সূর্য তার কক্ষপথেই বিচরণ করছে। কোথাও সূর্য অস্তমিত হলেও অন্য স্থানে উদিত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকে। কক্ষপথের বাইরে যেতে পারে না। তাই সূর্যের সিজদা দেয়ার অর্থ হচ্ছে নির্দিষ্ট নিয়মে নিজ কক্ষপথে বিচরণ করা।

 সূর্য তার কক্ষপথেই বিচরণ করছে। কোথাও সূর্য অস্তমিত হলেও অন্য স্থানে উদিত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকে। কক্ষপথের বাইরে যেতে পারে না। তাই সূর্যের সিজদা দেয়ার অর্থ হচ্ছে নির্দিষ্ট নিয়মে নিজ কক্ষপথে বিচরণ করা। 

নাস্তিকদের আপত্তি : মুহম্মদের কাছে ‘প্রতিরাতে সূর্য কোথায় যায়’ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান (জিব্রাইল থেকে প্রাপ্ত তথ্য) - সূর্য প্রতি রাতে আল্লাহর আরশের নিচে সেজদা দিতে থাকে এবং পরের দিন পূর্বাবস্থা থেকে উদিত হয়ার অনুমতি চায় (Sahih Bukhari 4:54:421 Sahih Muslim 1:297)! এটা কি মুহম্মদের প্রকৃতজ্ঞানের অভাব থেকে উৎপন্ন নয়?

খণ্ডণ : নূরে মুজাসসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে প্রকৃতজ্ঞান থাকার কারণেই তিনি প্রকৃত বিষয়টি বিশ্ববাসীকে উপস্থাপন করেছেন। পক্ষান্তরে গ-মূর্খ নাস্তিকদের জ্ঞানহীনতার কারণে এ ধরনের প্রশ্নের অবতারণা করেছে।

বুখারী শরীফ (৪:৫৪:৪২১) উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَمَ لِاَبِـىْ ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ حِيْنَ غَرَبَتِ الشَّمْسُ تَدْرِىْ اَيْنَ تَذْهَبُ قُلْتُ اللهُ وَرَسُوْلُهُ اَعْلَمُ‏‏ قَالَ فَاِنَّـهَا تَذْهَبُ حَتّٰى تَسْجُدَ تَـحْتَ الْعَرْشِ فَتَسْتَأْذِنَ فَيُؤْذَنَ لَـهَا وَيُوْشِكُ اَنْ تَسْجُدَ فَلَا يُقْبَلَ مِنْهَا وَتَسْتَأْذِنَ فَلَا يُؤْذَنَ لَـهَا يُقَالُ لَـهَا ارْجِعِى مِنْ حَيْثُ جِئْتِ‏ فَتَطْلُعُ مِنْ مَغْرِبِـهَا فَذَلِكَ قَوْلُهُ تَعَالٰى ‏‏وَالشَّمْسُ تَـجْرِىْ لِمُسْتَقَرٍّ لَـهَا ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ‏‏.‏

অর্থ : “হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, আপনি কি জানেন, সূর্য কোথায় যায়? আমি বললাম, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই ভাল জানেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তা যেতে যেতে আরশের নীচে গিয়ে সিজদায় পড়ে যায়। অতঃপর সে আবার উদিত হবার অনুমতি চায় এবং তাকে অনুমতি দেয়া হয়। আর শীঘ্রই এমন সময় আসবে যে, সিজ্দা করবে কিন্তু তা কবূল করা হবে না এবং সে অনুমতি চাইবে কিন্তু তাকে অনুমতি দেয়া হবে না। তাকে বলা হবে, যে পথ দিয়ে আসলে ঐ পথেই ফিরে যাও। তখন সে পশ্চিম দিক হতে উদিত হয়- এটাই মর্ম হলো মহান আল্লাহ পাক উনার বাণীর- ‘আর সূর্য নিজ কক্ষপথে চলতে থাকে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ’।” (বুখারী শরীফ : কিতাবু বাদয়াল খ¦ালক্ব্ : বাবু ছিফাতিশ শামসি ওয়াল ক্বমার)

আর মুসলিম শরীফ (১:২৯৭) উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَوْمًا اَتَدْرُوْنَ اَيْنَ تَذْهَبُ هٰذِهِ الشَّمْسُ قَالُوا اللهُ وَرَسُوْلُهُ اَعْلَمُ قَالَ‏ اِنَّ هٰذِهِ تَـجْرِىْ حَتّٰى تَنْتَهِىَ اِلٰى مُسْتَقَرِّهَا تَـحْتَ الْعَرْشِ فَتَخِرُّ سَاجِدَةً وَلَا تَزَالُ كَذَلِكَ حَتّٰى يُقَالَ لَـهَا ارْتَفِعِى ارْجِعِىْ مِنْ حَيْثُ جِئْتِ فَتَرْجِعُ فَتُصْبِحُ طَالِعَةً مِنْ مَطْلِعِهَا ثُـمَّ تَـجْرِىْ حَتّٰى تَنْتَهِىَ اِلٰى مُسْتَقَرِّهَا تَـحْتَ الْعَرْشِ فَتَخِرُّ سَاجِدَةً وَلَا تَزَالُ كَذَلِكَ حَتّٰى يُقَالَ لَـهَا ارْتَفِعِى ارْجِعِىْ مِنْ حَيْثُ جِئْتِ فَتَرْجِعُ فَتُصْبِحُ طَالِعَةً مِنْ مَطْلِعِهَا ثُـمَّ تَـجْرِىْ لَا يَسْتَنْكِرُ النَّاسُ مِنْهَا شَيْئًا حَتّٰى تَنْتَهِىَ اِلٰى مُسْتَقَرِّهَا ذَاكَ تَـحْتَ الْعَرْشِ فَيُقَالُ لَـهَا ارْتَفِعِىْ اَصْبِحِىْ طَالِعَةً مِّنْ مَغْرِبِكِ فَتُصْبِحُ طَالِعَةً مِّنْ مَغْرِبِـهَا فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَتَدْرُوْنَ مَتَى ذَاكُمْ ذَاكَ حِيْنَ لَا يَنْفَعُ نَفْسًا اِيْـمَانُـهَا لَـمْ تَكُنْ اٰمَنَتْ مِنْ قَبْلُ اَوْ كَسَبَتْ فِىْ اِيْـمَانِـهَا خَيْرًا‏.‏

অর্থ : “হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। একদিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা কি জানেন, এ সূর্য কোথায় যায়? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই ভাল জানেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এ সূর্য চলতে থাকে এবং সম্মানিত আরশ উনার নীচে অবস্থিত তার অবস্থান স্থলে যায়। সেখানে সে সিজদাবনত হয়ে পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয়, উঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও! অনন্তর সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্থল দিয়েই উদিত হয়। তা আবার চলতে থাকে এবং সম্মানিত আরশ উনার নীচে অবস্থিত তার অবস্থান স্থলে যায়। সেখানে সে সিজদাবনত অবস্থায় পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয় উঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও। তখন সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্থল হয়েই সে উদিত হয়। এমনিভাবে চলতে থাকবে; মানুষ তার থেকে অস্বাভাবিক কিছু হতে দেখবে না। শেষে একদিন সূর্য যথারীতি সম্মানিত আরশ উনার নীচে তার অবস্থানে যাবে। তাকে বলা হবে, উঠ এবং অস্তাচল থেকে উদিত হও। অনন্তর সেদিন সূর্য পশ্চিমাকাশে উদিত হবে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘কোন দিন সে অবস্থা হবে আপনারা জানেন? সেদিন ঐ ব্যক্তির ঈমান কোন কাজে আসবে না, যে ব্যক্তি পূর্বে ঈমান আনেনি কিংবা যে ব্যক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি’।” (মুসলিম শরীফ : কিতাবুল ঈমান : বাবু বাইয়ানিয যামানিল্লাযি লা ইউক্ববালু ফীহি ইল্লা ঈমান)

বুখারী শরীফ (৪:৫৪:৪২১) উনার মধ্যে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা উনার মধ্যে আসলে যে বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে তা হচ্ছে, সূর্য প্রতি মুহূর্তে মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম মুবারক উনার অনুগত। মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমেই উদিত হয় এবং উনার হুকুমেই অস্তমিত হয়। 

তাই বলা বাহুল্য যে, সূর্যের সিজ্দা করার অর্থ হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম মুবারক উনার পূর্ণ অনুগত্যতা। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلِلّٰهِ يَسْجُدُ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَظِلَالُـهُم بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ.

অর্থ : “নভোম-ল ও ভূম-লে যা কিছু আছে সব কিছুই ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সিজদাবনত হয়। আর তাদের ছায়াগুলোও সকাল-সন্ধ্যায় সিজদায় অবনত থাকে।” (পবিত্র সূরা র’দ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)

وَلِلّٰهِ يَسْجُدُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ مِنْ دَابَّةٍ وَالْمَلَائِكَةُ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ.

অর্থ : “নভোম-ল যা কিছু আছে মহান আল্লাহ উনাকেই সিজদা করে। ভূম-লে যত জীবজন্তু আছে এবং সব ফেরেশতাও (মহান আল্লাহ পাক উনাকে সিজদা করে)। তারা অহংকার করে না।” (পবিত্র সূরা নাহল : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৯)

আলোচ্য পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের মূলকথা হলো, পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই খ¦লিক (সৃষ্টিকর্তা) মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য সিজদাবনত হয়। পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের মধ্যে ব্যবহৃত سُجُدُ শব্দ মুবারক বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয় নামাযের সিজদা করা, মাথা নত করা, ঝুঁকে পড়া, আদেশ পালন করা, মেনে নেওয়া, বাধ্য হওয়া, আনুগত্য প্রদর্শন করা ইত্যাদি।

সুতরাং আসমান ও যমীনের সব কিছুই মহান আল্লাহ পাক উনার বেঁধে দেওয়া নিয়মের অধীন। ঠিক একইভাবে সূর্যও তার কক্ষপথের বাইরে যেতে পারে না। এই বিষয়টিও বুখারী শরীফ উনার হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

‏‏وَالشَّمْسُ تَـجْرِىْ لِمُسْتَقَرٍّ لَـهَا

অর্থ : “আর সূর্য নিজ কক্ষপথে চলতে থাকে।”

 আর সূর্যের নিজ কক্ষপথে চলতে থাকা বা আবর্তনের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবেই অন্য আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে।

اَلَـمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يُوْلِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُوْلِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَـجْرِي اِلٰى اَجَلٍ مُّسَمًّى

অর্থ : “আপনি কি দেখেন না যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চাঁদ ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে।” (পবিত্র সূরা লুক্বমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)

وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ.

অর্থ : “তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চাঁদ। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ ۖ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ ۖ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُّسَمًّى ۗ أَلَا هُوَ الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ.

অর্থ : “তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সূর্য ও চাঁদকে কাজে নিযুক্ত করেছেন। প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।” (পবিত্র সূরা যুমার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ 

অর্থ : “তিনি রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন। তিনি সূর্য ও চাঁদকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকটি আবর্তন করে এক নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত।” (পবিত্র সূরা ফাত্বির শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)

لَا الشَّمْسُ يَنبَغِـي لَـهَا اَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ ۚ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُوْنَ.

অর্থ : “সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া, আর রাত্রির পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা; আর প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করছে।” (পবিত্র সূরা ইয়াসিন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪০)

وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

অর্থ : “তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চাঁদ। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

সুতরাং বুখারী শরীফ (৪:৫৪:৪২১) উনার মধ্যে ব্যবহৃত سُجُدُ শব্দ মুবারক সূর্য যে মহান আল্লাহ পাক উনার বেঁধে দেওয়া নিয়মের অধীন সেটাই বুঝানো হয়েছে। তাই সূর্য কখনো তার কক্ষপথের বাইরে যেতে পারে না। এই বিষয়টিই মুসলিম শরীফ (১:২৯৭) উনার হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও বর্ণিত রয়েছে।

অতএব “সূর্য প্রতি রাতে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত আরশ উনার নিচে সিজদা দিতে থাকে এবং পরের দিন পূর্বাবস্থা থেকে উদিত হয়ার অনুমতি চায়” দ্বারা সূর্য একটি নির্দিষ্ট নিয়মের অধীনে থেকে আপন কক্ষপথে বিচরণ করার বিষয়টি বুঝানো হয়েছে, সূর্য এই কক্ষপথের বাইরে যেতে পারে না। 

যা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সূর্যের আবর্তনের প্রকৃতজ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। বরং তিনি আরো সুস্পষ্টভাবেই সূর্যের আবর্তনের বিষয়টি বর্ণনা করেছেন।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ هٰذِهِ الْـمَغَارِبُ مِنْ اَيْنَ تَغْرِبُ؟ وَهٰذِهِ الْـمَطَالِعُ مِنْ اَيْنَ تَطُلعُ؟ فَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هي عَلٰى رَسِلهَا لَا تَبْرَحُ وَلَا تَزُوْل تَغْرُبُ عَنْ قَوْمٍ وَتَطْلُعُ عَلٰى قَوْمٍ وَتَغْرُبُ عَنْ قَوْمٍ وتَطْلُعُ فَقَوْمٌ يَقُوْلُوْنَ غَرْبَتَ وَقَوْمٌ يَقُوْلُوْنَ طَلْعَتٌ.

অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সুওয়াল মুবারক করা হলো- সূর্য কোথায় অস্ত যায় এবং সূর্য কোথা থেকে উদিত হয়? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যুত্তরে ইরশাদ মুবারক করেন, এটি নিয়মিত চলতে থাকে, ক্ষান্তও হয় না আর অদৃশ্যও হয় না। এটি এক স্থানে অস্তমিত হয় অন্য স্থানে উদিত হয়। আবার অন্য এক স্থানে অস্তমিত হয় আরেক স্থানে উদিত হয়, এভাবে চলতে থাকে। তাই কেউ বলে সূর্য অস্ত গিয়েছে (একই সময়ে) অন্যরা বলে সূর্য উদিত হচ্ছে।” (মুসনাদে ইমাম আবূ ইসহাক্ব হামাদানী)

সুতরাং সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, সূর্য তার কক্ষপথেই বিচরণ করছে। কোথাও সূর্য অস্তমিত হলেও অন্য স্থানে উদিত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকে। কক্ষপথের বাইরে যেতে পারে না। তাই সূর্যের সিজদা দেয়ার অর্থ হচ্ছে নির্দিষ্ট নিয়মে নিজ কক্ষপথে বিচরণ করা। 


0 Comments: