একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৯

 


একজন কুতুবুজ্জামান উনার  দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

 সাইয়্যিদাতুনা আহমদ জাহানারা বেগম আলাইহাস সালাম (দাদী হুযুর ক্বিবলা) উনার বিলাদত শরীফ এবং মুবারক বংশ পরিচিতি-

 পূর্ব আলোচনায় জানা গেছে যে, মানুষকে হিদায়েত দানের লক্ষ্যে সুলতানুল হিন্দ, হাবীবুল্লাহ্, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী সানজারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিভিন্ন দেশ হিজরত ও সফরের শেষ পর্যায়ে আল্লাহ্ পাক উনার নির্দেশে ষষ্ঠ হিজরীর শেষার্ধে আজমীর শরীফ আসেন। উনারই অন্তরঙ্গ সঙ্গী হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আবু বকর মুজাদ্দিদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি একই লক্ষ্যে আরব থেকে আজমীর শরীফ তাশরীফ আনেন। ইসলাম প্রচারের কাজে নিমগ্ন থেকে তিনি সেখানেই ইন্তিকাল করেন। উনার অধস্তন পুরুষ হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলাউদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ সালাহউদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি এগারশত হিজরীর শেষার্ধে আজমীর শরীফ থেকে চট্টগ্রামে সাময়িক বিরতির পর বর্তমান নুরানীগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) জেলার সোনারগাঁয়ে আসেন। হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলাউদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি সোনারগাঁও থেকে একই জেলার আড়াইহাজার থানাধীন প্রভাকরদী গ্রামে হিদায়েতের কেন্দ্রভূমি গড়ে তোলেন।

 

অপরদিকে হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ সালাহউদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি সোনারগাঁয় ইসলাম প্রচারে ব্যাপৃত থাকেন এবং সেখানেই ইন্তিকাল করেন। হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ সালাহউদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক নিম্নস্থিত পুরুষেই জন্মগ্রহণ করেন আওলাদে রাসূল, হযরত সাইয়্যিদাতুনা আহমদ জাহানারা বেগম আলাইহাস সালাম, আল হাসানী, ওয়াল হুসাইনী, ওয়াল কুরাঈশী ।

 

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ সালাহউদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি পর্যন্ত উনার মুবারক উর্ধ্বতন পুরুষের অনুক্রম নিম্নরূপঃ-

হযরত সাইয়্যিদাহ্ আহমদ জাহানারা বেগম আলাইহাস সালাম উনার পিতা,

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুস সবুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি ।

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুস সবুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতা,

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মফিজউদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি ।

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মফিজউদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতা,

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আনিসউদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি ।

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আনিসউদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতা,

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ সালাহউদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি ।

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ সালাহউদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার অধস্তন ৪র্থ পুরুষ,

 

বাড়ী মজলিশ গ্রামের হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুস সবুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি নুরানীগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) জেলার বৈদ্যেরবাজার থানাধীন পাকুন্দা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে বিয়ে করেন। অভিজাত বংশীয় এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় শ্বশুরের নাম হযরত মুহম্মদ আব্দুল লতিফ খান রহমাতুল্লাহি আলাইহি । তিনি ছিলেন ঐ পরিবারের প্রধান ব্যক্তিত্ব। শরাফত, সৌজন্য, পরোপকার, দানশীলতা, সুন্নাত পালনের অভ্যস্ততা এবং পরহেজগারীতে তিনি ও তাঁর স্ত্রী ছিলেন অনন্য। অতুলনীয় এইসব বৈশিষ্ট্যগুণে তাঁরা উভয়েই হয়ে উঠেছিলেন সকলের অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। দুজন মাত্র কন্যা সন্তান তাঁদের। একজন আহমদ আয়েশা আক্তার রহমাতুল্লাহি আলাইহা এবং অন্যজন হযরত আহমদ কাউসার আক্তার রহমাতুল্লাহি আলাইহা। দুজনেরই বিয়ে হয়ে গেলে বয়ঃবৃদ্ধ পিতা-মাতা একলা হয়ে পড়েন। মেয়ের ঘরে একজন পুণ্যবান সন্তানের পরম প্রত্যাশায় আল্লাহ্ পাক-এর কাছে অহর্নিশ মুনাজাত পিতা-মাতার। প্রত্যাশা একদিন পূরণ হয়। আহমদ আয়েশা আক্তার রহমাতুল্লাহি আলাইহা উনার কোল আলো করে ১৩২৪ সালে পাকুন্দা গ্রামে নানা-বাড়ীতে এক মুবারক কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। তাঁরই নাম হযরত সাইয়্যিদাতুনা আহমদ জাহানারা বেগম আলাইহাস সালাম । নানা বাড়ীর পরিপূর্ণ এক ধর্মীয় পরিবেশে পরম মমতায় এই মোবারক সন্তানের সময় কাটতে থাকে।

        হযরত সাইয়্যিদাতুনা আহমদ জাহানারা বেগম আলাইহাস সালাম উনার পিতা-মাতা উভয়েই ছিলেন আল্লাহ্ পাক উনার খাছ ওলী। বংশ পরস্পরায় ক্রমান্বয়ে তিনি হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম, হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম এবং অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমাতুল্লীল আলামীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন। রক্ত মুবারকের অনুপম ধারাবাহিকতায় হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুস সবুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি  উনার ঔরশে এবং আহমদ আয়েশা আক্তার রহমাতুল্লাহি আলাইহা উনার নেক ঔরশে নানা বাড়ীর এমন এক পরিবেশে তিনি দুনিয়ায় আগমন করেন, যেখানে খাছ হিদায়েতের নূরে সকলেই আল্লাহ্ পাক উনার মত এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পরিপূর্ণরূপে দায়েম ও কায়েম ছিলেন। বিশেষতঃ উনার পিতা-মাতার বুযুর্গী ছিল সর্বজনস্বীকৃত এবং উনারা উভয়েই ছিলেন আল্লাহ্ পাক উনার খাছ লক্ষ্যস্থল। খালিছভাবে সুন্নাতের পাবন্দ এবং ইসলাম প্রতিপালনে অভ্যস্ত এমন বুযুর্গ পিতা-মাতার ঘরে সংগত কারণেই হযরত সাইয়্যিদাতুনা আহমদ জাহানারা বেগম আল হাসানী, ওয়াল হুসাইনী, ওয়াল কুরাঈশী আলাইহাস সালাস মাদারজাদ ওলী হিসেবে দুনিয়ায় তাশরীফ আনেন। হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুস সবুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি সকলের বড়। অন্য চারজনের অনুক্রম হলো, ভাইঃ বোনঃ বোনঃ ভাই। (অসমাপ্ত)

আবা-৬৮

 

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৮

 


একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

 শাদী মোবারক-

 ইতোপূর্বে কর্মজীবনসম্পর্কিত আলোচনায় দেখা গেছে কুতুবুজ্জামান, আরিফবিল্লাহ্, আওলাদে রাসূল, হযরতুল আল্লামা শাহ্ সূফী আলহাজ্ব সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান, আল হাসানী, ওয়াল হুসাইনি, ওয়াল কুরাঈশী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ১৯৩৬ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর যাপিত জীবনের যাবতীয় অনুকূল কর্মপ্রবাহ ধর্মকাজের সহায়ক। স্বামীর নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন ধর্মপালনে স্ত্রীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপরদিকে নেককার স্বামীর সাহচার্যে লব্ধ আল্লাহ্ পাক-এর নিয়ামত সম্ভারে স্ত্রীর জীবন বিকশিত ও ধন্য হয়।

 মমতাময় সান্নিধ্য, পারস্পরিক পরিপূরক অবদান এবং অকৃতিম ভাব ও ভালোবাসার লেনদেন, অনাবিল প্রশান্তিতে উভয়ের কলূষমুক্ত মন ও মননকে পরোয়ারদিগার-এর প্রতি সমর্পিত করে দেয়। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন-এর মত এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে অনুগত থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে ধর্ম পালনে যতো প্রকার আপদ ও বিপত্তি দেখা দেয়, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের অথবা একজনের ধর্ম বিমুখতা এবং অনাচার তার মধ্যে প্রকট। বর্তমানে দেখা যায় এবং অতীত ইতিহাসেও লক্ষ্য করা গেছে, অবিবাহিত কালযাপনও ধর্মভীরুতা অর্জনে বিপর্যয় ঘটায়।

 সর্বজন বিদিত যে, অবিবাহিত জীবন যাপনে অভ্যস্ত থেকে উনারা কামিয়াবী অর্জন করেছেন, সংখ্যায় উনারা নগন্য। এক্ষেত্রে নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাস উনাদের সংখ্যাও অত্যল্প। আল্লাহ্ পাক উনার সন্তুষ্টিলাভের বাধ্যতামূলক অবধারিত মুবারক মাধ্যম  হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস শরীফে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছেন, “ইসলাম ধর্মে বৈরাগ্য নেই।তিনি আরো সাবধান করেছেন, “বিয়ে করা আমার সুন্নত। যে আমার সুন্নতের প্রতি বিমুখ হয়, সে আমার প্রতি বিমুখ হয়।বিয়ের প্রয়োজন ও গুরুত্ব বুঝাতে অন্যত্র তিনি বলেছেন, “যে আমার সুন্নতের প্রতি বিমুখ হয়, সে আমার দলভুক্ত নয়। বিয়ে আমার অন্যতম সুন্নত। অতএব যে আমাকে মুহব্বত করে সে যেনো আমার সুন্নত পালন করে (বিয়ে করে)।

  বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর ধর্মভিত্তিক প্রেমময় বন্ধন ইবলিশের কুমন্ত্রণা থেকে আত্মরক্ষার সুদৃঢ় প্রাচীর। আল্লাহ পাক উনার আমোঘ নিয়মে নেকবখ্ত স্ত্রীর গর্ভ থেকেই নেক সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। স্বীকৃত অভিমত এই যে, ইবাদতের জন্য নির্জনবাস অপেক্ষা বিয়ে করা উত্তম। ঈমানদার স্ত্রী, আল্লাহ্ পাক উনার স্মরণে স্বামীকে সাহায্য করে থাকে। দুনিয়ার ধনরত্ন অর্জনে পরশমনিতুল্য এমন নেককার স্ত্রীর ফযীলত বর্ণনায় হযরত ওমর ফারুক আলাইহিস সালাস উনার জিজ্ঞাসার জবাবে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা অর্জন কর আল্লাহ্ পাক উনার যিকিরকারী রসনা, শোকরকারী অন্তর এবং ঈমানদার স্ত্রী।এ হাদীস শরীফে ঈমানদার ও নেককার স্ত্রীকে যিকির এবং শোকরের সমমর্যাদা দেয়া হয়েছে।

 কারণ ঈমানদার স্ত্রীর সহায়তাগুণেই আলোচ্য হাদীস শরীফে বর্ণিত পূর্বোক্ত দুটি অতুলনীয় গুণ অর্জনের অনুকূল ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। এমতক্ষেত্রে অভিজাত বংশের দ্বীনদার, ধর্মপালনে অভ্যস্ত, সদাচারিনী, রূপবতী, অল্পেতুষ্ট ইত্যাদি অনিবার্য বৈশিষ্ট্যগুণ সম্পন্না কুমারী পাত্রী নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন অপরিহার্য। পক্ষান্তরে স্বামীর ধর্মবিমুখতা ও অনাচার দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি করে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় জাগতিক প্রশান্তির ব্যত্যয় ঘটে এবং ইবাদত-বন্দেগীর মনোযোগ ও নিবেদন বিনষ্ট হয়ে আল্লাহ্ পাক উনার নৈকট্য হাছিলে অন্তরায় সৃষ্টি হয়। তাই পাত্র নির্বাচনে পাত্রী পক্ষেরও সাবধান হওয়া জরুরী। পাত্র নির্বাচনে তার বংশ, শিষ্টাচার, স্বভাব-চরিত্র, শিক্ষা-দীক্ষা, ধর্মভীরুতা ইত্যাদি  যাচাই করা আবশ্যক। কুফুমান্য করা বিয়ের অন্যতম শর্ত। রূপলাবন্য, বংশ মর্যাদা, আর্থিক সংগতি, ধর্মপরায়ণতা এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে পাত্র ও পাত্রী পক্ষের সমকক্ষতা প্রয়োজন। তবে এ বিষয়গুলোর মধ্যে র্ধমপরায়ণতাকে প্রাধান্য দিতে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন।

        আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত ও মারিফাত হাসিলের সোপানগুলোর (মাকাম) অনুক্রম পর্যায়ক্রমে অতিক্রম করে নির্ধারিত মনজিলে মাকসুদ উনার চূড়ান্ত ধাপে উপনীত হবার উদগ্র বাসনায় কালামুল্লাহ্ শরীফ ও হাদীস শরীফ অনুসরণে মাদারজাদ ওলী, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইবাদত-বন্দেগী ও যিকির-ফিকিরে সহায়তা ও প্রেরণালাভের উদ্দেশ্যে মুবারক বংশের একজন নেককার পাত্রী খুঁজতে থাকেন বিয়ে করার মানসে।

 নিয়ামত ও কামালত-এর পরিপূর্ণতা দানের লক্ষ্যে মর্যাদাবান ওলীগণের নেক নিয়ত আল্লাহ্ পাক অবশ্যই পূরণ করে থাকেন। প্রভাকরদী গ্রামের এই মাদারজাদ ওলী সন্ধান পেয়ে যান আরেকজন মাদারজাদ ওলীর। উনার নিবাস প্রভাকরদীর অদূরে নুরানীগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) জেলার সোনারগাঁও থানাধীন, “বাড়ী মজলিশগ্রামের  একই উর্দ্ধতন পুরুষের মুবারক বংশজাত সাইয়্যিদ পরিবারে। নাম  মুবারক সাইয়্যিদাহ আহমদ জাহানারা বেগম আলাইহাস সালাম, আল্লাহ পাক উনার নির্ধারিত  মহান ব্যবস্থায় উনাকেই বিয়ে করেন হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি। পরিনয়সূত্রে আবদ্ধ এই দুই মাদারজাদ ওলী পরিপূর্ণ কামালত হাসিলের অভিন্ন প্রয়াসে ছিলেন পরস্পরে পরিপূরক।

 ক্রমান্বয়ে উভয়ের অভিন্ন উর্দ্ধতন মুবারক মহামিলন ঘটেছে আক্বরামুল আউয়ালীন ওয়াল আখেরীন, সাইয়্যিদুল বাশার, শাফিউল মুজনিবীন, হাবীবে আযম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে। (অসমাপ্ত)

আবা-৬৭

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৭

 


একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

 খালিছ আল্লাহ্ওয়ালা মানুষের নিরন্তর জিকির-ফিকির, ধ্যান-খেয়াল, মুরাকাবা-মুশাহিদা, ইবাদত-বন্দেগী পালনে কর্মক্ষেত্রের বিপত্তি ও জগৎ-সংসারের আবিলতা অন্তরায় সৃষ্টি করে থাকে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা, পরিবেশ-প্রতিবেশ অনুকূল না হলে তাঁদের একাগ্রতা ও মনোযোগে ব্যত্যয় ঘটে। একজনের যা ভালোলাগে, অন্যজনের তা মনঃপুত না হলে মানসিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। তাই দেখা যায়, যুগে যুগে ওলী আল্লাহ্গণ উনাদের জনপদের মানুষের নিষ্ঠুর আচরণে কষ্ট পেয়েছেন, অনেকে নিগৃহীত হয়েছেন। তবে আল্লাহ্ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিলের লক্ষ্যে অনিবার্য এই জিহাদে ওলী আল্লাহ্গণ প্রতিপক্ষকে পর্যুদস্ত করেই শুধু ক্ষান্ত থাকেননি, আল্লাহ্ পাক উনার মুহব্বত ও মারিফাত হাছিলের একমাত্র মুবারক মাধ্যম হজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদিস শরীফ উনার বাণী অনুসরণে তারা নিজ নফসের সাথে জ্বিহাদকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। সকল যুগেই আল্লাহ্ পাক উনার মাহবুব বান্দাদের সংখ্যা কম থাকায় এই উভয়বিধ জিহাদই কামিয়াবী অর্জনের নিয়ামক শক্তি হিসেবে ধার্য হয়েছে। জীবিকা অর্জনের সকল ক্ষেত্র ও স্তরে বিশেষতঃ চাকরি ক্ষেত্রের প্রতিকূল অবস্থা আল্লাহ্ ওয়ালাগণের মনঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় কর্তৃপক্ষের অসংযত আচরণ, পারিপার্শ্বিক অনাচার, নিয়মতান্ত্রিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ইত্যাদি বহুবিধ অনভিপ্রেত কারণে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ বিষময় হয়ে ওঠে। এতে দেশ ও দশের উদ্দিষ্ট কল্যাণ নস্যাৎ হয় এবং সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষের অভিযাত্রা বাধাগ্রস্থ হয়। নৈতিক অবক্ষয়ের একই ধারাবাহিকতায় কর্মক্ষেত্রের বৈরী পরিবেশ স্বাধীনচেতা হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহ উনাকে দুঃখিত ও ক্ষুব্ধ করে তোলে। একসময়ে তিনি মনে মনে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। নীতি ও রীতির প্রশ্নে আবাল্য স্বাধীন এবং মাদারজাদ এই ওলীআল্লাহ উনার উপরস্থদের সাথে বচসা কখনো তীব্র থেকে তীব্রতর  হয়ে ওঠে। কর্তৃপক্ষের সাথে মতবিরোধের চরম পর্যায়ে তিনি ছুটিতে থাকা শুরু করেন। এভাবে সাকুল্য ছুটিভোগের পরিমান হয় দীর্ঘতর। এতে দুনিয়াদার কর্তৃপক্ষ তাঁর প্রতি  বিরূপ হয়ে যায়। প্রকৃত দ্বীনদার ও দুনিয়াদারদের মধ্যে প্রচলিত সাংঘর্ষিক দ্বন্দ্বে তাঁর অজ্ঞ কর্তৃপক্ষের নাখোশ হয়ে ওঠা অস্বাভাবিক ছিলনা। এমন অবস্থায়, অফিসের কাজে বহাল থেকে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব না হওয়ায় এবং সর্বপরি আল্লাহ্পাক উনার ধ্যান-খেয়াল ও মুহব্বতে অনুক্ষণ মশগুল থাকার প্রয়োজনে পরিবেশ অবাঞ্ছিত হওয়ায় চাকুরীর প্রতি তাঁর প্রচন্ড অনীহা ও ঘৃনা জন্মে। এরূপ অবস্থা বিরাজমান ছিল দার্জিলিং, আসাম, কলকাতা, রাজশাহী, বগুড়া এবং ঢাকায়, অর্থাৎ সকল কর্মক্ষেত্রেই। এটাই তো স্বাভাবিক নিয়ম যে, আল্লাহ্ পাক উনার নিগূঢ় নৈকট্যলাভের প্রতিবন্ধক সামান্যতম ত্রুটি বিচ্যুতিকেও ওলী আল্লাহ্গণ ঘৃনার চোখে দেখবেন এবং বৈরী পরিবেশ পরিহার করে নিজেদেরকে হেফাজতে রাখবেন। অবশেষে মহান আল্লাহ পাক-এর অবধারিত ইচ্ছায় কুতুবুজ্জামান, আরিফবিল্লাহ, আওলাদে রাসূল, হযরতুল আল্লামা, শাহ্ সূফী সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান, আল হাসানী, ওয়াল হুসাইনী, ওয়াল কুরাঈশী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সর্বশেষ ঢাকার কর্মস্থল থেকে স্বেচ্ছায় চাকুরী ইস্তেফা দিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির আবিলতা থেকে নিজেকে মুক্ত করেন।

        চাকুরী ছেড়ে দিয়ে এখন তিনি স্বাধীন। ফেলে আসা চাকুরী জীবনের আনন্দ-বেদনা ঘেরা স্মৃতিরা উনাকে আর আকর্ষিত করেনা। আল্লাহ্ পাক সদয় হলে হালাল জীবিকা অর্জনের জন্য হয়তো ভিন্ন একটা পথ বেছে নিতে হবে। তবে এখন জাগতিক সকল আবিলতা থেকে তাঁর অখন্ড অবসর। এমন নিরঙ্কুশ অবসরে কেবল আল্লাহ পাক উনার প্রেম সাগরে নিমজ্জিত হওয়া, আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মারিফাত ও মুহব্বতে অবিরাম মশগুল থাকা, অসীমের আকর্ষণ তাঁকে এখন ব্যাকুল করে তোলে। ইবাদত-বন্দেগী, জিকির-ফিকির, মোরাকাবা-মোশাহিদা ও মহান আল্লাহ্ পাক-এর ধ্যান-খেয়ালের নিবিষ্টতা তাঁকে কেবলই তন্ময়তা এনে দেয়। প্রাণের আকুতি, এ তন্ময়তার আবেশ কখনো যেনো ভেঙ্গে না যায়। এযেনো নিগূঢ়ভাবে গারে হেরায় সাইয়্যিদুল আলম, ইমামুন নাবিয়্যীন, সরদারে দোজাঁহা, হাবীবে আযম, সাহেবে লাওলাক, দলীলে কাবায়ে মাকসুদ, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক আল্লাহ পাককে অনুভবের অনুসরণে এক উদ্বেলিত ও নিরন্তর প্রয়াস। (অসমাপ্ত)

আবা-৬৬

 

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৬


 

একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

 পিতা-মাতা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন অনেক আগেই। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। ভাইয়েরা কর্মব্যস্ত। প্রাথমিক জীবন সংগ্রামে বিজয়ী দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন স্বাধীন মননের এই মহান ব্যক্তিত্ব এখন মুক্ত বিহঙ্গ। অন্তরের গভীরে লালিত অপার যন্ত্রণা সম্ভার, বেদনা-বিমুগ্ধ শানিত অনুভূতি, দুর্নিবার অনুসন্ধিৎসা এবং অসীমের আকর্ষণ উনাকে এবার ঘরছাড়া করে দেয়। জীবনের সব কাজই আয়াসসাধ্য। তবু কত বিচিত্র আয়োজন! তবে সবার আগে এবার কর্মজীবন শুরুর পালা।

 

 কর্মজীবন-

দুনিয়ার প্রতি পরিপূর্ণরূপে বিরাগভাজন হয়েই বুযুর্গ ব্যক্তিগণ আল্লাহ্ পাক-এর নৈকট্যলাভে সমর্থ হয়ে থাকেন। দুনিয়ার তুচ্ছ হলাহল, ক্ষণস্থায়ী আকর্ষন উনাদেরকে পরওয়ার দিগার-এর নৈকট্যলাভে ব্যত্যয় ঘটাতে পারেনা। জীবন, জীবনেরই জন্য বহুবিধ কর্মের সমাহার। সকল কর্মতৎপরতা অনাবিল এবং আল্লাহ্মুখী না হলে মানুষ কোপানলগ্রস্থ হয়ে পড়ে। নির্ধারিত আয়ুষ্কালে জীবনধারণের  প্রয়োজনে সকল মানুষকেই অবধারিতভাবে হালাল উপার্জনে কোশেশ করতে হয়। প্রয়োজানাপাত রুটি-রুজি অর্জনে ইবাদত-বন্দেগীর অনুকূল বিভিন্ন উছীলা ও বৃত্তিতে আওলিয়া-ই-কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে সম্পৃক্ত হতে হয়েছে। আখিরাতের কামিয়াব যাত্রী হিসেবে এই কর্ম  সম্পৃক্ততা উনাদের কোন ক্ষতি সাধন করেনি। বরং উনাদের শরীয়ত সম্মত আত্মনির্ভরশীলতা, দুনিয়া বিমুখ  মানসিকতা লালনে একান্ত সহায়ক হয়েছে। জীবৎকালে জগৎ-সংসারে প্রবৃত্তিগত আচরণ, বিচরণ, পানাহার,  লেনদেন এবং পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন মানুষকে বাধ্য ও অভ্যস্ত করেছেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -উনার সুন্নাত অনুসরণে অনিবার্য এই অভ্যস্ততার সদ্ব্যবহারে নশ্বর প্রথিবীর প্রতি অনাসক্ত থেকে চিরস্থায়ী আবাসের (আখিরাত) দিকে মনোযোগী হতে এবং আত্মোপলব্ধি জাগ্রত করতে আল্লাহ্ পাক মানুষকে আদেশ দিয়েছেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়ার গুরুত্ব বুঝাতে বলেছেন, দুনিয়া হলো আখিরাতের কর্ষণক্ষেত্র। প্রজ্ঞাবান মানুষের (ওলীআল্লাহ্) দুনিয়াবী জিন্দেগীর প্রতিটি পদক্ষেপেই মহামূল্যবান। আখিরাতের যাত্রী হিসেবে দুনিয়ায় প্রস্তুতিমূলক ক্ষণস্থায়ী অবস্থানে  জীবনধারণ ও যাপনের অবশ্যম্ভাবী প্রয়োজনে মানুষের হালাল পেশায় নিয়োজিত হওয়া অত্যাবশ্যক।

উপরে আলোচিত শরীয়তের আবশ্যিক বিধান অনুসরণে হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি বৈধ পেশায় নিয়োজিত হতে ব্রতী হন। পরিবারে ঐ সময়ে বিদ্যমান আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী অত্যাবশ্যকীয় না হলেও প্রত্যয়ী ব্যক্তিত্ব হিসেবে আত্মনির্ভরশীল হবার মানসে তিনি চাকুরী করতে মনস্থ করেন।  প্রেক্ষিত অবস্থায় তিনি  চাকুরীতে যোগদান করেন। উনার প্রথম কর্মস্থল হয় দার্জীলিং এ। সেখানে তিনি কর্মরত থাকেন অনেকদিন। দায়িত্ব পালনের অবসরে আল্লাহ্ পাক-এর ধ্যান-খেয়াল, জিকির-ফিকির  ও ইবাদত-বন্দেগীতে নিরন্তর তিনি মশগুল থাকেন। বিয়ে করেননি তখনো। কোন  পিছুটান নেই। শুধুই আল্লাহ্ পাক-এর নিগূঢ় নৈকট্য তালাশে সামনে এগিয়ে যাওয়া। কি যেনো অব্যক্ত বিরহ বেদনা কেবলই অন্তরের মাঝে গুমরে গুমরে কেঁদে  ওঠে। ইচ্ছে হলে কখনো কখনো প্রভাকরদী গ্রামের বাড়ী আসেন, বেঁচে থাকা স্বজনদের সাক্ষাতে এবং পিতা-মাতা ও মোবারক বংশের উর্দ্ধানুক্রমের সকল আউলিয়া-ই-কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মাজার শরীফ জিয়ারতে। আবার চলে যান দার্জিলিং-এর কর্মস্থলে। এভাবেই সময়গুলো মহাকালের গুহায় ঠাই নিতে থাকে। দার্জিলিং থেকে এক সময়ে বদলি হয়ে আসেন আসামের করিমগঞ্জ মিউনিসিপাল অফিসে। সেখানেও থাকেন বেশ কিছুদিন। এক পর্যায়ে করিমগঞ্জ থেকে বদলি  হয়ে আসেন রাজশাহী। রাজশাহীতেও থাকতে হয় অনেকদিন। এখানে দেখা হয় বড় ভাই হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ মুহম্মদ সাদুদুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে দীর্ঘদিন পর। বড় ভাই রাজশাহীতে কাননুগু ছিলেন। বড় ভাই-এর উপদেশে দীর্ঘ বিরতির পর তিনি আবার গ্রামের বাড়ী যান। চাকুরীতে যোগদানের পর ইতোমধ্যে প্রায় সাত বছর কেটে গেছে। এবার বাড়ী গিয়ে তিনি বিয়ে করেন। সময়কাল ১৯৩৬। রাজশাহী থেকে অতঃপর তিনি বদলি হয়ে আসেন বগুড়ায়। রাজশাহী-বগুড়া হাইওয়ে রোড সরাসরি উনারই তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়। সবশেষে বগুড়া থেকে বদলি হয়ে আসেন ঢাকায়। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকা শহরের কলতা বাজার-এর একটি ভাড়া বাসায় তিনি বসবাস করেন দীর্ঘকাল।           (অসমাপ্ত)

আবা-৬৫

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৫

 


একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান

পিতা-মাতার বুযুর্গী ও বিলাদত-

 পূর্বেই বলা হয়েছে, কুতুবুজ্জামান, আরিফবিল্লাহ্, আওলাদে রাসূল, হযরতুল আল্লামা শাহ্ সূফী আলহাজ্ব সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি - উনার পিতা-মাতা উভয়েই ছিলেন আল্লাহ্ পাক- উনার খাছ ওলী। দুজনেরই মোবারক বংশানুক্রম, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার সাথে সংযুক্ত হয়েছে। সিরাত-সূরত, ইবাদত-বন্দেগী, আমল-আখলাক, যিকির-ফিকির, দান-খয়রাত, ধৈর্যশীলতা, উদারতা, বদান্যতা, সহানুভূতি, সুন্নাত অনুসরণে নিরবচ্ছিন্ন নিষ্ঠা ইত্যাদি অতুলনীয় গুণাবলীতে তাঁরা ছিলেন বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। স্বভাব সঞ্জাত এসব গুণাবলীর উৎকর্ষতায় উভয়েই হয়ে উঠেছিলেন সকলের অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। এমন বুযুর্গ পিতা-মাতার ঘরেই তিনি প্রভাকরদী গ্রামে ১৯০৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পরম পিতৃ-মাতৃ মমতায় এই মাদারজাদ ওলী, জন্মলগ্ন থেকেই দ্বীনের সহীহ্ সবকলাভে বড় হতে থাকেন। শিশুকালেই তাঁর মাধ্যমে অনেক কারামতের প্রকাশ ঘটিয়ে খাছ ওলীআল্লাহ্ হিসেবে আল্লাহ্ পাক তাঁর অনুপম মর্যাদা ও মর্তবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আলোচনার যথাস্থানে তাৎপর্যময় এসব কারামত সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে।

পিতা-মাতার ইন্তিকাল ও লালন-পালন-

        মাত্র পাঁচ বছর বয়স মোবারকে এই মহান ওলীআল্লাহ স্নেহময়ী আম্মা দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। মাতৃ বিরহের যাতনা বহনের ধৈর্য ও ক্ষমতা কোন শিশুরই থাকেনা। মমতাময় মাতৃ সান্নিধ্য হারিয়ে তিনিও অব্যক্ত বেদনায় দগ্ধ হতে থাকেন। কিন্তু করুণাময় আল্লাহ্ পাক তাঁর মনোনীত প্রিয় বান্দাদের সকল বিষয়কর্ম, মনোতুষ্টি ও মনোবেদনা ভিন্ন রূপান্তর প্রক্রিয়ায় ফায়সালা করে থাকেন। ভিন্ন পদ্ধতির এই রূপান্তরে বিশেষ নিয়ামত সম্ভারে সমৃদ্ধি দানের অনিবার্য প্রয়োজনে আম্মাকে হারানোর সীমাহীন যন্ত্রণা কাতরতায় দগ্ধ পাঁচ বছর বয়সের শিশু ওলী আল্লাহ মন ও মননকে পরনির্ভরশীল না করে আল্লাহ্ পাক আত্মপ্রত্যয়ী করে গড়ে তোলেন এবং দুনিয়া থেকে বিরাগ করে আখিরাতের দিকে ঝুঁকিয়ে (রুজু করে) দেন। শিশু বয়সের এই আত্মপ্রত্যয়, আত্মনিবেদন ও মুক্তমনন তাঁর স্বাধীন মনোবৃত্তি ও বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব গঠনে অনুকূল ভূমিকা পালন করে। আল্লাহ্ পাক- উনার নিগূঢ় নৈকট্যলাভে শাণিত অনুভূতি, গভীর আকুতি, নিরন্তর প্রয়াস, চিন্তামগ্ন পরিশীলিত নিবিষ্টতা, মুক্তমনন ও জাগ্রত বিবেকে সুন্নাত অনুসরণই একজন উম্মতের জন্য প্রাথমিক ও পরিণত সোপান হিসেবে ধার্য থাকায় শৈশবকালেই তাঁর মধ্যে আল্লাহ্ পাক এসব অমোঘ উপাদানের ভিত নির্মাণ করেছেন।

দুনিয়াবী কার্যাবলী এবং নশ্বর জীবনে মানুষের আচরণ ও বিচরণ আল্লাহ্ পাক নিয়মের অধীন করেছেন। তাই পার্থিব ও পারলৌকিক প্রয়োজনে লেন-দেন, ভাব বিনিময়, রুটি-রুজি অর্জন ও বন্টন, পরিবার প্রতিপালন, প্রতিকার ও পরিপোষকতামূলক আদান-প্রদান এবং সামগ্রিক কর্মতৎপরতায় মানুষ ব্যষ্টি ও সমষ্টির সাথে সম্পৃক্ত হতে বাধ্য হয়। সৃষ্টি পরিচালনায় এ বাধ্যতা আল্লাহ্ পাক- উনার ই প্রবর্তিত বিধান। অবধারিত এই বিধানে আল্লাহ্ পাক হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান (রঃ)- উনার আম্মার ইন্তিকালের পর তাঁকে তাঁর বড় বোন হযরত সাইয়্যিদা রহিমা খাতুন (রঃ) নিকট লালন-পালনের ব্যবস্থা করেন। আম্মাকে হারানোর দুঃসহ বেদনা পরম স্নেহ ও আদরে তাঁকে ভুলিয়ে দিতে থাকেন এই মমতাময়ী বড় বোন।

শিক্ষালাভ-

        আল্লাহ্ পাক- উনার পূর্ব নির্ধারিত ব্যবস্থায় এই বড় বোনই ইল্ম হাছিলে উনাকে সহায়তা দান করেন এবং মনোযোগী করে তোলেন। আল্লাহ্ পাক- উনার মহব্বত ও মারিফাত অর্জনের নিয়ামক উপাদান ইল্ম অর্জনের জন্য উনাকে শিশু বয়সেই প্রভাকরদী গ্রামের বাড়ীর মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেয়া হয়। এখানকার শিক্ষা শেষে তিনি বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জিলাধীন সোনারগাঁওস্থ বুরুন্দী মাদ্রাসায় ভর্তি হন। প্রাচীন এই দ্বীনি প্রতিষ্ঠানটি এখনো বহাল ও চালু আছে। এখানে তিনি ইল্ম- উনার বিভিন্ন শাখায় পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা লাভ করেন। এছাড়া অন্যান্য দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগ্রহণসহ ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন বরেন্য আলিম- উনার নিকট তিনি ইল্ম হাছিল করেন। সর্বোপরি তিনি নিজ প্রচেষ্টায় ইল্ম অর্জনে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। জ্ঞানার্জনের পিপাসা ছিল তাঁর মজ্জাগত। দ্বীনি ইল্ম হাছিলের পর দৃঢ় মনোবল ও অদম্য আগ্রহে তিনি অন্যান্য সাধারণ শিক্ষায় ব্রতী হন। ১৯৩০ সালে তিনি সসম্মানে এনট্রান্স পাশ করেন। ঢাকা ইনঞ্জিনিয়ারিং স্কুল থেকে ১৯৩৫ সালে তিনি সাব ওভারশীয়ার পরীক্ষায় পাশ করেন। এসময়ে তিনি প্রভাকরদী গ্রামের বাড়ীতে আসেন। এ বছরই উনার আব্বা ইন্তিকাল করেন। একই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৩৭ সালে তিনি ওভারশীয়ার পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। (অসমাপ্ত)

আবা-৬৪

 

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৪

 


একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান   -


সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুলমুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ভাগ্যবান তার মাতার গর্ভ থেকেই ভাগ্যবান। হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলাউদ্দিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক অধস্তন পঞ্চম পুরুষ কুতুবুজ্জামান, আরিফবিল্লাহ্, আওলাদে রাসূল, হযরতুল আল্লামা শাহ্সূফী আলহাজ্ব সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি , ১৯০৮ খ্রীষ্টাব্দে প্রভাকরদী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন । উনার জন্মের পূর্ব থেকেই এ পূণ্য ভূমিকে মহান আল্লাহ্পাক উনার আহকাম ও হুজুর পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সুন্নত পালনের উপযোগী করে প্রস্তুত রেখে ছিলেন ।

বংশ পরিচিতি বিস্তারিত আলোচনায় যাবার আগে হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলাউদ্দিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার অধস্তন পুরুষানুক্রম ও বংশ পরিচয় জেনে নেয়া আমরা অত্যাবশ্যক বলে মনে করি । সুদূর আরব থেকে আজমীর শরীফে আগত ঐ যামানায় আল্লাহ্পাক উনার লক্ষ্যস্থল হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আবূ বকর মুজাদ্দিদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক বংশের নিম্নস্থিত সকলেই যে বংশগত ভাবে সাইয়্যিদউপাধিতে ভূষিত হবেন, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা ।

 

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলাউদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার অধস্তন পুরুষানুক্রম নিম্নরূপঃ-

 

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদআলাউদ্দিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার পুত্র,

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মালাউদ্দিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি ।

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদমালাউদ্দিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার পুত্র,

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদএলাহীবখ্শ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ।

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদএলাহীবখ্শ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার পুত্র,

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদওয়ালীবখ্শ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ।

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ ওয়ালী বখ্শ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ১৯৩৫সালেইন্তিকালকরেন।

 

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ ওয়ালী বখ্শ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার পাঁচপুত্র।

যথাক্রমে-

হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ মুহম্মদ হাবিবুরর হমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি ,

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ সাদুদুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি ,

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল মান্নাফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ,

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আসাদ্দাজ্জামান রহমাতুল্লাহি আলাইহি ,

কুতুবুজ্জামান আরিফবিল্লাহ হযরতুল আল্লামা শাহ্সূফী আলহাজ্ব সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি,

এবং

২ (দুই) কন্যা।

 

কুতুবুজ্জামান, হযরতুল আল্লামা শাহ্সূফী আলহাজ্ব সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান (রঃ)-এর বংশধর গণের পরিচিতি নিম্নে উল্লেখ করা হলো-     

কুতুবুজ্জামান, আরিফবিল্লাহ্, আওলাদে রাসূল, হযরতুল আল্লামা শাহ্সূফী আলহাজ্ব সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আল-হাসানী, ওয়াল-হুসাইনী, ওয়ালকুরাঈশী রহমাতুল্লাহি আলাইহি - উনার পুত্র যথাক্রমে-

(ক) হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আনিসুর রহমান,

(খ) হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ হাফিজুররহমান, 

(গ) বাতিলের আতঙ্ক ও হক্ব-এর অতন্দ্র প্রহরী মাসিক আল-বাইয়্যিনাত পত্রিকা এবং ঢাকা রাজারবাগস্থ মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ (মাদ্রাসা) এর প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক, আওলাদেরাসূল,পীরে কামিল, মুর্শিদে মুকাম্মিল, মফতিয়্যূল আযম, তাজুল মুফাস্সিরীন, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, ফখরুল উলামা ওয়াল ফোক্বাহা ওয়াল মাশায়েখ, উস্তাজুল মুহাদ্দিসীন ওয়াল মুফাস্সিরীন ওয়াল আসাতেযা, বাহরুল উলুম ওয়াল হিকাম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল মুনাজিরীন, সুলতানুল ওয়ায়েজীন, লিসানুল-উম্মত, মুহিয়্যুস্সুন্নাহ, মাহিয়্যুলবিদ্য়াত, মাহতাবে-তরিক্বত, জামিউল-কামালত-ওয়াল-বেলায়েত, শায়খুশ-শুয়ুখওয়াল মাশায়েখ, সুলতানুল-আরেফীন, কুতুবুল-আলম, গাউসুল-আযম, দাস্তগীর, কাইউমুজ্জামান, সাইয়্যিদুল-আউলিয়া, আফজালুল-আউলিয়া, আশেকুরাসূলিল্লাহ্, আমিরুশ-শরীয়ত-ওয়া-রাহনুমায়ে-তরিক্বত, ইমামুস-সিদ্দীকীন, ইমামুল-আইম্মা, সুলতানুন-নাছির, মুজাদ্দিদুজ্জামান, হাবিবুল্লাহ্, হযরত মাওলানা শাহ্সূফী শায়খ সাইয়্যিদ মুহম্মদ দিল্লুর রহমান আল-হাসানী, ওয়াল-হুসাইনী, ওয়াল-কুরাঈশী আলাইহিস সালাম, পীরসাহেবক্বিবলা, রাজারবাগ, ঢাকা,

 

(ঘ) হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ জিল্লুর রহমান,

(ঙ) হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মফিজুর রহমান এবং

(চ) ৪ (চার) কন্যা। (অসমাপ্ত)

আবা-৬৩

 

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৩

 


আমাদের সম্মানিত দাদা হুজুর ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 হিদায়েতের প্রণালী ও ব্যাপ্তি        হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলাউদ্দিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি সমাজ থেকে অন্যায়, অবিচার ও জুলুমের মূলোৎ পাটন করেন । তাঁর অমায়িক ব্যবহার, মধুর আচরণ, তেজোদ্দীপ্ত ব্যক্তিত্ব, জ্ঞানগর্ভনসীহত, নিরবচ্ছিন্ন তালীম-তালক্বীন এবং সর্বপরি তাঁর বেলায়েত ও কামালতের প্রভাবে দলে দলে মানুষ ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হতে থাকে । তাসাউফ চর্চায় পরিপূর্ণ রূপে অভ্যস্ত হয়ে মানুষ দুনিয়া তরক করে আখিরাতকে প্রাধান্য দিতে আগ্রহী হয়ে উঠে । তাঁরই মুবারক উসীলায় ইসলাম বিবর্জিত বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুরপাক  ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ্পাক- উনার সন্তুষ্টি হাসিলে সক্ষম হয় । তাঁর মুবারক সোহবতে এসে মানুষ আল্লাহ্পাক- উনার নৈকট্য প্রাপ্ত ওলী হিসেবে কবুল হয়ে হিদায়েতের কাজে আঞ্জাম দিতে থাকে । এই হিদায়েতের প্রভাব এতো ব্যাপক ও সুদূর প্রসারী হয় যে, তা প্রভাকরদীর সীমানা ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশে বিস্তার লাভ করে।সমাজে সাম্য, সম্প্রীতি ও ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠিত হয় । তাঁর তালীম-তালক্বীন ও ফয়েজে মানুষের ঈমান নবায়ন হয়, আক্বীদার বুনিয়াদ বিশুদ্ধ ও দৃঢ় হয় এবং নববী আদর্শে মানুষ ইসলাম পালন ও আমলে অভ্যস্ত হয়ে উঠে।

মাজার শরীফ উনার ফায়েজ তাওয়াজ্জু মুবারক        -

প্রভারকরদী গ্রামের যে স্থানে হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদআলাউদ্দিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার হিদায়েতের কেন্দ্রস্থল (খানকাশরীফ),

 সে স্থানের মাজার শরীফেই শায়িত আছেন উনার ছেলে হযরত সাইয়্যিদ মালাউদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং  অন্যান্য আউলিয়া-ই-কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম । চারিদিকে গাছপালা পরিবেষ্টিত রহমতের কেন্দ্রস্থল এ মাজার শরীফের বাইরের পরিবেশ দেখে এবং মাজার জিয়ারত করে অন্তরের গভীরে যে শান্তি অনুভূত হয়, তা বাস্তব দর্শনকারী ও জিয়ারত কারী ছাড়া অন্য কারো উপলব্ধিতে আসবে না।অসংখ্য প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, দিন শেষে রাত নেমে এলে মাজার শরীফের মধ্য ভাগ থেকে প্রলম্বিত এক নূর বের হয় এবং সুদূর  আসমান পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত হয়। নেক মাকসুদ হাসিলের জন্য এ মাজারকে উসীলা করে আল্লাহ্পাক- উনার কাছে দোয়া করলে তা নির্ঘাত কবুল হয়। দুঃখ-বেদনা ভারাক্রান্ত মানুষ মাজারের সান্নিধ্যে এসে অনাবিল প্রশান্তি লাভ করে। মানুষ ছাড়াও অনেক জ্বীন মাজার শরীফের খিদমতে নিয়োজিত আছে । মাজার সংলগ্ন এলাকায় কেউ বেয়াদবী অথবা খারাপ ধারণা পোষণ করলে সঙ্গে সঙ্গে তার শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা দেখা দেয় । খালিছ তওবা করে মাজারের খিদমত ও জিয়ারত না করলে তাকে সীমাহীন দুর্গতির শিকার হতে হয়। এ ধরনের বহু ঘটনা দেখেছেন এলাকাবাসী। এ সব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন আমাদের আলোচ্য কুতুবুজ্জামান, আরিফবিল্লাহ্, আওলাদেরাসূল, হযরতুল আল্লামা শাহ্সূফী আলহাজ্ব সাইয়্যিদ মুহম্মদমু খলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি আলহাসানী, ওয়ালহুসাঈনী, ওয়ালকুরাঈশী।সোনারগাঁও- এর মাজার শরীফে শায়িত হযরত সাইয়্যিদ আলাউদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ সালাহুদ্দিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং অন্যান্য আউলিয়া-ই-কিরাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহিম। প্রতি নিয়ত রূহানী ভাবে প্রভাকরদীর মাজার শরীফে এসে হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মালা উদ্দিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং সেখানে শায়িত অন্যান্য আউলিয়া-ই-কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনার সাথে সাক্ষাত করেন এবং আলাপ আলোচনায় মশগুল হন । উনাদের মুবারক সাক্ষাত ও আলাপচারিতা প্রত্যক্ষ করেছেন কুতুবুজ্জামান, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি । এ সব কথা তিনি নিজ জবান মুবারকে বলেছেন। মাদারজাদ ওলী হবার জন্য বংশের প্রভাব      হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মালা উদ্দিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বেলায়েত ও কামালতের প্রভাব এতো ব্যাপক যে, আজ অবধি উনার মাজার শরীফ থেকে নিয়মিত হিদায়েতের নূর বিচ্ছুরিত হচ্ছে । ইচ্ছা-অনিচ্ছায় সে নিয়ামতের হিস্সা লাভে মানুষ ধন্য হচ্ছে । আজ থেকে তিনশ বছর আগে প্রভাকরদীর পূণ্য ভূমিতে ইসলাম ধর্ম আবাদের যে ভিত রচিত হয়েছিল, তা আজ ও বহমান। বংশ পরম্পরায় এমন মহান ওলীর অধস্তন সন্তান গণ যে মাদারজাদ ওলী হবেন এবং মিথ্যাকে দূরীভূত করে সমাজে সত্য প্রতিষ্ঠা করবেন, এটাই তো আল্লাহ্পাক উনার অমোঘ বিধান। (অসমাপ্ত) 

আবা-৬২

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-২

 


ওলীয়েমাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশফ ওয়াল কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইসমে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদুর রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি- উনার  স্মরণে-

একজনকুতুবুজ্জামান-এরদিদারেমাওলারদিকেপ্রস্থান

জন্ম  মুবারক বংশ পরিচিতিঃ

কুতুবুজ্জামান,আরিফবিল্লাহ,আওলাদুর রসূল, হযরতুল আল্লামা শাহ্ছূফী আলহাজ্ব সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আল-হাসানী, ওয়াল-হুসাইনী, ওয়াল-কুরাইশী রহমতুল্লাহি আলাইহি হিদায়েতের মশাল নিয়ে ১১০৮ ঈসায়ী শনে বর্তমান নুরানীগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) জেলার আড়াই হাজার থানার অন্তর্গত প্রভাকরদী গ্রামের পূণ্য ভুমিতে জন্ম গ্রহণ করেন।  উনার  পিতা-মাতা উভয়েই ছিলেন আল্লাহ্পাক-উনার খাছ অলী। মুবারক সিলসিলা পরস্পরায় পিতা-মাতর দিক থেকে তিনি ছিলেন যথাক্রমে হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম, ওয়াল কুরাঈশী এ কারণেই তিনি ছিলেন আওলদুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহপাক-উনার লক্ষ্যস্থল এমন মাহবুব ওলীর কামালত ও বুযুর্গী উপলদ্ধীর প্রয়োজনে উনার বংশ পরিচয় ও পুর্ব পুরুষগণকে জানা অপরিহার্য। এ জন্য আমাদেরকে অনেক পেছনে যেতে হবে।

অতীত ইতিহাস পথভ্রষ্ট ও গোমরাহীতে নিমিজ্জত মানুষকে হিদায়েত দানের লক্ষ্যে সুলতানুল হিন্দ, হাবীবুল্লাহ, গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী আজমেরী সানজারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিভিন্ন দেশ হিজরত ও সফরের শেষ পর্যায়ে আল্লাহ্পাক-এর নির্দেশে ৫৬১ হিজরীতে আজমীর শরীফ আসেন । তাঁরই অন্তরঙ্গ সঙ্গী হিসেবে ঐ যামানায় আল্লাহ্পাক-এর খাছ ওলী হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আবূ বকর মুজাদ্দিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি একই লক্ষ্যে আরব থেকে আজমীর শরীফ তাশরীফ আনেন । ইসলাম প্রচারের কাজে নিমগ্ন হয়ে তিনি আজমীর শরীফে থেকে যান এবং সেখানেই ইন্তিকাল করেন। উনারই অধস্তন পুরুষ হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলাউদ্দিন রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ সালাহ উদ্দিন রহমতুল্লাহি আলাইহি এগারশত হিজরীতে শেষার্ধে হিদায়েতের আলো নিয়ে চট্টগ্রাম আগমণ করেন। তাঁরা ছিলেন দুই ভাই । সেখানে সাময়িক অবস্থানের পর উনারা দুজনেই বর্তমান নুরানীগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) জেলার সোনারগাঁও আসেন । হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ সালাহউদ্দিন রহমতুল্লাহি আলাইহি সোনারগাঁও এ অবস্থান করেন এবং ইন্তিকাল করেন। হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলাউদ্দিন রহমতুল্লাহি আলাইহি সোনারগাঁও এসে অল্প কিছুদিন অবস্থানের পর একই জেলার আড়াই হাজার থানাধীন যেজন পদে হিদায়েতের কেন্দ্রভূমিগড়ে তোলেন, তার বর্তমান নাম প্রভাকরদী শরীফ।

সে সময়ে ধর্মীয় পরিবেশ-

হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলউদ্দিন রহমতুল্লাহি আলাইহি- উনার আগমণের পুর্বে প্রভাকরদী গ্রাম সহ বিস্তীর্ণ এলাকা ছিল হিদায়েত বিবর্জিত।এ জন পদের মানুষ ছিল লক্ষ্য বিচ্যুত এবং অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত । বিদ্য়াত ও ইসলাম পরিপন্থী রসম-রেওয়াজ পালনে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল । মানুষের ইল্ম, প্রজ্ঞা ও সমঝের অভাবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন,  হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার সুন্নত মুবারক অবলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল । অনুভব ও উপলব্ধির শুন্যতা, সম্প্রতি ও শিষ্টাচারের অনুপস্থিতি, ন্যায় নীতি প্রতিপালনরে অন্যগ্রহ এবং মানুষের স্বেচ্ছাচারী জীবনাচরণে এ পূণ্যজন পদে রসরস মাটিতে ইসলাম ধর্ম আবাদের অনুকুল পরিবেশ ছিলেন।বিদ্য়াত পরিপূর্ণ ছিল মানুষের মন, মনন, আচারণ ও রিসালত পরিপন্থী ঈমান, আক্বিদা ও আমলে মানুষ গোমরাহীতে লিপ্ত হয়। সময়ের অতিক্রান্তিতে ইসলাম সম্পর্কে মানুষের ভ্রান্ত উপলব্ধি, নৈতিক অবক্ষয় ও বিরূপ জীবনা চরণে বিদ্য়াত জন্ম নেয়। অবশেষে মানুষ র্শিক ও কুফরীতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।

    আজ থেকে তিনশত বছর পূর্বে এরূপ তমসাচ্ছন্ন অবস্থা প্রভাকরদীতে ও বিদ্যমান ছিল।মানুষকে খালিছ হিদায়েত দানের উদ্দেশ্যে ঐ সময় আল্লাহপাক- উনার নির্দেশে হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলাউদ্দিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রভাকরদী তাশরীফ আনেন । তাঁর আগমণের সাথেই তিনি হিদায়েতের কাজ আরম্ভ করেন। (অসমাপ্ত)

 আবা-৬১