতদেরকে বলুন, আমি তোমাদের নিকট কোন বিনিময় চাই না, আর তোমাদের পক্ষে বিনিময় দেয়া সম্ভবপরও নয়। বরং এইরূপ কল্পনা করাও কুফরী হবে। তবে যেহেতু তোমাদেরকে ফায়দা হাসিল করতে হবে, সেজন্য তোমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, যাঁরা আমার আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম করা (পবিত্র সূরা শু’রা শরীফ, আয়াত শরীফ ২৩)।
পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা মর্তবা সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন:
ألاَ إنَّ مَثَلَ أهْلِ بَيْتِىْ فِيْكُمْ مَثَلُ سَفِيْنَةِ نُوْحٍ عليه السلام مَنْ رَكِبَهَا نَجَا وَ مَنْ تَخَلَّفَ عَنْهَا هَلَكَ - 
অর্থ: সাবধান! নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হলেন হযরত নুহ আলাইহিস সালাম উনার কিশতীর ন্যায়। যে তাতে আরোহণ করেছে, সে রক্ষা পেয়েছে। আর যে তা হতে পশ্চাতে থেকেছে, সে ধ্বংস হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে:
الجَنّةُ تَحْتَ أقْدَامِ الْأُمُّهَاتِ - 
অর্থাৎ সম্মানিত জান্নাত সম্মানিতা মাতা উনাদের পায়ের নিচে। সুবহানাল্লাহ!
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সকলই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে একই সম্মানিত জান্নাত মুবারকে একই সাথে অবস্থান মুবারক করবেন। সুবহানাল্লাহ! এ থেকে বুঝা যায়, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান-মান, ফাযায়েল ফযীলত, বুযুর্গী সম্মান কত বে-মেছাল, যা তামাম কায়েনাতবাসীর চিন্তা ও ফিকিরের উর্ধ্বে।
বর্তমানে কোন কোন নামধারী মুসলমান যেমন কোন কোন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সমালোচনা করে থাকে, তেমন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরও শান মান নিয়েও ক্বীল-ক্বাল করে থাকে। তাদের পরিণতি অত্যন্ত খারাপ, যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে:
عن حضرت عويـمر بن ساعدة رضى الله تعالى عنه انه صلى الله عليه و سلم قال ان الله اختارنى واختار لى اصحابا فجعل لى منهم وزراء وانصارا واصهارا فمن سبهم فعليه لعنة الله والـملئكة والناس اجـمعين ولايقبل الله منهم صرفا وعدلا
অর্থ: হযরত উয়াইমির ইবনে সায়িদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত: নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক আমাকে এবং আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে মনোনীত করেছেন এবং উনাদের মধ্য থেকে আমার কার্য সম্পাদনকারী, খেদমতকারী এবং বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়বর্গ নিযুক্ত করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি উনাদেরকে গালি দিবে বা দোষারোপ করবে, তার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত এবং সমস্ত ফেরেস্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও সমস্ত মানুষ সকলেরই লা’নত। আর মহান আল্লাহ পাক তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করবেন না (তাবারানী শরীফ, হাকিম শরীফ)।
এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনায় হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা বিশেষভাবে শামিল রয়েছেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রিয়তম রসুল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মনোনীত করেছেন এবং সেই সাথে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাহিন্নাস সালাম উনাদেরকেও বিশেষভাবে মনোনীত করেছেন উনার মুবারক খেদমতের আঞ্জাম দেয়ার জন্য।
কাজেই উনাদের শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা উপলব্ধি করা সমস্ত জিন-ইনসানের জন্য ফরয-ওয়াজিব। উনাদের প্রতি মুহব্বত ও সু-ধারণা পোষণ করাই হচ্ছে ঈমান। আর উনাদের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করা, উনাদের সমালোচনা করা সুস্পষ্ট কুফরী, কাফির ও চির-জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
সূত্র: তাবাকাত, উসুদুল গাবা, ইছাবা, যারক্বানী, সীরতে ইবনে হিশাম, সীরতুন নবী (শিবলী নুমানী), দৈনিক আল-ইহসান শরীফ।
উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি একক ও অদ্বিতীয় খুছূছিয়্যাহ মুবারক উনার মালিক











উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি একক ও অদ্বিতীয় খুছূছিয়্যাহ মুবারক উনার মালিক

 স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার শান-মান, বুজুর্গী-সম্মান ও মর্যাদা মুবারক উনাকে বুলন্দ থেকেও বুলন্দতর করেছেন। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং উনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন, ছানা-ছিফত মুবারক করেছেন। কাজেই কোনো মাখলুকাত উনার ছানা-ছিফত মর্যাদা মুবারক বর্ণনা করে কস্মিনকালেও শেষ করতে পারবে না। আর কত বুলন্দতর সেটাও ফিকিরের অনেক ঊর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! 

মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি ইরশাদ মুবারক করেন

يَا نِسَاء النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَاء
অর্থ: “হে উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম! আপনারা অন্য কোনো মহিলাদের মতো নন।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩২) 
অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি অন্য কোনো নারীদের মতো নন। উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সবচেয়ে বড় খুছুছিয়াত মুবারক হচ্ছেন; তিনি যাওজাতু রাসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এছাড়াও উনার অসংখ্য অগণিত খুছুছিয়াত মুবারক রয়েছে  যা কাগজে কলমে লিখা সম্ভব নয়। 

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে বেশ কয়েকজন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা ছিলেন এবং একই সাথে একই সময়ে অনেকজনই ছিলেন। কিন্তু উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন একা। উনার সময়ে অন্য কোনো উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা ছিলেন না। উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুধুমাত্র একজন আওলাদ আলাইহিস সালাম ব্যতীত সকল আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনারা তাশরীফ মুবারক এনেছেন। 

মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নসব মুবারক জারি হয়েছেন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে। উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার রওজা মুবারকে মুনকার-নাকির আলাইহিমাস সালাম উনাদের প্রশ্নের জওয়াব স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি দিয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার প্রতি সালাম পাঠান।  মহান আল্লাহ পাক তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে শান্তিপূর্ণ জান্নাতুল ফেরদাউস উনার সুসংবাদ দান করেছেন।  

স্বয়ং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম,  হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্পর্কে বলেছেন- “যমীনের বুকে সর্বোত্তম উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম হচ্ছেন উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম।” তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ পবিত্রা। জাহেলিযুগেও তিনি মূর্তিপূজা থেকে পবিত্রা ছিলেন। উনার খিদমত মুবারকের উনার আঞ্জাম দিয়েছেন জান্নাতী চার মহিলা। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল বাসার হাওয়া আলাইহাস সালাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু যবীহুল্লাহ হিছ ছানিয়াহ সারাহ আলাইহাস সালাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রূহিল্লাহ মারইয়াম আলাইহাস সালাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উখতু কালীমিল্লাহ উম্মে কুলসুম আলাইহাস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ!

মোটকথা উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মর্যাদা খুছুছিয়ত মুবারক কোনো কাগজ কলমে লিখতে পারবে না, চিন্তা করাও সম্ভব নয়। উনাদের খুছুছিয়ত ওয়ারাউল ওয়ারা, ওয়ারাউল ওয়ারা, ওয়ারাউল ওয়ারা। অর্থাৎ উনার মর্যাদা খুছুছিয়ত মুবারক হচ্ছেন তিনি একক ও অদ্বিতীয়।

এক নজরে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত পরিচিতি মুবারক
এক নজরে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত পরিচিতি মুবারক


উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিত্বা মুবারক। সুবহানাল্লাহ! তিনি শুধু যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারিণী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারকই হচ্ছেন সম্মানিত ঈমান। সুবহানাল্লাহ! 
নিম্নে এক নজরে উনার সম্মানিত পরিচিতি মুবারক তুলে ধরা হলো-
সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক: সাইয়্যিদাতুনা হযরত সাওদাহ্ আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ও পবিত্র লক্বব মুবারক: উম্মুল মু’মিনীন, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, আত্ব ত্বাহিরাহ, আত্ব ত্বইয়্যিবাহ্, আল মুত্বহ্হার, আল মুত্বহ্হির, যাতুল হিজরাতাঈন, মালিকাতুল জান্নাহ, মালিকাতুল কায়িনাত এছাড়াও আরো অসংখ্য-অগণিত। সুবহানাল্লাহ! 
যেই সম্মানিত লক্বব মুবারক-এ সম্মানিত পরিচিতি মুবারক গ্রহণ করেছেন: উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ্ আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানি পিতা আলাইহিস সালাম: সাইয়্যিদুনা হযরত যাম‘আহ্ আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম: সাইয়্যিদাতুনা হযরত শুমূস আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ: সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার প্রায় ৪৯ বৎসর পূর্বে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নুবুওওয়াত ও রিসালত মুবারক প্রকাশের প্রায় ৩৬ বৎসর পূর্বে। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ভাই রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু: সাইয়্যিদুনা হযরত মালিক ইবনে যাম‘আহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বংশ মুবারক: কুরাইশ। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার সম্মানিত স্থান মুবারক: সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ: আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নুবুওওয়াত ও রিসালত মুবারক প্রকাশের শুরুর দিকে। সুবহানাল্লাহ! 
সম্মানিত হিজরত মুবারক: সম্মানিত ও পবিত্র হাবশা শরীফ এবং সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত অবস্থান মুবারক: সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ, সম্মানিত ও পবিত্র হাবশা শরীফ এবং সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ: আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নুবুওওয়াত ও রিসালত মুবারক প্রকাশের ১০ম বৎসরে ২৬ শে রমাদ্বান শরীফ ইছনাইনিল ‘আযীম শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আ’যীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় দুনিয়াবী দৃষ্টিতে সম্মানিত বয়স মুবারক: দুনিয়াবী দৃষ্টিতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ছিলেন ৪৯ বছর ৬ মাস ১৪ দিন আর উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ছিলেন প্রায় ৪৬ বছর। সুবহানাল্লাহ!
এককভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া: প্রায় ৩ বছর ২৫ দিন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া: প্রায় সাড়ে ১৩ বছর। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক: ১১ বছর ৯ মাস ১৭ দিন। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ: ২২ হিজরী সনের ২৯ শে যিলহজ্জ শরীফ ইয়াওমুল খমীস শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার সম্মানিত স্থান মুবারক: সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক: প্রায় ৭১ বছর। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ : সম্মানিত জান্নাতুল বাক্বী’ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!

উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক

পরিচিতি মুবারক:

সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক হচ্ছেন হযরত উম্মে হাবীবা বিনতে আবি সুফিয়ান আলাইহাস সালাম। তিনি কুরাইশ গোত্রের উমাইয়া শাখার অন্তর্ভূক্ত। হযরত হাবীবাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার মেয়ের নাম, সেজন্য হযরত উম্মে হাবীবা আলাইহাস সালাম এই কুনিয়াত মুবারকেই তিনি প্রসিদ্ধ হয়েছেন। উনার প্রকৃত নাম মুবারক ছিল হযরত রামলা আলাইহাস সালাম। উনার পিতা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কুরাঈশ নেতা ছিলেন।
হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আসল নাম ছিল ছখর ইবনে হারব (ইছাবা)। তিনি ছিলেন এক বড় ব্যবসায়ী। শাম (সিরিয়া), রোম ও আজমে (অনারব দেশ সমূহ) তিনি কাফেলা পাঠাতেন। মাঝে মাঝে কাফেলার সাথে তিনি নিজেই যেতেন। হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার তিন মেয়ের মধ্যে এক মেয়ের নাম হযরত যায়নব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। তিনি প্রখ্যাত ধনী ছাহাবী হযরত উরওয়া ইবনে মাসউদ আছ-ছাকাফী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া ছিলেন। উনার শাদী মুবারক হয়েছিল ইসলাম-পূর্ব জীবনে। তখন হযরত ‘উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়ার সংখ্যা ছিল দশ জন। তন্মধ্যে চার জন কুরাইশ বংশীয়া এবং হযরত যয়নব বিনতে আবী সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ছিলেন উনাদের অন্যতমা। হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলাম গ্রহণ করলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নির্দেশ মুবারক দেন, তিনি যেন চারজন আহলিয়াকে রেখে অবশিষ্টদেরকে ত্যাগ করেন। সুতরাং তিনি চারজনকে বাছাই করে নেন। উনাদের মধ্যে একজন ছিলেন হযরত যায়নাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা।
হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অপর দুই মেয়ে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে হাবীবাহ আলাইহাস সালাম এবং হযরত ফারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাদের শাদী হয় উবায়দুল্লাহ বিন জাহাশ এবং হযরত আবু আহমদ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের সাথে, যারা ছিলেন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস-সাদিসাহ আলাইহাস সালাম অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন হযরত যায়নব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম উনার দুই ভাই।
হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া হযরত হিন্দা বিনতে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উহুদের জিহাদে (ঈমান গ্রহণ না করা অবস্থায়) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত চাচা, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, হযরত হামযাহ আলাইহিস সালাম উনার কলিজা মুবারক চিবিয়ে ছিলেন। হযরত হিন্দা বিনতে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা পরে ইসলাম গ্রহণ করে ছাহাবিয়া হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। তিনি ছিলেন উমাইয়া খলীফা, সাইয়্যিদুনা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাতা। হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অন্য আহলিয়া যিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিতা মাতা ছিলেন উনার নাম হযরত ছফিয়া আলাইহাস সালাম যিনি তৃতীয় খলীফা, সাইয়্যিদুনা হযরত যূন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা ফুফু ছিলেন। কাজেই উমাইয়া খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়াতা আশার আলাইহাস সালাম উনার বৈমাত্রিয় ভাই।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার পিতার পরিবার পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় পর্যন্ত ইসলামের প্রতি বিদ্বেষী থাকলেও সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম এবং উনার অন্য দুই বোন হযরত যায়নব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এবং হযরত ফারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাদের জাওয মুকাররমের পরিবার দ্বীন ইসলাম উনার সূচনা পর্বেই মুসলমান হয়ে যান। কাজেই উনারাও উনাদের জাওয মুকাররম উনাদের সাথে পবিত্র ইসলাম কবুল করেন। হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনার আহলিয়া হযরত হিন্দা বিনতে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনারা পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের সময় ইসলাম গ্রহণ করেন এবং দুই জনই ছাহাবী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। 

বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:

সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম সম্মানিত নবুওয়ত মুবারক প্রকাশের ১৭ বছর পূর্বে, ২৯ জুমাদাল উলা শরীফ, ইয়াওমুছ ছুলাছা শরীফ (মঙ্গলবার) বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন (ইছাবা, দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)। 

ইসলাম গ্রহণ ও হিজরত:

সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার প্রথম শাদী হয়েছিল উবায়দুল্লাহ বিন জাহাশের সঙ্গে (তার ঔরসেই হযরত হাবীবাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বিলাদতি শান মুবারক প্রকাশ করেন)। অতঃপর দ্বীন ইসলাম উনার প্রাথমিক যুগে উভয়ে এক সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার আহাল উবায়দুল্লাহ বিন জাহাশের সাথে হাবশায় হিজরত করেছিলেন। উনার অপর এক বোন হযরত ফারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাও ইসলাম গ্রহণ করে উনার জওয মুকাররম হযরত আবু আহমদ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে হাবশায় হিজরত করেছিলেন। 

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ:

হাবশায় কিছুদিন অবস্থানের পর উবায়দুল্লাহ বিন জাহাশ দ্বীন ইসলাম ত্যাগ করে ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করে। উবায়দুল্লাহ ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করার কিছুদিন পূর্বে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম তিনি একটি স্বপ্ন মুবারক দেখেন। স্বপ্নে তিনি উনার আহাল উবায়দুল্লাহকে বিভৎসরূপে দেখেন। তিনি ভীত-শঙ্কিত হয়ে আপন মনে বলেন, নিশ্চয়ই তার কোন খারাপ পরিণতি হতে যাচ্ছে। সকাল বেলা উবায়দুল্লাহ উনাকে বলল: উম্মু হাবীবা ! আমি ধর্মের ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা করে দেখেছি। ঈসায়ী ধর্ম থেকে অন্য কোন ধর্ম ভাল বলে মনে হয়নি। যদিও আমি মুসলমান হয়েছি, তবে আমি ইহা ত্যাগ করে ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করছি। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম তার এহেন পথভ্রষ্টতায় যথেষ্ট তিরস্কার করলেন এবং নিজের স্বপ্নের কথাও তাকে বললেন। কিন্তু কোন কিছুতেই কাজ হলো না। সে ঈসায়ী ধর্মে থেকে গেল। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম তাকে ছেড়ে দিয়ে একাকী বসবাস করতে লাগলেন। অতঃপর উবায়দুল্লাহ বেপরোয়াভাবে জীবন যাপন করতে লাগল। সে একদিন মাত্রারিক্ত মদ পান করে, ফলে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। মতান্তরে অধিক মদ পান করে সে সাগরে ডুবে মারা যায়। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম আরো বলেন: উক্ত স্বপ্নের মধ্যে আমি আরও দেখলাম, কেউ আমাকে “ইয়া উম্মাল মু’মিনীন” বলে ডাকছেন। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আমি এর ব্যাখ্যা করলাম যে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হয়ত আমার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হবে। (তাবাক্বাত, শরহুল মাওয়াহিব)।
ইতিমধ্যে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিজরত মুবারক করে পবিত্র মদীনা শরীফে তশরীফ আনয়ন করেন। তিনি উবায়দুল্লাহ ইবনে জাহাশের ইসলাম ত্যাগ এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার ঈমানী দৃঢ়তার উপরোক্ত সংবাদ অবগত হন। অতঃপর নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আমর ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু উনাকে হাবশার বাদশাহ নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট প্রেরণ করে উনার মাধ্যমে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার সঙ্গে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার প্রস্তাব দেন। সম্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পক্ষ হতে হযরত আবরাহা রহমতুল্লাহি আলাইহা নামে জনৈকা দাসী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উক্ত প্রস্তাব সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার নিকট উপস্থাপন করলে তিনি এই মুবারক এই সুসংবাদ উনার জন্য খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফে শুকরিয়া জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে স্বীয় অলঙ্কার (২টি রূপার চুড়ি, কানের দুল ও একটি নকশা করা আংটি) উক্ত দাসীকে হাদিয়া করেন। অতঃপর সম্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার ভাই হযরত জাফর ত্বাইয়ার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু উনাকে রাজ দরবারে আহ্বান করে আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতঃ উপস্থিত সকলকে আপ্যায়ন করেন। সম্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ হতে ৪০০ দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) মোহরও আদায় করে দেন। মোহরের অর্থ সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার নিকট পৌঁছলে সেখান থেকে ৫০ দীনার তিনি দাসী হযরত আবরাহা রহমতুল্লাহি আলাইহা উনাকে দিতে চান। কিন্তু হযরত আবরাহা রহমতুল্লাহি আলাইহা তা গ্রহণ করতে অসম্মতি জানান এবং বলেন, স¤্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি আমাকে কিছু নিতে নিষেধ করেছেন। তাই তিনি ইতিপূর্বে উনাকে যা কিছু দেয়া হয়েছিল তাও ফিরিয়ে দেন। এ সময় হযরত আবরাহা রহমতুল্লাহি আলাইহা নিজের দ্বীন ইসলাম গ্রহণের কথা জানান এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনাকে অনুরোধ করেন, তিনি যেন উনার দ্বীন ইসলাম গ্রহণের কথা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অবহিত করেন এবং উনার তরফ থেকে উনার নিকট সালাম পৌঁছিয়ে দেন। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম বলেন: আমি পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত আবরাহা রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার সব কথা বলি এবং তার সালাম পেশ করি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মৃদু হেসে উত্তর দেন-
 و عليها السلام و رحمة الله و بركاته -

পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার তারিখ:

হিজরী ৭ম হিজরী সনের ৩ মাহে ছফর শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) এই পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার বয়স মুবারক হয়েছিলেন ৩৬ বছর ৮ মাস ৪ দিন (ইছাবা, আসাহহুস সিয়ার, দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)। 
বর্ণিত আছে যে, এই নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠানের সংবাদ যখন হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট পৌঁছে তিনি অসন্তুষ্ট হননি, যদিও তখন পর্যন্ত তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি। তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে তখন মন্তব্য করেছিলেন:
 ذاك الفحل، لا يقرع أنفه 
অর্থ: তিনি তো এমন সম্ভ্রান্ত কুফূ অর্থাৎ সমকক্ষ, যা প্রত্যাখ্যান করা যায়না। 
অর্থাৎ এই নিসবাতুল আযীম শরীফ খুবই মানানসই হয়েছে (তাবাকাত)।

পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ আনয়ন:

নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার পর স¤্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত জা’ফর ত্বাইয়ার বিন আবী তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে একদল মুহাজিরের সাথে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনাকে জাহাজযোগে পবিত্র মদীনা শরীফে পাঠিয়ে দেন। এই কাফিলা যখন পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছেন, তখন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খায়বরে অবস্থান করছিলেন। সুবহানাল্লাহ ! (আবু দাউদ শরীফ, সিয়ারু আলামিন নুবালা)।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশারহ আলাইহাস সালাম উনার আক্দ মুবারক স¤্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পন্ন করেছেন। এই ব্যাপারে ইজমা হয়েছে। তবে হযরত কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের বর্ণিত একটি পবিত্র হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে, উনার আক্দ মুবারক সম্পন্ন হয়েছে পবিত্র মদীনা শরীফে হযরত যূন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার ব্যবস্থাপনায়। সুবহানাল্লাহ! (সিয়ারু আলামিন নুবালা)। এই উপলক্ষে মুবারক ওলীমার ব্যবস্থা করা হয় এবং মেহমানদের গোশত খাওয়ানো হয়। সীরাত বিশেষজ্ঞগণ কেউ কেউ বলেছেন, হতে পারে পবিত্র মদীনা শরীফে আসার পর আবার একটি আক্দ মুবারক এবং ওলীমা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ইবনে আব্বাস আলাইহিস সালাম বলেন: নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার সাথে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়, তখন এই পবিত্র আয়াত শরীফটি নাযিল হয়-
عَسَى اللهُ أنْ يَّجْعَلَ بَيْنَكُمْ وَ بَيْنَ الّذِيْنَ عَادَيْتُمْ مِنْهُمْ مَوَدَّةً 
অর্থ: যারা আপনাদের শত্রু খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের মধ্যে এবং আপনাদের মধ্যে শীঘ্রই বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ ! (সুরা আল মুমতাহিনা-৭)

বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:

হিজরী ৪৪ সনের ১৭ মাহে শা’বান শরীফ ইয়াওমুল খামীস (বৃহস্পতিবার) ৭৩ বছর ২ মাস ১৮ দিন বয়স মুবারকে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার ভাই সাইয়্যিদুনা হযরত মু‘য়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু উনার খিলাফতের সময় তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন (আসাহহুস সিয়ার, দৈনিক আল ইহসান শরীফ)। 
বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পূর্বে তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে ডেকে বলেন: নবী পরিবারে আজওয়াজে মুতাহহারাত হিসাবে আমরা একসঙ্গে বসবাস করেছি। যদি কোন ব্যাপারে আপনার মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, তবে আমাকে মাফ করে দিন এবং আমার জন্য দোয়া করুন। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উত্তর দিলেন:
 سررتنى سرك الله 
(আপনি আমাকে খুশী করেছেন, মহান আল্লাহ পাক আপনাকে খুশী করুন। সুবহানাল্লাহ! (তাবাকাত, সিয়ারু আলামিন নুবালা)।

ফযীলত ও মর্যাদা মুবারক:

সামগ্রিকভাবে সকল উম্মুহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অপরিসীম মর্যাদা মর্তবার বিষয়ে খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালাম মজীদে ইরশাদ মুবারকে করেছেন,
لستن كاحد من النساء -
অর্থাৎ উনারা অন্য কোন নারীর মত নন। 
সুরা আহযাবের ৬নং আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক উনাদেরকে উম্মাহাতুল মু’মিনীন বলে উল্লেখ করেছেন, যেমন-
ألنَّبِيُّ أوْلَى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ أنْفُسِهِمْ وَ أزْوَاجُهُ أمُّهَاتُهُمْ
(নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঈমানদারগণের নিকট উনাদের প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয়। আর উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনারা মু’মিনগণের মাতা)। 
খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক এই পবিত্র আয়াত শরীফে উনাদেরকে أمَّهَاتُ الْمُؤْمِنِيْنَ (মু’মিনগণের মাতা) এই সম্মানিত লক্বব মুবারকে উল্লেখ করেছেন। এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মর্ম থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ তিনি ব্যতীত অন্যান্য সকল মু’মিন অর্থাৎ হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মু’মিন দুনিয়াতে এসেছেন, এখন আছেন এবং ভবিষ্যতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত থাকবেন উনাদের সকলেরই মহা সম্মানিত মাতা। সুবহানাল্লাহ ! সুতরাং উনাদের মর্যাদা-মর্তবা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
الجَنّةُ تَحْتَ أقْدَامِ الْأُمُّهَاتِ - 
অর্থাৎ সম্মানিত জান্নাত সম্মানিতা মাতা উনাদের পায়ের নিচে। সুবহানাল্লাহ! 
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সকলেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে একই সম্মানিত জান্নাত মুবারকে একই সাথে অবস্থান মুবারক করবেন। সুবহানাল্লাহ! এ থেকে বুঝা যায়, হযরত উম্মুহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান-মান, ফাযায়েল ফযীলত, বুযুর্গী সম্মান কত বে-মেছাল, যা তামাম কায়েনাতবাসীর চিন্তা ও ফিকিরের উর্দ্ধে।
খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে বেমেছাল পুতঃপবিত্রা ও সুমহান চরিত্র মুবারকের অধিকারিণী করে আল্লাহ পাক উনার হাবীব-উনার জন্য খাছ করে সৃষ্টি করেছেন সেজন্য উনাদের আরেকটি লক্বব মুবারক হচ্ছে أزواج مطهرات (আযওয়াজে মুত্বাহহারাত অর্থাৎ পুতঃপবিত্রা আহলিয়াগণ) অর্থাৎ উনাদের চরিত্র সকল প্রকার কলুষ-মুক্ত। সুবহানাল্লাহ !
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম সংখ্যায় ১৩ জন ছিলেন। উনাদের সকলই অনেক বৈশিষ্ঠ্যপূর্ণ গুণাবলীতে গুণান্বিতা ছিলেন। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশারহ আলাইহাস সালাম উনারও অনেক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গুণাবলী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
কুরাইশ নেতা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সকল যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। উনার এই সম্মানিতা মেয়ে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম াদাস উনার পিতা কুফরী অবস্থায় থাকাকালীন সময়েই ইসলামের জন্য স্বীয় জন্মভূমি ত্যাগ করে সুদূর হাবশায় হিজরত করেন এবং সেখানে উনার আহাল বিধর্মী হয়ে গেলেও তিনি তৎক্ষণাৎ তাকে পরিত্যাগ করেন। ফলত তিনি সমুদয় বিপদ তুচ্ছ করে পবিত্র ঈমানী দৃঢ়তায় দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি প্রগাঢ় মুহব্বত ও মাহাত্মের পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি বেমেছালভাবে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত মুবারক অনুসরণ করতেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার সূত্রে যাঁরা পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, উনাদের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন: হযরত হাবীবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দুই ছেলে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উতবা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবু সুফিয়ান ইবনে সাঈদ ছাক্বাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সালিম ইবনে সাওয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবুল জাররাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সাফিয়া বিনতে শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহা, হযরত যায়নব বিনতে উম্মে সালামা রহমতুল্লাহি আলাইহা, হযরত উরওয়া ইবনে যুবায়র রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবু সালিহ আস সাম্মান রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শাহর বিন হাওশাব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আনবাসা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শুতাইর ইবনে শাকাল রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবু মালীহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমির হুযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি, প্রমূখ। সুবহানাল্লাহ! (ইছাবা) 
মুহাদ্দিছে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের হিসাব মতে রাবীদের বর্ণনা অনুযায়ী উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার সংখ্যা বলা হয়েছে ৬৫ খানা। তবে প্রকৃতপক্ষে সকল উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ পবিত্র সুন্নতের পাবন্দ। কাজেই উনাদের কাজকর্ম, কথা-বার্তা, আচার ব্যবহার সবই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অন্তর্ভূক্ত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয় হিজরী ৭ সনে এবং উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশিত হয় হিজরী ৪৪ সনে। প্রায় ৩৭ বছর তিনি উম্মতের হিদায়েতের কাজে ব্যাপৃত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার মেয়ে হযরত হাবিবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গৃহেই প্রতিপালিত হন। ছাক্বীফ গোত্রের এক বড় নেতার সাথে উনার শাদী মুবারক হয়েছিলেন।
একবার উনার পিতা কুরাইশ নেতা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তখনও তিনি মুসলমান হননি) হুদায়বিয়ার সন্ধির মেয়াদ বৃদ্ধি করার জন্য পবিত্র মদীনা শরীফে আগমন করেন। এ উপলক্ষে তিনি উনার মেয়ে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার সাথে সাক্ষাত করতে উনার ঘরে আসেন। তিনি ঘরে প্রবেশ করে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছানা মুবারকে বসছিলেন, ঠিক এ সময় সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম তিনি উক্ত বিছানা মুবারক উল্টিয়ে ফেলেন। উনার পিতা উনাকে জিজ্ঞেস করলেন: আপনার এ বিছানা কি আপনার পিতা অপেক্ষা অধিকতর প্রিয়? সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উত্তর দিলেন: ইহা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছানা মুবারক। আপনি যেহেতু মুশরিক, আপনি অপবিত্র। তাই এ বিছানায় আপনি বসতে পারেন না। সুবহানাল্লাহ! (তাবাকাত, আল-বিদায়া)।
হাফেজ যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রসঙ্গে বলেন: বংশের দিক থেকে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে কেউই উনার চেয়ে বেশী নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অধিক নিকটের ছিলেন না। উনার চেয়ে বেশী মোহর অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সময় ছিল না। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম উনার চেয়ে বেশী দূরে অবস্থান করা অবস্থায় নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়নি। সুবহানাল্লাহ! (সিয়ারু আলামিন নুবালা)
বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট থেকে শুনেছিলেন যে, যে ব্যক্তি দৈনিক ১২ রাকাত নফল নামায পড়ে, জান্নাত তার আবাসস্থল হবে। যখন হতে তিনি এ পবিত্র হাদীছ শরীফ শুনেছেন, এই নামায কখনও তিনি পরিত্যাগ করেননি (বুখারী শরীফ)। গরীব দুঃখী ইয়াতীমদের প্রতি তিনি খুব লক্ষ্য করতেন। একবার এক মুসলমানের মৃত্যু হলে তার সব সন্তান সন্ততিকে তিনি লালন পালনের ভার গ্রহণ করেন এবং তাদের বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত তাদের লালন পালন করেন। সুবহানাল্লাহ !
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফের উপর তিনি কঠোরভাবে আমল করতেন। উনার পিতা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন বিছাল শরীফ লাভ করেন, তিন দিন পরই তিনি সুগন্ধি চেয়ে নিয়ে নিজ কপাল মুবারকে মাখেন এবং বলেন: আমি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি, খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মহিলার একমাত্র আহাল (স্বামী) ব্যতীত অন্য কোন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করা জায়েয নেই। আহালের (স্বামীর) জন্য চার মাস দশ দিন শোক করতে হবে। সুবহানাল্লাহ! (তাবাক্বাত) 
(সুত্র সমূহ: উসুদুল গাবা, ইছাবা, তাবাক্বাত, সিয়ারু আলামিন নুবালা, আসাহহুস সিয়ার, দৈনিক আল ইহসান শরীফ )