সুওয়াল - ‘যার পীর নেই, তার পীর শয়তান’- এ উক্তিটি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর কোথায়ও আছে কি? জানতে ইচ্ছুক।
জাওয়াব - হ্যাঁ, কথাটা সরাসরি কুরআন শরীফের আয়াত বা হাদীছ শরীফ নয়, তবে অবশ্যই এটা অনুসরণীয় বুযুর্গানে দ্বীনের কথা। মূল আরবীতে হলো-
من ليس له شيخ فشيخه شيطان.
অর্থঃ- যার শায়খ (পীর) নেই, তার শায়খ (পীর) শয়তান। হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত জোনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখ বুযুর্গানে দ্বীন একথা বলেছেন, যা ওনাদের সীরত গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।
উপরোক্ত কাওলের ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়, যদি কোন ব্যক্তি, কোন হাক্কানী আল্লাহ্ ওয়ালা পীর ছাহেব (শায়খ) উনার (তথাকথিত নয়) মুরীদ হয়, তাহলে তার পক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনার মতে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে কায়েম থাকা সম্ভব। কারণ মহান আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে বলেন,
وما ينطق عن الهواء ان هوالا وحى يوحي.
অর্থঃ- “তিনি (হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি ওহী ব্যতীত নিজ থেকে কোন কথা বলেন না।”
এ আয়াত শরীফের তফসীরে হাদীছে কুদসীতে উল্লেখ করা হয়,
لايزال العبد يشقرب الى بالنوافل حتى احبه فاذا احببت كنت كنت سمعه الذى يسمع به كنت بصره الذى يبصربه- كنتلسائه الذى ينطق به- كنت يده الذى يبطش بها كنت رجله الذى يمشى بها- فاذا سئلنى اعطيته.
অর্থঃ- “বান্দা অতিরিক্ত আমল (সুন্নতে যায়েদা, মোস্তাহাব, নফল, মোবাহ্ ইত্যাদি) করতে করতে আমার এতটুকু নৈকট্য লাভ করে যে, আমি তাকে মহব্বত করি। আমি যখন তাকে মহব্বত করি, তখন আমি তার কান হই, সে আমার কানে শুনে। আমি তার চক্ষু হই, সে আমার চোখে দেখে। আমি তার জবান হই, সে আমার জবানে কথা বলে। আমি তার হাত হই, সে আমার হাতে ধরে। আমি তার পা হই, সে আমার পায়ে চলে। যখন সে আমার কাছে কিছু চায়, তা অবশ্যই আমি তাকে দান করি এবং তখন অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দান করি।”
অর্থাৎ বান্দা কখনও মহান আল্লাহ্ পাক হয় না, আবার মহান আল্লাহ্ পাকও কখনও বান্দা হন না। মূল কথা হলো- বান্দা মহান আল্লাহ্ পাক উনার আনুগত্যতা করতে করতে এতটুকু অনুগত হয় যে, তখন তার কান, চোখ, যবান, হাত, পা ইত্যাদি সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং সে নিজেও মহান আল্লাহ্ পাক উনার হুকুমের খেলাফ কোন কাজ করে না। কাজেই কোন ব্যক্তি যদি কোন হক্কানী পীর সাহেব (শায়খ) উনার নিকট বাইয়াত (মুরীদ) হয়, তাহলে সে তার পীর ছাহেবের কথামত চলবে এবং এর কারণেই আল্লাহ্ পাক উনার মত এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথের উপর কায়েম থাকবে। আর যদি কোন পীর সাহেবের কাছে বাইয়াত না হয়, তাহলে সে অবশ্যই নফসের তথা শয়তানের পায়রবী করবে এবং শয়তানই তার একমাত্র উপদেষ্টা হবে। কারণ, তার নফস এছলাহ্ বা সংশোধন হয়নি। কাজেই “যার পীর নেই, তার পীর হচ্ছে শয়তান” কথাটা শুদ্ধ এবং যারা এটাকে অসুদ্ধ বলে তাদের কথাই মুলতঃ অশুদ্ধ।
আবা-২৪
সুওয়াল - আমরা কেন শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি? অনেকে বলে থাকে যে, “একমাত্র হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতগণই দাওয়াতী কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন এবং এই দাওয়াতী কাজ করার দরুনই আমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি, অন্য কোন কারণে নয়।” এটা সঠিক কিনা তা জানালে বাধিত হবো।
জাওয়াব - একমাত্র সাইয়্যিদুল মুরছালীন, ইমামুল মুরছালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হওয়ার কারণেই আমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি। অনেকে বলে থাকেন যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতই শুধুমাত্র দাওয়াতী কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন এবং এ কারণেই আমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি, এ কথাটা শুদ্ধ নয়। হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে, “সমস্ত হযরত নবী আলাহিস সালামগণ উনারা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হবার জন্য মহান আল্লাহ্ পাক উনার নিকট আরজু করেছেন। সমস্ত নবী আলাহিস সালাম উনার দোয়াই মহান মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করেছেন, তবে সরাসরি কবুল করেছেন হযরত ঈসা আলাহিস সালাম উনার দোয়া। অনেকে মনে করে থাকে বা বলে থাকে, একমাত্র হযরত ঈসা আলাহিস সালাম ব্যতীত আর কোন নবী আলাহিস সালাম উনার দোয়াই কবুল হয়নি, এটা সঠিক নয়। কেননা দোয়া কবুল হয় তিন প্রকারে। প্রথম প্রকার- বান্দা যা চায়, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সরাসরি তা দিয়ে দেন। দ্বিতীয় প্রকার- বান্দা যা চায়, তার চেয়ে যা বেশী জরুরী, সেটাই মহান আল্লাহ্ পাক দিয়ে থাকেন, যে জরুরত সম্বন্ধে বান্দা নিজেই জানে না। তৃতীয় প্রকার- বান্দা যা চায়, মহান আল্লাহ্ পাক সেটা তাকে না দিয়ে তা কবুল করে তার সওয়াবটুকু পরকালের জন্য জমা করে রাখেন। বান্দা যখন হাশরের ময়দানে উপস্থিত হয়ে তার নেকী কম দেখবে, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলবেন, “হে বান্দা! তোমার জন্য অমুক স্থানে নেকী রাখা হয়েছে,” তখন সেই বান্দা গিয়ে দেখবে যে, তার জন্য পাহাড় পাহাড় নেকী রাখা হয়েছে। সে বলবে, আয় আল্লাহ পাক! আমি তো এত নেক কাজ করিনি, আমার এত নেকী আসলো কোথা থেকে? তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলবেন, “তুমি যে সকল দোয়া দুনিয়াতে করেছিলে, যার বদলা দুনিয়াতে দেয়া হয়নি, সে কারণে তুমি মনে করেছিলে যে, তোমার দোয়া কবুল করা হয়নি, অথচ আমি তা কবুল করেছিলাম এবং তাই পাহাড় পাহাড় নেকী আকারে জমা হয়েছে।” তখন বান্দা বলবে, মহান আল্লাহ্ পাক! দুনিয়াতে আমার সমস্ত দোয়াগুলিরই বদলা না দিয়ে যদি পরকালের জন্য জমা রাখা হতো, তাহলে তা আমার জন্য ফায়দার কারণ হতো।
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এর মাধ্যমে এটাই সাবেত হয়, শুধুমাত্র দাওয়াতের কারণেই যদি উম্মতে মুহম্মদীর শ্রেষ্ঠত্ব হতো, তাহলে অন্যান্য নবী আলাহিস সালাম তিনি দাওয়াতের দায়িত্ব পাওয়া সত্ত্বেও হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হবার জন্য দোয়া করতেন না। বরং উম্মতে হাবীবী উনার শ্রেষ্ঠত্ব দাওয়াতের কারণে নয় বরং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হবার কারণে। আরও কুরআন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
وكذالك جعلناكم امة وسطا لتكونوا شهداء على الناس ويكون الرسول عليكم شهيدا.
অর্থঃ- “এরূপেই আমি তোমাদেরকে উম্মতে ওয়াসাত (শ্রেষ্ঠ উম্মত) করেছি। যেন তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও, সমস্ত মানুষের জন্য এবং যাতে রসূল আলাহিস সালামগণ উনারা সাক্ষ্যদাতা হন, তোমাদের জন্য।” (সূরা বাক্বারা-১৪৩)
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়, হাশরের ময়দানে যখন সমস্ত নবী আলাহিস সালামগণ উনাদের গুণাহ্গার উম্মতগণকে জিজ্ঞেস করা হবে, “তোমরা কেন নেক কাজ করনি?” তখন তারা বলবে, দুনিয়াতে আমাদের কাছে কোন আসমানী কিতাবও আসেনি এবং কোন হযরত নবী আলাহিস সালাম উনারা আগমন করেনি। তখন আল্লাহ্ পাক তিনি নবী আলাহিমুস সালামগণ উনাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, “আপনারা কি তাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছাননি?” তাঁরা বলবেন, “হ্যাঁ, পৌঁছিয়েছি।” তখনও অন্য নবী আলাহিমুস সালাম উনার উম্মতগণ তা অস্বীকার করবে। তখন মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলবেন, “হে নবী আলাহিমুস সালামগণ! আপনাদের সাক্ষী কোথায়?” তখন উনারা বলবেন, উম্মতে হাবীবীগণই আমাদের সাক্ষী। তখন উম্মতে হাবীবীগণকে ডেকে জিজ্ঞেস করা হলে উনারা বলবেন, “হ্যাঁ, সমস্ত নবী আলাহিমুস সালামগণ উনারা দাওয়াত পৌঁছিয়েছেন এবং দায়িত্ব পালন করেছেন।” একথা শুনে অন্যান্য নবী আলাহিমুস সালামগণ উনাদের উম্মতগণ বলবেন, উম্মতে হাবীবীগণ উনারা তো আমাদের থেকে অনেক পরে এসেছে, তারা কিভাবে আমাদের সাক্ষী হয়? তখন মহান আল্লাহ্ পাক উম্মতে হাবীবীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বলবেন, “হ্যাঁ, আমরা তাদের থেকে অনেক পরে এসেছি, তবে আমাদের নিকট এসেছিলেন সাইয়্যিদুল মুরছালীন, ইমামুল মুরছালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তিনি আমাদেরকে এ বিষয়ে জানিয়েছেন। আমরা উনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং উনাকে সত্য বলে জেনেছি, তাই আমাদের সাক্ষ্য সত্য। অতঃপর মহান আল্লাহ্ পাক তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করবেন এবং তখন উম্মতে হাবীবীকে সমর্থন করে সাক্ষী দেবেন, হ্যাঁ, তারা যা বলেছে সবই সত্য এবং আমিই তাদেরকে এ তথ্য জানিয়েছি, যা আমি মহান আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে জেনেছি। (সিহাহ সিত্তাহ্ দ্রষ্টব্য)
সুতরাং উপরোক্ত আয়াত শরীফে আমাদেরকে যে শ্রেষ্ঠ উম্মত বলা হয়েছে, তা দাওয়াতী কাজ করার জন্য নয় বরং তা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রকৃত উম্মত হবার কারণে।
কুরআন শরীফের আয়াত এবং সহীহ্ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, আগেকার উম্মতগণের উপরও দাওয়াতের দায়িত্ব ছিল। যেমন ‘সূরা ইয়াসীন’ উল্লেখ করা হয়েছে, “কোন এক জনপদে রসূল আলাহিস সালামগণ আগমন করলে সেখানকার অধিবাসীগণ উনাদের রিসালতকে অস্বীকার করে হত্যা করার জন্য উদ্যত হলো। তখন শহরের প্রান্তভাগ থেকে এক ব্যক্তি, যিনি ঈমান গ্রহণ করেছিলেন, তিনি দৌড়ে এলেন এবং তার সম্প্রদায়কে রসূল আলাহিস সালামগণকে হত্যা করতে নিষেধ করলেন এবং তাঁদের অনুসরণ করার উপদেশ দিলেন।”
এটা ছাড়া হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “মহান আল্লাহ্ পাক হযরত জিবরাঈল আলাহিস সালাম উনার নিকট ওহী পাঠালেন, অমুক অমুক শহরের সমগ্র বাসিন্দাসহ উল্টাইয়া দাও।” তখন হযরত জিবরাঈল আলাহিস সালাম আরজ করলেন, “হে পরওয়ারদেগার! এ শহরে আপনার অমুক বান্দা রয়েছে, যে মুহূর্তকালও আপনার নাফরমানীতে লিপ্ত হয়নি।” তখন মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ করলেন, “শহরটিকে ঐ ব্যক্তি এবং সমগ্র বাসিন্দাসহ তাদের উপর উল্টাইয়া দাও, কারণ আমার জন্য ঐ ব্যক্তির চেহারায় এক মুহূর্তের জন্য পরিবর্তন আসেনি, অর্থাৎ সে আফসোস করেনি।”
বণী ইসরাঈল আমলের অনুরূপ আরো একটি ওয়াকেয়া তাফসীরে উল্লেখ করা হয়, আল্লাহ পাক হযরত ইউশা বিন নুন আলাহিস সালাম উনার উপর ওহী নাযিল করলেন, “হে আমার নবী! আপনার উম্মতের মধ্যে এক লক্ষ লোককে ধ্বংস করে দেয়া হবে, যার মধ্যে ৬০ হাজার লোক সরাসরি গুণাহে লিপ্ত (গুমরাহ)।” তখন হযরত ইউশা বিন নুন আলাহিস সালাম তিনি বললেন, “আয় আল্লাহ পাক! ৬০ হাজার লোক সরাসরি গুণাহে লিপ্ত, তাই তাদের ধ্বংস করে দেয়া হবে। কিন্তু বাকী ৪০ হাজার লোককে ধ্বংস করা হবে কেন?” তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “যেহেতু তারা তাদের সাথে মিলা-মিশা, ওঠা-বসা করে এবং সম্পর্ক রাখে। আর গুণাহের কাজে বাধা প্রদান করেনা, তাই তাদেরকেসহ ধ্বংস করে দেয়া হবে।”
পূর্ববর্তী উম্মতগণের উপরও দাওয়াতের দায়িত্ব ছিল, কেননা দায়িত্ব থাকার কারণেই তা পালন না করার জন্য ‘বনী ঈসরাইলের’ উল্লেখিত ব্যক্তি ও সম্প্রদায়কে শাস্তি পেতে হয়েছে।
সুতরাং উপরোক্ত আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং তার আনুষাঙ্গিক ঘটনা ব্যতীত আরও অনেক আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ঘটনার মাধ্যমে জানা যায় যে, পূর্ববর্তী উম্মতগণ যে দাওয়াতের কাজ করেছেন, তা তাফসীরে রূহুল মায়ানী, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে আমিনিয়া, তাফসীরে খাযেন, তাফসীরে মা’আরেফুল কুরআনইত্যাদি এবং এটা ব্যতীত বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফের কিতাব দ্বারাও প্রমাণিত।
মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ-এ বলেন,
كنتم خيرامة اخرجت للناس تأمرون بالمعروف وتنهون عن المنكر وتؤمنون بالله.
অর্থঃ- “তোমরা মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছ। তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে ও বদ কাজের নিষেধ করবে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান আনবে।”
অনেকে ‘সূরা ইমরান’-এর উপরোল্লিখিত আয়াত শরীফ উল্লেখ করে বলে থাকে যে, আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ উম্মত বলা হয়েছে, কারণ আমরা সৎ কাজের আদেশ করি এবং অসৎ কাজের নিষেধ করি। মূলতঃ তাদের এ ব্যাখ্যা ঠিক নয়, কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হওয়াটাই হলো আমাদের জন্য শ্রেষ্ঠ। আর এ ছাড়া আমাদের যতগুলো গুণ দেয়া হয়েছে, তাও একমাত্র হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কারণে।
অন্যান্য নবী আলাহিমুস সালামগণ, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হবার জন্য আরজু করেছেন, তাই বলে কেউ যেন এটা মনে না করে যে, উম্মতে হাবীবীর শ্রেষ্ঠত্ব অন্যান্য নবী আলাহিমুস সালামগণ হতে বেশী। বরং শুধুমাত্র হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কারণে যে উম্মতে হাবীবীর শ্রেষ্ঠত্ব, তা বুঝানোর জন্যই সমস্ত নবী আলাহিমুস সালামগণ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হবার জন্য আরজু করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
আবা-২৪
সুওয়াল - আমাদের এলাকায় এক মৃত বৃক্তির জানাযার নামাজ দু’বার পড়ানো হয়েছে। দু’বারই ওলি নিজে নামায পড়েছে এবং পড়ার এযাযতও দিয়েছে। প্রথমবার ওলির এযাযতে এক মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল নামায পড়ায়েছেন এবং তার সাথে ওলি নিজেও নামায পড়েছে। দ্বিতীয়বার ওলির এযাযতে অন্যত্র জানাযার নামায পড়ানো হয়েছে। সেখানেও ওলি নিজে নামায পড়েছে। এ ঘটনা ঘটার পর ঐ ভাইস প্রিন্সিপালকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, ওলির এযাযতে মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায একবার পড়ানোর পর আবার ঐ মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায পাড়ানো জায়েয হয়েছে কি? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, জায়েয হয়েছে। এ জবাব কি সঠিক হয়েছে? তা জানায়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব - উক্ত ভাইস প্রিন্সিপাল ছাহেবের জবাব অশুদ্ধ ও ভুল হয়েছে। কেননা আমাদের হানাফী মায্হাব মোতাবেক ওলির এযাযতে কোন মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায একবার পড়ানোর পর দ্বিতীয়বার পড়ানো জায়েয নেই। হ্যাঁ তবে যদি ওলির এযাযত ব্যতীত অথবা ওলির নামায পড়ার পূর্বে ঐ মৃত ব্যক্তির যদি একাধিকবারও জানাযার নামায পড়ানো হয়, তবে তা জায়েয রয়েছে। (দুররুল মুখতার, শামী, কাঞ্জ, ফতওয়ায়ে দেওবন্দ)
আবা-২৪
সুওয়াল - টাখনুর নীচে কাপড় পরা জায়েয আছে কিনা, জানায়ে বাধিত করবেন?
জাওয়াব - টাখনুর নীচে কাপড় পরা হারাম। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “লুঙ্গি, সেলওয়ার, পায়জামা ইত্যাদি জাতীয় কাপড় দ্বারা টাখনুর নীচের অংশ আবৃত থাকলে, তা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে অর্থাৎ ঐ ব্যক্তিই জাহান্নামে যাবে। কারণ শরীরের এক অংশ জাহান্নামে যাবে, আরেক অংশ জান্নাতে যাবে, তা সম্ভব নয়। কাজেই পুরুষের জন্য টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করা হারাম এবং কবীরা গুণাহ্। (বুখারী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী মিরকাত শরীফ ইত্যাদি)
আবা-২৪
সুওয়াল - সফর মাস নাকি অশুভ, এটা বলা শরীয়তে ঠিক হবে কি?
জাওয়াব - বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ ইত্যাদি আরো হাদীছ শরীফের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “ছোঁয়াচে, অশুভ বা কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই। আর পেঁচার মধ্যে কুলক্ষণ নেই এবং সফর মাসে অশুভ বলতে কিছু নেই।”
অতএব সফর মাসকে অশুভ বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে নাজায়েয ও গুণাহের কাজ।
আবা-২৪
জাওয়াব - পানির নীচের মাছ বেচা-কেনা করা জায়েয নেই। কারণ শরীয়তে অনির্দিষ্ট অর্থাৎ যার পরিমাণ নির্ধারিত করা হয়নি আর অদৃশ্য যা দেখানো বা দেখা হয়নি, এরূপ মাল বেচা-কেনা জায়েয নেই। (আলমগীরী, আইনুল হেদায়া, শামী ইত্যাদি ফিক্বাহ্র কিতাবসমূহ)
আবা-২৪
সুওয়াল - মহিলাদের জন্য পুরুষ পীর ছাহেব ধরা কি জায়েয আছে? পুরুষ পীর সাহেব কি মহিলা মুরীদের দ্বারা খিদমত গ্রহণ করতে পারেন? যেমন- হাত-পা, শরীর মালিশ করা, কিম্বা মেসেজ করা, কিম্বা বাতাস করা ইত্যাদি? সঠিক জবাবদানে বাধিত করবেন।
জাওয়াব - হ্যাঁ, মহিলারা পুরুষ পীর ছাহেবের নিকট বাইয়্যাত (মুরীদ) হওয়া জায়েয তো বটেই বরং দিল ইসলাহের জন্য মুরীদ হওয়া ফরজ-ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত। হ্যাঁ তবে যদি উপযুক্ত মহিলা পীর সাহেবা থাকেন, তবে উনার কাছে বাইয়্যাত গ্রহণ করতে পারে। গাউসুল আ’যম বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুলতানুল হিন্দ খাজা মঈনুদ্দীন চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট অনেক মহিলা বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন, যা উনাদের সীরাত গ্রন্থে উল্লেখ আছে। যেমন- হযরত রাবেয়া বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমাম হাসান বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে বাইয়্যাত হয়েছিলেন, যেটা উনার সীরাত গ্রন্থে উল্লেখ হয়েছে। তবে অবশ্যই মহিলারা পুরুষ পীর ছাহেবের নিকট বাইয়্যাত হলে পর্দা রক্ষা করবে। কারণ পর্দা রক্ষা করা ফরজ।
যেহেতু পর্দা রক্ষা করা ফরজ, সেহেতু মহিলারা পুরুষ পীর ছাহেবের হাত-পা, শরীর মালিশ করা, মেসেজ করা তো দূরের কথা তার সামনে যাওয়াটাই নাজায়েয ও হারাম। আর আড়ালে থেকে খিদমত করতে পারবে। যেমন- খানা পাক করে খাওয়ানো, গরম পানি করে দেয়া, ঘর-বাড়ী ঝাড়ু দেয়া ইত্যাদি।
আবা-২৪
সুওয়াল - কেউ যদি বিত্র নামাযে দোয়া কুনুত পাঠ করতে ভুলে যায় এবং নামায শেষ করার পূর্বেই স্মরণ হয়, তখন সে কি করবে?
জাওয়াব - এমতাবস্থায় উক্ত নামাযী সিজ্দায়ে সাহু দিয়ে নামায শেষ করবে। কেননা বিত্র নামাযে দোয়া কুনুত পাঠ করা ওয়াজিব ছিল। সাহু ওয়াজিব হয় তরকে ওয়াজিবের কারণে। আর এ ওয়াজিব উক্ত নামাযী থেকে ভুলে ছুটে যায়। শরীয়তের মাসয়ালা হলো- ওয়াজিব ভুলে ছুটে গেলে সিজ্দায়ে সাহু দিলে নামায বিশুদ্ধ হয়ে যাবে। আর ইচ্ছাকৃত ওয়াজিব ছেড়ে দিলে নামায দোহ্রায়ে পড়া ওয়াজিব।
আবা-২৪
সুওয়াল - চার রাকায়াত বিশিষ্ট নফল বা সুন্নাতে জায়েদা নামাযে প্রথম বৈঠকে নাকি তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ এবং দোয়া মা’ছূরা পড়ে দাঁড়িয়ে বাকী দু’রাকায়াত পড়ে নামায শেষ করতে হয়? তা জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব - চার রাকায়াত বিশিষ্ট নফল ও সুন্নাতে যায়েদা নামাজ দু’নিয়মেই পড়া যায়। অর্থাৎ কেউ যদি ইচ্ছা করে, তবে প্রথম বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু, দুরুদ শরীফ এবং দোয়া মাছূরা পড়ে দাঁড়িয়ে তৃতীয় রাকায়াতের শুরুতে ছানা পড়ে অবশিষ্ট দু’রাকায়াত নামাজ যথারীতি শেষ করতে পারে। অন্যথায় প্রথম বৈঠকে শুধু আত্তাহিয়্যাতু পড়ে দাঁড়িয়ে বাকী দু’রাকায়াত নামায যথারীতি শেষ করতে পারে।
আবা-২৪
সুওয়াল - কোন জ্ঞানী ব্যক্তি প্রায়ই বলে থাকেন যে, পরকালে রক্ত সম্পর্কের কোন উপকারে আসবেনা। বরং দ্বীনি সম্পর্ক উপকারে আসবে। কিন্তু হাদীছ শরীফে আছে, (রেহেম) রক্ত সম্পর্ক ছিন্নকারী যেন মহান আল্লাহ্ পাক উনার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলো। এখন দুনিয়াতে রক্ত সম্পর্ক এবং পরকালে রক্ত সম্পর্ক কোনটির গুরুত্ব বেশী? জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব - হ্যাঁ, হাদীছ শরীফে আছে,
لا يد خل الجنة قاطع الرحم.
অর্থঃ- “আত্মীয়তার (রক্ত) সম্পর্ক ছিন্নকারী বেহেস্তে প্রবেশ করবে না।”
যে সমস্ত আত্মীয়ের সাথে রক্তের সম্পর্ক রক্ষা করলে শরীয়তের কোন ক্রুটি হয়না, অর্থাৎ শরীয়ত পালনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়না, তাদের সাথে আত্মীয়তা রক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং আত্মীয়তার বন্ধনকে ছিন্ন করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর যে সমস্ত আত্মীয়তার সাথে সম্পর্ক রক্ষা করতে গেলে শরীয়ত পালনে বিঘ¦তা সৃষ্টি হয় অর্থাৎ ঈমান, আমল, ইখলাসে ক্রুটি আসে, তাদের সাথে আত্মীয়তা রক্ষা করা জায়েয নেই। কাজেই যেখানে দুনিয়াতেই সর্বক্ষেত্রে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা শর্ত নয়, সেখানে পরকালে রক্ত বা আত্মীয়তার সম্পর্ক কি কাজে আসতে পারে? কারণ মহান আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফ-এ বলেন,
يوم يفرالمرء من اخيه وامه وابيه وصابته وبنيه.
অর্থঃ- “হাশরের দিন মানুষ পলায়ন করবে তার ভাই, মাতা-পিতা, স্ত্রী এবং সন্তান হতে। পরকালে সাধারণভাবে রক্তের সম্পর্ক কাজে আসবে না সত্যই তবে রক্তের ঐ সম্পর্ক কাজে আসবে, যার সাথে দ্বীনি সম্পর্ক জড়িত।” (সূরা আবাছা আয়াত নং-৩৪,৩৫,৩৬)
এছাড়াও শুধু দ্বীনী সম্পর্কেও উপকারে আসবে। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
يشفع يوم القيامة ثلاث الانبياء ثم العلماء ثم الشهداء.
অর্থঃ- “ক্বিয়ামতের দিন নবী-রসূল আলাহিস সালামগণ উনারা, আলিমগণ উনারা এবং শহীদগণ উনারা শুপারিশ করবেন।”
‘মুসলিম শরীফ’-এর একটি হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে, ক্বিয়ামতের দিন সাত প্রকার লোক মহান আল্লাহ পাক উনার আরশের ছায়ার নিচে স্থান পাবেন, তন্মধ্যে এক প্রকার হচ্ছে- যাঁরা পরস্পর মহান আলাহ্ পাক উনার মুহব্বতে একত্রিত হন এবং মহান আল্লাহ্ পাক উনার মহব্বতে পৃথক হন।
উপরোক্ত হাদীছ শরীফদ্বয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছাড়াই একমাত্র দ্বীনি সম্পর্কের দরুন শুপারিশ নসীব হবে। তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাযাহ ইত্যাদি হাদীছ শরীফের কিতাবে হাফেযে কুরআনের ফযীলত প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যে হাফেয সাহেব বা আমল (আমলকারী) তিনি হাশরের দিন উনার পরিবারের দশ জনকে, যাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে, তাদেরকে শুপারিশ করতে পারবেন এবং তাঁর শুপারিশের কারণে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে অবশ্যই এ সমস্ত ব্যক্তিদের ঈমান থাকা শর্ত। কেননা কাফির কখনো বেহেস্তে প্রবেশ করবে না।
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা যদিও দেখা যাচ্ছে যে, হাফেয সাহেবের শুপারিশে উনার পরিবারের দশজন রক্ত সম্পর্ক থাকার কারণে নাযাত পাচ্ছে। মূলতঃ রক্ত সম্পর্কের সাথে সাথে ঈমান থাকার কারণে নাযাত পাবে। যেমন হযরত নুহ আলাহিস সালাম উনার ছেলে (কেনান) প্রসঙ্গে ‘সুরা হুদ’-এ ইরশাদ হয়েছে,
انه ليس من اهلك انه عمل غير صالح.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই সে আপনার পরিবারের অন্তর্ভূক্ত নয়, তার আমল ভাল নয় অর্থাৎ সে ঈমানদার নয়।”
এখানে রক্তের সম্পর্ক থাকা সত্বেও দ্বীনি সম্পর্ক না থাকার কারণে কেনান নাযাত পায়নি। কাজেই সর্বাবস্থায় দ্বীনি সম্পর্ককে প্রাধান্য দিতে হবে, অর্থাৎ দ্বীনি সম্পর্কেরই গুরুত্ব বেশী।
আবা-২৪
সুওয়াল - বংশ মর্যাদা নিয়ে গৌরব অর্জন করা কি? মানুষের নামের আগে-পরে সাইয়্যিদ, খন্দকার, খান, পাঠান ইত্যাদির ব্যবহার করা কতটুকু শরীয়ত সম্মত জানতে চাই?
জাওয়াব - আমরা সকলেই হযরত আদম আলাহিস সালাম উনার সন্তান, আর আদম সন্তান হিসেবে আমরা আশরাফুল মাখলুকাত হয়েছি। যা কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
لقد كرمنابنى ادم.
অর্থ- “আমি বনী আদমকে সম্মানিত করেছি।”
এর বিপরীতে ইরশাদ হয়েছে-
ثم رددناه اسفل سافلين.
অর্থ- “আমি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি নিচ থেকেও নিচে।”
অর্থাৎ মানুষ বদ আমলের কারণে জাহান্নামের অতল তলে পৌঁছে যাবে। তবে নেক আমল ও খোদা ভীতির মাধ্যমে মানুষ একে অপরের থেকে শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার হতে পারে। যেটা মহান আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে উল্লেখ করেছেন,
ان اكر مكم عند الله اتقاكم.
অর্থ- “নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি অধিক সম্মানিত, যে বেশী তাকওয়াধারী, পরহেযগার।” কাজেই বংশ-গোত্র, ভাষা-জাতি, ধন-সম্পদ, রং-রূপ, আকার-আকৃতি প্রভৃতির কারণে মানুষ শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হতে পারে না। শ্রেষ্ঠত্বের বা মর্যাদার সঠিক মাপকাঠি হলো তাক্ওয়া বা খোদাভীতি। এজন্য বলা হয়-
ঊদূ লেখা ঢুকবে............................
অর্থ- যদি আকৃতির দ্বারা মানুষ মনুষত্ব হাসিল করতে পারতো, তাহলে হাবীবু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আবু জাহেল এক হয়ে যেতেন। প্রকাশ্যে (সূরতে) যা দেখা যায়, তা মনুষত্বের বিপরীত, (এ সূরত) মনুষত্ব নয়, বরং মনুষত্বের গিলাফ বা আবরণ।”
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
من تواضح رفعه الله.
অর্থ- “যে বিনয় প্রকাশ করে, আল্লাহ্ পাক তাঁকে মর্যাদা দান করেন।”
অতএব কোন মানুষের জন্য শুধু বংশ মর্যাদা নিয়ে নয়, যে কোন বিষয়েই গৌরব-অহংকার করা শরীয়তের খেলাফ, তথা নাজায়েয। কারণ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
ان الله لا يحب من كان مختلا فخورا.
অর্থ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তায়ালা দাম্ভিক, ফখরকারীকে পছন্দ করেন না।
এবং হাদীছে কুদসীতে ইরশাদ হয়েছে,
لكبرياء ردائى والعظمة ازارى فمن نزغ فى شيئ منهما ادختله النار ولا ابالى.
অর্থ- “অহংকার আমার চাদর এবং বড়ত্ব আমার লুঙ্গি, যে এ’দুটি নিয়ে টানাটানি করবে, আমি তাকে জাহান্নামে দাখিল করবো। এতে আমার কোন পরওয়া নেই।”
আর মানুষের নামের আগে-পরে যে সাইয়্যিদ, খান, পাঠান ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে, তা তার বংশ পরিচয়ের জন্য। যেমন মহান আল্লাহ পাক কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
انا خلقناكم من ذكرو انشى وجعلناكم شعوبا وقبائل لتعارقوا- ان اكر مكم عند الله اتقاكم.
অর্থ- “নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা থেকে সৃষ্টি করেছি এবং আমি তোমাদেরকে বিভিন্ন গোত্র ও শাখায় বিভক্ত করেছি পরস্পর পরিচয় লাভের জন্য। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক উনার নিকট ঐ ব্যক্তি অধিক সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে অধিক পরহেযগার।”
মূলতঃ নামের আগে বা পরে বংশ পরিচয়, উল্লেখ করা স্বয়ং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত। কারণ বংশ পরিচয় বা লক্বব উল্লেখের মাধ্যমে মানুষের আমল-আখলাক এবং তার প্রকৃত পরিচয় জানা সম্ভব হয়। যেমন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ইমাম হাসান আলাইহাস সালাম ও হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদেরকে সাইয়্যিদ, হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনাকে ফারূক উপাধি দিয়েছেন এবং স্বয়ং আল্লাহ্ তায়ালা হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম উনাকে সিদ্দিক উপাধিতে ভূষিত করেন।
আবা-২৪
সুওয়াল - হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের যুগে মায্হাব ছিল কি? কখন হতে মায্হাবের সূচনা হয় এবং মায্হাব মানা কি? মায্হাব না মানলে কি হবে? দলীলসহ জানতে চাই।
জাওয়াব - মায্হাবের আভিধানিক অর্থ পথ। শরীয়তের পরিভাষায়- যে পথে চলার কারণে শরীয়ত অনুযায়ী আমল করে আল্লাহ্ পাক-এর নৈকট্য বা সন্তুষ্টি হাসিল করা সম্ভব হয়।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যুগে মায্হাবের কোন প্রশ্নই আসে না। কারণ সে সময় সরাসরি ওহীর দ্বারা ফায়সালা করা হতো। আর হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনারা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে জেনে আমল করতেন। প্রত্যেক হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের আলাদা আলাদা মায্হাব ছিল। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
اصحابى كالنجوم با يهم اقتديتم اهتديتم.
অর্থ- “আমার ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনারা তারকা সাদৃশ, উনাদের যেকোন একজনকে অনুসরণ করলে, তোমরা হিদায়েত প্রাপ্ত হবে।”
মূলতঃ মায্হাবের উৎপত্তি হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের থেকে শুরু হয়েছে এবং তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীনগণ উনাদের মধ্যে অনেকেই মায্হাবের ইমাম ছিলেন। কেননা শুরু জামানায় অনেকেই মুজতাহিদ ছিলেন, উনারা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ পড়ে নিজেই ইজতিহাদ করে চলতেন, কারো অনুসরণ করার প্রয়োজন ছিল না।
হিজরী শতকের তৃতীয় শতাব্দী থেকে হানাফী (৮০-১৫০), মালেকী (৯৩ বা ৯৫ -১৭৯) শাফেয়ী (১৫০-২০৪) ও হাম্বলী (১৬৪-২৪৬) মায্হাব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সর্বজন মান্য হিসেবে গৃহীত হয়।
আর চতুর্থ হিজরী শতকে ইজ্মা প্রতিষ্ঠিত হয় যে, উক্ত চার মায্হাবের যে কোন এক মায্হাবের অনুসরণ করা ওয়াজিব ও ফরজ এবং তা অমান্য করা বিদায়াতী ও গুমরাহী।
এছাড়াও লোকেরা অনেককে মায্হাবের ইমাম হিসেবে অনুসরণ করেছেন। যেমন- হযরত সুফিয়ান সাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আওযায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুফি ইবনে ওয়াইনিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমূখ। কিন্তু উনাদের কিতাবাদিতে দ্বীনের সকল বিষয়ের মাসয়ালা-মাসায়েল না থাকার দরুণ তার বিলুপ্তি ঘটে এবং উপরোক্ত মায্হাব চতুষ্ঠয় প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিস্তার লাভ করে। আর রাষ্ট্র পরিচালনার মাসয়ালা-মাসায়েল একমাত্র হানাফী মায্হাবেই বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অতএব প্রত্যেক মুসলমানের উপর মায্হাবের অনুসরণ করা একান্ত অপরিহার্য, তথা ওয়াজিব ও ফরজ এবং তা অস্বীকারকারী গোমরাহ্, বেদায়াতী এবং পথভ্রষ্ট। (বুস্তানুল মুহাদ্দিসীন, সায়েকাতুল মুসলিমীন, ইয়াম্বু ইনসাফ, তাইছিরুল উসুল, ইকমাল, ইবনে খালকান, হাশিয়ায়ে তাহতাবী, তাবীনুল মাহারেম, নূরুল আনোয়ার, ইকদুলজিদ ইত্যাদি কিতাব দ্রষ্টব্য)
[বিঃ দ্রঃ- পরবর্তীতে আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাতে মায্হাব সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া দিব ইনশাআল্লাহ্]
আবা-২৪
মাযহাব ফতোয়া -
১. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_5.html
২. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_81.html
৩. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_58.html
৪. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_51.html
৫. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_28.html
৬. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_94.html
৭. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_33.html
৮. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_697.html
৯. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_3.html
১০. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_16.html
১১. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_450.html
১২. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_354.html
১৩. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_692.html
১৪. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_189.html
১৫. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_32.html
১৬. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_185.html
১৭. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_505.html
১৮. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_575.html
১৯. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_79.html
২০. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_164.html
২১. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_219.html
২২. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_647.html
২৩. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_998.html
২৪. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_941.html
২৫. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_173.html
২৬. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_654.html
২৭. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_895.html
২৮. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_721.html
২৯. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_460.html
৩০. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_582.html
৩১. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_710.html
৩২. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_294.html
৩৩. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_527.html
৩৪. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_253.html
৩৫. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_885.html
৩৬. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_662.html
৩৭. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_288.html
৩৮. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_728.html
৩৯. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_940.html
৪০. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_816.html
৪১. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_529.html
৪২. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_491.html
৪৩. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_154.html
৪৪. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_950.html
৪৫. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_422.html
৪৬. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_793.html
৪৭. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_792.html
সুওয়াল - আমাদের গ্রামের জামে মসজিদে একজন দাতা একটি আধুনিক দেয়াল ঘড়ি দান করেছেন। এই ঘড়ি প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় প্রায় অর্ধমিনিট কাল পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের বাদ্য-বাজনার সূরে সমস্ত মসজিদকে মুখরীত করে তোলে, আমার এবং আমাদের এলাকার ইমামগণ ও আলেম সমাজের প্রশ্ন এই যে, উক্ত ঘড়ি মসজিদে রাখা জায়েয হবে কিনা, দলীলসহ জানায়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব - যে সব ঘড়ি বাদ্য-যন্ত্রের ন্যায় আওয়াজ করে, তা অবশ্যই মসজিদে ব্যবহার করা জায়েয নেই। শুধু মসজিদেই নয়, বরং এমন ঘড়ি ঘর-বাড়ীতেও ব্যবহার করা জায়েয নেই। কেননা হাদীছ শরীফে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
بعشت لكسر المزامير والاسنام.
অর্থ- “আমি বাদ্যযন্ত্র ও মূর্তিসমূহ ধ্বংস করার জন্য প্রেরিত হয়েছি।”
কিতাবে আরও উল্লেখ আছে, বাদ্য-যন্ত্রতো অবশ্যই হারাম। বরং কেউ যদি বাজনার উদ্দেশ্যে কাঠের উপর আঘাত করে, তবে সেটাও নাজায়েয। কাজেই যে সমস্ত ঘড়িতে বাদ্য-যন্ত্রের মত আওয়াজ হয়, সে সমস্ত ঘড়ি কি করে মসজিদে ব্যবহার করা জায়েয হতে পারে? বরং যে সমস্ত ঘড়ি বাদ্য-যন্ত্রের মত আওয়াজ করে না, কিন্তু ঘন্টার মত আওয়াজ করে, সেটাও ব্যবহার করা অনুচিৎ। (হিদায়া, নিহায়া, ইনায়া)
আবা-২৪
জাওয়াব - না, পুরুষের কান ফোঁড়ানো জায়েয নেই। কারণ ইবলিশ যখন মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম অমান্য করে অভিশপ্ত, বিতাড়িত ও মরদুদ হয়ে গেল। তখন সে যা বলেছিল- তার কিছু অংশ মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে উল্লেখ করেন-
ولامر نهم فلبغيرن خلق الله ومن يتخذ الشيطان وليا من دون الله فقد خسر خسرانا ميينا.
অর্থঃ- (ইবলিস বলেছিল) এবং নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে আদেশ করব, যাতে তারা মহান আল্লাহ পাক উনার দেয়া আকৃতির পরিবর্তন করে। আর যারা মহান আল্লাহ্ পাক ব্যতীত শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারা প্রকাশ্য ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত। (সূরা নিসা, আয়ান নং-১৯)
এ আয়াত শরীফের তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পুরুষের কান ছিদ্র করা, নাক ছিদ্র করা, দাঁড়ী মুন্ডন করা ইত্যাদি আকৃতি-বিকৃতির শামীল, যা নাজায়েয ও হারাম। এছাড়া মেয়েদের মত চুল লম্বা রাখা, কানে রিং পরা, গলায় চেন পরা, হাতে বালা, চুড়ি বা ব্রেসলেট ইত্যাদি ব্যবহার করা, ছেলেরা মেয়েদের পোশাক এবং মেয়েরা ছেলেদের পোশাক পরিধান করা ইত্যাদিও নাজায়েয ও হারামের অন্তর্ভূক্ত। (সমূহ তাফসীরের কিতাব, বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী ইত্যাদি দ্রষ্টব্য)
আবা-২৪
সুওয়াল - মহিলাদের পায়ে মেন্দি ব্যবহার করা কি? অনেকে বলে থাকে যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দাঁড়ী মোবারকে মেন্দি ব্যবহার করেছেন। কাজেই সে মেন্দি কিভাবে পায়ে ব্যবহার করা যায়। ইহা আদবের খেলাফ নয় কি?
জাওয়াব - মহিলাদের পায়ে মেন্দি ব্যবহার করা জায়েয। সবচেয়ে সহীহ্ ও নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়েতে বর্ণিত যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো দাঁড়ীতে মেন্দি ব্যবহার করেননি। কারণ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাঁড়ী ও চুল মুবারক মিলে সর্বমোট প্রায় ১৭ থেকে ২৩ খানা পেকেছিল, সেহেতু মেন্দি দেয়ার কোন প্রশ্নই উঠে না। কারণ মেন্দি দেয়া হয় সাদা দাঁড়ী লাল করার জন্য। অবশ্য প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক আলাইহিস সালাম উনি ওনার পাকা দাঁড়ী মুবারকে মেন্দি ব্যবহার করেছিলেন। জানা আবশ্যক যে, মেয়েদের রং ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে। যা দেখা যায়, তাও স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য। তবে প্রলেপ বা আবরণ পড়ে এমন রং ব্যবহার করা যাবে না, যার কারণে ওযু-গোসল হয় না। যেমন- নেইল পালিশ ইত্যাদি। আর সাধারণভাবে মেয়েদের জন্য সুঘ্রাণ ব্যবহার করা জায়েয নেই। তবে স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য এতটুকু সুঘ্রাণ ব্যবহার করতে পারবে, যার ঘ্রাণ তার ঘরেই সীমাবদ্ধ থাকে। অর্থাৎ বাহির থেকে ঘ্রাণ পাওয়া না যায় এবং এই সুঘ্রাণ নিয়ে ঘরের বাইরে চলাচল করতে পারবে না। আর পুরুষের জন্য তার বিপরীত। অর্থাৎ পুরুষেরা সুঘ্রাণ ব্যবহার করতে পারবে, রং ব্যবহার করতে পারবে না হাতে পায়ে ইত্যাদি স্থানে। তবে অবশ্যই পাকা দাঁড়ীতে মেন্দি ব্যবহার করা সুন্নাতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তর্ভূক্ত। মেন্দি ব্যবহার করা উম্মুল মু’মিনীনগণ উনাদের সুন্নাত। দাঁড়ীতে মেন্দি ব্যবহার করলে যদি হাতে পায়ে ব্যবহার করা নাজায়েয হয়, তবে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পানি পান করেছেন, পানি দিয়ে হাত-মুখ ধুয়েছেন। তাহলে সেই পানি দিয়ে ওযু-ইস্তেঞ্জা করাও জায়েয হতো না। কিন্তু পানি দিয়ে ওযু-ইস্তেঞ্জা করা, নাপাকীকে পাক করা ইত্যাদি সর্বপ্রকার কাজে পানি ব্যবহার করা শুধু জায়িযই নয়, ফরজ-ওয়াজিবও বটে। (উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিমাস সালামগণ উনাদের সীরাত গ্রন্থ দ্রষ্টব্য)
মেন্দি শুধু মেয়েদের প্রসাধনী হিসেবেই ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়নি, সাথে সাথে ওষুধ হিসেবে ব্যবহারেরও নির্দেশ রয়েছে। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট কেউ মাথা ব্যাথার অভিযোগ করলে, তিনি তাকে শিঙ্গা লাগানোর নির্দেশ দিতেন, আর পায়ে কষ্ট, ব্যাথা কিম্বা যখমের অভিযোগ করলে, তিনি তাকে মেন্দি লাগানোর নির্দেশ দিতেন। (আবূ দাউদ শরীফ) ভাষার কিছু তারতম্যে অনুরূপ বর্ণনা তিরমিযী শরীফেও রয়েছে।
আবা-২৪
প্রশ্নঃ- কাঁকড়া বিক্রী করে পয়সা নেয়া জায়েয হবে কিনা?
উত্তরঃ- একমাত্র শুকর ছাড়া এমন সকল জীব-জন্তুই যদ্বারা মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়, সে সবেরই ক্রয়-বিক্রয় জায়েয।
এ উত্তরটি সঠিক হয়েছে কিনা, জানাবেন।
জাওয়াব - মদীনার উপরোক্ত উত্তরটি শুদ্ধ হয়নি। কারণ আমাদের হানাফী মায্হাব মোতাবেক কাঁকড়া খাওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী এবং তার বেচা-কেনা বা তার ব্যবসা করাও মাকরূহ্ তাহ্রীমী। যেমন-বিড়ি, সিগারেট, হুক্কা পান করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী, তার ব্যবসা করাও মাকরূহ্ তাহরীমী।
শরীয়তের উসুল হচ্ছে- “যা খাওয়া হারাম, তা বিক্রি করে পয়সা গ্রহণ করাও হারাম। আর যা খাওয়া মাকরূহ্, তার বিক্রিও মাকরূহ্।”
অনেকে বলতে পারেন যে- হাতি, সাপ গৃহপালীত গাধা ইত্যাদী অনেক প্রাণী খাওয়া হারাম, অথচ এর বেচা-কেনা জায়েয আছে। হ্যাঁ, এ সকল প্রাণীও বেচা-কেনা করা হারাম, যখন এগুলি খাওয়ার জন্য বিক্রি করা হয়। কিন্তু এ সমস্ত প্রাণী যেমন-হাতী বেচা-কেনা করা হয় সওয়ার হওয়ার জন্য, যুদ্ধ-জ্বিহাদের জন্য। আর হাতী মারা গেলে তার চামড়া, হাড়, দাঁত ইত্যাদি দ্বারা নানা প্রকার দ্রব্য-সামগ্রী তৈরী করা হয়। যেমন স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাতীর হাড় ও দাঁতের চিরুণী ব্যবহার করেছেন। তদ্রূপ অন্যান্য প্রাণীরও একই হুকুম।
মদীনার সম্পাদক সহীহ্ বুখারী শরীফের হাদীছ শরীফ-এর বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়েছে।
কারণ বুখারী শরীফে শুধু শুকর বেচা-কেনার পয়সাকেই হারাম বলা হয়নি, অর্থাৎ শুকরের পয়সা তো অবশ্যই হারাম, সাথে সাথে বুখারী শরীফের অন্য হাদীছ শরীফে কুকুর বেচা-কেনার পয়সাকেও হারাম বলা হয়েছে।
যেমন হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে-
عن ابن مسعود رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى عن ثمن الكلب ومهرا لبغى وخلوان الكاهن.
অর্থঃ- হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত- হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “কুকুর বিক্রীর মাধ্যমে অর্জিত পয়সা হারাম, দেহ ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত পয়সা হারাম এবং গণকের পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন বা হারাম ঘোষণা করেছেন।” (বুখারী শরীফ, শরহে বেকায়া, আইনুল হেদায়া, ফতহুল বারি, উমদাতুল ক্বারী)
আবা-২৪
মুহম্মদ রুহুল হাসান
কয়েক বছর আগেও বৃটিশ বিমানগুলো রীতিমত মৃত সাগরের (DEAD
SEA) ওপর দিয়ে উড়ে যেতো। বিমানটি মৃত সাগরের ঠিক উপরে এলেই পাইলট একটি ঘোষণা দিয়ে যাত্রীদের ভড়কে দিতেন। ঘোষণাটি ছিল এ রকম- “যাত্রী মহোদয়, আমরা এখন উড়ে যাচ্ছি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০০ ফিট নীচ উচ্চতা দিয়ে।” সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০০ ফিট নীচ দিয়ে উড়ে যাওয়া এও সম্ভব? সত্যি তাই। মৃত সাগর বা উঊঅউ ঝঊঅ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পৃথিবীর সবচাইতে নীচু স্থান, প্রায় ১৮০০ ফিট। হাজার হাজার বছর আগে পৃথিবীর এ স্থানটুকু ধ্বসে গেছে অনেক গভীরে, আর সৃষ্টি হয়েছে এক বিশাল হৃদের। জর্দান এবং ইসরাঈলের কাছেই মৃত সাগরের গভীরতা বেশী, সেখানে মৃত সাগরের তলদেশ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৬০০ ফিট নীচে। ডেডসির অবস্থান হচ্ছে জর্দানের পশ্চিম সীমানার সন্নিকটে এবং ইসরাঈলের পূর্ব-উত্তরদিকে লম্বালম্বিভাবে বিস্তৃত। অর্থাৎ পশ্চিম তীর (ডবংঃ নধহফ)-এর দক্ষিণাংশের দৈর্ঘ্য ৭৭ কিঃমিঃ (৪৮ মাইল) এবং প্রস্থ ৫-১৮ কিঃমিঃ (৩-১১ মাইল) জর্দান এবং ইসরাঈল উভয়েই এই মৃত সাগর ভাগ করে নিয়েছে এবং উভয়েরই দাবী পৃথিবীর সর্বপেক্ষা নীচু স্থান তাদের দিকে। ইসরাঈলের অংশে একটি পোষ্ট অফিস বানিয়ে ওদের দাবী পৃথিবীর সবচাইতে নীচু অংশে ওদের পোষ্ট অফিস সার্ভিস। আর পাশাপাশি জর্দান তাদের অংশে একটি হোটেল বানিয়ে সার্ভিসে ঘোষণা দিচ্ছে, পৃথিবীর সবচাইতে নীচু স্থানে আপ্যায়ন।
ডেডসি পৃথিবীর সর্বাধিক লবনাক্ত হৃদগুলোর মধ্যে অন্যতম। সমুদ্র পানির লবণাক্ততা প্রতি হাজার গ্রামে ৩৫ ভাগ, সেখানে ডেডসির লবণাক্ততা হচ্ছে ২৩৮ ভাগ। তাই একে হাইপার স্যালাইন ওয়াটার সি-এর তালিকাভূক্ত করা হয়ে থাকে। ইউটায় অবস্থিত গ্রেট সল্ট লেকের চেয়েও এর লবণাক্ততা বেশী। ডেডসির ভৌগলিক অবস্থান এবং জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্যের কারণে একে মরু সাগর বলে অভিহিত করেছেন বিভিন্ন ভূ-বিজ্ঞানীগণ। উষ্ণ মন্ডলে; অবস্থিত এ ডেডসির চারদিকে শুষ্ক মরু অঞ্চল থাকায় এর বাস্পীয়ভবন (ঊঠঅচঙজঅঞওঙঘ) বেশী। পক্ষান্তরে বৃষ্টিপাত কম এবং নদীদ্বারা সরবরাহকৃত পানির পরিমাণও তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এর লবণাক্ততার পরিমাণ বেশী। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বহু বছর ধরে জর্দান নদীর পানি এবং অনেক ছোট-বড় ঝর্ণার পানি গড়িয়েছে ডেডসি বা মৃত সাগরের বুকে কিন্তু এ পানির স্রোত ডেডসির মধ্যেই থেমে গেছে। ধারণা করা হয়, প্রতিদিন গড়ে সাত মিলিয়ন টন পানি বাষ্পাকারে উড়ে যাচ্ছে এবং রেখে যাচ্ছে ডেডসির বুকে লবন, খনিজ পদার্থ ইত্যাদি। এভাবে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এ পানি হয়েছে ক্রমশ ঘন, ভারী এবং লবণাক্ত। যদি নদীর পানির সঙ্গে ঘটনাক্রমে কোন জলজ জীব এ সাগরের পানিতে এসে পড়ে, তবে রক্ষে নেই, মৃত্যু অবধারিত। সম্ভবত এই ব্যতিক্রমধর্মী বৈশিষ্ট্যের জন্যই এর নামকরণ করা হয়েছে, মৃত সাগর বা উঊঅউ ঝঊঅ.। তবে আরবদের কাছে ঐতিহাসিক লুত সাগর নামে অধিক পরিচিত।
ডেডসির পানির রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ক্লোরাইড (ডিফ), ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড (কপষ), সোডিয়াম ক্লোরাইড গমপষ২), ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড (ঘধপষ) এবং সোডিয়াম সালফেট ঈফপষ২) রয়েছে। ম্যাগনেসিয়াম ব্রোমাইড মিশে পানিকে দিয়েছে তিক্ত স্বাদ। এক গ্লাস পানি পানে আপনি হবেন ভয়ানক অসুস্থ, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। মরু সাগর এক সময় বর্তমানের প্রায় ৪ গুণ বড় ছিল এবং পানির তল ছিল আরো উঁচূতে। এখনো পাহাড়ের উপরে রেখা দেখা যায়। ধারণা করা হয়, যা বহুসময় পূর্বের। প্রতি বছর ১০ ইঞ্চি পরিমাণ সমুদ্রতল নীচে নেমে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে খুব শীঘ্রই দক্ষিণের দিকে সমুদ্র একসময় শুকিয়ে যাবে এবং কয়েক শতকের মধ্যে উত্তরের গভীর দিকটাও শুকিয়ে যাবে এবং ১০০ ফিট পুরু সাদা রাসায়নিক দ্রব্যের স্তর বেরিয়ে পড়বে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্রমতে হযরত লুত আলাহিস সালাম -এর হাতির বসতি যেখানে ছিল, তা এখন বিলুপ্ত এবং তার ধ্বংসাবশেষ ডেডসির দক্ষিণাংশের অগভীর পানির নীচে অবস্থিত। এই এলাকার সমৃদ্ধশালী নগরের নাম ছিল সাভোম বা শাদুম (ঐযধফড়ড়স) সুস্পষ্ট পথ প্রদর্শক থাকার পরও লুত জাতির মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ এবং নৈতিক চরিত্রের অধঃপতন ঘটেছিল। তারা নিজেদের স্ত্রী পরিত্যাগ করে প্রকাশ্য দিবালোকে, জনসমাবেশে সমকামিতার মত জঘণ্য পাপাচারে লিপ্ত হতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করতোনা। এই এলাকা দিয়ে কোন বানিজ্য কাফেলা, পথিক নিরাপদে যাতায়াত করতে পারতো না। সুযোগ পেলেই ধন-সম্পদ সব লুটপাট করে নিয়ে যেত। রাতে কোন বাড়িতে মেহ্মান অবস্থান করছে, এ খবর শুনার সঙ্গে সঙ্গে সবাই ঐ বাড়িতে গিয়ে হাজির হতো এবং গৃহকর্তার কথা উপেক্ষা করে প্রকাশ্যে জোরপূর্বক পাপাচারে লিপ্ত হতো। হযরত লুত আলাহিস সালাম -এর স্ত্রীও ছিল ঐ পাপীদের সহযোগী। এই অধঃপতিত জাতিকে চিরদিনের জন্য ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে লুত জাতির ধ্বংসের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, সূরা আ’রাফে এবং সূরা হুদে। আরবদের কাছে এটা লুত সাগর নামে অধিক পরিচিত।
হযরত লুত আলাহিস সালাম ছিলেন হযরত ইব্রাহীম আলাহিস সালাম উনার ভ্রাতুস্পুত্র। উভয়ের মাতৃভূমি ছিল, পশ্চিম ইরাকে বসরার নিকটবর্তী প্রসিদ্ধ বাবেল শহরে। এখানে মূর্তি পুঁজার ব্যাপক প্রচলন ছিল। নিজ পরিবারের মধ্যে শুধু সহধর্মিনী হযরত সারা আলাহাস সালাম ও ভ্রাতুস্পুত্র হযরত লুত আলাহিস সালাম মুসলমান হন। এক সময় উনাদেরকে সঙ্গে নিয়ে হযরত ইব্রাহীম আলাহিস সালাম তিনি দেশ ছেড়ে সিরিয়ায় হিজরত করেন। জর্দান নদীর তীরে পৌঁছার পর মহান আল্লাহ্ পাক উনার নির্দেশে হযরত ইব্রাহীম আলাহিস সালাম তিনি কেনানে গিয়ে অবস্থান করেন, যা বায়তুল মুকাদ্দাসের অদুরেই অবস্থিত।
হযরত লুত আলাহিস সালাম উনাকেও মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নুবুওওয়াত দান করে জর্দান ও বায়তুল মুকাদ্দাসের মধ্যবর্তী সাদুমের অধিবাসীদের পথ প্রদর্শনের জন্যে প্রেরণ করেন। এ এলাকায় সাদুম, আমুরা, উমা, ছাবুবিম, বালে অথবা সুগর নামক পাঁচটি বড় বড় শহর ছিল। কুরআন পাক-এ আল্লাহ্ তায়ালা তিনি বিভিন্ন স্থানে এদের সমষ্টিকে ‘ম’ তাফেকা ও ‘মু’ তাফেকাত শব্দে বর্ণনা করেছেন। এসব শহরের মধ্যে সাদুমকেই রাজধানী মনে করা হতো। এ এলাকার ভূমি ছিল উর্বর ও শস্য শ্যামলা। এখানে সর্বপ্রকার শস্য ও ফলের প্রাচুর্য ছিল। (এসব ঐতিহাসিক তথ্য বাহরে মুহীত, মাযহারী, ইবনে কাছীর, আলমানার প্রভৃতি গ্রন্থে উল্লেখিত হয়েছে)
কুরআন পাক-এর ভাষায় মানুষের সাধারণ অভ্যাস হচ্ছে- মানুষ যখন দেখে, সে কারো মুখাপেক্ষী নয়, তখন অবাধ্যতা শুরু করে। তাদের সামনেও আল্লাহ্ তায়ালা তিনি স্বীয় নিয়ামতের দ্বার খুলে দিয়েছিলেন। তারা এমন প্রকৃতি বিরুদ্ধ নির্লজ্জতায় লিপ্ত হয়, যা হারাম ও গুণাহ্ তো বটেই, সুস্থ স্বভাবের কাছে ঘৃণ্য হওয়ার কারণে সাধারণ জন্তু-জানোয়ারও এর নিকটবর্তী হয়না।
মহান আল্লাহ্ তায়ালা তিনি হযরত লুত আলাহিস সালাম উনাকে তাদের হিদায়েতের জন্য নিযুক্ত করেন। তিনি স্বজাতিকে সম্বোধন করে বলেন, “তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করো, যা তোমাদের পূর্বে পৃথিবীর কেউ করেনি।” মহান আল্লাহ্ পাক তিনি এ জাতিকে ভয়ানক আযাবে গ্রেফতার করেন। সূরা আ’রাফের তৃতীয় ও চতুর্থ আয়াত শরীফে সাদুম সম্প্রদায়ের বক্রতা ও বেহায়াপনার আসমানী শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে যে, গোটা জাতিই মহান আল্লাহ পাক উনার আযাবে পতিত হলো। শুধু হযরত লুত আলাহিস সালাম এবং উনার কয়েকজন সঙ্গী আযাব থেকে বেঁচে রইলেন। ৮৪নং আয়াত শরীফে আযাব সম্পর্কে এটুকুই বলা হয়েছে যে, তাদের উপর এক অভিনব বৃষ্টি বর্ষণ করা হয়। সূরা হুদে এ আযাব বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে- “যখন আমার আযাব এসে গেল, তখন আমি বস্তিটিকে উল্টে দিলাম এবং তাদের উপর স্তরে স্তরে প্রস্তর বর্ষণ করলাম, যা আপনার প্রতিপালকের নিকট চিহ্নযুক্ত ছিল। সে বস্তিটি এ কাফেরদের থেকে বেশী দূরে নয়।”
এতে বুঝা যাচ্ছে যে, উপর থেকে প্রস্তর বর্ষিত হয়েছে এবং নীচে থেকে হযরত জীবরাঈল আলাহিস সালাম গোটা ভূ-খন্ডকে ওপরে তুলে উল্টে দিয়েছিলেন। বর্ষিত প্রস্তরসমূহ স্তরে স্তরে একত্রিত ছিল। অর্থাৎ এমন অবিরাম ধারায় বর্ষিত হয়েছিল যে, স্তরে স্তরে জমা হয়ে গিয়েছিল। এসব প্রস্তর চিহ্নযুক্ত ছিল। কোন কোন তফসীরবিদ বলেন- প্রত্যেক পাথরে ঐ ব্যক্তির নাম লিখিত ছিল, যাকে খতম করার জন্য পাথরটি নিক্ষিপ্ত হয়েছিল।
বাহ্যত বুঝা যায় যে, চিৎকার ধ্বনির পর প্রথমে ভূখন্ড উল্টে দেয়া হয়। অতঃপর তাদেরকে অধিকতর লাঞ্চিত করার জন্যে উপর থেকে প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণ করা হয়। তাছাড়া এমনও হতে পারে যে, প্রথমে প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণ করা হয় এবং পরে ভূখন্ড উল্টিয়ে দেয়া হয। কারণ, কুরআন শরীফের বর্ণনা পদ্ধতিতে যে বিষয়টি আগে উল্লেখ করা হয়, তা বাস্তবেও আগেই সংঘটিত হবে, তা অপরিহার্য নয়।
সূরা হুদে বর্ণিত আয়াতসমূহের শেষে কুরআনপাকে আরবদের হুশিয়ার করে এ কথাও বলা হয়েছে যে, “উল্টে দেয়া বস্তিগুলো জালেমদের কাছ থেকে বেশী দূরে নয়। সিরিয়া গমনের পথে সব সময়ই সেগুলো তাদের চোখের সামনে পড়ে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, তারা তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না।”
সেই এলাকাটাই ডেডসি বা মৃত সাগর নামে পরিচিত। ১৯৩৯-৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এ এলাকার আশেপাশে বিভিন্ন ধরণের অনুসন্ধানী দল পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তারা তেমন কিছু আবিস্কার করতে পারেনি। তবে ১৯৪৬-৪৭ সালে ডেডসির পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে হিব্রু (ঐবনৎব)ি ও আরাকানা (অৎধশধহধ) ভাষার শিলালিপি এবং বাইবেলের কিছু পান্ডুলিপির সন্ধান পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক কালের জরিপ কাজ চালাতে গিয়ে ডেডসির দক্ষিণাংশের অগভীর পানির নীচে বিভিন্ন ধরণের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন পেয়েছেন। তবে কিছুদিন আগে একজন আমেরিকান প্রত¦তাত্ত্বিকবিদ পল লোপ বিস্ময়কর তথ্য দিয়েছেন। ডেডসির গভীর অংশে অসংখ্য সিমের্ট্রি (ঈবসবঃৎু) এবং ২০,০০০ বা তার উর্ধ্বে ঞড়সন পাওয়া গেছে এবং সাদুম গোত্র সময়কালীন অনেক চড়ঃঃবৎু (মৃৎ শিল্পের যন্ত্র) দেখা গেছে। এত পরিমাণ ঈবসবঃৎু অবশ্যই মনে করিয়ে দেয়, এখানে একটি বৃহৎ শহর সভ্যতার অস্তিত্বের কথা এবং সেটা কেন হবে না সাদুম গোত্র? ঈবসবঃৎু তে মৃত ব্যক্তির নাম উল্লেখিত থাকে, আর কুরআন পাক-এ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি তো ঘোষণাই দিয়েছেন, “তাদের উপর স্তরে স্তরে প্রস্তর বর্ষণ করলাম, যা আপনার প্রতিপালকের নিকট চিহ্নযুক্ত ছিল।”
আবা-২৪
সুওয়াল - কাযা নামায কয় প্রকার ও কি কি? কাযা নামাযসমূহের নিয়ম কি এবং কিভাবে নিয়ত করতে হবে? কোন কোন সময় কাযা নামায পড়া যায় না? উমরী কাযা কাকে বলে?
জাওয়াব - কাযা নামায দু’প্রকার- (১) কাযায়ে আ’দা ও (২) কাযায়ে উমরী। কাযায়ে আ’দা আবার দু’ধরণের-
প্রথমতঃ যে সমস্ত কাযা নামাযের ক্ষেত্রে তরতীব রক্ষা করতে হয়, আর এর হুকুম হলো- নামায যদি পাঁচ ওয়াক্ত বা তার চেয়ে কম কাযা হয়, তাহলে তরতীব অনুযায়ী কাযা আদায় করে তারপর ওয়াক্তিয়া নামায পড়তে হবে। যেমন কারো যদি ফজর, যোহর, আছর, মাগরীব, এশার নামায কাযা হয়, তাহলে পরবর্তী ফজরের নামায পড়ার পূর্বে উক্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামায পর্যায়ক্রমে কাযা আদায় করে তারপর ফজর নামায পড়তে হবে, অন্যথায় ফজর নামায আদায় হবেনা। আর যদি ফজর থেকে ফজর পর্যন্ত ৬(ছয়) ওয়াক্ত বা তদুর্ধ নামায কাযা হয়, তাহলে পরবর্তী যোহর পড়ার সময় কাযা নামাযের তরতীব রক্ষা না করলেও চলবে। বরং কাযা নামায সুযোগ সুবিধা অনুযায়ী হারাম ওয়াক্ত বাদে যেকোন সময় আদায় করলেই নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে তরতীবওয়ালা নামাযের ক্ষেত্রে কাযা আদায় করতে গেলে যদি ওয়াক্তিয়া নামাযের সময় কম থাকার কারণে ওয়াক্তিয়া নামায ফওত হওয়ার আশঙ্কা হয়, তাহলে তরতীব রক্ষা না করে বরং ওয়াক্তিয়া নামায পড়ে নিতে হবে। যেমন কারো মাগরিব ও এশার নামায কাযা হয়ে গিয়েছে এবং ফজরের ওয়াক্তে এমন সময় ঘুম হতে উঠেছে- সুর্য উদয় হতে ৫/৭ মিনিট বাকী, এখন ওযু করে যদি কাযা নামায আদায় করতে যায়, তাহলে আর ফজরের ফরজ নামায পড়া যায়না, এমতাবস্থায় তরতীব রক্ষা করার প্রয়োজন নেই। বরং ফজরের নামায পড়ে নিতে হবে।
এখানে উল্লেখ্য যে, তরতীব তিন কারণে ভঙ্গ হয়- (১) পাঁচ ওয়াক্তের বেশী কাযা থাকলে, (২) ওয়াক্ত কম থাকলে, (৩) তরতীবের কথা ভূলে গেলে।
কাযা নামাযের নিয়ত হলো- আমি ফজরের দু’রাকায়াত বা জোহর, আছর, এশার চার রাকায়াত বা মাগরিব, বেত্রের তিন রাকায়াত ফরজ/ওয়াজিব নামায ক্বিবলামুখী হয়ে কাযা আদায় করতেছি, আল্লাহু আক্বার।
আর উমরী কাযা বলে এমন কাযা নামাযকে- যে নামায থাকা সম্বন্ধে নামাযী ব্যক্তি সন্দেহে রয়েছে, তার কাযা নামায বাকী আছে কিনা? এ সন্দেহের কারনে যে কাযা নামায পড়া হয়, তাকে উমরী কাযা বলে। উমরী কাযার ক্ষেত্রে মাগরীব ও বিত্র নামায তিন রাকায়াতর স্থলে চার রাকায়াত পড়তে হয়। যেমন- মাগরিব এবং বিত্র নামায নিয়ম মোতাবেক যথারীতি শেষ করে সালাম ফিরানোর পূর্বে দাঁড়িয়ে আর এক রাকায়াত (চতুর্থ রাকায়াত) নামায সুরা মিলায়ে পড়তে হবে। অতঃপর রুকু সিজ্দা করে তাশাহুদ, দরূদ শরীফ ও দোয়া মাশুরা পড়ে সালাম ফিরায়ে নামায শেষ করতে হবে। (আলমগীরী, বাহ্রুর রায়েক, হিদায়া, ফতহুল ক্বাদীর ইত্যাদি) (আমীন)
আবা-২৩
সুওয়াল - বাবা-মা জীবিত থাকলে নাকি পীর ছাহেব বা শায়খ ধরা যায় না। অনেকে বলেন, পিতা-মাতার অনুমতি ব্যতীত কোন পীর ছাহেব বা শায়খ গ্রহণ করা যাবে না। এটা কতটুকু সত্য তা জানালে বাধিত হবো।
জাওয়াব - এটা একটি অবান্তর প্রশ্ন, যা শরীয়তের সাথে কোন মিল নেই। হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
طلب العلم فريضة على كل مسلم ومسلمة.
অর্থঃ- “প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ইল্ম অর্জন করা ফরজ।”
আরও হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
العلم علمان علم فى القلب فذاك علم النافع علم على اللسان فذالك حجة الله غزوجل على ابن ادم.
অর্থঃ- “ইল্ম দুই প্রকার। এক প্রকার হলো ক্বালবী ইল্ম, যা উপকারী ইল্ম, আরেক প্রকার হলো যবানী ইল্ম, যা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে বান্দার জন্য দলীলস্বরূপ। অর্থাৎ একটি হলো ইল্মে ফিকাহ্, আরেকটি হলো ইল্মে তাসাউফ।
হযরত ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “ইল্ম শিক্ষা করা ফরজ বলতে বুঝায় ইল্মে ফিকাহ্ ও ইল্মে তাসাউফ, উভয়টাই জরূরত আন্দাজ শিক্ষা করা ফরজ।”
হযরত ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বিশ্ববিখ্যাত আলেম হওয়া সত্বেও তিনি বলেন
لولا سنتان لهلك ابو نعمان.
অর্থঃ- “আমি ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ধ্বংস হয়ে যেতাম যদি দু’বছর না পেতাম।” অর্থাৎ তিনি এই দু’বছরে হযরত ইমাম জাফর সাদিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবারে থেকে ইল্মে তাসাউফ হাসিল করেন। উল্লেখ্য, হযরত ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রথমে হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে মুরীদ হন এবং উনার ইন্তিকালের পর উনার ছেলে হযরত ইমাম জাফর সাদিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে বাইয়াত হয়ে কামালিয়াত হাসিল করেন। যা বিশ্ব বিখ্যাত গায়াতুল আওতার ফি শরহে দুররুল মুখতার, সাইফুল মুকাল্লেদীন, (ইছনা আশারীয়াকৃত হযরত শাহ্ আবদুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি) ইত্যাদি কিতাবে এ ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে।
হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ববিখ্যাত কিতাব ‘মিশকাত শরীফ’-এর শরাহ্ মিরকাত শরীফ-এ হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ক্বাওল উল্লেখ করেছেন যে, (যিনি মালেকী মায্হাবের ইমাম) হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহিআলাইহি তিনি বলেন, “যে ইল্মে ফিকাহ্ শিক্ষা করলো কিন্তু ইল্মে তাসাউফ শিক্ষা করলো না, সে ফাসিক অর্থাৎ গুণাহ্গার এবং যে শুধু ইল্মে তাসাউফ শিক্ষা করলো অর্থাৎ সে বলে মারেফত করি, মারেফত করি কিন্তু শরীয়তের ধার ধারে না, সে যিন্দিক কাফির। আর যে দু’টোই অর্জন করলো সে মুহাক্কিক।”
আর ইলমে ফিকাহ্ অর্থাৎ অজু, গোসল, ইস্তিঞ্জা, মোয়ামেলাত, মোয়াশেরাত ইত্যাদি শিক্ষার জন্য ওস্তাদ গ্রহণ যেমন- ফরজ (আবশ্যক) অর্থাৎ মাদ্রাসায় গিয়েই হোক অথবা ব্যক্তিগতভাবে কোন ওস্তাদের নিকট থেকেই হোক তা জরূরত আন্দাজ শিক্ষা করা ফরজ। তদ্রুপ ইল্মে তাসাউফের জন্যও ওস্তাদ গ্রহণ করা ফরজ। আর এ ওস্তাদকেই আরবীতে ‘শায়খ’ বলা হয়। আর ফারসীতে ‘পীর’ বলা হয়। দুররুল মুখতার যা বিশ্ববিখ্যাত কিতাব তার মধ্যে একটি উসুল উল্লেখ করা হয়েছে,
مالا يتم به الفرض فهو فرض ما لا يتم به الواجب فهو واجب.
অর্থঃ- “যে আমল ব্যতীত ফরজ পূর্ণ হয় না, সে আমল করাও ফরজ। যে আমল ব্যতীত ওয়াজিব পূর্ণ হয় না, সে আমল করাও ওয়াজিব।”
ইল্মে ফিক্বাহ শিক্ষা করার জন্য প্রত্যেকের পিতা-মাতা অথবা মুরুব্বিগণই মাদ্রাসায় ভর্তি করায়ে থাকেন, কারো যদি পিতা-মাতা অথবা মুরুব্বী জীবিত না থাকে, তাহলে তার পক্ষে ইল্মে ফিকাহ্ শিক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং সময় বিশেষে অসম্ভবও হয়ে যায়। কেননা ইল্মে ফিকাহ্ শিক্ষা করার সময় যেমন থাকা-খাওয়া, লেখা-পড়া ইত্যাদির জন্য টাকা-পয়সার জরূরত হয়, সে টাকা-পয়সার আঞ্জাম দেন পিতা-মাতা অথবা মুরুব্বীগণ। অনুরূপ ইল্মে তাসাউফ শিক্ষা করার সময়ও থাকা-খাওয়া, লেখা-পড়া ইত্যাদির জন্য টাকা-পয়সার জরূরত হয় এবং সে টাকা-পয়সার আঞ্জাম দেন পিতা-মাতা ও মুরুব্বীগণ। এটাই যদি সত্য হয় যে, পিতা-মাতা অথবা মুরুব্বীগণ জীবিত থাকা কালীন ইল্মে তাসাউফ শিক্ষা করা যাবে না, তাহলে যে সকল সন্তানেরা পিতা-মাতা জীবিত থাকা অবস্থায় ইন্তেকাল করে, তাদের পক্ষে ইল্মে তাসাউফ শিক্ষা করা সম্ভব নয়। যার ফলে তারা একটি ফরজ আদায় করা হতে মাহ্রূম থেকে গুণাহ্গার হলো। আর যদি পিতা-মাতা জীবিত থাকা অবস্থায় ইল্ম অর্জন করা না যায়, তাহলে সন্তানদের ইল্ম অর্জন করার জন্য পিতা-মাতার মৃত্যু কামনা করতে হবে। কেননা যেহেতু ইল্ম অর্জন করা ফরজ এবং এই ফরজ পিতা-মাতার মৃত্যু ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব নয়, তাই এই ফরজ আদায়ের জন্য সন্তানদের পিতা-মাতার শুধু মৃত্যু কামনা করেই নয় বরং তাদের মৃত্যুবরণ করায়ে ইল্ম অর্জন করতে হবে। অথচ পিতা-মাতার মৃত্যু কামনা করা শক্ত গুণাহ্।
যে কোন কাজ করার পূবে পিতা-মাতার অনুমতি নেয়া বরকতের কারণ। কিন্তু সেজন্য যে বিষয়ে পিতা-মাতার জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে এজাযতের জরূরত নেই বরং বরকতের জন্য জানানো দরকার। কারণ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন, “যদি তোমরা না জান, তাহলে যারা জানেন, তাদেরকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও।” আর যদি কারো পিতা-মাতা পীর, বুযূর্গ, ওলী আল্লাহ্ অথবা হক্কানী আলেম হন, তাহলে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে। যার পিতা-মাতার ইল্ম-কালাম নেই, তাদের নিকট যদি পীর ছাহেব গ্রহণ করার অনুমতি চাওয়া হয়, আর তারা অনুমতি না দেন, তথাপিও তাকে পীর ছাহেব গ্রহণ করতে হবে। যেহেতু পীর ছাহেব গ্রহণ করা ফরজ। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফ-এ বলেন,
وان جاهداك على ان تشرك بى ماليس لك به علم فلا تطعهما وصا حبهما فى الدنيا معروفا.
অর্থঃ- “যদি তারা তোমাদের শরীক (শিরক) করার জন্য আদেশ করে, যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, তবে তাদেরকে অনুসরণ করোনা এবং দুনিয়ায় তাদের সাথে উত্তমভাবে বসবাস কর।” (সূরা লোকমান-১৫)
এবং হাদীছ শরীফে এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়,
لا طاعة لمخلوق فى معصية الخالق.
অর্থঃ- “কোন মখলুকের অনুসরণ করতে গিয়ে আল্লাহ পাক উনার হুকুমের খেলাফ করা যাবে না।”
উপরোক্ত আয়াত শরীফ এবং হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই বুঝা যায় যে, পিতা-মাতা কোন আদেশ করলে যদি তা শরীয়ত সম্মত হয়, তাহলে তা মানা যাবে। আর যদি শরীয়তের খেলাফ হয়, তাহলে তা মানা যাবে না। তবে সৎভাবে তাদের সাথে জীবন-যাপন করতে হবে।
অতএব প্রত্যেক পিতা-মাতার কর্তব্য হলো- কোন হক্কানী পীর ছাহেব গ্রহণ করে ইল্মে তাসাউফ শিক্ষা করা, আর তাদের দায়িত্ব তারা স্বীয় সন্তানদিগকে যেভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসায় ভর্তি করায়ে থাকে, ঠিক সেভাবে কোন হক্কানী পীর সাহেবের দরবারে ইল্মে তাসাউফ শিক্ষা করার জন্য পৌঁছিয়ে দেয়া।
আবা-২৩
সুওয়ালঃ- হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনারা মোট কতজন প্রেরিত হয়েছেন? কোন বৈশিষ্ট্যের কারণে কাউকে রসূল অথবা কাউকে নবী বলা হয়েছে? অনেকে সকল নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকেই রসূল বলেন, আবার সকল রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকেই নবী বলেন। আবার কেউ কেউ বলেন একজন রসূল- তিনি হলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
কেউ কেউ ৪ জনকে রসূল বলেন। কারণস্বরূপ তারা বলেন- ৪ খানা কিতাব ৪ জনের উপর নাযিল হয়েছে তাই তারাই শুধু রসূল। আবার অনেকে বলেন ৮ জন রসূল, তারা কারণস্বরূপ বলেন- ৪ খানা কিতাব ৪ জনের উপর নাযিল হয়েছে বাকী ১০০ খানা সহীফা ৪ জনের উপর নাযিল হয়েছে তাই মোট এই ৮ জন হলেন রসূল। উপরোক্ত বক্তব্যগুলি সহীহ কিনা তা জানতে বাসনা রাখি এবং যদি সহীহ না হয়, তাহলে বিশুদ্ধ মত কি তা দয়া করে জানালে খুশী হবো?
জাওয়াব - হাদীছ শরীফ এবং আকায়েদের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে ১ লক্ষ ২৪ হাজার অথবা ২ লক্ষ ২৪ হাজার নবী ও রসূল অর্থাৎ অসংখ্য নবী ও রসূল প্রেরিত হয়েছেন। উপরোক্ত প্রশ্নে উল্লেখিত ১ জন রসূল, ৪ জন রসূল, ৮ জন রসূল বা সকলেই রসূল ইত্যাদি কোন মতই সঠিক নয়। হাদীছ শরীফ-এর কিতাব ও আকায়েদের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে ৩১৩ জন রসূল। সকল রসূলই নবী কিন্তু সকল নবীই রসূল নন। প্রকৃত সংজ্ঞা হলো, যাদের কাছে সরাসরি হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম ওহী নিয়ে এসেছেন তারাই রসূল আর যাঁদের কাছে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম সরাসরি ওহী নিয়ে আসেননি কিন্তু ওহী নাযিল হয়েছে তারাই নবী। এটা জানা অবশ্যই কর্তব্য যে, রসূল হবার জন্য কিতাব নাযিল হওয়া শর্ত নয়। (উসুলুল কুরআন)
আবা-২৩