একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৬


 

একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

 পিতা-মাতা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন অনেক আগেই। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। ভাইয়েরা কর্মব্যস্ত। প্রাথমিক জীবন সংগ্রামে বিজয়ী দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন স্বাধীন মননের এই মহান ব্যক্তিত্ব এখন মুক্ত বিহঙ্গ। অন্তরের গভীরে লালিত অপার যন্ত্রণা সম্ভার, বেদনা-বিমুগ্ধ শানিত অনুভূতি, দুর্নিবার অনুসন্ধিৎসা এবং অসীমের আকর্ষণ উনাকে এবার ঘরছাড়া করে দেয়। জীবনের সব কাজই আয়াসসাধ্য। তবু কত বিচিত্র আয়োজন! তবে সবার আগে এবার কর্মজীবন শুরুর পালা।

 

 কর্মজীবন-

দুনিয়ার প্রতি পরিপূর্ণরূপে বিরাগভাজন হয়েই বুযুর্গ ব্যক্তিগণ আল্লাহ্ পাক-এর নৈকট্যলাভে সমর্থ হয়ে থাকেন। দুনিয়ার তুচ্ছ হলাহল, ক্ষণস্থায়ী আকর্ষন উনাদেরকে পরওয়ার দিগার-এর নৈকট্যলাভে ব্যত্যয় ঘটাতে পারেনা। জীবন, জীবনেরই জন্য বহুবিধ কর্মের সমাহার। সকল কর্মতৎপরতা অনাবিল এবং আল্লাহ্মুখী না হলে মানুষ কোপানলগ্রস্থ হয়ে পড়ে। নির্ধারিত আয়ুষ্কালে জীবনধারণের  প্রয়োজনে সকল মানুষকেই অবধারিতভাবে হালাল উপার্জনে কোশেশ করতে হয়। প্রয়োজানাপাত রুটি-রুজি অর্জনে ইবাদত-বন্দেগীর অনুকূল বিভিন্ন উছীলা ও বৃত্তিতে আওলিয়া-ই-কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে সম্পৃক্ত হতে হয়েছে। আখিরাতের কামিয়াব যাত্রী হিসেবে এই কর্ম  সম্পৃক্ততা উনাদের কোন ক্ষতি সাধন করেনি। বরং উনাদের শরীয়ত সম্মত আত্মনির্ভরশীলতা, দুনিয়া বিমুখ  মানসিকতা লালনে একান্ত সহায়ক হয়েছে। জীবৎকালে জগৎ-সংসারে প্রবৃত্তিগত আচরণ, বিচরণ, পানাহার,  লেনদেন এবং পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন মানুষকে বাধ্য ও অভ্যস্ত করেছেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -উনার সুন্নাত অনুসরণে অনিবার্য এই অভ্যস্ততার সদ্ব্যবহারে নশ্বর প্রথিবীর প্রতি অনাসক্ত থেকে চিরস্থায়ী আবাসের (আখিরাত) দিকে মনোযোগী হতে এবং আত্মোপলব্ধি জাগ্রত করতে আল্লাহ্ পাক মানুষকে আদেশ দিয়েছেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়ার গুরুত্ব বুঝাতে বলেছেন, দুনিয়া হলো আখিরাতের কর্ষণক্ষেত্র। প্রজ্ঞাবান মানুষের (ওলীআল্লাহ্) দুনিয়াবী জিন্দেগীর প্রতিটি পদক্ষেপেই মহামূল্যবান। আখিরাতের যাত্রী হিসেবে দুনিয়ায় প্রস্তুতিমূলক ক্ষণস্থায়ী অবস্থানে  জীবনধারণ ও যাপনের অবশ্যম্ভাবী প্রয়োজনে মানুষের হালাল পেশায় নিয়োজিত হওয়া অত্যাবশ্যক।

উপরে আলোচিত শরীয়তের আবশ্যিক বিধান অনুসরণে হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি বৈধ পেশায় নিয়োজিত হতে ব্রতী হন। পরিবারে ঐ সময়ে বিদ্যমান আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী অত্যাবশ্যকীয় না হলেও প্রত্যয়ী ব্যক্তিত্ব হিসেবে আত্মনির্ভরশীল হবার মানসে তিনি চাকুরী করতে মনস্থ করেন।  প্রেক্ষিত অবস্থায় তিনি  চাকুরীতে যোগদান করেন। উনার প্রথম কর্মস্থল হয় দার্জীলিং এ। সেখানে তিনি কর্মরত থাকেন অনেকদিন। দায়িত্ব পালনের অবসরে আল্লাহ্ পাক-এর ধ্যান-খেয়াল, জিকির-ফিকির  ও ইবাদত-বন্দেগীতে নিরন্তর তিনি মশগুল থাকেন। বিয়ে করেননি তখনো। কোন  পিছুটান নেই। শুধুই আল্লাহ্ পাক-এর নিগূঢ় নৈকট্য তালাশে সামনে এগিয়ে যাওয়া। কি যেনো অব্যক্ত বিরহ বেদনা কেবলই অন্তরের মাঝে গুমরে গুমরে কেঁদে  ওঠে। ইচ্ছে হলে কখনো কখনো প্রভাকরদী গ্রামের বাড়ী আসেন, বেঁচে থাকা স্বজনদের সাক্ষাতে এবং পিতা-মাতা ও মোবারক বংশের উর্দ্ধানুক্রমের সকল আউলিয়া-ই-কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মাজার শরীফ জিয়ারতে। আবার চলে যান দার্জিলিং-এর কর্মস্থলে। এভাবেই সময়গুলো মহাকালের গুহায় ঠাই নিতে থাকে। দার্জিলিং থেকে এক সময়ে বদলি হয়ে আসেন আসামের করিমগঞ্জ মিউনিসিপাল অফিসে। সেখানেও থাকেন বেশ কিছুদিন। এক পর্যায়ে করিমগঞ্জ থেকে বদলি  হয়ে আসেন রাজশাহী। রাজশাহীতেও থাকতে হয় অনেকদিন। এখানে দেখা হয় বড় ভাই হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ মুহম্মদ সাদুদুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে দীর্ঘদিন পর। বড় ভাই রাজশাহীতে কাননুগু ছিলেন। বড় ভাই-এর উপদেশে দীর্ঘ বিরতির পর তিনি আবার গ্রামের বাড়ী যান। চাকুরীতে যোগদানের পর ইতোমধ্যে প্রায় সাত বছর কেটে গেছে। এবার বাড়ী গিয়ে তিনি বিয়ে করেন। সময়কাল ১৯৩৬। রাজশাহী থেকে অতঃপর তিনি বদলি হয়ে আসেন বগুড়ায়। রাজশাহী-বগুড়া হাইওয়ে রোড সরাসরি উনারই তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়। সবশেষে বগুড়া থেকে বদলি হয়ে আসেন ঢাকায়। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকা শহরের কলতা বাজার-এর একটি ভাড়া বাসায় তিনি বসবাস করেন দীর্ঘকাল।           (অসমাপ্ত)

আবা-৬৫

0 Comments: