সূর্যতাপে পানি বাষ্প হয়ে ঊর্ধ্বাকাশে ঘনিভূত হয়ে যে মেঘ ও পরবর্তীতে বৃষ্টি তৈরি হয় তা কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে! নাঊযূবিল্লাহ মিন যালিক!

সূর্যতাপে পানি বাষ্প হয়ে ঊর্ধ্বাকাশে ঘনিভূত হয়ে যে মেঘ ও পরবর্তীতে বৃষ্টি তৈরি হয় তা কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে! নাঊযূবিল্লাহ মিন যালিক!

 নাস্তিকদের আপত্তি ১১ : কুরানে প্রতিটা আয়াত (Quran 7:57, 13:17, 15:22, 23:18, 24:43, 25:48-49, 30:24, 30:48, 35:9, 39:21, 45:5, 50:9-11, 56:68, 78:14-15নির্দেশ করে, বৃষ্টিপাত হয় সরাসরি আকাশ থেকে নয়তো আল্লাহ থেকে! সূর্যতাপে পানি বাষ্প হয়ে ঊর্ধ্বাকাশে ঘনিভূত হয়ে যে মেঘ ও পরবর্তীতে বৃষ্টি তৈরি হয় তা কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে! এর থেকে কি কুরআনের রচয়িতার অজ্ঞতা প্রকাশিত হয় না?

খণ্ডণ : সূর্যতাপে পানি বাষ্প হয়ে ঊর্ধ্বাকাশে ঘনিভূত হয়ে যে মেঘ ও পরবর্তীতে বৃষ্টি তৈরি হয় তা কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে! নাঊযূবিল্লাহ মিন যালিক!

অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবেই বাষ্পীভবনের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَللهُ الَّذِى يُرْسِلُ الرِّيَاحَ فَتُثِيرُ سَحَابًا فَيَبْسُطُهُ فِى السَّمَاءِ كَيْفَ يَشَاءُ وَيـَجْعَلُهُ كِسَفًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَـخْرُجُ مِنْ خِلَالِهِ  ۖ  فَاِذَا اَصَابَ بِهٖ مَنْ يَّشَاءُ مِنْ عِبَادِهٖ اِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ.

অর্থ : “তিনি মহান আল্লাহ পাক যিনি বায়ু প্রেরণ করেন। অতঃপর তা মেঘ সঞ্চার করে, অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং একে তিনি স্তরে স্তরে করেন। ফলে তোমরা দেখতে পাও তার মধ্য থেকে বৃষ্টি বেরিয়ে আসছে। অতঃপর তিনি উনার বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়।” (পবিত্র সূরা রূম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৮)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاللهُ الَّذِىْ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ فَتُثِيْرُ سَحَابًا فَسُقْنَاهُ اِلٰى بَلَدٍ مَّيِّتٍ فَاَحْيَيْنَا بِهِ الْاَرْضَ بَعْدَ مَوْتِـهَا ۚ كَذٰلِكَ النُّشُوْرُ.

অর্থ : “আর তিনি মহান আল্লাহ পাক যিনি বায়ু প্রেরণ করেন। ফলে এটি মেঘমালা সঞ্চালিত করে। অতঃপর আমি তা মৃত ভূখ-ের দিকে পরিচালিত করি। ফলে তার দ্বারা সে  ভূখ-কে তার মৃত্যুর পর সঞ্জীবিত করে দেই। এমনিভাবে হবে পুনরুত্থান।” (পবিত্র সূরা ফাত্বির শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের মধ্যে يُرْسِلُ الرِّيَاحَ ‘বায়ু প্রেরণ’ করার কথা বলার পর বলা হচ্ছে- فَتُثِيرُ سَحَابًا ‘মেঘ সঞ্চার করে’। অর্থাৎ যে বায়ু প্রেরণ করা হয়েছে তা মেঘ সঞ্চার করে। সুতরাং এখানে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়া উল্লেখ করা হয়েছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্য আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আরো স্পষ্ট করে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়াকে উল্লেখ করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- 

وَهُوَ الَّذِىْ يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرًا بَيْنَ يَدَىْ رَحْـمَتِهِ  ۖ حَتّٰى اِذَا اَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالًا سُقْنَاهُ لِبَلَدٍ مَّيِّتٍ فَأَنْزَلْنَا بِهِ الْمَاءَ فَأَخْرَجْنَا بِهٖ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ ۚ كَذٰلِكَ نُـخْرِجُ الْمَوْتٰى لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ.

অর্থ : “তিনিই বৃষ্টির পূর্বে সুসংবাদবাহী বায়ু পাঠিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত যখন বায়ুরাশি পানিপূর্ণ মেঘমালা বহন করে আনে, তখন আমি এ মেঘমালাকে মৃত শহরের দিকে পাঠিয়ে দেই। অতঃপর এ মেঘ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি। অতঃপর এর সাহায্যে উৎপন্ন করি সব রকমের ফল-ফসল। এমনিভাবে আমি মৃতকে বের করে আনি, যাতে তোমরা স্মরণ করো।” (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَهُوَ الَّذِىْ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ بُشْرًا بَيْنَ يَدَىْ رَحْـمَتِهِ ۚ وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً طَهُوْرًا. لِّنُحْيِىَ بِهِ بَلْدَةً مَّيْتًا وَنُسْقِيَهُ مِـمَّا خَلَقْنَا اَنْعَامًا وَاَنَاسِىَّ كَثِيْرًا.

অর্থ : “তিনিই বৃষ্টির পূর্বে সুসংবাদবাহী বায়ু পাঠিয়ে দেন। আর আমি আকাশ থেকে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি। তদ্দারা মৃত ভূখ-কে সঞ্জীবিত করার জন্যে এবং আমার সৃষ্ট বহুসংখ্যক গবাদিপশুর ও মানুষের পিপাসা নিবারণের জন্যে।” (পবিত্র সূরা ফুরক্বান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৮-৪৯)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের মধ্যে বায়ু/বাতাস কেমন তার বর্ণনা দিতে গিয়ে الرِّيَاحَ بُشْرًا ‘সুসংবাদবাহী বাতাস’ প্রেরণের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ এমন বায়ু যা সুসংবাদবাহী।

আর পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ উনার আয়াত শরীফ উনার পরবর্তী অংশে حَتّٰى اِذَا اَقَلَّتْ سَحَابًا ‘যতক্ষণ পর্যন্ত না মেঘ সৃষ্টি হয়’ উল্লেখ করার মাধ্যমে নিঃসন্দেহে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়াটি উপস্থাপন করা হয়েছে।

অর্থাৎ পৃথিবীর বিভিন্ন পানিধার থেকে পানি বাষ্পীভবনের মাধ্যমে মেঘ সৃষ্টির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র আরো সুস্পষ্টভাবে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاَرْسَلْنَا الرِّيَاحَ لَوَاقِحَ فَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَاَسْقَيْنَاكُمُوْهُ وَمَا اَنْتُمْ لَهُ بِـخَازِنِيْنَ.

অর্থ : “আমি উর্বরতা সঞ্চারক বা বৃষ্টিপূর্ণ বায়ু পরিচালনা করি, অতঃপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, তখন তোমাদেরকে তা পান করাই। আর তোমরা তার কোষাধ্যক্ষ নও।” (পবিত্র সূরা হিজর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২২)

আলোচ্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে الرِّيَاحَ لَوَاقِحَ ‘উর্বরতা সঞ্চারক বা বৃষ্টিপূর্ণ বায়ু’ পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ এমন বায়ু যা বৃষ্টিকে ধারণ করে। এটি নিঃসন্দেহে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ার নির্দেশক।

এছাড়াও মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاَنْزَلْنَا مِنَ الْمُعْصِرَاتِ مَاءً ثَجَّاجًا.

অর্থ : “আমি পানিপূর্ণ মেঘমালা থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত করি।” (পবিত্র সূরা নাবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪)

আলোচ্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে مُعْصِرَاتِ ‘পানিপূর্ণ/বৃষ্টিপূর্ণ মেঘ’ বলা হয়েছে। মেঘ তো নিজে নিজে পানিপূর্ণ হতে পারে না। অবশ্যই বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানি উপরে উঠতে হয়।

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা রূম শরীফ ও পবিত্র সূরা ফাত্বির শরীফ উনাদের মধ্যে বায়ু প্রেরণের মাধ্যমে মেঘ সৃষ্টির বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। এই বায়ু কি ধরণের তা অত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের মধ্যে বর্ণিত নেই। আর পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ, পবিত্র সূরা ফুরক্বান শরীফ ও পবিত্র সূরা হিজর শরীফ উনাদের মধ্যে সেই বায়ু কোন ধরণের তার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে- এই বায়ু সুসংবাদবাহী ও উর্বরতা সঞ্চারক বা বৃষ্টিপূর্ণ বায়ু, যদ্দারা বৃষ্টিপাত ঘটে। সুতরাং পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবেই বাষ্পীভবনের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

যেহেতু দিনে-রাতে ২৪ ঘন্টাই বাষ্পীভবন প্রক্রিয়াটি চলমান থাকে। কিন্তু বাষ্পীভবন প্রক্রিয়াটি শুধুমাত্র সূর্যতাপের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। তাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বায়ু প্রেরণের বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছে। কেননা রাতের বেলায় তো আর সূর্যতাপে বাষ্পীভবন হয় না, তখন তো সূর্যই অপ্রকাশিত থাকে কিন্তু বাষ্পীভবন ঠিকই চলতে থাকে।

আবার মেরুতেও বাষ্পীভবন হয়। কিন্তু উত্তর মেরুতে ২১ মার্চ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর (১৮৭ দিন) অবিরত পুরোটাই দিন ও গ্রীষ্মকাল আর দক্ষিণ মেরুতে এই সময়টাতে (১৮৭ দিন) অবিরত পুরোটাই রাত ও শীতকাল।

বিপরীতভাবে দক্ষিণ মেরুতে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ মার্চ (১৭৮ দিন) অবিরত পুরোটাই দিন ও গ্রীষ্মকাল আর উত্তর মেরুতে এই সময়টাতে (১৭৮ দিন) অবিরত পুরোটাই রাত ও শীতকাল।

তাহলে দক্ষিণ মেরুতে ১৮৭টি দিন ও উত্তর মেরুতে ১৭৮টি দিন, যখন পুরোটাই রাত থাকে তখন সূর্যালোক আসে কোথা থেকে? কিন্তু বাষ্পীভবন তো ঠিকই হচ্ছে।   

এছাড়াও উত্তর মেরুতে গ্রীষ্মকালে গড় তাপমাত্রা থাকে ০ক্ক সেন্টিগ্রেড (৩২ক্ক ফারেনহাইট) আর এই সময়ে দক্ষিণ মেরুতে শীতকালে গড় তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৫৮ক্ক সেন্টিগ্রেড (মাইনাস ৭২ক্ক ফারেনহাইট)।

আবার দক্ষিণ মেরুতে গ্রীষ্মকালে গড় তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ২৬ক্ক সেন্টিগ্রেড (১৫ক্ক ফারেনহাইট) আর এই সময়ে উত্তর মেরুতে শীতকালে গড় তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৩৪ক্ক সেন্টিগ্রেড (মাইনাস ২৯ক্ক ফারেনহাইট)।

তাহলে যার যার গ্রীষ্মকালে যখন উত্তর মেরুতে গড় তাপমাত্রা ০ক্ক সেন্টিগ্রেড (৩২ক্ক ফারেনহাইট) আর দক্ষিণ মেরুতে গড় তাপমাত্রা মাইনাস ২৬ক্ক সেন্টিগ্রেড (১৫ক্ক ফারেনহাইট), তখন এত নি¤œ তাপমাত্রায় সূর্যতাপে পানি বাষ্প তৈরী করে কিভাবে? 

(Avevi †giæ‡ZI ev®úxfeb nq| wKš‘ DËi †giæ‡Z 21 gvP© †_‡K 23 †m‡Þ¤^i (187 w`b) AweiZ cy‡ivUvB w`b I MÖx®§Kvj Avi `wÿY †giæ‡Z GB mgqUv‡Z (187 w`b) AweiZ cy‡ivUvB ivZ I kxZKvj|

wecixZfv‡e `wÿY †giæ‡Z 23 †m‡Þ¤^i †_‡K 21 gvP© (178 w`b) AweiZ cy‡ivUvB w`b I MÖx®§Kvj Avi DËi †giæ‡Z GB mgqUv‡Z (178 w`b) AweiZ cy‡ivUvB ivZ I kxZKvj|

Zvn‡j `wÿY †giæ‡Z 187wU w`b I DËi †giæ‡Z 178wU w`b, hLb cy‡ivUvB ivZ _v‡K ZLb m~h©v‡jvK Av‡m †Kv_v †_‡K? wKš‘ ev®úxfeb †Zv wVKB n‡”Q|  

GQvovI DËi †giæ‡Z MÖx®§Kv‡j Mo ZvcgvÎv _v‡K 0° †mw›U‡MÖW (32° dv‡ibnvBU) Avi GB mg‡q `wÿY †giæ‡Z kxZKv‡j Mo ZvcgvÎv _v‡K gvBbvm 58° †mw›U‡MÖW (gvBbvm 72° dv‡ibnvBU)|

Avevi `wÿY †giæ‡Z MÖx®§Kv‡j Mo ZvcgvÎv _v‡K gvBbvm 26° †mw›U‡MÖW (15° dv‡ibnvBU) Avi GB mg‡q DËi †giæ‡Z kxZKv‡j Mo ZvcgvÎv _v‡K gvBbvm 34° †mw›U‡MÖW (gvBbvm 29° dv‡ibnvBU)|

Zvn‡j hvi hvi MÖx®§Kv‡j hLb DËi †giæ‡Z Mo ZvcgvÎv 0° †mw›U‡MÖW (32° dv‡ibnvBU) Avi `wÿY †giæ‡Z Mo ZvcgvÎv gvBbvm 26° †mw›U‡MÖW (15° dv‡ibnvBU), ZLb GZ wb¤œ ZvcgvÎvq m~h©Zv‡c cvwb ev®ú ˆZix K‡i wKfv‡e?) 

বাস্তবতা হচ্ছে দিনে বেলায় হোক বা রাতের বেলায়, সূর্যালোক থাকুন চাই ছায়া বা অন্ধকার থাকুন, বাষ্পীভবন প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে। তবে শক্তি বেশি পেলে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়াটি তরান্বিত হয় আর সূর্যালোক অধিকতর শক্তির একটি ভাল উৎস। কারণ সূর্যালোক বস্তুকে উত্তপ্ত করে এবং উচ্চ তাপমাত্রা দ্রুত বাষ্পীভবন সৃষ্টি করে। অর্থাৎ সূর্যালোক বেশি থাকলে বেশি বাষ্পীভবন ঘটে। কিন্তু সূর্যালোকই বাষ্পীভবনের একমাত্র উৎস নয়। কেননা সূর্যালোকের অনুপস্থিতিতেও বাষ্পীভবন ঘটে।

আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি সূর্যতাপের কথা উল্লেখ না করে বরং মেঘ সঞ্চারকারী বায়ু প্রেরণ করার কথা উল্লেখ করেছেন। আর এই বায়ু উর্বরতা সঞ্চারক বা বৃষ্টিপূর্ণ বায়ু বিধায়, একে সুসংবাদবাহী বায়ু বলে উল্লেখ করেছেন, যা বৃষ্টির পূর্বে প্রেরণ করে থাকেন।

এছাড়াও সূর্যতাপে পানি বাষ্প হয়ে ঊর্ধ্বাকাশে উঠলেও তা ঘনীভূত হয়ে সব সময়ে মেঘ সৃষ্টি করে না। যদি সূর্যতাপে পানি বাষ্প হয়ে ঊর্ধ্বাকাশে উঠলেই ঘনীভূত হয়ে মেঘ সৃষ্টি হতো ও পরবর্তীতে বৃষ্টি হতো, তাহলে প্রতিদিনই বৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিদিন তো বৃষ্টি হয় না। বরং একটি মৌসুমে বৃষ্টিপাত বেশি হয় আরেকটি মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হয় বা বৃষ্টিহীন থাকে।

আর এই জন্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً بِقَدَرٍ فَأَسْكَنَّاهُ فِى الْاَرْضِ  ۖ  وَاِنَّا عَلٰى ذَهَابٍ بِهٖ لَقَادِرُوْنَ.

অর্থ : “আর আমি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকি নির্ধারিত পরিমাণ, তারপর আমি তাকে মাটিতে সংরক্ষণ করি। আর নিঃসন্দেহ আমি তা সরিয়ে নিতেও সক্ষম।” (পবিত্র সূরা মু’মিনূন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالَّذِي نَزَّلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً بِقَدَرٍ فَاَنْشَرْنَا بِهِ بَلْدَةً مَّيْتًا ۚ كَذٰلِكَ تُـخْرَجُوْنَ.

অর্থ : “আর যিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন নির্ধারিত পরিমাণ, তারপর তদ্দারা মৃত ভূখ-কে সঞ্জীবিত করি। তোমরা এভাবে উত্থিত হবে।” (পবিত্র সূরা যুখরূফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১)

পবিত্র কুরআন শরীফ এমন সময়ে বাষ্পীভবনের বিষয়টি প্রকাশ করেছেন যখন বিজ্ঞান ছিল এ ব্যাপারে নিতান্তই অজ্ঞ। বিজ্ঞান মাত্র কিছুদিন আগে বাষ্পীভবনের বিষয়টি বুঝতে সক্ষম হয়েছে। তাই বিজ্ঞান স্বীকার করেছে যে, ছোট মেঘখ-কে বাতাস যখন ধাক্কা দেয় তখন “বৃষ্টিবাহী মেঘপুঞ্জ” (Cumulonimbus) নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে তৈরি হতে শুরু করে। ছোট ছোট মেঘখ- একসাথে মিলিত হয়ে বড় মেঘমালায় পরিণত হয়। (The Atmosphere, Anthes and others, p. 268-269, Ges Elements of Meteorology, Miller and Thompson, p. 141)

আর যখন ছোট ছোট মেঘখ- একত্রে মিলিত হয় তখন তা উঁচু হয়ে যায়। উড্ডয়মান বাতাসের গতি মেঘের আকার বৃদ্ধি করে মেঘকে স্তুপীকৃত করতে সাহায্য করে। এই মেঘের ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে মেঘটি বায়ুম-লের অধিকতর ঠা-া স্থানের দিকে বিস্তৃৃতি লাভ করে সেখানে পানির ফোঁটা ও বরফের সৃষ্টি করে এবং তা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। এরপর যখনই এগুলো অধিক ওজন বিশিষ্ট হয়ে যায় তখন বাতাস আর তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে, মেঘমালা থেকে তা বৃষ্টি ও শিলা হিসেবে বর্ষিত হয়। (The Atmosphere, Anthes and others, p. 269, Ges Elements of Meteorology, Miller and Thompson, pp. 141-142)

এজন্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَلَـمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يُزْجِىْ سَحَابًا ثُـمَّ يُؤَلِّفُ بَيْنَهُ ثُـمَّ يَـجْعَلُهُ رُكَامًا فَتَرَى الْوَدْقَ يـَخْرُجُ مِنْ خِلَالِهٖ وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَاءِ مِن جِبَالٍ فِيْهَا مِنْ بَۢـرَدٍ فَيُصِيْبُ بِهٖ مَنْ يَّشَاءُ وَيَصْرِفُهُ عَنْ مَّنْ يَّشَاءُ  ۖ  يَكَادُ سَنَا بَرْقِهٖ يَذْهَبُ بِالْاَبْصَارِ.

অর্থ : “আপনি কি দেখেন না যে (অর্থাৎ আপনি দেখেন যে), মহান আল্লাহ পাক তিনি মেঘমালাকে সঞ্চালিত করেন, অতঃপর তাকে পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তাকে স্তরে স্তরে রাখেন; অতঃপর আপনি দেখেন যে, তার মধ্য থেকে বৃষ্টি নির্গত হয়। আর তিনি আকাশস্থিত শিলাস্তুপ থেকে শিলা বর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা সরিয়ে দেন। তার বিদ্যুৎ ঝলক যেন তার দৃষ্টিশক্তিকে বিলীন করে দিতে চায়।” (পবিত্র সূরা নূর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩)

আর মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘আকাশ থেকে’ বৃষ্টি বর্ষণের আলোচনা দ্বারা একটি ধ্রুব সত্যকে উন্মোচিত করে দিয়েছেন যে- বৃষ্টি আকাশ থেকেই বর্ষিত হয়, যমীন থেকে নয়। যেমন বীজের অঙ্কুরোদগম যমীন থেকে হয়, আকাশ থেকে নয়। চাঁদ-সূর্য পূর্ব দিকে উদিত হয়, পশ্চিম দিকে নয়। অথচ সপ্তম শতকে পবিত্র কুরআন শরীফ অসাধারণ ও চমৎকার বর্ণনাশৈলীর মাধ্যমে পানিচক্রের বিবরণ দিয়ে বিশ্ববাসীকে যখন বিস্ময়াভিভূত করে, তখনও ‘বিজ্ঞানমনষ্ক’ দাবীদার পবিত্র কুরআন শরীফ বিরোধী নাস্তিকদের পূর্ব প্রজন্ম পানিচক্র নিয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করতো। যেমন ইউনিভার্সালিস এনসাইক্লোপিডিয়ায় জি গাসটানী ও বি ব্লাভোক্স প্রাচীনকালের পানিচক্র বিষয়ক মতবাদগুলো নিয়ে আলোচনায় বলেছে, প্লেটো বিশ্বাস করতো যে, মাটির নিচে কোন গভীর সুড়ঙ্গপথ দিয়ে পানি মাটির নিচ থেকে সাগরে ফিরে আসে। একে প্লেটোর যুগে “টারটারুস” বলা হতো। অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত এ মতবাদের অনেক সমর্থক ছিলো এবং তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে ডেসকার্টেস। আর ঊনবিংশ শতাব্দীতে এরিস্টোটল মনে করতো যে, পাহাড়ের ঠান্ডা গভীর গুহায় পানি ঘনীভূত হয় এবং মাটি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হ্রদ ঝর্ণাগুলোকে পানি সরবরাহ করে। এ মতবাদ সেনেকা (১ম শতাব্দী) ও ভলগার এবং আরো অনেকে ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত পোষণ করতো।

কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ اَصْبَحَ مَاؤُكُمْ غَوْرًا فَمَنْ يَّأْتِيْكُم بِـمَاءٍ مَّعِيْنٍ.

অর্থ : “আপনি বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভের গভীরে চলে যায়, তবে কে তোমাদেরকে সরবরাহ করবে পানির স্রোতধারা?” (পবিত্র সূরা মূলক শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, ভূগর্ভের গভীরে চলে যাওয়া পানি কখনোই পানির স্রোতধারা অর্থাৎ সাগর,  হ্রদ, ঝর্ণা ইত্যাদিতে প্রবাহিত হতে পারে না।

 আর মহান আল্লাহ পাক তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করান। কেননা মেঘের সৃষ্টি হলেই তা থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হয় না। মেঘ সৃষ্টি হওয়ার পরও তা ছিন্ন-বিছিন্ন হয়ে যেতে পারে। আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَفَرَاَيْتُمُ الْمَاءَ الَّذِىْ تَشْرَبُوْنَ. اَاَنْتُمْ اَنْزَلْتُمُوْهُ مِنَ الْمُزْنِ اَمْ نَـحْنُ الْمُنْزِلُوْنَ.

অর্থ : “তোমরা যে পানি পান করো, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরাই কি তা মেঘ থেকে নামিয়ে আনো, না আমি বর্ষণ করি?” (পবিত্র সূরা ওয়াক্বিয়াহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৮-৬৯)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার মহান ক্ষমতা এবং সৃষ্ট জীবের প্রতি মহাকরুণার বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।

আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই বৃষ্টি বর্ষণকে একটি নিদর্শন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَالَتْ اَوْدِيَةٌ بِقَدَرِهَا فَاحْتَمَلَ السَّيْلُ زَبَدًا رَّابِيًا ۚ وَمِـمَّا يُوْقِدُوْنَ عَلَيْهِ فِى النَّارِ ابْتِغَاءَ حِلْيَةٍ اَوْ مَتَاعٍ زَبَدٌ مِّثْلُهُ ۚ كَذٰلِكَ يَضْرِبُ اللهُ الْـحَقَّ وَالْبَاطِلَ ۚ فَاَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاءً  ۖ  وَاَمَّا مَا يَنْفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِى الْاَرْضِ ۚ كَذٰلِكَ يَضْرِبُ اللهُ الْاَمْثَالَ.

অর্থ : “তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর স্রোতধারা প্রবাহিত হতে থাকে নিজ নিজ পরিমাণ অনুযায়ী আর খরস্রোত বয়ে নিয়ে যায় ফেঁপে ওঠা ফেনার রাশি। আর অলঙ্কার অথবা তৈজসপত্র নির্মাণের উদ্দেশ্যে যে বস্তুকে আগুনে উত্তপ্ত করে, তাতেও তেমনি ফেনারাশি থাকে। এইভাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি সত্য ও অসত্যের দৃষ্টান্ত প্রদান করেন। অতএব, ফেনা তো শুকিয়ে নিঃশেষ হয়ে যায় এবং যা মানুষের উপকারে আসে, তা জমিতে অবশিষ্ট থাকে। মহান আল্লাহ পাক তিনি এইভাবে নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেন।” (পবিত্র সূরা র’দ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

اَلَـمْ تَرَ اَنَّ اللهَ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَلَكَهُ يَنَابِيْعَ فِى الْاَرْضِ ثُـمَّ يُـخْرِجُ بِهٖ زَرْعًا مُّـخْتَلِفًا اَلْوَانُهُ ثُـمَّ يَهِيْجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُـمَّ يَـجْعَلُهُ حُطَامًا ۚ اِنَّ فِى ذٰلِكَ لَذِكْرٰى لِاُوْلِى الْاَلْبَابِ.

অর্থ : “আপনি কি দেখেননি যে (অর্থাৎ আপনি দেখেছেন যে), মহান আল্লাহ পাক তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর সে পানিকে যমীনে স্রোতরূপে প্রবাহিত করেন। এরপর তার দ্বারা তিনি বিভিন্ন রঙের ফসল উৎপন্ন করেন। অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তোমরা তা হলদে হয়ে যেতে দেখতে পাও। এরপর মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে খড়-কুটায় পরিণত করে দেন। নিশ্চয়ই এতে বোধশক্তি-সম্পন্নদের জন্যে উপদেশ রয়েছে।” (পবিত্র সূরা যুমার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)

এর মাধ্যমে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত বৃষ্টি বর্ষণের প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবেই প্রকাশিত হলো। অতএব পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে অসম্পূর্ণ পানিচক্র বর্ণনা করা হয়েছে- দাবীদারদের অকাট্য মিথ্যাচারীতাও প্রমাণিত হলো।

আর বৃষ্টি বর্ষনের প্রক্রিয়াটি, যা একটি প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় তা বোধশক্তি-সম্পন্ন মানুষরাই উপলব্ধি করতে পারবে। কিন্তু নাস্তিকরা যেহেতু বোধশক্তিহীন প্রাণী তাদের পক্ষে এই বিষয়ে উপলব্ধি করা কখনোই সম্ভব নয়।


0 Comments: