পবিত্র কুরআন শরীফ কোন বিজ্ঞান গ্রন্থ নয়। তবে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বিভিন্ন আয়াত শরীফ নিয়ে গবেষণার পথ ক্বিয়ামত পর্যন্ত উন্মুক্ত রয়েছে। আর তাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বিভিন্ন উদাহরণ টেনে শেষে বলা হয়েছে এতে রয়েছে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন।

পবিত্র কুরআন শরীফ কোন বিজ্ঞান গ্রন্থ নয়। তবে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বিভিন্ন আয়াত শরীফ নিয়ে গবেষণার পথ ক্বিয়ামত পর্যন্ত উন্মুক্ত রয়েছে। আর তাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বিভিন্ন উদাহরণ টেনে শেষে বলা হয়েছে এতে রয়েছে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন।

 নাস্তিকদের আপত্তি ১২ : কুরানের আয়াত (96:15-16 দ্বারা মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল লোব যে মিথ্যা বলার জন্যে দায়ী তা বোঝানো হচ্ছে (Shakir ~ A lying, sinful forehead)-  এ দাবির সত্যতা কতটুকু? যেখানে আয়াতের অন্যান্য অনুবাদে (iyatinশব্দ খানা দ্বারা কপালের কেশগুচ্ছকে (forelock) বোঝানো হয়েছে যার প্রমান মেলে আয়াত ১১:৫৬ এবং কিছু হাদিসে (Malik's Muwatta 28:28.22.52, 3:3.15.61 Sahih Muslim 34:6551) ! দ্বিতীয়ত, মিথ্যা বলার জন্যে ব্রেইনের যে যে অঞ্চল গুলো দায়ী তা হল - frontal (medial inferior and pre-central), temporal (hippocampus and middle temporal), and limbic (anterior and posterior cingulate) lobes.

খণ্ডন: পবিত্র কুরআন শরীফ কোন বিজ্ঞান গ্রন্থ নয়। তবে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বিভিন্ন আয়াত শরীফ নিয়ে গবেষণার পথ ক্বিয়ামত পর্যন্ত উন্মুক্ত রয়েছে। আর তাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বিভিন্ন উদাহরণ টেনে শেষে বলা হয়েছে এতে রয়েছে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন। একইভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে ব্যবহৃত نَاصِيَةٍ শব্দ মুবারক দ্বারা শাব্দিকভাবে কপালের কেশগুচ্ছকে (forelock)  বোঝানো হলেও, গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মস্তিষ্কের সম্মুখভাগের প্রধান কাজ হল চিন্তাভাবনা করা। তাই অত্র আয়াত শরীফ দ্বারা “মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল লোব যে মিথ্যা বলার জন্যে দায়ী তা বোঝানো হচ্ছে” দাবী করাটা অযৌক্তিক বা ভিত্তিহীন নয়।

বিজ্ঞানের কোন সিদ্ধান্তকেই শেষ কথা বলা যাবে না, সময়ের পরিবর্তনে নতুন নতুন তথ্য ও তত্ত্ব বিভিন্ন ধারণার জন্ম দিচ্ছে। বিজ্ঞান তাদের পূর্বে প্রদত্ত কোন তথ্য ও তত্ত্বকে বলছে ভুল, আবার পূর্বের কোন তথ্য ও তত্ত্বকে সংশোধন করে নতুন তথ্য ও তত্ত্ব প্রদান করছে। অর্থাৎ বিজ্ঞান আজো পূর্ণতার স্তরে পৌঁছাতে পারেনি। তাই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বিষয়গুলোকে বিজ্ঞান দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করাটা চরম মূর্খতার পরিচায়ক। বরং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা বিজ্ঞানের তথ্য ও তত্ত্বকে যাচাই-বাচাই করতে হবে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنِّـىْ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ رَبِّـىْ وَرَبِّكُم مَّا مِنْ دٰابَّةٍ اِلَا هُوَ اٰخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا اِنَّ رَبِّـىْ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ.

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক উনার উপর আমি নিশ্চিত ভরসা করেছি, যিনি আমার এবং তোমাদের পরওয়ারদেগার। পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নাই যার মাথার সম্মুখভাগের কেশগুচ্ছ আঁকড়াইয়া ধরবেন না। আমার মহান রব তায়ালা উনার সরল পথে কোন সন্দেহ নেই।” (পবিত্র সূরা হুদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)

অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে نَاصِيَةٍ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে যার শাব্দিক অর্থ “কপালের কেশগুচ্ছ”। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি তো এখানে “চুলের মুঠি ধরে টেনে আনা হবে” বলতে পারতেন। তখন সেটা মাথার যেকোন স্থানের চুলকেই বুঝাতো, কিন্তু নির্দিষ্ট করে “মস্তিষ্কের সম্মুখভাগের চুল” বলা হলো কেন?

আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণার ফলাফল বলছে, মানুষের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের কার্যকারিতার মধ্যে সম্মুখভাগের প্রধান কাজ হল চিন্তা-ভাবনা করা। শরীরের বিভিন্ন অংশ, পরিবেশ এমনকি স্মৃতিকোষ থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে, বিভিন্ন বিষয়ে বিচার বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব মস্তিষ্কের সম্মুখ ভাগই পালন করে থাকে। সুতরাং এর থেকে বলা যায় যে, প্রতিটি প্রাণীর সারা জীবনের কৃতকর্মের সিন্ধান্তগুলো মস্তিষ্কের সম্মুখভাগ কর্তৃক গৃহীত হয়।

গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে যে, মস্তিস্কের প্রিফ্র্রন্টাল অঞ্চল যা মস্তিষ্কের বিশেষ বিশেষ কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, তা মাথার খুলির অভ্যন্তরে সম্মুখভাগে বিদ্যমান। এই অঞ্চলের কার্যাবলীর উপরে গবেষণার ফলাফলের কথা উল্লেখ রয়েছে ÔEssentials of Anatomy and PhysiologyÕ নামক বইটিতে- 

“পরিকল্পনা করার আর নড়াচড়া শুরু করার জন্য উদ্বুদ্ধতা আর দুরদশির্তা মস্তিষ্কের-সামনের লোবের (Frontal Lobe)  সম্মুখের অংশে অর্থাৎ প্রিফ্রন্টাল-অঞ্চলে ঘটে থাকে। এটি সহযোগী কর্টেক্সের অঞ্চল...।”

বইটি আরো বলে- “প্রিফ্রন্টাল অঞ্চলের উদ্বুদ্ধ করার কাজে জড়িত থাকার সম্পর্কে বলতে গিয়ে এটিও ধারণা করা হয় যে, এই অঞ্চলটি আগ্রাসনের কার্যকর কেন্দ্র।” 

তাই এই অঞ্চলটি পরিকল্পনা, উদ্বুদ্ধ করা আর ভাল ও মন্দ আচরণ শুরু করা এবং সত্য-মিথ্যা বলার জন্য দায়ী।

বর্তমানে বিজ্ঞানীরা fMRI (functioning magnetic resonance imaging)  প্রযুক্তির মাধ্যমে মিথ্যা বলা সনাক্ত করে থাকে। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় এটা বোঝা গেছে যে, মানুষ যখন মিথ্যা বলে তখন তাদের অগ্রমস্তিষ্কের কার্যাবলী বৃদ্ধি পায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার স্নায়ু বিজ্ঞানী ড. ইয়ালি নিয়েং এবং তার সহকর্মীরা ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স ইমেজিং বা এম. আর. আই.-এর মাধ্যমে তোলা মানুষের মস্তিষ্কের ছবি বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। ড. ইয়েলি নিয়েং ব্যাখ্যা করে বলছে, এটা অনেকটা মস্তিষ্কের ফটো তোলার মতো একটি ব্যাপার, যাতে মস্তিষ্কের ভেতরের কাঠামোগত সব পার্থক্য দেখা যায়। কেউ মিথ্যা কথা বলার সময় মস্তিষ্কের সামনের দিকটা তৎপর হয়ে ওঠে।

সাধারণভাবে মানুষের শরীরের যাবতীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে তার মস্তিষ্ক; এই কাজ নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে তার সমগ্র শরীরে ছড়িয়ে থাকে এক বিশাল ও জটিল জালিকা, যাকে বলা হয় কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম। মস্তিষ্ক থেকে সুষুষ্মা কা-ের মাধ্যমে এই স্নায়ুতন্ত্র সমগ্র শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই স্নায়ুতন্ত্র তৈরী হয় স্নায়ু কোষ দিয়ে, যাদেরকে বলা হয় নিউরন। প্রায় এক হাজার কোটি (১০০০০০০০০০০০) নিউরন দিয়ে মানব দেহের স্নায়ুতন্ত্র তৈরী হয়।

এই স্নায়ু কোষের প্রধান অংশ হল কোষ দেহ (Cell Body)  বা সোমা। নিউরনের সেল বডি বা দেহ থেকে তন্তু আকারে বিভিন্ন রকমের সরু তারের মত লম্বা লেজের আকৃতি বের হয়ে থাকে, একে বলা হয় এক্সন। এক্সনের মাথায় তন্তুর ন্যায় শিকড় দেখা যায়, এগুলো নিউরনের দেহ থেকেও বেরুতে পারে; এদের নাম ডেনড্রাইটস। নিউরনের সাথে নিউরনের যোগাযোগ রাখতে এদের ব্যবহার হয়ে থাকে। এরা রিসিপ্টর বা এন্টেনার কাজ করে থাকে। অর্থাৎ ডেনড্রাইট হচ্ছে বলা যায় নিউরনের শাখা প্রশাখা যা এক কোষ থেকে আরেক কোষে মস্তিষ্কের ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল পৌঁছে দেয়। আবার মস্তিষ্কে দু ধরণের ম্যাটার বিদ্যমান রয়েছে- গ্রে ম্যাটার ও হোয়াইট ম্যাটার। খুব সহজভাবে বলতে গেলে, গ্রে ম্যাটার হচ্ছে- মস্তিষ্কের বাদামী-ধূসর রংয়ের অংশ, যার মধ্যে ডেনড্রাইড থাকে। হোয়াইট ম্যাটার হচ্ছে মস্তিষ্কের সাদা মতো অংশ যার মধ্যে কোন নিউরন বা ডেনড্রাইড থাকে না।

ড. নিয়েং-এর একজন সহযোগী গবেষক রেডিওলজিস্ট ড. প্যাট্রিক কলেডি জানায়, এটাই প্রথম গবেষণা যাতে দেখানো হয়েছে যে, মিথ্যা কথা বলা যাদের অভ্যাস, তাদের মস্তিষ্কের সঙ্গে অন্যদের মস্তিষ্কের গঠনে পার্থক্য রয়েছে। এই পার্থক্য হচ্ছে মস্তিষ্কের হোয়াইট আর গ্রে ম্যাটারের পরিমাণের মধ্যে পার্থক্য।

ড. প্যাট্রিক কলেডি বলছে, মস্তিষ্কের আসল কোষগুলো গ্রে ম্যাটারের মধ্যে থাকে। কিন্তু মস্তিষ্কের সব কোষগুলোর পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকতে হয়। আর কোষগুলোর মধ্যে সেই যোগাযোগ ঘটে হোয়াইট ম্যাটারের মধ্যে দিয়ে। সুতরাং এখানে গ্রে ম্যাটারকে যদি একটি কম্পিউটার হিসেবে মনে করা হয়, তাহলে হোয়াইট ম্যাটার হচ্ছে তার সংযোগ রক্ষাকারী ক্যাবল।

মিথ্যা কথা বলা যাদের সহজাত অভ্যাস, তাদের মস্তিষ্কের সামনের দিকে অস্বাভাবিক বেশী মাত্রায় হোয়াইট ম্যাটার দেখা যায়। আর তাদের মস্তিষ্কের সামনের দিকে গ্রে ম্যাটার অন্যদের তুলনায় কম থাকে।

মার্কিন গবেষকরা দেখতে পেয়েছে, যারা মিথ্যা কথা বলায় পারদর্শী তাদের মস্তিষ্কে হোয়াইট ম্যাটারের পরিমাণ ২৫% বেশী দেখা গেছে। মিথ্যা কথা বলা প্রকৃতপক্ষেই একটি জটিল কাজ। যখন কেউ মিথ্যা কথা বলে তখন তাদের কোন কথা যেমন গোপন রাখতে হয়, তেমনি বানিয়ে ভুল তথ্যও দিতে হয়। সুতরাং মিথ্যা বলার সময় লোকজনকে খুব দ্রুত অনেক তথ্য বিচার বিশ্লেষণ করতে হয়। সে কারণেই বলা হয়, যাদের মস্তিষ্কের মধ্যে হোয়াইট ম্যাটার যত বেশী তাদের জন্য মিথ্যা কথা বলা তত সহজ।

ড. নিয়েং জানায়, মিথ্যুকদের মস্তিষ্কে গ্রে ম্যাটারের পরিমাণ সাধারণের চাইতে ১৪% কম থাকে। সে কারণে তারা সত্য গোপন করতে বেশী পারদর্শী হয়। সহজাতভাবে যারা মিথ্যা কথা বলায় পারদর্শী তাদের মস্তিষ্কে হোয়াইট এবং গ্রে ম্যাটারের পরিমাণের তারতম্যের কারণ, সাধারণের চাইতে তাদের মস্তিষ্কের গঠনও আলাদা। তবে ভিন্ন গঠনের এই মস্তিষ্ক ঠিক কিভাবে কাজ করে, সে বিষয়ে অনেক প্রশ্নের জবাব এখনো তাদের জানা নেই। মানুষ কেন অসৎ হয়, তার মূল কারণ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এই গবেষণা আমাদের জ্ঞান কিছুটা বাড়াবে বলে ড. নিয়েং এবং ড. কলেডি আশাবাদী।

(https://www.bbc.com/bengali/news/story/2006/05/printable/060502_sciencewk18.shtml)

সুতরাং এটি পরিস্কার বুঝা গেল যে, মস্তিষ্কের সামনের লোবের (Frontal Lobe)  সম্মুখের অংশ অর্থাৎ প্রিফ্রন্টাল অঞ্চল মিথ্যা বলার জন্য দায়ী। আর তাই কোন কোন মুসলিম গবেষক (যেমন- Shakir)  পবিত্র সূরা আলাক্ব শরীফ উনার ১৫-১৬ নং আয়াত শরীফ (96:15-16)  দ্বারা মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল লোব যে মিথ্যা বলার জন্যে দায়ী তা বোঝানো হচ্ছে বলে দাবী করেছেন।


মানুষ চিন্তা করে হৃদয় বা মন ও মস্তিষ্কের সমন্বয়ে। যদিও কথিত বিজ্ঞান হৃদয় বা মন অস্তিত্ব খুঁজে পায় না বলে, অস্বীকার করার চেষ্টা করে থাকে।

মানুষ চিন্তা করে হৃদয় বা মন ও মস্তিষ্কের সমন্বয়ে। যদিও কথিত বিজ্ঞান হৃদয় বা মন অস্তিত্ব খুঁজে পায় না বলে, অস্বীকার করার চেষ্টা করে থাকে।

নাস্তিকদের আপত্তি ১১ : মানুষ কি চিন্তা করে হৃদয় দিয়ে নাকি মস্তিষ্ক দিয়ে (Quran 22:46, 11:5, 3:118)?

খণ্ডন : মানুষ চিন্তা করে হৃদয় বা মন ও মস্তিষ্কের সমন্বয়ে। যদিও কথিত বিজ্ঞান হৃদয় বা মন অস্তিত্ব খুঁজে পায় না বলে, অস্বীকার করার চেষ্টা করে থাকে।

বস্তুত হৃদয় বা মনের অবস্থান হচ্ছে হৃৎপিণ্ডে ।  আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَفَلَمْ يَسِيْرُوْا فِى الْاَرْضِ فَتَكُوْنَ لَـهُمْ قُلُوْبٌ يَعْقِلُوْنَ بِـهَا اَوْ اٰذَانٌ يَسْمَعُوْنَ بِـهَا ۖ فَاِنَّـهَا لَا تَعْمٰى الْاَبْصَارُ وَلٰكِنْ تَعْمَى الْقُلُوْبُ الَّتِىْ فِى الصُّدُوْرِ.

অর্থ : “তারা কি এই উদ্দেশ্যে দেশ ভ্রমণ করেনি, যাতে তারা সমঝদার হৃদয় ও শ্রবণ শক্তি সম্পন্ন কর্ণের অধিকারী হতে পারে? বস্তুতঃ চক্ষু তো অন্ধ হয় না, কিন্তু বক্ষস্থিত অন্তরই অন্ধ হয়।” (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৬)

اَلَا اِنَّـهُمْ يَثْنُوْنَ صُدُوْرَهُمْ لِيَسْتَخْفُوْا مِنْهُ ۚ اَلَا حِيْنَ يَسْتَغْشُوْنَ ثِيَابَـهُمْ يَعْلَمُ مَا يُسِرُّوْنَ وَمَا يُعْلِنُوْنَ ۚ اِنَّهُ عَلِيْمٌ بِذَاتِ الصُّدُوْرِ.

অর্থ : “জেনে রাখ, নিশ্চয়ই তারা নিজেদের বক্ষদেশ ঘুরিয়ে দেয় যেন মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট হতে লুকাতে পারে। শুন, তারা তখন কাপড়ে নিজেদেরকে আচ্ছাদিত করে, তিনি তখনও জানেন যা কিছু তারা চুপিসারে বলে আর প্রকাশ্যভাবে বলে। নিশ্চয়ই তিনি জানেন যা কিছু অন্তরসমূহে নিহিত রয়েছে।” (পবিত্র সূরা হুদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْا بِطَانَةً مِّنْ دُوْنِكُمْ لَا يَأْلُوْنَكُمْ خَبَالًا وَدُّوْا مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُ مِنْ اَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُـخْفِىْ صُدُوْرُهُمْ اَكْبَرُ ۚ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْاٰيَاتِ ۖ اِن كُنْتُمْ تَعْقِلُوْنَ.

অর্থ : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অনিষ্ট সাধনে কোন ক্রটি করে না-তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৮)

সুতরাং হৃদয় বা মন বা অন্তর হলো মানুষের এমন একটি স্থান যেখান থেকে উৎপন্ন হয় সচেতনতা, ইন্দ্রিয়ানুভূতি বা আবেগ-উত্তেজনা, চিন্তাভাবনা ইত্যাদি।

আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

الَّذِىْ يُوَسْوِسُ فِىْ صُدُوْرِ النَّاسِ.

অর্থ : “যে মানুষের ছুদূর বা অন্তরে ওয়াসওয়াসা দেয়।” (পবিত্র সূরা নাস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

অর্থাৎ মনের মধ্যে মানুষের শুভ চিন্তা বা কুচিন্তার উদয় হয়। পরবর্তীতে মনের চিন্তা মস্তিষ্কের সহযোগিতায় প্রসারণ ঘটে বা বিলুপ্ত হয়ে যায়। তাই মনকে বাদ দিয়ে মস্তিষ্কের ভাবনা চিন্তার কথা যেমন কল্পনা করা যায় না তেমনি মস্তিষ্ককে বাদ দিয়ে মন কোন ভাবনা চিন্তা করতে পারে না; মূলত মন বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ভাবনা চিন্তার উদ্রেক তৈরী করে আর মস্তিষ্ক তার সম্প্রসারণ ঘটায়। ফলশ্রুতিতে দেখা যাচ্ছে, মনের সাথে মস্তিষ্কের ভাবনাচিন্তার কেন্দ্রের ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে, বলতে গেলে দু’ দু’টো কেন্দ্রই ওৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। অর্থাৎ ভাবনা চিন্তার কাজটি মস্তিষ্কই সম্পন্ন করে, মন তার যোগানদাতা।

আর চিন্তা-ভাবনার কাজটি যে মস্তিষ্ক সম্পন্ন করে দেয় তার প্রমাণও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি نَاصِيَةٍ শব্দ মুবারক ব্যবহার করে চিন্তা-ভাবনার কাজে মস্তিষ্কের সম্পৃক্ততাকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

كَلَّا لَئِنْ لَّـمْ يَنْتَهِ لَنَسْفَعًا بِالنَّاصِيَةِ. نَاصِيَةٍ كَاذِبَةٍ خَاطِئَةٍ.

অর্থ : “কখনই নয়, যদি সে বিরত না হয়, তবে আমি মস্তকের সামনের কেশগুচ্ছ ধরে হেঁচড়াবই। মিথ্যাচারী, পাপীর সম্মুখভাগের কেশগুচ্ছ।” (পবিত্র সূরা আলাক্ব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫-১৬)

অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখিত نَاصِيَةٍ শব্দ মুবারক দ্বারা মানুষের চিন্তা-ভাবনায় যে মস্তিষ্কই দায়ী, সে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। আর এই কারণেই মহান আল্লাহ তিনি পাপীদেরকে তাদের চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে কৃতকর্মের জন্যে পাকড়াও করবেন।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, চিন্তা-ভাবনার কাজটি মনে সূত্রপাত ঘটে মস্তিষ্ক দ্বারা সম্পাদিত হয়। আর এই বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যেই বর্ণিত রয়েছে-

وَجَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِـهِمْ اَكِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِىْ اٰذَانِـهِمْ وَقْرًا وَاِذَا ذَكَرْتَ رَبَّكَ فِى الْقُرْاٰنِ وَحْدَهُ وَلَّوْاْ عَلٰى اَدْبَارِهِمْ نُفُوْرً.

অর্থ : “আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ দিয়ে দিয়েছি, যাতে তারা একে উপলব্ধি করতে না পারে এবং তাদের কর্ণকুহরে বোঝা চাপিয়ে দেই। যখন আপনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান রব তা‘য়ালা উনার একত্ব তিলাওয়াত মুবারক করেন, তখনও অনীহাবশতঃ তারা পৃষ্ট প্রদর্শন করে চলে যায়।” (পবিত্র সূরা বনী ইসরাঈল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৬)

وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّسْتَمِعُ اِلَيْكَ وَجَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِـهِمْ اَكِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِىْ اٰذَانِـهِمْ وَقْرًا وَاِنْ يَّرَوْاْ كُلَّ اٰيَةٍ لَا يُؤْمِنُواْ بِـهَا حَتّٰى اِذَا جَآؤُوْكَ يُـجَادِلُوْنَكَ يَقُوْلُ الَّذِيْنَ كَفَرُواْ اِنْ هٰذَا اِلَا اَسَاطِيْرُ الْاَوَّلِيْنَ.

অর্থ : “তাদের কেউ কেউ আপনার দিকে কান লাগিয়ে থাকে। আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ রেখে দিয়েছি যাতে একে না বুঝে এবং তাদের কানে বোঝা ভরে দিয়েছি। যদি তারা সব নিদর্শন অবলোকন করে তবুও সেগুলো বিশ্বাস করবে না। এমনকি, তারা যখন আপনার কাছে ঝগড়া করতে আসে, তখন কাফেররা বলে, এটি পূর্ববর্তীদের কিচ্ছাকাহিনী বৈ তো নয়।” (পবিত্র সূরা আন‘আম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৫)

অত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্ট করেই উল্লেখ করেছেন যে,

جَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِـهِمْ اَكِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِىْ اٰذَانِـهِمْ

অর্থাৎ তাদের অন্তরের উপর আবরণ দিয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে তারা একে উপলব্ধি করতে না পারে এবং তাদের কর্ণকুহরে বোঝা চাপিয়ে দিয়েছি।

বস্তুত মহান আল্লাহ পাক তিনি কারো প্রতিই যুলুম করেন না। তাই তাদের অন্তরের উপর আবরণ ও কর্ণকুহরে বোঝা তাদের নিজেদের আমলেরই ফল।

যেহেতু তাদের অন্তরের উপর আবরণ পড়ে গিয়েছে তাই উপলব্ধি করতে অক্ষম। অর্থাৎ তাদের হৃৎপি- নির্লিপ্ত থাকে। এর ফলে তাদের কানে কোন উপদেশ/পরামর্শ ইত্যাদি প্রবেশ করলেও সেটা তাদের কাছে বিচ্ছিন্ন কতগুলো শব্দ বা ধ্বনি হিসেবে পরিগণিত হয়, যা তারা অনুধাবন করতে পারে না। ফলশ্রুতিতে তাদের মস্তিষ্কও কোন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক তিনি কানের প্রসঙ্গটি টেনে একেবারে পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, কানে শুনে, মস্তিষ্ক দিয়ে ভেবে চিন্তেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কারণ তার অন্তর নির্লিপ্ত হয়ে আছে; সেখানে অবিশ্বাস স্থায়ীভাবে বাসা বেঁধে আছে। ফলে মস্তিষ্কের কার্যকলাপের সাথে হৃৎপিণ্ডের সম্পৃক্ততার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবেই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উপস্থাপিত হয়েছে বলে প্রমাণিত হলো।

মহান আল্লাহ পাক তিনি মস্তিষ্কের কার্যকলাপের সাথে হৃৎপিণ্ডের সম্পৃক্ততার বিষয়ে অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন- 

اِنَّ فِىْ ذٰلِكَ لَذِكْرٰى لِمَنْ كَانَ لَهُ قَلْبٌ اَوْ اَلْقَى السَّمْعَ وَهُوَ شَهِيْدٌ

অর্থ : “এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্যে, যার অনুধাবন করার মত অন্তর রয়েছে। অথবা সে নিবিষ্ট মনে শ্রবণ করে।” (পবিত্র সূরা ক্বাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৭)

অনুধাবন করার মত অন্তর বা হৃৎপি- যার রয়েছে অর্থাৎ যার হৃৎপি- আবেগ অনুভূতিতে উদ্দীপ্ত হয়; সে রকম ব্যক্তির জন্যে রয়েছে উপদেশ। আবার যে নিবিষ্ট মনে শ্রবণ করে মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম মুবারক, অবশ্যই তার মস্তিষ্ক হৃৎপি-কে উদ্দীপ্ত করে। বিজ্ঞান বলছে এমনটা করে তখনই যখন মানুষ আবেগে উদ্বেলিত হয়, মন যখন গভীর অনুভূতি প্রবণ হয়ে উঠে অর্থাৎ মস্তিষ্ক যখন নিবিষ্টতার সাথে কিছু ধরে রাখতে চায়, তখন সে হরমোন নিষ্কাষণের মাধ্যমে হৃৎপি-কে উদ্দীপ্ত করে, তবে কেন করে তার কোন পরিচ্ছন্ন ব্যাখ্যা বিজ্ঞানের কাছে নেই। রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিকল্পে এই নিষ্কাষণ ঘটে থাকে বলে যে প্রচলিত ব্যাখ্যা রয়েছে তা যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ সঞ্চালন বৃদ্ধির জন্যে হৃৎপি-কে চঞ্চল বা উদ্দীপ্ত হতে হয় না; কোন প্রয়োজনে মস্তিষ্ক নির্দেশ দিলেই হৃৎপি- এই কাজটি করতে শুরু করে, ক্ষণিকের তরে সামান্য কোন চিন্তার জন্যে মস্তিষ্কের যে পরিমাণ অতিরিক্ত রক্ত প্রয়োজন হয় তা সরবরাহ করতে হৃৎপি-কে অতিমাত্রায় উদ্দীপ্ত হতে হয় না, কাজটি তার স্বাভাবিকতার মধ্যেই পড়ে।

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেল যে, মানুষ চোখ দিয়ে চাক্ষুষ দেখে, কান দিয়ে শ্রবণ করে, হৃদয় দিয়ে চিন্তা-ভাবনার সূত্রপাত ঘটিয়ে মস্তিষ্কের মাধ্যমে ভাবনা সমাপ্ত করে আর হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করে।

উল্লেখ্য যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মন বা অন্তর বা হৃদয় বুঝাতে قَلْب শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে। আর এই قَلْب মানুষের বক্ষে অবস্থিত বিধায়, সমার্থক হিসেবে صُدُوْرِ শব্দ মুবারকও ব্যবহৃত হয়েছে। আবার قَلْب বা অন্তরের ৭টি স্তরের (সুদূর, নশর, শামছি, নূরী, কুরব, মকিম ও নাফসি) ১ম স্তরকেও صُدُوْرِ বলে। কিন্তু পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে قَلْب বা صُدُوْرِ উল্লেখ করেই ছেড়ে দেয়া হয়নি। তাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বরাত দিয়ে কোনভাবেই এই কথা বলার সুযোগ নেই যে, হৃৎপিণ্ড ই ভাবনা-চিন্তা করে। কেননা এমন অনেক আয়াত শরীফ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বিভিন্ন সূরা শরীফ উনাদের মধ্যে লিপিবদ্ধ রয়েছে যেখানে মহান আল্লাহ মানুষের হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কের সমন্বিত কাজের বর্ণনা করেছেন। আর এই বিষয়টি বুঝাতে কখনো কখনো ‘اَفْئِدَ’ আফ্ইদা শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে। যদিও তরজমাকারকগণ এই শব্দ মুবারক হৃৎপিণ্ড হিসেবে তরজমা করেছেন। কিন্তু আরবী ভাষা সাহিত্যে হৃৎপিণ্ড শব্দের সাথে ‘اَفْئِدَ’ আফ্ইদা শব্দের কোন সংশ্রব নেই।

তরজমাকারকগণ ‘اَفْئِدَ’ আফ্ইদা শব্দ মুবারক উনার অর্থ হৃৎপি- গ্রহণ করার ফলে, নাস্তিকরা এই প্রলাপ বকার প্রয়াস পাচ্ছে যে, পবিত্র কুরআন শরীফ বর্ণনা করছে- সকল প্রকার ভাবনা-চিন্তার কাজ হৃৎপিণ্ডের , মস্তিষ্কের নয়। বরং বিষয়টা ঠিক উল্টো; কেননা ‘اَفْئِدَ’ আফ্ইদা শব্দ মুবারক উনার তরজমা হৃৎপিণ্ড নয়। তাছাড়া পবিত্র কুরআন শরীফ নিজেই বলছেন, চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব মস্তিষ্কের, আর মস্তিষ্কের সম্মুখ ভাগই ভাবনা-চিন্তার জন্য দায়ী।

এরপরে আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মানুষ তার মস্তিষ্ক দিয়েই চিন্তা ভাবনা করে, আর হৃৎপিণ্ড মানুষকে আবেগের তাড়নায় তাড়িত করে ও চিন্তা চেতনার কাজে প্রয়োজনমত সহযোগিতা করে অর্থাৎ অনুভূতি জাগায়। বস্তুত মস্তিষ্ক আবেগ সৃষ্টির কোন যন্ত্র নয়, এটি চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত তৈরী করে ও সেইমত কার্যাদেশ প্রদান করে, মস্তিষ্কের চিন্তা-ভাবনার সময়ে হৃৎপি- প্রয়োজনীয় আবেগময় অনুভূতির উৎসরণ ঘটায়।

সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, মস্তিষ্ক ও মানব মনের মধ্যে একটা গভীর সম্পর্ক বা যোগসূত্র রয়েছে। অর্থাৎ মন-মস্তিষ্কের দ্বৈত প্রতিক্রিয়া দ্বারাই মানুষ পরিচালিত হয়। বিজ্ঞানীরা দেখেছে যে, ট্রম্যাটিক ব্রেইন ইনজুড়ি (traumatic brain injury ও সাইকো একটিভ ড্রাগ মস্তিষ্কের মাধ্যমে মনের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। দার্শনিক পেট্রিসীয়া মনে করে, মস্তিষ্কে এই ঔষধের ক্রিয়া মনের উপর যে প্রভাব ফেলে তাতেই বুঝা যায় যে, মন-মস্তিষ্ক এক সূত্রে গাঁথা।

বিজ্ঞানীরাও মনে করতে শুরু করেছে, হৃৎপি- শুধুমাত্র রক্ত সঞ্চালনকারী অঙ্গ নয়; এর নিজস্ব স্নায়ুতন্ত্র রয়েছে এবং তা প্রায় ৪০,০০০ নিউরন দিয়ে গঠিত। (পক্ষান্তরে মানুষের মগজ বা মস্তিষ্কে প্রায় ৮৬ বিলিয়ন নিউরন থাকে এবং প্রত্যেকে কমপক্ষে ১০ হাজার অন্যান্য নিউরনের সাথে সংযুক্ত থাকে।) হৃৎপিণ্ডের এই নিউরনগুলো শরীরের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় কিছুটা আলাদা ও বিভিন্ন উপায়ে ও বিস্তৃতভাবে সংযুক্ত এবং তারা সংবেদনশীলতার পাশাপাশি মস্তিষ্ক কর্তৃক ও বিভিন্ন গ্রহ্নি থেকে ক্ষরিত নানাপ্রকার রাসায়নিক পদার্থকে সনাক্ত করতে সক্ষম; আগত হরমোন ও নানাবিদ রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে তার প্রয়োজনীয় অংশটুকু চিনে নিতে সক্ষম। তারা স্বাধীনভাবে তাদের নিজ দক্ষতায় কাজ করে। বিজ্ঞানীরা মনে করে, হৃৎপি-ের ক্ষুদে মস্তিষ্ক রয়েছে, যে কারণে তার প্রতিস্থাপন করা যায়। কারণ সাধারণতঃ শরীরের অন্যান্য অঙ্গে কাটা পড়া স্নায়ু পূণঃসংযুক্ত হয় না। বৈদ্যুতিক পালসের মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের পাম্পিং ক্রিয়া সচল রাখা ছাড়াও এই স্নায়ুতন্ত্রের বহুবিধ কাজ রয়েছে। সম্ভবত সে কারণেই কোন প্রাণী অজ্ঞান হলেও তার হৃৎপিণ্ড সম্পূর্ণ সচল থাকে। তাছাড়াও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছে যে, হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনে রোগীর মধ্যে স্বকীয়তার অনেক পরিবর্তন আসে। আরও দেখা গেছে, রোগীর মধ্যে হৃৎপিণ্ড দাতার কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। বিজ্ঞানীরা বলছে, মস্তিষ্ক ও হৃৎপি- সমন্বিতভাবে কাজ করে। হৃৎপিণ্ড যদি সম্পূর্ণই মস্তিষ্কের নির্দেশে কাজ করতো তবে সমন্বয় বা বুঝাপড়ার প্রয়োজন হতো না। শুধুমাত্র মস্তিষ্কের নির্দেশ মেনে চলতো। অনেক সময় দেখা গেছে, আক্রান্ত হৃৎপিণ্ডের কার্যপ্রণালীতে নানাবিধ পরিবর্তনের ফলে মস্তিষ্ক তার সাথে মানিয়ে তার নিজের কাজ পরিচালনা করে।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, মানুষের ভাবনা চিন্তার উপর মনের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। মন মানুষের মস্তিষ্কে কিছু সুনিদিষ্ট ভাবনার উদ্রেক করে যা অন্যান্য ইন্দ্রীয়ের প্রভাব মুক্ত।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَهُوَ الَّذِي اَنشَاَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ

অর্থ : “তিনি তোমাদের কান, চোখ ও অন্তঃকরণ সৃষ্টি করেছেন; তোমরা খুবই অল্প কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে থাক।” (পবিত্র সূরা মু’মিনুন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৮)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لاَ يَرْجِعُوْنَ.

অর্থ : “তারা বধির, মূক ও অন্ধ। সুতরাং তারা ফিরে আসবে না।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮)

পবিত্র সূরা মু’মিনুন শরীফ উনার ৭৮নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মানুষকে কান, চোখ ও অন্তঃকরণ সৃষ্টির বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে আর পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ১৮নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে কান, চোখ ও বাকযন্ত্রের অকার্যকারিতা বলতে মস্তিষ্কে তাদের সুস্থ চিন্তার অভাব ও হৃৎপি-ের নির্লিপ্ততাকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যাদের অন্তরে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি বিশ্বাস নেই তাদের চোখ কান থাকা সত্ত্বেও তাদের মস্তিষ্ক মহান আল্লাহ পাক উনাকে নিয়ে ভাবে না।


অ্যালকোহলের মধ্যে ক্ষতির পরিমাণই বেশি, আর তাই সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত তা হারাম ঘোষণা করেছে।

 অ্যালকোহলের মধ্যে ক্ষতির পরিমাণই বেশি, আর তাই সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত তা হারাম ঘোষণা করেছে।

নাস্তিকদের আপত্তি ১০ : অ্যালকোহল সহ অন্যান্য নেশার দ্রব্য ইসলামে কঠিন ভাবে নিষিদ্ধ (হারাম) (Quran 5:90-91 Sahih Muslim 4962, 4228 Sahih Bukhari 8:81:764-768 Abu Dawud 38:4469 কিন্তু পরিমিত অ্যালকোহল গ্রহনের প্রচুর ভালো দিক (সাস্থ্যগত) থাকায় এটা কে সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ করার যৌক্তিকতা কোথায়?

1 Lower mortality rates

http://onlinelibrary.wiley.com/doi/10.1111/j.1530-0277.2010.01286.x/abstract

http://www.time.com/time/magazine/article/0,9171,2017200,00.html

2 Lower risk of heart disease and stroke

http://stroke.ahajournals.org/content/39/11/2936.full

http://circ.ahajournals.org/content/102/5/500.abstract

http://circ.ahajournals.org/content/102/5/494.abstract

3 Lower risk of diabetes

http://www.reuters.com/article/2010/04/27/us-drinking-diabetes-idUSTRE63Q43920100427

4 Lower risk of suffering from rheumatoid arthritis

http://edition.cnn.com/2010/HEALTH/07/27/drinking.rheumatoid.arthritis/index.html#fbid=XGFBTvQDW97&wom=false

5 Lower risk of osteoporosis (brittle bones)

http://www.telegraph.co.uk/health/healthnews/6014310/Beer-could-stop-bones-going-brittle.html

6 Lower risk of suffering from depression

http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/19686521

http://www.time.com/time/health/article/0,8599,1928187,00.html?iid=sphere-inline-sidebar

খণ্ডন : অ্যালকোহল গ্রহণের কিছু স্বাস্থ্যগত ভালো দিক থাকতে পারে। যেমন অ্যালকোহল পানে সাময়িক আনন্দ লাভ হয়, সাময়িকভাবে শক্তিও কিছুটা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরে কিছুটা লাবণ্যও সৃষ্টি হয়। তবে এই নগণ্য ভালো দিকের চেয়ে মন্দ দিকের পরিমাণ এত বিস্তৃত ও গভীর, যা অন্য কোন বস্তুতেই সচরাচর পরিলক্ষিত হয় না। অ্যালকোহলের প্রতিক্রিয়ায় ধীরে ধীরে মানুষের হজমশক্তি বিনষ্ট হয়ে যায়, খাদ্যস্পৃহা কমে যায়, চেহারা বিকৃত হয়ে পড়ে, স্নায়ু দূর্বল হয়ে যায়। সামগ্রিকভাবে শারীরিক সক্ষমতার উপর মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সর্বোপরি মদপান মানুষকে মনুষত্বহীন করে দেয়। আর এই যৌক্তিক কারণেই অ্যালকোহল সহ অন্যান্য নেশার দ্রব্য ইসলামে কঠিন ভাবে নিষিদ্ধ (হারাম)।

মানুষ যতক্ষণ নেশাগ্রস্ত থাকে ততক্ষণ তার জ্ঞান-বুদ্ধি কোন কাজই করতে পারে না। কিন্তু অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের অভিমত হচ্ছে, মদের অভ্যাস মানুষের বোধশক্তিকেও দূর্বল করে দেয়। যার প্রভাব চৈতন্য ফিরে পাবার পরেও ক্রিয়াশীল থাকে। অনেক সময় এতে মানুষ পাগলও হয়ে যায়। চিকিৎসাবিদগণের সবাই একমত যে, অ্যালকোহল কখনো শরীরের অংশে পরিণত হয় না, বরং মদ্যপানের পরে সেটি অপরিবর্তীতভাবে পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রে দ্রুত শোষিত হয়ে রক্তে মিশে যায় এবং এতে শরীরে রক্তও সৃষ্টি হয় না; রক্তে মিশে যাওয়ার ফলে রক্তের মধ্যে একটি সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় মাত্র। ফলে সাময়িকভাবে শক্তির সামান্য আধিক্য অনুভূত হয়। কিন্তু হঠাৎ রক্তের এ উত্তেজনা অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

বস্তুত মদ এত ক্ষতিকর যে, এটি মানুষকে সম্পূর্ণরূপে অপ্রকৃতিস্থ করে ফেলে, ফলে সমাজে সৃষ্টি হয় চরম বিশৃঙ্খলা-চুরি, লুটতরাজ, রাহাজানি, খুন, সম্ভ্রমহরণ ইত্যাদি। যা পাশ্চাত্য সমাজে মহামারি আকার ধারণ করেছে শুধু মদ্যপানের ব্যাপকতার কারণে।

এ কারণে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

ام الفواحش و ام الـخبائث

অর্থ : “শরাব সমস্ত মন্দ ও অশ্লীলতার জননী।”

অথচ মদ্যপান করলে স্বাস্থ্যও ভালো হয়। আর এই বিষয়টিই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ২১৯নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন এভাবে-

يَسْاَلُونَكَ عَنِ الْـخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ ۖ قُلْ فِيْهِمَا اِثْـمٌ كَبِيْرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَاِثْـمُهُمَا اَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا ۗ 

অর্থ : “ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২১৯)

অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি উল্লেখ করেছেন যে, মানুষের জন্যে মদের মধ্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি মদের কিছু উপকারিতার কথা উল্লেখ করেছেন, তাই বিভিন্ন সময়ে এর কিছু উপকারিতা বিভিন্ন গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে।

যেমন- অপর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ সংক্রান্ত হৃদরোগে (স্কেমিক হার্ট ডিজিজ) মদ কিছুটা সুরক্ষা দেয়ার তথ্য পেয়েছে গবেষকেরা। অন্যদিকে টাইপ-২ ডায়াবেটিকের ক্ষেত্রে সুরক্ষার একটি সম্ভাবনার কথা বলা হয়। তবে এই দুটি ক্ষেত্রে যে পরিসংখ্যান তারা পেয়েছে, তা যৎসামান্য।

গবেষকরা বলছে, নারী, পুরুষ সবারই পরিমিত পরিমাণে মদ পান করা ভাল। সপ্তাহে ১৪ ইউনিটের বেশি অ্যালকোহল পান করা উচিত নয়। সপ্তাহে তিন-চার দিনেই তা পান করা উচিত। আর কোনও কোনও দিন উচিত মদপান মুক্ত থাকা।

অর্থাৎ সাধারণভাবে সপ্তাহে ১৪ ইউনিট পর্যন্ত মদ্যপানকে ‘পরিমিত’ বলা হয়।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, পরিমিত মদ্যপান কি বিপদমুক্ত? এর সোজাসুজি জবাব হলো- ‘না’। কারণ এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। তবে মদ্যপানের উপকারিতা নিয়ে জরিপের ফল অনেক ক্ষেত্রেই পরস্পরবিরোধী।

বৃটেনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশিকায় বলা হয় সপ্তাহে ১৪ ইউনিটের কম নিয়মিত মদ্যপান করলে তার স্বাস্থ্য ঝুঁকি হবে নিম্ন মাত্রার।

অর্থাৎ এখানে ক্ষতির দিকটি স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। যদিও সেটা কথিত পরিমিত পরিমাণের কম।

আবার কিছু গবেষণায় বলা হয়, দিনে দুই ইউনিট পর্যন্ত লাল ওয়াইন পান করা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু এ নিয়ে অন্যান্য কিছু বৈজ্ঞানিকের সংশয় আছে।

বৃটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত এক জরিপে বলা হয়, পরিমিত মদ্যপান স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি ঠেকাতে পারে।

এর বিপরীতে অন্য এক জরিপে বলা হয়, পরিমিত মদ্যপানও ডেমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

পরস্পরবিরোধী এসব জরিপের উপর কোন আস্থা রাখাই কঠিন।

আর তাই বিশেষজ্ঞের মতে মদ্যপানের কোন নিরাপদ মাত্রাই নেই। কেননা অ্যালকোহল পান করলে মানুষের রক্তচাপ ও রক্তের কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালীগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যার ফলে স্মৃতি লোপ পেতে পারে। এতে ডেমেনশিয়ার ঝুঁকি ৩ গুণ বেড়ে যায় বলে ফ্রান্সের একটি জরিপে বলা হয়। আরেকটি জরিপে বলা হয়, প্রতি সপ্তাহে ১৮ ইউনিটের বেশি যারা পান করেন তাদের আয়ু চার থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

সার্কুলেশন নামক জার্নালে প্রকাশিত ২০১৬ সালের একটি গবেষণা রিভিউ অনুসারে, এক রাতে ৬-৯টি ককটেল সেবন হার্ট অ্যাটাক অথবা স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার/রক্তনালির ঘটনার ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়।

অতএব, মদ্যপানের কোন ‘নিরাপদ সীমা’ বা ‘পরিমিত পরিমাণ’ আছে কিনা সেটাও একটি প্রশ্ন। এতদিন ধরে বিভিন্ন প্রতিবেদনে পরিমিত মদপানে ঝুঁকি নেই বলা হলেও ২০১৮ সালের একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা বলছে যে, মদপানের কোনো নিরাপদ সীমা নেই। হার্ভার্ড টি.এইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষণা প্রধান এলিজাবেথ মোস্তফস্কি বলে, ‘অ্যালকোহলের প্রভাবে হার্ট অ্যাটাক অথবা স্ট্রোকের ঝুঁকি কতটুকু বৃদ্ধি পাবে তা নির্ভর করছে পানকারী কতটুকু ও কতবার পান করছে তার উপর।’

আর তাই বৃটেনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেছে, যে কোন মাত্রার অ্যালকোহল পানের কিছু না কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে।

বস্তুত মদ মানেই ক্ষতি। মদের কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই। মদ পান করলে ক্ষতি হবেই। গবেষকরা একসুরে এসব কথা স্বীকার করে নিয়েছে। গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ নামের বৈশ্বিক উদ্যোগের গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে। আমেরিকার ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিকস এই বৈশ্বিক উদ্যোগের প্রধান কার্যালয় হিসেবে কাজ করেছে। গবেষণায় অর্থায়ন করেছে আমেরিকার বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।

এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বিশ্বে প্রতি তিনজনে একজন মদ পান করে। অপরিণত বয়সে মৃত্যু ও প্রতিবন্ধিতার জন্য সপ্তম ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাস মদ্যপান। প্রতিবছর ২৮ লাখ মানুষ মারা যায় মদের কারণে। (২৩ আগস্ট ২০১৮) মদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বৃটেন ভিত্তিক জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী দ্য ল্যানসেট’র প্রবন্ধেও এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

১৯৯০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ১৯৫টি দেশে মদের ব্যবহার, অসুস্থতা ও মৃত্যুর তথ্য এতে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে গবেষকেরা বলেছে, মদের কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই। প্রবন্ধে বলা হয়, ডেনমার্কের মানুষ সবচেয়ে বেশি মদ পান করে। সবচেয়ে কম মদ পান করা দেশগুলোর তালিকায় আছে মুসলিম দেশগুলো। ইসলামে মদ পান হারাম।

এই বৈশ্বিক উদ্যোগের সঙ্গে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) অসংক্রামক ব্যাধি বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী আলিয়া নাহিদও রয়েছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘মদ সরাসরি স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে, উচ্চ রক্তচাপ বাড়ায়, এটা ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। এই প্রথমবারের মতো বিশ্বের গবেষকেরা এক সুরে বলছে, মদের কোনো গ্রহণযোগ্য মাত্রা নেই।’

গবেষকেরা বলছে, ১৫-৪৯ বছর বয়সী মানুষের ১০টি মৃত্যুর মধ্যে একটি ঘটে মদের কারণে। নিয়মিত মদ্যপান শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও টিস্যুতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। মদে অভ্যস্ত মানুষ সহিংস হয় এবং অনেক সময় নিজের ক্ষতি করে। বিশ্বব্যাপী মানুষ কী পরিমাণ মদ পান করে, সেই হিসাব বের করতে গবেষকেরা ৬৯৪টি পূর্ববর্তী গবেষণা পর্যালোচনা করে। এছাড়া মদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নির্ণয়ের জন্য আরও ৫৯২টি গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এসব পর্যালোচনা শেষে গবেষকেরা বলছে, ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্যান্সারে মৃত্যুর পেছনে প্রধান কারণ মদ্যপান।

২০১৬ সালের বৈশ্বিক তথ্যে দেখা গেছে, ২.২% নারী ও ৬.৮% পুরুষের অপরিণত বয়সে মৃত্যুর কারণ মূলত মদ্যপান। ১৫-৪৯ বছর বয়সীদের প্রধান মৃত্যুঝুঁকি ছিল মদসংশ্লিষ্ট কারণ। এছাড়া ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ২৭% নারী এবং ১৯% পুরুষ মারা যায় মদ্যপানসংশ্লিষ্ট ক্যান্সারের কারণে।

অর্থাৎ মদ বা অ্যালকোহল পানে ক্যান্সার সহ দেহে নানান রকমের মরনঘাতী রোগ দেখা দেয়।

পৃথিবীতে সবচেয়ে ক্ষতিকর মাদক কোনটি? এর উত্তরে বৃটেনের বিজ্ঞানীরা বলছে, অ্যালকোহল হচ্ছে সবচেয়ে ভয়াবহ মাদক। এটি হেরোইন, কোকেন কিংবা তামাক-এর চেয়েও ক্ষতিকর মাদক। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো সহ আরও অনেক দেশ আছে যেখানে মদ্যপান বৈধ। অন্যদিকে হেরোইন কিংবা কোকেনের সামান্য পরিমাণও কারও কাছে পাওয়া গেলে পুলিশি জেরায় তার অবস্থা একেবারে নাজেহাল। তবে বৃটিশ বিজ্ঞানীদের হিসাব মতে, মদ্যপানের ফলে যে কেবল মদ্যপায়ীই ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা নয়, এর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সামাজিক পর্যায় পর্যন্তও এবং এই ক্ষতির পরিমাণ হেরোইন কিংবা কোকেনের চেয়ে অনেক বেশি। বৃটেনের ইন্ডিপেন্ডেন্ট সায়েন্টিফিক কমিটি অন ড্রাগস বা আইএসসিডি এবং ইউরোপীয়ান মনিটরিং সেন্টার ফর ড্রাগস অ্যান্ড ড্রাগস অ্যাডিকশন বা ইএমসিডিডিএ, এই দুটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের করা এক গবেষণাতে বের হয়ে এসেছে এই তথ্য।

বিজ্ঞানীরা এই গবেষণায় দেখার চেষ্টা করে যে সেবনকারীর জন্য এবং অপরের জন্য মাদক কতটুকু ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে সেবনকারীর ৯টি বিষয় এবং অপরের জন্য ৭টি বিষয় খতিয়ে দেখা হয়। গবেষণা শেষে দেখা যায়, ১০০ নম্বরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭২ নম্বর পেয়েছে অ্যালকোহল বা মদ। এরপর হেরোইন ৫৫ ও ক্র্যাক ৫৪ নম্বর পেয়ে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। কোকেন এবং তামাকের অবস্থান পঞ্চম এবং ষষ্ঠ। 

গবেষকদলের প্রধান প্রফেসর ডেভিড নাট বলে, “এটা বিশেষভাবে লক্ষ্য করার মত যে অ্যালকোহল এবং তামাকের মত বৈধ মাদক ক্ষতির দিক থেকে অনেক এগিয়ে। তার মানে অবৈধ মাদকের মত এসব বৈধ মাদকও কোন অংশেই কম ক্ষতিকর নয়।”

সুতরাং চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটা সুস্পষ্ট যে, মদ্যপানের কোন ‘নিরাপদ সীমা’ বা ‘পরিমিত পরিমাণ’ বলে কিছুই নেই। আর তাই মদ্যপানের ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী।

একজন জার্মান চিকিৎসক বলেছে, “যারা মদ্যপানে অভ্যস্ত তারা ৪০ বছর বয়সে ৬০ বছরের বৃদ্ধের মতো অকর্মণ্য হয়ে পড়ে এবং তাদের শরীরের গঠন এত হাল্কা হয়ে যায় যে, ৬০ বছরের বৃদ্ধেরও তেমনটি হয় না।” যেসব শিরা ও ধমনীর মাধ্যমে সারা শরীরে রক্ত প্রবাহিত হয়ে থাকে মদ্যপানের দরুণ সেগুলো শক্ত ও কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে দ্রুতগতিতে বার্ধক্য এগিয়ে আসতে থাকে। 

যক্ষা রোগটি মদ্যপানেরই একটি বিশেষ পরিণতি। ইউরোপের শহরাঞ্চলে যক্ষার আধিক্যের কারণও অতিমাত্রা মদ্যপান। যখন থেকে ইউরোপে মদ্যপানের আধিক্য দেখা দিয়েছে, তখন থেকে সেখানে যক্ষার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সাধারণভাবে মদ্যপানের দ্বারা মানুষের গলদেশ এবং শ্বাসনালীরও প্রচুর ক্ষতি সাধিত হয়। ফলে স্বর মোটা হয়ে যায় এবং স্থায়ী কফ হয়ে থাকে, তারই ফলে শেষ পর্যন্ত যক্ষা রোগের সৃষ্টি হয়।

এছাড়াও সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রাপ্ত মদ বা অ্যালকোহল পানের মারাত্মক ক্ষতিকারক রোগ হচ্ছে ভারনিক্স করসাকফ সিনড্রোম বা সাইকোসিস। এ রোগে রোগীর স্মৃতিশক্তি কমে যায়, দৃষ্টিশক্তি কমে যায়, রোগী উল্টোপাল্টা কথা বলে, আত্মীয়-স্বজনকে সন্দেহ করে, একা একা কথা বলে, শরীরের ভারসাম্য বজায় রেখে চলাফেরা করতে পারে না। মূলত অ্যালকোহল শরীরের ভিটামিন বি১ এর শোষণ কমিয়ে দেয় বলেই এমন হয়।

মদ বা অ্যালকোহল পানে যৌনশক্তি ধীরে ধীরে কমে যায়। পৌরষত্বের প্রধান হরমোন হলো টেস্টোস্টেরন। মদ বা অ্যালকোহল পানে পুরুষের রক্তে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কমে যায়। এই হরমোন কমে যায় বলে শারিরীক মেলা মেশায় পুরুষদের আগ্রহ কমে যায়। স্পার্মের গুণগত মান ও পরিমাণ দুটোই কমতে থাকে, ফলে পুরুষদের সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায় এবং বংশপরম্পরায় মস্তিষ্কের বা অন্যান্য অংগের জন্মগত ত্রুটি নিয়ে সন্তান হবার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।

মদ বা অ্যালকোহল পানে নারীদের ও সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। তাদেরও শারিরীক মেলামেশার আগ্রহ কমতে থাকে। গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল পান করলে জন্মগত ত্রুটি নিয়ে সন্তান ভূমিষ্ট হবার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়।

অ্যালকোহলের প্রভাবে গর্ভজাত সন্তানের বুদ্ধি কম হয়, শারিরীক গঠন ব্যহত হয়। একে ‘ফিটাল অ্যালকোহল সিনড্রম’ বলে। তাছাড়া গর্ভের প্রথম তিন মাস অতিরিক্ত মদ পানে গর্ভের সন্তানের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এসব কারণেই দেখা যায় বিশ্বের অমুসলিম দেশগুলোতে মদ পানের হার বেশি হওয়ায় তাদের সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা কম।

এ ধরনের আরো বহুবিধ স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি মদ্যপানের ফলে তৈরি হয়। আর তাই জেনে-বুঝে মুসলমানদের ক্ষতি সাধনের জন্য এই নিকৃষ্টতম অস্ত্রটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃতও হয়েছে। কিন্তু শত্রুপক্ষ এতে সফলতা লাভ করতে পারেনি।

যেমন ফ্রান্সের জনৈক বিশিষ্ট প-িত হেনরী তার লিখিত গ্রন্থ “খাওয়াতির ও সাওয়ানিহ ফিল ইসলাম” এ লিখেছে- “প্রাচ্যবাসীকে সমূলে উৎখাত করার জন্য সবচেয়ে মারত্মক অস্ত্র এবং মুসলমানদেরকে খতম করার জন্য নির্মিত দুধারী তলোয়ার ছিল এই শরাব (অ্যালকোহল)। আমরা আলজিরিয়ার বিরুদ্ধে এ অস্ত্রটি ব্যবহার করেছি। কিন্তু ইসলামী শরীয়ত আমাদের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং আমাদের ব্যবহৃত অস্ত্রে মুসলমানরা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়নি; ফলে তাদের বংশ বেড়েই চলেছে। এরাও যদি আমাদের সেই উপঢৌকন গ্রহণ করে নিত, যেভাবে তাদের একটি বিশ্বাসঘাতক গোষ্ঠি তা গ্রহণ করে নিয়েছে, তাহলে তারাও আমাদের কাছে পদানত ও অপদস্ত হয়ে পড়তো। আজ যাদের ঘরে আমাদের সরবরাহকৃত শরাবের প্রবাহ বইছে, তারা আমাদের কাছে এতই নিকৃষ্ট ও পদদলিত হয়ে গিয়েছে যে, তারা মাথাটি পর্যন্ত তুলতে পারছে না।”

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

اِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ اَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ

অর্থ : “শয়তান শরাব ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে পারস্পারিক বিদ্বেষ ও শত্রুতা সৃষ্টি করতে চায়।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯১) 

অথচ সেই ষড়যন্ত্রের জাল এখনো মুসলমানদের উপর বিস্তার করে রেখেছে কাফির-মুশরিকরা। সরাসরি মদ্যপানে অভ্যস্ত করতে পারেনি এমন মুসলমানদের কব্জা করার জন্য তাদের কূটচাল হচ্ছে বিভিন্ন মনলোভা মোড়কে কোমল পানীয়/ এনার্জি ড্রিংক। এ সমস্ত কোমল পানীয়তে মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল ও বিষাক্ত ক্যামিকেল থাকায় এসব খেয়ে শিশু কিশোররা সহ উড়তি বয়সের তরুণরা নানান স্বাস্থ্য জটিলতা, কিডনি রোগ, পাকস্থলী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

জনৈক বৃটিশ আইনজ্ঞ ব্যান্টাম লিখে- “ইসলামী শরীয়তের অসংখ্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এও একটি বৈশিষ্ট্য যে, এতে মদ্যপান নিষিদ্ধ। আমরা দেখেছি, আফ্রিকার লোকেরা যখন এর ব্যবহার শুরু করে তখন থেকেই তাদের বংশে ‘উন্মাদনা’ সংক্রমিত হতে শুরু করেছে। আর ইউরোপের যেসব লোক এই পদার্থটিতে চুমুক কষতে শুরু করেছে, তাদের জ্ঞান-বুদ্ধিরও বিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। কাজেই আফ্রিকার লোকদের জন্য যেমন এর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন, তেমনি ইউরোপের লোকদের জন্যও এ জন্য কঠিন শাস্তির বিধান করা দরকার।”

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, অ্যালকোহলের মধ্যে ক্ষতির পরিমাণই বেশি, আর তাই সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত তা হারাম ঘোষণা করেছে।


উচ্চতায় উঠতে থাকলে বক্ষ গহ্বর সংকুচিত হতে থাকে ! কিন্তু বাস্তবে বিপরীত ঘটনা ঘটতে দেখা যায়, কেন?

উচ্চতায় উঠতে থাকলে বক্ষ গহ্বর সংকুচিত হতে থাকে ! কিন্তু বাস্তবে বিপরীত ঘটনা ঘটতে দেখা যায়, কেন?

নাস্তিকদের আপত্তি ৯ : "কুরানের আয়াত 6:125  অনুসারে, উচ্চতায় উঠতে থাকলে বক্ষ গহ্বর (Chest cavity)  সংকুচিত হতে থাকে ! কিন্তু বাস্তবে বিপরীত ঘটনা ঘটতে দেখা যায়, কেন?

Air is compressible, so the weight of all the air above us compresses the air around us, making it denser. As you go up a mountain, the air becomes less compressed and is therefore thinner (less oXzgen to breathe). Several areas of the bodz also normally contain gas (sinuses of the face, stomach and bowel, middle ear cavity, lungs and air-passages). The laws of gas behavior dictate that as the pressure falls, a given amount of gas will expand (mass and temperature remaining constant). So as a person is subjected to progressively higher altitude (and therefore progressively less air pressure) the collections of gas within the bodz will expand. If anything, the lower pressure found at higher altitudes would allow your lungs to expand more than at lower altitudes. There is no tightening of the chest. The constrictive sensation experienced at high altitudes is simply a result of having less air to breathe into your lungs, in addition to the gas alreadz there actually expanding.

http://www.webcitation.org/query?url=http://www.pilotfriend.com/aeromed/medical/ascent_descent.htm&date=2011-12-05"

খণ্ডন : মানুষ উচ্চতায় উঠতে থাকলে বায়ুচাপ কমে গিয়ে মোট বাতাস প্রসারিত হয়ে যায়, সাথে সাথে তাপমাত্রাও কমতে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে ও সল্প বাতাসের সল্প অক্সিজেন দিয়ে শরীরের চাহিদা পূরণ করতে বক্ষ গহ্বর সংকুচিত হয়ে আসে। এই কৌশলকে বলা হয় হোমিওস্ট্যাসিস (Homeostasis)

হোমিওস্ট্যাসিস প্রাণের বা দেহের এমন এক বিস্ময়কর এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রাণরাসায়নিক ব্যবস্থা, যার কারণে দেহে আপেক্ষিক স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিবর্তনশীল বিষয়গুলো এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় (প্রয়োজন মত শক্তি দেহে যোগ বা বিয়োগ করা হয়) যে, উক্ত ব্যবস্থার আভ্যন্তরীণ অবস্থা অপরিবর্ণিত থাকে, কিংবা একটি নির্দিষ্ট মানের কাছাকাছি থাকে।

এর মানে এই দাঁড়াচ্ছে, বাহ্যিক কোন প্রভাবে বা অন্য কোন ঘটনায় যদি শরীরের কোন অবস্থার পরিবর্তন ঘটে, তার জন্য দেহে এমন কৌশল ঠিক করা আছে যা সেই পরিবর্তনকে কমিয়ে দিতে পারে বা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার জন্য কাজ শুরু করে দেয়। আর এই কৌশলই হচ্ছে হোমিওস্ট্যাসিস।

সুতরাং কোন জীবের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় খাপ খাইয়ে আভ্যন্তরীণভাবে ভারসাম্য রক্ষার ক্ষমতা বা প্রবণতাই হচ্ছে হোমিওস্ট্যাসিস।

হোমিওস্ট্যাসিসের দুইটি প্রধান অংশ আছে- 

১) সেন্সর (Sensor) ও ২ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (Control Center)|

সেন্সরের কাজ হচ্ছে পরিবর্তনকে সনাক্ত করা আর নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের কাজ হলো এমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাতে পরিবর্তন কমে গিয়ে আগের অবস্থায় ফিরে যায়। তখন কিন্তু আর সেন্সর কাজ করে না।

প্রয়োজন অনুযায়ী হোমিওস্ট্যাসিস দুই ধরণের হয়-

১. নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া (নেগেটিভ ফিডব্যাক) : নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে এমন নিয়ন্ত্রণ যা কোন পরিবর্তনকে স্বাভাবিক অবস্থায় বা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে আসে।

উদাহারণ হিসেবে বলা যেতে পারে, যখন আমাদের চারপাশের পরিবেশের তাপমাত্রা কমে যায়, তখন তাপগতিবিদ্যার সূত্র মেনে আমাদের দেহ যথারীতি আগের চেয়ে বেশী পরিমাণে তাপ হারাতে শুরু করে। যার ফলে আমাদের দেহের তাপমাত্রাও কমতে শুরু করে। আর তখনি এর বিরূদ্ধে রূখে দাঁড়ায় হোমিওস্ট্যাসিস। দেহ তখন তার তূণে রাখা একেকটি অস্ত্র বের করতে শুরু করে। প্রথমে পারলে সচেতনভাবে গরম কাপড় পরে। আর নিজে মারে গুটিশুটি। এই গুটিশুটি মারাটা কোন মামুলি ঘটনা নয়, যাতে দেহ থেকে তাপের বিকিরণ কম হয় সেই জন্যই এই কাজটা করে। একটি বড়সড় প্রশস্ত গরম বস্তু থেকে নিম্ন তাপমাত্রার পরিবেশে যে পরিমাণ তাপ বের হয়ে যাবে, স্বাভাবিকভাবে উক্ত পরিবেশে একই পরিমাণ উষ্ণ বস্তু থেকে তার চেয়ে কম তাপমাত্রা বের হবে। দুইটি বস্তুর সব বৈশিষ্ট্য এক হলেও শুধুমাত্র বস্তুর ক্ষেত্রফলের ভিন্নতার কারণেই তাপ বিকিরণের পরিমাণ ভিন্ন হচ্ছে। আমাদের দেহটি এই কারণেই দেহের তাপ বিকিরণকারী স্থান কমিয়ে দিচ্ছে, যার ফলে আগের চেয়ে কম তাপ বিকিরিত হচ্ছে।

এরপর শরীর রক্তনালীগুলো সংকুচিত করে ফেলে, যা দেহের ভিতর থেকে (দেহের অভ্যন্তরীণ তাপ পরিবহন বা রক্তনালীর ভিতরে তাপ পরিচলন কমিয়ে দেয়) সহজে তাপ বের হতে বাধা দেয়, আবারও দেহের তাপ নিজের ভেতরেই রাখার ব্যবস্থা করে ফেলল। কিন্তু দেখা গেলো, গরম কাপড় পড়া, গুটিশুটি মারা বা রক্তনালী সঙ্কুচিত করে ফেলা, এসব করেও আশঙ্কাজনকভাবে তাপ বেরিয়ে যাচ্ছে, বাইরের তাপমাত্রা যে খুব কম! এইবার শরীর কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিল। দাঁতে দাঁত ঠকঠক শুরু হয়ে গেল। একসময় দেখা গেলো, আস্তে আস্তে শীত লাগাও কমে গেলো, আবার কাঁপাকাঁপিও কমে এলো, কিন্তু থার্মোমিটার বলছে, বাইরের তাপমাত্রা এখনো কম। অথচ এখন আগের চেয়ে শীত কম লাগছে। এর কারণ হল, যখন শরীর কাঁপাকাঁপি করছিল, তখন গোশতপেশী বারবার সঙ্কুচিত আর প্রসারিত হচ্ছিল, এই সঙ্কোচন আর প্রসারণের জন্য গোশতকোষের ভিতরে কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়েছে, যা উৎপাদন করেছে বাড়তি তাপ। আর কাঁপাকাঁপি তখনই থেমেছে, যখন দেহ থেকে বেরিয়ে যাওয়া তাপের প্রায় সম পরিমাণ তাপ দেহের ভিতরেই উৎপাদিত হয়েছে। অর্থাৎ সুরক্ষা আসলে হচ্ছে দেহের ভিতর থেকে, কেবল বাইরের গরম কাপড়ে নয়। এইবার আগের মতই স্বাভাবিকভাবেই সকল কাজ করা যাচ্ছে। কারণ এখন বাইরের পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে শরীর খাপ খাইয়ে নিয়েছে।

আরও একটি সহজ উদাহরণ- আমাদের শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস। কোন কারণে যদি তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়, তাহলে মস্তিষ্ক ডার্মাল ব্লাড ভেসেলে সংকেত পাঠায়, আর তখন ঘামগ্রন্থি থেকে ঘাম নিঃসৃত হয়। ফলশ্রুতিতে শরীর কিছু তাপ হারায়, আর শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

২. ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া (পজিটিভ ফিডব্যাক) : ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এমনভাবে কাজ করে যাতে যে পরিবর্তনটি হয়েছে তা একই দিকে যেতে থাকে অর্থাৎ পরিবর্তন কমানোর বদলে আরও বাড়িয়ে দেয়।

এর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উদাহরণ হল প্রসব যন্ত্রণা। যখন কোন মা সন্তান জন্ম দেন, তখন সন্তানের মাথা জরায়ুর মুখের দিকে চাপ দেয়, যেখানে সেন্সর রিসেপ্টর থাকে। এতে মস্তিষ্কে সংকেত যায়, আর মস্তিষ্ক পিটুইটারি গ্রন্থিকে অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণ করতে নির্দেশ দেয়। অক্সিটোসিন রক্তের মাধ্যমে এসে জরায়ুকে আরও সঙ্কুচিত করে। তাতে ব্যথা আরও বেড়ে যায়, আর জরায়ুর মুখ আরও বেশি উদ্দীপিত হয়। সন্তান জন্মের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এই ক্রিয়া চলতে থাকে, অর্থাৎ জরায়ু সঙ্কোচন আরও বাড়তে থাকে, সাথে প্রসব যন্ত্রণাও। অর্থাৎ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমেই স্বাভাবিকভাবে একটি সন্তান জন্মের প্রক্রিয়া শেষ হয়।

হোমিওস্ট্যাসিস প্রক্রিয়াটি উদ্ভিদ দেহেও দেখা যায়। শীতকালে গাছের পাতার রঙ বদলানোর বা ঝরে পড়ার পেছনে মূল কারণই হচ্ছে হোমিওস্ট্যাসিস।

সাধারণভাবে গাছ মাটি থেকে যতখানি পানি উত্তোলন করে ততখানি পানি তার শারীরবৃত্তীয় কাজে ব্যবহৃত হয় না। অতিরিক্ত পানিটুকু পাতার স্ট্যোমাটার মাধ্যমে বাষ্পাকারে বাতাসে ছেড়ে দেয়। শীতকাল এলেও পাতা থেকে এই পানি ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয় না। গাছে যত বেশি পাতা থাকবে তত বেশি পানি হারিয়ে যাবে গাছের শরীর থেকে। ফলে গাছে পানির ঘাটতি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ কারণে শীতকালের শুরুতে যখন দিনের দৈর্ঘ্য ছোট হতে শুরু করে, বাতাসের তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা দুটোই কমতে থাকে তখন গাছের শরীরে তৈরি হয় একটি হরমোন যা পাতাগুলো ঝরে পড়ার নির্দেশ পাঠায়। তখন পাতা যেখানে গাছের সাথে সংযুক্ত থাকে, সেখানে তৈরি হয় ছোট ছোট কিছু কোষের। এ কোষগুলোর নাম ÒAbscission cellÓ  বা “কর্তন কোষ”। কিছুদিনের মাঝেই এই কোষগুলো আকারে এবং সংখ্যায় বৃদ্ধি পেয়ে গাছ এবং পাতার মাঝে একটি চিকন অঞ্চল তৈরি করে। এই অঞ্চলটি পাতাকে ক্রমশ গাছ থেকে আলাদা করে ফেলে এবং একটু বাতাস পেলেই সেই পাতাটিকে একেবারেই গাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। গাছের সব পাতার গোড়াতেই এই অঞ্চল তৈরি হয় ফলে পাতা ঝরে যায়। অর্থাৎ গাছ নিজের স্বার্থেই পাতাগুলোকে ঝরিয়ে ফেলে এবং শীতকালের স্বল্প পরিমাণ পানিটুকু নিজের মাঝে বাঁচিয়ে রাখে।

সুতরাং দেখা যায় যে, সৃষ্টিজগতে আত্মরক্ষা বা প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা হিসেবে হোমিওস্ট্যাসিস প্রক্রিয়াটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। আর এ জন্যই মানুষ শীতাক্রান্ত হলে ঠকঠক করে কেঁপে বা গরমাক্রান্ত হলে শরীর থেকে ঘাম নিঃসরণ করে দেহের তাপমাত্রার ভারসাম্য তৈরী করে থাকে। ঠিক একইভাবে মানুষ যখন স্বাভাবিক অবস্থান থেকে উঁচু স্থানের দিকে উঠে তখন তুলনামূলক কম তাপমাত্রায় দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য রক্তনালী সঙ্কুচিত করে ফেলে। এর পাশাপাশি উপরের দিকে চাপ কম থাকায় চাপের সূত্র মেনে বাতাস যথারীতি পাতলা হয়ে যায়, ফলে অক্সিজেনের ঘনত্বও কমে যায়। কিন্তু এই অল্প অক্সিজেন দিয়ে দেহের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে আত্মরক্ষা বা প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা হিসেবে মানুষের বক্ষগহ্বর সঙ্কুচিত হয়ে আসে।

এই বিষয়টিই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন-

فَمَنْ يُّرِدِ اللهُ اَنْ يَّهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلْاِسْلَامِ ۖ وَمَنْ يُّرِدْ اَنْ يُّضِلَّهُ يَـجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقًا حَرَجًا كَاَنَّـمَا يَصَّعَّدُ فِى السَّمَاءِ ۚ كَذٰلِكَ يَـجْعَلُ اللهُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ.

অর্থ : “অতঃপর মহান আল্লাহ তিনি যাঁকে পথ প্রদর্শন করতে চান, তার বক্ষকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার জন্যে উম্মুক্ত করে দেন এবং যাকে বিপথগামী করতে চান, তার বক্ষকে সঙ্কীর্ণ অত্যধিক সঙ্কীর্ণ করে দেন যেন সে সবেগে আকাশে আরোহণ করছে। এমনিভাবে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের উপর আযাব বর্ষণ করেন।” (পবিত্র সূরা আন‘য়াম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২৫)

অথচ গণ্ডমূর্খ নাস্তিকরা যুক্তি দিচ্ছে, The laws of gas behavior dictate that as the pressure falls, a given amount of gas will expand (mass and temperature remaining constant). So as a person is subjected to progressively higher altitude (and therefore progressively less air pressure) the collections of gas within the bodz will expand. If anything, the lower pressure found at higher altitudes would allow your lungs to expand more than at lower altitudes. There is no tightening of the chest. The constrictive sensation experienced at high altitudes is simply a result of having less air to breathe into your lungs, in addition to the gas alreadz there actually expanding.

বায়বীয় পদার্থের ক্ষেত্রে চাপ কমে গেলে তা প্রসারিত হয় সত্য। তাহলে তো স্বাভাবিক অবস্থান থেকে উঁচু স্থানের দিকে উঠতে থাকলে আশেপাশের বাতাসের চাপ কমে যাওয়ার কারণে মানুষ পড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু মানুষ কিভাবে সোজা থাকে? তাহলে নিশ্চয়ই পরিবেশের বাতাসের চাপের সাথে দেহাভ্যন্তরের বাতাসের চাপের একটি সাম্যতা বিধান করতে থাকে, যেমনটি পরিবেশের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে দেহের তাপমাত্রার ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য করে থাকে। ফলশ্রুতিতে মানুষ স্থিরভাবে দাঁড়াতে পারে।

ঠিক একইভাবে উপরে বা উঁচু স্থানে চাপ কমে যাওয়ায় বাতাস প্রসারিত হয়ে যায়। কিন্তু পরিবেশে বাতাসের যেভাবে প্রসারণ ঘটে, দেহাভ্যন্তরের বাতাসের প্রসারণ একই হারে হয় না। তদুপরি উঁচু স্থানে শুধুমাত্র চাপের ঘাটতি ঘটে না বরং তাপমাত্রা ও ভরও কমে যায়। অথচ গ-মূর্খ নাস্তিকরা উচ্চতার পার্থক্যের কারণে শুধুমাত্র বাতাসের চাপ কমে যাওয়াকেই উল্লেখ করছে আর তাপমাত্রা বা ভরের বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে।

উপরের উঠার কারণে মানুষের দেহের ভরও কমবে। ফলশ্রুতিতে ফুসফুসের প্রতি একক ক্ষেত্রফলের জন্য স্বাভাবিক স্থানের চেয়ে উঁচু স্থানে অক্সিজেনের চাহিদাও কম হবে। আবার উপরের কম তাপমাত্রায় দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য রক্তনালী সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়ার কারণেও অক্সিজেনের চাহিদাও কমে যাবে।

অথচ গণ্ডমূর্খ নাস্তিকরা যুক্তি দিচ্ছে উঁচু স্থানে মানুষের বক্ষগহ্বর প্রসারিত হয়। কিন্তু বক্ষগহ্বর প্রসারিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়েও অধিক অক্সিজেনের চাহিদা। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, হোমিওস্ট্যাসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিজেনের চাহিদাকে কমিয়ে এনে মানুষ নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। বাস্তবতার বিপরীত ঘটনা অর্থাৎ উঁচু স্থানে মানুষের বক্ষগহ্বর যদি প্রসারিত হতো তাহলে মানুষ অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যেত। আজ পর্যন্ত কোন পবর্ত আরোহীর শ্বাসরোধে মৃত্যুবরণের ঘটনা শোনা যায়নি।

তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি যেহেতু পবিত্র কুরআন শরীফ (৬:১২৫) উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন- 

كَذٰلِكَ يَـجْعَلُ اللهُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ

অর্থ : “এমনিভাবে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের উপর আযাব বর্ষণ করেন।” (পবিত্র সূরা আন‘য়াম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২৫)

তাই মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে অবিশ্বাসী নাস্তিকদের প্রতি আযাব বর্ষণের দরুণ তারা পর্বত আরোহণের সময় মৃত্যুমুখে পতিত হতে পারে।


আল্লাহ কেন হাঁচি দেওয়া পছন্দ করেন কিন্তু হাই তোলাকে করেন না তিনি কি এটা জানেন না যে হাঁচি দেওয়ার ফলে বাতাসে জীবানু ছাড়ায় আর অন্য দিকে হাই তুললে আমাদের শরীর প্রচুর অক্সিজেন পায়?
আল্লাহ কেন হাঁচি দেওয়া পছন্দ করেন কিন্তু হাই তোলাকে করেন না তিনি কি এটা জানেন না যে হাঁচি দেওয়ার ফলে বাতাসে জীবানু ছাড়ায় আর অন্য দিকে হাই তুললে আমাদের শরীর প্রচুর অক্সিজেন পায়?

 নাস্তিকদের আপত্তি ৮ : আল্লাহ কেন হাঁচি দেওয়া পছন্দ করেন কিন্তু হাই তোলাকে করেন না (Sahih Bukhari 8:73:245)?  তিনি কি এটা জানেন না যে হাঁচি দেওয়ার ফলে বাতাসে জীবানু ছাড়ায় আর অন্য দিকে হাই তুললে আমাদের শরীর প্রচুর অক্সিজেন পায়?

খণ্ডণ : হাঁচি আর হাই সম্পর্কিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে- 

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ‏ اِنَّ اللهَ يُـحِبُّ الْعُطَاسَ وَيَكْرَهُ التَّثَاؤُبَ فَاِذَا عَطَسَ اَحَدُكُمْ وَحَـمِدَ اللهَ كَانَ حَقًّا عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ سَـمِعَهُ اَنْ يَقُوْلَ لَهُ يَرْحَـمُكَ اللهُ‏.‏ وَاَمَّا التَّثَاؤُبُ فَاِنَّـمَا هُوَ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَاِذَا تَثَاوَبَ اَحَدُكُمْ فَلْيَرُدَّهُ مَا اسْتَطَاعَ فَاِنَّ اَحَدَكُمْ اِذَا تَثَاءَبَ ضَحِكَ مِنْهُ الشَّيْطَانُ‏‏.‏‏

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি হাঁচি দেয়া পছন্দ করেন আর হাই তোলা অপছন্দ করেন। যদি তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে ‘আল্হামদুলিল্লাহ’ বলে তবে প্রত্যেক মুসলিম শ্রোতার তার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা ওয়াজিব। আর হাই তোলা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়। কাজেই তোমাদের কোন ব্যক্তির হাই উঠলে সে যেন যথাসম্ভব তা রোধ করে। কেননা কেউ হাই তুললে শয়তান তার প্রতি হাসে।” (বুখারী শরীফ : কিতাবুল আদব : বাবু ইজা তাছাওয়াবা ফালইয়াদ্বোয়া ইয়াদাহু ‘আলা ফীহি : হাদীছ শরীফ নং ৬২২৬)

মহান আল্লাহ পাক তিনি যেহেতু সর্বদা বান্দা-বান্দীর কল্যাণ চেয়ে থাকেন তাই তিনি হাঁচি দেয়া পছন্দ করেন আর হাই তোলা অপছন্দ করেন। সাধারণভাবে হাঁচি হলো শ্বাসযন্ত্রের অনেকগুলো প্রতিরক্ষা কবচের একটি। শরীরের জন্য অনাকাংক্ষিত কোন বস্তু কতা বা জৈব কলা, যখন আমাদের শ্বাসযন্ত্রের উপরিভাগে ঢুকে পড়ে, তখন তা বের করে দেবার জন্য শ্বাসযন্ত্র অত্যন্ত সম্বনিত প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণে বাতাস ফুসফুসে ঢুকিয়ে তা প্রবল বেগে বের করে দেয়, যেন এই প্রবল বেগে বাতাস বেরিয়ে যাবার সময় ওই অনাকাংক্ষিত কতাটি সহ বেরিয়ে যায়। যেহেতু শরীরকে সার্বিকভাবে সুস্থ রাখার অন্যতম সহায়ক প্রক্রিয়া হলো এই হাঁচি, তাই স্বাভাবিকভাবে হাঁচি আটকান উচিত নয়।

গবেষণায় প্রমাণিত যে, একটি হাঁচির সাথে ৩ হাজার-১ লক্ষ রোগ-জীবাণু বেরিয়ে যায় আর মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় একসাথে দু’টি হাঁচি দেয়। এভাবে দু’টি হাঁচির সাথে ৬ হাজার- ২ লক্ষ রোগ জীবাণু বেরিয়ে যায়। এজন্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি হাঁচি দেয়া পছন্দ করেন। এই রোগ-জীবাণু বের হয়ে সুস্থ হওয়া অবশ্যই একটি রহমত এবং খুশির বিষয়। তাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তিনি উম্মতদেরকে হাঁচির পর الْـحَمْدُ لِلّٰه ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পাঠ করতে শিক্ষা দিয়েছেন। এই হাঁচি এমন একটি নিয়ামত যে, হাঁচিদাতার হাঁচির উত্তর দেয়ার পর প্রত্যেক মুসলিম শ্রোতার তার জবাবে يَرْحَـمُكَ اللهُ ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা ওয়াজিব।

এত বড় একটি নিয়ামতপূর্ণ বিষয়কে নাস্তিকরা তাদের অজ্ঞতা ও মূর্খতার কারণে বলে থাকে যে, হাঁচি দেওয়ার ফলে বাতাসে জীবাণু ছড়ায়। তাহলে তাদের ভাষ্য অনুসারে বুঝা যাচ্ছে যে, একজন মানুষ কষ্ট পেতে থাকলেই তাদের আনন্দ লাগে। নাঊযুবিল্লাহ! তারা চাচ্ছে যে, মানুষের শ্বাসযন্ত্র বিভিন্ন জীবাণু, বস্তু কতা বা জৈব কলায় ভরপুর হয়ে প্রতিটি মানুষ বিভিন্ন রোগ যন্ত্রণায় কষ্ট পেতে থাকুক।

স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন রোগের জীবাণু তো পরিবেশেই থাকে। সে জীবাণু শ্বাসের সাথে হোক, মুখ দিয়ে হোক বা অন্য কোন উপায়ে হোক শরীরের প্রবেশ করার পর রোগ প্রকাশ পায়। তাহলে পরিবেশেই তো মানুষের শরীরের তুলনায় অনেক বেশি জীবাণু ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমতবস্থায় একজন মানষের কাছ থেকে মাত্র ৩ হাজার-২ লক্ষ জীবাণু পরিবেশে আসলে তাতে কি আসে যায়? বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ৭০০ কোটি মানুষ রয়েছে। প্রতিটি মানুষ যদি একযোগে ১টি করে হাঁচি দেয় তাহলে কমপক্ষে ২১ লক্ষ কোটি ও সর্বোচ্চ ৭ কোটি কোটি আর প্রতিটি মানুষ যদি একযোগে ২টি করে হাঁচি দেয় তাহলে কমপক্ষে ৪২ লক্ষ কোটি ও সর্বোচ্চ ১৪ কোটি কোটি জীবাণু পরিবেশে ছড়িয়ে পড়বে। যদিও পৃথিবীর সব মানুষ এক যোগে কখনোই হাঁচি দেয় না। পরিবেশে ঘুরে বেড়ানো অসংখ্য-অগণিত জীবাণুর সাপেক্ষে হাঁচির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই জীবাণু কিছুই না। যেমন মহাসাগরের বিশাল পানিরাশির সাপেক্ষে একটি পুকুরে রক্ষিত পানি কিছুই না।

সুতরাং মহান আল্লাহ পাক তিনি যেহেতু হাঁচির মাধ্যমে একজন মানুষকে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ থেকে রক্ষা করে থাকেন, যা শরীরকে সার্র্বিকভাবে সুস্থ রাখার অন্যতম সহায়ক প্রক্রিয়া। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি হাঁচি দেয়া পছন্দ করেন।

উপরন্তু সম্মানিত দ্বীন ইসলাম যেহেতু পূর্ণাঙ্গ তাই হাঁচির দেয়ার বিধানও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে বাতলে দেয়া হয়েছে।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا عَطَسَ وَضَعَ يَدَهُ اَوْ ثَوْبَهُ عَلَى فِيْهِ وَخَفَضَ اَوْ غَضَّ بِـهَا صَوْتَهُ‏.‏

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যখন হাঁচি আসতো তখন তিনি হাত বা কাপড় দিয়ে মুখ বন্ধ রাখতেন এবং হাঁচির শব্দ নিচু করতেন।” (আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুল আদব : বাবু ফিল ‘য়ুত্বছি : হাদীছ শরীফ নং ৫০২৯; তিরমিযী শরীফ : ২৭৪৫)

এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে- হাঁচি দেয়ার সময় মুখ বন্ধ রাখতে হবে এবং হাঁচির শব্দ নিচু করতে হবে। অর্থাৎ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখার দিকটিও খেয়াল রেখে থাকে। অথচ নাস্তিকরা সার্বিকভাবে সমন্বয়ের দিকটি মোটেও বিবেচনা করার সামর্থ রাখে না। তারা শুধু পরিবেশের দিকটিই দেখতে পেয়েছে কিন্তু একজন মানুষের সুস্থতার চিন্তাও করে না। পরিবেশের পরিচ্ছন্নতার দিকটি বিবেচনা করে প্রত্যেক নাস্তিকের উচিত তাদের হাঁচি দেয়া বন্ধ করে দেয়া।

নাস্তিকদের জ্ঞাতার্থে হাঁচি বন্ধ করার একটি উপায় উল্লেখ করা হলো। আমাদের উপরের ঠোঁটের মাঝখানে খাঁজকাটা যে অংশটা আছে যাকে পারিভাষিকভাবে philtrum  বলে, তাতে এক আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরলে হাঁচি আটকে যাবে। philtrum -এর নিচে থাকে depressor septi neris নামক একটি পেশী, আর এই পেশীতে চাপ লাগলেই হাঁচি থেমে যায়।

একইভাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি যেহেতু সর্বদা বান্দা-বান্দীর কল্যাণ চেয়ে থাকেন তাই তিনি হাই দেয়া অপছন্দ করেন। কেননা হাই তোলা শয়তানের কাজ আর এই কাজে শয়তান হাসে। মুখ বন্ধ না করলে শয়তান শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏ اِنَّ اللهَ يُـحِبُّ الْعُطَاسَ وَيَكْرَهُ التَّثَاؤُبَ فَاِذَا تَثَاءَبَ اَحَدُكُمْ فَلْيَرُدَّهُ مَا اسْتَطَاعَ وَلاَ يَقُلْ هَاهْ هَاهْ فَاِنَّـمَا ذَلِكُمْ مِنَ الشَّيْطَانِ يَضْحَكُ مِنْهُ‏.‏

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি হাঁচি দেয়া পছন্দ করেন আর হাই তোলা অপছন্দ করেন। সুতরাং যখনই তোমাদের কারো হাই আসে সে যেন যথাসাধ্য তা প্রতিরোধ করে এবং হাহ্ হাহ্ ইত্যাদি শব্দ না করে। কারণ হাই তোলা শয়তানের কাজ, এতে শয়তান হাসে।” (আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুল আদব : বাবু মা জায়া ফিত্তাছায়ুব : হাদীছ শরীফ নং ৫০২৮)

অন্য বর্ণনায় বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ ابْنِ اَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ اَبِيهِ (رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ) قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا تَثَاءَبَ اَحَدُكُمْ فَلْيُمْسِكْ عَلَى فِيهِ فَاِنَّ الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ.‏

অর্থ : “হযরত ইবনে আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিতা হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, তোমাদের কোন ব্যক্তির হাই আসলে সে যেন মুখ বন্ধ করে দেয়। কেননা শয়তান ভিতরে ঢুকে।” (আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুল আদব : বাবু মা জায়া ফিত্তাছায়ুব : হাদীছ শরীফ নং ৫০২৬)

আর অন্য দিকে নাস্তিকরা বলে থাকে হাই তুললে আমাদের শরীর প্রচুর অক্সিজেন পায়। মূলত বিজ্ঞানীরা মনে করতো যে আমাদের মস্তিষ্ক যখন অক্সিজেনের অভাব বোধ করে তখন হাই আসে। বস্তুত কথাটি মোটেও ঠিক নয়। বিষয়টি যদি এরকমই হতো তাহলে কক্সবাজারের মানুষ ঢাকাতে বেড়াতে আসলে সারাক্ষুই হাই তুলতো। আর বাংলাদেশের মানুষ নেপাল বেড়াতে গেলে শুধু হাই তুলতে তুলতেই দিন শেষ হয়ে যেতো। কিন্তু তা ঘটে না।

আবার বিজ্ঞানীদের ভাষ্য হচ্ছে, ÒYawning is a peculiar infectious respiratory act whose physiological basis and significance are uncertain.Ó

বিজ্ঞানীরা একে infectious বলেছে এজন্যই যে, আসলে এক মানুষ আরেক মানুষকে হাই তুলতে দেখলে নিজেও হাই তুলে। এমনকি যদি টেলিফোনে অপর প্রান্তের কাউকে হাই তুলতে শুনে তাহলেও এ প্রান্তের শ্রোতার হাই চলে আসে।

এক সময় বিজ্ঞানীরা মনে করতো ঘুম ধরলে মানুষ হাই তোলে কিন্তু তাও ঠিক না। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায় যে, মানুষ খুব কম সময়ই ঘুমাতে যাবার আগে হাই তোলে কিংবা হয়ত কারো প্রচ- ঘুম পেয়েছে কিন্তু এর মানে এই নয় যে তার হাই উঠবেই।

আবার এক সময় বিজ্ঞানীরা মনে করতো পরিশ্রান্ত শরীরের কারণে মানুষ হাই তোলে কিন্তু তাও ঠিক নয়। কেননা একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, যারা মাটি কাটেন কিংবা ভারী বোঝা বহন করেন, দিন শেষে তাদের কেউই হাই তুলতে তুলতে বাড়ি ফিরে না।

মোদ্দা কথা হচ্ছে, তথাকথিত বিজ্ঞানীরা এখনো হাই তোলার কোন শারীরবৃত্তীয় গুরুত্ব বা শারীরবৃত্তীয় প্রভাব নিরূপন করতে পারেনি। শুধুমাত্র চেতনানাশক পদার্থ (narcotic substance প্রত্যাহারের একটি উপসর্গ হিসাবে এর একটি পরিচিতি আছে।

সর্বোপরি নাস্তিকদের ভাষ্য অনুযায়ী যদি হাই তুললে শরীর প্রচুর অক্সিজেন পেয়েই থাকে তাহলে নাক দিয়ে শ্বাস টানার দরকার কি? হাই তুলে তুলে বাতাস থেকে অক্সিজেন টেনে নিলেই তো হয়।

বস্তুত হাই তোলার সময় যদি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিধান মুতাবিক মুখ বন্ধ না করা হয় কিংবা মুখে হাত দিয়ে মুখ বন্ধ না করা হয় তাহলে পরিবেশের ধূলা-বালি সহ বিভিন্ন রোগের জীবাণু ও অন্যান্য বস্তু অতি সহজেই মুখগহ্বর দিয়ে বিনা বাঁধায় ও ছাকনী ছাড়াই ফুসফুসে প্রবেশ করে ফুসফুসকে রোগগ্রস্থ করে ফেলবে। ফলশ্রুতিতে ফুসফুসের রোগসহ মুখ ও গলা নানান ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি পরিবেশের ধূলা-বালি সহ বিভিন্ন রোগের জীবাণু ও অন্যান্য বস্তু যাতে সহজেই নাক দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য নাসারন্ধ্রে পশম দিয়ে দিয়েছেন এবং এ অঞ্চলটিতে পিচ্ছিল পদার্থ দিয়েছেন, যাতে উক্ত ধূলা-বালু নাসারন্ধ্রের পশমে ও পিচ্ছিল পদার্থে আটকা পড়ে যায়, ভিতরে ঢুুকতে না পারে। ফলশ্রুতিতে ফুসফুসসহ মুখগহ্বর ও গলা নানান ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া থেকে বেঁচে যায়।

প্রমাণিত হলো যে, হাই তুললে শরীর প্রচুর অক্সিজেন পেয়ে থাকে কথাটি একটি বানোয়াট, অমূলক, বাস্তবতাবর্জিত, কল্পনাপ্রসূত উক্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। বরং মুখে খুলে হাই তুললে পরিবেশের ধূলা-বালি সহ বিভিন্ন রোগের জীবাণু ও অন্যান্য বস্তু অতি সহজেই মুখগহ্বর দিয়ে বিনা বাঁধায় ও ছাকনী ছাড়াই ফুসফুসে প্রবেশ করে ফুসফুসকে রোগগ্রস্থ করে ফেলবে। তাই সকলের উচিত হাই আসলে মুখ বন্ধ করে রাখার সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।