ঈদ মুবারক ! ঈদ মুবারক !! ঈদ মুবারক !!!
সুমহান পুত ও পবিত্র ২৯ শে জুমাদাল উখরা শরীফ
সুমহান পুত ও পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।
ইমামুম মিন আইম্মাতিল মুসলিমীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নুরুদ দরাজাত মুবারকে জানাই লক্ষ কোটি বেশুমার ছলাত ও
সালাম ।
গোলামীর আরজুতে ,
মুহম্মদ ইউসুফ রাজী খাজা
তারিখ – ২৯/০৬/১৪৪১ হিজরী
ইমামুম মিন আইম্মাতিল মুসলিমীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
মুবারক নাম ও পরিচিতি:
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইমামুম মিন আইম্মাতিল মুসলিমীন, যিকরান কাশিফ ইসরারিল ইমতিনাহী, মাহবুবে তরীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আহলে বাইত শরীফ উনার দশম ইমাম। উনার মূল নাম মুবারক হযরত আলী
নক্বী আলাইহিস সালাম। তবে উনার মুবারক নাম এবং কুনিয়াত বা উপনাম মুবারক আমিরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিম, বাবুল ইলমে ওয়াল হিকাম, ইমামুল কাওনাইন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু
ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম এবং ইমামুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ
ছামিন মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে মুশাবাহ
বা সদৃশ্যপূর্ণ। সেই কারণে উনাকে আবুল হাসান ছালিছ বা আবুল হাসান তৃতীয় বলা হয়। এছাড়া
ওনাকে হযরত আলী হাদী আলাইহিস সালামও বলা হয়। তবে উনাকে ইমামুল আশির মিন আহলি বাইতি
রসূল্লিাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লক্বব মুবারকে সম্বোধন করাই আদব। (মিরয়াতুল
আসরার-২২১, শাওয়াহিদুন নুবুওওয়াত-২১৯, ইকতিবাসূল আনওয়া-১৫৬)
‘ইকতিবাসূল আনওয়ার’ কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, ইমামুম মিন আইম্মাতিল মুসলিমীন, যিকরান কাশিফ ইসরারিল ইমতিনাহী, মাহবুবে তরীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বয়স মুবারক যখন ১০ বছর তখন উনার পিতা পবিত্র বিছালী শান মুবারক
প্রকাশ করলেন। তখন তিনি উনার ইমামতী শান মুবারক জাহির করেন। (মিরয়াতুল আসরার)
উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
কাছ থেকে আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা যে খাছ ইলম হাছিল করেছিলেন, ইমামুম মিন আইম্মাতিল মুসলিমীন, যিকরান কাশিফ ইসরারিল ইমতিনাহী, মাহবুবে তরীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অল্প বয়স মুবারক থেকে তার প্রকাশ ঘটতে থাকে। তখন থেকে উনার
এতো অধিক সংখ্যক কারামত প্রকাশ পেতে থাকে যে, সমসাময়িক সকল ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম উনারা আশ্চর্যান্বিত হতেন এবং সবাই উনার দিকে
রুজু হতেন। উনার খাছ ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ লাভ করার জন্য উনার হাত মুবারক-এ বাইয়াত হতেন।
ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতেন। উনার নির্দেশ মত যিকির-ফিকির করতেন। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
পবিত্র হাদীছ শরীফ- “আমার পর বারোজন ইমাম আসবেন।”(ইকতিবাসূল আনওয়ার-১৫৬, মিরয়াতুল আসরার-২২১)
হাবীবুস সিয়ার কিতাবে উল্লেখ আছে যে, ইমামুম মিন আইম্মাতিল মুসলিমীন, যিকরান কাশিফ ইসরারিল ইমতিনাহী, মাহবুবে তরীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শৈশবকাল থেকে এত অধিক এবং আশ্চর্যান্বিত কারামত প্রকাশ পেয়েছিল।
যার কারণে সমস্ত মাখলুকাত উনার মুখাপেক্ষী হয়েছে। আর এটা দেখে বাগদাদের আব্বাসী শাসক
মুতাওক্কিলের অন্তরে ভীতির সঞ্চার হয়েছিল। এক পর্যায়ে আব্বাসী শাসক মুতাওককিল হুকুম
দিলো, ইমামুম মিন আইম্মাতিল মুসলিমীন, যিকরান কাশিফ ইসরারিল ইমতিনাহী, মাহবুবে তরীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে ২৫ ক্রোশ দূরে ইরাকের সমরাহ এলাকায়
রেখে আসতে। সেই আদেশ মুতাবিক উনাকে সমরাহতে রেখে আসা হয়। নাউযুবিল্লাহ!
ইমামুম মিন আইম্মাতিল মুসলিমীন, যিকরান কাশিফ ইসরারিল ইমতিনাহী, মাহবুবে তরীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করলেন। তখন উনার একজন ভক্ত
(মুহব্বতকারী মুরীদ) উনাকে বললেন- হে আওলাদে রসূল! ওই লোক তো আপনার সম্মানিত বংশধর
উনাদেরকে সবসময় হেয় প্রতিপন্ন করে কথা বলে। আর আপনাকে এরূপ বিরাণভূমিতে অবস্থান করার
ব্যবস্থা করেছে। এই দলটি জ্ঞান-গরিমা মর্যাদা-মর্তবাকে জনগণের কাছে গোপন রাখতে এবং
আপনার প্রভাব-প্রতিপত্তিকে মিটিয়ে দিতে চায়। এই উদ্দেশেই আপনাকে বন্দীদশা অবস্থায় রাখা
হয়েছে।
একথা শুনে ইমামুম মিন আইম্মাতিল মুসলিমীন, যিকরান কাশিফ, ইসরারিল ইমতিনাহী, মাহবুবে তরীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে ইবনে সায়ীদ! তুমিও তো এখনো ওই মাকামেই
রয়েছ। অর্থাৎ হাক্বীক্বতে পৌঁছতে পারনি। একথা বলে তিনি স্বীয় হাত মুবারক দিয়ে ইশারা
করলেন। আর সাথে সাথে ইবনে সায়ীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দেখতে পেলেন অতীব সুন্দর, সুন্দর বাগ-বাগিচা, বিভিন্ন প্রকার নহর, ঝর্ণাধারা এবং মনোমগ্ধকর বিরাট মাঠ। অত্যন্ত সুশ্রী রমনী এবং
মনি-মুক্তার মত চাকচিক্যময় কচি বালকরা উনার খিদমতের জন্য ইন্তিজার (অপেক্ষমান) রয়েছে।
ইহা দেখে তিনি যেমন খুশি হলেন তেমনি আশ্চর্যের সীমা রইল না। সুবহানাল্লাহ!
ইমামুম মিন আইম্মাতিল মুসলিমীন, যিকরান কাশিফ ইসরারিল ইমতিনাহী, মাহবুবে তরীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে ইবনে সায়ীদ! যেখানেই আমরা অবস্থান
করিনা কেন এসব কিছুই আমাদের সাথেই থাকে। কাজেই আমাকে কখনো বিরাণভূমিতে বন্দীবস্থায়
অবস্থান করতে হয় না। সুবহানাল্লাহ! (ইকতিবাসূল আনওয়ার-১৫৭, মিরায়াতুল আসরার-২২১)
সম্মানিত পিতা ও মাতা উনাদের মুবারক নাম:
ইমামুর রাসিখীন, আরবাবে হিদায়িত, আওলাদে রসূল, যিনি ইমামুত তাসি’ সাইয়্যিদুনা হযরত
ইমাম আবু জাফর মুহম্মদ তাক্বী আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন উনার সম্মানিত পিতা। আর উনার
মাতা উনার নাম মুবারক- হযরত শাম্মামা আলাইহাস সালাম। কেউ কেউ বলেছেন হযরত উম্মুল ফযল
আলাইহাস সালাম। যিনি খলীফা মামুনূর রশিদের মেয়ে ছিলেন এমতটি শুদ্ধ নয়। (মিরায়াতুল আসরার-২২০, ইকতিবাসূল আনওয়ার ১৫৬, সাফীনাতুল আউলিয়া-৪২)
পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
সর্বাধিক ছহীহ, গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য মতে ইমামুম
মিন আইম্মাতিল মুসলিমীন, যিকরান কাশিফ ইসরারিল ইমতিনাহী, মাহবুবে তরীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ২১০ হিজরীর পবিত্র ১৫ই যিলহজ্জ শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ পবিত্র
মদীনা শরীফে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
কতিপয় লক্বব মুবারক:
লক্বব হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রদত্ত এক বিশেষ নিয়ামত। যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বের ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবার বহিপ্রকাশ। মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে যেভাবে
মশহুর বা প্রসিদ্ধ করতে চান সেভাবে উনার লক্বব মুবারকগুলো প্রকাশিত ও পরিচিত হয়ে উঠে।
ইমামুম মিন আইম্মাতিল মুসলিমীন, যিকরান কাশিফ ইসরারিল ইমতিনাহী, মাহবুবে তরীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বনামধন্য। উনার মর্যাদা-মর্তবার সীমা-পরিসীমা নেই। উনার
অসংখ্য অগণিত লক্বব মুবারক বিভিন্নভাবে প্রকাশিত-প্রচারিত হয়েছে। যা সবারই মুখে মুখে
আমরা স্বল্প পরিসরে সেখান থেকে কয়েকটি উল্লেখ করছি।
(১) হাদী: হিদায়েতকারী বা হিদায়েতের প্রদর্শক।
(২) আসকারী: মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
পথে জিহাদকারী সৈনিক। তিনি ছিলেন আপোষহীন। কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি। জালিমের সামনে
কখনো মাথা নত করেননি।
(৩) নাছিহ: অতি উত্তম নছীহতকারী। তিনি সবাইকে সবসময় নছীহত মুবারক করতেন। এ ব্যাপারে
কোন কার্পন্য ছিল না।
(৪) মুতাওয়াককিল: মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি বেমেছাল তাওয়াক্কুল বা ভরসাকারী।
(৫) ফাত্তাহ: সর্ববিষয়ে সর্বাধিক বিজয় লাভকারী।
(৬) মুরতাদ্বা: মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক খাছভাবে মনোনীত।
(৭) নক্বী: অতীব পবিত্র।
(৮) ইমামুম মিন আইম্মাতিল মুসলিমীন: মুসলিম উম্মাহ উনাদের সমস্ত ইমামগণের ইমাম
তথা অনুসরণীয় অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।
(৯) যিকরানে কাশিফে ইসরারে ইমতিনাহী: মহান আল্লাহ পাক উনার গুপ্ত রহস্য উদঘাটনকারী
তথা মা’রিফত-মুহব্ববত হাছিলে চূড়ান্ত মাক্বামে উপনীত ব্যক্তিত্বগণ উনাদের যিকর বা স্মরণযোগ্য
