ছোট বিপদ দ্বারা বড় বিপদ থেকে মুক্তি-পর্ব-২১
এক লোকের পশুপাখির ভাষা শেখার খুব ইচ্ছা ছিল। তাই সে হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট গিয়ে আরজু করলো, “হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনি দয়া করে আমাকে পশুপাখির ভাষা শিখিয়ে দিন।' লোকটির বারংবার অনুরোধে, হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক উনাকে জানালেন। তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি অনুমতি দিলে, লোকটির আরজু পূরণ করলেন।
লোকটি তো খুশি মনে বাড়িতে চলে গেলো। তার বাড়িতে ছিল একটি মোরগ ও একটি কুকুর। একদিন খাবারের দস্তরখানা ঝাড়া হলো। একটি রুটির টুকরো সেখান থেকে পড়লো। মোরগ ও কুকুর দুজনেই ছুটে গেলো সেটা দখল করতে। কিন্তু মোরগ জয়ী হলো। তখন কুকুর তাকে অনুরোধ করলো, 'তুমি দয়া করে রুটির টুকরোটা আমাকে দিয়ে দাও। আমি খুব ক্ষুধার্ত।' মোরগ বললো, ‘ভাই! এই একটি টুকরো দিয়ে তোমার ক্ষুধা মিটবে না। তুমি সবুর করো। কাল আমাদের মনিবের গরু মারা যাবে। তখন তুমি পেট ভরে খেতে পারবে।'
লোকটি কিন্তু কুকুর ও মোরগের পুরো কথোপকথন শুনতে পেলো। সে তাড়াতাড়ি তার গরুটা বিক্রি করে দিলো। পরদিন গরুটি সত্যিই মারা গেলো। লোকটি ভাবলো, 'ভাগ্যিস সময়মত বিক্রি করে দিয়েছি। নইলে কত লোকসান হতো!'
এ দিকে কুকুর গিয়ে মোরগকে বললো, 'ভাই! তুমি তো বললে আমি আজ পেট পুরে খাবো। অথচ মনিব তো গরুটিকেই বিক্রি করে দিলো!' মোরগ বলল, ‘আমাদের মনিব খুব চালাক। যাক, তুমি ভেবো না। কাল মনিবের ঘোড়া মারা যাবে। তখন তুমি পেট ভরে খেতে পারবে।'
লোকটি এবারও মোরগ আর কুকুরের কথাবার্তা শুনলো। সে তাড়াতাড়ি তার ঘোড়াটা আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দিলো। পরদিন ঘোড়াটা মারা গেলো। লোকটি আবারও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করলো।
এবার মোরগ গিয়ে কুকুরকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো, 'ভাই! তোমার ভাগ্যে তো খাবার জুটলো না। তবে তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। কাল আমাদের মনিব মারা যাবে। যিয়াফতে (কুলখানি) অনেক খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। তখন তুমি তৃপ্তি করে খেতে পারবে।'
লোকটি যথারীতি তাদের কথা শুনলো। শুনে তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। সে ছুটে গেলো হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার কাছে। উনার কদম মুবারকে পড়ে কান্নাকাটি করলো; সব খুলে বলে সাহায্য চাইলো। তখন হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, 'হে দুনিয়াদার! মৃত্যু তো পূর্বনির্ধারিত। তবে তোমার জন্য সুযোগ রাখা ছিল। সেই গরু আর ঘোড়াটা যদি তোমার মালিকানায় থাকা অবস্থায় মারা যেতো, তবে সেটা তোমার জানের ফিদিয়া হিসেবে গণ্য হতো। কিন্তু তুমি তো তাদের মৃত্যুর আগেই মালিকানা বদলে ফেলেছো!' পরদিন লোকটি সত্যিই মারা গেলো।
পরম করুণাময় মহান আল্লাহ পাক তিনি ছোট বিপদ দিয়ে, মানুষকে বড় বিপদ থেকে হিফাযত করেন। তাই সমস্ত বিপদ আপদে নিজেকে সান্ত্বনা দেয়া উচিত যে, এই বিপদ দিয়ে এরচেয়ে বড় বিপদ থেকে মহান আল্লাহ পাক আমাকে হিফাযত করেছেন। আর দান ছদক্বা মানুষের হায়াত বৃদ্ধি করে। তাই সবারই উচিত সাধ্য সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিদিনই কিছু না কিছু, উপযুক্ত পাত্রে দান করা।
0 Comments:
Post a Comment