নাস্তিকদের আপত্তির প্রতিবাদ করতে গিয়ে সপ্ত আকাশকে বায়ুমণ্ডল বানিয়ে ফেলার কোনই প্রয়োজন নেই। যেহেতু বিজ্ঞান আজো শিশুতুল্য, তাই বিজ্ঞানের ব্যর্থতাকে ঢাকতে এর দায় সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার চাপিয়ে দিচ্ছে নাস্তিকরা। নাঊযুবিল্লাহ!
নাস্তিকদের আপত্তি : "কুরান জানায়, আমাদের মহাবিশ্ব সাত স্তর নিষিষ্ট (Quran 71:15)! কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এই মহাবিশ্ব ট্রিলিয়ন সংখ্যক ছায়াপথ আর সাথে বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র নিয়ে গঠিত, যেখানে সপ্তস্তর বলে কিছু নেই! তবে কেন এধরনের অসত্য তথ্য?
http://en.wikipedia.org/wiki/Galaxy
অনেকেই দাবি করেন আয়াতে উল্লেখিত সপ্তস্তর বলতে আকাশের বায়ু মন্ডলিয় স্তর বোঝানো হয়েছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর উপরিভাগে বায়ুস্তর রয়েছে পাঁচটা।
http://en.wikipedia.org/wiki/Atmosphere_of_Earth#Principal_layers"
খন্ডন : প্রকৃতপক্ষে মহাবিশ্ব সাত স্তর বিশিষ্ট নয় বরং মহাবিশ্ব ট্রিলিয়ন সংখ্যক ছায়াপথ আর সাথে বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র নিয়ে গঠিত। আর এই মহাবিশ্বের বাইরেই রয়েছে সপ্ত স্তর বিশিষ্ট আসমান ও সপ্ত স্তর বিশিষ্ট যমীন।
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَبَنَيْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعًا شِدَادًا
অর্থ : “নির্মাণ করেছি তোমাদের মাথার উপর মজবুত সপ্ত-আসমান।” (পবিত্র সূরা নাবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَـمَاوَاتٍ طِبَاقًا ۖ
অর্থ : “তিনি সপ্ত আসমান স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন।” (পবিত্র সূরা মূলক্ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)
মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-
اَلَـمْ تَرَوْا كَيْفَ خَلَقَ اللهُ سَبْعَ سَـمَاوَاتٍ طِبَاقًا
অর্থ : “তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি কিভাবে সপ্ত আসমান স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন।” (পবিত্র সূরা নূহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
فَقَضَاهُنَّ سَبْعَ سَـمَاوَاتٍ فِي يَوْمَيْنِ وَاَوْحٰى فِي كُلِّ سَـمَاءٍ اَمْرَهَا ۚ
অর্থ : “অতঃপর তিনি আসমানমন্ডলীকে দু’ধাপে সপ্ত আসমান করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে উনার আদেশ মুবারক প্রেরণ করলেন।” (পবিত্র সূরা হা-মীম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২)
تُسَبِّحُ لَهُ السَّمَاوَاتُ السَّبْعُ وَالْاَرْضُ وَمَن فِيْهِنَّ ۚ
অর্থ : “সপ্ত আসমান ও যমীন এবং এগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে সমস্ত কিছু উনারই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে।” (পবিত্র সূরা বনী ইসরাঈল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৪)
সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সপ্ত আসমান সৃষ্টি করেছেন। এমনকি মহান আল্লাহ পাক তিনি যমীনও সৃষ্টি করেছেন ৭টি। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে-
اللهُ الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَـمَاوَاتٍ وَمِنَ الْاَرْضِ مِثْلَهُنَّ
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি সেই মহান সৃষ্টিকর্তা, যিনি ৭ আসমান সৃষ্টি করেছেন এবং সমসংখ্যক যমীনও সৃষ্টি করেছেন।” (পবিত্র সূরা ত্বলাক শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعالٰى عَنْهُ قَالَ بَيْنَمَا نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ وَاَصْحَابُهُ اِذْ اَتَى عَلَيْهِمْ سَحَابٌ فَقَالَ نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَلْ تَدْرُوْنَ مَا هَذَا فَقَالُوا اللهُ وَرَسُوْلُهُ اَعْلَمُ. قَالَ هٰذَا الْعَنَانُ هٰذِهِ رَوَايَا الاَرْضِ يَسُوْقُهُ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالٰى اِلٰى قَوْمٍ لاَ يَشْكُرُوْنَهُ وَلاَ يَدْعُوْنَهُ ثُـمَّ قَالَ هَلْ تَدْرُوْنَ مَا فَوْقَكُمْ قَالُوا اللهُ وَرَسُوْلُهُ اَعْلَمُ قَالَ فَاِنَّـهَا الرَّقِيْعُ سَقْفٌ مَـحْفُوْظٌ وَمَوْجٌ مَكْفُوفٌ ثُـمَّ قَالَ هَلْ تَدْرُوْنَ كَمْ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهَا قَالُوا اللهُ وَرَسُوْلُهُ اَعْلَمُ قَالَ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهَا مَسِيْرَةُ خَمْسِمِائَةِ سَنَةٍ ثُـمَّ قَالَ هَلْ تَدْرُوْنَ مَا فَوْقَ ذَلِكَ قَالُوا اللهُ وَرَسُوْلُهُ اَعْلَمُ قَالَ فَاِنَّ فَوْقَ ذَلِكَ سَـمَاءَيْنِ وَمَا بَيْنَهُمَا مَسِيْرَةُ خَمْسِمِائَةِ عَامٍ حَتّٰى عَدَّ سَبْعَ سَـمَوَاتٍ مَا بَيْنَ كُلِّ سَـمَاءَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْاَرْضِ ثُـمَّ قَالَ هَلْ تَدْرُوْنَ مَا فَوْقَ ذَلِكَ قَالُوا اللهُ وَرَسُوْلُهُ اَعْلَمُ قَالَ فَاِنَّ فَوْقَ ذٰلِكَ الْعَرْشَ وَبَيْنَهُ وَبَيْنَ السَّمَاءِ بُعْدُ مَا بَيْنَ السَّمَاءَيْنِ ثُـمَّ قَالَ هَلْ تَدْرُوْنَ مَا الَّذِىْ تَـحْتَكُمْ قَالُوا اللهُ وَرَسُوْلُهُ اَعْلَمُ قَالَ فَإِنَّهَا الأَرْضُ ثُـمَّ قَالَ هَلْ تَدْرُونَ مَا الَّذِي تَحْتَ ذَلِكَ قَالُوا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ فَإِنَّ تَحْتَهَا الأَرْضَ الأُخْرَى بَيْنَهُمَا مَسِيرَةُ خَمْسِمِائَةِ سَنَةٍ حَتَّى عَدَّ سَبْعَ أَرَضِينَ بَيْنَ كُلِّ أَرْضَيْنِ مَسِيرَةُ خَمْسِمِائَةِ سَنَةٍ ثُـمَّ قَالَ وَالَّذِي نَفْسُ مُـحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوْ اَنَّكُمْ دَلَّيْتُمْ رَجُلاً بِـحَبْلٍ اِلَى الأَرْضِ السُّفْلَى لَـهَبَطَ عَلَى اللَّهِ ثُـمَّ قَرَأَ (هو الأَوَّلُ وَالآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ)
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ও উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এক সাথে বসা ছিলেন। হঠাৎ উনাদের উপর মেঘরাশি প্রকাশিত হল। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের সুওয়াল মুবারক করেন, আপনারা জানেন এটা কি? উনারা বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই বেশি ভালো জানেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এটা হল যমিনের পানিবাহী উট। মহান আল্লাহ পাক তিনি একে এমন জাতির দিকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন যারা উনার কৃতজ্ঞতাও আদায় করে না এবং উনার কাছে মুনাজাতও করে না। তিনি আবার সুওয়াল মুবারক করলেন, আপনাদের উপরে কি আছে তা জানেন? উনারা বললেন মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই বেশি ভালো জানেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এটা হল সুউচ্চ আকাশ, সুরক্ষিত ছাদ এবং আটকানো তরঙ্গ। তিনি আবার সুওয়াল মুবারক করলেন, আপনাদের এবং এর মাঝে কতটুকু ব্যবধান তা আপনাদের জানা আছে কি? উনারা বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই বেশি ভালো জানেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনাদের ও এর মাঝে ৫০০ বছরের পথের ব্যবধান। তিনি আবার সুওয়াল মুবারক করলেন, এর উপরে কি আছে তা আপনারা জানেন কি? উনারা বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই বেশি ভালো জানেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এর উপরে দুইটি আকাশ আছে যার মাঝে ৫০০ বছরের দূরত্ব, এমনকি তিনি ৭টি আকাশ গণনা করেন এবং ইরশাদ মুবারক করেন, প্রতি দু’টি আকাশের মাঝে পার্থক্য আকাশ ও যমীনের ব্যবধানের সমপরিমাণ। তিনি আবার সুওয়াল মুবারক করলেন, এর উপরে কি আছে তা কি আপনারা জানেন? উনারা বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই বেশি ভালো জানেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এগুলোর উপরে আছে (মহান আল্লাহ পাক উনার) আরশ মুবারক। আরশ মুবারক ও আকাশের মাঝের পার্থক্য দুই আকাশের মধ্যকার দূরত্বের সমান। তিনি আবার ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা কি জানেন আপনাদের নিচে কি আছে? উনারা বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই বেশি ভালো জানেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, উহা হল যমীন, তারপর আবার ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা কি জানেন এর নিচে কি আছে? উনারা বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই বেশি ভালো জানেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এর নিচে আরো এক ধাপ যমীন আছে এবং এতদুভয়ের মধ্যে ৫০০ বছরের দূরত্ব। তারপর ৭ স্তর যমীন গুণে ইরশাদ মুবারক করেন, প্রতি দুই স্তরের মাঝে ৫০০ বছরের দূরত্ব বর্তমান। তিনি আবার ইরশাদ মুবারক করেন, সেই মহান সত্তা উনার শপথ! যাঁর কুদরতী হাত মুবারক-এ আমার মহাসম্মানিত নূরুল আমর (প্রাণ) মুবারক! আপনারা যদি একটি রশি নিম্নতম যমীনের দিকে ছেড়ে দেন তাহলে তা মহান আল্লাহ পাক উনার পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছবে। তারপর তিনি এ আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করেন, هو الأَوَّلُ وَالآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ অর্থাৎ তিনিই প্রথম, তিনিই সর্বশেষ তিনিই প্রকাশ্য এবং তিনিই গুপ্ত। তিনিই সর্ববিষয়ে সর্বশেষ পরিজ্ঞাত।” (তিরমিযী শরীফ : কিতাবুত তাফসীরিল কুরআন)
সুতরাং পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পাশাপাশি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও বর্ণিত রয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি স্তরে স্তরে সপ্ত আসমান সৃষ্টি করেছেন। আর প্রতিটি স্তরের ৫০০ বছরের দূরত্ব রয়েছে। এমনকি যমীনের ক্ষেত্রেও একইরূপ স্তর বিন্যাস বিদ্যমান।
আবার মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَقَدْ جَعَلْنَا فِي السَّمَاءِ بُرُوجًا وَزَيَّنَّاهَا لِلنَّاظِرِينَ
অর্থ : “আমি আকাশে ‘বুরূজ’ অর্থাৎ ‘তারকার ঘরসমূহ বা গ্যালাক্সিসমূহ’ স্থাপন বা পরিগঠন করেছি এবং তাকে করেছি সুশোভিত দর্শকদের জন্য।” (পবিত্র সূরা হিযর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
تَبَارَكَ الَّذِي جَعَلَ فِي السَّمَاءِ بُرُوجًا وَجَعَلَ فِيهَا سِرَاجًا وَقَمَرًا مُّنِيرًا
অর্থ : “কত মহান তিনি যিনি আকাশে স্থাপন বা পরিগঠন করেছেন ‘বুরূজ’ অর্থাৎ ‘তারকার ঘরসমূহ বা গ্যালাক্সিসমূহ’ এবং তাতে স্থাপন বা পরিগঠন করেছেন প্রদীপ (সূর্য) ও জ্যোতির্ময় চাঁদ।” (পবিত্র সূরা ফুরক্বান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬১)
যেহেতু ‘বুরূজুনের’ বহুবচন হল ‘বুরূজ’। সাধারণত ‘ঘর’ বলতে যেমন দেয়াল ঘেরা এমন একটি স্থানকে বোঝায় যেখানে কয়েকজন মানুষ একত্রে বসবাস করতে পারে। তেমনি ‘বুরূজুন’ অর্থ ‘তারকার ঘর’ বলতে মহাকাশে সৃষ্ট এমন একটি স্থানকে বুঝানো হয়েছে যেখানে অনেকগুলো তারকা বা নক্ষত্র একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে একত্রিত অবস্থায় থাকে। সুতরাং‘বুরূজুনের’ অর্থ ‘মহাকাশের অসংখ্য নক্ষত্র সমৃদ্ধ স্তর অর্থাৎ গ্যালাক্সি’ হওয়াই স্বাভাবিক। আবার বুরূজ শব্দটি যেহেতু বহুবচন, সুতরাং এর দ্বারা ‘মহাকাশের অসংখ্য গ্যালাক্সি সমৃদ্ধ স্তর অর্থাৎ গ্যালাক্সিগুচ্ছ’ হওয়াই যুক্তিসংগত।
এই আয়াত শরীফ উনাদের আলোকে বলা যায়, এই মহাবিশ্ব ট্রিলিয়ন সংখ্যক ছায়াপথ আর সাথে বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র নিয়ে গঠিত। আর অন্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের বর্ণনা দ্বারা জানা যায় যে, এই ট্রিলিয়ন ছায়াপথ আর বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র সবই প্রথম আসমানের নিচে রয়েছে।
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّا زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِزِينَةٍ الْكَوَاكِبِ
অর্থ : “নিশ্চয়ই আমি নিকটবর্তী আসমানকে তারকারাজির দ্বারা সুশোভিত করেছি।” (পবিত্র সূরা সফফাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِـمَصَابِيحَ
অর্থ : “আমি সর্বনিম্ন আসমানকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জত করেছি।” (পবিত্র সূরা মূলক শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)
وَزَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِـمَصَابِيحَ وَحِفْظًا ۚ
অর্থ : “আমি নিকটবর্তী আসমানকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি।” (পবিত্র সূরা হা-মীম সাজদাহ্ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৭)
সুতরাং ট্রিলিয়ন ছায়াপথ আর বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র সবই প্রথম আসমানের নিচে ও প্রথম যমীনের উপরে রয়েছে। তাহলে ইহা অনুমান করাও সম্ভব নয় যে প্রথম আসমান কত বৃহৎ হতে পারে। প্রথম আসমানের পুরুত্ব ৫০০ বছরের রাস্তা। প্রথম আসমান হতে দ্বিতীয় আসমানের দূরত্ব ৫০০ বছরের রাস্তা। ২য় আসমানের নিকট প্রথম আসমান বৃহৎ মাঠে একটি পিয়াজের খোসার ন্যায় মনে হবে। যা প্রথম আসমানকে বেষ্টন করে রয়েছে। এমনিভাবে তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম আসমান প্রতিটি অপরটি হতে সম দূরত্বে এবং উহার পুরুত্বও সমপরিমাণে। নীচের ৬টি আসমানকে সপ্তম আসমান দ্বারা বেষ্ঠন করে রয়েছে। তাহলে ইহা কি অনুমান করা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব যে, সপ্তম আসমান কত বিশাল হবে এবং উহার ব্যাসার্ধ কত বিশাল হবে?
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا مَعْشَرَ الْـجِنِّ وَالْاِنْسِ اِنِ اسْتَطَعْتُمْ اَنْ تَنْفُذُوْا مِنْ اَقْطَارِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ فَانْفُذُوْا ۚ لَا تَنْفُذُوْنَ اِلَّا بِسُلْطَانٍ
অর্থ : “হে জিন ও মানব সম্প্রদায়! আসমান ও যমীনের প্রান্ত অতিক্রম করা যদি তোমাদের সাধ্যে কুলায়, তবে অতিক্রম করো। কিন্তু ছাড়পত্র ব্যতীত তোমরা তা অতিক্রম করতে পারবে না।” (পবিত্র সূরা র্আরহমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
অত্র আয়াত শরীফ হতে দেখা যাচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার অনুমতি ছাড়া আসমান ও যমীনের প্রান্ত অতিক্রম করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। আর ট্রিলিয়ন ছায়াপথ আর বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র সবই প্রথম আসমানের নিচে, প্রথম আসমানে নয়। তাই শিশুতুল্য বিজ্ঞান উপরের দিকে যা কিছু আবিষ্কার করছে তার সব কিছুই প্রথম আসমানের নিচে। এমনকি শিশুতুল্য বিজ্ঞান আজ পর্যন্ত আসমানের প্রান্ত সীমার নাগালই পায়নি।
আবার আসমানের মতো যমীনও ৭ স্তর বিশিষ্ট। তাই শিশুতুল্য বিজ্ঞান যেহেতু এ বিষয়গুলো সম্পর্কে যৎসামান্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে পেরেছে। সেহেতু শিশুতুল্য বিজ্ঞানের পুঁজি/আলোচনা এই যৎসামান্য তথ্য-উপাত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এর বাইরে কোন ধারণাই নেই শিশুতুল্য বিজ্ঞানের। আর নাস্তিকরা যেহেতু নিজেদেরকে শিশুতুল্য বিজ্ঞানের একনিষ্ঠ ধারক-বাহক দাবীদার। তাই শিশুতুল্য বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে মূর্খ নাস্তিকরাও সপ্ত আসমান ও সপ্ত যমীনের বিষয়টিকে অস্বীকার করছে। নাঊযূবিল্লাহ! এটা নাস্তিকদের নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার একটি ঢাল স্বরূপ।
আবার এক শ্রেণীর মুসলমান আছে, যারা নাস্তিকদের সপ্ত আসমানের ব্যাপারে আপত্তির প্রেক্ষিতে দাবী করে থাকে যে, পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লেখিত সপ্তস্তর বলতে আকাশের বায়ুমন্ডলীয় স্তর বোঝানো হয়েছে। নাঊযূবিল্লাহ! কিন্তু কথাটি মোটেও শুদ্ধ নয়।
কেননা বায়ুমন্ডলীয় স্তর বলতে তথাকথিত বিজ্ঞান বুঝিয়ে থাকে, পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০০০ কিলোমিটার (প্রায় ৬২০০ মাইল) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল। এর প্রান্তবিন্দু যা তথাকথিত বিজ্ঞানের পরিভাষায় কারম্যান রেখা (Karman line) নামে পরিচিত। এই রেখার মাধ্যমে বায়ুমন্ডলীয় স্তরকে মহাশূন্য থেকে পৃথক করে রাখা হয়েছে অর্থাৎ এটি সীমান্ত হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
কিন্তু সম্মানিত দ্বীন ইসলাম অনুযায়ী যমীন হতে প্রথম আসমানের দূরত্বই হচ্ছে ৫০০ বছরের রাস্তা। আর সেখানে বায়ুম-ল মাত্র ১০০০০ কিলোমিটার।
আবার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কোন তারকারাজি নেই। কিন্তু সমস্ত তারকারাজিই প্রথম আসমানের নিচে। সুতরাং পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লেখিত সপ্তস্তর বলতে মোটেও আকাশের বায়ুমন্ডলীয় স্তর বোঝানো হয়নি।
সর্বোপরি প্রত্যেকটি আসমান আলাদা আলাদা পদার্থের তৈরি। যেমন-
১ম আসমান তৈরি স্থির পানি দিয়ে, ২য় আসমান তৈরি সাদা মোতির পাথর দিয়ে, ৩য় আসমান তৈরি লোহা দিয়ে, ৪র্থ আসমান তৈরি তামা দিয়ে, ৫ম আসমান তৈরি রৌপ্য দিয়ে, ৬ষ্ঠ আসমান তৈরি স্বর্ণ দিয়ে, ৭ম আসমান তৈরি যমরূদ (মূল্যবান সবুজ পাথর) দিয়ে। (তাফসীরে রূহুল মা'আনী ৬/৩০; তাফসীরে মাযহারী ৬৭/৪)
আবার হযরত কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, পৃথিবীর নিকটতম আকাশ ছিলো উর্মি-বিক্ষুদ্ধ, যাকে করা হয়েছে শান্ত। দ্বিতীয় আকাশ শুভ্র জমরূদ প্রস্তর নির্মিত, তৃতীয় আকাশ ঊষর, চতুর্থ আকাশ হচ্ছে পিতলের, পঞ্চম আকাশ রূপার, ষষ্ঠ আকাশ স্বর্ণের, আর সপ্তম আকাশ মহান আল্লাহ পাক উনার পরম সত্তা উনার অন্তরাল বা সপ্ত প্রান্তর বিশিষ্ট সীমানা। (তাফসীরে বাগউয়ী)
কিন্তু বায়ুম-লে এ ধরণের কোন পদার্থের উপস্থিতি নেই। এমনকি বায়ুম-লের সীমা অতিক্রম করা একটি মামুলী ব্যাপার। পক্ষান্তরে মহান আল্লাহ পাক তিনি অনুমতি ব্যতীত আসমান ও যমীনের প্রান্ত অতিক্রম করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন।
সুতরাং নাস্তিকদের আপত্তির প্রতিবাদ করতে গিয়ে সপ্ত আকাশকে বায়ুমণ্ডল বানিয়ে ফেলার কোনই প্রয়োজন নেই। যেহেতু বিজ্ঞান আজো শিশুতুল্য, তাই বিজ্ঞানের ব্যর্থতাকে ঢাকতে এর দায় সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার চাপিয়ে দিচ্ছে নাস্তিকরা। নাঊযুবিল্লাহ! মুসলমান উনারাও সে দায় নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়ে একটি অপব্যাখ্যা দাঁড় করাচ্ছে, যা চরম অসত্য। নাঊযুবিল্লাহ!
0 Comments:
Post a Comment