আলোচিত ব্যক্তিত্ব। সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরামই সবকাজে উনাকে অনুসরণ-অনুকরণ
করতেন। ফলশ্রুতিতে উনি স্মরণে আসতেন। (মিরায়াতুল আসরার-২২০, ইকতিবাসুল আনওয়ার-১৫৬)
পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
ইমামুম মিন আইম্মাতিল মুসলিমীন, যিকরান কাশিফ ইসরারিল ইমতিনাহী, মাহবুবে তরীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কে যামানার ইমাম ও
মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার
মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন- সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির
মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ২৫৪ হিজরী জুমাদাল
উখরা শরীফ উনার শেষ তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ
করেন। আর এটাই হচ্ছে সর্বাধিক ছহীহ মত। বাগদাদের পার্শ্ববর্তী সমাররা শহরের একটি সরাইখানাতেই
উনার পবিত্র মাজার শরীফ অবস্থিত। যা উনার ব্যক্তি মালিকানাধীন ছিল। কেউ কেউ বলেন, উনার মাজার শরীফ ‘কুম’ শহরে অবস্থিত। কিন্তু তা ঠিক নয়।
গুণাবলী:
একদিন আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি
বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সামারার একগ্রামে গেলেন। জনৈক
বেদুঈন এসে উনাকে খুঁজতে থাকে। লোকেরা উনাকে বলল যে, তিনি অমুক গ্রামে গেছেন। বেদুঈন সেখানে গিয়ে উনার সাথে দেখা
করলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: কেন এসেছ? বেদুঈন বলল: আপনার সম্মানিত দাদা ইমামুল
আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াহাহু আলাইহিস সালাম উনার প্রতি যারা আন্তরিক
শ্রদ্ধাশীল, আমি তাদেরই একজন। এখন আমি এমন এক ঋণের
দায়ে আবদ্ধ, যা শোধ করার শক্তি আমার নেই। আপনি ছাড়া
কেউ নেই, যিনি আমার সাথে থেকে এই বোঝা নামাতে পারবেন। তিনি বেদুঈনকে আশ্বাস
দিয়ে বললেন: কোন চিন্তা করো না। দেখি কি করা যায়। তিনি বেদুঈনকে সেখানেই রেখে দিলেন।
সকাল হলে আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি
বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেদুঈনকে বললেন: দেখ, আমি তোমাকে কিছু কথা বলব। তোমার কর্তব্য হবে আমার কোন কথার বিরোধিতা
না করা। বেদুঈন আরজ করলো: হুযূর! আমি কখনই আপনার কোন কথার বিরোধিতা করব না। আওলাদে
রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপন হাত মুবারক-এ একটি পত্র লিখলেন। যার বিষয়বস্তু ছিল এই- বেদুঈনকে
এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে দাও, যাতে তার ঋণ শোধ হয়ে যায়। সে ঋণভারে
জর্জরিত। অতঃপর তিনি বললেন: এই পত্র নিয়ে যাও। আমি যখন সামারায় ফিরে যাব, তখন আমার কাছে আসবে এবং মজলিসের সকল লোকের সামনেই ঋণ শোধ করার
দাবি করবে। দেখ! আমার এ কথার বিরুদ্ধাচরণ করবে না। বেদুঈন এ বিষয়ে অঙ্গীকার করল এবং
পত্র হাতে নিয়ে চলে গেল।
আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি
বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সামারায় ফিলে এলেন, তখন অনেক মুরীদান ও খাদিম উনার খিদমতে উপস্থিত হলেন। বেদুঈনও
উপস্থিত হয়ে গেল এবং পত্রটি বের করে উনার কথামত ঋণ পরিশোধের দাবি পেশ করলো। তিনি তার
সাথে নরম সুরে কথা বলতে লাগলেন এবং ঋণশোধ করার ওয়াদাও করছিলেন। কিন্তু সে স্বীয় বক্তব্য
পেশ করেই চলে গেল। এ ঘটনার সংবাদ মুতাওয়াককিলের কর্ণগোচর হলো। তখন তিনি আদেশ দিলেন, ত্রিশ হাজার দিরহাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি
বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খিদমতে নিয়ে যাও। দিরহাম এসে গেলে
তিনি সেগুলো বেদুঈনের আগমন পর্যন্ত হিফাযতে রাখলেন। বেদুঈন আগমন করলে তিনি বললেন: নিয়ে
যাও এবং কর্জ শোধ কর। যা উদ্ধৃত্ত থাকে, তা পরিবার-পরিজনের জন্যে ব্যয় কর। বেদুঈন
বলল: হে ইবনে রসূলুল্লাহ! আপনি যা দিলেন, আমি তো তার এক তৃতীয়াংশেরও কম আশা করেছিলাম।
কারামত ও কামালত:
একবার মুতাওয়াককিল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তার শরীরে ফোঁড়া বের হল। চিকিৎসকরা
এর প্রতিকারে ব্যর্থ হল। সে চোখের সামনে মৃত্যু দেখতে লাগলো। একদিন একজন নৈকট্যশীল
সভাসদ ফতেহ ইবনে খাকান বলতে লাগলো। কাউকে আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে প্রেরণ করা হোক। নিশ্চয়ই উপকারী তদবির উনার জানা আছে।
সে মতে এক ব্যক্তিকে উনার কাছে পাঠানো হলে তিনি বললেন: অমুক বস্তু ফোঁড়ার উপর রেখে
দাও। ইনশাআল্লাহ উপকার হবে। নির্দেশিত বস্তুটি খলীফার কাছে আনা হলে উপস্থিত সকলেই ঠাট্টাবিদ্রƒপ করতে লাগলো। ফতেহ ইবনে খাকান বলল:
পরীক্ষা করতে দোষ কি? অতঃপর সেই বস্তুটি ফোঁড়ার উপর রেখে
দেয়া হল। আশ্চর্যের বিষয়, রাখার সাথে সাথে ফোঁড়া গলতে শুরু করল
এবং যাবতীয় দূষিত পদার্থ বের হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ!
মুতাওয়াককিলের আরোগ্য লাভের সংবাদ তার জননীকে জ্ঞাত করা হলে তিনি দশ হাজার দীনারের
একটি থলে মোহর এঁটে আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি
বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে পাঠিয়ে দিলেন।
উপরোক্ত ঘটনার কিছুদিন পরে মুতায়াককিলের কাছে কেউ গোপনে মিথ্যা অভিযোগ করলো যে, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি
বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে অনেক গোপন অর্থসম্পদ ও
অস্ত্রসস্ত্র রয়েছে। মুতাওয়াককিল নিরাপত্তা রক্ষক সায়ীদকে বললো: তুমি অর্ধ রাতের পরে
আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি
বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গৃহে অতর্কিতে প্রবেশ করবে এবং
মাল-সম্পদ ও অস্ত্রশস্ত্র যা পাও, কব্জা করে নিয়ে আসবে। সায়ীদ বললো: আমি
সিঁড়ি সাথে নিয়েই গেলাম। অর্ধরাতের পরে যখন আমি নিচে অবতরণ করলাম, তখন ঘরটি অন্ধকারে আচ্ছন্ন ছিল। আমি কোথায় যাব, কি করব, কিছুই ঠিক করতে পারছিলাম না। হঠাৎ অন্দর
মহল থেকে আওয়াজ আসলো, হে সায়ীদ! স্বস্থানে দাঁড়িয়ে থাক। আমি
বাতি নিয়ে আসছি। কিছুক্ষণ পর প্রদীপ এলে আমি নিচে নেমে আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে চলে গেলাম। তিনি পশমী বস্ত্র মুবারক পরিহিত ছিলেন। মাথা
মুবারক-এ ছিল পশমী টুপি মুবারক। তিনি চটের তৈরি মুবারক জায়নামাযে ক্বিবলামুখী হয়ে উপবিষ্ট
ছিলেন। তিনি আমাকে বললেন: তোমার সামনেই সবকিছু রয়েছে। আমি ঘরের এদিক-ওদিক ঘুরে ফিরে
দেখলাম। যেসব বিষয়ের গোপন খবর দেয়া হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে কোন কিছুই পাওয়া গেল না।
কেবল মুতাওয়াককিলের জননীর প্রেরিত থলে মওজুদ ছিল, যার মোহর অক্ষত ছিল। অন্য একটি থলের উপরও মোহরের চিহ্ন ছিল।
অতঃপর আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি
বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন: এই জায়নামায মুবারক উনার
নিচে ও কিছু বিষয় আছে। আমি জায়নামায উঠালে তার নিচে একটি কোষাবদ্ধ তরবারি দেখলাম।
আমি এসব বস্তু মুতাওয়াককিলের কাছে নিয়ে গেলাম। মুতাওয়াককিল থলের উপর আপন জননীর
মোহর দেখে এ সম্পর্কে সভাসদদেরকে জিজ্ঞাসা করলো। তারা বলল: আপনার অসুস্থতার দিনগুলোতে
আপনার জননী মানত করেছিলেন। মুতাওয়াককিল বললো: এই পরিমাণ মুদ্রাভর্তি আরও একটি থলে আনো
এবং তরবারিসহ থলেগুলো উনাকে দিয়ে এসো।
সায়ীদ বর্ণনা করে, আমি যখন এসব বন্তু নিয়ে আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামউনার খিদমতে হাযির হলাম, তখন লজ্জায় ও অনুতাপে আমার মাথা নুয়ে
পড়ছিল। আমি আরজ করলাম: আমার মনীব! আপনার দওলতখানায় বিনানুমতিতে প্রবেশ করার নির্দেশ
দিয়েছিল। যা আমার জন্যে খুবই দুরূহ ছিল কিন্তু তার নির্দেশের কারণে আমি এরূপ করতে বাধ্য
ছিলাম। তিনি বললেন: জালিমরা সত্ত্বরই টের পাবে যে তারা কোন দিকে পার্শ্ব পরিবর্তন করছে।
(২) একজন ব্যক্তি বর্ণনা করেন, সফরে আমার সাথে আমার পুত্রও ছিল। আমি
আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি
বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে আরজ করলাম: আমার পুত্রের
যেন পুত্রসন্তান হয়। তিনি বললেন: যখন পুত্র জন্মগ্রহণ করে, তখন তার নাম রাখবে মুহম্মদ। সে মতে তাই করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
(৩) অনুরূপভাবে অন্য একজন ব্যক্তি তার পুত্রের ঘরে পুত্র হওয়ার আবেদন জানালে তিনি
বললেন: কন্যা অনেক পুত্রের চেয়ে ভাল হয়। সে মতে তার ঘরে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে।
সুবহানাল্লাহ!
(৪) মুতাওয়াককিলেরর গৃহে অনেক ছোট ছোট পাখি ছিল। এদের কিচিরমিচির শব্দে কারও কোন
কথা বুঝা যেত না। কিন্তু আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি
বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখনই সেখানে যেতেন, তখন পাখিরা নিশ্চুপ হয়ে যেত। এরপর যখন তিনি বাইরে চলে আসতেন, তখন আবার কিচিরমিচির শুরু করতো। সুবহানাল্লাহ!
(৫) জনৈক ভারতবর্ষীয় ভেল্কিবাজ মুতাওয়াককিলের কাছে আগমন করেছিল। সে অত্যাশ্চর্য
ভেল্কি প্রদর্শন করতো। একদিন মুতাওয়াককিল তাকে বললো: যদি তুমি আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লজ্জিত ও অপ্রস্তুত করে দিতে পার, তবে তোমাকে এক হাজার দীনার পুরষ্কার দিব। ভেল্কিবাজ বলল: কয়েকটি
ভাল চাপাতী রুটি দস্তরখানে রেখে দিন এবং আমাকে উনার পার্শ্বে বসিয়ে দিন। মুতাওয়াককিল
তাই করলো। ভেল্কিবাজের আমলের প্রভাবে রুটি উনার কাছ থেকে দূরে চলে গেল। নাউযুবিল্লাহ!
এই আমল তিনবার করা হলে উপস্থিত সকলেই হাসতে লাগলো। সেখানে একটি কার্পেট ছিল, যাতে সিংহের চিত্র অংকিত ছিল।
আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি
বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই অঙ্কিত সিংহকে ইশারা করলেন:
যাতে ভেল্কিবাজকে ধরে ফেলে। অমনি সেই চিত্র সত্যি সত্যি সিংহ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল এবং ভেল্কিবাজের
উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। অতঃপর তাকে মাটিতে পুঁতে দিয়ে আবার কার্পেটে ফিলে এলো। ভেল্কিবাজকে
মাটি থেকে বের করার জন্যে মুতাওয়াককিল অনেক অনুনয়-বিনয় করলো। আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তার আবেদন কবুল করলেন না বরং বললেন: মহান আল্লাহ পাক উনার
কসম! এখন থেকে আর আপনি তাকে পুনরায় দেখতে পারবেন না। সে মজলিস থেকে বাহিরে চলে গেছে।
সে মতেই সেই ভেল্কিবাজকে এরপরে কেউ দেখেনি। সুবহানাল্লাহ! (ইকতিরাসুল আনওয়ার-১৫৭)
(৬) একদিন এক ওলীমার দাওয়াতে রাজপরিবারের যুবকদেরকে দাওয়াত দেয়া হয়। তাদের সম্মানার্থে
অনেক মানুষ সমবেত হয়। এই মজলিসে আদব ও শিষ্টাচারের যাবতীয় নিয়মনীতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ
অজ্ঞ এক যুবকও মওজুদ ছিল। সে ঠাস ঠাস শব্দে কথা বলতো এবং হা হা করে হাসতো। আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপন মুখম-ল তার দিকে ফিরিয়ে বললেন: তুমি হাসি-তামাশায় মেতে আছো
কেন? তুমি কি মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভুলে গেছো? মনে রেখ, তিন দিন পরে তুমি কবরবাসীদের মধ্যে শামিল
হয়ে যাবে। একথা শুনে যুবক বেয়াদবী থেকে বিরত হল। আর আহারের পরেই সে অসুস্থ হয়ে পড়লো
এবং তৃতীয় দিনেই মারা গেল। সুবহানাল্লাহ!
(৭) অন্য একদিন সামেরাবাসীদের ওখানে ওলীমার দাওয়াত ছিল। তাদের মধ্যেও এক বেয়াদব
যুবক ছিল। সে মজলিসে অনর্থক কথাবার্তা বলতো এবং আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আ’শির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইজ্জতের প্রতিও খেয়াল করতো না। তিনি বললেন: এ লোকটি এই দাওয়াত
থেকে কিছুই খেতে পারবে না। সত্ত্বরই জীবন তার জন্যে তিক্ত হয়ে যাবে। একটু পরেই খানা
এলো। লোকটি খাওয়ার জন্যে হাতও ধৌত করলো। কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে তার গোলাম কাঁদতে কাঁদতে
ভিতরে প্রবেশ করলো এবং বললো: আপনার আম্মা বাড়ির উপরে কামরা থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন।
তাড়াতাড়ি সেখানে চলুন। লোকটি আহার না করেই উঠে চলে গেল। সুবহানাল্লাহ! (শাওয়াহিদুন
নুবুওওয়াত)
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মু’জিযা শরীফ
১ নং সম্মানিত মু’জিযাহ্ শরীফ:
বিশিষ্ট ঐতিহাসিক হযরত ইমাম আবুল হাসান আলী ইবনে হুসাইন ইবনে আলী আল মাস‘ঊদী রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, “একদা যালিম শাসক মুতাওয়াক্কিল তার দরবারে
তিনটি হিংস্র পশু নিয়ে আসে। তারপর সে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশিরমিন আহলি বাইতি
রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দাওয়াত করে। অতঃপর যখনই সাইয়্যিদুনা
হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
যালিম শাসক মুতাওয়াক্কিলের দরবারে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রাখেন, তখনই যালিম শাসক মুতাওয়াক্কিল তার দরবারের দরজা বন্ধ করে দেয়ার
জন্য নির্দেশ দেয়। না‘ঊযুবিল্লাহ! কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, হিংস্র পশুগুলো অত্যন্ত বিনয় ও আদবের সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত
ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত
তা‘যীম-তাকরীম মুবারক করে উনার চারপাশে ঘুরতেথাকে। সুবহানাল্লাহ! আর সাইয়্যিদুনা হযরত
ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার
সম্মানিত ও পবিত্র কোর্তা মুবারক উনার আস্তিন মুবারক দিয়ে তাদের মাথায় সম্মানিত ও পবিত্র
হাত মুবারক বুলিয়ে দেন। সুবহানাল্লাহ!
তারপর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি উপরে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নিয়ে যালিম শাসক মুতাওয়াক্কিলের সঙ্গে
কথা বলে আবার নীচে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন
আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুতাওয়াক্কিলের দরবার থেকে
বের হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত হিংস্র পশুগুলো উনাকে সম্মানিত তাযীম-তাকরীম মুবারক করে অত্যন্ত
বিনয় ও আদবের সাথে উনার চারপাশে ঘুরতে থাকে। সুবহানাল্লাহ!
পরবর্তীতে যালিম শাসক মুতাওক্কিল ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির
মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য অনেক সম্মানিত
হাদিয়া-তোহফা মুবারক প্রেরণ করে। তখন সভাসদরা যালিম শাসক মুতাওক্কিলকে বলে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পশুদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছেন, তাতো দেখলে। এবার তুমিও ঐ একই কাজ কর। যালিম শাসক মুতাওক্কিল
বলে, তোমরা কি আমাকে মারতে চাও! সে আরো বলে, তোমরা এ ঘটনা অন্য কাউকে বলবে না।
২ নং সম্মানিত মু’জিযাহ্ শরীফ:
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সম্মানিত ছোহবত মুবারক পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে এবং উনার প্রতি মুহব্বত, সম্মান প্রদর্শন ও ইতায়াতের কথা বলে যালিম শাসক মুতাওয়াক্কিল
ইরাকের সামেরা শহরে আসার জন্য উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ আরজি পেশ করে। সাইয়্যিদুনা
হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
যালিম শাসক মুতাওয়াক্কিলের মতলব বোঝা সত্ত্বেও সামেরায় সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নেয়ার
জন্য সম্মানিত সিদ্ধান্ত মুবারক নেন। সামেরার সফর মুবারক-এ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল
‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খাদিম
ছিলেন হযরত ইয়াহইয়া ইবনে হারসামা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল
‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সামেরার উপকণ্ঠে
সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নেয়ার পর উনার মানহানী করার জন্য যালিম শাসক মুতাওয়াক্কিল উনাকে
শহরে প্রবেশ করতে না দিয়ে ‘খানুস সায়ালিক’ নামের এক অনুপযুক্ত স্থানে সম্মানিত অবস্থান
মুবারক করার জন্যবলে। না‘ঊযুবিল্লাহ! এখানে থাকত ভিক্ষুকরা। না‘ঊযুবিল্লাহ! সাইয়্যিদুনা
হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
জন্য পরের দিন এখানে একটি আলাদা ঘর বরাদ্দ করে যালিম শাসক মোতাওয়াক্কিল। হযরত সালেহ
ইবনে সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি নামের এক ব্যক্তি তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির
মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক
করার জন্য সেখানে আসেন। তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ আরজি পেশ করেন যে, যালিম শাসক মুতাওয়াক্কিল সব ক্ষেত্রে আপনার সম্মানিত ও পবিত্র
নূর মুবারক নিভিয়ে দিতে চায় এবং সে আপনার যে বেমেছাল সম্মানিত মর্যাদা-মর্তবা মুবারক
তা অস্বীকার করে থাকে। না‘ঊযুবিল্লাহ! আর এজন্যই সে আপনাকে নিম্ন মানের এই সরাইখানায়
উঠিয়েছে (যেখানে ফকিররা থাকে)। না‘ঊযুবিল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি
বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদিকে ইশারা করে বলেন, হে হযরত ইবনে সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি! ঐ দিকে দেখুন। হযরত সাইদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিবলেন, আমি তাকিয়ে দেখলাম যে, একটি সুসজ্জিত বাগান যা ছিল নানা রকম ফুলে-ফলে ভরপুর, ছিল প্রবাহিত নহর বা ঝর্ণাধারা, বেহেশতী হুর ও গিলমান। সুবহানাল্লাহ! এ অপূর্ব বেমেছাল দৃশ্য
মুবারক দেখে আমি বিস্ময়ে দিশেহারা হয়ে যাই। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি
বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমরা যেখানেই থাকি এগুলো আমাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ নিয়োজিত
থাকে। সুবহানাল্লাহ! হে হযরত ইবনে সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি! আমরা খানুস সায়ালিক-এ থাকি
না। সুবহানাল্লাহ!
৩ নং সম্মানিত মু’জিযাহ্ শরীফ:
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার অনেক সম্মানিত মু’জিযাহ্ শরীফ প্রকাশিত হয়েছেন। উনার আরেকটি সম্মানিত
মু’জিযাহ্ শরীফ হচ্ছেন- একদিন যালিম শাসক মুতাওক্কিলের কয়েকজন জল্লাদ ও ভৃত্য তার নির্দেশে
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে আকস্মিভাবে শহীদ করার জন্য ষড়যন্ত্র করে। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!
তখন তারা দেখতে পায় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি
বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চারদিকে রয়েছেন একশ জনেরও অধিক
সশস্ত্র দেহরক্ষী। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! এতে তারা অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত
হয়ে পালিয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
৪ নং সম্মানিত মু’জিযাহ্ শরীফ:
আরেকবারের ঘটনা। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার জন্য যালিম শাসক মুতাওয়াক্কিল উনার সামনে
৯০ হাজার সৈন্যের সশস্ত্র মহড়ার উদ্যোগ নেয়। না‘ঊযুবিল্লাহ! তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল
‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যালিম শাসক মুতাওয়াক্কিলকে
আকাশ ও যমীনের দিকে তাকিয়ে দেখার জন্য সম্মানিত আদেশ মুবারক করেন। যালিম শাসক মুতাওয়াক্কিল
সেদিকে তাকিয়ে দেখতে পায় যে, আকাশ আর যমীন অসংখ্য সশস্ত্র হযরত ফেরেশতা
আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বারা পরিপূর্ণ এবং উনারা জিহাদের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছেন।
সুবহানাল্লাহ! এটা দেখে যালিম শাসক মুতাওক্কিল ভীত-সন্তস্ত্র হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। সুবহানাল্লাহ!
৫ নং সম্মানিত মু’জিযাহ্ শরীফ:
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার মানহানী করার জন্য একবার এই যালিম শাসক মুতাওক্কিল উনাকে দাওয়াত দেয়।
সে এক মজলিসের ব্যবস্থা করে। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত মজলিসে উপস্থিত হলে, সে উনার সামনে খাবার পরিবেশন করে। তিনি খাবারে হাত দেয়া মাত্রই
যালিম শাসক মুতাওক্কিলের নিয়োজিত এক জাদুকর জাদুর মাধ্যমে ঐ খাবার উধাও করে ফেলে। না‘ঊযুবিল্লাহ!
এটা দেখে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই হাসি-ঠাট্টা করতে থাকে। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!
না‘ঊযুবিল্লাহ! যাদুকরের পাশে একটি বালিশে সিংহের ছবি অঙ্কিত ছিলো। সাইয়্যিদুনা হযরত
ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জাদুকরের
পাশে থাকা বালিশে অঙ্কিত সিংহের ছবিকে জীবিত হওয়ার জন্য সম্মানিত আদেশ মুবারক করেন।
সাথে সাথে সিংহটি জীবিত হয়ে ঐ জাদুকরকে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার আরও কতিপয় সম্মানিত মু’জিযা শরীফ
কিতাবে বর্ণিত আছে,
قال رجل رأيت سيدنا حضرت الامام العاشر من اهل بيت رسول الله صلى الله عليه وسلم (سيدنا حضرت على بن محمد عليه السلام) ومعه جراب ليس فيه شئ فقلت أترى ما تصنع بهذا فقال أدخل يدك فيه فأدخلتها فما وجدت شيئا فقال أعد فأعدت يدي فإذا هو مملوء دنانير.
অর্থ: “এক ব্যক্তি বলেন, আমি (একদিন) সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল
‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখলাম। উনার
সাথে একটি খালি থলি ছিলো। আমি বললাম, ইয়া সাইয়্যিদী! আপনি এটা দিয়ে কি করেন? তিনি বললেন, তুমি তোমার হাত (এটাতে) প্রবেশ করাও।
তখন আমি আমার হাত প্রবেশ করালাম, (দেখলাম) তাতে কিছুই নেই। অতঃপর তিনি
আমাকে বললেন, হাত বের করো। আমি আমার হাত বের কলাম।
তখন হঠাৎ আমি দেখলাম, সেটা দিনারে পরিপূর্ণ।” সুবহানাল্লাহ!
আরো বর্ণিত আছে,
عن حضرت عمارة بن زيد رحمة الله عليه قال قلت لسيدنا حضرت الامام العاشر من اهل بيت رسول الله صلى الله عليه وسلم (سيدنا حضرت على بن محمد عليه السلام) هل تستطيع أن تخرج من هذه الأسطوانة رمانا قال نعم وتمرا وعنبا وموزا ففعل ذلك وأكلنا وحملنا.
অর্থ: “হযরত ‘আম্মার ইবনে যায়েদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (একদিন) সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, আপনি কি এই স্তম্ভ থেকে আনার ফল বের করতে পারবেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। খেজুর? (হ্যাঁ, অবশ্যই)। আঙ্গুর? (হ্যাঁ, অবশ্যই।) কলা? (হ্যাঁ, অবশ্যই)। অতঃপর তিনি তা করলেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর আমরা সে
সকল বরকতময় ফল থেকে কিছু খেলাম এবং কিছু নিজেদের জন্য নিয়ে গেলাম।” সুবহানাল্লাহ!
আরো বর্ণিত আছে,
عن حضرت محمد بن زيد رحمة الله عليه قال كنت عند سيدنا حضرت الامام العاشر من اهل بيت رسول الله صلى الله عليه وسلم (سيدنا حضرت على بن محمد عليه السلام) إذ دخل عليه قوم يشكون الجوع فضرب بيده إلى الأرض وكان لهم برا ودقيقا.
অর্থ: “মুহম্মদ ইবনে যায়েদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (একদিন) সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ছিলাম। হঠাৎ (দেখলাম) একটি ক্বওম উনার নিকট
এসে তাদের ক্ষুধার বিষয় বর্ণনা করলো। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি
রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাত
মুবারক দ্বারা যমীনে আঘাত করেন। (ফলে সেখান থেকে গম ও আটা বের হয়)। তিনি গম ও আটা পরিমাপ
করে, তাদেরকে দিয়ে দেন।” সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম এবং মহাসম্মানিতা আওলাদ আলাইহিন্নাস
সালাম
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
أما أبو الحسن علي النقي فله من الأبناء ستة
অর্থ: “ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আবুল হাসান সাইয়্যিদুনা হযরত আলী নক্বী আলাইহিস সলাম উনার মহাসম্মানিত
আবনা’ (ছেলে) আলাইহিমুস সালাম উনারা ছিলেন মোট ৬ জন।” সুবহানাল্লাহ! (আশ শাজরাতুল মুবারকহ
১/২২)
উনারা হচ্ছেন- ১. ইমামুল হাদী ‘আশার মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম, আবূ মুহম্মদ সাইয়্যিদুনা হযরত হাসান
আসকারী আলাইহিস সালাম।
২ সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ আলাইহিস সালাম। তিনি ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত প্রথম (বড়) আওলাদ। সুবহানাল্লাহ!
৩. সাইয়্যিদুনা হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম। তিনি উনার মহাসম্মানিত পিতা উনার পূর্বে
সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
৪. সাইয়্যিদুনা হযরত মূছা আলাইহিস সালাম।
৫. আবূ আব্দুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত জা’ফর আলাইহিস সালাম। এবং
৬. সাইয়্যিদুনা হযরত আলী আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,
واتفقوا على أن المعقب من أولاده ابنان سيدنا حضرت الحسن العسكري عليه السلام الإمام وسيدنا حضرت جعفر عليه السلام
অর্থ: “সীরতবিশারদগণ উনাদের সকলের ঐকমত্যে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি
বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত এবং মহাপবিত্র বরকতময়
নছব মুবারক (বংশ মুবারক) উনার দু’জন মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিমাস সালাম উনাদের মাধ্যমে
জারী রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! উনারা হচ্ছেন-
১. ইমামুল হাদী ‘আশার মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি।
২. আবূ আব্দুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত জা’ফর
আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! (আশ শাজরাতুল মুবারকহ ১/২২)
ইমামুল হাদী ‘আশার মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
মাধ্যমেই মহাসম্মানিত এবং মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত
মূল নিয়ামত মুবারক এবং সম্মানিত কুরবত মুবারক বংশানুক্রমে পর্যায়ক্রমে চলতে থাকেন।
অর্থাৎ উনার মাধ্যমেই মহাসম্মানিত এবং মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম
উনাদের মহাসম্মানিত এবং মহাপবিত্র সিলসিলা মুবারক এযাবৎকাল পর্যন্ত জারী রয়েছেন এবং
ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবেন। সুবহানাল্লাহ!
আর ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
মহাসম্মানিত বানাত (মেয়ে) আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
وله من البنات ثلاثة سيدتنا حضرت عائشة عليها السلام وسيدتنا حضرت فاطمة عليها السلام وسيدتنا حضرت بريهة عليها السلام وزوج سيدتنا حضرت بريهة عليها السلام سيدنا حضرت محمد بن موسى ابن محمد التقي عليهم السلام.
অর্থ: “ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার মহাসম্মানিত বানাত (মেয়ে) আলাইহিন্নাস সালাম উনারা মোট ৩ জন। উনারা হচ্ছেন-
১. সাইয়্যিদাতুনা হযরত ‘আয়িশাহ আলাইহাস
সালাম,
২. সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাতিমাহ আলাইহাস সালাম এবং
৩. সাইয়্যিদাতুনা হযরত বারীহাহ আলইহাস
সালাম। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত বানাত সাইয়্যিদাতুনা হযরত বারীহাহ আলাইহাস সালাম উনাকে
সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ইবনে মূসা ইবনে মুহম্মদ তক্বী আলাইহিমুস সালাম উনার নিকট
সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দেন।” সুবহানাল্লাহ! (আশ শাজরাতুল মুবারকহ ১/২২)