১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৪৬ ( ইলমের গভীরতা )

ইলমের গভীরতা- পর্ব-৪৬

একদা একদল ইহুদী পাদ্রী হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করলো 'হে আমীরুল মু'মিনীন! আমাদের কতিপয় সুওয়াল রয়েছে। আপনি যদি সেগুলোর জওয়াব দিতে পারেন, তাহলে আমরা ইসলাম গ্রহণ করবো। আমীরুল মু'মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, 'নিশ্চয়ই আমার নিকট ইলমের ষাটটি দরজা রয়েছে। প্রত্যেক দরজার ইলম বহনে কমপক্ষে এক হাজার বাহন প্রয়োজন।' অর্থাৎ উনার ইলম মুবারকের কোনো সীমা নির্ধারণ অসম্ভব বিষয়। 'কাজেই হে ইহুদী সম্প্রদায়! তোমরা আমাকে যেকোনো বিষয়ে সুওয়াল করতে পারো।' তখন ইহুদীরা বললো: আমাদের প্রশ্ন হলো, আসমানসমূহ হতে বড় কোন বিষয়? কোন বিষয় যমীন হতে অধিক প্রশস্ত?

আগুন হতে অধিক গরম কোন জিনিস? কোন বিষয় বাতাস হতে অধিক দ্রুতগতি সম্পন্ন? কোন বিষয় সাগর হতে অধিক ধনী? কোন বিষয় পাথর হতে অধিক শক্ত? কোন বিষয় আমরা দেখি কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি সেদিকে নযর মুবারক দেন না? কোন বিষয় মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য? আর কোন বিষয় বান্দাদের জন্য? কোন বিষয় মহান আল্লাহ পাক এবং বান্দাদের মাঝে বিদ্যমান?'

তারা আরো বললো, 'ঘোড়া, উট, গরু, গাধা, বকরী, কুকুর, শিয়াল, বিড়াল, সিংহ, ঈগল, কাক, চিল, কবুতর, ব্যাঙ, হুদহুদ, তিতির, ঘুঘু, কুমবুরাহ বা ভরত পাখি, চড়ুই, বুলবুলি, মোরগ, মুরগি প্রভৃতি প্রাণী ও পাখি তারা তাদের ডাকে কি বলে? অর্থাৎ তাদের ডাকের অর্থ কি? আগুন ও বাতাস তাদের শোঁ শোঁ শব্দে কি ব্যক্ত করে? তাছাড়া যমীন, আসমান, সমুদ্র, সূর্য এবং চন্দ্র তারা কি বলে?'

তাদের প্রশ্ন শোনার পর তিনি বললেন: 'তোমাদের সুওয়ালের জাওয়াব আমার নিকট অত্যধিক সহজ।' অতঃপর তিনি বললেন, 'তোমরা শুনে রাখো। সৎ ব্যক্তির উপর অপবাদ আসমান হতে বড়। হক্ক যমীন হতে প্রশস্ত। সম্পদ জমা করার ক্ষেত্রে লোভীর অন্তর আগুন হতে গরম। মযলুমের দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে বাতাস হতে অধিক দ্রুতগতি সম্পন্ন। অল্পে তুষ্ট অন্তর সমুদ্র হতেও অধিক ধনী। আর বদকার ব্যক্তির অন্তর পাথর হতেও অধিক শক্ত। আমাদের রূহ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য আর আমাদের আমল আমাদের নিজেদের জন্য। আমাদের দায়িত্ব দোয়া করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করার মালিক।'

হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি আরো বলেন, "ঘোড়া তার হ্রেষা ধ্বনিতে বলে, 'আয় আল্লাহ পাক! মুসলিম উম্মাহকে সম্মানিত করুন এবং কাফিরদেরকে লাঞ্ছিত করুন।' উট বলে, 'পরকালীন পাথেয় না থাকা সত্ত্বেও যে আমলের ক্ষেত্রে নিষ্ক্রীয় থাকে, তার জন্য আশ্চর্য!' গরু বলে, 'হে গাফিল ব্যক্তি! মৃত্যু তোমার জন্য অবধারিত। তাই তুমি আমলে মশগুল হও। হে গাফিল ব্যক্তি! তুমি অতি অল্প সময়ের জন্য দুনিয়াতে আগমনকারী। হে গাফিল ব্যক্তি! যা তুমি পরকালের জন্য প্রেরণ করেছো, সেটাই কেবল তোমার জন্য থাকবে। অতি শীঘ্রই তুমি তোমার আমলের বদলা লাভ করবে।' গাধা বলে, 'আয় আল্লাহ পাক! সুদ প্রদানকারী এবং সুদের মাধ্যমে উপার্জনকারীর উপর লা'নত বর্ষণ করুন।' বকরী বলে, 'হে মৃত্যু! কে তোমাকে বেদনাদায়ক করলো? কে তোমাকে পরিতৃপ্ত করলো?

কে তোমাকে কর্তিত করলো? হে বনী আদম! কে তোমাকে গাফিল বানালো?' কুকুর বলে, 'আয় আল্লাহ পাক! আমি রহমত হতে মাহরুম। তাই যে আমার উপর রহম করে আপনিও তার উপর রহম করুন।' শিয়াল বলে, 'হে রিযিক বণ্টনকারী! আমার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, তা আমার জন্য যথেষ্ট করুন।' বিড়াল তার ডাকে পবিত্র তাওরাত শরীফের দশখানা আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে। সিংহ বলে, 'আয় আল্লাহ পাক! যে ব্যক্তি আপনার নাফরমানী করে, আমাকে তার উপর কর্তৃত্ব দিন।' ঈগল বলে, 'যত দিন ইচ্ছা বেঁচে থাকো কিন্তু একদিন মৃত্যুবরণ করতে হবে। যা ইচ্ছা সঞ্চয় করো কিন্তু একদিন তরক করতে হবে। যাকে ইচ্ছা মুহব্বত করো কিন্তু একদিন পৃথক হতে হবে।' কাক বলে, 'হে উম্মত! নিয়ামত হতে সরে যাওয়াকে ভয় করো। গযব নাযিল হওয়াকে ভয় করো।' কবুতর বলে, 'যে ব্যক্তি তোমার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করেছে, তার সাথে সদাচরণ করো। যে ব্যক্তি তোমার উপর যুলুম করেছে, তাকে ক্ষমা করো। যে তোমাকে বঞ্চিত করেছে, তাকে তুমি দান করো। যে তোমার সাথে পর্দা করেছে, তার সাথে কথা বলো। তাহলে জান্নাত হবে তোমার আবাসস্থল।' ব্যাঙ বলে, 'সুবহানাল্লাহ! সমুদ্রের তলদেশে, পাহাড়ের চূড়ায় এবং গর্তে অবস্থানকারী সকলেই মহান আল্লাহ পাক উনার তাসবীহ মুবারক পাঠ করে। জিহ্বা ও যবানওয়ালা সকলেই মুবারক তাসবীহতে মশগুল রয়েছে।"

হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি ইহুদীদের প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন, "হুদহুদ পাখি বলে, 'আয় আল্লাহ পাক! আমি নিজের নফসের উপর যুলুম করেছি। আপনি আমার গুনাহ ক্ষমা করুন। আপনি ব্যতীত গুনাহ ক্ষমা করার কেউ নেই।' তিতির পাখি বলে, 'মহান আল্লাহ পাক আরশে আ'যীমে ইসতাওয়া হয়েছেন। সমস্ত কিছু উনার রুবুবিয়াতের সাথে সম্পৃক্ত। সর্ব বিষয়ে তিনি অবগত।' ঘুঘু পাখি বলে, 'মৃত্যু নিকটবর্তী। প্রত্যাশা অপূরণীয়। আমলের প্রতিদান গ্রহণ অত্যাবশ্যকীয়।' কুমবুরাহ বা ভরত পাখি বলে, 'আয় আল্লাহ পাক! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীদের প্রতি লা'নত বর্ষণ করুন।' চড়ুই পাখি বলে, 'মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত গোপন বিষয় সম্পর্কে অবগত। হে বিপদ ও বালা মুছিবত দূরকারী! যে ব্যক্তি আপনার হক্ক আদায় করে না, আমাকে তার শস্য ক্ষেতে আধিপত্য দান করুন।' বুলবুলি পাখি বলে, 'দুনিয়াবী নিয়ামত যখন আমার জন্য যথেষ্ট হয়, তখন আমি শুকরিয়া আদায় করি।' মোরগ বলে, 'মহিমাময় পূতপবিত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত রব। হে গাফিল সম্প্রদায়! মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করো।' মুরগি বলে, 'আয় আল্লাহ পাক! আপনি সত্য। আপনার ওয়াদা মুবারকও সত্য।'

ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি আরো বলেন, "আগুন বলে, 'আয় মহান আল্লাহ পাক! আমি জাহান্নামের আগুন হতে পানাহ চাই।' বাতাস বলে, 'আমি আদিষ্টিত। আয় মহান আল্লাহ পাক! যে আমাকে দোষারোপ করে আপনি তার উপর লা'নত বর্ষণ করুন।' পানি বলে, 'সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক পবিত্রতা সম্পর্কে তিনি ব্যতীত অন্য কেউ অবগত নন।' প্রতিদিন যমীন বলে, 'হে আদম সন্তান! তুমি আমার পিঠের উপর নাফরমানী করছো। আমার পেটের ভিতর (কবরে) তোমাকে বিষাক্ত পোকা ভক্ষণ করবে।' প্রতিদিন আসমান বলে, 'আয় আল্লাহ পাক! আমার নিচে অবস্থানকারী সকলের ব্যাপারে আমি সাক্ষী।' সমুদ্র বলে, 'আয় আল্লাহ পাক! যে ব্যক্তি আপনার নাফরমানী করে, তাকে ডুবিয়ে মারতে আমাকে মুবারক অনুমতি প্রদান করুন।' প্রতিদিন অস্ত যাওয়ার সময় সূর্য বলে, 'আয় মহান আল্লাহ পাক! আমার আলো যাদের উপর পতিত হয়েছে, আমি তাদের সকলের আমলের সাক্ষী।'

ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি সমস্ত পশু-পাখি, কিট পতঙ্গসহ পুরো কায়িনাতবাসীর ভাষা সম্পর্কে সম্যক অবগত ছিলেন। এবং সেই ইলম মুবারক তিনি প্রকাশও করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

0 Comments: