এই ধরণের দেব-দেবীর বর্ণনা কোনভাবেই যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করেনি, ঠিক তেমনি আকাশ আর পৃথিবী মিশে থাকার বর্ণনাও প্যাগানসহ মধ্যপ্রাচ্যের কোন গোত্রের কাছ থেকে ধার করে নিয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণনা করা হয়নি। এগুলো সবই মূর্খ ও মিথ্যাবাদী নাস্তিকদের মূর্খতা ঢাকার অপচেষ্টা ও মিথ্যাচার।
নাস্তিকদের আপত্তি : “বিগব্যাং তত্বানুসারে, এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি মুহূর্তে শক্তি ব্যাতিত কোন ধরনের ম্যাটারেরই অস্তিত্ব ছিলো না। ফলে, আকাশ আর পৃথিবী মিশে ছিল যা পরবর্তিতে আলাদা করে দেওয়া হল (Quran 21:30) - এটা দিয়ে কোনভাবেই বিগব্যাং কে ব্যাখ্যা করা যায় না! তবে মুসলিমরা কেন এমন হাস্যকর দাবি করে থাকে?
প্রকৃতপক্ষে, প্যাগানসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক গোত্রের উপকথা এবং লোককথাতেই আকাশ আর পৃথিবী মিশে থাকার আর হরেক রকেমর দেব-দেবী দিয়ে পৃথক করার কথা বলা ছিল যা প্রবেশ করেছে কুরানের বানীতে!”
খণ্ডন : বিগব্যাং নামক কল্পকাহিনীকে তত্ত্ব হিসেবে চালিয়ে দেয়া মূর্খতা ও ভাড়ামী বৈ কিছুই নয়।
মহাবিস্ফোরণ (বিগব্যাং) কল্পনা অনুযায়ী বলা হচ্ছে ‘মহাবিশ্বের সৃষ্টি মুহূর্তে শক্তি ব্যতীত কোন ধরনের ম্যাটারেরই অস্তিত্ব ছিলো না’।
তাহলে মহাবিস্ফোরণ কল্পনা অনুযায়ী কেন বলা হচ্ছে- বর্তমান মহাবিশ্বের সকল বস্তু এক সময় খুব ঘণ একটি বিন্দুতে একত্রিত অবস্থায় ছিল। আজ থেকে প্রায় ২০০০ কোটি বছর আগে এই মহাবিশ্বে এক মহাবিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফারণের প্রথম ৩ মিনিটে বিশ্ব সৃষ্টির বিভিন্ন উপাদান গঠিত হয় এবং তা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। আর এই কল্পনা অনুসারে এভাবেই সৃষ্টি হয় এই মহাবিশ্ব।
কিন্তু শক্তি কখনোই কোন ম্যাটার বা বস্তুকে অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করা ছাড়া উন্মুক্তভাবে থাকতে পারে না। আবার কোন প্রকার বল প্রয়োগ ছাড়াও শক্তির কোন রূপান্তর ঘটতে পারে না।
তাই শুরুতেই এই কল্পনাটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে প্রতিপন্ন হচ্ছে, কোন তত্ত্বে রূপ নেয়ার তো প্রশ্নই আসে না। কেননা ভাঁড় হকিং বলছে- ‘মহাবিস্ফোরণ হওয়ার আগের ঘটনাগুলোর কোনো গুরুত্ব যেহেতু নেই, তাই এটাই বলা যায় যে মহাবিস্ফোরণ থেকেই সময়ের শুরু।’
সুতরাং মহাবিস্ফোরণ থেকেই সময়ের শুরু হওয়ার অর্থ হচ্ছে মহাবিস্ফোরণের পূর্বে সব কিছু স্থির ছিল। অথচ ১ম গতি সূত্র বলছে- “বাইরের কোন বল বস্তুর উপর প্রযুক্ত না হলে অর্থাৎ বস্তুর উপর বলের লব্ধি শূন্য হলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল গতিশীল থাকবে।”
তাহলে সময় স্থির থাকলে বা অনুপস্থিত থাকলে কথিত শক্তি বিন্দুর উপর কোন বল প্রয়োগ ছাড়াই এত বড় মহাবিস্ফোরণ ঘটলো কিভাবে?
সুতরাং, কথিত মহাবিস্ফোরণ কল্পনা একটি ভিত্তিহীন কল্পনা বলে প্রমাণিত হলো। আর যদি কথিত মহাবিস্ফোরণ কল্পনা সত্য হয়ে থাকে তাহলে ১ম গতি সূত্র ভুল।
কেননা আমরা জানি যে, বল = ভর x ত্বরণ
এখানে ত্বরণ হতে অবশ্যই কমপক্ষে একটি গতিশীল বস্তু প্রয়োজন, কিন্তু বলা হচ্ছে মহাবিশ্বের সৃষ্টি মুহূর্তে শক্তি ব্যতীত কোন ধরনের বস্তুরই অস্তিত্ব ছিলো না! আবার বলা হচ্ছে সময়ও ছিল না, কিন্তু মহাবিস্ফোরণ সংঘটিত হয়েছে! কি হাস্যকর ব্যাপার!!!
তাহলে প্রশ্ন, তখন যদি কোন গতিশীল বস্তু না থেকে থাকে এমনকি সময়ের অস্তিত্বও না থেকে থাকে এত বড় মহাবিস্ফোরণ ঘটলো কিভাবে?
আবার কথিত মহাবিস্ফোরণের জন্য জন্য প্রচুর শক্তির দরকার ছিল। তাহলে এই শক্তি এলো কোথা থেকে?
এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ভাঁড় হকিং বলে মহাবিশ্বের শক্তি ২ ধরনের। প্রথমটি হল ধনাত্বক শক্তি। অর্থাৎ আমরা যে শক্তিগুলো ব্যবহার করি সেগুলো। আর দ্বিতীয়টি হল ঋণাত্বক শক্তি। যার সন্ধান অদ্যবধি পাওয়া যায়নি। আর এই ‘ধনাত্বক + ঋণাত্বক = ০’ হলে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতে কোন স্রষ্টার দরকার নেই। নাঊযুবিল্লাহ!
এ বিষয়টিকে সহজভাবে বোঝানোর জন্য সে একটি উদাহরণ দেয়। উদাহরণটি এ রকম যে, “মনে করুন একজন লোক চাইল যে, সে একটি সমতল ভূমিতে পাহাড় তৈরি করবে। এতে তার কি করতে হবে? প্রথমে তাকে একটি গর্ত করতে হবে এবং গর্তের মাটিগুলোকে সমতল ভূমির একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখলে এক সময় তা একটি পাহাড়ে রূপ নিবে। তাহলে ঘটনা কি দাঁড়াল? ঐ গর্তে যা যা ছিল এখন ঠিক তা তা ঐ পাহাড়ে আছে।
সুতরাং পাহাড় + গর্ত = সমতল ভূমি বা শুন্য।
আর যদি এরকমভাবে সকল শক্তির যোগফল শূন্য হয় তবে স্রষ্টার ধারণা ভূল।” নাঊযুবিল্লাহ!
এখানে একটি সহজ ও ছোট প্রশ্ন, সবকিছুর যোগফল শুন্য হওয়া সত্ত্বেও কেন পাহাড় তৈরিতে এক জন লোক লাগল?
অর্থাৎ পাহাড়টি বা গর্তটি এমনি এমনি তৈরি হয়নি এর একজন স্রষ্টা রয়েছে।
এছাড়াও ৩য় গতি সূত্র বলছে- “প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।” সে অনুযায়ী কোদালের কোপের বা ড্রেজারের মাধ্যমে গর্ত তৈরীর ফলে পাহাড় সৃষ্টি হয়েছে কিংবা পাহাড় তৈরীর ফলে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। তাহলে “কোদালের কোপ বা ড্রেজার” রূপী কথিত মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে “পাহাড়” রূপী বিশ্ব সৃষ্টি হলে, গর্ত রূপী বিষয়টি কি?
সুতরাং, কথিত মহাবিস্ফোরণ কল্পনা একটি ভিত্তিহীন কল্পনা বলে প্রমাণিত হলো। আর যদি কথিত মহাবিস্ফোরণ কল্পনা সত্য হয়ে থাকে তাহলে ৩য় গতি সূত্র ভুল।
আবার ভাঁড় হকিং যে দুই রকম শক্তির কথা বলেছে তা পুরোপুরি কাল্পনিক। কেননা মহাবিশ্বে ঋণাত্বক শক্তি থাকতে পারে না। ঋণাত্বক শক্তি থাকতে হলে ঋণাত্বক ভরও থাকবে। কিন্তু এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, কেউ কখনো এমন কোন বস্তুর কথা শুনেননি যার ভর ঋণাত্বক।
কেননা আমরা জানি যে, কোন বস্তুর স্থিতি শক্তি = ভর (m) x অভিকর্ষ ত্বরণ (ম)
যদি বস্তুটিতে শক্তি না থাকে তবে স = ০ [ম = ৯.৮ মি/সে]
আর কোন বস্তুর ভর শুন্য মানে কল্পনা ছাড়া আর কিছুই না। অর্থাৎ কোন বস্তু থেকে সকল শক্তি বের করা সম্ভব নয়। কিন্তু ভাঁড় হকিং শুধু শুন্য বলেনি বরং বলেছে ঋণাত্বক। অর্থাৎ ভরের মান হবে ঋণাত্বক! চরম হাস্যকর প্রলাপ।
তাই ভর কখনো ঋণাত্বক হতে পারে না। আর ঋণাত্বক শক্তি শুধু কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়।
অতএব প্রমাণিত হলো যে, কথিত বিগব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ একটি অবাস্তব কল্পনা মাত্র। সৃষ্টির ইতিহাসে এ ধরণের কোন ঘটনাই ঘটেনি। বরং মহান সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ পাক তিনি ধাপে ধাপে এই বিশাল সৃষ্টি জগত সৃষ্টি করেছেন।
আর যেহেতু কথিত বিগব্যাং বা মহাবিস্ফোরণই সংঘটিত হয়নি, তাই আকাশ আর পৃথিবী মিশে ছিল যা পরবর্তিতে আলাদা করে দেওয়া হল (Quran 21:30) - এটা দিয়ে কোনভাবেই বিগব্যাং কে ব্যাখ্যা করা অবকাশই নেই।
বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ উনার ৩০ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে অভেদ্য আসমান আর অচ্ছেদ্য যমীনের মধ্যভাগ দিয়ে বাতাস প্রবাহিত করে তাদেরকে পৃথক করা ব্যাপারে বর্ণনা করেন-
أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا ۖ وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ ۖ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ
অর্থ : “কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আসমানসমূহ ও যমীনের মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)
এ সম্পর্কে হযরত ইকরামা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আতিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন-
ان السموات كانت رتقاً لا تـمطر والارض كانت رتقاً لا تنبت ففتق السماء بالـمطر والارض بالنبات
অর্থ : “প্রথমাবস্থায় আসমান মার্গ ছিলো অভেদ্য, তাই বৃষ্টিপাত হতো না। আর যমীনও ছিল অচ্ছেদ্য, তাই যমীনে জন্ম নিতো না কোন উদ্ভিদ। মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের এই অনমনীয় অবস্থা দূর করে দিলেন। ফলে শুরু হলো বৃষ্টিপাত। যমীনেও অঙ্কুরোদগম ঘটলো উদ্ভিদরাজির।” (তাফসীরে মাযহারী : পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)
আর বাতাস সৃষ্টি করে আসমান এবং যমীনের অভ্যন্তরভাগ দিয়ে প্রবাহিত করিয়ে উভয়ের মধ্যে ব্যবধান তৈরির আগ পর্যন্ত পরস্পর একত্রিভূত ছিল বিধায় رَتْقًا ‘রতক্ব’ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ বন্ধ করা, একত্রিভূত করা। আর فَتَقْنَا ‘ফাতক্বান’ অর্থ পৃথক করা।
যেহেতু কথিত বিগব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ বলেই কিছু নেই। তাই فَتَقْنَا ‘ফাতক্বান’ শব্দ মুবারক দিয়ে কথিত বিগব্যাং বা মহাবিস্ফোরণকে ব্যাখ্যার কোনই অবকাশ নেই।
এছাড়াও মহান আল্লাহ পাক তিনি ১ লক্ষ ২৪ হাজার মতান্তরে ২ লক্ষ ২৪ হাজার হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সত্য দ্বীন সহ যমীনে প্রেরণ করেছেন। উনারা যমীনবাসীকে সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কেও জানিয়েছেন। আর এই সৃষ্টিতত্ত্ব বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়ের মাধ্যমে বিকৃতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে ও বংশ পরম্পরায় সঞ্চালিতও হয়েছে। সে রকমই একটি বিষয় হচ্ছে প্যাগানসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক গোত্রের উপকথা এবং লোককথাতেই আকাশ আর পৃথিবী মিশে থাকার বর্ণনা। আর তাদের বিকৃতভাবে উপস্থাপনের নমুনা হচ্ছে এর সাথে নানান দেব-দেবী জুড়ে দিয়ে পৃথক করার কথা বলা। কিন্তু তাই বলে এই ধরণের দেব-দেবীর বর্ণনা কোনভাবেই যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করেনি, ঠিক তেমনি আকাশ আর পৃথিবী মিশে থাকার বর্ণনাও প্যাগানসহ মধ্যপ্রাচ্যের কোন গোত্রের কাছ থেকে ধার করে নিয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণনা করা হয়নি। এগুলো সবই মূর্খ ও মিথ্যাবাদী নাস্তিকদের মূর্খতা ঢাকার অপচেষ্টা ও মিথ্যাচার।
0 Comments:
Post a Comment