আদ্ দুরারুল মুখতারাহ্ - ফী নিসবাতি সুলত্বানিন নাছীর (১ম খণ্ড) আখাছুল খাছ মহাসম্মানিত মুহব্বত মুবারক এবং বিশেষ নৈকট্য মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ মুবারক-পর্ব-১৩

১৩. আখাছুল খাছ মহাসম্মানিত মুহব্বত মুবারক এবং বিশেষ নৈকট্য মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ মুবারক-পর্ব-১৩

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুত্বহ্হার, মুত্বহহির, আছ ছমাদ মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ১৪৪০ হিজরী শরীফ উনার ১৩ই যিলহজ্জ শরীফ লাইলাতুল খামীস শরীফ (বৃহস্পতিবার রাত) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ফালইয়াফরহূ শরীফ সাইয়্যিদুল আ'ইয়াদ শরীফ উনার মাহফিল মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেন, “একটি বিশেষ ওয়াক্বেয়াহ্ মুবারক আমি আজকে বলবো। যে, কুরবানী উনার মাধ্যম দিয়ে নৈকট্য হাছিল হয়। খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেটা আজকে সকালে (১২ই যিলহজ্জ শরীফ ইয়াওমুল আরবিয়া শরীফ ১৪৪০ হিজরী শরীফ) যে বিষয়টা সংঘটিত হয়েছে। এটা সকাল সাড়ে ১০টার কাছাকাছি হবে। যিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, যিনি ইমামুল মুরসালীন, যিনি খাতামুন নাবিয়্যীন, যিনি হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যিনি হাযির এবং নাযির ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যিনি মুত্তালা’ ‘আলাল গইব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র বিশেষ যিয়ারত মুবারক দান করলেন। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি উনার নূরুত তাক্বরীর মুবারক অর্থাৎ মহাসম্মানিত হাস্যোজ্জ্বল চেহারা মুবারক উনার সাথে যিয়ারত মুবারক দান করলেন বিশেষভাবে। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি তখন আরজু করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি

আমাকে আরো নৈকট্য-মুহব্বত দান করুন। তিনি দয়া করে, ইহসান করে প্রথমত তিনি উনার মহাসম্মানিত নূরুল মালাহাত অর্থাৎ কপাল মুবারক আমার কপালে ঠেকিয়ে একজন সন্তানকে যেমন মুহব্বত করা হয়, স্নেহ করা হয়, ঠিক তদ্রুপ তিনি অনেকক্ষণ যাবৎ আমাকে মুহব্বত মুবারক, স্নেহ মুবারক করতে থাকলেন। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দ্বিতীয়ত আমি আবার বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে আরো মুহব্বত-মা'রেফত, নৈকট্য মুবারক দান করুন। তিনি তখন দয়া করে, ইহসান করে তিনি উনার নূরুল ইলিম (সিনা) মুবারক উনার মধ্যে আমার মাথাকে নিয়ে অনেক্ষণ রেখে আমাকে আলাদা একটা ইতমিনান দান করলেন। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি অত্যন্ত খুশি মুবারক প্রকাশ করলেন। যে স্থানে তিনি অবস্থান মুবারক করতেছিলেন, আমিও ছিলাম উনার সাথে। সেখান থেকে আবার বের হয়ে আসলাম। কিছু দূর আসার পর, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একস্থানে অবস্থান মুবারক করলেন। আমি প্রথমত উনার সেই চেহারা মুবারক উনার দিকে দৃষ্টি মুবারক রেখেছিলাম। এরপর আমি ফিকির করলাম, সরাসরি উনার যে নূরুল মুনাওওয়ার অর্থাৎ চক্ষু মুবারক উনার দিকে দৃষ্টি করাটা কোনো আদবের খেলাফ হয় কি না? সেজন্য আমি উনার নূরুদ দারাজাত (কদম) মুবারক উনার দিকে দৃষ্টি মুবারক করতেছিলাম যাহিরীভাবে, আর বাতিনীভাবে আমি উনার চেহারা মুবারক উনার দিকে দৃষ্টি মুবারক করতেছিলাম। এমতাবস্থায় অনেকক্ষণ অবস্থান মুবারক করার পর তিনি কিছু বললেন। এরপর তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

এখন উনার সম্মানার্থে কুরবানী করা হোক বা উনার সম্মানার্থে ফালইয়াফর″ শরীফ সাইয়্যিদুল আ'ইয়াদ শরীফ পালন করা হোক, উনার শান-মান মুবারক বর্ণনা করা হোক, উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান-মান মুবারক বর্ণনা

করা হোক ইত্যাদি কারণে তিনি এই সন্তুষ্টি মুবারক প্রকাশ করলেন। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

কাজেই এই কুরবানী যে 'কুরব' নৈকট্য হাছিল হয়ে থাকে, সেই বিষয়টাই কিন্তু এখানে প্রকাশ করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

আর যেটা আমি সব সময় বলে থাকি কোনো বান্দা-বান্দী, জিন ইনসান সে যত রিয়াযত-মাশাক্কাত করুক, যত ইবাদত করুক, তার আর্থিক টাকা-পয়সা দ্বারা যতটুকু নৈকট্য হাছিল করা সম্ভব, অন্য কোনো কিছু দ্বারা সেটা সম্ভব হয় না। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কাজেই সেই বিষয়টাই তিনি এখানে প্রকাশ করলেন। তিনি অত্যন্ত সন্তুষ্টি মুবারক প্রকাশ করলেন এবং অত্যন্ত মুহব্বত মুবারক করলেন, স্নেহ মুবারক করলেন এবং উনার সেই নূরুল মালাহাত (কপাল মুবারক), নূরুল ইলিম (সীনা মুবারক ) উনার সাথে স্পর্শ করে রাখলেন। আলাদা ইতমিনান দান করলেন এবং এমন কিছু বললেন, যে বিষয়গুলি হয়তো এখন আপতত বলা যাবে না। তবে সময় যদি হয় কখনো, তাইলে বলা সম্ভব হবে। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! অনেকগুলো কথা। এর মধ্যে একটা কথা- 'হ্যাঁ, মহান আল্লাহ পাক তিনি সব সময় ভালোই করবেন।' সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!”

তাহলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, স্খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুত্বহ্হার, মুত্বহহির, আছ ছমাদ মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কত বেমেছাল মহাসম্মানিত তা'য়াল্লুক-নিসবত মুবারক, সেটা সমস্ত জিন

ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। এক কথায় তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী হচ্ছেন তিনি । সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে হাক্বীক্বী ছহীহ সমঝ বিশুদ্ধ আক্বীদাহ ও সর্বোচ্চ হুসনে যন মুবারক দান করুন। আমীন!

নছীহতে উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম -(১ম খণ্ড) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সুসংবাদ প্রদানকারী ও সতর্ককারী-পর্ব-২


নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সুসংবাদ প্রদানকারী ও সতর্ককারী-পর্ব-২

মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা আহযাব শরীফ-এর ৪৫-৪৭ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন,

يا أيها النبي إنا أرسلناك شاهدا ومبشرا ونذيرا (٢٥) وداعيا إلى الله بإذنه وسراجا منيرا (٢٦) وبشر المؤمنين بأن لهم من الله فضلا كبيرا (٢٧) سورة الاحزاب

হে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনাকে শাহিদ তথা উপস্থিত বা প্রত্যক্ষদর্শী, সুসংবাদ প্রদানকারী ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমে উনারই দিকে আহবানকারী ও প্রদীপ্ত প্রদীপ রূপে প্রেরণ করেছি। আপনি মু'মিনদেরকে সুসংবাদ প্রদান করুন, নিশ্চয়ই (আপনি) তাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে বিরাট অনুগ্রহ। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে বান্দা-বান্দীদের জন্য বিরাট অনুগ্রহ

হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক

ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তাদের মাঝে শাহিদ তথা উপস্থিত,

সুসংবাদ প্রদানকারী ও সতর্ককারী এবং সিরাজুম মুনীরা (প্রদীপ্ত প্রদীপ)

হিসেবে প্রেরণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

এই শ্রেষ্ঠ অনুগ্রহ লাভ করার কারণে বান্দার দায়িত্ব-কর্তব্য হবে খুশি মুবারক প্রকাশ করা, এটাই হবে তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠতম আমল। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ করেছেন

قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مما يجمعون (۵۸) سورة يونس

(হে রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার ফযল এবং রহমত স্বরূপ (আপনাকে) লাভ করার কারণে তারা যেন খুশী মুবারক প্রকাশ করে। আর এটা (খুশী মুবারক প্রকাশ করা) হবে তারা যা কিছু জমা করে তার চেয়েও উত্তম বা শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ তাদের সমস্ত আমলের চেয়েও শ্রেষ্ঠ আমল । সুবহানাল্লাহ। [সূরা ইউনুস শরীফ: ৫৮]

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,

هو الذي أرسل رسوله بالهدى ودين الحق ليظهره على الدين كله : وكفى بالله شهيدا (٢٨) سورة الفتح

মহান আল্লাহ পাক তিনিই উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত দ্বীনের উপর প্রাধান্য দিয়ে হিদায়েত ও সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে সাক্ষী হিসেবে মহান আল্লাহ পাক তিনিই যথেষ্ট। [সূরা ফাত্হ শরীফ: ২৮]

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে সত্য দ্বীনসহ তাশরীফ মুবারক এনে যমীনে দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে উম্মতকে নিয়ামত দানে ধন্য করেছেন। তাই উম্মতের দায়িত্ব-কর্তব্য হবে খুশি মুবারক প্রকাশের লক্ষ্যে উনার প্রতিষ্ঠিত দ্বীন ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জন করা।

যদি শুধু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে খুশি প্রকাশ করি; দ্বীন ইসলাম উনার বিধি-বিধান পালন না করি তাহলে কি হাক্বীক্বীভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খুশি প্রকাশ করা হবে? কখনোই নয়। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উনাদের সম্পর্কে পরকালের সুসংবাদ মুবারক শ্রবণ করার পরও দ্বীন ইসলাম পালন করা থেকে গাফিল থাকেননি বা কাফির-মুশরিকদের তর্জ-তরীকার অনুসরণ করেননি বা গোলামী করেননি।

মূলত দ্বীন ইসলাম পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে খুশি প্রকাশ করা হলো আসল খুশি প্রকাশ তথা হাক্বীক্বী ঈদ। যা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা করেছেন।

মহান আল্লাহ পাক তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু; তার ধোঁকায় পড়ে তার অনুসরণ করে পবিত্র দ্বীন ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হওয়া থেকে বিরত থেকো না।

পবিত্র দ্বীন ইসলামে কিভাবে দাখিল হতে হবে মহান আল্লাহ পাক তিনি সেই বিষয়টাও জানিয়ে দিয়েছেন,

واعتصموا بحبل الله جميعا ولا تفرقوا ، واذكروا نعمت الله عليكم إذ كنتم أعداء فألف بين قلوبكم فأصبحتم بنعمته إخوانا وكنتم على شفا حفرة من النار فأنقذكم منها كذلك يبين الله لكم آياته لعلكم تهتدون (103) ولا تكونوا كالذين تفرقوا واختلفوا من بعد ما جاءهم البينات، وأولئك لهم عذاب عظيم (۱۰۵) سورة

آل عمران

তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার রজ্জুকে (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারককে তথা দ্বীন ইসলামকে)

সকলে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে যে নিয়ামত মুবারক দিয়েছেন তা স্মরণ করো। যখন তোমরা ছিলে শত্রু, তিনি (ছহিবে নিয়ামত) তোমাদের পরস্পরের অন্তরে মুহাব্বত দান করেছেন, সুতরাং নিয়ামত মুবারকের উসীলাতেই তোমরা হয়ে গেলে পরস্পর ভাই। তোমরা ছিলে জাহান্নামের গর্তের কিনারে, তিনি সেখান থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করেছেন। এভাবেই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার আয়াত শরীফ তোমাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন, যাতে তোমরা হিদায়েত লাভ করতে পারো। আর তোমরা তাদের মত হয়ো না; যাদের কাছে দলীল-প্রমাণ আসার পরও ইখতিলাফ করে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাদের জন্য রয়েছে কঠিন আযাব। [সূরা আল ইমরান শরীফ: ১০৩, ১০৫]

স্মরণীয় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উম্মতের মাঝে নিয়ামত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। উনার আগমনের পূর্বে তাদের পরষ্পরের মাঝে শত্রুতা বিরাজ ছিল এবং সবাই ছিল জাহান্নামের কিনারে কিন্তু উনার আগমনের কারণে শত্রুতা দূর হয়ে পরস্পরের মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন তৈরী হয়েছে; এমনকি তিনি তাদেরকে জাহান্নামের কিনার থেকে রক্ষা করেছেন। এই বিষয়গুলো মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যাতে মানুষ হিদায়েত লাভ করতে পারে বা হিদায়েতের উপর ইস্তেক্বামত থাকতে পারে।

এজন্য আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারককে (দ্বীন ইসলামকে) দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে, পৃথকভাবে নয়। পৃথক হলে দ্বীন ইসলাম শক্তিশালী হতে পারবে না। আর শক্তিশালী না হলে দ্বীন ইসলাম সঠিকভাবে পালন করা কারো পক্ষেই সম্ভব হবেনা। আর ঐ সমস্ত লোকদের মত হওয়া যাবে না, যারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক থেকে দূরে সরে গিয়েছে, বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। তাদের জন্য রয়েছে কঠিন

আযাব। কাফিররা চায় মুসলমানরা যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাহলে তারা দুর্বল হয়ে পড়বে, তাদেরকে পরাস্ত করা সহজ হবে। নাউযুবিল্লাহ!

কিন্তু অধিকাংশ মানুষই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ না করে উনার থেকে দূরে সরে যায় অর্থাৎ জাহান্নামের দিকে ধাবিত হয়।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عن أبي هريرة رضي الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم مثلي كمثل رجل استوقد نارا فلما أضاءت ما حولها جعل الفراش و لهذه الدواب التي تقع في النار يقعن فيها و جعل يحجرهن و يغلينه فيتقحمن فيها فأنا أخذ بحجزكم عن النار و أنتم تقحمون فيها – لهذه رواية البخاري و لمسلم نحوها و قال في أخرها قال فذلك مثلي و مثلكم أنا أخذ بحجزكم عن النار هلم عن النار هلم عن النار فتغلبوني تقحمون فيها. (متفق عليه)

হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার মেছাল ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে আগুন প্রজ্জ্বলিত করল। অতঃপর যখন তার চারপাশ আলোকিত হল তখন যেসব পোকা-মাকড় আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে; সেসব পোকামাকড়গুলো আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়তে লাগল। ঐ ব্যক্তি (আগুন প্রজ্জ্বলনকারী) তাদেরকে বাধা দিতে লাগলেন। কিন্তু সেই পোকামাকড়গুলো বাধা না মেনে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ল। অনুরূপ আমি তোমাদেরকে তোমাদের কোমর ধরে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করছি। তারপরও তোমরা সেখানেই (আগুন) ঝাঁপিয়ে পড়ছো। এটা ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনা। ইমাম মুসলিম

রহমাতুল্লাহি আলাইহিও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি শেষাংশে বলেছেন, এটিই হলো আমার ও তোমাদের উদাহরণ। আমি তোমাদের কোমর ধরে আগুন হতে রক্ষা করছি (আর বলছি), তোমরা জাহান্নাম থেকে ফিরে এসো, তোমরা জাহান্নাম থেকে ফিরে এসো। অথচ তোমরা আমার বাধা অমান্য করে জাহান্নামে ঝাঁপিয়ে পড়ছো। নাঊযুবিল্লাহ!

[বুখারী ও মুসলিম শরীফ]

উপরোক্ত হাদীছ শরীফখানা বুঝার সুবিধার্তে এখানে একটি উদাহরণ পেশ করা হলো, কেউ একজন একটি বাতি জ্বালালো আর সেই আলো যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। তখন বাতির আগুন দেখে পোকা-মাকড় এসে ঝাঁপিয়ে পড়তে লাগল। যে ব্যক্তি বাতি জ্বালিয়েছে সে পোকা-মাকড়গুলো তাড়িয়ে দিচ্ছিলো কিন্তু সেই পোকা-মাকড়গুলো আবারও এসে আগুনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংস করে দিচ্ছিলো। ঠিক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উম্মতের মেছাল অনুরূপ। কতক উম্মত জাহান্নামে ঝাঁপিয়ে পড়ছে আর রহমাতুল্লিল আলামীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের কোমর ধরে তাদেরকে সেখানে যেতে বাধা দিচ্ছেন। কিন্তু তারা উনার কথা শুনছে না বা মানছে না অর্থাৎ উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ না করে জাহান্নামের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যেই কাজগুলোর দ্বারা জাহান্নামী হতে হবে সেই কাজগুলোই করে যাচ্ছে। যেমন: ছবি তোলা, দেখা এবং রাখা, গানবাজনা করা এবং শোনা, বেপর্দা হওয়া, কাফির-মুশরিকদের গোলামী ও অনুসরণ করা, অশ্লীল-অশালীন কাজ ইত্যাদি হারাম-নাজায়িয কাজ করা হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

وترى كثيرا منهم يسارعون في الإثم والعدوان وأكلهم الشخت

لبئس ما كانوا يعملون (٦٢) سورة المائدة

আপনি তাদের অধিকাংশকে দেখবেন, তারা গুনাহ, শত্রুতা বা সীমালঙ্ঘন এবং হারাম খাদ্যের দিকে দ্রুত ধাবিত হয়। তারা যে আমল করে, তা কতই না নিকৃষ্ট! নাঊযুবিল্লাহ! [সূরা মায়িদা শরীফ: ৬২]

মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা আলে ইমরান শরীফে বলেন,

يا أيها الذين آمنوا اتقوا الله حق تقاته ولا تموتن إلا وأنتم

مسلمون (۱۰۲) سورة آل عمران

হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করার মত ভয় করো (অর্থাৎ প্রকৃতভাবে ভয় করো) এবং মুসলমান না হয়ে মারা যেওনা। [সূরা আলে ইমরান শরীফ: ১০২]

মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনীত বিধানের উপর যে ব্যক্তি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করবে সেই ব্যক্তিই প্রকৃত মুসলমান হবে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারকই আনিত বিধান যা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম।

কাজেই, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারণে খুশি প্রকাশ করে উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করার মাধ্যমে প্রকৃত মুসলমান হয়ে ইন্তেকাল করার তাওফীক্ব দান করেন। (আমীন)

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-২৫ (একটি রুটি ও তিনটি স্বর্ণের ইট)

একটি রুটি ও তিনটি স্বর্ণের ইট- পর্ব-২৫

মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম, উনার প্রতি নাযিলকৃত কিতাব ইনজিল শরীফ অনুসারে তিনি মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দিতেন। এই উদ্দেশ্যে সারা এলাকা তিনি সফর করে বেড়াতেন। একদিন সফর করতে করতে তিনি এক স্থানে গিয়ে পৌঁছলেন। সেখানে একজন ইহুদী লোক ছিল। সে হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে বললো, “হে মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আমি চাচ্ছি আপনার দ্বীন গ্রহণ করতে। আপনার অনুসারী হতে।' তার কথা শুনে হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম খুশী হলেন। লোকটা উনার দ্বীন গ্রহণ করার পর হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম বললেন, ‘আমি তো এখন চলে যাবো, কারণ আমি সফর করতে বের হয়েছি। তোমাকে যা নিয়ম-কানুন বলে দিলাম, তুমি সে অনুযায়ী আমল করবে।' কিন্তু লোকটা বললো, ‘হুযূর, বেয়াদবী মাফ করবেন। আমার মনে আপনার সঙ্গে সফর করার ইচ্ছা ছিল। আমি মহান আল্লাহ পাক উনার যমীন একটু ঘুরে দেখতে চাই আর আপনার ছোহবত ইখতিয়ার করে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করতে চাই। আপনি দয়া করে আমাকে আপনার সঙ্গে নিন।' লোকটার কাকুতি-মিনতি শুনে হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম রাজী হলেন। লোকটাকে সাথে নিয়ে রওয়ানা হলেন।

বেশ কিছুদূর সফর করার পর হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ক্ষুধা লাগলো। উনার কাছে একটা আটার রুটি ছিল। তিনি সেটা বের করে খেলেন। লোকটির কাছেও রুটি ছিল, সেও একটা রুটি বের করে খেল। হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনারা সবাই মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে গায়েবী ইলমপ্রাপ্ত। সুতরাং হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম জানতেন যে, লোকটির কাছে আরেকটি রুটি রয়েছে। কিন্তু তাকে যখন এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন, সে বললো, 'না হুযূর! আমার কাছে দ্বিতীয় কোনো রুটি নেই; একটিই রুটি ছিল। আপনি যেমন একটি রুটি খেলেন, আমিও একটি খেলাম।' তার অস্বীকার করার কারণ হলো, সে ভেবেছিল দ্বিতীয় রুটিটি বের করলে অর্ধেক রুটি হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে দিতে হবে। নাঊযুবিল্লাহ! হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম আর বেশী কিছু না বলে সফর করতে লাগলেন।

বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর আবার ক্ষুধা লাগলো। কিন্তু সেখানে খাদ্যের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। কোনো ঘর-বাড়ীও ছিল না, শুধু একটা লোক মেষ চরাচ্ছিল। হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম সেই মেষপালকের কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন যে, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম। পরিচয় পেয়ে মেষপালক ব্যাকুল হয়ে গেলো, কারণ সে হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে অনেক তালাশ করেছে, কিন্তু কোথাও পায়নি। আর আজকে তিনি নিজে এসে পরিচয় দিয়েছেন। সে মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করে হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে বললো, “হুযূর! আমি আপনার কি খেদমত করতে পারি? আপনি আমাকে আদেশ করুন।' তখন হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম বললেন, তোমাকে তেমন কোনো খেদমত করতে হবে না। তবে আমাদের ক্ষুধা লেগেছে আর তোমার অনেক মেষ রয়েছে। তাই একটা মেষ যদি আমাকে দাও, আমি আবার সেটা তোমাকে ফিরিয়ে দিবো।' মেষপালক বললো, “হুযূর! শুধু একটা কেন, আপনি যদি চান আমার সমস্ত মেষপাল আপনাকে দিয়ে দিবো।' হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম বললেন, 'না সবটা তো আমার দরকার নেই।' তিনি একটা পছন্দমত মেষ নিলেন ও সেটা যবেহ করে খাওয়া-দাওয়া করলেন। খাওয়া শেষে মেষের হাড়গুলো একসাথে করে বললেন,
“মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে যিন্দা হয়ে যাও।' মেষটা আবার যিন্দা হয়ে গেলো। তিনি মেষপালককে মেষটা ফেরত দিয়ে বললেন, 'তোমার থেকে আমি যে মেষ নিয়েছিলাম, তা শোধ করে দিলাম।' সুবহানাল্লাহ! তারপর হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম সেই লোকটিকে বললেন, "মহান আল্লাহ পাক উনার কসম, যে মহান আল্লাহ পাক এই মুর্দা মেষটাকে যিন্দা করে দিলেন! তোমার সাথে তো দ্বিতীয় আরেকটা রুটি ছিল। সেটা কোথায় গেলো বলো দেখি?' লোকটি বললো, ‘মহান আল্লাহ পাক উনার কসম, আমার সাথে

কোনো দ্বিতীয় রুটি নেই।' হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম আর কিছু না বলে চলতে থাকলেন।

হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে একটা আছা বা লাঠি মুবারক ছিল। সেই লাঠি মুবারকের গুণাবলী সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন, “সেই লাঠিটি দিয়ে যদি কোনো মুর্দাকে স্পর্শ করা হতো তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে সে যিন্দা হয়ে যেত। জন্মান্ধকে যদি স্পর্শ করা হতো, সে চোখ ফিরে পেত। কুষ্ঠ রোগীকে স্পর্শ করলে সে সুস্থ হয়ে যেত।” সুবহানাল্লাহ! সফর করতে করতে কিছুদূর গিয়ে হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম দেখলেন, একটা লোক মরে পড়ে আছে। তিনি সেই লাঠি দিয়ে মুর্দাকে স্পর্শ করে বললেন,

মুর্দা যিন্দা হয়ে গেলো, হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সালাম-কালাম করে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। তখন হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম ঐ লোকটিকে আবার বললেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার কসম, যে মহান আল্লাহ পাক এই মুর্দাকে যিন্দা করলেন! তোমার দ্বিতীয় রুটিটি কোথায়?' লোকটি এবারও অস্বীকার করলো। তারপর হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম সেখান থেকে কিছুদূর গিয়ে একটা জন্মান্ধকে লাঠি দ্বারা স্পর্শ করলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতে জন্মান্ধ সুস্থ হয়ে গেলো। তিনি আবার লোকটিকে কসম দিয়ে বললেন, 'তোমার দ্বিতীয় রুটিটি কোথায়?' সে আবারও অস্বীকার করলো। এরপর হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম একটা কুষ্ঠ রোগীকে লাঠি দ্বারা স্পর্শ করলেন, সেও সুস্থ হয়ে গেলো। আবার তিনি কসম দিয়ে লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, “তোমার দ্বিতীয় রুটিটি কোথায়?' লোকটি এবারও অস্বীকার করলো।

হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম সফর করতে করতে অনেক দূর চলে গেলেন। একস্থানে গিয়ে দেখলেন, তিনটা স্বর্ণের ইট পড়ে রয়েছে। ইহুদী বললো, “হুযূর! এই স্বর্ণের ইট তিনটা আমরা নিয়ে নেই। আমাদের কাজে লাগবে।” কিন্তু হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম বললেন, “আমাদের এগুলো দরকার নেই। মহান আল্লাহ পাক কুদরতীভাবে আমাদের সবকিছুর ফায়সালা করবেন। এগুলো যারা দুনিয়াদার তাদের জন্য।” তারপর হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম সেখান থেকে সরে অন্যস্থানে চলে গেলেন। ক্লান্তির কারণে একটি গাছের ছায়ায় উনার লাঠি মুবারক পাশে রেখে শুয়ে ঘুমিয়ে গেলেন। এই সুযোগে সেই লোকটি লাঠি মুবারক চুরি করে নিয়ে পালিয়ে গেলো। হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম যখন সজাগ হলেন, তখন দেখলেন যে, লোকটিও নেই, লাঠিও নেই। তিনি বুঝতে পারলেন, লোকটিই লাঠিটি নিয়ে পালিয়েছে।

এদিকে লোকটি অনেক দূরে চলে গেলো। এক এলাকায় গিয়ে দেখে, সেখানকার এক নবাব খুব অসুস্থ। ঘোষণা করা হচ্ছে, 'যে ডাক্তার, কবিরাজ বা হেকিম নবাবকে সুস্থ করে দিবে, তাকে পাঁচ হাজার দিরহাম দেয়া হবে।' ঘোষণা শুনে লোকটি গেলো লাঠি নিয়ে, কারণ সে তো মনে করেছে স্পর্শ করলেই সুস্থ হয়ে যাবে। সে বললো, 'আমি যদি সুস্থ করে দিতে পারি, আমাকে কি তোমরা পাঁচ হাজার দিরহাম দিবে?' লোকেরা বললো, 'হ্যাঁ দিব।' তখন লোকটি লাঠি মুবারক দিয়ে নবাবকে স্পর্শ করলো। মহান আল্লাহ পাক উনার কি কুদরত! সেই নবাব ইন্তেকাল করলো। এটা দেখে লোকেরা লোকটিকে পাকড়াও করলো। তারা বললো, ‘তোমাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে। কারণ তুমি নবাবকে মেরে ফেলেছো।'

ঘটনাক্রমে হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনিও সফর করতে করতে সেখানে এসে পৌঁছলেন। লোকটিকে ফাঁসি দেয়া হবে সেজন্য সেখানে অনেক লোক ভীড় করেছিল। হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম লক্ষ্য করলেন, যাকে ফাঁসি দেয়া হবে, সে হলো সেই লোকটি। তিনি তাকে বললেন, ‘তোমার কি অবস্থা?' সেতো উনার কদম মুবারক ধরে কান্নাকাটি করতে শুরু করলো, বারবার অনুরোধ করতে লাগলো, ‘হুযূর! আমাকে বাঁচান। এবারকার মতো আমাকে বাঁচিয়ে দিন।' হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তার থেকে সম্পূর্ণ ঘটনা শুনলেন। তারপর এলাকাবাসীদের বললেন, 'হে এলাকাবাসী! আমি যদি তোমাদের সেই নবাবকে সুস্থ করে দিতে পারি, যিন্দা করে দিতে পারি, তাহলে কি তোমরা এই ব্যক্তিকে ছেড়ে দিবে?' এলাকাবাসী তাতে রাজী হলো। তখন হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম গিয়ে মৃত নবাবকে স্পর্শ করলেন, সাথে সাথে সে যিন্দা হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! তারপর লোকটিকে মুক্ত করে হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সেই মহান আল্লাহ পাক উনার কসম, যিনি তোমাকে মৃত্যু থেকে বাঁচালেন! তোমার দ্বিতীয় রুটিটি কোথায়, বলো দেখি?' দুনিয়ার মুহব্বত কত কঠিন! সে এবারও বললো, 'আমার কোনো দ্বিতীয় রুটি নেই।'

ঘুরতে ঘুরতে হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম আবার সেই আগের স্থানে এসে পৌঁছলেন, যেখানে তিনটি স্বর্ণের ইট ছিল। এবার সেখানে দেখলেন,

চারটা লোক মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তিনি প্রতিটা লোককে যিন্দা করে জিজ্ঞাসা করলেন, 'তোমরা এখানে কি কারণে মারা গিয়েছো? আমরা তো কিছুক্ষণ আগে এই রাস্তা দিয়ে গিয়েছিলাম এখানে আমরা কাউকে দেখিনি। তোমরা কোথা থেকে এসে কি কারণে মারা গেলে এখানে?' তখন তারা বললো, 'হুযূর! বেয়াদবি মাফ করবেন। আমরা দুনিয়ার মোহে মোহগ্রস্ত ছিলাম, যার জন্য মারা গিয়েছি। এখানে আমরা যে চারজন লোক রয়েছি, তার মধ্যে তিনজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু, আর একজন বাইরের লোক। আমরা যখন এখানে এসে তিনটা স্বর্ণের ইট দেখলাম, তখন মনে মনে চিন্তা করলাম যে, তিনটা ইট নিয়ে কি করা যেতে পারে? কারণ আমরা তো তিনজন বন্ধু, আর একজন অতিরিক্ত। তারপর আমরা সেই অতিরিক্ত একজনকে বাজারে পাঠালাম কিছু খাদ্য নিয়ে আসার জন্য। সে চলে গেলে আমরা পরিকল্পনা করলাম, সে ফিরে আসার সাথে সাথেই তাকে পিটিয়ে হত্যা করবো, আর তিনজনে তিনটা ইট ভাগ করে নিয়ে যাবো। এদিকে অতিরিক্ত লোকটা বাজারে গিয়ে মনে মনে ফিকির করলো, সে যদি আমাদের মেরে ফেলতে পারে, তাহলে নিজেই তিনটা ইট নিয়ে নিতে পারবে। তাই সে খাদ্যের মধ্যে বিষ মিশিয়ে নিয়ে আসলো। তারপর সে খাবার নিয়ে ফিরে আসার সাথে সাথে আমরা তাকে পিটিয়ে মেরে ফেললাম। আর তার বিষযুক্ত খাদ্য খেয়ে নিজেরাও মারা গেলাম।' তারপর তারা বললো, ‘হুযূর আমাদেরকে মাফ করে দিন! আমরা আর দুনিয়ার মোহে মোহগ্রস্ত থাকবো না। আমরা যেন মহান আল্লাহ পাক উনার মতে-পথে আমাদের বাকী জীবন অতিবাহিত করতে পারি, সেজন্য দোয়া করবেন।' তারা সেই স্বর্ণের ইটগুলো রেখে চলে গেলো।

তখন হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম বললেন, 'হে ব্যক্তি! তুমি তো সফরে আমার সঙ্গী। এখন যেহেতু স্বর্ণের ইট তিনটা পাওয়া গিয়েছে, তাহলে বন্টন হবে কি করে? আমার একটা, তোমার একটা। আর অতিরিক্ত একটি রুটি যার কাছে রয়েছে, সে পাবে আরেকটি ইট।' তখন সেই দুষ্ট লোকটি তার কোমর থেকে একটি রুটি বের করে বললো, ‘হুযূর! আপনি তো দেখেছেন আমাকে একটা খেতে, আর এই হলো আরেকটা। কাজেই আমাকে দুইটা ইট দিয়ে দিন।' তখন হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম বললেন, “তুমি কতবড় বদনসীব! আমি তোমাকে এতবার মহান আল্লাহ পাক উনার কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি একবারও স্বীকার করলে না। কিন্তু এখন স্বর্ণের ইট পাওয়ার লোভে তুমি স্বীকার করছো। হে বখীল! তুমি তিনটা ইটই নিয়ে যাও, অতিশীঘ্রই তোমার উপর মহান আল্লাহ পাক উনার গযব নাযিল হবে।” লোকটি এতই নিকৃষ্ট যে হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার কথায় ভীত না হয়ে বরং খুশি মনে তিনটি ইট নিয়ে রওয়ানা হলো। মহান আল্লাহ পাক উনার নবী, উনার কথা তো ওহীর অন্তর্ভুক্ত। তাই কথা অনুসারে ওই লোকটি কিছুদূর যাওয়ার পর পরই তার উপরে মাটি ধ্বসে সে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো। নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, “দুনিয়ার মুহাব্বত সমস্ত পাপের মূল।” দেখা যায় সাধারণ লোভ লালসাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে মানুষ আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ গুনাহ করে থাকে। যদিও কোনো গুনাহই সাধারণ নয়। এভাবে সাধারণ গুনাহকে গুনাহ মনে না করার কারণে মূলত মানুষ ক্রমেই বড় বড় গুনাহের বিষয়েও বেপরোয়া হতে থাকে, যা মানুষকে ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে যায়। তাই গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হলে আমাদেরকে দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করতে হবে।

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-২৪ ( কৃতজ্ঞতায় বৃদ্ধি; অকৃতজ্ঞতায় ধ্বংস)


কৃতজ্ঞতায় বৃদ্ধি; অকৃতজ্ঞতায় ধ্বংস- পর্ব-২৪

হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম একদিন তূর পাহাড়ে মহান রব্বুল আলামীন উনার সাথে কথোপকথন করতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে এক গরীব মহিলার সাথে উনার সাক্ষাত হলো। মহিলা উনার নিকট আরজু করলো, “হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আমি খুব গরীব। অতি কষ্টে আমার দিন চলে। আপনি যখন মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কথা বলবেন তখন আমার ব্যাপারে একটু জিজ্ঞেস করবেন যে, কি করলে আমি স্বচ্ছলতা লাভ করবো।' তিনি বললেন, ‘আচ্ছা’। তারপর আবার পথ চলতে লাগলেন। এরপর উনার সাথে এক ধনী মহিলার সাক্ষাত হলো। মহিলা উনার নিকট আরয করলো, “হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আমি খুব ধনী। ধন সম্পদের হিসাব রাখতেই আমার দিন পার হয়ে যায়। আমি বেশি ইবাদত বন্দেগী করার সময় পাই না। আপনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবেন যে কি করলে আমার ধন সম্পদ কমে যাবে।' তিনি শুনলেন তারপর আবার পথ চলতে লাগলেন। এবার উনার সাথে এক লোকের সাক্ষাত হলো, যার হাত পা কিছুই নেই। লোকটি উনার নিকট আরয করলো, ‘হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আমার হাত পা কিছুই নেই। আমি কিছুই করতে পারি না, কোনো কাজেই আসি না। আপনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবেন যে, তিনি কি উদ্দেশ্যে আমাকে তিনি সৃষ্টি করেছেন।' হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি তার আরজিও শুনলেন।

এরপর তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সাক্ষাত করলেন, কথাবার্তাও বললেন। ফিরে আসার সময় ওই তিনজনের প্রশ্নের কথা উনার মনে পড়ে গেলো। তখন তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রথম সেই গরীব মহিলার প্রশ্নটি পেশ করলেন। জানতে চাইলেন যে, সে গরীব মহিলা কি করলে স্বচ্ছলতা অর্জন করতে পারবে? জবাবে মহান আল্লাহ পাক বললেন, “আপনি তাকে বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করতে বলবেন।” তারপর ধনী মহিলার প্রশ্ন পেশ করলেন যে, কি করলে তার ধনসম্পদ কমে যাবে? মহান আল্লাহ পাক জবাবে বললেন, “আপনি তাকে বলবেন সে যেন আমার প্রতি শুকরিয়া আদায় না করে।” অতঃপর হাত-পা বিহীন লোকটির প্রশ্ন পেশ করলেন যে, কেন তাকে এমন ভাবে সৃষ্টি করা হলো? মহান আল্লাহ পাক উত্তর দিলেন, “আমি তাকে জাহান্নামের একটি ছিদ্র বন্ধ করার জন্য সৃষ্টি করেছি।”

সাক্ষাত শেষ করে প্রশ্নগুলোর জবাব নিয়ে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যখন ফিরে আসছিলেন, তখন প্রথমে হাত-পা বিহীন লোকটির সাথে সাক্ষাত হলো। তিনি তাকে মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালা জানালেন। বললেন “তোমাকে দিয়ে মহান আল্লাহ পাক জাহান্নামের একটি ছিদ্র বন্ধ করবেন বলে সৃষ্টি করেছেন”। হাত-পা বিহীন লোকটি শুনেই বলে উঠলো, “আলহামদুলিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে একটা কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন।” এটা বলার সাথে সাথেই লোকটির হাত পা গজিয়ে গেলো। সে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! তারপর সাক্ষাত হলো, ধনী মহিলার সাথে। হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি তাকেও মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালা শুনালেন। বললেন, “মহান আল্লাহ পাক তোমাকে বলেছেন যে, তুমি যেন মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি শুকরিয়া আদায় না করো।” শুনে ধনী মহিলা বলল, “হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! এটা কিভাবে সম্ভব? যিনি আমাকে এত ধন সম্পদ নিয়ামত দান করলেন আমি উনার শুকরিয়া আদায় করবো না! অবশ্যই আমি লক্ষ কোটি বার উনার শুকরিয়া আদায় করি, আরো বেশি বেশি যেন উনার শুকরিয়া আদায় করতে পারি।” এটা বলার সাথে সাথে মহিলার ধন সম্পদ আগের তুলনায় কুদরতিভাবে আরও বহুগুণে বেড়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! সবশেষে সাক্ষাত হলো সেই গরীব মহিলার সাথে। তাকে যখন মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালা জানানো হলো যে, সে যেন মহান আল্লাহ পাক উনার বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করে; এটা শুনে সে বললো, “হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! এটা আপনি কি বললেন? আমার ঘর-বাড়ি নেই, খাবার নেই, কোনো সম্পদ নেই! আমি কিসের জন্য শুকরিয়া আদায় করবো?” এটা বলার সাথে সাথে একটা জোর বাতাসের ঝাপটা এসে সেই মহিলা ও তার কিঞ্চিত যা কিছু ছিল সব সহ তাকে ধ্বংস করে দিলো। নাঊযুবিল্লাহ!

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-২৩ ( রিযিকের জিম্মাদার একমাত্র মহান আল্লাহ পাক)

রিযিকের জিম্মাদার একমাত্র মহান আল্লাহ পাক- পর্ব-২৩

হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম উনাকে সারা পৃথিবীর কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছিল। তারপরেও তিনি বাজারের থলি বানিয়ে বিক্রি করে উনার সংসার চালাতেন। একদিন তিনি মনে মনে চিন্তা করলেন, ‘এই যে থলিগুলি আমি বাজারে বিক্রি করি. এই উসীলায় মহান আল্লাহ পাক আমাকে রিযিক দিয়ে থাকেন।' এটা চিন্তা করার সাথে সাথে মহান আল্লাহ পাক হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, ‘আপনি গিয়ে আমার সম্মানিত নবী হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম উনাকে বলুন, তিনি যেন আসমানের দিকে লক্ষ্য করেন।' হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম উনাকে যখন তা জানানো হলো, তিনি আসমানের দিকে তাকালেন। তাকিয়ে তিনি বিস্মিত হয়ে বললেন, ‘আয় আল্লাহ পাক! আমি প্রতিদিন আসমানে অসংখ্য তারকা দেখি। কিন্তু আজ তো দেখি সমস্ত আসমানে শুধু থলি আর থলি ঝুলছে। এর কি হাক্বীক্বত?' তখন মহান আল্লাহ পাক বললেন, “হে হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম! আপনি হয়তো মনে করেছিলেন, আপনি সুন্দর করে থলি বানান, সেটা বাজারে বিক্রি করেন, মানুষ কিনে নিয়ে যায়, আপনার রিযিকের বন্দোবস্ত হয়ে যায়। কিন্তু না! আপনার সব থলি মানুষ খরিদ করে না। যেহেতু রিযিকের জিম্মাদার আমি; তাই যখন কোনো জ্বিন-ইনসান আপনার থলিগুলো খরিদ করে না, তখন আমি ফেরেশতা দিয়ে সেগুলো খরিদ করিয়ে আপনার রিযিক পৌঁছিয়ে দিয়ে থাকি এবং থলিগুলো নিয়ে আসি। সেই থলিগুলো আমি আসমানে ঝুলিয়ে রেখেছি। দেখুন, কতগুলো থলি মানুষ খরিদ করেছে, আর কতগুলো আমি খরিদ করেছি!' সুবহানাল্লাহ!

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-২২ ('সুবহানাল্লাহ' লফয মুবারকের মর্যাদা)

'সুবহানাল্লাহ' লফয মুবারকের মর্যাদা- পর্ব-২২

মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত নবী হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনার কথা সবারই খুব ভালো ভাবে জানা আছে। মহান আল্লাহ পাক হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনাকে সারা জাহানের বাদশাহী হাদিয়া করেছিলেন। জাহানের জ্বিন-ইনসান তো বটেই, এমনকি পশুপাখি, আলো-বাতাস, তরুলতা, কিটপতঙ্গ থেকে শুরু করে সকল সৃষ্টিই উনার কথা শুনতো এবং তিনিও তাদের সকলের কথা শুনতেন ও বুঝতেন। মহান আল্লাহ পাক উনাকে সমগ্র জাহানে সফর করার জন্য একটি সুসজ্জিত তখত মুবারকও হাদিয়া করেছিলেন। উনার সেই তখত মুবারকের দৈর্ঘ্য ছিল ২৭ মাইল। লক্ষ লক্ষ জ্বীন-ইনসান নিয়ে সেই তখত মুবারকে করে তিনি মাত্র ৬ ঘণ্টায় সারা দুনিয়া সফর করতেন।

একদিন তিনি তখত মুবারকে করে দুনিয়ার এক প্রান্ত দিয়ে উড়ে যাচ্ছিলেন। একজন কৃষক নিচে দাঁড়িয়ে উনার শান শওকতপূর্ণ তখত মুবারক দেখে বললো, 'সুবহানাল্লাহ! মহান রব্বুল আলামীন তিনি উনার নবী হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনাকে কি শানদার তখত মুবারক হাদিয়া করেছেন!' তৎক্ষণাত বাতাসের মাধ্যম দিয়ে কৃষকের এই কথা হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনার কাছে পৌঁছে গেলো। তিনি শুনে সেখানেই তখত মুবারক থামালেন এবং যমীনে নামলেন। অতঃপর কৃষককে ডেকে আনার হুকুম দিলেন। কৃষক হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম 
উনার সামনে আসলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে কৃষক! তুমি তখত মুবারক দেখে কি বলেছো?” কৃষক ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গেলো, সে ভাবলো তার কোনও বেয়াদবি হয়ে গেলো কিনা! সে ভয়ে ভয়ে বললো, “আমার বেয়াদবি ক্ষমা করবেন, আমি মূর্খ মানুষ, আমি বেশী কিছু বুঝে বলিনি। আমি আপনার মহাশানদার তখত মুবারক দেখে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা করে ‘সুবহানাল্লাহ” বলেছিলাম মাত্র।” তখন হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, “শোনো! তুমি আমার তখত মুবারক দেখে যে ‘সুবহানাল্লাহ!” লক্ষ্য মুবারক বলেছো, উনার মর্যাদা এরকম লক্ষ কোটি তখত মুবারক থেকেও অনেক অনেক গুণ বেশী।” সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফে উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “আমি সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবর বলতে এত বেশি পছন্দ করি যে, এগুলো বলা আমার কাছে পৃথিবীর বুকে সূর্যের নীচে যা কিছু আছে সবকিছু থেকে বেশি প্রিয়।” সুবহানাল্লাহ!

অপর এক হাদীছ শরীফে এসেছে, হযরত আবূ সালমা (সালামা) রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “এই বাক্যগুলি কিয়ামতের দিন বান্দার আমল নামায় সবচেয়ে বেশি ভারী হবে।” সুবহানাল্লাহ!


১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-২১ (ছোট বিপদ দ্বারা বড় বিপদ থেকে মুক্তি)

ছোট বিপদ দ্বারা বড় বিপদ থেকে মুক্তি-পর্ব-২১

এক লোকের পশুপাখির ভাষা শেখার খুব ইচ্ছা ছিল। তাই সে হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট গিয়ে আরজু করলো, “হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনি দয়া করে আমাকে পশুপাখির ভাষা শিখিয়ে দিন।' লোকটির বারংবার অনুরোধে, হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক উনাকে জানালেন। তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি অনুমতি দিলে, লোকটির আরজু পূরণ করলেন।

লোকটি তো খুশি মনে বাড়িতে চলে গেলো। তার বাড়িতে ছিল একটি মোরগ ও একটি কুকুর। একদিন খাবারের দস্তরখানা ঝাড়া হলো। একটি রুটির টুকরো সেখান থেকে পড়লো। মোরগ ও কুকুর দুজনেই ছুটে গেলো সেটা দখল করতে। কিন্তু মোরগ জয়ী হলো। তখন কুকুর তাকে অনুরোধ করলো, 'তুমি দয়া করে রুটির টুকরোটা আমাকে দিয়ে দাও। আমি খুব ক্ষুধার্ত।' মোরগ বললো, ‘ভাই! এই একটি টুকরো দিয়ে তোমার ক্ষুধা মিটবে না। তুমি সবুর করো। কাল আমাদের মনিবের গরু মারা যাবে। তখন তুমি পেট ভরে খেতে পারবে।'

লোকটি কিন্তু কুকুর ও মোরগের পুরো কথোপকথন শুনতে পেলো। সে তাড়াতাড়ি তার গরুটা বিক্রি করে দিলো। পরদিন গরুটি সত্যিই মারা গেলো। লোকটি ভাবলো, 'ভাগ্যিস সময়মত বিক্রি করে দিয়েছি। নইলে কত লোকসান হতো!'

এ দিকে কুকুর গিয়ে মোরগকে বললো, 'ভাই! তুমি তো বললে আমি আজ পেট পুরে খাবো। অথচ মনিব তো গরুটিকেই বিক্রি করে দিলো!' মোরগ বলল, ‘আমাদের মনিব খুব চালাক। যাক, তুমি ভেবো না। কাল মনিবের ঘোড়া মারা যাবে। তখন তুমি পেট ভরে খেতে পারবে।'

লোকটি এবারও মোরগ আর কুকুরের কথাবার্তা শুনলো। সে তাড়াতাড়ি তার ঘোড়াটা আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দিলো। পরদিন ঘোড়াটা মারা গেলো। লোকটি আবারও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করলো।

এবার মোরগ গিয়ে কুকুরকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো, 'ভাই! তোমার ভাগ্যে তো খাবার জুটলো না। তবে তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। কাল আমাদের মনিব মারা যাবে। যিয়াফতে (কুলখানি) অনেক খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। তখন তুমি তৃপ্তি করে খেতে পারবে।'

লোকটি যথারীতি তাদের কথা শুনলো। শুনে তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। সে ছুটে গেলো হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার কাছে। উনার কদম মুবারকে পড়ে কান্নাকাটি করলো; সব খুলে বলে সাহায্য চাইলো। তখন হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, 'হে দুনিয়াদার! মৃত্যু তো পূর্বনির্ধারিত। তবে তোমার জন্য সুযোগ রাখা ছিল। সেই গরু আর ঘোড়াটা যদি তোমার মালিকানায় থাকা অবস্থায় মারা যেতো, তবে সেটা তোমার জানের ফিদিয়া হিসেবে গণ্য হতো। কিন্তু তুমি তো তাদের মৃত্যুর আগেই মালিকানা বদলে ফেলেছো!' পরদিন লোকটি সত্যিই মারা গেলো।

পরম করুণাময় মহান আল্লাহ পাক তিনি ছোট বিপদ দিয়ে, মানুষকে বড় বিপদ থেকে হিফাযত করেন। তাই সমস্ত বিপদ আপদে নিজেকে সান্ত্বনা দেয়া উচিত যে, এই বিপদ দিয়ে এরচেয়ে বড় বিপদ থেকে মহান আল্লাহ পাক আমাকে হিফাযত করেছেন। আর দান ছদক্বা মানুষের হায়াত বৃদ্ধি করে। তাই সবারই উচিত সাধ্য সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিদিনই কিছু না কিছু, উপযুক্ত পাত্রে দান করা।

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-২০ (পিতার হক্ব আদায় করে সন্তান কামিয়াব)

পিতার হক্ব আদায় করে সন্তান কামিয়াব-পর্ব-২০

বনী ইসরাঈলের এক লোক নেককার পরহেযগার হিসেবে খুব মশহুর ছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো কারণে ঋণগ্রস্ত হয়ে যান। উনার মাত্র একটা ছেলে ছিল। ছেলেটাও ছিল আল্লাহওয়ালা। এই ছেলেটা ছাড়া তার কোনো আল আওলাদ ছিল না। তখন উনার বয়সও অনেক হয়ে গিয়েছিল, মৃত্যুর সময় প্রায় নিকটবর্তী। সেই নেককার ব্যক্তি তখন উনার সন্তানকে ডেকে বললেন, ‘দেখ বাবা আমার তো অনেক সম্পদ রয়েছে সত্যিই, তবে ঋণও অনেক রয়েছে। তুমি যেহেতু আমার ছেলে, আমি তোমাকে দুটি বিষয়ে শপথ করিয়ে যাচ্ছি। তুমি এগুলো স্মরণ রাখবে। প্রথমত, তুমি ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক, সত্য-মিথ্যা যেটাই হোক না কেন কখনোই মহান আল্লাহ পাক উনার নামে কসম করবে না।

আর দ্বিতীয়ত, যেহেতু তুমি ছাড়া আমার আর কোনো আওলাদ নেই। আমার যে পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে তা তুমি বসে খেলেও খেতে পারবে কিন্তু আমার অনেক ঋণও রয়েছে। আমার ঋণ পরিশোধ করতে গেলে হয়তো এত সম্পদ নাও থাকতে পারে। তুমি আমার পক্ষ থেকে আমার সন্তান হিসেবে আমার ঋণগুলো পরিশোধ করে দিও। হয়তো তোমার অসুবিধা হবে কিন্তু আমি তোমার জন্য দোয়া করছি যেন মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাকে হিফাযত করেন এবং ইহকাল ও পরকালে সুখ-শান্তি দান করেন।' তখন সে সন্তান রাজী হলো। এদিকে তার পিতা ইন্তেকাল করলেন। সারা এলাকার লোক জেনে গেলো যে, সেই লোক ইন্তেকাল করেছেন। উনার ঋণের জিম্মাদার হয়েছে উনার সন্তান। তখন পর্যায়ক্রমে লোক আসতে লাগলো। সে ঋণ পরিশোধ করতে লাগলো। তার যা সম্পত্তি ছিল ধন-দৌলত টাকা পয়সা সব দেয়া হয়ে গেলো, জায়গা-জমি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করলো। শেষ পর্যন্ত, যে বাড়িতে সে বসবাস করতো সেটাও বিক্রি করে তার ঋণ পরিশোধ করতে হলো। এ বাড়িটা ছাড়া বসবাস করার মতো তার আর কোনো জায়গা সেখানে অবশিষ্ট ছিল না। কাজকর্ম করে খাওয়ার মতো তার তেমন কোনো যোগ্যতাও ছিল না।

সে মনে মনে চিন্তা করলো তার স্ত্রী এবং দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। তাদের নিয়ে সে এখন কি করবে? পরিশ্রম করেনি কোনো সময়, কোনো কাজ সে জানে না, সে কি করে এখন কাজ করবে! সে তখন তার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ

করলো যে, আমরা এখান থেকে দূরে কোথাও চলে যাই, যেখানে আমাদেরকে কেউ চিনবে না। সেখানে গিয়ে আমরা যেটা ইচ্ছা সেটা করতে পারবো। এখানে কোনো কাজ করতে গেলে মানুষ হয়তো অনেক কিছু মনে করবে, নানান কিছু বলবে । সে তার স্ত্রীকে বললো, আমার পিতাকে মানুষ খারাপ বলবে, সন্তানকে তিনি রাস্তায় বসিয়ে দিয়ে গিয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি নানান অশ্লীল, অশালীন কথা-বার্তা বলবে। সেটা আমার পক্ষে বরদাশত করা সম্ভব হবে না। কাজেই আমি এখান থেকে চলে যাবো। সে পিতার সম্মানের খাতিরে এ জায়গা ছেড়ে চলে যাওয়ার চিন্তা করলো। তারপর একদিন অনেক দূর চলে যাওয়ার জন্য পরিবারের সবাইকে নিয়ে রওয়ানা হলো। তারা কিছুদূর যাওয়ার পর একটা নদী পড়লো। বড় এক নদী। তারা নৌকায় চড়লো। নৌকায় চড়ে কিছুদূর যাওয়ার পর মধ্য নদীতে হঠাৎ তুফান শুরু হলো। তখন ছিল রাত্রিবেলা, তুফান সমস্ত নৌকা ছিন্নভিন্ন করে দিলো, তছনছ করে দিলো। তারা কোথায় কে চলে গেলো কোনো চিহ্ন রইলো না। প্রত্যেকেই জুদা হয়ে গেলো। কারো খবর কারো কাছে পৌঁছলো না যে, কোথায় কে অবস্থান করছে!

সেই লোকটার যখন হুঁশ ফিরে আসলো ; সে নিজেকে নিরিবিলি এক নদীর পাড়ে জঙ্গলের পাশে আবিষ্কার করলো। তারপর তার মনে একটা চিন্তা আসলো, এখন সে কি করবে? নির্জন জায়গা, লোকজন নেই, ভয়ও করছে! স্মরণ হলো তার স্ত্রীর কথা, তার ছেলেদের কথা। কিন্তু স্মরণ হলেও তো করার কিছু নেই। কেউই নেই সেখানে। সে রওয়ানা হলো যাওয়ার জন্য। কিন্তু কোথায় যাবে? রাস্তা নেই, ঘাট নেই, ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গল। হঠাৎ একটা গায়েবী আওয়াজ হলো, “হে নেক সন্তান! পিতা-মাতার অনুগত সন্তান, তুমি সামনে অগ্রসর হও। তোমার জন্য মহান আল্লাহ পাক এখানে কিছু ধন ভান্ডার রেখেছেন। তুমি সেটা গ্রহণ করো।” মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে সে সামনে অগ্রসর হলো। এরপর সত্যিই একটা ধন ভান্ডার পেলো। পাওয়ার পর ভাবতে লাগলো, এটা দিয়ে সে এখন কি করবে? মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছা, কিছু লোক কোথা থেকে যেন সেখানে এসে পৌঁছলো। সে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করলো এবং এই লোকদের মাধ্যমে আরো কিছু লোক যোগাড় করলো। যেহেতু তার টাকা-পয়সা ছিল, তাই সে কিছু লোক দিয়ে ঘর-বাড়ী তৈরী করালো এবং অনেক দান-খয়রাতও করলো। আস্তে আস্তে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়লো সারা এলাকাতে। নদীর এপার-ওপার সবখানে এ সংবাদ পৌঁছে গেলো। দানশীলতার কারণে তার সাথে সাক্ষাতের জন্য লোকজন দলে দলে আসতে থাকলো। কাউকে সে ফিরিয়ে দিত না। কম

বেশী দান করতো, মেহমানদারী করতো, অবস্থা বিশেষে লোকদেরকে থাকার ব্যবস্থাও করে দিত। এভাবে তার দিন কাটতে লাগলো। কয়েক বছর অতিবাহিত হয়ে গেলো।

হঠাৎ একদিন একটা ছেলে আসলো তার এখানে থাকার জন্য। সে তাকে কাজ দিলো। মূলতঃ সেটা ছিল তারই বড় ছেলে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানের কারণে সন্তান পিতাকে চিনতে পারেনি, পিতাও সন্তানকে চিনতে পারেনি। তাকে একটা কাজে নিয়োগ দিয়ে রেখে দিলো। যেহেতু তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল সারা এলাকায় তাই দেখা গেলো; তার দ্বিতীয় ছেলে যেখানে ছিল। সে জায়গায় এক লোকের অধীনে থাকা অবস্থায়ই সে এই লোকের সম্পর্কে শুনতে পায় যে, সে খুব দানশীল এবং মানুষের সঙ্গে সৎ ব্যবহার করে। একথা শুনে সেও পর্যায়ক্রমে এখানে চলে আসলো এবং চাকরি নিলো এখানে এসে। বেশ কিছু দিন অতিবাহিত হলো।

সেই লোকের যে স্ত্রী ছিল সেও নৌকাডুবির পর ভাসতে ভাসতে এক এলাকায় গিয়ে পৌঁছেছিল। সে এমন এক লোকের বাড়ীর পাশে গিয়ে পৌঁছলো, যে ব্যক্তি ছিলেন দ্বীনদার, পরহেযগার, আল্লাহওয়ালা। তিনি সকালে যখন সেই মহিলাকে দেখলেন তখন চিন্তা করলেন, কোথা থেকে এই বেগানা মহিলা এখানে আসলো? পরে বুঝতে পারলেন, নৌকা ভেঙ্গে এখানে এসেছে। তাই সেই মহিলাকে আশ্রয় দিলেন এবং কয়েক বছর ওখানে রাখলেন। যখন নেককার লোকটি সংবাদ পেলেন যে, একজন লোক খুব দানশীল। গরীব-অসহায়দেরকে সাহায্য করে থাকে। তখন সেই নেককার লোকটা যার আর্থিক অবস্থা মোটামুটি ছিল, তিনি মহিলাটিকে বললেন: “আমি আর কতদিন তোমাকে লালন-পালন করবো? তুমি এক কাজ করো, আমার সাথে চলো, সেই দানশীল নেককার লোকের কাছে তোমাকে পৌঁছে দেই, সে তোমার একটা ব্যবস্থা করে দিবে। অথবা তার কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে আসি, তোমার চলাচলের জন্য যেন সুবিধা হয়।”

তারপর একদিন সেই মহিলাকে একটি নৌকায় করে তিনি নিয়ে আসলেন সেই দানশীল ব্যক্তির এলাকায়। এনে নৌকাটি ঘাটে বেঁধে সেই দানশীল লোকের কাছে পরামর্শ করতে গেলেন যে মহিলাটির জন্য কি ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সেই দানশীল ব্যক্তি তাকে কিছু অর্থ কড়ি দান করলো। রাত অনেক হয়ে গেলো। সে দানশীল ব্যক্তি বললো, আপনি এত রাত্রে যাবেন কোথায়? আপনি থাকুন, আপনার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আমি করবো। তখন তিনি বললেন যে, 'আমি তো একা নই, আমার সাথে আমার নৌকাতে

একজন মহিলা রয়েছেন। যার জন্য আমি আপনার এই দান খয়রাতগুলো গ্রহণ করেছি। সে অভাবগ্রস্ত। তখন সেই দানশীল লোকটি বললো, তাহলে এক কাজ করুন। তাকে পাহারা দেয়ার জন্য আমি লোক দিচ্ছি। আপনি চিন্তা করবেন না। সে পাহারা দেয়ার জন্য সেই ছেলে দু'টাকে দিলো। সেই ছেলে দু'টা এখানে এসে তাদের সততা, সৎ চরিত্রের কারণে দ্বীনদার, নেককার-পরহেযগার হিসেবে মোটামুটি পরিচিতি লাভ করেছিল। যেহেতু তারা সৎচরিত্রবান ছিল তাই তাদেরকে পাহারা দেয়ার জন্য পাঠানো হলো। সেই নৌকার পাশে যখন তারা গিয়ে পৌঁছলো, তখন তারা পরস্পর বললো যে, “আজকে রাত্রে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। কি করবো সারা রাত? করার তো কিছু নেই। এক কাজ করো তুমি কোথা থেকে এখানে আসলে... আর আমিই বা কোথা থেকে আসলাম.... আমরা পরস্পর আমাদের পিছনের জীবনের কথা আলোচনা করি, তাতে রাত শেষ হয়ে যাবে।” তখন প্রথম যে ছেলেটা এখানে এসেছে, সে তার ইতিহাস বর্ণনা করলো যে, “আমরা এরকম ছিলাম, খুব সুখে ছিলাম, শান্তিতে ছিলাম। আমার পিতা, আমার এক ভাই, আমার মা ছিলেন কিন্তু হঠাৎ আমরা, আমার দাদার ঋণ পরিশোধ করে শেষ পর্যন্ত নিঃস্ব হয়ে যাই, সম্বলহীন হয়ে যাই। তখন আমরা অন্য কোথাও চলে যাওয়ার জন্য নৌকায় চড়েছিলাম, কিন্তু ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকা ভেঙ্গে আমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। কে যে কোথায় গিয়েছে! তার সংবাদ আমার জানা নেই! আমি শুধু আমারটা জানি। কথাগুলো বলে সে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

যখন প্রথম ছেলে একথা বললো, তখন দ্বিতীয় ছেলেটা বললো, তোমার পিতার নাম কি? সে জবাব দিলো। তখন সেই ছেলেটা বললো যে, দেখ তুমি তোমার যে ভাইকে তালাশ করছিলে আমি মনে হয় তোমার সেই ভাই। আমার জীবনের ঠিক একই ঘটনা। আমরা দুই ভাই ছিলাম এবং হারিয়ে গিয়েছিলাম। । তখন তাদের পরিচয় হয়ে গেলো। সেই মহিলা নৌকায় বসে বসে সেই ঘটনা শুনলো, শুনে সে চুপ করে রইলো, সে কোনো কথা বললো না। সকালে যখন সে নেককার লোকটি আসলেন, যিনি তাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তিনি এসে সে মহিলাকে দেখলেন বিমর্ষ, চিন্তিত। জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার? সেই মহিলা বললো, এখানে কথা বলা যাবে না। এই এলাকার যিনি মালিক, উনার কাছে যেতে হবে। উনার সাথে আমার কিছু কথা আছে, আমি বললে হয়তো তারা (ছেলেরা) শুনবে না। সেই লোক বললেন, আচ্ছা। ঠিক আছে। অপারগ হয়ে সেই মহিলাকে নিয়ে গেলেন সেই লোকের কাছে। সেই জায়গার মালিক দানশীল ব্যক্তি বললেন, কি হয়েছে?

উনাকে কেন নিয়ে এসেছেন? সেই ব্যক্তি জবাব দিলেন, আপনার সাথে এই মহিলার কিছু কথা আছে। লোকটা প্রথমে একটু উত্তেজিত হয়ে গেলো। কি ব্যাপার? কোনো অঘটন কি ঘটিয়েছে তারা? মহিলার চেহারা আবৃত করা ছিল। তার চেহারা দেখা যাচ্ছিলো না। মহিলাটি বললো, না, তেমন কিছু ঘটেনি। তবে গত রাত্রে তারা একটা গল্প বলেছিল, সে গল্পটা আমি আবার শুনতে চাই। তারা যেন আবার বলে। ছেলে দু'টোকে ডাকানো হলো। ডেকে বলা হলো যে, তারা গত রাত্রে যে ঘটনা বলেছে, সেটা আবার বলতে। পুনরায় সেই কাহিনী যখন সেই ছেলে দু'টা বললো, তখন সেই লোকটা তার আসন থেকে লাফ দিয়ে উঠে বললো যে, সত্যিই যদি এই ঘটনা সত্য হয়ে থাকে তাহলে তো তোমরাই আমার সন্তান। আমি তোমাদের পিতা। যখন সে পরিচয় দিলো, তখন সেই মহিলা বললো যে, ‘মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমিই তাদের মা। এই ঘটনা বাস্তব সত্য, সেটা তাদের মুখ দিয়ে আবার শুনার জন্য আমি বলেছি তাদেরকে বলার জন্য। অন্য কোনো কারণে নয়।' তখন পরিচয় হয়ে গেলো। তারা আবার পরস্পর সেখানে সুখে শান্তিতে থাকতে লাগলো। যে ছেলে তার পিতার ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিল তার প্রতি আবারো গায়েবী নেদা হলো যে, “তুমি তোমার পিতার ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছিলে, কষ্ট করেছো। মহান আল্লাহ পাক তোমাকে তার বদলা, জাযা-খায়ের দিয়েছেন। তোমাকে ইহকালে সুখ দেয়া হলো এবং পরকালেও তোমার জন্য সুখ-শান্তি অপেক্ষা করছে।” সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত পাঠক, সেই সন্তান পিতার আদেশ শিরোধার্য করে নিয়েছিল, দুনিয়াবী সম্পত্তির লোভ করেনি। আগে তার পিতার সমস্ত ঋণ শোধ করে স্বীয় পিতার প্রতি ইহসান করেছিল যার ফলশ্রুতিতে মহান আল্লাহ পাক তিনিও তার প্রতি কত বেমেছালভাবে ইহসান মুবারক করেছেন! সুবহানাল্লাহ!

