১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৩৬ ( মিতব্যয়ীতার অনুপম দৃষ্টান্ত )

মিতব্যয়ীতার অনুপম দৃষ্টান্ত-পর্ব-৩৬

হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন কাপড় ব্যবসায়ী। এর দ্বারাই তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। খিলাফত মুবারকের দায়িত্ব গ্রহণ করার পরদিন যথারীতি কয়েক খানা চাদর হাতে নিয়ে তিনি বাজারে চললেন। পথিমধ্যে হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেন, 'আপনি যদি বেচাকেনায় লিপ্ত থাকেন তবে খিলাফতের কাজ কি করে চলবে?' হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, 'আমি যদি ব্যবসার কাজ না করি তাহলে আমার পরিবার কিভাবে চলবে?' তখন হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, 'হযরত আবু উবায়দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট চলুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমিনুল উম্মত উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। তিনি আপনার জন্য বাইতুল মাল হতে কিছু ভাতা ধার্য করে দিবেন।' তারপর উভয়ে হযরত আবু উবায়দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট গেলেন এবং এসকল বিষয়াদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন। সে অনুযায়ী তিনি হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত পরিচালনার আনজাম বাবদ একজন মধ্যম শ্রেণীর মুহাজিরের সমপরিমাণ ভাতা ধার্য করে দিলেন। এই ভাতা দিয়েই তিনি উনার সংসার খরচ ও জরুরত সমাধা করতেন।

একদিন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি উনার আহলিয়ার নিকট মিষ্টি কিছু খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। উনার আহলিয়া, উহা বানানোর মতো কোনো ব্যবস্থা নেই বলে জানালেন। কিন্তু তখন থেকে উনার আহলিয়া প্রতিদিনের খরচ হতে একটু একটু করে বাঁচিয়ে রেখে একদিন কিছু মিষ্টি খাবার তৈরি করেন এবং হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে খেতে দেন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি জানতে চাইলেন যে, সেদিন বলা হলো এধরনের খাবার তৈরি করার ব্যবস্থা নাই তাহলে আজকে কিভাবে সম্ভব হলো? উনার আহালিয়া বললেন, "আসলেই কোনো ব্যবস্থা ছিল না, তবে আপনি যেহেতু ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন তাই আমি সংসারের প্রতিদিন খরচ থেকে যতসামান্য যা কিছু সম্ভব তা বাঁচিয়ে জমা করে রাখতে শুরু করলাম। আজকে এতদিন পরে (কোনো কোনো মতে প্রায় ছয় মাস) কিছু জমা হয়েছে যা দিয়ে এ খাবারের ব্যবস্থা করেছি।” সাইয়্যিদুনা হযরত

ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি খেতে খেতে বললেন, "অভিজ্ঞতায় বুঝা গেল, এই পরিমাণ ভাতা আমরা বায়তুল মাল হতে বেশি নিয়ে থাকি, এটা আমাদের দরকার নেই।" তারপর তিনি ওই পরিমাণ ভাতা গ্রহণ করা কমিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!

ইন্তেকালের পূর্বে তিনি উনার সম্মানিতা কন্যা উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন, 'বায়তুল মালে যা কিছু আছে, আমার ইন্তেকালের পরে তা পরবর্তী খলীফার নিকট জমা দিয়ে দিবেন এবং গত দু'বছরে বায়তুল মাল থেকে যতটুকু ভাতা গ্রহণ করেছিলাম তা অমুক বাগান বিক্রি করে পরিশোধ করে দিবেন। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, 'উনার ইন্তেকালের পর উনার নিকট কোনো টাকা পয়সা ছিল না। একটি দুধওয়ালী উট, একটা পেয়ালা এবং একজন খাদিম ছিল।' অন্য বর্ণনায় এসেছে, 'একটি রুমাল এবং একটি বিছানাও ছিল।' পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রথম খলীফা এত প্রতাপশালী হওয়ার পরও এই অতি সামান্য মাল-সামানা রেখেই দুনিয়া হতে চিরবিদায় নেন। তিনি মিতব্যয়ীতা, তাক্বওয়া বা খোদাভীতির বিরল দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন।

0 Comments: