নছীহতে উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম -(১ম খণ্ড)নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করা ফরয -পর্ব-৪

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করা ফরয-পর্ব-৪

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُوْلِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ ﴿۲۱﴾ سورة الاحزاب

অবশ্যই তোমাদের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ মুবারক। [সূরা আহযাব শরীফ: ২১]

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতের জন্য কী আদর্শ মুবারক নিয়ে এসেছেন বা তিনি উম্মতকে কি আদর্শ মুবারক শিক্ষা দিয়েছেন এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

لَقَدْ مَنَّ الله عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُوْ عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوْا مِنْ

قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ (١٦٢) سورة آل عمران

নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক মু'মিনদের প্রতি ইহসান করেছেন যে, তিনি তাদের মাঝে একজন রসূল পাঠিয়েছেন, যিনি তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার আয়াত শরীফ সমূহ তিলাওয়াত করে শুনান এবং তাদের অন্তর সমূহকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। যদিও ইতিপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে ছিল অর্থাৎ হিদায়েতের উপর ছিল না। [সূরা আলে ইমরান শরীফ: ১৬৪]

অর্থাৎ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বান্দা-বান্দী উম্মতগণকে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কালাম শরীফ তিলাওয়াত করে শুনিয়েছেন, তাদের অন্তর ইছলাহ বা পরিশুদ্ধ করেছেন এবং তাদেরকে কিতাব এবং হিকমত মুবারক শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি এই আদর্শ মুবারক নিয়েই মহান আল্লাহ পাক উনার ইহসান স্বরূপ মু'মিনদের মাঝে প্রেরিত হয়েছেন। তিনি যা কিছু জানিয়েছেন, শিক্ষা দান করেছেন সে সমস্ত বিষয়ই হচ্ছে উনার আদর্শ মুবারক। উনার সমস্ত আদর্শ মুবারকের সম্মিলিত রূপই হচ্ছে পবিত্র দ্বীন ইসলাম।

আর সামগ্রিকভাবে এই আদর্শ মুবারক গ্রহণ করার জন্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন,

وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ (۷) سورة الحشر

রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে আদর্শ মুবারক নিয়ে এসেছেন অর্থাৎ যে শরীয়ত বা বিধান নিয়ে এসেছেন তা আঁকড়িয়ে ধরো এবং যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকো। তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। [সূরা হাশর শরীফ: ৭]

এই আয়াত শরীফে বলা হয়েছে উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করার জন্য। উম্মতের জন্য যে বিষয়গুলো ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, সুন্নতে যায়িদাহ, মুস্তাহাব প্রত্যেকটি বিষয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক বা সুন্নাহ শরীফ। তিনি যে বিষয়কে যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন, সেভাবে গ্রহণ করা বা পালন করাই উম্মতের জন্য ফরয এবং সেভাবে পালন করলেই হাক্বীক্বীভাবে উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করা হবে।

তাই এই আয়াত শরীফ-এর উপর ভিত্তি করে ইমাম-মুজতাহিদগণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারকের মধ্য থেকে আমলের গুরুত্ব বুঝে কোনোটাকে ফরয, কোনোটাকে ওয়াজিব, কোনোটাকে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, কোনোটাকে সুন্নতে যায়িদাহ, কোনোটাকে মুস্তাহাব সাব্যস্ত করেছেন। এই আয়াত শরীফ-এর উপর যা আমল করা ফরয ছিল তা আমল করা হয়ে গেছে। নতুন করে সুন্নতকে ফরয সাব্যস্ত করার কোনো প্রয়োজন নেই। মানুষ সাধারণভাবে সুন্নত বলতে বুঝে থাকে সুন্নতে যায়িদাহ, মুস্তাহাব ও নফল। এই আয়াত শরীফ দ্বারা এইসব আমলকে ফরয সাব্যস্ত করা ইজমার পরিপন্থি অর্থাৎ ইমাম-মুজতাহিদগণ উনাদের ইজমার বিরোধিতা করার নামান্তর।

এ বিষয়ে আল বাইয়ি‍্যনাত শরীফের ৩য় সংখ্যা ৪৪ পৃষ্ঠায় ফতওয়া বিভাগে এসেছে, "প্রকৃত জ্ঞানী তো তারাই, যারা ফরযকে ফরয, ওয়াজিবকে ওয়াজিব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদাকে মুয়াক্কাদা, যায়িদাকে যায়িদা এবং মুস্তাহাবকে মুস্তাহাব হিসেবে মেনে নিবে। জানা আবশ্যক যে, মুস্তাহাবকে যদি আমলের জন্য তাকিদ দেয়া হয়, তা কখনোই ওয়াজিব হবে না। ইহার বাহিরে যারা মত পোষণ করবে তারা সীমা লঙ্ঘনকারী হিসেবে চিহ্নিত হবে।"

এছাড়া মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,

وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ (۷۸) سورة الحج 

তিনি তোমাদের দ্বীনের মধ্যে কোনো কিছু কঠিন করেননি। [সূরা হজ্জ শরীফ: ৭৮]

আর পবিত্র হাদীছ শরীফে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ الدِّينَ يُسْرُ وَلَنْ يُشَادَّ الدِّينَ أَحَدٌ إِلَّا غَلَبَهُ. (رواه البخاري)

হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই দ্বীন হচ্ছে সহজ। কেউ যেন দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে, তাহলে তার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। [বুখারী শরীফ]

সুতরাং সুন্নতকে ফরয সাব্যস্ত করলে দ্বীনকে কঠিন করে ফেলা হবে বা দ্বীনের মধ্যে কাঠিন্যতা আরোপ করা হবে এবং অনেক সমস্যার সৃষ্টি হবে। যেমন, কারো যদি যে কোনো কারণ বশত কোনো সুন্নত তরক হয়ে যায় তাতে কোনো গুনাহ হবে না কিন্তু সুন্নত ফরয সাব্যস্ত হলে তখন তা তরক করলে কবীরা গুনাহ হবে। এজন্য ইমাম-মুজতাহিদগণ আমলের প্রতি গুরুত্বারোপ করে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, সুন্নতে যায়িদাহ, মুস্তাহাব ইত্যাদি বিভিন্ন ভাগে আমলকে বিভক্ত করেছেন। তাই উনাদের ইজমা মেনে নেয়া আবশ্যক।

এছাড়া মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

لَا تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ (۷۷) سورة المائدة

তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না। [সূরা মায়িদা শরীফ: ৭৭]

মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যেখানে দ্বীন বা শরীয়ত কঠিন করেননি সেখানে আমরা কিভাবে সহজটাকে কঠিন করতে পারি? এটা দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হবে, যা উচিত নয়।

মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদের সবাইকে দ্বীনের সহীহ-সমঝ দান করেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত মুবারক যথাসাধ্য অনুসরণ করে মহান আল্লাহ পাক উনার মুহাব্বত মুবারক অর্জন করার ও হকের উপর ইস্তেকামত থাকার তাওফীক দান করেন। (আমীন)







১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৪৬ ( ইলমের গভীরতা )

ইলমের গভীরতা- পর্ব-৪৬

একদা একদল ইহুদী পাদ্রী হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করলো 'হে আমীরুল মু'মিনীন! আমাদের কতিপয় সুওয়াল রয়েছে। আপনি যদি সেগুলোর জওয়াব দিতে পারেন, তাহলে আমরা ইসলাম গ্রহণ করবো। আমীরুল মু'মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, 'নিশ্চয়ই আমার নিকট ইলমের ষাটটি দরজা রয়েছে। প্রত্যেক দরজার ইলম বহনে কমপক্ষে এক হাজার বাহন প্রয়োজন।' অর্থাৎ উনার ইলম মুবারকের কোনো সীমা নির্ধারণ অসম্ভব বিষয়। 'কাজেই হে ইহুদী সম্প্রদায়! তোমরা আমাকে যেকোনো বিষয়ে সুওয়াল করতে পারো।' তখন ইহুদীরা বললো: আমাদের প্রশ্ন হলো, আসমানসমূহ হতে বড় কোন বিষয়? কোন বিষয় যমীন হতে অধিক প্রশস্ত?

আগুন হতে অধিক গরম কোন জিনিস? কোন বিষয় বাতাস হতে অধিক দ্রুতগতি সম্পন্ন? কোন বিষয় সাগর হতে অধিক ধনী? কোন বিষয় পাথর হতে অধিক শক্ত? কোন বিষয় আমরা দেখি কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি সেদিকে নযর মুবারক দেন না? কোন বিষয় মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য? আর কোন বিষয় বান্দাদের জন্য? কোন বিষয় মহান আল্লাহ পাক এবং বান্দাদের মাঝে বিদ্যমান?'

তারা আরো বললো, 'ঘোড়া, উট, গরু, গাধা, বকরী, কুকুর, শিয়াল, বিড়াল, সিংহ, ঈগল, কাক, চিল, কবুতর, ব্যাঙ, হুদহুদ, তিতির, ঘুঘু, কুমবুরাহ বা ভরত পাখি, চড়ুই, বুলবুলি, মোরগ, মুরগি প্রভৃতি প্রাণী ও পাখি তারা তাদের ডাকে কি বলে? অর্থাৎ তাদের ডাকের অর্থ কি? আগুন ও বাতাস তাদের শোঁ শোঁ শব্দে কি ব্যক্ত করে? তাছাড়া যমীন, আসমান, সমুদ্র, সূর্য এবং চন্দ্র তারা কি বলে?'

তাদের প্রশ্ন শোনার পর তিনি বললেন: 'তোমাদের সুওয়ালের জাওয়াব আমার নিকট অত্যধিক সহজ।' অতঃপর তিনি বললেন, 'তোমরা শুনে রাখো। সৎ ব্যক্তির উপর অপবাদ আসমান হতে বড়। হক্ক যমীন হতে প্রশস্ত। সম্পদ জমা করার ক্ষেত্রে লোভীর অন্তর আগুন হতে গরম। মযলুমের দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে বাতাস হতে অধিক দ্রুতগতি সম্পন্ন। অল্পে তুষ্ট অন্তর সমুদ্র হতেও অধিক ধনী। আর বদকার ব্যক্তির অন্তর পাথর হতেও অধিক শক্ত। আমাদের রূহ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য আর আমাদের আমল আমাদের নিজেদের জন্য। আমাদের দায়িত্ব দোয়া করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করার মালিক।'

হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি আরো বলেন, "ঘোড়া তার হ্রেষা ধ্বনিতে বলে, 'আয় আল্লাহ পাক! মুসলিম উম্মাহকে সম্মানিত করুন এবং কাফিরদেরকে লাঞ্ছিত করুন।' উট বলে, 'পরকালীন পাথেয় না থাকা সত্ত্বেও যে আমলের ক্ষেত্রে নিষ্ক্রীয় থাকে, তার জন্য আশ্চর্য!' গরু বলে, 'হে গাফিল ব্যক্তি! মৃত্যু তোমার জন্য অবধারিত। তাই তুমি আমলে মশগুল হও। হে গাফিল ব্যক্তি! তুমি অতি অল্প সময়ের জন্য দুনিয়াতে আগমনকারী। হে গাফিল ব্যক্তি! যা তুমি পরকালের জন্য প্রেরণ করেছো, সেটাই কেবল তোমার জন্য থাকবে। অতি শীঘ্রই তুমি তোমার আমলের বদলা লাভ করবে।' গাধা বলে, 'আয় আল্লাহ পাক! সুদ প্রদানকারী এবং সুদের মাধ্যমে উপার্জনকারীর উপর লা'নত বর্ষণ করুন।' বকরী বলে, 'হে মৃত্যু! কে তোমাকে বেদনাদায়ক করলো? কে তোমাকে পরিতৃপ্ত করলো?

কে তোমাকে কর্তিত করলো? হে বনী আদম! কে তোমাকে গাফিল বানালো?' কুকুর বলে, 'আয় আল্লাহ পাক! আমি রহমত হতে মাহরুম। তাই যে আমার উপর রহম করে আপনিও তার উপর রহম করুন।' শিয়াল বলে, 'হে রিযিক বণ্টনকারী! আমার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, তা আমার জন্য যথেষ্ট করুন।' বিড়াল তার ডাকে পবিত্র তাওরাত শরীফের দশখানা আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে। সিংহ বলে, 'আয় আল্লাহ পাক! যে ব্যক্তি আপনার নাফরমানী করে, আমাকে তার উপর কর্তৃত্ব দিন।' ঈগল বলে, 'যত দিন ইচ্ছা বেঁচে থাকো কিন্তু একদিন মৃত্যুবরণ করতে হবে। যা ইচ্ছা সঞ্চয় করো কিন্তু একদিন তরক করতে হবে। যাকে ইচ্ছা মুহব্বত করো কিন্তু একদিন পৃথক হতে হবে।' কাক বলে, 'হে উম্মত! নিয়ামত হতে সরে যাওয়াকে ভয় করো। গযব নাযিল হওয়াকে ভয় করো।' কবুতর বলে, 'যে ব্যক্তি তোমার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করেছে, তার সাথে সদাচরণ করো। যে ব্যক্তি তোমার উপর যুলুম করেছে, তাকে ক্ষমা করো। যে তোমাকে বঞ্চিত করেছে, তাকে তুমি দান করো। যে তোমার সাথে পর্দা করেছে, তার সাথে কথা বলো। তাহলে জান্নাত হবে তোমার আবাসস্থল।' ব্যাঙ বলে, 'সুবহানাল্লাহ! সমুদ্রের তলদেশে, পাহাড়ের চূড়ায় এবং গর্তে অবস্থানকারী সকলেই মহান আল্লাহ পাক উনার তাসবীহ মুবারক পাঠ করে। জিহ্বা ও যবানওয়ালা সকলেই মুবারক তাসবীহতে মশগুল রয়েছে।"

হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি ইহুদীদের প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন, "হুদহুদ পাখি বলে, 'আয় আল্লাহ পাক! আমি নিজের নফসের উপর যুলুম করেছি। আপনি আমার গুনাহ ক্ষমা করুন। আপনি ব্যতীত গুনাহ ক্ষমা করার কেউ নেই।' তিতির পাখি বলে, 'মহান আল্লাহ পাক আরশে আ'যীমে ইসতাওয়া হয়েছেন। সমস্ত কিছু উনার রুবুবিয়াতের সাথে সম্পৃক্ত। সর্ব বিষয়ে তিনি অবগত।' ঘুঘু পাখি বলে, 'মৃত্যু নিকটবর্তী। প্রত্যাশা অপূরণীয়। আমলের প্রতিদান গ্রহণ অত্যাবশ্যকীয়।' কুমবুরাহ বা ভরত পাখি বলে, 'আয় আল্লাহ পাক! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীদের প্রতি লা'নত বর্ষণ করুন।' চড়ুই পাখি বলে, 'মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত গোপন বিষয় সম্পর্কে অবগত। হে বিপদ ও বালা মুছিবত দূরকারী! যে ব্যক্তি আপনার হক্ক আদায় করে না, আমাকে তার শস্য ক্ষেতে আধিপত্য দান করুন।' বুলবুলি পাখি বলে, 'দুনিয়াবী নিয়ামত যখন আমার জন্য যথেষ্ট হয়, তখন আমি শুকরিয়া আদায় করি।' মোরগ বলে, 'মহিমাময় পূতপবিত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত রব। হে গাফিল সম্প্রদায়! মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করো।' মুরগি বলে, 'আয় আল্লাহ পাক! আপনি সত্য। আপনার ওয়াদা মুবারকও সত্য।'

ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি আরো বলেন, "আগুন বলে, 'আয় মহান আল্লাহ পাক! আমি জাহান্নামের আগুন হতে পানাহ চাই।' বাতাস বলে, 'আমি আদিষ্টিত। আয় মহান আল্লাহ পাক! যে আমাকে দোষারোপ করে আপনি তার উপর লা'নত বর্ষণ করুন।' পানি বলে, 'সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক পবিত্রতা সম্পর্কে তিনি ব্যতীত অন্য কেউ অবগত নন।' প্রতিদিন যমীন বলে, 'হে আদম সন্তান! তুমি আমার পিঠের উপর নাফরমানী করছো। আমার পেটের ভিতর (কবরে) তোমাকে বিষাক্ত পোকা ভক্ষণ করবে।' প্রতিদিন আসমান বলে, 'আয় আল্লাহ পাক! আমার নিচে অবস্থানকারী সকলের ব্যাপারে আমি সাক্ষী।' সমুদ্র বলে, 'আয় আল্লাহ পাক! যে ব্যক্তি আপনার নাফরমানী করে, তাকে ডুবিয়ে মারতে আমাকে মুবারক অনুমতি প্রদান করুন।' প্রতিদিন অস্ত যাওয়ার সময় সূর্য বলে, 'আয় মহান আল্লাহ পাক! আমার আলো যাদের উপর পতিত হয়েছে, আমি তাদের সকলের আমলের সাক্ষী।'

ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি সমস্ত পশু-পাখি, কিট পতঙ্গসহ পুরো কায়িনাতবাসীর ভাষা সম্পর্কে সম্যক অবগত ছিলেন। এবং সেই ইলম মুবারক তিনি প্রকাশও করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৪৫ ( নফসের জিহাদ )

নফসের জিহাদ- পর্ব-৪৫

তাবুক জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উদ্দেশ্যে বললেন, "এখন আমরা ছোট জিহাদ থেকে বড় জিহাদের দিকে প্রত্যাবর্তন করছি।" ছোট জিহাদ বলতে বুঝানো হয়েছে তরবারি দিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ, আর বড় জিহাদ হলো নিজের নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেভাবে নফসের সাথে জিহাদ করেছেন তা প্রতিটি মানুষের জন্য শিক্ষনীয়।একবার ইমামুল আউওয়াল হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি এক ইহুদী পালোয়ানের সাথে তিন দিন একটানা মল্লযুদ্ধ করলেন। অবশেষে তিনি যখন ইহুদী পালোয়ানকে ধরাশায়ী করলেন, তখন সে আর কিছু করতে না পেরে উনার মুখ মুবারকে থুতু নিক্ষেপ করলো। নাঊযুবিল্লাহ! এটা করার সাথে সাথে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি ইহুদী পালোয়ানকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। ইহুদী বিস্মিত হয়ে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার কাছে এর কারণ জানতে চাইলো। তিনি জবাব দিলেন, আমি যখন তোমার সাথে মল্লযুদ্ধ করছিলাম, তা ছিল শুধুমাত্র মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে। কিন্তু তুমি যখন আমার মুখে থুতু নিক্ষেপ করলে, তখন বিষয়টা অন্যরকম হয়ে গেলো কারণ আমার গোসসা তৈরি হয়ে গেলো। এখন আমি যদি তোমাকে থুতু নিক্ষেপের জন্য কতল করি, তাহলে আমার উদ্দেশ্য ব্যতিক্রম হয়ে যাবে অর্থাৎ আমার নফসের অনুসরণ করা হবে। তাই আমি তোমাকে ছেড়ে দিয়েছি। ইহুদী উনার কথা শুনে বলে উঠলো, হে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম! দ্বীন ইসলাম উনার শিক্ষা যদি এতো সুন্দর হয় তবে আমাকে দ্বীন ইসলামে দাখিল করিয়ে নিন! সুবহানাল্লাহ!

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৪৪ ( জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফফীন )

জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফফীন-পর্ব-৪৪

আমীরুল মু'মিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহ্ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম এবং সম্মানিত হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে চতুর্থতম সম্মানিত খলীফা। ইসলামী ইতিহাসে উনার খিলাফতকাল ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুবারক শানে অপবাদ লেপনে সচেষ্ট ইসলামবিদ্বেষী মহল তাদের খিলাফতবিরোধী মনোভাবকে চিত্রিত করতে এই সময়কে বেছে নিয়েছিল; যা তাদের লিখিত ইতিহাসে সুস্পষ্ট।

৩৫ হিজরী সনের পবিত্র হজ্জ সম্পাদিত হওয়ার কয়েক দিন পরেই পবিত্র ১৮ই যিলহজ্জ শরীফে মহাসম্মানিত মদীনা শরীফে আমীরুল মু'মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন, নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে মুনাফিকরা অন্যায়ভাবে শহীদ করে। এই জঘন্য কাজে সংশ্লিষ্ট মুনাফিকরা নিজেদেরকে বিচারের আওতামুক্ত রাখতে পুরো মদীনা শরীফ জুড়ে গণহারে কয়েকদিন ব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি করে রাখে। এককথায়, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদকারীদের যেন গ্রেফতার করা না যায়, সেজন্য মুনাফিকরা তাদের কর্তৃক সৃষ্ট বিশৃঙ্খলাকে আরো দীর্ঘায়িত করে। বলা হয়, মুনাফিকদের পরিচালিত বিশৃঙ্খলার দরুন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র রওযা শরীফ স্থাপন করা কয়েকদিন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।

ইতিহাসের এই নাজুক পরিস্থিতিতে মুসলিম মিল্লাতকে সমূহ ফিতনা হতে রক্ষার জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ত্রাণকর্তাস্বরূপ আভির্ভূত হন। সম্মানিত হাদীছ শরীফ অনুযায়ী বিশিষ্ট হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুবারক অনুরোধে তিনি খিলাফত মুবারক উনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যা মূলত মুসলমানদের প্রতি উনার বিশেষ দয়া-ইহসান।

কায়িনাত জুড়ে রহমত-বরকতে পরিপূর্ণ মুবারক স্থানসমূহের মধ্যে পবিত্র মদীনা শরীফ সর্বশীর্ষে। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুনাফিকরা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার ইজ্জত-হুরমত বিনষ্টের অপচেষ্টা চালিয়েছে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা অতীব প্রয়োজন। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত খিলাফত উনার মুবারক দায়িত্ব গ্রহণ করতঃ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ইজাযত নিয়ে রাজধানী পবিত্র মদীনা শরীফ হতে কুফায় স্থানান্তর করেন। কিন্তু এ বিষয়টি ইসলামবিদ্বেষীদের মনঃপুত হয়নি।

ইসলামবিদ্বেষী তথাকথিত ঐতিহাসিকরা বলে যে, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ হতে রাজধানী স্থানান্তরিত করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার গুরুত্ব তাৎপর্য বিনষ্ট করেছেন। নাউযুবিল্লাহ। তারা সঠিক ইতিহাসকে বিকৃত করতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ হতে রাজধানী সরিয়ে নেয়ায় পবিত্র মদীনা শরীফ উনার গুরুত্ব কোনোভাবেই হ্রাস পায়নি; বরং পবিত্র মদীনা শরীফ উনার নিরাপত্তা আরো সুসংহত হয়েছে। ইসলাম বিরোধীদের ষড়যন্ত্রের বাঁকা চোখ পবিত্র মদীনা শরীফ হতে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে।

সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি নতুন রাজধানীতে তাশরীফ মুবারক রেখে শুরুতেই সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারকের সাথে জড়িতদেরকে গ্রেফতার করতে তদন্ত শুরু করেন। কুচক্রী মুনাফিকরা দেখলো যে এখন তারা ধরা পড়ে যাবে। কাজেই যেকোনো মূল্যে এই কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে হবে। তাই তারা নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করলো।

উম্মুল মু'মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি সেই বছর পবিত্র হজ্জ করার জন্য পবিত্র মক্কা শরীফে গমন করেছিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার মুবারক শাহাদাতে তিনি অত্যন্ত কষ্ট পান। তিনি যখন পবিত্র মক্কা শরীফ হতে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার পথ ধরলেন, তখন মুনাফিকরা উনার চতুর্পার্শ্বে জমা হতে শুরু করলো। উনার মুবারক খিদমতে যত সব মিথ্যা প্রোপাগান্ডা শুরু করলো। তারা বললো, আপনি উম্মুল মু'মিনীন! আপনি সকলের মাতা। আপনি সকলের অভিভাবিকা। আপনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারক উনার বিচার অবশ্যই চেয়ে থাকেন। কিন্তু নতুন খলীফা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহ্ আলাইহিস সালাম তিনি বিচার করতে চান না। বরং তিনি আসামীদেরকে প্রশ্রয় দেন। নাউযুবিল্লাহ! তাদের এসব মিথ্যা অপবাদ শুনে উম্মুল মু'মিনীন আছ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত খলীফা উনার সাথে আলোচনা করার ইচ্ছা মুবারক পোষণ করেন। তাই তিনি কুফা অভিমুখে রওনা হন। মুনাফিকরা দেখলো যদি উনারা দু'জন আলোচনায় একত্রিত হন, তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে যাবে। তাই তারা আলোচনার পরিবর্তে যুদ্ধ বাঁধানোর অপচেষ্টা শুরু করলো। নাঊযুবিল্লাহ!

একদিকে মুনাফিকরা সম্মানিত খলীফা উনার বিরুদ্ধে লোক জমানো শুরু করলো। অপরদিকে খলীফা উনার নিকট সংবাদ পৌঁছানো হলো যে, উম্মুল মু'মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি আপনার বিরুদ্ধে বিশাল বাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসছেন। সংবাদ শুনে তিনি আশ্চর্যবোধ করলেন। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তিনি অগ্রসর হলেন। বছরার নিকটবর্তী এক স্থানে সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্কা আলাইহাস সালাম উনার শিবির দেখা গেল। বিধায় অপরদিকে তিনিও শিবির স্থাপন করালেন। উনারা দু'জনই আলোচনায় একত্রিত হতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু মুনাফিকরা বারবারই তা বাধাগ্রস্ত করলো। এভাবে দিন গিয়ে রাত এলো। গভীর রাতে দু'শিবিরের সকলেই ঘুমন্ত। কিন্তু মুনাফিকরা সজাগ। তারা দু'দলে বিভক্ত হয়ে অন্ধকারে দু'শিবিরে হামলা চালায়। শুরু হয়ে যায় হৈ হুল্লোড়, চিৎকার চেঁচামেচি। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহ আলাইহিস সালাম উনাকে বলা হলো যে, উম্মুল মু'মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার লোকেরা হামলা চালিয়েছে। আবার উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে বলা হলো যে, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার লোকেরা হামলা চালিয়েছে। শুরু হয়ে গেল ঘোরতর যুদ্ধ। কিন্তু উনারা দু'জনই এজন্য আফসোস করলেন। যুদ্ধ বন্ধের জন্য কৌশল অবলম্বন করতে লাগলেন।

ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি যুদ্ধ বন্ধের জন্য বারবার কৌশল অবলম্বন করেন। আর মুনাফিকরা যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করতে অপচেষ্টা চালায়। পরিশেষে উম্মুল মু'মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে বহনকারী উটের পা কেটে দিয়ে উনার হাওদা মুবারক সরিয়ে নিলে যুদ্ধ থেমে যায়।

এদিকে উম্মুল মু'মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক খিদমতে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম ক্রন্দনরত অবস্থায় এসে বললেন, হে উম্মুল মু'মিনীন আলাইহাস সালাম! আপনি আমাদের মা। আপনার সাথে কি আমাদের যুদ্ধ হয়? সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি অশ্রুসজল অবস্থায় বললেন, "আমি তো এখানে যুদ্ধ করতে আসিনি। আমি এসেছি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারকের ব্যাপারে আপনার সাথে আলোচনা মুবারক করতে"। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, "আম্মাজান! এ বিষয়ে ফায়ছালা মুবারক নেয়ার জন্যই তো আমি এখানে এসেছি। আমিও তো যুদ্ধ করতে আসিনি"। উনাদের পারস্পরিক আলোচনার কারণে মুনাফিকরা ধরা পড়ে। তাদের চক্রান্ত বানচাল হয়, যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।

পরিশেষে উনারা দু'জনই এ যুদ্ধের জন্য অত্যধিক ব্যথিত ও মর্মাহত হন। উনারা দু'জন ঘোষণা দেন যে, আমাদের মাঝে পারস্পরিক কোনো বিদ্বেষ নেই এবং কখনোই ছিল না। যা ঘটে গেলো তা মূলত মুনাফিকদের চক্রান্ত। অতঃপর উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে উনার ভাই হযরত মুহম্মদ ইবনে আবী বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাধ্যমে সীমাহীন তা'যীমের সাথে পবিত্র মদীনা শরীফ পৌঁছিয়ে দেয়া হয়।

উল্লেখ্য যে, জঙ্গে জামালের পর হতে পবিত্র বিছাল শরীফ উনার পূর্ব পর্যন্ত সুদীর্ঘ সময়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি প্রায়ই জঙ্গে জামালের জন্য আফসোস করতেন, কান্না মুবারক করতেন এবং সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার জন্য নেক দোয়া মুবারক করতেন। অপরদিকে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহ্ আলাইহিস সালাম তিনি এ যুদ্ধের জন্য প্রায়ই ভারাক্রান্ত হতেন। এমনকি তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক গ্রহণের পূর্বেও এ জন্য তিনি উম্মুল মু'মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আর এ বিষয়গুলোই প্রমাণ করে যে, উনাদের মাঝে বিন্দু পরিমাণ অসন্তোষজনক অবস্থা ছিল না।

এ যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে উম্মুল মু'মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্কা আলাইহাস সালাম তিনি উটের হাওদায় অবস্থান করেন বলে তা জঙ্গে জামাল বা উষ্ট্রের যুদ্ধ নামে খ্যাত। এ যুদ্ধকে ইতিহাসে জঙ্গে জামাল হিসেবে অভিহিত করা হয়।

মুনাফিকরা জঙ্গে জামালের মাধ্যমে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারক উনার বিচার বিঘ্নিত করার পাশাপাশি উম্মুল মু'মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম এবং ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনাদেরকেও শহীদ করার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হয়নি। তাই মুনাফিকরা আরো মরিয়া হয়ে উঠে।

খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্কে আ'যম আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিলাফতকাল হতে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সিরিয়ার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। মুনাফিকরা তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য এবার সিরিয়ায় একত্রিত হতে থাকে।

ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি আলোচনার জন্য এগিয়ে যান। অপরদিকে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও আলোচনার জন্য এগিয়ে আসেন। উনারা দু'জনই ফোরাত নদীর তীরে অবস্থান মুবারক গ্রহণ করেন। জঙ্গে জামালের অনুকরণে মুনাফিকরা আবারো যুদ্ধ বাঁধায়। মুনাফিকরা ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার লোকদের উপর রাতের আঁধারে হামলা চালিয়ে বলে যে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার লোকেরা হামলা করেছে। অনুরূপভাবে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার লোকদের উপর হামলা চালিয়ে মুনাফিকরা বলে যে, ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার লোকেরা হামলা চালিয়েছে। আবারো শুরু হয় ঘোরতর যুদ্ধ। এ যুদ্ধে ৭০ হাজার মুসলমান শহীদ হন। ইতিহাসে তা সিফফীনের যুদ্ধ হিসেবে খ্যাত।

সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বিদ্বেষী তথাকথিত ঐতিহাসিকরা জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফফীনকে কেন্দ্র করে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বিরোধী মনোভাবকে কাগজে অঙ্কনের বেশ অপচেষ্টা চালিয়েছে। বাজারে প্রাপ্ত অধিকাংশ ইতিহাস বইতে একই কথা। উম্মুল মু'মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্কা আলাইহাস সালাম, ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহ্ আলাইহিস সালাম এবং কাতিবে ওহী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের মুবারক শানের বিরোধী বক্তব্যে সেগুলো ভরপুর। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উনাদেরকে দোষারোপ করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ! উনাদের সমালোচনা করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!

মূলতঃ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা হচ্ছেন ঈমান। উনাদের মুহব্বত ঈমানের মূল। উনাদের ইতায়াত আমলের মূল। উনাদের রেযামন্দি নাজাতের মূল। উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা কুফরী এবং জাহান্নামী হওয়ার কারণ। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে অন্যায়ভাবে শহীদ করার সাথে মুনাফিকরা যেরূপ সংশ্লিষ্ট, তদ্রুপ জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফফীনের ঘটনাতেও তারা জড়িত এবং এককভাবে তারাই দায়ী। আর এটাই আহলু সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের ছহীহ আক্বীদা। এর ব্যতিক্রম আক্বীদা পোষণ করা সুস্পষ্ট গুমরাহী।

ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত মুবারককে কেন্দ্র করে কয়েকটি বাতিল ফিরক্কার উদ্ভব ঘটেছে। উনার মুবারক শানে অতি বাড়াবাড়ি করে শিয়া বা রাফিযী সম্প্রদায় তৈরি হয়েছে। এ ফিরকার লোকেরা বাহ্যিকভাবে উনার প্রতি অত্যধিক মুহব্বত দেখিয়ে সূক্ষ্মভাবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে অবমাননা করে। তাদের মতে, খিলাফতের জন্য কেবল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনিই উপযুক্ত। প্রথম তিনজন খলীফা নন। বরং উনারা জোরপূর্বক শাসন ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলেন। নাঊযুবিল্লাহ! তাদের এ বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী হওয়ায় তা বাতিল ও পরিত্যাজ্য। তারাও বাতিল। আহলু সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত উনাদের ছহীহ ফতওয়া অনুযায়ী- শিয়া বা রাফিযী সম্প্রদায় কাফির।

এদিকে ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহ্ আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত মুবারকের বিরোধিতা করে খারিজী সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। এরা উনার খিলাফত মুবারক মেনে নেয়নি। এরাই উনাকে শহীদ করে। এরাও বাতিল ফিরক্কার অন্তর্ভুক্ত। সম্মানিত শরীয়ত অনুযায়ী এরাও কাফির।

মূলকথা হচ্ছে, ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহ্ আলাইহিস সালাম তিনি এবং উনার খিলাফত মুবারক মুসলিম উম্মাহর ঈমান, আমল এবং আক্বীদার সাথে সম্পৃক্ত ও সংশ্লিষ্ট। সর্বক্ষেত্রে আহলু সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা পোষণ করতে হবে। ভিন্ন আক্বীদা পোষণ করলে ঈমানদার থাকা যাবে না।

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৪৩ ( বিরল আত্মত্যাগ )

বিরল আত্মত্যাগ- পর্ব-৪৩

একদিন সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দরবার শরীফে এক ব্যক্তি এসে হাযির হলেন এবং বললেন, 'ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কিছুদিন পর আমার মেয়ের বিয়ে কিন্তু আমি অনেক গরীব। মেয়েকে বিয়ে দেয়ার মতো আমার কোনো সামর্থ্য নেই। দয়া করে আপনি আমাকে কিছু সাহায্য করুন।' তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, 'হে ব্যক্তি তুমি এক কাজ করো, যিনি আমার জলীলুল ক্বদর ছাহাবী এবং ধনী ব্যক্তি হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার কাছে গিয়ে আমার কথা বলবে যে, আমি তোমাকে পাঠিয়েছি। তিনি যেন তোমাকে সাহায্য করেন।'

সেই ব্যক্তি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার দরবারে এসে হাযির হলেন এবং দেখতে পেলেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার শরীকদার ব্যবসায়ীর নিকট থেকে এক পয়সার হিসাব বুঝে নিচ্ছেন। তখন সে ব্যক্তি মনে মনে চিন্তা করতে লাগলেন, যিনি এক পয়সার হিসাব নিতে পারেন তিনি আমাকে কিভাবে সাহায্য করবেন? একথা চিন্তা করে তিনি আবার গিয়ে হাযির হলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফে। বললেন, 'ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম তিনি এক ব্যক্তির কাছ থেকে এক পয়সার হিসাব বুঝে নিচ্ছেন। যিনি এক পয়সার হিসাব বুঝে নেন তিনি কিভাবে দান করতে পারেন?' হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, 'হে ব্যক্তি! তুমি উনার কাছে গিয়ে আমার কথা বলো, তাহলে তিনি তোমাকে সাহায্য করবেন।'

তখন সেই ব্যক্তি আবার সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার দরবার শরীফে হাযির হলেন এবং বললেন, 'হে জলীলুল ক্বদর ছাহাবী! আমাকে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। আপনি যেন আমাকে কিছু সাহায্য করেন।' তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, 'হে ব্যক্তি। আপনি এক কাজ করুন। আপনি ওমুক পাহাড়ে গিয়ে দাঁড়ান। সেখানে কিছুক্ষণ পর দেখতে পাবেন সেই পাহাড়ের পিছন দিক থেকে আমার একটি উটের কাফেলা আসছে এবং সকল উটের পিঠের উপর বোঝাই করা সম্পদ রয়েছে। সেখান থেকে আপনার যতটুকু ইচ্ছা ততটুকু সম্পদ আপনি নিয়ে যান।'

সে ব্যক্তি উনার কথা অনুযায়ী সেই পাহাড়ে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং ঠিক কিছুক্ষণ পরে দেখা গেলো সেই পাহাড়ের পিছন দিক থেকে বিরাট এক উটের কাফেলা আসছে এবং সমস্ত উটের পিঠে বোঝাই করা সম্পদ রয়েছে। অতঃপর উক্ত বিরাট কাফেলা সেই ব্যক্তির সম্মুখে আসলো। তখন সেই ব্যক্তি হাত উঁচু করে সেই উটের কাফেলাটিকে থামিয়ে দিলেন। সেই কাফেলার যিনি সর্দার ছিলেন, তিনি বললেন, 'হে ব্যক্তি! আপনি কেন এই উটের কাফেলাটিকে থামিয়ে দিলেন?' সেই ব্যক্তি বললেন, 'হে কাফেলার সর্দার! সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, এই উটের কাফেলা থেকে আমার যে উটটি পছন্দ হয় সে উটটিই যেন সম্পদসহ নিয়ে যাই।' একথা শুনে কাফেলার সর্দার বললেন, 'ঠিক আছে, আপনার যে উটটি পছন্দ হয় সে উটটি সম্পদসহ নিয়ে যান।' তখন সেই ব্যক্তি সবার সামনের সবচেয়ে সুন্দর এবং সবচাইতে বেশি সম্পদ বোঝাই করা উটটিকে পছন্দ করলেন। এটা দেখে সেই কাফেলার সর্দার বললেন, 'হে ব্যক্তি! আপনাকে এই উটটি দেয়া যাবে না। কেননা উটের নিয়ম হলো, সামনের উট যেদিকে যায় পিছনের উটগুলোও তার পিছনে পিছনে সেদিকে যায়।' কিন্তু সে ব্যক্তি সামনের উটটি ব্যতীত অন্য কোন উট নিতে রাজি হলো না।

তখন দুজনে মিলে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার কাছে গিয়ে হাযির হলেন এবং কাফেলার সর্দার বললেন, 'হে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম! আপনি কি এই ব্যক্তিকে আমাদের কাফেলা থেকে যেকোনো একটি উট সম্পদসহ নিয়ে যেতে বলেছেন?' সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, 'হ্যাঁ, আমি তা বলেছি।' কাফেলার সর্দার বললেন, 'এই ব্যক্তি আমাদের কাফেলার সর্বপ্রথম উটটিকে পছন্দ করেছেন। এখন যদি এ ব্যক্তিকে সেই উটটি দিয়ে দেয়া হয় তাহলে সমস্ত উটসহ সমস্ত সম্পদও চলে যাবে। আমাদের কিছুই থাকবে না।'

সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার চেহারা মুবারক লাল হয়ে গেল এবং তিনি বললেন, 'হে কাফেলার সর্দার! তুমি কি জানো, এই ব্যক্তিকে কে আমার কাছে পাঠিয়েছেন? তিনি হলেন, সরওয়ারে দোজাহান, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কাজেই এ ব্যক্তি তো শুধু আমার উট এবং সম্পদ চেয়েছে। হে কাফেলার সর্দার! তুমি শুনে রাখো এবং জেনে রাখো! এই ব্যক্তি যদি আমাকেও চায় তাহলে আমি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালামকেও উনার সঙ্গে চলে যেতে হবে।' সুবহানাল্লাহ!

তারপর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নির্দেশে উক্ত ব্যক্তি কাফেলার এক হাজার উট খাদ্য-শস্যসহ সঙ্গে নিয়ে চলে গেলেন। সুবহানাল্লাহ!

এভাবেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নিজেদের জান-মাল সবকিছু কুরবানী করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক পাওয়ার জন্য কোশেশ করেছেন এবং শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে খুশি প্রকাশ করেছেন এবং বিনিময়ে দুনিয়াতে থাকতেই খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৪২ ( যিনি দুইবার সম্মানিত জান্নাত খরিদ করেছেন )

যিনি দুইবার সম্মানিত জান্নাত খরিদ করেছেন- পর্ব-৪২

মদীনা শরীফে বীরে রুমা নামে একটি মিষ্টি পানির কূপ ছিল। তা ছিল এক ইহুদীর সম্পত্তি। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পানি পানের সুবিধার্থে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঘোষণা মুবারক করেন, যিনি কূপটি খরিদ করে দিবেন, উনার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ! ঘোষণা মুবারক শুনে একজন সম্মানিত ছাহাবী ইহুদীর কাছে যান। ইহুদী প্রথমে কূপ বিক্রি করতে চাচ্ছিলো না। তারপর বার হাজার দিরহামের বিনিময়ে সে কূপের অর্ধেক বিক্রি করে, আর বাকি অর্ধেক নিজের জন্য রেখে দেয়। তবে শর্ত ছিল সেই কূপ থেকে একদিন ইহুদীরা পানি তুলবে আরেক দিন মুসলমানগণ পানি তুলবেন। তারপর সেই সম্মানিত ছাহাবী তিনি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে তা হাদিয়া করে দেন।

কিছুদিন পর দেখা গেলো যেদিন ইহুদীরা কূপ থেকে পানি তুলতো, তারা এতো বেশী করে পানি তুলে নিতো যে পরের দিন মুসলমানগণ পানি সংকটে পড়ে যেতেন। তখন এই সংকট নিরসনের জন্য তিনি আবার ইহুদীকে প্রস্তাব দেন আরো বার হাজার দিরহামের বিনিময়ে সে যেন সম্পূর্ণ কূপটিই উনার কাছে বিক্রি করে দেয়। কিন্তু চালাক ইহুদী তাতে রাজি না হয়ে আঠারো হাজার দিরহাম দাবি করে। তিনি তাতেই রাজি হয়ে মোট ত্রিশ হাজার দিরহামের বিনিময়ে সম্পূর্ণ কূপটি কিনে নিয়ে হাদিয়া করে দেন। সুবহানাল্লাহ!

আরেকবার যখন মসজিদে নববী শরীফ সম্প্রসারিত করার প্রয়োজন দেখা দিলো, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঘোষণা মুবারক করেন: যিনি এই খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিবেন উনার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ! সেই সম্মানিত ছাহাবী, এই ঘোষণা মুবারক শুনে উঠে যান এবং সম্প্রসারণের জন্য যতখানি জমি প্রয়োজন ততখানি খরিদ করে তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে হাদিয়া করেন। সুবহানাল্লাহ!

কে এই সম্মানিত ছাহাবী? তিনি হলেন আমীরুল মু'মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উসমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! উনার প্রতি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এতো সন্তুষ্ট ছিলেন যে, তিনি যখনই মিম্বর শরীফে খুতবা মুবারক দিতে দাঁড়াতেন, তখনই ইরশাদ মুবারক করতেন, "হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি একজন জান্নাতি ব্যক্তিত্ব মুবারক।” সুবহানাল্লাহ!

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৪১ ( মিশরের নীলনদের ঘটনা )

মিশরের নীলনদের ঘটনা- পর্ব-৪১ 

মিশরবাসীগণ নীলনদের পানি দিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতো। মুসলমানগণ যখন মিশর বিজয় করলেন তখন সেখানকার প্রধান হযরত আমর ইবনে আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট মিশরবাসীগণ আবেদন জানালো যে, আমাদের দেশ কৃষিনির্ভর এবং এই কৃষিকর্ম নীলনদের উপর নির্ভরশীল। আর নীলনদের একটি স্বভাব হচ্ছে, প্রতি বছর তার মধ্যে কোনো পিতার একমাত্র সন্তান, একটি অতি সুন্দরী কুমারী কন্যাকে, স্বর্ণ গয়না দিয়ে সাজিয়ে দামী পোশাক পরিয়ে নীলনদে নিক্ষেপ করতে হয়। এরূপ না হলে নীলনদ প্রবাহিত হয় না, পানি বাড়ে না; ফলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এটা শুনে হযরত আমর ইবনে আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, 'দেখুন আমরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে গ্রহণ করার পূর্বে অনেক কিছু করেছি। কিন্তু এখন আমরা এই সমস্ত বদ রসম, যেগুলো কুফরি শিরকের অন্তর্ভুক্ত সেগুলো করি না।' কিন্তু দেখা গেল সত্যি নীলনদের পানি আস্তে আস্তে শুকাতে থাকলো। এলাকাবাসী তাদের প্রস্তাব নিয়ে উনার কাছে বার বার আসা-যাওয়া করতে থাকলো। কিছু কিছু এলাকাবাসী পানির অভাবে অন্যত্র চলেও যেতে লাগলো। শেষ পর্যন্ত খরার সৃষ্টি হলো, চারিদিকে পানির জন্য হাহাকার শুরু হলো। একটা কঠিন ফিতনার আশংকা তৈরি হলো। এলাকাবাসী হযরত আমর ইবনে আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললো বিষয়টি আমীরুল মু'মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম উনাকে অবহিত করার জন্য। তখন তিনি সম্মত হয়ে এলাকাবাসীর দাবী ও উনার নিজের মতামতসহ পুরো বিষয়টি আমীরুল মু'মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্কে আ'যম আলাইহিস সালাম উনাকে চিঠি মারফত জানালেন।

আমীরুল মু'মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্কে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি সেই চিঠি পড়ে হযরত আমর ইবনে আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপরে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করলেন যে, উনার যিনি প্রতিনিধি তিনি এই বদ রসম পালন করেননি। সুবহানাল্লাহ! তিনি চিঠির জবাবে লিখলেন, 'আপনি যা করেছেন উত্তম করেছেন। চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমরা এই কুফরি শিরকি বদ রসম পালন করব না; যেহেতু সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে এটা হারাম।' তিনি আলাদা একটা চিঠি হযরত আমর ইবনে আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা উনাকে পাঠালেন নীলনদের মধ্যে নিক্ষেপ করার জন্য। আর বলে দিলেন চিঠি খানা তিনি যখন নীলনদের মধ্যে ফেলবেন, তখন যেন এলাকার গণ্য মান্য ব্যক্তিবর্গ যারা উনাকে পানির জন্য বলেছিল, তাদেরকে সাথে করে নিয়ে যান।

চিঠিখানায় লিখা ছিল, নীলনদের প্রতি আমীরুল মু'মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম উনার ফরমান। ফরমানখানার সরাসরি ভাষা ছিল এরকম-

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

"এই চিঠি মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দা উমর ইবনুল খত্তাব (আলাইহিস সালাম) উনার পক্ষ হতে মিশরের নীলনদের প্রতি। হে নীলনদ! তুমি যদি নিজের ইচ্ছায় প্রবাহিত হয়ে থাকো, তাহলে তোমার পানি আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই। আর যদি তুমি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে প্রবাহিত হয়ে থাকো, তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন তোমাকে প্রবাহিত করে দেন।"

চিঠিটা যখন পৌঁছলো তখন বাদ আছর। যারা ঈমান এনেছেন উনারা বিষয়টা বুঝতে পারলেন; কিন্তু যারা ঈমান আনেনি তারা আশ্চর্যান্বিত হলো, যে ব্যাপারটা কি? যিনি আমীরুল মু'মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্কে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি মদিনা শরীফ হতে নীলনদের জন্য একটা চিঠি পাঠিয়েছেন। নীলনদ কি কারও কথা শুনে!? নাকি পড়াশুনা জানে যে সে চিঠিতে কি বলা হয়েছে তা বুঝতে পারবে!? অনেক লোক জমা হলো নীলনদের তীরে। মাগরিবের পূর্বে হযরত আমর ইবনে আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সেই পাতলা চামড়ার মধ্যে লিখিত চিঠিখানা নীলনদে নিক্ষেপ করলেন। সেই সময় নীলনদ সম্পূর্ণ শুকনো ছিল। তার যমীনটা পর্যন্ত ফাটা।

ইতিহাসে বর্ণিত রয়েছে, তিনি যখন চিঠিখানা নীলনদের বুকে নিক্ষেপ করলেন; তখন পাতলা চামড়ার চিঠিখানা বাতাসে দুলতে দুলতে গিয়ে নীলনদের যমীন স্পর্শ করলো। চিঠিখানা নীলনদের খরায় ফেটে যাওয়া যমীন স্পর্শ করা মাত্রই বিকট একটা শব্দ হলো এবং একলাফে পানি ১৬ হাত হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! এই অভুতপূর্ব ঘটনা দেখে অনেক লোক যারা তখনও মুসলমান হয়নি তারা মুসলমান হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! সেদিন থেকে নীলনদে কুমারী উৎসর্গ করার জাহিলী যুগের কুফরি প্রথা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ!

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৪০ ( ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম উনার দৃঢ়তা )

ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম উনার দৃঢ়তা-পর্ব-৪০

আমীরুল মু'মিনীন হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত কালে জেরুজালেম তথা বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ ইহুদীদের হাত থেকে মুক্ত করেন মুসলিম সেনাপতি বিশিষ্ট ছাহাবী, হযরত আবু উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সেখানকার ইহুদী সম্প্রদায়দের আসমানী কিতাবে বর্ণিত ছিল আখিরী রসুল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতগণ বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ জয় করবেন। এমনকি সেই সময় যিনি আমীরুল মু'মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন থাকবেন, তিনি কি অবস্থায় আগমন করবেন সেটাও সেখানে বর্ণনা করা ছিল। তাই মুসলমানদের বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ বিজয়ের পর ইহুদীরা ফিকির করলো তবে উনারাই কি সেই সম্মানিত ক্বওম? তাই তারা কিতাবের সাথে মিলানোর জন্য হযরত আবু উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট প্রস্তাব দিল যে, 'আমরা সব কিছু আপনাদের বুঝিয়ে দিব। তবে শর্ত হলো আপনাদের যিনি আমীরুল মু'মিনীন হযরত ফারুকে আ'যম

আলাইহিস সালাম উনাকে এখানে তাশরীফ মুবারক আনতে হবে। তিনি যদি দয়া করে আসেন তবে আমরা উনার নিকট সব কিছু হস্তান্তর করবো।' তখন হযরত আবু উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট এই বলে চিঠি লিখেন যে, 'বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ ইহুদীদের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে, তবে তাদের ইচ্ছা বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ উনার চাবি যিনি আমীরুল মু'মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন উনার নিকট হস্তান্তর করবে। সুতরাং অনুগ্রহপূর্বক আপনি বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফে আসুন।'

চিঠি পেয়ে হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, তখন উনার পরিধানে কোনো নতুন বস্ত্র ছিল না। বরং উনার পরিধানে যে বস্ত্রটি ছিল তাতে তের থেকে চৌদ্দটি পট্টি ছিল। তার মধ্যে একটি পট্টি ছিল চামড়ার। দীর্ঘ সফরের কারনে তা ধুলায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তাই তিনি পোশাক মুবারক ধুয়ে পরিষ্কার করে নিলেন। হযরত আবু উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত ফারূক্কে আ'যম আলাইহিস সালাম উনাকে স্বাগত জানানোর জন্য অনেকদূর এগিয়ে এসেছিলেন। তিনি উনার পোশাক মুবারকের অবস্থা দেখে বললেন, 'হে আমীরুল মু'মিনীন! আপনি কি আপনার পরিধেয় বস্ত্রটি পরিবর্তন করে নিবেন?' জবাবে হযরত ফারূক্কে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, 'না। আমরা তো এমন সম্প্রদায়, যাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম দ্বারা সম্মানিত করেছেন। কাজেই আমাকে এরূপ অবস্থাতেই যেতে দিন।' সুবহানাল্লাহ!

হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম সম্পূর্ণ সফরেই পর্যায়ক্রমে নিজে একবার উটের উপর সাওয়ার হতেন, একবার উনার খাদিমকে সাওয়ার করাতেন ইনসাফের জন্য। যখন বাইতুল মুক্কাদ্দাস শরীফে পৌঁছলেন তখন তিনি ছিলেন উটের লাগাম ধরা অবস্থায় যমীনে আর উনার খাদেম ছিলেন উটের উপর সাওয়ার অবস্থায়। সুবহানাল্লাহ! ইহুদীরা তাওরাত কিতাবের বর্ণনার সাথে সবকিছু মিলাচ্ছিল। যখন দেখলো তাওরাত কিতাবের বর্ণনার সাথে সব মিলে গিয়েছে তখন তারা উনার নিকট বাইতুল মুক্কাদ্দাস শরীফ উনার চাবি হস্তান্তর করলো।

চাবি হস্তান্তরের পর ইহুদীরা আরয করলো, 'হে আমীরুল মু'মিনীন আলাইহিস সালাম! আপনি এতো দূর থেকে এসেছেন; আপনার সম্মানার্থে আমরা ইসলামী কায়দায় কিছু মেহমানদারীর ব্যবস্থা করতে চাই, যদি আপনি

সম্মতি মুবারক প্রকাশ করেন।' সম্মতি মুবারক পেয়ে ইহুদীরা মেহমানদারীর ব্যবস্থা করলো। আমীরুল মু'মিনীন হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম সকলকে নিয়ে যথাসময়ে সেখানে উপস্থিত হলেন। উনার সম্মুখে চামড়ার সুন্নতি দস্তরখানা বিছিয়ে দেয়া হলো এবং তাতে রুটি ও একটি পাত্রে গোশত দেয়া হলো। হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম দস্তরখানা থেকে রুটি নিয়ে গোশত দিয়ে খেলেন। খাওয়া শেষে দস্তরখানায় পড়ে থাকা রুটির টুকরোগুলো টুকিয়ে টুকিয়ে খাচ্ছিলেন। এটা দেখে কেউ একজন বললেন, 'হে আমীরুল মু'মিনীন! এখানে অনেক রাজা বাদশা, আমীর ওমরা উপস্থিত। আপনি যদি তাদের সম্মুখে এভাবে রুটির টুকরা টুকিয়ে টুকিয়ে খান, তবে কেমন দেখা যায়?' জবাবে আমীরুল মু'মিনীন হযরত ফারূক্কে আ'যম আলাইহিস সালাম সবাইকে লক্ষ্য করে বুলন্দ স্বরে বললেন, 'আমি কি এইসব আহমকদের (রাজা-বাদশা) জন্য আমার যিনি রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার সুন্নত মুবারক পরিহার করবো?' সুবহানাল্লাহ!

খাওয়ার পর দস্তরখানা বা প্লেট পরিষ্কার করে খাওয়া সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি সেই সুন্নত মুবারক যথাযথভাবে পালন করেছেন। তিনি সবসময় সবকিছুর উপর সুন্নত মুবারক অনুসরণকে প্রাধান্য দিতেন।

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৩৯ ( মহিয়সী কন্যা )

মহিয়সী কন্যা-পর্ব-৩৯

একদা হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি নাগরিকদের অবস্থা জানার জন্য পবিত্র নগরী মদীনা শরীফের রাস্তায় ঘুরছিলেন। হঠাৎ এক বাড়িতে এক বৃদ্ধা ও তাঁর কন্যার কথোপকথন শুনে তিনি দাঁড়িয়ে যান। বৃদ্ধা মহিলা তাঁর মেয়েকে বলছেন, 'মা, দুধে পানি মিশিয়ে বিক্রি করলে হয় না? তাহলে আমাদের অবস্থা আরো স্বচ্ছল হতো।' কন্যা তাঁর মায়ের উত্তরে বললেন, 'তা কি করে হয় মা! আমীরুল মু'মিনীন উনার হুকুম কেউ দুধে পানি মেশাতে পারবে না। পবিত্র দ্বীন ইসলাম এটা পছন্দ করে না।' উত্তরে বৃদ্ধা বললেন, 'খলীফা উনার আদেশ হলে তাতে কি হয়েছে? কেউ তো আর দেখছে না।' কন্যা প্রতিবাদ করে বললেন, 'না মা! তা হতে পারে না। প্রত্যেক বিশ্বাসী মুসলমান উনাদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্মানিত খলীফা উনার মুবারক আদেশ মেনে চলা। খলীফা না দেখতে পান, কিন্তু খলীফা উনার যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি তো সর্বব্যাপী; তিনি তো দেখতে পাচ্ছেন।'


আমীরুল মু'মিনীন হযরত ফারূক্কে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনলেন, তারপর চলে গেলেন। তিনি ঘটনাটা ভুলতে পারলেন না। ভাবলেন, অজানা ওই মেয়েটিকে কি পুরষ্কার দেয়া যায়! অনেক ভেবে একটা সিদ্ধান্ত নিলেন। পরদিন খিলাফতী দরবার শরীফে এসে খলীফা আলাইহিস সালাম তিনি সেই অজানা মেয়েটিকে ডেকে পাঠালেন। মা ও মেয়ে ভীত সন্ত্রস্ত ও কম্পিত পদে খলীফা উনার মহান দরবার শরীফে এসে উপস্থিত হন। তাঁরা উপস্থিত হলে খলীফা তাঁদের জন্য ভাতা নির্ধারণ করেন এবং মেয়েটিকে উপহারস্বরূপ উনার এক পুত্র হযরত আছিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে বিবাহ দেন।

পুত্র বিগত রাতের সমস্ত বিবরণ শুনে খুশি হন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করেন। কেননা এর চেয়ে উপযুক্ত কন্যা আর কোথায় খুঁজে পাওয়া যাবে? এই মহিয়সী মেয়ে উনার ঘরেই হযরত লায়লা বিনতে আছিম রহমাতুল্লাহি আলাইহা বিলাদত শরীফ লাভ করেন, যিনি পরে হযরত উমর বিন আবদুল আযীয রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ন্যায় মহান খলীফার সম্মানিতা মা হন। সুবহানাল্লাহ!

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৩৮ ( যিনি সমস্ত শাসকদের জন্য আদর্শ )

যিনি সমস্ত শাসকদের জন্য আদর্শ-পর্ব-৩৮

মুসলিম জাহানের যিনি দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি জনগণের অবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য রাত্রিতে নগরীর অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়াতেন। একদিন তিনি উনার গোলাম হযরত আসলাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফের কাছেই হাররা নামক জায়গায় যান। সেখানে জনমানবহীন এক স্থানে উনারা আগুন দেখতে পান এবং সেই আগুনের নিকটবর্তী হন।

কাছে গিয়ে দেখেন যে, একজন মহিলার আশেপাশে কয়েকটি ছেলেমেয়ে কান্নাকাটি করছে। আর মহিলাটি চুলার উপর পানি ভর্তি পাতিল বসিয়ে রেখেছে। হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম জানতে চাইলেন, বাচ্চারা কেন কান্নাকাটি করছে। মহিলাটি বললো, 'তারা ক্ষুধার জ্বালায় অস্থির হয়ে কাঁদছে। তাদের সান্তনা দেয়ার জন্য আমি পানি ভর্তি পাতিল চুলায় দিয়েছি, যেন তারা খাওয়ার আশায় চুপ থাকে ও ঘুমিয়ে যায়।' মহিলাটি আরো বললো, 'মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফে আমীরুল মু'মিনীন হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম উনার এবং আমার ফায়ছালা হবে যে, কেন তিনি আমাদের এই দুরাবস্থার খবর রাখেন না।' হযরত ফারূক্কে আ'যম আলাইহিস সালাম কেঁদে বললেন, 'মহান আল্লাহ পাক আপনার উপর রহমত নাযিল করুন! আমীরুল মু'মিনীন কিভাবে আপনাদের অবস্থা জানবেন?' মহিলাটি বললো, 'এটা কেমন কথা যে, তিনি আমাদের আমীর হয়েছেন অথচ আমাদের খবর রাখবেন না?'

এটা শুনে হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আসলাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সাথে নিয়ে চলে আসলেন এবং বায়তুল মাল হতে আটা, খেজুর, চর্বি, কাপড় ও কিছু টাকা নিয়ে একটা বস্তায় ভরলেন। তিনি বললেন, 'এই বস্তা আমার পিঠে তুলে দাও।' সবাই উনাকে বাঁধা দিয়ে বলল, 'হে আমীরুল মু'মিনীন আলাইহিস সালাম! আপনি কেন বোঝা বহন করবেন? আমাদেরকে দিন! আমরা বহন করে পৌঁছে দিচ্ছি।' কিন্তু তিনি বললেন, 'কিয়ামতের দিন কি আমার বোঝা তোমরা উঠাবে? এটা আমাকেই বহন করতে হবে। কেননা এ ব্যাপারে আমাকেই প্রশ্ন করা হবে।'

তারপর বস্তা উনার পিঠ মুবারকে উঠিয়ে দেয়া হলো। তিনি খুব দ্রুত মহিলাটির নিকট গেলেন এবং নিজ হাত মুবারকে খাবার তৈরি করে

শিশুদেরকে খাওয়ালেন। এতে মহিলাটি খুব আনন্দিত হয়ে বললো, 'মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে উপযুক্ত পুরস্কার দিন! হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম উনার স্থলে আপনি যদি খলীফা হতেন!' হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, 'তুমি আগামীকাল আমীরুল মু'মিনীন আলাইহিস সালাম উনার নিকট যেও। আমি উনার তরফ থেকে তোমার জন্য ভাতার বন্দোবস্ত করে দিব।' তারপর তাদের থেকে বিদায় নিয়ে তিনি খানিকটা দূরে গেলেন এবং সেখান থেকেই কিছুক্ষণ তাদেরকে দেখলেন। তিনি প্রথমে তাদেরকে কান্না করতে দেখে কষ্ট পেয়েছিলেন, এখন তাদেরকে আনন্দিত অবস্থায় দেখে শান্তি লাভ করলেন। সুবহানাল্লাহ!

হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি বলতেন, 'ফোরাতের তীরে একটি কুকুরও যদি না খেয়ে থাকে, তাহলে আমাকে তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে।' সুবহানাল্লাহ! তিনি বিশ্বের সমস্ত শাসকের জন্য অসামান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন এবং ইসলামী শাসন ব্যবস্থার মর্যাদা ও প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছেন।

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৩৭ ( বিদ্বেষ পোষণের শাস্তি )

বিদ্বেষ পোষণের শাস্তি-পর্ব-৩৭

হিজরী নয়শ শতকে এক বুযুর্গ ব্যক্তি ছিলেন ইয়েমেনে। তিনি প্রায় প্রতি বছরই পবিত্র হজ্জ করতে যেতেন। একবছর হজ্জ করতে গিয়ে পবিত্র রওযা শরীফ যিয়ারত করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত সালাম পেশ করলেন। তারপর পাশে যে সাইয়্যিদুনা হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম উনাদের রওযা শরীফ ছিল, উনাদের প্রতিও ছলাত সালাম পাঠ করলেন। সেখানে একটা রাফিযি* লোক ছিল। এটা দেখে সেই লোকের মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি আসলো। সে নিজের বাড়িতে বুযুর্গ ব্যক্তিকে দাওয়াত দিল। বুযুর্গ ব্যক্তি চিন্তা করলেন, লোকটি যেহেতু মদীনা শরীফ উনার অধিবাসী, সেহেতু সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতিবেশি। তার একটা হক্ক রয়েছে। তাই তিনি দাওয়াত কবুল করলেন।

রাফেয়ি লোকটি মোটামুটি সম্পদশালী ছিল। বুযুর্গ ব্যক্তি তার বাড়িতে ঢোকা মাত্র, লোকটা তার দুই জন হাবশী গোলামকে বললো, 'এই বুযুর্গ ব্যক্তির জিভ কেটে দাও।' নাউযুবিল্লাহ। হাবশী গোলামম্বয় মনিবের আদেশ পালন করলো। লোকটি কাটা জিভটা বুযুর্গ ব্যক্তির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো, আপনি যে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম উনাদের ছানা-ছিফত করেছিলেন; এখন উনাদের কাছে এই কাটা জিভটা নিয়ে যান। উনারা আপনার জিভ জোড়া লাগিয়ে দিবেন।'

বুযুর্গ ব্যক্তি অত্যন্ত কষ্ট পেলেন এবং কাঁদতে কাঁদতে কাটা জিভটি নিয়ে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওযা মুবারকে গেলেন। উনার জিভ কাটা ছিল বলে তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। তাই তিনি অন্তর দিয়ে উনার কষ্টের কথা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে পেশ করলেন। এ অবস্থায় একসময় উনার তন্দ্রা এসে গেল। তখন তিনি স্বপ্নে দেখলেন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম উনাদেরকে সাথে নিয়ে, সেখানে তাশরীফ মুবারক এনেছেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাটা জিভটা উনার হাত মুবারকে নিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম উনাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, 'দেখুন আপনাদের ছানা-ছিফত করার কারণে, অমুক রাফেযি লোকটা তার হাবশী গোলাম দিয়ে এই ব্যক্তির জিভ কেটে দিয়েছে।' এই বলে তিনি নিজেই জিভটা বুযুর্গ ব্যক্তির মুখের ভিতর লাগিয়ে দিলেন।

যখন জিভটা লাগিয়ে দেয়া হলো, তখন বুযুর্গ ব্যক্তির তন্দ্রা ভেঙ্গে গেল। তিনি দেখতে পেলেন উনার জিভটা যথাস্থানে জোড়া লেগে আছে, তিনি সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! বুযুর্গ ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের শুকরিয়া আদায় করলেন এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্কে আ'যম আলাইহিস সালাম উনাদেরও শুকরিয়া আদায় করে, ছলাত-সালাম পাঠ করে সেবারের মত দেশে ফিরে গেলেন।

পরের বছর আবার তিনি হজ্জ করতে আসলেন এবং পূর্বের মতই পবিত্র রওযা শরীফ যিয়ারত করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার

প্রতি ছলাত সালাম পেশ করে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম, উনাদের প্রতিও ছলাত সালাম পাঠ করলেন। একটা যুবক বুযুর্গ ব্যক্তিকে লক্ষ্য করছিল। তিনি রওযা মুবারক যিয়ারত শেষে যখন বের হয়ে আসলেন, তখন সেই যুবক উনাকে নিজের বাসায় দাওয়াত করলো। বুযুর্গ ব্যক্তি মনে মনে ফিকির করলেন আগের বার তো এক বৃদ্ধ লোকের দাওয়াত কবুল করে তিনি কষ্ট পেয়েছিলেন, এবারও তেমন কিছু হয় কিনা! কিন্তু যেহেতু যুবকটি মদীনা শরীফের অধিবাসী, সুতরাং আদবের দিকে লক্ষ্য করে তিনি এবারও দাওয়াত কবুল করলেন।

তিনি যখন যুবকটির বাড়িতে গেলেন, তখন বাড়িটি দেখে উনার কাছে পরিচিত মনে হচ্ছিলো। যুবকটি উনাকে বললো, 'আপনি চিন্তা করবেন না। এই বাড়িতেই আপনি এর আগের বছর এসেছিলেন। গতবার যে ঘটনা ঘটেছিল, এবার আর তেমন কিছু ঘটবে না। আপনি নিশ্চিন্তে বাড়িতে প্রবেশ করুন।' বুযুর্গ ব্যক্তি বাড়িতে প্রবেশ করলে উনাকে যথেষ্ট তা'যীম-তাকরীম করা হলো, মেহমানদারী করা হলো। তারপর যুবক বললো, 'আমি আপনাকে একটি জিনিস দেখাবো।' উনাকে একটি কামরার সামনে নিয়ে যাওয়া হলো। দরজার তালা খোলার পর দেখা গেল, ঘরের কোণে গলায় শিকল বাঁধা একটি বানর রয়েছে। যুবকটি বললো, 'এই বানরটিকে কি আপনি চিনেন?' বুযুর্গ ব্যক্তি বললেন, 'আমি বানরকে চিনবো কিভাবে?' যুবকটি বললো, 'এই বানরটি হলো আমার পিতা। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্কে আ'যম আলাইহিস সালাম উনাদের ছানা-ছিফত করার কারণে, সে আপনাকে গতবছর দাওয়াত দিয়ে আপনার জিভ কেটে দিয়েছিল। এই নিকৃষ্ট কাজের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার গযব নাযিল হয়ে সে মানুষ থেকে বানরে পরিণত হয়েছে।' নাউযুবিল্লাহ!

তখন বুযুর্গ ব্যক্তি ঐ বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলেন। মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুকরিয়া আদায় করলেন এবং হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তা'য়ালা আনহুম উনাদের শুকরিয়া আদায় করলেন। সুবহানাল্লাহ!

* যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে তাদেরকে রাফিযি বলা হয়।

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৩৬ ( মিতব্যয়ীতার অনুপম দৃষ্টান্ত )

মিতব্যয়ীতার অনুপম দৃষ্টান্ত-পর্ব-৩৬

হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন কাপড় ব্যবসায়ী। এর দ্বারাই তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। খিলাফত মুবারকের দায়িত্ব গ্রহণ করার পরদিন যথারীতি কয়েক খানা চাদর হাতে নিয়ে তিনি বাজারে চললেন। পথিমধ্যে হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেন, 'আপনি যদি বেচাকেনায় লিপ্ত থাকেন তবে খিলাফতের কাজ কি করে চলবে?' হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, 'আমি যদি ব্যবসার কাজ না করি তাহলে আমার পরিবার কিভাবে চলবে?' তখন হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, 'হযরত আবু উবায়দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট চলুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমিনুল উম্মত উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। তিনি আপনার জন্য বাইতুল মাল হতে কিছু ভাতা ধার্য করে দিবেন।' তারপর উভয়ে হযরত আবু উবায়দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট গেলেন এবং এসকল বিষয়াদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন। সে অনুযায়ী তিনি হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত পরিচালনার আনজাম বাবদ একজন মধ্যম শ্রেণীর মুহাজিরের সমপরিমাণ ভাতা ধার্য করে দিলেন। এই ভাতা দিয়েই তিনি উনার সংসার খরচ ও জরুরত সমাধা করতেন।

একদিন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি উনার আহলিয়ার নিকট মিষ্টি কিছু খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। উনার আহলিয়া, উহা বানানোর মতো কোনো ব্যবস্থা নেই বলে জানালেন। কিন্তু তখন থেকে উনার আহলিয়া প্রতিদিনের খরচ হতে একটু একটু করে বাঁচিয়ে রেখে একদিন কিছু মিষ্টি খাবার তৈরি করেন এবং হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে খেতে দেন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি জানতে চাইলেন যে, সেদিন বলা হলো এধরনের খাবার তৈরি করার ব্যবস্থা নাই তাহলে আজকে কিভাবে সম্ভব হলো? উনার আহালিয়া বললেন, "আসলেই কোনো ব্যবস্থা ছিল না, তবে আপনি যেহেতু ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন তাই আমি সংসারের প্রতিদিন খরচ থেকে যতসামান্য যা কিছু সম্ভব তা বাঁচিয়ে জমা করে রাখতে শুরু করলাম। আজকে এতদিন পরে (কোনো কোনো মতে প্রায় ছয় মাস) কিছু জমা হয়েছে যা দিয়ে এ খাবারের ব্যবস্থা করেছি।” সাইয়্যিদুনা হযরত

ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি খেতে খেতে বললেন, "অভিজ্ঞতায় বুঝা গেল, এই পরিমাণ ভাতা আমরা বায়তুল মাল হতে বেশি নিয়ে থাকি, এটা আমাদের দরকার নেই।" তারপর তিনি ওই পরিমাণ ভাতা গ্রহণ করা কমিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!

ইন্তেকালের পূর্বে তিনি উনার সম্মানিতা কন্যা উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন, 'বায়তুল মালে যা কিছু আছে, আমার ইন্তেকালের পরে তা পরবর্তী খলীফার নিকট জমা দিয়ে দিবেন এবং গত দু'বছরে বায়তুল মাল থেকে যতটুকু ভাতা গ্রহণ করেছিলাম তা অমুক বাগান বিক্রি করে পরিশোধ করে দিবেন। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, 'উনার ইন্তেকালের পর উনার নিকট কোনো টাকা পয়সা ছিল না। একটি দুধওয়ালী উট, একটা পেয়ালা এবং একজন খাদিম ছিল।' অন্য বর্ণনায় এসেছে, 'একটি রুমাল এবং একটি বিছানাও ছিল।' পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রথম খলীফা এত প্রতাপশালী হওয়ার পরও এই অতি সামান্য মাল-সামানা রেখেই দুনিয়া হতে চিরবিদায় নেন। তিনি মিতব্যয়ীতা, তাক্বওয়া বা খোদাভীতির বিরল দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন।

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৩৫ ( হারামের প্রতি অনিহা ও খোদাভীতি )

হারামের প্রতি অনিহা ও খোদাভীতি-পর্ব-৩৫

হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম উনার একজন গোলাম ছিলেন। তিনি নিজের মুক্তির জন্য আয়ের একটি নির্ধারিত অংশ হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে দিতেন।

একদিন ঐ গোলাম কিছু খাদ্য নিয়ে আসেন। হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তা হতে এক লোকমা খেয়ে ফেললেন। গোলাম বললেন, 'হুযূর! আমি এ খাবার কোথা থেকে এনেছি এ কথা জিজ্ঞাসা করা ব্যতীতই আপনি তা খেয়ে ফেললেন? অথচ অন্য সময় জিজ্ঞাসা করা ব্যতীত খাদ্য গ্রহণ করেন না।' তিনি বললেন, 'ক্ষুধার কারণে জিজ্ঞাসা করার সময় পাইনি। এখন বলো দেখি তা কোথা থেকে এনেছো?' গোলাম বললেন, 'আমি ঈমান গ্রহণ করার পূর্বে কিছু লোকের জন্য মন্ত্রের দ্বারা তদবীর করি। তারা আমাকে কিছু দেয়ার ওয়াদা করেছিল। আজ তাদের সেখানে বিবাহের উৎসব ছিল। আমিও সেদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাকে দেখে তারা আমাকে সেদিনের পারিশ্রমিক দান করে।'

ঘটনা শুনে হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, 'তুমি আমাকে ধ্বংস করে দিলে!' এই বলে তিনি গলার ভিতর আঙ্গুল দিয়ে বমি করার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু ক্ষুধাবস্থায় খাওয়া একটি মাত্র গ্রাস সহজে কি বের হয়? তখন কেউ একজন বললো, বেশি করে পানি পান করলে বমি হতে পারে। এটা শুনে তিনি বড় এক পেয়ালা পানি নিয়ে পান করতে থাকেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যে ঐ লোকমা বের হয়ে আসলো।

এ অবস্থা দেখে একজন বললেন, 'মহান আল্লাহ পাক আপনার কল্যাণ করুন। একটি মাত্র লোকমা খেয়ে ফেলার জন্য আপনি এত কষ্ট স্বীকার করলেন!' তিনি বললেন 'যদি এই লোকমা বের করতে আমার প্রাণও চলে যেতো তবুও আমি তা বের করতাম। কেননা আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র যবান মুবারকে শুনেছি, "হারাম মালে পালিত শরীরের জন্য আগুনই যথেষ্ট।" তাই আমার ভয় হলো, এই লোকমার দ্বারা আমার কোনো অঙ্গ পালিত হয় কিনা!' সুবহানাল্লাহ!

যদিও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের মতে, গোলামের মাল খাওয়া জায়েয; তবুও হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম সতর্কতার জন্য সন্দেহজনক মাল গ্রহণ করতে রাজি ছিলেন না। সুবহানাল্লাহ!

১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৩৪ ( ছিদ্দীক্ক' লক্কব মুবারকের নেপথ্য কথা)

ছিদ্দীক্ক' লক্কব মুবারকের নেপথ্য কথা-পর্ব-৩৪

পবিত্র মিরাজ শরীফ সংঘটিত হয় আনুষ্ঠানিক পবিত্র নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের এগারোতম বছরের ২৭শে রজব, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) শরীফ রাত্রিতে। সকাল বেলা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মিরাজ শরীফের বর্ণনা দেন যে, তিনি রাতে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে বায়তুল মুক্কাদ্দাস শরীফ হয়ে সেখান থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সাক্ষাত মুবারকে গিয়েছেন, আরশ, কুরসী, লৌহ-কলম, বেহেশত-দোযখ পরিদর্শন করেছেন, তারপর প্রত্যাবর্তন করেছেন ইত্যাদি।

এক কাফির এই বর্ণনা মুবারক শুনে ফিরছিল। পথে দেখা হলো হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে। কাফিরটি বলল, 'হে হযরত আবু বকর আলাইহিস সালাম! আপনি কি জানেন, যাঁকে আপনারা মহাসম্মানিত নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মনে করেন, তিনি কি বলছেন? তিনি বলছেন যে, তিনি এক রাতের মধ্যে এখান থেকে বায়তুল মুক্কাদ্দাস শরীফে গিয়েছেন; যে বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফের দূরত্ব পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে এক মাসের রাস্তা। তারপর আবার সেখান থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাৎ মুবারকে গিয়েছেন এবং সেখান থেকে আবার ফিরেও এসেছেন! এটা কি আপনি বিশ্বাস করেন?'

হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, 'হে ব্যক্তি! তুমি কি নিজের কানে শুনেছো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার যবান মুবারকে এই কথা বলেছেন?' সে ব্যক্তি বললো, 'হ্যাঁ, আমি নিজ কানে শুনেছি।' তখন হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, 'তাহলে তুমি শুনে রাখো, আমি একবার কেন, শত সহস্রবার বিশ্বাস করি যে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সত্য কথাই বলেছেন।' সুবহানাল্লাহ! এটা বলে তিনি রওয়ানা হয়ে গেলেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফের দিকে।

এদিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, 'আপনি এখনি আমার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গিয়ে বলুন যে, আমি, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক, আজ থেকে হযরত আবু বকর আলাইহিস সালাম উনাকে 'ছিদ্দীক্ক' (পরম সত্যবাদী) উপাধি মুবারক দিলাম।' সুবহানাল্লাহ! তারপর যখন হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে পৌঁছলেন, তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে 'ছিদ্দীক্ক' বলে সম্বোধন মুবারক করলেন এবং উনাকে সুসংবাদ মুবারক দিলেন যে, এক কাফিরের মুখে পবিত্র মিরাজ শরীফের বিষয় শুনে বিনা বাক্য ব্যয়ে তা বিশ্বাস করার কারণে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে এই উপাধি মুবারক হাদিয়া করেছেন। সুবহানাল্লাহ!