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-১৯ (দুনিয়ার চেয়ে পরকালের বদলা উত্তম)

দুনিয়ার চেয়ে পরকালের বদলা উত্তম-পর্ব-১৯

হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম একদিন দেখলেন দুই লোক মাছ ধরছে। একজন ঈমানদার আরেকজন কাফির। ঈমানদার ব্যক্তি প্রত্যেকবার বিসমিল্লাহ বলে ছিপ ফেলছেন, কিন্তু কোনো মাছ উঠছে না। আর কাফির প্রত্যেকবার তার দেবতার নাম নিয়ে ছিপ ফেলছে এবং তার ছিপে মাছ উঠছে।

হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম এটা দেখে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট এর রহস্য জানতে চাইলেন। মহান আল্লাহ পাক তখন উনাকে আসমানের দিকে তাকাতে বললেন। তিনি তাকালেন এবং বলে উঠলেন, ‘আল্লাহু আকবার!' মহান আল্লাহ পাক আবার উনাকে যমীনের দিকে তাকাতে বললেন। তিনি তাকালেন এবং বলে উঠলেন, 'আল্লাহু আকবার!' ঈমানদার লোকটি বিষয়টা খেয়াল করলেন এবং হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট আরয করলেন, এরকম বলার কারণ কি? হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তখন উনাকে বললেন আসমান ও যমীনের দিকে তাকাতে। লোকটি তাই করলো এবং দুইবারই বলে উঠলো, 'আল্লাহু আকবার!’

হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি দেখলে? লোকটি জবাব দিলো, 'হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আমি যখন আসমানের দিকে তাকালাম, তখন দেখলাম জান্নাতের দরজা খোলা। ভিতরে একটা পুকুর দেখা যাচ্ছে। সেখানে অনেক সুন্দর সুন্দর মাছ লাফালাফি করছে। আর সেই পুকুরের পাশে আমার নাম লেখা, অর্থাৎ পুকুরটি আমার জন্য রাখা। সুবহানাল্লাহ! আবার যখন যমীনের দিকে তাকালাম, তখন দেখলাম জাহান্নামের দরজা খোলা। ভিতরে একটি পুকুর দেখা যাচ্ছে। সেটাতে অনেক বিষধর সাপ, বিচ্ছু কিলবিল করছে। আর সেই পুকুরের পাশে এই কাফির লোকটির নাম লেখা অর্থাৎ এই পুকুরটি তার জায় ঠিকানা। নাউযুবিল্লাহ! হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! যখন মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক নিয়ে বারবার আমি ছিপ ফেলছিলাম, কিন্তু কোনো মাছ উঠছিল না; অথচ কাফির লোকটি তার দেবতার নাম নেয়া সত্ত্বেও প্রতিবার তার মাছ উঠছিল, তখন আমি প্রতিবারই একটা ধাক্কা খাচ্ছিলাম। তবুও মহান আল্লাহ পাক উনার উপর ইস্তেক্বামত থেকে উনার নাম মুবারক নিয়ে পরের বার আবার ছিপ ফেলছিলাম। এখন এই দৃশ্য দেখে আমার আর কোনো পেরেশানি নেই। মহান আল্লাহ পাক আমার বদলা পরকালের জন্য রেখেছেন। আর কাফির লোকটি তার বদলা দুনিয়াতেই পেয়ে যাচ্ছে।'

দুনিয়াতে যে যতটুকু বঞ্চিত হবে, মহান রব্বুল আলামীন পরকালে তাকে তার বদলা দিয়ে দিবেন। সুতরাং সব অবস্থায় শুকরিয়া আদায় করা উচিত।

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-১৮ (রহস্যময় গাভী)

রহস্যময় গাভী- পর্ব-১৮

মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার যামানায় এক নেককার ব্যক্তির একটি মাত্র পুত্র সন্তান ছিল। উনার পরিবারে স্ত্রী ও সেই সন্তান ছাড়া সহায় সম্বল বলতে আর একটা মাত্র বাছুর ছিল। একদিন সেই ব্যাক্তি উনার সন্তানসহ বাছুরটা নিয়ে এক জঙ্গলে গেলেন। জঙ্গলে গিয়ে সেই ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে দোয়া করলেন, “আয় আল্লাহ পাক! আমার শরীর অসুস্থ, হায়াত হয়তো বেশি দিন নেই। কিন্তু আমার একটা সন্তান রয়েছে। আমি গরুর বাছুরটা আপনার

জিম্মাদারীতে দিয়ে দিলাম।” এ দোয়া করে তিনি বাছুরটিকে জঙ্গলে ছেড়ে দিলেন এবং বললেন, “আয় আল্লাহ পাক! আমার কোনো সহায়-সম্পত্তি, জায়গা-যমীন কিছুই নেই। এই বাছুরটা আমি ছেড়ে দিলাম। আমার ছোট্ট একটা ছেলে সন্তান রয়েছে, এই ছেলেটা যখন বড় হবে তখন আপনি দয়া করে এই বাছুরের মাধ্যমে তার রিযিকের ফায়সালা করে দিবেন।” সে ব্যাক্তি সন্তানের জন্য এভাবে দোয়া করে বাছুরটা ছেড়ে দিয়ে বাড়ীতে চলে গেলেন। বাড়ীতে গিয়ে উনার স্ত্রীকে বললেন, “আমি গরুটা ছেড়ে দিয়ে এসেছি, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে দোয়া করেছি যে, আল্লাহ পাক! আমার সন্তান বড় হলে এই গরুর বাছুর দ্বারা যেন তার আজীবনের রিযিকের ফায়সালা হয়ে যায়। আশা করি মহান আল্লাহ পাক কবুল করেছেন।”

কিছুদিন পর সেই ব্যাক্তি ইন্তেকাল করলেন। এদিকে সেই শিশুটিকে তার মা অনেক কষ্টে লালন-পালন করলেন। ছেলেটা বড় হলো। বড় হয়ে সে পিতা-মাতার হক্ব, ইবাদত-বন্দেগী ইত্যাদি সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান অর্জন করেছিল। তবে দুনিয়াবী শিক্ষা তেমন গ্রহণ করতে পারেনি। সে জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কেটে এনে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতো। সে কাঠ কেটে বিক্রি করে যা পেত তার একভাগ মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান করে দিত। একভাগ তার মায়ের খেদমতের জন্য ব্যয় করতো। আর একভাগ তার নিজের জন্য খরচ করতো। সে দিনটাকে কাজে-কর্মে অতিবাহিত করতো। তাই রাত্রিকে সে তিনভাগ করে নিয়েছিল। একভাগ তার মায়ের খিদমতের জন্য, একভাগ তার বিশ্রামের জন্য আর একভাগ তার ইবাদত-বন্দেগীর জন্য । এভাবে সে চলতে লাগলো।

বেশ কিছু দিন অতিবাহিত হয়ে গেলো। একদিন তার মায়ের সেই বাছুরের কথাটা স্মরণ হলো। তখন তিনি বললেন, “হে আমার সন্তান! তুমি যখন ছোট ছিলে, তোমার পিতা তোমার জন্য একটা বাছুর রেখে গিয়েছেন। যেন তার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক তোমাকে সচ্ছল করে দেন এবং এতমিনানের সাথে তুমি জীবন-যাপন করতে পারো। সে বাছুরটা এতদিনে বড় হয়ে খুব সুন্দর একটা গাভী হয়ে গিয়েছে নিশ্চয়ই।”

সেই গাভীটা গভীর জঙ্গলে থাকতো। যখন বের হয়ে আসতো মানুষ সেটাকে দেখতো। তখন যদি কেউ তাকে ধরতে চাইতো, সেটা এত দ্রুত গতিতে পালিয়ে যেত যে কারো পক্ষে ধরা সম্ভব হতো না।

সেই ছেলের মা তাকে বললেন যে, “তুমি এক কাজ করো, তুমি জঙ্গলে যাও,

জঙ্গলে গিয়ে একটা খুব সুন্দর গাভী দেখবে সেটা ধরে নিয়ে আসবে।” ছেলে বললো, আমি সেটা কি করে ধরবো? তখন তার মা বললে, “এমনিতে তুমি গাভীটিকে ধরতে পারবে না। তুমি এক কাজ করবে, সেই গাভীটা যখন তুমি দেখবে তখন তাকে বলবে, 'হে গাভী! তোমার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! তুমি আমার কাছে চলে আসো। তুমি কসম দিয়ে ডাকলে গাভীটা তোমার কাছে চলে আসবে।” সত্যিই সে জঙ্গলে গেলো তার মায়ের নির্দেশ মুতাবিক। যখন জঙ্গলে গেলো তখন সেখানে সেই গাভীটিকে দেখতে পেলো, কিন্তু গাভীটি তাকে দেখে খুব দ্রুতগতিতে পালাতে লাগলো। সে তখন সেই গাভীটাকে সম্বোধন করে বললো, “হে গাভী! তোমার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! তুমি আমার কাছে চলে আসো।” বলার সাথে সাথে গাভীটা সত্যিই থেমে গেলো। আস্তে আস্তে হেঁটে হেঁটে সেই ছেলেটার কাছে আসলো। ছেলেটা গাভীটির শিং ধরে বললো, আমার সাথে বাড়িতে চলো। যখন সে গাভীটিকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো। তখন মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত, গাভীটির জবান খুলে গেলো। গাভীটি বললো, 'হে নেক সন্তান! তুমি এক কাজ করো, তুমি আমার পিঠে চড়ে বসো। রাস্তা অনেক লম্বা। তোমার কষ্ট হবে।' কিন্তু ছেলেটি বললো, 'হে গাভী! দেখ, আমার মা আমাকে বলেছেন তোমাকে শিং ধরে নিয়ে যেতে, তোমার পিঠে চড়তে আমাকে বলেননি। কাজেই আমার মায়ের নির্দেশ অমান্য করে তোমার পিঠে চড়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।' একথা শুনে গাভী বললো, “তুমি তো তোমার মায়ের উপযুক্ত সন্তান। যে সন্তান মায়ের বাধ্যগত হয়, মহান আল্লাহ পাক তার দোয়া অবশ্যই কবুল করেন।” সে গরুটিকে শিং ধরে বাড়িতে নিয়ে গেলো। বাড়িতে গিয়ে যখন পৌঁছলো, তার মা গাভীটিকে দেখে বললো, “বাবা এক কাজ করো, এটা নিয়ে তুমি বাজারে যাও। বাজারে গেলে কেউ দাম জানতে চাইলে বলবে, এটার মূল্য হচ্ছে তিন দীনার। তবে শর্ত হচ্ছে, বিক্রির পূর্বে পুনরায় আমার মায়ের অনুমতি নিতে হবে। অন্যথায় বিক্রি হবে না।” সে মায়ের কথামতো গাভীটা বাজারে নিয়ে গেলো। যখন গাভীটা বাজারে তুললো - এদিকে মহান আল্লাহ পাক ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে জানিয়ে দিলেন যে দেখ, আমার এই বান্দা সে তার মায়ের কত অনুগত! মায়ের কথা ছাড়া এক কদমও ফেলে না।

তখন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বললেন: তাহলে সে যখন বাজারে বিক্রি করতে যাবে, আমরা সেখানে কিনতে যাবো এবং তাকে কিছু পরীক্ষা করবো যে, সে কতটুকু তার মায়ের অনুগত। সে যখন গাভীটা বাজারে নিয়ে গেলো তখন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা মানুষের

ছুরতে এসে বললেন, হে ছেলে! তুমি কি গাভীটি বিক্রি করবে?

ছেলে বললো

: হ্যাঁ।

উনারা বললেন : কত?

ছেলে বললো

: এর মূল্য তিন দীনার। তবে শর্ত হচ্ছে, পুনরায় আমার মায়ের অনুমতি নিতে হবে। তারপর দিতে পারবো।

উনারা বললেন

: ঠিক আছে। এক কাজ করো, ছয় দীনার দিয়ে দেই। মায়ের অনুমতির কি দরকার রয়েছে? তোমার মা তিন দীনার বলেছে আমরা ছয় দিনার দিয়ে দিবো, গাভীটা আমাদেরকে দিয়ে দাও।

ছেলেটি বললো : না, এটা হবে না।

ছেলে সেই গাভী নিয়ে আবার মায়ের কাছে গেলো।

মা বললেন : ঠিক আছে। এক কাজ করো, তাহলে গিয়ে বলো যে এখন থেকে এটার দাম ছয় দীনার।

ছেলেটি পুনরায় দাম জেনে ফিরে এলো। এসে দেখে সেই লোকগুলো নেই। উনারা চলে গিয়েছেন, অন্য কিছু লোক এসেছেন।

উনারা বললেন : এক কাজ করো, আমাদের কাছে বিক্রি করে দাও। কত বিক্রি করবে?

ছেলে বললো

: ছয় দীনার। তবে আমার মায়ের অনুমতি সাপেক্ষে।

উনারা বললেন

: এক কাজ করো, আমরা বারো দীনার দিয়ে দেই, তোমার মায়ের অনুমতির কি দরকার রয়েছে? তোমার মা যা বলেছেন তার ডবল।

ছেলেটি বললো : না, এটা সম্ভব নয়।

ছেলে আবার সেই গাভীটিকে নিয়ে মায়ের কাছে আসলো। মা তখন বললেন যে দেখ, ব্যাপারটা অন্য রকম মনে হচ্ছে। নিশ্চয়ই উনারা মানুষ নন, উনারা ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম হবেন। তুমি এক কাজ করো তাদের কাছে

গিয়ে পরামর্শ করো। জিজ্ঞাসা করো, গাভীটার মূল্য কত হবে? কত দিয়ে বিক্রি করা যাবে? কখন বিক্রি করবো? ছেলেটির মা প্রকৃত বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন।

ছেলেটি ফিরে এসে দেখলো, লোকগুলো তখনও রয়েছে। সে জিজ্ঞাসা করলো: আচ্ছা, আপনাদের কাছে আমার মা পাঠিয়েছেন পরামর্শ করার জন্য। এটার কত মূল্য হতে পারে এবং কখন কোথায় এটা বিক্রি করবো? তখন ফেরেশতাগণ বললেন এক কাজ করো, তুমি এটা এখন বিক্রি করো না। কিছুদিন পর মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার একটি ঘটনা ঘটবে। সে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে লোকদের একটা গাভীর প্রয়োজন হবে তখন তারা তোমার গাভীটা কিনে নিবে। তুমি বলবে, এই গাভীর চামড়াটা ছাড়িয়ে নেয়ার পর তা পরিপূর্ণ করতে যত স্বর্ণের দরকার ঠিক সেই পরিমাণ স্বর্ণ দিয়ে গাভীর চামড়া পূর্ণ করে দিলে গাভীটি বিক্রি করবো। এছাড়া তুমি রাজী হবে না। আর এখন এটা বিক্রি করো না।

ঠিকই কয়েকদিন পর সেই ঘটনা ঘটলো। যে ঘটনা সম্পর্কে পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফে বর্ণিত আছে। বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তি নিহত হলো। কিন্তু কে তাকে হত্যা করেছে তা সকলের অজানা। সেই নিহত ব্যক্তির চাচাতো ভাই বাদী হয়ে বিচার প্রার্থনা করলো এবং সে এর জন্য এক ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করলো। তখন এ বিষয়টির ফায়সালার জন্য তারা হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট আসলো। তিনি তখন মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুতাবিক বিষয়টির ফায়সালা করলেন। সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফে উল্লেখ করেন, যখন হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্প্রদায়কে বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! মহান আল্লাহ পাক তোমাদেরকে একটা গাভী যবেহ করার আদেশ করেছেন।

তারা বললো, হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনি কি আমাদের সাথে ঠাট্টা করেন?

তিনি বললেন, আমি জিহালত বা মূর্খতা থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। মহান আল্লাহ পাক উনার নবী এবং রসূলগণ কখনও ঠাট্টা বিদ্রূপ করেন না।

তখন তারা বললো, হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনি মহান

আল্লাহ পাক উনার কাছে জিজ্ঞাসা করুন, গাভীটি কেমন হবে?

তিনি বললেন, গাভীটি কচি বাচ্চাও হবে না আবার বৃদ্ধাও হবে না, মাঝামাঝি বয়সের হবে। যা আদেশ করা হয়েছে, তোমরা সেটা পালন করো।

তখন তারা আবার বললো, হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে জিজ্ঞাসা করুন, গাভীটির রং কেমন হবে? মহান আল্লাহ পাক জানিয়ে দিলেন, সেটা গাঢ় হলুদ রংয়ের হবে। এমন সুন্দর রং হবে যে, মানুষ দেখলে খুশী হয়ে যায়।

তখন তারা আবার বললো, হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে আর একটু জিজ্ঞাসা করুন, সেটা কেমন হবে? সমস্ত গাভী তো আমাদের কাছে এক রকম। ইনশাআল্লাহ অবশ্যই আমরা সঠিক পথ প্রাপ্ত হবো।

যখন তারা একথা বললো, তখন হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি জানিয়েছেন সেটা কখনও পানি টানেনি, যমীন চাষ করেনি। নিখুঁত, যার মধ্যে কোনো দাগ নেই এমন সুন্দর একটা গাভী। তখন তারা বললো যে, আপনি সত্য কথাই বলেছেন। যেটা তাদের করার ইচ্ছা ছিল না। তারা সেটা করলো।

তারা যখন গাভী তালাশ করা শুরু করলো, তালাশ করতে গিয়ে যখন কোনো গাভী পাওয়া গেলো না। শেষ পর্যন্ত সেই ছেলের গাভীটিই তাদের পছন্দ হলো। হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম যা বর্ণনা করেছেন হুবহু সেটার সাথে মিলে গিয়েছে। তখন তারা গিয়ে বললো, হে ছেলে! তোমার গাভীটি আমরা কিনতে চাই। তুমি এটার মূল্য কত নিবে? তখন সেই ছেলে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা তাকে যে পরামর্শ দিয়েছিলেন সে মুতাবিক বললো, এটার মূল্য হচ্ছে, গাভীটি জবাই করে চামড়া খুলে তার চামড়ার মধ্যে যত স্বর্ণ জায়গা হবে ঠিক ততগুলো স্বর্ণ ওজন করে দিতে হবে। তাহলে আমি গাভী বিক্রি করবো। অবশেষে যখন তারা অনেক তালাশ করেও কোনো গাভী পেল না শেষ পর্যন্ত সেই গাভীটিই ক্রয় করলো এবং গাভীটি যবেহ করে তার চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে তাতে একটা গাভী পরিমাণ স্বর্ণ ভর্তি করে মেপে সেই স্বর্ণ তাকে দিয়ে দিলো। মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত! এভাবেই সেই সন্তানের আজীবনের রিযিকের ফায়সালা হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ!

এদিকে মূল ঘটনা হলো, বনী ইসরাঈলের এক লোক তার চাচাতো ভাইয়ের সম্পত্তি আত্মসাত করার জন্য তাকে হত্যা করে অন্য একজনের নামে দোষ দেয়। অতঃপর সে নির্দোষ সাজার জন্য হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার কাছে বিচার প্রার্থনা করে। তখন, মহান আল্লাহ পাক হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে বলে দিলেন, সেই জবাইকৃত গাভীর একটা অংশ দিয়ে মুর্দাকে স্পর্শ করো। তাহলে মুর্দা জিন্দা হয়ে বলে দিবে কে তার হত্যাকারী? যখন তারা গাভীটার একটা অংশ কেটে নিয়ে সেই মুর্দার গায়ে স্পর্শ করলো সাথে সাথে মুর্দা জিন্দা হয়ে বলে দিলো, আমার যে চাচাতো ভাই বিচারপ্রার্থী হয়েছে, সেই আমাকে হত্যা করেছে। এভাবেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সত্য প্রকাশ করে দিলেন। যা কালামুল্লাহ শরীফ উনার সূরা বাক্বারা শরীফের ৭২ ও ৭৩নং আয়াত শরীফে উল্লেখ হয়েছে।

আর আলোচ্য ঘটনার মূল বিষয় হচ্ছে, সন্তানের প্রতি পিতার দোয়া। এখানে পিতা তার সন্তানের জন্য দোয়া করেছিলেন যে, আল্লাহ পাক! আমার বিষয় সম্পত্তি তেমন নেই, এই বাছুরটা আমি রেখে গেলাম, এটা বড় হলে যেন এটার মাধ্যমে তার রিযিকের ফায়সালা হয়ে যায়। মহান আল্লাহ পাক তার পিতার দোয়া সম্পূর্ণ কবুল করে নিয়েছিলেন এবং তার মা তাকে যে আদেশ-নিষেধ করেছেন সে হুবহু তা পালন করেছে। সে কারণেই তার রিযিকের ফায়সালা এইভাবে হয়ে গেলো, এক গাভীর সমপরিমাণ স্বর্ণ সে লাভ করলো, তার আজীবনের জন্য এবং তার পরবর্তী বংশধরদের জন্য রিযিকের ফায়সালা হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ!