যিনি সমস্ত শাসকদের জন্য আদর্শ-পর্ব-৩৮
মুসলিম জাহানের যিনি দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি জনগণের অবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য রাত্রিতে নগরীর অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়াতেন। একদিন তিনি উনার গোলাম হযরত আসলাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফের কাছেই হাররা নামক জায়গায় যান। সেখানে জনমানবহীন এক স্থানে উনারা আগুন দেখতে পান এবং সেই আগুনের নিকটবর্তী হন।
কাছে গিয়ে দেখেন যে, একজন মহিলার আশেপাশে কয়েকটি ছেলেমেয়ে কান্নাকাটি করছে। আর মহিলাটি চুলার উপর পানি ভর্তি পাতিল বসিয়ে রেখেছে। হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম জানতে চাইলেন, বাচ্চারা কেন কান্নাকাটি করছে। মহিলাটি বললো, 'তারা ক্ষুধার জ্বালায় অস্থির হয়ে কাঁদছে। তাদের সান্তনা দেয়ার জন্য আমি পানি ভর্তি পাতিল চুলায় দিয়েছি, যেন তারা খাওয়ার আশায় চুপ থাকে ও ঘুমিয়ে যায়।' মহিলাটি আরো বললো, 'মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফে আমীরুল মু'মিনীন হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম উনার এবং আমার ফায়ছালা হবে যে, কেন তিনি আমাদের এই দুরাবস্থার খবর রাখেন না।' হযরত ফারূক্কে আ'যম আলাইহিস সালাম কেঁদে বললেন, 'মহান আল্লাহ পাক আপনার উপর রহমত নাযিল করুন! আমীরুল মু'মিনীন কিভাবে আপনাদের অবস্থা জানবেন?' মহিলাটি বললো, 'এটা কেমন কথা যে, তিনি আমাদের আমীর হয়েছেন অথচ আমাদের খবর রাখবেন না?'
এটা শুনে হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আসলাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সাথে নিয়ে চলে আসলেন এবং বায়তুল মাল হতে আটা, খেজুর, চর্বি, কাপড় ও কিছু টাকা নিয়ে একটা বস্তায় ভরলেন। তিনি বললেন, 'এই বস্তা আমার পিঠে তুলে দাও।' সবাই উনাকে বাঁধা দিয়ে বলল, 'হে আমীরুল মু'মিনীন আলাইহিস সালাম! আপনি কেন বোঝা বহন করবেন? আমাদেরকে দিন! আমরা বহন করে পৌঁছে দিচ্ছি।' কিন্তু তিনি বললেন, 'কিয়ামতের দিন কি আমার বোঝা তোমরা উঠাবে? এটা আমাকেই বহন করতে হবে। কেননা এ ব্যাপারে আমাকেই প্রশ্ন করা হবে।'
তারপর বস্তা উনার পিঠ মুবারকে উঠিয়ে দেয়া হলো। তিনি খুব দ্রুত মহিলাটির নিকট গেলেন এবং নিজ হাত মুবারকে খাবার তৈরি করে
শিশুদেরকে খাওয়ালেন। এতে মহিলাটি খুব আনন্দিত হয়ে বললো, 'মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে উপযুক্ত পুরস্কার দিন! হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম উনার স্থলে আপনি যদি খলীফা হতেন!' হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, 'তুমি আগামীকাল আমীরুল মু'মিনীন আলাইহিস সালাম উনার নিকট যেও। আমি উনার তরফ থেকে তোমার জন্য ভাতার বন্দোবস্ত করে দিব।' তারপর তাদের থেকে বিদায় নিয়ে তিনি খানিকটা দূরে গেলেন এবং সেখান থেকেই কিছুক্ষণ তাদেরকে দেখলেন। তিনি প্রথমে তাদেরকে কান্না করতে দেখে কষ্ট পেয়েছিলেন, এখন তাদেরকে আনন্দিত অবস্থায় দেখে শান্তি লাভ করলেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি বলতেন, 'ফোরাতের তীরে একটি কুকুরও যদি না খেয়ে থাকে, তাহলে আমাকে তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে।' সুবহানাল্লাহ! তিনি বিশ্বের সমস্ত শাসকের জন্য অসামান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন এবং ইসলামী শাসন ব্যবস্থার মর্যাদা ও প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছেন।
0 Comments:
Post a Comment