মৌমাছি বেঁচে থাকে মধু খেয়ে”- এই বাক্য থেকেই বুঝা যাচ্ছে, নাস্তিকদের জ্ঞানের পরিসীমা কতটুকু। তারা যে জীববিজ্ঞানে প্রাথমিক জ্ঞানই রাখে না তার প্রমাণ হচ্ছে তাদের এই প্রশ্ন।

 
মৌমাছি বেঁচে থাকে মধু খেয়ে”- এই বাক্য থেকেই বুঝা যাচ্ছে, নাস্তিকদের জ্ঞানের পরিসীমা কতটুকু। তারা যে জীববিজ্ঞানে প্রাথমিক জ্ঞানই রাখে না তার প্রমাণ হচ্ছে তাদের এই প্রশ্ন। 

নাস্তিকদের আপত্তি ৬ : মৌমাছি বেঁচে থাকে মধু খেয়ে! কিন্তু কুরানে উল্লেখ আছে তাদের খাদ্য ফল (Quran16:68-69)! এটা কি মুহম্মদের ভুল অনুমানের ফসল নয়?

খন্ডন : “মৌমাছি বেঁচে থাকে মধু খেয়ে”- এই বাক্য থেকেই বুঝা যাচ্ছে, নাস্তিকদের জ্ঞানের পরিসীমা কতটুকু। তারা যে জীববিজ্ঞানে প্রাথমিক জ্ঞানই রাখে না তার প্রমাণ হচ্ছে তাদের এই প্রশ্ন। 

মৌমাছি যদি শুধু মধু খেয়েই বেঁচে থাকে তাহলে কিভাবে উৎপাদন হয় সেই মধু? গাছে উৎপাদন হয় সে মধু?

পৃথিবীতে ২০,০০০ প্রজাতির মৌমাছি আছে। বেশিরভাগ মৌমাছিই বিভিন্ন ফুলের মিষ্টি রস বা পরাগরেণু বা বিভিন্ন গাছ-পালার রস খেয়ে থাকে এমনকি তাদের বাচ্চাদেরকেও সেটাই খাওয়ায়। তবে মৌমাছি যখন কোন মৌচাক ছেড়ে চলে যায়, তখন উক্ত মৌচাকে সংরক্ষিত মধু তারা খেয়ে ফেলে। কিন্তু তাই বলে, এ কথা বলা কোন সুযোগ নেই যে, “মৌমাছি বেঁচে থাকে মধু খেয়ে।”

মূলত নিরেট মূর্খ নাস্তিকদের জন্যই এ ধরনের কথা বলা শোভা পায়। নাস্তিকদের জন্য নি¤েœ ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ এবং ‘খাদ্য ও কৃষি সংস্থা’ কর্তৃক প্রদত্ত মধুর সংজ্ঞা পাশাপাশি মধু উৎপাদন কৌশল তুলে ধরা হলো যাতে তারা বুঝতে পারে মৌমাছি কি খায়। 

মধু কাকে বলে?

‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ এবং ‘খাদ্য ও কৃষি সংস্থা’র মতে, মধু হচ্ছে এমন একটি অগাঁজনশীল মিষ্টি জাতীয় পদার্থ যা মৌমাছিরা নেকটার (ফুলের মিষ্টি রস বা পরাগরেণু) অথবা জীবন্ত গাছপালার নির্গত রস থেকে সংগ্রহ করে মধুতে রূপান্তর করে এবং সুনির্দিষ্ট কিছু উপাদান যোগ করে মৌচাকে সংরক্ষণ করে।

মধু উৎপাদন কৌশল :

মধু উৎপাদনের লক্ষ্যে কর্মী মৌমাছি প্রথমে বিভিন্ন ফুলের মিষ্টি রস বা পরাগরেণু ও গাছের রস সংগ্রহ করে। এসব মিষ্টি রস বা পরাগরেণু ও গাছের রস মূলত একটি তরল পদার্থ, যা মৌমাছির মধু উৎপাদনের প্রাথমিক উপাদান। এই তরলে রয়েছে- ৮০% পানি, প্রাকৃতিক জটিল চিনি (যার বেশিরভাগই সুক্রোজ), আরজিনিন, প্রোলিন, এলানিন, আইসোলিউসিন, সেরিন, ভ্যালিন ও গ্লাইসিনসহ অত্যাবর্শকীয় অ্যামাইনো এসিড।

এসব কর্মী মৌমাছিদের মধু উৎপাদনের জন্য আলাদা একটি বিশেষ পাকস্থলী রয়েছে, যা একটি কপাটিকা দ্বারা খাদ্যগ্রহণের পাকস্থলী হতে পৃথক থাকে। বিভিন্ন গাছপালা বা ফুল থেকে সংগৃহীত মিষ্টি রস দ্বারা যখন কর্মী মৌমাছিদের এই বিশেষ পাকস্থলী পূর্ণ হয়ে যায়, তখন এরা সংগৃহীত মিষ্টি রস দ্বারা মধু উৎপাদনের লক্ষ্যে মৌচাকে ফিরে আসে। কর্মী মৌমাছিগুলো সাধারণত তাদের দেহের ওজনের সমান মিষ্টি রস বহন করে থাকে, যার ওজন ৭০ মিলিগ্রাম। মিষ্টি রস বহনকারী মৌমাছি মৌচাকে ফিরে আসার আগেই তার দেহের হাইপোফেরিঞ্জয়াল গ্রন্থির ইনভারটেজ নামে বিশেষ ধরনের এনজাইমের সাহায্যে মধু উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। ইনভারটেজ এনজাইমে উপস্থিত সুক্রেজ ও গ্লুকোজ অক্সাইডেজ হাইড্রোলাইসিস প্রক্রিয়ায় মিষ্টি রসে উপস্থিত যৌগিক চিনিকে ভেঙ্গে সরল চিনিতে পরিবর্তিত করে দেয়। সাধারণত সুক্রেজ ডাইস্যাকারাইড সুক্রোজকে ৬-কার্বন বিশিষ্ট মনোস্যাকারাইড গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজে রূপান্তরিত করে ফলে দানা গঠনের সামর্থ্য কমে যায় অর্থাৎ মধু উৎপাদিত হয় আর গ্লুকোজ অক্সাইডেজ গ্লুকোজকে গ্লুকোনিক এসিড ও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডে রূপান্তরিত করে যা মধুকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, মোল্ড ও ছত্রাকের বিরুদ্ধে অত্যন্ত স্থিতিশীল করে তোলে এবং হিমায়িতকরণ ছাড়াই দীর্ঘদিন সংরক্ষণক্ষম করে তোলে।

C12H22O11 + H2O = C6H12O6 + C6H12O6

সুক্রোজ   পানি গ্লুকোজ    ফ্রুক্টোজ

সরল চিনিতে রূপান্তরের এই প্রক্রিয়াকে উৎক্রমন (inversionবলে, যা সংগঠিত হতে প্রায় আধা ঘন্টা সময় লাগে।

মিষ্টি রস বহনকারী মৌমাছি মৌচাকে পৌঁছে তার বিশেষায়িত মুখের সাহায্যে উক্ত মিষ্টি রস মৌচাকে অবস্থানরত অন্য কর্মী মৌমাছির মুখ স্থানান্তর করে দিলে সে মৌমাছির পেটেও একই রূপান্তর প্রক্রিয়া আবার সংগঠিত হয়। আর এই স্থানান্তরের সময় বাতাসের সংস্পর্শে পানি বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় উক্ত রসের পানির পরিমাণ ১৫% কমে যায়। অতঃপর মৌচাকে অবস্থানকারী মৌমাছিটি যখন তার মুখ থেকে মৌ প্রকোষ্ঠে উক্ত মধু উদগীরণ করতে থাকে তখন অন্য মৌমাছিরা তাদের ডানার সাহায্যে বাতাস করে বাকি আদ্রতা কমিয়ে ফেলে। শেষ পর্যন্ত আদ্রতা ১৮%-এ পৌঁছালে মৌমাছি উক্ত মধু সংরক্ষণের জন্য এর উপর মোমের একটি আবরণ জড়িয়ে দেয়।

উপরের আলোচনা হতে বুঝা যাচ্ছে যে, মৌমাছি মূলত বিভিন্ন ফুলের মিষ্টি রস, পরাগরেণু বা গাছের রস সংগ্রহ করে খায়। আর তাদের পাকস্থলী যেহেতু ২টি তাই মধু উৎপাদনের প্রয়োজনে তারা মধু উৎপাদনকারী পাকস্থলী ব্যবহার করে আর খাদ্য গ্রহণের দরকার হলে সংগৃহীত ফুলের মিষ্টি রস, পরাগরেণু বা গাছের রস খাদ্যগ্রহণকারী পাকস্থলীর সাহায্যে পাঁচন করে হজম করে নেয়।

এই আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ফল হিসেবে নাস্তিকরা যে আরবি শব্দ মুবারককে উল্লেখ করছে  সেটা হলো الثَّمَرَاتِ ‘ছামারাত’। কিন্তু পূর্বেই (২নং আপত্তির খণ্ডণে) উল্লেখ করা হয়েছে-

كل فاكهة ثـمرة وليست كل ثـمرة فاكهة

অর্থ : “সমস্ত فَاكِهَة ‘ফাকিহাহ্’ই ثـمرة ‘ছামারাত’ কিন্তু সমস্ত ثـمرة ‘ছামারাত’ই فَاكِهَة ‘ফাকিহাহ্’ নয়।

আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি মৌমাছিকে বিভিন্ন ফল থেকেই খাদ্য আহরণের আদেশ মুবারক দিতেন, তাহলে كُلِىْ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَ‌اتِ উল্লেখ না করে বরং كُلِىْ مِنْ كُلِّ فَاكِهَةِ উল্লেখ করতেন। কিন্তু তিনি তা দেননি। তাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত পবিত্র আয়াত শরীফ মোটেও অনুমান নির্ভর নয় বরং প্রকৃত সত্য।

নাস্তিকরা নিজেরাই নিরেট মূর্খ, আর তাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান মুবারক সম্পর্কে চু-চেরা কিল-ক্বাল করার স্পর্ধা দেখায়। নাস্তিকরা যে আয়াত শরীফ খানা উদ্ধৃত করেছে উক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল ইলম মুবারক উনার নিদর্শন রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاَوْحٰى رَ‌بُّكَ اِلَى النَّحْلِ اَنِ اتَّـخِذِي مِنَ الْـجِبَالِ بُيُوْتًا وَمِنَ الشَّجَرِ‌ وَمِـمَّا يَعْرِ‌شُوْنَ. ثُـمَّ كُلِىْ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَ‌اتِ فَاسْلُكِىْ سُبُلَ رَ‌بِّكِ ذُلُلًا ۚ يَـخْرُ‌جُ مِنْ بُطُوْنِـهَا شَرَ‌ابٌ مُّـخْتَلِفٌ اَلْوَانُهُ فِيْهِ شِفَاءٌ لِّلنَّاسِ ۗ اِنَّ فِىْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُ‌وْنَ.

অর্থ : “আপনার মহান রব তায়ালা তিনি মৌমাছিকে আদেশ দিলেন পর্বতগাত্রে, বৃক্ষ ও উঁচু চালে মৌচাক নির্মাণ করো। এরপর সর্বপ্রকার গাছ বা ফুল হতে ভক্ষণ কর এবং আপন মহান রব তায়ালা উনার উন্মুক্ত পথ সমূহে চলমান হও। তার পেট হতে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের শিফা। নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।” (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৮-৬৯)

মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশের প্রতিফলন আমরা মৌমাছির মধ্যে দেখতে পাই। মৌমাছি বিভিন্ন উঁচু স্থানে তাদের মৌচাক তৈরি করে, বিভিন্ন ফুল হতে পরাগ আহরণ করে এবং তা হতে মধু উৎপাদন করে। উৎপাদিত মধু মৌচাকে সংরক্ষণ করে। সংগৃহীত ফুলের পরাগ হতে মূলত স্ত্রী মৌমাছিরাই (কর্মী মৌমাছিরা) মধু উৎপাদন করে। যা অনেক গবেষণার পরীক্ষালব্দ ফল। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বেই মানবজাতিকে এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। যেমন- ভক্ষণ কর, উন্মুক্ত পথ সমূহে চলমান ও তার পেট- এ শব্দ তিনটির ক্ষেত্রে আরবীতে যথাক্রমে فَاسْلُكِي ,كُلِيبُطُونِـهَا শব্দ ৩টি ব্যবহার করা হয়েছে, যা স্ত্রীবাচক শব্দ। এখানে স্ত্রীবাচক শব্দ ব্যবহার করে কর্মী মৌমাছিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কিন্তু উক্ত শব্দগুলো পুরুষবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়নি অর্থাৎ পুরুষ মৌমাছিকে ইঙ্গিত করা হয়নি। পুরুষ মৌমাছিকে ইঙ্গিত করা হলে فَاسْلُكْ ,كُلْبُطُونِهِ শব্দ ৩টি ব্যবহৃত হতো।

অতএব এখানে নাস্তিকদের মূর্খতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটলো। তারা বিজ্ঞান মনষ্ক দাবী করলেও বিজ্ঞানের যে কিছুই জানে না তার নিদর্শন তারা স্থাপন করেছে।


0 Comments: