কুরান বলে পৃথিবীর গঠন বিছানা বা কার্পেট এর মত কিন্তু কেউ কখনো স্ফেরিক্যাল কার্পেট দেখেনি! এখন কথা হল কেন আল্লাহ পৃথিবীর গঠনের জন্যে শব্দ খানা ব্যবহার করলেন না?

কুরান বলে পৃথিবীর গঠন বিছানা বা কার্পেট এর মত কিন্তু কেউ কখনো স্ফেরিক্যাল কার্পেট দেখেনি! এখন কথা হল কেন আল্লাহ পৃথিবীর গঠনের জন্যে শব্দ খানা ব্যবহার করলেন না? 

নাস্তিকদের আপত্তি : কুরান বলে পৃথিবীর গঠন বিছানা বা কার্পেট এর মত (Quran 15:19, 20:53, 43:10, 50:7, 51:48, 71:19, 78:6, 79:30, 88:20 and 91:6)!  কিন্তু কেউ কখনো স্ফেরিক্যাল কার্পেট দেখেনি! এখন কথা হল কেন আল্লাহ পৃথিবীর গঠনের জন্যে "Kurah" (Arabic for sphericalশব্দ খানা ব্যবহার করলেন না? 

খণ্ডন : যেহেতু পৃথিবী বলতে আকাশ ও যমীন উভয় মিলিয়ে বুঝিয়ে থাকে। সুতরাং বর্ণিত আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে কোথাও পৃথিবীর গঠন বা আকার-আকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়নি বরং যমীন বা ভূপৃষ্ঠের অবয়ব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। 

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি (Quran 51:48 ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالْاَرْضَ فَرَشْنَاهَا فَنِعْمَ الْمَاهِدُوْنَ

অর্থ : “আমি যমীন বা ভূমিকে বিছিয়েছি। আমি কত সুন্দরভাবেই না বিছাতে সক্ষম।” (পবিত্র সূরা যারিয়াহ্ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৮)

সুতরাং অত্র আয়াত শরীফ (Quran 51:48) উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি اَرْضَ ‘আর্দ’ শব্দ মুবারক দ্বারা আকাশ ও যমীন সহ পৃথিবীকে বুঝাননি বরং শুধুমাত্র যমীনকে বুঝিয়েছেন। কেননা পূর্ববর্তী আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالسَّمَاءَ بَنَيْنَاهَا بِأَيْدٍ وَإِنَّا لَمُوسِعُونَ

অর্থ : “আমি স্বীয় ক্ষমতাবলে আকাশ নির্মাণ করেছি এবং আমি অবশ্যই ব্যাপক ক্ষমতাশালী।” (পবিত্র সূরা যারিয়াহ্ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৭)

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি আকাশ ও যমীন সৃষ্টি করার বিষয় আলাদাভাবে বর্ণনা করেছেন। তাই আয়াত শরীফ (Quran 51:48) উনার মধ্যে اَرْضَ ‘আর্দ’ শব্দ মুবারক দ্বারা শুধুমাত্র যমীনকে বুঝানো হয়েছে, আকাশ ও যমীন সহ পৃথিবীকে বুঝানো হয়নি। আর তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوَّلُ بُقْعَةٍ وُّضِعَتْ فِـى الْاَرْضِ مَوْضِعُ الْبَيْتِ ‏ثُـمَّ مُدَّتْ مِنْهَا الْاَرْضُ وَاِنَّ اَوَّلَ جَبَلٍ وَّضَعَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلـٰى وَجْهِ الْاَرْضِ اَبُوْ قُبَيْسٍ ‏ثُـمَّ مُدَّتْ مِنْهُ الْـجِبَالُ.

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ তথা পবিত্র কা’বা শরীফ উনার স্থান মুবারকই হচ্ছেন পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি করা সর্বপ্রথম স্থান বা ভূখ- মুবারক। অতঃপর সেখান থেকে সমস্ত যমীন প্রসারিত হয়, সৃষ্টি হয়। আর পৃথিবীর বুকে সর্বপ্রথম যেই পাহাড় সৃষ্টি করা হয়, তা হলো আবূ কুবাইস পাহাড়। অতঃপর সেখান থেকে সমস্ত পাহাড় বিস্তার লাভ করে, সৃষ্টি হয়।” সুবহানাল্লাহ! (শু‘য়াবুল ঈমান শরীফ ৫/৪৪৭, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ শরীফ ১/১৪০)

সুতরাং আয়াত শরীফ (Quran 51:48) উনার মধ্যে فَرَشْنَاهَا বলতে পবিত্র কা’বা শরীফ উনার স্থান মুবারক থেকে সমস্ত যমীন প্রসারিত করা বা সৃষ্টি করার বিষয় বুঝানো হয়েছে।

আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالْاَرْضَ مَدَدْنَاهَا وَاَلْقَيْنَا فِيْهَا رَوَاسِيَ وَاَنْبَتْنَا فِيْهَا مِنْ كُلِّ شَيْءٍ مَّوْزُونٍ.

অর্থ : “আমি যমীন বা ভূপৃষ্ঠকে বিস্তৃত করেছি এবং তার উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রত্যেক বস্তু সুপরিমিতভাবে উৎপন্ন করেছি।” (পবিত্র সূরা হিজর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯)

وَالْاَرْضَ مَدَدْنَاهَا وَاَلْقَيْنَا فِيْهَا رَوَاسِيَ وَأَنبَتْنَا فِيهَا مِنْ كُلِّ زَوْجٍ بَـهِيجٍ.

অর্থ : “আমি যমীন বা ভূপৃষ্ঠকে বিস্তৃত করেছি এবং তার উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রত্যেক ধরনের নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উদগত করেছি।” (পবিত্র সূরা ক্বাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

এই আয়াত শরীফদ্বয় (Quran 15:19, 50:7 উনাদের মধ্যে مَدَدْنَاهَا শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হওয়ার পরপরই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, وَاَلْقَيْنَا فِيْهَا رَوَاسِيَ অর্থাৎ আর তার (ভূপৃষ্ঠের) উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছি। পর্বতমালা স্থাপনের মাধ্যমে যেহেতু ভূপৃষ্ঠকে দৃঢ়তা প্রদান করা হয়েছে যাতে ভূপৃষ্ঠ টলে না যায়। তাই আয়াত শরীফদ্বয় (Quran 15:19, 50:7) উনাদের মধ্যে ব্যবহৃত مَدَدْنَاهَا শব্দ মুবারক দ্বারা ‘বিস্তৃত করা হয়েছে বা আবরণ দেয়া হয়েছে’ বুঝানো হয়েছে। সুতরাং অত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের দ্বারা ভূপৃষ্ঠের অবয়ব বুঝানো হয়েছে, পৃথিবীর গঠন বুঝানো হয়নি। তাই অত্র আয়াত শরীফদ্বয় ব্যবহার করে ‘পৃথিবীর গঠন বিছানা বা কার্পেট এর মত’ বলা চরম মিথ্যাচারীতা।

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ مَهْدًا وَسَلَكَ لَكُمْ فِيْهَا سُبُلًا وَأَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِّن نَّبَاتٍ شَتّٰى.

অর্থ : “তিনি তোমাদের জন্যে যমীন বা ভূপৃষ্ঠকে আরামদায়কভাবে বসবাস যোগ্য করেছেন এবং তাতে চলার পথ করেছেন, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন এবং তা দ্বারা আমি বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি।” (পবিত্র সূরা ত্বহা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৩)

الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ مَهْدًا وَجَعَلَ لَكُمْ فِيهَا سُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَـهْتَدُونَ.

অর্থ : “যিনি তোমাদের জন্যে যমীন বা ভূপৃষ্ঠকে আরামদায়কভাবে বসবাস যোগ্য করেছেন এবং তাতে তোমাদের জন্যে করেছেন পথ, যাতে তোমরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারো।” (পবিত্র সূরা যুখরুফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০)

এই আয়াত শরীফদ্বয় (Quran 20:53, 43:10 উনাদের মধ্যে جَعَلَ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে, خَلَقْنَا বা بَنَيْنَا শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়নি। সুতরাং অত্র আয়াত শরীফদ্বয় দ্বারা কখনোই পৃথিবীর গঠন বুঝানো হচ্ছে না, বরং যমীনের উপরের অবয়বকে ব্যক্ত করছে। আর অত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের মধ্যে ব্যবহৃত مَهْدًا শব্দ মুবারক দ্বারা যমীনকে যে মানুষের জন্য বসবাস যোগ্য আরামদায়ক করা হয়েছে সেটাই বুঝানো হয়েছে।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

اُطْلُبُوْا الْعِلْمَ منَ الْمَهْدِ الَى الْلَحَدِ

অর্র্থ: “তোমরা দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত ইল্ম অর্জন করো।” (তাফসীরে রূহুল বয়ান)

অত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে مَهْدًا শব্দ মুবারক দ্বারা দোলনা বুঝানো হয়েছে। সুতরাং উপরোক্ত আয়াত শরীফদ্বয় (Quran 20:53, 43:10) উনাদের মধ্যে ব্যবহৃত مَهْدًا শব্দ মুবারক দ্বারা ‘আরামদায়কভাবে বসবাস যোগ্য করা হয়েছে’ বুঝানো হয়েছে।

কেননা, পৃথিবী ছাড়া অন্যান্য যে গ্রহ-উপগ্রহ রয়েছে, সেখানে মানুষ ও অন্যান্য জীবের সহজে আরাম ও স্বাচ্ছন্দের সাথে বসবাসের জন্য অনুকূল পরিবেশ নেই। কিন্তু পৃথিবীতে মানুষ ও অন্যান্য জীবের সহজে আরাম ও স্বাচ্ছন্দের সাথে বসবাসের জন্য অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। তাই এখানে مَهْدًا শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে। দ্বিতীয়ত পৃথিবীর যমীনের ভিতরাংশ মানুষ ও অন্যান্য জীবের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক। কেননা ভূপৃষ্ঠের নিচের স্তরগুলো গরম ও তরল যা কোন উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য বাসোপযোগী নয়। আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি যমীনের উপরে ২-৩৫ কিলোমিটার পুরু শক্ত ছালের মত একটি স্তর বা ভূত্বক সৃষ্টি করে যমীনকে বাসোপযোগী বাসস্থান করেছেন। যেমনভাবে মানুষ ঘরের মেঝের খসখসে, অমসৃণ ও ঠা-াভাব দূর করতে মাদুর, চাটাই, চট, গালিচা, কার্পেট ইত্যাদি দ্বারা পুরুত্ব বৃদ্ধি করে প্রতিকূল অবস্থাকে অনুকূলে নিয়ে আসে এবং পাশাপাশি মেঝের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে থাকে।

আর তাই অত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের দ্বারা ‘পৃথিবীর গঠন বিছানা বা কার্পেট এর মত’ বলা চরম মিথ্যাচারীতা। কেননা আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের দ্বারা পৃথিবীর গঠন বুঝানো হয়নি বরং যমীনের অবয়ব বুঝানো হয়েছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاللهُ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ بِسَاطًا

অর্র্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের জন্যে যমীনকে করেছেন আচ্ছাদিত।” (পবিত্র সূরা নূহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯)

অত্র আয়াত শরীফ (Quran 71:19) উনার মধ্যেও جَعَلَ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে, خَلَقْنَا বা بَنَيْنَا শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়নি। সুতরাং অত্র আয়াত শরীফদ্বয় দ্বারা কখনোই পৃথিবীর গঠন বুঝানো হচ্ছে না, বরং যমীনের উপরের অবয়বকে ব্যক্ত করছে। আর অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত بِسَاطًا শব্দ মুবারক উনার অর্থ হবে “আচ্ছাদিত করা হয়েছে”। কেননা পরবর্তী আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

لِّتَسْلُكُوا مِنْهَا سُبُلًا فِجَاجًا

অর্র্থ: “যাতে তোমরা চলাফেরা করো প্রশস্ত পথে।” (পবিত্র সূরা নূহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২০)

এই আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত لِ ‘লি’ অব্যয় দ্বারা পূর্বের بِسَاطًا শব্দ মুবারককে পরবর্তী تَسْلُكُوا শব্দ মুবারক উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত করার কারণে بِسَاطًا শব্দ মুবারক উনার অর্থ হবে “আচ্ছাদিত করা হয়েছে”। সুতরাং উপরোক্ত আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের অর্থ হবে- “মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের প্রশস্ত পথে চলাফেরা করার জন্যে যমীনকে আচ্ছাদিত করেছেন।”

আর যমীন যেহেতু বন্ধুর অর্থাৎ পাহাড়-পর্বত থাকার কারণে কোথাও উঁচু আবার কোথায়ও নিচু। কুনো ব্যাঙের চামড়ার মতো। আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি যমীনের উপরে ভূত্বক সৃষ্টির মাধ্যমে চলাফেরা করার জন্যে যমীনকে আচ্ছাদিত করেছেন।

এই আয়াত শরীফ উনার মধ্যেও পৃথিবীর গঠন সম্পর্কে বর্ণিত হয়নি বরং যমীনের অবয়বের বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

اَلَـمْ نَـجْعَلِ الْاَرْضَ مِهَادًا. 

অর্র্থ: “আমি কি করিনি যমীনকে দোলনার মতো দোদুল্যমান?” (পবিত্র সূরা নাবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالْـجِبَالَ اَوْتَادًا

অর্র্থ: “এবং পর্বতমালাকে পেরেক?” (পবিত্র সূরা নাবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি আয়াত শরীফ (Quran 78:6) উনার মধ্যে مِهَادًا শব্দ মুবারক ব্যবহার করেছেন আর পরবর্তী আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন, وَالْـجِبَالَ اَوْتَادًا অর্থাৎ পর্বতমালাকে পেরেক বা গোঁজ বানিয়েছেন। আর পেরেক বা গোঁজ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে তখনই যখন কোন স্থানচ্যুতি বা জোড়া লাগানোর বিষয় থাকে। তাই প্রথম আয়াত শরীফ (Quran 78:6 উনার অর্থ হবে “আমি কি করিনি যমীনকে দোলনার মতো দোদুল্যমান?”। দোদুল্যমান বলেই স্থিতিশীল করতে পর্বতমালাকে পেরেক বা গোঁজ হিসেবে বসানো হয়েছে।

এই বিষয়টিকেই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে এভাবে-

وَاَلْقَىٰ فِي الْاَرْضِ رَوَاسِيَ اَن تَـمِيْدَ بِكُمْ وَأَنْـهَارًا

অর্থ : “এবং তিনি যমীনের উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছেন যে, কখনো যেন তা তোমাদেরকে নিয়ে হেলে-দুলে না পড়ে।” (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ  ১৫)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالْاَرْضَ بَعْدَ ذٰلِكَ دَحَاهَا

অর্থ : “পৃথিবীকে এরপরে বিস্তৃৃত করেছেন।”  (পবিত্র সূরা নাযি‘য়াত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)

অত্র আয়াত শরীফ (Quran 79:30)  উনার মধ্যে دَحَاهَا শব্দ মুবারক ‘ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, বিস্তৃত করা হয়েছে’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

কেননা হযরত ইমাম আবূ বকর মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম ইবনে মুনযির নীশাপূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেন-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ اِنَّ الْكَعْبَةَ خُلِقَتْ قَبْلَ الْاَرْضِ بِاَلْفَىْ سَنَةٍ وَّهِىَ قَرَارُ الْاَرْضِ اِنَّـمَا كَانَتْ خَشَفَةً اَوْ حَشَفَةً عَلَى الْمَاءِ عَلَيْهَا مَلَكَانِ مِنَ الْمَلائِكَةِ يُسَبِّحَانِ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ اَلْفَىْ سَنَةٍ فَلَمَّا اَرَادَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ اَنْ يَّـخْلُقَ الاَرْضَ دَحَاهَا مِنْهَا فَجَعَلَهَا فِىْ وَسَطِ الْاَرْضِ.

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই পৃথিবী সৃষ্টির ২০০০ বছর পূর্বে পবিত্র কা’বা শরীফ সৃষ্টি করা হয়। আর পবিত্র কা’বা শরীফই হচ্ছেন পৃথিবীর অবস্থানস্থল। যা পানির উপর জমাটবদ্ধ পানি/বরফ অথবা ছোট দ্বীপ আকারে ছিলেন। পবিত্র কা’বা শরীফ উনার উপর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে দু’জন সম্মানিত ফেরেশতা আলাইহিমাস সালাম উনারা রাত-দিন একাধারে ২০০০ বছর সম্মানিত তাসবীহ পাঠরত অবস্থায় ছিলেন। অতঃপর যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পৃথিবী সৃষ্টি করার ইচ্ছা মুবারক করেন, তখন পবিত্র কা’বা শরীফ উনার থেকে পৃথিবীকে বিস্তার করেন। তারপর পবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে করেন পৃথিবীর ওয়াসাত্ব তথা মধ্যস্থান।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে ইবনে মুনযির ১/২৯৪, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/১৪০)

সুতরাং অত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা কখনোই পৃথিবীর গঠন বিছানা বা কার্পেটের মতো বুঝানো হয়নি। বরং এই বক্তব্য দ্বারা মূর্খতা ও মিথ্যাচারের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। যদি অত্র আয়াত শরীফ (Quran 79:30 দ্বারা পৃথিবীর গঠন বিছানা বা কার্পেটের মতোই বুঝায়। তাহলে পরের আয়াত শরীফ দ্বারা সার্বিক অর্থ দাঁড়াবে যে, বিছানার মধ্য থেকে প্রসবণ নির্গত হয়। কি হাস্যকর ব্যাপার।

কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি পরের আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

اَخْرَجَ مِنْهَا مَاءَهَا وَمَرْعَاهَا

অর্থ: “তিনি (মহান আল্লাহ পাক) এর মধ্য থেকে এর পানি ও ঘাম নির্গত করেছেন।” (পবিত্র সূরা নাযি‘য়াত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩১)

অতএব এই আয়াত শরীফ দ্বারা ‘পৃথিবীর গঠন বিছানা বা কার্পেট এর মত’ বলাও চরম মিথ্যাচারীতা শামীল।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالْاَرْضِ وَمَا طَحَاهَا

অর্থ: “কসম! যমীনের এবং তাতে যা ছড়িয়ে আছে বা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।” (পবিত্র সূরা শামস্ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)

অত্র আয়াত শরীফ (Quran 91:6 উনার মধ্যে ব্যবহৃত مَا طَحَاهَا অর্থ তাতে যা ছড়িয়ে আছে বা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। শুরুতে مَا বর্ণটি মাউছূলা যে বা যা অর্থে ব্যবহার হয় এবং শেষে هَا বর্ণটি যমীরে মানছূব মুত্তাছিল।

সুতরাং অত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা যমীনে যা কিছু ছড়িয়ে আছে বা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সে সমস্ত বিষয়কে বুঝানো হয়েছে। আর যমীনে ছড়িয়ে রয়েছে পাহাড়-পর্বত, গাছপালা, মানুষ, বিভিন্ন প্রাণী ইত্যাদি। তাই এই আয়াত শরীফ দ্বারাও পৃথিবীর গঠন বুঝায়নি বলে ‘পৃথিবীর গঠন বিছানা বা কার্পেট এর মত’ বলা অজ্ঞতা ও মূর্খতার পরিচায়ক।

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاِلَى الْاَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ

অর্থ: “এবং যমীনের দিকে লক্ষ্য করে না যে, তার উপরিতল কিভাবে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে?” (পবিত্র সূরা গ¦শিয়াহ্ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২০)

এই আয়াত শরীফ (Quran 88:20 উনার মধ্যেও ভূত্বক বা যমীনের উপরিতলকে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে বলা হয়েছে। যমীনের উপরিতলকে ছড়িয়ে দেয়া উল্লেখ করলে যদি পৃথিবীর গঠন বিছানা বা কার্পেট এর মত হয়ে যায়। তাহলে বিভিন্ন পশু যেমন উট, ঘোড়া, গাধা বা খচ্চরের পিঠে আরোহণের জন্য যখন গদি/আসন বিছানো হয়, যাকে হাওদা, পর্যাণ, জিন, পালান ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়। পশুর পিঠে এসব গদি/আসন বিছানোর কারণে পশুর গঠন হাওদার মতো বা পর্যাণের মতো বা জিনের মতো বা পালানের মতো বলা হয় কি? হয় না। তখন কেন বলা হয় না, কেউ কখনো বেলনাকৃতি (Cylindrical বা মোচাকৃতি হাওদা দেখেনি! তাহলে যমীনের উপরিভাগকে বিস্তৃত বা ছড়িয়ে দেয়ার কারণে কেন বলা হচ্ছে পৃথিবীর গঠন বিছানা বা কার্পেট এর মত? কেউ কখনো স্ফেরিক্যাল কার্পেট দেখেনি! এই দ্বৈত নীতি বা কপটতার কারণ কি? আর দ্বৈত নীতি বা কপটতা যারা অবলম্বন করে তারা মুনাফিক্ব।

অতএব ‘পৃথিবীর গঠন বিছানা বা কার্পেট এর মত’ প্রমাণ করতে নাস্তিকদের উল্লেখিত প্রত্যেকটি আয়াত শরীফ উনার মধ্যে যে শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে, উক্ত শব্দ মুবারক উনাদের আম বা সাধারণ অর্থ হচ্ছে ‘বিস্তৃত করা’ আর নির্দিষ্ট আয়াত শরীফ অনুযায়ী অর্থ করা হলে পূর্ববর্তী বা পরবর্তী আয়াত শরীফ উনার সাথে সম্পৃক্ত বিষয়ের সম্বন্ধযুক্ত অর্থ হবে।

নিচের সারণীতে তা উল্লেখ করা হলো-

cweÎ m~iv kixd

cweÎ AvqvZ kixd bs

g~j kã gyeviK

A_©

cweÎ m~iv wnRi kixd

19

مَدَدْنَاهَا

we¯Í…Z Kiv, cÖmvwiZ Kiv, m¤úªmvwiZ Kiv

cweÎ m~iv K¡vd kixd

7

cweÎ m~iv Z¡nv kixd

53

مَهْدًا

†`vjbv

cweÎ m~iv hyLiæd kixd

10

cweÎ m~iv bvev kixd

6

مِهَادًا

†`vjbv

cweÎ m~iv hvwiqvZ kixd

48

فَرَشْنَاهَا

weQv‡bv

cweÎ m~iv b~n kixd

19

بِسَاطًا

Av”Qvw`Z Kiv

cweÎ m~iv bvwhÔAvZ kixd

30

دَحَاهَا

Qwo‡q †`qv n‡q‡Q, we¯Í…Z Kiv n‡q‡Q

cweÎ m~iv Mvwkqvn kixd

20

سُطِحَتْ

DcwiZj Qwo‡q †`qv

cweÎ m~iv kvgm kixd

6

طَحَاهَا

hv Qwo‡q Av‡Q ev Qwo‡q †`qv n‡q‡Q

উপরোক্ত আলোচনা হতে বুঝা যাচ্ছে যে, ১০ খানা আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে শুধুমাত্র পবিত্র সূরা ত্বহা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৩ এবং পবিত্র সূরা যুখরুফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০ উনাদের দ্বারা যমীন বা ভূপৃষ্ঠকে আরামদায়কভাবে বসবাস যোগ্য আবাসস্থল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর তাই এক দিকে ১০ খানা আয়াত শরীফ ব্যবহার করে পৃথিবীর গঠন বিছানা বা কার্পেটের মতো বলা যেমন মিথ্যাচারিতা। কেননা আয়াত শরীফদ্বয়ে পৃথিবীর গঠন বর্ণিত হয়নি বরং যমীনের অবয়ব বর্ণিত হয়েছে। অন্যদিকে যমীনকে “আরামদায়কভাবে বসবাস যোগ্য আবাসস্থল” অর্থ না নিয়ে বরং “বিছানা বা কার্পেটের মতো” শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করে অপব্যাখ্যা করা হয়েছে।

এখন যদি ধরেও নেয়া হয় যমীনের অবয়ব “বিছানা বা কার্পেটের মতো”, এর দ্বারা তো আর এটা বুঝাবে না যে, যমীনকে বিছানা বা কার্পেট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা যদি বলা যাহিদ সিংহের মতো- এর দ্বারা এটা বুঝায় না যে, যাহিদ স্বয়ং সিংহ। কেউ কি কখনো দু’পায়া সিংহ দেখেছে? বরং সিংহের যেমন অনেক শক্তি বা সাহস আছে, যাহিদেরও অনেক শক্তি বা সাহস আছে। তবে যাহিদ মানুষই আছে পশু হয়ে যায়নি।

ঠিক তেমনি যমীনের অবয়ব “বিছানা বা কার্পেটের মতো” হওয়ার অর্থ জীবের বসবাসের জন্য পৃথিবী অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহের মতো প্রতিকূল নয় বরং অনূকুল। দ্বিতীয়ত যমীনের উপরে ২-৩৫ কিলোমিটার পুরু ভূত্বক যমীনকে মানুষ ও অন্যান্য জীবের সহজে আরাম ও স্বাচ্ছন্দের সাথে বাসোপযোগী বাসস্থান করেছে। তাই এটা বলার সুযোগ নেই যে, “কেউ কখনো স্ফেরিক্যাল কার্পেট দেখেনি! কেন মহান আল্লাহ পাক তিনি পৃথিবীর গঠনের জন্যে ÒKurahÓ (Arabic for spherical শব্দখানা ব্যবহার করলেন না?” নাঊযূবিল্লাহ!

তাহলে কি পশুর পিঠে বিছানো হাওদা বা পালানের ব্যাপারে বলতে হবে যে, কেউ কখনো বেলনাকৃতি (Cylindrical বা মোচাকৃতি হাওদা বা পালান দেখেনি!

বস্তুত নাস্তিকরা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অনুবাদের ক্ষেত্রে নিজেদের মনগড়া অনুবাদকে গ্রহণ করার কারণেই এই বিপত্তির উদ্ভব ঘটছে। আর তাদের ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্রে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে কিছু তথাকথিত ইসলামী চিন্তাবিদ ও উলামায়ে সূ’দের মনগড়া অনুবাদ। কেননা ১০ খানা আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু উক্ত আরবী শব্দ মুবারক উনাদের অনুবাদ করার সময় সব শব্দ মুবারক সম্পর্কে একই অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে। নাঊযূবিল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি পৃথিবীর গঠনের জন্যে كروى  “কুরওয়া” শব্দখানা ব্যবহার করেননি বিধায় পৃথিবীর গঠন সমতল হয়ে গেল? অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পৃথিবীর গঠনের জন্যে كروى “কুরওয়া” শব্দখানার ব্যবহার নেই বলেই কি পৃথিবীর আকৃতি গোলাকার হবে না? কেননা كروى “কুরওয়া” শব্দখানা ব্যবহৃত হওয়ার পরও সাথে যদি নেতিবাচক অব্যয়যুক্ত থাকে, তাহলে গোলাকার নয় বুঝাবে। সুতরাং كروى  “কুরওয়া” শব্দখানার ব্যবহার না থাকলেই পৃথিবীর আকৃতি গোলাকার নয় বলে প্রমাণ হয় না। নাস্তিকদের প্রতি চ্যালেঞ্জ থাকলো।

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالسَّمَاءِ ذَاتِ الْـحُبُكِ.

অর্থ : “আর আকাশ, যা পথ ও কক্ষপথ দ্বারা পরিপূর্ণ।” (পবিত্র সূরা জারিয়াহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

অর্থাৎ পৃথিবীসহ সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্রই কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান রয়েছে। আর যেহেতু ঘূর্ণায়মান রয়েছে তাই পৃথিবী আকৃতিও গোল।

আবার মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَلَـمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يُوْلِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُوْلِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ

অর্থ : “আপনি কি দেখেন না যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন?” (পবিত্র সূরা লুক্বমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)

অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত ولـج শব্দ মুবারক দ্বারা বুঝায় যে ধীরে ধীরে রাত দিনের মধ্যে প্রবিষ্ট হয় আর দিনও ধীরে ধীরে রাতের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়। আর পৃথিবী গোলাকৃতি বলেই এভাবে ধীরে ধীরে ঘটে থাকে। যদি পৃথিবী সমতল হতো তাহলে এই পরিবর্তনদ্বয় হঠাৎ করে সংঘটিত হতো।

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ ۖ

অর্থ : “তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন।” (পবিত্র সূরা যুমার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত كَوِّرُ শব্দ মুবারক দ্বারা আচ্ছাদিত করা বা কু-লী পাকানো বুঝায়। যেমন করে ঘূর্ণিঝড় বাতাসের কু-লী পাকিয়ে এগোতে থাকে। আর পৃথিবী গোলাকৃতি বলেই এভাবে কু-লী পাকিয়ে রাত-দিন আর্বিতত হতে থাকে।

অতএব দেখা যাচ্ছে যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আলোকে পৃথিবীর আকৃতি মূলত গোলাকার, মোটেও সমতল নয়।

নাস্তিকদের এ ধরণের মিথ্যাচারের প্রেক্ষিতে তাদেরকে ধারণাতীত আযাবের সুসংবাদ প্রদান করা হচ্ছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فَأَمِنَ الَّذِيْنَ مَكَرُوا السَّيِّئَاتِ اَنْ يَّـخْسِفَ اللهُ بِـهِمُ الْاَرْضَ اَوْ يَأْتِيَهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُوْنَ. 

অর্থ : “যারা কুচক্র করে, তারা কি এ বিষয়ে ভয় করে না যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিবেন কিংবা তাদের কাছে এমন জায়গা থেকে আযাব আসবে যা তাদের ধারণাতীত।” (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৫)


সূর্য আপন কক্ষপথে বিচরণকালীন সময়ে কখনোই বিশ্রাম নেয় না বা ক্ষান্ত হয় না। বরং এটি নিয়মিত চলতে থাকে। তাই  এটি এক স্থানে অস্তমিত হয় অন্য স্থানে উদিত হয়, এভাবে চলতে থাকে। তাই এক স্থানে সূর্য অস্ত গেলেও একই সময়ে অন্য স্থানে উদিত হয়।

সূর্য আপন কক্ষপথে বিচরণকালীন সময়ে কখনোই বিশ্রাম নেয় না বা ক্ষান্ত হয় না। বরং এটি নিয়মিত চলতে থাকে। তাই  এটি এক স্থানে অস্তমিত হয় অন্য স্থানে উদিত হয়, এভাবে চলতে থাকে। তাই এক স্থানে সূর্য অস্ত গেলেও একই সময়ে অন্য স্থানে উদিত হয়।

নাস্তিকদের আপত্তি : সূর্য আবর্তিত হয় তার জন্যে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত (অর্থাৎ সন্ধ্যা পর্যন্ত), অতঃপর সে থামে বিশ্রামের জন্যে এবং পরের দিন পুনরায় উদিত হয় পূর্বের জায়গা থেকে (Quran 13:2, 21:33, 31:29, 36:38-40, 18:86-90 Sahih Muslim 1:297 Sahih Bukhari 4:54:421, 9:93:520)!  এর থেকে কি এটাই বোঝা যায়না যে পৃথিবি নয় বরং সূর্যই ঘুরছে তার চারিদিকে?

খণ্ডন : সূর্য তার নিজস্ব কক্ষপথে চলতে থাকে, কখনোই থামে না বা ক্ষান্ত হয় না। তাই “সূর্য আবর্তিত হয় তার জন্যে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত (অর্থাৎ সন্ধ্যা পর্যন্ত), অতঃপর সে থামে বিশ্রামের জন্যে” এ বক্তব্যগুলো প্রলাপ বৈ কিছুই নয়। কেননা পবিত্র আয়াত শরীফ কিংবা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে সূর্য নির্ধারিত সময় পর্যন্ত আবর্তিত হওয়ার পর বিশ্রাম নেয়ার কোন বর্ণনাই নেই। বরং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সূর্যের ক্ষান্ত না হওয়ার বা বিশ্রাম না নেয়ার বর্ণনা আছে।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ هٰذِهِ الْـمَغَارِبُ مِنْ اَيْنَ تَغْرِبُ؟ وَهٰذِهِ الْـمَطَالِعُ مِنْ اَيْنَ تَطُلعُ؟ فَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هى عَلٰى رَسِلهَا لَا تَبْرَحُ وَلَا تَزُوْل تَغْرُبُ عَنْ قَوْمٍ وَتَطْلُعُ عَلٰى قَوْمٍ وَتَغْرُبُ عَنْ قَوْمٍ وتَطْلُعُ فَقَوْمٌ يَقُوْلُوْنَ غَرْبَتَ وَقَوْمٌ يَقُوْلُوْنَ طَلْعَتٌ.

অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সুওয়াল মুবারক করা হলো- সূর্য কোথায় অস্ত যায় এবং সূর্য কোথা থেকে উদিত হয়? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যুত্তরে ইরশাদ মুবারক করেন, এটি নিয়মিত চলতে থাকে, ক্ষান্তও হয় না আর অদৃশ্যও হয় না। এটি এক স্থানে অস্তমিত হয় অন্য স্থানে উদিত হয়। আবার অন্য এক স্থানে অস্তমিত হয় আরেক স্থানে উদিত হয়, এভাবে চলতে থাকে। তাই কেউ বলে সূর্য অস্ত গিয়েছে (একই সময়ে) অন্যরা বলে সূর্য উদিত হচ্ছে।” (মুসনাদে ইমাম আবূ ইসহাক্ব হামাদানী)

অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে-

هى عَلٰى رَسِلهَا لَا تَبْرَحُ وَلَا تَزُوْل

অর্থ : “এটি নিয়মিত চলতে থাকে, ক্ষান্তও হয় না আর অদৃশ্যও হয় না।”

তাহলে সূর্যের বিশ্রাম নেয়ার প্রশ্নই আসে না। বরং এক স্থানে অস্তমিত হয় অন্য স্থানে উদিত হয় এভাবে চলতে থাকে। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ  ۖ  كُلٌّ يَـجْرِىْ لِاَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ

অর্থ : “আর সূর্য ও চাঁদকে কর্মে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকে একটি নির্দিষ্ট কাল ধরে কক্ষপথে আবর্তন করছে।” (পবিত্র সূরা র’দ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ.

অর্থ : “তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চাঁদ। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

اَلَـمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يُوْلِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُوْلِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَـجْرِي اِلٰى اَجَلٍ مُّسَمًّى

অর্থ : “আপনি কি দেখেন না যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চাঁদ ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে।” (পবিত্র সূরা লুক্বমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)

لَا الشَّمْسُ يَنبَغِـي لَـهَا اَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ ۚ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُوْنَ.

অর্থ : “সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া, আর রাত্রির পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা; আর প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করছে।” (পবিত্র সূরা ইয়াসিন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪০)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ চতুষ্ঠয় দ্বারা সূর্যের বিশ্রাম নেয়ার কোন বর্ণনাই নেই। এমনকি হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পৃথিবী পরিভ্রমণ সংক্রান্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যেও বিশ্রাম নেয়ার কোন বর্ণনা নেই।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

حَتَّىٰ إِذَا بَلَغَ مَغْرِبَ الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَغْرُبُ فِي عَيْنٍ حَمِئَةٍ وَوَجَدَ عِندَهَا قَوْمًا ۗ قُلْنَا يَا ذَا الْقَرْنَيْنِ إِمَّا أَن تُعَذِّبَ وَإِمَّا أَن تَتَّخِذَ فِيهِمْ حُسْنًا

অর্থ : “অবশেষে হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন সূর্যের অস্তাচলে পৌঁছালেন; তখন তিনি সূর্যকে এক পঙ্কিল আধারে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি (মহান আল্লাহ পাক) বললাম, হে হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন।” (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৬)   

ثُـمَّ اَتْبَعَ سَبَبًا. حَتّٰى اِذَا بَلَغَ مَطْلِعَ الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَطْلُعُ عَلٰى قَوْمٍ لَّـمْ نَـجْعَل لَّـهُم مِّنْ دُوْنِـهَا سِتْرًا. 

অর্থ : “অতঃপর তিনি এক পথ অবলম্বন করলেন। অবশেষে তিনি যখন সূর্যের উদয়াচলে পৌঁছলেন, তখন তিনি তাকে এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হতে দেখলেন, যাদের জন্যে সূর্যতাপ থেকে আত্মরক্ষার কোন আড়াল আমি সৃষ্টি করিনি।” (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৯-৯০)

আর তাই এর থেকে এটা কখনোই বোঝা যায় না যে, পৃথিবী নয় বরং সূর্যই ঘুরছে তার চারিদিকে! কেননা পবিত্র আয়াত শরীফ বা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে পৃথিবীর চারদিকে সূর্য ঘোরার কোন ইঙ্গিতই নেই।

যেমন, হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পৃথিবী পরিভ্রমণ সংক্রান্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে বলা হয়েছে-  

الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَغْرُبُ فِي عَيْنٍ حَمِئَةٍ

অর্থ : “সূর্যকে এক পঙ্কিল আধারে অস্ত যেতে দেখলেন।”

الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَطْلُعُ عَلٰى قَوْمٍ

অর্থ : “সূর্যকে এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হতে দেখলেন।”

এখানে সূর্যের উদয় ও অস্ত বুঝানো হয়েছে। আর সূর্যের অস্ত যাওয়া বা উদিত হওয়া দিয়ে পৃথিবীর চারদিকে সূর্যের প্রদক্ষিণ বুঝায় না। সূর্য যদি পৃথিবীকে কেন্দ্র করে বিচরণ করতো তাহলে সূর্যোদয়ের দেশ বলে কোন দেশ থাকতো না বরং একেক সময় একেক স্থানে সূর্যোদয় হতো।

পৃথিবীর প্রত্যেক স্থানে বা দেশে প্রতিদিনই সূর্য উদিত হচ্ছে ও অস্ত যাচ্ছে। তাহলে আলাদা করে সূর্যোদয়ের দেশ চিহ্নিত করার কারণ কি? সূর্যোদয়ের দেশ চিহ্নিত করার মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে সারাবছরই পৃথিবীর একই দেশ থেকে প্রথম সূর্যোদয় ঘটে থাকে। সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ঘুরছে বলেই এমনটি ঘটে থাকে।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে সূর্যের আবর্তন বিষয়ে বর্ণিত বিভিন্ন পবিত্র আয়াত শরীফ ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিভিন্ন হাদীছ শরীফ দ্বারা কখনোই প্রমাণিত হয় না যে, পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য আবর্তিত হচ্ছে, বরং পৃথিবীর সূর্যের চারদিকে ঘোরার ইঙ্গিত রয়েছে।

এছাড়া এটাও প্রমাণিত হলো যে, সূর্য আপন কক্ষপথে বিচরণকালীন সময়ে কখনোই বিশ্রাম নেয় না বা ক্ষান্ত হয় না। বরং এটি নিয়মিত চলতে থাকে। তাই  এটি এক স্থানে অস্তমিত হয় অন্য স্থানে উদিত হয়, এভাবে চলতে থাকে। তাই এক স্থানে সূর্য অস্ত গেলেও একই সময়ে অন্য স্থানে উদিত হয়।


সূর্য তার কক্ষপথেই বিচরণ করছে। কোথাও সূর্য অস্তমিত হলেও অন্য স্থানে উদিত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকে। কক্ষপথের বাইরে যেতে পারে না। তাই সূর্যের সিজদা দেয়ার অর্থ হচ্ছে নির্দিষ্ট নিয়মে নিজ কক্ষপথে বিচরণ করা।

 সূর্য তার কক্ষপথেই বিচরণ করছে। কোথাও সূর্য অস্তমিত হলেও অন্য স্থানে উদিত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকে। কক্ষপথের বাইরে যেতে পারে না। তাই সূর্যের সিজদা দেয়ার অর্থ হচ্ছে নির্দিষ্ট নিয়মে নিজ কক্ষপথে বিচরণ করা। 

নাস্তিকদের আপত্তি : মুহম্মদের কাছে ‘প্রতিরাতে সূর্য কোথায় যায়’ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান (জিব্রাইল থেকে প্রাপ্ত তথ্য) - সূর্য প্রতি রাতে আল্লাহর আরশের নিচে সেজদা দিতে থাকে এবং পরের দিন পূর্বাবস্থা থেকে উদিত হয়ার অনুমতি চায় (Sahih Bukhari 4:54:421 Sahih Muslim 1:297)! এটা কি মুহম্মদের প্রকৃতজ্ঞানের অভাব থেকে উৎপন্ন নয়?

খণ্ডণ : নূরে মুজাসসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে প্রকৃতজ্ঞান থাকার কারণেই তিনি প্রকৃত বিষয়টি বিশ্ববাসীকে উপস্থাপন করেছেন। পক্ষান্তরে গ-মূর্খ নাস্তিকদের জ্ঞানহীনতার কারণে এ ধরনের প্রশ্নের অবতারণা করেছে।

বুখারী শরীফ (৪:৫৪:৪২১) উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَمَ لِاَبِـىْ ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ حِيْنَ غَرَبَتِ الشَّمْسُ تَدْرِىْ اَيْنَ تَذْهَبُ قُلْتُ اللهُ وَرَسُوْلُهُ اَعْلَمُ‏‏ قَالَ فَاِنَّـهَا تَذْهَبُ حَتّٰى تَسْجُدَ تَـحْتَ الْعَرْشِ فَتَسْتَأْذِنَ فَيُؤْذَنَ لَـهَا وَيُوْشِكُ اَنْ تَسْجُدَ فَلَا يُقْبَلَ مِنْهَا وَتَسْتَأْذِنَ فَلَا يُؤْذَنَ لَـهَا يُقَالُ لَـهَا ارْجِعِى مِنْ حَيْثُ جِئْتِ‏ فَتَطْلُعُ مِنْ مَغْرِبِـهَا فَذَلِكَ قَوْلُهُ تَعَالٰى ‏‏وَالشَّمْسُ تَـجْرِىْ لِمُسْتَقَرٍّ لَـهَا ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ‏‏.‏

অর্থ : “হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, আপনি কি জানেন, সূর্য কোথায় যায়? আমি বললাম, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই ভাল জানেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তা যেতে যেতে আরশের নীচে গিয়ে সিজদায় পড়ে যায়। অতঃপর সে আবার উদিত হবার অনুমতি চায় এবং তাকে অনুমতি দেয়া হয়। আর শীঘ্রই এমন সময় আসবে যে, সিজ্দা করবে কিন্তু তা কবূল করা হবে না এবং সে অনুমতি চাইবে কিন্তু তাকে অনুমতি দেয়া হবে না। তাকে বলা হবে, যে পথ দিয়ে আসলে ঐ পথেই ফিরে যাও। তখন সে পশ্চিম দিক হতে উদিত হয়- এটাই মর্ম হলো মহান আল্লাহ পাক উনার বাণীর- ‘আর সূর্য নিজ কক্ষপথে চলতে থাকে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ’।” (বুখারী শরীফ : কিতাবু বাদয়াল খ¦ালক্ব্ : বাবু ছিফাতিশ শামসি ওয়াল ক্বমার)

আর মুসলিম শরীফ (১:২৯৭) উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَوْمًا اَتَدْرُوْنَ اَيْنَ تَذْهَبُ هٰذِهِ الشَّمْسُ قَالُوا اللهُ وَرَسُوْلُهُ اَعْلَمُ قَالَ‏ اِنَّ هٰذِهِ تَـجْرِىْ حَتّٰى تَنْتَهِىَ اِلٰى مُسْتَقَرِّهَا تَـحْتَ الْعَرْشِ فَتَخِرُّ سَاجِدَةً وَلَا تَزَالُ كَذَلِكَ حَتّٰى يُقَالَ لَـهَا ارْتَفِعِى ارْجِعِىْ مِنْ حَيْثُ جِئْتِ فَتَرْجِعُ فَتُصْبِحُ طَالِعَةً مِنْ مَطْلِعِهَا ثُـمَّ تَـجْرِىْ حَتّٰى تَنْتَهِىَ اِلٰى مُسْتَقَرِّهَا تَـحْتَ الْعَرْشِ فَتَخِرُّ سَاجِدَةً وَلَا تَزَالُ كَذَلِكَ حَتّٰى يُقَالَ لَـهَا ارْتَفِعِى ارْجِعِىْ مِنْ حَيْثُ جِئْتِ فَتَرْجِعُ فَتُصْبِحُ طَالِعَةً مِنْ مَطْلِعِهَا ثُـمَّ تَـجْرِىْ لَا يَسْتَنْكِرُ النَّاسُ مِنْهَا شَيْئًا حَتّٰى تَنْتَهِىَ اِلٰى مُسْتَقَرِّهَا ذَاكَ تَـحْتَ الْعَرْشِ فَيُقَالُ لَـهَا ارْتَفِعِىْ اَصْبِحِىْ طَالِعَةً مِّنْ مَغْرِبِكِ فَتُصْبِحُ طَالِعَةً مِّنْ مَغْرِبِـهَا فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَتَدْرُوْنَ مَتَى ذَاكُمْ ذَاكَ حِيْنَ لَا يَنْفَعُ نَفْسًا اِيْـمَانُـهَا لَـمْ تَكُنْ اٰمَنَتْ مِنْ قَبْلُ اَوْ كَسَبَتْ فِىْ اِيْـمَانِـهَا خَيْرًا‏.‏

অর্থ : “হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। একদিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা কি জানেন, এ সূর্য কোথায় যায়? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই ভাল জানেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এ সূর্য চলতে থাকে এবং সম্মানিত আরশ উনার নীচে অবস্থিত তার অবস্থান স্থলে যায়। সেখানে সে সিজদাবনত হয়ে পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয়, উঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও! অনন্তর সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্থল দিয়েই উদিত হয়। তা আবার চলতে থাকে এবং সম্মানিত আরশ উনার নীচে অবস্থিত তার অবস্থান স্থলে যায়। সেখানে সে সিজদাবনত অবস্থায় পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয় উঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও। তখন সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্থল হয়েই সে উদিত হয়। এমনিভাবে চলতে থাকবে; মানুষ তার থেকে অস্বাভাবিক কিছু হতে দেখবে না। শেষে একদিন সূর্য যথারীতি সম্মানিত আরশ উনার নীচে তার অবস্থানে যাবে। তাকে বলা হবে, উঠ এবং অস্তাচল থেকে উদিত হও। অনন্তর সেদিন সূর্য পশ্চিমাকাশে উদিত হবে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘কোন দিন সে অবস্থা হবে আপনারা জানেন? সেদিন ঐ ব্যক্তির ঈমান কোন কাজে আসবে না, যে ব্যক্তি পূর্বে ঈমান আনেনি কিংবা যে ব্যক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি’।” (মুসলিম শরীফ : কিতাবুল ঈমান : বাবু বাইয়ানিয যামানিল্লাযি লা ইউক্ববালু ফীহি ইল্লা ঈমান)

বুখারী শরীফ (৪:৫৪:৪২১) উনার মধ্যে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা উনার মধ্যে আসলে যে বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে তা হচ্ছে, সূর্য প্রতি মুহূর্তে মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম মুবারক উনার অনুগত। মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমেই উদিত হয় এবং উনার হুকুমেই অস্তমিত হয়। 

তাই বলা বাহুল্য যে, সূর্যের সিজ্দা করার অর্থ হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম মুবারক উনার পূর্ণ অনুগত্যতা। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلِلّٰهِ يَسْجُدُ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَظِلَالُـهُم بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ.

অর্থ : “নভোম-ল ও ভূম-লে যা কিছু আছে সব কিছুই ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সিজদাবনত হয়। আর তাদের ছায়াগুলোও সকাল-সন্ধ্যায় সিজদায় অবনত থাকে।” (পবিত্র সূরা র’দ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)

وَلِلّٰهِ يَسْجُدُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ مِنْ دَابَّةٍ وَالْمَلَائِكَةُ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ.

অর্থ : “নভোম-ল যা কিছু আছে মহান আল্লাহ উনাকেই সিজদা করে। ভূম-লে যত জীবজন্তু আছে এবং সব ফেরেশতাও (মহান আল্লাহ পাক উনাকে সিজদা করে)। তারা অহংকার করে না।” (পবিত্র সূরা নাহল : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৯)

আলোচ্য পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের মূলকথা হলো, পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই খ¦লিক (সৃষ্টিকর্তা) মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য সিজদাবনত হয়। পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের মধ্যে ব্যবহৃত سُجُدُ শব্দ মুবারক বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয় নামাযের সিজদা করা, মাথা নত করা, ঝুঁকে পড়া, আদেশ পালন করা, মেনে নেওয়া, বাধ্য হওয়া, আনুগত্য প্রদর্শন করা ইত্যাদি।

সুতরাং আসমান ও যমীনের সব কিছুই মহান আল্লাহ পাক উনার বেঁধে দেওয়া নিয়মের অধীন। ঠিক একইভাবে সূর্যও তার কক্ষপথের বাইরে যেতে পারে না। এই বিষয়টিও বুখারী শরীফ উনার হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

‏‏وَالشَّمْسُ تَـجْرِىْ لِمُسْتَقَرٍّ لَـهَا

অর্থ : “আর সূর্য নিজ কক্ষপথে চলতে থাকে।”

 আর সূর্যের নিজ কক্ষপথে চলতে থাকা বা আবর্তনের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবেই অন্য আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে।

اَلَـمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يُوْلِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُوْلِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَـجْرِي اِلٰى اَجَلٍ مُّسَمًّى

অর্থ : “আপনি কি দেখেন না যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চাঁদ ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে।” (পবিত্র সূরা লুক্বমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)

وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ.

অর্থ : “তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চাঁদ। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ ۖ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ ۖ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُّسَمًّى ۗ أَلَا هُوَ الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ.

অর্থ : “তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সূর্য ও চাঁদকে কাজে নিযুক্ত করেছেন। প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।” (পবিত্র সূরা যুমার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ 

অর্থ : “তিনি রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন। তিনি সূর্য ও চাঁদকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকটি আবর্তন করে এক নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত।” (পবিত্র সূরা ফাত্বির শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)

لَا الشَّمْسُ يَنبَغِـي لَـهَا اَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ ۚ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُوْنَ.

অর্থ : “সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া, আর রাত্রির পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা; আর প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করছে।” (পবিত্র সূরা ইয়াসিন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪০)

وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

অর্থ : “তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চাঁদ। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

সুতরাং বুখারী শরীফ (৪:৫৪:৪২১) উনার মধ্যে ব্যবহৃত سُجُدُ শব্দ মুবারক সূর্য যে মহান আল্লাহ পাক উনার বেঁধে দেওয়া নিয়মের অধীন সেটাই বুঝানো হয়েছে। তাই সূর্য কখনো তার কক্ষপথের বাইরে যেতে পারে না। এই বিষয়টিই মুসলিম শরীফ (১:২৯৭) উনার হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও বর্ণিত রয়েছে।

অতএব “সূর্য প্রতি রাতে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত আরশ উনার নিচে সিজদা দিতে থাকে এবং পরের দিন পূর্বাবস্থা থেকে উদিত হয়ার অনুমতি চায়” দ্বারা সূর্য একটি নির্দিষ্ট নিয়মের অধীনে থেকে আপন কক্ষপথে বিচরণ করার বিষয়টি বুঝানো হয়েছে, সূর্য এই কক্ষপথের বাইরে যেতে পারে না। 

যা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সূর্যের আবর্তনের প্রকৃতজ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। বরং তিনি আরো সুস্পষ্টভাবেই সূর্যের আবর্তনের বিষয়টি বর্ণনা করেছেন।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ هٰذِهِ الْـمَغَارِبُ مِنْ اَيْنَ تَغْرِبُ؟ وَهٰذِهِ الْـمَطَالِعُ مِنْ اَيْنَ تَطُلعُ؟ فَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هي عَلٰى رَسِلهَا لَا تَبْرَحُ وَلَا تَزُوْل تَغْرُبُ عَنْ قَوْمٍ وَتَطْلُعُ عَلٰى قَوْمٍ وَتَغْرُبُ عَنْ قَوْمٍ وتَطْلُعُ فَقَوْمٌ يَقُوْلُوْنَ غَرْبَتَ وَقَوْمٌ يَقُوْلُوْنَ طَلْعَتٌ.

অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সুওয়াল মুবারক করা হলো- সূর্য কোথায় অস্ত যায় এবং সূর্য কোথা থেকে উদিত হয়? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যুত্তরে ইরশাদ মুবারক করেন, এটি নিয়মিত চলতে থাকে, ক্ষান্তও হয় না আর অদৃশ্যও হয় না। এটি এক স্থানে অস্তমিত হয় অন্য স্থানে উদিত হয়। আবার অন্য এক স্থানে অস্তমিত হয় আরেক স্থানে উদিত হয়, এভাবে চলতে থাকে। তাই কেউ বলে সূর্য অস্ত গিয়েছে (একই সময়ে) অন্যরা বলে সূর্য উদিত হচ্ছে।” (মুসনাদে ইমাম আবূ ইসহাক্ব হামাদানী)

সুতরাং সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, সূর্য তার কক্ষপথেই বিচরণ করছে। কোথাও সূর্য অস্তমিত হলেও অন্য স্থানে উদিত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকে। কক্ষপথের বাইরে যেতে পারে না। তাই সূর্যের সিজদা দেয়ার অর্থ হচ্ছে নির্দিষ্ট নিয়মে নিজ কক্ষপথে বিচরণ করা। 


আল্লাহ সর্ব প্রথম কি সৃষ্টি করলেন? -মহাকাশ নাকি পৃথিবী

 আল্লাহ সর্ব প্রথম কি সৃষ্টি করলেন? -মহাকাশ নাকি পৃথিবী

নাস্তিকদের আপত্তি : আল্লাহ সর্ব প্রথম কি সৃষ্টি করলেন? -মহাকাশ (Quran 79:27)  নাকি পৃথিবী (Quran 41:10-11, 2:29)!

খণ্ডন : মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম মহাকাশ সৃষ্টি করেছেন। তার অনেক পরে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।

মহান আল্লাহ পাক তিনি যেহেতু আগে মহাকাশ সৃষ্টি করেছেন, তাই ইরশাদ মুবারক করেন-  

اَاَنْتُمْ اَشَدُّ خَلْقًا اَمِ السَّمَاءُ ۚ بَنَاهَا. رَفَعَ سَـمْكَهَا فَسَوَّاهَا. وَاَغْطَشَ لَيْلَهَا وَاَخْرَجَ ضُحَاهَا. وَالْاَرْضَ بَعْدَ ذٰلِكَ دَحَاهَا. 

অর্থ : “তোমাদের সৃষ্টি অধিক কঠিন না আকাশের, যা তিনি নির্মাণ করেছেন? তিনি একে উচ্চ করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন। তিনি এর রাত্রিকে করেছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং এর সূর্যোলোক প্রকাশ করেছেন। যমীনকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।” (পবিত্র সূরা নাযিয়াত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৭-৩০)

সূর্যালোক প্রকাশ সূর্যের উপস্থিতিকেই প্রমাণ করে। আবার রাতের অন্ধকার সূর্যের ঘূর্ণনকে প্রমাণ করে। অর্থাৎ সৌরজগতের উপস্থিতি প্রমাণ করে। রাত-দিনের বর্ণনার পর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করছেন-

وَالْاَرْضَ بَعْدَ ذٰلِكَ دَحَاهَا

অর্থ : “যমীনকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।”

সুতরাং রাতের অন্ধকার আর সূর্যালোক প্রকাশের পরে যমীনকে বিস্তৃত করেছেন। আর পানির উপর অবস্থিত বিধায় বিস্তৃত করার পর যমীন টলমল করছিল, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি এর উপর অটল পর্বত স্থাপন করে দেন। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- 

وَجَعَلَ فِيْهَا رَوَاسِيَ مِن فَوْقِهَا وَبَارَكَ فِيْهَا وَقَدَّرَ فِيْهَا اَقْوَاتَـهَا فِي اَرْبَعَةِ اَيَّامٍ سَوَاءً لِّلسَّائِلِيْنَ. ‏ثُـمَّ اسْتَوٰى اِلٰى السَّمَاءِ وَهِيَ دُخَانٌ فَقَالَ لَـهَا وَلِلْاَرْضِ ائْتِيَا طَوْعًا اَوْ كَرْهًا قَالَتَا اَتَيْنَا طَائِعِيْنَ.

অর্থ : “তিনি যমীনের উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার ধাপের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন-পূর্ণ হল জিজ্ঞাসুদের জন্যে। অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধু¤্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও যমীনকে বললেন, তোমরা উভয়ে আসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।” (পবিত্র সূরা হা-মীম সাজদাহ্ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০-১১)

هُوَ الَّذِىْ خَلَقَ لَكُمْ مَّا فِي الْاَرْضِ جَـمِيْعًا ثُـمَّ اسْتَوٰى اِلٰى السَّمَاءِ فَسَوَّاهُنَّ سَبْعَ سَـمَاوَاتٍ ۚ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ. 

অর্থ : “তিনিই সে সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু যমীনে রয়েছে সে সমস্ত। তারপর তিনি মনোসংযোগ করেছেন আকাশের প্রতি। বস্তুতঃ তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্ববিষয়ে অবহিত।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)

উপরোক্ত আয়াত শরীফদ্বয় (Quran 41:11, 2:29)  উনাদের মধ্যে ব্যবহৃত ‏ثُـمَّ اسْتَوٰى শাব্দিক অর্থে যদিও “তারপর মনোসংযোগ করেন” কিন্তু এখানে ثُـمَّ কালক্ষেপণ বা ধারাবাহিকতা বুঝাতে ব্যবহৃত হয়নি বরং আসমান ও যমীন- এই দুই সৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য নির্ণীত হয়েছে। আর তাই “অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন” এর অর্থ যমীন সৃষ্টি করে আকাশের দিকে মনযোগ দিলেন এমন নয়।

মূর্খ নাস্তিকরা এ ধরণের আপত্তির অবতারণার দ্বারা তাদের মূর্খতাকেই প্রকাশ করেছে।