একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৭৫

 


ওলীয়ে মাদারজাত, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশ্ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার স্বরণে- একজন কুতুবুয যামান উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 বেদনা-বিমুগ্ধ মানসিকতায় জীবন যাপনে নতুন মাত্রা যোগ এবং অভীষ্ট লক্ষ্যে ক্রমবর্ধিষ্ণু উত্তরণ           নফসকে নির্মূল করে ফেলার কোশেশ কোন কাজই নয়, যেহেতু নফসের মৌলিকতা কখনোই ধ্বংস হয়না।

          যা আবশ্যিক তা হলো, নফসকে বশীভূত করে রাখা, কখনোই অবাধ্য হতে না দেয়া। এমন অবস্থা আল্লাহ পাক-উনার মাহবুব ওলীগণের প্রাথমিক স্তরের কামিয়াবী। ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান  আলাইহিস সালাম-উনারও এটি প্রাথমিক স্তরের সাফল্য। কৈশোর কাল থেকেই সরবে অথবা নিরবে, লোকালয়ে অথবা নির্জনে, আত্মীয়-পরিজন বেষ্টিত অথবা বিচ্ছিন্নতায়- যে কোন অবস্থায়ই তিনি আপন একাকীত্বে আল্লাহ পাক-উনার মুহব্বত ও মারিফাতে নিমজ্জিত ছিলেন।

          সকল অবস্থায়ই তিনি ছিলেন অতি সতর্ক। হুযূরী ক্বালব’ (পরিপূর্ণ আত্মনিবেদন)-উনার এক নাম আত্মবোধ সম্পন্ন সতর্কতা অবলম্বন এবং অনুক্ষণ ইস্তিকামত (অবিচল) থাকা। হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিজে এরূপ সতর্কতা অবলম্বন করেছেন এবং উনার ব্যাখ্যা এভাবে দিয়েছেনঃ আমি যদি রাতে নিদ্রা যাই, তবে যেনো আমি নিজেকে ধ্বংস করে দিলাম। আর যদি দিনে ঘুমাই তবে যেনো অধীনস্থ জনপদবাসীকে ধ্বংস করে দিলাম।

          এতে বোঝা গেল, এমনভাবে দিন যাপন করতে হবে, অঙ্গ-প্রতঙ্গ-শরীর কাজে ব্যস্ত থাকলেও মন ও মনন যেনো আল্লাহ পাক-উনার মুহব্বত-মারিফাতে ডুবে থাকে। কাজটি অত্যন্ত কঠিন। এ কঠিন কাজে কামিয়াব ছিলেন ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, ছহিবে কাশফ ওয়া কারামত, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, ফখরুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান  আলাইহিস সালাম। উনার জীবনবোধ, জীবনাচরণ ও জীবনযাপন এতো সূক্ষ্মতায় ভরপুর যে, অতি চেনা ও পরিচিত হয়েও অধিকাংশের উপলব্ধির আগম্যতায় তিনি অচেনা ভুবনের বাসিন্দাই রয়ে গেলেন।

          বিদদ্ধ মানুষের জানা যে, ‘সব কথার মরন হলে হৃদয় কথা বলে।ঐশ্বর্যম-িত অন্তরের আলোকময় প্রভায় আল্লাহ পাক-উনার অনুগত বান্দাগণ তখন কেবল অন্তরের ডাকেই (ইলহাম ও ইলকা) সাড়া দিয়ে থাকেন। অন্তর্যামী আল্লাহ পাকই তখন কেবল তাদের মূল লক্ষ্য। আল্লাহ পাক অপার অনুগ্রহে উনাদের অন্তরে যখন মুহব্বত ও মারিফাতের রহস্যপূর্ণ বিছানা পেতে দেন, তখন ইলহাম, ইলকা এবং ইলমে লাদুন্নীর অভাবিত সংযোগে উনাদের অন্তর উদ্ভাসিত হয়ে যায়। সঙ্গতকারণেই এতে তাঁরা দুনিয়ার বিরুদ্ধে বেপরোয়া হয়ে উঠেন। যদিও উনাদের আচরণ, বিচরণ এবং যাবতীয় কার্যাবলী আবশ্যিকভাবে দুনিয়াতেই সম্পাদিত হয়। এমন অবস্থায় স্বভাব-সম্পৃক্ত উদ্বেগ ও সংকট ওলীগণের নিত্য সঙ্গী হয়। এ মর্মে হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে,

 والمخلصون على خطر عظيم.

 অর্থঃ- মুখলিছগণ (আল্লাহ পাক-উনার নৈকট্যলাভকারী সূক্ষ্মদর্শী ওলীআল্লাহ) নিদারুণ সংকটে নিপতিত।          এমন ওলীআল্লাহগণের অবয়বে দুঃশ্চিন্তার সূক্ষ্ম রেখাপাত সাধারণের অনধিগম্য। আনত মুখ, নিমীলিত চোখ, বিনম্র স্বভাব, নিঃশর্ত আনুগত্য এবং দায়িমী হুজুরীর সঙ্গে নিরহঙ্কার ব্যক্তিত্বের সংমিশ্রণ উনাদেরকে অনুক্ষণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, খাজিনার্তু রহমত, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নিকটবর্তী করে দেয়। আল্লাহ পাক-উনার প্রিয়তম হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 انا سيد ولد ادا ولافخر.

 অর্থঃ- আমি আদম (আলাহিস্ সালাম) সন্তানদের সর্দার। কিন্তু আমার কোন ফখর নেই।আল্লাহ পাক-উনার নৈকট্য প্রত্যাশী সকলেরই অনিবার্যভাবে ওয়ারিশসূত্রে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মুবারক ব্যক্তিত্বের পরিমিত হিস্যালাভ করা অত্যাবশক। (অসমাপ্ত)

আবা-১৩৪

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৭৪

 


ওলীয়ে মাদারজাত, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশ্ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার স্বরণে- একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

  বেদনা-বিমুগ্ধ মানসিকতায় জীবন যাপনে নতুন  মাত্রা যোগ এবং অভীষ্ট লক্ষ্যে ক্রমবর্ধিষ্ণু উত্তরণ         ভেতর ও বাইরের সামগ্রিক নির্যাসের দীপ্তি যখন সহজ-সরলভাবে স্বভাবে সম্পৃক্ত হয়ে যায়, তখন মানুষের কাছে তাদুর্বোধ্য হয়ে উঠে। কাজেই আফযালুল ইবাদ, ফখরুল আউলিয়া, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার জামাল ও জালাল, অর্থাৎ কোমলকঠিনমিশ্রণ রূপান্তরে জামালে অর্থাৎ স্বাভাবিকতার আদলে সামগ্রিক জীবনে স্থিতি ও বিস্তারলাভে তিনি যতোটুকু প্রকাশিত হলেন, তার চেয়ে বেশী পরিমাণে অপ্রকাশিত থেকে গেলেন।

          কেবল উনার মুজাদ্দিদে আযম কিশোর পুত্র মুজাদ্দিদিয়াতসুলভ অনুসন্ধিৎসায় পিতাকে লক্ষ্য করেন। পিতার অতুলনীয় বুযূর্গী ও কামিয়াবী ওয়াকিফহাল হয়ে কিশোর পুত্রের চিন্তার সীমাহীন দিগন্ত অবারিত ও সম্প্রসারিত হতে থাকে। এটাই স্বাভাবিক ও সংগত। কারণ, বলা হয়ঃ

النبى نبيا ولو كان صبيا.

অর্থঃ- একজন নবী মূলতঃই নবী, যদিও তিনি শিশু হয়ে থাকেন।একই প্রক্রিয়ায় একজন মুজাদ্দিদে আযমও মূলতঃ মুজাদ্দিদে আযম, যদিও তিনি শিশু অথবা কিশোর হয়ে থাকেন।

          বাহ্যিক দৃশ্যমানতার অতল গভীরে পিতার ধ্যান-নিমগ্ন ব্যাপ্তি এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে অতুলনীয় জীবন ধারা পুত্রের দৃষ্টি এড়ায়না। পিতা-পুত্রের জানাজানির গভীরতা ক্রমান্বয়ে নিবিড় হতে থাকে। পিতা আগেই জেনে গেছেন, কামিয়াবীর পূর্ণতায় নিয়ামত সমৃদ্ধ মুজাদ্দিদে আযম পুত্রের তাজদীদে জগৎ আলোড়িত হবে এবং মানুষ দ্বীনের পথে ধাবিত হবে। আল্লাহ পাক-উনার অপার অনুগ্রহে এসবের শুরুর কাজ জীবদ্দশাতেই দেখে যেতে পারবেন, এমন অনাবিল প্রত্যাশায় পিতার মন প্রশান্তিতে ভরে উঠে।

          ওলীআল্লাহগণের প্রকৃতি ও কর্ম প্রয়াস এক নয়। উনাদের প্রত্যেকের অবস্থা, অবস্থান, কর্ম বিন্যাস এবং উত্তরণের পদ্ধতিও ভিন্নতর। কামিয়াবীর শীর্ষ ধাপে অবস্থানকারী অনেক মাহবুব ওলীও সাধারণের কাছে অচেনা থেকে যান। অথচ এমন ওলীআল্লাহগণের মাধ্যমেই উদ্দিষ্ট ব্যবস্থায় আল্লাহ পাক জগৎ-সংসার পরিচালিত করেন। এ মর্মে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

ان لله فى كل زمان سبعة اعبد يهم ينصرون وبهم يمطرون وبهم يرزقون لن ينالوا بكثرة صلوة ولابصوم ولابصدقة وانما نالوا بسلامة القلوب وسخاوة الانفس.

অর্থঃ- প্রত্যেক যামানায় আল্লাহ পাক-উনার এমন সাতজন বান্দা (সূক্ষ্মদর্শী ওলীআল্লাহ) থাকেন, যাদের দুআয় সৃষ্টি জগৎ সাহায্য পায়। উনাদের কল্যাণেই বৃষ্টি হয়। উনাদের বরকতে মানুষ জীবিকা পায়। নামায-রোযার দরুন উনারা এ মর্যাদা লাভ করেন না। বরং উনাদের অন্তরের প্রশান্তি এবং নফসের বদান্যতার জন্যই এটি অর্জিত হয়। নফসকে পরিপূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রিত করে রাখতে পাবার মধ্যেই কামিয়াবী নিহিত। নফসকে পুরোপুরি মেরে ফেলা মানুষের অসাধ্য। এটি কাম্যও নয়। জিহাদের ময়দানে প্রতিপক্ষ না থাকলে বিজয় লাভের দুর্নিবার কোশেশ অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। সাফাল্য লাভের আয়াসসাধ্য আয়োজনের প্রয়োজনও আর থাকে না। 

          হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কঠিন রিয়াযত ও মুজাহাদায় একবার অত্যধিক দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। নড়াচড়া করার স্বাভাবিক ক্ষমতা প্রায় রহিত হয়েছিল। উনার চোখ মুবারক কোটরে বসে গিয়েছিলো। এমন অবস্থা দেখে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ

يا عبد الله ان لنفسك عليك حقا.

অর্থঃ- হে আব্দুল্লাহ! তোমার উপর তোমার নফসেরও হক্ব আছে।অর্থাৎ জীবন বিধ্বংসী এ প্রকার কঠোরতা করতে তিনি নিষেধ করে দিলেন। তা এজন্য যে, নফসকে পরিপূর্ণরূপে ধ্বংস কখনোই করা যায় না। নফসের মুজাহাদা হলো, নফসের মন্দ স্বভাবগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা।

অসমাপ্ত

আবা-১৩৩

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৭৩

 


ওলীয়ে মাদারজাত, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশ্ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহিস সালাম-উনারস্বরণে- 

একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

বেদনা-বিমুগ্ধ মানসিকতায় জীবন যাপনে নতুন  মাত্রা যোগ এবং অভীষ্ট লক্ষ্যে ক্রমবর্ধিষ্ণু উত্তরণ           মানুষের বয়স বাড়ে, অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। আশা-নিরাশার দোদুল্যমানতা, পাওয়া-না পাওয়ার উদ্বেগ এবং সুখ-দুঃখের অভিঘাতে সে প্রতিক্ষণ আন্দোলিত হয়। পরিবর্তন-পরিমার্জন, প্রাপ্তি-বঞ্চনা, আনন্দ-বেদনার ভিত্ রচিত হয় মন ও মননের গভীরেই। বাহ্যিক জীবনাচারনে যা প্রতিভাত হয়, তা অভ্যন্তরীণ চিত্রের নগণ্য আভাস মাত্র। এতে কারো সফলতা, ব্যর্থতা অথবা সামগ্রিকতার মাত্রা উপলব্ধির উপায় নেই। তাই অতি স্বাভাবিক আচরণ ও বিচরণের দৃশ্যমানতায় কামিয়াবীর শীর্ষ ধাপে অধিষ্ঠিত ওলীআল্লাহ ও অন্য মানুষের পার্থক্য সাধারণের দৃষ্টিতে সূচিত হয়না। যদিও উভয়ের ব্যবধান সীমাহীন।

          একই কারণে পবিত্র হজ্ব থেকে দেশে ফেরার পর ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনারমূল পরিচয় অনেকের কাছেই অজ্ঞাত। লব্ধ নিয়ামতের সমৃদ্ধিতে উনার উত্তরণ এবং উত্তরণের অনুষঙ্গগুলো এতো সূক্ষ্ম যে, প্রাজ্ঞজনের কাছেও তা প্রায় দুর্বোধ্য। এ মর্মে ছূফীয়ে বাতিন ও ছহিবে ইসমে আযম লক্বব দুটি উনার অনেক লক্ববের মধ্যে অন্যতম।

          আপন নিবাসে দিন যাপনে উনার অতি স্বাভাবিক ও সহজ-সরল অথচ সূক্ষ্ম আচরণ ও মিতভাষিতায় অনুসৃত স্বতন্ত্র ধারা নিকটজনদের অন্তর ছুঁয়ে গেলেও অনেকের কাছে তিনি অজ্ঞাতই রয়ে গেলেন। প্রয়াস, প্রচেষ্টা, অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি এবং অর্জিত মাকাম ও মর্যাদা সমপর্যায়ের না হলে একজনের পক্ষে অন্যজনকে চেনা ও জানা সম্ভব হয়না। গভীর অনুসন্ধিৎসা ব্যতিরেকে অবয়ব ও আবরণের বহির্ভাগ দেখে অনুমান নির্ভর বর্ণনা কেবল বাস্তবতা বিবর্জিত ও অর্থহীন অতিকথন হয়ে দাঁড়ায়।   হাদীছে কুদসীতে আল্লাহ পাক বলেনঃ

مال هذا الرسول ياكل الطعام ويمشى فى الاسواق.

অর্থঃ- আমার মাহবুব ওলীগণ আমার কুদরতী জুব্বা দ্বারা আবৃত। আমি এবং আমার খাছ ওলীগণ ছাড়া কেউ তাঁদেরকে চিন্তে পারেনা।    অতি সূক্ষ্ম বিষয়, যা বাইরে থেকে খুব সহজ ও স্বাভাবিক মনে হয়, তাৎপর্য উপলব্ধির অযোগ্যতায় সাধারণ মানুষের কাছে তা গুরুত্বহীন। আবার অন্তর্গূঢ় এসব বিষয়কে কেউ কেউ আপন অনুভূতি ও বুদ্ধির পরিমাপে বিশ্বাস করে গুরুত্বপূর্ণ বলে মেনে নিলেও তাদের সংশয় পুরোপুরি কাটেনা। মূলতঃ অনুপলব্ধ বিষয়গুলো তাদের কাছে অলৌকিক হিসাবে সাব্যস্ত হয়। এ কারণেই রহমাতুল্লিল আলামীন, ছহিবুল মুজিযাত, ছহিবুল মাক্বামিল মাহমূদ, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনারযাবতীয় বিষয়-কর্ম সহজ ও স্বাভাবিকভাবে উনার মুবারক স্বভাব-সঞ্জাত হওয়া সত্ত্বেও উপলব্ধির অযোগ্যতায় মানুষের কাছে তা মুজিযা নামে অভিহিত হয়েছে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনারসূক্ষ্মতা, সরলতা, দৃশ্যমানতা, গোপনীয়তা এবং একীভূত ইহকাল ও পরকালের সামগ্রিকতা এতো সহজভাবে বাহ্যিকভাবে প্রতিভাত হয়েছে যে, কাফির-মুশরিকদের পক্ষে তা বুঝে উঠা সম্ভব হয়নি। তারা অবাক বিস্ময়ে উচ্চারণ করেছেঃ

مال هذا الرسول ياكل الطعام ويمشى فى الاسواق.

অর্থঃ- তিনি আবার কেমন রসূল! যিনি বাজারে যান এবং খাদ্যও খান? (সূরা ফুরক্বান/৭)  

অসমাপ্ত

আবা-১৩২

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৭২

 

ওলীয়ে মাদারজাত, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশ্ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্বরণে-

 একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান- 

  খাজিনাতুর রহমত, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনারসদয় অনুমতিতে দেশে ফেরা নির্দেশ পালনে তৎপর হয়ে দেশে ফেরার আয়োজন শুরু। সময় বয়ে চলছে নিরন্তর। সব কিছুই যেনো খুব স্বাভাবিক। ব্যথাতুর আশিক হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছূর রহমান আলাইহিস সালাম উানাকে দেখে জানার উপায় নেই রহমাতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনারসঙ্গে উনারঅবিরাম নৈকট্য ও সংযোগের কী নতুন মাত্রা শুরু হয়েছে! বুঝবার উপায় নেই বিরহ যাতনায় উনারবুকের অভ্যন্তরে অতলান্ত যন্ত্রনার কতো অথৈ পারাবার!

          গন্তব্য অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছেন বিরহ-বিধুর পথিক। পথে কতো দেশ, জনপদ, পাহাড়, সাগর, নদী, বৃক্ষরাজি, আকাশ, মাটি ক্রমেই পেছনে পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু মন পড়ে রয়েছে মূল গন্তব্য মদীনা শরীফে, পবিত্র রওযা মুবারক সান্নিধ্যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনারপবিত্র কদম মুবারকে। যাত্রাপথে ক্রমান্বয়ে সব কিছুই দৃষ্টি সীমার আড়ালে গেলেও সঙ্গে রয়েছেন রহমাতুল্লিল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। বুকের অভ্যন্তরে, দৃষ্টির গভীরে এবং অনুভূতির নিবিড়তায় তিনি বহন করে চলছেন নিগূঢ় নৈকট্য-সংযোগের অগণিত স্মৃতিরাশি এবং মহামিলনের অমিয় নির্যাস।

          আপন নিবাসেই মানুষের সুখ, তা যেমনই হোক। পথ দীর্ঘ অথবা ছোট, পথ শেষেই আশ্রয়-ঠিকানা। তবু গৃহবাসে কেউ পায় অনাবিল প্রশান্তি, কেউ পায় দুঃখ। গন্তব্য-বসতি পথের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়। তাই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ক্লান্ত পথিক আপন নিবাসকে কেন্দ্র করে মধুর স্বপ্ন রচনায় মগ্ন থাকে। জীবন এতো ছোট যে, সব পথই শেষ হয়ে যায়। অবশেষে এক সময় মৃত্যৃ এসে ঘুমন্ত মানুষের অবিনশ্বর জাগরণ ঘটায়। মানুষের স্বপ্নসাধ ভেঙ্গে যায়। সমাপ্তি ঘটে জাগতিক কোলাহল ও সকল লেনদেনের। আখিরাতে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সঞ্চিত দেনা-পাওনার হিসাব কড়ায় গন্ডায় মেটাতে হয়।

          দীর্ঘ পথ যাত্রায় এমন ভাবনা ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, ছহিবে কাশফ ওয়া কারামত, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, ফখরুল আউলিয়া, আওলাদূর রসূল, হযরতুল আল্লামা, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম-উনার মনকে আচ্ছন্ন করেনি। নশ্বর দুনিয়ার আবিলতা, আখিরাতের দুর্ভাবনা অথবা ইত্মিনানও (প্রশান্তি) উনারঅনুভূতিকে একটুও আলোড়িত করেনি। জীবন-মরণ, ইহকাল-পরকাল, চাওয়া-পাওয়া, স্বদেশ-বিদেশ, আশা-নিরাশা, আপন-পর এখন একাকার। পথ-শ্রান্তির অনুভূতি নেই। পবিত্র মদীনা শরীফ কেন্দ্রীক নিগূঢ় মনোনিবেশের তীব্রতায় আপন অস্তিত্বই এখন অসাড়।

          বিরহ-কাতর পথিক কুতুবুয্ যামান, আফযালুল ইবাদ, আওলাদুর রসূল, হযরতুল আল্লামা, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম-উনার বুকে এখন পবিত্র কাবা শরীফের ছবি। দৃষ্টির গভীরে ছহিবে তাত্মাইন্নিল কুলুব, ছহিবুল মদীনাহ, ছহিবুল মক্কাহ, রউফুর রহীম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনারমুবারক অবস্থান। প্রিয়তম আওলাদ, আশিকে রসূল, ওলীয়ে মাদারজাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনারঅন্তর জুড়ে মাশুকে মাওলা, ছহিবু লাওলাক, হাবীবে আযম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনারমুবারক পরশ। অনির্বচনীয় সান্নিধ্য-সংযোগের মুবারক স্পর্শে আপন অস্তিত্ব বিলোপের মধুরতম আবেশে তিনি এখন মহামিলনের পারাপারে নিমজ্জিত। 

          নিদ্রায় তো বটেই, জাগ্রত অবস্থাও খাজিনাতুর রহমত, ছহিবুল কাওছার, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনারসঙ্গে যাঁর সার্বক্ষণিক সান্নিধ্য-সংযোগ, উনারআবার না পাবার দুঃখ কোথায়? তবু পবিত্র মদীনা শরীফের অবিরাম আকর্ষণ এবং ছহিবুল মদীনাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সবকিছু পেয়েও আরো পাবার অব্যক্ত বেদনা গন্তব্য পথে অনুক্ষণ উনারভাব ও ভাবনাকে ছুঁয়ে যায়। (অসমাপ্ত) 

আবা-১৩১

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৭১

 


একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

খাজিনাতুর রহমত, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সদয় অনুমতিতে দেশে ফেরা -

দেশে রেখে আসা স্ত্রী-পুত্র-কন্যা, অপরাপর আপনজন, বৈভব ও বিষয় নিয়ে কোন উৎকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তা নেই। থাকার কথাও নয়। কারণ অতি শৈশবকালেই মনের গভীরে ঠাঁই পেয়েছে দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি। আল্লাহ পাক-উনার সদয় ইচ্ছা এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, রহমাতুল্লিল আলামীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার অপরিমেয় বখ্শিশে ক্রমান্বয়ে মন ও মননে স্থায়ীভাবে বাসা বেঁধেছে আল্লাহ পাক এবং মাশুকে মাওলা, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মারিফাত ও মুহব্বত। প্রত্যাশা পূরণে পূর্ণ মাত্রায় কামিয়াবী হাছিলের পর জগৎ-সংসার এবং তৎসংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়-কর্মই ওলীআল্লাহগণের নিকট মূল্যহীন হয়ে পড়ে। এমনকি প্রত্যাশিত কামিয়াবী অর্জনের সহায়ক উপাদানগুলোর উপযোগিতাও তখন গৌণ হয়ে যায়। আল্লাহ পাক-উনার রহমতে পরিপূর্ণরূপে দুনিয়া বিমুখতায় আপন ঘরে পরবাস থাকার অপরিসীম ক্ষমতা উনারা অর্জন করেন, উনারাই তো আল্লাহ পাক-উনার মাহবুব ওলী। মুহব্বত ও মারিফাতের অথৈ পারাবারে উনারা অনুক্ষণ নিমজ্জিত থাকেন। আবাল্য স্বাধীন, অনুপম ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যে সমুজ্জল, মিথ্যা নির্মূল ও সত্য প্রচারে খাছ নায়িবে নবীর ভূমিকায় সমর্পিত, আল্লাহ পাক-উনার মত এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সুন্নত প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত প্রাণ পুরুষ ওলীয়ে মাদারজাদ, ফখরুল আউলিয়া, লিসানুল হক্ব, কুতুবুয্যামান, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছূর রহমান আলাইহিস সালাম-উনার বিবেচনায় জগৎ-সংসার তুচ্ছ। উনার দুনিয়া বিরাগী এ মানসিকতা তৈরী হয়েছে  জন্ম লগ্ন থেকেই। ক্রমান্বয়ে তা পরিনতি লাভ করেছে অগণিত মাক্বামের ধাপে ধাপে। লদ্ধ নিয়ামতরাজির সমৃদ্ধিতে পূর্ণতায় অধিষ্ঠিত হয়েও আরো পাবার সীমাহীন বেদনায় মুহ্যমান প্রিয়তম আওলাদকে খাজিনাতুর রহমত, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিকট সান্নিধ্যে ডেকে নিয়েছেন ইতমিনান (প্রশান্তি) দান করতে। এ প্রশান্তি এমন, যা কেবল বেদনার প্রবৃদ্ধি ঘটায়। আখিরাতে দিদারলাভের পূর্বে যার নিবৃত্তি কখনোই ঘটেনা। মহামিলনের এমন মধুর নিমজ্জনে বেদনা-বিমুগ্ধ অনুভবে দেশে রেখে আসা স্বজন, পরিচিত জনপদ, পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং জগৎ-সংসার মনে আসার প্রশ্ন অবান্তর। তবে দেশে থাকা মুজাদ্দিদে আযম কিশোর পুত্রের ভাবনা মনকে আলোড়িত করে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সদয় নির্দেশেই ভাবনাগুলো মুজাদ্দিদে আযম পুত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। ঐ মুবারক পুত্রের জন্যইতো এতো তাড়াতাড়ি দেশে ফেরার আদেশ। কারণ ঐ মুবারক পুত্র আকরামুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, মাশুকে মাওলা, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রিয়তম আওলাদ, উনার ক্বায়িম-মক্বাম, উনার নয়নের মণি, আদরের দুলাল, খোলাফা-ই-রাশিদার মহান প্রতিবিম্ব, অবলুপ্ত সুন্নত যিন্দাকারী, বিদ্য়াত ধ্বংসকারী। দুনিয়ায় ইসলাম ধর্ম আবাদের জন্য তিনি আল্লাহ পাক-উনার লক্ষ্যস্থল। একান্ত সাক্ষাতে রহমাতুল উম্মাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অবিলম্বে দেশে রওয়ানা হবার সদয় আদেশ দান করলেন। সাক্ষাতের অনুপম ক্ষণে প্রিয়তম আওলাদ অবনত মস্তকে নিরব, নিথর। মন বলে মুবারক সাক্ষাতের এ অনুপম আবেশ অনাদি-অনন্তকালব্যাপী প্রলম্বিত হোক। প্রিয়তম আওলাদ সকল নিয়ামত ও বখ্শিশে পরিপূর্ণ। অন্তরে ইশকের প্রজ্জ্বলন। অব্যক্ত বেদনায় কলিজায় দুঃসহ দহন। তবু বিদায় অনিবার্য। অবশেষে কদমবুছী এবং নিগূঢ় নৈকট্য ও সংযোগ শেষে বিদায় নিলেন আশিকে নবী হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছূর রহমান আলাইহিস সালাম। (অসমাপ্ত)

আবা-১৩০

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৭০

 


ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছাহিবে সিমে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

খাজিনাতুর রহমত, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সদয় অনুমতিতে দেশে ফেরা -

হক্ব মত ও পথে দায়িম ও ক্বায়িম থাকা নফসের খিলাফ। একমাত্র আল্লাহ পাক-উনার মাহবুব ওলীগণ ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে পরিপূর্ণরূপে গায়রুল্লাহ বিবর্জিত মানসিকতায় ঈমান, আক্বীদা, ইলম্ ও অনুভবে ইবাদত-বন্দেগী ও যিকির-ফিকিরে ষোলআনা দখল জমিয়ে অনুক্ষণ নিয়োজিত থাকা আদৌ সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষের পক্ষে এ মর্যাদা ও মর্তবায় উপনীত হওয়া দুরূহ। বিশেষতঃ দুনিয়ালোভী আলিমদের কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস বিরোধী আমল, আখলাক্ব এবং বিরূপ কর্মানুষ্ঠান সাধারণ মুসলমানদের পক্ষে হক্ব মত ও পথে অধিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসলাম ধর্মের ক্ষতি সাধনে কাফির ও মুশরিকদের তুলনায় দুনিয়াদার আলিমদের ঘৃণ্য ভূমিকাই প্রকট। তারা  দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব। বিপর্যস্ত ঈমান ও আক্বীদায় তাদের স্বেচ্ছাচারী আমল ও আচরণে মানুষ পথভ্রষ্ট ও লক্ষ্য বিচ্যূত হয়। সময়ের অতিক্রান্তিতে তাওহীদ ও রিসালত পরিপন্থী আবহে মানুষ গোমরাহীতে নিপতিত হয়। দুনিয়া লোভী আলিমদের সংস্পর্শে সামগ্রিক পরিম-লে ভ্রান্ত আক্বীদা, নৈতিক অবক্ষয়, সুন্নত  অনুসরণের অনীহা  এবং বিরূপ জীবনাচরণে ক্রমান্বয়ে বিদয়াত জন্ম নেয়। পরিণতিতে আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সন্তুষ্টি লাভের জন্য উদ্দিষ্ট মানুষ শিরক ও কুফরীর তমসায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। এমন তমসায় মানুষের ঈমান ও আক্বীদা নবায়ন, অনৈসলামিক আমল, আচরণ ও অনুভবের মূলোৎপটন এবং মানুষকে সুন্নত পালনে অভ্যস্ত করে তুলে আল্লাহ মুখী করে দেয়া অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। এই আয়াসসাধ্য দায়িত্ব যিনি পালন করেন,উনাকে মুজাদ্দিদ (সংস্কারক) বলা হয়। প্রতি শতাব্দীতেই দুনিয়ায় মুজাদ্দিদ-উনার আগমন ঘটে।

 এ মর্মে সাইয়্যিদুল মুরসারীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক এ উম্মতের (হিদায়েতের) জন্য প্রত্যেক হিজরী শতকের প্রারম্ভে এমন একজন  মহান ব্যক্তি (মুজাদ্দিদ) পাঠাবেন, যিনি দ্বীনের তাজদীদ (সংস্কার) করবেন। (আবূ দাঊদ শরীফ) এমন মুজাদ্দিদ-উনার দায়িত্ব অপার। উনার জীবনের আয়োজন, কোশেশ ও কামিয়াবীর পন্থাও ব্যাপকতর। মুজাদ্দিদ-উনার লব্ধ নিয়ামত এবং কামিয়াবীর সোপান উনার নিজস্ব সম্পদ হওয়া সত্ত্বেও তিনি আত্মকেন্দ্রিক হতে পারবেনা। তাজদীদ (সংস্কার কাজ)-উনার লক্ষ্য ও ক্ষেত্র কোন জনপদ বা নির্দিষ্ট ভৌগলিক সীমানায় আবদ্ধ থাকেনা। তাজদীদ-উনার মূল লক্ষ্য ও ক্ষেত্র  মানুষের মন ও মনন। মুজাদ্দিদ-উনার কাজের আঞ্জাম দুনিয়া জুড়ে। যিনি যতো বড়, উনার কাজের পরিধিও ততো ব্যাপক। প্রেক্ষিত কারণে তাই সহজেই অনুমেয় যে, একজন মুজাদ্দিদে আযম-উনার কর্ম পরিধি জগৎ-সংসারের সর্বত্র পরিব্যাপ্ত। এ ক্ষেত্রে জানা আবশ্যক যে, ইসলাম রাষ্ট্রসীমা স্বীকার করেনা। জনসমষ্টি, সরকার ও সার্বভৌমত্ব ভিত্তিক কোন সুনির্দিষ্ট একক ভূখ-ের মধ্যে ইসলাম সীমাবদ্ধ নয়।

 আল্লাহ পাক-উনার সদয় অনুমোদন ও অবারিত রহমত এবং ছাহিবু ওয়ামা আরসালনাকা  ইল্লা রহমতুল্লিল আলামীন, রউফুর রহীম, নবীয়ে আক্বদাস, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে নিগূঢ় সংযোগ সাধন ব্যতিরেকে আপন কোশেশ ও প্রয়াসে মুজাদ্দিদ হওয়া যায়না। যিনি মুজাদ্দিদে আযম, আল্লাহ পাক-উনার পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি জন্মলগ্ন থেকেই মুজাদ্দিদে আযম। সাধারণত: কৈশোর অতিক্রান্তিকাল থেকেই মুজাদ্দিদসুলভ আচরণের প্রকাশ ও বিকাশ ঘটতে শুরু করে। মন ও মননের গভীরে প্রচ্ছন্নভাবে মিশে থাকা মুজাদ্দিয়াতকে জাগিয়ে তুলতে হয় এবং উনার বিকাশ ঘটাতে হয়। নিরন্তর এ কাজের তদারকি ও পরিচর্যা দরকার। আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, মাশুকে মাওলা, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সদয় ইচ্ছায় আশিকে নবী, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লাম সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম পূর্বেই জেনে গেছেন যে, উনার কিশোর পুত্র মুজাদ্দিদে আযম। তিনি জগৎ আলোড়িত করবেন এবং বাতিল ধ্বংস করবেন। উনার তাজদীদ হবে দুনিয়াব্যাপী। পিতার সান্নিধ্য ও সাহচর্য এই মুবারক পুত্রের  জন্য এখন জরুরী। (অসমাপ্ত)

আবা-১২৯