মিশরীয়দের ইট পুড়িয়ে ইমারত নির্মাণের বর্ণনা একটি ঐতিহাসিক সত্য। যা দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট। তাই প্রমাণিত হলো যে, “মিশরীয়রা কখনোই ইট পুড়িয়ে নয় বরং পাথর কেটে ঘর বানাতো” বক্তব্যটি একটি বানোয়াট, কল্পনাপ্রসূত, ভিত্তিহীন, বাস্তবতা বর্জিত বক্তব্য।

মিশরীয়দের ইট পুড়িয়ে ইমারত নির্মাণের বর্ণনা একটি ঐতিহাসিক সত্য। যা দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট। তাই প্রমাণিত হলো যে, “মিশরীয়রা কখনোই ইট পুড়িয়ে নয় বরং পাথর কেটে ঘর বানাতো” বক্তব্যটি একটি বানোয়াট, কল্পনাপ্রসূত, ভিত্তিহীন, বাস্তবতা বর্জিত বক্তব্য। 

 নাস্তিকদের আপত্তি : কুরান অনুসারে (Quran 28:38), ফেরাউন তার অনুসারীদের ইট পুড়িয়ে প্রাসাদ নির্মানের নির্দেশ দেন ! কিন্তু উক্ত বক্তব্যটি কি একটি ঐতিহাসিক ভুল নয়, যেহেতু মিশরিয়রা কখনোই ইট পুড়িয়ে নয় বরং পাথর কেটে ঘর বানাতো? (প্রকৃতপক্ষে এই অসত্যটি মুহম্মদ কপি করেছেন বাইবেল Genesis 11:3-4  থেকে)

The Egyptians constructed their public buildings with cut stone, not bricks. The Mesopotamians, by comparison, constructed most of their public buildings with baked bricks since they lacked a good source of cut stone. Except for some minor ruins at Nebesheh and Defenneh, baked [or burnt] bricks were not used in Egypt before the Roman period (Manual of Egyptian Archaeology, G. Maspero, H. Grevel, p. 4).

খণ্ডন : পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ফেরাউন কর্তৃক তার অনুসারীদের ইট পুড়িয়ে প্রাসাদ নির্মানের নির্দেশ দেয়ার ঘটনাটি যদি বাইবেল Genesis 11:3-4  থেকেই নেয়া হয়। তাহলে হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার সময় মিশরের শাসক যে স্বপ্ন দেখেছিলো সে প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত বক্তব্যের সাথে প্রচলিত বাইবেলের এবহবংরং Genesis 41:17-21-এর বর্ণনা মিলে না কেন? 

Genesis 41:17-21-এর মধ্যে বলা হয়েছে-

וַיְדַבֵּר פַּרְעֹה, אֶל-יוֹסֵף: בַּחֲלֹמִי, הִנְנִי עֹמֵד עַל-שְׂפַת הַיְאֹר. וְהִנֵּה מִן-הַיְאֹר, עֹלֹת שֶׁבַע פָּרוֹת, בְּרִיאוֹת בָּשָׂר, וִיפֹת תֹּאַר; וַתִּרְעֶינָה, בָּאָחוּ. וְהִנֵּה שֶׁבַע-פָּרוֹת אֲחֵרוֹת, עֹלוֹת אַחֲרֵיהֶן, דַּלּוֹת וְרָעוֹת תֹּאַר מְאֹד, וְרַקּוֹת בָּשָׂר: לֹא-רָאִיתִי כָהֵנָּה בְּכָל-אֶרֶץ מִצְרַיִם, לָרֹעַ. וַתֹּאכַלְנָה, הַפָּרוֹת, הָרַקּוֹת, וְהָרָעוֹת--אֵת שֶׁבַע הַפָּרוֹת הָרִאשֹׁנוֹת, הַבְּרִיאֹת. וַתָּבֹאנָה אֶל-קִרְבֶּנָה, וְלֹא נוֹדַע כִּי-בָאוּ אֶל-קִרְבֶּנָה, וּמַרְאֵיהֶן רַע, כַּאֲשֶׁר בַּתְּחִלָּה; וָאִיקָץ.

অর্থ : “তখন হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনাকে ফেরাউন বললো, আমার স্বপ্নের মধ্যে আমি নীল নদীর তীরে দাঁড়িয়েছিলাম তখন নীলনদ থেকে সাতটা স্বাস্থ্যবান মোটা-সোটা গরু উঠে আসলো এবং নীলনদের তীরে বিচরণ করছিল। এদের পরে সাতটা রুগ্ন দুর্বল গরু নদী থেকে উঠে এসে নদী তীরে এদের পাশে অবস্থান নিলো। আমি মিশরের কোথাও এরকম গরু দেখিনি। তখন রুগ্ন গরুগুলো মোটাসোটা গরুগুলোকে ভক্ষণ করে ফেলেলো। কিন্তু তারা তাদের খাওয়ার পরেও, কেউ বলেনি যে তারা এই কাজ করেছে; তাদেরকে আগের মতোই কুৎসিত দেখাচ্ছিল। তখন আমি জেগে উঠি।”

অন্যদিকে এই প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-

وَقَالَ الْمَلِكُ اِنِّـيْ اَرٰى سَبْعَ بَقَرَاتٍ سِـمَانٍ يَأْكُلُهُنَّ سَبْعٌ عِجَافٌ وَسَبْعَ سُنبُلَاتٍ خُضْرٍ وَاُخَرَ يَابِسَاتٍ ۖ يَا اَيُّهَا الْمَلَاُ اَفْتُوْنِـيْ فِي رُؤْيَايَ اِنْ كُنْتُمْ لِلرُّؤْيَا تَعْبُرُوْنَ. قَالُوا اَضْغَاثُ اَحْلَامٍ ۖ وَمَا نَـحْنُ بِتَأْوِيْلِ الْاَحْلَامِ بِعَالِمِيْنَ. وَقَالَ الَّذِيْ نَـجَا مِنْهُمَا وَادَّكَرَ بَعْدَ اُمَّةٍ اَنَا اُنَبِّئُكُمْ بِتَأْوِيْلِهِ فَأَرْسِلُوْنِ. يُوْسُفُ اَيُّهَا الصِّدِّيقُ اَفْتِنَا فِي سَبْعِ بَقَرَاتٍ سِـمَانٍ يَأْكُلُهُنَّ سَبْعٌ عِجَافٌ وَسَبْعِ سُنبُلَاتٍ خُضْرٍ وَاُخَرَ يَابِسَاتٍ لَّعَلِّيْ اَرْجِعُ اِلَى النَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَعْلَمُوْنَ.

অর্থ : “বাদশাহ বলল, আমি স্বপ্নে দেখলাম, সাতটি মোটা-তাজা গাভী-এদেরকে সাতটি শীর্ণ গাভী খেয়ে যাচ্ছে এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অন্যগুলো শুষ্ক। হে পরিষদবর্গ! তোমরা আমাকে আমার স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলো, যদি তোমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যায় পারদর্শী হয়ে থাকো। তারা বলল, এটা কল্পনাপ্রসূত স্বপ্ন। এরূপ স্বপ্নের ব্যাখ্যা আমাদের জানা নেই। দু’জন কারারুদ্ধের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি মুক্তি পেয়েছিল এবং দীর্ঘকাল পর স্মরণ হলে, সে বললো, আমি তোমাদেরকে এর ব্যাখ্যা বলছি। তোমরা আমাকে প্রেরণ করো। সে তথায় পৌঁছে বললো, হে হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম! হে সত্যবাদী! সাতটি মোটা-তাজা গাভীকে খাচ্ছে সাতটি শীর্ণ গাভী এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অন্যগুলো শুষ্ক; আপনি আমাদেরকে এ স্বপ্ন সম্পর্কে পথনির্দেশ প্রদান করুন, যাতে আমি তাদের কাছে ফিরে গিয়ে তাদের অবগত করাতে পারি।” (পবিত্র সূরা ইউসূফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩-৪৬)

 সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার সময় মিশরের শাসককে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে الْمَلِكُ বা বাদশাহ বলে সম্বোধন করা হয়েছে কিন্তু বাইবেলে উল্লেখ করা হয়েছে פַּרְעֹה ‘ফেরাউন’ হিসেবে। বস্তুত হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সময়ে যে যালিম শাসক ছিল সে-ই ফেরাউন।

হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنِ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّهُ قَالَ‏ الْكَرِيْـمُ ابْنُ الْكَرِيْـمِ ابْنِ الْكَرِيْـمِ ابْنِ الْكَرِيْـمِ يُوْسُفُ ابْنُ يَعْقُوْبَ بْنِ اِسْحَاقَ بْنِ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ‏‏.

