নাস্তিকদের আপত্তি - হাদিস অনুসারে, মানব ভ্রুণ জড়ায়ুতে ৪০ দিন অতিবাহিত করে শুক্রবিন্দু রূপে, ৪০ দিন রক্তপিন্ড রূপে, ৪০ দিন মাংসপিন্ড রূপে এম্ব্রায়োলজির তথ্যের সাথে এ ধরনের দাবি হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয় উৎস কি?

হাদিস অনুসারে, মানব ভ্রুণ জড়ায়ুতে ৪০ দিন অতিবাহিত করে শুক্রবিন্দু রূপে, ৪০ দিন রক্তপিন্ড রূপে, ৪০ দিন মাংসপিন্ড রূপে এম্ব্রায়োলজির তথ্যের সাথে এ ধরনের দাবি হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয় উৎস কি?

নাস্তিকদের আপত্তি ৩ : হাদিস অনুসারে, মানব ভ্রুণ জড়ায়ুতে ৪০ দিন অতিবাহিত করে শুক্রবিন্দু রূপে, ৪০ দিন রক্তপিন্ড রূপে, ৪০ দিন মাংসপিন্ড রূপে (Sahih Bukhari 4:54:430, 4:55:549, 8:77:593, 9:93:546 Sahih Muslim 33:6390)!  এম্ব্রায়োলজির তথ্যের সাথে এধরনের দাবি হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয় (যেখানে শুক্রানু জড়ায়ুতে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মাঝে নিষিক্ত হতে হয় এবং ভ্রুণ গঠনে রক্তপিন্ড বা মাংসপিন্ড জাতিয় কোন স্তর নেই) ! এধরনের অপবিজ্ঞানের উৎস কি করে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত হতে পারে?

নাস্তিকদের আপত্তি ৪ : মাতৃগর্ভে ভ্রুণ অবস্থা থেকে পূর্নাঙ্গ মানবদেহ গঠনে কোন ‘রক্ত পিন্ড বা জমাট রক্ত’ (Blood clot) জাতিয় পর্যায় বা অবস্থা নেই (Quran 96:2) ! তাহলে কুরান কেন এমন দাবি করে?

নাস্তিকদের আপত্তি ৫ : কুরানের আয়াত 23:12-14  অনুসারে, মানব ভ্রুণে প্রথমে হাড় তৈরি হয়, পরে তাকে মাংস দ্বারা ঢেকে দেওয়া হয় ! কিন্তু প্রকৃত পক্ষে আগে মাংস (Muscles তৈরি শুরু হয় (during week 5),এরপর তার মাঝে তরুনাস্থির (cartilage) গঠন হতে থাকে (during week 6)  যা পরবর্তিতে হাড়ে (Bonesরুপান্তরিত হয় (অর্থাৎ হাড়কে মাংস দিয়ে ঢেকে দেওয়া বলতে কিছু নেই)! এর মানে কি এই নয় যে কুরান নিরক্ষর মুহম্মদের নিজস্ব অনুমান?

খণ্ডণ : পবিত্র হাদীছ শরীফ অনুযায়ী কখনোই মানবভ্রুণ জরায়ুতে ৪০ দিন শুক্রবিন্দু রূপে অতিবাহিত করে না। বরং হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে মাতৃগর্ভে মানব সৃষ্টির উপাদান ৪০ দিন পর্যন্ত অবস্থান করে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ (Sahih Bukhari 4:54:430, 4:55:549) উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ حَدَّثَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهْوَ الصَّادِقُ الْمَصْدُوقُ قَالَ اِنَّ اَحَدَكُمْ يُـجْمَعُ خَلْقُهُ فِي بَطْنِ اُمِّهِ اَرْبَعِينَ يَوْمًا، ثُـمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُـمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُـمَّ يَبْعَثُ اللهُ مَلَكًا، فَيُؤْمَرُ بِاَرْبَعِ كَلِمَاتٍ، وَيُقَالُ لَهُ اكْتُبْ عَمَلَهُ وَرِزْقَهُ وَاَجَلَهُ وَشَقِيٌّ اَوْ سَعِيدٌ‏.‏ ثُـمَّ يُنْفَخُ فِيهِ الرُّوحُ، فَاِنَّ الرَّجُلَ مِنْكُمْ لَيَعْمَلُ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْـجَنَّةِ اِلَّا ذِرَاعٌ، فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ كِتَابُهُ، فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ اَهْلِ النَّارِ، وَيَعْمَلُ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ النَّارِ اِلَّا ذِرَاعٌ، فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ، فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ اَهْلِ الْـجَنَّةِ‏‏.‏

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি ‘সত্যবাদী’ এবং ‘সত্যবাদী বলে স্বীকৃত’ তিনি আমাদের নিকট পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, নিশ্চয়ই আপনাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান নিজ নিজ মাতৃগর্ভে ৪০ দিন পর্যন্ত অবস্থান করে, অতঃপর তা জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয়। ঐভাবে ৪০ দিন অবস্থান করে। অতঃপর তা গোশতপি-ে পরিণত হয়ে (আগের মত ৪০ দিন) থাকে। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। আর উনাকে চারটি বিষয়ে আদেশ মুবারক দেয়া হয়। উনাকে লিপিবদ্ধ করতে বলা হয়, তার ‘আমল, তার রিয্ক, তার আয়ু এবং সে কি পাপী হবে না নেককার হবে। অতঃপর তার মধ্যে রূহ বা আত্মা ফুঁঁকে দেয়া হয়। কাজেই তোমাদের কোন ব্যক্তি ‘আমল করতে করতে এমন পর্যায়ে পৌছে যে, তার এবং জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাত পার্থক্য থাকে। এমন সময় তার ‘আমলনামা তার উপর জয়ী হয়। তখন সে জাহান্নামবাসীর মত আমল করে। আর একজন ‘আমল করতে করতে এমন স্তরে পৌঁছে যে, তার এবং জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক হাত তফাৎ থাকে, এমন সময় তার ‘আমলনামা তার উপর জয়ী হয়। ফলে সে জান্নাতবাসীর মত ‘আমল করে।” (বুখারী শরীফ)

আবার অন্য একখানা হাদীছ শরীফ (Sahih Bukhari 8:77:593 উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ حَدَّثَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهْوَ الصَّادِقُ الْمَصْدُوقُ قَالَ اِنَّ اَحَدَكُمْ يُجْمَعُ فِي بَطْنِ اُمِّهِ اَرْبَعِينَ يَوْمًا، ثُـمَّ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُـمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُـمَّ يَبْعَثُ اللهُ مَلَكًا فَيُؤْمَرُ بِاَرْبَعٍ بِرِزْقِهِ، وَاَجَلِهِ، وَشَقِيٌّ، اَوْ سَعِيدٌ، فَوَاللهِ اِنَّ اَحَدَكُمْ اَوِ الرَّجُلَ يَعْمَلُ بِعَمَلِ اَهْلِ النَّارِ، حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا غَيْرُ بَاعٍ اَوْ ذِرَاعٍ، فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ، فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ اَهْلِ الْـجَنَّةِ، فَيَدْخُلُهَا، وَاِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ اَهْلِ الْـجَنَّةِ، حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا غَيْرُ ذِرَاعٍ اَوْ ذِرَاعَيْنِ، فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ، فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ اَهْلِ النَّارِ، فَيَدْخُلُهَا‏.‏ قَالَ اٰدَمُ اِلاَ ذِرَاعٌ‏.‏

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি ‘সত্যবাদী’ এবং ‘সত্যবাদী বলে স্বীকৃত’ তিনি আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, প্রত্যেকেই আপন আপন মাতৃগর্ভে ৪০ দিন পর্যন্ত জমা থাকে। তারপর ঐরকম ৪০ দিন রক্তপি-, তারপর ঐরকম ৪০ দিন গোশতপি-াকারে থাকে। তারপর মহান আল্লাহ্ পাক তিনি একজন ফেরেশতা পাঠান এবং উনাকে রিযিক, মৃত্যু, দুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য- এ চারটি বিষয় লিখার জন্য আদেশ মুবারক দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আপনাদের মাঝে যে কেউ অথবা বলেছেন, কোন ব্যক্তি জাহান্নামীদের ‘আমাল করতে থাকে। এমনকি তার ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র একহাত বা এক গজের তফাৎ থাকে। এমন সময় তাক্দীর তার ওপর প্রাধান্য লাভ করে আর তখন সে জান্নাতীদের ‘আমাল করা শুরু করে দেয়। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। আর এক ব্যক্তি জান্নাতীদের ‘আমাল করতে থাকে। এমনকি তার ও জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাত বা দু’হাত তফাৎ থাকে। এমন সময় তাক্দীর তার উপর প্রাধান্য লাভ করে আর অমনি সে জাহান্নামীদের ‘আমাল শুরু করে দেয়। ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আবূ ‘আবদুল্লাহ্ (হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি) তিনি বলেন যে, আদম উনার বর্ণনায় কেবল ذِرَاعٌ (এক গজ) বলেছেন।” (বুখারী শরীফ)

আবার অন্য একখানা হাদীছ শরীফ (Sahih Bukhari 9:93:546) উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

سَـمِعْتُ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ بْنَ مَسْعُودٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ حَدَّثَنَا رَسُوْلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهْوَ الصَّادِقُ الْمَصْدُوقُ اِنَّ خَلْقَ اَحَدِكُمْ يُـجْمَعُ فِىْ بَطْنِ اُمِّهِ اَرْبَعِينَ يَوْمًا وَاَرْبَعِينَ لَيْلَةً، ثُـمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْلَهُ، ثُـمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَهُ، ثُـمَّ يُبْعَثُ اِلَيْهِ الْمَلَكُ فَيُؤْذَنُ بِاَرْبَعِ كَلِمَاتٍ، فَيَكْتُبُ رِزْقَهُ وَاَجَلَهُ وَعَمَلَهُ وَشَقِيٌّ اَمْ سَعِيدٌ ثُـمَّ يَنْفُخُ فِيهِ الرُّوحَ، فَاِنَّ اَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ اَهْلِ الْـجَنَّةِ، حَتّٰى لَا يَكُونُ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُ اِلاَ ذِرَاعٌ، فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ، فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ اَهْلِ النَّارِ فَيَدْخُلُ النَّارَ، وَاِنَّ اَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ اَهْلِ النَّارِ، حَتّٰى مَا يَكُونُ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُ اِلاَ ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ، فَيَعْمَلُ عَمَلَ اَهْلِ الْـجَنَّةِ فَيَدْخُلُهَا‏‏.‏

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি ‘সত্যবাদী’ এবং ‘সত্যবাদী বলে স্বীকৃত’ তিনি আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, আপনাদের প্রত্যেকের সৃষ্টি হলো এমন উপাদান থেকে যাকে আপন মাতৃগর্ভে ৪০ দিন কিংবা ৪০ রাত একত্রিত রাখা হয়। তারপর তেমনি সময়ে আলাক হয়, তারপর তেমনি সময়ে গোশতপি-ে পরিণত হয়। তারপর মহান আল্লাহ্ পাক তিনি তার কাছে ফেরেশতা প্রেরণ করেন। এই ফেরেশতা উনাকে চারটি বিষয় সম্পর্কে লেখার জন্য হুকুম মুবারক দেয়া হয়। যার ফলে ফেরেশতা তার রিযক, ‘আমাল, আয়ু এবং দুর্ভাগা কিংবা ভাগ্যবান হওয়া সম্পর্কে লিখে দেয়। তারপর তার মধ্যে প্রাণ ফুঁঁকে দেয়া হয়। এজন্যই আপনাদের কেউ জান্নাতীদের ‘আমল করে এতটুকু এগিয়ে যায় যে, তার ও জান্নাতের মাঝে কেবল এক গজের দূরত্ব থাকতেই তার উপর লিখিত তাক্দীর প্রবল হয়ে যায়। তখন সে জাহান্নামীদের মত ‘আমল করে। শেষে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আবার তোমাদের কেউ জাহান্নামীদের মত ‘আমাল করে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, তার ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক গজের দূরত্ব থাকতে তার উপর তাকদীরের লেখা প্রবল হয়, ফলে সে জান্নাতীদের মত ‘আমাল করে, শেষে জান্নাতেই প্রবেশ করে।” (বুখারী শরীফ)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে সৃষ্টির উপাদানের কোন নামকরণ করা হয়নি। তবে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে সৃষ্টির উপাদানের নামকরণ করা হয়েছে- نُطْفَةٍ “নুত্বফা”।

যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ طِيْنٍ ◌ ثُـمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِىْ قَرَارٍ مَكِيْنٍ ◌ ثُـمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَـحْمًا ثُـمَّ اَنْشَأْنَاهُ خَلْقًا اٰخَرَ فَتَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْـخَالِقِينَ ◌

অর্থ : “আর আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির সারাংশ থেকে। অতঃপর আমি তাকে নুত্বফারূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমি নুত্বফাকে ‘আলাক্বা’ বা জমাট রক্তে পরিণত করেছি, অতঃপর ‘আলাক্বা’ বা জমাট রক্তকে ‘মুদগা’ বা গোশতপি-ে পরিণত করেছি, এরপর সেই ‘মুদগা’ বা গোশতপি- থেকে ‘ইজ্বামা’ বা অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে গোশত দ্বারা আবৃত করেছি। অবশেষে তাকে একটি নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা কতই না কল্যাণময়।” (পবিত্র সূরা মু’মিনুন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২-১৪)

এই পবিত্র আয়াত শরীফ ব্যতীত আরো ৯ খানা আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে মানুষ সৃষ্টির উপাদানকে نُطْفَةٍ “নুত্বফা” শব্দ মুবারক দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। 

উক্ত ৯ খানা আয়াত শরীফ হচ্ছে-

১. পবিত্র সূরা নাহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪

২. পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৭

৩. পবিত্র সূরা হাজ্জ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫

৪. পবিত্র সূরা ফাতির শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১

৫. পবিত্র সূরা ইয়াসিন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৭

৬. পবিত্র সূরা মু’মিনুন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৭

৭. পবিত্র সূরা নজম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৬

৮. পবিত্র সূরা ইনসান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২

৯. পবিত্র সূরা আবাছা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯

এই نُطْفَةٍ “নুত্বফা” শব্দ মুবারক উনার অর্থ শুক্রাণু বা শুক্রবিন্দু গ্রহণ করার কারণেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। মূলত نُطْفَةٍ “নুত্বফা” শব্দ মুবারক উনার সরাসরি অর্থ হবে ক্ষুদ্রবিন্দু। যা পুরুষ ও নারী উভয়ের থেকে নির্গত হয়। نُطْفَةٍ “নুত্বফা” শব্দ মুবারক উনার সাথে এমন কোন বিশ্লেষণ জুড়ে দেয়া হয়নি যে এটাকে শুধুমাত্র পুরুষের নির্গত বস্তু বলা যায়। সুতরাং نُطْفَةٍ “নুত্বফা” বলতে নারী-পুরুষ উভয় থেকেই নির্গত ক্ষুদ্রবিন্দু বা বস্তুকেই বুঝানো হয়েছে।

আর তাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে- 

اِنَّا خَلَقْنَا الْاِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ اَمْشَاجٍ

অর্থ : “আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র ক্ষুদ্রবিন্দু থেকে।” (পবিত্র সূরা দাহর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

এখানে মিশ্র ক্ষুদ্রবিন্দু বলতে নারী-পুরুষ উভয়ের নুত্বফা বুঝানো হয়েছে, যা দ্বারা মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে।

এই মিশ্র ক্ষুদ্রবিন্দু যা নিষিক্ত (fertilized অবস্থায়, যাকে জীববিজ্ঞানের পরিভাষায় জাইগোট (zygote) বলে, তা মাতৃগর্ভে ৪০ দিন অবস্থান করে। এখানে ৪০ দিন অবস্থান করে বলতে একই অবস্থায়ই ৪০ দিন ধরে অবস্থান করে বুঝানো হয়নি, বরং ৪০ দিনের দশাকে ‘নুত্বফা’ দশা বলে অভিহিত করা হয়েছে, যা ক্রমাগত রূপান্তরিত বা পরিবর্তিত হয়ে অগ্রগামী হতে থাকে।

আর তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

سَـمِعَ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ بْنَ مَسْعُودٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ يَقُوْلُ الشَّقِىُّ مَنْ شَقِىَ فِي بَطْنِ اُمِّهِ وَالسَّعِيْدُ مَنْ وُعِظَ بِغَيْرِهِ فَاَتَى رَجُلًا مِنْ اَصْحَابِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَالُ لَهُ حُذَيْفَةُ بْنُ اَسِيدٍ الْغِفَارِيُّ فَحَدَّثَهُ بِذَلِكَ مِنْ قَوْلِ ابْنِ مَسْعُودٍ فَقَالَ وَكَيْفَ يَشْقَى رَجُلٌ بِغَيْرِ عَمَلٍ فَقَالَ لَهُ الرَّجُلُ اَتَعْجَبُ مِنْ ذَلِكَ فَاِنِّي سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ ‏اِذَا مَرَّ بِالنُّطْفَةِ ثِنْتَانِ وَاَرْبَعُونَ لَيْلَةً بَعَثَ اللهُ اِلَيْهَا مَلَكًا فَصَوَّرَهَا وَخَلَقَ سـَمْعَهَا وَبَصَرَهَا وَجِلْدَهَا وَلَـحْمَهَا وَعِظَامَهَا ثُـمَّ قَالَ يَا رَبِّ اَذَكَرٌ اَمْ اُنْثٰى فَيَقْضِى رَبُّكَ مَا شَاءَ وَيَكْتُبُ الْمَلَكُ ثُـمَّ يَقُوْلُ يَا رَبِّ اَجَلُهُ.‏ فَيَقُوْلُ رَبُّكَ مَا شَاءَ وَيَكْتُبُ الْمَلَكُ ثُـمَّ يَقُوْلُ يَا رَبِّ رِزْقُهُ‏.‏ فَيَقْضِى رَبُّكَ مَا شَاءَ وَيَكْتُبُ الْمَلَكُ ثُـمَّ يَـخْرُجُ الْمَلَكُ بِالصَّحِيفَةِ فِىْ يَدِهِ فَلَا يَزِيْدُ عَلٰى مَا اُمِرَ وَلَا يَنْقُصُ‏.

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দুর্ভাগা সে লোক, যে তার মায়ের গর্ভ হতে দুর্ভাগা আর সৌভাগ্যবান লোক সে, যে অন্যের নিকট হতে উপদেশ লাভ করে। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের মধ্য থেকে একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যাঁকে হুযাইফাহ্ ইবনু আসীদ আল গিফারী বলা হয়, তিনি উনার কাছে আসলেন। তখন তিনি উনার নিকট হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কথা বর্ণনা করলেন এবং বললেন, আমলহীন কোন লোক কিভাবে দুর্ভাগ্যবান হতে পারে? অতঃপর তিনি (হযরত হুযাইফাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) উনাকে বললেন, আপনি কি এতে আশ্চর্য হচ্ছেন? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমি বলতে শুনেছি যে, তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন (মাতৃগর্ভে) নুত্বফার উপর ৪২ দিন অতিবাহিত হয় তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি একজন ফেরেশ্তা আলাইহিস সালাম উনাকে প্রেরণ করেন। তিনি ওটাকে (নুত্বফাকে) একটি রূপ দান করেন, তার কান, চোখ, চামড়া, গোশ্ত ও হাড় সৃষ্টি করে দেন। তারপর ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে আমাদের রব তায়ালা! সেটা কি পুরুষ, না মহিলা হবে? তখন আপনার মহান রব তায়ালা যা চান সিদ্ধান্ত মুবারক দেন এবং ফেরেশ্তা আলাইহিস সালাম তিনি আদেশ মুবারক অনুসারে তা লিখে ফেলেন। তারপর তিনি বলতে থাকেন, হে আমাদের রব তায়ালা! তার জীবিকা কি হবে? তখন আপনার মহান রব তায়ালা উনার মর্জি মুবারক অনুযায়ী ফায়সালা মুবারক করেন এবং ফেরেশ্তা আলাইহিস সালাম তিনি তা লিপিবদ্ধ করেন। এরপর ফেরেশ্তা আলাইহিস সালাম তিনি উনার হাতে একটি লিপিবদ্ধ কিতাব নিয়ে বের হন। তিনি এটাকে বৃদ্ধিও করেন না এবং ঘাটতিও করেন না।” (মুসলিম শরীফ : কিতাবুত তকদীর)

সুতরাং, প্রথম ৪০ দিনের দশা বা স্তরকে যদিও নুত্বফা বলা হচ্ছে কিন্তু এই দশা বা স্তরেই ‘মুদ্গা’ (مُضْغَةَ) বা ‘গোশ্তপি-’, ‘ইজ্বামা’ (عِظَامًا) বা ‘অস্থি’, ‘লাহাম’ (لَـحَمَ) বা গোশ্তপেশী সৃষ্টি শুরু হয়। কেননা, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টভাবেই বলা হচ্ছে যে-

اِذَا مَرَّ بِالنُّطْفَةِ ثِنْتَانِ وَاَرْبَعُونَ لَيْلَةً بَعَثَ اللهُ اِلَيْهَا مَلَكًا فَصَوَّرَهَا وَخَلَقَ سـَمْعَهَا وَبَصَرَهَا وَجِلْدَهَا وَلَـحْمَهَا وَعِظَامَهَا

অর্থাৎ যখন (মাতৃগর্ভে) নুত্বফার উপর ৪২ দিন অতিবাহিত হয় তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি একজন ফেরেশ্তা আলাইহিস সালাম উনাকে প্রেরণ করেন। তিনি ওটাকে (নুত্বফাকে) একটি রূপ দান করেন, তার কান, চোখ, চামড়া, গোশ্ত ও হাড় সৃষ্টি করে দেন।

কিন্তু তখনো কান, চোখ, চামড়া, গোশ্ত ও হাড় সুগঠিত হয়নি বরং সুগঠিত হচ্ছে। আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা মু’মিনুন শরীফ উনার ১৪ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

ثُـمَّ اَنْشَأْنَاهُ خَلْقًا اٰخَرَ

অর্থাৎ অবশেষে তাকে একটি নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, হাদীছ শরীফ (Sahih Bukhari 4:54:430, 4:55:549, 8:77:593, 9:93:546) উনাদের দোহাই দিয়ে নাস্তিকদের হাস্যকর দাবী- “মানব ভ্রুণ জড়ায়ুতে ৪০ দিন অতিবাহিত করে শুক্রবিন্দু রূপে, ৪০ দিন রক্তপিন্ড রূপে, ৪০ দিন মাংসপিন্ড রূপে” একটি প্রতারণা বৈ কিছুই নয়। কেননা মানব ভ্রুণ যদি নুত্বফা হিসেবে ৪০ দিন অতিক্রম করার পরই আলাক্ব দশায় উপনীত হয়ে যেত, তাহলে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ৪২ দিনের এমনকি ৪৫ দিনের কথাটি কেন আসলো?

যেমন মুসলিম শরীফ উনার হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

اِذَا مَرَّ بِالنُّطْفَةِ ثِنْتَانِ وَاَرْبَعُونَ لَيْلَةً

অর্থাৎ যখন (মাতৃগর্ভে) নুত্বফার উপর ৪২ দিন অতিবাহিত হয়।

আর অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ৪৫ দিনের বর্ণনাও রয়েছে। যেমন-

 عَنْ حَضْرَتْ حُذَيْفَةَ بْنِ اَسِيْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَدْخُلُ الْمَلَكُ عَلَى النُّطْفَةِ بَعْدَ مَا تَسْتَقِرُّ فِي الرَّحِمِ بِأَرْبَعِينَ اَوْ خَـمْسَةٍ وَاَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً فَيَقُوْلُ يَا رَبِّ اَشَقِيٌّ اَوْ سَعِيدٌ فَيُكْتَبَانِ فَيَقُولُ اَىْ رَبِّ اَذَكَرٌ اَوْ اُنْثٰى فَيُكْتَبَانِ وَيُكْتَبُ عَمَلُهُ وَاَثَرُهُ وَاَجَلُهُ وَرِزْقُهُ ثُـمَّ تُطْوَى الصُّحُفُ فَلَا يُزَادُ فِيْهَا وَلَا يُنْقَصُ‏.

অর্থ : “হযরত হুযাইফাহ্ ইবনে আসীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে মারফূ সূত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জরায়ুতে ৪০ অথবা ৪৫ দিন নুত্বফা জমা থাকার পর সেখানে ফেরেশ্তা গমন করেন। অতঃপর তিনি বলতে থাকেন, হে আমার মহান রব তায়ালা! সে কি হতভাগা না সৌভাগ্যবান? তখন উভয়টাতে লিপিবদ্ধ করা হয়। তারপর তিনি বলতে থাকেন, হে আমার মহান রব তায়ালা! সে কি পুরুষ না মহিলা? তখন আদেশ মুবারক অনুসারে উভয়টা লিপিবদ্ধ করা হয়। তার আমল, আচরণ, মৃত্যুক্ষণ ও জীবনোপকরণ লিপিবদ্ধ করা হয়। তারপর ফলকটিকে পেঁচিয়ে দেয়া হয়। তাতে কোন অতিরিক্ত করা হবে না এবং ঘাটতিও হবে না।” (মুসলিম শরীফ)

সুতরাং ৪০ দিনের বর্ণনা দ্বারা এই উদ্দেশ্য নয় যে, প্রতিটি ধাপ ৪০ দিন অতিক্রম করার পর পরবর্তী ধাপে উপনীত হয়। বরং প্রতি ৪০ দিনের অবস্থাকে একটি নামকরণ করা হয়েছে মাত্র। বস্তুত নুত্বফা ধাপেই মুদ্গা, ইজ্বামা ও লাহাম ধাপগুলোও ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে। আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা মু’মিনুন শরীফ উনার ১৪ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-    

ثُـمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا

অর্থ : “এরপর আমি নুত্বফাকে ‘আলাক্বা’ বা জমাট রক্তে পরিণত করেছি, অতঃপর ‘আলাক্বা’ বা জমাট রক্তকে ‘মুদগা’ বা গোশতপিণ্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই ‘মুদগা’ বা গোশতপি- থেকে ‘ইজ্বামা’ বা অস্থি সৃষ্টি করেছি।”

অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে فَخَلَقْنَا শব্দ মুবারক ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ শুধু خَلَقْنَا শব্দ মুবারক ব্যবহার না করে সাথে فَ যুক্ত করা হয়েছে। আর তাই একটি ঘটনা সংঘটিত হওয়ার অব্যাবহিত পরেই পরবর্তী ঘটনাটি শুরু হয়ে যায়। অর্থাৎ নুত্বফা ‘আলাক্বা’তে পরিণত হওয়ার সাথে সাথেই মুদ্গা ধাপ শুরু হয়ে যায়। আর মুদ্গা ধাপে পরিণত হওয়ার পর পরই ইজ্বামা ধাপ শুরু হয়ে যায়। 

আর তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ (Sahih Muslim 33:6390 উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ حَدَّثَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ الصَّادِقُ الْمَصْدُوْقُ اِنَّ اَحَدَكُمْ يُـجْمَعُ خَلْقُهُ فِي بَطْنِ اُمِّهِ اَرْبَعِينَ يَوْمً ثُـمَّ َيَكُونُ فِىْ ذٰلِكَ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُـمَّ يَكُونُ فِىْ ذٰلِكَ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُـمَّ يُرْسَلُ الْمَلَكُ فَيَنْفُخُ فِيهِ الرُّوحَ وَيُؤْمَرُ بِاَرْبَعِ كَلِمَاتٍ بِكَتْبِ رِزْقِهِ وَاَجَلِهِ وَعَمَلِهِ وَشَقِيٌّ اَوْ سَعِيدٌ فَوَالَّذِي لَا اِلَهَ غَيْرُهُ اِنَّ اَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ اَهْلِ الْـجَنَّةِ حَتّٰى مَا يَكُونَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا اِلاَ ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ اَهْلِ النَّارِ فَيَدْخُلُهَا وَاِنَّ اَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ اَهْلِ النَّارِ حَتّٰى مَا يَكُونَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا اِلَا ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ اَهْلِ الْـجَنَّةِ فَيَدْخُلُهَا.

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি ‘সত্যবাদী’ এবং ‘সত্যবাদী বলে স্বীকৃত’ তিনি আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন যে, আপনাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান তার মায়ের গর্ভে ৪০ দিন একত্রিত করা হয়। তারপর এই ৪০ দিনের মধ্যেই তা আলাক্বা বা রক্তপি-ে পরিণত হয়ে যায় এবং অতঃপর এই ৪০ দিনের মধ্যেই তা একটি গোশত টুকরায় পরিণত হয়। তারপর মহান আল্লাহ্ পাক উনার পক্ষ থেকে একজন ফেরেশ্তা উনাকে প্রেরণ করা হয়। তিনি তাতে রূহ্ ফুঁকে দেন। আর উনাকে চারটি কালিমা (বিষয়) লিপিবদ্ধ করার আদেশ মুবারক করা হয়। রিয্ক, মৃত্যুক্ষণ, কর্ম, বদ্কার ও নেককার। সে মহান সত্তা উনার শপথ! যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই! নিশ্চয়ই আপনাদের মাঝ হতে কেউ জান্নাতীদের আমলের ন্যায় আমল করতে থাকে। অবশেষে তার ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র একহাত দূরত্ব থাকে। অতঃপর ভাগ্যের লিখন তার উপর জয়ী হয়ে যায়। ফলে সে জাহান্নামীদের কর্ম শুরু করে। এরপর সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়। আর আপনাদের মধ্যে কোন কোন ব্যক্তি জাহান্নামের কাজ-কর্ম করতে থাকে। ফলে জাহান্নামের মাঝে ও তার মাঝে মাত্র একহাত দূরত্ব থাকে। তারপর ভাগ্যলিপি তার উপর জয়ী হয়। ফলে সে জান্নাতীদের ন্যায় আমল করে। অবশেষে জান্নাতে প্রবিষ্ট হয়।” (মুসলিম শরীফ)

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, যে হাদীছ শরীফ সমূহ ব্যবহার করে নাস্তিকরা ভ্রুণতত্ত্বের অপব্যাখ্যা করতে চাচ্ছে, উক্ত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে তাদের মিথ্যাচারের জবাব নিহিত রয়েছে।

যেমন- বুখারী শরীফ উনার হাদীছ শরীফ (Sahih Bukhari 4:54:430, 4:55:549) এবং মুসলিম শরীফ উনার হাদীছ শরীফ (Sahih Muslim 33:6390)-উভয় হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী একজনই- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। কিন্তু মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হাদীছ শরীফ খানা বর্ণনার দিক থেকে বুখারী শরীফ উনার হাদীছ শরীফ থেকে কিছুটা বিস্তারিত ও ব্যাখ্যামূলক।

যেমন বুখারী শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হাদীছ শরীফ-

اِنَّ اَحَدَكُمْ يُـجْمَعُ خَلْقُهُ فِىْ بَطْنِ اُمِّهِ اَرْبَعِيْنَ يَوْمًا ثُـمَّ يَكُوْنُ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُـمَّ يَكُوْنُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ

কিন্তু মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে একই বর্ণনার অবয়ব কিছুটা বিস্তারিত ও ব্যাখ্যামূলক-

اِنَّ اَحَدَكُمْ يُـجْمَعُ خَلْقُهُ فِىْ بَطْنِ اُمِّهِ اَرْبَعِينَ يَوْمً ثُـمَّ َيَكُونُ فِىْ ذٰلِكَ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُـمَّ يَكُونُ فِىْ ذٰلِكَ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ

মুসলিম শরীফ উনার বর্ণনায় فِىْ ذٰلِكَ ‘এর মধ্যে’ থাকায় বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, মুদ্গা, ইজ্বামা ও লাহাম ধাপগুলো ধারাবাহিকভাবে ৪০-৪৫ দিনের মধ্যেই সংঘটিত হয় এবং ক্রমান্বয়ে পূর্ণতার দিকে এগোতে থাকে।

গ-মূর্খ নাস্তিকরা একই ধরনের আরেকটি অপব্যাখ্যা করার অপচেষ্টা করে পবিত্র সূরা হা-মীম সাজদাহ শরীফ উনার ১০ নং আয়াত শরীফ দ্বারা। এই আয়াত শরীফ দ্বারা তারা অপব্যাখ্যা করে থাকে যে, পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে ৮ দিনে। নাঊযূবিল্লাহ!  

وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ مِن فَوْقِهَا وَبَارَكَ فِيْهَا وَقَدَّرَ فِيْهَا اَقْوَاتَـهَا فِىْ اَرْبَعَةِ اَيَّامٍ سَوَاءً لِّلسَّائِلِينَ

অথচ এই আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত فِىْ اَرْبَعَةِ اَيَّامٍ অর্থাৎ ‘৪ ধাপের মধ্যে’ বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার কারণে বা অপব্যাখ্যা করার কারণে পৃথিবী ৮ দিনে সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ঠিক একই ঘটনার পুণঃরাবৃত্তি এই হাদীছ শরীফ উনার ক্ষেত্রেও তারা ঘটিয়েছে। নাঊযূবিল্লাহ!

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, প্রথম ৪০ দিনের ধাপের নামকরণ যদিও নুত্বফা কিন্তু এই ৪০ দিনের মধ্যে মুদ্গা, ইজ্বামা, লাহাম ইত্যাদি অবস্থা সৃষ্টি হতে থাকে এবং অতঃপর ‘আলাক্বা বা রক্তপি- অবস্থায় পৌঁছায় এবং এই অবস্থায় ৪০ দিন অতিবাহিত করে।

অথচ এর বিপরীতে তথাকথিত বিজ্ঞানী দাবীদার কিছু আহম্মকের ধারণা নিম্নরুপ-

তথাকথিত অ্যারিস্টটলের ধারনা ছিল হায়েজের রক্ত এবং শুক্রাণু মিলে জরায়ুতে বেশ বড় আকারে ভ্রুণ তৈরি হয়, সেটা পর্যায়ক্রমে মানবশিশুতে পরিণত হয়।

মার্সেলো মালপিজাইয়ের মতে ডিম্বাণুর ভিতর ভ্রুণের ক্ষুদ্র প্রতিরূপ (miniature থাকে।

আবার লিউয়েন হুক বলে ঠিক তার উল্টোটা অর্থাৎ শুক্রাণুর ভিতর ভ্রুণের ক্ষুদ্র প্রতিরূপ (miniature) থাকে।।

১৭ শতকে হার্টসোয়েকারের চিত্রিত শুক্রাণুর ছবিতে দেখা যায় শুক্রাণুর ভিতরে এক মানবশিশু গুটি মেরে বসে আছে।

উইলিয়াম হার্ভের (১৫৮৭-১৬৮৭) ধারনা ছিল ভ্রুণ জরায়ু থেকে নিঃসরিত হয়।

বাজারে একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, গ্যালেনের তত্ত্ব থেকে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের ভ্রুণতাত্ত্বিক পবিত্র আয়াত শরীফগুলো ও পবিত্র হাদীছ শরীফগুলো নেয়া হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! 

অথচ ব্যাপারটা খ্র্রিস্টান মিশনারীরা ভুলে যায় গ্যালেন আর অ্যারিস্টটল দুজনেরই বদ্ধমূল ধারণা ছিল ভ্রুণ তৈরি হয় হায়েজের রক্ত থেকে। শুধুমাত্র গ্যালেনের মতের সাথে অ্যারিস্টটল ‘শুক্রাণু মিলে’ যুক্ত করেছে। এবং তাদের ধারণা মতেও ভ্রুণ বেশ বড় আকারে তৈরি হয়।

উপরের আলোচনা হতে দেখা গেল তথাকথিত বিজ্ঞানী দাবীদাররা কত হাস্যকর ধারণা পোষণ করতো। এসব হাস্যকর ধারণার বিপরীতে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত نُطْفَةٍ “নুত্বফা” শব্দ মুবারক সম্পূর্ণ যথার্থ অর্থ বহন করে।

এছাড়াও নাস্তিকদের আরেকটি চরম হাস্যকর দাবী হচ্ছে- “শুক্রানু জড়ায়ুতে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মাঝে নিষিক্ত হতে হয়”। অথচ চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একটি শুক্রাণু জরায়ুতে ৫-৬ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে বলে দাবী করা হয়। এছাড়া নির্জনবাসের ৬-১৭ দিন পরেও গর্ভধারনের তথ্য-উপাত্তও রয়েছে, যদিও ১৪ দিনের বেশি সময় পরে গর্ভধারনের ঘটনা একটি বিরল ঘটনা। সুতরাং নাস্তিকদের দৃষ্টিতে “শুক্রানু জড়ায়ুতে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মাঝে নিষিক্ত হতে হয়” কথাটি একটি অপবিজ্ঞান বৈ কিছুই নয়। মহান সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে কোন অপবিজ্ঞানের প্রশ্নই আসে না, বরং প্রমাণিত হচ্ছে যে, নাস্তিকরাই অপবিজ্ঞানের মূল উৎস। তাদের নিতান্তই কম বুঝ ও কম জ্ঞানের পাশাপাশি ইসলাম বিদ্বেষের কারণে প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে পারে না। ফলে সর্বপ্রকার অপবিজ্ঞান তাদের দ্বারাই প্রকাশ পেয়ে থাকে। 

نُطْفَةٍ ‘নুত্বফা’ ধাপের পরের ধাপটি হচ্ছে الْعَلَقَةَ ‘আলাক্বা’ ধাপ। এই الْعَلَقَةَ ‘আলাক্বা’ শব্দ মুবারক ৫ খানা আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

১. পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫

২. পবিত্র সূরা মু’মিনুন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪

৩. পবিত্র সূরা মু’মিন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৭

৪. পবিত্র সূরা ক্বিয়ামাহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৮

৫. পবিত্র সূরা আলাক্ব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২

الْعَلَقَةَ ‘আলাক্বা’ ধাপের সময়টি মানব ভ্রুণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে এসময় মানবদেহের যে তিনটি স্তর আছে (এক্টোডার্ম, মেসোডার্ম ও এন্ডোডার্ম) তা তৈরি হয়, যার ভ্রুণতাত্ত্বিক নাম গ্যাস্ট্রুলেশন। এ সময়ে দেহের সম্মুখ, পশ্চাত প্রভৃতি নির্ধারিত হয়। এ সময়ে ভ্রুণ জরায়ুর এন্ডোমেট্টিয়াম স্তরে লেগে থাকে, সেখান থেকে ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভ্রুণ পুষ্টি পেয়ে থাকে। এ সময় রক্ত নালিকা এবং রক্ত কোষ তৈরি হওয়া শুরু হয় এবং এ ধাপের শেষের দিকে হৃৎপি- পাম্প করা শুরু করে বা দেহের রক্ত সংবহণ শুরু হয়।

বস্তুত পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে মানব সৃষ্টির ব্যাপারে বর্ণিত ধাপগুলোর প্রত্যেকটির একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নির্দিষ্ট কোনো একটি ধাপে ভ্রুণটি দেখতে কেমন সেটাও প্রকাশ করে। যেমন نُطْفَةٍ ‘নুত্বফা’ ক্ষুদ্রবিন্দু, আসলেই তাই। পরের ধাপগুলোও তাদের বাহ্যিক অবয়ব কেমন তা প্রকাশ পায় উক্ত ধাপের নামকরণ দ্বারা। আর তাই বাহ্যিক অবয়বের উপর ভিত্তি করে আরবী الْعَلَقَةَ ‘আলাক্বা’ শব্দ মুবারক উনার তিনটি অর্থ রয়েছে।

১. জমাট রক্তপি- (Clot)

২. সংযুক্ত জিনিস (something which clings)

৩. জোঁকের মতো (Leech)

১. জমাট রক্তপি-(Clot) : সাধারণত মানবদেহে ফাংশনাল কোন অঙ্গে কখনো রক্ত জমাট বাঁধে না, কোথাও কেটে গেলে বা আঘাত পেলে রক্ত বন্ধ হওয়ার জন্য থ্রম্বোসাইটগুলো প্লাগ ফরমেশনের মাধ্যমে রক্ত জমাট বাধায়।

মূলত দেহের প্রথম তন্ত্র যা কার্যকর হয় তা হলো রক্তসংবহনতন্ত্র। আর এই রক্তসংবহনতন্ত্র গঠিত হয় হৃৎপিণ্ড, রক্ত নালিকা এবং রক্ত কোষের সমন্বয়ে। যদিও এ ধাপে রক্তসংবহনতন্ত্র মোটামুটি তৈরি হয়ে যায়, কিন্তু হৃৎপিণ্ড পাম্প শুরু হয় না। অর্থাৎ তখনো সংবহণ শুরু হয়নি। পুরো মানব জীবনের ওই একটা ধাপেই এরকম অবস্থা তৈরি হয়। সুতরাং রক্তের ওই জমাটবদ্ধ অবস্থাটা আসলেই উল্লেখ করার মত এবং ওই ধাপকে নামকরণ হিসেবে সবচেয়ে যথার্থ।

অর্থাৎ প্রথম অর্থ ‘জমাট রক্তপিণ্ড’-এর আলোকে দেখা যায় যে, আলাক্বা-এর বাহ্যিক অবস্থা ও তার সংরক্ষিত আবরণ রক্তপিণ্ডের মতোই দেখায়। এ অবস্থায় এখানে প্রচুর পরিমাণ রক্ত বর্তমান থাকে। এতদসত্বেও তিন সপ্তাহ পর্যন্ত এই রক্ত সঞ্চালিত হয় না। তাই এ অবস্থা রক্তপিণ্ডের মতোই।

২. সংযুক্ত জিনিস (something which clings) : الْعَلَقَةَ ‘আলাক্বা শব্দ মুবারক উনার দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে ‘সংযুক্ত জিনিস’ বা ‘যা লেগে থাকে’। এটি ভ্রুণের এই ধাপের প্রত্যক্ষ বর্ণনা। যেহেতু এ সময় রক্তসংবহন শুরু হয় না তাই এ সময় ভ্রুণ জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াম স্তর থেকে সরাসরি পুষ্টি নেয়। আর তা নেয়ার জন্য ভ্রুণকে বেশ ভালোভাবে জরায়ুতে লেগে থাকতে হয়। কারণ তা না হলে ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব কোষ পুষ্টি পাবে না।

এখন কথা হল সবসময়ই তো ভ্রুণকে লেগে থাকতে হয়, কিন্তু এখানে আলাদাভাবে লেগে থাকা গুরুত্বপূর্ণ হয় কিভাবে। ব্যাপার হলো, যেহেতু আগের অর্থ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, রক্তসংবহন আরম্ভ হওয়া মাত্রই الْعَلَقَةَ ‘আলাক্বা ধাপ শেষ হয়। আবার রক্তসংবহন শেষ হওয়া মানেই হলো ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুষ্টি গ্রহনের আর দরকার নেই। অর্থাৎ এই ধাপের পরপরই ভ্রুণ জরায়ুর সাথে পুরোপুরি লেগে থাকার প্রয়োজনীয়তা হারায়। ধীরে ধীরে এরপর থেকে ভ্রুণ এন্ডোমেট্রিয়াম থেকে পৃথক হওয়া শুরু করে। এভাবে প্রায় পাঁচ সপ্তাহের সময় ভ্রুণের সাথে মাতৃদেহের যোগাযোগ থাকে শুধুমাত্রumblical ring  এর মাধ্যমে। সুতরাং ‘সংযুক্ত জিনিস’ বা ‘যা লেগে থাকে’ বা ইংরেজীতে something which clings এ অর্থটি ও এ ধাপের জন্য যথেষ্ট বৈশিষ্ট্যময়।

৩. জোঁকের মতো (Leech) : জোঁকের মতো শব্দ দ্বারা অনেকেই ধারণা করে থাকে হয়তো এ সময় যেহেতু জরায়ু থেকে ভ্রুণ পুষ্টি শোষন করে তাই এ দ্বারা জোঁক যেমন কোন পোষক থেকে রক্ত শোষণ করে সেটা বুঝাচ্ছে। কিন্তু অত্যন্ত শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে নিরীক্ষা চালিয়ে দেখা যায় যে, গর্ভস্থ ভ্রুণের ৪০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরের বাহ্যিক অবস্থার সাথে একটি জোঁকের বাহ্যিক অবস্থা মিলালে উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য পাওয়া যায়।

অর্থাৎ ‘আলাক্বা’ শব্দ মুবারক উনার তিনটি অর্থের সাথেই ভ্রুণের বিভিন্ন স্তরের গুণাবলী হুবহু মিলে যাচ্ছে। অথচ মূর্খ নাস্তিকরা বলে থাকে যে, মাতৃগর্ভে ভ্রুণ অবস্থা থেকে পূর্নাঙ্গ মানবদেহ গঠনে কোন ‘রক্ত পিন্ড বা জমাট রক্ত’ (Blood clot) জাতীয় পর্যায় বা অবস্থা নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, ‘আলাক্বা’ ধাপে মানব দেহের প্রথম তন্ত্র হিসেবে হৃৎপিণ্ড, রক্ত নালিকা বা জালিকা এবং রক্ত কোষের সমন্বয়ে রক্তসংবহনতন্ত্র মোটামুটি তৈরি হয়ে যাওয়ার পরও হৃৎপিণ্ড- পাম্প শুরু না করায় অর্থাৎ সংবহণ তখনো শুরু না হওয়ায় রক্ত জালিকার মধ্যে রক্ত জমাটবদ্ধ অবস্থায় অবস্থান করে। ফলে এই অবস্থাটিকে জমাট রক্তপিণ্ডের মতো দেখা যায় বিধায় একে ‘রক্তপিণ্ড- বা জমাট রক্ত’ (Blood clot) পর্যায় বা অবস্থা হিসেবে নামকরণ সবচেয়ে যথার্থ।

الْعَلَقَةَ ‘আলাক্বা ধাপ অতিক্রম করার পর ভ্রুণটি مُضْغَةً “মুদগাহ” ধাপে উপনীত হয়। আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে مُضْغَةً “মুদগাহ” শব্দ মুবারক উনার কতিপয় অর্থ রয়েছে।

১. দাঁতে চর্বনকৃত কোনো বস্তু।

২. একটি ছোট পদার্থ।

৩. একটি ছোট গোশতের টুকরা।

ভ্রুণবিজ্ঞানের গবেষণায় এই ধাপের ভ্রুণের পরিবর্তনকে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত مُضْغَةً “মুদগাহ” শব্দ মুবারক উনার মাধ্যমে বর্ণনা করার যথার্থতা প্রমাণিত হয়েছে। যেহেতু একটি ভ্রুণ জরায়ু থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে দ্রুত প্রক্রিয়ায় এর বৃদ্ধি ঘটে। ফলে এর কোষগুলো একটি গুটি সদৃশ আকৃতি ধারণ করে যেন মনে হয় তা এমন একটি বস্তু যাতে দাঁতের ছাপ রয়েছে। পরবর্তীতে ভ্রুণটির ভরকেন্দ্র পরিবর্তিত হওয়ার কারণে তার অবস্থান পরিবর্তন করে। যা দেখতে চর্বিত টুকরার মতো। এ সকল পরিবর্তন مُضْغَةً “মুদগাহ”র প্রথম অর্থের সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ। এই ধাপে ভ্রুণটি থাকে খুবই ছোট। দৈর্ঘ্যে আনুমানিক ১ সেন্টিমিটার।

উল্লেখ্য যে, ‘আলাকা’র উল্লিখিত পূর্ববর্তী পর্যায়ে তা একটি ‘মর্সেল’-এর সমান আকৃতি লাভ করে না, কেননা তা দৈর্ঘ্যে ৩.৫ মিলিমিটারের বেশি নয়। এটি ‘মুদগা’-এর দ্বিতীয় অর্থ তথা একটি ছোট বস্তুকণিকা’-এর সঙ্গে সঙ্গতি রাখে। ‘মুদগা’-এর তৃতীয় অর্থ মর্সেল সদৃশ এক টুকরো গোশত- তা এই ধাপের ভ্রুণের আকৃতি প্রকৃতির বিচারে প্রযোজ্য। এ কারণে এ ধাপের জন্য পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে ব্যবহৃত পরিভাষা ‘মুদগা’ শব্দ মুবারক ভ্রুণতত্ত্ববিদদের ব্যবহৃত পরিভাষা somite থেকেও অধিক বেশি যথার্থ ও ব্যাপক। এ শব্দ মুবারক একটি ভ্রুণের বহিঃস্থ অবস্থার যেমন যথার্থ বর্ণনা প্রদান করে তেমনি এই ধাপের অন্তঃস্থ বিকাশেরও বর্ণনা দেয়।

আবার পবিত্র কুরআন শরীফ (23:12-14উনার মধ্যে বলা হয়েছে- ‘আলাক্বা’ বা জমাট রক্ত মুদগা বা গোশতপিণ্ডে পরিণত হওয়ার পর, সেই গোশতপি- থেকেই ইজ্বামা বা অস্থি সৃষ্টি হয়। আর এই অস্থির উপর গোশত জমা হতে থাকে। 

যেমন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ طِيْنٍ ◌ ثُـمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَكِيْنٍ ◌ ثُـمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَـحْمًا ثُـمَّ اَنْشَأْنَاهُ خَلْقًا اٰخَرَ فَتَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْـخَالِقِيْنَ ◌

অর্থ : “আর আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির সারাংশ থেকে। অতঃপর আমি তাকে নুতফারূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমি নুতফাকে ‘আলাক্বা’ বা জমাট রক্তে পরিণত করেছি, অতঃপর ‘আলাক্বা’ বা জমাট রক্তকে গোশতপি-ে পরিণত করেছি, এরপর সেই গোশতপি- থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে গোশত দ্বারা আবৃত করেছি। অবশেষে তাকে একটি নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা কতই না কল্যাণময়।” (পবিত্র সূরা মু’মিনুন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২-১৪)

অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট করেই ‘মুদ্গা’ (مُضْغَةَ) বা ‘গোস্তপি-’ থেকে ‘ইজ্বামা’ (عِظَامًا) বা ‘অস্থি’ তৈরী হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

বস্তুত, বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, শুক্রাণু দ্বারা ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার পর মানব শিশুর দৈহিক গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়। অর্থাৎ, নিষিক্ত ডিম্বাণু বা জাইগোট, যা আলাক্ব নামে পরিচিতি, এর কোষ বিভাজন শুরু হয়। মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় প্রথমে ২টি কোষ, অতঃপর কোষদ্বয় বিভাজিত হয়ে ৪টি কোষ, এভাবে মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় কোষ বিভাজনের মাধ্যমে গঠন প্রক্রিয়া চলতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত ২ স্তর বিশিষ্ট ভ্রুণীয় চাক্তি (embryonic disk গঠিত না হয়।

বাইরের স্তর যা এপিব্লাস্ট (Epiblast) নামে পরিচিত, তা জরায়ুর গাত্রে দৃঢ়ভাবে লেগে থাকে। এটি ভ্রুণকে মায়ের দেহের রক্ত ও জরায়ু গাত্রের বিভিন্ন গ্রহ্নির নিঃসরণ থেকে পুষ্টি শোষণে সহায়তা করে। আর ভিতরের স্তর যা হাইপোব্লাস্ট (Hypoblast)  নামে পরিচিত, তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি থেকেই মানব ভ্রুণের উৎপত্তি ঘটে। ১৫তম দিনে ভ্রুণীয় চাক্তির (embryonic disk আভ্যন্তরীণ স্তরের পৃষ্ঠীয় দিক থেকে কুঁড়ি (node)  সম্বলিত গোশতের প্রাথমিক পুরু ফালি (primitive steak)  দৃশ্যমান হতে শুরু করে। এই কুঁড়ি Kzuwo (node)  সম্বলিত গোশতের প্রাথমিক পুরু ফালি (primitive steak থেকে ভ্রুণের বিভিন্ন কোষ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠিত হয়ে থাকে।

যেমন- এক্টোডার্ম : এর থেকে চামড়া ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র গঠিত হয়।

মেসোডার্ম : এর থেকে পরিপাক নালীর মসৃণ পেশী, কঙ্কাল পেশী, সংবহনতন্ত্র, হৃৎপিণ্ড, হাড়, মূত্রতন্ত্র ও যৌনাঙ্গ (মূত্রথলি ব্যতীত), ত্বকনিম্নস্থ কোষ (subcutaneous tissue),  লসিকাতন্ত্র, প্লীহা ও কটেক্স গঠিত হয়।

এন্ডোডার্ম : এর থেকে পরিপাকতন্ত্র ও শ্বাসতন্ত্রের আবরণ, যকৃত ও অগ্ন্যাশয় ছাড়া পরিপাকতন্ত্রের অঙ্গাণু, মূত্রথলি, থাইরয়েড গ্রন্থি ও শ্রবণনালী গঠিত হয়।

সুতরাং, মানব ভ্রুণের প্রাথমিক কোষগুলো তিনটি স্তরে সাজানো থাকে। এর সবচেয়ে বাহিরের কোষ স্তরকে এক্টোর্ডাম, মাঝখানের স্তরকে মেসোর্ডাম এবং সবচেয়ে ভিতরের স্তরকে এন্ডোর্ডাম বলে।

এই বিষয়টি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে এভাবে-

خْلُقُكُمْ فِي بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ خَلْقًا مِّن بَعْدِ خَلْقٍ فِي ظُلُمَاتٍ ثَلَاثٍ ۚ

অর্থ : “তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মাতৃ উদরে পর্যায়ক্রমে একের পর এক ত্রিবিধ অন্ধকারে।” (পবিত্র সূরা যুমার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)

যেহেতু কঙ্কালতন্ত্রটি মেসোর্ডাম থেকে উৎপন্ন হয়। সুতরাং বলা যেতে পারে যে, অস্থি সৃষ্টি হওয়ার আগে ভ্রুণটি তিনস্তর বিশিষ্ট কোষের দলা ছাড়া আর কিছুই নয়, যা দেখতে গোশতপিণ্ডের ন্যায়।

এরপরে, কুঁড়ি (node) সম্বলিত গোশতের প্রাথমিক পুরু ফালি (primitive steak ক্ষীণকায় হয়ে যায় এবং মেরুদ-ের শেষ প্রান্তের স্যাক্রাল অঞ্চলে অবস্থান করে, যেখান থেকে পুচ্ছাস্থি (coccyx উৎপত্তি লাভ করে।

আর এই পুচ্ছাস্থিই (coccyx) পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত عَجْبَ الذَّنَبِ ‘আযবায যানাব’।

কেননা, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلُّ بَنِيْ اٰدَمَ وَفِـي حَدِيثِ حَضْرَتْ مُغِيرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ كُلُّ ابْنِ اٰدَمَ يَأْكُلُهُ التُّرَابُ اِلَّا عَجْبَ الذَّنَبِ مِنْهُ خُلِقَ وَفِيْهِ يُرَكَّبُ.

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত মুগীরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের থেকে বর্ণিত। উনারা বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, প্রত্যেক আদম সন্তানকে (হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণনায় প্রত্যেক বনী আদমকে ও হযরত মুগীরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণনায় প্রত্যেক ইবনে আদমকে) মাটি খেয়ে ফেলবে মেরুদণ্ডের হাড়টুকু ব্যতীত; এই হাঁড় থেকেই তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ থেকেই তাকে আবার জোড়া দেয়া হবে।” (নাসায়ী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২০৭৭)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে অন্যত্র বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْكُلُ التُّرَابُ كُلَّ شَيْءٍ مِنَ الْاِنْسَانِ اِلَّا عَجْبَ ذَنْبِهِ قِيْلَ وَمَا هُوَ يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ مِثْلُ حَبَّةِ خَرْدَلٍ مِنْهُ يَنْشَأُ.

অর্থ : “হযরত আবূ সাঈত খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মানুষের সমস্ত দেহ মাটি খেয়ে ফেলবে মেরুদণ্ডের হাড়টুকু ব্যতীত; প্রশ্ন করা হলো, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটি কিসের মতো? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এটি সরিষা দানার মতো, যা থেকে সবাই উত্থিত হবে।” (ইবনে হিব্বান শরীফ ৭ম খণ্ড ৪০৯ পৃষ্ঠা; মাওয়াসাসাতুর রিসালাহ, বৈরূত, লেবানন : হাদীছ শরীফ নং ৩১৪০)

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, মেরুদণ্ডের হাড়টুকু বা পুচ্ছাস্থি (coccyx),  যাকে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পরিভাষায় عَجْبَ الذَّنَبِ ‘আযবায যানাব’ বলা হয়, সে হাড় থেকেই মানুষ সৃষ্টি হয়েছে। আর এই হাড় সৃষ্টি হয়েছে ‘মুদ্গা’ (مُضْغَةَ) বা ‘গোস্তপি-’ থেকে। অর্থাৎ মানব ভ্রুণে মুদগা থেকে হাড় তৈরী হয়।

কানাডার সাকাচেওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অ্যানাটমি অ্যান্ড সেল বায়োলজি’ বিভাগের, অধ্যাপক জুলিয়া বোঘনার এবং কানাডার ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কম্পেরেটিভ বায়োলজি অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল মেডিসিন’ বিভাগের, অধ্যাপক ক্যাম্পবেল রোলিয়ান “Developmental Approach to Human Evolution”  বইয়ের ১২২-১২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করে যে-

1.      The signalling for bone formation is present earlier then the signalling for muscle formation.

2.      Cartilage (pre-bone) is present , before the muscle formation.

3.      Limb muscle progenitor cell don't have any information about position. The first tissue cell that subsequently condensed to form bone provides positional information for soft tissue formation.

অর্থাৎ “১. হাড় গঠনের সংকেত পেশী গঠনের সংকেতের আগে উপস্থিত ছিল। 

২. পেশী গঠনের আগে তরুণাস্থি (প্রাক-হাড়) উপস্থিত থাকে।

৩. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সৃষ্টির প্রাথমিক কোষে অবস্থান সম্পর্কিত কোনও তথ্য নেই। প্রথম কোষ যা পরবর্তীতে হাড় গঠনে পুঞ্জিভূত হয়, নরম কোষ গঠনের জন্য অবস্থানগত তথ্য সরবরাহ করে।”

উক্ত গ্রন্থে আরো উল্লেখ রয়েছে-

“After initial outgrowth stages are completed, limb buds and segments continue to elongate and morphological features such as hand/foot plates, and joints of the proximal and distal limbs (e.g., elbow, wrist, knee, and ankle) become identifiable. During this time, cells in respective stylopod, zeugopod, and autopod compartments coalesce to form separate pre‐chondrogenic mesenchymal condensations. These condensations are shaped via joint development, chondrogenesis, and osteogenesis to produce the many separate skeletal elements of the limb, although how this occurs is only poorly understood. At the same time, muscle and tendon cells begin to migrate into compartments of the limb to form its muscles.”

অর্থাৎ “প্রাথমিক বিকাশের পর্যায় শেষ হওয়ার পরে, লিম্ব বার্ড ও সেগম্যান্টগুলোর প্রবৃদ্ধি হতে থাকে এবং অঙ্গসংস্থানিক বৈশিষ্ট্য যেমন হাত/পায়ের ফালি ও নিকটবর্তী ও দূরবর্তী অঙ্গগুলোর সন্ধিস্থল (যেমন, কনুই, কব্জি, হাঁটু এবং গোড়ালী) সনাক্তকরণযোগ্য হয়ে উঠে। এই সময়ে, প্রাক-কন্ড্রোজেনিক মেসেনকাইমা সংশ্লেষ করতে স্টাইলোপড, জিউগোপড এবং অটোপোড অংশগুলোতে স্বতন্ত্রভাবে বা পৃথকভাবে কোষ/গোশতপি- পুঞ্জিভূত হয়। বিভিন্ন অঙ্গের পৃথক কঙ্কালের উপাদান তৈরি করতে- সন্ধিস্থলের ক্রমবিকাশ, কনড্রোজেনেসিস ও অস্টিওজেনেসিসের মাধ্যমে পুঞ্জিভূত হয়ে আকৃতিপ্রাপ্ত হয়। যদিও এটি কীভাবে ঘটে তা পুরোপুরি বোধগম্য নয়। একই সময়ে, পেশী এবং ক-রার কোষগুলো পেশী গঠনের জন্য অঙ্গগুলোর কুঠুরিতে স্থানান্তরিত হতে শুরু করে।”

সুতরাং দেখা যাচ্ছে প্রথমে তরুণাস্থি অর্থাৎ হাড় গঠন শুরু হয়। তারপর গোশতপেশী উৎপাদনের প্রাথমিক কোষগুলো হাড়ের সংকেত পেয়ে তার দিকে স্থানান্তরিত হয়, তারপরে এটি হাড়কে ঢেকে ফেলে, অতঃপর সেখানকার পেশী কোষ গঠন শুরু করে। আর এই বিষয়টিই পবিত্র সূরা মু’মিনুন শরীফ উনার ১৪ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে।

এছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে হাড় যেহেতু পরিপক্ক অবস্থায় থাকে না, বরং অপরিপক্ক ও নরম (Cartilage বা তরুণাস্থি) থাকে। পরবর্তীতে পরিপক্ক ও শক্ত হয়।

তাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

يَا اَيُّهَا النَّاسُ اِنْ كُنْتُمْ فِىْ رَيْبٍ مِّنَ الْبَعْثِ فَاِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِّنْ تُرَابٍ ثُـمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُـمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُـمَّ مِن مُّضْغَةٍ مُّـخَلَّقَةٍ وَغَيْرِ مُـخَلَّقَةٍ لِّنُبَيِّنَ لَكُمْ ۚ وَنُقِرُّ فِي الْاَرْحَامِ مَا نَشَاءُ اِلٰى اَجَلٍ مُّسَمًّى ثُـمَّ نُـخْرِجُكُمْ طِفْلً.

অর্থ : “হে মানব সম্প্রদায়! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করছো, তবে (ভেবে দেখো-) আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর নুতফা থেকে, এরপর আলাক্ব বা জমাট রক্ত থেকে, এরপর আংশিক পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট বা আংশিক গঠিত ও আংশিক অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট বা আংশিক অগঠিত গোস্তপি- থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে। আর আমি এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে মায়ের রেহেমে যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর আমি তোমাদেরকে শিশু অবস্থায় বের করি।” (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

সুতরাং মুদগা হতে অস্থি সৃষ্টির সময় প্রথমে মেরুদ-ের হাড় তৈরী হয়। এই হাড় প্রাথমিক অবস্থায় তরুনাস্থিরূপে থাকে পরবর্তী আস্তে আস্তে শক্ত হয়ে হাড়ে পরিণত হয়। এর পর এই হাড়ের উপর গোশতপেশী পুঞ্জিভূত হয়ে মানব গঠন তৈরী করে।

আজ বিজ্ঞানীরা অণুবীক্ষণ যন্ত্রসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করে ১৫০০ বছর আগে নাযিল হওয়া বিষয়গুলোর সত্যতা স্বীকার করেছে। এমনকি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লেখিত হিসেব অনুযায়ী ভ্রুণের গঠনের মিলও খুঁজে পেয়েছে। তাদের হিসেবে নিষেকের (fertilizationপর প্রায় ৬ সপ্তাহ (৪০ দিন) পর এমব্রিও গঠিত হয়। তারপর আরো প্রায় ৬ সপ্তাহ (৪০ দিন) লাগে ফিটাস গঠন করার জন্য। তারপর একটি পূর্ণাঙ্গ মানুষের রূপ নিতে আবার একই সময় অর্থাৎ প্রায় ৬ সপ্তাহ (৪০ দিন) লাগে।

ভ্রুণতত্ত্ববিদরা আরো মনে করে যে, ১২০ দিনের আগে মানব ভ্রুণটি চিন্তা করতে পারে না। প্রথম ৬ সপ্তাহ ভ্রুণের (embryo)  মস্তিস্কের কর্মক্ষমতা ইলেকট্রেকেলি সাইলেন্স থাকে। তারা মোটামুটি নিশ্চিত যে, গর্ভস্থ একটি ভ্রুণ যখন ৪ মাস (১২০ দিন), তখন থেকেই তারা চিন্তা করতে বা আবেগ প্রকাশ করতে পারে। যা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত অবস্থার সাথে মিলে যায়-

ثُـمَّ يُرْسَلُ اِلَيْهِ الْمَلَكُ فَيَنْفُخُ فِيْهِ الرُّوْحَ

অর্থ : “তারপর (মুদগা অবস্থায় ৪০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর) তার কাছে হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম পাঠানো হয়। অতঃপর তিনি ভ্রুণের মধ্যে রূহ প্রবেশ করান।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

এছাড়াও অন্য বর্ণনায় স্পষ্টভাবে ১২০ দিন পরে রূহ প্রবেশ করার বিষয়টি বর্ণিত রয়েছে-

عَنِ النَّبِىْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّ الرُّوْحَ تُنْفَخُ فِيْهِ بَعْدَ مِائَةَ وَعِشْرُوْنَ لَيْلَةً

অর্থ : “ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, ১২০ দিন পর ভ্রুণে রূহ ফুঁকে দেয়া হয়।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর ১৪১ পৃষ্ঠা)

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে মানব ভ্রƒণতত্ত্ব সম্পর্কে যে বর্ণনা রয়েছে তা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার কাছে শিশুতুল্য বিজ্ঞান ধীরে ধীরে স্বীকার করে নিচ্ছে। যেহেতু সম্মানিত দ্বীন ইসলামই হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানের আধার। পক্ষান্তরে বিজ্ঞান কোন একটি বিষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধানের পর একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। কখনো সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে কখনো পারে না। তাই নিজেদেরকে বিজ্ঞানমনস্ক দাবীদার নাস্তিকরা এ বিষয়গুলো সহজে অনুধাবণ করতে পারে না। এছাড়াও নাস্তিকরা হলো ইসলাম বিদ্বেষী। তাই বিজ্ঞান যে বিষয়গুলো ধীরে ধীরে স্বীকার করে নিচ্ছে সে বিষয়গুলো যদি নাস্তিকরা স্বীকার করে নেয় তাহলে তাদের মূর্খতা প্রকাশ পেয়ে যায় বিধায় তারা তা স্বীকার করে নিচ্ছে না।


নাস্তিকদের আপত্তি-আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন কোথা থেকে? - ধুলা থেকে, কাদা মাটি থেকে ,বীর্য থেকে,পানি থেকে,নাকি শূন্য থেকে?

আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন কোথা থেকে? - ধুলা থেকে, কাদা মাটি থেকে ,বীর্য থেকে,পানি থেকে,নাকি শূন্য থেকে?

নাস্তিকদের আপত্তি ১ : আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন কোথা থেকে? - ধুলা থেকে (Quran 3:59, 30:20, 35:11), কাদা মাটি থেকে (Quran 6:2, 15:26, 32:7, 55:14), বীর্য থেকে (Quran 16:4),  রক্তপিন্ড থেকে (Quran 96:2),  পানি থেকে (Quran 21:30, 25:54, 24:45নাকি শূন্য থেকে (Quran 19:67) !

নাস্তিকদের আপত্তি ২ : আল্লাহ মানুষকে তৈরি করেছেন কি ধরনের মাটি থেকে ?-পোড়া মাটি (Quran 15:26),  কাদা মাটি (Quran 38:71) নাকি ধুলো (Quran 3:59) থেকে?

খণ্ডণ: মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন কোথা থেকে তা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবেই বর্ণনা করেছেন। কিন্তু যালিম ও জাহিল কাট্টা নাস্তিকগুলো ইসলাম বিদ্বেষীতার কারণে মানব সৃষ্টির বিষয়টি সহ প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি মানব সৃষ্টি বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে ইরশাদ মুবারক করেন-

ذٰلِكَ عَالِـمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْعَزِيْزُ الرَّحِيْمُ ◌ الَّذِى اَحْسَنَ كُلَّ شَىْءٍ خَلَقَهٗ وَبَدَاَ خَلْقَ الْاِنْسَانِ مِن طِيْنٍ ◌ ثُـمَّ جَعَلَ نَسْلَهٗ مِن سُلَالَةٍ مِّن مَّاء مَّهِيْنٍ◌ 

অর্থ : “তিনিই দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী, পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু যিনি উনার প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন। অতঃপর তিনি (মহান আল্লাহ পাক) মানব বংশধর সৃষ্টি করেন সম্মানিত পানির নির্যাস থেকে।” (পবিত্র সূরা সাজদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬-৮)

সুতরাং পবিত্র আয়াত শরীফত্রয় হতে বুঝা যাচ্ছে যে, মানুষকে ধোকা দেয়ার জন্য আয়াত শরীফ উনার পূর্ণ অংশ উল্লেখ না করে প্রতারক সম্প্রদায় তাদের যুক্তি-তর্কের জন্য উপযোগী অংশটুকু তুলে ধরেছে। পবিত্র সূরা সাজদা শরীফ উনার শুধুমাত্র ৭ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উল্লেখ করে বুঝাতে চাচ্ছে মানুষ কাদা মাটির তৈরি হলে আবার অন্যান্য উপাদানগুলোর বর্ণনা আসলো কিভাবে? অথচ পবিত্র সূরা সাজদা শরীফ উনার পরবর্তী আয়াত শরীফ ৮ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট করেই বর্ণনা করা হয়েছে যে, মানব বংশধরকে সম্মানিত পানির নির্যাস থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

তাদের প্রতারণাগুলোর আরো কয়েকটি ধরণ নিম্নে প্রদান করা হলো-

১) পবিত্র সূরা আছর শরীফ উনার শুধুমাত্র ২ নং পবিত্র আয়াত শরীফ-

اِنَّ الْاِنْسَانَ لَفِيْ خُسْرٍ

উল্লেখ করলে বিষয়টি এমন দাঁড়ায় যে- দুনিয়ার সমস্ত মানুষই ক্ষতির মধ্যে লিপ্ত রয়েছে, চাই সে ঈমানদার হোক আর বেঈমান হোক। অথচ পরবর্তী ৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ-

اِلَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِـحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْـحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ

স্পষ্ট করে দিচ্ছে কারা প্রকৃতপক্ষে ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। মূলত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তারাই যারা ঈমান আনেনি, আমলে ছলেহ করেনি এবং পরস্পরকে হক্ব ও ছবরের তাকীদ করেনি।

২) অনুরূপভাবে পবিত্র সূরা নিসা শরীফ উনার ৪৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার প্রথমাংশ-

يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوْا الصَّلٰوةَ

উল্লেখ করলে অর্থ দাঁড়ায় - “হে মুমিনগণ! তোমরা নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা”। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ পরবর্তী আয়াতাংশ -

وَاَنْتُمْ سُكَارٰى حَتّٰى تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ

প্রথমাংশের সাথে মিলিত হলেই পূর্ণ অর্থ প্রদান করে। তখন পূর্ণ অর্থ দাঁড়ায়- “হে মুমিনগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ।”

সুতরাং বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, পবিত্র সূরা সাজদা শরীফ উনার ৬-৮ নং পবিত্র আয়াত শরীফ (৩২:৬-৮) উনাদের দ্বারা স্পষ্ট করেই বর্ণনা করা হয়েছে যে, প্রথম মানব হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে কাদা মাটি থেকে সৃষ্টি করে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন। অতঃপর সম্মানিত পানির নির্যাস থেকে মানব বংশধরকে সৃষ্টি করেছেন।

আরবী ব্যাকরণ না জেনে শুধু অনুবাদ পড়ে বিতর্ক করার ফলেই এমন হচ্ছে। মূলত আরবী ব্যাকরণে জ্ঞান আছে এমন ব্যক্তি মাত্রেই জানা রয়েছে যে “মাতূফ” ও “মাতূফ আলাইহি” উভয়ই কখনো একই জাতের এবং একই সময়ে সংগঠিত হয়না। সুতরাং طِيْنٍ “ত্বীন” এবং مَاء مَّهِيْنٍ “মায়িম্মাহীন” দ্বারা সৃষ্টির বিষয়টি একই সময় সংগঠিত নয় এবং একই জাতের নয়। তাই হরফে আতফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে মাটি ও সম্মানিত পানির দ্বারা সৃষ্টির ঘটনা একই সময়ে এবং একইভাবে বা পদ্ধতিতে সৃষ্টি নয়। অর্থাৎ মানুষ সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় প্রথম মানব হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি পদ্ধতি এক ধরণের। আর মানব বংশধর সৃষ্টি পদ্ধতি অন্য ধরণের।

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কিছু পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন- “তোমরা ছলাত কায়িম করো এবং যাকাত আদায় করো।” এখানে তোমরা বলতে কি সবাই? অবশ্যই না। কারণ বিধর্মী, নাবালিগ, পাগল প্রমুখের উপর নামায ও যাকাত ফরয নয়, আবার গরীবের জন্য যাকাত ফরয নয়। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্বোধন করেছেন সকলকে।

অনুরূপভাবে পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৫, পবিত্র সূরা ফাতির শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ১১, পবিত্র সূরা মু’মিন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৭ ও পবিত্র সূরা ত্বহা শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৫ উনাদের মধ্যে বর্ণিত- “নিশ্চয়ই তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”- এই তোমাদের শব্দের ক্ষেত্রেও এই ব্যাখ্যা প্রযোজ্য। অর্থাৎ হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টির উপাদান সম্পর্কে ৬টি শব্দ মুবারক ব্যবহার করেছেন।

১) تُرَابٍ মাটি,

২) طِيْنٍ কাদা মাটি,

৩) صَلْصَالٍ পোড়া মাটির মতো শুষ্ক ঠনঠনে মাটি,

৪) حَمَإٍ مَّسْنُونٍ কালো মাটি,

৫) طِينٍ لَّازِبٍ এঁটেল মাটি ও

৬) صَلْصَالٍ كَالْفَخَّارِ পোড়া মাটির মতো শুষ্ক ঠনঠনে মাটি।

শুধু মাটি বললেই তো হয়ে যেত, তাহলে ৬টি শব্দ মুবারক কেন ব্যবহার করা হলো। ৬টি শব্দ মুবারক ব্যবহার করার কারণ হলো- মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করতে পৃথিবীর যমীনের বিভিন্ন স্থানের মাটি ব্যবহার করেছেন।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي مُوسَى الاَشْعَرِيِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اللهَ تَعَالٰى خَلَقَ اٰدَمَ مِنْ قَبْضَةٍ قَبَضَهَا مِنْ جَمِيعِ الاَرْضِ فَجَاءَ بَنُو اٰدَمَ عَلَى قَدْرِ الاَرْضِ فَجَاءَ مِنْهُمُ الاَحْمَرُ وَالاَبْيَضُ وَالاَسْوَدُ وَبَيْنَ ذَلِكَ وَالسَّهْلُ وَالْـحَزْنُ وَالْخَبِيثُ وَالطَّيِّبُ

অর্থ : “হযরত আবূ মূসা আশ‘আরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেন পৃথিবীর সর্বত্র হতে এক মুষ্টি মাটি দিয়ে। তাই আদম-সন্তানরা মাটির বৈশিষ্ট্য প্রাপ্ত হয়েছে। যেমন তাদের কেউ লাল, কেউ সাদা, কেউ কালো বর্ণের আবার কেউ বা এসবের মাঝামাঝি, কেউ বা নরম ও কোমল প্রকৃতির। আবার কেউ কঠোর প্রকৃতির, কেউ মন্দ স্বভাবের, আবার কেউ বা ভালো চরিত্রের।” (তিরমিযী শরীফ : কিতাবুত তাফসীর : সূরা বাক্বারা)

সুতরাং হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করতে মাটি নেয়া হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ থেকে, এর কিছু অংশ ছিল পাহাড়ী মাটি, কিছু নেয়া হয়েছিল উপত্যকা থেকে, কিছু অংশ নেয়া হয়েছে উর্বর জমি থেকে আর কিছু নেয়া হয়েছে অনুর্বর শুষ্ক মাটি থেকে এবং এই সব একসাথে মিশানো হয়েছিল। আর এ কারণে হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বংশধরগণ বিভিন্ন বর্ণের, ভিন্ন গুণাবলীর হয়ে থাকে। কিছু অংশ হলো ন্যায়পরায়ণ, কিছু মন্দ, কেউ বলিষ্ঠ, কেউ বা আবার দুর্বল। মহান আল্লাহ পাক তিনি এই মাটিকে বলেছেন, ধুলা, ময়লা, কাদা, ঠনঠনে শুষ্ক মাটি, কালো মসৃণ মাটি। এই মিশ্র মাটিতে পানি মিশানো হয়েছিল যা ছিল সকল জীবনের উৎস। আর এই কাদা মাটি কিছুদিন ফেলে রাখার পর তাতে আদ্রতার পরিমাণ কমে গিয়ে তা আঠাল, মসৃণ মাটিতে পরিণত হয় এবং এটি কালোবর্ণ ধারণ করে। আর এটি দিয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার জিসিম মুবারক তৈরি করেন। (..............)

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টির উপাদান হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আর পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের মাটি বিভিন্ন রংয়ের ও বিভিন্ন প্রকৃতির বিধায় মহান আল্লাহ পাক তিনি কখনো শুষ্ক ঠনঠনে মাটি, কখনো কাদা মাটি, কখনো কালো মাটি ইত্যাদি শব্দ উল্লেখ করেছেন। আবার এই মিশ্র মাটিতে পানি মিশানো হয়েছিল বলে মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ ۖ

অর্থ : “আর আমি প্রাণবন্ত সবকিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)

এছাড়াও মানব বংশধরকে পানি থেকে সৃষ্টি করার ব্যাপারে অন্যান্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের বর্ণিত রয়েছে-

هُوَ الَّذِي خَلَقَ مِنَ الْمَاء بَشَرًا فَجَعَلَهٗ نَسَبًا وَصِهْرًا وَكَانَ رَبُّكَ قَدِيرًا ◌

অর্থ : “তিনি পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে অতঃপর তাকে রক্তগত, বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন। আপনার মহান রব তায়ালা তিনি সবকিছু করতে সক্ষম।” (পবিত্র সূরা ফুরক্বান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৪)

اَلَـمْ نَـخْلُقْكُّمْ مِّنْ مَّاءٍ مَّهِيْنٍ ◌ فَجَعَلْنَاهُ فِي قَرَارٍ مَّكِيْنٍ ◌

অর্থ : “আমি কি তোমাদেরকে সম্মানিত পানির নির্যাস হতে সৃষ্টি করিনি। অতঃপর আমি তা রেখেছি এক সংরক্ষিত আধারে।” (পবিত্র সূরা মুরসালাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২০-২১)

فَلْيَنْظُرِ الْاِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَ ◌ خُلِقَ مِنْ مَّاءٍ دَافِقٍ ◌

অর্থ : “অতএব, মানুষের দেখা উচিত, সে কি বস্তু হতে সৃষ্টি হয়েছে। সে সৃষ্টি হয়েছে সবেগে নির্গত পানি থেকে।” (পবিত্র সূরা ত্বারিক্ব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫-৬)

সুতরাং পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে ব্যবহৃত مَاء ‘পানি’ শব্দ মুবারক মূলত نُطْفَةٍ ‘নুত্বফা’ বুঝানো হয়েছে, যা নর-নারী উভয় থেকেই নিঃসৃত হয়।

আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা নাহল শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন- 

خَلَقَ الْاِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ

অর্থ : “তিনি মানবকে নুত্বফা থেকে সৃষ্টি করেছেন।” (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ طِيْنٍ ◌ ثُـمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَكِيْنٍ ◌ ثُـمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَـحْمًا ثُـمَّ اَنْشَأْنَاهُ خَلْقًا اٰخَرَ فَتَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْـخَالِقِيْنَ ◌

অর্থ : “আর আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির সারাংশ থেকে। অতঃপর আমি তাকে নুত্বফারূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমি নুত্বফাকে ‘আলাক্বা’ বা জমাট রক্তে পরিণত করেছি, অতঃপর ‘আলাক্বা’ বা জমাট রক্তকে গোশতপি-ে পরিণত করেছি, এরপর সেই গোশতপি- থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে গোশত দ্বারা আবৃত করেছি। অবশেষে তাকে একটি নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা কতই না কল্যাণময়।” (পবিত্র সূরা মু’মিনুন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২-১৪)

সুতরাং দেখা যাচ্ছে নুত্বফার পরবর্তী ধাপ হচ্ছে ‘আলাক্বা’। আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আলাক্ব শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ

অর্থ : “মানবকে সৃষ্টি করা হয়েছে আলাক্ব থেকে।” (পবিত্র সূরা আলাক্ব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

যেহেতু মানব বংশধর সৃষ্টির বিভিন্ন ধাপ রয়েছে তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত ধাপের মধ্য থেকে কখনো নুত্বফা, কখনো আলাক্ব ইত্যাদি সম্বোধনে সম্বোধিত করেছেন।

উদাহরণস্বরূপ কেউ চা বানানোর উদ্দেশ্যে কোন একটি পাত্রে কিছু পানি নিলো। অতঃপর পানির পাত্রটি চুলাতে দিয়ে আগুনের সাহায্যে উক্ত পানি ফুটানো হলো। এরপর সে পানিতে কিছু চা পাতা দিয়ে আরো জ্বাল দেয়া হলো। একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে ফুটানোর পর পাত্রটি নামিয়ে ফেলা হলো। এবার চায়ের লিকার ছেঁকে কাপে নিয়ে তাতে পরিমাণ মতো দুধ ও চিনি মিশ্রিত করে পরিবেশন করা হলো।

এমতবস্থায় যদি বলা হয় যে, চা বানানো হয়েছে পানি দিয়ে। অন্যত্র বলা হলো চা বানানো হয়েছে গরম পানি দিয়ে। আবার বলা হলো চা বানানো হয়েছে লিকার দিয়ে। কিংবা বলা হলো চা বানানো হয়েছে দুধ দিয়ে। বা বলা হলো চা বানানো হয়েছে চিনি দিয়ে। এতে ভুল কোথায়?

সুতরাং মানব বংশধরকে নুত্বফা কিংবা আলাক্ব থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে বলার মধ্যে যেমন কোন ভুল নেই। ঠিক একইভাবে মানব সম্প্রদায়সহ সমস্ত জীবের এক সময় কোন অস্তিত্বই ছিলো না বিধায় মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَوَلَا يَذْكُرُ الْاِنْسَانُ اَنَّا خَلَقْنَاهُ مِنْ قَبْلُ وَلَـمْ يَكُ شَيْئًا ◌

অর্থ : “মানুষ কি স্মরণ করে না যে, আমি তাকে ইতিপূর্বে সৃষ্টি করেছি এবং সে তখন কিছুই ছিল না।” (পবিত্র সূরা মরিয়ম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৭)

এছাড়াও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ خَضْرَتْ اَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِي حَدِيثِ ابْنِ حَاتِـمٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِذَا قَاتَلَ اَحَدُكُمْ اَخَاهُ فَلْيَجْتَنِبِ الْوَجْهَ فَاِنَّ اللهَ خَلَقَ اٰدَمَ عَلَى صُوْرَتِه. 

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হযরত হাতিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। উনারা বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা যদি তোমাদের কোন ভাইকে প্রহার করো, তাহলে তার মুখে আঘাত করো না। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার নিজ পছন্দনীয় ছূরতে সৃষ্টি করেছেন।” (মুসলিম শরীফ : বাবুন নাহয়ি আন দ্বরবিল ওয়াযহি : হাদীছ শরীফ নং ২৬১২)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার নিজ পছন্দনীয় ছূরতে সৃষ্টি করেছেন। এই কথাটার অর্থ কি? এর অর্থ হলো হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি আমাদের মত জীবনের বিভিন্ন ধাপ ও পর্যায়গুলো দিয়ে আসেননি। অর্থাৎ ভ্রƒণ থেকে শিশু, তারপর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া ইত্যাদি এই ধাপগুলো হযরত হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার জন্য নেই। হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে একরূপে। প্রথম দিন থেকেই উনাকে উনার ছূরত বা চেহারাতেই সৃষ্টি করা হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি এরপর হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার জিসিম মুবারক-এ রূহ ফু’কে দিলেন। যা আমাদেরকে জীবন দেয়, তারই নাম রূহ বা আত্মা। জীবন নামক রহস্যের মূল যা মহান আল্লাহ পাক তিনি গোপন রেখেছেন, তা তথাকথিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম শিখরে এসেও রহস্যই রয়ে গেছে।

উপরের পর্যালোচনা হতে সুস্পষ্ট হলো যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সহ উনার বংশধর সকলকেই অস্তিত্বহীন অবস্থা থেকে অস্তিত্ব দান করেছেন অর্থাৎ শূণ্য হতে সৃষ্টি করেছেন। আর হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে পৃথিবীর যমীনের বিভিন্ন স্থানের মাটির সাথে পানি মিশ্রিত করে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনিই একমাত্র সরাসরি মাটি হতে সৃষ্টি হয়েছেন, আর উনার সৃষ্টি উপাদান মাটি ও পানি। পরবর্তীতে সকল মানব বংশধরকে কুদরতীভাবে মায়ের রেহেমে নুত্বফা নামক সম্মানিত স্বচ্ছ পানি হতে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আলাক্ব সহ বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করিয়ে মানবাকৃতিতে যমীনে পাঠিয়েছেন।

বস্তুত মহান আল্লাহ পাক তিনি মানব সৃষ্টির বিষয়সহ এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা নাযিলের মাধ্যমে ঈমানদার উনাদের জন্য রোগের শিফা ও রহমত মুবারক হাছিলের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অন্যপক্ষে এর মাধ্যম দিয়ে যালিমদের অন্তরের বক্রতাই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْاٰنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْـمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ ۙ وَلَا يَزِيْدُ الظَّالِمِيْنَ اِلَّا خَسَارًا ◌

 অর্থ : “আমি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মু’মিন উনাদের জন্য রহমত মুবারক। আর যালিমদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়।” (পবিত্র সূরা বনী ইসরাঈল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮২)