পর্ব-২
সাইয়্যিদাতুন নিসা, মুতহহারাহ, মুতহহিরাহ, উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
أطيعوا الله
অর্থ মুবারকঃ- “তােমরা মহান আল্লাহ পাক উনার অনুসরণ করাে।" (সূরা আনফাল শরীফ-২০)
এই আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে অনুসরণ করা ফরয
করে দিয়েছেন। কিন্তু উনার ইতায়াত বান্দা কিভাবে করবে ? কারণ বান্দার খাওয়া-দাওয়া,
ঘুম রয়েছে অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি এগুলো থেকে বেনিয়াজ।
তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন,
مَّنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللّهَ
অর্থ মুবারক: “যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ও
সাল্লাম উনার অনুসরণ করলাে সে যেন মহান আল্লাহ পাক উনার অনুসরণ করলাে।" (সূরা
- নিসা শরীফ-৮০)
এই আয়াত শরীফ উনার মধ্যে যদিও মহান আল্লাহ পাক তিনি জানিয়ে দিয়েছেন নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণের
মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার অনুসরণ করা যাবে তারপরেও একটি আমলের মাধ্যমে
সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার অনুসরণ করা যাবে। যেটা সাইয়্যিদাতুন নিসা,
মুতহহারাহ, মুতহহিরাহ, উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, সেই আমলটি হল,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দরূদ ।
শরীফ পাঠ করা। যেমন: এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
অর্থ মুবারক- “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার সম্মানিত ফেরেশতা
আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার শান মুবারকে ছলাত তথা দরূদ শরীফ পাঠ করে থাকেন। হে ঈমানদারগণ!
তােমরাও উনার শান মুবারকে ছলাত মুবারক পাঠ করাে ও সালাম মুবারক পেশ করাে।
পেশ করার মত ।” (সূরা আহযাব শরীফ, আয়াত শরীফ: ৫৬)
সাইয়্যিদাতুন নিসা, মুতহহারাহ, মুতহহিরাহ, উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি
ছলাত শরীফ পাঠ করার ফযীলত সম্পর্কে বলেন,
১, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন, কিয়ামতের দিন ঐ সমস্ত লোকেরা আমার অধিক নিকটবর্তী হবে, যারা আমার
প্রতি অধিক মাত্রায় দরূদ শরীফ পাঠ করবে।” সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া মুরশিদিনাল আযীম আলাইহিস সালাম! (তিরমিযী শরীফ)
২. হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নুরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন ,
“যে ব্যক্তি আমার রওজা শরীফ উনার নিকটে এসে আমার প্রতি ছলাত মুবারক পাঠ
করে আমি তা শুনি আর যে দূর থেকে আমার প্রতি ছলাত মুবারক পাঠ করে তা আমার
নিকট পৌঁছে।" সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া মুরশিদিনাল আযম আলাইহিস সালাম!
(বাইহাকী শরীফ ফি শুয়াবুল ঈমান)
| ৩. হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নুরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন, "ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক যার কাছে আমার আলােচনা করা হল
অথাৎ আমার নাম মুবারক নেয়া হল অথচ সে আমার প্রতি ছলাত মুবারক পাঠ করল না ।
" সুবহানাল্লাহি ওয়া রসুলিহি ওয়া মুরশিদিনাল আযম আলাইহিস সালাম।
(তিরমিযী শরীফ)।
৪. হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
“যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার সলাত মুবারক পাঠ করল, মহান আল্লাহ পাক তিনি
তার প্রতি দশবার রহমত মুবারক নাযিল করবেন এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন।"
সুবহানাল্লাহি ওয়া রাসুলিহি ওয়া মুরশিদিনাল আযম আলাইহিস সালাম! (নাসাঈ
শরীফ)।
৫. হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন,“তােমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানিও না। তোমরা রওজা শরীফ উনার
মধ্যে ছলাত তথা মিলাদ শরীফ, কিয়াম শরীফ পাঠ না করে আনন্দ-উৎসবের স্থান
বানিও না এবং আমার প্রতি ছলাত মুবারক তথা মিলাদ শরীফ, কিয়াম শরীফ পাঠ কর।
কেননা তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের সালাত আমার নিকট পৌঁছে।"
সুবহানাল্লাহি ওয়া রাসুলিহি ওয়া মুরশিদিনাল আযম আলাইহিস সালাম! (নাসাঈ ।
সাইয়্যিদাতুন নিসা, মুতাহহারাহ, মুতহহিরাহ, উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি এই
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলেন, যে ঘরে সলাত তথা মিলাদ-কিয়াম শরীফ পাঠ
করা হবেনা সেই ঘর কবরের মত হয়ে যাবে অর্থাৎ বিরান হয়ে যাবে। আর রওজা শরীফে
গিয়ে সলাত তথা মিলাদ শরীফ, কিয়াম শরীফ পাঠ করা ব্যতীত শুধু হাসি-খুশি করা যাবে না।
কেননা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার প্রতি ছলাত পাঠ
কর । তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তোমাদের সালাত আমার নিকট পৌছে।
৬. হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু 'আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লালুল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন, “বখীল ঐ ব্যক্তি যার নিকটে আমার নাম মুবরক নেয়া হল বা আমার আলোচনা
মুবারক করা হল অথচ সে আমার প্রতি সলাত পাঠ করল না।
” সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া মুরশিদিনাল আ'যীম আলাইহিস সালাম! (তিরমিযী শরীফ)
সাইয়্যিদাতুন নিসা, মুতহহারাহ, মুতহহিরাহ, উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি এই
হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলেন, যতবার নূরে মুজাসসাম, হাবিবুল্লাহ, হুজুর পাক
ছল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শুনা হবে ততবারই উনার প্রতি সলাত
মুবারক পাঠ করতে হবে অন্যথায় সেই ব্যক্তির নাম বখালের খাতায় লিপিবদ্ধ করা হবে ।
৭. হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত তালহা রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা
আনহু উনার থেকে বর্ণিত, একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি এমন অবস্থায় তাশরীফ মুবারক অনলেন যে , উনার চেহারা মুবারক তথা
নুরর রহমত মুবারক উনার মধ্যে খুশির ভাব পরিলক্ষিত হলাে। অতঃপর তিনি বললেন,
এই মাত্রই হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমার নিকট এসেছেন এবং বলেছেন, এ
নিশ্চয়ই আপনার রব তায়ালা বলেন, হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনি কি ( শুনলে )
খুশি হবেন না আপনার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি আপনার প্রতি ছলাত পাঠ
করবে আমি তার প্রতি দশ বার রহমত নাযিল করব। আপনার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি
আপনার প্রতি সালাম মুবারক পেশ করবে আমি তার প্রতি দশ বরকত (শান্তি) নাযিল
করব।” সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া মুরশিদিনাল আ'যীম আলাইহিস সালাম!
(নাসাঈ শরীফ, দারিমী শরীফ)
৮. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত,
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ যমিনে ভ্রমণ
করেন এবং আমার উম্মতের সালাম আমার নিকট পৌছান।
" সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী
ওয়া মুরশিদিনাল আযম আলাইহিস সালাম! (নাসাঈ শরীফ, দারেমী শরীফ)
৯. হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন, "মহান আল্লাহ পাক আমার রূহ মুবারক এমনভাবে রেখেছেন যে, যখন কেউ
আমার প্রতি সালাম দেয় তখন আমি তার সালামের জবাব দেই ।" সুবহানাল্লাহি ওয়া
রসূলিহী ওয়া মুরশিদিনাল আ'যীম আলাইহিস সালাম! (আবু দাউদ শরীফ, বায়হাকী
শরীফ)
১০. হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, নূরে।
মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন, “নিশ্চয়ই দোয়া আসমান - যমীনের মাঝে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে আপনার নবী
উনার প্রতি সলাত পাঠ না করা পর্যন্ত কোন কিছুই উপরে উঠে না বা পৌছেনা।"
সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া মুরশিদিনাল আযীম আলাইহিস সালাম! (তিরমিযী শরীফ)
সাইয়্যিদাতুন নিসা, মুতহহারাহ, মুতহহিরাহ, উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি
বলেন, সুতরাং প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে নূরে মুজাসসাম , হাবীবুল্লাহ, হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বেশি বেশি ছলাত- সালাম শরীফ তথা মিলাদ শরীফ - ক্বিয়াম শরীফ পাঠ করা