মিরাজ শরীফ রাতে নামাযে গাফলতি , যাকাত না দেওয়া এবং ব্যাভিচারী ও ব্যাভীচারিনীর শাস্তি অবলোকন
Image result for শবে মিরাজমিরাজ শরীফ রাতে নামাযে গাফলতি , যাকাত না দেওয়া এবং ব্যাভিচারী ও ব্যাভীচারিনীর শাস্তি অবলোকন

নামায-এ গাফলতিকারীদের শাস্তি:
মি’রাজ শরীফ-এর রাতে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক দলকে দেখলেন, যাদের মাথা পাথর দ্বারা পিষিয়ে চূর্ণ-বিচুর্ণ করা হচ্ছে। পিষ্ট হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় তা আগের মতো হয়ে যাচ্ছে। পুনরায় পেষা হচ্ছে এবং এভাবেই চলতে থাকে। হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এরা কারা? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এরা হচ্ছে তারা, যারা নিদ্রায় বিভোর থাকে ও নামাযের ব্যাপারে অলসতা করে। নাউযুবিল্লাহ!
যাকাত না দেয়ার শাস্তি :
মি’রাজ শরীফ-এর রাতে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক দলকে দেখলেন, যাদের লজ্জাস্থানের অগ্রভাগ ও পশ্চাদভাগ কাপড়ের টুকরা দ্বারা জড়িত। আর তারা উট ও গবাদি পশুর ন্যায় দৌড়াচ্ছে এবং যাক্কুম (তিক্ত ফল বিশিষ্ট এক প্রকার কাটাযুক্ত বৃক্ষ) ও জাহান্নামের পাথর ভক্ষণ করছে। রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা হচ্ছে সেই সব লোক, যারা নিজ মালের যাকাত দেয়নি। নাউযুবিল্লাহ!
ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিনীর শাস্তি :
মি’রাজ শরীফ-এর রাতে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটি দলকে দেখলেন, তাদের সামনে একটি পাতিলে পাকানো গোশত রয়েছে এবং অপর একটি পাতিলে কাঁচা ও দুর্গন্ধযুক্ত গোশত রয়েছে। সে লোকেরা পাকানো গোশত বর্জন করে কাঁচা ও দুর্গন্ধযুক্ত গোশত খাচ্ছে। হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এরা আপনার উম্মতের সে সব পুরুষ যারা পূণ্যবতী স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও কোন দুশ্চরিত্রা ও ব্যভিচারিনী মহিলার সাথে রাত যাপন করে ও সকাল পর্যন্ত তার নিকটই কাটায়। আর আপনার উম্মতের সে সব মহিলা, যারা পূণ্যবান স্বামী ত্যাগ করে কোন দুশ্চরিত্র ও ব্যভিচারী পুরুষের সাথে রাত যাপন করে। নাউযুবিল্লাহ!



মিরাজ শরীফে মহান আল্লাহ পাক উনার দিদার
Image result for শবে মিরাজমিরাজ শরীফে মহান আল্লাহ পাক উনার দিদার
মহান আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন,
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় হাবীবকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। (সূরা বনি ইসরাঈল ১)
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, তিনি বলেন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুইবার আল্লাহ তায়ালাকে দেখেছেন। একবার চক্ষু মোবারক দ্বারা একবার অন্তর মোবারক দ্বারা। (মু’জামুল আওসাত ৩/৩৫৬, হাদীস ৫৭ ৫৭, মু’জামুল কবীর ১২/১৭: হাদীস ১২৫৬৪, মাওয়াহিবুল্লাদুন্নিয়া ৩/৩৯৭, উমদাতুল ক্বারী ১৯/১৯৯ , খাসায়েসুল কোবরা ১/২৬৭)
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুসনাদে সহীহ সনদে বর্ননা করেন, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, তিনি বলেন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, আমি আল্লাহ তাবারক ওয়া তায়ালকে দেখেছি। (মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ১/২৯০: হাদীস ২৬৩৪, জামেউছ ছগীর : হাদীস ৪৩৭৭)
লা’মাযহাবীদের গুরু নাছির উদ্দীন আলবানী তার সহীহুল জামের ৩৪৬৬ নং হাদীসে উক্ত বর্ননা কে সহীহ বলে উল্লেখ করেছে।
হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আইশ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন , আমি মহান রব তায়ালাকে উত্তম সূরতে দেখেছি।” (দারেমী শরীফ ২/১৭০: হাদীস ২১৪৯, মিশকাতুল মাছাবীহ ১/২২৫: হাদীস ৭২৫, মিরকাতুল মাফাতীহ : কিতাবুল মসজিদ, শরহে শিফা ১/৪২৮)
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান রব্বুল আলামীন উনাকে দেখেছেন। (ইবনে খুযাইমা ২/৮৮৯, শরহে মাওয়াহেব ৬/১১৮)
বিশিষ্ট তাবেয়ী শারীক রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন, অত্র আয়াত শরীফ (হৃদয় যা দেখেছে তা মিথ্যা নয়) প্রসঙ্গে , হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তায়ালার দর্শন লাভ করেছেন। (শরহে শিফা ১/৪২৬)
হযরত মুয়াজ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, আমি আমার প্রভুকে দেখেছি। (মিশকাতুল মাছাবীহ ৭২ পৃষ্ঠা)
হযরত হাছান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি কসম করে বলেছেন, নিশ্চয়ই হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক ইনাকে দেখেছেন। (শিফা শরীফ ১/১১৫)
হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই আমি আমার রব তায়ালা উনাকে দেখেছি। (তিরমিযী শরীফ : হাদীস শরীফ ৪২৩৫, ফিরদাউস লি দয়লামী ২/২৫৪ : ৩১৮৩)
উক্ত হাদীস শরীফ সর্ম্পেকে ইমাম তিরমীযি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বলতে শুনছি এই হাদীস শরীফ সহীহ।
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, আমি আমার রব তায়ালা উনাকে দেখেছি। উনার কোন তুলনা বা মেছাল নেই।” (ফিরদাউস লি দয়লামী ২/২৫৪ : ৩১৮৩)
ইমাম আবু আছেম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে সহীহ সনদে হযরত ইকরামা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রব তায়ালা উনাকে দেখেছেনঃ। (আস সুন্নাহ লি ইবনে আছিম ১/১৯০ : ৪৩৭)
হযরত ক্বাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন। (খাছায়েছুল কোবরা ১/২৫৯)
ইমাম বাজ্জার রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রব তায়ালা উনাকে দেখেছেন। (মুসনাদে বাযযার ৫১৮৫, আবু ইয়লা ২৬০৮)
ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হযরত মারওয়ান রহমতুল্লাহি একদা হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন ? তিনি বললেন হ্যাঁ। (শরহে শিফা ১/১১৯)
ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ কথা সহীহ যে মিরাজ শরীফ রজনীতে , হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন। (ইহয়াউ উলুমুদ্দীন)
মুসলিম শরীফ এর ব্যাখ্য কারক ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম উনাদের অভিমত হচ্ছে মিরাজ শরীফের রাতে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক উনাকে কপাল মুবরাক এর চক্ষু মুবারক দ্বারা দেখেছেন। (শরহে মুসলিম, শরহে মাওয়াহেব ৬/১৬৬)
আর তাই মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন,
ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّىٰ
فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَىٰ
فَأَوْحَىٰ إِلَىٰ عَبْدِهِ مَا أَوْحَىٰ
مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَىٰ
مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَىٰ
অতঃপর নিকটবর্তী হলেন ও ঝুঁকে গেলেন। দুই ধনুকের অথবা আরও কম। তখন আল্লাহ যা ওহী করবার, তা করলেন। অন্তর মিথ্যা বলেনি যা তিনি দেখেছে। তোমরা কি বিষয়ে বিতর্ক করবে যা তিনি দেখেছেন? (সূরা নজম ৮-১২)



ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে রজবিয়া হারাম কিন্তু মিরাজ শরীফ উপলক্ষ্যে রোযা রাখা ফযীলতপূর্ণ
Image result for শবে মিরাজইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে রজবিয়া হারাম কিন্তু মিরাজ শরীফ উপলক্ষ্যে রোযা রাখা ফযীলতপূর্ণ
পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ রাতে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয়তম রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বশরীর মুবারক-এ মহান আল্লাহ পাক উনার দিদার মুবারক-এ যান। তাই রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ রাত হচ্ছে পবিত্র লাইলাতুল মিরাজ শরীফ বা শবে মিরাজ শরীফ উনার রাত। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা এবং অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা পবিত্র মিরাজ শরীফ প্রমাণিত। উনার শান-মান, ইজ্জত ঐতিহ্য, বুযূর্গী ও মর্যাদা এত অধিক যে, যা বর্ণনা করার ভাষা মানুষের নেই। এক কথায় বলা যায় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার শান-মান, বুযূর্গী, মর্যাদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহান শান-মান ও মর্যাদা উনাদের অনুরূপ। পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার দিবাভাগে রোযা রাখার ব্যাপারে অসংখ্য হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে এবং মিরাজ শরীফ উপলক্ষ্যে ২৭শে রজব তারিখের রোযার অসংখ্য ফাযায়িল-ফযীলতও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। যা গুনাহখতা মাফ ও ক্ষমা, মর্যাদা বৃদ্ধি, অসংখ্য ফযীলত ও নাযাতের কারণও বটে।
এ প্রসঙ্গে ওলীয়ে মাদারজাত, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউছে সামদানী, মাহবুবে ইলাহী, মুজাদ্দিদে যামান, গাউছুল আযম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, আওলাদুর রসূল সাইয়্যিদ মহিউদ্দিন আব্দুল কাদির জিলানী বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তার বিশ্বখ্যাত কিতাব “গুন্ইয়াতুত তালিবীন” নামক কিতাবে শবে মিরাজ-এর তথা রজব মাসে ২৭ তারিখের রোযার ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফগুলো বর্ণনা করেন। যেমন-
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه عـن النبى صلى الله عليه وسلم قال من صام يوم السابع والعشرين من رجب كتب له ثواب صيا م ستين شهرا.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখে তথা শবে মিরাজ শরীফ উনার দিবাভাগে রোযা রাখবে তার আমলনামায় ৬০ মাসের রোযা রাখার ছওয়াব লেখা হবে। (সুবহানাল্লাহ) (আল ইতহাফ ৫ম খণ্ড পৃষ্ঠা ২০৮, আল মা’য়ানী আনিল হামলিল ইসফার প্রথম খণ্ড ৩৬৭ পৃষ্ঠা, গুনিয়াতুত তালিবীন, ক্বিসমুস ছায়ালিস ৩৩২ পৃষ্ঠা)
এ প্রসঙ্গে উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত আছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه وسلمان الفارسى رضى الله عنه قالا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان فى رجب يوما و ليلة من صام ذالك اليوم وقام تلك اليلة كان له من الاجر كمن صام مأة سنة وقامهما وهى لثلاث بقين من رجب.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত সালমান ফারিসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের উভয়েই বর্ণনা করেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার এমন একটি দিন ও রাত আছে ওই রাত্রে যে ব্যক্তি ইবাদত-বন্দিগী করবে এবং দিবাভাগে রোযা রাখবে তার আমলনামায় ওই পরিমাণ ছওয়াব লেখা হবে যে পরিমাণ ছওয়াব কোন ব্যক্তি একশত বছর রাতে ইবাদত-বন্দিগী করলে এবং একশত বছর দিনের বেলায় রোযা রাখলে তার আমলনামায় যেরূপ ছওয়াব লেখা হয়। আর সেই মুবারক রাত ও দিনটিই হচ্ছে রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ তথা পবিত্র শবে মি’রাজ শরীফ উনার রাত ও দিনটি।” (সুবহানাল্লাহ)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ খাদিম হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে মুসলমান নর ও নারী রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার মধ্যে একদিন রোযা রাখবে এবং একরাত ইবাদত করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার আমলনামায় পূর্ণ এক বছর দিনে রোযা রাখার ও রাতে ইবাদত করার ছাওয়াব লিখে দিবেন। সুবহানাল্লাহ।
উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র শবে মি’রাজ শরীফ উনার রাত্রিতে ইবাদত-বন্দিগী করা এবং দিবাভাগে রোযা রাখা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে আরো অসংখ্য হাদীছ শরীফ রয়েছে।
অথচ কিছু বিদয়াতী রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার মধ্যে রোযা রাখার বিরোধিতা করে থাকে। তারা দলীল হিসেবে যে হাদীছ শরীফখানা পেশ করে তাহলো-
“হযরত খারশাতা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনাকে দেখেছি যে, তিনি এক ব্যক্তিকে রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার মধ্যে রোযা রাখার কারণে তার হাতে বেত্রাঘাত করেছেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি রোযা ভঙ্গ না করেছে।”
মূলতঃ বিদয়াতীরা উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সঠিক ব্যাখ্যা না জানার কারণেই বিভ্রান্তিতে পড়েছে। উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সঠিক ব্যাখ্যা হলো- জাহিলিয়াতের যুগে যিলহজ্জ শরীফ মাস ও রজবুল হারাম শরীফ মাস উনাদের মধ্যে কুরবানী করা হতো এবং রোযাও রাখা হতো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার কুরবানী ও রোযা বহাল রেখেছেন আর রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার কুরবানী ও কুরবানী উপলক্ষ্যে যে রোযা রাখা হতো যাকে রজবিয়া বলা হতো তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি যে ব্যক্তিকে বেত্রাঘাত করেছেন সে জাহিলিয়াত যুগের রসম অনুযায়ী রজবিয়া রোযা রেখেছিল। তাই তিনি তার রোযা ভাঙ্গতে বাধ্য করেন। নচেৎ হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার কি একথা জানা ছিল না যে, বছরের মাত্র পাঁচ দিন রোযা রাখা ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে নিষিদ্ধ।” এছাড়া বছরের যে কোন দিন বা মাসে রোযা রাখা জায়িয। যদি তাই হয়ে থাকে তবে অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা রজছুল হারাম শরীফ মাস উনার রোযা রাখা প্রমাণিত হওয়ার পরও তিনি কেন তাকে রোযা রাখতে নিষেধ করবেন।
কাজেই যেসব নামধারী আলিম তথা উলামায়ে সূ’রা পবিত্র শবে মি’রাজ শরীফ উপলক্ষ্যে রোযা রাখাকে বিদ্্য়াত ও গুনাহের কাজ বলে তাদের উক্ত সমস্ত কথা ও কাজগুলো পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ তথা ইসলামী শরীয়ত উনার বিরোধী, মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন ও কুফরীমূলক। অর্থাৎ সেসব নামধারী আলিম তথা উলামায়ে সূ’রা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে বিদ্য়াত বলে মূলত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করে থাকে। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ যেহেতু পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ন্যায় ওহীর অন্তর্ভুক্ত। কাজেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করার অর্থই হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে অস্বীকার করা। যা কাট্টা কুফরী।
ইসলামী শরীয়ত উনার মূল উছূল হচ্ছে- কোন মুসলমান যদি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করে, বিদ্য়াত বলে কিংবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, সে ঈমান থেকে খারিজ হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদে পরিণত হবে।
আর মুরতাদের হুকুম হচ্ছে- সে যদি বিয়ে করে থাকে তাহলে তার স্ত্রী তালাক হবে, হজ্জ করে থাকলে তা বাতিল হবে, সমস্ত নেক আমল বরবাদ হবে। এ অবস্থায় মারা গেলে তার গোসল কাফন-দাফন এবং জানাযা কোনটাই করা জায়িয হবে না। এবং তাকে কোন মুসলমানদের করবস্থানেও দাফন করা যাবে না। তাকে কুকুর, শৃগালের ন্যায় গর্তে পুঁতে রাখতে হবে। আর যদি সে ইমাম বা খতীব হয়ে থাকে, তাহলে মুসলমান হিসেবে মুছল্লীদের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে উক্ত ইমাম ও খতীবকে ইমাম ও খতীবের পদ থেকে বহিস্কার করে এলাকাবাসীর সকল মুছল্লীদের ঈমান আক্বীদা হিফাযত করা। এরূপ কুফরীমূলক ফতওয়া দেয়ার পর থেকে তার পিছনে নামায-কালাম পড়া কোনটাই জায়িয হবে না। যদি কেউ তার পিছনে নামায আদায় করে থাকে তাহলে মুছল্লীদের দায়িত্ব-কর্তব্য হবে সমস্ত নামায দোহরায়ে পড়া। যা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। (ফতওয়ায়ে শামী, আলমগীরী, বাহরুর রায়েক, আইনী ইত্যাদি ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহ)
পবিত্র মি’রাজ শরীফ সংক্রান্ত বিশুদ্ধ আক্বীদা
Image result for মিরাজ শরীফপবিত্র মি’রাজ শরীফ সংক্রান্ত বিশুদ্ধ আক্বীদা
পবিত্র রজববুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ দিবাগত রাতটিই পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার রাত। এ রাত এক বেমেছাল মাহাত্ম্যপূর্ণ রাত। এ রাতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাৎ মুবারকে গিয়েছিলেন। পবিত্র মি’রাজ শরীফ এলেই উলামায়ে ‘সূ’ গং বলতে থাকে যে, পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার তারিখ নিয়ে মতপার্থক্য আছে, তাই পালন করা উচিত নয়। এর জবাবে বলতে হয়, কোনো বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলে যদি তা পালন নিষিদ্ধ হয়, তাহলে উলামায়ে ‘সূ’রা মহান আল্লাহ পাক উনাকে একজন মানে কেন? কারণ হিন্দুদের ৩৩ কোটি দেব-দেবী, আবার খ্রিস্টানদের ৩ জন সৃষ্টিকর্তা। সুতরাং মতপার্থক্য থাকলে মশহুর বা প্রসিদ্ধ মতটি গ্রহণ করতে হবে। মশহুর বা প্রসিদ্ধ মতে, পবিত্র মি’রাজ শরীফ সংঘটিত হয়েছিলো পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ রাতে ইছনাইনীল আযীম শরীফ (সোমবার)-এ অর্থাৎ ২৬শে রজবুল হারাম শরীফ দিবাগত রাতে।
যেমন, বিশ্ববিখ্যাত সর্বজনমান্য মুহাদ্দিছ আরিফ বিল্লাহ আল্লামা হযরত শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ’ কিতাবের ৭৩ পৃষ্ঠায় বলেন, “জেনে রাখুন! নিশ্চয়ই আরব জাহানের দেশগুলোর লোকদের মধ্যে মশহূর বা প্রসিদ্ধ ছিলো যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মি’রাজ শরীফ সংঘটিত হয়েছিলো পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ রাতেই।”

আবার এক শ্রেণীর উলামায়ে ‘সূ’রা বলে থাকে- “পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ পর্যন্ত ঘটনা বিশ্বাস করা ফরয এবং বাকী অংশ বিশ্বাস করা নফল।” তাদের এই কুফরীমূলক বক্তব্যের জবাবে বলতে হয়ে, পবিত্র মি’রাজ শরীফ বলতে মূলত পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার দীদার মুবারক উনাকেই বুঝানো হয়। আর পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ পর্যন্ত রাতের ভ্রমণকে ইসরা বলা হয়। পবিত্র মি’রাজ শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার উম্মতের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায হাদিয়া করেছেন; যা মুসলমানদের জন্য আদায় করা ফরয করা হয়েছে। তাহলে নামায সংশ্লিষ্ট সেই ঘটনা মুবারক বিশ্বাস করা কি করে নফল হতে পারে? মূলত, পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার পুরো ঘটনা বিশ্বাস করাই ফরয। কারণ পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার আংশিক বিশ্বাস করা নামায অস্বীকারের নামান্তর। আর পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার পাঁচ রুকনের একটি রুকন অস্বীকারকারী মুসলমান থাকতে পারে না।

আবার আরেক শ্রেণীর উলামায়ে ‘সূ’ গং বলে থাকে যে- “পবিত্র মি’রাজ শরীফ স্বপ্নে মুবারক এ সংঘটিত হয়েছিল।” নাউযুবিল্লাহ। পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার সমগ্র ছফর যে শুধু আত্মিক ছিল না, বরং সশরীর মুবারক-এ অর্থাৎ দৈহিকভাবে ছিল- একথা পবিত্র কুরআন শরীফ এবং অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা প্রমাণিত। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র সূরা বনী ইসরাইল শরীফ উনার ১নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার প্রথমে ‘সুবহানা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ শব্দটি আশ্চর্যজনক ও মহান বিষয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। পবিত্র মি’রাজ শরীফ যদি শুধু আত্মিক অর্থাৎ স্বপ্ন জগতে সংঘটিত হতো, তবে তাতে আশ্চর্যের বিষয় কি আছে? স্বপ্নে তো প্রত্যেক মুসলমান- বরং প্রত্যেক মানুষ দেখতে পারে যে, সে আকাশে উঠেছে, অবিশ্বাস্য অনেক কাজ করেছে। আবার উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ‘আব্দুন’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আত্মা ও দেহ উভয়ের সমষ্টিকে ‘আব্দুন’ বলা হয়।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার ঘটনা হযরত উম্মে হানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার নিকট বর্ণনা করলেন, তখন তিনি বলেছিলেন: আপনি দয়া করে কারো কাছে একথা প্রকাশ করবেন না; প্রকাশ করলে কাফিররা আপনার প্রতি আরো বেশি মিথ্যারোপ করবে। ব্যাপারটি যদি নিছক স্বপ্নই হতো, তবে মিথ্যারোপ করার কি কারণ ছিল? এর দ্বারা স্পষ্টভাবেই পরিস্ফুটিত হয় পবিত্র মি’রাজ শরীফ সশরীরেই সংঘটিত হয়েছিল।
পবিত্র মি’রাজ শরীফ সংঘটনের মাস ও তারিখ এলেই উলামায়ে ‘সূ’রা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিনা মুবারক চাক প্রসঙ্গে কুফরী আক্বীদা প্রচার করতে থাকে। তারা বলে থাকে যে, পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার রাতে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিনা মুবারক চাক করে শয়তানের অংশ বের করা হয়েছিল। নাঊযুবিল্লাহ! ওই সমস্ত উলামায়ে ‘সূ’দের কাছে প্রশ্ন- তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি কেন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সূরা ইনশিরাহ উনার ১নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন, “আমি কি আপনার বক্ষ মুবারক উনাকে প্রশস্ত (চাক) করেনি?” যদি শয়তানের অংশই থাকতো (নাঊযুবিল্লাহ!), তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলতেন- “আমি কি আপনার ক্বলব মুবারক উনাকে প্রশস্ত (চাক) করিনি?”

মূলত, সিনা মুবারক চাক করা উনার সীমাহীন মর্যাদারই বহিঃপ্রকাশ।
আবূ দাউদ, নাসায়ী, মুসনদে আব্দুর রাযযাক ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুশ শিফা (ইস্তিঞ্জা মুবারক), নূরুন নাজাত (রক্ত মুবারক) পান করার কারণে পানকারী ব্যক্তি জান্নাতী বলে সুসংবাদপ্রাপ্ত হয়েছেন। এছাড়া বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব ‘দুররুল মুখতার’-এ উল্লেখ আছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার সবকিছুই পবিত্র থেকে পবিত্রতম এবং সে সমস্ত নিয়ামত মুবারক যাঁর বা যাঁদের ভিতর প্রবেশ করেছে বা করবে উনার জন্য জাহান্নাম হারাম হয়ে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ! তাহলে কি করে এ কথা বলা যেতে পারে- ‘হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক থেকে নাপাকী বের করা হয়েছে?’ নাঊযুবিল্লাহ! একমাত্র কাট্টা কাফিরের পক্ষেই এ ধরনের কথা উচ্চারণ করা সম্ভব।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মি’রাজ শরীফ শেষ করে ফিরে আসার পরও ওযুর পানি গড়িয়ে পড়ছিল, দরজার কড়া নড়ছিল এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছানা মুবারক গরম ছিল।
এক শ্রেণীর তথাকথিত শিক্ষিত ও নামধারী মালানারা বলে থাকে যে- “যেহেতু পবিত্র মি’রাজ শরীফ ২৭ বছরব্যাপী সংঘটিত হয়েছিল; তাই মি’রাজ শরীফ সংঘটিত হওয়ার সময় পৃথিবীর সময়কে স্থির করে দেয়া হয়েছিল।” এ বক্তব্যের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করতে চায় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সময়ের মুখাপেক্ষী। নাঊযুবিল্লাহ!
হযরত উযাইর আলাইহিস সালাম তিনি ১০০ বছর যাবৎ নিদ্রারত ছিলেন। এই সময়কালের মধ্যে উনার বাহন গাধাটি মরে পঁচে মাটির সাথে মিশে গেল। কিন্তু উনার খাদ্য মুবারক অক্ষত অবস্থায় রইলো। মুবারক নিদ্রা ভঙ্গের পর তিনি যখন নিজ এলাকায় ফিরে আসলেন, তখন দেখতে পেলেন উনার পুত্রের বয়স মুবারক ২০ থেকে ১২০ বছর। এক্ষেত্রে উলামায়ে ‘সূ’ গং কি জবাব দেবে? সময় যদি স্থিরই করতে হয়, তাহলে পুত্রের বয়স কিভাবে পিতার বয়সের চেয়ে বেশি হলো?
উল্লেখ্য যে, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা হলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধুমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার মুখাপেক্ষী এবং বাকি সবকিছুই উনার মুখাপেক্ষী।
আবার কোনো কোনো গুমরাহ ও কাফির লোকেরা পবিত্র মি’রাজ শরীফ সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করে বলে থাকে যে, “এত অল্প সময়ে কি করে সাত আসমান অতিক্রম করে পবিত্র আরশে আযীমে যাওয়া এবং জান্নাত ও জাহান্নাম পরিদর্শন করে যমীনে ফিরে আসা সম্ভব?” নাঊযুবিল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাদিম হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনিসহ সকল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা যেখানে চোখের পলকে আসমান থেকে যমীনে এবং যমীন থেকে আসমানে আসা-যাওয়া করেন; সেখানে উনার পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার ব্যাপারে কি করে সংশয় প্রকাশ করা যেতে পারে?
পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার বরকতময় দিনে রোযা রাখার সাথে সাথে পহেলা রজবুল হারাম শরীফ দিনের রোযা, পবিত্র লাইলাতর রগায়িব শরীফ উনার রোযা রাখা অসংখ্য ফযীলত ও নাজাতের কারণ। অথচ উলামায়ে ‘সূ’রা পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার মধ্যে রোযা রাখার ব্যাপারে বিরোধিতা করে থাকে এবং বিদয়াত ফতওয়া দেয়। নাঊযুবিল্লাহ! তারা দলীল হিসেবে হযরত খারশাতা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত একটি হাদীছ শরীফ পেশ করে। গন্ডমূর্খ, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল হওয়ার কারণেই উলামায়ে ‘সূ’রা উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সঠিক ব্যাখ্যা না জেনে কুফরীমূলক বক্তব্য পেশ করে। উক্ত পবিত্র হাদীছ উনার বর্ণনায় হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি যে ব্যক্তিকে বেত্রাঘাত করেছেন, সে জাহিলিয়াত যুগের রসম অনুযায়ী রজবিয়া রোযা রেখেছিল। তাই তিনি তার রোযা ভাঙ্গতে বাধ্য করেন।
পবিত্র মি’রাজ শরীফ উপলক্ষে রোযা রাখার ব্যাপারে অসংখ্য হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে এবং মি’রাজ শরীফ উপলক্ষে ২৭শে রজব তারিখের রোযা রাখার অসংখ্য ফাযায়িল-ফযীলতও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা প্রমাণিত।
এ প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুল আউলিয়া বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব “গুন্ইয়াতুত তালিবীন” নামক কিতাবে বর্ণনা করেছেন। যেমন- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখে তথা পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার দিনের বেলায় রোযা রাখবে তার আমলনামায় ৬০ মাসের রোযা রাখার ছওয়াব লেখা হবে।” সুবহানাল্লাহ! (আল ইতহাফ ৫ম খ- পৃষ্ঠা ২০৮, আল মা’য়ানী আনিল হামলিল ইসফার প্রথম খ- ৩৬৭ পৃষ্ঠা, গুনিয়াতুত তালিবীন, ক্বিসমুস ছায়ালিস ৩৩২ পৃষ্ঠা)
এ প্রসঙ্গে উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত আছে, “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত সালমান ফারিসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বর্ণনা করেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার মধ্যে এমন একটি দিন ও রাত আছে; ওই রাত্রে যে ব্যক্তি ইবাদত-বন্দেগী করবে এবং দিনের বেলায় রোযা রাখবে তার আমলনামায় ওই পরিমাণ ছওয়াব লেখা হবে- যে পরিমাণ ছওয়াব কোনো ব্যক্তি একশত বছর রাতে ইবাদত- বন্দেগী করলে এবং একশত বছর দিনের বেলায় রোযা রাখলে তার আমলনামায় যেরূপ ছওয়াব লেখা হয়। আর সেই মুবারক রাত ও দিনটিই হচ্ছে পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ তথা পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার রাত ও দিনটি।” সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করা এবং দিনের বেলা রোযা রাখা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত এবং অসংখ্য ফযীলত ও নাজাতের কারণ।
আবার অনেকে পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার ঘটনাকে যবন, মেøচ্ছ, আইনস্টাইনের ঊ=সপ২ নামক সূত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার অপচেষ্টা চালায়। এটা মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মু’জিযা শরীফ উনাদেরকে ইহানত করার শামিল। নাউযুবিল্লাহ!
তাই মুসলমানদের উচিত- পবিত্র মি’রাজ শরীফ সংক্রান্ত কুফরী আক্বীদাগুলো এবং মনগড়া ব্যাখ্যাগুলো পরিহার করে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের মতো বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করা।


খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তাওফীক দান করুন এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইহসান করুন। আমীন।
কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে মি’রাজ শরীফ ও বিশুদ্ধ আক্বীদা
Image result for মিরাজ শরীফকুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে মি’রাজ শরীফ ও বিশুদ্ধ আক্বীদা
মুবারক নুবুওওয়াতের একাদশতম বছরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জাহিরীভাবে (সকলের অবগতিতে) মহান আল্লাহ পাক উনার বরকতময় দীদার মুবারক লাভে ধন্য হন। হাক্বীক্বীভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুরু থেকেই মহান আল্লাহ পাক উনার দীদার মুবারক-এ মশগুল ছিলেন, বর্তমানে আছেন এবং অনন্তকাল ধরে থাকবেন। এটাই বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য অভিমত। আর প্রসিদ্ধতম অভিমত হচ্ছে, ২৭শে রজব তথা ২৬শে রজব দিবাগত রাত্রে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি বা রোজ সোমবার পবিত্র মি’রাজ শরীফ সংঘটিত হয়েছিল।
পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ থেকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক রাতে প্রথমে বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ পর্যন্ত অতঃপর বরকতময় দীদার মুবারক আরশে আযীমে লাভের জন্য ভ্রমণ করেছেন। যা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। তাই পবিত্র মি’রাজ শরীফ অস্বীকারকারীরা কাফির। এছাড়া আসমানসমূহের ভ্রমণ ও নৈকট্যের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছা তাও কুরআন শরীফ ও নির্ভরযোগ্য, বিশুদ্ধ এবং প্রসিদ্ধ অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত, যেগুলো হাদীছ মুতাওয়াতির অন্তর্গত। আম ফতওয়া মতে, মি’রাজ শরীফ অস্বীকারকারী পথভ্রষ্ট ও গুমরাহ। আর খাছ ফতওয়া মতে, এরা কাফিরের অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র মি’রাজ শরীফ জাগ্রত অবস্থায় সশরীর মুবারকে সংঘটিত হয়েছে। এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের ইমাম, মুজতাহিদ, মু’তাক্বিদ ও মুকাল্লিদগণ উনাদের আক্বীদা বা দৃঢ় বিশ্বাস। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবীগণও এতে দৃঢ় বিশ্বাসী। সুস্পষ্ট ও সন্দেহাতীত অর্থ সম্বলিত কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ থেকে এটাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।
হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার বুরাক মুবারক নিয়ে হাযির হওয়া, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে চূড়ান্ত তা’যীম, তাকরীম, সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শনপূর্বক আরোহণ করে নিয়ে যাওয়া, ‘বাইতুল মুকাদ্দাস’ শরীফ-এর মধ্যে বিশ্বকুল সাইয়্যিদ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমস্ত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ইমামতি করা, অতঃপর সেখান থেকে আসমানসমূহের ভ্রমণের প্রতি মনোনিবেশ করা, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার প্রত্যেক আসমানের দরজা খোলানো, প্রত্যেক আসমানের উপর সেখানে অবস্থানরত উচ্চ মর্যাদাশীল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে দীদার দেয়া, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা এবং উনার শুভাগমনের জন্য মুবারকবাদ জানানো, এক আসমান থেকে অপর আসমানের দিকে ভ্রমণ করা, সেখানকার অত্যাশ্চর্যজনক নিদর্শনাদিকে ছোহবত দেয়া, জাহিরীভাবে সমস্ত নৈকট্য প্রাপ্তদের ওই চূড়ান্ত গন্তব্য স্থান সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছা, যেখান থেকে সম্মুখে অগ্রসর হওয়া কোনো নৈকট্যধন্য হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও অবকাশ নেই, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার সেখানেই আপন অপারগতার জন্য ক্ষমা চেয়ে থেকে যাওয়া, অতঃপর বিশেষ নৈকট্যের স্থানে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উন্নতির বহিঃপ্রকাশ ঘটা ও উচ্চতম নৈকট্যে পৌঁছার আনুষ্ঠানিকতা জাহির হওয়া, যেখানে কোনো সৃষ্টির কল্পনা, ধারণা ও চিন্তা ভাবনা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না, সেখানে করুণা ও দয়ার অবতরণ স্থল হওয়া এবং মহান আল্লাহ পাক উনার পুরস্কারাদি ও জাহিরীভাবে বিশেষ গুণাবলী লাভ করে ধন্য হওয়া এবং ছুরতান আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব এবং তদাপেক্ষা উত্তম জগতের ইলমসমূহ লাভ করা, জান্নাত ও জাহান্নাম পরিভ্রমণ করা, মহান আল্লাহ পাক উনার হাক্বীক্বীভাবে দীদার লাভ, অতঃপর আপন স্থানে পুনরায় তাশরীফ নিয়ে আসা, উক্ত ঘটনার খবর দেয়া, কাফিরদের এই ঘটনার উপর হৈ চৈ করা, বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ-এর ইমারতের অবস্থা ও সিরিয়া গমনকারী কাফিলাসমূহের অবস্থাদি সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞাসিত হওয়ার পর বর্ণনা করা, কাফিলাগুলোর যে অবস্থা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বর্ণনা করেছেন ফিরে আসার পর সেগুলোর সত্যতা প্রমাণিত হওয়া ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত এবং অসংখ্য হাদীছ শরীফ উক্ত সব বিষয়ের বিবরণ ও সেগুলোর বিস্তারিত বর্ণনায় পরিপূর্ণ।

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ-এ সূরা বনী ইসরাইল-এর ১ম আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “পূত-পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা উনি, যিনি স্বীয় বান্দা তথা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রাত্রির একাংশে মসজিদুল হারাম তথা বাইতুল্লাহ শরীফ থেকে মসজিদুল আক্বছা বা বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন যার চারপাশে আমি পর্যাপ্ত রহমত, বরকত, ছাকীনা দান করেছি; যাতে আমি উনাকে আমার কুদরতের কিছু নিদর্শন (জাহিরীভাবে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে) দেখিয়ে দেই। বিশেষ করে আমার সাক্ষাৎ দিয়ে দেয়ার জন্য। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।”
উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এ ‘আসরা’ শব্দটি ‘ইসরাউ’ ধাতু থেকে উদ্ভূত। এর আভিধানিক অর্থ রাত্রে ভ্রমণ করা। এরপর ‘লাইলান’ শব্দটি স্পষ্টত এ অর্থ ফুটিয়ে তুলেছে। শব্দটি ‘নাকিরাহ’ ব্যবহার করে এ দিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, সমগ্র ঘটনা সম্পূর্ণ রাত্রিতে নয়, বরং রাত্রির একটা সামান্য অংশ ব্যয়িত হয়েছে। আয়াতে উল্লিখিত মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আক্বছা পর্যন্ত সফরকে “ইসরা” বলা হয় এবং সেখান থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার দীদার লাভ করা পর্যন্ত সফরকে “মি’রাজ” বলা হয়। ইসরা ও মি’রাজ উভয়টাই কুরআন শরীফ-এর অকাট্য আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। এছাড়াও মি’রাজ শরীফ সূরা নজমে উল্লিখিত রয়েছে এবং অনেক মুতাওয়াতির হাদীছ শরীফ দ্বারাও প্রমাণিত। সম্মান, মর্যাদা, ফাযায়িল, ফযীলত-এর স্তরে ‘বি-আব্দিহি’ শব্দটি একটি বিশেষ প্রেমময়তার, মুহব্বতের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। কেননা, আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং কাউকে “আমার বান্দা” বললে এর চাইতে বড় সম্মান কারো জন্য আর হতে পারে না।
ইসরা ও মি’রাজ শরীফ-এর সমগ্র সফর যে শুধু আত্মিক ছিল না, বরং সশরীর মুবারক-এ অর্থাৎ দৈহিক ছিল একথা কুরআন শরীফ-এর বক্তব্য এবং অসংখ্য মুতাওয়াতির হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। আলোচ্য আয়াত শরীফ-এর প্রথম ‘সুবহানা’ শব্দের মধ্যে এ দিকেই ইঙ্গিত রয়েছে। কেননা এ শব্দটি আশ্চর্যজনক ও মহান বিষয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। মি’রাজ শরীফ যদি শুধু আত্মিক অর্থাৎ স্বপ্ন জগতে সংঘটিত হত, তবে তাতে আশ্চর্যের বিষয় কি আছে? স্বপ্নে তো প্রত্যেক মুসলমান বরং প্রত্যেক মানুষ দেখতে পারে যে, সে আকাশে উঠেছে, অবিশ্বাস্য অনেক কাজ করেছে। ‘সুবহানা’ শব্দ দ্বারা এদিকেই দ্বিতীয় ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ শুধু আত্মাকে ‘আব্দুন’ বলে না; বরং আত্মা ও দেহ উভয়ের সমষ্টিকে ‘আব্দুন’ বলা হয়। তাছাড়া হযরত ইমাম সারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে ৩৩ থেকে ৩৪ বার মি’রাজ শরীফ করেছেন। এর মধ্যে একবার সশরীরে আর বাকিবার হয়েছে স্বপ্নের মাধ্যমে তথা রূহানীভাবে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মি’রাজ শরীফ-এর ঘটনা হযরত উম্মে হানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার নিকট বর্ণনা করলেন, তখন তিনি বলেছিলেন: আপনি দয়া করে কারো কাছে একথা প্রকাশ করবেন না; প্রকাশ করলে কাফিররা আপনার প্রতি আরও বেশি মিথ্যারোপ করবে। ব্যাপারটি যদি নিছক স্বপ্নই হতো, তবে মিথ্যারোপ করার কি কারণ ছিল? এর দ্বারা স্পষ্টভাবেই পরিস্ফুটিত হয় মি’রাজ শরীফ সশরীরেই সংঘটিত হয়েছিল। এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের বিশুদ্ধ আক্বীদা।
পবিত্র মি’রাজ শরীফ সম্পর্কিত সূরা বনী ইসরাইল-এর প্রথম আয়াত শরীফ-এ ‘লাইলান’ শব্দ দ্বারা রাতের সময়কে বুঝানো হয়েছে। যার সুস্পষ্টতা আমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীছ শরীফ দ্বারা অনুধাবন করতে পারি। হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ রয়েছে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মি’রাজ শরীফ থেকে ফিরে এসে শায়িত বিছানা মুবারকের গরম অনুভব করেছিলেন। মি’রাজ শরীফ-এ যাওয়ার পূর্বেকার ওযু করা পানি মুবারক মি’রাজ শরীফ থেকে এসে গড়িয়ে যেতে দেখেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ এ সময়ে কুল কায়িনাতের সমস্ত মাখলূক্বাতকে দীদার দিয়ে ধন্য করেছিলেন। যার সময় ছিল দীর্ঘ ২৭ বছর। সুবহানাল্লাহ! বদ আক্বীদা, বদ মাযহাবের নাদান, মূর্খ, অথর্ব লোকেরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মু’জিযা শরীফ-এর অন্তর্ভুক্ত অতি অল্প সময়ে ২৭ বছর অতিবাহিত করাকে অস্বীকার করে থাকে। অথচ তাদের এই অস্বীকার করা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে মূর্খ ও কাফির হওয়ার সাক্ষর বহন করে।
কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার রঙে রঞ্জিত হও।” আর মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আল্লাহ পাক উনার ছিফত, গুণ ছামাদ বা বেনিয়াজ, অমুখাপেক্ষী লক্বব ধারণ করে পৃথিবীর সময় থেকে বেনিয়াজ ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। তারই বাস্তবতা বিশ্ববাসীকে পবিত্র মি’রাজ শরীফ-এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক উনার যেমন স্থান, কাল, পাত্রের প্রয়োজন হয় না, তেমনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারও স্থান, কাল ও পাত্রের প্রয়োজন হয় না। আর এই বিষয়টিই পবিত্র মি’রাজ শরীফ-এ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। সময় মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহতাজ হবে এটাইতো স্বাভাবিক। কেননা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার নূর মুবারককে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আমার নূর মুবারক থেকে সমস্ত কিছু সৃষ্টি করা হয়েছে।” অত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক নূর থেকেই মূলত সময়ের সৃষ্টি হয়েছে। তাই সময়কে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুখাপেক্ষী হওয়াটাই স্বাভাবিক। অর্থাৎ সময় হলো আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহতাজ। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সময়ের মুহতাজ নন। এটাই হচ্ছে বিশুদ্ধ আক্বীদা। আর এর উপর বিশ্বাস রাখাই প্রতিটি মু’মিন মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
প্রসঙ্গঃ পবিত্র ও সুমহান শবে মিরাজ শরীফ
Image result for মিরাজ শরীফপ্রসঙ্গঃ পবিত্র ও সুমহান শবে মিরাজ শরীফ
আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মি’রাজ শরীফ-এর ঘটনাটি কালামুল্লাহ শরীফ-এর “সূরা বণী ইসরাইল”-এর ১ নম্বর আয়াত শরীফ-এ বর্ণনা করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “মহান আল্লাহ পাক যিনি উনার বান্দা (হাবীব) ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কোন এক রাতের সামান্য সময়ে (প্রথমে) বাইতুল্লাহ শরীফ থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ পর্যন্ত, যার আশপাশ বরকতময়; অতঃপর উনার নিদর্শনসমূহ দেখানোর জন্য (অর্থাৎ দীদার মুবারক আরশে আযীমে দেয়ার জন্য) ভ্রমণ করিয়েছেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” সুবহানাল্লাহ!
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মি’রাজ শরীফ হয়েছে ৩৩ থেকে ৩৪ বার। এক বার জিসমানী বাকি ৩৩ বার রূহানীভাবে হয়েছে। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়াবী হিসেবে ৫১তম বয়স মুবারক-এ ২৭ মাহে রজব রোববার দিবাগত রাত্রে অর্থাৎ সোমবার রাত্রে কা’বা শরীফ থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ, সিদরাতুল মুনতাহা হয়ে আরশে মুয়াল্লায় আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাৎ করে আবার যমীনে তাশরীফ আনেন। যা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ বিশিষ্ট ৪৫ জন ছাহাবী বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অগণিত ফযীলত ও মর্যাদা হাদিয়া করেছেন। সে মর্যাদাসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি মর্যাদা হচ্ছে মি’রাজ শরীফ।
মি’রাজ শরীফ-এর অর্থ হচ্ছে ঊর্ধ্বারোহণ। শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আল্লাহ পাক উনার যে সাক্ষাৎ বা দীদার হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে সেটাই মি’রাজ শরীফ।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মিরাজ শরীফ থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে উম্মতের জন্য যে সকল নিয়ামত নিয়ে আসেন তন্মধ্যে নামায হচ্ছে অন্যতম।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মুমিনের মিরাজ হচ্ছে নামায।”তিনি আরো ইরশাদ করেন, একজন মুসলমান আর একজন কাফিরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামায।”অর্থাৎ মুসলমান নামায আদায় করে কাফির নামায আদায় করে না।
মি’রাজ শরীফ-এর লক্ষ কোটি কারণ রয়েছে, তন্মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে আল্লাহ পাক উনার সরাসরি সাক্ষাৎ তথা ছোহবত, যা তিনি উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দিয়েছেন। এ মি’রাজ শরীফ দ্বারা আল্লাহ পাক উনার সাথে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিগূঢ় সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হচ্ছে, যমীনে কেউ সরাসরি স্বচক্ষে হাক্বীক্বী ছূরত মুবারক-এ আল্লাহ পাক উনাকে কখনো দেখবে না। কিন্তু আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যেহেতু বেমেছাল হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, সেজন্যে তিনি আল্লাহ পাক উনার সরাসরি সাক্ষাতে গিয়েছেন, সরাসরি আল্লাহ পাক উনার দীদার ও ছোহবত লাভ করেছেন।
কোন কোন গুমরাহ ও কাফির মি’রাজ শরীফ সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করে বলে থাকে যে, এত অল্প সময়ে কি করে সাত আসমান অতিক্রম করে আরশে আযীমে যাওয়া এবং জান্নাত জাহান্নাম পরিদর্শন করে যমীনে ফিরে আসা সম্ভব? নাউযুবিল্লাহ!
মূলত এরা যেহেতু আশদুদ দরজার জাহিল এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে বেখবর তাই তারা এধরনের কুফরী কথা বলে থাকে ও আক্বীদা পোষণ করে থাকে এবং মি’রাজ শরীফ সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করে। অথচ উনার খাদিম হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা চোখের পলকে আসমানে যান আর আসেন। যেমন- এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে একবার হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম বসা ছিলেন এমতাবস্থায় হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে আসলেন।

হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঈমান আনার পর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম সাধারণত উনার ছূরত মুবারকে আসতেন। আর হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আদত (অভ্যাস) ছিল তিনি যখন আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে আসতেন তখন হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের জন্য কিছু হাদিয়া নিয়ে আসতেন। উনাদেরকে কোলে নিতেন। যার কারণে উনার সাথে উনাদের আলাদা একটা মুহব্বত পয়দা হয়েছিল। উনারা দু’জন উনাকে দেখলেই উনার কাছে চলে যেতেন। হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে খাছভাবে মুহব্বত করতেন যে কারণে উনারাও উনাকে মুহব্বত করতেন।
একদিন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আসলেন হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছূরত মুবারকে। স্বাভাবিক হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আসলে হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনারা হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে যেতেন। তাই হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম আসা মাত্র উনারা উনার কাছে যেতে চাচ্ছিলেন।
হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে জরুরী কিছু আলোচনা করছিলেন আর এ দিকে হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার কাছে যেতে চাচ্ছিলেন। আর আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে ফিরিয়ে রাখছিলেন। এমনিভাবে একবার, দু’বার, তিনবার হয়ে গেল। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না যে, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনারা আমার কাছে আসতে চাচ্ছেন, আপনি উনাদেরকে ফিরিয়ে রাখছেন, ব্যাপারটি কি?
আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে ভাই হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! আপনি তো হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছূরত মুবারকে এসেছেন। হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার একটা আদত রয়েছে, তিনি আমার নিকট যখনই আসেন তখনই উনাদের জন্য কিছু হাদিয়া নিয়ে আসেন, উনাদেরকে কোলে নেন, মুহব্বত করেন, উনারাও উনার কাছে যান। আপনাকে দেখে উনারা মনে করেছেন, আপনি হয়তো হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, সেহেতু উনারা আপনার কাছে যেতে চাচ্ছেন। তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার বেয়াদবী ক্ষমা করবেন, আমাকে একটু সময় দেন, আমি এখনই আসছি।
একথা বলে তিনি বের হয়ে গেলেন, কিছুক্ষণ পর আবার আসলেন এক থোকা আঙ্গুর নিয়ে, আঙ্গুরগুলো পেশ করলেন, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের খিদমতে, উনারা সেটা গ্রহণ করলেন। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! আপনি এগুলো এতো তাড়াতাড়ি কোথা থেকে আনলেন? তিনি বললেন, আল্লাহ পাক উনাদের জন্য যে জান্নাত নির্ধারণ করে রেখেছেন সে জান্নাত থেকে এ আঙ্গুর ফলগুলো আমি এনেছি। সুবহানাল্লাহ!
কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মি’রাজ শরীফ-এ যান হযরত উম্মে হানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার ঘর থেকে। মি’রাজ শরীফ থেকে ফিরে এসে সকালে বললেন, আমি মি’রাজ শরীফ করেছি- মক্কা শরীফ থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ-এ গিয়েছি। যে বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ মক্কা শরীফ থেকে এক মাসের রাস্তা। বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে আমি আরশ-কুরসী, লৌহ-কলম, বেহেশত-দোযখ, আসমান-যমীন সবকিছু দেখে আবার রাতারাতি প্রত্যাবর্তন করেছি। আল্লাহ পাক উনার রসূল তিনি ঘোষণা করে দিলেন। সমস্ত মানুষ শুনলো। যারা মুসলমান, তারা বিশ্বাস করলো। যারা মুনাফিক, তারা চু-চেরা শুরু করে দিলো। আর যারা কাফির, তারা বলাবলি করতে লাগলো যে, আপনারা যাঁকে আখিরী রসূল মেনে নিয়েছেন, যাঁকে আপনারা ইমামুল মুরসালীন, যাঁকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন মেনে নিয়েছেন, দেখেন! উনি কি বলেন? উনি একরাত্রে বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ-এ গিয়েছেন। একরাত্রে আরশ-কুরসী, লৌহ-কলম দেখেছেন। এত দূরের রাস্তা একরাত্রে সফর করা কি করে সম্ভব? এক কাফির সেই কথাটা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে নিয়ে পৌঁছালো। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে তখনও মি’রাজ শরীফ-এর সংবাদ পৌঁছেনি। সেই কাফির বললো, হে হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি এবং আপনারা যাঁকে নবী মনে করেন, যাঁকে রসূল মনে করেন, যাঁকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন মনে করেন, যাঁকে সৃষ্টি না করলে কিছুই সৃষ্টি করা হতো না এটা আপনারা বিশ্বাস করেন, তিনি কি বলেন জানেন? তিনি বলেন, তিনি একরাত্রে মি’রাজ শরীফ করেছেন, আল্লাহ পাক উনার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। আরশ-কুরসী, লৌহ-কলম, বেহেশত-দোযখ, বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ সব ঘুরে এসেছেন। আপনি কি এটা বিশ্বাস করেন? হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হে ব্যক্তি! তুমি কি তোমার নিজের কানে শুনেছো? সেই ব্যক্তি বললো যে, হ্যাঁ! আমি আমার নিজের কানে শুনেছি। তুমি কি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জবান মুবারক-এ শুনেছো? সে ব্যক্তি বললো যে, হ্যাঁ! আমি স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জবান মুবারক থেকে শুনেছি আমার নিজ কানে শুনেছি, উনি বলেছেন। তখন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হে ব্যক্তি যদি আল্লাহ পাক উনার রসূল এটা বলে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আমি এটা বিশ্বাস করি। কারণ আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যাঁরা খিদমতগার হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনারা যেমন, হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম, হযরত মিকাঈল আলাইহিস সালামসহ অন্যান্য হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা চোখের পলকে আকাশে যান এবং ফিরে আসেন। এটা যদি সত্য এবং সম্ভব হতে পারে, তাহলে যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, সাইয়্যিদুল মাখদুম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষে কেন সম্ভব হবে না? আমি একশবার বিশ্বাস করি। এটা উনি বলে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
তিনি এটা বলে রওয়ানা হয়ে গেলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এর দিকে। এদিকে আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম উনাকে প্রেরণ করে দিলেন- হে হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম! আপনি এখনই আমার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট যান। গিয়ে বলুন, আমি স্বয়ং আল্লাহ পাক আজ থেকে হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ‘ছিদ্দীক্বে আকবর’ লক্বব দিয়ে দিলাম। সুবহানাল্লাহ! সত্যিই যখন হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এ এসে পৌঁছলেন, তখন আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “আজ থেকে হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার লক্বব হলো ছিদ্দীক্ব।” সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উসীলায় সৃষ্ট এবং উনার খাদিম হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম, হযরত মীকাঈল আলাইহিস সালাম, হযরত ইসরাফীল আলাইহিস সালাম ও হযরত আযরাঈল আলাইহিস সালামসহ অন্যান্য সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা যদি চোখের পলকে সাত আসমান অতিক্রম করে ও জান্নাত জাহান্নামে যেতে পারেন। তবে মহান আল্লাহ পাক উনার পরেই যাঁর স্থান উনাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না, সেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষে কেন তা সম্ভব হবে না? মূলত এব্যাপারে বিন্দু থেকে বিন্দুতম সংশয় বা সন্দেহ পোষণ করাও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
মিরাজ শরীফ সত্য এবং তা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর অসংখ্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু মিরাজ শরীফ কখন হয়েছিল এ নিয়ে কিছু মতপার্থক্য থাকলেও মশহুর বা প্রসিদ্ধ মতে মিরাজ শরীফ সংঘটিত হয়েছিলো রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে সোমাবার শরীফ-এ অর্থাৎ ২৬শে রজব দিবাগত রাতে।
যেমন, এ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বিশ্ববিখ্যাত সর্বজনমান্য মুহাদ্দিছ আরিফ বিল্লাহ আল্লামা হযরত শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিজ হাতে লিখা ‘মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ কিতাবের ৭৩ পৃষ্ঠায় বলেন,
اعلم انه قد اشتهر فيما بين الناس بديار العرب ان معراجه صلى الله عليه وسلم كان لسبع وعشرين من رجب
জেনে রাখুন! নিশ্চয়ই আরব জাহানের দেশগুলোর লোকদের মধ্যে মাশহূর বা প্রসিদ্ধ ছিলো যে, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মিরাজ শরীফ সংঘটিত হয়েছিলো রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতেই। সুবহানাল্লাহ!
মিরাজ শরীফের আমলী ফযীলতঃ
গাউছুল আযম, আওলাদে রসূল, মুহিউদ্দীন হযরত সাইয়্যিদ আব্দুল ক্বাদির জিলানী হাম্বলী আশয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত শায়েখ আবুল বারাকাত হাক্কাতুল্লাহ সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি। সনদ পরস্পরায় ছাহাবী হযরত আবূ সালামাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছাহাবী হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ও ছাহাবী হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। উনারা বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, রজব মাসে এমন একটি দিন ও রাত আছে, যে ব্যক্তি ওই দিনে রোযা রাখবে এবং রাতে ইবাদত-বন্দেগী করবে, তাকে শত শত বছর দিনে রোযা রাখার এবং শত শত বছর ইবাদত-বন্দেগী করার ছওয়াব দান করা হবে।” আর সেই দিন রাতটি হচ্ছে রজব মাসের তিনদিন অবশিষ্ট থাকতেই (অর্থাৎ ২৭ রজব তথা মিরাজ শরীফ-এর দিন ও রাত)। ওই দিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিশেষ নিয়ামত হাদিয়া করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রদাণ করা হয়েছিলো। (গুনয়িতুত ত্বালিবীন, ৩য় পর্ব, ৩৩২ পৃষ্ঠা)