সুমহান ১লা মুহররমুল হারাম শরীফ (সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম)
আমীরুল মু’মিনীর যুল হিজরাতাইন,
সাইয়্যিদুনা
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে ব্যবসা করেন।
সুবহানাল্লাহ!
বর্ণিত রয়েছে যে, খলীফাতু
রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে একবার
পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলো। বাইতুল মালেও উল্লেখযোগ্য
পরিমাণ খাদ্য ছিলো না। ঠিক সেই মুহূর্তে আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার একটি বাণিজ্য কাফিলা এক হাজার উট বোঝাই করা খাদ্য নিয়ে
পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে উপস্থিত হলো। ব্যবসায়ী লোকজন আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
উনার নিকট আসতে লাগলো খাদ্য কিনে নেয়ার জন্য। কেউ স্বাভাবিক দামে, কেউ দ্বিগুণ দামে, কেউ তিনগুণ, চারগুণ দামেও খাদ্য কেনার জন্য প্রস্তুত। তবুও তিনি উনাদের
নিকট খাদ্য দিতে রাজি হলেন না। তিনি বললেন,
আমার
এ খাদ্য নিতে হলে কমপক্ষে দশগুণ মূল্য দিতে হবে। কারণ আপনাদের আগে একজন আমাকে
দশগুণ মূল্য দেয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছেন। তখন উনারা বললেন, আমাদের আগে কে এত অধিক মূল্যে খাদ্যদ্রব্য
খরিদ করার কথা বললেন? পবিত্র মদীনা শরীফ
উনার মধ্যে তো আমরাই বড় ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীরা আরো আলোচনা করলেন যে, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি তো পূর্বে কখনো বেশি মূল্যের জন্য দর কষাকষি করেননি।
তবে আজকে কেন করছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। এরপর ব্যবসায়ীগণ উনারা বললেন, ঠিক আছে,
যিনি
আপনাকে বেশি মূল্য দেন উনাকেই আপনি মাল দিয়ে দিন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস
সালাম তিনি খলীফাতু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম
উনাকে খবর পাঠালেন যে, তিনি যেন একজন
প্রতিনিধি পাঠান, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার সমস্ত খাদ্যদ্রব্য অর্থাৎ এক হাজার উট বোঝাই
খাদ্য, যা সিরিয়া থেকে আনা হয়েছে, সেগুলো মহান
আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারকের জন্য হাদিয়া করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ! তখন
খলীফাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে
আকবর আলাইহিস সালাম উনার তরফ থেকে প্রতিনিধি পাঠানো হলে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার সমস্ত খাদ্যগুলো খলীফা উনার প্রতিনিধিকে বুঝিয়ে
দেন, তখন খলীফা উনার তরফ থেকে
সমস্ত খাদ্যগুলো পবিত্র মদীনা শরীফ-এ বণ্টন করে দেয়া হয় এবং তাতে দুর্ভিক্ষ দূর
হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি যেদিন এই দান
করলেন সেই রাতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
স্বপ্নে দেখতে পেলেন যে, “মহান আল্লাহ পাক
উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি সবুজ রং বিশিষ্ট খুব দামি পোশাক পরিধান করতঃ বোরাকে আরোহণ করে খুব
দ্রুত কোথাও যাচ্ছেন। এটা দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ,
ইয়া
হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কোথায় যাচ্ছেন? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
বললেন, আপনি কি জানেন না, আজ আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফবাসীকে এক হাজার উট
বোঝাই খাদ্য যে হাদিয়া করেছেন; যার কারণে পবিত্র
মদীনা শরীফ উনার দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে গেছে?
তাই
উনার হাদিয়ায় সন্তুষ্ট হয়ে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি আজকে বেহেশ্তে মেহমানদারীর
ব্যবস্থা করেছেন। আমি সেই মেহমানদারীতে শরীক হওয়ার জন্য যাচ্ছি।” সুবহানাল্লাহ!
************************************************************************
খলীফায়ে ছালিছ, আমীরুল মু’মিনীন
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার বিরোধীতাকারী কাট্টা কাফির ও
মুনাফিক-
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কুল-কায়িনাতের মধ্যে সর্বাধিক শান, মান,
ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী, সম্মান, মর্যাদা ও মর্তবা
হাদিয়া মুবারক করা হয়েছে। আর উনার উসীলায় ও মুবারক ছোহবতে ধন্য হওয়ার কারণে হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও সীমাহীন মর্যাদা-মর্তবা ও শান, মান লাভ করেছেন। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার
তৃতীয় খলীফা আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সেই
সীমাহীন মর্যাদা-মর্তবা লাভকারীগণের অন্যতম। সুবহানাল্লাহ!
* তিনি ছাহাবিয়াত
মাক্বামের শীর্ষস্থানীয় একজন।
* তিনি আশারায়ে
মুবাশশারা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্যতম।
* উনার শান মুবারকে
স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেন, “প্রত্যেক নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের একজন
বন্ধু থাকবেন। বেহেশতে আমার বন্ধু হবেন আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম।”
* উনার সুমহান শান
মুবারক হচ্ছে- তিনি হচ্ছেন ‘যুন নূরাইন’। অর্থাৎ তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি
দুই নূর মুবারক উনাদের অধিকারী অর্থাৎ তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার দু’জন বানাত আলাইহিমাস সালাম উনাদের গ্রহণ করে উনাদের খিদমত করে উক্ত
লক্বব মুবারক লাভ করেছেন।
* এমনকি স্বয়ং নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে ইরশাদ মুবারক করেছেন, “আমার যদি একশ জনও বানাত সন্তান থাকতেন আর
উনাদেরকে যদি আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে নিসবতুল আযীম মুবারক দেয়ার সুযোগ আসতো তবে আমি
সেই একশ জনকেই উনার কাছে দিয়ে দিতাম।” সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং উনার যারা বিরোধিতা করবে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষায় তারা কাট্টা
কাফির ও কাট্টা মুনাফিকের অন্তর্ভুক্ত।
খলীফায়ে ছালিছ, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমিরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
উনার বর্ণিত কতিপয় শিক্ষনীয় বিষয়-
(১) চাকচিক্য
পোশাকের লোভ যাদের অন্তরে, তাদের কাফনের কথা
স্মরণ করা উচিত। জাঁকজমক বাড়ির আকাঙ্খা যাদের অন্তরে, তাদের উচিত কবরের ছোট্ট গর্তটির কথা স্মরণ
করা। যারা সবসময় সুস্বাদু খাবারের লোভ করে তাদের কর্তব্য হচ্ছে- নিজের লাশটি যে
শেষ পর্যন্ত কীটের খোরাক হবে তা স্মরণ করা।
(২) যার হাতে
অন্যের নিন্দাবাদ করার মতো পর্যাপ্ত সময় থাকে, তার চাইতে হতভাগা আর কেউই হতে পারে না।
(৩) বছরান্তেও যে
ব্যক্তি দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হয় না,
তার
চিন্তা করা উচিত যে, মহান আল্লাহ পাক
তিনি তার উপর সন্তুষ্ট কিনা।
(৪) যে ব্যক্তি
চোখের ভাষা বুঝে না, তার সামনে মুখ
খোলা নিজেকে লাঞ্ছিত করার নামান্তর।
৫) তরবারির আঘাত মানুষের শরীর আহত করে,
কিন্তু
কটু কথা দ্বারা মানুষের অন্তর রক্তাক্ত হয়।
(৬) মু’মিন বান্দার
নিজের ঘর যদি তার যবান, বদনজর ও
লজ্জাস্থান নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যম হয়,
তবে
সেটাই তার জন্য সর্বোত্তম ইবাদতগাহে পরিণত হয়ে যায়।
(৭) দারিদ্র্য কোনো
মুসলমানকে বেইজ্জত করতে পারে না। মুসলমান যখন দ্বীন থেকে দূরে সরতে থাকে, তখনই পদে পদে বেইজ্জতির সম্মুখীন হয়।
(৮) গুনাহ কোনো না
কোনোভাবে মনের শান্তি বিনষ্ট করে।
************************************************
‘এটাও কি সম্ভব যে, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পথে দান করবেন অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্পদ বাড়িয়ে দিবেন না। সুবহানাল্লাহ!
একবার আখিরী রসূল, নুরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে উনার সম্মানিত দামাদ
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি এসে আরজি করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম; আমাকে আমার সম্পদ কমে
যাওয়ার কোনো তাসবীহ দান করুন।’ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
একথা শুনে আশ্চর্য প্রকাশ করলেন এবং বললেন,
কী
ব্যাপার হে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম, লোকজন ধন-সম্পদ
বাড়াতে চায়। আর আপনি সম্পদ কমে যাবার জন্য দোয়া মুবারক চাইছেন। এতে আমীরুল
মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, অন্যান্য হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অনেক নফল ইবাদত করেন। বেশি বেশি
পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করেন। কিন্তু আমার মনে হয় আমি বেশি সম্পদের হিসাবের
কারণে ততটুকু করতে পারি না।
তখনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি এসে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে বললেন, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
উনার সম্পদ কমানোর তাসবীহ মহান আল্লাহ পাক তিনি পাঠিয়ে দিয়েছেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন- ‘আপনি যদি আপনার সম্পদ কমাতে
চান, তাহলে আপনি যেন মহান
আল্লাহ পাক উনার পথে দান কমিয়ে দেন।’
একথা মুবারক শুনে আমীরুল মু’মিনীন,
সাইয়্যিদুনা
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বললেন,
এটা
কিভাবে সম্ভব যে, মহান আল্লাহ পাক
তিনি আমাকে সম্পদ দান করবেন, আর আমি উনার পথে
খরচ করবো না? তখন আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
বললেন- ‘এটাও কি সম্ভব যে, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পথে দান করবেন অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্পদ বাড়িয়ে দিবেন না। সুবহানাল্লাহ!
*********************************************
হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম
উনাদের খিদমত করার ফযীলত-
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন, “হে আমার হাবীব
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি (উম্মতদেরকে) বলুন, আমি তোমাদের নিকট কোনো প্রতিদান চাই না। আর
তোমাদের পক্ষে তা দেয়াও সম্ভব নয়। তবে যেহেতু তোমাদেরকে ইহকাল ও পরকালে কামিয়াবী
হাছিল করতে হবে, তাই আমার নিকটজন
তথা হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের প্রতি তোমরা সদাচরণ করবে।”
(পবিত্র সূরা শূরা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশ্ববিখ্যাত ‘তাফসীরে মাযহারী শরীফ’ উনার
মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, “আমি তোমাদের নিকট
কোনো প্রতিদান চাই না, তবে তোমাদের জন্য
দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে: তোমরা আমার নিকটাত্মীয় হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস
সালাম ও বংশধরগণ উনাদের (যথাযথ সম্মান,
আলোচনা
ও খিদমত প্রদর্শনপূর্বক) হক্ব আদায় করবে।” আর উনাদের খিদমতই মুসলমানের জীবনের
সর্বশ্রেষ্ঠ আমল।
খলিফায়ে ছালিছ আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
তিনি পবিত্র বদর জিহাদ ছাড়া প্রায় সমস্ত জিহাদে তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সাথে অংশগ্রহণ করেছেন এবং জিহাদে অঢেল সম্পত্তি হাদিয়া করেছেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
যখন পবিত্র বদর জিহাদে রওয়ানা হন, তখন সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি অসুস্থতাকে গ্রহণ করেছিলেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
মুবারক নির্দেশে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার যাওজাতুল
মুকাররমাহ আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম ব্যক্তিত্বা
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারকের আঞ্জাম
দেয়ার জন্য পবিত্র মদীনা শরীফ রয়ে যান।
পবিত্র বদর জিহাদ উনার বিজয়ের খবর যেদিন পবিত্র মদীনা শরীফে এসে পৌঁছলো
সেদিনই অর্থাৎ ১৮ই রমাদ্বান শরীফ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস
সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
খলিফায়ে ছালিছ আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার
জন্য পবিত্র বদর জিহাদে অংশগ্রহণকারীদের মতো ফযিলত ও গনীমতের অংশ ঘোষণা করেন।
অর্থাৎ উনাকে বদরী ছাহাবী হিসেবে গণ্য করা হয়।
এখান থেকে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে যে,
হযরত
আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুবারক খিদমত করার চেয়ে মহান আল্লাহ পাক
উনার কাছে আর কোনো শ্রেষ্ঠ আমল নেই। মূলত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম
উনাদের খিদমত করা সমস্ত কিছু থেকে উত্তম এবং পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার জন্য জিহাদও
সমতুল্য নয়। সুবহানাল্লাহ!
এক কথায় উনাদের মর্যাদা-মর্তবা,
সম্মান
বেমেছাল তথা উনাদের মেছাল কেবল উনারাই। আর তাই যারা উনাদের আলোচনা, ছানা-ছিফত বর্ণনা করবে, খিদমত করবে তাদের জন্য রয়েছে মহান আল্লাহ পাক
উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাদের খালিছ সন্তুষ্টি ও রেযামন্দি মুবারক।
******************************************************
যদি কোন পুরস্কার আমার প্রাপ্য হয় তাহলে আমাকে পুরস্কৃত করার জন্য মহান আল্লাহ
তায়ালা তিনিই যথেষ্ট ।”
খলীফায়ে ছালিছ আমিরুল
মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাসনকালে নীল ভূমধ্যসাগর
তীরের ‘তারাবেলাস’ নগরী মুসলমানদের করতলগত হয়। পরাক্রমশালী কাফির রাজা
জার্জিসের প্রধান নগরী ছিল এ এলাকা।
খলীফায়ে ছালিছ আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সেনাপতি করে রাজা জার্জিসের
বিরুদ্ধে জিহাদ করতে পাঠান। এই পরাক্রমশালী রাজা ১ লক্ষ ২০ হাজার সৈন্য নিয়ে হযরত
আবদুল্লাহ ইবন সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বাধীন মুসলিম বাহিনীর
অগ্রাভিযানের পথ রোধ করে দাঁড়ালো। স্বয়ং রাজা জার্জিস তার বাহিনীর পরিচালনা করছিল।
পাশে রয়েছে তার মেয়ে। অত্যান্ত খুব ছুরত ছিলো তার সে মেয়ে।
জিহাদ শুরু হলো। জার্জিস
মনে করেছিল তার দুর্ধর্ষ বাহিনী এবার মুসলিম বাহিনীকে উচিত শিক্ষা দেবে। কিন্তু তা
হলো না। মুসলিম বাহিনীর পাল্টা আঘাতে জার্জিস বাহিনীর ব্যুহ ভেঙ্গে পড়ল। উপায়ান্তর
না দেখে সে সেনা সদস্যদের উৎসাহিত করার জন্য ঘোষণা
করলো, “যে বীর পুরুষ মুসলিম
সেনাপতি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছিন্ন শির
মুবারক এনে দিতে পারবে, আমার কুমারী
কন্যাকে তার হাতে সমর্পণ করবো।”
জার্জিসের এই ঘোষণা তার
সেনাবাহিনীর মধ্যে উৎসাহের এক তড়িৎ প্রবাহ
সৃষ্টি করল তাদের আক্রমণ ও সমাবেশে নতুন উদ্যোগ ও নতুন প্রাণাবেগ পরিলক্ষিত হলো।
জার্জিসের সুন্দরী কন্যা প্রাপ্তির কামনায় তারা যেন মরিয়া হয়ে উঠল। তাদের উন্মাদ
আক্রমণে মুসলিম রক্ষা ব্যুহে ফাটল দেখা দিল। নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একজন ছাহাবী হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনিও সে যুদ্ধে শরীক ছিলেন। তিনি সেনাপতি হযরত আব্দুল্লাহ বিন সা’দ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পরামর্শ দিলেন, “আপনিও ঘোষণা করুন,
যে
তারাবেলাসের শাসনকর্তা জার্জিসের ছিন্ন মাথা এনে দিতে পারবে, তাকে জার্জিস দুহিতাসহ এক হাজার দিনার বখশিশ
দেয়া হবে।” হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পরামর্শ অনুসারে সেনাপতি
হযরত ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই কথাই ঘোষণা করে দিলেন।
তারাবেলাসের প্রান্তরে
ঘোরতর জিহাদ সংঘটিত হলো। যুদ্ধে জার্জিস পরাজিত হলো। তার কাটা শিরসহ জার্জিস কন্যাকে
বন্দী করে মুসলিম শিবিরে নিয়ে আসা হলো। কিন্তু এই অসীম সাহসিকতার কাজ কে করলেন? এই বীরত্বের কাজ কার দ্বারা সাধিত হলো? জিহাদের পর মুসলিম শিবিরে সভা আহূত হলো। হাজির
করা হলো জার্জিস-দুহিতাকে। সেনাপতি হযরত ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
জিজ্ঞেস করলেন, “আপনাদের মধ্যে
যিনি জার্জিসকে নিহত করেছেন, তিনি আসুন। আমার
প্রতিশ্রুত উপহার উনার হাতে তুলে দিচ্ছি।”
কিন্তু গোটা মুসলিম বাহিনী
নীরব নিস্তব্ধ। কেউ কথা বললেন না, কেউ দাবি নিয়ে
এগুলেন না। সেনাপতি হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বারবার আহ্বান জানিয়েও
ব্যর্থ হলেন। এই অভূতপূর্ব ব্যাপার দেখে বিস্ময়ে হতবাক হলেন জার্জিস দুহিতা। তিনি
দেখতে পাচ্ছেন তার পিতৃহন্তাকে। কিন্তু তিনি দাবি নিয়ে আসছেন না কেন? টাকার লোভ, সুন্দরী কুমারীর মোহ তিনি উপেক্ষা করছেন? এত বড় স্বার্থকে উপেক্ষা করতে পারে জগতের
ইতিহাসে এমন জিতেন্দ্রীয় যোদ্ধা-জাতির নাম তো কখনও শুনেননি তিনি। পিতৃহত্যার প্রতি
তার যে ক্রোধ ও ঘৃণা ছিল, তা যেন মুহূর্তে
কোথায় অন্তর্হিত হয়ে গেল। অপরিচিত এক অনুরাগ এসে সেখানে স্থান করে নিল।
অবশেষে সেনাপতির আদেশে
জার্জিস দুহিতাই হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দেখিয়ে দিলেন। বললেন, “ইনিই আমার পিতাকে হত্যা করেছেন, ইনিই আপনার জিজ্ঞাসিত মহান বীর পুরুষ।”
সেনাপতি হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
উনাকে অনুরোধ করলেন ঘোষিত উপহার গ্রহণ করার জন্য।
হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
“জাগতিক
কোনো লাভের আশায় আমি জিহাদ করিনি। যদি কোন পুরস্কার আমার প্রাপ্য হয় তাহলে আমাকে
পুরস্কৃত করার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা তিনিই যথেষ্ট ।” সুবহানাল্লাহ! (সূত্র:
আমরা সেই জাতি)
************************************************
খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মুমিনীন
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে বিজিত এলাকার কিঞ্চিত
বর্ণনা-
সময় কি আছে বর্তমান মুসলিম
দেশের শাসকদের জন্য, তারা চিন্তা করবে
কি তাদের অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্য কেমন ছিল,
তারা
শিক্ষা নেবে কী কেমন বীরত্বপূর্ণ ছিল মুসলমান উনাদের অতীত শৌর্য-বীরত্ব, কী ন্যায়নিষ্ঠ ছিলো মুসলিম জাতির পূর্বপুরুষ
উনারা? আমরা যদি একবার চোখ বুলাই
তাহলে দেখতে পাবো অপরাজেয় সামরিক শক্তি,
ইনসাফপূর্ণ
হুকুমতব্যবস্থা, সর্বোচ্চ ইসলামী
আদর্শ, ৬টি মৌলিক অধিকারের
অপরিমেয় একচ্ছত্র ভিত্তিস্থাপন ইত্যাদি। তেমনি একজন মহান শাসক ছিলেন খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন
আলাইহিস সালাম তিনি।
খলীফায়ে ছালিছ আমিরুল
মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ২৪ হিজরী সনের ১লা
মুহররম তিনি খিলাফতের মহান দায়িত্ব গ্রহণ করেন। উনার শাসনামলের একটি অসামান্য
অবদান নৌবাহিনী গঠন। নিম্নে সামান্য কিছু নমুনা দেয়া হলো:
খলীফায়ে ছালিছ আমিরুল
মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সমুদ্রপথে বিজয় সূচনার
এক বেমেছাল কৃতিত্ব রয়েছে। এই সময় মুসলমানগণ প্রায় ৫০টির মতো জিহাদে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।
গ্রীসের সাইপ্রাস আক্রমণের পূর্বে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
নৌবাহিনী গঠনের মুবারক নির্দেশ পান। সাইয়্যিদুনা খলীফায়ে ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার
মুবারক নির্দেশ পেয়ে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সারা দেশে
বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইসলামী আদর্শিক নৌসৈনিক আহ্বান করেছিলেন। তারপর সমুদ্রযুদ্ধের
প্রশিক্ষণ শুরু করেন। রাজধানীতে দলে দলে সৈনিকের খাতায় নাম লেখানোর জন্য মানুষের
তোড়জোড় পড়ে গিয়েছিল। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই বিরাট শক্তিশালী নিয়মিত নৌবাহিনী গঠন
করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যা বিভিন্ন ইউনিটে ইউনিটে বিভক্ত করেছিলেন পৃথিবীর
সর্বশ্রেষ্ঠ নৌবাহিনীকে। এমনকি উনারা বরফের মধ্যেও যুদ্ধ জাহাজ চালাতে সক্ষম
হয়েছিলেন।
খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মুমিনীন
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার প্রায় ১২ বৎসরের খিলাফতকালে এই নৌবাহিনীর মাধ্যমে বিরাট বিরাট অভিযানসমূহ
পরিচালনা ও সাফল্যজনক বিজয় এত দ্রুত সম্ভব হয়েছিল যে, এর মেছাল ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া বড়ই দুষ্কর। এসব
বিজয়ের অবদানে ছিলেন তৎকালীন মুসলিম সেনাপতি
হযরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মুছান্না বিন হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু, হযরত মুয়াবিয়া
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত ওয়ালিদ ইবনে
উকবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সাঈদ ইবনে
আ’ছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত অবদুল্লাহ
ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু হযরত কাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা। ফলে তখন ইসলামী খিলাফতের
পরিধি বহুদূর সম্প্রসারিত হয় মুসলমান নৌবাহিনী তখন বড় বড় জিহাদে অংশ গ্রহণ করা
ছাড়াও আরব সাগর, কৃষ্ণ-সাগর ও
ভূমধ্যসাগর অভিযানে অত্যন্ত সফলতার পরিচয় দেন এবং ২৮ হিজরী সনে সাইপ্রাস ও রোড’স
দ্বীপদ্বয় বিজয় করেন।
খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মু’মিনীন
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি নৌবাহিনীকে এত উন্নতি করেছিলেন যে ৩১ হিজরী সনে রোমক সম্রাট যখন
বিরাট বাহিনীর সহায়তায় সিরিয়ার উপকূল আক্রমণ করে, তখন হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবং হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা তাদেরকে এমন শোচনীয়ভাবে
পরাজিত করেন যে, রোমকরা আর কখনো
মাথা উঁচূ করে দাঁড়াবার সাহস পায়নি। এক রকম বলতে গেলে তাদের বাহিনী সম্পূর্ণরূপে
পর্যুদস্ত ও বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল। এমনকি হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি সমুদ্রপথে এতদূর অগ্রসর হয়েছিলেন যে,
৩২
হিজরী সনে তিনি কনস্টান্টিনোপল পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেন।
খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন
আলাইহিস সালাম উনার শাসনামলে মূলত দু’ধরনের বিজয় অনুষ্ঠিত হয়। এক. যে সমস্ত এলাকা
আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফতকালে জয় হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে রোমক ও ইরানীদের উস্কানীতে
বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল- খলীফায়ে ছালিছ,
আমীরুল
মুমিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পুনরায় সেগুলি উদ্ধার করে
শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপন করেছিলেন। যেমন- আর্মানিয়া, আলেকজান্দ্রিয়া,
মিশর
ইত্যাদি। দুই. যে সমস্ত এলাকায় যালিম শাসকরা নির্যাতন চালাতো, শান্তি ছিল না সেসব এলাকা খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন
আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে বিজয় করেন এবং বেমেছাল শান্তি স্থাপন করেছিলেন; যেমন- লিবিয়া, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো,
জুরজান, খুরাসান,
তাবারিস্তান, সোয়াত,
কাবুল, সিজিস্তান, নিশাপুর, পাকিস্তান (তখনকার
ভারতবর্ষ) ও ভারতের কিছু সমৃদ্ধ অঞ্চল ইত্যাদি।
এসব বিজয় মাত্র ছয় (৬) বৎসরেরও কম সময়ে অর্জিত
হয়। আর এখন গণতন্ত্রের রক্তচোষা শাসনব্যবস্থা মুসলমানগণ উনাদেরকে বিজয় শব্দ থেকে
গহীন অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। এই সে¦চ্ছাচারী শাসনব্যবস্থা
মুসলমানগণ উনাদেরকে গোলামিত্বের শিকল পরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন নিজেদের নাজাতের
জন্যই মুসলমানগণ উনাদেরকে এই রক্তচোষা শাসনব্যবস্থাকে ধিক্কার দিয়ে খিলাফতী
শাসনব্যবস্থা জারি করার জন্য তৈরি হতে হবে। তবে মুসলমানরা শিঘ্রই আবার পৃথিবী শাসন
করতে পরবে, যদি মুসলমানরা মুজাদ্দিদে
আ’যম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ক্বদম
তলে জমায়েত হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে সে-ই তাওফীক দান করুন।
*****************************************************
খলীফায়ে ছালিছ, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
উনার সংক্ষিপ্ত পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক-
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাদের আখাচ্ছুল খাছ নৈকট্য-নিসবত প্রাপ্ত ব্যক্তিত্বগণ উনাদের মধ্যে
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি অন্যতম। নি¤েœ উনার সাওয়ানেহ উমরী
মুবারক সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হলো:
পবিত্রতম বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার সময়কাল নিয়ে
ঐতিহাসিকগণের মাঝে বেশ ইখতিলাফ রয়েছে। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য মতে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
তাশরীফ মুবারক গ্রহণের ছয় বৎসর পর বা আমুল ফিলের
৬ বৎসর পর তিনি পবিত্র বিলাদতী
শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র নসব মুবারক:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত পিতা-মাতা উনাদের দু’জনের দিক হতেই নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নসব
মুবারক উনার সাথে সম্পৃক্ত। উনার সম্মানিত পিতা আফফান ইবনে আবুল আস ইবনে উমাইয়া
ইবনে আবদু শামস ইবনে আবদে মান্নাফ আলাইহিমুস সালাম তিনি। এ অনুযায়ী উনার পবিত্র
নসব মুবারক পঞ্চম স্তরে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নসব মুবারক উনার সাথে মিলিত হয়েছে। উনার সম্মানিতা
মাতা উরওয়া বিনতে কুরাইয ইবনে রবীয়া ইবনে হাবীব ইবনে আবদে শামস ইবনে আবদে মান্নাফ।
এ অনুযায়ী উনার সম্মানিতা মাতা উনার পবিত্র নসব মুবারকও ৬ষ্ঠ স্তরে মুবারক নসবে
মিলিত হয়েছে। তাছাড়া উনার নানী হযরত উম্মে হাকীম আল বাইদা আলাইহাস সালাম তিনি হযরত
খাজা হাবীবুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার যমজ বোন। সে অনুযায়ী তিনি নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা ফুফু।
সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র নাম মুবারক:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার মূল নাম মুবারক হলো হযরত ‘উছমান’ আলাইহিস সালাম।
বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ
ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশকারী আওলাদ
হলেন হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম। উনার নাম মুবারক অনুযায়ী তিনি আবু আব্দিল্লাহ
কুনিয়াতে সম্বোধিত হতেন। তাছাড়া আবু আমর,
আবু
লাইলা কুনিয়াত মুবারকও ব্যবহৃত হয়। সর্বোপরি তিনি ‘যুন নূরাইন’ ও ‘গনী’ লক্বব
মুবারকে সর্বাধিক মশহুর।
শিশু ও কিশোর বয়স মুবারক:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি মাদারযাদগতভাবেই অত্যধিক শান্ত প্রকৃতির ছিলেন।
বাল্য বয়সের অন্যান্য ছেলেদের ন্যায় তিনি হৈ হুল্লোড়ে লিপ্ত না হয়ে স্বকীয়
ভাবগাম্ভীর্য মুবারক জাহির করতেন। কৈশোর বয়স মুবারকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আক্ষরিক
জ্ঞান রপ্ত করেন। সঙ্গতকারণেই তিনি বিভিন্ন বিষয়ে অত্যধিক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। আর
এটাই তো স্বাভাবিক। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে ইলমের শহরের ছাদ হিসেবে মুবারক ঘোষণা দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, আইয়্যামে জাহিলিয়াতের সেই কঠিন সময়ে যে সমস্ত
ব্যক্তিত্ব পূত-পবিত্র চরিত্র মুবারক উনার অধিকারী ছিলেন, উনাদের মধ্যে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
তিনি অন্যতম। তিনি কোনোদিন শরাব পান করেননি। আর কৈশোর থেকেই তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যে
লিপ্ত হন।
যুবক বয়স মুবারক:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সম্ভ্রান্ত আরবীগণ উনাদের রীতি অনুযায়ী যৌবনে
পদার্পণ করে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। উনার সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা, ন্যায়পরায়ণতা প্রভৃতির দরুন উনার ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপক
বিস্তৃতি লাভ করে। জাহিলিয়াতের সেই সময়ে
তিনি বড় ব্যবসায়ীদের অন্যতম ও উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। সঙ্গতকারণেই উনার
ব্যাপক দানশীলতার দরুন উনাকে সকলেই ‘গনী’ লক্বব মুবারকে আখ্যায়িত করেন।
সুবহানাল্লাহ!
আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম প্রকাশ:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার মুবারক মধ্যস্থতায় যে সমস্ত ব্যক্তিত্ব পবিত্র
দ্বীন ইসলাম প্রকাশ করেছেন, উনাদের মধ্যে
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি অন্যতম। দারুল আরকামে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত
দ্বীন ইসলাম প্রচারের পূর্বে আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম প্রকাশকারী
পুরুষগণ উনাদের মধ্যে তিনি চতুর্থতম। সুবহানাল্লাহ!
মুবারক ত্যাগ তিতিক্ষা:
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার জন্য যে সমস্ত ব্যক্তিত্ব সীমাহীন যুলুম-নির্যাতন
সহ্য করেছেন, উনাদের মধ্যে
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি অন্যতম। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম
গ্রহণ করলে উনার চাচা আল হাকাম ইবনে আবুল আস উনাকে অসহনীয় নির্যাতন করে। হাত-পা
মুবারক বেঁধে রাখে। নির্মমভাবে প্রহার করে। অনাহারে থাকতে বাধ্য করে। এমনিভাবে
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার থেকে বিমুখ করতে শত অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু শত নির্যাতন
সত্ত্বেও তিনি তাদের যাবতীয় অপচেষ্টা ধূলিস্যাৎ করে দিয়ে পবিত্র অহদানিয়াত বারবার
ঘোষণা করেন। সুবহানাল্লাহ!
প্রথম নূর মুবারক উনার খিদমত:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
দ্বিতীয়া আওলাদ সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি নিসবাতুল আযীম মুবারক করেন, অর্থাৎ উনার খিদমত মুবারক করার জন্য উনাকে
গ্রহণ করেন। তবে নিসবাত মুবারক পবিত্র দ্বীন ইসলাম জাহির হওয়ার পরে অনুষ্ঠিত
হয়েছে। আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত প্রকাশের ৪র্থ বছর নিসবাতুল আযীম মুবারক সম্পন্ন হওয়ার
ব্যাপারে সকলেই একমত।
মুবারক প্রথম হিজরত:
মুসলমান উনাদের প্রতি কুরাঈশদের নির্যাতন যখন সমস্ত হদ অতিক্রম করেছে, তখন আনুষ্ঠানিকভাবে নবুওওয়াত ঘোষণার পঞ্চম
বর্ষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
মুবারক ইযাজতক্রমে আমীরুল মু’মিনীন,
সাইয়্যিদুনা
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সালাম হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে সাথে নিয়ে ১৬ জনের কাফিলাসহ
আবিসিনিয়ায় মুবারক হিজরত করেন।
আবিসিনিয়ায় আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার মুবারক হিজরতের ফলাফল সুদূরপ্রসারী। উনাদের হিজরতের
দরুন আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাশী উনাদের মুবারক ছোহবত লাভে ধন্য হন। এ সুবাদেই
তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। উনাদের মুবারক পৃষ্ঠপোষকতায় সেখানে পবিত্র
দ্বীন ইসলাম উনার ব্যাপক প্রচার-প্রসার ঘটে।
আবিসিনিয়ার ভূমিতেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দৌহিত্র হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্রতম
বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। যিনি চতুর্থ হিজরীতে পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক
প্রকাশ করেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করেন, “হযরত লূত আলাইহিস
সালাম উনার পরে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সপরিবারে মহান আল্লাহ পাক উনার
জন্য সর্বপ্রথম হিজরত মুবারককারী।” সুবহানাল্লাহ!
মুবারক দ্বিতীয় হিজরত:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
মুবারক হিজরতের কিছুদিন পূর্বে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি আবিসিনিয়া
হতে সম্মানিত মক্কা শরীফ ফিরে আসেন। অতঃপর মুবারক নির্দেশক্রমে তিনি সম্মানিত
পবিত্র মদীনা শরীফ মুবারক হিজরত করেন। এ কারণে উনাকে দু’বার হিজরতকারী হিসেবে
উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য যে, সম্মানিত মদীনা
শরীফে তিনি হযরত আউস ইবনে সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে মুবারক
অবস্থান গ্রহণ করেন।
পবিত্র বদর জিহাদ:
দ্বিতীয় হিজরীর ১৭ই রমাদ্বান শরীফ-এ সম্মানিত বদর জিহাদ সংঘটিত হয়। ওই জিহাদে
রওনা দেয়ার পূর্বে বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আন নূরুছ
ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি মারীদ্বী শান মুবারক গ্রহণ করেন। আর এ কারণে নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমীরুল
মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে মুবারক খিদমতে সম্মানিত মদীনা শরীফ রেখে যান। পবিত্র
১৮ই রমাদ্বান শরীফ-এ বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আন
নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
সঙ্গতকারণেই আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে আসহাবে বদর উনাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি গনীমত
প্রাপ্ত হন। সুবহানাল্লাহ!
বলাবাহুল্য যে, সাইয়্যিদাতুন নিসা
বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস
সালাম এবং আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাদের পারস্পরিক সম্পর্ক মুবারক ছিল বেমেছাল। যা পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টরূপে ইরশাদ মুবারক হয়েছে।
হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গোশত ভর্তি একখানা পাত্র দিয়ে আমাকে আমীরুল
মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার হুজরা শরীফ-এ পাঠালেন। (পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার
পূর্বে হওয়ায়) আমি উনার হুজরা শরীফ-এ প্রবেশ করলাম। সেখানে সাইয়্যিদাতুন নিসা
বিনতুু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস
সালাম উনাকে বসা দেখলাম। উনাদের উভয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক দেখে আমি অভিভূত হয়ে
একবার সাইয়্যিদাতুন নিসা বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আন
নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার দিকে,
একবার
আমীরুল মু’মিনীন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার দিকে তাকাতে লাগলাম। অতঃপর, আমি ফিরে আসলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, আপনি কি উনাদের নিকট গিয়েছিলেন? আমি বললাম, জ্বি। তিনি পুনরায় বললেন, আপনি কি উনাদের চেয়েও সুন্দর পরিবার আর দেখেছেন? আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনাদের
চেয়ে সুন্দর পরিবার আমি দ্বিতীয়টি আর দেখিনি। সুবহানাল্লাহ! (ইবনে আসাকির)
দ্বিতীয় নূর মুবারক গ্রহণ:
সাইয়্যিদাতুন নিসা বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আন
নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর
তৃতীয় হিজরী সনের শুরুতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত বানাত সাইয়্যিদাতুন নিসা আছ ছালিছা আলাইহাস সালাম
উনাকে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট নিসবাতুল আযীম মুবারক দেন।
উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, বিনতু রসূলিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আছ ছালিছা আলাইহাস সালাম উনাকে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
উনার নিকট নিসবাতুল আযীম মুবারক প্রদানকালে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম আছ ছালিছা আলাইহাস সালাম উনাকে সম্বোধন করে ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই আপনার আহাল হযরত ইবরাহীম আলাইহিস
সালাম উনার এবং আপনার পিতা উনার সাথে অধিক তাশবীহ বা সদৃশ্য মুবারক রাখেন।”
সুবহানাল্লাহ! (ইবনে আদী)
নবম হিজরী সনে সাইয়্যিদাতুনা বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
আছ ছালিছা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তিনি
পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যদি আমার চল্লিশজন সম্মানিতা বানাত
আলাইহিন্নাস সালাম থাকতেন, তাহলে আমি
পর্যায়ক্রমে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে নিসবাতুল আযীম মুবারক
সম্পন্ন করতাম।” যা আমীরুল মু’মিনীন,
সাইয়্যিদুনা
হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন। সুবহানাল্লাহ!
(তিবরানী শরীফ)
হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
কাছ থেকে দু’বার জান্নাত ক্রয় করেন। প্রথমত,
রুমা
কূপ ক্রয় করে। দ্বিতীয়ত, উসরার জিহাদের সময়
খিদমত করে। সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে হাকীম)
বলাবাহুল্য যে, সম্মানিত মদীনা
শরীফ উনার মাঝে পানির উৎস ছিল তৎকালে রুমা কূপ। এক ইহুদী ছিল এর মালিক। সে বিনামূল্যে কাউকে
পানি দিত না। ফলশ্রুতিতে সম্মানিত মদীনা শরীফবাসী পানি সঙ্কটে পড়েন। আর এই জন্য
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি রুমা
কূপ ক্রয় করবেন, উনার জন্য জান্নাত
ওয়াজিব হয়ে যাবে।” তখন আমীরুল মু’মিনীন,
সাইয়্যিদুনা
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি প্রথম দফায় ১২ হাজার দিরহাম দিয়ে এবং
পরবর্তীতে আরো ১৮ হাজার দিরহাম মোট ৩০ হাজার দিরহাম দিয়ে সেই কূপ ক্রয় করে মুবারক
খিদমতে ওয়াকফ করেন। আর এভাবেই তিনি দুনিয়ায় থাকতেই জান্নাত উনার মালিক হয়ে যান।
সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ)
নায়িবে রসূল:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
যাতুর রিকা ও গাযওয়ায়ে গাতফানের সময় আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
উনাকে আপন স্থলাভিষিক্ত করে তথা নায়িবে রসূল ঘোষণা করে সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার
দায়িত্ব প্রদান করেন। (তারীখুল খুলাফা)
হাবীবী দূত:
ঐতিহাসিক হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে
প্রতিনিধি হিসেবে কুরাঈশদের নিকট প্রেরণ করেন। আর উনাকে আবদ্ধ করা হলে উনার রক্ত
মুবারক উনার প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যাপারে বাইয়াতে রিদওয়ান সংঘটিত হয়। যা পবিত্র সূরা
তাওবা শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।
জিহাদে অংশ গ্রহণ:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বদর, যাতুর রিকা, গাযওয়ায়ে গাতফান ব্যতীত সকল জিহাদেই শরীক ছিলেন। আর প্রতিটি
জিহাদেই তিনি সর্বাধিক অর্থ মুবারক খরচ করেন। সর্বাপেক্ষা অধিক ব্যয়ের দরুন নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেছেন যে, “আজকের পর আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
উনাকে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না। কোনো কিছুই উনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে
না।” সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ উনার খুশি:
মুসলিম উম্মাহর নিকট “আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ” অত্যধিক পরিচিত উপলক্ষ।
সম্মানিত বিদায় হজ্জ হতে সম্মানিত মদীনা শরীফ এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পার ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বী শান মুবারক জাহির করেন। এভাবে
কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর ছফর মাসের শেষ ইয়াওমুল আরবিয়া অর্থাৎ বুধবার তিনি
ছিহহাতী শান মুবারক জাহির করেন। এতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা
আনহুম উনারা সীমাহীন খুশি প্রকাশ করেন। উনারা বাতাসের চেয়েও দ্রুত গতিতে হাদিয়া ও
দান করেন। আর সেই সময়ে আমীরুল মু’মিনীন,
সাইয়্যিদুনা
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি দশ হাজার দিরহাম মুবারক হাদিয়া করে খুশি
প্রকাশের বেমেছাল নজির মুবারক স্থাপন করেন। সুবহানাল্লাহ!
প্রথম খলীফাদ্বয় আলাইহিমাস সালাম উনাদের সময়কালে:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি এমনি একজন সুমহান ব্যক্তিত্ব যে, উনার মাঝে যাবতীয় সুমহান গুণাবলীর সম্মিলন
ঘটেছে। সঙ্গতকারণেই খলীফাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার এবং আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে
আ’যম আলাইহিস সালাম উনাদের মুবারক খিলাফতকালে তিনি মজলিসে শূরায় গুরুত্বপূর্ণ
অবদান রাখেন। উনার প্রখর মেধা, হিকমতপূর্ণ
পরামর্শ, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা
সকলকে অভিভূত করেছে। যার বহিঃপ্রকাশস্বরূপ আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম
আলাইহিস সালাম উনার মনোনীত ছয়জনের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।
এছাড়া পুরো হায়াত মুবারকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার প্রসারের জন্য
প্রতিটি জিহাদে অভিযানে তিনি সীমাহীন অর্থ ব্যয় করতেন। এমনকি পবিত্র মদীনা শরীফ
উনার দুর্ভিক্ষ দূরীভূত করতে হাজার উটের বিশাল কাফেলা হাদিয়া করতে দ্বিধাবোধ
করেননি। ইতিহাসে যা সোনালী অক্ষরে প্রসিদ্ধ রয়েছে।
বাইয়াতে আম গ্রহণ:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খলীফা হিসেবে সমাসীন হওয়ার বিষয়টি দীর্ঘ আলোচনার
দাবি রাখে। তবে সংক্ষেপে মূলকথা হলো- আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস
সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের
বর্ণনা মুতাবেক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের ইজমায়ে
আজিমত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে চব্বিশ হিজরী সনের পহেলা মুহররমুল হারাম শরীফ
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে খলীফা হিসেবে খিলাফতের মহান
দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
সম্মানিত ইসলামী পতাকা প্রসারণ:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নিশানা আরব
সাগর পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়। অপরদিকে আফ্রিকার শেষ সীমানা পর্যন্ত
এবং ইউরোপের সাইপ্রাসেও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আলো ছড়ায়। এছাড়া আমীরুল মু’মিনীন
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার অসমাপ্ত অভিযানগুলো তিনি
সম্পূর্ণ করেন। উনার মুবারক পৃষ্ঠপোষকতায় আমুরিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, ফিবরাস,
জুরজান, খোরাসান,
হিরাত, কাবুল,
সিজিস্তান, নিশাপুর,
হিসনুর
রুয়াত, ত্রিপলী (লিবিয়া) এবং
অধিকাংশ আফ্রিকাসহ এশিয়ার অধিকাংশ অঞ্চল পবিত্র ইসলামী খিলাফত উনার অন্তর্ভুক্ত
হয়।
নৌবাহিনী গঠন:
ঐতিহাসিক সত্য অনুযায়ী আমীরুল মু’মিনীন,
সাইয়্যিদুনা
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ২৭ হিজরী সনে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে কাইস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের
দায়িত্বে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে সর্বপ্রথম নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন। যার
সুসংবাদ পূর্বেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি প্রদান করেছিলেন।
মুবারক শাহাদাত:
৩৫ হিজরী সনের পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস। অধিকাংশ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র হজ্জ আদায়ের জন্য পবিত্র মক্কা শরীফ গমন করেছেন। পবিত্র
মদীনা শরীফ জনসমাগম কিছুটা কম। মুনাফিক গোষ্ঠী ইবনে সাবার নেতৃত্বে সেই সময়কে
বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মোক্ষম সুযোগ ভেবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার
মধ্যে পুরো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। আর এক্ষেত্রে মুনাফিক মারওয়ান কলকাঠি নাড়তে
থাকে। এমনকি তারা আমীরুল মু’মিনীন,
সাইয়্যিদুনা
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে উনার হুজরা শরীফ উনার মধ্যেই অবরুদ্ধ করে
রাখে।
বলাবাহুল্য যে, মুনাফিক
বিদ্রোহীরা হযরত মুহম্মদ ইবনে আবী বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ বিশিষ্ট
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বিদ্রোহের হাতিয়ার হিসেবে
ব্যবহারের অপচেষ্টা চালায়। উনারা বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে সরে যান। অনেক ঐতিহাসিক
উনাদের সরে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ না করায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনিসহ বিশিষ্ট ছাহাবীগণ উনারা বিদ্রোহ
থামানোর চেষ্টা করেন। মুনাফিকরা উনাদের আদেশ মুবারক অমান্য করে। অতঃপর উনারা
মুনাফিকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযানের অনুমতি প্রার্থনা করলে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে রক্ত প্রবাহিত করাকে অপছন্দ করেন। এমতাবস্থায়
মুনাফিকরা আরো শক্তি সঞ্চয় করে।
অবশেষে পবিত্র ১৮ই যিলহজ্জ শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ মুনাফিকরা উনার পবিত্র হুজরা
শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করে উনাকে শহীদ করে। সেই সময়ে তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ
শরীফ তিলাওয়াত করছিলেন। আর সেই পবিত্র কুরআন শরীফখানা অদ্যাবধি মিসরের জাতীয়
যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত
মুবারকের পর মুনাফিকরা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে সীমাহীন গোলযোগ সৃষ্টি করে।
তার কারণে তিন দিন পর্যন্ত মদীনাবাসীগণ উনারা ঘর থেকে বের হতে পারেননি। এমনকি
মুনাফিকরা আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার জিসম মুবারক দাফন মুবারক করতেও বাধা সৃষ্টি করে।
এতদ্বসত্ত্বেও হযরত যুবাইর ইবনে মুতইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার জানাযা
নামায পড়ান। অল্প সংখ্যক লোকের খোশ নছীব হয়েছে উনার জানাযা নামায পড়ার। জান্নাতুল
বাক্বী শরীফ উনার হাসসে কাওকাবে উনার রওযা শরীফ অবস্থিত।
যুন নূরাইন লক্বব মুবারক:
বিভিন্ন কারণে তিনি যুন নূরাইন তথা দুই নূরের অধিকারী। প্রথমত, তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুইজন বানাত আলাইহিমাস সালাম উনাদেরকে
পর্যায়ক্রমে গ্রহণ করেছেন। দ্বিতীয়ত,
তিনি
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের উভয়ই সংকলন করেছেন। তৃতীয়ত, কামালতে রিসালাত এবং কামালতে বিলায়েত উভয়ই
উনার মাঝে একত্রিত হয়েছে। চতুর্থত,
তিনি
দুইবার হিজরত মুবারক করেছেন।
বিশেষ বিষয়:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার কাছ থেকে মুহাদ্দিসগণ ১৪৬খানা পবিত্র হাদীছ শরীফ
বর্ণনা করেছেন। তিনি জুমুয়ার ছানী আযানের প্রচলন করেন। ২৬ হিজরী সনে মসজিদে হারাম
শরীফ উনার জন্য নতুন জায়গা ক্রয় করে উনার বিস্তৃতি ঘটান। এছাড়া উনার সময়ে মসজিদে
নববী শরীফ উনার ব্যাপক সংস্কার করা হয়। তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে রুকু হিসেবে
বিন্যস্ত করেন। উনার মুবারক তত্ত্বাবধানেই খতমে তারাবীহ উনার প্রচলন ঘটে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মুবারক উসীলায়
মুসলিম উম্মাহকে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে হুসনে যন রাখার তাওফীক দান করুন। উনার
সম্মানিত শাহাদাতের বদলা গ্রহণের শক্তি ও সুযোগ দান করুন। (আমীন)
আল হাদী, আলুল্লাহ, আকরামুল উম্মাহ, ছালিছুল ক্বওম,
খলীফায়ে
ছালিছ, আমীরুল মু’মিনীন হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সুমহান শান মান মুবারক-
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ইজ্জত ও সম্মান হচ্ছে কেবলমাত্র মহান আল্লাহ
পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্য এবং উনার রসূল,
নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য আর যারা ঈমানদার উনাদের জন্য। কিন্তু
যারা মুনাফিক তারা উনার ইজ্জত ও সম্মান সম্পর্কে অবগত নয়।”
মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কুল-কায়িনাতের মধ্যে সর্বাধিক শান, মান,
ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী, সম্মান, মর্যাদা ও মর্তবা
দান করেছেন। আর উনার উসীলায় ও মুবারক ছোহবতে ধন্য হওয়ার কারণে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও সীমাহীন মর্যাদা-মর্তবা ও শান, মান লাভ করেছেন। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার
তৃতীয় খলীফা আমীরুল মু’মিনীন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সেই সীমাহীন
মর্যাদা-মর্তবা লাভকারীগণের অন্যতম। সুবহানাল্লাহ!
* তিনি ছাহাবিয়াত
মাক্বামের শীর্ষস্থানীয় একজন। সুবহানাল্লাহ!
* তিনি আশারায়ে
মুবাশশারা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্যতম। সুবহানাল্লাহ!
* উনার শান মুবারকে
স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
নিজেই ইরশাদ মুবারক করেন, “প্রত্যেক নবী
আলাইহিমুস সালাম উনাদের বেহেশতে একজন বন্ধু থাকবেন। আর বেহেশতে আমার বন্ধু হবেন
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম।” সুবহানাল্লাহ!
* উনার সুমহান শান
মুবারক হচ্ছে- তিনি হচ্ছেন ‘যুন নূরাইন’। অর্থাৎ তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি
দুই নূর মুবারক উনাদের অধিকারী অর্থাৎ তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দু’জন বানাত আলাইহিমাস সালাম উনাদের গ্রহণ
করে উনাদের খিদমত করে উক্ত লক্বব মুবারক লাভ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
* এমনকি স্বয়ং নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার প্রতি
সন্তুষ্ট হয়ে ইরশাদ মুবারক করেছেন,
“আমার
যদি একশ জনও বানাত থাকতেন আর উনাদেরকে যদি আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে নিসবাতুল আযীম মুবারক দেয়ার সুযোগ আসতো তবে আমি
সেই একশ জনকেই উনার কাছে দিয়ে দিতাম।” সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং উনার যারা বিরোধিতা করবে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষায় তারা কাট্টা
কাফির ও কাট্টা মুনাফিকের অন্তর্ভুক্ত।
***************************************************
আশ শাহীদ, আল জাওওয়াদ, যুল হিজরাতাইন, মাহবুবুল্লাহ হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার দানের
কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি বেহেশতে মেহমানদারীর আয়োজন করেন। সুবহানাল্লাহ!-
বর্ণিত রয়েছে যে, খলীফাতু
রসূলিল্লাহ হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে একবার পবিত্র
মদীনা শরীফ উনার মধ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলো। বাইতুল মালেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ
খাদ্য ছিলো না। ঠিক সেই মুহূর্তে আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন
আলাইহিস সালাম উনার একটি বাণিজ্য কাফেলা এক হাজার উট বোঝাই করা খাদ্য নিয়ে পবিত্র
মদীনা শরীফ উপস্থিত হলো। ব্যবসায়ী লোকজন আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট আসতে লাগলো খাদ্য কিনে নেয়ার জন্য। কেউ স্বাভাবিক
দামে, কেউ দ্বিগুণ দামে, কেউ তিনগুণ, চারগুণ দামেও খাদ্য কেনার জন্য প্রস্তুত। তবুও তিনি উনাদের
নিকট খাদ্য দিতে রাজি হলেন না। তিনি বললেন,
আমার
এ খাদ্য নিতে হলে কমপক্ষে দশগুণ মূল্য দিতে হবে। কারণ আপনাদের আগে একজন আমাকে
দশগুণ মূল্য দেয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছেন। তখন উনারা বললেন, আমাদের আগে কে এত অধিক মূল্যে খাদ্যদ্রব্য
খরিদ করার কথা বললেন? পবিত্র মদীনা শরীফ
উনার মধ্যে তো আমরাই বড় ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীরা আরো আলোচনা করলেন যে, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
তিনি তো পূর্বে কখনো বেশি মূল্যের জন্য দর কষাকষি করেননি। তবে আজকে কেন করছেন
ইত্যাদি। এরপর ব্যবসায়ীগণ উনারা বললেন,
ঠিক
আছে, যিনি আপনাকে বেশি মূল্য
দেন উনাকেই আপনি মাল দিয়ে দিন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস
সালাম তিনি খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে খবর
পাঠালেন যে, তিনি যেন একজন প্রতিনিধি
পাঠান, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সমস্ত খাদ্যদ্রব্য অর্থাৎ এক হাজার উট বোঝাই খাদ্য, যা সিরিয়া থেকে আনা হয়েছে, সেগুলো মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সন্তুষ্টি মুবারকের জন্য হাদিয়া করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ! তখন খলীফাতু রসূলিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে প্রতিনিধি পাঠানো হলে সাইয়্যিদুনা
হযরত যুননূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার সমস্ত খাদ্যগুলো খলীফা উনার প্রতিনিধিকে
বুঝিয়ে দেন, তখন খলীফা উনার তরফ থেকে
সমস্ত খাদ্যগুলো পবিত্র মদীনা শরীফ-এ বণ্টন করে দেয়া হয় এবং তাতে দুর্ভিক্ষ দূর
হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি যেদিন এই দান
করলেন সেই রাতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
স্বপ্নে দেখতে পেলেন যে, “মহান আল্লাহ পাক
উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি সবুজ রং বিশিষ্ট খুব দামি পোশাক পরিধান করতঃ বোরাকে আরোহণ করে খুব
দ্রুত কোথাও যাচ্ছেন। এটা দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ,
ইয়া
হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কোথায় যাচ্ছেন? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন,
আপনি
কি জানেন না, আজ আমীরুল
মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন
আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফবাসীকে এক হাজার উট বোঝাই খাদ্য যে হাদিয়া
করেছেন; যার কারণে পবিত্র মদীনা
শরীফ উনার দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে গেছে?
তাই
উনার হাদিয়ায় সন্তুষ্ট হয়ে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি আজকে বেহেশ্তে মেহমানদারীর
ব্যবস্থা করেছেন। আমি সেই মেহমানদারীতে শরীক হওয়ার জন্য যাচ্ছি।” সুবহানাল্লাহ!
আছ ছালিহ, নাশিরুল কুরআন, খলীফায়ে ছালিছ, খলীফাতুল মুসলিমীন,
আমিরুল
মু’মিনীন হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার কিছু নছীহত মুবারক-
(১) চাকচিক্য
পোশাকের লোভ যাদের অন্তরে, তাদের কাফনের কথা
স্মরণ করা উচিত। জাঁকজমক বাড়ির আকাঙ্খা যাদের অন্তরে, তাদের উচিত কবরের ছোট্ট গর্তটির কথা স্মরণ
করা। যারা সবসময় সুস্বাদু খাবারের লোভ করে তাদের কর্তব্য হচ্ছে- নিজের লাশটি যে
শেষ পর্যন্ত কীটের খোরাক হবে তা স্মরণ করা।
(২) যার হাতে
অন্যের নিন্দাবাদ করার মতো পর্যাপ্ত সময় থাকে, তার চাইতে হতভাগা আর কেউই হতে পারে না।
(৩) বছরান্তেও যে
ব্যক্তি দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হয় না,
তার
চিন্তা করা উচিত যে, মহান আল্লাহ পাক
তিনি তার উপর সন্তুষ্ট কিনা।
(৪) যে ব্যক্তি
চোখের ভাষা বুঝে না, তার সামনে মুখ
খোলা নিজেকে লাঞ্ছিত করার নামান্তর।
৫) তরবারির আঘাত মানুষের শরীর আহত করে,
কিন্তু
কটু কথা দ্বারা মানুষের অন্তর রক্তাক্ত হয়।
(৬) মু’মিন বান্দার
নিজের ঘর যদি, তার যবান, বদনজর ও লজ্জাস্থান নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যম
হয়, তবে সেটাই তার জন্য
সর্বোত্তম ইবাদতগাহে পরিণত হয়ে যায়।
(৭) দারিদ্র্য কোনো
মুসলমানকে বেইজ্জত করতে পারে না। মুসলমান যখন দ্বীন থেকে দূরে সরতে থাকে, তখনই পদে পদে বেইজ্জতির সম্মুখীন হয়।
(৮) গুনাহ কোনো না
কোনোভাবে মনের শান্তি বিনষ্ট করে।
********************************************************
সত্যিকারের মুসলমান উনাদের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা উনার
মুবারক নিয়ামতই যথেষ্ট
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র
যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ১৮ তারিখ শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনার শাসনকালে
নীল ভূমধ্যসাগর তীরের ‘তারাবেলাস’ নগরী মুসলমানদের করতলগত হয়। পরাক্রমশালী কাফির
রাজা জার্জিসের প্রধান নগরী ছিল এ এলাকা।
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনাকে সেনাপতি করে রাজা জার্জিসের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে পাঠান। এই পরাক্রমশালী
রাজা ১ লক্ষ ২০ হাজার সৈন্য নিয়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবন সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার নেতৃত্বাধীন মুসলিম বাহিনীর অগ্রাভিযানের পথ রোধ করে দাঁড়ালো। স্বয়ং
রাজা জার্জিস তার বাহিনী পরিচালনা করছিল। পাশে রয়েছে তার মেয়ে। অত্যন্ত খুবছুরত
ছিলো তার সে মেয়ে।
জিহাদ শুরু হলো। জার্জিস মনে করেছিল তার দুর্ধর্ষ বাহিনী এবার মুসলিম বাহিনীকে
উচিত শিক্ষা দেবে। কিন্তু তা হলো না। মুসলিম বাহিনীর পাল্টা আঘাতে জার্জিস বাহিনীর
ব্যুহ ভেঙ্গে পড়লো। উপায়ান্তর না দেখে সে সেনা সদস্যদের উৎসাহিত করার জন্য ঘোষণা করলো, “যে বীর পুরুষ মুসলিম সেনাপতি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সা’দ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছিন্ন শির এনে দিতে পারবে, আমার কুমারী কন্যাকে তার হাতে সমর্পণ করবো।”
জার্জিসের এই ঘোষণা তার সেনাবাহিনীর মধ্যে উৎসাহের এক তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি করলো তাদের আক্রমণ ও সমাবেশে নতুন উদ্যোগ ও নতুন
প্রাণাবেগ পরিলক্ষিত হলো। জার্জিসের সুন্দরী কন্যা প্রাপ্তির কামনায় তারা যেন
মরিয়া হয়ে উঠলো। তাদের উন্মাদ আক্রমণে মুসলিম রক্ষা ব্যুহে ফাটল দেখা দিলো। নূরে
মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একজন ছাহাবী
হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও সে যুদ্ধে শরীক ছিলেন।
তিনি সেনাপতি হযরত আব্দুল্লাহ বিন সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে
পরামর্শ দিলেন, “আপনিও ঘোষণা করুন, যে তারাবেলাসের শাসনকর্তা জার্জিসের ছিন্ন
মাথা এনে দিতে পারবে, তাকে জার্জিস
দুহিতাসহ এক হাজার দিনার বখশিশ দেয়া হবে।” হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার পরামর্শ অনুসারে সেনাপতি হযরত ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই
কথাই ঘোষণা করে দিলেন।
তারাবেলাসের প্রান্তরে ঘোরতর জিহাদ সংঘটিত হলো। যুদ্ধে জার্জিস পরাজিত হলো।
তার কাটা শিরসহ জার্জিস কন্যাকে বন্দি করে মুসলিম শিবিরে নিয়ে আসা হলো। কিন্তু এই
অসীম সাহসিকতার কাজ কে করলেন? এই বীরত্বের কাজ
কার দ্বারা সাধিত হলো? জিহাদের পর মুসলিম
শিবিরে সভা আহূত হলো। হাজির করা হলো জার্জিস-দুহিতাকে। সেনাপতি হযরত ইবনে সা’দ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জিজ্ঞেস করলেন,
“আপনাদের
মধ্যে যিনি জার্জিসকে নিহত করেছেন,
তিনি
আসুন । আমার প্রতিশ্রুত উপহার উনার হাতে তুলে দিচ্ছি।”
কিন্তু গোটা মুসলিম বাহিনী নীরব নিস্তব্ধ। কেউ কথা বললেন না, কেউ দাবি নিয়ে এগুলেন না। সেনাপতি হযরত সা’দ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বারবার আহ্বান জানিয়েও ব্যর্থ হলেন। এই অভূতপূর্ব
ব্যাপার দেখে বিস্ময়ে হতবাক হলেন জার্জিস দুহিতা। তিনি দেখতে পাচ্ছেন তার পিতৃহন্তাকে।
কিন্তু তিনি দাবি নিয়ে আসছেন না কেন?
টাকার
লোভ, সুন্দরী কুমারীর মোহ তিনি
উপেক্ষা করছেন? এত বড় স্বার্থকে
উপেক্ষা করতে পারে জগতের ইতিহাসে এমন মহান যোদ্ধা-জাতির নাম তো কখনো শুনেননি তিনি
। পিতৃহত্যার প্রতি তার যে ক্রোধ ও ঘৃণা ছিল,
তা
যেন মুহূর্তে কোথায় অন্তর্হিত হয়ে গেল। অপরিচিত এক অনুরাগ এসে সেখানে স্থান করে
নিলো।
অবশেষে সেনাপতির আদেশে জার্জিস দুহিতাই হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনাকে দেখিয়ে দিলেন। বললেন, “ইনিই আমার পিতাকে
হত্যা করেছেন, ইনিই আপনার
জিজ্ঞাসিত মহান বীর পুরুষ।” সেনাপতি হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত
যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে অনুরোধ করলেন ঘোষিত উপহার গ্রহণ করার জন্য।
হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “জাগতিক কোনো লাভের আশায় আমি জিহাদ করিনি। যদি
কোনো পুরস্কার আমার প্রাপ্য হয় তাহলে আমাকে পুরস্কৃত করার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা
তিনিই যথেষ্ট ।” সুবহানাল্লাহ! (সূত্র: আমরা সেই জাতি)
-*****************************************************
তৃতীয় খলীফা
হযরত গনী আলাইহিস সালাম
আমীরুল মু’মিনীন,
তৃতীয় খলীফা, খলীফাতুল্লাহ
সহসা মকবুলীন।
তিনি মহামতী ইসলামী বাতি
রসূলী যুন নূরাইন,
তিনি ফক্বীহুদ্দীন ইনছাফে আসীন
ইমামুল মুসলিমীন।
তিনিই প্রথম করেন হিজরত
আন নূরুছ ছানীয়াসহ সুমহান,
করেন প্রচার আবিসিনিয়ার প্রতি প্রান্তরে
ইসলামী আহবান।
বন ও পাহাড় গনগাঁও জুড়ে
কালিমার আওয়াজ শুনে,
হলো মুসলিম হাজার হাজার
দাওয়াতের মহাগুণে।
সর্ব জাহান ব্যাপিয়া উনার
মুবারক খিলাফত,
কায়িম রহিলো বারোটি বছর
গৌরবে শরাফত।
*************************************
যুন নূরাইনী খাজিনা
ওরে সালিকীন কোথা আশিকীন
শোনো হে মুসলিমীন,
যুন নূরাইনী খাজিনা লভিতে
বুঝে লও সমীচীন।
গনীয়ে আ’যম রহমে আলম
খলীফায়ে ছালিহীন,
তিনি ভাগ্যবান নূরে নূরীয়ান
বেমিছাল কামিলীন।
সেই মুবারক শাহী তাবারুক
যামানার নূর গনী,
রাজারবাগ উদ্যান তিনি তাশরীফান
সুন্নতী মহাধনী।
তিনি মুর্শিদ শোনো হে আবিদ
ইয়াক্বীনী কর্ণ খুলে,
সেই মুর্শিদী দর্শনাদিই
হৃদয়ে রাখিও তুলে।
যতœ করিও আমলে বাড়িও
অবহেলা দাও ছেড়ে,
রতœ বুঝিও স্মরণে যুঝিও
নইলে রহিবে ফেরে।
**************************************
‘দান করলে সম্পদ
কমে না’ এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পরিপূর্ণ মিছদাক হলেন আল মুতাছদ্দিক্ব আল
আউওয়াল, খাইরি উম্মাতি, আর রাশিদ, আছ ছাদিক, খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মু’মিনীন
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি-
একবার আখিরী রসূল, নুরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে উনার সম্মানিত
দামাদ আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি এসে আরজি করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম; আমাকে আমার সম্পদ কমে
যাওয়ার ব্যবস্থা দান করুন।’ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একথা শুনে আশ্চর্য প্রকাশ করলেন। এবং বললেন, কী ব্যাপার হে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম, লোকজন ধন-সম্পদ বাড়াতে চায়। আর আপনি সম্পদ কমে
যাওয়ার জন্য দোয়া মুবারক চাইছেন। এতে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
তিনি বললেন, অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অনেক নফল ইবাদত করেন। বেশি বেশি পবিত্র
কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করেন। কিন্তু আমার মনে হয় আমি বেশি সম্পদের হিসাবের কারণে
ততটুকু করতে পারি না।
তখনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি এসে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে বললেন, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
উনার সম্পদ কমানোর ব্যবস্থা মহান আল্লাহ পাক তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন- ‘আপনি যদি আপনার সম্পদ কমাতে
চান, তাহলে আপনি যেন মহান
আল্লাহ পাক উনার পথে দান কমিয়ে দেন।’
একথা মুবারক শুনে আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
তিনি বললেন, এটা কিভাবে সম্ভব যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে সম্পদ দান করবেন, আর আমি উনার পথে খরচ করবো না? তখন আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন- ‘এটাও কি করে সম্ভব যে, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পথে দান করবেন অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্পদ বাড়িয়ে দিবেন না। সুবহানাল্লাহ!
*********************************************
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি যে কাজই করেন না কেনো, কোনো কিছুই উনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”-
উনার নাম মুবারক উছমান। কুনিয়াত আবূ আমর। লক্বব মুবারক যুন্ নূরাইন। তিনি আমুল
ফিলের ৬ বৎসর পর বিলাদতী শান মুবারক
প্রকাশ করেন। তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার ৬ বছরের ছোট ছিলেন। তিনি অত্যন্ত লজ্জাশীল ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন
সম্পদশালী ব্যবসায়ী। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অল্প কিছু জ্ঞানী মানুষের মাঝে তিনি
ছিলেন একজন। তখন কুরাইশ বংশে যতজন জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন উনাদের মধ্যে হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনিও একজন ছিলেন। তিনি অত্যন্ত দানশীল ছিলেন। তিনি
জাহিলিয়াতের যুগেও অন্যায় অবিচারকে প্রশ্রয় দিতেন না। তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম
গ্রহণ করেন আমীরুল মু’মিনীন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার দাওয়াতে।
পূর্ব থেকে উনার সাথে আমীরুল মু’মিনীন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার
উত্তম সম্পর্ক ছিল।
‘উসুদুল গাবা’ নামক
গ্রন্থে বলা হয়েছে, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
তিনি বলেন, “আমি পবিত্র দ্বীন ইসলাম
গ্রহণকারীদের মধ্যে চতুর্থ।” তিনি প্রথম দিকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে আজীবন
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার খিদমত করেছেন। তিনি সমস্ত অর্থ-সম্পদ ব্যয় করেছেন মহান
আল্লাহ তায়ালা উনার পথে এবং আখিরী রসূল,
নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক উনার উদ্দেশ্যে।
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি উনার প্রতি এতো সন্তুষ্ট ছিলেন যে,
তিনি
উনার সাথে নিজ দুই সম্মানিতা বানাত আলাইহিমাস সালাম উনাদের বিবাহ মুবারক দেন। যার
কারণে তিনি যুন্ নূরাইন তথা দুই মহান নূরের অধিকারী হিসেবে প্রসিদ্ধ হন।
সুবহানাল্লাহ।
তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সাথে প্রায় সবগুলো জিহাদে অংশগ্রহণ করেন। তিনি তাবুকের যুদ্ধে
অসামান্য অবদান রাখেন। তিনি মোট ব্যয়ের এক তৃতীয়াংশ এ জিহাদে খরচ করেন। এতে তিনি
১০০০ উট এবং ৭০টি ঘোড়া হাদিয়া করেন। তিনি এক হাজার দিনার আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সামনে এনে হাজির করেন। এতে আখিরী রসূল,
নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূল পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এতো খুশি হন যে, তিনি উনার জন্য বিশেষভাবে দোয়া করেন, “এখন থেকে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
তিনি যে কাজই করেন না কেনো, কোনো কিছুই উনার
কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”
তিনি ইসলামী জগতের তৃতীয় খলীফা ছিলেন এবং ‘আশারাতুম্ মুবাশ্শারাহ’ তথা
জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ১০ জন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের মধ্যে
অন্যতম ছিলেন।
ষষ্ঠ হিজরীতে হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে জীবনের ঝুঁকি
নিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাওয়াত নিয়ে হাজির হন। পবিত্র মক্কা শরীফ
উনার কাফিররা উনাকে প্রস্তাব দেয় যে,
ইচ্ছা
করলে তিনি নিজে তাওয়াফ করতে পারেন। কিন্তু দৃঢ়চেতা আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
তিনি ঘোষণা করেন যে তিনি কিছুতেই নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগে তাওয়াফ করতে পারেন না। এতে মুশরিকরা
ক্ষেপে যায়। তারা উনাকে তিনদিন আটকে রাখে। তখন কাফিররা মুসলমানদের কাছে সংবাদ
পৌঁছায় যে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি শহীদ হয়েছেন। এই সংবাদে আছহাবে
রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা বাইয়াতে রিদ্বওয়ান গ্রহণ করেন। উনারা
শপথ নেন যে, উনারা ওই পর্যন্ত জিহাদ
করবেন যতক্ষণ উনারা জীবিত থাকেন। মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি হুদাইবিয়ার ঘটনাকে
ফাতহুম মুবীন তথা প্রকাশ্য বিজয় বলে ঘোষণা করেন। এই বাইয়াতে রিদওয়ানে হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার জীবনের সবচেয়ে বড় তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ছিল- স্বয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
নিজের হাত মুবারককে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার হাত হিসেবে হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার পক্ষে বাইয়াত গ্রহণ করেন।
তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার তৃতীয় খলীফা ছিলেন। যখন হযরত ফারূকে আযম
আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক গ্রহণ করেন, তখন তিনি খলীফা মনোনীত হন এবং শেষ পর্যন্ত খিলাফত
পরিচালনা করেন। তিনি পবিত্র যুল্হিজ্জাহ মাস উনার ১৮ তারিখ কাবলাল জুমুয়াহ
শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। (দলীল: তারিখ গ্রন্থ সমূহ)
*************************************************************
খলীফায়ে ছালিছ আমীরুল মু’মিনীন,
সাইয়্যিদুনা
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার দানশীলতা-
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে: একদা আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার দরবার শরীফ এসে অনুরোধ করে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ,
ইয়া
হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার কাছে যদি কোনো গরিব ছাহাবী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আসেন সাহায্যের জন্য তাহলে আপনি উনাদেরকে দয়া
করে আমার কাছে প্রেরণ করলে আমি উনাদের খিদমত করবো।
কিছুদিন পরে একজন দরিদ্র ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মেয়ের বিয়েতে
সাহায্যের জন্য আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে হাজির হয়ে সাহায্য চাইলেন।
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি সেই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
উনার নিকট প্রেরণ করলেন।
সেই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার দরবার শরীফ গিয়ে দেখতে পেলেন
যে, হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস
সালাম তিনি উনার একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাত্র এক পয়সার হিসাব না মিলানোর কারণে
বারবার শুরু থেকে হিসাব করাচ্ছেন। এটা দেখে তিনি ভাবলেন, যিনি মাত্র এক পয়সার হিসাব ছাড়তে পারেন না, উনি আর আমাকে কি সাহায্য করবেন!
তারপরেও যেহেতু স্বয়ং আখিরী রসূল,
নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রেরণ করেছেন তাই তিনি একবারের জন্য বিষয়টি
জানাতে উনার সামনে গেলেন। হযরত যুন নূরাইন আলাইহি সালাম তিনি সেই ছাহাবী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বারবার আসা-যাওয়া করতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি কিছু বলতে চাচ্ছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, স্বয়ং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
আপনার কাছে আমাকে প্রেরণ করেছেন। আমার মেয়ের বিয়েতে কিছু সাহায্য প্রয়োজন।
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বললেন,
আপনি
অমুক স্থানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন। কিছুক্ষণের মধ্যে ওই রাস্তা দিয়ে অমুক দেশ থেকে
আমার একটি বাণিজ্যিক কাফিলা আসবে এক হাজার উট পরিপূর্ণ সম্পদ তাতে রয়েছে। সেখান
থেকে যেটা আপনার পছন্দ হয় সেই উটটি তার সম্পদসহ আপনি নিয়ে যান।
সত্যিই তিনি সেখানে গিয়ে দেখতে পেলেন বিশাল এক বাণিজ্যিক কাফিলা এসেছে।
প্রতিটি উটের পিঠেই অনেক সম্পদ রয়েছে। তিনি সমস্ত উট দেখে একবারে সামনের উটটিই
পছন্দ করলেন। উটের নিয়ম অনুযায়ী সামনের উট যেদিকে যায়, পিছনেরগুলিও সেদিকে চলে যায়। সামনেরটি দিয়ে
দিলে সম্পূর্ণ কাফিলার সমস্ত উট ও সম্পদসহ উনার কাছে চলে যাবে। তাই কাফিলার সর্দার
উনাকে সামনেরটি বাদ দিয়ে অন্য যে কোনো একটি পছন্দ করার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু গরিব
ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অন্য কোনোটিই নিতে নারাজ। শেষপর্যন্ত উভয়ে
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সামনে গিয়ে হাজির হয়ে বিষয়টি জানালেন। হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বললেন,
হে
কাফিলার সর্দার! আপনি কি জানেন, উনাকে আমার কাছে
কে প্রেরণ করেছেন? স্বয়ং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
উনাকে আমার কাছে সাহায্যের জন্য প্রেরণ করেছেন। কাজেই তিনি যেটা চান, যেভাবে চান সেটাই সেভাবে উনাকে দিয়ে দিন।
সবগুলি উট সম্পদসহ উনার সাথে চলে গেলেও উনাকে সেভাবেই দিয়ে দিন। মনে রাখবেন, উনি যদি স্বয়ং আমাকেসহ চান তবে খোদ আমাকেও
উনার সাথে চলে যেতে হবে। কারণ, উনাকে স্বয়ং আখিরী
রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি নিজে আমার কাছে সাহায্যের জন্য প্রেরণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এ মুবারক ঘটনা থেকে আমাদের মুবারক সুন্নত পালন ও দান করার সর্বোত্তম আদব
শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকেও অনুরূপভাবে গোলামী করার ও
দান করার তাওফীক দান করুন। আমীন!
শানে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
রসূলী খলীফা হাবীবে খোদা
খিদমতে ছিলেন সদা-সর্বদা
আহালি নিসবতে বেমেছাল নজির
নিসবত দানে করুন ফানা-বাক্বা
আসসালাম আসসালাম জামালুল আফওয়ান।
আসসালাম আসসালাম হামিলুল ক্বিবলাতাইন।
১৮ই যিলহজ্জ মুবারক বিছাল
দো’জাহানে ঝরে রহমত বিপুল
ছহিবে সাখাওয়াত শানে মহীয়ান
সাখাওয়াতি হিস্সা দানে গোলাম বানান
আসসালাম আসসালাম সাইয়্যিদুল আছবার
আসসালাম আসসালাম ক্বয়িদুল আকবার।
সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহজী ক্বিবলা
জারি করিলেন ছিফত-ছানা
নকশায়ে যুন নূরাইন শাহদামাদ ছানী
হাক্বীক্বী খিদমতে রাখুন দায়িমী
আসসালাম আসসালাম তাজিরুল আ’যম
আসসালাম আসসালাম হাদিউল উমাম।
***************************************************
আমীরুল মু’মিনীন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ
প্রসঙ্গে-
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খালা সা’দাহ
নাম্মী এক মহিলা তিনি হঠাৎ একদিন উনার বাড়িতে এসে উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম! আপনি জেনে রাখুন,
আমাদের
মাঝে যে নবী উনার আবির্ভাব ঘটেছে তিনি হলেন সব নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের
সাইয়্যিদ। মহান প্রতিপালক আল্লাহ পাক তিনিই উনাকে আমাদের মাঝে প্রেরণ করেছেন। সাথে
করে নিয়ে এসেছেন পবিত্র কুরআন শরীফ। আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী যুবক। আপনার
উচিত- সেই নবী উনার প্রতি ঈমান এনে উনার অনুসরণ করা। প্রচলিত প্রতিমা পূজার
মোহমুক্ত হয়ে সত্য ও সঠিক পথের আশ্রয় নেয়া।
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি নিজেই বলেন, আমি আমার খালাআম্মা উনার কথাগুলোর কোনো তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারলাম না। তাই উনাকে বললাম, দয়া করে আপনার কথাগুলোর মর্ম খুলে বলুন। তখন
তিনি পুনরায় বললেন- শুনুন, বনী হাশিম গোত্রের
হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ
পাক উনার প্রেরিত রসূল। তিনি মানুষের মুক্তির জন্য ধরায় এসেছেন। সাথে করে নিয়ে
এসেছেন পবিত্র গ্রন্থ কুরআন শরীফ। যার মাধ্যমে তিনি মানব সমাজকে সত্য পথের দিকে
আহ্বান জানাচ্ছেন। আমীরুল মু’মিনীন,
সাইয়্যিদুনা
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার খালাআম্মা উনার কথাগুলো ভালোভাবে চিন্তা
করতে লাগলেন।
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার পরম বিশ্বস্ত
বন্ধু ছিলেন আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম।
তিনি উনার বাড়িতে প্রায়শঃ যাতায়াত করতেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উনার সাথে আলোচনা
করতেন এবং কোনো ব্যাপারে জটিল সমস্যা দেখা দিলে তা সমাধানের জন্য উনার কাছ থেকে
পরামর্শ নিতেন।
এবারও তিনি উনার খালাআম্মা উনার কথাগুলো শোনার পর তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য
উনার কাছে গিয়ে উপস্থিত হলেন। উনার চেহারা মুবারকে ছিলো অত্যধিক উদ্বিগ্নতার ছাপ।
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন তৎকালীন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার এক বিশেষ মনস্তত্ত্ব বিশারদ
ব্যক্তিত্ব। সুতরাং আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
তিনি উনার কাছে কিছু বলার পূর্বেই তিনি উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম! আপনাকে তো আমি একজন বিশেষ সুবিবেচক এবং জ্ঞানসম্পন্ন যুবক
বলেই মনে করি। অথচ আশ্চর্য হচ্ছি এ অবস্থা দেখে যে, আপনি এখনো হক্ব ও নাহক্বের পার্থক্যটা বিচার করতে পারলেন
না। দেখুন, আমাদের সমাজ নিজেদের হাতে
পাথরের মূর্তি তৈরি করে তারই পূজা করে চলছে। আপনিই বলুন না, এগুলোর কি কোনো শক্তি-সামর্থ্য, অনুভূতি,
শ্রুতিশক্তি
বা দৃষ্টিশক্তি আছে? এগুলোর কি কারো
উপকার কিংবা অপকার করার সামর্থ্য আছে?
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সহজ-সরল
কথাগুলো আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার অন্তরে গিয়ে পৌঁছছিলো। যেন উনার অন্তর থেকে ধ্বনিত
হলো- সত্যিই তো এগুলো প্রস্তর মূর্তি। এগুলোকে পূজা করা নিতান্ত নির্বোধ এবং
মূর্খদেরই কাজ। অতএব, উনার জবান থেকে
বের হলো- ভাই, আমীরুল মু’মিনীন
সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম! আপনার কথা সম্পূর্ণই সঠিক। আমরা
যা করে চলেছি তা নিছক ভ্রান্তিরই নামান্তর। উনার কথা শুনে আমীরুল মু’মিনীন
সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, যদি তাই মনে করেন, তাহলে এক্ষুনি চলুন, আমরা আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
নিকট গমন করি। অতঃপর উনারা দু’জন আখিরী রসূল,
নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ গিয়ে উপস্থিত হলেন। অন্য এক
বর্ণনায় আছে, যখন উনারা দু’জন
বিষয়টি আলোচনা করছিলেন সেই মুহূর্তে স্বয়ং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
এসে উনাদের সামনে হাজির হলেন। তিনি আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন
আলাইহিস সালাম উনাকে লক্ষ্য করে বললেন,
হে
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি
আপনাকে অনন্ত জীবনের ভালাই এবং সুখ সমৃদ্ধির পথে দাওয়াত জানাচ্ছেন আপনি সে দাওয়াত
কবুল করুন, আর মনে প্রাণে বিশ্বাস
করুন- আমি মহান প্রতিপালক আল্লাহ পাক উনার প্রেরিত রসূল। আপনাদের প্রতি ও জগতের
মানব সমাজের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে এই দাওয়াত নিয়ে এসেছি।
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি নিজেই বলেন,
আখিরী
রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার এই কথা মুবারক আমার অন্তরে এমন দাগ কেটেছিলো যে, মুহূর্তেই আমার মনের সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও
কালিমা দূর হয়ে গেলো এবং সত্যের নির্মল আলো যেন আমার আঁধার হৃদয় এক পলকেই এক
অপূর্ব আলোক রশ্মি দ্বারা উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। সাথে সাথে আমি উচ্চ শব্দে ঘোষণা
করলাম, “আশহাদু আল লা-ইলাহা
ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রসূলুহূ।” অর্থাৎ আমি
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক
তিনি ব্যতীত কোনো মা’বুদ নেই। তিনি এক,
একক
এবং অংশবিহীন। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,
আখিরী
রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রেরিত রসূল।
মোটকথা, তিনি পবিত্র ঈমান উনার
কালিমা শরীফ পড়ে মুসলমান হয়ে গেলেন এবং সম্মানিত ছাহাবী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন
করলেন। সুবহানাল্লাহ!
*****************************************************
যুল হিজরতাইন, খলীফায়ে ছালিছ, জামিউল কুরআন,
খলীফাতুল মুসলিমীন, আমিরুল মু’মিনীন, ক্বাতিবে ওহী
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সুমহান ফাযায়িল-ফযীলত-
উনার মূল নাম মুবারক- ‘উছমান’ আলাইহিস সালাম। কুনিয়াত (ডাক নাম বা উপনাম)
মুবারক’ আবু আমর, আবু আবদিল্লাহ, আবু লায়লা’ আলাইহিস সালাম এবং সর্বাধিক পরিচিত
লকব মুবারক ‘যুন নূরাইন’ ও ‘গনি’ আলাইহিস সালাম। পিতা- আফফান, মাতা- আরওরা বিনতু কুরাইয। কুরাইশ বংশের
উমাইয়্যা গোত্রের সন্তান। উনার পূর্বপুরুষ ‘আবদে মান্নাফে’ গিয়ে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
নসব মুবারক উনার সাথে মিলিত হয়েছে।
তিনি হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের তৃতীয় খলীফা তথা খলীফায়ে
ছালিছ। তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন হস্তী বছরের ৬ বছর পরে ৫৭৬
ঈসায়ী সনে। এ হিসাবে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার থেকে তিনি ছয় বছর পরে দুনিয়াতে তাশরীফ মুবরক গ্রহণ করেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন মধ্যমাকৃতির সুঠাম
দেহের অধিকারী। উনার ছিল ঘন দাড়ি মুবারক;
গাত্র
বর্ণ ছিল উজ্জ্বল ফর্সা; বুক ও কোমর মুবারক
ছিল চওড়া; ছিল ঘন এবং কান পর্যন্ত
ঝোলানো বাবরী চুল মুবারক; পায়ের নালা মুবারক
ছিল মোটা; ছিল পশম ভরা লম্বা বাহু
মুবারক এবং মুক্তাখচিত দাঁত মুবারক।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মান বর্ণিত রয়েছে। তন্মধ্যে এখানে
সামান্য কিছু উল্লেখ করা হলো: তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ
হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খুব প্রিয় ছিলেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
নিকটতম ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম একজন। তিনি বারবার জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন।
সুবহানাল্লাহ!
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “প্রত্যেক হযরত
নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনার জান্নাতে একজন সঙ্গী আছেন, আর আমার সঙ্গী হচ্ছেন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস
সালাম।” তিনি কাতিবে ওহী ছিলেন। তিনি পূর্ববর্তী দুইজন সম্মানিত খলীফা আলাইহিমাস
সালাম উনাদের সম্মানিত উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি প্রতি বছর পবিত্র হজ্জ করতেন। তবে
পবিত্র শাহাদত মুবারক গ্রহণ করার বছর তিনি পবিত্র হজ্জ করতে পারেননি। প্রায় সারা
বছর রোযা রাখতেন এবং সারারাত ইবাদত-বন্দেগী করতেন। এক রাকায়াত নামাযে পবিত্র কুরআন
শরীফ একবার খতম করতেন। তিনি কবরের পাশ দিয়ে গেলে প্রচুর কাঁদতেন এবং দাড়ি মুবারক
ভিজে যেত। তিনি রাতের বেলা গোলামদের খিদমত নিতেন না।
তিনি ছিলেন অত্যন্ত লাজুক। আত্মীয়-সঙ্গীদের প্রতি ছিলেন পরম দয়ার্দ্র। তিনি
সর্বপ্রথম তারাবীহ নামাযে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করার সন্নত বা পদ্ধতি চালু করেন।
মিম্বর শরীফ উনার ২য় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ১ম খুতবা এবং ১ম সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ২য় খুতবা
প্রদানের সুন্নত মুবারক জারি করেন এবং ৩০ পারা পবিত্র কুরআন শরীফ নতুনভাবে সঙ্কলন
করেন এবং বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নর উনাদের কাছে প্রেরণ করেন। যার জন্য উনাকে
’জামিউল কুরআন’ বলা হয়।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন কুরাইশ বংশের অন্যতম
কুস্তিবিদ্যা বিশারদ। কুরাইশদের প্রাচীন ইতিহাসেও ছিল উনার গভীর ইলম মুবারক। উনার
প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, সৌজন্যতা, সদয়তা ইত্যাদি মহান গুণাবলীর জন্য সবসময় উনার পাশে মানুষের
ভীড় জমে থাকতো এবং তিনি হাত খুলে তাদের উপকার করতেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে জাহিলী যুগের কোনো অপকর্ম
স্পর্শ করতে পারেনি। লজ্জা ও প্রখর আত্মমর্যাদাবোধ ছিলো উনার সুমহান চরিত্রের
প্রধান বৈশিষ্ট্য। যুবক বয়স মুবারকে তিনি অন্যান্য অভিজাত কুরাইশদের মতো
ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন। সীমাহীন সততা ও বিশ্বস্ততার গুণে ব্যবসায় অসাধারণ
সাফল্য লাভ করেন। পবিত্র মক্কা শরীফ শহরের একজন বিশিষ্ট ধনী ব্যবসায়ী হিসেবে ‘গনী’
লক্বব মুবারক-এ প্রসিদ্ধি লাভ করেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ‘আস-সাবেকুনাল আউওয়ালুন’
(প্রথম পর্বের ইসলাম গ্রহণকারী) এবং ‘আশারায়ে মুবাশশারা’ উনাদের অন্তর্ভুক্ত
ছিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে গভীর সম্পর্ক
ছিল এবং উনার দাওয়াতেই তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। ফলে উনার খালা উনাকে
অভিনন্দন জানিয়ে ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করেন। এরপর আজীবন জান-মাল দ্বারা আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
মুবারক খিদমতে নিয়োজিত ছিলেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার বোন হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহাসহ বৈপিত্রীয় ভাই-বোন হযরত ওয়ালিদ, হযরত খালিদ,
হযরত
আম্মারা, হযরত উম্মু কুলসুম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই মুসলমান হয়েছিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার অন্য ভাই-বোন উনারা পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের সময়
পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন।
পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর কুরাইশদের একজন সম্মানিত ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও
উনাকে কাফিরদর দ্বারা সীমাহীন কষ্ট পেতে হয়। উনার চাচা হাকাম ইবন আবিল আস সে উনাকে
রশি দিয়ে বেঁধে বেদম প্রহার করে। সে বলতো,
একটা
নতুন ধর্ম গ্রহণ করে আপনি আমাদের বাপ-দাদার মুখে কালি দিয়েছেন। এ ধর্ম ত্যাগ না
করা পর্যন্ত আপনাকে ছাড়া হবে না। এতে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
উনার ঈমানী দৃঢ়তা আরো শক্তভাবে প্রকাশ হয়। তিনি বলতেন: তোমাদের যা ইচ্ছে করো, তবুও এ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম আমি কখনো ছাড়তে
পারবো না।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণের
পর আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি নিজ বানাত সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত
রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনার সাথে শাদী মুবারক দেন। হিজরী দ্বিতীয় সনে পবিত্র মদীনা
শরীফ শহরে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতু রসূলিল্লাহ আছ
ছানিয়া আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত প্রকাশের পঞ্চম বছরে মুশরিকদের নির্মম অত্যাচারে অতিষ্ঠ
হয়ে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে মুসলমগণ উনাদের প্রথম যে দলটি হাবশায় (ইথিওপিয়া) হিজরত
মুবারক করেছিলেন উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ও
উনার সম্মানিতা আহলিয়া সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতু
রসূলিল্লাহ আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম তিনিও ছিলেন। অর্থাৎ হযরত লূত আলাইহিস সালাম
উনার পর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার
রাস্তায় পরিবারসহ প্রথম হিজরতকারী। সুবহানাল্লাহ!
হাবশায় (আবিসিনিয়ায়) আমীরুল মু’মিনীন,
সাইয়্যিদুনা
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার মুবারক হিজরতের ফলাফল সুদূরপ্রসারী। উনাদের
হিজরতের দরুন আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাশী উনাদের মুবারক ছোহবত লাভে ধন্য হন। উহার
সুবাদেই তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। উনাদের মুবারক পৃষ্ঠপোষকতায় সেখানে
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ব্যাপক প্রচার-প্রসার ঘটে।
হাবশায় অবস্থানকালে উনাদের আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন এবং এ আওলাদ উনার নাম
অনুসারে তিনি কুনিয়াত ধারণ করেন ‘আবু আবদুল্লাহ’। হিজরী ৪র্থ সনে সাইয়্যিদুনা হযরত
আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
উনাদের দাম্পত্য জীবন সুন্নতী এবং খুব সুখের ছিল। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বলাবলি করতেন- কেউ যদি সর্বোত্তম সংসার দেখতে
চায়, সে যেন সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম ও উনার আহলিয়া সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়া আলাইহাস সালাম
উনাদেরকে দেখে নেয়। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বেশ কিছু দিন হাবশায় অবস্থান
করেন। অতঃপর পবিত্র মক্কা শরীফ ফিরে আসেন। পরবর্তীতে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
পবিত্র মক্কা শরীফ হতে পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত করার পর আবার তিনিও পবিত্র মদীনা
শরীফ হিজরত করেন। এভাবে তিনি ‘যুল হিজরতাইন’ অর্থাৎ দুই হিজরতের অধিকারী হন।
একমাত্র পবিত্র বদর জিহাদ ছাড়া সমস্ত জিহাদে তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সাথে অংশগ্রহণ করেছেন এবং জিহাদের সময় অঢেল ধন-সম্পত্তি দান করে দিতেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
যখন পবিত্র বদর জিহাদে রওয়ানা হন, তখন সাইয়্যিদাতুনা
হযরত ছানিয়া আলাইহাস সালাম তিনি অসুস্থতাকে গ্রহণ করেছিলেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
মুবারক নির্দেশে তিনি নিজ আহলিয়া হযরত আহলে বাইত শরীফ উনাদের অন্যতম ব্যক্তিত্ব
সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়া আলাইহাস সালাম উনার মুবারক খিদমতের জন্য পবিত্র মদীনা
শরীফ শহরেই অবস্থান করেন। মূলত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের খিদমত
সমস্ত কিছু থেকে উত্তম এবং জিহাদও এর সমতুল্য নয়।
পবিত্র বদর জিহাদে বিজয়ের খবর যেদিন পবিত্র মদীনা শরীফ এসে পৌঁছলো সেদিনই
সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়া আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ
করেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি উনার জন্য পবিত্র বদর জিহাদে অংশগ্রহণকারীদের মতো সওয়াব ও গনীমতের
অংশ ঘোষণা করেন। এ হিসাবে পরোক্ষভাবে তিনিও বদরী ছাহাবী।
মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক নির্দেশে তৃতীয় হিজরী সনে সাইয়্যিদাতু নিসায়ি
আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু কুলসুম আলাইহাস সালাম উনার সাথে আখিরী
রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাদী মুবারক দেন। এ কারণে তিনি
‘যুন-নূরাইন’ অর্থাৎ ‘দুই নূর মুবারক উনার অধিকারী’ উপাধি লাভ করেন। কিন্তু নবম
হিজরী সনে সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছা আলাইহাস
সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি তাবুক জিহাদে এক তৃতীয়াংশ
সৈন্যের যাবতীয় খরচ বহন করেন। তিনি একাই ৯০০টি উট এবং ৫০টি ঘোড়া হাদিয়া করেন।
এছাড়া অন্যান্য জিহাদ, বিশেষ দিন (আখিরী
চাহার শোম্বাহ, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ
শরীফ ইত্যাদি), দুর্ভিক্ষের সময়সহ
অন্য যেকোনো সময় মুক্তহস্তে দান করতেন। ‘বীরে রুমা’ নামক ইহুদীদের কূপটি তিনি ক্রয়
করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসীদেরকে হাদিয়া দিয়েছিলেনে। এরকম অসংখ্য
জনকল্যাণমূলক কাজ করেছিলেন তিনি। আখিরী রসূল,
নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে মাল বোঝাই এক হাজার উটও দান করে
দিয়েছেন। কিন্তু তিনি সবসময় নিখুঁতভাবে হিসাব রাখতেন। ঝুঁকিপূর্ণ হুদাইবিয়ার দূত
হিসেবে তিনিই পবিত্র মক্কা শরীফ গমন করেন এবং উনাকে তিন দিন আটকে রাখা হয়।
পরবর্তীতে সন্ধি হয়।
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর প্রথম খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত
ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে শুনামাত্রই বাইয়াত হন এবং উনার পরবর্তী
খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে মনোনীত করে যে
অঙ্গীকারনামা মুবারক লেখা হয়, উহার লেখক ছিলেন
স্বয়ং তিনি। দ্বিতীয় খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার হাত
মুবারকে তিনিই প্রথম বাইয়াত গ্রহণ করেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক
প্রকাশ করার সময় তিনি বেশ কয়েকজনের নাম মুবারক প্রস্তাব করে গিয়েছিলেন এবং
তিনদিন-তিনরাত্রি সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। এরমধ্যে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকেই সর্বাধিক সম্মানিত এবং উপযুক্ত
হিসেবে পবিত্র মসজিদে নববী শরীফে সবার উপস্থিতিতে সংক্ষিপ্ত এক ভাষণের পর আব্দুর
রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি খলীফা হিসেবে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন এবং সকলেই
বাইয়াত গ্রহণ করেন। অতঃপর আমজনতা বাইয়াত গ্রহণ করেন। হিজরী ২৪ সনের পহেলা মুহররম
সকালে তিনি খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি খিলাফতের দায়িত্ব খুব নিষ্ঠা
এবং দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেন। কোথাও কোনো সমস্যা ছিলো না। খিলাফত বিস্তার
হয়েছিল কাবুল থেকে মরোক্ক পর্যন্ত। কিন্তু কিছু কুচক্রী ইহুদীদের সৃষ্ট ফিতনার
কারণে মুনাফিক দ্বারা আক্রান্ত হয়ে তিনি রোযা রাখা অবস্থায় পবিত্র কুরআন শরীফ
তিলাওয়াতের সময় পবিত্র শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। এ ঘটনা সংঘটিত হয় হিজরী ৩৫
সনের ১৮ই যিলহজ্জ শরীফ। দিনটি ছিল জুমুয়াবার। তিনি কয়েক দিন কম ১২ বছর খিলাফতের মহান
দায়িত্ব পালন করেন। পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী শরীফ উনার ‘হাশমে কাউয়াব’ নামক স্থানে
উনার পবিত্র রওযা শরীফ করা হয়। মাগরিব নামাযের পর দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। হযরত
যুবাইর ইবনে মুতইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার জানাযা নামায পড়ান। তবে
ইহুদী ও মুনাফিকদের বাধার কারণে লোকসংখ্যার উপস্থিতি কম ঘটে।
*******************************************************
খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মু’মিনীন
সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার নৌবাহিনী গঠন এবং
বিজিত এলাকার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা-
সময় কি আছে বর্তমান মুসলিম দেশের শাসকদের জন্য, তারা চিন্তা করবে কি তাদের অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্য কেমন ছিল, তারা শিক্ষা নেবে কী কেমন বীরত্বপূর্ণ ছিল
মুসলমান উনাদের অতীত শৌর্য, কী ন্যায়নিষ্ঠ
ছিলেন মুসলিম জাতির পূর্বপুরুষ উনারা?
আমরা
যদি একবার চোখ বুলাই তাহলে দেখতে পাবো অপরাজেয় সামরিক শক্তি, ইনসাফপূর্ণ হুকুমতব্যবস্থা, সর্বোচ্চ ইসলামী আদর্শ, ৬টি মৌলিক অধিকারের অপরিমেয় একচ্ছত্র
ভিত্তিস্থাপন ইত্যাদি। তেমনি একজন মহান শাসক ছিলেন খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মুমিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন
আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মুমিনীন
হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ২৪ হিজরী সনের ১লা মুহররম সকালে তিনি সম্মানিত
খিলাফত উনার মহান দায়িত্ব গ্রহণ করেন। উনার শাসনামলের একটি অসামান্য অবদান
নৌবাহিনী গঠন। নিম্নে সামান্য কিছু নমুনা দেয়া হলো:
খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মুমিনীন
হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার সমুদ্রপথে বিজয় সূচনার এক বেমেছাল কৃতিত্ব
রয়েছে। এই সময় মুসলমানগণ প্রায় ৫০টির মতো জিহাদে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। গ্রীসের
সাইপ্রাস আক্রমণের পূর্বে কাতিবে ওহী সাইয়্যিদুনা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি নৌবাহিনী গঠনের মুবারক নির্দেশ পান। সাইয়্যিদুনা খলীফায়ে ছালিছ
আলাইহিস সালাম উনার মুবারক নির্দেশ পেয়ে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি সারা দেশে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইসলামী আদর্শিক নৌসেনা আহ্বান করেছিলেন। তারপর
সমুদ্রযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শুরু করেন। রাজধানীতে দলে দলে সৈনিকের খাতায় নাম লেখানোর
জন্য মানুষের তোড়জোড় পড়ে গিয়েছিল। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই বিরাট শক্তিশালী নিয়মিত
নৌবাহিনী গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বিভিন্ন ইউনিটে ইউনিটে বিভক্ত করেছিলেন পৃথিবীর
সর্বশ্রেষ্ঠ নৌবাহিনীকে। এমনকি উনারা বরফের মধ্যেও যুদ্ধ জাহাজ চালাতে সক্ষম
হয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মু’মিনীন
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার ১২ বৎসরের খিলাফতকালে এই নৌবাহিনীর মাধ্যমে বিরাট বিরাট অভিযানসমূহ
পরিচালনা ও সাফল্যজনক বিজয় এত দ্রুত সম্ভব হয়েছিল যে, এর মেছাল ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া বড়ই দুষ্কর। এসব
বিজয়ের অবদানে ছিলেন তৎকালীন মুসলিম সেনাপতি
হযরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মুছান্না বিন হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু, হযরত মুয়াবিয়া
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত ওয়ালিদ ইবনে
উকবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সাঈদ ইবনে
আ’ছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত অবদুল্লাহ ইবনে
আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু হযরত কাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা। ফলে তখন ইসলামী খিলাফতের
পরিধি বহুদূর সম্প্রসারিত হয়। মুসলমান নৌবাহিনী তখন বড় বড় জিহাদে অংশ গ্রহণ করা
ছাড়াও আরব সাগর, কৃষ্ণ-সাগর ও
ভূমধ্যসাগর অভিযানে অত্যন্ত সফলতার পরিচয় দেন এবং ২৮ হিজরী সনে সাইপ্রাস ও রোড’স
দ্বীপদ্বয় বিজয় করেন। সুবহানাল্লাহ!
খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মুমিনীন
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম তিনি নৌবাহিনীকে এত উন্নতি করেছিলেন যে
৩১ হিজরী সনে রোমক সম্রাট যখন বিরাট বাহিনীর সহায়তায় সিরিয়ার উপকূল আক্রমণ করে, তখন হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা তাকে এমন
শোচনীয়ভাবে পরাজয় করেন যে, রোমকরা আর কখনো
মাথা উঁচূ করে দাঁড়াবার সাহস পায়নি। এক রকম বলতে গেলে তাদের বাহিনী সম্পূর্ণরূপে
পর্যুদস্ত ও বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল। এমনকি হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি সমুদ্রপথে এতদূর অগ্রসর হয়েছিলেন যে,
৩২
হিজরী সনে তিনি কনস্টান্টিনোপল পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেন। সুবহানাল্লাহ!
খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মুমিনীন
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাসনামলে মূলত দু’ধরনের বিজয়
অনুষ্ঠিত হয়। এক. যে সমস্ত এলাকা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত
খিলাফতকালে বিজয় হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে
রোমক ও ইরানীদের উস্কানীতে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল- খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন
আলাইহিস সালাম তিনি পুনরায় সেগুলি উদ্ধার করে শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপন করেছিলেন।
যেমন- আর্মেনিয়া, আলেকজান্দ্রিয়া, মিশর ইত্যাদি। দুই. যে সমস্ত এলাকায় যালিম
শাসকরা নির্যাতন চালাতো, শান্তি ছিল না-
সেসব এলাকা খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মু’মিনীন
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার খিলাফতকালে বিজয় করেন এবং
বেমেছাল শান্তি স্থাপন করেছিলেন; যেমন- লিবিয়া, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, জুরজান,
খুরাসান, তাবারিস্তান, সোয়াত, কাবুল, সিজিস্তান, নিশাপুর, পাকিস্তান (তখনকার
ভারতবর্ষ) ও ভারতের কিছু সমৃদ্ধ অঞ্চল ইত্যাদি।
এসব বিজয় মাত্র ছয় বৎসরেরও কম সময়ে অর্জিত
হয়। আর এখন গণতন্ত্রের রক্তচোষা শাসনব্যবস্থা মুসলমানগণ উনাদেরকে বিজয় শব্দ থেকে
গহীন অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। এই সে¦চ্ছাচারী শাসনব্যবস্থা
মুসলমানগণ উনাদেরকে গোলামিত্বের শিকল পরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন নিজেদের নাজাতের
জন্যই মুসলমানগণ উনাদেরকে এই রক্তচোষা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে ধিক্কার দিয়ে
সম্মানিত খিলাফতী শাসনব্যবস্থা জারি করার জন্য তৈরি হতে হবে। তবে মুসলমানরা শিঘ্রই
আবার পৃথিবী শাসন করতে পরবে, যদি মুসলমানরা
মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম
উনার ক্বদম তলে জমায়েত হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে সে-ই তাওফীক দান করুন।
*******************************************************
জিহাদ থেকেও বেশি ফযীলতপূর্ণ হযরত আহলে
বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের খিদমত করা-
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন, “হে আমার হাবীব
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি (উম্মতদেরকে) বলুন, আমি তোমাদের নিকট কোনো প্রতিদান চাই না। আর
তোমাদের পক্ষে তা দেয়াও সম্ভব নয়। তবে যেহেতু তোমাদেরকে ইহকাল ও পরকালে কামিয়াবী
হাছিল করতে হবে, তাই আমার নিকটজন
তথা হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের প্রতি তোমরা সদাচরণ করবে।”
(পবিত্র সূরা শূরা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশ্ববিখ্যাত ‘তাফসীরে মাযহারী শরীফ’ উনার
মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, “আমি তোমাদের নিকট
কোনো প্রতিদান চাই না, তবে তোমাদের জন্য
দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে: তোমরা আমার নিকটাত্মীয় হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস
সালাম ও বংশধরগণ উনাদের (যথাযথ সম্মান,
আলোচনা
ও খিদমত প্রদর্শনপূর্বক) হক্ব আদায় করবে।” আর উনাদের খিদমতই মুসলমানের জীবনের
সর্বশ্রেষ্ঠ আমল।
খলিফায়ে ছালিছ আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম
তিনি পবিত্র বদর জিহাদ ছাড়া প্রায় সমস্ত জিহাদে তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সাথে অংশগ্রহণ করেছেন এবং জিহাদে অঢেল সম্পত্তি হাদিয়া করেছেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
যখন পবিত্র বদর জিহাদে রওয়ানা হন, তখন সাইয়্যিদাতুনা
হযরত ছানিয়া আলাইহাস সালাম তিনি মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করেছিলেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
মুবারক নির্দেশে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি নিজ আহলিয়া আহলে বাইত শরীফ
আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম ব্যক্তিত্বা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়া আলাইহাস
সালাম উনার খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দেয়ার জন্য পবিত্র মদীনা শরীফ রয়ে যান।
পবিত্র বদর জিহাদ উনার বিজয়ের খবর যেদিন পবিত্র মদীনা শরীফে এসে পৌঁছলো
সেদিনই অর্থাৎ ১৮ রমাদ্বান শরীফ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়া আলাইহাস সালাম তিনি
পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খলিফায়ে ছালিছ আমিরুল মু’মিনীন
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার জন্য পবিত্র বদর জিহাদে
অংশগ্রহণকারীদের মতো ফযিলত ও গনীমতের অংশ ঘোষণা করেন। অর্থাৎ উনাকে বদরী ছাহাবী হিসেবে
গণ্য করা হয়।
এখান থেকে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে যে,
হযরত
আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুবারক খিদমত করার চেয়ে মহান আল্লাহ পাক
উনার কাছে আর কোনো শ্রেষ্ঠ আমল নেই। মূলত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম
উনাদের খিদমত করা সমস্ত কিছু থেকে উত্তম এবং পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার জন্য জিহাদও
সমতুল্য নয়। সুবহানাল্লাহ!
এক কথায় উনাদের মর্যাদা-মর্তবা,
সম্মান
বেমেছাল তথা উনাদের মেছাল কেবল উনারাই। আর তাই যারা উনাদের আলোচনা, ছানা-ছিফত বর্ণনা করবে, খিদমত করবে তাদের জন্য রয়েছে মহান আল্লাহ পাক
উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাদের খালিছ সন্তুষ্টি ও রেযামন্দি মুবারক।
******************************************************
সুমহান ০১ লা মুহররমুল হারাম শরীফ:
আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আল খলীফাতুছ ছালিছ সাইয়্যিদুনা হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার কতিপয় সম্মানিত লক্বব মুবারক-
উনার নাম মুবারক হযরত ‘উছমান’ আলাইহিস সালাম। উপনাম আবূ আব্দুল্লাহ আবূ আমর
আবূ লায়লা। বিশেষ উপাধি যুন্ নূরাইন ও গনী। পিতার নাম আফ্ফান ইবনে আবূল আস। মাতার
নাম আরওয়া বিনতে কুরাইয।
তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার জামাতা ও তৃতীয় খলীফা। কুরাইশ বংশে উমাইয়া শাখার সন্তান।
উনার ঊর্ধ্বতন পুরুষ আব্দে মান্নাফে গিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নসবের সাথে উনার নসব মিলিত হয়েছে।
একাধিকভাবে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্ক রয়েছে।
প্রথমত, আমীরুল মু’মিনীন হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার ৫ম পূর্বপুরুষ আব্দে মান্নাফ-এর সাথে নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক বংশ মিলে যায়।
দ্বিতীয়ত, উনার নানী বায়দা
বিনতে আব্দিল মুত্তালিব আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফুফু।
তৃতীয়ত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা দুই বানাত সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আন্নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন্নূরুছ ছালিছাহ
আলাইহাস সালাম উনাদের সাথে উনার নিসবতে আযীম শরীফ সম্পাদিত হয়।
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুননূরাইন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র
বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার সন- তিনি ‘আমুল ফীল’-এর ৬ বছর পর পবিত্র বিলাদতী
শান মুবারক প্রকাশ করেন। এ হিসেবে তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ৬ বছরের ছোট ছিলেন।
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুননূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র দ্বীন
ইসলাম উনার প্রথম যুগে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি দারুল আরকামে দ্বীনি তা’লীম কার্য শুরু করার পূর্বে সাইয়্যিদুনা
হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি নিজেই বলেন, আমি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণকারী চারজনের
মধ্যে চতুর্থ।
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারক উনার পর ২৪
হিজরী সনের ১লা মুর্হারম ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) সকালে তিনি সম্মানিত
খিলাফত উনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রায় বারো বছর তিনি এ মুবারক দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি হিজরী ৩৫ সালে ১৮ই যিলহজ্জ শরীফ কাবলাল জুমুয়াহ প্রায় ৮২ বছর বয়স
মুবারক-এ পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। ‘জান্নাতুল বাকী’ কবরস্থানের
‘হাশশে কাওকাব’ নামক অংশে উনাকে দাফন করা হয়। হযরত যুবাইর ইবনে মুত্য়িম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জানাযায় ইমামতি করেন।
নিম্নে উনার অসংখ্য লক্বব মুবারক হতে সংক্ষিপ্তাকারে কতিপয় লক্বব মুবারক তুলে
ধরা হলো-
১। صَاحِبُ التَّقْوٰى (ছাহিবুত্ তাক্বওয়া) তাক্বওয়া
উনার অধিকারী।
২। صَاحِبُ كَلِمَتِ التَّقْوٰى (ছাহিবু কালিমাতিত্ তাক্বওয়া)
প্রকৃত তাক্বওয়া উনার অধিকারী ।
৩। صَاحِبُ الْاِ يْمَانِ (ছাহিবুল ঈমানি) পবিত্র ও
সম্মানিত ঈমান উনার অধিকারী।
৪। كَارِهُ الْكُفْرِ (কারিহুল কুফ্রি) কুফরী
অপছন্দকারী।
৫। كَارِهُ الْفُسُوْقِ (কারিহুল ফুসূক্বি) পাপকে
অপছন্দকারী।
৬। كَارِهُ الْعِصْيَانِ (কারিহুল ইছ্ইয়ানি) নাফরমানীকে
ঘৃণাকারী।
৭। صَاحِبُ نِعْمَةِ اللهِ (ছাহিবু নি’মাতিল্লাহি) মহান
আল্লাহ পাক উনার নিয়ামতপ্রাপ্ত।
৮। صَاحِبُ هِدَايَةٍ (ছাহিবু হিদাইয়াতিন) হিদায়াতের
অধিকারী।
৯। اَلسَّابِقُ (আস্ সাবিকু)
উম্মতের অগ্রগামী ব্যক্তি।
১০। اَلْاَوَّلُ (আল্ আউয়ালু) পবিত্র ও
সম্মানিত ঈমান গ্রহণে প্রথম বা উম্মতের প্রধান।
১১। اَلْاُمَّةُ الْوَسَطُ (আল্ উম্মাতুল্ ওয়াসাতু)
শ্রেষ্ঠতম উম্মত।
১২। اَلشَّا هِدُ عَلَى النَّاسِ
(আশ্ শাহিদু আলান্ নাসি) পূর্ববর্তী উম্মতের স্বাক্ষী স্বরূপ।
১৩। خَيْرُ اُمَّةٍ
(খইরু উম্মাতিন) শ্রেষ্ঠতর উম্মত।
১৪। اَلرَّا شِدُ
(র্আ রাশিদু) হিদায়াতপ্রাপ্ত।
১৫। اَلصَّادِقُ (আছ্ ছাদিকু) সত্যনিষ্ঠ।
১৬। اَلْمُفْلِحُ (আল্ মুফ্লিহু) সফলতা লাভকারী।
১৭। اَلْاٰمِرُ بِالْمُعْرُوْفِ
(আল্ আমিরু বিল্ মা’রূফি) সৎ কাজের আদেশ দানকারী।
১৮। اَلنَّاهِىُ عَنِ الْمُنْكَرِ
(আন্ নাহিউ আনিল মুনকারি) অন্যায় কাজে বাধা প্রদানকারী।
১৯। رَضِىَ اللهُ عَنْهُ
(রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট।
২০। رَضِىَ عَنْهُ (রদিয়া আনহু) তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট।
২১।
اَلنَّاسُ الْمُؤْمِنُ
(আন্ নাসুল মু’মিনু) ঈমানদার ব্যক্তি।
২২। صَاحِبُ الْـحُسْنٰـى (ছাহিবুল হুসনা) উত্তম পরিণতির
অধিকারী।
২৩। اَلْمُبْعَدُ (আল্ মুব্আদু) জাহান্নাম থেকে দূরে
অবস্থানকারী।
২৪।اَلْمُسْلِمُ (আল্ মুসলিমু)
মুসলমান।
২৫। اَلْمُؤْمِنُ (আল্ মু’মিনু) ঈমানদার।
২৬। اَلْقَانِتُ (আল্ ক্বানিতু) অনুগত।
২৭। اَلصَّابِرُ (আছ্ ছাবিরু)
ধর্যশীল।
২৮। اَلْـخَاشِعُ (আল্ খাশিঊ) বিনয়ী।
২৯। اَلْمُتَصَدِّقُ (আল্ মুতাছদ্দিকু) দানকারী।
৩০। اَلصَّائِمُ (আছ্ ছায়িমু)
রোযাদার।
৩১। اَلْـحَافِظُ (আল্ হাফিযু)
ইজ্জত-আবরু হিফাযতকারী।
৩২। اَلذَّاكِرُ (আয্ যাকিরু) যিকিরকারী।
৩৩। صَاحِبُ مَغْفِرَةٍ (ছাহিবু মাগফিরাতিন)
ক্ষমাপ্রাপ্ত।
৩৪। صَاحِبُ اَجْرٍ عَظِيْمٍ
(ছাহিবু আজরিন আযীমিন) মহান পুরস্কারের অধিকারী।
৩৫। اَهْلُ الذِّكْرِ (আহ্লুয্ যিক্রি) আহলে যিকির বা
আল্লাহওয়ালা।
৩৬। اُولِـى الْاَمْرِ (উলিল আমরি) আদেশ দানকারী।
৩৭। اُولُو الْاَلْبَابِ (উলুল আলবাবি) বিচক্ষণ বা জ্ঞানী।
৩৮। اَلشَّاكِرُ (আশ্ শাকিরু)
কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী।
৩৯। وَارِثُ النَّيِـىِّ (ওয়ারিছুন্ নাবিইয়ী)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওয়ারিছ
বা উত্তরাধিকারী।
৪০। نَائِبُ رَسُوْلِ اللهِ (নায়িবু রসূলিল্লাহি) নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
স্থলাভিষিক্ত।
৪১। اَلَّذِ يْنَ مَعَه (আল্লাযীনা মায়াহু) নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গী।
৪২। اَشِدَّآءُ عَلَى الْكُفَّارِ (আশিদ্দাউ আলাল কুফ্ফারি)
কাফিরদের প্রতি কঠোর।
৪৩। رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ (রুহামাউ
বাইনাহুম) নিজেদের মাঝে সহানুভূতিশীল।
৪৪। صَاحِبُ الْفَضْلِ
(ছাহিবুল ফাদ্ব্লি) কল্যাণের
অধিকারী।
৪৫। صَاحِبُ الرِّضْوَانِ (ছাহির্বু রিদ্ব্ওয়ানি) সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত।
৪৬। اَلسَّاجِدُ (আস্
সাজিদু) সিজদাকারী।
৪৭। اَلرَّاكِعُ (র্আ
রাকিউ) রুকুকারী।
৪৮। اَلْقَائِمُ (আল্ ক্বায়িমু)
ক্বিয়ামকারী।
৪৯। سَقْفُ مَدِيْنَةِ الْعِلْمِ (সাক্বফু মাদীনাতিল ইল্মি) ইলমি শহরের ছাদ।
৫০। كَامِلُ الْـحَيَآءِ
(কামিলুল হায়ায়ি) পরিপূর্ণ বা
শ্রেষ্ঠ লজ্জাশীল।
৫১। كَامِلُ الْاِيْقَانِ (কামিলুল ঈক্বানি) খাঁটি
বিশ্বাসী।
৫২। اَرْحَمُ بَيْنَ الْمُسْلِمِيْنَ (আরহামু বাইনাল মুসলিমীনা)
মুসলমান উনাদের মাঝে সর্বাধিক দয়ালু।
৫৩। مُـحَنَّتُ الْمُنَا فِقِيْنَ (মুহান্নাতুল মুনাফিক্বীনা)
মুনাফিকদের বিপদস্বরূপ।
৫৪। اَحْيَاءُالْاُمَّةِ (আহ্ইয়াউল উম্মাতি) সর্বাধিক লজ্জাশীল।
৫৫। اَكْرَمُ الْاُمَّةِ (আকরামুল উম্মাতি) উম্মতের মধ্যে
অধিক মর্যাদাসম্পন্ন।
৫৬। اِكْلِيْلُ الْاِسْلَامِ (ইকলীলুল ইসলামি) পবিত্র ও সম্মানিত ইসলাম
উনার মুকুট।
৫৭। اٰلُ اللهِ (আলুল্লাহি) মহান আল্লাহ পাক উনার আল বা পরিবার।
৫৮। اَلشَّهِيْدُ (আশ্ শাহীদু) শহীদ বা শাহাদত
মুবারক বরণকারী।
৫৯। خَيْرُ صَحْبٍ (খইরু ছহ্বিন) শ্রেষ্ঠতম ছাহাবী।
৬০। اَزْيَدُ شَرَفً (আযইয়াদু শারাফান) অত্যধিক
মর্যাদাবান।
৬১। اَلْهَادِىُ (আল্
হাদিউ) পথপ্রদর্শক।
৬২। ثَالِثُ الْقَوْمِ (ছালিছুল ক্বওমি) উম্মতের তৃতীয়
ব্যক্তিত্ব বা খলীফা।
৬৩। اَلْقَانِتُ (আল্ ক্বানিতু) অনুগত বা অল্পে তুষ্ট।
৬৪। اَلْـجَوَّادُ (আল্ জাওওয়াদু)
অধিক দানশীল।
৬৫। اَلْـخَائِفُ (আল্ খায়িফু)
মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয়কারী।
৬৬। ذُوالْهِجْرَتَيْنِ (যুল হিজরাতাইনি) দু’বার
হিজরতকারী।
৬৭। اَلْمُصَلِّىْ اِلَـى الْقِبْلَتَنِ (আল্ মুছল্লী ইলাল্ ক্বিবলাতাইনি)
দু’ ক্বিবলার দিকে নামায আদায়কারী।
৬৮। اَلْمُؤْمِنُ (আল্ মু’মিনু) মহান আল্লাহ পাক
তিনি ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী।
৬৯। اَلْمُتَّقِىْ (আল্
মুত্তাক্বী) মুক্তাক্বী বা খোদাভীরু।
৭০। اَلصَّالِحُ (আছ ্ ছালিহু) সৎ কর্মশীল।
৭১। اَلْاَتْقٰى (আল্ আত্ক্বা)
অত্যধিক পরহেযগার।
৭২। اَلْمُحْسِنُ (আল্ মুহ্সিনু)
অনুগ্রহকারী বা পরোপকারী।
৭৩। مَحْبُوْبُ اللهِ
(মাহবূবুল্লাহি) মহান আল্লাহ পাক উনার
মাহবুব বা প্রিয়।
৭৪। مَحْبُوْبُ رَسُوْلِ اللهِ (মাহবূবু রসূলিল্লাহি) হযরত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রিয়।
৭৫। قَانِتُ اٰنَآءِ اللَّيْلِ (ক্বানিতু আনায়িল্ লাইলি)
রাত্রিকালে নামায আদায়কারী।
৭৬। اَلسَّاجِدُ (আস্ সাজিদু) সিজদাকারী।
৭৭। اَلرَّاكِعُ (র্আ রাকিউ) রুকুকারী।
৭৮। اَلْقَآءِمُ (আল্ ক্বায়িমু)
ক্বিয়ামকারী।
৭৯। مُحَذّشرُ الْاٰخِرَةِ (মুহায্যিরুল আখিরাতি) পরকালের
প্রতি সতর্ককারী।
৮০। مُرْجِىُ رَحْمَةِ اللهِ (মুরজিউ রহ্মাতিল্লাহি) মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতের আকাঙ্খী।
৮১। غَالِبُ اَحْوَالِهِ الْكَرَمِ (গালিবু আহ্ওয়ালিহিল কারামি)
দানশীলতায় বিজয়ী।
৮২। غَالِبُ اَحْوَالِهِ الْـحَيَاءِ (গালিবু আহ্ওয়ালিহিল হায়ায়ি)
লজ্জাশীলতায় বিজয়ী।
৮৩। اَلْـحَذْرُ (আল্
হায্রু) মহান আল্লাহ পাক উনার নিষিদ্ধ
বিষয়ে পরহেযকারী।
৮৪। اَلرَّجَآءُ (র্আ
রজাউ) মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আশা
পোষণকারী।
৮৫।اَلْجُوْدُمِنْ حَظِّ النَّهَارِ
(আল্ জূদু মিন হায্যিন্ নাহারি) দিবাভাগে দানকারী।
৮৬। اَلصِّيَامُ مِنْ حَظِّ النَّهَارِ (আছ্ ছিয়ামু মিন হায্যিন্ নাহারি)
দিনের বেলায় রোযা পালনকারী।
৮৭। اَلسُّجُوْدُ مِنْ حَظِّ اللَّيْلِ (আস্ সুজূদু মিন হায্যিল্ লাইলি)
রাতের বেলায় সিজদাকারী।
৮৮। اَلْقِيَامُ مِنْ حَظِّ اللَّيْلِ (আল্ ক্বিয়ামু মিন হায্যিল লাইলি)
রাতের বেলায় ক্বিয়ামকারী।
৮৯। مُبَشِّرٌ بِالْبَلْوٰى (মুবাশ্শিরুম্
বিল্ বালওয়া) বিপদ মুহূর্তে সুসংবাদ
দানকারী।
৯০। مُنْعِمٌ بِالنَّجْوٰى (মুনয়িমুম্ বিন্ নাজওয়া) গোপনভাবে
দানকারী।
৯১। اَصْبَحُ النَّاسِ وُجُوْهًا (আছ্বাহুন্ নাসি বুজূহান) উচ্চ
মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি।
৯২। اَحْسَنُ النَّاسِ اَخْلَاقًا (আহসানুন্ নাসি আখলাক্বান) উত্তম
চরিত্র উনার অধিকারী।
৯৩। اَثْبَتُ النَّاسِ حَيَآءً (আছবাতুন্ নাসি হায়ায়ান) অত্যধিক লজ্জাশীল।
৯৪। اَاصَّوَّامُ (আছ্
ছওওয়ামু) অধিক রোযাদার।
৯৫। اَلْقَوَّامُ (আল্
ক্বওওয়ামু) অধিক নামায আদায়কারী।
৯৬।ذُو النُّوْرَيْنِ
(যুন নূরাইন) দুই নূর মুবারক উনার অধিকারী। অর্থাৎ সাইয়্যিদুনা হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা দুই বানাত সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন্নূরুছ ছানিয়াহ
আলাইহাস সালাম এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন্নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাদের
নিসবতে আযীম শরীফ সম্পাদিত হয়।
৯৭। رَفِيْقٌ فِـى الْـجَنَّةِ (রফীকুন ফিল জান্নাতি) সম্মানিত বেহেশ্তে নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার বন্ধু।
৯৮। اَمِيْرُ الْمُؤْمِنِيْنَ (আমীরুল মু’মিনীনা) মু‘মিনগণের আমীর।
৯৯। خَلِيْفَةُ الْمُسْلِمِيْنَ (খলীফাতুল মুসলিমীনা) মুসলমানগণের
খলীফা বা প্রতিনিধি।
১০০। اَشَدُّ حَيَآءً (আশাদ্দু
হায়ায়ান) অত্যধিক লজ্জাশীল।
১০১। جَامِعُ الْقُرْاٰنِ
(জামিউল কুরআনি) পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে জমাকারী।
১০২। نَاشِرُ الْقُرْاٰنِ (নাশিরুল কুরআনি) পবিত্র কুরআন
শরীফ উনার প্রচারকারী।
১০৩। هَاجِرٌ اِلٰـى اَرْضِ الْـحَبْشَةِ (হাজিরুন ইলা আরদ্বিল হাবশাতি)
হাবশার যমীনে হিজরতকারী।
মূলত আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন
সাইয়্যিদুনা হযরত যুননূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উল্লিখিত লক্বব মুবারক ছাড়াও আরো
বহু লক্বব মুবারক উনার অধিকারী।
প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা সকলের জন্য ফরয হচ্ছে সাইয়্যিদুনা হযরত
যুননূরাইন আলাইহিস সালাম উনার উল্লেখিত গুণে গুণান্বিত হওয়া অর্থাৎ উনাকে
স্ক্ষ্মূাতিসূক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ অনুকরণ করা।
*********************************************
সুমহান ১লা মুহররমুল হারাম শরীফ:
আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আল খলীফাতুছ ছালিছ সাইয়্যিদুনা হযরত যুননূরাইন
আলাইহিস সালাম উনার সাথে
সংশ্লিষ্ট কতিপয় ওয়াক্বিয়া
(১)
আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন,
সাইয়্যিদুনা
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন সর্বোৎকৃষ্ট চরিত্র মুবারক উনার অধিকারী। সুবহানাল্লাহ!
একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম
উনার পবিত্র হুজরা শরীফে অবস্থান মুবারক করছিলেন। তখন উনার পা মুবারক থেকে কাপড়
মুবারক হালকা সরেছিল। এরই মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম
তিনি পবিত্র হুজরা শরীফে আসতে চাইলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনুমতি মুবারক দিলেন। এরপর সাইয়্যিদুনা হযরত
ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি আসতে চাইলে ওই অবস্থায় থেকে উনাকেও অনুমতি
মুবারক দিলেন। কিন্তু যখন সাইয়্যিদুনা হযরত যুননূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র
হুজরা শরীফে আসার অনুমতি মুবারক চাইলেন,
তখন
তিনি কাপড় মুবারক ঠিকঠাক করে স্বাভাবিকভাবে বসলেন। এরপর উনাকে পবিত্র হুজরা শরীফ
আসার অনুমতি মুবারক দিলেন। তারপর মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছায় উনারা যতক্ষণ
কথাবার্তা মুবারক বলার বললেন। কথাবার্তা মুবারক শেষ হওয়ার পর সাইয়্যিদুনা যহরত
যুননূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি চলে গেলেন।
উনারা চলে যাওয়ার পর উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ আলাইহাস
সালাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম! সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি আপনার কাছে আসলেন
তখনো আপনি আগের মতো ছিলেন, এরপর সাইয়্যিদুনা
হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি আসলে তাও আগের মতোই ছিলেন, কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত যুননূরাইন আলাইহিস
সালাম তিনি আসার পর আপনি আপনার কাপড় মুবারক ঠিকঠাক করে বসলেন। এর মধ্যে কি হিকমত?
তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
মৃদু হেসে বললেন, হে উম্মুল
মু’মিনীন হযরত আছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম! আমি কী সে ব্যক্তিকে লজ্জা করবো না যাকে
হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও লজ্জা করেন। সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ, হাদীছ শরীফ নং ২৪০১)
(২)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের
হুজরা শরীফে কয়েকদিন ধরে খাবারের ব্যবস্থা ছিল না।
এ পরিস্থিতিতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিন হযরত আছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার কাছে এসে বললেন, হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছ ছালিছাহ আলাইহাস
সালাম আমি বাইরে যাওয়ার পর আপনারা কি কিছু পেয়েছেন।
তিনি বললেন, জি না! তখন নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওযু মুবারক
করে পবিত্র নামাযে দাঁড়ালেন। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট খুব বিনয়ের সাথে
নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রবাহিত করছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
দিনের শেষ দিকে আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুননূরাইন আলাইহিস সালাম
তিনি খাবার পবিত্র স্বরূপ নিয়ে আসেন। তিনি পবিত্র হুজরা শরীফে প্রবেশ করে অনুমতি
মুবারক চাইলেন। তখন উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি পর্দায়
থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত যুননূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে প্রবেশ করার অনুমতি মুবারক
দিলেন।
পবিত্র হুজরা শরীফে প্রবেশ করে সাইয়্যিদুনা হযরত যুননূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি
বললেন, হে উম্মুল মু’মিনীন
আলাইহাস সালাম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি কোথায়?
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফে আজ কয়েকদিন ধরে খাবারের
ব্যবস্থা নেই।
একথা শুনে হযরত যুননূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি কান্নাকাটি শুরু করলেন। উনার চোখ
মুবারক থেকে অঝোর ধারায় নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রবাহিত হতে লাগলো। কান্না
জড়িতকণ্ঠে তিনি বলতে লাগলেন, দুনিয়ার সাথে
শত্রুতা পোষণ করলাম।
এরপর তিনি দ্রƒত বাতাসের ন্যায় ছুটে গিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার আহালু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের জন্য গম, আটা,
খেজুরের
বস্তা ও একটি চামড়া ছোলা ছাগল পাঠিয়ে দিলেন। সাথে তিন শত দিরহামও দিলেন।
সুবহানাল্লাহ!
এগুলো আসতে ও তৈরি হতে তো সময় লাগবে তাই তিনি কিছু রুটি ও ভুনা গোশত আগেই
পাঠিয়ে দিলেন।
এমন উত্তম কাজ করতে পেরে তিনি মৃদু হেসে উনাদেরকে বলতে লাগলেন, আপনারা খেয়ে নিন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আসার আগেই উনার জন্যেও তৈরি করে রাখুন।
এরপর তিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট মহান আল্লাহ
পাক উনার দোহাই দিয়ে উনাকে অনুরোধ করে বললেন,
নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা
শরীফ উনার মধ্যে এরকম পরিস্থিতি হলে তিনি যেনো উনাকে জানান।
এর কিছুক্ষণ পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি এসে বললেন, আমি যাওয়ার পর কি
আপনাদের কাছে কোনো হাদিয়া মুবারক এসেছে?
তখন উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি হাস্যোজ্জল চেহারা
মুবারকে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি জেনেছি আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া
করতে বের হয়েছেন। আর আমি এও জানি মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার দোয়া মুবারক ফিরিয়ে
দেন না।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
বললেন, আপনারা কি কি পেয়েছেন?
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি আটা, গম ও খেজুরসহ আরো আরো সবগুলোর কথা জানালেন।
তিনি বললেন, কার পক্ষ থেকে
এসেছে?
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুননূরাইন আলাইহিস সালাম
উনার পক্ষ থেকে। তিনি আমার কাছে এসেছেন,
তখন
আমি আমাদের অবস্থার কথা বললে তিনি তা শুনে খুবই কান্নাকাটি করলেন। তিনি দুনিয়ার
প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং এমন পরিস্থিতি হলে আমি যেনো জানাই সে জন্যে কসম
দিয়ে অনুরোধ করে গেলেন।
একথা শুনার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি কোনো খানা গ্রহণ না করে সাথে সাথে মসজিদের দিকে ছুটে গিয়ে বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক! আমি হযরত যুননূরাইন
আলাইহিস সালাম উনার প্রতি সন্তুষ্ট,
আপনিও
উনার প্রতি সন্তুষ্ট হন। একথা তিনি তিনবার বলেন। সুবহানাল্লাহ! (আর রিক্কাতু ওয়াল
বুকা লি ইবনে কুদামা-১৮৭ পৃষ্ঠা)
(৩)
আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন,
সাইয়্যিদুনা
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি হিজরত করে পবিত্র মদীনা শরীফে আগমণ করার পর
যখন মুসলমানদের মন সেখানে স্থির হলো,
পবিত্র
মদীনা শরীফ উনাদের জীবন ভালোই চলতে লাগলো। কিন্তু মুসলমানগণ সেখানে সবচেয়ে বেশি
সমস্যায় পড়লেন পানি নিয়ে। পবিত্র মদীনা শরীফে শুধু মাত্র একটি কুপেই মিঠা পানি
পাওয়া যেতো। কুপটি বীরে রুমা নামে পরিচিত ছিলো। কুপটির মালিক ছিল এক ইহুদী। সে
কুপটির পানি বিক্রয় করতো, কিন্তু মুসলমানদের
সবার কাছে পানি ক্রয় করে খাওয়ার মতো সামর্থ ছিল না। এ কারণে পানির অভাবে উনারা
বিশাল সমস্যার সম্মুখীন হলেন। বিষয়টি নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
মানুষদেরকে একত্রিত করে নছীহত মুবারক করলেন এবং কুপটি ক্রয় করার প্রতি উৎসাহিত করলেন। তিনি বললেন,
কে
আছেন কুপটি ক্রয় করে তার বালতির সাথে মুসলমানদের বালতিও রাখবে আর বিনিময়ে জান্নাতে
এর থেকে উত্তম কিছু লাভ করবে? সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
পবিত্রতম যবান মুবারক উনার কথাগুলো সাইয়্যিদুনা হযরত যুননূরাইন আলাইহিস সালাম উনার
কান মুবারকেও প্রতিধ্বনিত হলো। উনার অন্তর মুবারকে কথাগুলো তা’ছীর করলো।
তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার ঘোষিত সন্তুষ্টি মুবারক পাওয়ার আশায় সবার আগে ছুটে চললেন। তারপর অর্থকড়ি জমা
করে ইহুদীদের কাছে গিয়ে দর কষাকষি করে বারো হাজার দেরহামে কুপটির অর্ধেক ক্রয় করে
মুসলমানদের জন্যে ওয়াক্ফ করে দিলেন। তখন মুসলমানরা সে কুপ থেকে পানি পান করা শুরু
করেছেন। কুপটির পানি প্রতি দুই দিনের একদিন সাইয়্যিদুনা হযরত যুননূরাইন আলাইহিস
সালাম উনার ভাগে ছিল। যার ফলে দিনের বেলায় মুসলমানগণ সেখান থেকে পানি নিয়ে জমা করে
রাখতেন।
তখন ইহুদী লোকটি বললো, হে সাইয়্যিদুনা
হযরত যুননূরাইন আলাইহিস সালাম! আপনি আমার কুপটি নষ্ট করে দিয়েছেন। নাউযুবিল্লাহ!
সুতরাং আটা হাজার দিরহামে কুপের বাকি অংশও কিনে নিন।তিনি তাই করলেন। সুবহানাল্লাহ!
(তিরমিযী শরীফ)
(৪)
আমি অবশ্যই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার হুজরা শরীফ উনার দরজা মুবারক উনার পাহাড়াদার হবো। একথা বলে হযরত আবূ
মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একটি লাঠি মুবার নিয়ে রওয়ানা করলেন।
এদিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি বীরে উরাইস এসে ওযূ মুবারক করলেন। তারপর তিনি কুপের উপর বসে রইলেন।
কিছুক্ষণ পর হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এসে উনাকে
সালাম দিলেন। তারপর তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার দরজা মুবারক উনার পাহাড়াদার নিযুক্ত হলেন।
তিনি দরজা মুবারকে বসার পর আফদ্বালুন বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর
আলাইহিস সালাম তিনি এসে দরজা মুবারকে টোকা দিলেন। আওয়াজ শুনে হযরত আবূ মূসা আশয়ারী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন,
কে?
সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি নিজের পরিচয় দিলেন।
হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, দয়া করে একটু অপেক্ষা করুন।
তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার খিদমত মুবারকে পেশ করলেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত
ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি আসতে চাচ্ছেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনুমতি মুবারক দিলেন। এবং সাথে সাথে
জান্নাতের সুসংবাদও দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তিনি দরজা মুবারক উনার কাছে গিয়ে হযরত
ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন,
আসুন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।
সুবহানাল্লাহ!
অনুমতি পেয়ে হযরত ছিদ্দীক্বে আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ডান পাশে বসলেন। এরপর হযরত আবূ
মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তিনি নিজের জায়গায় গিয়ে বসলেন। কিছুক্ষণ পর আবার কেউ
একজন দরজা মুবারক উনার কড়া মুবারক নাড়া দিলেন।
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন কে?
জাওয়াব আসলো, আমি হযরত ফারূক্বে
আ’যম আলাইহিস সালাম। তিনি বললেন অপেক্ষা করুন।
তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার খিদমত মুবারকে পেশ করলেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত
ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি আসতে চাচ্ছেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনুমতি মুবারক দিলেন। এবং সাথে সাথে
জান্নাতের সুসংবাদও দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তিনি দরজা মুবারক উনার কাছে গিয়ে
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, আসুন,
নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনাকে
জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। অনুমতি পেয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আলাইহিস সালাম
তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
বাম পাশে বসলেন। সুবহানাল্লাহ!
কিছুক্ষণ পর আবার কেউ একজন দরজা মুবারক উনার কড়া মুবারক নাড়া দিলেন।
হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তিনি জিজ্ঞাসা করলেন কে?
জাওয়াব আসলো, আমি সাইয়্যিদুনা
হযরত যুননূরাইন আলাইহিস সালাম।
বললেন অপেক্ষা করুন।
তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার খিদমত মুবারকে পেশ করলেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত
যুননূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি আসতে চাচ্ছেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
অনুমতি মুবারক দিলেন। আর সাথে সাথে মুছীবতের সম্মুখীন হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করার
সুসংবাদ জানানোর কথা বলে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
তারপর হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তিনি ফিরে এসে বললেন আসুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনাকে মুছীবতের সম্মুখীন হয়ে জান্নাতে
প্রবেশে সুসংবাদ দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যুননূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি চিন্নিত হয়ে পড়লেন, এবং
বললেন, আয় বারে ইলাহী!
আমাকে ধৈর্য্যধারণ করার তাওফীক্ব দান করুন। সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ, হাদীছ শরীফ নং ২৪০৩)
আমীরুল মু’মিনীন, কাতিবে ওহী, জামিউল কুরআন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল
ফযীলত মুবারক -
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَن حَضْرَتْ ثُمامة بن حَزْنٍ الْقشيرِي رحمة الله عليه قَالَ شَهِدْتُ الدَّارَ حِينَ أَشْرَفَ عَلَيْهِمْ سيدنا حضرت عُثْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَالَ أنْشدكُمْ بِاللَّه وَالْإِسْلَامَ هَلْ تَعْلَمُونَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدِمَ الْمَدِينَةَ وَلَيْسَ بِهَا مَاءٌ يُسْتَعْذَبُ غَيْرُ بِئْرِ رُومَةَ فَقَالَ مَنْ يَشْتَرِي بِئْرَ رُومَةَ يَجْعَلُ دَلْوَهُ مَعَ دِلَاءِ الْمُسْلِمِينَ بِخَيْرٍ لَهُ مِنْهَا فِي الْجَنَّةِ فَاشْتَرَيْتُهَا مِنْ صُلْبِ مَالِي وَأَنْتُمُ الْيَوْمَ تَمْنَعُونَنِي أَنْ أَشْرَبَ مِنْهَا حَتَّى أَشْرَبَ مِنْ مَاءِ الْبَحْرِ قَالُوا اللَّهُمَّ نعم. فَقَالَ أنْشدكُمْ بِاللَّه وَالْإِسْلَامَ هَلْ تَعْلَمُونَ أَنَّ الْمَسْجِدَ ضَاقَ بِأَهْلِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ يَشْتَرِي بُقْعَةَ آلِ فُلَانٍ فَيَزِيدُهَا فِي الْمَسْجِد بِخَير مِنْهَا فِي الْجَنَّةِ . فَاشْتَرَيْتُهَا مِنْ صُلْبِ مَالِي فَأَنْتُمُ الْيَوْمَ تَمْنَعُونَنِي أَنْ أُصَلِّيَ فِيهَا رَكْعَتَيْنِ فَقَالُوا اللَّهُمَّ نعم. قَالَ أنْشدكُمْ بِاللَّه وَالْإِسْلَامَ هَلْ تَعْلَمُونَ أَنِّي جَهَّزْتُ جَيْشَ الْعُسْرَةِ مِنْ مَالِي قَالُوا اللَّهُمَّ نَعَمْ قَالَ أَنْشُدُكُمُ بِاللَّه وَالْإِسْلَامَ هَلْ تَعْلَمُونَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ عَلَى ثَبِيرِ مَكَّةَ وَمَعَهُ سيدنا حَضْرَتْ أَبُو بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَ سيدنا حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَأَنَا فَتَحَرَّكَ الْجَبَلُ حَتَّى تَسَاقَطَتْ حِجَارَتُهُ بِالْحَضِيضِ فَرَكَضَهُ بِرِجْلِهِ قَالَ اسْكُنْ ثَبِيرُ فَإِنَّمَا عَلَيْكَ نَبِيُّ وَصِدِّيقٌ وَشَهِيدَانِ قَالُوا اللَّهُمَّ نَعَمْ. قَالَ اللَّهُ أَكْبَرُ شَهِدُوا وَرَبِّ الْكَعْبَةِ أَنِّي شَهِيدٌ ثَلَاثًا.
অর্থ: হযরত সুমামা ইবনে হাযন কুশাইরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, (যখন বিদ্রোহীরা সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ (সম্মানিত গৃহ মুবারক) অবরোধ করে
রেখেছিল, এ সময়) আমি উনার সম্মানিত
হুজরা শরীফ (সম্মানিত গৃহ মুবারক) উনার কাছে উপস্থিত ছিলাম। যখন সাইয়্যিদুনা হযরত
উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত হুজরা শরীফ (সম্মানিত গৃহ মুবারক)
উপর থেকে লোকদের দিকে তাকিয়ে বললেন,
আমি
তোমাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা
করছি, তোমরা কি এই ব্যাপারে অবগত
আছ যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত হিজরত মুবারক করে যখন
সম্মানিত মদীনা শরীফ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন, তখন ‘রুমার কূপ’ ব্যতীত অন্য কোথাও মিষ্টি পানি পাওয়া যেত
না? তখন নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “যে ব্যক্তি রুমার কূপটি খরিদ করে মুসলমানদের
অবাধে ব্যবহারের জন্য ওয়াকফ করে দিবে,
বিনিময়ে
সে সম্মানিত বেহেশত উনার মধ্যে তদপেক্ষা উত্তম কূপ লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! তখন
আমি উক্ত কূপটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অর্থে খরিদ করে হাদিয়া মুবারক করি। অথচ আজ
তোমরা আমাকে উক্ত কূপের পানি পান করা হতে বাধা দিচ্ছ। এমনকি আমি সমুদ্রের লোনা
পানি পান করছি। নাঊযুুবিল্লাহ! লোকেরা বললো,
মহান
আল্লাহ পাক উনার কসম! হ্যাঁ, আমরা তা জানি।
তারপর তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে
মহান আল্লাহ পাক উনার এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তোমরা কি জান যে, যখন সম্মানিত মসজিদে নববী শরীফ মুছল্লী উনাদের
তুলনায় সংকীর্ণ হয়ে পড়েছিল, তখন নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি অমুকের বংশধর হতে এ যমীনটি খরিদ করে
সম্মানিত মসজিদে নববী শরীফ বৃদ্ধি করে দিবে,
তার
বিনিময়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে তা থেকে উত্তম ঘর সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ দান
করবেন। তখন আমিই তা আমার ব্যক্তিগত অর্থে খরিদ করে হাদিয়া মুবারক করি। অথচ আজ
তোমরা আমাকে সেই সম্মানিত মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে দু’রাকায়াত নামায পড়তে বাধা
দিচ্ছ। উত্তরে তারা বললো, মহান আল্লাহ পাক
উনার কসম! হ্যাঁ, আমরা তা জানি।
অতঃপর তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে
মহান আল্লাহ পাক উনার ও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তোমরা কি অবগত আছ যে, দারুণ কষ্টের অভিযানে (তাবুক জিহাদে)
সৈন্যদিগকে আমি আমার নিজস্ব সম্পদ হতে জিহাদের সামান দিয়ে সাজিয়েছিলাম? লোকেরা বললো, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! হ্যাঁ আমরা তা জানি। তারপর তিনি
বললেন, আমি তোমাদেরকে মহান আল্লাহ
পাক উনার ও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তোমরা একথাটি অবগত আছ কি, একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার অনতিদূরে ‘সাবীর’
পাহাড়ের উপর দ-ায়মান ছিলেন, উনার সাথে সেখানে
সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম
তিনি এবং আমিও উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ পাহাড়টি নড়াচড়া করতে লাগল। এমনকি তা হতে কিছু
পাথর নিচের দিকে পড়তে লাগলো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পাহাড়টিতে স্বীয় ক্বদম মুবারক ঠুকিয়ে বললেন, স্থির হয়ে যাও হে সাবীর! তোমার উপর একজন
মহাসম্মানিত নবী-রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, একজন সম্মানিত ছিদ্দীক্ব ও দুইজন সম্মানিত
শহীদ রয়েছেন। উত্তরে লোকেরা বললো, মহান আল্লাহ পাক
উনার কসম! হ্যাঁ, আমরা তা জানি।
অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বলে উঠলেন, আল্লাহু আকবার, লোকেরা সত্য সাক্ষ্যই দিয়েছে। তারপর তিনি বললেন, সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার রব মহান আল্লাহ পাক
উনার কসম! নিশ্চয়ই আমি একজন শহীদ ব্যক্তি। সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, নাসায়ী শরীফ ও দারু কুতনী)
*********************************************
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
বেমেছাল সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম-
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ خَبَّابٍ رضى الله تعالى عنه قَالَ شَهِدْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَحُثُّ عَلَى جَيْشِ الْعُسْرَةِ فَقَامَ سيدنا حضرت عُثْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَالَ يَا رَسُول الله عَلَيَّ مِائَة بَعِيرٍ بِأَحْلَاسِهَا وَأَقْتَابِهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ حَضَّ عَلَى الْجَيْشِ فَقَامَ سيدنا حضرت عُثْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَالَ عَلَيَّ مِائَتَا بَعِيرٍ بِأَحْلَاسِهَا وَأَقْتَابِهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ حَضَّ فَقَامَ سيدنا حضرت عُثْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَالَ: عَلَيَّ ثَلَاثُمِائَةِ بَعِيرٍ بِأَحْلَاسِهَا وَأَقْتَابِهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَأَنَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْزِلُ عَنِ الْمِنْبَرِ وَهُوَ يَقُولُ مَا عَلَى عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ مَا عَمِلَ بَعْدَ هَذِهِ مَا عَلَى سيدنا حضرت عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ مَا عَمِلَ بَعْدَ هَذِهِ
অর্থ: হযরত আব্দুর রহমান ইবনে খব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একবার আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ উপস্থিত ছিলাম।
সে সময় তিনি “জায়শুল ওসরাহ” তথা সম্মানিত তাবুক যুদ্ধে খিদমত মুবারক উনার আনজাম
মুবারক দেয়ার জন্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে উৎসাহ মুবারক প্রদান করছিলেন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন
আলাইহিস সালাম তিনি দাঁড়িয়ে বললেন,
ইয়া
রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় গদি ও পালানসহ একশত
উট আমার যিম্মায়। সুবহানাল্লাহ! এরপরও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উৎসাহ মুবারক প্রদান
করতে থাকলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পুনরায় দাঁড়িয়ে
বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার
রাস্তায় গদি ও পালানসহ দুইশত উট আমার যিম্মায়। সুবহানাল্লাহ! আবারও নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উৎসাহ মুবারক প্রদান করলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস
সালাম তিনি আবারও দাঁড়িয়ে বললেন, মহান আল্লাহ পাক
উনার রাস্তায় গদি ও পালানসহ তিনশত উট আমার যিম্মায়। সুবহানাল্লাহ! (বর্ণনাকারী
বলেন) আমি দেখলাম, নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই কথা মুবারক বলতে
বলতে মিম্বর শরীফ থেকে অবতরণ করলেনÑ এই সম্মানিত আমল
মুবারক উনার পর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি যে আমলই করেন, উনার জন্য তা ক্ষতিকর হবে না। এই সম্মানিত আমল
মুবারক উনার পর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি যে আমলই করেন, উনার কোনো ক্ষতি হবে না।” সুবহানাল্লাহ!
(তিরমিযী শরীফ)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَمُرَةَ رضى الله تعالى عنه قَالَ جَاءَ سيدنا حضرت عُثْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِأَلْفِ دِينَارٍ فِي كُمِّهِ حِينَ جَهَّزَ جَيْشَ الْعُسْرَةِ فَنَثَرَهَا فِي حِجْرِهِ فَرَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَلِّبُهَا فِي حِجْرِهِ وَيَقُولُ مَا ضَرَّ سيدنا حضرت عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ مَا عَمِلَ بَعْدَ الْيَوْمِ مرَّتَيْنِ.
অর্থ: হযরত আব্দুর রহমান ইবনে সমুরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সম্মানিত তাবুক জিহাদ উনার প্রস্তুতি
নিচ্ছিলেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার জামা মুবারক উনার আস্তিনে পুরে একহাজার দীনার তথা
স্বর্ণমুদ্রা মুবারক নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ আসলেন এবং দীনারগুলো নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত কোল মুবারক-এ
ঢেলে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! (বর্ণনাকারী বলেন,)
আমি
দেখলাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
সেই মুদ্রাগুলো উনার কোল মুবারক-এ উলট-পালট করছিলেন এবং বলছিলেন: আজকের পর
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি যে আমলই করেন না কেন উনার কোনো
ক্ষতি হবে না। এই কথা মুবারকখানা তিনি দুইবার বলেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে
আহমদ)
**********************************************
খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন
সাইয়্যিদুনা
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারককালে সম্মানিত
মুসলমান উনাদের প্রাচুর্যতা-
জীবন চরিত ও ইতিহাস গ্রন্থ যারা অধ্যয়ন করেছেন, তারা খুব ভালোভাবেই জানেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত
খিলাফত মুবারক উনার কার্যাবলী অত্যন্ত চমৎকারভাবে আঞ্জাম দিয়েছেন।
হযরত ইমাম হাসান বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার ঘোষককে
এ ঘোষণা করতে শুনেছি, হে লোক সকল! তোমাদের
দৈনিক ভাতা সকালে এসে নিয়ে যাও। লোকেরা দলে দলে এসে প্রচুর পরিমাণ সম্পদ নিয়ে যেত।
খোদার কসম! আমি নিজ কানে শুনেছি, ঘোষক কখনো ডেকে
বলতো, তোমাদের কাপড়-চোপড় নিতে
আসো। তারা গিয়ে দামী পোশাক-পরিচ্ছেদ নিয়ে আসতো। কখনো ঘোষক ডেকে বলতো, তোমাদের মধু ও অন্যান্য দ্রব্য নিতে আসো। তারা
এসে তা নিয়ে যেতো। সুবহানাল্লাহ!
তিনি বলেন, উনার যামানায় ঘরে
ঘরে রুযীর ব্যবস্থা ছিলো। সম্পদের প্রাচুর্য ছিলো। লোকদের অবস্থা ছিলো যথেষ্ট
সচ্ছল। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার তৃতীয় খলীফা,
খলীফাতুল
মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারককালে সম্মানিত মুসলমান
উনারা এতোই অধিক সুখ, শান্তি, আরাম,
আয়েশ, সচ্ছলতা ও প্রাচুর্যতার মধ্যে ছিলেন যে, তখন যাকাত নেয়ার মতো কোনো লোক খুঁজে পাওয়া
যেতো না। অর্থাৎ সবাই এতো অধিক ধনী ছিলেন
যে, সবাই যাকাত প্রদান করতেন।
যাকাত গ্রহণ করার মতো কেউ ছিলেন না। সুবহানাল্লাহ!
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
كَثُرَ الْمَالُ فِي زَمَنِ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ حَتَّى بِيعَتْ جَارِيَةٌ بِوَزْنِهَا وَفَرَسٌ بِمِائَةِ أَلْفِ دِرْهَمٍ وَنَخْلَةٌ بِأَلْفِ دِرْهَمٍ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার যামানায় ধন-সম্পদের
এতো অধিক প্রাচুর্যতা বৃদ্ধি পেয়েছিলো যে,
দাস-দাসী
বিক্রি করা হতো স্বর্ণ-রৌপ্যের ওজনে,
একটি
ঘোড়া বিক্রি করা হতো এক লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে (৩ থেকে ৪ কোটি টাকার বিনিময়ে) এবং
একটি খেজুর বৃক্ষ বিক্রি করা হতো এক হাজার দিরহামের বিনিময়ে (৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকার
বিনিময়ে)।” সুবহানাল্লাহ! (আল ইস্তিয়াব ফী মা’রিফাতিল আছহাব ১/৩২০, আল আওয়াছিম মিনাল ক্বাওয়াছিম ১/৭০, আর রিয়াদুন নাদ্বরাহ ফী মানাক্বিবে আশারাহ
লিমুহিব্বে ত্ববারী ১/২১৭, তারীখু মাদীনাতিল
মুনাওওয়ারাহ ২/১৩৪, নিহায়াতুল আরব
১৯/৩১৭)
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন যে, ‘তখন সম্মানিত মুসলমান উনাদের এতো অধিক সচ্ছলতা
ছিলো যে, উনারা পৃথিবীর সবচেয়ে দামী
কাপড়, কাত্তানের কাপড় দিয়ে নাক
মুবারক পরিষ্কার করতেন।’ সুবহানাল্লাহ!
এতো দামী কাপড় দিয়ে যদি নাক মুবারক পরিষ্কার করা হয়, তাহলে সম্মানিত মুসলমান উনারা কত অধিক সচ্ছলতা
ও সুখ-শান্তির মধ্যে ছিলেন, তা চিন্তা-ফিকিরের
বিষয়। সুবহানাল্লাহ!
তখন হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিসহ আরো অনেক হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কান্নাকাটি করতেন যে, এতো অধিক সুখ, শান্তি যে, উনাদের সমস্ত বদলা
দুনিয়াতেই দেয়া হয়ে গেলো কিনা! সুবহানাল্লাহ!
তাহলে তখন সম্মানিত মুসলমান উনারা কত
অধিক সুখ-শান্তিতে ছিলেন, তা ভাববার বিষয়।
মূলত তখন দুনিয়াটা হয়েছিলো সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার একখানা অংশ মুবারক।
সুবহানাল্লাহ!
যার কারণে উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারককালে জগতবাসী দুনিয়ার যমীনে থেকেই
সম্মানিত জান্নাতী অমীয় সুখ-শান্তি উপভোগ করেছিলেন। মুসলমানদের মাঝে প্রাচুর্যতার
সাগর উথলিয়ে পড়েছিলো। পৃথিবীর সবচাইতে দামী কাপড়, কাত্তানের কাপড় দিয়ে উনারা নাক মুবারক পরিষ্কার করতেন।
দাস-দাসী বিক্রি করা হতো স্বর্ণ-রৌপ্যের ওজনে। যাকাত নেয়ার মতো লোক খুঁজে পাওয়া
যেতো না। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছিলো বিশ্বময়। সমগ্র পৃথিবীর বুকে ছিলো
সম্মানিত মুসলমান উনাদের একক আধিপত্য। সম্মানিত মুসলমান উনাদের নাম মুবারক শুনলে কাফির-মুশরিকদের
অন্তর-আত্মা কেঁপে উঠতো। কাফির-মুশরিকরা সম্মানিত মুসলমানগণ উনাদের গোলামে পরিণত
হয়েছিলো। সুবহানাল্লাহ!
****************************************************
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সীমাহীন শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের একক মালিক-
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ حَضْرَتْ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ اَوْحٰـى اِلَـىَّ اَنْ اُزَوِّجَ كَرِيـْمَتَـىَّ مِنْ حَضْرَتْ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ حَضْرَتْ رُقَيَّةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَحَضْرَتْ اُمَّ كُلْثُوْمٍ عَلَيْهَا السَّلَامُ
অর্থ: “উম্মুল মু’মিন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম
উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যিনি খালিক্ব
মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার নিকট সম্মানিত ওহী মুবারক প্রেরণ করেছেন, আমি যেন আমার মহাসম্মানিতা দুইজন আওলাদ
আলাইহিমাস সালাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার ও
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের সম্মানিত
নিসবতে আযীম শরীফ সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে সুসম্পন্ন
করি।” সুবহানাল্লাহ! (মা’রিফাতুছ ছাহাবা লিআবী নাঈম ২২/২২৪)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَيْرُ الشَّفِيْعِ لِـحَضْرَتْ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ مَا اَنَا اُزَوِّجُ بَنَاتِىْ وَلَكِنَّ اللهَ تَعَالـٰى يُـزَوِّجُـهُـنَّ.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার জন্য
সর্বোত্তম সুপারিশকারী রয়েছেন। আমি আমার মহাসম্মানিতা আওলাদ আলাইহিন্নাস সালাম
উনাদের সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম
শরীফ সুসম্পন্ন করিনি; বরং মহান আল্লাহ
পাক তিনি স্বয়ং নিজেই সেটা সুসম্পন্ন করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقِىَ حَضْرَتْ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَهُوَ مَغْمُوْمٌ فَقَالَ مَا شَأْنُكَ يَا حَضْرَتْ عُثْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ بِاَبِـىْ اَنْتَ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَاُمِّـىْ هَلْ دَخَلَ عَلـٰى اَحَدٍ مِّـنَ النَّاسِ مَا دَخَلَ عَلَىَّ تُوُفِّيَتْ بِنْتُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَحِمَهَا اللهُ وَانْقَطَعَ الصِّهْرُ فِيْمَا بَيْنِـىْ وَبَيْنَكَ اِلـٰى اٰخِرِ الْاَبَدِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَتَقُوْلُ ذٰلِكَ يَا حَضْرَتْ عُثْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَهٰذَا حَضْرَتْ جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ يَأْمُرُنِـىْ عَنْ اَمْرِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ اَنْ اُزَوِّجَكَ اُخْتَهَا حَضْرَتْ اُمَّ كُلْثُوْمٍ عَلَيْهَا السَّلَامُ عَلـٰى مِثْلِ صَدَاقِهَا وَعَلـٰى مِثْلِ عِدَّتِـهَا فَزَوَّجَهٗ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِيَّاهَا.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। (তিনি
বলেন, একদা) নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে চিন্তিত অবস্থায় দেখলেন। তারপর তিনি উনাকে উদ্দেশ্য
করে ইরশাদ মুবারক করলেন, হে সাইয়্যিদুনা
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম আপনার কী অবস্থা? (আপনাকে এরূপ চিন্তিত দেখা যাচ্ছে কেন?) তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার জন্য
আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক! আমার উপর যে মুছীবত এসেছে, সেটা কী অন্য কারো উপর অর্পিত হয়েছে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা আওলাদ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন
নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ
করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার উপর রহম করুন! আর আমার এবং আপনার মাঝে যে, আত্মীয়তার সম্পর্ক মুবারক ছিলো, সেটা চিরতরে শেষ হয়ে গেছে। তখন নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি এই কথা বলছেন? এইতো ইনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আমার
নিকট এই সম্মানিত সংবাদ মুবারাক নিয়ে এসেছেন যে, আমি যেন, সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিতা বোন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস
সালাম উনাকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার অনুরূপ এবং
সমপরিমাণ মোহরানা মুবারকসহ আপনার সাথে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ সুসম্পন্ন করি।
অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন
নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার অনুরূপ সম্মানিত মোহরানা মুবারক অনুযায়ী
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ
দেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম শরীফ,
৪/৫৪)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَن حَضْرَتْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ سَـمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَا زَوَّجْتُ حَضْرَتْ عُثْمَانَ عليه السلام حَضْرَتْ أُمَّ كُلْثُومٍ عليها السلام إِلَّا بِوَحْي مِنَ السَّمَاءِ.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি শুনেছি, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, আমি সম্মানিত ওহী মুবারক উনার মাধ্যমেই
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ সুসম্পন্ন করেছি।”
সুবহানাল্লাহ! (আশ শরী‘য়াহ ৪/১৯৩৯,
আল
মু’জামুল আওসাত্ব ৫/২৬৪, আল মু’জামুল কাবীর
২৫/৯২ ইত্যাদি)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে,
عَنْ عِصْمَةَ بْنِ مَالِكٍ الْـخَطْمِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ لَمَّا مَاتَتْ بِنْتُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الَّتِـىْ تَـحْتَ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَوِّجُوْا عُثْمَانَ لَو كَانَ لِـىْ ثَالِثَةً لَزَوَّجْتُهُ وَمَا زَوَّجْتُهٗ اِلَّا بِالْوَحْىِ مِنَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ.
অর্থ: “হযরত ‘ইছমাহ ইবনে মালিক খত্বমিইয়্যী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন বিনতু
রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ
আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস
সালাম উনার নিকট সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দিন। যদি আমার তৃতীয় (অবিবাহিত)
বানাত (মেয়ে) থাকতেন, আমি উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন
আলাইহিস সালাম উনার নিকট সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দিতাম। আমি মহান আল্লাহ পাক
উনার পক্ষ থেকে ওহী মুবারক উনার মাধ্যমেই সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস
সালাম উনার নিকট আমার মহাসম্মানিতা বানাত আলাইহিমাস সালাম উনাদের সম্মানিত নিসবতে
আযীম শরীফ দিয়েছি।” সুবহানাল্লাহ! (ত্ববারনী,
মাজমাউয
যাওয়ায়িদ)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে,
وَرَوَى أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَفَ عَلَى قَبْرِ ابْنَتِهِ الثَّانِيَةِ الَّتِي كَانَتْ عِنْدَ حَضْرَتْ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَالَ أَلَا أَبُو أَيِّمٍ أَلَا أَخُو أَيِّمٍ يُزَوِّجُهَا حَضْرَتْ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَلَوْ كَانَ لِي عَشْرٌ لَزَوَّجْتُهُنَّ حَضْرَتْ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَمَا زَوَّجْتُهُ إِلَّا بِوَحْيٍ مِنَ السَّمَاءِ
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা
রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার
সম্মানিত রওযা শরীফ উনার নিকট অবস্থান মুবারক করছিলেন। অতঃপর তিনি বললেন, কোন পিতা রয়েছেন যে, যিনি উনার মেয়ে এবং কোন ভাই রয়েছেন যে, যিনি উনার বোনকে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন
আলাইহিস সালাম উনার নিকট সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দিবেন? আমার যদি দশ জন বানাত (মেয়ে) আলাইহিন্নাস সালাম থাকতেন, তাহলে আমি একজন উনার পর আরেকজন এইভাবে ১০ জনই
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ
দিতাম। আমি সম্মানিত ওহী মুবারক উনার মাধ্যমেই সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন
আলাইহিস সালাম উনার সাথে আমার মহাসম্মানিতা বানাত (মেয়ে) আলাইহিমাস সালাম উনাদেরকে
সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দিয়েছি।” সুবহানাল্লাহ! (আশ শরী‘য়াহ ৩/৩২৭)
অপর বর্ণনায় এসেছে,
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ عِنْدِي مِائَةَ بِنْتٍ يَمُتْنَ وَاحِدَةً بَعْدَ وَاحِدَةٍ زَوَّجْتُكَ أُخْرَى
অর্থ: “যেই মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত কুদরতী হাত মুবারক-এ আমার সম্মানিত
প্রাণ মুবারক উনার কসম, যদি আমার একশত জন
বানাত (মেয়ে) আলাইহিন্নাস সালাম উনারা থাকতেন এবং একজন উনার পর অপরজন মহাসম্মানিত
বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করতেন,
তাহলে
আমি একজন উনার পর আরেকজন এইভাবে আমার একশত বানাত (মেয়ে) আলাইহিন্নাস সালাম
উনাদেরকে আপনার নিকট সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দিতাম।” সুবহানাল্লাহ! (শরহে
মুসনাদে আবী হানীফা ১/৪১৪, মিরক্বাত শরীফ
৯/৩৯২৬, জামি‘উল আহাদীছ শরীফ ১৬/২২, যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ ১/১৬৬, তারীখুল খমীস ১/২৭৬, মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ ১/৪৮১, সিমতুন নুজূম ১/৫১০, আর রিয়াদুন নাদ্বরাহ ১/২০২)
তাহলে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কত বেমেছাল তা জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার বাইরে।
সুবহানাল্লাহ!
******************************************************
মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান ইবনে আফফান আলাইহিস
সালাম উনাকে সম্মানিত ‘যুন নূরাইন’
লক্বব মুবারক হাদিয়া মুবারক-
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ حَضْرَتْ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ اَوْحٰـى اِلَـىَّ اَنْ اُزَوِّجَ كَرِيـْمَتَـىَّ مِنْ حَضْرَتْ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ حَضْرَتْ رُقَيَّةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَحَضْرَتْ اُمَّ كُلْثُوْمٍ عَلَيْهَا السَّلَامُ
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস
সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন, যিনি খালিক্ব মালিক রব
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার নিকট সম্মানিত ওহী মুবারক প্রেরণ করেছেন, আমি যেন আমার মহাসম্মানিতা দুইজন আওলাদ
আলাইহিমাস সালাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার ও
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের সম্মানিত
নিসবতে আযীম শরীফ সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে সুসম্পন্ন
করি।” সুবহানাল্লাহ! (মা’রিফাতুছ ছাহাবা-লিআবী নাঈম ২২/২২৪)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللهَ تَعَالَى أَوْحَى إِلَيَّ أَنْ أزَوِّجَ كَرِيمَتَيَّ مِنْ حَضْرَتْ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ يعنى حَضْرَتْ رقية عَلَيْهَا السَّلَامُ وحَضْرَتْ أم كلثوم عَلَيْهَا السَّلَامُ.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি
আমার নিকট সম্মানিত ওহী মুবারক প্রেরণ করেছেন, আমি যেন আমার মহাসম্মানিতা দুইজন আওলাদ আলাইহিমাস সালাম
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম ও সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ
ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে সুসম্পন্ন করি।” সুবহানাল্লাহ! (ফাদ্বাইলুছ ছাহাবা
১/১১২, আল মু’জামুল আওসাত্ব ৪/১৮, আল মু’জামুছ ছগীর ১/২৫৩, মাজমাউয যাওয়াইদ ৫/৩৮৯, আল ফাতহুল কাবীর ১/৩০৪, জামিউল আহাদীছ ৭/৪৭৬, ইবনে আদী ৫/৭০, ইবনে আসাকির ৩৯/৪১,
জামউল
জাওয়ামি’ ১/৮৩৭২, যাখয়েরুল উক্ববা
লি-মুহিব্বে ত্ববরী ১/১৬৩, সুবুলুল হুদা ওয়ার
রশাদ ১১/৩৩, আর রিয়াদ্বুন নাদ্বরাহ
১/২০২ ইত্যাদি)
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি এই সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ
উনার ফলশ্রুতিতে একখানা সম্মানিত বিশেষ লক্বব মুবারক-এ ভূষিত হন। আর সেই সম্মানিত
বিশেষ লক্বব মুবারকখানা হলেন ‘যুন নূরাইন’ অর্থাৎ সম্মানিত দুই নূর মুবারক উনাদের
অধিকারী।’ সুবহানাল্লাহ! এই সম্মানিত দুই নূর মুবারক হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুইজন মহাসম্মানিতা
আওলাদ আলাইহিমাস সালাম তথা বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি এবং বিনতু রসূলিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস
সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
এই সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
وإني زوجته ابنتي فذلك سماه الله عند الملائكة ذا النور وسماه في الجنان ذا النورين، فمن شتم حَضْرَتْ عثمان عَلَيْهِ السَّلَامُ فقد شتمني.
অর্থ: “আর নিশ্চয়ই আমি আমার দুইজন মহাসম্মানিতা বানাত (মেয়ে) আলাইহিমাস সালাম
উনাদেরকে সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনার সাথে সম্মানিত নিসবতে আযীম
শরীফ দিয়েছি। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের নিকট
সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক রেখেছেন ‘যুন নূর’ এবং
সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ উনার সম্মানিত নাম মুবারক রেখেছেন ‘যুন নূরাইন আলাইহিস
সালাম’। সুবহানাল্লাহ! ফলে যে ব্যক্তি উনাকে তিরস্কার করলো, সে মূলত আমাকেই তিরস্কার করলো।”
না‘ঊযুবিল্লাহ! (কানযুল উম্মাল ১৩/৫৩)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
إِنَّمَا يُسَمَّى حَضْرَتْ عُثْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ ذَا النُّورَيْنِ لِأَنَّهُ لَمْ يَجْمَعْ بَيْنَ ابْنَتَيْ نَبِيٍّ فِي التَّزْوِيجِ وَاحِدَةً بَعْدَ الْأُخْرَى مِنْ لَدُنْ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ إِلَّا حَضْرَتْ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَلِذَلِكَ سُمِّيَ ذَا النُّورَيْنِ
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন
আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নাম করণ মুবারক করা হয়েছে তথা উনাকে সম্মানিত লক্বব
মুবারক দেয়া হয়েছে, ‘যুন নূরাইন’। কেননা সাইয়্যিদুনা হযরত আদম ছফীউল্লাহ
আলাইহিস সালাম উনার থেকে এই পর্যন্ত একমাত্র সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান যুন নূরাইন
আলাইহিস সালাম তিনি ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তিত্ব মুবারক উনার নিকট হযরত নবী-রসূল
আলাইহিমুস সালাম উনাদের দুই মেয়েকে শাদী মুবারক দেয়া হয়নি। সুবহানাল্লাহ! আর এই
কারণেই সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনাকে ‘যুন নূরাইন’ লক্বব মুবারক হাদিয়া
মুবারক করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (আশ শরী‘য়াহ ৩/৩২৭)
এই সম্পর্কে বিশ্বখ্যাত সীরাত বিশারদ হাফিয আবুল ফিদা আল্লামা ইবনে কাছীর
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ’ উনার
মধ্যে উল্লেখ করেন,
ثُمَّ زوَّجه بِأُخْتِهَا الْأُخْرَى حَضْرَتْ أم كلثوم عليها السلام بِنْتُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلِهَذَا كَانَ يُقَالُ لِـحَضْرَتْ عُثْمَانَ بْنِ عفان ذو النورين عليه السلام
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত বিছালী শান
মুবারক প্রকাশ পাওয়ার পর উনার অপর মহাসম্মানিতা বোন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ
ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান ইবনে আফ্ফান আলাইহিস সালাম
উনার সাথে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দেন। এই জন্য উনাকে ‘যুন নূরাইন আলাইহিস
সালাম’ বলা হয়।” (বিদায়াহ-নিহায়াহ ৩/৪১৯)
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনিই একমাত্র সেই সুমহান
ব্যক্তিত্ব মুবারক যিনি পর পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুইজন মহাসম্মানিতা আওলাদ আলাইহিমাস সালাম উনাদেরকে
সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ করেন, উনাদের সম্মানিত
খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। সুবহানাল্লাহ!
তাহলে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কত বেমেছাল, সেটা জিন-ইনসান ও তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও
কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!
*********************************************************************
সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত সুওয়াল মুবারক-
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنْ حَضْرَتْ أُمِّ كُلْثُومٍ عليها السلام بِنْتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهَا قَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم زَوْجِي خَيْرٌ أَو زَوْجُ حَضْرَتْ فَاطِمَةَ عليها السلام؟ قَالَتْ فَسَكَتَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ زَوْجُكِ مِمَنْ يُحِبُّ اللهَ وَرَسُولَهُ وَيُحِبُّهُ اللهُ وَرَسُولُهُ فَوَلَّتْ فَقَالَ لَهَا هَلُمِّي مَاذَا قُلْتُ قَالَتْ قُلْتَ زَوْجِي مِمَنْ يُحِبُّ اللهَ وَرَسُولَهُ وَيُحِبُّهُ اللهُ وَرَسُولُهُ قَالَ نَعَمْ وَاَزِيْدُكِ دَخَلْتُ الْـجَنَّةَ فَرَأَيْتُ مَنْزِلَهٗ وَلَـمْ اَرَ اَحَدًا مِنْ اَصْحَابِـىْ يَعْلُوْهُ فِـىْ مَنْزِلِهٖ.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি একদা নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার
মহাসম্মানিত যাওজুম মুকাররাম তথা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি
শ্রেষ্ঠ অথবা আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার
মহাসম্মানিত যাওজুম মুকাররাম তথা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি
শ্রেষ্ঠ? সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন
নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন,
নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (আমার কথা
মুবারক শোনে অনেক্ষণ সময়) চুপ থাকলেন। তারপর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার মহাসম্মানিত যাওজুম মুকাররাম
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক
উনাদের অন্তর্ভুক্ত যেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং
উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক
করেন এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারাও সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাদেরকে মুহব্বত করেন।
সুবহানাল্লাহ! তারপর সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি
(তিনি জাওয়াব শুনে) চলে যেতে থাকলেন।
এমতাবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ
মুবারক করলেন, আপনি এখানে আসুন।
আমি আপনাকে কী বলেছি? সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আপনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, আমার মহাসম্মানিত যাওজুম মুকাররাম (সাইয়্যিদুনা হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সেই সকল ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাদের অন্তর্ভুক্ত যেই সকল
ব্যক্তিত্ব মুবারক উনারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করেন এবং
মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব,
নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ
উনারাও সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করলেন, হ্যাঁ (আমি তাই
বলেছি)। আর এখন আমি আপনাকে আরো অবহিত করছি যে, (আমি সম্মানিত মি’রাজ শরীফ উনার রাতে) সম্মানিত জান্নাত
মুবারক উনার মধ্যে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রেখে আপনার মহাসম্মানিত যাওজুম মুকাররাম
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত মনযিল তথা মাক্বাম
মুবারক দেখেছি। উনাকে এমন এক সম্মানিত সুউচ্চ মানযিল তথা মাক্বাম মুবারক দেয়া
হয়েছে, আমার ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে অন্য কারো মনযিল বা মাক্বাম মুবারক এতো
সুউচ্চ দেখিনি।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম ৪/৪৯, মুসনাদে শামিয়্যীন ১/৯৯, ইযালাতুল খফা ৬/২৭৯ ইত্যাদি)
তাহলে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কত বেমেছাল তা এখান থেকে সুস্পষ্ট
হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
***********************************************
সাইয়্যিদুনা হযরত যূন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সপরিবারে সম্মানিত হিজরত
মুবারক-
আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত ও রিসালত মুবারক প্রকাশ পাওয়ার ৫ম বছরের
কথা। মুশরিকরা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উপর যুলুমের
মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাদের অভিপ্রায় ছিলো এর মাধ্যমে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে
চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। না‘ঊযুবিল্লাহ! তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কিছু সংখ্যক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে হাবশায় (আবিসিনিয়ায়) হিজরত মুবারক করার
অনুমতি মুবারক দেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি যখন নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হাবশায় হিজরত
করার অনুমতি মুবারক প্রার্থনা করেন,
তখন
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন,
اُخْرُجْ بـِحَضْرَتْ رُقَيَّةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ مَعَكَ
অর্থ: “আপনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনাকেসহ
হাবশায় সম্মানিত হিজরত মুবারক করুন।” (মুস্তাদরকে হাকিম ৪/৫০)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা যখন হাবশায় (আবিসিনিয়ায়) সম্মানিত
হিজরত মুবারক করেন, তখন নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের সম্মানিত
খুছূছিয়াত মুবারক সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন,
اِنَّهُمَا لَاَوَّلُ مَنْ هَاجَرَ بَعْدَ حَضْرَتْ لُوْطٍ وَّحَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِمَا الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি এবং
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারাই হচ্ছেন হযরত
ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার এবং হযরত লূত আলাইহিস সালাম উনার অর্থাৎ
উনাদের পর সর্বপ্রথম (সপরিবারে) হিজরতকারী।” সুবহানাল্লাহ!’ (মুস্তাদরকে হাকিম
৪/৫০)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ خَرَجَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَمَعَهٗ حَضْرَتْ رُقَيَّةُ بِنْتُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلٰـى اَرْضِ الْـحَبَشَةِ فَاَبْطَأَ خَبَرُهُمْ عَلـٰى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدِمَتِ امْرَاَةٌ مِّنْ قُرَيْشٍ فَقَالَتْ يَا مُحَمَّدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ رَأَيْتُ خَتَنَكَ وَمَعَهُ امْرَأَتُهٗ قَالَ عَلـٰى اَىِّ حَالٍ رَاَيْتِهِمَا قَالَتْ رَأَيْتُهٗ قَدْ حَمَلَ امْرَاَتَهٗ عَلـٰى حِمَارٍ مِّنْ هٰذِهِ الدَّبَّابَةِ وَهُوَ يَسُوْقُهَا فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَحِبَهُمَا اللهُ تَعَالـٰى اِنَّ حَضْرَتْ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلامُ لَاَوَّلُ مَنْ هَاجَرَ اِلَى اللهِ تَعَالـٰى بِاَهْلِهٖ بَعْدَ حَضْرَتْ لُوْطٍ عَلَيْهِ السَّلامُ
অর্থ: “হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা বানাত সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ
আলাইহাস সালাম উনাকে নিয়ে হাবশায় সম্মানিত হিজরত মুবারক-এ গেলেন। নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উনাদের সংবাদ
মুবারক আসতে দেরি হয়ে গেলো। এর মধ্যে একজন কুরাইশী মহিলা হাবশা থেকে সম্মানিত
মক্কা শরীফ এলেন। তিনি বললেন, আমি আপনার
মহাসম্মানিত জামাতা উনাকে উনার মহাসম্মানিতা যাওজাতুম মুকাররমাহ তথা সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে দেখেছি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জানতে চাইলেন, আপনি উনাদেরকে কী অবস্থায় দেখেছেন? তিনি বললেন, আমি দেখেছি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে একটি গাধার উপর বসিয়ে
(গাধাটিকে) হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
صَحِبَهُمَا اللهُ تَعَالـٰى اِنَّ حَضْرَتْ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلامُ لَاَوَّلُ مَنْ هَاجَرَ اِلَى اللهِ تَعَالـٰى بِاَهْلِهٖ بَعْدَ حَضْرَتْ لُوْطٍ عَلَيْهِ السَّلامُ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের দু’জনের সাথী হোন। নিশ্চয়ই হযরত লূত
আলাইহিস সালাম উনার পর হযরত যূন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি
সপরিবারে সম্মানিত হিজরত মুবারক করেছেন।” সুবহানাল্লহ! (আল আহাদ ওয়াল মাছানী ১/১৪৭, আস সুন্নাহ ২/৫৯৬, দালাইলুন নুবুওওয়াহ ২/২৯৭, মা’রিফাতুছ ছাহাবাহ লিআবী নাঈম ২২/২২৬, আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ ১৬/৫৩, উসদুল গবাহ ৩/৩৫২, বিদায়াহ-নিহায়াহ ৩/৮৫, তারীখুল ইসলাম লিযযাহাবী ১/১৮৩ ইত্যাদি)