জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফফীন-পর্ব-৪৪আমীরুল মু'মিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহ্ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম এবং সম্মানিত হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে চতুর্থতম সম্মানিত খলীফা। ইসলামী ইতিহাসে উনার খিলাফতকাল ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুবারক শানে অপবাদ লেপনে সচেষ্ট ইসলামবিদ্বেষী মহল তাদের খিলাফতবিরোধী মনোভাবকে চিত্রিত করতে এই সময়কে বেছে নিয়েছিল; যা তাদের লিখিত ইতিহাসে সুস্পষ্ট।
৩৫ হিজরী সনের পবিত্র হজ্জ সম্পাদিত হওয়ার কয়েক দিন পরেই পবিত্র ১৮ই যিলহজ্জ শরীফে মহাসম্মানিত মদীনা শরীফে আমীরুল মু'মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন, নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে মুনাফিকরা অন্যায়ভাবে শহীদ করে। এই জঘন্য কাজে সংশ্লিষ্ট মুনাফিকরা নিজেদেরকে বিচারের আওতামুক্ত রাখতে পুরো মদীনা শরীফ জুড়ে গণহারে কয়েকদিন ব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি করে রাখে। এককথায়, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদকারীদের যেন গ্রেফতার করা না যায়, সেজন্য মুনাফিকরা তাদের কর্তৃক সৃষ্ট বিশৃঙ্খলাকে আরো দীর্ঘায়িত করে। বলা হয়, মুনাফিকদের পরিচালিত বিশৃঙ্খলার দরুন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র রওযা শরীফ স্থাপন করা কয়েকদিন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
ইতিহাসের এই নাজুক পরিস্থিতিতে মুসলিম মিল্লাতকে সমূহ ফিতনা হতে রক্ষার জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ত্রাণকর্তাস্বরূপ আভির্ভূত হন। সম্মানিত হাদীছ শরীফ অনুযায়ী বিশিষ্ট হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুবারক অনুরোধে তিনি খিলাফত মুবারক উনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যা মূলত মুসলমানদের প্রতি উনার বিশেষ দয়া-ইহসান।
কায়িনাত জুড়ে রহমত-বরকতে পরিপূর্ণ মুবারক স্থানসমূহের মধ্যে পবিত্র মদীনা শরীফ সর্বশীর্ষে। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুনাফিকরা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার ইজ্জত-হুরমত বিনষ্টের অপচেষ্টা চালিয়েছে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা অতীব প্রয়োজন। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত খিলাফত উনার মুবারক দায়িত্ব গ্রহণ করতঃ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ইজাযত নিয়ে রাজধানী পবিত্র মদীনা শরীফ হতে কুফায় স্থানান্তর করেন। কিন্তু এ বিষয়টি ইসলামবিদ্বেষীদের মনঃপুত হয়নি।
ইসলামবিদ্বেষী তথাকথিত ঐতিহাসিকরা বলে যে, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ হতে রাজধানী স্থানান্তরিত করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার গুরুত্ব তাৎপর্য বিনষ্ট করেছেন। নাউযুবিল্লাহ। তারা সঠিক ইতিহাসকে বিকৃত করতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ হতে রাজধানী সরিয়ে নেয়ায় পবিত্র মদীনা শরীফ উনার গুরুত্ব কোনোভাবেই হ্রাস পায়নি; বরং পবিত্র মদীনা শরীফ উনার নিরাপত্তা আরো সুসংহত হয়েছে। ইসলাম বিরোধীদের ষড়যন্ত্রের বাঁকা চোখ পবিত্র মদীনা শরীফ হতে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে।
সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি নতুন রাজধানীতে তাশরীফ মুবারক রেখে শুরুতেই সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারকের সাথে জড়িতদেরকে গ্রেফতার করতে তদন্ত শুরু করেন। কুচক্রী মুনাফিকরা দেখলো যে এখন তারা ধরা পড়ে যাবে। কাজেই যেকোনো মূল্যে এই কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে হবে। তাই তারা নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করলো।
উম্মুল মু'মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি সেই বছর পবিত্র হজ্জ করার জন্য পবিত্র মক্কা শরীফে গমন করেছিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার মুবারক শাহাদাতে তিনি অত্যন্ত কষ্ট পান। তিনি যখন পবিত্র মক্কা শরীফ হতে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার পথ ধরলেন, তখন মুনাফিকরা উনার চতুর্পার্শ্বে জমা হতে শুরু করলো। উনার মুবারক খিদমতে যত সব মিথ্যা প্রোপাগান্ডা শুরু করলো। তারা বললো, আপনি উম্মুল মু'মিনীন! আপনি সকলের মাতা। আপনি সকলের অভিভাবিকা। আপনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারক উনার বিচার অবশ্যই চেয়ে থাকেন। কিন্তু নতুন খলীফা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহ্ আলাইহিস সালাম তিনি বিচার করতে চান না। বরং তিনি আসামীদেরকে প্রশ্রয় দেন। নাউযুবিল্লাহ! তাদের এসব মিথ্যা অপবাদ শুনে উম্মুল মু'মিনীন আছ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত খলীফা উনার সাথে আলোচনা করার ইচ্ছা মুবারক পোষণ করেন। তাই তিনি কুফা অভিমুখে রওনা হন। মুনাফিকরা দেখলো যদি উনারা দু'জন আলোচনায় একত্রিত হন, তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে যাবে। তাই তারা আলোচনার পরিবর্তে যুদ্ধ বাঁধানোর অপচেষ্টা শুরু করলো। নাঊযুবিল্লাহ!
একদিকে মুনাফিকরা সম্মানিত খলীফা উনার বিরুদ্ধে লোক জমানো শুরু করলো। অপরদিকে খলীফা উনার নিকট সংবাদ পৌঁছানো হলো যে, উম্মুল মু'মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি আপনার বিরুদ্ধে বিশাল বাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসছেন। সংবাদ শুনে তিনি আশ্চর্যবোধ করলেন। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তিনি অগ্রসর হলেন। বছরার নিকটবর্তী এক স্থানে সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্কা আলাইহাস সালাম উনার শিবির দেখা গেল। বিধায় অপরদিকে তিনিও শিবির স্থাপন করালেন। উনারা দু'জনই আলোচনায় একত্রিত হতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু মুনাফিকরা বারবারই তা বাধাগ্রস্ত করলো। এভাবে দিন গিয়ে রাত এলো। গভীর রাতে দু'শিবিরের সকলেই ঘুমন্ত। কিন্তু মুনাফিকরা সজাগ। তারা দু'দলে বিভক্ত হয়ে অন্ধকারে দু'শিবিরে হামলা চালায়। শুরু হয়ে যায় হৈ হুল্লোড়, চিৎকার চেঁচামেচি। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহ আলাইহিস সালাম উনাকে বলা হলো যে, উম্মুল মু'মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার লোকেরা হামলা চালিয়েছে। আবার উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে বলা হলো যে, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার লোকেরা হামলা চালিয়েছে। শুরু হয়ে গেল ঘোরতর যুদ্ধ। কিন্তু উনারা দু'জনই এজন্য আফসোস করলেন। যুদ্ধ বন্ধের জন্য কৌশল অবলম্বন করতে লাগলেন।
ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি যুদ্ধ বন্ধের জন্য বারবার কৌশল অবলম্বন করেন। আর মুনাফিকরা যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করতে অপচেষ্টা চালায়। পরিশেষে উম্মুল মু'মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে বহনকারী উটের পা কেটে দিয়ে উনার হাওদা মুবারক সরিয়ে নিলে যুদ্ধ থেমে যায়।
এদিকে উম্মুল মু'মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক খিদমতে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম ক্রন্দনরত অবস্থায় এসে বললেন, হে উম্মুল মু'মিনীন আলাইহাস সালাম! আপনি আমাদের মা। আপনার সাথে কি আমাদের যুদ্ধ হয়? সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি অশ্রুসজল অবস্থায় বললেন, "আমি তো এখানে যুদ্ধ করতে আসিনি। আমি এসেছি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারকের ব্যাপারে আপনার সাথে আলোচনা মুবারক করতে"। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, "আম্মাজান! এ বিষয়ে ফায়ছালা মুবারক নেয়ার জন্যই তো আমি এখানে এসেছি। আমিও তো যুদ্ধ করতে আসিনি"। উনাদের পারস্পরিক আলোচনার কারণে মুনাফিকরা ধরা পড়ে। তাদের চক্রান্ত বানচাল হয়, যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।
পরিশেষে উনারা দু'জনই এ যুদ্ধের জন্য অত্যধিক ব্যথিত ও মর্মাহত হন। উনারা দু'জন ঘোষণা দেন যে, আমাদের মাঝে পারস্পরিক কোনো বিদ্বেষ নেই এবং কখনোই ছিল না। যা ঘটে গেলো তা মূলত মুনাফিকদের চক্রান্ত। অতঃপর উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে উনার ভাই হযরত মুহম্মদ ইবনে আবী বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাধ্যমে সীমাহীন তা'যীমের সাথে পবিত্র মদীনা শরীফ পৌঁছিয়ে দেয়া হয়।
উল্লেখ্য যে, জঙ্গে জামালের পর হতে পবিত্র বিছাল শরীফ উনার পূর্ব পর্যন্ত সুদীর্ঘ সময়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি প্রায়ই জঙ্গে জামালের জন্য আফসোস করতেন, কান্না মুবারক করতেন এবং সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার জন্য নেক দোয়া মুবারক করতেন। অপরদিকে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহ্ আলাইহিস সালাম তিনি এ যুদ্ধের জন্য প্রায়ই ভারাক্রান্ত হতেন। এমনকি তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক গ্রহণের পূর্বেও এ জন্য তিনি উম্মুল মু'মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আর এ বিষয়গুলোই প্রমাণ করে যে, উনাদের মাঝে বিন্দু পরিমাণ অসন্তোষজনক অবস্থা ছিল না।
এ যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্কা আলাইহাস সালাম তিনি উটের হাওদায় অবস্থান করেন বলে তা জঙ্গে জামাল বা উষ্ট্রের যুদ্ধ নামে খ্যাত। এ যুদ্ধকে ইতিহাসে জঙ্গে জামাল হিসেবে অভিহিত করা হয়।
মুনাফিকরা জঙ্গে জামালের মাধ্যমে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারক উনার বিচার বিঘ্নিত করার পাশাপাশি উম্মুল মু'মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম এবং ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনাদেরকেও শহীদ করার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হয়নি। তাই মুনাফিকরা আরো মরিয়া হয়ে উঠে।
খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্কে আ'যম আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিলাফতকাল হতে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সিরিয়ার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। মুনাফিকরা তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য এবার সিরিয়ায় একত্রিত হতে থাকে।
ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি আলোচনার জন্য এগিয়ে যান। অপরদিকে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও আলোচনার জন্য এগিয়ে আসেন। উনারা দু'জনই ফোরাত নদীর তীরে অবস্থান মুবারক গ্রহণ করেন। জঙ্গে জামালের অনুকরণে মুনাফিকরা আবারো যুদ্ধ বাঁধায়। মুনাফিকরা ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার লোকদের উপর রাতের আঁধারে হামলা চালিয়ে বলে যে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার লোকেরা হামলা করেছে। অনুরূপভাবে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার লোকদের উপর হামলা চালিয়ে মুনাফিকরা বলে যে, ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার লোকেরা হামলা চালিয়েছে। আবারো শুরু হয় ঘোরতর যুদ্ধ। এ যুদ্ধে ৭০ হাজার মুসলমান শহীদ হন। ইতিহাসে তা সিফফীনের যুদ্ধ হিসেবে খ্যাত।
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বিদ্বেষী তথাকথিত ঐতিহাসিকরা জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফফীনকে কেন্দ্র করে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বিরোধী মনোভাবকে কাগজে অঙ্কনের বেশ অপচেষ্টা চালিয়েছে। বাজারে প্রাপ্ত অধিকাংশ ইতিহাস বইতে একই কথা। উম্মুল মু'মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্কা আলাইহাস সালাম, ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহ্ আলাইহিস সালাম এবং কাতিবে ওহী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের মুবারক শানের বিরোধী বক্তব্যে সেগুলো ভরপুর। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উনাদেরকে দোষারোপ করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ! উনাদের সমালোচনা করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!
মূলতঃ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা হচ্ছেন ঈমান। উনাদের মুহব্বত ঈমানের মূল। উনাদের ইতায়াত আমলের মূল। উনাদের রেযামন্দি নাজাতের মূল। উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা কুফরী এবং জাহান্নামী হওয়ার কারণ। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে অন্যায়ভাবে শহীদ করার সাথে মুনাফিকরা যেরূপ সংশ্লিষ্ট, তদ্রুপ জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফফীনের ঘটনাতেও তারা জড়িত এবং এককভাবে তারাই দায়ী। আর এটাই আহলু সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের ছহীহ আক্বীদা। এর ব্যতিক্রম আক্বীদা পোষণ করা সুস্পষ্ট গুমরাহী।
ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত মুবারককে কেন্দ্র করে কয়েকটি বাতিল ফিরক্কার উদ্ভব ঘটেছে। উনার মুবারক শানে অতি বাড়াবাড়ি করে শিয়া বা রাফিযী সম্প্রদায় তৈরি হয়েছে। এ ফিরকার লোকেরা বাহ্যিকভাবে উনার প্রতি অত্যধিক মুহব্বত দেখিয়ে সূক্ষ্মভাবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে অবমাননা করে। তাদের মতে, খিলাফতের জন্য কেবল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনিই উপযুক্ত। প্রথম তিনজন খলীফা নন। বরং উনারা জোরপূর্বক শাসন ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলেন। নাঊযুবিল্লাহ! তাদের এ বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী হওয়ায় তা বাতিল ও পরিত্যাজ্য। তারাও বাতিল। আহলু সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত উনাদের ছহীহ ফতওয়া অনুযায়ী- শিয়া বা রাফিযী সম্প্রদায় কাফির।
এদিকে ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহ্ আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত মুবারকের বিরোধিতা করে খারিজী সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। এরা উনার খিলাফত মুবারক মেনে নেয়নি। এরাই উনাকে শহীদ করে। এরাও বাতিল ফিরক্কার অন্তর্ভুক্ত। সম্মানিত শরীয়ত অনুযায়ী এরাও কাফির।
মূলকথা হচ্ছে, ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহ্ আলাইহিস সালাম তিনি এবং উনার খিলাফত মুবারক মুসলিম উম্মাহর ঈমান, আমল এবং আক্বীদার সাথে সম্পৃক্ত ও সংশ্লিষ্ট। সর্বক্ষেত্রে আহলু সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা পোষণ করতে হবে। ভিন্ন আক্বীদা পোষণ করলে ঈমানদার থাকা যাবে না।