বাস্তবিক অর্থেই যমযমের পানিতে রয়েছে অলৌকিক ব্যাপার যা যেকোন রোগের প্রতিকার করতে সক্ষম।

 বাস্তবিক অর্থেই যমযমের পানিতে রয়েছে অলৌকিক ব্যাপার যা যেকোন রোগের প্রতিকার করতে সক্ষম।  

নাস্তিকদের আপত্তি ৯ : "মুহম্মদ দাবী করেছেন, জমজমের পানিতে (Islamic holy water) রয়েছে এক অলৌকিক ব্যাপার যা যেকোন রোগের প্রতিকার করতে সক্ষম! কিন্তু এতে রয়েছে খুবই উচ্চ মাত্রার আর্সেনিক (প্রায় তিন গুণ) এবং নাইট্রেট লেভেল, এবং অন্যান্য ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া! আল্লাহ কি তার অনুসারীদের মাঝে এভাবে বিষকৃয়া ঘটাতে চান?

http://www.webcitation.org/query?url=http://www.sundayobserver.lk/2005/01/30/fea36.html&date=2011-05-07

http://www.webcitation.org/query?url=http://www.bbc.co.uk/news/uk-england-london-13267205&date=2011-05-07

http://www.webcitation.org/query?url=http://en.wikipedia.org/wiki/Arsenic_poisoning&date=2011-05-07"

খণ্ডণ : বাস্তবিক অর্থেই যমযমের পানিতে রয়েছে অলৌকিক ব্যাপার যা যেকোন রোগের প্রতিকার করতে সক্ষম।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে- 

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّـهَا مُبَارَكَةٌ اِنَّـهَا طَعَامُ طُعْمٍ وَشِفَاءُ سُقْمٍ

অর্থ : “হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয় তা (যমযমের পানি) বরকতপূর্ণ। তা তৃপ্তিকর খাদ্য এবং রোগ নিরাময়ের ঔষধ।” (জামিউছ ছগীর লিত তবারানী ২৯৫, বাযযার ৩৯২৯)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُوْلُ مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ.

অর্থ : “হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমি ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি, তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যমযমের পানি যে নিয়্যতে পান করা হবে সে নিয়্যত পূর্ণ হওয়ায় ফলপ্রসূ।” (ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৩০৬২)

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাত মুবারক ও ইসলাম গ্রহণের উদ্দেশ্যে হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ আসেন এবং ৩০ দিন শুধুমাত্র যমযমের পানি পান করেই বেঁচে ছিলেন। হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার শুধু ক্ষুধা এবং তৃষ্ণাই মেটাননি, বরং তিনি মোটা হয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

قَالَ فَأَتَيْتُ مَكَّةَ فَتَضَعَّفْتُ رَجُلاً مِنْهُمْ فَقُلْتُ أَيْنَ هَذَا الَّذِي تَدْعُونَهُ الصَّابِئَ؟ فَأَشَارَ إِلَيَّ فَقَالَ الصَّابِئَ فَمَالَ عَلَيَّ أَهْلُ الْوَادِي بِكُلِّ مَدَرَةٍ وَعَظْمٍ حَتَّى خَرَرْتُ مَغْشِيًّا عَلَيَّ قَالَ فَارْتَفَعْتُ حِينَ ارْتَفَعْتُ كَأَنِّي نُصُبٌ أَحْمَرُ قَالَ فَأَتَيْتُ زَمْزَمَ فَغَسَلْتُ عَنِّي الدِّمَاءَ وَشَرِبْتُ مِنْ مَائِهَا وَلَقَدْ لَبِثْتُ يَا ابْنَ أَخِي ثَلاَثِينَ بَيْنَ لَيْلَةٍ وَيَوْمٍ مَا كَانَ لِي طَعَامٌ إِلاَّ مَاءُ زَمْزَمَ فَسَمِنْتُ حَتَّى تَكَسَّرَتْ عُكَنُ بَطْنِي وَمَا وَجَدْتُ عَلَى كَبِدِي سُخْفَةَ جُوعٍ قَالَ فَبَيْنَا أَهْلُ مَكَّةَ فِي لَيْلَةٍ قَمْرَاءَ إِضْحِيَانَ إِذْ ضُرِبَ عَلَى أَسْمِخَتِهِمْ فَمَا يَطُوفُ بِالْبَيْتِ أَحَدٌ وَامْرَأَتَيْنِ مِنْهُمْ تَدْعُوَانِ إِسَافًا وَنَائِلَةَ قَالَ فَأَتَتَا عَلَيَّ فِي طَوَافِهِمَا فَقُلْتُ أَنْكِحَا أَحَدَهُمَا الأُخْرَى قَالَ فَمَا تَنَاهَتَا عَنْ قَوْلِهِمَا قَالَ فَأَتَتَا عَلَيَّ فَقُلْتُ هَنٌ مِثْلُ الْخَشَبَةِ غَيْرَ أَنِّي لاَ أَكْنِي فَانْطَلَقَتَا تُوَلْوِلاَنِ وَتَقُولاَنِ لَوْ كَانَ هَا هُنَا أَحَدٌ مِنْ أَنْفَارِنَا قَالَ فَاسْتَقْبَلَهُمَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبُو بَكْرٍ وَهُمَا هَابِطَانِ قَالَ مَا لَكُمَا؟ قَالَتَا الصَّابِئُ بَيْنَ الْكَعْبَةِ وَأَسْتَارِهَا قَالَ مَا قَالَ لَكُمَا؟ قَالَتَا إِنَّهُ قَالَ لَنَا كَلِمَةً تَمْلأُ الْفَمَ وَجَاءَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى اسْتَلَمَ الْحَجَرَ وَطَافَ بِالْبَيْتِ هُوَ وَصَاحِبُهُ ثُمَّ صَلَّى فَلَمَّا قَضَى صَلاَتَهُ قَالَ أَبُو ذَرٍّ فَكُنْتُ أَنَا أَوَّلُ مَنْ حَيَّاهُ بِتَحِيَّةِ الإِسْلاَمِ قَالَ فَقُلْتُ السَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ فَقَالَ وَعَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللهِ ثُمَّ قَالَ مَنْ أَنْتَ؟ قَالَ قُلْتُ مِنْ غِفَارٍ قَالَ فَأَهْوَى بِيَدِهِ فَوَضَعَ أَصَابِعَهُ عَلَى جَبْهَتِهِ فَقُلْتُ فِي نَفْسِي كَرِهَ أَنِ انْتَمَيْتُ إِلَى غِفَارٍ فَذَهَبْتُ آخُذُ بِيَدِهِ فَقَدَعَنِي صَاحِبُهُ وَكَانَ أَعْلَمَ بِهِ مِنِّي ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ ثُمَّ قَالَ مَتَى كُنْتَ هَا هُنَا؟ قَالَ قُلْتُ قَدْ كُنْتُ هَا هُنَا مُنْذُ ثَلاَثِينَ بَيْنَ لَيْلَةٍ وَيَوْمٍ قَالَ فَمَنْ كَانَ يُطْعِمُكَ قَالَ قُلْتُ مَا كَانَ لِي طَعَامٌ إِلاَّ مَاءُ زَمْزَمَ فَسَمِنْتُ حَتَّى تَكَسَّرَتْ عُكَنُ بَطْنِي وَمَا أَجِدُ عَلَى كَبِدِي سُخْفَةَ جُوعٍ قَالَ إِنَّهَا مُبَارَكَةٌ إِنَّهَا طَعَامُ طُعْمٍ.

অর্থ: “হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি পবিত্র মক্কা শরীফ আসলাম এবং তাদের এক জীর্ণ লোককে উদ্দেশ্য করে বললাম, তিনি কোথায় যাঁকে তোমরা সাবী (বিধর্মী) বলে ডাক? সে আমার দিকে ইঙ্গিত করল এবং বলল, এ-ই সাবী। এরপর পবিত্র মক্কা শরীফ পর্বতের ব্যক্তিরা ঢেলা ও হাড়সহ আমার উপর চড়াও হলো, এমনকি আমি অজ্ঞান হয়ে লুটে পড়লাম। তিনি বললেন, যখন আমি উঠলাম তখন লাল মূর্তির (অর্থাৎ রক্তের ঢল) অবস্থায় উঠলাম। তিনি বলেন, তারপর আমি যমযম কূপের নিকট এসে আমার রক্ত ধুয়ে নিলাম। তারপর তার পানি পান করলাম। হে ভ্রাতুষ্পুত্র! আমি সেখানে ৩০ রাত-দিন অবস্থান করেছিলাম। সে সময় যমযমের পানি ব্যতীত আমার নিকট কোন খাবার ছিল না। এরপর আমি এমন মোটা হয়ে গেলাম যে, আমার পেটের চামড়ায় ভাঁজ পড়ে গেল। আমি আমার অন্তরে ক্ষুধার যাতনা বুঝতে পারিনি। তিনি বললেন, ইতোমধ্যে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবাসীরা যখন এক উজ্জ্বল গভীর রাতে ঘুমিয়ে পড়ল, তখন কেউ বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করছিল না। সে সময় তাদের মধ্য থেকে দু’জন মহিলা ইসাফা ও নায়িলাকে ডাকছিল। তিনি বললেন, তারা তাওয়াফ করতে করতে আমার নিকট এসে উপস্থিত হল। আমি বললাম, তাদের একজনকে অপরজনের সঙ্গে বিবাহে আবদ্ধ করো। তিনি বললেন, তবুও তারা তাদের কথা হতে বিচ্ছিন্ন হলো না। তিনি বলেন, তারা আবার আমার সামনে দিয়ে আসলো। আমি অধৈর্য হয়ে বললাম, গুপ্তাঙ্গ কাষ্ঠের ন্যায়। এখানে আমি ইশারা ইঙ্গিত না করে স্পষ্টভাবেই বললাম। এতে তারা অভিসম্পাত করতে করতে ফিরে চলল আর বলতে লাগল, যদি এখানে আমাদের লোকদের মাঝে কেউ থাকতো (তাহলে এ দুষ্টকে উপযুক্ত শাস্তি দিত)! পথিমধ্যে উভয় নারীর সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ও সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে দেখা হলো। তখন উনারা উভয়ে উঁচুভূমি থেকে নীচে নামছিলেন। তিনি তাদের দু’জনকেই সুওয়াল করলেন, কী হয়েছে তোমাদের? তারা বলল, পবিত্র কা’বা শরীফ ও উনার পর্দার মধ্যস্থলে এ বিধর্মী আছে। তিনি সুওয়াল করলেন, তিনি তোমাদের কী বলেছেন? তারা বলল, সে এমন কথা বলেছে যাতে মুখ ভরে যায় (মুখে বলা ঠিক না)। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসে উনার সাথীসহ হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করলেন এবং পবিত্র বাইতুল্লাহ্ শরীফ তাওয়াফ করে ছলাত আদায় করলেন। যখন তিনি উনার ছলাত আদায় শেষ করলেন তখন হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি প্রথম লোক, যে উনাকে ইসলামী শরয়ী নিয়মে সালাম জানিয়ে বললাম, আস্সালামু ‘আলাইকা ইয়া রসূলুল্লাহ্! অতঃপর তিনি জানতে চাইলেন, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি গিফার সম্প্রদায়ের ব্যক্তি। তিনি বললেন, তারপর তিনি উনার মহাসম্মানিত নূরুল মাগফিরাহ (মহাসম্মানিত হাত) মুবারক ঝুকালেন এবং উনার মহাসম্মানিত নূরুল মাগফিরাহ (মহাসম্মানিত হাত) মুবারক উনার মহাসম্মানিত নূরুশ শক্ব (মহাসম্মানিত আঙ্গুল) মুবারকগুলো কপালে রাখলেন। আমি ধারণা করলাম, গিফার সম্প্রদায়ের প্রতি আমার সম্পর্ককে তিনি পছন্দ করছেন না। তারপর আমি উনার মহাসম্মানিত নূরুল মাগফিরাহ (মহাসম্মানিত হাত) মুবারক ধরতে চাইলাম। উনার সাথী আমাকে বাধা দিলেন। তিনি উনাকে আমার তুলনায় বহু বেশী ভাল জানতেন। অতঃপর তিনি মাথা তুলে দেখলেন এবং আমাকে প্রতি সুওয়াল মুবারক করলেন, আপনি কতদিন যাবৎ এখানে অবস্থান করছেন? আমি বললাম, আমি এখানে ৩০টি রাত্র-দিন যাবৎ আছি। তিনি বললেন, আপনাকে কে খাদ্য দিত? আমি বললাম, যমযম কূপের পানি ব্যতীত আমার জন্য অন্য কোন খাদ্য ছিল না। এ পানি পান করেই আমি স্থূলদেহী হয়ে গেছি, এমনকি আমার পেটের চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে এবং আমি কখনো ক্ষুধার কোন দূর্বলতা বুঝতে পারিনি। তিনি বললেন, এ পানি অতিশয় বরকতময় ও প্রাচুর্যময় এবং তা অন্যান্য খাবারের মতো তা পেট পূর্ণ করে দেয়।” (মুসলিম শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৪৭৩)

উপরোক্ত হাদীছ শরীফ থেকে যে কয়টি বিষয় সুস্পষ্ট তাহলো-

১.হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি টানা ৩০ দিন যমযমের পানি পান করেছেন।

২.এই ৩০ দিন তিনি অন্য কোন খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করেননি।

৩.এই ৩০ দিনে উনার কোন ক্ষুধা জনিত দূর্বলতা অনুভূত হয়নি।

৪.এই ৩০ দিনে তিনি শীর্ণকায় না হয়ে বরং স্থূলদেহী অর্থাৎ মোটা-সোটা হয়েছিলেন। উনার পেটের চামড়ায় ভাঁজ পড়েছিল।

অপরপক্ষে মানুষের শরীরে যখন মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক জমা হয়। তখন তা কিডনীর মাধ্যমে ছোট ইস্তিঞ্জার সাথে বের হয়ে যেতে না পেরে চুল ও নখে জমতে থাকে। এভাবেই দিনের পর দিন গড়াতে গড়াতে মানবদেহে এ নীরব ঘাতকের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

মানুষের শরীরে আর্সেনিকের বিষক্রিয়ার যে লক্ষণসমূহ প্রকাশ পায় তাহলো-

ত্বকের উপসর্গ : 

১. ত্বক শক্ত, খসখসে ও মোটা হয়ে যায়। যাকে কেরাটোসিস বলা হয়। 

২. হাত পায়ের তালুতে ফুসকুড়ির মত ছোট ছোট শক্ত গোটার মত দাগ দেখা যায়। 

৩. হাত পায়ের তালুতে কালো দাগ পড়ে, চামড়ার রঙও কালো হয়ে যায়।

৪. বুকে পিঠে কিংবা বাহুতে স্পটেড পিগমেনটেশন দেখা দিতে পারে।

৫. কারো কারো হাত পায়ের চামড়া পুরু হয়ে যায় আঙুল বেঁকে যায়। পায়ে আঙুলের মাথায় পচন ধরতে পারে।

৬. হাত পায়ের চামড়া শক্ত হয়ে ফেটে যায়। 

৭. হাত পা ক্রমশ অসাড় হয়ে পড়ে, কর্মশক্তি হ্রাস পায়।

৮. দীর্ঘদিন ঠাণ্ডা ও কাশি লেগে থাকা। 

৯. শরীরে জ্বালা পোড়া বেড়ে যায়।

পরিপাকতন্ত্রের উপসর্গ : 

১. গলা খসখসে ও শুকিয়ে যায় এবং পিপাসা বৃদ্ধি পায়। 

২. গলা জ্বালা করে, বমি বমি ভাব হয়। 

৩. আক্রান্ত রোগীর জিহ্বা, মাড়ি ও ঠোঁটে মিউকাস, মেমব্রেন ও মেলানোসিস হতে পারে। 

৪. রোগী পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করে।

৫. ছোট ইস্তিঞ্জা খুব কম হয় অথবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

৬. বড় ইস্তিঞ্জার সময় ইস্তিঞ্জার রাস্তায় প্রচ- যন্ত্রণা হয়, প্রদাহ হয় এবং রক্ত মিশ্রিত পাতলা ইস্তিঞ্জা হয়।

৭. দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে না।

৮. মুখম-লের চেহারা বিবর্ণ হয়ে যায়, চোখ কোঠরাগত হয় এবং দেহের গোশতপেশীর খিচুনী হয়।

আর্সেনিক রোগের চূড়ান্ত লক্ষণ : 

১. রক্তশূন্যতা হয়, শ্রবণশক্তি কমে যায়।

২. ত্বক, মুত্রথলি, শ্বাসনালী, কিডনী ও যকৃতের ক্যান্সার হতে পারে।

৩. হৃদপি-ের দাহ হয়। এমনকি হৃদপিণ্ডের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

নাইট্রেট বিষাক্ততার উপসর্গ :

অধিক পরিমাণে নাইট্রেট গ্রহণের কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যেই নাইট্রেট বিষাক্ততার লক্ষণ শরীরে পরিলক্ষিত হয়। সাধারণভাবে নাইট্রেট বিষাক্ততার লক্ষণগুলো হলো- দ্রুত কিন্তু দূর্বল নাড়ী স্পন্দন, পেশী কম্পন, দ্রুত অগভীর শ্বাস (tachypnea),  নীলাভ-ধূসর শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি, অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ (ptylism),  বিষন্নতা, দূর্বলতা, অস্থিতিশীল চলনভঙ্গি, অসংলগ্ন আচরণ, ঘন ঘন ছোট ইস্তিঞ্জার বেগ এবং শরীরের অস্বাভাবিক তাপমাত্রা। যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে এই অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে যেতে থাকে, ফলে রোগীকে শয্যাশায়ী বা অচেতনাবস্থার দিকে ঠেলে দেয় এমনকি রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে। সচরাচরভাবে শরীরে নাইট্রেট বিষাক্ততার লক্ষণ প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যেই রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে।

আর ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগগুলো হলো- আমাশয়, টাইফয়েড, কলেরা, কাশি, ডিপথেরিয়া, নিউমোনিয়া, যক্ষা, ধনুষ্টঙ্কার, মেনিনজাইটিস ও গনোরিয়া।

এখন হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি টানা ৩০ দিন শুধুমাত্র যমযমের পানিই পান করে বেঁচে ছিলেন অন্য কোন খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করেননি। অথচ উনার শরীরে কোন প্রকার আর্সেনিকের বিষক্রিয়ার লক্ষণ বা নাইট্রেট বিষাক্ততার লক্ষণ কিংবা ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ লক্ষণও প্রকাশ পায়নি। যমযমের পানিতে যদি খুবই উচ্চ মাত্রার আর্সেনিক ও নাইট্রেট, এবং অন্যান্য ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার উপস্থিতিই থেকে থাকে তাহলে উক্ত ৩টি বিষয়ের বিষাক্ততার লক্ষণ শরীরে প্রকাশ পাওয়ার কথা। সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, যমযমের পানিতে শরীরের জন্য ক্ষতিকারক কোন পদার্থ বা বস্তুর উপস্থিতি কখনোই ছিল না, আজো নেই এবং কখনোই থাকা সম্ভব নয়।

সুতরাং যমযমের পানির ব্যাপারে যবন, ম্লেচ্ছ, অস্পৃশ্য, নৌদস্যু, বৃটিশরা যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে তা নিঃসন্দেহে উদ্দেশ্য প্রণোদিত। পৃথিবীর অন্যান্য ল্যাবরেটরীতেও যমযমের পানি পরীক্ষা করা হয়েছে কিন্তু এতে কোন ক্ষতিকারক কোন বস্তু কেউই পায়নি। আর তাই এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, কাট্টা মুসলিম বিদ্বেষী, যবন, ম্লেচ্ছ, অস্পৃশ্য, নৌদস্যু, বৃটিশরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেই মিথ্যাচার করেছে।  

কেননা যমযমের পানি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বিশুদ্ধ পানি। আর এই পানি সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশর্কীয় উপাদান সমৃদ্ধ। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَيْرُ مَاءٍ عَلٰى وَجْهِ الْاَرْضِ مَاءُ زَمْزَمَ فِيْهِ طَعَامٌ مِنَ الطُّعْمِ وَشِفَاءٌ مِنَ السُّقْمِ وَشَرُّ مَاءٍ عَلٰى وَجْهِ الاَرْضِ مَاءٌ بِوَادِي بَرَهُوتٍ بَقِيَّةُ حَضْرَمَوْتَ كَرِجْلِ الْـجَرَادِ مِنَ الْـهَوَامِّ يُصْبِحُ يَتَدَفَّقُ وَيُـمْسِي لَا بَلالَ بِـهَا.

অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পৃথিবীর বুকে সর্বশ্রেষ্ঠ পানি হল যমযমের পানি। তাতে রয়েছে তৃপ্তির খাদ্য এবং ব্যাধির আরোগ্য।” (মু’জামুল আওসাত লিত ত্ববারানী ৩৯১২, ৮১২৯; মু’জামুল কবীর লিত ত্ববারানী ৩য় খ- ৩০৮ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ১১০০৪)

যমযমের পানি নিঃসন্দেহে অন্যান্য যে কোন পানি থেকে স্বাতন্ত্র। কেননা সাধারণ পানির তুলনায় যমযমের পানির মধ্যে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সামান্য বেশী থাকার কারণেই এই পানি শুধু যে পিপাসা মেটায় তা নয় বরং এটি ক্ষুধাও নিবারণ করে। ফলে পানকারীর ক্লান্ত শরীরকে সতেজ ও সজীব করে তোলে।

কিন্তু এর চেয়েও তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, যমযমের পানিতে রয়েছে ফ্লোরাইড। আর ফ্লোরাইডে রয়েছে জীবানুনাশক ক্ষমতা। আর তাই যমযমের পানি পানের জন্য সর্বোত্তম।

তাছাড়া যমযমের পানি কিছুটা আলাদা স্বাদযুক্ত, বর্ণ ও গন্ধহীন। সাধারণত যমযম কূপের পানির ঢ়ঐ এর মান ৭.৯-৮.০ হয়ে থাকে। যা এই পানির অ্যালকালাইন বা ক্ষারীয় হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে। অন্যদিকে সাধারণত আমরা যেসব পানি পান করি তার ঢ়ঐ মান থাকে ৭.০।

এক গবেষণায় দেখা যায় যে, অ্যালকালাইন সমৃদ্ধ পানি মানুষের পাকস্থলী নিঃসৃত এনজাইম ‘পেপসিন’ এর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। এই এনজাইমটি মানুষের শরীরে এসিড রিফ্লাক্স ডিজিজ সৃষ্টির জন্য দায়ী অন্যতম প্রধান এনজাইম।

অন্য আরেকটি পরীক্ষায় দেখা যায় যে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং অতিরিক্ত কলোস্টেরল নিয়ন্ত্রনে রাখতে ক্ষারীয় পানি বেশ কার্যকরী।

পরীক্ষায় আরো প্রমাণিত হয়েছে যে, যমযমের পানি শরীরের রক্তের লোহিত কণিকা (RBC), শ্বেত কণিকা (WBC)  ও অনুচক্রিকার (platelets)  সংখ্যা বৃদ্ধি করে; রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এমনকি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের (detoxify)  করে দেয়।

সুতরাং যমযমের পানিতে শরীরের জন্য ক্ষতিকারক কোন পদার্থ বা বস্তুর উপস্থিতি সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব।

এছাড়াও যমযমের পানি শুধু হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিই পান করেনি বরং যমযম কূপ উৎপত্তি লাভ করার পর থেকে যতদিন প্রকাশিত অবস্থায় ছিল এবং পুনঃরুদ্ধারের পর থেকে আজ পর্যন্ত কোটি কোটি মানুষ এই কূপের পানি পান করেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। কারোই কখনো কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়নি।

এই কোটি কোটি মানুষের মধ্যে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সহ মুসলমানরাও যেমন ছিলেন তেমনি পৃথিবীর নিকৃষ্ট কাফির আবূ জাহিল, আবূ লাহাব, ওতবা, শায়বা, মুগীরা সহ অন্যান্য কাফিররাও ছিল।

যমযমের পানি পান করে কোন মুসলমান যেমন কোন প্রকার বিষাক্ততায় আক্রান্ত হননি, হচ্ছেন না ও হবেনও না। ঠিক তেমনি কোন কাফিরও কোন প্রকার বিষাক্ততায় আক্রান্ত হয়নি, হচ্ছে না ও হবেও না। বরং যমযমের পানি পান ছেড়ে দেয়ায় পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী উনারা পায়ের রোগে আক্রান্ত হন।

এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে- “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যখন দ্রুতগতির প্রসঙ্গ আসতো তখন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী উনারা  দ্রুততম হতেন এবং যখন কুস্তির প্রসঙ্গ আসতো তখন উনারাই সবচেয়ে শক্তিশালী হতেন। কিন্তু যখনই উনারা যমযম কূপের পানি পান করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন তখন উনারা উনাদের পায়ের রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করেছিলেন।” (..............................)

যমযমের পানি পানের পরিমাণ দ্বারা যারা মুনাফিক্ব তাদেরকে চিহ্নিত করা যায়। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-  

عَنْ حَضْرِتْ مُـحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ اَبِـيْ بَكْرٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ كُنْتُ عِنْدَ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ جَالِسًا فَجَاءَهُ رَجُلٌ فَقَالَ مِنْ اَيْنَ جِئْتَ قَالَ مِنْ زَمْزَمَ‏ قَالَ فَشَرِبْتَ مِنْهَا كَمَا يَنْبَغِي قَالَ وَكَيْفَ قَالَ اِذَا شَرِبْتَ مِنْهَا فَاسْتَقْبِلِ الْكَعْبَةَ وَاذْكُرِ اسْمَ اللهِ وَتَنَفَّسْ ثَلَاثًا وَتَضَلَّعْ مِنْهَا فَاِذَا فَرَغْتَ فَاحْمَدِ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ فَاِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ‏ اِنَّ اٰيَةَ مَا بَيْنَنَا وَبَيْنَ الْمُنَافِقِيْنَ اَنَّـهُمْ لَا يَتَضَلَّعُوْنَ مِنْ زَمْزَمَ‏.‏

অর্থ : “হযরত মুহাম্মাদ বিন আবদুর রহমান বিন আবূ বাকর (মাকবুল) রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। আমি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এক ব্যক্তি উনার নিকট এলে তিনি জিজ্ঞেস করেন, তুমি কোথা থেকে এসেছো? সে বললো যমযমের নিকট থেকে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তা থেকে প্রয়োজনমত পান করেছ? সে বললো, তা কিরূপে? তিনি বললেন, তুমি তা থেকে পান করার সময় কিবলামুখী হবে, মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক স্মরণ করবে, তিনবার নিঃশ্বাস নিবে এবং তৃপ্তি সহকারে পান করবে। পানি পান শেষে তুমি মহামহিম আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা করবে। কারণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,  আমাদের ও মুনাফিক্বদের মধ্যে নিদর্শন এই যে, তারা তৃপ্তি সহকারে যমযমের পানি পান করে না।” (ইবনে মাজাহ শরীফ : কিতাবুল হজ্জ : হাদীছ শরীফ নং ৩০৬১)

সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে, একমাত্র মুনাফিক্বরাই যমযমের পানি নিয়ে বাকবিতণ্ডা করে থাকে। আর নাস্তিকরা হচ্ছে মুনাফিক্ব শ্রেণীর জীব। তাই তারাই যমযমের পানি নিয়ে তর্ক বিতর্ক করে থাকে।


0 Comments: