৮০ নং- সুওয়াল: আমরা কেন শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি? অনেকে বলে থাকে যে, “একমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মদগণই দাওয়াতি কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন এবং এই দাওয়াতি কাজ করার দরুনই আমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি, অন্য কোন কারণে নয়।” এটা সঠিক কিনা তা জানালে বাধিত হবো।

সুওয়াল: আমরা কেন শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি? অনেকে বলে থাকে যে, “একমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মদগণই দাওয়াতি কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন এবং এই দাওয়াতি কাজ করার দরুনই আমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি, অন্য কোন কারণে নয়।এটা সঠিক কিনা তা জানালে বাধিত হবো।
জাওয়াব: একমাত্র সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হওয়ার কারণেই আমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি।
অনেকে বলে থাকেন যে, ‍নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতই শুধুমাত্র দাওয়াতি কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন এবং এ কারণেই আমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি, এ কথাটা শুদ্ধ নয়। 
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে, “সমস্ত নবী আলাইহিস সালামগণ উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হবার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আরজু করেছেন। সমস্ত নবী আলাইহিস সালাম উনার দোয়াই মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করেছেন, তবে সরাসরি কবুল করেছেন হযরত ইসা আলাইহিস সালাম উনার দোয়া। অনেকে মনে করে থাকে বা বলে থাকে, একমাত্র হযরত ইসা আলাইহিস সালাম ব্যতীত আর কোন হযরত নবী আলাইহিস সালাম উনার দোয়াই কবুল হয়নি, এটা সঠিক নয়। কেননা দোয়া কবুল হয় তিন প্রকারে। প্রথম প্রকার- বান্দা যা চায়, আল্লাহ্ পাক তিনি সরাসরি তা দিয়ে দেন। দ্বিতীয় প্রকার- বান্দা যা চায়, তার চেয়ে যা বেশী জরুরী, সেটাই মহান আল্লাহ পাক তিনি দিয়ে থাকেন, যে জরুরত সম্বন্ধে বান্দা নিজেই জানে না। তৃতীয় প্রকার- বান্দা যা চায়, মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটা তাকে না দিয়ে তা কবুল করে তার সওয়াবটুকু পরকালের জন্য জমা করে রাখেন। বান্দা যখন হাশরের ময়দানে উপস্থিত হয়ে তার নেকী কম দেখবে, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলবেন, “হে বান্দা! তোমার জন্য অমুক স্থানে নেকী রাখা হয়েছে, তখন সেই বান্দা গিয়ে দেখবে যে, তার জন্য পাহাড় পাহাড় নেকী রাখা হয়েছে। সে বলবে, আয় আল্লাহ পাক! আমি তো এত নেক কাজ করিনি, আমার এত নেকী আসলো কোথা থেকে? তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলবেন, “তুমি যে সকল দোয়া দুনিয়াতে করেছিলে, যার বদলা দুনিয়াতে দেয়া হয়নি, সে কারণে তুমি মনে করেছিলে যে, তোমার দোয়া কবুল করা হয়নি, অথচ আমি তা কবুল করেছিলাম এবং তাই পাহাড় পাহাড় নেকী আকারে জমা হয়েছে।তখন বান্দা বলবে, আয় আল্লাহ পাক! দুনিয়াতে আমার সমস্ত দোয়াগুলিরই বদলা না দিয়ে যদি পরকালের জন্য জমা রাখা হতো, তাহলে তা আমার জন্য ফায়দার কারণ হতো।
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে এটাই সাবেত হয়, শুধুমাত্র দাওয়াতের কারণেই যদি উম্মতে হাবীবী উনার শ্রেষ্ঠত্ব হতো, তাহলে অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিস সালাম তিনি দাওয়াতের দায়িত্ব পাওয়া সত্ত্বেও  নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হবার জন্য দোয়া করতেন না। বরং উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শ্রেষ্ঠত্ব হলো দাওয়াতের কারণে নয় বরং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হবার কারণে। আরও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে,
وكذالك جعلناكم امة وسطا لتكونوا شهداء على الناس وسكون الرسول عليكم شهيدا.
অর্থঃ- এরূপেই আমি তোমাদেরকে উম্মতে ওয়াসাত (শ্রষ্ঠ উম্মত) করেছি। যেন তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও, সমস্ত মানুষের জন্য এবং যাতে রসূল আলাইহিস সালামগণ সাক্ষ্যদাতা হন, তোমাদের জন্য।(পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৩)  
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়, হাশরের ময়দানে যখন সমস্ত হযরত নবী আলাইহিস সালামগণ উনাদের গুণাহ্গার উম্মতগণকে জিজ্ঞেস করা হবে, “তোমরা কেন নেক কাজ করনি?” তখন তারা বলবে, দুনিয়াতে আমাদের কাছে কোন আসমানী কিতাবও আসেনি এবং কোন হযরত নবী আলাইহিস সালাম উনারা আগমন করেনি। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী আলাইহিস সালাম গণকে জিজ্ঞেস করবেন, “আপনারা কি তাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছাননি?” উনারা বলবেন, “হ্যাঁ, পৌঁছিয়েছি।তখনও অন্য হযরত নবী আলাইহিস সালাম উনার উম্মতগণ তা অস্বীকার করবে। তখন আল্লাহ পাক তিনি বলবেন, “হে নবী আলাইহিস সালামগণ আপনাদের সাক্ষী কোথায়?” তখন উনারা বলবেন, উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই আমাদের সাক্ষী। তখন উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ডেকে জিজ্ঞেস করা হলে উনারা বলবে, “হ্যাঁ, সমস্ত হযরত নবী আলাইহিস সালাম উনারা দাওয়াত পৌঁছিয়েছেন এবং দায়িত্ব পালন করেছেন।একথা শুনে অন্যান্য নবী আলাইহিস সালামগণ উনাদের উম্মতগণ বলবে, উম্মতে হাবীবীগণ তো আমাদের থেকে অনেক পরে এসেছে, তারা কিভাবে আমাদের সাক্ষী হয়? তখন আল্লাহ্ পাক উম্মতে হাবীবীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে উনারা বলবেন, “হ্যাঁ, আমরা তাদের থেকে অনেক পরে এসেছি, তবে আমাদের নিকট এসেছিলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল  মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তিনি আমাদেরকে এ বিষয়ে জানিয়েছেন। আমরা উনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং উনাকে সত্য বলে জেনেছি, তাই আমাদের সাক্ষ্য সত্য। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করবেন এবং  তখন উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমর্থন করে সাক্ষী দেবেন। হ্যাঁ, তারা যা বলেছে সবই সত্য এবং আমিই তাদেরকে এ তথ্য জানিয়েছি, যা আমি  মহান আল্লাহ পাক উনার  তরফ থেকে জেনেছি। (সিহাহ সিত্তাহ্ দ্রষ্টব্য)       
সুতরাং উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আমাদেরকে যে শ্রেষ্ঠ উম্মত বলা হয়েছে, তা দাওয়াতী কাজ করার জন্য নয় বরং তা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রকৃত উম্মত হবার কারণে।           পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ এবং ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, আগেকার উম্মতগণ উনাদের উপরও দাওয়াতের দায়িত্ব ছিল।
যেমন পবিত্র সূরা ইয়াসীনে উল্লেখ করা হয়েছে, “কোন এক জনপদে হযরত রসূল আলাইহিস সালামগণ উনারা আগমন করলে সেখানকার অধিবাসীগণ তাদের রিসালতকে অস্বীকার করে হত্যা করার জন্য উদ্যত হলো। তখন শহরের প্রান্তভাগ থেকে এক ব্যক্তি, যিনি ঈমান গ্রহণ করেছিলেন, তিনি দৌড়ে এলেন এবং তার সম্প্রদায়কে রসূল আলাইহিস সালামগণকে হত্যা করতে নিষেধ করলেন এবং উনাদের অনুসরণ করার উপদেশ দিলেন।এটা ছাড়া  পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে,  নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম উনার নিকট পবিত্র ওহী মুবারক পাঠালেন, অমুক অমুক শহরের সমগ্র বাসিন্দাসহ উল্টাইয়া দাও।তখন হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি আরজ করলেন, “হে পরওয়ারদেগার! এ শহরে আপনার অমুক বান্দা রয়েছে, যে মুহূর্তকালও আপনার নাফরমানীতে লিপ্ত হয়নি।তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “শহরটিকে ঐ ব্যক্তি এবং সমগ্র বাসিন্দাসহ তাদের উপর উল্টাইয়া দাও, কারণ আমার জন্য ঐ ব্যক্তির চেহারায় এক মুহূর্তের জন্য পরিবর্তন আসেনি। (অর্থাৎ সে আফসোস করেনি।)পূর্ববর্তী উম্মতগণ উনাদের উপরও দাওয়াতের দায়িত্ব ছিল, কেননা দায়িত্ব থাকার কারণেই তা পালন না করার জন্য বনী ঈসরাইলেরউল্লেখিত ব্যক্তিকে শাস্তি পেতে হয়েছে।
সুতরাং উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং তার আনুষাঙ্গিক ঘটনা ব্যতীত আরও অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ, পবিত্র হাদীছ  শরীফ এবং ঘটনার মাধ্যমে জানা যায় যে, পূর্ববর্তী উম্মতগণ যে দাওয়াতের কাজ করেছেন, তা তাফসীরে রূহুল মায়ানী, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে আমিনিয়া, তাফসীরে খাযেন, তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন ইত্যাদি এবং এটা ব্যতীত বিশুদ্ধ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের কিতাব দ্বারাও প্রমাণিত।          মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
كنتم خيرامة خرجت للناس تأمرون بالمعرف وتنهون عن المنكر وتؤمنون بالله.
অর্থঃ- তোমরা মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছো। তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে ও বদ কাজের নিষেধ করবে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান আনবে।
অনেকে পবিত্র সূরা ইমরান শরীফ’ উনার উপরোল্লিখিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার উল্লেখ করে বলে থাকে যে, আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ উম্মত বলা হয়েছে, কারণ আমরা সৎ কাজের আদেশ করি এবং অসৎ কাজের নিষেধ করি। মূলতঃ তাদের এ ব্যাখ্যা ঠিক নয়, কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল  মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হওয়াটাই হলো আমাদের জন্য শ্রেষ্ঠ। আর এ ছাড়া আমাদের যতগুলো গুণ দেয়া হয়েছে, তাও একমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কারণে। অন্যান্য হযরত নবী আলাইহিস সালামগণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হবার জন্য আরজু করেছেন, তাই বলে কেউ যেন এটা মনে না করে যে, উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের শ্রেষ্ঠত্ব অন্যান্য নবী আলাইহিস সালামগণ উনাদের হতে বেশী। বরং শুধুমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কারণে যে উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের শ্রেষ্ঠত্ব, তা বুঝানোর জন্যই সমস্ত হযরত নবী আলাইহিস সালামগণ উনার  নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হবার জন্য আরজু করেছেন। 

আবা-১১
৭৯ নং-সুওয়াল: বাবা-মা জীবিত থাকলে নাকি পীর সাহেব ধরা যায় না। অনেকে বলেন পিতা-মাতার অনুমতি ব্যতীত কোন পীর ছাহেব গ্রহণ করা যাবে না। এটা কতটুকু সত্য তা জানালে বাধিত হবো।

সুওয়াল: বাবা-মা জীবিত থাকলে নাকি পীর সাহেব ধরা যায় না। অনেকে বলেন পিতা-মাতার অনুমতি ব্যতীত কোন পীর ছাহেব গ্রহণ করা যাবে না। এটা কতটুকু সত্য তা জানালে বাধিত হবো।
জাওয়াব: এটা একটি অবান্তর প্রশ্ন, যা সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার সাথে কোন মিল নেই। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে,
طلب العلم فريضة على كل مسلم ومسلمة.
অর্থঃ- প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ইলম অর্জন করা ফরজ।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ করা হয়েছে,
العلم علمان علم فى القلت فذا ك علم النافع علم على اللسان فذالك حجة الله عزودل على ابن ادم.
অর্থঃ- ইলম দুই প্রকার। এক প্রকার হলো ক্বালবী ইলম, যা উপকারী ইলম, আরেক প্রকার হলো জবানী ইলম, যা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে বান্দার জন্য দলীলস্বরূপ। অর্থাৎ একটি হলো ইলমে ফিকাহ্, আরেকটি হলো ইলমে তাসাউফ। হযরত ইমাম আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “ইলম শিক্ষা করা ফরজ বলতে বুঝায় ইলমে ফিকাহ্ ও ইলমে তাসাউফ, উভয়টাই জরূরত আন্দাজ শিক্ষা করা।
হযরত ইমাম আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিশ্ববিখ্যাত আলেম হওয়া সত্বেও তিনি বলেন,
لولا سنتان لهلك ابو نعمان.
অর্থঃ- আমি ইমাম আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ধ্বংস হয়ে যেতাম যদি দুবছর না পেতাম।অর্থাৎ তিনি এই দুবছরে হযরত ইমাম জাফর সাদিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবারে থেকে ইলমে তাসাউফ হাসিল করেন।
উল্লেখ্য, হযরত ইমাম আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রথমে হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে মুরীদ হন এবং উনার ইন্তেকালের পর উনারই ছেলে হযরত ইমাম জাফর সাদিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে বাইয়্যাত হয়ে কামালিয়াত হাসিল করেন। যা বিশ্ববিখ্যাত দুররুল মুখতার সাইফুল মুকাল্লেদীন, (ইছনা আশারীয়া, হযরত শাহ্ আবদুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি) ইত্যাদি কিতাবে এ ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে।        
হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ববিখ্যাত কিতাব মিশকাত শরীফর শরাহ মিরকাত শরীফে হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাওল উল্লেখ করেছেন যে, (যিনি মালেকী মাযহাবের ইমাম) হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “যে ইলমে ফিকাহ্ শিক্ষা করলো কিন্তু ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করলো না, সে ফাসেক অর্থাৎ গুণাহ্গার এবং যে শুধু ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করলো অর্থাৎ সে বলে মারেফত করি, মারেফত করি কিন্তু সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার ধার ধারে না, সে যিন্দিক কাফির। আর যে দুটোই অর্জন করলো সে মোহাক্কেক।আর ইলমে ফিকাহ অর্থাৎ অজু, গোসল, ইস্তিঞ্জা, মোয়ামেলাত, মোয়াশেরাত ইত্যাদি শিক্ষার জন্য ওস্তাদ গ্রহণ যেমন ফরয (আবশ্যক) অর্থাৎ মাদ্রাসায় গিয়েই হোক অথবা ব্যক্তিগতভাবে কোন ওস্তাদের নিকট থেকেই হোক তা জরূরত আন্দাজ শিক্ষা করা ফরজ। তদ্রূপ ইলমে তাসাউফের জন্যও ওস্তাদ গ্রহণ করা ফরজ। আর এ ওস্তাদকেই আরবীতে শায়খবলা হয়। আর ফারসীতে পীরবলা হয়।
          দুররুল মুখতারযা বিশ্ববিখ্যাত কিতাব তার মধ্যে একটি উসুল উল্লেখ করা হয়েছে,        
مالا يتم به الفرضى فهو فرض ما لا يتم به الواجب فهو واجب.
অর্থঃ- যে আমল ব্যতীত ফরজ পূর্ণ হয় না, সে আমল করাও ফরজ। যে আমল ব্যতীত ওয়াজিব পূর্ণ হয় না, সে আমল করাও ওয়াজিব।      
ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করার জন্য প্রত্যেকের পিতা-মাতা অথবা মুরুব্বিগণই মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে থাকেন, কারো যদি পিতা-মাতা অথবা মুরুব্বী জীবিত না থাকে, তাহলে তার পক্ষে ইলমে ফিকাহ্ শিক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং সময় সময় অসম্ভবও হয়ে যায়। কেননা ইলমে ফিকাহ্ শিক্ষা করার সময় যেমন থাকা-খাওয়া, পড়া-লেখা ইত্যাদির জন্য টাকা-পয়সার জরূরত হয়, সে টাকা-পয়সার আঞ্জাম দেন পিতামাতা অথবা মুরুব্বীগণ। অনুরূপ ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করার সময়ও থাকা-খাওয়া, লেখা-পড়া ইত্যাদির জন্য টাকা পয়সার জরূরত হয় এবং সে টাকা পয়সার আঞ্জাম দেন পিতামাতা ও মুরুব্বীগণ। এটাই যদি সত্য হয় যে, পিতামাতা অথবা মুরুব্বীগণ জীবিত থাকাকালীন ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করা যাবে না, তাহলে যে সকল সন্তানেরা পিতামাতা জীবিত থাকা অবস্থায় ইন্তেকাল করে, তাদের পক্ষে ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করা সম্ভব নয়। যার ফলে তারা একটি ফরজ আদায় করা হতে মাহরূম থেকে গুণাহ্গার হলো। আর যদি পিতামাতা জীবিত থাকা অবস্থায় ইলম অর্জন করা না যায়, তাহলে সন্তানদের ইলম অর্জন করার জন্য পিতামাতার মৃত্যু কামনা করতে হবে। কেননা যেহেতু ইলম অর্জন করা ফরজ এবং এই ফরজ পিতামাতার মৃত্যু ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব নয়, তাই এই ফরজ আদায়ের জন্য সন্তানদের পিতামাতার শুধু মৃত্যু কামনা করেই নয় বরং তাদের মৃত্যুবরণ করায়ে ইলম অর্জন করতে হবে। অথচ পিতামাতার মৃত্যু কামনা করা শক্ত গুণাহ্। যে কোন কাজ করার পূর্বে পিতামাতার অনুমতি নেয়া বরকতের কারণ। কিন্তু সেজন্য যে বিষয়ে পিতামাতার জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে এজাযতের জরূরত নেই বরং বরকতের জন্য জানানো দরকার। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যদি তোমরা না জান, তাহলে যারা জানেন, তাদেরকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও। আর যদি কারো পিতামাতা পীর, বুজুর্গ, ওলী আল্লাহ্ অথবা হক্কানী আলেম হন, তাহলে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে। যার পিতামাতার ইলম কালাম নেই তাদের নিকট যদি পীর ছাহেব গ্রহণ করার অনুমতি চাওয়া হয়, আর তারা অনুমতি না দেন, তথাপিও তাকে পীর ছাহেব গ্রহণ করতে হবে। যেহেতু পীর ছাহেব গ্রহণ করা ফরজ। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন  শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
وان جاهداك على ان تشوك بى ماليس لك به علم فلا تطعهما وصاحبهما فى الدنيا معروفا.
অর্থঃ- যদি তারা তোমাদের শরীক (শিরক) করার জন্য আদেশ করে, যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, তবে তাদেরকে অনুসরণ করোনা এবং দুনিয়ায় তাদের সাথে উত্তমভাবে বসবাস কর।(পবিত্র সূরা লোকমান শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-১৫)
এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলা হয়,
لاطاعة لمخوق فى معصية الخالق.
অর্থঃ- কোন মখলুকের অনুসরণ করতে গিয়ে  মহান আল্লাহ পাক উনার  হুকুমের খেলাফ করা যাবে না।
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা এটাই বুঝা যায় যে, পিতা-মাতা কোন আদেশ করলে যদি সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত সম্মত হয়, তাহলে তা মানা যাবে। আর যদি সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার খেলাফ হয়, তাহলে তা মানা যাবে না। তবে সৎভাবে তাদের সাথে জীবন-যাপন করতে হবে।
অতএব প্রত্যেক পিতামাতার কর্তব্য হলো- কোন হক্কানী পীর ছাহেব গ্রহণ করে ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করা, আর তাদের দায়িত্ব তারা স্বীয় সন্তানদিগকে যেভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসায় ভর্তি করায়ে থাকে, ঠিক সেভাবে কোন হক্কানী পীর সাহেবের দরবারে ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করার জন্য পৌঁছিয়ে দেবে।
আবা-১১
৭৮ নং-সুওয়াল : হক্ব পয়গাম মার্চ ১৯৯৩-এ মেহাম্মদ আবুল কালাম, ইলিশা, ভোলা-এর প্রশ্নের জাওয়াবে বলা হয়েছে, মেয়েদের মুখমন্ডল, দু’হাতের কব্জি এবং দু’পায়ের টাখনু পর্যন্ত ছতরের অন্তর্ভূক্ত নয়, এটা কতটুকু সত্য?

সুওয়াল : হক্ব পয়গাম মার্চ ১৯৯৩-এ মেহাম্মদ আবুল কালাম, ইলিশা, ভোলা-এর প্রশ্নের জাওয়াবে বলা হয়েছেমেয়েদের মুখমন্ডল, দুহাতের কব্জি এবং দুপায়ের টাখনু পর্যন্ত ছতরের অন্তর্ভূক্ত নয়, এটা কতটুকু সত্য?

জাওয়াব : মেয়েদের সমস্ত শরীরই ছতরের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং মুখমন্ডল, দুহাতের কব্জি এবং দুপায়ের টাখনুও ঢেকে রাখতে হবে। আর মুখমন্ডল, দুহাতের কব্জী এবং দুপায়ের টাখনু পর্যন্ত যে খোলা রাখার হুকুম রয়েছে, তা হলো একমাত্র নামাযের সময়। এটা ছাড়া কোন পুরুষের সামনে প্রয়োজনবোধে বের হতে হলে সমস্ত শরীর ঢেকে রাখতে হবে। (তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে রূহুল মাআনী, রূহুল বয়ান, তাফসীরে খাযেন, তাফসীরে মাআরেফুল  কুরআন  ইত্যাদি এবং সমূহ ফিকাহর কিতাব)

৭৭ নং-সুওয়াল : সম্প্রতি হক পয়গাম পত্রিকার মে-৯৩ সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, মৌসুমের চাহীদা অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাদাসিধাভাবে যেরূপ পোশাক পেতেন তাই পরতেন। আরও উল্লেখ করা হয়েছে ফাড়া এবং গোল কোর্তা উভয়টাই সুন্নত। মূলতঃ তারা লেবাসের সুন্নত সম্বন্ধে উল্লেখ করেছেন যা ঢিলাঢালা নেছফসাক, বিধর্মীদের সাথে সাদৃস্যপূর্ণ এবং চাই জোব্বা হোক বা কর্লিদার ফাড়া হোক, এতে কোন ভেদাভেদ নেই। অথচ আমরা জানি কোনাবদ্ধ নেছফসাক জামাই সুন্নত। এটার সঠিক ফয়সালা কি জানায়ে বাধিত করবেন।

সুওয়াল : সম্প্রতি হক পয়গাম পত্রিকার মে-৯৩ সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, মৌসুমের চাহীদা অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাদাসিধাভাবে যেরূপ পোশাক পেতেন তাই পরতেন। আরও উল্লেখ করা হয়েছে ফাড়া এবং গোল কোর্তা উভয়টাই সুন্নত। মূলতঃ তারা লেবাসের সুন্নত সম্বন্ধে উল্লেখ করেছেন যা ঢিলাঢালা নেছফসাক, বিধর্মীদের সাথে সাদৃস্যপূর্ণ এবং চাই জোব্বা হোক বা কর্লিদার ফাড়া হোক, এতে কোন ভেদাভেদ নেই। অথচ আমরা জানি কোনাবদ্ধ নেছফসাক জামাই সুন্নত। এটার সঠিক ফয়সালা কি জানায়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব :  পবিত্র হাদীছ  শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
من كذب على متعمدا فاليتبؤا مقعده من النار.
অর্থঃ- যে স্বেচ্ছায় আমার নামে মিথ্যা কথা বলে, সে যেন দুনিয়ায় থাকতে তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।সুতরাং কেউ যদি বলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মৌসুমের চাহীদা অনুযায়ী সাদাসিধাভাবে যেরূপ পোশাক পেতেন তাই পড়তেন, তাহলে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, অমূলক, বানোয়াট কথা হবে। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মহান আল্লাহ পাক উনার  নির্দেশ ছাড়া কোন কাজই করতেন না। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক বলেন,
وما ينطق عن الهراء ان هوالا هحى يوحى.
অর্থঃ- ওহী ব্যতীত মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের থেকে কোন কথা বলতেন না।   
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নেছফসাক কোনাবন্ধ, মিশরীয় সূতী, গুটলীওয়ালা কামীজ (জামা) সবসময় পরিধান করতেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জীবনে কখনও ফাড়া জামা পরিধান করেননি এবং কেউ যদি বলে যে, উনি ফাড়া জামা পরিধান করেছেন, তাহলে এটার স্বপক্ষে সে একটা দলীলও পেশ করতে পারবে না। এবং যারা এই ফাড়া জামা সুন্নত বলে থাকে, তারা বানোয়াট, মিথ্যা, ভ্রান্তিপূর্ণ, মনগড়া কথা বলে থাকে।         বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, সিহাহ সিত্তাহ শরীফ ও অন্যান্য আরও বহু  পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের কিতাবে অনেক হাদীছ শরীফ উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক কামীছ পরিধান করে (লুঙ্গি ব্যতীত) নামায পড়েছেন। যদি কামীছ ফাড়াই হতো তাহলে এক কামীছ পরিধান করে নামায পড়লে কিভাবে ছতর আবৃত হতো? বরং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কামীছ ছিল কোনাবন্ধ, নেছফসাক সুতী, গুটলীওয়ালা। (সিহাহ সিত্তাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, ফতহুল বারী শরীফ, উমদাতুল ক্বারী শরীফ, শামী শরীফ)
আবা-১১
৭৬ নং-সুওয়াল: আমরা অনেক আলেমের মুখে শুনেছি আযানের সময় অঙ্গুলী চুম্বন বা চোখে বুছা দেয়াকে সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও মুস্তাহাব।  অথচ হক পয়গাম মে-৯৩ সংখ্যায় চোখে বুছা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, ‍‍‍এটা কোন মারফু ছহীহ্  হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়, এ কাজকে সুন্নত মনে করা ভুল। আর এ আমল তো মুস্তাহাবও নয়। বরং এক ধরণের চিকিৎসা মাত্র।”  এটা কতটুকু সত্য তার সঠিক ফয়সালা জানালে বাধিত হবো।

সুওয়াল: আমরা অনেক আলেমের মুখে শুনেছি আযানের সময় অঙ্গুলী চুম্বন বা চোখে বুছা দেয়াকে সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও মুস্তাহাব।
অথচ হক পয়গাম মে-৯৩ সংখ্যায় চোখে বুছা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, ‍‍‍এটা কোন মারফু ছহীহ্  হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়, এ কাজকে সুন্নত মনে করা ভুল। আর এ আমল তো মুস্তাহাবও নয়। বরং এক ধরণের চিকিৎসা মাত্র।”
এটা কতটুকু সত্য তার সঠিক ফয়সালা জানালে বাধিত হবো।
জাওয়াব : উপরোক্ত জাওয়াব বিশুদ্ধ হয়নি। কারণ এটা সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম। আযানে প্রথমে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শুনে চোখে বুছা দেন হযরত আবু বকর সিদ্দীক আলাইহিস সালাম, যিনি
 افضل الناس بعد الانبياء.
অর্থাৎ হযরত নবী আলাইহিস সালামগণ উনাদের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ। জেনে রাখা উচিত উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফটিকে কেউ যয়ীফ বলেছেন, কেউ মওকুফ বলেছেন, কেউ মওকুফ হিসেবে সহীহ বলেছেন। এছাড়াও দায়লমী শরীফ ও মারাকিউল ফালাহ কিতাবে মরফু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও উল্লেখ্য যে, আল্লামা ছাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মোহম্মদ তাহের ফাত্তানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা স্বস্ব কিতাবে মরফু হিসেবে সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন।  
কিল্লতে ইলম কিল্লতে ফাহম অর্থাৎ কম জ্ঞান কম বুঝের জন্যই মানুষ ভুল ফতওয়া দেয়। আরও বিস্তারিত জানতে হলে আপনি মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১ম বর্ষ ৩য় সংখ্যা পত্রিকা সংগ্রহ করে ভালভাবে পড়ুন। যেটাতে চোখে বুছা সম্পর্কে প্রায় ৪৮টি বিশ্ববিখ্যাত কিতাব থেকে দলীল দেয়া হয়েছে এবং আরো দলীল আমাদের কাছে রয়েছে, যা জরূরতবশতঃ উল্লেখ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ্।
আবা-১১
৭৫ নং- সুওয়াল: আপনি যা জানতে চেয়েছেন, তার সারসংক্ষেপ হলো- আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত উনার ২য় বর্ষ ৫ম ও ৬ষ্ঠ সংখ্যায় (বা নবম সংখ্যায়) লংমার্চ নাজায়েয বলা হয়েছে। কিন্তু মাসিক মদীনার আগষ্ট ১৯৯৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে প্রশ্নের জাওয়াবে লংমার্চকে জায়েয বলা হয়েছে। এর মধ্যে কোনটি সত্য? আপনি আরও জানতে চান, মদীনার সম্পাদক সাহেব লিখেছেন লংমার্চ-এ যারা মারা গেছে তারা শহীদ অথচ আমাদের উল্লেখিত পত্রিকায় বলা হয়েছে একমাত্র দ্বীনি জেহাদে যারা মারা যায়, তারাই শহীদ হয়। আর অন্যান্য যেমন দুর্ঘটনায়, পানিতে পড়ে, ছাদ ধ্বসে, সন্তান হবার সময় যারা মারা যায়, তারা শহীদী দরজা পায়। তাহলে আপনার মতো লোক কোনটি মেনে নেবে?

৭৫ নং- সুওয়াল: আপনি যা জানতে চেয়েছেন, তার সারসংক্ষেপ হলো- আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত উনার ২য় বর্ষ ৫ম ও ৬ষ্ঠ সংখ্যায় (বা নবম সংখ্যায়) লংমার্চ নাজায়েয বলা হয়েছে। কিন্তু মাসিক মদীনার আগষ্ট ১৯৯৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে প্রশ্নের জাওয়াবে লংমার্চকে জায়েয বলা হয়েছে। এর মধ্যে কোনটি সত্য? আপনি আরও জানতে চান, মদীনার সম্পাদক সাহেব লিখেছেন লংমার্চ-এ যারা মারা গেছে তারা শহীদ অথচ আমাদের উল্লেখিত পত্রিকায় বলা হয়েছে একমাত্র দ্বীনি জেহাদে যারা মারা যায়, তারাই শহীদ হয়। আর অন্যান্য যেমন দুর্ঘটনায়, পানিতে পড়ে, ছাদ ধ্বসে, সন্তান হবার সময় যারা মারা যায়, তারা শহীদী দরজা পায়। তাহলে আপনার মতো লোক কোনটি মেনে নেবে?


সুওয়াল: আপনি যা জানতে চেয়েছেন, তার সারসংক্ষেপ হলো- আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত উনার ২য় বর্ষ ৫ম ও ৬ষ্ঠ সংখ্যায় (বা নবম সংখ্যায়) লংমার্চ নাজায়েয বলা হয়েছে। কিন্তু মাসিক মদীনার আগষ্ট ১৯৯৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে প্রশ্নের জাওয়াবে লংমার্চকে জায়েয বলা হয়েছে। এর মধ্যে কোনটি সত্য? আপনি আরও জানতে চান, মদীনার সম্পাদক সাহেব লিখেছেন লংমার্চ-এ যারা মারা গেছে তারা শহীদ অথচ আমাদের উল্লেখিত পত্রিকায় বলা হয়েছে একমাত্র দ্বীনি জেহাদে যারা মারা যায়, তারাই শহীদ হয়। আর অন্যান্য যেমন দুর্ঘটনায়, পানিতে পড়ে, ছাদ ধ্বসে, সন্তান হবার সময় যারা মারা যায়, তারা শহীদী দরজা পায়। তাহলে আপনার মতো লোক কোনটি মেনে নেবে?
জাওয়াব : প্রথমে একটা কথা জেনে রাখবেন, যে কোন ফতওয়া দিতে হলে প্রথমে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস শরীফ উনাদের ভিত্তিতে দিতে হয়, কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
هاتوا برهانكم ان كنتم صادقين.
অর্থঃ- তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তাহলে দলীল পেশ কর।আমরা যে ফতওয়া দিয়েছি, তা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ্ শরীফ উনাদের ভিত্তিতে। আর মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব কোন দলীলই পেশ করেননি। আপনার আরও জেনে রাখা উচিত মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব জুলাই ৯৩ সংখ্যায় লংমার্চকে তাবুকের জেহাদের সাথে তুলনা করেছেন। অথচ তখন লংমার্চের কোন অস্তিত্বই ছিলনা। যদি তাবুকের জেহাদকে লংমার্চ বলা হয়, তাহলে  হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তায়েফ গমন, হিজরত ও অন্যান্য নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের হিজরত দ্বীনি সফর ইত্যাদি প্রত্যেকটিকেই লংমার্চ বলতে হবে। আর হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার আসমান থেকে জমিনে আগমন বা অবতরণকে সবচেয়ে বড় লংমার্চ হিসেবে আখ্যায়িত করতে হবে। অর্থাৎ সমস্ত নবী রসূল আলাইহিস সালামই লংমার্চকারী।
          মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
ولا تلمزرا انفسكم ولا تنابزوا بالالقاب بئس الاسم الفسوق بعد الا يمان- ومن لم يتب فا ولئك هم الظالمون.
অর্থঃ তোমরা পরস্পর পরস্পরকে দোষারূপ করোনা এবং পরষ্পর পরস্পরকে অশোভনীয় লক্বব (বা উপাধি) দ্বারা সম্বোধন করোনা। (কেননা) ঈমান আনার পর অশ্লীল নাম দ্বারা ডাকা গুণাহ্ এবং যারা এটা হতে তওবা করলো না তারা যালেমের অন্তর্ভূক্ত।
          উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক আমাদের নিজেদেরকে দোষারোপ করতে এবং পরস্পর পরস্পরকে অশ্লীল, বিশ্রী, অশোভনীয়, খারাপ ও ইসলামী শরীয়তবিরোধী লক্বব (বা উপাধি) দ্বারা সম্বোধন করতে নিষেধ করেছেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি এটাও বলেছেন, পবিত্র ঈমান গ্রহণ করার পর কাউকেও কুফরী, ফাসেকী লক্বব (উপাধি) দ্বারা সম্বোধন করা গুণাহ এবং নিকৃষ্টতম কাজ। কাজেই উম্মতকে খারাপ নামে সম্বোধন করলে যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিস সালাম এমনকি সাইয়্যিদুল  মুরসালীন, ইমামুল  মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে খারাপ নাম তথা লংমার্চকারী হিসেবে সম্বোধন করলে তার কি অবস্থা হবে, তা সহজেই অনুমেয়। অথচ আকাঈদের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
الانبياء عليهم السلام كلهم منزهون عن الغائر والكبائر ولكفر والعبائح.
অর্থঃ- সমস্ত নবী আলাইহিস সালাম কবীরা, সগীরা, কুফরী, শেরেকী এমনকি অপছন্দনীয় কাজ থেকেও পবিত্র।সেখানে কিভাবে নবী রসূল আলাইহিস সালাম গণকে লংমার্চকারী হিসেবে সাব্যস্ত করা যেতে পারে? আর করলে সেটা যে কত বড় গুণাহ্, তা সহজেই উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা উপলব্ধি করা যায়। অর্থাৎ এটা নাজায়েয ও হারাম এবং জায়গা বিশেষে কুফরী। যেখানে পাপাত্মা ইসলাম বিদ্বেষী, ইসলাম ধ্বংসকারীদের অগ্রপথিক, নাস্তিক্যবাদের ধারক ও বাহক মাওসেতুং লংমার্চের প্রতিষ্ঠাতা, প্রবর্তক, তার প্রবর্তিত লংমার্চ কি করে নবী ও রসূল আলাইহিস সালাম উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে। এটা কখনই সম্ভব নয়। বরং এটা অজ্ঞতা, জেহালত, বাচালতা ব্যতীত কিছুই নয় এবং যারা এ সমস্ত কথা বলে থাকে, তাদেরকে প্রলাপকারী ছাড়া কিছুই বলা যেতে পারে না। এই জাওয়াবে মদীনার সম্পাদক সাহেব এবং আরও যারা এই ধরণের জাওয়াব দিয়ে থাকে এবং সমমত পোষণ করে, তাদের প্রত্যেকেরই এটা মারাত্মক ভুল। আরও উল্লেখযোগ্য যে, মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব জাওয়াব দেবার পর বলেছেন, এটা আমার বিশ্বাস। কিন্তু সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে এভাবে বিনা তাহকিকে জাওয়াব দেয়া শুদ্ধ নয়। 
কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من افتى بفير علم كان اثمه على من افتا (رواه ابو داود
 যে ব্যক্তিকে ইলম ব্যতীত ফতওয়া দেয়া হয়েছে, অতঃপর সে তদানুযায়ী কাজ করেছে, তার গুণাহ্ যে তাকে ফতওয়া দিয়েছে, তার উপরই পড়বে।(আবু দাউদ শরীফ)        
এরকম আরও মাসিক মদীনার এবং অন্যান্য পত্রিকার ভুল জাওয়াবের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি আমাদের কাছে সুওয়াল পাঠিয়ে থাকেন এবং এ সকল সুওয়ালের সঠিক উত্তর আমরা ধারাবাহিকভাবে আমাদের পত্রিকা মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার সুওয়াল-জাওয়াববিভাগে পর্যায়ক্রমে দিতে থাকব। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি মালেকী মাযহাবের ইমাম উনার সীরতগন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রথম যেদিন ফতওয়ার মসনদে বসলেন মুফতী হিসেবে, ফতওয়া দেয়ার জন্য সেদিনই উনার কাছে ৪০টি মাসয়ালা বা সুওয়াল আসলো। তিনি ১৮টার জাওয়াব দিয়েছেন এবং বাকী ২২টির জাওয়াবে বলেছেন, অর্থাৎ আমি জানি নাযখন জাওয়াব শেষ হয়ে গেলো এবং সুওয়ালকারীগণ চলে গেলো, তখন উনার নিকটবর্তী যে সকল বড় বড় আলেমগণ বসেছিলেন উনারা বললেন, “হে হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি আপনি কি সত্যিই ঐ ২২টি মাসয়ালার জাওয়াব জানেন না? তখন হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “হ্যাঁ, আমার জানা আছে, তবে ১৮টি মাসয়ালায় আমার পূর্ণ তাহকীক আছে, তাই জাওয়াব দিয়েছি, আর বাকী ২২টি মাসয়ালায় পূর্ণ তাহ্কীক নেই, হতে পারে বর্তমানে ২২টি মাসয়ালা সম্বন্ধে আমার যে ফয়সালা আছে পূর্ণ তাহকীকের পরে তার ব্যতীক্রমও হতে পারে। এই লোকগুলি অনেক দূর থেকে প্রায় ৬ মাসের রাস্তা অতিক্রম করে আমার কাছে এসেছে মাসয়ালা জানার জন্য। এখন যদি আমি বিনা তাহকীকে তার জাওয়াব দিয়ে দেই যা পূর্ণ শুদ্ধ নয়, তবে তার ভিত্তিতে তারা আমল শুরু করবে, আর পরে যখন আমার পূর্ণ তাহ্কীক হবে এবং তা যদি বর্তমান ফয়সালার ব্যতীক্রম ফয়সালা হয়, তাহলে তাদেরকে কে এই ফয়সালার বিশুদ্ধ বা পূর্ণ তাহকীক সম্বলিত মতটি জানাবে? যেহেতু আমি তাদের বিস্তারিত পরিচয় বা ঠিকানা জানি না। আর এজন্য হয়ত আমাকে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে জওয়াবদিহি ও পাকড়াও হতে হবে। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক বলেছেন,
فاسئلوا اهل الذكر انكنتم لا تعلمون.
অর্থঃ- যদি তোমরা না জান, তাহলে যারা জানেন ও অভিজ্ঞ, তাদেরকে জিজ্ঞেস করে নাও।সেজন্য আমি তাদেরকে বলেছি আমি জানি না। অর্থাৎ আমার পূর্ণ তাহ্কীক নেই। যাতে যার পূর্ণ তাহকীক আছে, তার কাছ থেকে জেনে নাও। কাজেই কোন মাসয়ালাই পূর্ণ তাহ্কীক ছাড়া বলা জায়েয নেই বরং হারাম। এর উপরই আমাদের, মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব ও সকল মুসলমানের চলা উচিত। কে শহীদ বা কে শহীদ নয়, এটা তার নেক নিয়ত ও নেক আমলের উপর ফয়সালা এবং মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক তিনিই সে বিষয়ে পূর্ণ ওয়াকিবহাল। জেনে রাখা দরকার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আছে যে, একবার একজন ছাহাবী   আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি জেহাদে যোগদান করে জেহাদের ফযীলত লাভ করতে চাই এবং গণীমতের মালও হাছিল করতে চাই, এটা কি শুদ্ধ হবে?” তখন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “তুমি যদি গনীমতের মালের আশায় জেহাদ কর, তাহলে জেহাদের ফযীলত হাসিল করতে পারবে না।
কাজেই এ পবিত্র হাদীছ  শরীফ দ্বারা পরিষ্কার বোঝা যায়, একমাত্র জেহাদের নিয়ত থাকলেই জেহাদের ফযীলত হাসিল করা যায়। জেহাদের সাথে অন্য কোন নিয়ত মিশ্রিত করলে জেহাদের ফযিলত পাওয়া যায় না। আরও পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ আছে, এক জেহাদে এক বিধর্মী একজন ছাহাবীর সম্মুখে কলেমা শরীফ পাঠ করেছিল। তথাপি সেই সাহাবী তাকে কতল করেছিলেন। এ সংবাদ যখন  নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছাল, তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “আমি তোমার থেকে এ বিষয়ে জুদা, কেননা তুমি একজন মুসলমানকে হত্যা করেছ।তখন সেই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই ব্যক্তি তো ভয়ে কলেমা শরীফ পাঠ করেছে। তখন  নূরে মুজসাসমা, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “তুমি কি তার অন্তর চিরে দেখেছিলে?” কেননা ফতওয়া জাহিরের উপর বাতিনের উপর নয়। আরও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আছে, এক জিহাদে এক ব্যক্তি খুব বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করছিল এবং কাফিরদেরকে বিপর্যদুস্ত করছিল। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা তার প্রশংসা করলেন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “এই লোক জাহান্নামী।তখন একজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ঐ লোককে অনুসরণ করতে লাগলেন এই তত্ত্ব লাভ করার জন্য যে, কেন  মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে জাহান্নামী বললেন।
কিছুক্ষণ পর ছাহাবী দেখলেন, ঐ ব্যক্তি আহত হয়ে ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে আত্মহত্যা করলো। তখন বুঝতে পারলেন মহান আল্লাহ পাক উনার  রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথার হাক্বীকত।
যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জ্ঞান দিয়েছেন, তাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জানতেন যে, সেই লোক আত্মহত্যা করবে এবং তা পূর্বে বলে দিয়েছিলেন। এ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, জিহাদে শরীক হলেই শহীদ হওয়া যায় না। কারণ অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে,
انما الا عمال با لخواتم.
অর্থঃ শেষ আমলের উপরই ফয়সালা। 
লংমার্চ শব্দ ব্যবহার করাই নাজায়েয। যা আমরা পূর্বেই দলীল দ্বারা প্রমাণ করেছি এবং উদাহরণস্বরূপ আরও উল্লেখ্য যে, মাংস বলাও জায়েয নেই, কারণ হিন্দুরা গরুকে মা বলে এবং তার গোশ্তগুলিকে অংশ হিসেবে মাংস বলে। আরও যেমন- বিশ্ব ব্রহ্মান্ড শব্দ ব্যবহার করা জায়েয নেই। কারণ, হিন্দুরা মনে করে বিশ্ব ব্রহ্মের ডিম বা আন্ডা। তাই তারা বিশ্ব শব্দের সাথে ব্রহ্মান্ড শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। অথচ ব্রহ্ম হলো হিন্দুদের দেবতার নাম। কাজেই বিশ্ব ব্রহ্মান্ড শব্দটা ব্যবহার করা জায়েয নেই। আবার হিন্দুরা গান্ধির নামের সাথে মহাত্মা শব্দ ব্যবহার করে থাকে। কেননা যার আত্মা মহান, তাকে মহাত্মা বলা হয়। আর যেহেতু গান্ধির আত্মাকে তারা মহান মনে করে থাকে, তাই তার নামের আগে তারা মহাত্মা শব্দটা ব্যবহার করে থাকে যা ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে নাজায়েয। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন,
ان شر الدواب عند الله الذين كفروا.
অর্থঃ- নিশ্চয়ই যারা কাফির, তারা মহান আল্লাহ পাক উনার  নিকট নিকৃষ্ট প্রাণী।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৫)
          কাজেই কোন কাফির বা বিধর্মীকে মহাত্মা বলা জায়েয নেই। এ প্রকার আরও অনেক শব্দ রয়েছে, যা ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে ব্যবহার করা জায়েয নেই। কাজেই কেউ যদি গরুকে মা মনে করে তার গোশতকে মাংস বলে, বিশ্বকে ব্রহ্মের আন্ডা মনে করে বিশ্বব্রহ্মান্ড বলে, কাফেরদের আত্মাকে মহান মনে করে তাদেরকে মহাত্মা বলে, তাহলে সেটা আকীদাগত দিক থেকে কুফরী হবে। এ প্রকার আরও একটি শব্দ হলো লংমার্চ। এ লংমার্চ শব্দ ব্যবহার করা নাজায়েয এবং যেহেতু এটা বিধর্মীদের আবিষ্কৃত একটি পদ্ধতি, তাই এটা করাও নাজায়েয। আর এটার মধ্যে যারা মারা যাবে, তাদেরকে উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ মোতাবেক শহীদ বলাও শুদ্ধ হবে না। কারণ ইসলামী শরীয়ত উনার ফয়সালা হলো জাহেরের উপর, বাতেনের উপর নয়।          
কেউ কেউ বলতে পারেন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আছে,
ان الله لا ينطرالى صوركم واعمالكم لكم ولكن ينظرالى نيتكم وقلوبكم.
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের সুরত ও আমল দেখেন না বরং তিনি তোমাদের নিয়ত ও অন্তর দেখেন।
কাজেই এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পরিপ্রেক্ষিতে কেউ যদি বলে লংমার্চ শব্দ ব্যবহার করা নাজায়েয এবং লংমার্চ করাও নাজায়েয, তা সত্ত্বেও যদি কেউ নেক নিয়তে নেক কাজের উদ্দেশ্যে করে, তাহলে তা জায়েয হবে না কেন? এর জাওয়াবে বলা যায়, কেউ যদি ছিনতাই, ডাকাতি বা অন্য কোন অবৈধ পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে ধন-সম্পদ উপার্জন করে, সেই পয়সা দিয়ে মসজিদ, মাদ্রাসা, লঙ্গরখানা, এতিমখানা, দুঃস্থের সেবা ইত্যাদি করে, তাহলে তাতে কি তার নেকী হাসিল হবে? কখনই নয়। বরং নেক নিয়তের সাথে সাথে নেক আমলও থাকতে হবে। যেমন নিম্নোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আমরা দেখতে পাই,   
وعن جابر عن النبى صلى الله عليه وسلم حين اتاه عمر فقال: انا نسمع احاديث من يهود تعجينا افترى ان نكتب بعضها- فقال امتهو كون انتم كما تهوكت اليهود والنصارى؟ لقد جنتكم بها بيضاء نقيه ولو كان موسى حياما وسعه الا اتباعى. (رواه احمد وبيهقى فى شعب الايمان)
অর্থঃ- হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম  যখন  নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, আমরা ইহুদীদের অনেক ধর্মীয় কাহিনী, কথা-বার্তা, নিয়ম-কানুন ইত্যাদি শ্রবণ করে থাকি, যা আমাদের নিকট ভাল লাগে। আমরা ওটার থেকে কিছু লিখে রাখতে পারবো কি? তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “তোমরা কি তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত বা বিভ্রান্ত রয়েছ? যেভাবে ইহুদী নাসারাগণ বিভ্রান্ত রয়েছে?  মহান আল্লাহ পাক উনার কসম, আমি তোমাদের নিকট সম্পূর্ণ পরিষ্কার ও পরিপূর্ণ দ্বীন এনেছি। হযরত মুসা আলাইহিস সালাম যদি এখন থাকতেন, তাহলে উনাকেও আমার দ্বীন অনুসরণ করতে হতো।          এখানে হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার নিয়ত অবশ্যই নেক ছিল কিন্তু বিধর্মীদের নিয়ম-কানুন, কথা-বার্তা, ধর্মীয় কাহিনী অনুসরণ করা যেহেতু নেক আমলের অন্তর্ভূক্ত নয়, তাই মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা করতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং নেক নিয়তের সাথে সাথে নেক আমলও থাকতে হবে। কাজেই যাতে নেক আমলই হয় না, তাতে কিভাবে শহীদ হয়? কেউ কেউ বলতে পারেন, যারা না জেনে লংমার্চ করতে গিয়েছে তাদের ক্ষেত্রে কি ফয়সালা হবে? সে ক্ষেত্রে জাওয়াব হলো- প্রথমে তাদের জন্য ইলম অর্জন করা ফরজ ছিল এবং তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল, তা করা জায়েয অথবা নাজায়েয হবে কিনা। কাজেই যেহেতু তারা না জেনে গিয়েছে সেহেতু সেটাও তাদের ভুল হয়েছে। কারণ ফরজ পরিমাণ ইলম অর্জন করার জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন। প্রশ্নকারী এ সংখ্যার জাওয়াব এবং গত সংখ্যার লংমার্চের জাওয়াব বার বার পড়লে লংমার্চ সম্বন্ধে ছহীহ ফয়সালা বুঝতে সক্ষম হবেন।
আবা-১১