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ‘উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সম্মানী ব্যক্তি যিনি সম্মানী ব্যক্তি উনার আওলাদ, যিনি সম্মানী ব্যক্তি উনার আওলাদ, যিনি সম্মানী ব্যক্তি উনার আওলাদ। তিনি হলেন, হযরত ইউসুফ ইবনে ইয়া’কূব ইবনে ইসহাক ইব্নে ইবরাহীম আলাইহিমুস সালাম।” (বুখারী শরীফ : কিতাবু আহাদিছুল আম্বিয়া : হাদীছ শরীফ নং ৩৩৮২ ও ৩৩৯০; বুখারী শরীফ : কিতাবুত তাফসীর : হাদীছ শরীফ নং ৪৬৮৮)

“হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার সময় ‘হাকসূস’ রাজারা (ملوك الـهكسوس) ফেরাঊনদের হটিয়ে মিশর দখল করে এবং ২০০ বছর যাবত তারা সেখানে রাজত্ব করে। যা ছিল হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আবির্ভাবের প্রায় ২০০০ বছর পূর্বের ঘটনা।” (তারীখুল আম্বিয়া ১/১২৪ পৃষ্ঠা) 

এই সময় থেকেই বনী ইসরাঈলগণ মিশরে বসবাস শুরু করে। পরে মিশরীয়রা তাদেরকে আবার পরাজিত করে। সেমিটিক এবং এশীয় বংশের মিশ্র একটি জাতি যারা মিশরে আক্রমণ করে এবং নীল নদের অববাহিকায় প্রায় ১৬৪০ খৃস্টপূর্ব বসতি স্থাপন করে এবং মিশরের ইতিহাসে তারা ১৫তম এবং ১৬তম রাজবংশ গঠন করে এবং ১৫৩২ খৃস্টপূর্ব পর্যন্ত মিশরের একটি বড় অংশ শাসন করে। ‘হাকসূস’ জাতিরা যখন শাসন করতো তখন তাদের রাজাদেরকে ‘ফেরাউন’ বলা হতো না। ‘ফেরাউন’ উপাধি শুধুমাত্র মিশরীয় রাজাদেরকে বলা হতো, বহিরাগত কোনো শাসকদের জন্য ব্যবহৃত হতো না। যখন হযরত ইউসূফ আলাইহিস সালাম এবং উনার সম্মানিত পরিবার-পরিজন মিশরে আসেন তখন ‘হাকসূস’ শাসকরা মিশর শাসন করছিলো। হযরত ইউসূফ আলাইহিস সালাম ও উনার সম্মানিত পরিবার-পরিজন এবং বনী ইসরাঈলীরা হাকসূসদের সাথে সুসম্পর্ক রেখে মিশরে অবস্থান করতেন। আর তাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ‘হাকসূস’ জাতির শাসককে আল মালিক (ﺍﻟْﻤَﻠِﻚُ) বাদশা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে-

وَﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﻤَﻠِﻚُ ﺍﺋْﺘُﻮْﻧِـﻲْ ﺑِﻪٖ اَﺳْﺘَﺨْﻠِﺼْﻪُ ﻟِﻨَﻔْﺴِﻲْ ۖ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻛَﻠَّﻤَﻪُ ﻗَﺎلَ اِﻧَّﻚَ ﺍﻟْﻴَﻮْمَ ﻟَﺪَﻳْﻨَﺎ ﻣَﻜِﻴْﻦٌ اَﻣِﻴْﻦٌ. قَالَ اجْعَلْنِيْ عَلٰى خَزَائِنِ الْاَرْضِ ۖ اِنِّـيْ حَفِيْظٌ عَلِيْمٌ. وَكَذٰلِكَ مَكَّنَّا لِيُوْسُفَ فِي الْاَرْضِ يَتَبَوَّاُ مِنْهَا حَيْثُ يَشَاءُ ۚ نُصِيْبُ بِرَحْـمَتِنَا مَن نَّشَاءُ ۖ وَلَا نُضِيْعُ اَجْرَ الْمُحْسِنِيْنَ.

অর্থ : “আর বাদশাহ (ﺍﻟْﻤَﻠِﻚُ) বললেন, (হযরত ইঊসুফ আলাইহিস সালাম) উনাকে আমার কাছে নিয়ে আসুন। আমি উনাকে আমার নিজের জন্য বিশেষভাবে গ্রহণ করবো। অতপর, তিনি যখন বাদশাহর সাথে আলোচনা মুবারক করলেন, তখন বাদশাহ উনাকে বললেন, নিশ্চয়ই আপনি আজ আমাদের নিকট সুপ্রতিষ্ঠিত এবং চরম বিশ্বস্ত। (হযরত ইঊসুফ আলাইহিস সালাম) তিনি বললেন, আমাকে দেশের ধন-সম্পদের দায়িত্বশীল করুন। নিশ্চয়ই আমি হিফাযতকারী এবং অভিজ্ঞ। আর এইভাবে আমি হযরত ইঊসুফ আলাইহিস সালাম উনাকে যমীনে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছি। সেখানে তিনি উনার মুবারক ইচ্ছা অনুযায়ী দায়িত্ব মুবারক পালন করতেন। আমি আমার ইচ্ছা মুবারক অনুযায়ী রহমত মুবারক দ্বারা যে কাউকে মনোনীত করি। আর আমি মুহসিনগণ উনাদের আমলের প্রতিদান বিনষ্ট করি না।” (পবিত্র সূরা ইউসুফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৪-৫৬)

কিন্তু পরবর্তীতে অনেক বছর পর মিশরীয়রা পুনরায় হাকসূস জাতিদের পরাজিত করে ক্ষমতা দখল করে এবং ফেরাউন রাজত্ব পূণঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। তারা বনী ইসরাঈলীদের দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে। এই সময় হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহসি সালাম তিনি আগমন করেন এবং ফেরাউনকে হক্বের দাওয়াত দেন।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সময়ে মিশরীয় শাসককে ফেরাউন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে-

ثُـمَّ بَعَثْنَا مِنْ بَۢعْدِهِمْ مُّوْسٰى بِاٰيَاتِنَا اِلٰى فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ فَظَلَمُوْا بِـهَا ۖ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُفْسِدِيْنَ. وَقَالَ مُوْسٰى يَا فِرْعَوْنُ اِنِّـيْ رَسُوْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ.

অর্থ : “অতঃপর আমি তাদের পরে হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহসি সালাম উনাকে পাঠিয়েছি নিদর্শনাবলী দিয়ে ফেরাউন ও তার সভাসদদের নিকট। বস্তুতঃ উনার মোকাবেলায় তারা কুফরী করেছে। সুতরাং চেয়ে দেখ, কি পরিণতি হয়েছে অনাচারীদের। আর হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহসি সালাম তিনি বললেন, হে ফেরাউন! আমি বিশ্ব-পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত রসূল।” (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৩-১০৪)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন- 

فَمَا اٰمَنَ لِمُوْسٰى اِلَّا ذُرِّيَّةٌ مِّنْ قَوْمِهٖ عَلٰى خَوْفٍ مِّنْ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِمْ اَنْ يَفْتِنَهُمْ ۚ وَاِنَّ فِرْعَوْنَ لَعَالٍ فِي الْاَرْضِ وَاِنَّهُ لَمِنَ الْمُسْرِفِيْنَ.

অর্থ : “আর কেউ ঈমান আনলো না হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহসি সালাম উনার প্রতি উনার কওমের কতিপয় বালক ছাড়া-ফেরাউন ও তার সর্দারদের ভয়ে যে, এরা না আবার কোন বিপদে ফেলে দেয়। ফেরাউন দেশময় কর্তৃত্বের শিখরে আরোহণ করেছিল। আর সে তার হাত ছেড়ে রেখেছিল।” (পবিত্র সূরা ইউনুছ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৩)

বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়, বাইবেলে ‘হাকসূস’ শাসকদেরকে ফেরাউন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ ভুল। কিন্তু পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইউসূফ আলাইহিস সালাম উনার সময় ‘হাকসূস’ জাতির শাসককে আল মালিক (ﺍﻟْﻤَﻠِﻚُ) বাদশা হিসেবে এবং উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার বিষয়টি আল আযীয (الْعَزِيزِ) বলে সম্বোধন করেছেন। ফেরাউন বলে সম্বোধন করেননি। এ থেকে স্পষ্ট পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো কিছুই তথাকথিত বাইবেল থেকে অনুসরণ করা হয়নি। বরং তা মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কালাম এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মু’যিযা শরীফ।

সুতরাং পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ সম্বন্ধে নাস্তিকদের সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা অপবাদের অসারতা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো।

মূর্খ নাস্তিকরা “ÒManual of Egyptian Archaeology, G. Maspero, H. Grevel, p. 4Ó থেকে উদ্ধৃতি দেয় যে, “মিশরীয়রা তাদের সর্বসাধারণের ইমারতগুলো কাটা পাথর দিয়ে তৈরী করতো, ইট দিয়ে নয়। তুলনামূলকভাবে মেসোপটেমীয়রা কাটা পাথরের ভালো কোন উৎসের অভাবে পোড়া ইট দিয়ে তাদের সর্বসাধারণের বেশিরভাগ ইমারত তৈরী করতো। নেবেশিহ ও ডিফেনেহ-এর কিছু ক্ষুদ্র ধ্বংসাবশেষ ছাড়া রোমান যুগের আগে মিশরে পোড়া ইট ব্যবহার করা হতো না।”

কিন্তু ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, মেসোপটেমিয়ার অধিবাসীরা সর্বপ্রথম পিরামিড আকৃতির স্থাপনা তৈরি করেছিল। এদের ‘জিগুরাত’ নামে ডাকা হতো। প্রাচীনকালে এদের উজ্জল সোনালী/তামাটে রঙ করা হত। যেহেতু এদের রোদে শুকানো কাদামাটির ইট দিয়ে তৈরী করা হতো, এদের খুব সামান্যই অবশিষ্ট আছে। স্থানীয় ধর্মের জন্য সুমেরইয়, ব্যাবিলনইয়ান, এলামাইট, আক্কাদীয় এবং আসিরীয়ানরা জিগুরাত বানাত। প্রতিটি জিগুরাত একটি মন্দির কমপ্লেক্সের অন্তর্গত ছিল যেখানে অন্যান্য স্থাপনাও থাকত। জিগুরাতের পূর্বসুরী উত্তোলিত মাচা যা ৪০০০ খৃস্টপূর্বের উবাইদ আমল থেকে বিদ্যমান। সবচেয়ে প্রাচীন জিগুরাতগুলো নির্মাণ শুরু হয়েছিল প্রাথমিক সুমেরীয় সভ্যতার শেষ দিকে। আর সর্বশেষ মেসোপটেমিয়ান জিগুরাত ৬ষ্ঠ খৃষ্টপূর্বের।

বর্গাকার, ডিম্বাকার অথবা আয়তাকার ভিত্তির উপর ক্রমহ্রাসমান স্তরে স্তরে তৈরী জিগুরাত ছিল একটি পিরামিড আকৃতির স্থাপনা, যার চূড়া ছিল সমতল। জিগুরাতের কেন্দ্র হতো রোদে পোড়ানো ইটের তৈরি, আর এর সম্মুখভাগ ছিল আগুনে পোড়া ইটে মোড়ানো। এদের সম্মুখভাগ প্রায়ই বিভিন্ন রঙের প্রলেপ দেয়া থাকত, যা জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত গুরুত্ব বহন করতো। মাঝে মাঝে রাজারা তাদের নিজেদের নাম এসব রাঙানো ইটে অঙ্কন করে রাখতো। স্তরের সংখ্যা ২-৭ এর মাঝে উঠা নামা করতো।

আবার ইট তৈরীর ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, খৃষ্টপূর্ব ৭,৫০০ বছর পূর্বে সবচেয়ে প্রাচীনতম ইটের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ইট দক্ষিণ-পূর্ব আনাতোলিয়ার নিকটবর্তী দিয়াবাকির কাছাকাছি তাইগ্রিস এলাকা থেকে সংগৃহীত হয়েছে। এরচেয়ে অল্প প্রাচীন ইট খৃষ্টপূর্ব ৭,০০০ থেকে ৬,৩৯৫ সালের মধ্যে জেরিকো এবং কাতাল হাইয়ূক এলাকায় দেখা গেছে। তবে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, মধ্যপ্রাচ্যে খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে আগুনে পোড়া ইট তৈরী করা হয়েছিল। আগুনে পোড়ানো ইট ঠা-া এবং আর্দ্র আবহাওয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে ও বেশ মজবুত প্রকৃতির হয়ে থাকে।

এছাড়াও মিশরীয় প্রাচীন সংকেত লিপি হাইয়ারোগ্লিফিক আবিষ্কারের পর নাস্তিকদের মিথ্যাচারীরা পুরোপুরি প্রকাশ হয়ে যায়। হাইয়ারোগ্লিফিক বা সংকেত লিখনে প্রাচীন মিশরীয় ভাষা যুগ যুগ ধরে টিকে রয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দীতে খৃষ্টধর্ম প্রচার ও অন্যান্য সংস্কৃতির প্রসারের ফলে চতুর্থ শতকের পর মিশরীয়রা প্রাচীন বিশ্বাস ও সংকেত লিপি (হাইয়ারোগ্লিফিক) সম্পূর্ণরূপে ভুলে যায়। দীর্ঘদিন পর ১৭৯৯ খৃষ্টাব্দে ÒRosetta StoneÓ  নামে একটি লিপিফলক আবিষ্কারের পর হাইয়ারোগ্লিফিক বা প্রাচীন মিশরীয় সংকেত লিপির সন্ধান পাওয়া যায়। আর লিপিফলকটি ছিল হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের ১৯৬ বছর পূর্বের। হাইয়ারোগ্লিফিক আবিষ্কারের আগে প্রাচীন মিশরীয় লেখা এবং অভিলিখন (শিলার গায়ে লেখা) বোঝা যেত না।

প্রাচীন মিশরীয় অভিলিখন ৩টি ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে লেখা হতো। ১. হাইয়ারোগ্লিফিক, ২. ডেমোটিক (প্রাচীন মিশরীয় হাইয়ারোটিক লিখনের সহজরূপ) ও ৩. গ্রিক। গ্রিক লিখনটির সাহায্য নিয়ে প্রাচীন মিশরীয় সংকেত লিখনগুলোর অর্থ বের করা হলো। পরবর্তীতে লিপিটির অনুবাদ সম্পূর্ণ করা হলো। এভাবে ভুলে যাওয়া প্রাচীন মিশরের ভাষা ও এর সাথে জড়িত কিছু ঘটনার সন্ধান পাওয়া গেল। সমগ্র অভিলিখনগুলোর সংগ্রহের উপরে নির্ভর করে তৈরী অভিধানের মধ্যে একটি হলো প্রাচীন মিশরীয়-জার্মান অভিধান ÒDie Sprache der Pharaonen. Großes Handwörterbuch Ägyptisch-DeutschÓ (2800-950 v. Chr.)| এই বইয়ের ২০০০ খৃষ্টাব্দ সংস্করণের ১৫৭০ পৃষ্ঠায়, আর ১৯৯৫ খৃষ্টাব্দ সংস্করণের ৮৯৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত ÒZiegel brennenÓ দ্বারা প্রাচীন মিশরে নির্মাণ কাজে ইট পোড়ানোর উল্লেখ রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, প্রাচীন মিশরের সর্বপ্রাচীন ইট পোড়ানোর নিদর্শন পাওয়া যায় মধ্যবর্তী রাজত্বকালে। (G.A. Reisner. N.F. Wheeler & D.Dunham, UronartiShalfakMirgissa, 1967, Second Cataract Forts: Volume II Museum of Fine Arts: Boston (USA), pp. 118-119 and Plate XLIX B; A. J. Spencer. Brick Architecture In Ancient Egypt. 1979, page140; "Brick Construction" in D. Arnold (S. H. Gardiner and H. Strudwick [Trans.]), The Encyclopaedia of Ancient Egyptian Architecture. 2003. I. B. Tauris: London. page34)

পরবর্তী সময়ে নতুন রাজত্বকালেও (১৫৫০-১০৭০ খৃষ্টপূর্ব) থেবেস-এর সমাধিক্ষেত্রে পোড়ানো ইট ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। (Die Sprache der Pharaonen. Großes Handwörterbuch Ägyptisch-Deutsch (2800-950 v. Chr.), 2000, Verlag Philipp Von Zabern: Mainz, page1570; R. Hannig, Die Sprache der Pharaonen. Großes Handwörterbuch Ägyptisch-Deutsch (2800-950 v. Chr.), 1995, Verlag Philipp Von &hem: Mainz, page 895)

আর ঐতিহাসিকদের মতে, মিশরের নতুন রাজত্বকালেই আবির্ভাব হয়েছিল হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার।

(https://www.penfield.edu/webpages/jgiotto/onlinetextbook.cfm?subpage=1617942)

সুতরাং মিশরীয়দের ইট পুড়িয়ে ইমারত নির্মাণের বর্ণনা একটি ঐতিহাসিক সত্য। যা দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট। তাই প্রমাণিত হলো যে, “মিশরীয়রা কখনোই ইট পুড়িয়ে নয় বরং পাথর কেটে ঘর বানাতো” বক্তব্যটি একটি বানোয়াট, কল্পনাপ্রসূত, ভিত্তিহীন, বাস্তবতা বর্জিত বক্তব্য। যা নাস্তিকদের মিথ্যাচারিতার মুখোশকে প্রকাশ্যে উন্মুক্ত করে দেয়।


0 Comments: